শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৩

জীবন অঙ্ক



জীবন অঙ্ক
- যাযাবর জীবন

অঙ্ক কষেই চলেছি জীবনের
বোধোদয়ের পর থেকে
কিংবা জীবন যুদ্ধের জোয়াল
যেদিন থেকে কাঁধে;
সরল, সুদকষা, পাটীগণিত, বীজগণিত
ক্যালকুলাস কিংবা জ্যামিতিক
জীবনের প্রয়োজনে যত হিসাব নিকাশ
সবই গাণিতিক।

এক এক কুড়িয়ে যোগ করছি আনন্দ নহর
বিসর্জনের বিয়োগে ছুঁড়ে ফেলা হতাশার গহ্বর
গুনে গুনে বাড়ানো খুশির সরোবর
বেটে চলেছি ভাগে দুঃখ বরাবর;
জীবনের ফলাফল?
বিশাল এক "শূন্য"।

সবার জীবনের সমীকরণ মেলে না
আমারটার গলদ রয়ে গেছে হয়তো গোড়াতেই কোথায়
সরল জীবন অঙ্কের, খুঁজে পাইনি তার
হারিয়েছিল কোথায় সে সোনামুখী সুঁই, কোন খড়ের গাঁদায়।

সারাজীবন আশেপাশের মানুষগুলোকে মিলিয়ে হয়েছি ধন্য
অথচ আমারই জীবন ফলাফল বারে বারে অঙ্ক কষে পাই "শূন্য"



বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৩

নীল সবুজের পালা


নীল সবুজের পালা
- যাযাবর জীবন

বীজ থেকে শুরু
অঙ্কুরোদগম হতে হতে অরণ্য
কত মেঘ রৌদ্দুর
রাতের মিটি মিটি তাঁরা
অন্ধকারের গান
কিংবা ঝিঁঝিঁ'র ডাকে সাড়া;
নগর সভ্যতায় পরাকাষ্ঠায়
মানব অসভ্যতা ঢাকা
কিংবা চারিত্রিক?
সে তো বইয়ের ভাষার বাহুল্য মাত্র,
চরিত্র কোথায়?
কাপড়?
সে তো নিমিত্ত মাত্র
দু টুকরো, চারটুকরো
কিংবা হিজাব পড়া;
চোখের পর্দা না থাকলে দেহের পর্দায় কি আসে যায়?
নতুন বর্ষায় নতুন পানি নতুন জীবন আনে
বৃক্ষরা নতুন পাতা ছাড়ে
নীলাকাশের নীচে সবুজ অরণ্য শোভা পায়।

মানুষগুলো কবে সবুজ সতেজ হবে?
অসভ্য ভালোবাসাগুলো নীল হয় কেন?

পথ


পথ
- যাযাবর জীবন

জল ছুঁয়ে দিস
জলের টুংটাং
হৃদয় ছুঁয়ে যাস
হাহাকার জাগানিয়া গান;
চলতে পথে হাত ছেড়ে দিস
কান্নার জলকুমারী চোখে বাসা বাঁধে,
তবুও পথ ভিন্ন, বিভক্ত দুটি দিকে
সমান্তরাল রেলের পাতে বয়ে চলেছে;
কি দরকার ছিল বৃষ্টির কদমের
প্রগলভ যৌবনবতী রূপ ডানা মেলা
প্রথম বাদল ছোঁয়ায়;
অথবা আমার কদমে তোর কদম মেলা
দুটো পথ দুজনায়।

স্বপ্নের ভাঙা কাঁচে সেই তো পা কাটলো আমারই;
তোর নতুন মধুচন্দ্রিমা।




বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৩

দায়


দায়
- যাযাবর জীবন

আমি তোর খবর নিতেই থাকবো
হয় মুঠোফোনে নয় অন্য কোন ভাবে
উপায় বের করে নেব নিজের মত করে;
হয়তো প্রতিদিন
কিংবা সপ্তাহে একদিন
অথবা মাসে,
যখন তুই থাকিস যেভাবে।

কতদিন ধরে?

ঠিক ততদিন,
যতদিন অবহেলার ধোঁয়া চোখে না পড়ে
কিংবা উপেক্ষার অনুভব হৃদয় অনুভবে।

মানুষ বড্ড অভিমানী
আমি তারচেয়ে বেশি এককাঠি;
উপেক্ষার অনুভব
কিংবা অবহেলার ধোঁয়া
কেন জানি কোনটাই সহ্য হয় না;
এক একজন খুব অবহেলায় মুঠোফোন ধরে
এক একজন খুব সুন্দর করে এড়িয়ে চলে পাশ কাটিয়ে;
উপেক্ষাও যে একটা শিল্প
বুঝি নতুন করে, নতুন অনুভবে।

আমারই কেন সকল দায়
নানা রঙের সম্পর্ক রক্ষায়?

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

সারা সারা


সারা সারা
- যাযাবর জীবন

মারার জন্য বন্দুক কিংবা পিস্তলের গুলি?
অপচয়ের কি আছে দরকার?
আরে আরে মারতে চাইলে নারীর কাছে
অভাব কি কলার?
ভঙ্গুর হৃদয়ে একটি কলার টোকাই তো যথেষ্ট
কিংবা একটু ছলার;
আর তারপর?
চায়ের কাপে ধোঁয়া তুলে
পায়ের ওপর পা তুলে আয়েশ,
মিটিয়ে নেয়া কোমল-মতি নারীর
মনে ছিল যত খায়েশ;
আর তারপর?
শুধুই ভাবলেশহীন চোখে দেখে যাওয়া
কোন এক কালের ভালোবাসার নরের
তিলে তিলে ধ্বংস
জীবন আর মরণ সারা সারা।

কলার ছিলকায় পা পিছলালে ধপাস, হয়তো একটু কাঁদে
তবুও তো বেঁচে গেল;
নারীর কলার ফাঁদে, পড়লো তো পা গহীন খাঁদে
বাঁচলে জীবন্মৃত, নয়তো জীবন গেল
কি আসে যায় সারা সারা।



শব্দ না নৈঃশব্দ্যের নগরী?



শব্দ না নৈঃশব্দ্যের নগরী?
- যাযাবর জীবন

মনে হয় যেন অন্য কোন যুগ ছিল
মনে হয় অন্য কোন সময় থেকে আগত
সেই তো ঐদিনের সব দিন গুলো;
কিচির মিচির পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত
কোন একটা সময়
শহরে সকাল হতো;
এখন প্যাঁ পুউ প্যাঁ হর্ন বাজে
কানের ডগায়
মস্তিষ্কের ভেতর
রাস্তায় রাস্তায়
শহরের ঘুম ভাঙ্গে
আমরা গভীর ঘুমে মগ্ন
ঘুমের বড়ির নেশায়
ভোরের সূর্যের সাথে আজ
ঘুম ভাঙ্গার সম্পর্ক কোথায়?

একটা সময় ছিল
অলস দুপুরে পাগলা কোকিলের কুহুতানে
বড্ড মন কেমন করা সে দিনগুলো
হারিয়েই গেল জীবন থেকে
নগর ভেলায় ভেসে সে দিনগুলো;
দিনগুলো হারালো
না কোকিল গুলো?
নাকি তাদের সুরের মূর্ছনা মুছে গেলো
কিংবা নগর জীবনের গাড়ির শব্দে
চাপা পড়া ভাবনাগুলো;
বড্ড নস্টালজিয়ায় খুব মাঝে মাঝে
কেমন হঠাত করে
শব্দের জগতে নৈঃশব্দ্যের ঢেউ ওঠে
ব্যস্ত নগরীতে হাজার শব্দের মিশ্রণে
কে আর কোকিলের ডাক মনে করে!

সেই অনেক দিন আগে
এই তো এই ব্যস্ত নগরীতে
কে বলবে রাতের নিস্তব্ধতা
ভর করতো কানে এসে
দূর থেকে রেলের কু ঝিক ঝিক ঝিক ধ্বনি
নৈঃশব্দ্যের খান খান লেপ মুড়ি
ঘুম ঘুম চোখে রাতের গভীরে
কান পেতে শোনা অবচেতন মনে;
কিংবা ঐ শেয়ালের ঝাঁক, মনে পড়ে?
এই তো সেদিন
গুলশান, বনানীর লেকের পাড়ে
ভয় লাগতো খুব মধ্য দুপুরের রোদে
বিকেলের আধো অন্ধকারে
প্রায়ঃশই ভেসে আসা বাঘডাশার ডাক
রাতের বেলায় হুক্কা হুয়া
লেপ মুড়ি জুজু বুড়ি
মায়ের বুকের তলা
খুব মনে পড়ে; এইতো সেদিনকার কথা
ব্যস্ত এই শহরের পাড়ে
গুলশান, বনানীর লেকের ধারে।

এখন বিশাল সব অট্টালিকা
চারিদিক জুড়ে
উঁকি দিয়ে আকাশ দেখতে খুব কষ্ট হয়
জানালার পর্দা মেলে;
খুব মৃদু ঝিঁ ঝিঁ একটানা শব্দ এখনো যেন শুনি
রাতের অনেক গভীরে
বন্ধ জানালা
বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন
তবু অবচেতন মনের কোথায় যেন রয়ে গেছে
ঐ ঝিঁ ঝিঁ শব্দের রেশ;
চোখ মেলে তাকাই মৃদু অন্ধকারে
সবুজ এসির বাতি ধ্বক করে চোখে লাগে
চেতনা ফিরে আসে
বুঝি, একটানা ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ভেসে আসে এসির ভেতর থেকে
মেশিন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা
তবু রয়ে গেছে অবচেতন মনের খুব গভীরে কিছু শব্দ
শব্দ দূষণের নগরীতে।

এখন সকাল দুপুর আর রাত্রির প্রতিটা প্রহর
রাস্তায় টায়ার ঘষা শব্দ,
এক সময় কানে তালা লাগতো
এখন খুব অভ্যস্ত;
ট্রাকের ভোঁ ভোঁ ছুটে চলা
বাসের ক্রমাগত কানফাটানো হর্ন
পিচের ওপর টায়ারের কষে চাপা ব্রেকের চিইইইইইইই
ধামমমম, দুটো গাড়ী মুখোমুখি
চারিধারে গাড়ির সমারোহ
ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে থমকে থাকা রাস্তার জীবন
এরই মাঝে এম্বুল্যন্সের সাইরেনের ক্রন্দন
খুব নিয়মিত, এতেই অভ্যস্ত;
কোন কিছুই কারো মনে দাগ কাটে না যেন
করার মত আমাদের কি কিছু আছে?
প্রশ্ন জাগে না কারো মনে, করার নেই কেন?

কোটি মানুষের শহরে আজ
প্রতিমুহূর্তে লক্ষ শব্দের দূষণ
এর মাঝেই আমরা গড়ে তুলি
শব্দ দূষণের নগরীতে
যার যার দরজা জানালায় পেরেক ঠুকে
ডিজিটাল নৈঃশব্দ্যের আবাসন।

মনের মাঝে কখনো পেরেক ঠুকে দেখেছ কি?
কিংবা কানের মাঝে?
শব্দ দূষণের জ্বালা বুঝবে কিভাবে?
আজ শহর কাঁদে
শব্দ দূষণের বোবা কান্নায়;
তবু মানুষ বোবা হয়ে রয়
নগরী কাঁদে যেন, তাই দেখে লজ্জায়।



সাদাকালো


সাদাকালো
- যাযাবর জীবন

সাদা দেহ ধারণ করেই কি সাদা মানুষ হওয়া যায়?
সাদা রঙ দিয়ে তোকে কে পাঠিয়েছে দুনিয়ায়?
একটু ভাবলে, ক্ষতি কি?

কালোরে কেন রে এত ঘৃণা করিস
কালো ছাড়া কি দাম আছে,
তোর সাদা দেহের;
তা কি বুঝিস?

সাদাকালো পরিমাপের সাদাকালো চোখে
না হয় তোর আছে সাদা একটা দেহ
আর কালো অন্ধকার একটা মনে যদি দেহ থাকে ঢাকি
তবে হয়তো দুনিয়ার কাছে হয়তো তুই সাদা
আমার কাছে সেটাই অমাবস্যার অন্ধকার রে সাদা বক পাখি।

আমি কত কালো দেহে দেখেছি সূর্যের আলো
হোক না তার দেহটা দেখতে একটু
কিংবা মিশমিশে কালো
তবু আমার কাছে সেই রে অনেক ভালো;
যার আছে স্নিগ্ধ সুন্দর ধবধবে সাদা
আর আকাশের মত বিশাল একটা মন
দেহের রঙ এ কি আসে যায়?

নশ্বর দেহ আজ আছে যা, নিমিষেই তা কাল হয়ে যায়
চিরস্থায়ী মন অপার ভালোবাসায়.........

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৩

জীবন সংগ্রাম


জীবন সংগ্রাম
- যাযাবর জীবন

জীবন সংগ্রাম
রেসের ঘোড়া
ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড় অবিরত;
রাশের দড়ি
কে টানে?
হাপরের ওঠানামা
বুকের খাঁচায়;
তারস্বরে কাকগুলো
মাথার ওপর কা কা রব
ডেকে যায় ক্রমাগত;
ঘিলু ঠোকরায়
শকুনির দল
মগজ বাড়িতে
ঠোঁট ডুবায়।

নিষ্পেষিত বুকের হাড়
ঐরাবতের থাম পা
চেপে বসে
লোভী চাপে;
ধিকি ধিকি আগুন
কয়লা পোড়া মনে
রণপায়ে পালিয়ে বেড়ানো
মরণ থেকে;
স্বার্থের গনগনে লাভাস্রোত
হায়েনার নখের আঁচর
দৌড় দৌড় তবু দৌড়
পালাতে জীবন থেকে
ফেটে চৌচির বুক
পেতে একটুকু দম;
মুখের নিঃসৃত হ্রেষা ধ্বনি
বুকের গভীরেতে
কান পেতে শুনি
পালাতে মরণ থেকে
আবার নতুন করে
দৌড়ের আয়োজন।

কাঠঠোকরার ক্রমাগত ঠোকর
হৃদয় ক্ষত
শুকোবে কি মরণে?
কাকচক্ষু মিঠে জলরাশি
লোনা হয়ে ওঠে
ক্রমাগত ক্ষরণে।


বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৩

জীবন



জীবন
- যাযাবর জীবন

থেমে থাকে না কিছুই
কারো জন্যই,
না বৃষ্টি
না মেঘ
না হাসি
না কান্না
না কথা বলা
না পথ চলা
না জীবন
না মরণ,
শুধু একটু থমকায় হয়তো
প্রিয়জনের চলে যাওয়া;
স্মৃতির এত সময় কোথায়
জীবন পালে নতুন হাওয়া
মাটির ঘরে বসত যাহার
মাটির সাথে কথা কওয়া।

এইতো জীবন
এই নিয়তি
এটাই সত্যি
মেনে নেয়া।


হন্তক


হন্তক
- যাযাবর জীবন

স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন
হত্যা করি নিজের হাতে
স্বপ্ন হন্তক আমি স্বপ্নের কারিগর হয়ে
প্রতিদিন প্রতিরাতে
বাস্তবকে ছুঁয়ে
বাস্তব প্রতিফলনের অনেক অনেক আগে।

ভ্রূণ হত্যায় পাপ হয়
স্বপ্ন হন্তকের সাজা কি?
হত্যার আবার এপিঠ ওপিঠ আছে নাকি?

