শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮

বালু-ঘড়ি টিক টিক টিক টিক




বালু-ঘড়ি টিক টিক টিক টিক
- যাযাবর জীবন


কাঁটা ঘুরছে টিক টিক টিক টিক
সময় এগোচ্ছে, সময় ফুরোচ্ছে,
আনমনা নিদ্রাহীন রাতে টিকটিকিও জানিয়ে দিচ্ছে
সময় ফুরোচ্ছে ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক;

ঘড়ির ছোট ছোট কালো হাতগুলো এগোয় ধীরে ধীরে
আমিও হারিয়ে যাচ্ছি সময়ের ভীরে;

ঘড়ির কাঁটাগুলো ক্রমাগত ঘুরতে থাকবে টিক টিক টিক টিক
অনন্তকাল ধরে
থেমে যাব আমি তুমি তুই আর সে, আমরা সবাই
একটা সময়ের পরে;
আজ, কাল বা পরশু
যে কোন একদিন, ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক;

ভাগ্যিস জীবনের বালু-ঘড়ি আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে;
শেষ যাত্রার সময় আগে থেকেই জানা থাকলে
শুধু শুধুই মন খারাপ হতো আমাদের;
সদা প্রস্তুত থাকে বিজ্ঞজন
কাঁদে আপনজন,
আর বাকিরা হাসি খেলায় অভাজন।




জিজ্ঞাসা


জিজ্ঞাসা
- যাযাবর জীবন


তুই কিন্তু বই না
তবুও আমি তোর মনের প্রতিটা পাতা পড়তে পারি,

তুই কিন্তু চাঁদ না
তবুও আমি তোর সাথে জ্যোৎস্না মাখি,

তুই কিন্তু রাত্রি না
তবুও আমি তোর সাথে অন্ধকার হই,

তুই কিন্তু সূর্য না
তবুও আমি তোতে আলোকিত হই;

আমি কখনো রং-তুলি হাতে নেই নি
তবুও আমি তোকে আঁকি মনের ক্যানভাসে,
আমার হাতে কলম নেই,
তবুও আমি তোর প্রতিটা অনুভূতি লিখি কবিতার ছন্দে;

কেন?

জানিস কি তুই?

উঁহু!
কিছুই জানা নেই তোর;

তুই অন্ধকারের রঙ চিনিস না
তুই ভালোবাসার গান জানিস না
তুই বৃষ্টির কান্না শুনিস না
তুই জ্যোৎস্নার হাহাকার বুঝিস না,
তবুও কিছু না জেনে
কিছু না বুঝেই পাগলের মত ভালোবাসিস আমায়;

বোধের অবোধ্য এক মায়ায় জড়িয়ে থাকিস তুই
আমায় ঘিরে,
আমার কথা মনে হলে;

কেন?

বোধের অবোধ্য কিছু অনুভূতি খেলা করে আমায় ঘিরে
তোর কথা মনে হলে;

কেন?

আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

আমি ভালোবাসা বুঝি না;
তবুও কোথায় জানি এক কষ্ট কষ্ট সুখে মন ভরে থাকে
তোর কথা মনে হলে;

আচ্ছা! তোরও কি এমন লাগে?

কত প্রশ্নের উত্তরই তো থেকে যায় আমাদের জানার বাইরে;

এ প্রশ্নটার উত্তর খুঁজিস তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।



নানান ভাষা



নানান ভাষা
- যাযাবর জীবন


জানি না তোর মনের কথা
একদমই বুঝি না প্রেমের ভাষা,
ভাসতে ভাসতে জীবন
এক এক নদীর এক এক ভাষা;

নদীও তো নারীই
তাই না?
জলের ভাষা
স্রোতের ভাষা
নদীর ভাষা
তোর ভাষা বুঝতে গিয়ে কুলকুল ভাসছি আমি;

নারীর ভাষা আজো বুঝি নি
বড্ড অবোধ্য ঐ প্রেমের ভাষা;

কবে জানি ভাসতে ভাসতে টুপ করে ডুবে যাই!
কাঁদিস না কিন্তু সেদিন;

কান্নার ভাষা সইতে পারি না।


সবকিছুর কি বিনিময় হয়?




সবকিছুর কি বিনিময় হয়?
- যাযাবর জীবন


যতক্ষণ পাশে তুই ততক্ষণ ভরসা
আছে, কেও একজন আছে পাশে,
দিনের বেলায়
রাত বিরাতে
সুখে দুঃখে
ঘুমে জাগরণে
অসুখে বিসুখে আছে পাশে;

মাঝে মাঝে বড্ড বেশি আশাহত হয়ে যাই
মাঝে মাঝে মনে হয় ফুরিয়ে এলো সময়
মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ লাগে
অপ্রতুল হয়ে ওঠে বাতাস
শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়
মনে হয় এই বুঝি শেষ হলো সময়,
তখন, ঠিক তখনই একটি স্পর্শ মাথার ওপর
একটি হাত বুকের ওপর হাত বুলায়
অসম্ভব মায়ায়;
নিমিষেই আবার ফিরে আসি আমি
জলের গভীর থেকে
অচেনা পৃথিবী থেকে আমার পৃথিবীতে;

এই স্পর্শকে কি বলে?
শুধুই মায়া!
শুধু ভালোবাসা!
উঁহু,
মৃত্যুর গহীন কুয়ো থেকে যে স্পর্শ আমায় ফিরিয়ে আনে
তাকে পৃথিবীর কোন অনুভূতিতে ফেলব আমি?
আমার স্পর্ধা কোথায় তার বিনিময় দেবার?
তার থেকে এই ভালো,
তুই আমার "তুই" হয়ে থাক
শরীর ও মনের মাখামাখি স্পর্শে
আদরে, ভালোবাসায়, জীবন ভর,
আমাতে আর আমাতে মাখামাখি হয়ে।



বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১৮

গণ্ডমূর্খ



গণ্ডমূর্খ
- যাযাবর জীবন


আচ্ছা! চোখ পড়তে পারিস?
মন?
ভালোবাসা পড়তে পারিস কি?

সবাই ভালোবাসা পেতে চায়,
তবে কেও কেও ভালোবাসা দিতে জানে,
যেমন তুই;

কষ্ট করে কে চায় ভালোবাসা বুঝে নিতে?
অন্যের চোখ পড়ে?
কিংবা মন পড়ে?

আমি তো গণ্ডমূর্খ
পড়ালেখাই শিখি নি কখনো
চোখ পড়ব কি?
মন তো অনেক দূরে,
আমি গণ্ডমূর্খ, ভালোবাসাই বুঝি না;

এক এক জনের ভাবপ্রকাশ এক এক রকম;
তোরটা একদম চরম,
কথায়
কাজে
ভাবভঙ্গিতে
সবাইকে জানান দিয়ে;

অথচ দেখ মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলতে কোত্থেকে জানি জড়িয়ে ধরে আমায় একরাশ দ্বিধা;
তবুও কি আমার ভালোবাসা বুঝতে বাকি আছে তোর?

যখন তোর হাতে হাত ধরে বসে থাকি
আমার প্রতিটা লোমকূপ তোর লোমকূপ ভেদ করে বলে ভালোবাসি,
যখন তোর চোখে চোখ চেয়ে থাকি
তোর চোখের ভেতর দিয়ে তোর মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন কোষ খুলে খুলে ভালোবাসার পরশ রাখি,
যখন তুই আমার জড়িয়ে নিস বুকে
তোর হৃদয়ের প্রতিটা নিলয় অলিন্দ ঘুরে ঘুরে ভালোবাসা মেখে আসি;

কি বিশ্বাস হলো না?
তোর প্রতিটা শ্বেত-কণিকার সাথে কথা বল
তোর লোহিত কণিকাগুলো মাইক্রোস্কোপ এর নীচে রেখে দেখ;
সবাই যদি আমার ভালোবাসার পরশ যদি নাই পেয়ে থাকে
তবে কেন বারবার ফিরে আসিস আমার কাছে?

এটা কি ভালোবাসা নয়?

তবে তো আমি ভালোবাসতেই শিখি নি;
গণ্ডমূর্খের মাথায় ভালোবাসা ঢোকে না।











বুধবার, ২৭ জুন, ২০১৮

অপেক্ষার প্রহর



অপেক্ষার প্রহর
- যাযাবর জীবন



চিরকাল কেও থাকে না
না তুই, না আমি, না সে
কেও ইচ্ছে করে হারিয়ে যায়
কেও জীবনের বাস্তবতায়
কাওকে ওপরওয়ালা নিয়ে যায়;
হারিয়ে যাওয়াতে কারো হাত নেই
যে হারিয়ে যায় সে তো যায়
যে রয়ে যায় সে বেদনায় হারায়;

একদিন হয়তো তুই থাকবি না
একদিন হয়তো আমি;

আমি না থাকলে হয়তো তোর দিন হবে অন্ধকার
কিংবা তুই না থাকলে আমার;

যতক্ষণ তুই আছিস দিন আমার সূর্য
রাত আমার চাঁদনি
যতক্ষণ আমি, ততক্ষণ তোর সূর্য
না থাকলে রাত;

নিস্তব্ধতার কোলাহলে বধির অপেক্ষার প্রহর;
অপেক্ষা হারিয়ে যাবার,
তোর কিংবা আমার।








মন খুঁড়লে তুই



মন খুঁড়লে তুই
- যাযাবর জীবন


রাতের নির্জনতায় তুই নেই
নেই তুই লক্ষ তারার কোলাহলে
তুই নেই চাঁদে
নেই জ্যোৎস্নায়
নেই উড়ে যাওয়া জোনাক ডানায়;

অন্ধকার বাড়ছে
কালো হচ্ছি আমি
বৃষ্টি ঝরছে
ভিজছি আমি;

তোকে খুঁজতে উথাল পাথাল করেছি রাত
পেয়েছি অন্ধকার;
কোথাও নেই তুই বাস্তবতায়,
তবুও মন খুঁড়লেই সবার আগে তুই।



মুখোশ মুখে স্বপ্ন



মুখোশ মুখে স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন


মুখোশ মুখে হাঁটি
চোখ ভরা স্বপ্ন,
দুঃখগুলো ঢেকে রাখি
মানুষের মাঝে আনন্দ বাটি;

একসময় পাহাড়ে একটা মেয়ে দেখেছিলাম
বুনো, পাহাড়ি
প্রকৃতির মত নির্মল
ঝর্ণার মত উচ্ছল
চোখ-জুড়ানো সুন্দর;
মন আনচান করে উঠতেই স্বপ্ন এলো চোখে,
ঘর বাধব, পাহাড়ে
আকাশ থেকে জ্যোৎস্না পাড়ব
ঝর্ণায় অবগাহন
বুনো ফুল ছিঁড়ে সাজাবো তারে
আমিও বুনো হয়ে যাব
পাহাড়ি মেয়েটাকে ভালোবেসে, পাহাড়ে;

অনেক দিন বাদে সব গুছিয়ে মেয়েটার খোঁজে গিয়েছিলাম পাহাড়ে
মেয়েটা তখন পাহাড় চুড়ায়
দেখলাম আমার স্বপ্ন-ঘর থেকে বের হয়ে আসছে
কোলে ফুটফুটে এক শিশু
দেব-শিশু, আহারে;

আমায় দেখতেই ফিক করে হেসে দিলো
দৌড়ে ঘরে চলে গেলো
হাত ধরে একজনকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলো
আমার স্বামী;

স্বপ্ন থেকে বাস্তবে নেমে এলাম
মনটা ভেঙে গেলো
মন কাঁদতে থাকলো
আমার মুখোশ পড়া মুখ হাসতে থাকলো
অভিনন্দন জানিয়ে চলে এলাম;

এখনো পাহাড়ে যাই
কাওকে খুঁজি না
শুধু পাহাড় দেখি পাহাড়ে
মন কাঁদে আহারে;

