শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১

অনুজ আর অগ্রজ

ছোট একটা চারাগাছ ছিল 

পাশাপাশি অনেকগুলো

একটা ক্ষেত,  

সবুজ সবুজ ঝাল ঝাল মরিচ

সবুজ মরিচটা এক সময় স্বপ্ন দেখতো ঐ দূরে দালানে উঠবে

তার খুব জানতে ইচ্ছে করতো দালানগুলোতে কি থাকে 

কখনো যাওয়ার সুযোগ হয় নি,  

একসময় সবুজ মরিচের গায়ে বয়সের দাগ লাগলো 

সবুজে লাল ধরলো 

তারপর কোত্থেকে এক মেশিন এসে ওদের পিষে ফেললো,

একদম গুড়ো গুড়ো; 


মরিচ ক্ষেতটার ঠিক পাশের ক্ষেতে কিছু হলুদ গাছ ছিলো

তার অন্যপাশে ধনে ক্ষেত  

বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো তাদের সাথে 

সবাই মিলে ওরা বাতাসে দুলতো একসাথে 

কখনো বৃষ্টিতে ভিজতো 

কখনো পুড়তো রোদে,  

একটা সময় হলুদ গাছের মূলগুলো শুকিয়ে এলো

তারপর মেশিন গুড়ো,  

একসময় পাকা ধনে রোদে শুকিয়ে গেলো

তারপর মেশিন গুড়ো; 


একটা সময় মরিচের খুব মন খারাপ হতো

একটা সময় হলুদের 

কোন একটা সময় ধনের,.

আজ খুব হঠাৎই তাদের দেখা হয়ে গেলো 

বিশাল এক দালানে, ঐ যেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো কোন এক কালে

দালানের ভেতর ছোট এক রান্নাঘর 

রান্নাঘরে ছোট্ট এক হাঁড়ি  

সেখানেই দেখা হয়ে গেলো সবার সাথে খুব হঠাৎই 

এতদিন পর দেখা হতেই পরস্পরে জড়িয়ে ধরলো তারা 

তারপর ঝোলে আলুতে মিশে সে কি মাখামাখি! 

হঠাৎ করেই উনুন থেকে নামার আগে হাঁড়ির ভেতর  দুটো সবুজ কাচা মরিচ,  

হুট করে অগ্রজকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেললো ওরা; 


মাঝে মধ্যে দেখা হয়েই যায়! কোথাও না কোথাও

অনুজ আর অগ্রজের।


৩১ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


অনুজ আর অগ্রজ

 - যাযাবর জীবন 

বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

চাহিদার রকমফের

এক একজনের চাহিদা এক একরকম

এক একজনের চাহিদার প্রায়োরিটি এক একরকম 

এক একজনের কাছে এক একসময় প্রায়োরিটি বদলায়

এক একজনের কাছে জীবনের মানে এক একরকম;


এই ধর যেমন একজন ধূমপায়ী

ঐ যাকে তোমরা বল চেন স্মোকার 

তার ধ্যান ধারণায় সিগারেটের একটি টান, 

আবার ধর যে মদ্যপায়ী 

যার প্রতিদিন না খেলে চলেই না 

তার চাহিদা এক ঢোক হলেও মদ্য পান,

আর ঐ যে প্রতিদিন নতুন শরীর না হলে যার চলে না

যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়, বেশ্যা-পাড়ায়

তার কাছে নারীই পণ্য, মেটাতে কাম

অথবা অন্যকোন দলের চাহিদা অন্যকিছু;


আর সংসারের ঘানি কাঁধে ন্যুব্জ কুঁজো ঐ লোকটা! 

যার নুন আনতে পান্তা ফুঁড়োয়?

সে বোঝে ভাতের কত দাম,   

যে ছবি আঁকে! 

নেশার ঘোরে কিংবা পেট পালতে 

তার কাছে ক্যানভাসে রংতুলির একটা টান,

ঐ যে ফটোগ্রাফারটা দেখছ!

ক্লিক ক্লিক ছবি তোলে! ওটাতেও তার পেট চলে 

সেই শুধু জানে সঠিক সময়ে একটা সঠিক ক্লিকের কি দাম! 

কিংবা নানা পেশার লোকের নানারকম অবস্থান; 


যদি সংসারের কথা চিন্তা করি!

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান 

সবাই মিলেমিশে এক বাড়িতে অবস্থান,

সব সময় কি তা আর ঘটে?

শাশুড়ি বৌ এর ঝগড়াটাও তো চিন্তা করতে হয় বটে

তারপর এক একজনের আলাদা আলাদা বাসস্থান,  

স্বামী-স্ত্রী, আজকাল একেক সংসারে এক একরকম দেখি 

রাতে ঘুমুতে যাওয়ার সময় দুজন হাতে হাত একটু জড়াজড়ি 

সুখী দাম্পত্যে আজকাল এটার অনেক বড় একটা অবদান,

বিভিন্ন সংসারে বিভিন্ন রকমও ঘটে;  


এই যে আমাদের চারিপাশে নানা রকম মানুষজন! 

এদের এক একজনের সুখে বা দুঃখের এক এক কারণ,  

এদের প্রত্যেকের চাহিদা প্রত্যেকের থেকে ভিন্ন 

একজনের অবস্থান আরেকজন থেকে অন্য 

কেউ চাকুরীজীবী কেউ ব্যবসায়ী কেউ নিজেকেই করে পণ্য  

বেশীরভাগই অসুখী, আর অল্প কেউ নিজ অবস্থানেই ধন্য;  


আমরা একজনের চাহিদা অন্যজন বুঝি না 

একে অন্যকে না বুঝেই অকারণ করে যাই সমালোচনা। 

  


২৭ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


চাহিদার রকমফের 

 - যাযাবর জীবন 


মানুষ পোকা

কোথাও আলো জ্বললেই আলো পোকাদের ভিড়

অন্ধকারের পোকারাও ছুটে আসে অন্ধকারে,  


আলো কিংবা অন্ধকার, যে কোন পোকারাই শরীর হলেই বসতে চায়  

এরা শরীরে বসতে চায় প্রেমের ছলে, কামের ছলে 

বেশীরভাগ শরীরে বসতেই পারে না 

অনেকগুলো ইতিউতি শরীর ঘাটে তারপর নিজেই উড়ে যায়

অল্প কিছু নিজের অপুষ্ট শরীর নিয়ে শরীরেই মরে যায়   

আর অল্প কিছু পোকা শরীরের বদলে লেগে থাকে মন আঠায়; 


এরা প্রেম করে, এরা প্রেমে পড়ে 

তারপর যতদিন শরীর ততদিনই শরীরে লেগে থাকার চেষ্টা,  

এদের মাঝেও কিছু পোকা উড়ে যায় মধুর মিষ্টতা শেষে 

কিছু পোকা নেমে যায় শরীরের ভাঁটায়  

আর কিছু কিছু অন্য কোন কারণে  

অল্প কিছু পোকা মরা নদীতেও সাঁতরায়, শরীর জড়িয়ে;


উড়ে যাওয়া, ভেসে যাওয়া, নেমে যাওয়া পোকাদের কথা কে আর মনে রাখে?  

দাম্পত্যের শেষ গোধূলিতে পরস্পর জড়িয়ে থাকা পোকাগুলোকেই লোকে মানুষ বলে।

 

২৬ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


মানুষ পোকা 

- যাযাবর জীবন 


আলোতে অন্ধকারে

ঘুটঘুটে অন্ধকার

কামাতুর রাত 

দুটি শরীর বিছানায় কাত 

হাতে হাত স্পর্শ থেকে শরীরে শরীর

ঠোঁটে ঠোঁট চুমুর চিৎকার 

শরীরে শরীর কাম শীৎকার 

বাতি নেভানো ঘর, ঘন অন্ধকার

ওখানে স্বামী স্ত্রী অথবা নর ও নারী,  

নরের কল্পনায় বিছানায় অপ্সরা মেনকা সুন্দরী   

নারীর কল্পনায় সুঠাম সুদর্শন নায়ক এক ভারী  

অন্ধকারে শরীরে শরীর, কল্পনায় নর ও নারী 

কল্পনায় নায়ক ও নায়িকার কাম, বাস্তবে বিছানায় ঘাম  

রতি শেষে ক্লান্ত দেহ বিছানায় কাত 

খাটের দুপ্রান্ত থেকে হাতের ওপর হাত; 


খুট করে বেড সুইচটা জ্বলে উঠতেই কল্পনার অবসান

কোথায় নায়ক? 

কোথায় নায়িকা? 

এক কাতে ঘর্মাক্ত শুয়ে ভুঁড়িওয়ালা সেই পুরনো চেহারা      

আরেক কাতে আটপৌরে ঢলা যৌবনা 

যারা চোখের সামনে থাকে সারা দিনমান,  

বেশ তো ছিলো অন্ধকারে কামঘন কল্পনার বাসর

আলোতে আয়না, আলোতে কঠোর বাস্তবতার আসর;


অন্ধকারে কল্পনার বাসরে মনের ঘরে কত চেহারাই না খেলা করে! 

ধাক্কা খেতে হয় খুট করে আলো জ্বাললে। 


  

২৩ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


আলোতে অন্ধকারে 

 - যাযাবর জীবন 


     


সম্বোধন

সম্বোধন'টা কি খুব জরুরী?

একটা আছে রক্তের সম্পর্ক, ওখানে নানা রকম সম্বোধন

আরেকটা পাড়াতো, মুখ চেনা; সেখানেও সম্বোধন

আর আজকাল সম্পর্কের নতুন মাধ্যম হলেও 

আমাদের সবচেয়ে বেশি দেখাশোনা হয় ভার্চুয়ালে 

এটাও পরিচিতির একটা নিমিত্ত, এখানেও কিছু কিছু সম্বোধন;


এখানকার সম্বোধনগুলো কেন জানি না বেশীরভাগই লোক দেখানো

কিছু কিছু তো রীতিমত তৈলমর্দন

তৈলমর্দন অবশ্য আমাদের অনেকটা মজ্জাগত

তবুও যখন ভার্চুয়ালে পরিচিত, অপরিচিত, আধা-পরিচিত

শুধুমাত্র কে কোন কর্পোরেটের কত বড় মাথা

কে কোন ব্যবসায় আছে!

কার অর্থনৈতিক স্ট্যাটাস ভার্চুয়াল ফুটে কতটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে

সেটা অনুধাবন করে যখন সম্বোধন নির্ধারণ হয়

তখন, ঠিক তখনই কেন জানি আমার কাছে বিসদৃশ মনে হয়;


ভার্চুয়ালে কারো সম্বোধন ভাই কিংবা বোন

কারো দিদি কিংবা দাদা 

কেউ তো স্যার ছাড়া কথাই বলে না

আর ঘানি ভাঙা খাঁটি তেলের মালিশ;


দাদা-দিদি, ভাই-বোন একটা সম্পর্ক 

ওটা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট 

ভার্চুয়ালে আমাদের কিছু স্বার্থ নিশ্চয়ই থাকতেই পারে,

চট করে বন্ধু সম্বোধন'টা আসলে একদমই মৌখিক 

বন্ধু আমার কাছে অনেক বড় সম্পর্ক

যাকে সব বলা যায়, যে চুপ করে পাশে বসে থেকেও সব দুঃখ বুঝে যায়

তা না হলে আর বন্ধু কোথায়?