অন্ধকারের ঘর


অন্ধকারের ঘর
- যাযাবর জীবন

চলমান ঝর্ণাধারায় পিচ্ছিল শ্যাওলা
বাঁশঝাড়ের ঘুণে ধরা হলদেটে কঞ্চিগুলো
নিশীথ রাতের অন্ধকারের পাহাড়ি বুনো সুর
জ্যোৎস্নার প্রখর আলোকচ্ছটায় পুড়ে যাওয়া রৌদ্দুর
অন্ধকারের আয়নায় দেখা হলো ছায়ার
এদিক ওদিক, অনেক তো দেখা হলো দুজনার;

চল এবার ঘর বাঁধি
বিবর্তনের অন্ধকারে।

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

নিন্দিত নরক


নিন্দিত নরক
- যাযাবর জীবন

ভাবনার সহস্র জ্বালামুখ
আজ টুঁটি চাপা সংকীর্ণ
চেতনারা চেপে বসে বুকের ওপর
গ্রাস করছে এক বিষণ্ণ গহ্বর;
চিন্তা ভাবনার রংধনু কথন
স্তব্ধ হয়ে নিস্তব্ধ অবহেলায়
ক্ষয়িষ্ণু কাগজ টুকরো টুকরো
ভাঙ্গা পেন্সিলের শীষে
এলোমেলো রঙ ছড়িয়ে আছে
বিচ্ছিন্ন ভাবে সাদা ক্যানভাসে
বিচ্ছিন্ন কথার ফুলঝুরি
আজ তিমির নিস্তব্ধতায়
নিজেরই বেঁছে নেয়া
নিন্দিত নরক জ্বালায়।


অনুভবে অনুভূতি


অনুভবে অনুভূতি
- যাযাবর জীবন

সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না
চাওয়া পাওয়া
রিপুর তাড়না
কখনো পেয়ে হারানোর বেদনা;
কতরকম অনুভূতি কাজ করে
মনের ভেতরে
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে
দিন রাত্রির অষ্টপ্রহরে।

অনুভবে অনুভূতির তীক্ষ্ণতা
প্রারম্ভ, ভোরের সূর্যোদয়ের কালে
খুব মাঝে মাঝে বিষের মত বিঁধে গায়ে
মধ্যাহ্নের তাতানো রৌদ্দুরে
বিকেলের সূর্যালোকে অনুভবগুলো
হেলে পড়ে উপলব্ধির দুয়ারে;
অনুভূতির ছায়া দীর্ঘ হতে হতে মিলিয়ে যায়
সন্ধ্যের আলোছায়ায়
আলো আঁধারির উপলব্ধির মায়ায়;
নতুন করে জন্ম নিতে নতুন অনুভূতিগুলো
নতুন তীব্রতায়
চন্দ্রোদয়ের কালে
রাতের মধ্যপ্রহরে
নির্ঘুম বিষ চোখের পাতায়
কারো কথা মনে হলে
বুকের অনেক গভীর ভেতরে
কেমন এক অন্য অনুভূতির তীক্ষ্ণতা
নতুন করে;
চন্দ্র হেলে পড়ে রাতের শেষ প্রহরে
নতুন সূর্যোদয়
আবার নতুন অনুভূতির জন্ম লয়
এভাবেই ক্রমাগত
চলে আসছে অবিরত
যুগ যুগ কাল ধরে।

মনের দুয়ার খুলে রেখেছি
নতুন নতুন অনুভূতির উপলব্ধিগুলোকে
স্বাগত জানাতে
দিবা রাত্রির অষ্টপ্রহরে
নতুন আবাসন
নিত্য নতুন
বসত গাড়ে মনের ঘরে।


গতি


গতি
- যাযাবর জীবন

তোকে ছাড়া চলতো না আমার একটি মুহূর্ত
কিংবা আমা বিহীন তোর
আজ মনে হয় আঁটকে ছিলেম দুজনেই
ফাঁপা একটা সম্পর্কের ভেতর;
কাওকে ছাড়া কারো চলে না
বড্ড মিথ্যে, ভুল ধারণা;
জীবন চলে তার নিজস্ব পথে
থাকুক আর না থাকুক
কেও কারো সাথে;
ঘূর্ণায়মান পৃথিবী
ঘুরে চলেছে অবিরাম
তার নিজস্ব কক্ষপথে;
থেমে নেই কেও
না তুই
না আমি
না আমাদের জীবন
না ঘূর্ণায়মান পৃথিবী।

চলাই জীবন
চলাই গতি
সাথে নিয়ে এসেছি কপালে লিখে
অমোচনীয় কালিতে যার যার নিয়তি.........

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

পথ চলতে পথের বাঁকে


পথ চলতে পথের বাঁকে
- যাযাবর জীবন

এইতো সেদিন
অনেক দিন পর খুব হঠাৎ
কেন জানি বাইরে লাঞ্চ করতে ইচ্ছে হলো
তুই তো খুব ভালো করেই জানিস
একা খাওয়ার অভ্যাস নেই
তাই সাধারণত: লাঞ্চ করা হয় না
তবু সেদিন কি যে হলো?
সকালে নাস্তা করিনি বলেই বোধহয়
ভর দুপুরে একটু পেটে টান পড়লো
কেন জানি তোর খুব পরিচিত সেই
রেস্টুরেন্টটার কথা মনে পড়ে গেলো;
অনেকটা পথ আমার জন্য, হাঁটতে হয় আজকাল
তোর মত লাটসাহেবা তো আর নই
যে কালো জীপে, টিনটেড কালো গ্লাসে মুখ ঢেকে চলব!
অগত্যা পায়ে হেঁটেই গন্তব্য পথ যাত্রা
একটু সময় লাগলো
পৌঁছে গেলাম পথ হাঁটায়
পথ যতই লম্বা হোক না কেন
কোন এক সময় তো পথ ফুঁড়োয়।

রেস্টুরেন্টে ঢুকেই খুব আকস্মিক
ধাক্কা খেলাম যেন হাজার ভোল্টের ইলেকট্রিক;

কোনার টেবিলে কে বসে?
যদিও পেছন থেকে তবুও একটুও অসুবিধা হয় নি চিনতে;
আরে বোকা যতই চুল উল্টে ভোল পাল্টাস না কেন
তোকে সামনে কিংবা পেছন থেকে
এক পলকের একটু দেখাই আমার জন্য যথেষ্ট।

অনেক অনেক দিন পর দেখলাম তোকে
খুব হঠাৎ করেই
একদম অনিচ্ছাকৃত অজান্তে;
আমি দেখতে চাই নি
কেন যেনও চোখটা আটকে গেলো
আঠার মত
পলক ফেলতে কষ্ট হচ্ছিল খুবই
তবু খুব সহসাই বোধোদয় হলো;
ঘুরে দাঁড়ালাম চট করে পেছন ফিরে
তোর চোখ যাতে না পড়ে আমার তরে;
হয়ত ইতস্তত করবি
হয়তোবা একটু অস্বস্তি
কি দরকার তোকে বিব্রত করে?
খুব অন্তরঙ্গ ঘনিষ্ঠ বসে ছিলি তোরা দুজনে
হয়তো অর্ডার দিয়ে লাঞ্চের অপেক্ষায়
কিংবা লাঞ্চের সমাপ্তিতে একটু সময় পার করায়
হাতে হাত রেখে
যেমনটি করতাম আমরা দুজনে মিলে
বাইরে কোথাও খেতে গেলে।

তোর হাতটাতেই আড়চোখ চলে গেল
কেন জানি
তোর হাত নেই তোর কাছে
ওটা বন্দী হয়ে আছে তোর সাথীর হাতের মুঠোয়;
কেন জানি খুব বড় একটা ধাক্কা লেগেছিল বুকে
খুব সহসাই ঝটকা ইলেকট্রিক ভোল্ট, হঠাৎ করে
হয়তো পুরনো কথা মনে পড়ে,
আমার হাতটাও কেন জানি
বড্ড বেয়ারা হয়ে উঠলো খুব সহসাই
কখন যে পাশের টেবিলে রাখা গ্লাসটা ভেঙ্গে গেল
চোখের নিমিষে মুঠোর চাপে;
এই যাহ্‌, এ কি হলো?
ভাগ্যিস তুই পেছন ফিরে বসেছিস
কিংবা মত্ত দুজনে দুজনার মাঝে
খেয়াল করিস নি, বেঁচে গেলাম বাবা;
আমার আসলে কিছু মনে করার নেই
ঝটকা লাগারও কিছু নেই
আমিও তো ঠিক এমনই করতাম
কোন এক সময়
তোর পাশে আমি এলে;
হাত কেটে রক্ত ঝরছে, ওয়েটার দৌড়ে এলো
সাদা ন্যাপকিন হাতে;
বুকের ক্ষরণেও কি রক্ত ঝরে?
নাহ আজ আর লাঞ্চটা হলো না এখানে
থাক অন্য কোনো দিন;
ওয়েটারের পকেটে কটি টাকা বকশিশ গুঁজে দিয়ে
উল্টো পথে হাঁটা ধরলাম রাস্তার দিকে।

আমি দিবাস্বপ্ন দেখতে চাই নি
তবু তোকে দেখে ফেলেছিলাম
খুব সহসাই কোন এক বিষণ্ণ বিকেল বেলায়
লাল শারীতে বড্ড মানিয়েছিল তোকে
এখনো চোখে লেগে আছে;
সে দিন থেকে কেন যেন বিকেলটাই বদলে গেলো
আমার কাছে, খুব সংগোপনে;
এখন আর বিকেল দেখি না
দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে
বিকেলের ম্লান আলো সন্ধ্যেয় গড়ায়
গড়াক; প্রকৃতির নিয়মে;
আমার কি এসে যায়?
হাত বাড়িয়ে এখন আর ছোঁয় না
আমার হাত অন্য কারো হাত
আমি চলি আমার নিয়মে;
তুই হাতে নিয়ে বসে থাক নতুন প্রিয়ার হাত
তুই খেলিস প্রেম খেলা তোর নিয়মে;
ইচ্ছে নাকি স্বেচ্ছাচারিতা
আমি জানি না
জিজ্ঞাসা করি নি কখনো
জানতে ইচ্ছে হয় না।

এ জীবনে দেখতে চাই নি তোকে আর
তবু দেখতেই হলো
প্রকৃতির খেলা হয়তো
অথবা ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নয়তো;
হয়, এটা প্রায়শই: হয়
আমার সাথে হতেই হয়;
ন-মানুষের ভাগ্যে অনেক বড় একটা "না" ছাপ
মেরে দিয়েছেন ওপরওয়ালা
পরিত্রাণ? এ জন্মে হবে না বোধহয়।

তোকে দেখতে চাই না কখনই আর
তবু আমার চাওয়া আর না চাওয়ায়
যাবে আসবে কার?
তোর; না কি ঐ নিষ্ঠুর ওপরওয়ালার?
এভাবেই না চাইতেও দেখা হয়ে যাবে
আবার হয়তো
কোন এক রেস্টুরেন্টে কিংবা কোন জানা আর অজানা
রাস্তার ধাঁরে
পথ চলতে পথের বাঁকে, বারে বারে।

এখন আর এ নিয়ে ভাবি না খুব বেশী
নিয়তির খেলা খেলছে নিয়তি
আমি, তুই, আমরা খেলার পুতুল
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি;
খুব মাঝে মাঝে দেখা হয়ে গেলে
তোর সাথে
এখনো কেন জানি ঝাপসা হয়ে ওঠে
চশমার কাঁচ দুটো, অন্ধকার হয়ে
ও কিছু নয় রে, চোখের জলীয় বাষ্প
সময়ের সাথে সাথে উবে যায় হাওয়ায়
ঠিক তোর মত।

তোকে এভাবে দেখতে চাই নি
তবু দেখতে হলো
তোকে নিয়ে আর কিছু লিখতে চাই নি
তবু কলমটা হাবিজাবি এঁকে গেল;
আমি শুধু একটু ঘুমাতে চেয়েছিলেম
গভীর শান্তির ঘুম
চেতনার জগত থেকে অচেতন জগতের গভীর আত্ম-ধ্যানে
যেখানে নির্জনতা কথা কইবে নীরবতার সাথে
মাটির অনেক গভীর তলদেশে
একেবারে মাটি হয়ে, মাটিতে মিশে।





মানব ধর্ম


মানব ধর্ম
- যাযাবর জীবন

লবণ ছিটাতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার
লাগুক আর না লাগুক
তরকারির বাটিতে কিংবা জীবন চলার পথে;
মুখে বন্ধু বলে ডাকতাম গাধাটারে
কুত্তা বিলাই যা ইচ্ছা তাই মনে মনে
বেটা বেক্কল মূর্খ জীবনেও বুঝে নাই
ওর মাথায় কাঁঠাল ভাইঙ্গা খাই;
বেচারার হাতটা নাকি কাইট্টা গেছে
আহহারে যাই, একটু দেখতে যাই
চুপে চাপে হাতে লবণ মাখাইয়া লইয়া যাই;
যাওয়া আর আসার পথে
হাত বুলানোর ছলে
গাধাটার কাঁটা ঘাঁ'য়ে একটু লবণ ছিটাই
দেখি না একটু কেমুন লাগে
লবন ছিটাইতে; মনে বড্ড আনন্দ পাই
ও শালা তো আগের থাইকাই গোমূর্খ
ইদানীং তো আর মানুষের পর্যায়েও নাই।

রে মূর্খ; এটাই মনুষ্যত্বের পরিচয়
ও হে গাধা; মানব ধর্ম কথা কয়।


অর্থ




অর্থ
- যাযাবর জীবন

ছোট্ট একটি নাম
অথচ বিশাল কলেবরে
নানাবিধ কর্মযজ্ঞ তার
সে এক অমূল্য রতন
সকলের মনের ভেতরে থাকে খুব সযতন
সকলে পিছনে পেছনে দৌড়োয় তার
কেও কেও এদিক আর ওদিক হাতড়ায়
তীব্র আকাঙ্ক্ষা মনে – তারে ধরিবার।

কি সেই মহামূল্যবান বস্তু?
বাঁধায় তুলকালাম অনর্থ;

যার জন্য পৃথিবীতে সকল মতপার্থক্যের কারণ
নির্ণয় করে দেয় সম্পর্কের ধরণ
শুধুই দেবার আর নেবার
এর মাঝে নেই কোনই তৃতীয় পক্ষ
যদি অদৃশ্য কিছু থেকে থাকে তবে তা ‘স্বার্থ’;
তুচ্ছ তার নাম অথচ মহামূল্যবান মহার্ঘ্য
এরই লাগি সকল বিসর্জন বিবেকহীন
না হয় হলোই সকলের সাথে সম্পর্ক বিহীন
হোক না বাবা, মা ভাই বোন পরিবার পরিজন
কিংবা অন্য যে কোন সম্পর্ক
এর কাছে সব একদম তুচ্ছ;
সকল অনর্থের যে কারণ
অমানুষের হৃদয় করেছে তারে ধারণ;

খুব ছোট্ট একটি ডাক নাম তার – “অর্থ”





রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মানুষের মন



মানুষের মন
- যাযাবর জীবন

নিজের সাফল্যে আমরা যত না খুশী হই
কাছের মানুষকে বিপদে পড়তে দেখলে
তার থেকে অনেক বেশী আনন্দিত হই
হায়, আমার সাধু সন্ন্যাসীর মনের দরবার!
দূর থেকে দাঁড়িয়ে আহা উহু করাতে
আমাদের জুরি মেলা ভার
মানুষ না কি পরিচয় আমাদের
হায়, বুঝি না মানুষের আজব কারবার।


ছলাকলা না মনকলা?


ছলাকলা না মনকলা?
- যাযাবর জীবন

সম্বোধনে কিছুই যায় আসে না
যা ইচ্ছে ডাকতে পার;
মা, বোন, বান্ধবী কিংবা প্রিয়তমা
মনে মনে মনকলা খেতে খেতে
বসে বসে নারীর নানান রূপ দেখই না;
নারীর মন বোঝে নি ওপরওয়ালা
তুমি কোন ছার হে মূর্খ মানব
এসেছ মন বুঝনে-ওয়ালা
না বুঝেই নারীর ছলাকলা
মনে মনে খেয়ে যাও মনকলা!

