শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯

অভিমানে গ্রহণ




অভিমানে গ্রহণ
- যাযাবর জীবন


প্রেমের সূর্যোদয়ে তুই ছিলি
ছিলি ভালোবাসার সূর্যাস্তেও;

সূর্যটা ধ্রুব ছিলো
ধ্রুব ছিলো প্রেমটাও
শুধু আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম তুই আর আমি
তুচ্ছ ভুল বুঝাবুঝিতে;

এখন আমরা রাত কাটাই চাঁদে
রাত কাটাই অন্ধকারে
রাত কাটাই রাতে
ভালোবাসাটা এখনো ধ্রুব আছে
ধ্রুব আছে অনুভব অনুভূতি
শুধু হারিয়ে ফেলেছি অনেকটুকু সময়
জীবন থেকে;

এখন কেও ভালোবাসার কথা বললে
জোর ঢেউ ওঠে বুকের ভেতরের শ্যাওলা পুকুরে
আর ডুব সাঁতারে ভেসে উঠিস তুই,
আচ্ছা! তোরও কি এমন লাগে?

এখন কেও প্রেমের কথা বললে
খুব জোরে বাতাস বয় বুকের ভেতরের অন্ধকার আকাশে
আর বৃষ্টি হয়ে নেমে আসিস তুই,
আচ্ছা! তোরও কি এমন লাগে?

আচ্ছা! অভিমানের কখনো সূর্যাস্ত হয় না?
দেখে নিস, যেদিন তোর অভিমানে গ্রহণ লাগবে
আমি ঠিক চাঁদ হয়ে উঠে আসবো তোর আকাশে
সেদিন চাঁদনিতে লজ্জা পেলে
তোকে ঢেকে দেব না হয় মেঘের চাদরে;
ভালোবাসার মানুষের কাছে লজ্জার কি আছে?











সমান্তরাল জীবন



সমান্তরাল জীবন
- যাযাবর জীবন


ভার্চুয়াল জীবনটা খুব অদ্ভুত
বাস্তব জীবনের পাশাপাশি যেন আরেকটি সমান্তরাল জীবন
এখানে সব চলে
সব বলতে আমি সবই বুঝাতে চেয়েছি;

এখানে নতুন নতুন মানুষের সাথে নিত্য পরিচয়
পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব
বন্ধুত্ব থেকে প্রেম
প্রেম থেকেই কিন্তু আবার বাস্তব জীবনে পদার্পণ,
কখনো পরিণয়
পরিণয়ে সুখী জীবন
ভার্চুয়াল নয় কিন্তু, বাস্তব জীবন;
কখনো বা মান অভিমান, বিচ্ছেদ
ঘৃণা
সংসারে ভাঙন
সেটাও কিন্তু বাস্তব জীবন;

শুরুটা কিন্তু হয়েছিল ভার্চুয়ালে
সমাপ্তি বাস্তবে;

এ তো গেলো ভালো দিক,
খারাপ দিকের কি কোন সীমা আছে?
ভার্চুয়ালে পরিচয়
বন্ধুত্ব
প্রণয়
ভার্চুয়ালেই শরীর বিনিময়
আজকাল মোবাইল ক্যামেরাতেই নাকি সেক্স হয়
আচ্ছা! ভার্চুয়ালে কি বংশ বৃদ্ধি সম্ভব?
কে জানে? বিজ্ঞান কোনদিন নতুন কি খেলা দেখাবে?
হ্যাঁ! যা বলছিলাম,
ভার্চুয়ালের শরীর বিনিময়ের ফলশ্রুতিতে ব্ল্যাকমেইল
টাকার লেনদেন
লেনদেন বাস্তব শরীরের,
তারপর?
জীবন বিষময়
ভার্চুয়াল জুড়ে পর্ণগ্রাফি কথা কয়;

আমরা জানি,
সবাই জানি
ভার্চুয়ালের সকল ঋণাত্মক কাহিনী,
তবুও প্রতিদিন নতুনভাবে নতুন করে ফাঁদে পড়ি
ভার্চুয়াল ঋণাত্মক কাহিনীর ফাঁদে।

এভাবেই বেশ চলে যাচ্ছে দিনের পর দিন
হাসি কান্না
রাগ ঘৃণা
মান অভিমান
ভালোবাসা আর ছলনার প্রতিদিন;
ভার্চুয়ালে আর বাস্তব জীবনে
একসাথে মিলেমিশে, সমান্তরালে।




অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর



অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর
- যাযাবর জীবন




ইদানীং যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ছি
আর যখন তখনই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে,
এই গরম তো এই কেমন শীত শীত অনুভব
এই প্রখর রৌদ্র তো এই ঝুম বৃষ্টি
এই কালো কালো রাত তো এই চাঁদনি
ঘুমিয়ে পড়লে এখন আর স্বপ্ন আসে না চোখে
অথচ দেখ! বেয়াড়া মনে জেগে থাকলেই তুই দুচোখ জুড়ে;

আমার সময়টা বড্ড বদলে গেছে
বদলে গেছে দিন
বদলে গেছে রাত
এখন আর কোন কিছুর ওপর মন বসে না
কোন ঘটনার ওপর থাকে না আমার হাত;

আচ্ছা! তবে কি সময় ফুঁড়িয়ে এসেছে?
জীবনের;
এবার কি ঘুমিয়ে যেতে হবে?
চিরঘুমে;

আচ্ছা, সময় ফুঁড়িয়ে গেলে চলে যেতে হয় কেন?
দাদা গেলো, দাদি গেলো
নানা গেলো, নানী গেলো
বাবা গেলো, মা গেলো
আরো কত কত আত্মীয় স্বজন!
ওরা কি ওখানে একসাথে আছে?
ওখানেও কি সংসার পাতে?

আচ্ছা, ওখানে কি জেগে থাকতে হয়?
ওখানে কি গভীর ঘুম হয়?
স্বপ্ন আসে চোখে?
ওখানে দিন আছে?
রাত?
দিনে সূর্য হাসে?
রাতে জ্যোৎস্না?
তুই থাকবি ওখানে?
দেখতে পাব তোকে?
আচ্ছা! ওখানেও কি মৃত্যু আসে?

অপেক্ষার প্রহরগুলো বড্ড দীর্ঘ হয় রে!
মৃত্যুর অপেক্ষা।





একটা স্বপ্ন লিখে দিয়ে এসেছিলাম তোর চোখে



একটা স্বপ্ন লিখে দিয়ে এসেছিলাম তোর চোখে
- যাযাবর জীবন


দুর্বোধ্য রাত্রি তুই
আমি ঘুম চোখেও তোকে দেখি

রাতের পরতে পরতে অন্ধকার
আমি আঁধারে কালোর গল্প শুনি

রাতে কি আলো থাকে কোথাও?
কোন কোন রাতে চাঁদ ওঠে

আচ্ছা! জ্যোৎস্নার কি গল্প আছে কোনো
কবিতা কেন লিখা হয় চাঁদনিতে?

তুই আমার চোখে চোখ রেখেছিস
মন পড়িস নি

তুই আমার হাতে হাত রেখেছিস
স্পর্শে অনুভব চিনিস নি

তুই আমার বুকে হাত বুলিয়েছিস
ভালোবাসা বুঝিস নি

আমি যা বলতে চেয়েছি তুই তা শুনিস নি
তুই যা বলতে চেয়েছিস আমি তা বুঝি নি
তবুও একসময় চোখে চোখে চোখ চেয়েছিলাম
হাতে হাতে হাত রেখেছিলাম
আর অনুভবে অনুভব
ভালোবাসা বুঝতে গিয়ে চাঁদ হয়ে গিয়েছিল চাঁদনি
আর রাতের চোখে ঘুম,
আমি একটা স্বপ্ন লিখে দিয়ে এসেছিলাম তোর চোখে;

ভুলে গিয়েছিস?
তবে আজো কেন আমায় স্বপ্নে দেখিস?

ভালোবাসা কি ফুরোয় রে?
কোথাও না কোথাও তো অনুভব রয়েই যায় রে,
হয় সূর্যে নয় অন্ধকারে
কারো স্বপ্নে কারো ঘুম চোখে,
তুই চাঁদের টর্চ জ্বালিয়ে আমায় খুঁজিস আলোর মাঝে
আমি অন্ধকারেও তোকে দেখি চোখ বন্ধ করে।






বিনিময়ের শর্ত




বিনিময়ের শর্ত
- যাযাবর জীবন


একটা চারাগাছ ছিলো তোর বাগানে
তুই আগাছা ভেবেছিলি
একদিন কেটে ফেলে দিতে চাইতেই আমি বললাম
চারাগাছটা আমায় দিয়ে দে,
কি ভেবে তুই আগাছা না কেটে চারাটা আমায় দিয়ে দিয়েছিলি
তবে শর্ত জুড়ে দিয়ে
একদিন ফেরত নিতেও পারিস সুদে আসলে;

আমি চারাটাকে যত্ন করলাম
পানি দিলাম
সার দিলাম
ভালোবাসা দিলাম,
ধীরে ধীরে চারাগাছ বড় হলো
এক সময় ভালোবাসার প্রতিদানে আমায়
ফুল দিলো
ফল দিলো
ছায়া দিলো;

অনেক অনেকদিন পর একদিন তুই আমার বাগানে ঘুরতে এলি
ফলবান গাছটার নিচে দাঁড়ালি
গাছটা তোকেও ছায়া দিলো
গাছটার ডালে ডালে থোকায় থোকায় ফল ঝুলে আছে
তুই গাছটা দিকে চেয়ে বললি
বাহ!
বেশ ফলবান বৃক্ষ তো!

আমি ঘুরে ঘুরে তোকে বাগান দেখালাম
তুই হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলি
আমার বাগান থেকে একটা আগাছা দিয়েছিলাম তোমায়
মনে আছে?
আমি হেসে বললাম
হ্যাঁ, আছে
তবে ওটা এখন মহীরুহ হয়ে গেছে
ফুলে ফলে আমায় ভরিয়ে দিয়েছে,
তুই জিজ্ঞাসা করলি
কোথায় সেটা
আমি বললাম
ওপরে তাকা
তুই দাঁড়িয়ে আছিস তোর আগাছার ছায়ার তলে;

তুই আশ্চর্য হয়ে বললি
ধ্যাত! মিথ্যে কথা
আমি তো তোমায় আগাছা দিয়েছিলাম
এটা তো ফলবান বৃক্ষ,
আমি হেসে বললাম
তুই গাছ চিনতে ভুল করেছিলি
যা তুই উপড়ে ফেলতে চেয়েছিলি আমি তা গ্রহণ করেছিলাম ভালোবেসে
তোর আগাছা আজ আমার মহীরুহ হয়ে গেছে;

তুই কিছুক্ষণ ভেবে বললি
সেদিন কি বলেছিলাম মনে আছে?
এখন আমার বস্তু ফিরিয়ে দেও সুদে আসলে,
আমি হেসে বললাম
ঠিক আছে
তবে আমায় নিয়ে যাও,
তুই বিরক্ত হয়ে বললি
আমি আগাছা নেই না,
আমি পুরো বাগানটা তোকে দিয়ে আমি রিক্ত চলে এলাম;

তুই আবারও কি ভুল করলি?
তুই ভাবলি সুদে আসলে লাভের কথা
আর আমি ভালোবাসার মানুষকে কিছু দিতে পেরে সুখী হলাম,
আসলে কি রিক্ত হলাম?

আমি তোকে আমায় দিতে চেয়েছিলাম
তুই বিনিময়ে বাগান নিলি,
অর্থ নিশ্চয়ই ভালোবাসার চেয়ে অনেক অনেক দামী;
ধ্যাত!
ভালোবাসার কিই বা বুঝি আমি?








সাদা কাগজের গল্প



সাদা কাগজের গল্প
- যাযাবর জীবন


দুপুরটা পুড়ছে
সাথে রোদ,
ধুলো উড়ছে
ঘাম ঝরছে
আর কিছু কান্না কান্না চোখ;

আমি মানুষ দেখি
দেখি মানুষের চোখ,
গল্প কিন্তু মানুষের চোখেই থাকে
মুখ ফুটে কেও কেও বলতে পারে
বেশীর ভাগই পারে না,
আমার কেন জানি চোখ পড়তে বড্ড ভালো লাগে
এক একটি নির্মম গল্প এক একটি চোখে;

আমার কোন কাজ নেই
রোদ পোড়া দুপুর বড্ড অলস কাটে
মাঝে মাঝে ঝাঁ ঝাঁ রোদে আমি রাস্তা হাঁটি
আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখি
তাদের চোখ পড়ার চেষ্টা করি
চোখ পড়ে তাদের দুঃখ কষ্ট গুলো ঘাটি
ইচ্ছে রঙ লাগাই
ইচ্ছে রঙে সাজাই
তারপর সাদা কাগজে নানা রঙের কলমে আঁকি,
ঐ লোকে যাকে গল্প বলে;

যারা পড়ে
তারা বেশীরভাগ আমার নিজের গল্প বলে ভেবে নেয়
আমি তাদের চোখ পড়তে পারি না
কাগজও তাদের ভুল ভাঙায় না;

অথচ আমার নিজের জীবনের কোনো গল্প নেই
সাদা কাগজের নিজস্ব গল্প থাকতে নেই।




হারিয়েছি চোখে চোখে



হারিয়েছি চোখে চোখে
- যাযাবর জীবন


ঐ চোখে কতবার যে হারিয়েছি!
জানি না,
অনেকবারই তুই
করেছিলি মানা,
আরে বোকা, মানা দিয়ে কি চোখ ফিরিয়ে রাখা যায়?
না মন শোনে ভালোবাসার মানা;

আমার চোখ আমারই
তোকে চেয়ে দেখার সুখ একার আমারই
না হয় দূর থেকেই একা একা
তোর পানে চেয়ে থাকা
আর নিস্তব্ধ অসহনীয় সময়;

আমার মন আমারই
আর তোকে ভালোবাসা, আমার একার অনুভব
একা একা আনমনে
শুধু তোকে ভেবে ভেবে
বয়ে গেছে কত কত স্তব্ধ সময়;

কজন হারিয়ে যেতে পারে চোখে?
কজনার চোখেই বা হারানো যায় রে?
এই যে মনের ভেতর
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ
তোরই যে চোখ চেয়ে
জানবে না রে কেও;

আমি আমার ভালোবাসার কথা কাওকে বলি নি
শুধু তোর চোখ এঁকেছি কবিতার খাতায়
তবুও সবাই তোকে চিনলো কি করে?

ভালোবাসার গন্ধ বোধহয় দূর দূর ছড়ায়।




ভিজতে হয় দুটোতেই




ভিজতে হয় দুটোতেই
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসা কি?
কাছে আসার ইচ্ছা;

আর বিরহ?
কাছে আসতে না পারা;

এত সোজা?
হুম,
ভালোবাসতে হলে ঠোঁট থেকে নেমে বুকে বসত গাড়তে হয়
যেখানে হৃদয় থাকে,
তোমরা নাভি থেকে শুরু করে নেমে যাও নদীতে
বিরহ ডাক দিয়ে;

ভিজতে হয় কিন্তু দুটোতেই,
ক্ষরণে
আর লবণে।


মানুষ মাত্রই একা



মানুষ মাত্রই একা
- যাযাবর জীবন


জীবনটা টাকার
সম্পর্ক স্বার্থের;

এখানে অর্থ কথা কয়
এখানে স্বার্থ কথা কয়
সম্পর্ক?
কেও কারো নয়;

এখানে টাকার পরিমাপে স্বার্থের নিক্তি দোলে
মূল্যবোধ আর সম্পর্কগুলো চাপা পড়ে রয় টাকার বান্ডিলের তলে
সম্পর্কের কেনাবেচা?
অর্থের পরিমাপে;

কি বিশ্বাস হলো না?
আরে সম্পর্কের মোড়ক খুলেই দেখ না একবার
হোক না নিজের পরিবার
না হয় হলোই বাবা মা ভাই বোন
আর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় স্বজন
পরখ করতে দোষ কি?
স্বার্থের সাঁকোটা একটু নাড়িয়ে দেখলেই না বুঝতে পারবে, কে আপন;

বন্ধু বান্ধব?
ধ্যাত! সে তো অনেক দূরে;
কি বলছ? প্রেমিক প্রেমিকা?
আরে ও তো সীমানার ওপারে;

তোমরা সম্পর্ক বলতে মানুষ বোঝাও
আমি সম্পর্কের সম্পর্ক দেখেছি স্বার্থে
দেখেছি টাকায়;

তারপর থেকে নিজেকে করে নিয়েছি একা;
সম্পর্ক?
কিছু কিছু আছে
তবে যতক্ষণ ট্যাঁকে আছে টাকা;
তারপর?
আরে মানুষ মাত্রই একা,
মানুষ মাত্রই একা।





মানুষের অবয়বে অমানুষ




মানুষের অবয়বে অমানুষ
- যাযাবর জীবন


শরীরটাই সকল সমস্যার মূল;

শরীরে ক্ষুধা আসে
মানুষ খাদ্য খোঁজে
শরীরে কাম আসে
মানুষ শরীর খোঁজে

ক্ষুধা সবচেয়ে বড় শত্রু
পেটের কিংবা শরীরের,
তারপর একে একে রিপুগুলো ভর করে শরীরে
মানুষ রিপুর দাসত্ব করে,
অমানুষের সৃষ্টি হয় মানুষই মাঝে,
তোমরা অমানুষ দেখেছ?
আমাকে দেখ;

পেটের ক্ষুধা মিটে গেলেই রিপুগুলো প্রায়শই আমাকে অমানুষ বনিয়ে ফেলে
আমি চিনতে পারি না নিজেকে নিজে;

কাম থেকে শুরু,
ক্রোধ ভর করে যে কোন অপ্রাপ্তিতে
লোভ লালসা তো মানুষেরই রন্ধ্রে রন্ধ্রে
মোহের হাতছানি উপেক্ষা করতে পেরেছে কে কবে?
মদ তো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে, আজকাল হাতছানি নতুন নতুন নেশা
মাৎসর্য কিংবা পরশ্রীকাতরতা আমাদের রক্তে থাকে মিশে;

আমি জানি রিপুগুলো তোমাদের মাঝে নেই,
আছে কি?
আয়না কি কিছু বলে?
বলে না?
তবে আমায় দেখ,
মানুষের অবয়বে রিপুতে ডুবে থাকা অমানুষ।







ভালোবাসার ডুব সাঁতার



ভালোবাসার ডুব সাঁতার
- যাযাবর জীবন

নদী পাড়ে তার বাস অথচ সে নাকি নদী দেখেনি,
এক অঝোর বৃষ্টির দিনে আমি তাকে নদী দেখাতে নিয়ে গেলাম;

প্রথমে সে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো
তারপর উচ্ছ্বাস!
এটা কি সমুদ্র?
আমি বললাম, না রে
এটা একটা ছোট নদী মাত্র
সমুদ্র অনেক বড়;

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন
বাচ্চা মেয়ের মত ছোটাছুটি করছিলো সে নদী পাড় ধরে
দৃষ্টিভ্রম কি না জানি না,
তবে আমি তার নদী হওয়া দেখছিলাম
তারপর বয়ে গেলাম;

আমি তো তাকে সেদিন নদী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম
অথচ সে আমায় প্রেমে ডুবিয়ে দিলো,
যতটা জল সে ছুঁয়েছিল সেদিন, তার থেকে বেশী আমায় ছুঁয়ে দিলো
আমি ভাসলাম, ডুবলাম, নদীতে;
সে বহু বহুদিন আগেকার কথা;

নদী কি আর স্থির থাকে?
সে তো ক্রমাগত বয়ে যায়
কে তাতে ভাসলো
কে ডুবলো
তার কি এসে যায়?

আর এদিকে ঝুম বৃষ্টি হলে আজো মন বড্ড নদী হয়ে যায়
আমি কি আর উঠতে পেরেছি নদী থেকে?
ভালোবাসা বড্ড ডোবায়
নদী কিংবা নারী'তে;

নারী তো নদীই,
তাই না?

ভালোবাসায় সাঁতার কেটেছ কখনো?
ডুব সাঁতার;
তাইলে আর নারী চিনবে কি করে?






কেমন আছি আমি?



কেমন আছি আমি?
- যাযাবর জীবন


কেমন আছি?
কাওকে বলতে পারি না
বললেও কেও বোঝে না,
মানুষ তার নিজেরটা বোঝে
নিজের মত করে বোঝে
অথচ কেও কারোটা বোঝে না;
এই যে বুকের ভেতর মন খারাপের ছলাৎ ছল
অথচ মানুষ বাইরেটা দেখেই বলে, বাহ কি দারুণ!
তাই না রে? বল;

ভান ধরে থাকায় আমাদের জুড়ি মেলা ভার
মনে মনখারাপের পাহাড় নিয়ে আমরা ভালো থাকার ভান ধরে থাকি
মানুষের সাথে হাসি, খেলি
মানুষের তালে নাচি;
বড্ড অদ্ভুত মনে হচ্ছে, তাই না?
আসলে কি অদ্ভুত?
আয়নার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেও তো দেখি!

আমি ভালো নেই,
কথাটা কাওকে বিশ্বাস করাতে পারি না
মনের সাগর যে চোখে ভাসে না!
অথচ রক্তে লবণ বয়ে যায় প্রতিক্ষণ
আর আমরা ভালো থাকার ভান করে কাটিয়ে দেই
এক আশ্চর্য দ্বৈত জীবন!

বুকের মাঝে কান পেতে নেই কেও
কেও পড়ে না চোখের ভাষা
অথচ বাহ্যিক পোশাকি জীবন দেখে মেপে নেয়
ভালো থাকা আর খারাপ থাকা
তাই না?

সোনালী চিল রুপালি আকাশে ওড়ে
মন খারাপ, মন আকাশে
আর আমরা হাসিমুখে পৃথিবীর বুকে
তোমরা আমার ভালো থাকা দেখ
দূর থেকে, চেহারা মেপে;

আমি ভালো আছি
খুব ভালো আছি
তোমাদের চোখে,

মন খারাপ তুমি কই?
মনের ভেতর
খুব গভীরে।




প্রেমের হিপোক্রেসি



প্রেমের হিপোক্রেসি
- যাযাবর জীবন


হিপোক্রেসি আজ প্রেমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে,
ছলনা!
নারী পুরুষ সবার মাঝে;

আজকাল এক পুরুষে নারীর আর চলে কই?
কিংবা এক নারীতে পুরুষের মন ভরে কই?
আর প্রেম?
আজকালকার প্রেম মানেই তো বিছানা
চোখে চোখে কথা হতে হতেই শরীর লেপ্টে যায় শরীরের সাথে
আর প্রেমের গভীরতা মাপা হয় শরীর যখন খাটে;

দুপুরটা প্রেমিকার সাথে কাটিয়েই সন্ধ্যায় অন্য নারী
আরে বাবা! বান্ধবী
তোমরা খালি ভুল বোঝো
গল্পের ছলে একটু শরীর ছানাছানি হলে তোমাদের এত গায়ে লাগে কেন?
এখনো আদিকালে পড়ে আছ
কি? এটাকে হিপোক্রেসি বলছ?
মনটাকে একটু বড় কর;

বিকালটা প্রেমিকের বাহুবন্ধনে কাটিয়ে রাতে অন্য পুরুষ
আরে ধ্যুর ছাই!
ভুল বুঝ না তো! ও আমার বন্ধু,
বন্ধু না হয় একটু চুমুই খেয়েছে, তাতে তোমাদের সমস্যা কোথায়?
আদিকালের ধারণায় কি জীবন চলে?
কি বলছ? এটা হিপোক্রেসি?
ধ্যাত! আমরা অনেক ব্রড মাইন্ডের;

একদিকে রমণ শেষে স্ত্রীর ভেতর থেকে ডুব দিয়ে উঠেই প্রেমিকার সাথে ভার্চুয়াল প্রেম চ্যাটে
অন্যদিকে স্বামীকে রমণে ঘুম পাড়িয়ে প্রেমিকের সাথে সারারাত ভার্চুয়াল চ্যাটে
প্রেমটা বড্ড বেশী হিপোক্রেটিক হয়ে গেলো না?
পরকীয়া তো প্রেমই তাই না?

উঁহু! তোমরাই সব হিপোক্রেট
আমরা প্রেম করি,
এই যে তুমি!
রাতে বৌ এর সাথে ঘুমাও আর মনে মনে পাশের বাসার সুন্দরীর স্বপ্ন দেখ;
শোনো, তোমাকেই বলছি!
মনের ভেতর অন্য পুরুষ নিয়ে শুয়ে থাকো স্বামীর বুকে;
এটা তোমাদের হিপোক্রেসি হলো না?
আমাদের দেখ!
আমরা বৌ এর চাহিদা মিটিয়ে প্রেমিকাকে সময় দেই
আমরা স্বামীর কর্তব্য শেষ করে সারারাত প্রেমিকের সাথে কষ্ট করে জেগে থাকি
এটা আমাদের স্বাধীনতা,
তোমাদের কাছে হয়তো হিপোক্রেসি;
ও হে আদিকালের মানুষ! তোমরা প্রেমের বোঝো কি?

তোমাদের যতসব আদিকালের বস্তাপচা চিন্তাভাবনা;
আজকালকার প্রেম বোঝো?
আরে বাবা! প্রেমের কাছে শরীর বড্ড তুচ্ছ
প্রেম মানেই মন
প্রেম মানেই কবিতা
প্রেম আছে বলেই উপন্যাস
শরীর?
সে তো প্রেমেরই অংশ
ধুয়ে নিলেই পুত: পবিত্র;

আর হিপোক্রেসি?
ভাষণ দিও না,
তুমি
আমি
আমরা সবাই হিপোক্রেট
কম আর বেশী;

বাহ! ভালো যুক্তি তো!
এদিকে যে হিপোক্রেসি খেয়ে ফেলছে নতুন পুরনো সব সম্পর্কগুলো,
দেখছ কি?

ধ্যাত! বড্ড বোকা তোমরা,
আর সম্পর্ক?
সে আবার কি?
শরীর থাকলেই নিত্য নতুন গড়ে নেয়া যায়
সম্পর্কের আবার নতুন আর পুরানো কি?









অভিনয়ে জীবন



অভিনয়ে জীবন
- যাযাবর জীবন


আমরা সবাই ক্রমাগত অভিনয় করে যাই
নিজের সাথে,
দ্বৈত মানুষ হয়ে;
একদিকে পোশাকি সামাজিক জীবন
আরেকদিকে সত্যিকারে ভেতরের মানুষটার ক্ষরণ
কয়জন মানুষ আছে, মন যা চায় সেভাবেই দিন কাটায়?
আমি তো নইই,
কতবার হেরে গিয়েছি জীবনের কাছে, পরিবেশের কাছে, পরিস্থিতির কাছে!
আচ্ছা! যেভাবে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছ আদতে তুমি কি তাই?

কখনো ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে গেলে এত দুঃখিত হই কেন আমরা?
ভালোবাসা কি ছেড়ে গিয়েছে?
উঁহু! ভালো করে তাকাতে হয় নিজের ভেতরে
দুঃখিত হতে হয় তখনই যখন ভালোবাসাটাই আমায় ছেড়ে চলে যায়
ভালোবাসার মানুষ!
সে তো সময় সময় অভিমানে দূরে সরে যেতেই পারে,
তবে দুটি মন থেকেই যদি ভালোবাসা ছেড়ে চলে যায় তবে আর দুজন এক হয়ে থেকেই বা লাভ কি?
শুধু পুরাতন অসহনীয় কিছু ভালোবাসার স্মৃতি;

ভালোবাসার মানুষের খুব কাছাকাছি যেতে নেই, একদম ভেতরে
অথচ ভালোবাসাটা জড়িয়ে রাখতে হয় মনের ভেতর খুব যতনে, ওমে ভরে;
ভালোবাসার মানুষের খুব কাছে এলে মনে হয় যাকে ভালোবেসেছিলাম আসলে এ সে নয়
ধীরে ধীরে দুটি মানুষের তুলনা নিজের দ্বৈত মনের সাথে
ফলশ্রুতিতে কারো কারো কাছে ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে ফিকে হতে থাকে,
বেশীরভাগ মানুষ নিজেকে মানিয়ে নেয় পরিস্থিতির সাথে
মানুষটা যেমনই তেমন করে গ্রহণ করে
আর কেও কেও ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকেও দূরে সরে যায় ভালোবাসার কাছ থেকে
দ্বৈত ভাবনায় জীবন তো চলে যায়, আদতে সুখ কোথায়?
অভিনয়ে জীবন কাটায়;

মানুষের চেয়ে বড় অভিনেতা আর কে আছে?
নিজের কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে মানুষেরই কাছে দাঁত বের করে থাকে;
আমরা এক একজন মুখোশ মানুষ, সকলে
মুখোশের আড়ালে কান্না লুকাই, খুব সযতনে।












সোনার চামচের অলীক স্বপ্ন



সোনার চামচের অলীক স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন

যারা সোনার চামচ মুখে করে জন্মেছে জীবনটা হয়তো তাদের কাছে খুব সুখের
আমি গতর খেটে উপার্জন করি
হাত দিয়ে ভাত খাই
স্বপ্ন বলতে পেটে দুবেলা দুমুঠো ভাত
আমার স্বপ্নে সোনার চামচ আসবে কোত্থেকে?

কেও কেও স্বপ্নে সাজায় স্বপ্নের বাসর
কারো কারো জীবন স্বপ্নগুলো খুব ভয়ংকর;

তোমারা ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টায় রত
আমার কঠোর পরিশ্রম পেটের টানে যত
তোমাদের কাছে ঘুম সুখের স্বপ্ন দেখবে বলে
আমার স্বপ্নহীন একঘুমে রাত পার, সকালে উঠতে হবে বলে;

মাঝে মাঝে আমি হতবাক হয়ে
তোমাদের অপব্যয় দেখি
অপচয় দেখি
আমার কাছে যেন বড্ড স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়
টাকায় কি না হয়?

আচ্ছা টাকায় তোমরা কি সুখ কিনতে পার?
স্বস্তি?
শান্তি?
ঘুম?
আমি কিন্তু বিছানায় পড়া মাত্র ঘুম,
স্বপ্নহীন নির্ভেজাল ঘুম;

আচ্ছা!
আদতে স্বপ্ন কি?
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমরা যা দেখি?
কেও কেও তো জেগেও স্বপ্ন দেখে
- টাকার
- খ্যাতির
- যশের
- উজ্জ্বল ভবিষ্যতের
আবার কেও কেও স্বপ্ন দেখে দু মুঠো খাবারের,
কারো কারো চোখে কোন স্বপ্ন খেলে না
কাওকে কাওকে আবার স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না
কেও কেও ঘুম কিনতে চায় টাকার বিনিময়ে
কেও কেও আবার টাকার স্বপ্ন দেখে ঘুমের বিনিময়ে;

একদিন আমারও খুব স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে
সোনার চামচ মুখে দিয়ে;

অলীক স্বপ্ন আর কি!