ভার্চুয়ালে আছে নাকি এমন বন্ধু?

তবে আর সম্বোধনে কি আসে যায়? 


ভার্চুয়ালে সাধারণত আমি সম্বোধনটা উহ্যই রাখি 

দেখাই যাক না সম্পর্ক কোথায় নিয়ে যায় আমাদের!

প্রতিদিনই তো কত কত সম্পর্ক বদলায়, কারণে আর অকারণে

কে বলেছে সম্বোধন করতেই হবে সম্বোধনের নিয়মে? 


থাকুক না সম্বোধনহীন কিছু সম্পর্ক! 



২৩ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা


সম্বোধন

 - যাযাবর জীবন 

জীবনের স্তরগুলো

মানুষের একটাই জীবন তবে জীবনের অনেকগুলো স্তর 

শিশু থেকে কৈশোর, যৌবন হয়ে প্রৌঢ়ত্ব, বৃদ্ধ তারপর  

একটা পার হতে না হতেই আরেকটা, মৃত্যুতে সমাপ্তি 

সম্পর্ক, অর্থ, স্বার্থ, দ্বন্দ্ব জীবনের প্রতিটা স্তরের প্রাপ্তি;     


জীবনের স্তরগুলো অদ্ভুত, একই মানুষ, কত তার রূপ! 

শিশুকাল মায়ের কোলে, চেনা শুরু হয় পৃথিবীর রঙ রূপ, 

বাবা আরেকটু পরে, তারপর ভাই বোন আর আত্মীয়-স্বজন

জীবনের স্তরে স্তরে নতুন নতুন মানুষ, যখন যাকে প্রয়োজন; 


ছেলেবেলা খেলা-খেলা, তখনও মোটামুটি মা সর্বস্ব জীবন

বাবার কাছে হয়তো বায়না, তারপর আহ্লাদ বড় ভাই-বোন 

বন্ধুত্ব বলে নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে তখন

ক্রমে ক্রমে সম্পর্কের রূপ বদলায় জীবন যেখানে যেমন;


কৈশোরে বাবা-মার থেকে হঠাৎই কিছুটা, দূরত্ব তৈরি হয় 

বন্ধু বান্ধবরা আপন হতে থাকে, অল্প কিংবা বেশি পরিচয়     

স্কুলে, মহল্লায়, খেলার মাঠে ওদের'কে আপন করে নিয়ে   

তার চেয়েও আপন যেন পাশের বাড়ির ঐ ছেলে বা মেয়ে; 


যৌবনে প্রেমে, প্রেমিকের কাছে প্রেমিকাই সবচেয়ে আপন 

এ নিয়ে কথা কাটাকাটিতে বাবা-মায়ের সাথে দূরত্ব ভীষণ

লেখাপড়ায় মন নেই, মন উচাটন আর প্রেমময় জীবন

প্রেমে সবকিছু রঙিন রঙিন, স্তরটার নামই যে যৌবন!


বিয়ের পর থিতু, বাবা-মা ভাই-বোন, সবাই মিলেমিশে

শ্বশুর বাড়ি আপন আপন লাগে শ্যালিকা যদি বসে পাশে 

মেয়েদের ক্ষেত্রে শ্বশুর বাড়ি দেবর ননদ সব আপন করে   

তারপর স্বামী-স্ত্রী কাহন, সংসারে ভাঙন, জীবনের এ স্তরে; 

 

এরপর চাকরি জীবন, কেউ ব্যবসায়, নয় বাবার ঘাড়ে খায়

সংসারে নতুন শিশুর আগমন, নতুন খুশি বংশ পরম্পরায় 

ছেলেরা বাবা হয়, মেয়েরা মা, সন্তানগুলো সংসার ভরায়

বংশবৃদ্ধি এভাবেই হয়ে আসছে এই মানব সংসার ধারায়; 


অনেকটা পথ সন্তান মানুষ করতে, এরমাঝে পরকালে বাবা-মা

এ জীবনটা টাকার, টাকার পেছন পেছন কে আর ছোটে না? 

জীবনের এ স্তরে রয়ে যায় ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব মাঝে মাঝে 

আত্মীয় স্বজন কোথায় আর আজকাল? কখনো হয়তো কাজে;  


সন্তানরা বড় হলে যে যার পথে, বাবা-মার জন্য সময় কোথায়? 

ব্যস্ত তারা সংসারে আর কাজে, জীবন যাকে যেখানে নিয়ে যায়, 

বাবা-মা গত হয়েছে অনেক দিন, ভাই-বোন? যার যার সংসারে 

বন্ধুবান্ধব? মাঝে মাঝে একসাথে হয়, একটু সময় বের করে;  


আজকাল কথা বলারও কেউ নেই, বাসায় শুধু দুটো বুড়োবুড়ি 

মাঝেমাঝে পরস্পর কথা, বিকেল বারান্দায় দুজনে চা দিয়ে মুড়ি

বাকি সময়টা পরকালের চিন্তা, ধর্ম কর্ম শেষে ঘুম কাঁথা মুড়ি

জীবনের শেষ স্তরে বুড়ির জন্যে বুড়ো আর বুড়োর জন্যে বুড়ি;


একটা সময় হয় বুড়ো মারা যাবে কিংবা বুড়িটাই ঘুমোবে আগে  

তারপরের জীবনটা একাকীত্বের, ওরা বুঝে গিয়েছে আগেভাগে

জীবনের শেষ স্তরে আগের স্তরগুলো চোখের সামনে উঠে ভেসে  

স্তরের পরতে পরেতে স্বার্থগুলো সম্পর্কের আষ্টেপৃষ্ঠে ছিলো মিশে। 



১৫ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


জীবনের স্তরগুলো 

 - যাযাবর জীবন 


বাড়ি আর ঘর

কোন একটা সময় আমরা বাড়িতে বাস করতাম

কোন একটা সময় দিনশেষে আমরা বাড়িতে ফিরতাম, 

টিনের চাল দেওয়া খোলা উঠোনের বাড়ি

উঠোনে কিছু ফল ফলাদির গাছ আর সেখানে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ   

বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুপুদের নিয়ে এক ছাদের নীচে বসবাস,  

মাঝে মধ্যে মামারা কিংবা খালারা বেড়াতে এলে 

সে দিনগুলো যেন প্রায় ঈদের খুশি,

আগে বাড়িটাতে মায়া ছিলো, ভালোবাসা ছিলো সম্পর্কগুলোতে 

এখন সে-সকলই যেন ইতিহাস; 

  

আজকাল আমরা ঘর বলি, কাজের শেষে ঘরে ফিরি 

কারো দুই বেডরুম এপার্টমেন্ট, কারো বা তিন বেডরুম  

ইটের পর ইট গাঁথা খোপ খোপ ইমারত 

উঠোনের জায়গায় আড়াই ফিট বাই সাড়ে তিন ফিট বারান্দা

পাশের বিল্ডিং একদম লাগোয়া, মনে হয় হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে

ঐ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখব কিভাবে? 

আকাশ দেখার ইচ্ছে হলে মাঝে মধ্যে ছাদে চলে যাই

নীলের মাঝে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসি 

ঘরের কোণে বসে মাঝে মধ্যে স্মৃতি খুলে খুলে দেখি

তার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দু-কামরার বেডরুমে ঘুমিয়ে থাকি, 

বাড়িটা ভাগ হতে হতে আজ খোপ খোপ এপার্টমেন্ট ঘর

এক এক ভাই বোন এক এক এপার্টমেন্টে 

দেখা হয় মাঝে মাঝে, সিঁড়িতে কিংবা লিফটে

আজকাল ইট কাঠের ইমারতে মায়া খুঁজে পাই নাই

ভালোবাসার বন্ধন বড্ড আলগা সম্পর্কগুলোতে   

তাও বাড়ির বদলে একটা ঘর তো পেয়েছি! এই তো বেশি; 


আজকাল অবশ্য বাড়ির দরকারই ফুরিয়ে গিয়েছে

আজকালকার শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে গিয়েছে 

বদলেছে ছেলেমেয়েদের মানসিকতা 

এখন আর একান্নবর্তী সংসার ওদের পছন্দ হয় না

ওদের প্রাইভেসি দরকার, 

সন্তানরা চাকুরী কিংবা ব্যবসায় রত, যার যার মত 

ফ্ল্যাট কিনে আলাদা হয়ে নিজের মত টোনাটুনির সংসার 

বাবা-মাই তাদের কাছে আজকাল দায় হয়ে পড়েছে! 

দাদা-দাদী, চাচা-চাচীর ওরা তো অনেক দূরে, 

মাঝে মধ্যে অবশ্য সবার সাথে দেখা হয় পালা পার্বণে,  

আজকাল বাবা-মায়ের থেকে ছেলে মেয়ে সব আলাদা, ঘরে ঘরে  

তাহলে আর বাবা-মায়ের বাড়িরই বা কি দরকার?


আমরা বেশ আছি বুড়োবুড়ি 

আর আমাদের দু বেডরুমের ছোট্ট সংসার,

একটা বেডরুম খালিই পড়ে থাকে

যদি কখনো কোন ছেলেমেয়ে এক রাতের জন্য থাকতে আসে! 


মাঝে মধ্যে ছেলেমেয়েদের কথা বড্ড মনে হয়

মাঝে মধ্যে নাতি নাতনিদের দেখতে ইচ্ছে হয়,

ওরা বড্ড ব্যস্ত, তাও ভালো! আজকাল মাঝে মধ্যে ভিডিও কল করে

কখনো সখনো ওদের দেখা মেলে মোবাইলের ওপারে,

ইদানীং মাঝে মধ্যে খুব চিন্তা হয়,

 - একদিন টুপ করে মরে গেলে বুড়িটা বড্ড একা হয়ে যাবে।  


১২ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


বাড়ি আর ঘর 

 - যাযাবর জীবন 


আমাদের বাংলাদেশ

কলাবাগানে কলাগাছের সারি দেখেছ কখনো তোমরা? 

ভোমরা নামের বন্দর আছে, আছে হুলফোটানো ভোমরা,

ময়লাপোতায় কে কবে আর পুঁতে রেখেছে ময়লা? 

বড়পুকুরিয়াতে পুকুর নেই পাওয়া যায় সেথা কয়লা;


গাইবান্ধায় কেউ কি আর খোঁজে? আছে বান্ধা গাই!   

ছাগলনাইয়ায় পাগল হয়ে কে ছাগল খোঁজে ভাই?  

চিলমারি'তে তো চিলই নাই, মারবে'টা তবে কি? 

ভুরুঙ্গামারি'তে ভুরুতে কোথায় কে আর লাগায় ঘি; 


ভুয়াপুরের মানুষ'কে ভুয়া বললে খেতে পার পিঠে কিল

ভূতের গলিতে ভুতে কবে এসে মেরেছিলো চালে ঢিল?   

চাঁদপুরে রাতদিন চাঁদ খুঁজে, এমন পাগল আছে কি? 

কাউয়ার চরে কাউয়া না ডাকলে আমি করব'টা কি?