মা ডাকে ডাকছ, দিচ্ছ ছেলের শ্রদ্ধা
বোন ডেকে দিচ্ছ তাকে ভাই এর ভালোবাসা
বন্ধু ভেবে কাছে টানা
কিংবা প্রেমিকা ভেবে,
ভালোবাসায় সাগরে ভাসিয়ে রাখ না!
কে বাঁধা দিয়েছে তোমায়,
কে করেছে মানা?
প্রতিদান অবশ্যই পাবে একটুকু হলেও
ছলায় বা কলায়?
সম্পর্ক?
আসলে তাঁদের কাছে উনিশ আর বিশ
যতক্ষণ পাশে থাক মধু
দূর করে দিলেই মনে হয় বিষ;
সম্বোধনে তাদের কিছুই আসে যায় না
কিংবা সম্পর্কের গণ্ডীতে বেড়ী পড়া,
তুমি মনে মনে খেয়ে যাও মনকলা।

সে তোমাকে কিভাবে নিচ্ছে?
তুমি আসলে জানই না,
তবে যেভাবেই নিচ্ছে সেটাই তাঁদের কাছে চূড়ান্ত
তুমি শুধুই ভেবে মর প্রকারন্ত;
তারাই ঠিক করে নেবে
তুমি কে হবে?
হতে পার তুমি তার ভাই, বন্ধু
প্রিয়জন কিংবা জীবন সাথী;
একচক্ষু আবেগে পূর্ণ নারীর মন
সে মনেতে যেভাবে ভাবে
সেভাবেই তোমাকে নেবে
তাতে কিন্তু নেই একটুকুও ফাঁকি।

মাটির ঐ পুতুলের ভিতরে
ভুলেও নারীর হৃদয়ের তলদেশ
খুঁজতে যেও না
অথৈ জলে ঢেউ উঠলে
কোথাও কিনারা খুঁজে পাবে না;
তার থেকে মনকলা খাও
আর দেখে যাও নারীর ছলনা।

ভাবাবেগের নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো হয়
যদি ভাবলেশহীন হয়ে যেতে পার;
আর নয়তো বিরহ ব্যথায়
দিনের বেলায় ধুঁকে ধুঁকে চল
আর রাতের বেলায় চাঁদের সাথে একা কথা বল
কিংবা দহনের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মর।

আমার কি?
নারীর কলা যতটুকু দেখেছি, বলে গেছি
যতটুকু জেনেছি, জানিয়েছি;
পরে কিন্তু বল না আবার,
জেনে শুনেও সাবধান করে নি।




শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মনুষ্যত্ব


মনুষ্যত্ব
- যাযাবর জীবন

চামড়ার খোলস হাড়ের ওপর
চড়ানো তো থাকে
জন্তু জানোয়ারেও;
তবে, মানুষ বলে কাকে?
ওপরওয়ালা মনের খোলসেতে ভরে
মনুষ্যত্ব দিয়েছে যাকে।

লোভ রিপুর তাড়নায়
মনুষ্যত্ব দেখি আজ শোভা পায়
শুধুই বই এর পাতায়
কিংবা কোন পাগল কবির
কবিতার ভাষায়
আর না হয় পাগল কোন আঁকিয়ের
সাদা ক্যানভাসে কালো কালিতে
এলোমেলো লেপ্টানো
বড্ড শোভা পায়।

ওপরওয়ালা ওপরে বসে চিন্তিত বড়
বোঝে না আজকের মানুষের মতিগতি
অনেক যতনে নিজ হাতে গড়ে
মাটি আর পানিতে
তাঁরই সৃষ্টি সর্বশ্রেষ্ঠ মনুষ্য প্রজাতি
কোথায় যাচ্ছে এরা
কেন এত তরা
কি হবে এদের গতি?
বিবেককে এরা আজ পুরোমাত্রায় দিয়েছে বিসর্জন
রিপুর কাছে করে দিয়েছে নিজেরে সম্পূর্ণ সমর্পণ
হায় মনুষ্য জাতি;
করেছে মনুষ্যত্ব থেকে বিভাজনে বিবেকটারে,
ওপর ওয়ালা বড্ড চিন্তিত ভাবে
চামড়ার খোলসে ভরে তবে
মানুষ বানিয়েছি কারে?





বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বিষ



বিষ
- যাযাবর জীবন

বিষের প্রকারভেদ জানো?
আমার কাছে শোনো;

লাল পিঁপড়ার কামড়ে চুলকায় খানিক
হয়তো একটুকু উহ্‌
কাঠ পিপড়ার কামড়ে
বড্ড জ্বালা;
ঠিক ভ্রমরের কামড়ের কাছাকাছি
তবে রেগে গেলে এরা
কামড়ায় মেলা;
ঢোঁড়া সাপের কামড়ে জ্বলে একটু
তবু সয়ে যায়;
কাল কেউটের ছোবল;
জান কেমন?
ঠিক যেন মানুষের লোভ রিপুর
নখদন্ত মেলা, কামড়ের মরণ।

ভালোবাসার কামড়ের বিষ কেমন?
একদম মধুর মতন;
আর ভালোবাসার মানুষের উগরে দেয়া ঘৃণার বিষ?
কাঠকয়লার গনগনে লাল আগুনে বসে থাকা যেমন।

মানুষ মুখে কামড়ায় বারবার
ঢোঁড়া সাপের বিষে
জ্বালাতে ভালোবাসার মানুষেরে
অথচ নিজে দহনে জ্বলে পুড়ে মরে শতবার;
তারপর?
একসময়, ঢোঁড়া সাপ পরিণত হয় শঙ্খচূড়ে
ক্রমাগত বিষের জ্বালা সয়ে যেতে যেতে।

তারপর?
একটি ছোবল শঙ্খচূড়ের বিষে
ঘৃণা মাখানো শেষ ছোবল
মানুষের দাঁতে মানুষেরে
কামড়ে ধরে শেষবার;
ছিন্নভিন্ন জীবন
আলিঙ্গনে মরণ;
জীবন আর মৃত্যুর মাঝে
শুধু একটি মুহূর্তের ফারাক
বড্ড কার্যকরী এ বিষ
হতে এপার আর ওপার।

রক্তের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ মিশে গেলে
বেঁচে থাকার আছে কি উপায়?
হোক সে প্রেমে; কিংবা ঘৃণায়?




বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

নরকের পৃথিবী


নরকের পৃথিবী
- যাযাবর জীবন

স্বর্গ মর্ত্য পাতাল খুঁজে চলেছি
মন্দির, মসজিদ আর গির্জায় ঘুরে ঘুরে
ঈশ্বর, আল্লাহ্‌ কিংবা ভগবানের সন্ধানে;
যদি কোথাও দেখা পাই তার
শুধাইব তারে একটিবারে;
কি অপরাধ ছিল আমার পূর্ব জন্মের কালে?
কেন এখানে টেনে এনে শাস্তি দিল আমায়
এই জনমে; এই নরকের পৃথিবীতে.........





লোভ


লোভ
- যাযাবর জীবন

লোভ রিপুটা আছে
আমাদের সবার মাঝেই আছে,
ঘুমিয়ে কিংবা জেগে
পরিমাণে শুধু কম আর বেশি
কারো কারো প্রকাশ একটু বেশি রকম প্রকট
কারোটা চুপেচাপে ফণা মেলে অনুভবে;

লোভের প্রকাশ প্রকট হলেও একদিক দিয়ে ভালো
অন্তত: হিপোক্রেসিটা কিছুটা হলেও তো কম হলো!!!!



মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জীবনের ভিন্ন লক্ষ্য



জীবনের ভিন্ন লক্ষ্য
- যাযাবর জীবন

জীবনের চলার পথের গুরু এক
আর সাধন-পথের গুরু আরেক
হাজার রঙের মানুষের লক্ষ্য অনেক
লক্ষ লক্ষ্যের আদতে লক্ষ্য এক
জীবন পথের চেলাচামুণ্ডাদের
তার নাম - "অর্থ"
সাধন পথের চেলাচামুণ্ডারা
এর নামকরণ করেছে - "অনর্থ"

এক এক জন এক এক ভাবে দীক্ষিত হয়
যার যার গুরুর দীক্ষায়
কেও শিক্ষায় কেও কুশিক্ষায়
সাধনা-লব্ধ জ্ঞান এক একজনের এক এক রকম
কারো সমৃদ্ধি কারো কল্যাণ
কেও মানব প্রেমে খোঁজে ভগবান।

জীবনপথের হোক আর সাধন-পথের
গুরুর দেখা সবাই পেতে চায়
কেও পায় আর কেও বা হারায়
খুব অভাজনেরা পেয়ে হারায়।




ডিজিটাল জগৎ


ডিজিটাল জগৎ
- যাযাবর জীবন

আজকাল ডিজিটাল হয়ে গেছি
তুই, আমি, আমরা ও আমাদের জীবন
এমনকি ডিজিটাল হয়ে পড়েছে আমাদের প্রেম
ডিজিটাল প্রেমেতে ডিজিটাল রসনা
ডিজিটাল কামনায় ভার্চুয়াল বাসনা;
এখানে বার বার রক্তাক্ত অজস্র আমি
এখানে বার বার রক্তাক্ত অজস্র তুই
এখানে বার বার রক্তাক্ত অজস্র ভালোবাসা
চেনা আর অচেনার ভীরে যেন সব ধোঁয়া ধোঁয়া
ভার্চুয়াল প্রেমে কেও পায়না কারো ছোঁয়া
তবুও মিছে ভালোবাসার এক জগৎ গড়ে তুলছি
আমরা সবাই মিলে
তুই, আমি আর
আমাদের চারিপাশের সকল ডিজিটাল ভাবনা।

ভার্চুয়ালে বন্দি তুই
ভার্চুয়ালে বন্দি আমি
ভার্চুয়ালে বন্দি প্রেম, কাম, ভালোবাসা
ভার্চুয়ালে বন্দি ডিজিটাল নামক এক নতুন প্রজাতি
ডিজিটাল প্রেমের ভার্চুয়ালে মাখামাখি
আদতে কোথাও খুঁজে পাই না আমরা রিয়ালিটি।

এখানে প্রতিদিন দেখা ভার্চুয়াল জগতে
পরস্পরের সাথে,
তবু কখনো হয়নি দেখা বাস্তবেতে
এখানে নিত্য চলে ডিজিটাল প্রেম
আর প্রতিদিন একই হারে ভার্চুয়াল ছেঁকা,
তবুও প্রেম চলে ভার্চুয়াল জগৎ জুড়ে
ভার্চুয়াল নারীর সাথে ভার্চুয়াল নরে;

আদতে এখানে -
তুই একা
আমি একা
আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকি
একসাথে বসবাস
নিত্যই ভার্চুয়াল দেখা;
তবু বাস্তবে থাকি বড্ড একা একা
বুকের ভেতরটা খুব বেশি খালি খালি
একদম যেন বাস্তবের পরিপূর্ণ শূন্য ফাঁকা।



সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অবমূল্যায়ন


অবমূল্যায়ন

- যাযাবর জীবন

নারী মানেই সুন্দরী
পুরুষ তার পূজারী;
তবে প্রেম মানে কি হে
সুন্দরী রমণী?
শুধুই দেহতে এমন বিশেষ কিছু, কি আছে রে তোর?
রমণের ক্লান্তির পর, একটু আছে কি ভাবনার অবসর?

প্রেম মানে কি শুধুই দেহ আর রমণের বাসনা?
এতে ভালোবাসার বড্ড বেশী অবমূল্যায়ন হলো না?




মুঠোফোনে স্বপ্ন কথন


মুঠোফোনে স্বপ্ন কথন

- যাযাবর জীবন

সাগরের অনেক গভীর তলদেশ থেকে
জলের কোলাহল ভেঙ্গে
মৃদু একটু জল তরঙ্গ
ভেসে আসে কানে
মুঠোফোনের তরঙ্গ মাধ্যমে
তখন আমি গভীর ঘুমে
ছোট্ট একটি প্রশ্ন - কেমন আছ পৃথিবী?

বুকের খাঁচায় চারিদিক থেকে
কোথা থেকে যেন এক সাঁড়াশির চাপ
ছটফট করে লাফিয়ে বিছানায় আমি
যেন ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে গেছি
দমবন্ধ কিছুক্ষণ
নাকি অনেকক্ষণ
মনে নেই এখন
হিমালয়ের ওপাড় থেকে হালকা বাঁশির শব্দ কি শুনেছি
নাকি ঘুমের ঘোরে মনের ভ্রমে জেগে উঠেছি
হাতের মুঠোফোন কানে লাগানো দেখি
সুরেলা বাঁশি আবার সুধায় - কেমন আছ পৃথিবী?

এবার যেন বোধোদয় হয়
চাঁদের গান পৃথিবীতে বাজতে রয়
আমি বিমোহিত
অভিভূত
অবশ হয়ে পড়েছি;
অনেক অনেক কিছু একসাথে বলতে ইচ্ছে করে
গলাফাটা চিৎকারে
তবু টুটি চেপে ধরি সংযমে
খুব ধীরে উত্তর দেই -
চাঁদনী ছাড়া অন্ধকার হয়ে আছে পৃথিবী;
"তুমি কবে আসবে চাঁদনি?"

আবার সেতারের টুংটাং তরঙ্গ ধ্বনি
আমি তো তোমারই আছি পৃথিবী
সেই বিগ-ব্যাং থেকে আজ পর্যন্ত
তোমার সাথে লেপ্টে আছি
মাঝে মাঝে শুধু সূর্যটা বাঁধা হয়ে আসে
দুজনার মাঝে
এটাও বোঝ না কেন তুমি?
সেই আগের মতই পাগল রয়ে গেলে
এতদিনে একটুও বদলাও নি।

তারপর শুনশান নীরবতা
দূরে কোথাও ঝি ঝি পোকার একটানা ডাক শুনি
মুঠোফোন নিস্তব্ধ নিশ্চুপ হয়ে গেছে
আমিও স্তব্ধ
তবে কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছি?
হতেই পারে না
যুগ যুগ ধরে ঐ কণ্ঠস্বর
আমার কানে একটুও ভুল হবে না;
বিহ্বল চেয়ে পাগলের মত নাম্বারটা বের করার চেষ্টা করি
মুঠোফোনের কল লিস্টে দেখি
শেষ রিসিভ করা কলটি
"নো নাম্বার" উঠে আছে
সেই অনেক আগের কথাই রেখেছে সে
কখনোই আমায় জানতে দেয়নি
তার বর্তমান অবস্থানটি
শুধু খুব মাঝে মাঝে
অনেক অনেক দিন পরে পরে
হঠাৎ করেই এভাবে আইডেন্টিটি-বিহীন নাম্বার থেকে
একটি সুরেলা ধ্বনি ভেসে আসে কানে
খুব অসময়ে
যখন আমি গভীর ঘুমে;
ঠিক তখনই চাঁদনি জানতে চায় তার পৃথিবীর কথা
মুঠোফোন নামক তরঙ্গ মাধ্যমে,
আমি শুধু টের পাই
আমার জন্য তার ভালোবাসাটুকু
এখনো সেই আগের মতই রয়ে গেছে তার মনে
যেমন করে আমি এখনো সেই আগের মতই ভালোবাসি তাকে
দূর থেকে দূর থেকে
ভালোবাসার প্রতিদানে ভালোবাসা
সীমাহীন প্রতিদিন।

হাহাকারে বুকের অনেক গভীর তলদেশ থেকে
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে
তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই, ভালো নেই চাঁদনি।


রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অভিমানের বেড়াজাল


অভিমানের বেড়াজাল
- যাযাবর জীবন

আজ চন্দ্রের কততম দিবস? - ভুলে গেছি;
হিসেব রাখা হয় না অনেক দিন ধরে
অথচ চাঁদের সাথে আমার প্রেম কাহিনী
সে আর কে না জানে? রাত্রি ও ধরণী!

অথচ দেখ জীবনটাই কেমন বদলে গেছে আজ
এখন আমার মধ্য দুপুর অথচ পৃথিবীর নিশুতি রাত
আমি জেগে আছি অন্ধকার ঘরে আর আকাশেতে জেগে চাঁদ
মনে পড়ে দুজনকেই দুজনের
তবু দেখা হয় না কারো সাথে কারো
খুব জানা কারণে আর তুচ্ছ অকারণে
অল্প কিছু ভুলে কিংবা অনেক দিনের জমানো অভিমানে;
আমি পড়ে থাকি অন্ধকারের কোণে
চাঁদ আলো বিলিয়ে যায় ধরিত্রীর কোনে কোনে
আমার অভিমানে চাঁদের কি এসে যায়?
আজ আমার আর চাঁদের মাঝখানে
হাইফেনের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথার ওপরের ছাঁদ
যেমন তোর আর আমার মাঝে ছোট্ট একটু অভিমানের ফাঁদ।।

আমার আর চাঁদের মাঝে ভেঙ্গে যাবে অভিমান
খুব সহজেই, খুব সহসাই
যখনই সরে যাবে মেঘের চাদর
তার আর আমার মাঝে
কিংবা আমার ইচ্ছে হলে
মাথার ওপরের ছাঁদটাকে পদতলে
কাঁচকলা দেখিয়ে অন্ধকারের কালোয়;
মন ভরে তাকে একবার দেখলেই
ভাসিয়ে দেবে আমায় আলোর বন্যায়
ভেসে যাবে আমাদের সব অভিমান
চাঁদের আলোকিত আলোয়।

কিন্তু তুই? আমার আর তোর মাঝের
অভিমানের অদৃশ্য বেড়াজাল
যেটায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি দুজনে বেদনায়?
কে কাটবে ঐ বেড়াজাল?
তুই না আমি?
কেও পা বাড়াই না;
অক্ষমতার হাঁ হুতাশ বুকে নিয়ে আমরা দুজন
দু ভুবনে পড়ে আছি;
সেই কতদিন হয়ে গেছে আমরা কোথাও যাই না
আসলে আমাদের কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই
একে অপরকে ছাড়া;
শুধু শূন্য হাহাকার বুকে নিয়ে ঘুরি ফিরি খাই দাই
আর রাতের নির্জন আঁধারে দুজন
নির্জনতার গান শুনি
একে অপরের অতৃপ্ত বুকে ঘ্রাণ শুঁকি মনে মনে
মনের ঘরে বন্দী হয়ে অন্ধকারে তাকাই
যদি কোথাও জোনাক জ্বলে ওঠে
একটুখানি আলোর দিশা কোন এক সুদূর থেকে
পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের দুজনকে দুজনার পানে।

অপেক্ষায় আমি
প্রতীক্ষায় তুই
প্রহর গোনার প্রহর বয়ে চলে টিক টিক অবিরাম
যেন সেই বিগ-ব্যাং থেকে আজ অবধি
দুজনার এই অতৃপ্ত প্রতীক্ষার প্রহর
কখনো সমাপ্ত হবে কি?




ওপরওয়ালার খোলা কথা



ওপরওয়ালার খোলা কথা

- যাযাবর জীবন

ওপরওয়ালা ডেকে কয়
ওরে ওরে ও বোকা
ঠকাতে মন খারাপ করিস কেন?
তুই তোর মত ঠকে যা, ঠকে যা।

মানুষের আর সাধ্য কি আছে?
ঠকায় মানুষেরে?
দানার মালিক তো বসে আছে
তোদের মাথার ওপরে
তোদেরই দিকে চেয়ে
কেন ভুলে যাস তোরা?

মন খারাপ করিস না রে মানব
তোদের ঠকানোর ফাঁকের মাঝেও
আমার গোপন ফাঁক, রেখে দিয়েছি অনেক
তুই তোর মত করে ঠকে যা;
মানুষ আর কতই ঠকাবে তোকে?
তোর টা শেষ হলে
ঢেলে দেব আরো অনেক করে
আমার অসীম ভাণ্ড থেকে,
দেখছি আমি সব এখানে বসে
তোদের নসিব লিখে রেখেছি আমি
আমার নিজ হাতে
মনকির নকীর? সে তো শুধু গুনে যাচ্ছে
হিসেব রাখার ছলে
বসিয়ে দিয়েছি আমিই তাদের তোদের কাঁধের পরে;
পাপ পুণ্যের ফলাফলে তোর কি যায় আসে
বিবেক বুদ্ধি দিয়ে দিয়েছি অনেক করে তোকে
নিজের মত করে ঠকিয়ে যা কিংবা ঠকে যা
তোর বিবেক যা বলে
যার যার হিসেব অনুযায়ী
কর্মফল পেয়ে যাবি আখেরাতে।



শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

পাগলের প্রলাপ


পাগলের প্রলাপ
- যাযাবর জীবন

খুব অল্পতেই রেগে উঠি ইদানীং
হয়তো স্বভাব দোষে
তুই খুব ভালো করেই জানিস তা,
সেই কত যুগ ধরে আমাদের বাস একসাথে;
হয়তো ইদানীং রেগে যাই হঠাত করেই
হয়তো একটু অতিমাত্রায় বেশী রকম
মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ঔষধের প্রভাব যখন
তাও খুব ভালো করেই জানিস তুই
যখন বাক্সর পর বাক্স ঐ নেশাগুলো কিনে আনিস নিজেই
আমার তো আর ঔষধ কেনারও ক্ষমতা নেই!
গ্লাসে পানি ঢেলে বিষগুলো চালান করিস নিজের হাঁতে
আমারই পেটে, একটু বেশীদিন বাঁচিয়ে রাখতে;
হাজার হোক একপ্রকার বিষই তো
গণ্ডগোল তো একটু হবেই মাথায়।

ইদানীং কি যে করি, কাকে কি কেন বলি
কিছুই মনে থাকে না
কিছু বুঝে বলি বেশিরভাগ না বুঝেই;
শুধু তুই কিছু বললেই যত আমার বাহাদুরি
গলা ফাটানো চিৎকার সব তোরই ওপর ঝারি;
সয়ে যাস মুখ বুজে
পাগল কে বড্ড বেশী ভালোবাসিস যে!
আমি বুঝি, সবই বুঝি
তবু ঐ চণ্ডাল রাগ সামলাতে না পারি
সোজা সাপ্টা মুখের তুবড়ি উড়িয়ে ঝগড়া করি
মেয়ে মানুষের মতন;
তোর কাছ থেকে নেয়া শিক্ষার
প্রয়োগ করি তোরই ওপর অতি যতন;
বেশি রাগ করিস নে বাবু
বড্ড ভালোবাসি যে
তাই তো উনিশ থেকে বিশ হলে
মনটা অভিমানে কাঁদে;
কি জানি কেন? হয়তো পাগল হয়ে গেছি বলে।

একে একে চারটা ডাক্তার দেখালি
সব বড় বড় এক একজন রাশভারী
অনেক নামীদামী
টাকা গুনলি কাড়িকাড়ি
কোন লাভ কি হলো?
সবাই তো একই রায় দিলো;
সেই যে আমি তোকে ঠাট্টার ছলে বলেছিলাম
কোন লাভ নাই রে
রেখে আয় আমায় পাগলা গারদে
এখন প্রমাণ পেলি কি?
নাকি তোর আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার রয়েছে বাকি?

তুই কেন বুঝিস না?
এখন সত্যি সত্যি মাথা কোন কাজ করে না
তোর সাথে গলা ফাটিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি
তাও আশ মেটে না;
ইচ্ছে করে সব ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দিতে
তোর একটুখানি অবহেলাতে
বড্ড অভিমানী হয়ে পড়েছি পাগল হতে গিয়ে;
কেন এমন করিস?
একটু বুঝ না রে আমায়
একটু ভালো করে বাঁচতে দিস।

তোর তো সবাই আছে চারিধার জুড়ে
বাবা, মা, ভাই, বোন ছেলে মেয়ে পরিজন
কত ভালোবাসে তোকে
কত সোহাগে কত আদরে
চারিদিক থেকে ঘিরে;
তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো দেখি রে "বাবু"?

তোর মুখটা কালো দেখলে আমার সব ওলোটপালট
বুকের ভেতর খামচে ধরা কেমন এক অনুভব
ঠিক বোঝাতেও পারি না
শুধু কেমন এক কষ্ট কষ্ট ভালোবাসার ক্ষরণ
ঠিক লাল রক্তের নয়
একদম কালো কুচকুচে অন্ধকার
কেন রাগ করিস পাগলের ওপর
ক্ষমা চাইনি বলে অভিমানে?
কেন রে আমায় এমন করে করিস কাবু?

তুই কি খুব বেশী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিস?
পাগল টেনে টেনে;
আর টানতে হবে না তোর, আমাকে;
পারলে রেখে আয় আমায় পাগলা গারদে।
খুব মাঝে মাঝে আমার কথা মনে পড়লে
দেখা করিস গিয়ে
তবে পাগলেরও একটা শর্ত আছে -
সেই পুরনো দিনের মতন হাসিমুখ নিয়ে;
একটু হাতটা ধরে থাকিস কিছুক্ষণ ধরে
সেই আগের মত অনেক শক্ত করে।

নিরন্তর নির্বাসন নিতে পারি আমি
তোকে ভালোবেসে;
শুধুই তোর একটি হাসিমুখের জন্য ।



বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বিকিকিনির হাঁট


বিকিকিনির হাঁট
- যাযাবর জীবন

আজকাল বিকিকিনির হাঁটে
খুব সহজলভ্য করে নিয়েছিস নারী
টাকার মূল্যে বিকোয়
ধিক বিবেক, নাকি তোরা আনাড়ি?
ভেবে দেখেছিস কে?
তোরই জন্মদাত্রী মা এর জাত
অথচ পয়সার বিনিময়ে মিটাস ভোগ বিলাস
হায় মানুষ! বানিয়েছিস বাজারের পণ্য
মা জাতিকে, তোরা ধন্য!!!

সম্মান যদি না দিতে পারিস
তবে কচু গাছ খুঁজে নে
দড়িটা পেয়ে যাবি একটু খুঁজলে
তাও না পেলে মায়ের আঁচল গলায় পেঁচিয়ে দে;
মা মরে গেছে? হায় কুলাঙ্গার তোরই তো দোষে,
তাহলে কি আর করবি!
ঐ নেশার বিষই কিছু বেশী করে কিনে নে
বিকিকিনির হাঁটে সেও বড্ড সহজ লভ্য
একটু বিবেকবোধ
একটু মনুষ্যত্ব
যদি মরে গিয়ে থাকে
নেশার বিষ পুরোটা ঢেলে দে গলায়
তোর বেঁচে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়েছে এ ধরায়......





একটি মুহূর্ত


একটি মুহূর্ত
- যাযাবর জীবন

একটি মুহূর্ত
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে
ওলোটপালট পুরোটা জীবন
ভালোবাসায় বিদ্ধ
ঘৃণায় চৌচির
প্রেমে সিক্ত
দহনে রিক্ত
টর্নেডো বিধ্বস্ত
ধুলায় ধূসরিত
শুধু মাত্র একটি মুহূর্তের ফের।

হঠাৎ দেখা এক ঝলক
চোখের পলক
চমকে ওঠা
ভালোলাগা
ভালোবাসা
ঘর বাঁধা
এক পলকের একটি ঝলক থেকে
একটি মুহূর্তে দেখার সাথে সাথে
একটি জীবন
কাটানো একসাথে
শুধুই একটি মুহূর্ত
ভালোবাসায় সিক্ত।

হঠাৎ অভিমান
খুব হঠাৎই একটি মাত্র অবান্তর কথা
মুখের আড় না ভাংতেই
ফসকে গেল অসম্ভব কোন একটি কথা
থমকে গেল একটি মুহূর্ত
চমকে ওঠা
থমকে যাওয়া জীবন
অহংবোধে আঘাত
খুলে এলো যেন আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো
এক সুন্দর মনোহর সংসার
ভালোবাসা হলো ঘৃণায় পরিণত;
একটি বেফাঁস মুহূর্তের ফাঁক গলে
একটি বেফাঁস কথা
ভেঙ্গে চুড়ে খান খান
শুধুই একটি মুহূর্তের বেফাঁস কথা।

তাহলে ভালোবাসা আর ঘৃণার ফারাক
- শুধুই কি একটি মুহূর্ত?
কিংবা গড়া আর ভাঙার ফারাক?

একদিন খুব আনমনে
পথ হাঁটতে পথের বাঁকে
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে
মূর্তিমান দৈত্যটা হঠাৎ সামনে
ধুমমমম!!!!!!!!
কি ছিল ওটা?
ট্রাক, বাস, জীপ কিংবা গাড়ি
কি এসে যায় এখন?
ট্রাক বা বাসের ড্রাইভার কি নেশাগ্রস্থ ছিল?
নাকি কালোটাকার গরমে বেপরোয়া মদ্যপ এক লম্পট
কিংবা বাপের আদরে বখে যাওয়া কোন এক সন্তান?
কি এসে যায় কে ছিল ড্রাইভার?
দেহটা পড়ে আছে ঐ যে রাস্তার ধারে
প্রাণটা কি আছে এখনো?
হয়তো এখনো হৃদয়টা ধুকপুক করে
কিংবা নিথর হয়ে গেছে মুহূর্তের অবসরে,
পরাণ পাখি খুব ফুড়ুৎ মারে
চোখের নিমিষে
পলক ফেলতে না ফেলতে
মুহূর্তের ফাঁক গলে
একটি মুহূর্ত;
জীবন আর মৃত্যুর মাঝে পড়ে আছে
একটি অচেতন দেহ কিংবা লাশ
কি এসে যায় কার?
সেও তো সেই মুহূর্তের কারবার।
শুধুমাত্র একটি মুহূর্তের ফাঁক।

তবে কি জীবন আর মৃত্যুর মাঝে দূরত্ব
- শুধু ঐ একটি মুহূর্ত?

নাকি এ সবই কোন এক অদৃশ্য নিয়তির খেলা
অনেক আগে থেকেই পূর্ব নির্ধারিত।






মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

যাতনার ভালোবাসা সযতনে


যাতনার ভালোবাসা সযতনে
- যাযাবর জীবন

যত্ন করে চোখের কোণে জমিয়ে রাখা স্বপ্নগুলো
যত্ন করে মাথার ভেতর গুনগুনানি গান শোনালো
যত্ন করে হৃদয় ঘরে, ঘর বাঁধার ঐ ইচ্ছেগুলো
যত্ন করে মনের ভেতর রেখে দেওয়া স্মৃতির ধুলো
যত্ন করে মুছে দিলি জীবন থেকে খুব যতনে
যত্ন করে ফেলে গেলি ডাস্টবিনের ঐ ময়লা কোণে।

ইচ্ছেগুলো তোর বুকেতে যত্ন করে বেঁচে উঠুক
ইচ্ছেগুলো তোর বুকেতে তীব্রভাবে জ্যান্ত নাচুক
ভালোবাসার স্পর্শগুলো ধিকি ধিকি আগুন জ্বলুক
ভালোবাসা তোর চালেতে ঝুম বৃষ্টি নেমে আসুক।


নেশার ভুল, বিবেকের সংশোধন



নেশার ভুল, বিবেকের সংশোধন
- যাযাবর জীবন

লাল সুরার লাল নেশা, মনে না হয় একটু লাল রঙই ধরাতো
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ঝুম নেশায় একদিন
চার চোয়ানীর নাচের ঘোরে
খুব হঠাৎ করে
অথচ চলতো না একটি দিনও তোরে ছাড়া
আমার লাল নেশা
খুব কি ক্ষতি হলো?
তোর বা আমার?
কি জানি?
আমার তো মনে হয় কিছুটা লাভই হলো,
অর্থের সাশ্রয়ে
কিংবা কিছুটা রাশ টানা ধর্মের অবক্ষয়ে।

ক্যান্সার ষ্টিকের ধোঁয়াটে নেশা
ভাসতাম ধোঁয়ায় চব্বিশ ঘণ্টা
একটার পর একটা
কিংবা এক ম্যাচের কাঠিতে এক বাক্স ধোঁয়া
ম্যাচের কাঁঠি বাঁচানোর চেষ্টা কিংবা কৃপণতা;
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ঝুম নেশায় একদিন
ধূম্রজালের ধোঁয়ার ঘোরে
খুবই হঠাৎ করে
অথচ চলতো না একটি দিনও তোরে ছাড়া
আমার ধোঁয়ার নেশা;
খুব কি ক্ষতি হলো?
তোর বা আমার?
কি জানি?
আমার তো মনে হয় কিছুটা লাভই হলো,
অর্থের সাশ্রয়ে
কিংবা কিছুটা রাশ টানা ক্যান্সার আগমনে।

তোর প্রেমের কঠিন নেশা
মনের কথা তারপর শরীরের বার্তা
খুব স্বাভাবিক প্রেমের পরিণয়
একটা সময় শরীরই কথা কয়
মনের আড় ভেঙ্গে, পেছন ফেলে সকল সংশয়;
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম মনের যত প্রেম
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম তোকে, খুব অবহেলায়
অন্যান্য নেশাগুলোর মত
বেঁছে নিতে নেশা বিহীন জীবন যাপন
তাও খুব হঠাৎ করে
অথচ চলতো না একটি দিনও তোরে ছাড়া
লেপ্টে থাকত মনেতে শরীরের নেশা
খুব কি ক্ষতি হলো?
তোর বা আমার?
কি জানি?
আমার তো মনে হয় সত্যিকারের লাভ হলো
এবার দুজনের;
অনৈতিক ভালোবাসার নৈতিক রাশটানা
একটা ভুল কতদিন করা যায় একটানা?

বিবেক, বুদ্ধি, মনুষ্যত্ব যখন একসাথে কথা কয়
ছুঁড়ে ফেলা সকল নেশা, মানুষেরই পরিচয়
আজকের হয়তো আপাত ক্ষতি
আগামীর অবশ্যই জয়।




সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও লোভ



ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও লোভ
- যাযাবর জীবন

অনেক ক্ষুধা?
সয়ে যা না বাপু;
কতটুকু?
ঐ মঙ্গার দেশে একটি ক্ষুধার্তের একটি রুটি খেতে দেখে
হৃদয় তৃপ্ত হয় যতটুকু।

অনেক তৃষ্ণা?
সয়ে যা না বাপু;
কতটুকু?
ঐ তৃষ্ণার্ত চাতকের পানের তৃষ্ণা মেটানো দেখে
হৃদয় তৃপ্ত হয় যতটুকু।

কথার মর্ম বোঝে ক'জন?
লোভের ধর্মে করে আছি মোরা পদার্পণ
সম্বরণে ক্ষতি কি খুব বেশী?
ক্ষুধা, তৃষ্ণা কিংবা লোভের;
অর্থই লোভ
লোভই পাপ
এলোমেলো জীবন সকল অনর্থের।




রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ভালোবাসা


ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

এত বড় বড় খেলোয়াড়ের বাস
পুরোটা ফেসবুক জুরে,
অনেক বড় খেলোয়াড় তোরা
খেলিস হৃদয় কেড়ে।

ভালোবাসা কি? সংজ্ঞা খুঁজছি,
সেই তোর খেলার পাত্র হওয়ার পরে;
এখনো বুঝি নি ভালোবাসা বলে
সত্যি কোথাও কিছু আছে না কি?
নাকি ওটা শুধুই কবিতার ভাষা
আসলে স্বার্থের সুগন্ধি রূপকথা;
হাতছানি দেয় ফেসবুক জুরে
কুৎসিত কিছু মন
সুন্দর সব চেহারার অন্তরালে
ছলে বলে কৌশলে চেহারা বদলে ঘুরে।

এখানে কেও রাত জাগে প্রেমিকের তরে কেঁদে
কেও বা রাত জাগে প্রেমিককে কাঁদাতে;
আর ভালোবাসা নামক সোনার হরিণ?
সে যে সৃষ্টি হতে থাকে কাব্যের পৃষ্ঠা জুড়ে;
অধরা এক প্রেমের হাতছানিতে
দহনে পুড়ে পুড়ে।



কলমের শক্তি ও কিছু অন্যরকম অনুভূতি



কলমের শক্তি ও কিছু অন্যরকম অনুভূতি
- যাযাবর জীবন

বিশ্বাস অর্জন করতে চলে যায়
যুগের পর যুগ
ভাঙতে মুহূর্ত মাত্র;
কে বোঝে?
বিশ্বাস ভঙ্গের যাতনা বয়ে যেতে হয়
যুগের পর যুগ ধরে।

এগুলো মানুষের অনুভূতি
কুকুরের নয়
কে বোঝে?

কিছু কিছু মানুষ আছে
চেয়ে ভাত খায়
খেতে দিলে থালা ভরে ভাত খায়
পেট ভরলেও ঠেসে যায়
যতক্ষণ না পেটে চাপ লাগে
কিংবা বদনার অভাব অনুভব করে
তারপর আর সময় কোথায়?
খাওয়ার থালাটাতেই হেগে যায়
এদেরও মানুষ কয়
আমার বড্ড লজ্জা হয়।

এরা আবার স্বার্থের রাজনীতি করে
নিজের পেছন ধোয় না হাগার পরে
অথচ নির্দ্বিধায় পরের পেছনে আঙ্গুলি করে
এদেরও নাকি মানুষ বলে!

"আজকে যাদের এরা অবহেলায় ছুঁড়ে মারে
কালকে প্রয়োজনে ডাস্টবিন ঘেঁটে বুকে তুলে ধরে
তখন যে এদেরই খুব বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়ে
ভোটের রাজনীতি নাকি এরেই বলে!"
আমি নির্বোধ মানুষ রে ভাই
বুঝি কম।

মাঝে মাঝে ঐ সব মানুষগুলো ভুলে যায় কেন?
স্বার্থের রাজনীতি থেকে কলমের শক্তি অনেক বেশী ধারালো।



বিশেষ দ্রষ্টব্য: রাজনীতিবিদরা আমার থেকে ১০০ মাইল দূরে থাকুন। অথবা কলমের খোঁচা খেলে পেছনে চোতরা পাতা ঘষুন।


শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

প্রেমের রণক্ষেত্র


প্রেমের রণক্ষেত্র
- যাযাবর জীবন

ভালোবাসায় কেন এত দ্বন্দ্ব
ঈর্ষা, জ্বলন, দহন
কথা কাটাকাটির মারপ্যাঁচ
নিত্য নৈমিত্তিক
যেন এক রণক্ষেত্র
একজনের বুলি তো
আরেকজন চালায় যেন মেশিনগানের গুলি
মুখে সার্বক্ষণিক
মাঝে মাঝে হাতাহাতি
যেন সত্যিকারের এক রণক্ষেত্র
তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হাজারো দ্বন্দ্ব
প্রেমেতেও কেন যে এত বারুদ পোড়া গন্ধ?

থাকা আর না থাকা



থাকা আর না থাকা
- যাযাবর জীবন

আমার চলে যাওয়া আর না যাওয়ায়
কিছুই হবে না উনিশ বিশ
এই ধরিত্রীর;
নদীর জল সেদিনও কুলকুল বয়ে যাবে জানি
সেদিনও লাগবে জোয়ার ভাটার টান
নদীতে, সাগরে
বয়ে চলা জলরাশিতে
দিনের সূর্যের নীচে
কিংবা রাতের নক্ষত্রের তলে
ঠিক আজকের মতই।

সেদিনও গন্ধ ছড়াবে
শিউলি, বকুল, হাসনাহেনা
আর যত নাম না জানা বনফুল
গন্ধের ঢেউ এসে লাগবে সেদিনও
প্রেমিক আর প্রেমিকার মনে
খুব সুগন্ধে ভরে রবে তাঁরা
যতদিন প্রেম রবে;
তারপর বিচ্ছেদের বেদনা ফুলের ঘ্রাণটুকুও
বড্ড দুর্গন্ধ মনে হবে;
খুব মন পোড়া যাতনায় মৃত দেহের গন্ধ পাবে
এখানে ওখানে;
ঠিক আজকের দহনের মতই।

ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী আজকের মতন
সেদিনও রয়ে যাবে
হয়তো দুজন দুজনে গল্পের কথন কবে
হয়তো তোর আর আমারই ভালোবাসার গল্প
প্রেমের কিংবা বিচ্ছেদের
ব্যর্থতা আর পোড়া দহনের;
কারো থাকা আর না থাকায় কিছুই আসে যায় না
শুধু নিজেতে নিজে পুড়ে ছাই হয় বেদনা।










শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মনে পরার অঙ্ক



মনে পরার অঙ্ক
- যাযাবর জীবন

কেন রে বারে বারে জানতে চাস?
তোর কথা মনে করি কত বার?

আমি যদি জিজ্ঞেস করি তোরে -
দিনের মুহূর্তগুলো গুনে দেখেছিস একবার?
মাসের, বছরের; যুগের?
অমাবস্যার মেঘহীন রাতে ফকফকা তাঁরার আকাশ
সন্ধ্যে থেকে গোনা শুরু করে
ভোরের আলো ফোঁটা পর্যন্ত
গুনে দেখ একবার;
কান পেতে শুনে দেখ
হৃদয় ধুক পুক ধুক পুক করে কতবার?
সাগরের ঢেউগুলোর আছড়ে পড়া গুনেছিস কখনো?
একের পর এক, তারপর এক, তারপর আরেক
তারপর আর তারপর; ক্রমাগত:
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস
যুগের পর যুগ ধরে?
বালুকাবেলা থেকে একমুঠো বালি তুলে
গুনে দেখেছিস কখনো, মুঠোতে কয়টা বালি আঁটে?
সাগর পারের সকল বালিরাশি কুড়িয়ে
গুনে দেখিস একটি একটি করে।

যখনি তোর ঐ সকল গোনাগুনতির সমাপ্তি হবে
ঠিক তখনই জানতে পারবি
খুব ভালো করে;
তোর কথা মনে পড়ে কতবার-
প্রতিদিন
প্রতিরাত
মাস ঘুরে বছর
যুগের পর যুগ ধরে।

প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে সাথে
তোর কথা মনে পড়াই তো
এখনো আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা
এ কথাটাই আজো বুঝলি না।




বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সংশোধন



সংশোধন
- যাযাবর জীবন

দর্পণে চোখ পড়ে শুয়ে থেকে থেকে
আয়নাটা বিছানা থেকে অনেক অনেক দূরে
সামর্থ্যে কুলোয় না কাছে গিয়ে দেখি
তাই বিছানার কোল ঘেঁষে
বিশাল বড় এক আয়না লাগিয়েছি
দেখতে নিজেকে নিজে;
মাঝে মাঝে আয়নার দিকে তাকাই
ভুলে ভরা একটা মানুষের দেখা পাই
মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখা যায়
শুধুই ভুল আর ভুল
জীবনের সকল খেলায়।

আজকাল চোখও যেন বিদ্রোহ করে
তবু জোর করে চেয়ে থাকি আয়নার তরে
দেখি ভুলে ভরা মানুষটাকে মন ভরে
প্রাণ ভরে
আর একটি একটি করে ভুলগুলো
শোধরানোর চেষ্টা করি
যতটুকু যা ভুল করেছিলাম মনে পড়ে।

হাতে খুব বেশী সময় তো আর নেই এখন
বাকী রয়ে গেল যে করতে, অনেক ভুলের সংশোধন।




নিবিড় ভালোবাসা



নিবিড় ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

আমরা লড়ব
ঝগড়া করব
একে অপরের সাথে
বালিশ ছোঁড়াছুড়ি
তুলো উড়বে সারা বাসা জুড়ি
প্রতিদিন
আর প্রতিদিন
সকালে, দুপুরে আর বিকেলে;
তারপর সন্ধ্যের অবশেষে
নীরে ফেরা পাখির মত
ফিরে আসব
পরস্পরের টানে
ভালোবাসায় দুজনে
অনেক অনেক ভালোবাসব
আবার পরের দিন সকালে লড়ব
সন্ধ্যের ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকব
ক্রমাগত: আর ক্রমাগত:
যতদিন বেঁচে থাকা
ভালোবাসা আর ভালোবাসা।

লড়তেই হবে আমাদের পরস্পরের সাথে
শুধুমাত্র নিবিড় ভালোবাসার জন্য।


বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

গোপন কথা


গোপন কথা
- যাযাবর জীবন

কত গোপন কথাই না জীবনে থাকে
একান্ত নিজস্ব করে, মানুষ ঢেকে রাখে
কেও যাতে জানতে না পায়;
তোর আর আমার গোপন যত কথা
শাড়ির আঁচলে থাকার কথা ঢাকা
বাতাস হয়ে বইবে কেন রে গাছের পাতায়?

কার সাথে প্রেম করেছিলি রে তুই মনা
চুপে চাপে করে যেতি তা না
কে করেছিল তোরে মানা?
তোর আর তার গোপন প্রণয়
ঢাক ঢোলের বারিতে পুরো শহরময়
জানবে কেন রে লোকে?
তিলকে তাল করে
বলে বেড়ায় ঢোল মেরে
এ কেমন প্রেমিক বেঁছে নিয়েছিলি মনা?
তোর প্রেমের কথা আরেকজনের মুখে শুনি
যত সব নোংরা ভাষায়
সম্পর্কই চুকিয়ে দেই তাদের সাথে
তবুও; আমার তো শুনতে ভালো লাগে না।

প্রেমিক বাছতে আরেকটু সাবধান হয়ে যাস
নাইলে ভেঙ্গেচুরে ছারখার হয়ে যাবে তোর সংসার
যে কোন সময়;
সন্দেহের ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ
দাবানলে পরিণত হতে সময় লাগে না।


মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সৌন্দর্য



সৌন্দর্য
- যাযাবর জীবন

সুন্দরী কি কোনো উপমা?
কি জানি?
বুঝি না;
দেখি তোমার ঝাপসা চেহারা
ঘষা কাঁচের দেয়ালে,
আমার চশমার কাঁচটাও ঘষা
দাগ পড়ে গেছে অতি ব্যবহারে
এখানে ওখানে পড়ে থাকতে থাকতে
চোখে যেন থাকতেই চায় না আজকাল
কি এক অভিমানে;
আমি মনের চোখে সৌন্দর্য দেখি
নয় চশমার কাঁচে
আর তোমার সৌন্দর্য?
সে যে তোমারই ক্যামেরায় ফুটে ওঠে
ঐ যে যেটাকে তুমি ভাঙ্গা ক্যামেরা বল;
আর ফুটে ওঠে তোমার লেখার তুলিতে
যেগুলো পড়ে থাকে তোমার ব্লগের কোণে
শীতের ঝরা শিউলির মত
আমি কুড়িয়ে নেই একটি একটি করে।

বুঝি না আমি
তুমি কোন সুন্দরী?
কিংবা আমি
কোন সৌন্দর্য দেখি!