মাটির মৃত্যু মাটিতে



মাটির মৃত্যু মাটিতে
- যাযাবর জীবন


একদিন হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতেই হাতের ভর মাটিতে,
সেই প্রথমবার
তারপর আবার
তারপর আবার
তারপর থেকে মাটিতেই,
খুব খেয়াল করে দেখেনি কেও
- মাটির মৃত্যু হচ্ছে মাটিতে;

তোমরা দেখেছ মাটি থেকে অঙ্কুরোদ্গম
মাটি থেকে গাছ
মাটিতে ফসল
আর মাটিতেই ঘাস,
বড্ড সার পাচ্ছে যে মাটি, আমার বুকে;

একদিন আমার বুকের ওপর ঘাসের গালিচা হবে
বিশাল বিশাল সব গাছে ছেয়ে যাবে
পাতা ঝরার দিনগুলোতে সবুজ ঘাসে হলদেটে পাতাগুলো পড়ে থাকবে
কি অদ্ভুত সুন্দরই না লাগে সবুজ গালিচায় হলুদ-লালের মিশ্রণে ঝরা পাতাগুলো!

একদিন হয়তো তোরা আমার বুকের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলবি,
- বাহ! কি অদ্ভুত সুন্দর দূর্বাঘাস,
একদিন হয়তো তোরা আমার বুকে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বলবি
- বাহ! কি অদ্ভুত সুন্দর মাটির সোঁদা গন্ধ,
তোদের কথাগুলো হয়তো আমি শুনবো
কিংবা শুনবো না,
মাটিতে শুয়ে
মাটি হয়ে,
কত রকম মানুষই না হেঁটে যায় মাটি পাড়িয়ে!
কে আর ভাবে?









স্মৃতিচারণ




স্মৃতিচারণ
- যাযাবর জীবন


তোর গায়ের গন্ধ নেই নি অনেক দিন হয়ে গেছে
এখন কি জুঁই কি ফুটেছে?
জানিস! আমি এখন আর নাকে কোন গন্ধ পাই না রে,
কেও কি তোর গায়ে নাক ঘষে?

স্নানের পর টপটপে ভেজা চুলে তোকে দেখি নি অনেক অনেক দিন
আচ্ছা! এবার আষাঢ়ে কি অনেক বৃষ্টি হয়েছে?
ডাক্তার এখন ঠাণ্ডা জলে গোসল করতে একদম বারণ করে দিয়েছে,
তুই কি এখনো ছাদে ছুটে যাস বৃষ্টি হলে?

ঐ যে আধো আলো আধো আঁধারে কামিনী গাছ তলায় প্রথমবার চুমু খেয়েছিলাম!
তুই ইয়াক, ইয়াক করছিলি, থুতু লেগে গিয়েছিল বলে
আমার কাছেও প্রথমবার ঠোঁটের স্বাদ বড্ড বাজে লেগেছিল,
কামিনী গাছটা এখনো বেঁচে আছে?

একবার আমরা ফ্যামিলি ট্যুরে গ্যাংটক গিয়েছিলাম?
বরফের পাহাড়ে উঠে বরফের ভেতর লুকিয়েছিলাম সবার থেকে আলাদা হতে
তারপর বরফ গলানোর চেষ্টা করেছিলাম শরীরের উত্তাপে, মনে পড়ে?
লোকমুখে শুনি তুই নাকি থাকিস এখন বরফের দেশে,
বরফ গলাস কার সাথে?

অনেক দিন তোর দীঘল কালো চুলে হারানো হয় না রে?
এখনো কি তোর চুলে মেঘ ধরে?
আমি কিন্তু চুল হারিয়েছি অনেক দিন হয়ে গেছে?
তোর চুলে কি পাক ধরেছে?
বয়স কাওকে ছাড় দেয় না রে? ছাড় দেয় না সময়;

ইদানীং আয়নায় তাকিয়ে যৌবনের কথা মনে হলে বড্ড হাসি পায়
মাঝে মাঝে একটু কি মন খারাপ হয়?
বার্ধক্য তো সময়ের পরিচয়,
তোর ছেলেমেয়ে কয়টা রে?
নাতি নাতনি হয়েছে?

এই যে বার্ধক্য এসেও সময় অসময়ে তোর কথা মনে হয়
এটা কি প্রেম নয়?
আচ্ছা তোরও কি এখনো আমার কথা মনে হয়?
জানা হবে না কখনো;

তোর জীবনে আমি কোথায় ছিলাম
কোথায় আছি
জানি না,
তুই কিন্তু ঠিকই রয়ে গিয়েছিস আমার কলমের ডগায়
প্রাত্যহিক স্মৃতিচারণে
এখন মনে মনে যৌবনের প্রেমের জাবর কাটি
আর মাঝে মাঝে ঘুমঘোরে সাদা খাতায় আঁচড় কাটি
কি হয় কে জানে? কবিতা না মাটি
তবে ভালো তো তোকে আমি বেসেছিলাম সত্যিই খাঁটি,
আচ্ছা! তুই কি ভালোবেসেছিলি আমায়?

আচ্ছা!
ধর, হুট করে এখন যদি দেখা হয়ে যায়,
আমি চিনতে পারব তোকে?
তুই চিনতে পারবি আমায়?












প্রেম নাই ইন-বক্সে




প্রেম নাই ইন-বক্সে
- যাযাবর জীবন


আমার যা লিখার তা আমার ওয়ালেই লিখি
কারো ইন-বক্সে না;
তোরা খামাখাই ইনবক্স খুঁজিস
আদতে আমায় খুঁজিস না.....

ইন-বক্সে কি আর প্রেম মিলে?