সোনাডাঙ্গার মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে কে কবে পেয়েছে সোনা

শিয়ালডাঙ্গায় শিয়ালের ডাক এখন আর যায় না শোনা, 

শালের উৎপাদন নেই তাতে কি? নাম তো বরিশাল 

হাতিরপুলে হাতি ছিলো নাকি, সেই কোনো এক কাল; 

 

কলাকোপায় নেই কলা গাছ, দা'য়ে কোপাবে'টা কি?  

ভাঙ্গায় নতুন রাস্তা গড়েছে এই তো সেদিন দেখেছি,  

পাগলা'তে পাগল হয়েছি একটা পাগল খুঁজতে গিয়ে

হেমায়েতপুরে পুরেছে সকল পাগল তাড়িয়ে নিয়ে;

 

ভেড়ামারায় তো ভেড়াই নেই তাহলে মারবেটা কি? 

ফকিরাপুলের রাস্তা ভরা ফকির, সাথে ছেলে বৌ ঝি, 

কাঠালবাগানে কাঠাল খেতে গিয়ে হাতে মেখেছি তেল 

বেলতলায় বেল গাছ কই, যে ন্যাড়া মাথায় পড়বে বেল!   


নোয়াখালী'তে মাথা নোয়ায় না, রেগে গেলে দেয় গালি 

কোথাও একটু খালি জায়গা নেই, নাম তার মহাখালী, 

বাঁশখালিতে উজাড় হয়েছে কেটে কেটে সব বাঁশঝাড়

এলিফ্যান্ট রোডে এলিফ্যান্ট নাই, নামটাই আছে তার;

 

কে বলেছে মতলবের মানুষ মতলব করে সারাদিন ধরে

কোনাপাড়ায় কোনাকাঞ্চিতে বসে না কেউ কোনা করে,   

গলাচিপায় চিপে ধরে গলা, এটা একদম ডাহা মিছে

চরফ্যাশনে ফ্যাশন নেই কোথাও, সবাই মাছের পিছে; 


হাঁটুভাঙ্গায় কবেই বা বসেছিলো কে? হাঁটু ভেঙ্গে গেড়ে

একটা দুটো কামরাঙ্গা গাছ, খুঁজে পাবে কামরাঙ্গির চরে, 

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ের সারি, মাটির রঙ কোথাও রাঙা 

ডাঙ্গা আছে, নেই কোন শিয়াল নাম তবুও শিয়ালডাঙ্গা; 

   

লোহা গড়ে না কেউ, নেইকো লোহা তবু নাম লোহাগড়া 

জাহাজমারায় কত যে জাহাজ ডুবোচড়ে খেয়েছে ধরা,   

ডিমের চরে কোথাও নেই ডিম, চারিদিক ধু ধু বালিয়াড়ি 

রাজবাড়ি'তে রাজা নেই এখন, বাড়ি আছে সারি সারি; 

 

বাঘমারায় বাঘ মারতে গিয়ে নাকি শিকারির মুখ কালো 

বোয়াল মারি'তে বোয়াল ধরতে গিয়েও বোকা হতে হলো

চ্যাংড়া বান্ধায় চ্যাংড়া ছেলেপেলেকে কেউ রাখে না বেন্ধে 

লাভ লেনে ভালোবাসা খুঁজতে যায় বোকা আর অন্ধে; 

  

বুড়িমারিতে বুড়ি মারে না কেউ, বয়সে মারা যায় ওরা  

গুড়া পাওয়া যায় না, বগুড়া'কে যতই করুক গুড়া গুড়া  

ভোলা'তে ভোলায় না কেউ, বাচ্চারা না করলে কান্নাকাটি 

ঝালকাঠিতে ঝাল কোথায়? স্বরূপকাঠিতে কে খুঁজে কাঠি?    


চৌষট্টি হাজার গ্রাম চৌষট্টি হাজার নাম একটি সে দেশ 

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এখানে মিলেমিশে আছে বেশ,   

লাখো শহীদের মৃত্যুর বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীন দেশ 

আমরা সবাই বাংলায় কথা বলি, আমাদের বাংলাদেশ। 


১১ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


আমাদের বাংলাদেশ

 - যাযাবর জীবন 


অজানা অপেক্ষার ঘড়ি

মানুষ জন্মের পর বেড়ে ওঠে ধীরে ধীরে 

শিশুকাল থেকে নিয়ে বৃদ্ধ অবস্থা স্তরে স্তরে 

ছেলেবেলাটা বড্ড মধুর, খেলা খেলা সারাবেলা 

এর মাঝেই কিছু বোধোদয় 

একজন দুজন করে দাদা-দাদী, নানা-নানী 

কোথায় জানি চলে যায়! কোন এক মৃত্যু নামক জায়গায়

সেই বয়সে আমরা মৃত্যু বুঝি না তবে ওনাদের চলে যাওয়া বুঝি 

একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয় আদরের জায়গাগুলোতে; 

 

তারপর মানব শিশু আরেকটু বড় হয় 

জীবন মৃত্যু বুঝতে শিখে 

তারপর জীবনের বিভিন্ন স্তরে একজন দুজন করে গুরুজনের বিদায় 

সেটা ততদিনে সহনীয় হয়ে গিয়েছে, পরিণত হয়ে গিয়েছে অভ্যাসে 

তারপর একটা সময় যৌবন পার হয়ে সংসার ধর্মে 

এখানে সেই ছোট্ট মানব শিশুটা জীবনটাকে বুঝে গিয়েছে 

বুঝে গিয়েছে মৃত্যু নামক এক এক অমোঘ বিধান,   

স্বাভাবিক নিয়মে এবার বাবা-মায়ের পালা 

সারাক্ষণ ভয় ভয়, কখন জানি ওনাদের কি হয়

তারপর কালের স্রোতে একে একে ওনারা বিদায় হন 

থেমে থাকে না মানুষের বয়স, থেমে থাকে না মৃত্যুর মিছিল 

বাবা-মায়ের পরে একে একে চাচা-চাচী, খালা-খালু, মামা-মামী

তারপরের সিরিয়ালে আমি, আমার ভাই-বোন, আমার জেনারেশন; 

 

মৃত্যু ভয় এবার আমার মনে 

না চাইলেও কোথাও না কোথায় এ ভয়ের বাস খুব গোপনে 

একটা অদ্ভুত অপেক্ষাটা, প্রতীক্ষা এক অজানা গন্তব্যের  

অপেক্ষা এক অজানা সময়ের 

আজ, কাল, পরশু

এখন, তখন, যে কোন মুহূর্তে

মৃত্যুটা আসবেই, সময়'টা কেউ জানে না,  

অপেক্ষায় আছি আমি 

ভেতরে ভেতর পরকালের কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছি 

হাজার হোক আস্তিক তো! 


কোথায় জানি একটা ঘড়ির কাঁটা অবিরাম ঘুরে যাচ্ছেই 

অপেক্ষার ঘড়ি 

টিক টিক টিক.........    


১০ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


অজানা অপেক্ষার ঘড়ি 

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিটেড। 






মনের আড়াল

ভার্চুয়াল জুড়ে রাশি রাশি ছবির মহরৎ 

এক একজনের এক এক ভঙ্গিমায় ছবি 

ক্ষণে ক্ষণে নতুন নতুন ছবির পোস্ট 

আর এদের প্রত্যেকের মুখে দেখি হাসি;


আমি ছবিগুলো মাঝে মধ্যেই দেখি 

কখনো বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়েই দেখি 

হাসির আড়ালে কোথায় যেন হাহাকার

ঠোঁটের আড়ালে একটু কান্না কি? 


একদিন একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম,

এই যে ক্ষণে ক্ষণে ছবি পোস্ট করিস!

কি এমন আনন্দ উপভোগ করিস?

আমি জানি ওর জীবন'টা বিষাদময়;


সে একটু থমকে গিয়ে উত্তর দিলো  

দাদাভাই, হাসি দিয়ে কান্না লুকাই

ছবির মহরতে নিজেকে ক্রমাগত ভুলাই 

সবাই আনন্দ দেখে, কান্না বোঝে কি? 


আমার খুব মন খারাপ হলো 

বললাম কিন্তু এটা যে হিপোক্রেসি! 

সে হেসে বললো নিজেকে আড়াল দেয়া 

তারপর করুণ হাসিতে কান্না লুকলো;  


আরেকজন বললো মেয়েদের দুঃখ জানো?  

কোথাও আমাদের দুর্বলতা খুঁজে পেলেই 

ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় একদল হায়েনা 

দুর্বলতা ঢাকি হাসিতে, নিজেকে বাঁচাতে; 


ভার্চুয়াল থেকে কত কিছুই না শেখা যায়!

ভেতরে বাইরে দুই মানুষ হিসাবে বাঁচা যায় 

এখন আমিও হাসিমুখে সবার সাথে মিশি 

আজকাল আমিও খুব কান্না লুকিয়ে হাসি। 



০৯ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


মনের আড়াল  

 - যাযাবর জীবন 



    

রঙের কারবার

দেখাদেখি থেকে মুখ-চেনা, মুখ-চেনা থেকে পরিচয়

পরিচয় ঘন হতে হতে ভালোলাগা, আরেকটু এগোয় 

এগোতে এগোতে কখনো যদি তাদের হয়ে যায় প্রেম!   

এভাবেই'তো ভালোবাসা হয়, নাকি ভুল বললেম? 


প্রেম মানেই মন কেমন কেমন, কাছে থাকার বাসনা 

একটু ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার আকাঙ্ক্ষা কেউ বলে কামনা 

আকাঙ্ক্ষা প্রবল হতে হতেই হয়ে যেতে পারে পরিণয়  

তারপর সংসার? এই তো হয়ে আসছে, এই তো হয়;   


প্রথম প্রেমের সেই প্রবল টান! আর ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার বাসনা  

ভালোবাসার মানুষগুলো সংসারে এলেই আগের মত থাকে না 

প্রতিদিন ডালভাত মুখের একই স্বাদ, ভালো আর লাগে কত?  

ঘটিবাটি খুটখাট খুঁটিনাটি কথাকাট সময়ে শুরু হয়ে যায় যত 

দুজন দুজনার কাছে খোলামেলা হতে হতে বড্ড আটপৌরে বাজে 

প্রেম করার সময় কোথায় আর? মন এখন কেবল সংসার কাজে; 

 

ভালোবাসার মানুষের সাথে সংসারের মানুষটির মিল খুঁজে পাওয়া ভার 

কিছু ক্ষেত্রে ভালোবাসার আবেগটা রয়ে যায় অভ্যাসে হয়তো দুজনার 

কিছু ক্ষেত্রে ভালোলাগার সেই তীব্রতা একটা সময় ফিকে হতে থাকে

ছেলেমেয়ে বড় হতে হতে সংসারটাই বড় হয়ে যায় সংসারের বাঁকে  

কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন দুটো মানুষের ভিন্নতা মেনে নিতে পারে না দুজন 

মনোমালিন্যের চরমে পথ ভিন্ন হতে হতে সংসারে বিচ্ছেদ তখন; 

 

প্রেমিক আর স্বামী একই ব্যক্তি হয়েও দুজন আদতে এক নয়

একই ঘরে বসবাসরত প্রেমিকা আর স্ত্রী রূপ কখনো এক হয়?

কেউ মেনে নেয়, কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মানিয়ে চলে ছলে বলে  

বাকিরা স্বাধীনচেতা, সময়ে আলাদা হয়ে যায় পরিস্থিতির কবলে; 

 

স্বামীদের প্রেমিক রূপ ফিরে আসে বিছানায় বাতি বন্ধ হয়ে গেলে     

স্ত্রীরা আয়নায় প্রেমিক খোঁজে নিজের প্রেমিকা রূপ একদম ভুলে 

প্রেম আর সংসার এক নয়, গুরুজনে বলে গিয়েছেন বার বার 

প্রেমের সময়টা রঙিন লাগলেও সংসারই আদতে রঙের কারবার। 




০৮ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 



রঙের কারবার

 - যাযাবর জীবন




     



 

   

  

ভাতের ক্ষুধা

ওদিকে দেখ, ঐ যে গ্রামে,  

ক্ষেতের আলে লাঙ্গল কাঁধে হেঁটে চলছে কৃষক 

ক্ষেত চষলে ফসল, পেটে ভাত,  

হাপরে দম দিতে দিতে লাল হয়ে ওঠা লোহায় বাড়ি কামারের

কিছু একটা বানাতে পারলে টাকা, পেটে ভাত, 

মাটির ছাঁচে কাদা মাখা হাতে কুমার 

পাতিল বানাতে পারলে টাকা, পেটে ভাত; 


ওদিকে দেখ, এই শহরে, 

ধুঁকে ধুঁকে রিক্সা টানছে রিক্সাওয়ালা 

রিক্সা টানতে পারলেই পয়সা, পেটে ভাত,  

মাথায় ইটের বোঝা নিয়ে উঁচু ইমারতে মজুর

দিনান্তে টাকা, পেটে ভাত,  

ঝুলে ঝুলে বাদুর ঝোলা হয়ে অফিসে ছুটছে কর্মীর দল

মাস শেষে বেতন, পেটে ভাত, 

কেউ বা গাড়িতে করে অফিসে কিংবা ব্যবসার কাজে

এদেরও ব্যবসা হলে টাকা, পেটে ভাত;


এরা সবাই বাবা অথবা মা 

ক্ষুধা কি? বোঝে এরা 

এরা পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে

সন্তান যাতে ক্ষুধাটুকু না বোঝে,

তবুও কোন কোন সংসারে পেট চিনে যায় ক্ষুধা, সন্তানের পেট 

ক্ষুধা পেত ভাতের মূল্য বুঝে যায় খুব হঠাৎ করেই 

আর ক্ষুধা চিনে চিনে হঠাৎ করেই যেন বড় হয়ে যায় সন্তান

দেখতে না দেখতে মাথায় তুলে নেয় সংসারের বোঝা 

বাবা না হয়েও এরা যেন হয়ে যায় বাবা 

মা না হয়েও হয়ে যায় মা 

বের হয়ে পরে কাজে, বের হয় খাদ্যাহ্নেষণে  

পরিবারের বাকি সদস্যদের বুঝতে দিতে চায় না ক্ষুধা;


কাজই টাকা

টাকাতেই ভাত

ভাতে নিবারণ ক্ষুধা 

গ্রামে কিংবা শহরে, দেশে আর বিদেশে 

আমরা সবাই ছুটছি টাকার পিছে 

পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে,  

  - আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। 


০৮ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


ভাতের ক্ষুধা 

 - যাযাবর জীবন 




 




  

 

গ্রাম স্বপ্ন

গ্রামের ধার ঘেঁসে বয়ে চলা ছোট নদী 

সেই কবে থেকে জানি কুলকুল কুলকুল বয়ে চলেছে পানি জোয়ার আর ভাটায়,     

নদীর পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম 

গ্রামের এক কোনে নদীটির ঠিক ধার ঘেঁসেই ছোট্ট একটি মাটির বাড়ি 

ওপরে টিনের চৌচালা চাল, 

টিনের চালের একপাশ ঘেঁসে লাউ টাল 

লকলকে লাউডগা বেড়ে উঠে কিছু পাতা ছড়িয়ে গিয়েছে টিনের চালে

একটি দুটি কিশোরী লাউ বেশ ডগমগ বেড়ে উঠেছে 

লাউ মাচার এক পাশে মাটির চাড়িতে ভুষি গুলচ্ছে কিষাণী মেয়ে  

বাঁশের খুঁটিতে গাই বেঁধে দুধ দোয়াচ্ছে গ্রাম্য বধূ

একথাল ভাত খেয়ে লুঙ্গি মালকোঁচা মেরে লাঙ্গল কাঁধে মাঠের দিকে রওয়ানা দিলো চাষি 

সকালের সোনা রোদ তেরছা হয়ে লাউয়ের ডগার ফাঁক দিয়ে চুইয়ে নামছে

হালকা শীতের সকালে ঘাস থেকে চুইয়ে উঠছে কুয়াশার ভাপ 

ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরের ফোঁটা রোদ পড়ে চিকচিক করছে

আমি লোভাতুর বিহ্বল তাকিয়েছিলাম গৃহস্থ বাড়িটির দিকে; 


নদীর পাড় ঘেঁসে মাটির ঘর

কুলকুল বয়ে যাওয়া পানির শব্দ 

কিচকিচ শালিকের ঝাঁক 

ভোরের তেরছা রৌদ্র

ঐ দূরে দিগন্ত জুড়ে সবুজ ধানের মাঠ 

এখানে জীবনটা কত সুন্দর! 

আহ! আমার যদি এমন একটা ঘর থাকতো!

এমন একটা মাটির ঘর!

এমন একটা নদী! 


এক এক সময় ভাবি কি আছে ইট পাথরের নগরীতে?

এখানে স্বার্থ নামের অনর্থ ক্রমাগত আঁচরে খাচ্ছে আমাদের;

আমি প্রায়শই একটা গ্রামের স্বপ্ন দেখি 

স্বপ্ন দেখি একটা মাটির বাড়ির

উঠোনে ধান শুকচ্ছে, ঢেঁকিতে ধান ভানছে গ্রাম্য বধূর দল

কালো গাইয়ের দুধে পিঠা ভিজছে উনুনে

লাউয়ের মাচায় কচি কচি লাউ 

সিমের টালে সারি সারি সিম ঝুলছে

আমি রোধ পোহাচ্ছি সকালের সোনারোদ মেখে মেখে

ছোট ছোট বাচ্চারা হুটোপুটি করছে উঠোন জুড়ে

আমার চোখ ভিজে উঠছে কি এক মায়ায়

আহারে! আহারে! 

জীবনের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো অধরাই রয়ে গেলো 

নগর এসে গ্রাম'কে কবর দিয়ে দিলো

অন্ধকারে ঢাকা পড়ে রয়ে যায় আমার গ্রাম-স্বপ্ন।   


 

০৭ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


গ্রাম স্বপ্ন 

 - যাযাবর জীবন 

  


প্রেম করে কিংবা না করে

কত জনই তো কবিতা লিখে

প্রেমের কবিতা, 

প্রেম লিখতে গেলে কেন আঘাত পেতেই হবে? 

আঘাত না পেয়ে কি প্রেমের কবিতা লেখা যায় না? 

আরে প্রেম করলেই তো প্রেমের কবিতা লেখা যায়,  

যায় না?

হয়তো যায় না, গেলে তো মানুষ থেকে প্রেমের কবিতা হয়ে যেতো বেশি 

প্রেম কে নাই বা করে, কম আর বেশি? 


কেউ কেউ একাধিক প্রেম করে, 

ওরা সবাই কি প্রেমের কবিতা লিখে? খাতা ভরে ভরে

কত প্রেমিক প্রেমিকাই তো আছে যারা কবিতাই বোঝে না, 

তাই বলে কি ওরা প্রেম করে না? 

আরে করে, করে

ওরাও প্রেম করে 

একটি দুটি থেকে শুরু করে হালি হালি প্রেমে পরে

ডজন ডজন প্রেম করে 

কবিতা বুঝলেও করে, না বুঝলেও করে; 

 

এদের মাঝে কেউ কেউ প্রেম করে করে ধোঁকা খায়, বোকা বনে 

আবার কেউ বা প্রেমিকাকে নিয়ে সংসার গড়ে 

এদের মাঝে কেউ কেউ হয়তো কবিতা বোঝে

কেউ হয়তো কবিতা লিখে 

আর কারো কাছে কাব্য মানেই বাতুলতা;


তবে এদের মাঝে কেউ কেউ ঐ যে ধোঁকা খেয়ে বোকা হয়!  

কিংবা ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা! 

তাদের মধ্যে একটা দল, খুব দুঃখ পেলে কাগজে কলম ঘষার চেষ্টা করে

কেউ কেউ উস্কোখুস্কো চুলে মুখ ঢেকে রাখে 

কেও চেহারা আড়াল রাখে সিগারেটের ধোঁয়ায়,  

কেউ কেউ আপন মনে বিড়বিড় করে কি কি সব কথা বলে

তারপর কোন একটা সময়ে হাতের কলম আঁকতে শুরু করে কাগজে 

দুষ্ট লোকেরা ঠাট্টার ছলে বলে ধোঁকা-কথন, ছ্যাঁকা-গাঁথন   

তবে বোদ্ধাদের কেউ কেউ বলে কবিতা

এভাবেও নাকি কবিতা লেখা হয়

এভাবেও নাকি কিছু কবিতার জন্ম হয়;


আমি কবিতা লিখতে শিখি নি

কবিতা যে আসলে কি? তা হয়তো জীবনে বুঝিই নি; 

মাঝে মাঝে মন যখন খুব খারাপ থাকে! 

 - তখন কাগজে কলম ঘষি,  

মাঝে মাঝে মন যখন খুব ভালো থাকে! 

 - তখনো কাগজে কলম ঘষি, 

কখনো হয়তো কোন এক রূপবতী নারী দেখি 

তখন মন উচাটন হয়, কখনো কখনো মন বিহ্বল   

 - আমি কাগজে কলম ঘষি, 

মাঝে মধ্যে রূপবতীদের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে আয়নায় চোখ যায়

আয়নার মানুষটাকে দেখে মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায় 

 - আমি বাস্তবে ফিরে আসি, তারপর যথেচ্ছা কাগজে কলম ঘষি হিবিজিবি,  

আমি প্রেমিক হয়ে কিংবা না হয়েও চিন্তার বিভোরে হারাই 

কাগজ কলম সামনে পেলে মনের অজান্তেই আঁক দিয়ে যাই,


একটা কথা কি জানো?

শুধুশুধুই আমি কাগজে কলম ঘষে যাই

সাদা কাগজে কিছু অর্থবহ কিংবা অর্থহীন কালো দাগ ফুটে ওঠে 

আমি কুটিকুটি করে কাগজ ছিঁড়ে বাতাসে ওড়াই, 

দুঃখ একটাই - একটা কবিতাও লিখতে পারলাম না জীবনে,  

প্রেম করে কিংবা না করে।   




০৭ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 



প্রেম করে কিংবা না করে 

 - যাযাবর জীবন