শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

আয়নায় কে?



আয়নায় কে?
- যাযাবর জীবন


একটা সময় ছিলো,
যৌবন ছিলো
ছিলো যৌবনের সৌন্দর্য,
প্রায়শই আয়নার প্রয়োজন হতো
সৌন্দর্য যেমন দেখাতে হয় তেমনি দেখতেও হয়
আয়না কথা কয়;

একটা সময় এলো,
রিপুগুলো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ালো
আর কুৎসিত রিপুর কদর্য,
আয়নার প্রয়োজন তখন উঠেই গিয়েছিলো
কদর্য কি দেখতে হয়?
না দেখাতে হয়?
আয়না কথা কয়;

একটা সময় আমায় লোভ চেপে ধরে
চেপে বসে লালসা
কিসের সম্পর্ক? কোথায় আত্মীয়তা?
মনের ভেতর পুরোটা জুড়েই স্বার্থের বাসা,
আমি যখনই পশু দেখতে চাই
আয়নার সামনে দাঁড়াই
আমার থেকে বড় অমানুষ আর কোথাও হয়?
আয়না কথা কয়;

আজ চারিদিকে এই যে লোভের সাম্রাজ্য
চুরি, ছিনতাই আর লুটতরাজ
অপহরণ, ধর্ষণ গুম আর খুন
এতো সব আমারই স্বরাজ
কি বিশ্বাস হলো না তো?
আয়নায় চেয়ে দেখ!
কি? চির পরিচিত চেহারাটা চেনা যাচ্ছে না?
হ্যাঁ, যাচ্ছে তো!
মানুষ মানুষ আকৃতি কিন্তু দানবের চেহারা
আরে, আমিই তো!
আমারই চেহারা, চির চেনা
তবে এত কেন অচেনা?

অন্যকে খুব সহজেই চোর উপাধি দেই
ডাকাত, ছিনতাইকারী
দেখ, দেখ! ঐ যে করছে রাহাজানি;
অথচ আয়নায় চোখ পড়লেই চমকে উঠি
আরে একি একি?
আয়নার ভেতর কে?
চোরের চেহারা দেখা যায় যে!

অন্যকে খুব সহজেই ধর্ষক ডাকি
ঐ যে লম্পট যায় হেলে দুলে
মেয়েগুলো দৌড়ায় দুদ্দাড় পড়ে ছিলে
আচ্ছা! ঐ বর্বরটার চোখটা দেখেছ কি?
পাথরের মত নির্বিকার
বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা
প্রতারক? খুনি? না ধর্ষক?
আচ্ছা! আয়নায় চেহারাটা একবার দেখি!
ওমা! লম্পট তো এরই উপাধি
ধর্ষক কাকে ডাকি?
ভালোমানুষের তোকমা ঝুলিয়ে ঐ যে আয়নায় লাম্পট্যের উঁকি;

আমি আজকাল মোটেই আয়না দেখি না;
কি হবে দেখে?
সেই তো একই চেহারা
চোর বাটপার আর লম্পটই ওখানে দেখা যায়, খুব মুখচেনা;
হ্যাঁ, ওখানে আমারই মুখ, ওটা আমিই
ভালোমানুষির ছদ্মবেশে চেনা চেনা, অচেনা!


২৫ এপ্রিল, ২০২০





বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০

ধোঁয়াশা ভালোবাসা



ধোঁয়াশা ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


চোখ কি আর অন্য কাওকে দেখে?
- তোকে দেখার পর থেকে;
সেই যে প্রথম দর্শন!
তারপর থেকে ক্রমাগত
এক নারীতে স্থির সংকল্পবদ্ধ
হ্যাঁ, আমি একে প্রেম বলব;

কান কি আর অন্য কারো কথা শোনে?
- শুধুই তোকে শোনে
তোর কথার ঝনঝন
তোর চুরির রিনঝিন
প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত
ক্রমাগত, ক্রমাগত
এক নারীর কণ্ঠস্বরে বিলীন আর বাকি সব নিস্তব্ধ
হ্যাঁ, আমি একে প্রেম বলব;


হৃদয় কি আর আমার আছে?
- তোকে ভালোবেসে
তোর হাসিতে হাসে
তোর কান্নায় কাঁদে
সেই প্রথম হৃদয় হারানোর দিন থেকে আজ পর্যন্ত
এক তো'তে বিলীন হতে লব্ধ
হ্যাঁ, আমি একে প্রেম বলব;

আমি আর কাওকে দেখি নি
- তোকে দেখার পর থেকে;

আমি আর কারো কথা শুনি নি
- তুই আমার জীবনে আসার পর থেকে

আমি আর কাওকে ভালোবাসি নি
- তোকে ভালোবেসে

একে যদি ভালোবাসা না বলে!
তাহলে কি ভালোবাসার অপমান হয় না?

আচ্ছা! সেসব কথা থাক,
লোকে কি বললো আর না বললো, মন সব ভুলে যাক;

- তোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকাই আমার ভালোবাসা
- তোর কথা শুনতে শুনতে পৃথিবীর সব শব্দ থেমে যাওয়াই আমার ভালোবাসা
- তোর কথা ভাবতে ভাবতে বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভবই আমার ভালোবাসা
আর বাকি সবকিছু আমার কাছে না হয় রইলো ধোঁয়াশা!


২৩ এপ্রিল, ২০২০




তুই হয়ে রয়ে গেলে



তুই হয়ে রয়ে গেলে
- যাযাবর জীবন


একদিন তোমাকেই দেখেছিলাম
সেদিন তুমি কিন্তু, তুমিই ছিলে;

তারপর আরেকদিন
তারপর আরেকদিন
তারপর থেকে প্রতিদিন;

তারপর তুমি থেকে তুই হলে
তারপর থেকে আজ পর্যন্ত
তুই হয়ে মনে রয়ে গেলে.........

তুই মানেই যে ভালোবাসা!
ক'জন বোঝে?







মৃত্যুর মিছিল



মৃত্যুর মিছিল
- যাযাবর জীবন


আজকাল রাতগুলো বড্ড একা
একা রেলপথ
একা রাজপথ
একা অলিগলির রাস্তাঘাটগুলোও
ল্যাম্পপোস্টগুলো টিমটিম জ্বলছে একা রাস্তায়
অথচ শহরে মানুষ তো আর কম নেই!
তারা কোথায়?

আজকাল রাতে আর আগের মত রাস্তায় বের হই না
একা একা বড্ড ভয় লাগে
কেমন বিভীষিকাময় একটা অনুভূতি চারিদিকে প্রচণ্ড একাকীত্বের মাঝে
মাঝে মধ্যে একটা দুটো পুলিশের গাড়ী
মাঝে মাঝে একটা দুটো এ্যাম্বুলেন্স
জানিস! এ্যাম্বুলেন্স দেখলে না আজকাল বড্ড ভয় হয়
শুধু মৃত্যুর কথা মনে হয়;

আজ বড্ড দুর্দিন রে আমাদের
আজ কি যে হয়! কে বলতে পারে?
এই যে কথা বলছি তোদের সাথে
এই যে হাসি ঠাট্টা
এই যে কলমের আঁচরে দাগ ফেলে যাচ্ছি!
কাল কি ভোর হবে আমার?
কাল কি সূর্য দেখব?
নাকি একটা সাদা এ্যাম্বুলেন্স বের হয়ে যেতে দেখবি আমার বাড়ি থেকে?
কে জানে?

আজ সন্ধ্যা থেকে খুব ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছিলো
আজ খুব বৃষ্টি হচ্ছে রাতে
আকাশে চাঁদ নেই
কোন তারাও জ্বলছে না মেঘলা আকাশে
হঠাত করেই লোডশেডিং হলো
একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে
আচ্ছা! ঘুম কি এতটা অন্ধকার হয়?
মৃত্যুর মত গাঢ় কালো ঘুম!

এই যে সাঁ সাঁ করে মাঝে মাঝে এ্যাম্বুলেন্সগুলো যাচ্ছে!
কোনটায় কি আমাকে দেখেছিস?
অন্ধকারে কি সাদা কাফন দেখা যায়?
তবে তো খুব সহজেই পেয়ে গিয়েছিস আমায়;
জানিস! আজকাল নাকি আর আলাদা কবর খোঁড়া হয় না
আজকাল আলাদা আলাদা জানাজাও হয় না
যদি কোন কারণে আমায় না পাস খুঁজে
তবে কোন এক সময় গায়েবানা জানাজা পড়ে ফেলিস কয়েকজন মিলে
কোথায় আর কবর খুঁজবি আমার?
মৃত্যুর মিছিলে কি আর কবর খোজা যায়?

আচ্ছা! মৃত্যুর কথায় চমকে উঠলি কেন?
ধ্যাত! চোখ ভিজিয়েছিস কেন আবার?
চোখের জল কি এতই সস্তা?
আরে বোকা মৃত্যু তো নিয়তি!
তোর আমার আর সবার সবার
আজ
কাল
বা পরশু;

আমি ইদানীং চারিদিকে শব দেখি
আমি তাদের মাঝে আমাকে দেখি
ভাইরাসে আক্রান্ত চলন্ত সব শব
এখনো খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমোচ্ছে
তারপর হুট করে এ্যাম্বুলেন্স এসে তাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে
এমনই কোন এক রাতে,
আর কখনো কোথাও দেখা যাবে না তাদের;

জানিস?
গণকবরে না খুব তাড়াতাড়ি লাশ গলে;
আমাকে কখনোই খুঁজে পাবি না তোরা সেখানে।


১৯ এপ্রিল, ২০২০







পরকীয়ার বাঁকে



পরকীয়ার বাঁকে
- যাযাবর জীবন


বৌ আছে ঘরে একটা
তবুও ছোকছোকানি
এর তার ঘরে উঁকি
সুন্দরী দেখলে তো কথাই নাই!
ষোড়শী? জিহ্বা ১ হাত বাইরে
আমার কোমরে জোড় আছে কি না সে কি আর দেখি?
ঘরে ঘরে বেশীরভাগ পুরুষের মনের কথা
বৌ বাদে যে কোন সুন্দরীই হোক না কেন!
মন ডাকে আরি আরি আরি!
ইদানীংকালের আরেক ভাইরাস নাম পর নারী;

পরকীয়ায় আক্রান্ত আজ আমরা সবাই
কম আর বেশী;


জামাই আছে ঘরে একটা
তবুও পুরুষ যদি একটা দেখি!
চড়ে সুন্দর দামী গাড়ি,
সাথে কর্পোরেট একটা চাকরি
আর অঢেল টাকার ঝনঝনানি
সুপুরুষ হলে তো কথাই নাই!
আয়নায় কি আর নিজেকে দেখি?
নাকি কান পেতে ঘর ভাঙার শব্দ শুনি?
দুধভাত জামাই তো পোষা আছেই
মনের মাঝে না হয় একটু অন্য রকম আউস!
ভাইরাসের নাম পর পুরুষ;

পরকীয়ায় আক্রান্ত আজ আমরা সবাই
কম আর বেশী;


আচ্ছা! পরকীয়া কি?
চোখাচোখি থেকে মুখোমুখি
তারপর চায়ের টেবিল থেকে বিছানা
আধা ঘণ্টা ডলাডলি
পাঁচ সেকেন্ডের স্খলন
একটু কি হয় মনে দহন?
কি জানি!
শরীর জুড়িয়ে গেলে সেই তো যার যার বাসা!
ঘরে ফেরার ঠিকানা;

আচ্ছা! পরকীয়া কি কাম?
স্ত্রী দিয়ে হয় না?
স্বামী দিয়ে?
আরে ওটা তোমরা বুঝবে না,
এক একজনের কাছে নতুন নতুন শরীরের কি দাম?
কিবা নারী কিবা পুরুষ!
পরকীয়ায় সব সুখ;