জেগে থাকা রাত




জেগে থাকা রাত
- যাযাবর জীবন


এই যে সারারাত জেগে থাকিস,
রাতকে জাগিয়ে রাখিস;
আমার বুঝি হিংসে হয় না?
আমার থেকে বেশী আপন হলো রাত?
তবে একদিন আমিও রাত হব
ঘুম না ভাঙলে কাঁদিস না কিন্তু সেদিন।


দূর থেকে ভালো, দূরত্বেই ভালো



দূর থেকে ভালো, দূরত্বেই ভালো
- যাযাবর জীবন

দূরে আছি
দূরেই ভালো,
দূর থেকে অভিমান
দূর থেকে ঝগড়া
কাঁদা হাসা
আর দূর থেকে ভালোবাসা,
দূরত্বে থেকেই বড্ড ভালো;

কাছে আসলেই তো মুখোশ
কাছে আসলেই লুকোনোর অনুভব,
কত কিছুই না আমরা লুকাতে চাই প্রিয়জনের কাছ থেকে!
দুঃখ, কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখি আয়নার আড়ালে
আর কান্নাগুলো রাতের আঁধারে,
এই যে হাসি মুখটা দেখিস! মুখোশ চিনিস না?
তুই বড্ড বোকা,
তোর কাছ থেকে মন লুকোতে লুকোতে
নিজের ভেতর পুরোটাই লুকিয়ে ফেলেছি নিজেকে;

ভালোবাসার খুব কাছাকাছি আসতে নেই
কিংবা ভালোবাসার মানুষের,
কাছে আসলেই অভিযোগ
কাছে আসলেই অভিমান
কাছে আসলেই ক্ষরণ
আর ভালোবাসার অপমান,
কিছুটা দূরত্ব না থাকলে ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায় রে!
যেমন হয়েছিলো তোর;
জানিস!
সেদিন খুব বেশী কাছে এসে পড়েছিলাম বলেই
আজ আমাদের মাঝে দূরত্বের দিন রাত
দূর থেকে ক্ষরণ, আর ভালোবাসার উত্তাপ;

কোন একদিন না হয় দূরত্বে থেকেই আবার কাছে আসবো,
মুখোশ খুলে
আয়না ফেলে;
সেদিন চিনতে পারবি আমায়?



ভালোবাসার নাম



ভালোবাসার নাম
- যাযাবর জীবন


আমার একটা ভালোবাসা ছিলো,
কিশোরী;
বড্ড চঞ্চল
সারা আকাশ জুড়ে ছোটাছুটি করত
মনের সাথে রঙের পরিবর্তন হতো
মন ভালো থাকলে সাদা
মন ভারী হলে ধুসর
কখনো খুব কান্না পেলে কালো
ওর জন্য আমার বড্ড মন কেমন করতো,
ভালোবাসাটার নাম মেঘ;

আমার একটা ভালোবাসা ছিলো,
যুবতী;
যখন তখন বড্ড ঝরে পড়তো
কখনো ঝিরিঝিরি
কখনো ঝুমঝুম
আর আমার ভিজিয়ে দিত যখন তখন
ওর জন্য আমার মন উতলা থাকতো সারাক্ষণ,
ভালোবাসাটার নাম বৃষ্টি;

আমার একটা ভালোবাসা ছিলো,
নারী;
উচ্ছল, চপলা
সারাক্ষণ বয়ে যেতো
হাবুডুবু সাঁতারে আমি তার মাঝে ভাসতাম
তার মাঝেই ডুবতাম
আদতে ভালোবাসায় বড্ড আনাড়ি
তবুও সেই ছিলো আমার মন,
ভালোবাসাটার নাম নদী;

একদিন খুব হঠাৎ করে মনটা মরে যাবার পর
সবগুলো ভালোবাসাই মরে গেছে;
এখন আমি বিছানায় শুয়ে মেঘ দেখি
কাঁচের শার্শি ভেদ করে সে আমায় দেখতে পারে না;
আমি জানালার কাঁচে বৃষ্টি দেখি
সে আমায় ভেজাতে আসে না;
ঘরে শুয়ে কোথায় আর নদী দেখা যায়?
ভাসব আর ডুববো কোথায়?

মাঝে মাঝে এক একবার ইচ্ছে করে
বৃষ্টিভ্রমণ করি, মেঘের ডানায় চেপে;
তারপর আবার মৃতমনে ঘুমিয়ে পড়ি
মরুভূমি হয়ে।






এক তরফা ছোঁয়াছুঁয়ি



এক তরফা ছোঁয়াছুঁয়ি
- যাযাবর জীবন


ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় কখনো জিততে পারি নি আমি;

এই যে ঝুমঝুম বৃষ্টি!
ছুঁয়ে দেয় আমায়
ভেজায়, কাঁদায়
- সে তো এক তরফা?
আমি ছুঁতে পারি না বৃষ্টি'কে, না পারি ভেজাতে;

অনেক অনেক আগে একদিন প্রেম ছুঁয়ে দিয়েছিলো আমায়
সেই থেকে মনকে বড্ড ভয় পাই
যদি নিজেতে নিজেই ডুবে যাই!
ভালোবাসায় ডুবে গেলে টেনে তুলবে কে?
তুই তো নিজেই ডুবে আছিস আমার প্রেমে
- সেও এক তরফা;

শরীর ছুঁয়ে দিলেই কি মন ছোঁয়া হয় রে?
কই, আমি তো মন ছুঁতে পারি নি কারোরই;
আচ্ছা! বল তো, তুই আমায় ছুঁয়েছিস কতবার?
- এক তরফা, শরীর কিংবা মনে?
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় বারবার হার আমারই;

এই যে হঠাৎ হঠাৎ মাথা শূন্য হয়ে যাওয়ার অনুভব ছুঁয়ে যায় আমায়!
আর বিছানাটা জড়িয়ে নেয় আদর করে
আমি হারিয়ে যাই অন্ধকারে
- সে কি এক তরফা নয়?
একে কি ঘুম বলে?

একদিন হঠাৎ মৃত্যু এসে আমায় ছুঁয়ে দিয়ে বলবে,
চল!
সেও তো বড্ড এক তরফা, তাই না?





পরগাছা সম্পর্ক




পরগাছা সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


সম্পর্কগুলো বাইরে থেকে খুব সুন্দর
স্বর্ণলতার মত
অথচ পরগাছার মত লতানো
আর জীবন গাছে লতায় পাতায় জড়ানো,
এখানে একটার পর একটা সম্পর্কের শাখা গজায়
সোনালুর মত
এরা আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরে জীবন গাছটাকে,
গাছটা কখনো ধুঁকে ধুঁকে শ্বাস নেয়
কখনো মরে যায়
পরগাছার চাপে;

কিছু সম্পর্ক অর্থের
বেশীরভাগ স্বার্থের
অল্প কিছু বন্ধুত্বের,
আত্মীয়স্বজন নামক অনেকগুলো সম্পর্কের পরগাছা,
ভাই বোন চাচা মামা খালা ফুপু ইত্যাদি
বাবা মা থেকে উৎপত্তি;
যতদিন বাবা মা যতদিন স্বার্থ
ততদিনই এরা
তারপর নামেই শুধু সম্পর্ক
পরগাছা হয়ে বেঁচে থাকে জীবন গাছে
কালেভদ্রে কেও কেও ফণা তোকে ওঠে ফুঁসে
ছোবল মারতে চায় কিংবা মারে
কারো বিষদাঁত কেও ঢোঁড়া সাপ
স্বার্থে টোকা লাগলেই ছোবল মারে
আর নয়তো স্বর্ণলতা হয়ে জড়িয়ে থাকে সম্পর্কের গাছে,
এদের এড়ানোও যায় না
ঝেড়ে ফেলাও যায় না
লতানো পরগাছা জড়িয়ে থাকে জীবন গাছে;

আমি খুব সাধারণ একটা গাছ ছিলাম
হয় হিজল না হয় তমাল
কিংবা না হয় ছিলামই একটা কাঁটা গাছ,
অযাচিত সম্পর্কের স্বর্ণলতাগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে
মেরে ফেলেছিল আমায়;

তোমরা এখন কঙ্কাল চেনো।






প্রেমের ডানায় ওম



প্রেমের ডানায় ওম
- যাযাবর জীবন


ওমের ডানায় প্রেমের নাক ঘষতে গিয়ে
বাঁধা পড়ে গিয়েছিলি তুই ভালোবাসার ওমে
তারপর থেকে বর্ষা হেমন্ত, ঠাণ্ডা গরমে
দুজন দুজনার দমে দমে;
ভালোবাসাটাই বড্ড অদ্ভুত
তার চেয়েও কিছু অদ্ভুত অনুভূতির বাস মনে
কখন কোথায় যে হারায় হারায় এ মন!
কার তরে কে জানে!

চাইলেই কি ওড়া যায়?
আমি সময়ের ডানায় উড়তে চেয়েছিলাম
তুই প্রেমের
অথচ আমরা কেও পাখি নই,
তবুও আমরা উড়েছিলাম
- প্রেমে;

চাইলেই ভাসা যায় না, যায় না ডোবা;
আমি বেশ ভেসে চলেছিলাম সময়ের স্রোতে
তুই ডুবে ছিলি আমাতে
অথচ আমরা কেও নদী নই,
তবুও আমরা ভেসেছিলাম, ডুবেছিলাম
- প্রেমে;

সারা দিনমান মনের ভেতর কত রকম স্বপ্নই না ঘোরে!
জীবনের স্বপ্ন
জীবিকার স্বপ্ন
আরেকটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন
কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষার
কিছু বা শুধুই অলীক,
আর নানা রঙের অনুভূতিগুলো ঘোরে স্বপ্নগুলো ঘিরে ঘিরে;

অথচ দেখ!
রাত হলেই থিতু
রাত মানেই কালো
রঙিন স্বপ্নে কি আর জীবন চলে?
রাত গভীর হতেই হাত চলে যায় বিছানায়
পাশে কাওকে তো লাগে!
একদম আপন কেও
একান্ত নিজের
আদরে, ভালোবাসায়
স্পর্শে,
স্বপ্নে নয়, বাস্তবতায়;

আমার কাছে রাত মানেই তুই
বুকের পাঁজরে হেলান দিয়ে
আর সারারাত তোকে জড়িয়ে নিশ্চিন্ত ঘুম
প্রেমের ডানায় ওম নিয়ে;

কাল না হয় আবার নতুন স্বপ্ন দেখা যাবে!






















দূরত্বের সিঁড়ি




দূরত্বের সিঁড়ি
- যাযাবর জীবন


কে বলেছে রোদে গরম কাটে?
তুষারে কাটে শীত?
আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে অশ্রু কাটাতে চেয়েছি
ঝুম বৃষ্টির সাথে,
তুই ভালোবাসা কাটাতে পেরেছিস কি?
কই! আমি তো মায়া কাটাতে পারলাম না হৃদয় থেকে;

একদিন খুব ভাবাবেগে তুই ভালোবাসার কথা বলেছিলি
আমি হেসে বলেছিলাম মোহ
তুই বলেছিলি প্রেম
তবুও কেন জানি না সেদিন আমি তোর হলেম,
ভুল হয়েছিল কি?

কি তাড়াতাড়িই না অদ্ভুত সময়গুলো কেটে গেছে জীবন থেকে
কখনো চড়াই কখনো উৎরাই পেরিয়ে
যতগুলো ভালো সময় আমরা পার করেছি
জীবনে তারচেয়ে অনেক বেশী খারাপ সময় পারি দিয়েছি,
এর মধ্যে অনেকগুলো ভুল বোঝাবুঝি
তোর প্রেম কমেছে কি?
মোহ কাটে নি?
জানিস! তোর জন্য এখনো আমার বড্ড মন কেমন করে
একে কি মায়া বলে?
ভালোবাসা আমি কখনো বুঝিই নি রে;

একদিন দেখিস ঠিক তোর মোহ কেটে যাবে
মায়া কাটবে কি?
ভালোবাসা?
দূরত্ব কখনো কখনো বাধা হয়ে যায় ভালোবাসার কাছে;

আজ তুই আর আমি যোজন দূরত্বে,
দূরত্ব অবস্থানের
দূরত্ব সময়ের
দূরত্ব মনের,
দূরত্বের সিঁড়ি ভেঙে কোন একদিন যদি আবার হঠাৎ দেখা হয়ে যায়!
মোহ সামনে এসে দাঁড়াবে কি?

তারচেয়ে চল না একবারেই মায়া কাটিয়ে ফেলি,
আরেকবার ভালোবেসে।