রঙের দুনিয়া



রঙের দুনিয়া
- যাযাবর জীবন

কত পদের
কত রঙের
কত ঢঙের মানুষ
এই দুনিয়ায়;
সুস্থ অসুস্থ
আরো আছে বিকারগ্রস্থ
পুরুষ ও নারীর সমারোহ
রঙের খেলায়
রূপের মেলায়
এই দুনিয়ায়।

কেও দেহের বাঁকগুলো দেখে মজা পায়
কারো বাঁকের খাঁজেই চোখ চায়,
কেও বাঁক দেখেই বাকবাকুম
সীমাবদ্ধতা সেটুকুতেই
আর এগোতে ভয় পায়;
কেও বাঁকের খাঁজে নাক ঘসে
প্রকট কুকুর ভাব
আসক্তি পর নারীতে
এটাই স্বভাব;
কেও আঁচল ফেলে রেখে
বাঁক দেখায়
টাকার প্রয়োজনে
কেও ঝুঁকে থাকে চোখের সম্মুখে
খাঁজ দেখানোর তরে
একদম অপ্রয়োজনে
শুধুই দেহের নেশায়
আনন্দম, আনন্দম
একটু আনন্দের জন্য ভেসে বেড়ায়
এখানে ওখানে
রঙের দুনিয়ায়।




সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

স্মৃতির বেদনা



স্মৃতির বেদনা
- যাযাবর জীবন

কিছু কিছু ভুল কখনোই শুধরানো যাবে না
তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল
তোকে ভালোবাসা;
কিছু সময় কখনোই ফিরে আসবে না
এর মধ্যে সবচেয়ে মধুর সময়
তোকে জড়িয়ে ধরে রাখা;

সময় উড়ে যায় কালের ডানার ভরে
মানুষ চলে যায় সাড়ে তিন হাত ঘরে
স্মৃতিগুলো কখনোই মরে না;
সময়ের কাল-কুঠুরিতে বন্দি হয়ে থেকে
ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য
রেখে যায় এক টুকরো বেদনা।





রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অহংকার


অহংকার
- যাযাবর জীবন

দেখেছি পতন ঐ অহংকারীর
খুব কাছে থেকে চেয়ে
তাই তো আজকাল দাঁড়াই না আর
আয়নার সামনে যেয়ে।

জীবনের সমস্ত ভুলগুলো
একসাথে ফুটে ওঠে
আয়না কথা বলে
আমি অসহায় চেয়ে থাকি
পুরনো সব ভুলের কথা
একটি একটি মনে হলে।

রিপুগুলো পতন ঘটায় মানুষের
একটু একটু করে,
অহংকারের গরিমায় মানুষ
কারো বাড়ানো হাতও না ধরে;
পড়ে যায়
মরে যায়
অন্ধকারের গহীন কুয়োতে
"অহংকার", গলা চিরে গান ধরে।






ব্যবহৃত


ব্যবহৃত
- যাযাবর জীবন

ঝিনুকের বুক চিরে মুক্তোগুলো তুলে নিয়েছিস
কিছু বলি নি সেদিন
সয়ে গিয়েছি ঝিনুকের বেদন
ভেবে নিয়েছি
লোনা জলে ধুয়ে গিয়েছে সব রোদন
বুক চেরা ঝিনুকগুলোর;
সাগর ছিল খুব কাছে
অথচ এতটুকু দয়া হয় নি তোর
বুক চেরা ঝিনুকগুলোকে
ভাসিয়ে দিতে সাগর জলে
ঝিনুকের দেহে প্রাণ ফেরাতে
জলের স্পর্শে;
খুব অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলি
শুকনো বালুকাবেলায়
পুড়ে ছাই হতে।

ঠিক যেমন ব্যবহারের পর
ফেলে দিয়ে গিয়েছিলি আমায়
পথের মোরের ডাস্টবিনে।

কেন বারে বারে ব্যবহৃত হতে হবে আমাকেই?





অনৈতিক ভালোবাসা



অনৈতিক ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

কারো চোখ দেহের বাঁকে
কারো আঁচল লুটায় মাটিতে
সময়ের দোষ কিংবা বয়সের?
না মনের সাথে প্রতারণা?

ভাদ্রের কুকুর কুকুরী
কথা বলে চোখাচোখি
নিবিড় চেয়ে থাকে
কাছাকাছি আসে, দুজন দুজনা।

রঙের দুনিয়ায় দেহের খেলা
সেই আদিকাল থেকে ক্রমাগত:
ঐচ্ছিক ভালোবাসার
অনৈতিক অবমাননা।



শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

অপেক্ষায় অশ্বত্থ গাছ


অপেক্ষায় অশ্বত্থ গাছ
- যাযাবর জীবন

তোর বাড়ির সামনের ঐ অশ্বত্থ গাছটা
দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়
সকালের সোনারোদে পশ্চিমে ছায়া হেলে থাকে
দুপুরের খাড়া রোদে সোজা তোর দিকে চায়
বিকেলের ক্লান্তিতে ছায়া হেলে পড়ে
পূবের কোনায়
তবুও গাছটা দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়
তোর অপেক্ষায়
দিনে
রাতে
চব্বিশ ঘণ্টায়
রোদে পুড়ে
বৃষ্টিতে ভিজে;
মাসের পর মাস যায়
ঋতুর পর ঋতু বদলায়
গাছের কি আসে যায়?
সে তোর জন্য অপেক্ষায়
তোর ঘরের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে ঠায়।

ঘন অমাবস্যা রাতে তুই দেখিস না তাকে
সে কিন্তু ঠিকই চোখ রাখে তোর জানালায়
পর্দাটার ফাঁক গলে কিছু আলো আসে
সাথে তোর অবয়ব কিছু ভেসে আসে
শান্তিতে রাতের নিদ্রা যায়
তোর সাথে সাথে
তুই নরম বালিশের কোলে
সে অন্ধকারে পুড়ে।

যখন তোর খুব মন খারাপ হবে
জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেখে নিস তাকে
দিন রাত্রির যে কোন প্রহরে
দাঁড়িয়ে আছে হয়ে তোর পাহারাদার
তোরই ঘরের সামনে
গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে ঠায়
তোরই অপেক্ষায়।

গাছ হয়ে আর কতকাল পাহারা দেব তোরে?
বিষ পিঁপড়ে যে ধরেছে আজ শেকড়ে
সময় ঘনিয়েছে বিদায় নেবার।









কাছের ও দূরের মানুষ


কাছের ও দূরের মানুষ
- যাযাবর জীবন

কত রকম মানুষের বাস
দূরের ও কাছের,
আমাকে ঘিরে
আমার চারিদিকে।

কিছু মানুষ বাস করে যোজন যোজন দূরে
অথচ যেন গেড়ে বসে হৃদয়ের অনেক গভীরে
আমার সকল চিন্তা চেতনার ভেতরে
ইচ্ছে হলেই পাই না তাঁদের ছুঁতে
ইচ্ছে করলেই পারি না দেখতে
তবু বড্ড ইচ্ছে করে
খুব মাঝে মাঝে
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে
কিংবা জড়িয়ে ধরতে
কিংবা একটু ছুঁতে,
কোথায় যেন এক না বলা গল্প
মনের ভেতরে রয় ঘিরে
তাঁদের কথা মনে হলে।

কিছু মানুষ বাস করে একদম শরীর ঘেঁসে
তবু যেন কেমন অচেনা লাগে
যেন তাঁরা আমার কেও নয়
যেন তাঁরা অন্য কোন ভূবনের বাসিন্দা
যেন অন্য দেশের
কিংবা অন্য শহরের
খুব হঠাৎ করেই চলে এসেছে
আমার জগতে, বেড়াতে;
আবার চলে যাবে দূরে
বেড়ানো শেষ হলে;
এই সব কাছের মানুষগুলোই
আমার চারিদিক ঘিরে রয়
তবু যেন মন মানসিকতায়
কিংবা জীবনের বাস্তব আরেক রকম গল্পে
এদেরকে যোজন যোজন দূরের মানুষ মনে হয়।

কিছু মানুষ দূরে থেকে অনেক কাছে রয়ে যায়
আমার কল্প গল্পের শুরু হয়;
কিছু মানুষ কাছে থেকে অনেক দূরে সরে যায়
আমার বাস্তব গল্পের সমাপ্তি হয়;
আমি থাকি আমার মত করে
কত গল্পই তো জীবনে চলে আসে
বার বার ঘুরে
একই গল্প একই সুরে
কাছে আসা আর দূরে যাওয়ার মাঝে ঘুরে।

নিয়তির খেলায় কিছু মানুষ ছেড়ে চলে যাবে
হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য
হয়তো আবার ঘুরে আসার জন্য
কিংবা চিরতরে;
এটা আমার জীবনের গল্পের শেষ নয়
হয়তো সমাপ্তি গল্পের
কিংবা তাঁদের, আমার সাথে সম্পর্কের
যারা চলে গেছে আমায় ছেড়ে।

নিয়তির খেলায় কিছু মানুষ চিরদিন রয়ে যাবে
চিন্তা চেতনায় বুকের গভীরে
হয়তো বাস্তবে চলে যেতে হবে অন্যভূবনে
নিয়তির কাছে হার মেনে চিরতরে;
এটা তাঁদের জীবনের শেষ নয়
নয় সমাপ্তি তাঁদের জীবনের গল্পের
বিচ্ছেদ থেকে শুরু আমার কল্প গল্পের
বসতি গেড়ে মনের গভীরে
তাঁদের নিয়ে
তাঁদের ঘিরে
যারা চলে গিয়ে রয়ে গেছে মনের ভেতরে।




বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

অব্যক্ত কান্না


অব্যক্ত কান্না
- যাযাবর জীবন

সব কবিতায় গান হয় না
সব কথায় সুর দেয়া যায় না
কিছু গানের রাগ মন নেয় কারি
ঠান্ডার প্রলেপ যেন বৃষ্টির পানি
মনুষ্য রাগ প্রলয়ঙ্করী
বিধ্বংস সংসার, স্বাস্থ্য হানী।

সব বোকামিগুলো চোখে দেখা যায় না
যেমন প্রেমে পড়ে জব্দ,
সব শব্দগুলো কানে শোনা যায় না
যেমন মন ভাঙ্গার শব্দ,
সব কান্নার জল হয় কি সাদা ?
সব অশ্রুজল চোখে দেখা যায় না
গুমরে ওঠা মনের ভেতরের কান্না
মন পেতে শোনে আর ক জন?
চারিধারে ছড়িয়ে আছে
বন্ধু বান্ধব আর আত্মীয় স্বজন।

ক্ষরণে হৃদয় হতে থাক রক্তাক্ত
লোনা জলের ধারা থাক না কিছু অব্যক্ত............


মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

সংসার


সংসার
- যাযাবর জীবন

প্রতিদিন নতুন নতুন
ঘটনাবলী জীবনে
কারণে আর অকারণে
অবাস্তব সব কারণে, বাস্তব দহন
তুচ্ছ সব কারণ, পাহাড় চাপা মরণ
কারণ আর অকারণ
আকাশ প্রমাণ ক্ষরণ
রক্তাক্ত হৃদয়ে সাদা চোখে দেখে যাই নীরবে
সং সেজে থাকি তবু বলতে পারি না
মনের আড় পার হয়ে
হাজারো মনের বাঁধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে
এ সংসারে বাস করে
বলতে গেলে তো ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত
সেই কবে
ভিন্ন হতো সংসার ডামাডোল সরবে!

কোন মানে হয় না
কোন মানে খুঁজে পাই না
ঘটে যাওয়া চারিদিকের ঘটনাবলী
খুব কাছে থেকে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি
ইদানীং যেন ব্যথার পাহাড় গড়ে ওঠে
অনভ্যস্ত আঘাতে আঘাতে
খুব বেশী কাছের লোক থেকে;
অবিশ্বাস্য সব কান্ডকরন দেখি
অবিশ্বাস নিয়ে চোখে
কোথায় বাস করছি আমরা
সত্যি বুঝি না
এর নাম কি সংসার না চিড়িয়াখানা
এখানে কেও কারো না
কেও কাওকে বোঝে না
কারো মধ্যে যেন সে চেষ্টাটাই দেখি না
ধৈর্য, সহনশীলতা, ক্ষমা
পারস্পরিক বন্ধন
সংসারের যত সব আয়োজন
সংসার সাজাতে নিত্য প্রয়োজন
আর ভালোবাসার নিবিড় বন্ধন;
এ শব্দগুলো এখন যেন
শুধুই ডিকশনারিতে পড়ে থাকা
কিছু অক্ষর
সাদা কাগজে কালো কালির আঁচর
কিংবা লালে লাল
হৃদয়ের অনেক গভীর ভেতর।




একা


একা
- যাযাবর জীবন

আমরা কেও কোথাও যাই না।

নিজ নিজ স্থানে পদ্মাসনে বসে থেকে
ভাব ধরি, আমি ভাবের পূজারি;
ফুল পদ্ম দিয়ে যা
আমার চরণ তলে
ভাবের ঘোরে ভবের বাসায়
ধোঁয়াটে ভাব নিয়ে
অপরিণামদর্শী ভুবন গড়ে তুলি
নিজেই নিজের ঢোলে দেই বাড়ি
ধোয়া তুলসী পাতা আমি
পূজো দে আমায়
ভাব ধরি;
মুখ নিঃসৃত নিজস্ব লালা দিয়ে বুনে চলি
মাকড়সার জাল
নিজের জালে আটকে থাকি নিজেই
নিজের অজান্তেই
একরাশ হাহাকার বুকে নিয়ে
পড়ে থাকি
একা......

একবার ভাবের ঘরে ঢুকে পড়লে আর বের হওয়া হয় না
এখানে যারা একবার ঢোকে
আমরা আর কোথাও কেও যাই না
একরাশ হাহাকার বুকে নিয়ে ঘুরি ফিরি খাই দাই
ভবের ঘোরে ভাবের জগতে ঘুরে বেড়াই
একা...............

জলের কোলাহল



জলের কোলাহল
- যাযাবর জীবন

আমার আছে জল
জলের আছে কোলাহল
কলকল ধ্বনি;
মিশে আছে কত
পাড় ভাঙ্গা যত
অসহায় কান্নার ধ্বনি;
খুব মন পেতে
জলের কোলাহল হতে
কান পেতে শুনি;

পাড় ভাঙ্গানিয়া কান্নার ধ্বনি।

শুনতে কি পাও?
না শুধুই পড়ে যাও
কাব্যের কোলাহল ধ্বনি।


সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৩

মনের তিন বেলা


মনের তিন বেলা
- যাযাবর জীবন

সকালটা সুন্দর
মন মনোহর
চোখ মেলে দেখো।

দুপুরটা অস্থির
শতেক কাজের ভির
কাজের মাঝে থাক।

রাতটা অন্ধকার
মন করে থাকে ভার
দিনের দিনলিপিগুলো, অনুভবে বোঝ।


বেলার কোন না কোন প্রহরে
আলো আসতেই হবে
মনের ভেতরে।

শূন্য


শূন্য
- যাযাবর জীবন

বাবা মা ভাই বোন
পরিবার পরিজন
চারিদিকে ঘিরে থাকা আত্মীয় স্বজন
তাকিয়ে থাকে আমার দিকে
বিশাল বড় এক হা করে
আমার আর কিছুই দেবার ক্ষমতা নেই আজ
তোমাদের কাছ থেকে কিছু নেব
আমার যে বড্ড বেশী লাজ
হবে না আমাকে দিয়ে কিছুই আর
না দেয়া না নেয়া
সব শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে
লেনা দেনা
চাওয়া পাওয়া।

আমি নিজেই আজ বিশাল একটা শূন্য

"ক্লান্তি, আজ আমায় ক্ষমা কর প্রভু"

শূন্যতে কাঙ্গাল হয়ে তোমার চরণে
ঘর বাঁধব কভু।



বাকি সবার মত ঠেলে ফেলে দিও না সেদিন
বুকে তুলে নিও, পড়ে থাকা হাড় মাংস
হায়েনাদের ধারালো দাঁতে ছিন্নভিন্ন
স্বার্থের বিষদাঁতে হয়তো পচে গেছে।

তবুও কখনো আমি হয়তো মানুষ ছিলাম
তোমার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সেরা জীব।

কথকথা


কথকথা
- যাযাবর জীবন


বাতাস বইলো কি?
দূরে কোথাও একটু হিমেল,
হালকা একটু ঝাঁপটা লাগলো যেন গায়
মনটা জুড়ালো।

বৃষ্টি হচ্ছে কি?
দূরে কোথাও
উতলা মনে বৃষ্টি বিলাস
বড্ড আনচান
ঝুম বরষার।

নাহ, আজো হলো না
কোথা থেকে এক ঝাপটা বাতাস
বয়ে এলো কোথা থেকে কে জানে?
মেঘ সরালো পাহাড় দেশে
সূর্য হাসলো অবশেষে।

আজো হলো না
কখনোই হয় না
কোনো বিলাসই আমার জন্য না,
শুধু শুধুই স্বপ্ন দেখা.........

রিক্সাটা ছেড়ে দিলাম মাঝ পথে
পথের মানুষ পথ হাঁটা...............

আনন্দ


আনন্দ
- যাযাবর জীবন

আজ অনেক দিন পর বিছানা থেকে উঠে বসলাম
আজ অনেক অনেক দিন পর ছাঁদে ঢু দিলাম
আজ মনে ভরে আকাশ দেখলাম
মেঘে ছাওয়া আকাশ
আমার মনের মত
আজকে বৃষ্টি হবে কি?

বড্ড ইচ্ছে করছে অফিসে যেতে
খোলা রিক্সার হুড নামিয়ে দিয়ে
যদি বৃষ্টি নামে?
না হয় হলোই একটু বর্ষা বিলাস
বৃষ্টির জল মেখে নেব গায়ে।

অফিস যাওয়ার পথে দুটি কদম গাছ
সারা বছর দেখি রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়
অথচ বর্ষাতে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে
সোনালী টেনিস বল গুলো ঝুলে থাকে;
আচ্ছা এখন কি কদম ফোটার সময়?
সোনালী রঙের টেনিস বল
বড্ড মন কেমন করা
বৃষ্টিতে যদি হয় ভেজা;

আজ অনেক দিন পর ঘর থেকে বের হব
খোলা রিক্সায়
দুচোখ ভরে চারিদিক দেখে নেব আজ
মেঘ রৌদ্দুর আকাশ, আলো বাতাস
কেমন দিয়েছে সাজ!
আবার কবে বের হওয়া হয়
তার কি কোন ঠিক আছে?

বেঁচে থাকাটাই বড় মধুর মনে হয়।

রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

ডায়েরীর ছেঁড়া পাতা থেকে

ডায়েরীর ছেঁড়া পাতা থেকে
- যাযাবর জীবন

ছোট্ট এক টুকরো জমি, বাবার কেনা। সেই অনেক অনেক কাল আগের। তখন আমার জন্মও হয় নি। স্কুল শিক্ষক বাবা অনেক কষ্টের টাকা জমিয়ে এক টুকরো
জমি কিনেছিলেন এই ঢাকা শহরে। এখন তা সোনার খনি। ওনার টিউশনির টাকায় টিনের ঘর তুলেছিলেন মাথা গোঁজার ঠাই হিসাবে। সম্ভবত ওনার সংসার হিসেবেও।
দুটি শয়ন কক্ষ, একটি বৈঠকখানা, এক চিলতে বারান্দা আর সামনে ঘাসের লন। ওপরে পাকা ছাঁদ দেবার টাকা ছিল না তাই টিনে চাল। মনে আছে ছোট বেলায়
মা ঘুম পাড়াতেন গান গেয়ে, একদিকে টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম অন্যদিকে মায়ের গুনগুন। কখন যে চোখ লেগে যেত ঘুমে নিজেই জানতাম না। আমি বাবা আর মা;
এই তিন জনের ছোট্ট সংসার। ভালোই চলছিল। তারপর কালের স্রোতে জীবন গড়িয়ে চলল - বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে কর্পোরেট ভুবনে ঢুকে গেলাম। বাবার
অনেক ইচ্ছে ছিল, ছেলে যেন তার মত শিক্ষক হয়। ওনার মত সৎ মানুষ হয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মানুষ হওয়ার শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করি। না হয়
বাস্তব জীবনে থাকুক কিছু পয়সার টানাটানি! তবুও তো সৎ উপার্জনে দুটি অন্ন বস্রের সংকুলান হয়ে যাবে। পছন্দ হয় নি সেদিন বাবার কথা, ছোট বেলা থেকে দেখে
আসা টানাটানির সংসারের বোঝা; এ যেন আমার জন্য না। আমার জন্য অন্য এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছি আমি নিজে। তাই গা ভাসালাম কর্পোরেট যুগে।

এরপর ছেলের বিয়ে দেবার জন্য মা উঠে পড়ে লাগলেন। এক সময় বাধ্য ছেলের মত বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়লাম।
বড় শোবার ঘরটা বাবা-মা ছেড়ে দিয়েছিলেন আমার জন্য সেই অনেক কাল আগেই; যেদিন বিয়ে করে নতুন বৌ ঘরে তুলেছিলেম। ওনারা নিজেদের সরিয়ে
নিয়ে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় শোবার ঘরে। তখনো আমাদের মাত্র দুটি শোবার ঘর। বাবার সারাজীবনের সৎ উপায়ের সঞ্চয়ে এর থেকে বেশী কিছু করার সামর্থ্য ওনার
ছিল না। তবুও একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। ওনাদের পঁচিশ বছরের সংসার পাতা শোবার ঘরটা নির্দ্বিধায় সাজিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে; এখনো মনে আছে।
সেও তো প্রায় পঁচিশ বছর হয়ে গেছে।

এর মধ্যে সংসার বড় হয়েছে কলেবরে, ছেলে মেয়ে এসেছে সংসারে। বড় ছেলে আর বড় মেয়ে দুটোই বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছোট মেয়েটা এবার ও লেভেল দেবে।
সময়ের স্রোত গড়িয়ে আমি এখন অনেক উঁচু পদে, বেসরকারি চাকরিতে। বসেদের তেল মেখে মেখে। আজকের যুগের কর্পোরেট সভ্যতা, তেল ছাড়া
কোথায় কবে উপরে উঠতে পারে? বেতন মাশাল্লাহ ভালই পাচ্ছি, অফিসের গাড়ী আমার নিজের যাতায়াতের জন্য। এছাড়াও বেগম সাহেবার জন্যও গাড়ী হয়েছে
লোনের বদৌলতে। যদিও দরকার ছিল না কোন; তবু ট্যাক্সের উকিলের পরামর্শ। লোনের কিছু বোঝা নিজের গাঁয়ে অযাচিত চাপানো, এটাও নাকি আজকের
যুগের কর্পোরেট সভ্যতার অংশ। আমার কি? টাকা যোগায় ভুতে, আমি তেলের উপর আছি। অধঃস্থনদের তেল খাই আর ঊর্ধ্বতনদের তেল মাখি। কর্পোরেট সভ্যতার
ধ্বজাধারী। সারাদিন অফিস করি, একটু মদ্যপানের অভ্যাস কর্পোরেট ক্লায়েন্টের বদৌলতে (শাক দিয়ে মন ঢাকি, আমি আবার মদ খাই নাকি?); মাঝে মধ্যে
অনেক রাতে বাড়ি ফেরা, মাঝে মধ্যে সুন্দরী রমণীর বাহুডোরে পাঁচ তারা হোটেল কক্ষে। কর্পোরেট ব্যবসার নামে, ক্লায়েন্ট খুশি করতে। এক রুমে আমার ক্লায়েন্ট,
আরেক রুমে আমি। দুজনাই দুই তন্বী সুন্দরীর বাহু-বন্দি। টাকা যোগায় অফিস, ব্যবসা হতে হবে যে! আমার যেন কেমন এক ঘোরের রাত কাটে আর টাকার দিন।
বুঝতে পারি নিজেই এখন আমার অনেক অনেক সুদিন। বসেরাও খুশি, ক্লায়েন্টও খুশি আমি তো আহ্লাদে ষোলোখানা। দিন যাচ্ছিল এভাবেই কালের স্রোতে ভেসে।
দিন দিন ঐ ছোট্ট বাসায় দম বন্ধ লাগে, যদিও এর মধ্যে টিনের বাসা ভেঙে ফেলেছি সেই কবেই। লোনের বোঝা মাথায় নিয়ে এখন ছয়-তালা বিল্ডিং শোভা পাচ্ছে
আমার বাবার জায়গায়। একমাত্র ওয়ারিশান আমি। পুরো একটি তালা জুড়ে আমাদের বসবাস, চার চারটি শোবার ঘর অথচ স্থান সংকুলান হচ্ছে না
যেন এত বড় বাসাতে কিছুতেই; কিংবা হয়তো মন সংকলন। বৌ এর নিত্য কানাকানি, তোমার বাবা এই করেছেন তোমার মা ঐ করেছেন - হরদম এ যেন
জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ইদানীং আর মন লাগে না সংসারে কিছুতেই। তবুও সংসার নামের এক জঞ্জালে বসবাস, সং সেজে নিজে। মাঝে মাঝে শাশুড়ি বৌ এর
ঝগড়া যেন তুঙ্গে ওঠে। যথারীতি বৌ তার বাপের বাড়ি, আমি ঘরে ফিরে দৌড়াই বৌ ফিরিয়ে আনতে; প্রয়োজনে হাতে পায়ে ধরি। আরে তেল দিতে দিতে আমি এখন
তুখোড় তৈলমর্দনকারী। বড় বড় সাহেবদের মন গলে যায় আর এ তো ঘরের বৌ, আমার কাছে বড্ড বেশী ছেলেখেলা। খারাপ লাগে না মাঝে মাঝে একটু কপট চেহারা
নিজেরই। খুব মাঝে মাঝে আয়নায় চেয়ে দেখি - কাকে দেখা যায়? মানুষ না তেলের ব্যাপারী?

মাঝে মধ্যে ঝগড়া চরমে ওঠে, ছেলে মেয়েগুলো মায়ের সাথে জুটে; আমার মা অসহায় চোখে ছেলে বৌ এর কাণ্ড দেখে, নাতি নাতনীদের স্বরূপ দেখে - আর
খুব অগোচরে আঁচলে চোখ মোছে, যেন বাবা কিছু জানতে না পারে। আর বাবা! সব দেখে, সব বোঝে; ইদানীং কেমন যেন বোবা হয়ে গেছে। অনেক আশায়
মানুষ করা ছেলের অমানুষ রূপ দেখে। খুব মাঝে মাঝে তাদের জন্য আমার করে দেওয়া ছোট্ট ঘুপচি কামরাটায় ডাকে। বেশিরভাগ সময়, সময় হয় না আমার হাতে।
কিংবা হয়তো সময় থাকে, তবুও মনের খুব গোপন কোথায় যেন এক অপরাধ বোধ কাজ করে - ভয় লাগে বাবার মুখোমুখি হতে। একদিন তো সরাসরি জিজ্ঞাসাই
করে ফেললেন - "বাবারে, শিক্ষক পিতার পুত্র তুমি আজ কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হলে, একটু বুঝিয়ে বলবে আমায়? পুরনো দিনের মানুষ আমি আমার মাথায়
ঢোকে না তোমার আলাদীনের চেরাগের কাহিনী"। আমি আমতা আমতা করি, বলি - ও তুমি বুঝবে না বাবা। হাতে চেরাগ আমার কর্পোরেট সভ্যতা। এখানে ঠিক মত
ঘষা দিতে পারলে আজকের যুগে টাকার নহর বয়ে যায়, আর ঘসতে না পারলে জীবন বয়ে যায় অর্ধাহারে আর অনাহারে। বাবা খুব তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রয়
আমার চোখের দিকে, আমি চোখ নামিয়ে ফেলি; সইতে পারি না বাবার ঐ দৃষ্টি।

ইদানীং যেন শাশুড়ি বৌ এর দা কুমড়ো সম্পর্ক (কি জানি আজকালকার স্যাটেলাইট সভ্যতার সিরিয়ালের বদৌলতে কি না কে জানে?)। একদিন বাসায় ফিরতে হলো
বাবার ফোন পেয়ে। বাসায় ঢুকে দেখি বৌ এর অগ্নিমূর্তি, কাঁচের গ্লাস প্লেট সারা ডাইনিং রুম জুড়ে পড়ে আছে ভাঙাচোরা হয়ে। মা এক কোনে বসে থরথর কাঁপছে, আর
আঁচলে চোখ মুছছে। বাবা নিশ্চুপ এক কোনায় ঠায় দাঁড়িয়ে। বৌ আমার ডাইনিং টেবিলের উপরে বসে আছে অগ্নিমূর্তি হয়ে। ছেলে মেয়েগুলো মায়ের পাশে - আজ যেন
এর একটা হেস্তনেস্ত করবেই।

আমি ঘরে ঢুকে থ। কার পক্ষ নেব? নিত্য দিনের এই তু তু ম্যা ম্যা আর কাঁহাতক সয় প্রাণে?
মায়ের পাশে দাড়াই, বৌ এর হুঙ্কার-ধ্বনি, লেজ গুটিয়ে চলে আসি বৌ এর আঁচলের তলায়। এবার হুঙ্কার ধ্বনি আমার - প্রতিদিন তোমরা কি শুরু করেছ?
একটা দিনও কি একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না আমায়? বাবার চোখে বিস্ময় দেখি, মায়ের চোখে পানি - তাঁদের একমাত্র ছেলের স্বরূপ দেখে চোখে অবিশ্বাস।
বাবা যেন এবার অন্যমানুষ, বাবা হয়ে ওঠে আমার। এই প্রথম বার তিরস্কারের স্বর শুনি মুখে বাবার। তেলের ওপর তৈলমর্দন পেছনটা হয়ে আছে বড্ড নরম।
বাবার তিরস্কারে তাই বড্ড লাগে যেন সেখানে, মনের মাঝে হঠাত যেন এক অমানুষ গর্জে ওঠে। হিতাহিতশুন্য কোথা থেকে কি জানি বলে ফেলেছিলাম সেদিন।
কাল হয়ে গিয়েছিল বাবা সন্তান সম্পর্ক পারিবারিক বন্ধনের ডোর। বাবাও গর্জে বলেছিলেন - রে মূর্খ দূর হয়ে যা এখনি। কোলে পিঠে মানুষ করেছিলাম তোকে
আজকের দিন তখন দেখিনি।

কি হতো সেদিন প্রতি উত্তর না দিলে, না হয় সয়েই যেতাম বাবার তিরস্কার একদম মুখ বুজে। তখনো বুঝিনি শুধু মূর্খই নই মানুষই আমি হইনি, তাইতো বাবার
মুখের ওপর সেদিনই বলে দিয়েছি। দূর হতে হলে তুমি দূর হও, খেতে পড়তে কমতি রাখিনি এত দম্ভ কোথায় পাও?

বাবা শুধু মনে করিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন - আমার বাড়িতে বসে আমাকেই ভয় দেখাও?

মনের শয়তান মুখে বমি করে আজেবাজে কথাগুলো সব আমার মুখে ফোটে। কি? কার বাড়ি? কাগজ দেখেছ কি? ব্যাঙ্কের কাছে যাও গচ্ছিত আছে তোমার দলিল দস্তাবেজ,
পাওয়ার অফ এটর্নি নিজের হাতে দিয়েছিলে আমায় লিখে, মনে পড়েছে কি? এত বড়াই কেন - কি আমার সাধের সম্পত্তি!

সেই থেকে শুরু তারপর ক্রমাগত একের পর এক।
আলাদা হলো অন্ন, আলাদা বাসস্থান, চিলেকোঠার ঘরে হলো বুড়োবুড়ির স্থান।
এক বাড়িতে বসবাস আমাদের, আমার ঘরে উচ্ছিষ্ট খাবার পড়ে রয়।
বুড়ো এই বয়সে টিউশনি ধরেছে বুড়ির অন্ন কখনো হয় কখনো নয়।
একই বাসায় থাকি এখনো, চিলেকোঠায় বুড়োবুড়ি; আলিশান আমার বাড়ি।
আমি আর এর মধ্যে নেই, খুব মাঝে মাঝে ঘরে ঢুকতে বের হতে চোখে চোখে দেখা হয়।

দিন পার হয়
দিন পার হয়
কালের স্রোতে বয়ে চলে সময়।

ইদানীং যেন চুলে ধরেছে পাক, মনেতে শয়তান গেড়েছে বসবাস।
ছেলে মেয়েগুলো উচ্ছন্নে গেছে আমার তাতে কি?
যার যার জীবন করছে যাপন, আমি মানিয়ে নিয়েছি।

কোন এক রাতে ঘুম ভেঙে গেল বৌ এর ডাকে, কান্নার আওয়াজ কোথা থেকে যেন আসে - চিলেকোঠায় কি?
বৌ বলে, চল না একটু খবর নিয়ে দেখি।

দুজনে যাই একসাথে, ছোট্ট ঐ চিলেকোঠার ঘরে।
প্রথম বারের মত দেখতে বুড়োবুড়ির সংসার
সারাটা জীবন আমি সেজে ছিলাম সং, আর আমার বৌ দম্ভের গাছে ঢেলেছে সার
তাইতো এতদিনে একবারও হয়নি আমাদের সময় চিলেকোঠায় আসার
অহংকার, আসলে সবই অহংকার।

যাই হোক ঘরে ঢুকে দেখি পা ছড়িয়ে কাঁদছে আমার মা বুড়ি
নিথর বাবার শরীরটা পড়ে আছে মাটির ওপর বেছানো তোষকে
খাট কেনার সাধ্য তাঁদের ছিল না আর এই বয়সে
বুড়ো বুড়ির তো আর বাসর শয্যা নয়
এই বয়সে এই ভালো মাটির কাছাকাছি, মাটির সাথে পরিচয়।

এখন দিন বদলেছে, যুগ বদলেছে এত সময় আছে কার
মরার পরে দেরি করিনি খুব বেশী বাবার গোর দেবার
সকাল হতেই মাটি চাপা দিয়েছি আজিমপুরের গণ কবরে
আসার পথে দেখে এসেছি আমার জন্য কিনে রাখা অনেক দামের জমিটারে
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, তৈলমর্দনে নিজের জায়গা সংরক্ষিত
একটু যেন শঙ্কা লাগে কে দেবে কবরে প্রদীপ ঘৃত।

যাক বাবা, অনেক দিন বেঁচেছিলে অনেক জ্বালায় জ্বলে
এখন নিশ্চয়ই শান্তিতে ঘুমুবে
মনকির নকীরের পালা শেষ হলে;
হঠাত এ কথা মনে এলো কেন?
এই ড্রাইভার এ,সি টা বাড়াও একটু ঘামছি যেন।

তারপর সারাদিন মান অনেক পরিশ্রম অফিসের জ্বালা সয়ে
তৈলমর্দনের পালা চলেছে সারাদিনই একটু একটু রয়ে
বাসায় ফেরা হলো ক্লান্তি শেষে
হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম
এবার যেন বাস্তব চিন্তা মাথায় কিছু নিলাম।

বুড়োতো গেল, এখন আবার বুড়ির উপায় কি?
নতুন করে আবার নাকি শুরু হয় অশান্তি
বড্ড উচাটন মন
চিলেকোঠায় গেলাম।
বুড়ি একঠায় বসে এখনো সেভাবে
সকালে যেমন রেখে গিয়েছিলাম।

কি জানি হলো মনের মাঝে একটু ধাক্কা খেলাম
অনেক দিন পর গাঢ় স্বরে "মা" বলে ডাকলাম।

সারাদিনে কিছু খেয়েছ মা?

বুড়ি ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে রয়
যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়,
আলতো করে আমার মাথার ওপর হাত রাখে
তুই খেয়েছিস বাবা?

হুম, আমি তো এই মাত্র খেয়ে তোমাকে দেখতে এলাম।

ওতেই আমার খাওয়া হয়ে গেছে রে পাগলা, আমার জন্য চিন্তা করিস না।
দেখ না, সবাই মিলে কেমন ফাঁকি দিয়ে চলে যায়।
তুই ফাঁকি দিলি নিজে ফাঁকিতে পড়ে
সংসারের যাঁতাকলে
তোর বাবা ছিল হাতের লাঠি
সেও হঠাতই দিয়ে গেল ফাঁকি
আমি ভাবছি এবার আমার হবে কি?
ডাক আসতে আর কতদিন বাকি?

কেমন যেন অন্যরকম এক মায়া হলো, মায়ের জন্য।
অনেক অনুনয় করে বললাম - মা আমার ঘরে চলো, এখানে কেও নেই তোমার
এতদিন বাবা ছিলেন দুজন দুজনকে দেখাশোনা করার;
এখন অভিমান ছাড়, আমার ঘরে চলো। জীবনটা একা পাড়ি দিতে পারবেনা।

মা জিজ্ঞাসা করলেন - ওখানে কে দেখবে আমায়?
নাতি নাতনী সব গেছে তো যার যার চুলায়
এখন বিশাল বাড়িতে শূন্যতা ঘোরে
তুই আর তোর বৌও দুজন দু ঘরে
সময়টা কেমন পালটে গেল আমাদের, নারে?

হ্যাঁ মা, সময় পাল্টেছে, পাল্টে গিয়েছে জীবনধারা
এ জগতে কেও কারো নয়
স্বার্থ দেখায় নিজ নিজ চেহারা।

হ্যাঁ রে বাবা, তাই তো এতদিন দেখে এসেছি;
মায়ের চোখে চোখ রাখতে পারিনি
মাথা নিচু করে চলে এসেছি।

তারপর সময় ঘড়িতে আরো কিছু কাঁটা ঘোরে
ঘুরি আমিও জীবনের পাঁকে পড়ে
সংসার চলে সংসারের মত
চলছে দিন মা আর বৌ এখনো মিলেমিশে
আমার মনেতে কোথা থেকে যেন এক ভয় কুঁকড়ে থাকে;

একদিন ভয় রঙ দেখায়
সাদাকালো জীবনে রঙ্গিন ছবি শোভা পায়
বৌ এর পুরাতন চেহারা ফুটে ওঠে
মায়ের আঁচল যথারীতি চোখ মুছে
আমি অসহায় শূন্য চোখে
কিংকর্তব্য-বিমুখ।

শেষমেশ অনেক আলাপ আলোচনার পর "মা" কে রেখে এলাম বৃদ্ধাশ্রমে।

মাথা থেকে যেন একটা বোঝা নেমে গেছে।

আবার নির্ঝঞ্ঝাট সংসারে আমি সং সেজে থাকব
অহংকারের গাছে আমার বৌ সার ঢালবে
দুজনে মিলে সংসার করব
খাওয়া দাওয়া একসাথে
রাতে শোয়া দুজন দুঘরে দু-বিছানাতে
ঘুমের বড়ির নেশায় ঘুমাই দুজনে।

জীবনটা কি এমনই?

কোনো এক রাতে হঠাতই ঘুম ভেঙে যায়, অন্ধকারের মাঝে আয়নায় চোখ যায়
আমি ধীরে ধীরে উঠে বসি
আয়নার সামনে যাই
ওখানে কাওকে দেখা যায় নাকি?
নাকি ওটা আমারই প্রতিচ্ছবি।

ঠিক যেন বিশ বছর আগের বাবা চেয়ে আছে আমার দিকে
দেখে একটু চমকে উঠি
রক্ত কথা বলে
বাবার জিনের কিছু কি এখনো আমার ভেতর রয়ে গেছে?
নইলে অপরাধ-বোধের এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় ঘুম ভাঙ্গায় কে?

ক্রিং ক্রিং টেলিফোন বেজে ওঠে
ধরব না ধরব না করেও হাত বাড়াই মুঠোফোনের দিকে
ওপাশ থেকে বৃদ্ধাশ্রমের সুপারভাইজারের গলা ভেসে আসে
"আপনার মা একটু আগে মারা গেছে"
হুম, ঠিক আছে; আমি পৌঁছে যাব সকালে।

আয়নার প্রতিচ্ছবি যেন আমায় ব্যঙ্গ করে
একটু ভয় পাই যেন
লাইট জ্বালাই
খুব ভালো করে চেয়ে দেখি - এ আমি নই
আসলে বাবাই এসেছিলেন আমাকে মায়ের মৃত্যু সংবাদ দিতে।
অন্যভূবনে গিয়েও সন্তানের প্রতি ভালোবাসাটুকু ঠিকই ধরে রেখেছেন।


পুনঃশ্চঃ

এটা গল্প না কবিতা না ডায়েরীর ছেঁড়া পাতা তা জানি না
কারো জীবনের সাথে মিল আছে কি না তাও জানি না
তবে কেন যেন ইচ্ছে করল মনে মনে ডায়েরী লেখার
আজ অনেক দিন পর অন্য কোন কবিতা বা গল্প না লেখে না হয় ডায়েরীই লিখলাম
কিংবা মনে মনে একটু একটু করে না লেখা ডায়েরির কিছু ছেঁড়া পাতা থেকে পাঠ করলাম
কেও পড়লো তো পড়লো না
শুনলো তো শুনল না
বুঝলো তো বুঝলো না
তাতে আমার কিছুই আসে যায় না
কেন জানি এ লেখাটি লিখতে গিয়ে বার বার চোখ ভিজে উঠেছিল - নিজেই জানি না।

এমনই কি হবে আমার জীবনের পরিণতি?
কিংবা তোমার?
কিংবা তার?

সংসারের গতি আজ কোন মুখি?
জানি না
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।


নতুন সংজ্ঞায় বন্ধুত্ব


নতুন সংজ্ঞায় বন্ধুত্ব
- যাযাবর জীবন

তুই আমার কে?
আমি তোর কে?
বন্ধুত্ব নামক এক সম্পর্ক
পরিচয়ের সূচনাতে;
সম্বোধন "বন্ধু"
ডাকতে হবে তো কিছু
শুরুটা এভাবেই হয়
হয়েছিল এভাবেই;
মাধ্যম? কেও না কেও হয়ে রয়
যতি চিহ্নের মত, হতে পরিচয়।

তারপর?

সময় গড়ায় কালের স্রোতে
বন্ধুত্বের হাঁটি হাঁটি পা পা
পাড়ি জমায় একটু একটু করে
সীমা লঙ্ঘিতে;

ভালোবাসার বন্ধন?
যৌবনের তাড়না?
নাহ্‌, ঠিক হলো না।

সীমার বাঁধন ভেঙ্গে কলঙ্কিত বন্ধুত্ব
সময় দৌড়োয় নিয়ে কলুষিত সম্পর্ক
সংসারে কিছু ভাঙা গড়ার খেলা
সবই কি জীবন আর যৌবনের তারনা?
পুরনো সং এ নতুন সাজ
নিত্য সংসার গড়ায় নেই কারো লাজ
এ কি যুগের কালিমা?
কি জানি, হয়তো;
মাথায় ধরে না।
তবু একটু একটু বুঝি মনে হয় -
এখনকার বন্ধুত্ব যুগের সাথে চলমান
কিংবা কালের স্রোতে ভাসমান
অগভীর কালো জলেই নাকি শ্যওলা পড়ে
পা পিছলায় কিংবা সম্পর্ক,
আবার হয়তো হতে পারে
ইদানীংকার নতুন ভাবে
নতুন যুগে, নতুন করে
বন্ধুত্বের নাম-
নতুন ধারায় সংজ্ঞায়িত।

তারপর???????

আবার নতুন বন্ধুত্ব
নতুন সম্পর্কের সূচনা
নতুন পথে পথচলা
নতুন জীবনের হাতছানি
এ যেন এক নিত্য নতুন
নব যুগের কলুষিত খেলা;

তারপর ক্রমাগত.........

চক্রের সমাপ্তি কোথায়
কেও জানে না।

কোথাও খুঁজে পাই না আজ আর
আমাদের সেই পুরনো দিনের
গভীর সম্পর্ক
টলটলে কালোজলের মত
বহমান নদীজলের মত পবিত্র
যার নামকরণ করেছিলাম "বন্ধুত্ব"।

তুই আমার কে?
আমি তোর কে?
আসলেও বড্ড জানতে ইচ্ছে করে
নতুন যুগের এ পৃথিবীতে।





শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

নারী


নারী
- যাযাবর জীবন

যতটুকু বয়স হলে যৌবন প্রাক্কালে
পরিপূর্ণ রমণী হতে পারে
একটি নারী,
মন বলে হয়ে গেছে
দেহ বলে আড়ে আড়ে
মনেরে চোখ ঠারে
রমণীর রূপে প্রকাশিতে
এখনো রমণী হতে
আছে আরো অল্প কিছু সময় বাকি;

খুব সহসাই
স্বল্প সময়ের ব্যবধান
বুকে সেফটিপিন গাঁথে হাত
যৌবন ঢাকে আনাড়ি,
প্যাঁচের পর প্যাঁচ
শারিতে প্যাঁচ
বোঝে, আজ হয়ে উঠছে নারী;
শারির প্যাঁচে আপাদ মস্তক ঢেকে রাখার কলা
এও অন্য এক নারীসুলভ চালাকি।



মনের আড় বেয়ে প্রেমধারা নামে
বয়ঃসন্ধির খুব প্রাক্কালে
কাল গড়ায় সময়ের স্রোতে
সন্ধ্যে গড়ালে হুহু হাহাকার
চখীর প্রাণ কাঁদে চখার সন্ধানে;
কেমন যেন আনচান চারিধার
মনের চোখেতে কার যেন
উঁকি বারে বার,
ডামাডোল বাজাতে হয় না
শরীর বাজায় ঢোল;
হাতে চুড়ির টুংটাং
অপেক্ষায় বাড়ানো হাত
ধরবে শক্ত বাহু
গুজবে মাথা লোমশ বুকে
এখন যৌবন এসেছে ধেয়ে
রমণীর দেহমন জুড়ে।

খুব হঠাৎ করেই চোখের নিমিষে
সামনে দেখি এক পরিপূর্ণ নারী।



শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

বাইল্য প্রেম


বাইল্য প্রেম
- যাযাবর জীবন

মনে আছে কি -
আমাগো বাইল্য প্রেম কাহিনী?
তুই আর আমি
সেই কত দিন হইয়া গেছে
এখনো চোখের সামনে ভাসে
বাইল্য কালের ছেলেমানুষি
বুঝতাম না ঠিকমতন
আসলে ছিল প্রেমকাহিনী।

তোর একমাত্র সোয়ামীর
পয়েলা পোলার ঘরের পয়েলা নাতনি
আমার বড় বৌ এর
পয়েলা মাইয়ার ঘরের পয়েলা নাতি
নাক টিপলে দুধ বাইর হয়
তয় দুইটাই চরম বদ;
ইদানীং প্রেম করতাছে চুটাইয়া
আর আমরা চাইয়া চাইয়া দেহি
আঙ্গুল চুই মুখে ভইরা
মাঝে মইধ্যে কামড়াইয়া দেহি
স্বপ্ন দেকতাছি নাকি
লাভ কি?



পুরাণ কতা মনে পড়তাছে কি?
এই বয়স আমাগোও আছাল
তোর লগে ইটিশ পিটিস
বাবায় বাইড়াইয়া উডাইছাল
আমার পিছনের ছাল
পীরিতে ধরা খাইয়া
তর লগে পুস্কনির পাড়
নাইরকেল গাছের চিপায়
জড়াজড়ি
তোর আর আমার
হি হি।

অহন নাতি পুতির পীরিত দেহি
ধুর?
খালি দেইখা লাভ কি?

বুইড়া বয়সের ভীমরতি
মাতার ভিতরে খাবলাইয়া ধরে
পাইনসা জীবনে আউলা কাম
কিছু করবার মনে করে
কেমুন আউলা চিন্তা মাতায় ঝাঁকি মারে
চল না, দুইজনে পলাইয়া গিয়া বিয়া করি
দুইন্নারে দেই একখান টাসকি
হি হি
কি যে সব আজগুবি ভীমরতি।

আইচ্ছা এমুন করলে কি অইব?
মাইনসে নানান কতা কইব?
মাইনসের কতায় কি আহে যায়
তরে অহনো যে আমার পরাণ চায়!
ছি, ছি!! মরি মরি
বুইড়া বয়সে ভীমরতি।

বাইল্য প্রেমের পরিণয়
কখনো হয় কখনো নয়
অহন, নাতি নাতনির পীরিত দেহি
দুইজনে খাড়াইয়া দুই ব্যলকনিত
আর পুরান দিনের স্বপ্ন দেহি
চশমার কাঁচ ঝাপসা হয় মাঝে মাঝে
কেন?
কে জানে?