আচ্ছা! এরা ঘর ভাঙার শব্দ শোনে না কেও?
সংসার ভাঙার?
ঐ যে সংসারে ছোট বড় ছেলেমেয়ে?
কিছু কি যায় আসে?
মনে হয় না,
নতুবা কেন চারিদিকে এত এত পরকীয়ার নামে সংসার ভাঙা?
আর স্বামীস্ত্রীর পরস্পর লুকোচুরি ছলনা;

ইদানীং নিশিকন্যার তো অভাব নেই
কাম যখন মাথাচাড়া দেয় একটা তুলে নিলেই হয়!
টাকার বিনিময়ে সুখ, এত সস্তা আর কি হয়!
তবে কেন পরকীয়া?
কেন সংসার ভাঙা?

ইদানীং রাত-পুরুষও নাকি খুব মেলে
টাকা দিলে
স্বামীতে যদি মন না ভরে
তবে এদের তুলে নিলেই হয়!
সংসার তো টিকে রয়!

আজ কোথায় যাচ্ছি আমরা?
কোথায় যাচ্ছে সংসার?
বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যৎ কি?
কখনো ভাবনায় এসেছে কি?

হয়তো ভাবনায় আসে
উত্তর খুঁজি পরনারীর বুকে
উত্তর খুঁজি পরপুরুষের মুখে
শারীরিক সুখের ফাঁকে ফাঁকে;

আর আলগা হয় সংসারের বাঁধন
পরকীয়ার বাঁকে।


১৮ এপ্রিল, ২০২০










মানুষ হতে চাই



মানুষ হতে চাই
- যাযাবর জীবন


অনেকদিন ধরে একটা মানুষ খুঁজছি;
সত্যিকারের মানুষ,
শুধু রক্ত মাংস হাড় চামড়ায় মোড়ানো মানুষে আকৃতি নয়
যার বুকের ভেতর হৃদয় আছে
হৃদয়ে ভালোবাসা আছে
আছে মনুষ্যত্ব
আমি মনুষ্যত্বে পরিপূর্ণ রক্তমাংসের একজন মানুষ খুঁজছি;

আজকাল আর সে রকম মানুষ কই?
মানুষের বসতিতে, শহরের জংগলে
ইট কাঠের সাথে বসবাস করতে করতে
আজকাল মানুষ রূপের মানুষগুলো যেন ইট কাঠ হয়ে গেছে
স্নেহ, প্রেম প্রীতি, মায়া, মমতা, ভালোবাসায় কোথায় যেন ঘাটতি পরে গেছে!
সবকিছু অনুভব ছাপিয়ে অর্থানুভব
সব অনুভূতি ছাপিয়ে স্বার্থানুভূতি
সব সম্পর্ক ছাপিয়ে স্বার্থ সম্পর্ক
আজ ইট কাঠের জংগলেই যেন মানুষের মঙ্গল;

স্বার্থের কাছে কোথায় বাবা মা?
- না হলে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে কেন?
কোথায় আজ ভাই বোন
- সম্পত্তির টুকরো নিয়ে মারামারি হানাহানি কাটাকাটি
মুখ দেখা তো দূরের কথা, কথাই বন্ধ আজ এদের মাঝে!
কিছু কিছু ক্ষেত্রে যখন দেখি বাবার অতি আদরের সন্তান
মায়ের নাড়ি ছেড়া ধনের ঠাই নেই বাবা-মায়ের সংসারে
তুচ্ছ কিছু স্বার্থের চাপে পড়ে;
তবে আর আত্মীয় স্বজন দিয়ে কি হবে?
তারাও তো ওঁৎ পেতে থাকে পেছনে ছুঁড়ি মারবে বলে
একটা মাত্র সুযোগ পেলে;

আজকাল মানুষের বসতিতে যেদিক তাকাই
কোথায় মনুষ্যত্ব? কোথায় মানুষ?
বেশীরভাগ দেখি মানুষ নামের অমানুষ,
আমি আশাহত নই
আমি নিরাশাবাদী নই
ইট কাঠের দেয়াল খুঁড়ি
পাহাড়ে জংগলে ঘুরি
মানুষ খুঁজি
হোক না বাইরে থেকে সাদা কালো বাদামী রঙের
ভেতরে হৃদয় আছে
হৃদয়ে রক্ত বয়
রক্তে মনুষ্যত্ব রয়
এমন কিছু মানুষ;

আমি তাদের সংস্পর্শে যেতে চাই
তাদের জড়িয়ে ধরতে চাই
তাদের কাছে শিক্ষা নিয়ে আমিও একজন প্রকৃত মানুষ হতে চাই।

১৬ এপ্রিল, ২০২০



সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০

নতুন বছর নতুন রূপে




নতুন বছর নতুন রূপে
- যাযাবর জীবন


আজ আমাদের বড্ড দুর্দিন;
আমার, তোমার
আমাদের, তোমাদের
সকলের;

আজ কোন উৎসব হবে না
আজ বটতলায় যাব না
আজ দীপাবলি হবে না
আজ হবে না কোন আনন্দ মিছিল
আতশবাজি পুড়বে না কারো হাতে
হাউই উড়বে না আকাশে আকাশে
আজ আমরা পান্তা ইলিশ খাব না;

যদি খুব নতুন বছরের কথা মনে পড়ে
যদি খুব গতবছরের স্মৃতি মাথা কুড়ে
তবে না হয় ফ্রিজের ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে খাব
আজ কোন ভর্তার বাহার থাকবে না
আজ হবে না কোন ইলিশ উৎসব
আমরা না হয় গতরাতের বাসি তরকারিটুকু গরম করে নেব!
আজ না হয় আমরা এক নতুন নববর্ষ পালন করি!
আজ না হয় আনন্দের জায়গায় মহামারীর শোক স্মরণ করি?

আজ অনেকের ঘরে কাল রাতের বাসি ভাতটুকুও নেই
নেই কোন বাসি তরকারি
ঘরে একদানা চাল নেই, নেই কচু ঘেচু শাক লতা পাতা তরিতরকারি
আজ তারা কি খাবে জানে না
অথচ এই তো গত বছর পরিবারের সবাই মিলে একসাথে একপাতে
উৎসবে মেতেছিলো পান্তাভাতে,
আজ না হয় আমরা তাদের অসহায়ত্ব স্মরণ করি
আজ না হয় আমাদের উৎসবের বাজেটটুকু ওদের মাঝে বিলিয়ে দেব!
আজ না হয় নতুন ভাবে এক শোকের নববর্ষ পালন করি;
আজ না হয় আনন্দের জায়গায় মহামারীর শোক স্মরণ করি?

এই তো গতবছর পরিবারটা ভরা ছিলো
আমার, তোমার, এর, ওর, তার ও তার পরিবার
বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে
এ বছর করোনা কেড়ে নিলো কারো বাবা, কারো মা কারো সন্তানকে
কবরটাও দেখতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি কারো
সামিল হওয়া হয় নি জানাজাতে
আজ দুঃখের মহামারী আকাশে বাতাসে,
তাহলে কিভাবে আমরা উৎসবে মাতি?
আজ যারা নেই আমরা না হয় তাদের স্মরণ করি!
আজ না হয় নতুন ভাবে এক শোকের নববর্ষ পালন করি!
আমি, তুমি, আমরা, তোমরা
সবাই মিলে
মহামারী মুক্তির জন্য নতুন বছরে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে দু হাত তুলে। 


১৪ এপ্রিল, ২০২০






অমূল্য জীবন




অমূল্য জীবন
- যাযাবর জীবন


অমূল্য জীবন
একটা জীবন পৃথিবীতে আসার আগে কত কত আয়োজন!
একটা শিশু আসে পৃথিবীতে
নয় মাস মায়ের পেটে
তারপর ধরিত্রীতে
একটা জীবন ভূমিষ্ঠ হয়
চারিদিকে খুশির আমেজ বয়
বাবা মায়ের চোখে স্বপ্ন রয়
সন্তান বড় হয়
জীবন কথা কয়;

একটা মৃত্যু,
কতই না তুচ্ছ!
হরে দরে পড়ে থাকে এখানে ওখানে
রোগে শোকে মহামারীতে
এক্সিডেন্টে, অবহেলায় অনাদরে
মৃত্যুর মূল্য কোথায়?
আপনজনরা দুদিন কাঁদে, তারপর ঠিক ভুলে যায়
এত বিলাসিতা কোথায়?
মৃত্যু নিয়ে কাঁদায়!

কিছু কিছু মৃত্যু বড্ড করুণ হয়,
অমূল্য যে জীবনটা এসেছিলো একসময় পৃথিবীতে
কোন এক সময় বেওয়ারিশ শব হয়ে রয়
যে আপনজনেরা ঘিরে ছিলো জন্মের সময়
তারাও হয়তো কোথায় হারিয়ে গিয়েছে কবে?
হয় জীবিকার প্রয়োজনে কিংবা কালের বিবর্তনে নিজেরাই শব হয়ে;

এক একটা সময় আসে পৃথিবীতে,
মহামারী হয়ে;
মানুষ পড়ে থাকে কাতারে কাতারে
শব হয়ে, মাটি হয়ে
কারো কবর জোটে
কেও বা মাটিতে গলে পচে;

জীবন অমূল্য
মৃত্যুটা কি অমূল্য নয়?
কই আমার কাছে আমার মৃত্যুটা বড্ড অসহনীয় হয়ে রয়!
ঐ তো মাটিতে পড়ে আছি আমি
মাটির দেহ, মাটিতে শব হয়ে
আমার কাছে মৃত্যুটা এখন জীবনের থেকেও দামী
যার যার নিজের কাছে স্বীয় মৃত্যু সবচেয়ে দামী হতেই হয়?
তোমার কাছে কি নয়?
তোমার কাছে?
তোমার তোমার কাছে?

এই যে পড়ে রয়েছি আমি!
কেও কি কবর দেবে?
জানাজা হবে?
নাকি প্লাস্টিকের থলেতে একরাশ শবের সাথে গর্তে ছুঁড়ে ফেলে দেবে?

মহামারী
কালের সাক্ষী হয়ে রয়।


১৩ এপ্রিল, ২০২০






মৃত ভালোবাসা





মৃত ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


তোকে আমি ভালোবেসেছিলাম, ভালোবাসার মত করে
অথচ তুই ভালোবাসার সম্পর্কটাকে সময় কাটানোর খেলা মনে করেছিলি
খুব হেলাখেলা করে,
সম্পর্ক কি আর একপেশে হয় রে?
তিলে তিলে গড়ে ওঠা সম্পর্ক কি সহজেই না ভেঙে যায়!
চুরচুর কাঁচ হয়ে,
ঐ যে খানখান কাঁচ পড়ে আছে, একবার জোড়া লাগিয়ে দেখা তো!
গুরুজনে ঠিকই বলে
সম্পর্ক হয় সমানে সমানে
যে ভালোবাসে আর যে ছেলেখেলা করে তাঁদের সম্পর্ক সমান হয় কি করে?

আজকাল খুব মনে হয় হয়তো ভুলই করেছিলাম নিজেকে তোর সামনে খুলে দিয়ে
মনের অলিগলিগুলো ভরা দেখেছিলি টইটুম্বুর ভালোবাসার চোরাবালিতে
দেখেছিলি আমায় ক্রমাগত ডুবে যেতে তোতে,
ভালোবাসার চোরাবালিতে ডুবে যাওয়া কি আর তোর সাজে?
তুই কি সুন্দর উঠে গেলি খেলার মাঝ থেকে
খেলাখেলা খেলে
ভালোবাসাকে মেরে ফেলে,
আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম
যে ভালোবাসে তাকে ভালোবাসা বলে বোঝাতে হয় না
আর যে খেলাখেলা খেলে, সে তো ভালোবাসতেই জানে না;

একদিন হয়তো বুঝবি সময় আসলে একটা নদী
বয়ে যাওয়া সময়কে চাইলেও আর দ্বিতীয়বার ফিরিয়ে আনতে পারবি না
এই যে মুহূর্তটা চলে গেলো! মুহূর্তেই হয়ে গেলো গত
একটা মুহূর্তও মুঠোতে ধরে রাখতে পারবি?
অথচ ভালোবাসা কিন্তু ধরে রাখা যায় পুরোটা হৃদয় দিয়ে
যদি ভালোবাসা থাকে হৃদয়ে,
মৃত ভালোবাসা কি ফিরে আসে?

আমি এখনো মৃত ভালোবাসার কংকাল দেখি ঘুমঘোরে;
আচ্ছা! ভালোবাসা কি সত্যিই মরে যায়?


১৩ এপ্রিল, ২০২০










খুব হঠাৎই





খুব হঠাৎই
- যাযাবর জীবন


কেন জানি আজ হঠাৎ তোর কথা খুব মনে পড়ছে
কেন জানি পুরনো দিনগুলো, সেই পুরনো থেকে অনেক পুরনো দিনগুলো
খুব হঠাৎই মনের ভেতর খোঁচা দিচ্ছে
কেন জানি তোকে অনেক জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে;

ভালোবাসার মানুষগুলো তোর মত খুব হঠাৎ
খুব হঠাৎই হারিয়ে যায়
অনেক অনেক দূরে
ধরা ছোঁয়ার অনেক বাইরে,
অথচ আমার যে খুব হঠাৎ হঠাৎই ভালোবাসা ধরতে ইচ্ছে করে!

আমরা সময়কে ধরতে পারি নি
না তুই পেরেছিলি
না আমি,
অথচ কোথায় যে আমাদের চেষ্টার কমতি ছিলো তাও বুঝিনি;

ধরা আর অধরার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিস তুই
হারিয়ে গিয়েছি আমি;
ভালোবাসা হারিয়েছে কি?
কি জানি?

তবে কেন এখনো তোকে হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে?
কেন তোকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে?
হঠাৎ, খুব হঠাৎই।

১৩ এপ্রিল ২০২০






প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি



প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি
- যাযাবর জীবন


প্রচণ্ড রকম ভালোবাসা কাকে বলে জানিস?
উঁহু, সবাই জানে না
যে প্রচণ্ড ভালোবাসে সেই শুধু জানে;

একটা মানুষকে সবচেয়ে খারাপ কখন দেখায় জানিস?
যখন সে প্রচণ্ড রেগে থাকে;
তুই যখন অনেক অনেক রেগে থাকিস!
যখন তোর সবকিছু ভেঙ্গেচুরে ফেলতে ইচ্ছে করে
তোকে যে কি ভয়ঙ্কর লাগে!
তখন একবার আয়নায় তাকিয়ে দেখিস;
অথচ আমি তখনো তোর এই ভয়ঙ্কর রূপকে ভালোবাসি
প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি;

একটা মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর কখন দেখায় জানিস?
যখন সে হাসে;
তুই যখন প্রাণ খুলে হাসিস
আকাশে সূর্য হাসে, আকাশে চাঁদ হাসে
আর আমি ক্রমাগত বলতে থাকি ভালোবাসি ভালোবাসি
তোকে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি;

একটা মানুষকে সবচেয়ে করুণ কখন দেখায় জানিস?
যখন সে কাঁদে;
যখন তোর কোন কারণে মন খারাপ হয়
যখন তোর ঠোঁট বাঁকা হয়
যখন তোর চোখে জল আসে
তখন আমার বুকে সমুদ্রের ঢেউ ওঠে
তখন আমার বুকে ঝড় ওঠে
আর আমার মন তোতে ছুটে
আর ক্রমাগত বলতে থাকে ভালোবাসি ভালোবাসি
তোকে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি;

তুই যখন সকালের স্নান শেষে ভেজা চুলে বের হয়ে আসিস
আমি মনে মনে বলতে থাকি ভালোবাসি,
তুই যখন রান্নাঘরে ঘর্মাক্ত মুখ মুছতে থাকিস
আমি মনে মনে বলতে থাকি ভালোবাসি,
তুই যখন খাবার টেবিলে পাশে বসে এটা ওটা বেড়ে দিস
আমি মনে মনে বলতে থাকি ভালোবাসি,
তুই যখন বিকেলের চায়ের টেবিলে নাস্তার আয়োজনে ব্যস্ত থাকিস
আমি মনে মনে বলতে থাকি ভালোবাসি,
তুই যখন বিছানায় বুকের ভেতর লেপ্টে থাকিস
তখনো,
তখনো আমি বলতে থাকি; ভালোবাসি
তোকে ভালোবাসি
প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি;

আচ্ছা! বুকের ভেতরের শব্দগুলো শুনতে পাস!


১২ এপ্রিল, ২০২০






করুণার হাসি




করুণার হাসি
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসা ধরা কি খুব সোজা?
মন ধরা?
অথচ খুব ইচ্ছে করে মনের মানুষ'কে ধরতে
একটু ছুঁয়ে দিতে
একটু আদর করতে
একটু ভালোবাসতে;

অথচ আমি কাওকেই ধরতে পারি নি
ছুঁয়ে দিতে পারি নি কারো মন,
যেখানে অধরাকে ধরা যায় না সেখানে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে কোত্থেকে?
তবুও কিছু সম্পর্ক নামের রক্তমাংস হীন অনুভব থাকে
থাকে সম্পর্ক নামের এক ভয়াবহ অশরীরী কিছু সম্পর্ক,
একসময় যাদের ছেড়ে যেতে হয়
অথচ তারা আমাকে ধরে রাখে
পেছন থেকে;

আমি কাওকেই কখনো ধরতে পারি নি
আমি কাওকে কখনো ছেড়েও দেই নি
তবুও কোথা থেকে জানি এক লিলুয়া বাতাস আসে
কোথা থেকে জানি দিনের আকাশে এক ফালি নীল ভাসে
রাতের আকাশে ভাসে এক টুকরো জ্যোৎস্না
আর ভালোবাসা উড়ে যায় ভালোবাসার সাথে,
অথচ তখনো,
আমি তখনো ধরে থাকি
কিছু ক্ষয়ে যাওয়া সম্পর্ক;

আর সম্পর্ক!
আমার দিকে চেয়ে করুণায় হাসে।

১০ এপ্রিল, ২০২০




সময় কি বলে?

সময় কি বলে?
- যাযাবর জীবন



টেবিলটা দাড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে
চেয়ারটা বসে আছে একা
টেবিলের ওপরে ছড়ানো ছিটানো কিছু কাগজ পত্র
সময় নামে অর্ধ পঠিত একটি খোলা বই
নিব ভাঙা একটা পেন্সিল,
ল্যাপটপটা খোলাই রয়ে গেছে
স্ক্রিনে অর্ধ লেখা একটি কবিতা
কীবোর্ড অপেক্ষায়, কেও আঙুল চালাবে
কবিতাটা শেষ হবে?

রাতভর জানালাটা খোলাই রয়ে গেছে
হু হু বাতাস আসছে
টেবিলল্যম্পটা নেভানো হয় নি এখনো
এলোমেলো ঘরে এলোমেলো বাতাস বয়ে যায়
চলমান সময়ে শুধু থমকে আছে একটা একলা ঘর
কারো অপেক্ষায়?

সব আছে আগের ময়ই
সবাই আছে যার যার মত
শুধু আমি নেই
আমিই নেই......

মৃত্যু কি বিচিত্র, তাই না?
সব রয়ে যায়
শুধু মানুষটা চলে যায়....


শূন্যতা  সৃষ্টি হয় কি কোথাও?

আচ্ছা! সময়কে শূন্য ধরা যায়?
তাহলে তো সব মিটে যায়;

সময় কি বলে?



১৬ মার্চ, ২০২০