তারও অনেক দিন পরে সাগর পারে একটা মেয়ে দেখেছিলাম
ঢেউ এর মত উচ্ছল
প্রকৃতির মত নির্মল
চোখ-জুড়ানো সুন্দর
দেহাতী, বড্ড অন্যরকম
একদিন, দুদিন, তিনদিন
একসাথে ঘুরে বেরিয়েছিলাম বালুকাবেলা জুড়ে
সাগর-স্নান ক্ষণে ক্ষণে
বড্ড ভালো লেগে গিয়েছিলো আমার
তার কি ভালো লাগে নি?
হ্যাঁ লেগেছিল, তার চোখের ভেতর তাকাতেই সাগর দেখেছিলাম
মন আনচান করে উঠতেই স্বপ্ন এলো চোখে,
ঝুপড়ি একটা ঘর বাধব, সাগর পারে
রাতের বেলায় বালুকাবেলায় শুয়ে থাকব তারার আকাশের নীচে
চাঁদনি রাতে জ্যোৎস্না পাড়ব আকাশ থেকে
সাগরে অবগাহন
জোনাক দিয়ে সাজাবো তারে
দেহাতী মেয়েটাকে ভালোবেসে
আমিও মিশে যাব সাগরে;

অনেক দিন বাদে সব গুছিয়ে মেয়েটার খোঁজে গিয়েছিলাম সাগর পারে
দেখলাম মেয়েটা আমার ঝুপড়ি-ঘর থেকে বের হয়ে আসছে
ঢেউ আছড়ে পড়েছে সাগরে
কোলে ফুটফুটে এক শিশু
দেব-শিশু, আহারে;

আমায় দেখতেই ফিক করে হেসে দিলো
দৌড়ে ঘরে চলে গেলো
হাত ধরে একজনকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলো
আমার স্বামী;

স্বপ্ন থেকে বাস্তবে নেমে এলাম
মনটা ভেঙে গেলো
মন কাঁদতে থাকলো
আমার মুখোশ পড়া মুখ হাসতে থাকলো
অভিনন্দন জানিয়ে চলে এলাম;

এখনো সাগরে যাই
কাওকে খুঁজি না
শুধু ঢেউ দেখি সাগরে
মন কাঁদে আহারে;

তারপর একসময় তুই এলি জীবনে
চাঁদ এলো, চাঁদনি এলো
স্বপ্ন এলো চোখে
খুব হঠাৎই ঝড় এলো জীবনে,
স্বপ্ন ভঙ্গ হলো
তুই পাড়ি দিলি সাত সমুদ্দুর
ওখানে টাকার পাহাড়
ওখানে সুখের সাগর
ওখানে তোর স্বর্গ
আমি নিদ্রাহীন নরকে;

এখনো দেখা হয় আমাদের
কালে ভদ্রে
যখন তোর ইচ্ছে সাত-সাগরের ওপার থেকে
তুই'ই দেখা করতে আসিস
আমি মনে মনে কাঁদি
আর মুখোশ পড়া মুখে তোর সামনে বসে হাসি
তোকে যে বড্ড ভালোবাসি;

কয়েকদিন খুব মাখামাখি
তারপর আবার উড়াল-ডানায় তুই
তোর সুখের স্বর্গে
আমি মুখোশ মুখে হাঁটি
কাঁদি, হাসি;

এখন আর চোখ স্বপ্ন দেখে না
এখন আর মন হাসে না
যখন খুব কান্না পায় তখন মুখোশ মুখে হাসি;
মুখোশের আড়ালে কত কিছুই না করা যায়?
কার এত সময়! মুখোশ খুলে কান্না দেখার।




দাম্পত্যের প্রকারভেদ



দাম্পত্যের প্রকারভেদ
- যাযাবর জীবন


স্বামী ও স্ত্রী
জড়াজড়ি, যেভাবে খুশি
যদি ভালোবাসা থাকে,
আর নয়তো মাঝে কোলবালিশ
দুজন উল্টো মুখী;

দাম্পত্য এক এক জনের এক এক রকম,
সত্যটা জানে অন্ধকার বিছানা
আর স্বামী ও স্ত্রী;

দিনের আলোয় লোকদেখানো অভিনয়,
সত্য কিংবা মিথ্যা সম্পর্ক
জানে স্বামী ও স্ত্রী।




রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮

ঠোঁট ভেজানো চুমু




ঠোঁট ভেজানো চুমু
- যাযাবর জীবন


কাঁদছে মেঘ মন খারাপ
ঝরছে আকাশ ঝরছে আজ
ভিজছি আমি বৃষ্টি মেখে
তুই ভিজছিস কান্না চোখে;

প্রেম করবি?
তবে আয়, চুমু খা; ঠোট ভিজিয়ে।




কে শেখাবে ভালোবাসা?





কে শেখাবে ভালোবাসা?
- যাযাবর জীবন


কেও দিন বললে কাজ বোঝে কেও সূর্য
আমার খাদ্যাহ্নেষণ তোর দিবা স্বপ্ন,
রাত বললে কেও স্বপ্ন বোঝে কেও অন্ধকার
আমার ঘুমচোখ তোর প্রেম প্রহর,
কারো কাছে বৃষ্টি মানে কবিতা কারো চোখে কান্না
আমার বৃষ্টি বিলাস তোর মন খারাপ,
চাঁদে কারো মন উদাস কারো জ্যোৎস্না বিলাস
আমি চাঁদনি দেখি তুই গভীর ঘুমে,
চোখ কারো কথা কয় কারো চোখে কান্না রয়
তোর চোখে প্রেমের ভাষা আমার পাথর চোখ;

তোর হৃদয় ভরা অনুভূতি, আমি প্রেম বুঝি না
তবুও তোর কথা মনে হলেই কি এক কষ্ট কষ্ট সুখ
আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

ঠোঁট বলতে আমি কথা বুঝি তুই বুঝিস চুমু
তবুও যখন ঠোঁটে ঠোঁট রাখিস কি এক অন্যরকম সুখ
আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

আমিও তোর মত ভালোবাসতে চাই
তোকে ভালোবেসে;

ভালোবাসা আমায় কে শেখাবে?





ঠোঁটের বাঁক




ঠোঁটের বাঁক
- যাযাবর জীবন


অনুভূতির প্রকাশ ঠোঁটের বাঁকে;

তোর ঠোঁটের প্রতিটা বাঁক আমার চেনা
হাসিতে, খুশিতে
রাগে, অভিমানে
দুঃখে, কান্নায়
ভালোবাসা ও চুমুতে
তোর প্রতিটা ঠোঁট বাঁকানোর গল্প আমার জানা;

অনেকগুলো দিন দূরে ছিলাম
অনেকগুলো রাগ ছিলো তোর মনে
অনেক দুঃখ, অনেক কষ্ট,
অনেক দিন অভিমানে ছিলি ঠোঁট বাঁকিয়ে,

অনেক দিন চুমু খাওয়া হয় নি
এবার আয় অভিমান ভেঙে,
ভালোবাসার চুমু খেয়ে যা ঠোঁট বাঁকিয়ে।



গন্তব্য, পথের




গন্তব্য, পথের
- যাযাবর জীবন


পথটা নেমে গেছে অনেক নীচে
এবার আমারও নামার সময় হলো,
গন্তব্য জানা আছে
তবুও মানতে চায় না মন,
ষ্টেশন দেখা যায় ঐ-তো
নামতে চায় না কেও
তবুও নেমে যেতে হবে ট্রেনটা থেমে গেলে;

মেঘ দেখছিস? ঐ দূরে
ঘন হয়ে জমছে পাহাড়ের কোলে কোলে
আমি নেমে গেলেই নামবে কান্না হয়ে
তুই কাঁদিস না কিন্তু ট্রেন থেমে গেলে।





মেঘের চক্র




মেঘের চক্র
- যাযাবর জীবন


মেঘগুলো উড়ছে
মেঘগুলো ঘুরছে পাহাড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে
আর উড়াল ডানায় মন পাহাড়, মেঘ, আকাশ ছাড়িয়ে
অনেক অনেক দূরে
তোর কাছে;
তুই ঘুরছিস, আমাকে ঘিরে;

ভালোবাসা ঘুরছে চক্রাকারে আমাদের দুজনকে ঘিরে
মিলন হবে কি?
সময় বলে দেবে।




নেমে যাবার পথ



নেমে যাবার পথ
- যাযাবর জীবন


পাহাড় বেয়ে বেয়ে নেমে গেছে পথ
পাহাড় বেয়ে ঝর্ণা
মেঘ বেয়ে বৃষ্টি
চোখ বেয়ে কান্না;

কেন জানি পাহাড় দেখলেই নেমে যেতে ইচ্ছে করে আমার
কোথায় তা জানি না,
একদিন আমি ঠিক নেমে যাব জীবন বেয়ে
সমাপ্তি জানা নেই আমার
না পথের না সময়ের;

শুধু জানা আছে পথটা নেমে যাবার
বেয়ে বেয়ে
জীবনটা থেমে যাবার
পাহাড় থেকে মাটির ঘরে।



একলা চেয়ার




একলা চেয়ার
- যাযাবর জীবন


দুটি চেয়ার মুখোমুখি
কারো অপেক্ষায়
একটি পাহাড় ঐ দূরে
দাঁড়িয়ে একঠাঁয়;

একদিন একটা চেয়ারে আমি ছিলাম
অন্যটায় তুই
সামনাসামনি, মুখোমুখি
মাঝে চায়ের মগ, একটি;
এক চুমুক আমার
মগের হাতল ঘুরিয়ে অন্য চুমুক তোর,
যেখানে চুমুক দিয়েছি আমি,
তুই নাম দিয়েছিলি চা চুমু;

আজ চেয়ার দুটো ফাঁকা
আমরা দুজন একা,
পাহাড়টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে, কালের সাক্ষ্য হয়ে
ভালোবাসা ও বিচ্ছেদের,
তোর আর আমার।





তাহার খোঁজে





তাহার খোঁজে
- যাযাবর জীবন


চল রে মন পাহাড়ে
নীলাকাশ আহারে
সবুজ সবুজ পাইন বন
খুঁজে ফিরি তাহারে।




আদর গন্ধ


আদর গন্ধ
- যাযাবর জীবন



বহু বহু দিন হয়ে গেছে
অবহেলা অনাদরে মন করে দিয়েছি বন্ধ
তবুও এখনো কেন অনুভবে ভালোবাসা?
আর শরীর জুড়ে তোর আদর আদর গন্ধ।




চিরঘুম



চিরঘুম
- যাযাবর জীবন


একদিন জন্ম
সকলের হাসি, নবজাতকের কান্না;

একসময় শিশু, একদিন শৈশব
গড়াগড়ি, খেলাধুলা;

একসময় কিশোর, একদিন কৈশোর
পড়ালেখা জীবন, ছটফটে মন;

একসময় দুরন্ত, একদিন যৌবন
প্রেমের অনুভব, মন উচাটন;

একসময় কাঁধে জোয়াল, একদিন সংসার
সন্তান পরিবার, ছুটন্ত জীবন;

একসময় অবসর, একদিন প্রৌঢ়ত্ব
থিতু হয়ে বসা, ডাকের অপেক্ষা;

একসময় ওপারের ডাক, একদিন বার্ধক্য
সকলের কান্না, চিরঘুমে বৃদ্ধ;

জীবনচক্র মানুষের
জীবনচক্র প্রাণীকুলের।

কত রাত ঘুমাই নি আমি
আমিই জানি,
এক একদিন বড্ড ইচ্ছে করে খুব ঘুমাই
একবারে চিরঘুমে হলেও;
সবার কি আর জীবনচক্র পূর্ণ হয়?
সবাই কি আর মানুষ হয়?
এক এক সময় মনে হয় আমি বোধহয় মানুষ নই,
মানুষ হলে ছেলেবেলা থাকত
হাসি থাকত
কান্না থাকত
আনন্দ থাকত
বেদনা থাকত
প্রেম থাকত
ভালোবাসা থাকত,
মানুষ হলে কিছু একটা তো অনুভূতি থাকত!
মানুষ হলে চোখে ঘুম থাকত;

কত রাত ঘুমাই নি আমি?
আমি জানি
আমিই জানি,
মানুষ জীবনচক্র পূর্ণ করতে চায়
আমি চাই ঘুম,
হোক না তা "চিরঘুম";

তারপর দেখে নেব ওপারের জীবন
জেনে যাব ওপারের জীবনচক্র।


চিরসত্য



চিরসত্য
- যাযাবর জীবন


তোর জন্য সকাল হয়
নীল নীল আকাশ
দুপুর থেকেই বেলা ঢলা
মন খারাপের বাতাস

সন্ধ্যা হলে তোর জন্য
মন কেমন করে
রাত হলেই মন খারাপে
চোখে লবণ ভরে

তোর জন্য চাঁদ ওঠে
আকাশ জ্যোৎস্না হয়
কখন তোকে হারিয়ে ফেলি
মনে বড় ভয়

মন খারাপের বেলা বয়ে যায়
হয় না কোন কাজ
তোর জন্য চোখ কান্না
বৃষ্টি হচ্ছে আজ

অনুভবে প্রতিদিন তুই
সকাল দুপুর রাতে
অনেক বেশি ভালোবাসি
মন খারাপের রাতে

দূর থেকে অনুভবে
ভালোবাসা বুঝিস?
এদিক ওদিক তাকাস কেন
কাকে তুই খুঁজিস?

হঠাৎই ভীষণ মন খারাপ তোর
অনুভবে যদি বুঝিস
চিরদিন থাকে না রে কেও
সত্যিটা মেনে নিস।





মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮

ভালোবাসার কাটাকুটি



ভালোবাসার কাটাকুটি
- যাযাবর জীবন


একটা মেয়ে ছিল
চোখ দুটো মায়া মায়া
চেহারায় লাবণ্যতা ভরা
সারাক্ষণ কি এক চিন্তায় থাকে, বড্ড মনমরা;

খুব বেশী ভালোবাসতো আমায়
বলতে পারে নি কখনো, মুখ ফুটে
মেয়েটা ছিল বড্ড বোকা
আর মায়া মায়া চোখদুটো, বিষণ্ণতায় ভরা;

আমিই কি কম ভালোবাসতাম তাকে?
আমিও কোথায় বলতে পেরেছি?
বোকার রাজত্বে আমিতো আরো এক কাঠি বারা;

ভালোই হয়েছে
দুজনারই উচিৎ শিক্ষা, মুখ ফুটে বলতে না পারা;

বলতে পারা আর না পারায় কাটাকুটি
দুজন দুজনার অপেক্ষায়, কাটাকুটি
দুজন দুজনার দহনে, কাটাকুটি
দুজন দুজনকে ভেবে, কাটাকুটি
দুজন দুজনার অনুভবে, কাটাকুটি
কাটাকুটি, ভালোবাসা আর ভালোবাসায়;

জীবন কেটে যাচ্ছে আমাদের, কাটাকুটি খেলায়
অঙ্ক মেলে না;
না ভালোবাসার, না জীবনের
তবুও আমরা ভালোবেসে যাই দূর থেকে কিংবা কাছে থেকে
প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে;

বাইরে চেয়ে দেখ!
কেমন মন ভেজানো বৃষ্টি নেমেছে;
আজ বড্ড বলতে ইচ্ছে করছে
তোকে ঝুম বৃষ্টির মত ভালোবাসি
তোকে ভালোবাসি উথালপাথাল ঝড়ের মত
টর্নেডোর মত, ভূমিকম্পের মত;
নাহ! থাক;
বলতে হবে না,
কাটাকুটি খেলায় বড্ড কষ্ট হবে তোর উত্তর দিতে
ঝুম বৃষ্টির মত ভালোবাসতে
সাইক্লোনের মত ভালোবাসতে
যদি ভুলক্রমে বলেই ফেলিস তাহলে টর্নেডো নেমে আসবে তোর জীবনে;

তার থেকে এইই ভালো,
আমরা চুপিচুপি ভালোবেসে যাই মনেমনে
বলা আর না বলার কাটাকুটি খেলি সংগোপনে;

তুইও জানলি না আমার ভালোবাসার কথা
আমিও ভেবে নিলাম, তুই ভালোবাসিসই নি আমায়;

এ এক অদ্ভুত ভালোবাসার কাটাকুটি খেলা
তোর আর আমার।






সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮

শুদ্ধ ভুল




শুদ্ধ ভুল
- যাযাবর জীবন



একদিন ভুল করে তোর দিকে তাকিয়েছিলাম
তারপর আরেকদিন
তারপর আরেকদিন
তারপর ক্রমাগত
তারপর থেকে আমি অন্ধকারে হারিয়েছিলাম;
প্রেম তো অন্ধকার, তাই না?

একদিন আমি ভুল করে তোর চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম
তারপর আরেকদিন
তারপর আরেকদিন
তারপর ক্রমাগত
তারপর তোর চোখে অন্ধ হলাম;
অন্ধ চোখে কি অন্য কারো দিকে তাকানো যায়?

প্রথম প্রথম তোর খুব অস্বস্তি হতো
কেও সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কার ভালো লাগে?
কেও সারাক্ষণ পিছু হাঁটলে কিভাবে দিন চলে?
একদিন, দুদিন, তিনদিন
তারপর একদিন তুই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলি
রুখে দাঁড়িয়েছিলি,
সে দিনটার কথা আমার এখনো খুব মনে আছে
তোর মনে আছে কি?
রেগে মেগে একাকার সেদিন তুই হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে
চিৎকার করে উঠলি
আপনার সমস্যা কি?
কেন সারাক্ষণ পিছু নিয়ে থাকেন?

আমি চুপ মুখে তোর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম
কতক্ষণ মনে নেই
তুই আবার ঝাঁঝিয়ে উঠলি, কি ব্যাপার? বোবা নাকি?
আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট গলায় একটি কথাই বলেছিলাম - "ভালোবাসি";

তুই থমকালি
চমকালি
তারপর উল্টো পথে হাঁটা দিলি;

পরদিন আবার চোখাচোখি
এবার আমিই এগিয়ে গেলাম
স্পষ্ট গলায় বললাম - "ভালোবাসি"
তারপর হাঁটা দিলাম উল্টোপথে;

তারপর সময় অপেক্ষার রথে
একদিন
দুদিন
তিনদিন
ক্রমাগত অপেক্ষার সূর্য রাতের তারায়
......
......
......

কতদিন পরে হার মেনেছিলি?
মনে আছে?

তারপর কোন এক চাঁদ রাতে চাঁদনি এলো
চোখে চোখে
মনে মনে
অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকা দুজন দুজনাতে,
সেদিন তুই কোন কথা বলিস নি
শুধু ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেলি;

তারপর অনেকদিন ধরে রাতের তারা সূর্য হলো
তুই আসতেই জীবনে জ্যোৎস্না এলো
খুব বেশীই অন্যরকম ছিল সে দিনগুলি
হাসি খুশি ঝর্ণা নদী
উচ্ছল চপল বৃষ্টি নূপুর
ভালোবাসায় টইটুম্বর আদর সোহাগ টাপুর টুপুর
মনে পড়ে কি তোর?

আচ্ছা আজ চাঁদের দিকে তাকালে কি তোর মনে জ্যোৎস্না আসে?
আমি কিন্তু অমাবস্যা দেখি
আকাশের দিকে তাকালে তুই নীল দেখিস?
আমি কিন্তু রাত দেখি,
রংধনু দেখি নি সেই কতদিন হয়ে গেছে
বৃষ্টিতে তুই হাসিস নি বলে,
আচ্ছা তোর ওখানে বৃষ্টি হলে কি আমার কথা মনে পড়ে?
কিংবা খুব হঠাৎ চোখ ফেটে কান্না এলে?

তোকে নিয়ে আমার অন্যরকম এক স্বপ্ন ছিল চাঁদ থেকে সূর্য অবধি
অথচ দেখ! তুই চাঁদনি হয়ে রাত্রি হলি;
আর তুই রাত হতেই আমি অন্ধকার আপন করেছি;

ভাগ্যিস সেদিন ভুল করে তোর চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম
ভাগ্যিস সেদিন ভুল করে তোতে মন হারিয়েছিলাম
তাই তো ভালোবাসা শিখলাম।




আয়না জীবন



আয়না জীবন
- যাযাবর জীবন


মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়াই
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখি
মাঝে মাঝে অন্ধকারে
মাঝে মাঝে আলো জ্বেলে
কখনো নিজেকে খুলে খুলে

বড্ড ওচেনা আয়নার ঐ লোকটা
বড্ড বেশী অচেনা
মানুষ চিনবে কি করে? আমি নিজেই ওকে চিনি না;

মাঝে মাঝে আমি হো হো করে হাসি
যখনই আয়নায় চোখ পড়ে দেখি লোকটা ঝরঝর কাঁদছে
বাস্তব জীবনে মাঝে মাঝে আমার বড্ড মন খারাপ লাগে
অথচ অনুভূতি ছাপ ফেলে না আয়না জীবনে,
মাঝে মাঝে যখন এ ও ভালোবাসার কথা বলে
আমার চোখ কেন জানি পাথর বনে যায়
অথচ আয়নার দিকে চোখ পড়লেই বড্ড বেশী ঝাপসা দেখি
কাঁচে বোধহয় আর্দ্রতা খুব বেশী
আমার আবার অনুভূতি আছে কি?

আমার এক একবার খুব ইচ্ছে
আয়নার ভেতরে ঢুকে পড়তে
আমা থেকে ও জীবনটা বড্ড অন্যরকম
ওখানে হাসলে কেও দেখার নেই
কাঁদলে কেও নেই চোখ মোছার
ভালোবাসলে কেও নেই আপন করে নেবার
ওখানে কেও বসে নেই ভালোবাসায় দুঃখ দেবার
একবার ওখানে ঢুকতে পারলে আর ফিরব না আয়নার এপাশে
আমায় খোঁজার কেও নেই আয়নার এপাশে কিংবা ওপাশে।





লুকোচুরি ভালোবাসা




লুকোচুরি ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


প্রতিবার আমাদের দেখা হলেই
তোর একই জিজ্ঞাসা,
- "ভালোবাসো আমায়?"

আমি কখনো উত্তর দেই না
তুই আমার চুপ মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়িস,
আমি মনে মনে জপতে থাকি
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি;

মাঝে মাঝে তুই খুব অভিমান করিস
মাঝে মাঝে রাগ
মাঝে মাঝে কথা বন্ধ কিছু দিন
তারপর আবার কোন একদিন ঠিক সামনে এসে
বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাসি মুখে একই প্রশ্ন
- "ভালোবাসো আমায়?"

আমি তোর ছেলেমানুষি দেখি
মনে মনে হাসি আর
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে লক্ষ কোটি বার বলতেই থাকি
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি;

এটা আমাদের একটা খেলা
আমি মনে মনে মন করেছিলাম,
মুখে কিছুতেই বলব না - "তোকে কত পৃথিবী ভালোবাসি";

কিন্তু তুই'ই বল! কতবার, কতভাবে তোকে বুঝিয়েছি - ভালোবাসি
ইশারা, ইংগিতে
চুমুতে, আদরে
ঘুমে, জাগরণে
তবুও আমার মুখ থেকে শোনার তোর সে কি আকুতি!

আচ্ছা! বল তো, কিভাবে বললে বুঝবি ভালোবাসি
আচ্ছা থাক
বলতে হবে না
সব কথা বলতে হয় না

আচ্ছা শোন!
শোন না রে!
বুকের ভেতর কান পেতে শোন,
থাক শুনতে হবে না
সব কথা শুনতে হয় না

থাকুক না কিছু কথা
থাকুক কিছু অনুভব
অজানা
অচেনা
নতুন
অন্যরকম
অন্যকিছুর সূচনা;

এক নতুন ধরণের লুকোচুরি ভালোবাসা;

মনে মনে লক্ষ কোটি জপ
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি
শুধু তোকেই যে ভালোবাসি!






ভালোবাসি চল


ভালোবাসি চল
- যাযাবর জীবন


বাইরে বৃষ্টি তুমুল
ভিজবি?
চল

প্রেম নাই বৃষ্টিতে
ওখানে শুধুই জল
ভালোবাসা মেশাবি?
ভিজবি?
তবে চল

সবাই বৃষ্টি পায় না
সবাই বৃষ্টি চেনে না
মন ভালোবাসা হলে তবেই না জল
ভালোবাসিস?
তবে চল

সবাই ভালোবাসতে পারে না
সবাই ভালোবাসায় কাঁদতে পারে না
তোর চোখে কেন এত জল?
অনেক ভালোবাসিস বুঝি?
তাহলে একবার চিৎকার করে বল
"ভালোবাসি"
ঝুম বৃষ্টির মত, মাঠ ঘাট ভাসিয়ে দিয়ে
হো হো ঝড়ের মত, সব ওলোটপালট করে দিয়ে
ভূমিকম্পের মত, পৃথিবী নাড়িয়ে দিয়ে;

তারপর
দুজন ভালোবাসায় ভিজি চল।





শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮

ভালোবাসি, ভালোবাসি আর ভালোবাসি



ভালোবাসি, ভালোবাসি আর ভালোবাসি
- যাযাবর জীবন


কেন যে এত ভালোবাসা?
কেন যে এত এত প্রেম! এত কাছে আসা!

কারো কারো জন্মই হয় ভালোবাসা দিতে
যেমন তুই,
কারো কারো জন্মই হয় ভালোবাসা পেতে
যেমন আমি;

স্বার্থপরের মত শুধু নিয়েই যাচ্ছি
অথচ দেখ! দেবার বেলায় আমার শুধুই অবহেলা
খুব হেলাফেলা;
অথচ তুই কি জানিস কতটা ভালোবাসি তোকে?
তুই নাই জানলি
কি যায় আসে?

দেওয়া ও নেওয়ার মাপকাঠিতে একদিন আমার জয় হবেই
ভালোবাসায় হেরে গিয়ে, কিংবা হারিয়ে দিয়ে;
দুটোতেই তো আমার জিত, তাই না রে?
আজ না হয় তোকে জিতিয়েই দিলাম
আজ না হয় আমি হারলামই
কি যায় আসে?

কেন এত ভালোবাসিস আমায়, দিনের বেলায়?
বলতে পারিস?
কেন এত ভালোবাসিস আমায়, সন্ধ্যে বেলায়?
বলতে পারিস?

কি ভাবে পারবি বল?
রাতে যখন তুই ঘুমিয়ে যাস
রাতে, রাত যখন ঘুমিয়ে যায়
আমি তোর কানে কানে প্রতিদিন বলে আসি
ভালোবাসি, ভালোবাসি আর ভালোবাসি।








টাকা টাকা জপ




টাকা টাকা জপ
- যাযাবর জীবন


টাকায় সুখ
টাকায় অসুখ
আমরা সুখ কিনতে যাই টাকার বিনিময়ে
কোথায় সুখ?
বস্তা বস্তা টাকায় কিনে আনি পাহাড় পাহাড় অসুখ;

সুখী কে?
যার টাকা আছে?
উঁহু!
তাহলে ঐ যে দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোটে না যে পরিবারের
তারা কি করে নিশ্চিন্তে ঘুমায় রাতে!
স্বপ্ন দেখে
হাসে, খেলে,
বাবা-মা, ভাই-বোন ভাগ করে সীমিত খাবার খায়
ভাঙা জানালায় চাঁদ দেখে
বৃষ্টিতে ভেজে
জ্যোৎস্নার গান গায়
জোনাকের মালা পড়ে
অন্ধকার আপন করে কি এক আশ্চর্য অনাবিল শান্তিতে স্বপ্ন জগতে চলে যায়;
তাদের টাকা কোথায়?
এরা সুখী না?
কি জানি?
আমি বুঝি না;
আমি শুধু দেখি অভাবের শেকলে শৃঙ্খলিত পারস্পরিক বোঝাপড়ার এক সুখী সংসার;

আর ঐ যে!
ও বাড়িতে গাছে গাছে টাকা ফলে
ঝাড়া দিলে লক্ষ কোটিতে ঝরে
সাকুল্যে ৪ জন মানুষ, খাবার টেবিলটা ঠিকই ষোলো চেয়ারের
টেবিলের এপার থেকে ওপাড় পর্যন্ত বাটি বাটি তরকারির পাহাড়
আরে কানায় কানায় টেবিল ভরা না থাকলে কি আর মুখে খাওয়া রুচে?
পেটে কতটুকু আটে?
চোখের ক্ষুধার কি আর শেষ আছে?
বাবার পেটের ব্যামো, জাউ এর বাটি টেনে নেন
মা স্বাস্থ্য সচেতন, ওটসের সাথে টক দই
তিন মনি ডায়াবেটিক ছেলেটা চার হাত পা দিয়ে হামলে পড়ে টেবিলের ওপর,
আর সাড়ে তিন মনি মেয়েটা জুলজুল চোখে খাবারের দিকে চেয়ে থাকে
আহা! কিছু খেতে পারে না তবুও ফুলে ফেঁপে একাকার থাইরয়েডের কল্যাণে
টেবিলে মিষ্টি আর ডেজার্ট চার পাঁচ পদের
প্রতি বেলায় টেবিলে আসে প্রতি বেলায় শোভা বাড়ায় টেবিলের
চার ডায়াবেটিস রোগী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে;
এরা কারো সাথে কেও কথা বলে না কারণ ছাড়া
কারণের মাঝে প্রধান হলো টাকা
অসুস্থতা, বিদেশের নামী দামী হসপিটালে চিকিৎসা
আর একাকীত্বে স্বপ্নহীন নির্ঘুম রাত পার;
টাকার পাহাড়ে শুয়ে সুখী এরা?
কি জানি?
আমি বুঝি না;
আমি তো দেখি টাকার বলাৎকারে জন্ম নেয়া এক অসুস্থ সংসার;

টাকা সুড়সুড়ি দেয়
সুখের স্বপ্ন দেখায়
তারপর অসুখে ডুবিয়ে দেয়
স্বার্থের সংঘাতে,

তবুও টাকা টাকা জপে আমাদের দিনরাত কাটে।



মৃত্যুকে ছুঁয়ে দিয়ে



মৃত্যুকে ছুঁয়ে দিয়ে
- যাযাবর জীবন


মৃত্যু দেখেছে কে?
কালো কালো রাত রাত
আগুণ আগুণ তীব্র গরম
বরফ বরফ হিম শীতল
কোথায় জানি একটা ঝড় হচ্ছিল
খুব বড় কোন ঝড়
স্বত্বা'কে এলোমেলো করে দেয়া ঝড়
আমায় উলটেপালটে একাকার করে নিচ্ছিল
আকাশ বাতাস প্রকৃতির মাঝে,
কেমন যেন এক চরম অশান্তি সত্ত্বার ভেতর
বিস্ফোরণ মাথার ভেতর
তারপর অন্ধকার, অতল গহ্বর;

মৃত্যু কি ছুঁয়ে দিয়েছিল আমায়?
কিংবা আমি মৃত্যুকে ছুঁয়ে দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম
কে জানে?
খুব হঠাৎ, খুব হঠাৎই বুকের ভেতর কেমন একটা পাহাড় চাপ
যেন সাগরের অতলে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল কেও
দম বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে কে যেন জবানে শাহাদাহ্ পড়িয়ে দিল
জিহ্ব নড়ছিল ক্রমাগত
"আশহাদু আল্লাহ্‌ ই লাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহু"
ক্রমাগত, ক্রমাগত
কতক্ষণ জানি না,
তারপর হঠাৎ করেই যেন বুকের ওপর থেকে পাহাড় সরে গেলে
অতল অন্ধকার থেকে ভুস করে ভেসে ওঠলাম
তারপর মনের অজান্তেই দু-চোখ জড়িয়ে এক দীর্ঘ শান্তির ঘুম
মৃত্যু কূপ থেকে ডুবিয়ে উঠিয়ে এনেছে ওপরওয়ালা
মৃত্যু দর্শন করিয়ে,
কারণ তো নিশ্চয়ই কিছু একটা আছেই
হয়তো এখনো কিছু কাজ বাঁকি রয়ে গেছে
কিংবা হয়তো এখনো সময় হয় নি ওপার যাত্রার;

তবে মৃত্যুর গন্ধ বসে গেছে আমার স্বত্বায়
মৃত্যুর পথ মাড়িয়ে এসেছে আমার দেহ
এরপর আর চিনতে ভুল হবে না ওপার যাত্রার পথ,
ওটা মেঠো পথ নয়
নয় পিচ-ঢালা পথ
সবুজ ঘাস বেছানো নেই ও পথে
লক্ষ তারার মেলা নেই মৃত্যুর আকাশে,
ও পথে আলো নেই, কেমন এক ছায়া ছায়া অন্ধকার
ও পথটা এক বারই ডুব দেয়ার
তারপর টেনে নেয় চিরঘুমে;

পরের বার ডুবে যেতে যেতে শাহাদাহ্ টুকু যাতে জবানে থাকে
এর থেকে বেশী আর কি চাইবার আছে?








একবার মানুষ হতে হবে



একবার মানুষ হতে হবে
- যাযাবর জীবন


মৃত্যু নিয়তি
কেও কেও খুব ধীরে এগোয় মৃত্যু কুয়োয়
ওপরওয়ালা কাওকে বা একবারে টেনে নেয় মৃত্যু গুহায়;

আমি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ডুবছিলাম মৃত্যু কুয়ায়
খুব ধীরে ধীরে
বেশ বুঝতে পারছিলাম শরীরের সাথে স্বত্বার একটা একটা করে সূতা ছিঁড়ছিলো
খুব ধীরে ধীরে শরীর থেকে আত্মার তলিয়ে যাওয়া দেখতে পারছিলাম
অন্ধকার অতলে,
কতক্ষণ দমবন্ধ ছিল কতক্ষণ মনবন্ধ ঠিক মনে নেই;
তারপর খুব হঠাৎই কেও যেন ঠেলে দিল পানির ওপরে
ভুঁস করে ভেসে উঠলাম কুয়ার অতল অন্ধকার থেকে
এক পৃথিবী বাতাস সমস্তটা যেন টেনে নিচ্ছিল ফুসফুস
তারপর চোখ ধাঁধানো আলো
কান্না চোখে অনেকগুলো প্রিয় মুখ,
আছে! ওরা আছে! আমার খুব কাছাকাছি
আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে,
অনেক যুদ্ধ হয়েছে শরীরের সাথে
অনেক যুদ্ধ হয়েছে মনের সাথে
প্রিয়জনেরা চারিদিক ঘিরে আছে
আহ! শান্তি! এবার একটা লম্বা ঘুম;

ওপরআলা কাওকে কাওকে মৃত্যুর রূপরেখা দেখিয়ে আনেন
কিংবা মৃত্যুর স্বরূপ দেখান এক ঝলক;
তারপরের জীবন কি হবে তা নির্ধারণ করতে হয় আমাদেরকেই;

খুব সুস্পষ্ট ইংগিত সময় ফুরিয়ে যাবার।
এবার মাটি হবার আগে একটিবার মানুষ হতে হবে
তবেই না মানব জীবনের সার্থকতা,
নতুবা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ সৃষ্টি ধ্বংস হচ্ছে
কোটি কোটি পশুর মৃত্যু হচ্ছে,
কারণে আর অকারণে;
ওপরওয়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন
জ্ঞান বুদ্ধিতে সর্বশ্রেষ্ঠ করে, বিশেষ কারণে;
কেও বোঝে,
কেও বুঝেও চোখ বন্ধ করে চলে যায়, না ফেরার দেশে;

মৃত্যু নিয়তি
সবাইকে যেতেই হয়
মানুষ হয়ে কিংবা পশু হয়ে।