বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

গ্রাম স্বপ্ন

গ্রামের ধার ঘেঁসে বয়ে চলা ছোট নদী 

সেই কবে থেকে জানি কুলকুল কুলকুল বয়ে চলেছে পানি জোয়ার আর ভাটায়,     

নদীর পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম 

গ্রামের এক কোনে নদীটির ঠিক ধার ঘেঁসেই ছোট্ট একটি মাটির বাড়ি 

ওপরে টিনের চৌচালা চাল, 

টিনের চালের একপাশ ঘেঁসে লাউ টাল 

লকলকে লাউডগা বেড়ে উঠে কিছু পাতা ছড়িয়ে গিয়েছে টিনের চালে

একটি দুটি কিশোরী লাউ বেশ ডগমগ বেড়ে উঠেছে 

লাউ মাচার এক পাশে মাটির চাড়িতে ভুষি গুলচ্ছে কিষাণী মেয়ে  

বাঁশের খুঁটিতে গাই বেঁধে দুধ দোয়াচ্ছে গ্রাম্য বধূ

একথাল ভাত খেয়ে লুঙ্গি মালকোঁচা মেরে লাঙ্গল কাঁধে মাঠের দিকে রওয়ানা দিলো চাষি 

সকালের সোনা রোদ তেরছা হয়ে লাউয়ের ডগার ফাঁক দিয়ে চুইয়ে নামছে

হালকা শীতের সকালে ঘাস থেকে চুইয়ে উঠছে কুয়াশার ভাপ 

ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরের ফোঁটা রোদ পড়ে চিকচিক করছে

আমি লোভাতুর বিহ্বল তাকিয়েছিলাম গৃহস্থ বাড়িটির দিকে; 


নদীর পাড় ঘেঁসে মাটির ঘর

কুলকুল বয়ে যাওয়া পানির শব্দ 

কিচকিচ শালিকের ঝাঁক 

ভোরের তেরছা রৌদ্র

ঐ দূরে দিগন্ত জুড়ে সবুজ ধানের মাঠ 

এখানে জীবনটা কত সুন্দর! 

আহ! আমার যদি এমন একটা ঘর থাকতো!

এমন একটা মাটির ঘর!

এমন একটা নদী! 


এক এক সময় ভাবি কি আছে ইট পাথরের নগরীতে?

এখানে স্বার্থ নামের অনর্থ ক্রমাগত আঁচরে খাচ্ছে আমাদের;

আমি প্রায়শই একটা গ্রামের স্বপ্ন দেখি 

স্বপ্ন দেখি একটা মাটির বাড়ির

উঠোনে ধান শুকচ্ছে, ঢেঁকিতে ধান ভানছে গ্রাম্য বধূর দল

কালো গাইয়ের দুধে পিঠা ভিজছে উনুনে

লাউয়ের মাচায় কচি কচি লাউ 

সিমের টালে সারি সারি সিম ঝুলছে

আমি রোধ পোহাচ্ছি সকালের সোনারোদ মেখে মেখে

ছোট ছোট বাচ্চারা হুটোপুটি করছে উঠোন জুড়ে

আমার চোখ ভিজে উঠছে কি এক মায়ায়

আহারে! আহারে! 

জীবনের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো অধরাই রয়ে গেলো 

নগর এসে গ্রাম'কে কবর দিয়ে দিলো

অন্ধকারে ঢাকা পড়ে রয়ে যায় আমার গ্রাম-স্বপ্ন।   


 

০৭ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


গ্রাম স্বপ্ন 

 - যাযাবর জীবন 

  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন