কোন একটা সময় আমরা বাড়িতে বাস করতাম
কোন একটা সময় দিনশেষে আমরা বাড়িতে ফিরতাম,
টিনের চাল দেওয়া খোলা উঠোনের বাড়ি
উঠোনে কিছু ফল ফলাদির গাছ আর সেখানে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ
বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুপুদের নিয়ে এক ছাদের নীচে বসবাস,
মাঝে মধ্যে মামারা কিংবা খালারা বেড়াতে এলে
সে দিনগুলো যেন প্রায় ঈদের খুশি,
আগে বাড়িটাতে মায়া ছিলো, ভালোবাসা ছিলো সম্পর্কগুলোতে
এখন সে-সকলই যেন ইতিহাস;
আজকাল আমরা ঘর বলি, কাজের শেষে ঘরে ফিরি
কারো দুই বেডরুম এপার্টমেন্ট, কারো বা তিন বেডরুম
ইটের পর ইট গাঁথা খোপ খোপ ইমারত
উঠোনের জায়গায় আড়াই ফিট বাই সাড়ে তিন ফিট বারান্দা
পাশের বিল্ডিং একদম লাগোয়া, মনে হয় হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে
ঐ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখব কিভাবে?
আকাশ দেখার ইচ্ছে হলে মাঝে মধ্যে ছাদে চলে যাই
নীলের মাঝে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসি
ঘরের কোণে বসে মাঝে মধ্যে স্মৃতি খুলে খুলে দেখি
তার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দু-কামরার বেডরুমে ঘুমিয়ে থাকি,
বাড়িটা ভাগ হতে হতে আজ খোপ খোপ এপার্টমেন্ট ঘর
এক এক ভাই বোন এক এক এপার্টমেন্টে
দেখা হয় মাঝে মাঝে, সিঁড়িতে কিংবা লিফটে
আজকাল ইট কাঠের ইমারতে মায়া খুঁজে পাই নাই
ভালোবাসার বন্ধন বড্ড আলগা সম্পর্কগুলোতে
তাও বাড়ির বদলে একটা ঘর তো পেয়েছি! এই তো বেশি;
আজকাল অবশ্য বাড়ির দরকারই ফুরিয়ে গিয়েছে
আজকালকার শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে গিয়েছে
বদলেছে ছেলেমেয়েদের মানসিকতা
এখন আর একান্নবর্তী সংসার ওদের পছন্দ হয় না
ওদের প্রাইভেসি দরকার,
সন্তানরা চাকুরী কিংবা ব্যবসায় রত, যার যার মত
ফ্ল্যাট কিনে আলাদা হয়ে নিজের মত টোনাটুনির সংসার
বাবা-মাই তাদের কাছে আজকাল দায় হয়ে পড়েছে!
দাদা-দাদী, চাচা-চাচীর ওরা তো অনেক দূরে,
মাঝে মধ্যে অবশ্য সবার সাথে দেখা হয় পালা পার্বণে,
আজকাল বাবা-মায়ের থেকে ছেলে মেয়ে সব আলাদা, ঘরে ঘরে
তাহলে আর বাবা-মায়ের বাড়িরই বা কি দরকার?
আমরা বেশ আছি বুড়োবুড়ি
আর আমাদের দু বেডরুমের ছোট্ট সংসার,
একটা বেডরুম খালিই পড়ে থাকে
যদি কখনো কোন ছেলেমেয়ে এক রাতের জন্য থাকতে আসে!
মাঝে মধ্যে ছেলেমেয়েদের কথা বড্ড মনে হয়
মাঝে মধ্যে নাতি নাতনিদের দেখতে ইচ্ছে হয়,
ওরা বড্ড ব্যস্ত, তাও ভালো! আজকাল মাঝে মধ্যে ভিডিও কল করে
কখনো সখনো ওদের দেখা মেলে মোবাইলের ওপারে,
ইদানীং মাঝে মধ্যে খুব চিন্তা হয়,
- একদিন টুপ করে মরে গেলে বুড়িটা বড্ড একা হয়ে যাবে।
১২ ডিসেম্বর, ২০২১
#কবিতা
বাড়ি আর ঘর
- যাযাবর জীবন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন