শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

মনের এপিঠ ওপিঠ



মনের এপিঠ ওপিঠ
- যাযাবর জীবন


পিপাসার্ত ছিলি তুই
আমি এক গ্লাস পানি দিলাম ভরে
তোর তিরস্কার
গ্লাসের অল্প একটু অংশ খালি ছিল বলে;

পিপাসার্তের পিপাসা মেটাতে
গ্লাস কি আর কানায় কানায় ভরে দেওয়া যায় রে?

বুঝের ফারাক কোথাও না কোথাও তো থাকেই
কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির
দেবার ও নেবার মাঝে পার্থক্য ভীষণ
পার্থক্য দান ও গ্রহণের মাঝে
পার্থক্য বোঝার
পার্থক্য মানসিকতার
এপার থেকে ভরা গ্লাস কেও কেও খালি দেখে ওপার থেকে
বেশীর ভাগ পিপাসার্ত তৃষ্ণা মেটায় শোকর মনে পানির গ্লাসে;

পিপাসার্ত তৃষ্ণা মেটায় জল চুমুকে
গ্লাসের কতটুকু খালি আর কতটুকু ভরা তাতে তার কি এসে যায়;

একদিন তুইও গ্লাসটা নিজেই ভরে নিবি
হাত বাড়ানোর কাওকে না পেলে
গ্লাসটা কতটুকু খালি আর কতটুকু ভরা, দেখবি না সেদিন
ছাতি ফাটা তৃষ্ণায় জল না পেলে;

আয়নায় কেন যে নিজেকে দেখি না আমরা!
সময় সময় বাতি জ্বালিয়ে,
আর অন্ধকারে বোকার মত ছায়া খুঁজি
নিজের ভেতর অন্ধ হয়ে।





সম্পর্কগুলো ফেসবুকিও



সম্পর্কগুলো ফেসবুকিও
- যাযাবর জীবন


কারো কারো কাছে সম্পর্কগুলো ইদানীং বড্ড ফেসবুকিও;

আমার মুখোশের আড়ালে ঝাপসা ফেস
আর বুক? ওখানে কি হৃদয় থাকে?
যার চেহারাই নাই তার হৃদয় থাকে কি করে?
আমার ফেসও নাই বুকও নাই
তাই ফেসবুকিও সম্পর্ক সম্পর্কে ধারণাই নাই,
সত্যি কি তাই?

কারো কারো পুরো জীবনটাই দেখি ফেসবুকে বন্দী;
সকালে যখনই ঘুম ভাঙে, সে আটটায় হোক আর দুটোয়
এককাপ চায়ের কাপে সেলফি - ফেসবুকিও ভোর,
তারপর সারা দিনমান ইতং বিতং কত কি?
সকালের বাজার থেকে রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে নাইটি;

এর মাঝে কিন্তু আবার সম্পর্কও আছে
ফেসবুকিও সম্পর্ক,
কার কয়টা লাইক
কার কয়টা কমেন্ট
কড় গণনায় সম্পর্কের চাবিকাঠি
ফেসবুকিও সম্পর্ক আর কি!
লাইক নাই, কমেন্ট নাই?
সম্পর্কের তখন সম্পর্কচ্ছেদের বালাই
ওহে ফেসবুকিও বোন
আর ফেসবুকিও ভাই;

ফেসবুকে আমার ফেস নাই
বুকের ভেতর হৃদয় নাই
নাই কারো সাথে ফেসবুকিও সম্পর্কের বালাই,
তবুও মাঝে মধ্যে কেও কেও খুব আপন করে ডাকে
কেও বুড়া
কেও নানা
কেও ডাকে দাদাভাই;
কেও কথা প্রসংগে
কেও অন্তর থেকে;
ডাকগুলো শুনে কি কারো মন কেমন করে?
কে বলতে পারে?
আমার তো হৃদয়ই নাই।




একদম একা হব



একদম একা হব
- যাযাবর জীবন


জনঅরণ্যে নির্জনতা কোথায়?
ঘুম কি চাইলেই পাওয়া যায়?

আমি ঘুম খুঁজি রাতের ভাঁজে
তুই সূর্যের ভেতর খুঁজিস চাঁদ
ভুল জায়গায় আমাদের কালক্ষেপণ ভুল জিনিসের খোঁজে
আর সম্পর্কগুলোতে, সম্পর্কচ্ছেদের ফাঁদ;

কত কিছুই তো ভেঙে যায়, কাঁচের মত
ক্রমাগত,
সবচেয়ে বেশী কি ভাঙে জানিস?
সম্পর্ক;
ভাঙায় আপনজনের থেকে পারদর্শী আর কে আছে বল?
ভাঙতে ভাংতেই না হয় দুজনে আরো একটু সম্পর্কের পথ হাঁটি চল;

এই যে এত এত ভাঙচুর!
মূল কোথায় জানিস?
অর্থ তো ঠিকই চিনিস
স্বার্থ তো আরও বেশী
না পাওয়ায় যত অতৃপ্তি, প্রাপ্তির নাম খুশি;

আমার প্রাপ্তি কি জানিস?
অনেকগুলো ভাঙাচোরা সম্পর্ক,
দিন থেকে রাত পর্যন্ত আর সূর্য থেকে চাঁদ
এখন আর মাথার ওপর নেই কোন সম্পর্কের ছাঁদ;

এই যে সম্পর্কের ভাঙা গড়ার অদ্ভুত অনুভূতি
কেমন যেন এক অন্যরকম খালি খালি বোধ জাগে
অথচ সম্পর্কগুলোতে নিশ্চুপ কলরব থাকে, থাকে বিষণ্ণ কোলাহল
তবুও জানিস!
কখনো কখনো না, একদম একা হতেও পাশে একজন মানুষ লাগে;

জানিস! আমিও খুব ভাঙার চেষ্টায় আছি নিজেকে;
উঁহু!
ফুঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য নয়
একটু নতুন করে গড়ব বলে;
তোর মত নয়
তার মত নয়
ওর মত নয়,
এবার একটু মানুষের মত গড়তে চাই নিজেকে
পুরনো সব সম্পর্কগুলো ভেঙ্গেচুরে;

এবার একদম একা হব;

পাশে থাকবি তুই?



































ক্লান্ত ডানা



ক্লান্ত ডানা
- যাযাবর জীবন


উড়তে কার না ভালো লাগে?
কিংবা ঘুরতে;

আমার ডানা নেই
নেই চাকা
তবুও ঘুরতে হয় শর্ষে পায়ে,
পেটের জন্য মানুষ কত কিছুই না করে!

একদিন ঠিক উড়ে যাব দূর অজানায়
না ফেরার কোন এক দেশে
একদিন ঠিক ঘুরব অজানা সে দেশে
মাটি হয়ে খালি পায়ে;

আমার এত ওড়াউড়ি ভালো লাগে না
ভালো লাগে না ঘুরাঘুরি,
একবার খুব থিতু হয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে
মাটি হয়ে মাটি ঘুমে।




ভর দুপুরে ঢলা বিকেল



ভর দুপুরে ঢলা বিকেল
- যাযাবর জীবন


সবাই বলে ভর দুপুর
বিকালকে ঢলা বলে কেন?
আমি তোর মাঝে শুধুই সকাল দেখি,
স্নিগ্ধ সকাল
দিন রাত্রির অষ্টপ্রহর;

সন্ধ্যাটা আজ কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে হয়ে আছে
মন খারাপের সাথে বিষণ্ণতা মিশে থাকলে যেমন হয় আর কি!
রাতটা বোধহয় লম্বা যাবে আজ
তোর যে ভীষণ মন খারাপ;

আমি দূর থেকেই তোর মনের গন্ধ পাই,
ভালো থাকলেও পাই
খারাপ থাকলেও পাই;
কিভাবে?
আমার মত ভালোবাসলে জিজ্ঞাসা করতি না;

তুই সব সময়ই চায়ের সাথে একটু কফি মিলিয়ে নিস
মনের সাথে রঙ মেলাতে তোর জুড়ি মেলা ভার
আমার হয় সবুজ চা কিংবা কালো কফি
মিশ্রণে বড্ড এলার্জি আমার,
তাই বলে কি চুমু খাই নি আমরা?
তুই সবুজ চায়ের কাপে
আমি তোর ঠোঁটে;

ধ্যাৎ!
এভাবে দূর থেকে ভালোবাসা হয় না;
আয় জড়িয়ে ধর রাত হয়ে,
তারপর ঘুমাই দুজন ঠোঁটে ঠোঁটে,
অনেকদিন চুমু খাই নি ঠোঁট ডুবিয়ে, তোকে।




সময়ের সাথে কে পেড়েছে দৌড়ে ছুটে?



সময়ের সাথে কে পেড়েছে দৌড়ে ছুটে?
- যাযাবর জীবন


জীবনের দৌড় পেটের ক্ষুধায়
সময়ের দৌড় সময়ের সাথে
আমার দৌড় সময় ছুঁতে
সময়ের সাথে কে পেড়েছে দৌড়ে ছুটে?

আমি এক পা এগোই, আমার সাথে এক পা এগোয় সময়
কোথায় এগুচ্ছি?
জীবনের দিকে?
তাই কি?
একটু আয়নায় পেছনের রাস্তাটা দেখি!
ওহ!
কি বিশাল এক সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি
তবুও এগিয়েই চলেছি, সময়ের সাথে সাথে;

কোথায় যাচ্ছি?

ঐ তো সামনে মৃত্যুর পদধ্বনি

শুনছি ঠিকই, মন বন্ধ করে রেখেছি।




তোমরা সবাই চেনো নদীটাকে



তোমরা সবাই চেনো নদীটাকে
- যাযাবর জীবন


একটা নদী ছিলো
উচ্ছল পাহাড়ি
কলকল ছলছল বয়ে যেত;

একটা নদী ছিলো
মন অভিমানী
যখন তখন অভিমান
অভিমানে ভাটা আর অভিমানে জোয়ার;

একটা নদী ছিলো
খুব, খুব রাগী
যখন তখন রাগে দুকুল ছাপিয়ে বন্যা
পাড়ের মানুষগুলোর কি হবে, কখনো ভাবে না;

একটা নদী ছিলো
বড্ড অবুঝ
তোমরা পাড় ভাঙা দেখেছ
নদী পাড়ের লোক;

নদীর ভালোবাসা দেখেছ কখনো?
সেও কিন্তু দুকুল ছাপানো
ভাসানো, ডোবানো;

আমি নদীর সৃষ্টি দেখেছি পাহাড় থেকে
বেড়ে ওঠা দেখেছি ঝর্ণা হয়ে নেমে গেছে
কৈশোর থেকে যৌবন দেখেছি কলকল ছলছল বয়ে যেতে
নদীর ভালোবাসা দেখেছি, জমিতে উর্বর পলি দিতে
অভিমান দেখেছি জোয়ার ভাটায়
রাগ দেখেছি পাড় ভেঙে দেয়ায়
নদীর নিজের ভেঙে যাওয়া দেখেছি কান্নায়, কত কত শাখা হয়ে
আমি নদীর মরে যাওয়া দেখেছি, রাগ-দুঃখ-অভিমানে;

তোমরা সবাই চেনো নদীটাকে,

নদীটার নাম ছিলো নারী।




জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান কতদূর?



জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান কতদূর?
- যাযাবর জীবন


জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান কতদূর?
একটি মাত্রই তো নিঃশ্বাস!
তবে কেন এত অহংকার?

ঘুমঘোরে যখন তলিয়ে যাচ্ছিলাম অতলে
দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো গভীর জলে
কে যেন টেনে তুলেছিল খুব হঠাৎ করে
আমি তাকে দেখি নি
শুধু টানটা বুঝেছি
ভীষণ জোরে হাত ধরে টান,
হ্যাঁ, বেঁচে আছি তো!
এখনো ধুকপুক ধুকপুক নিঃশ্বাস চলে;

জীবন আর মৃত্যুর ফারাক আমি দেখেছি
জীবন দেখেছি সকলের মাঝে
মৃত্যু দেখেছি আয়নার মাঝে
ফারাক বুঝেছি নিজেতে নিজে,
বেঁচে থাকাটাই খুব অদ্ভুত,
তাই না?

কোন একদিন ঘুমঘোরে ডুবে যেতে যেতে
তলিয়ে যাব অতলে,
কারো কি কিছু এসে যাবে?
হয়তো খুব আপন দু চারজনের মন খারাপ হবে
তাও খুব অল্প সময়ের জন্য
একদিন
দুদিন
কিংবা বড়জোর মাস
তারপর পৃথিবীর অক্ষগতি
আর জীবনের এগিয়ে যাওয়ায় প্রয়াস;

একদিন
কোন একদিন, ঘুম থেকে জাগব না
দেখব না পৃথিবীর রূপ রস সুধা,
সেদিনও গাছে গাছে সবুজ থাকবে
সগর আর আকাশে থাকবে নীল
আকাশে ভাসবে একটি দুটি গাংচিল
শুধু আমিই থাকব না;
যতক্ষণ তাকিয়ে আছি ততক্ষণই জীবন
তারপর কি হলো বা হবে
তাতে আমার কি এসে যাবে!





ওপর তলার মানুষের মনে কি মেঘ জমে না?




ওপর তলার মানুষের মনে কি মেঘ জমে না?
- যাযাবর জীবন


ওখানে রাজার প্রাসাদ
ওখানে তোর বাস
ওখানে সবাই যায় না
ওখানে সবাই যেতে পারে না,
এখানে মেঘ উড়ে
এখানে মন পুড়ে
এখানে সবাই রাজা
এখানে কারো আসতে নেই মানা;

আমি ওখানে যাই নি কখনো
এখানে এসেছিলি তুই
কিছু কি দিয়েছিলি?
মন তো ঠিকই নিয়েছিলি,
জানিস! তারপর থেকে এখানে অবিরত বৃষ্টি
চোখে মেঘ জমলে বৃষ্টি তো হবেই!

আচ্ছা!
ওপর তলার মানুষের মনে কি মেঘ জমে না?
কোনদিনও জানা হবে না।






রোদ পোড়াই চল



রোদ পোড়াই চল
- যাযাবর জীবন


উফফ!
প্রচণ্ড রোদ বাইরে,
পুড়বি?
চল;

রোদে প্রেম নেই শুধুই গরম
আরে! পোড়ে তো ভালোবাসাও
আগুনে পুড়তে কার সাধ জাগে
তবুও প্রেম, তবুও ভালোবাসা
আর পদে পদে মরণ
ভালোবাসার গরম;
চল,
রোদ মাখি চল
ভালোবাসায় পুড়ি চল;

সবাই ভালোবাসা চেনে না
সবাই রোদ মাখতে জানে না
মনে প্রেম জাগলে তবেই না গরম
ভালোবাসায় মরণ
আর না হলে পার্থক্য কোথায়?
ভালোবাসা কিংবা আগুনে পোড়ায়,
ভালোবাসবি?
তবে চল,
রোদে পুড়ি চল.

আমি ভালোবেসে যাই তোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তুই গরম মাখিস রোদ মেখে গায়ে
ও কি? চোখে কেন রে জল?
নতুন কোন ছল?
খেলব না আর কোন ছল
শুধুই ভালোবাসি চল;
আর ভালোবাসায় পুড়ে পুড়ে রোদ পোড়াই চল।



তবুও আমি ওপরে আকাশ দেখেছিলাম



তবুও আমি ওপরে আকাশ দেখেছিলাম
- যাযাবর জীবন


আকাশ তো সব সময়ই দেখি ওপরের দিকে চেয়ে
মাটিতে থেকে
আজ আকাশটাকে দেখলাম আকাশ থেকে;

তখন আকাশে চাঁদ ছিলো না
ছিলো না সূর্যও
তবুও কেমন যেন এক মায়াবী নীল আলো,
কই আমার তো ডানা নেই!
তবুও আমি ওপরে আকাশ দেখছিলাম নিচে মাটি,
মাটি থেকে আকাশে তো উড়াল দিলাম
তবুও কি আকাশটাকে ধরতে পারলাম!
আচ্ছা, আকাশের উচ্চতা কত?
মাটির মানুষ আকাশ ধরতে যায়, সখ কত!




ওপর নীচ



ওপর নীচ
- যাযাবর জীবন


ওপরে দেখ না সদাই
ওপর তলায় ঈর্ষার বাস
দেখ না সমানে সর্বদাই
সমানে তুলনার সর্বনাশ,
নিচে তাকাও
তোমার থেকে নিচে
বুঝতে পারবে কতটা ভালো আছ
অনেকের থেকে.........



এই তো দেখছি চারিদিকে, এখনকার চল



এই তো দেখছি চারিদিকে, এখনকার চল
- যাযাবর জীবন


আজকালকার প্রেম মানেই বিছানায় যাওয়া
ভালোবাসা মানে মন ছোঁয়ার আগেই শরীর ছোঁয়া
চোখে চোখে ভালোলাগার ঈশারা হতে না হতেই বিছানায় শোওয়া,
বড্ড ভালগার হয়ে গেলো, তাই না?
কি করব বল?
এই তো দেখছি চারিদিকে এখনকার চল
ভালোবাসার ছল;

আমি তোকে ভালোবেসেছি মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তুই আমায় মন দিয়ে ভালোবেছিস প্রেমে বিভোর হয়ে
আমাদের মাঝে শরীর কথা বলে নি
বিছানা ডাকে নি
তাই বলে কি ভালোবাসার কমতি আছে আমাদের মাঝে?
আমরা বড্ড সেকেলে, তাই না?
আমরা মনে মনেই প্রেম করি মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে।





জন্মদিন তোর



জন্মদিন তোর
- যাযাবর জীবন


জন্মদিন তো প্রতিদিনই হয়
কারো না কারোর
আজ কিন্তু বিশেষ দিন, জন্মদিন তোর;

চেয়ে দেখ, চারিদিকে আজ কত কত সাজ!
আকাশে সেজেছে ভোর,
আকাশ তো সকাল হলে প্রতিদিনই সাজে, লাল টুকটুকে হয়ে সূর্যে;
আজ বিশেষ সকাল তবুও আকাশ সেজেছে মেঘে
কেন জানিস?
তোকে ছুঁতে পারছে না বলে আকাশের মন খারাপ
আজ যে জন্মদিন তোর;

মেঘগুলোও কেমন মুখ গোমড়া করে রেখেছে
দেখেছিস?
যখনতখন কেঁদে দিলে দোষ ধরিস না মেঘের
তারও যে বড্ড মন খারাপ,
তারও ইচ্ছে করছে ছুঁয়ে দিতে তোকে
আজ বিশেষ দিন
আজ যে জন্মদিন তোর।

শরীরের বয়স কত হয়েছে তা জেনে আমার কি হবে?
মনের বয়সে আমার কাছে তুই সবসময়ই একুশ,
ষোলো না, আঠারো না, একুশ কেন জানিস?
ঐ বয়সে মেয়েরা নিজেকে জানতে শিখে
ঐ বয়সে মেয়েরা সচেতন হতে শিখে
ঐ বয়সটায় মেয়েরা বুঝতে শিখে
ঐ বয়সে মেয়েরা দায়িত্ব নিতে শিখে
যেমন নিয়েছিলি তুই, একটা পুরো সংসারের দায়িত্ব
মনে আছে সেদিনের সে ভোর?
আজ যে জন্মদিন তোর;

জানিস! লালে তোকে বড্ড সুন্দর লাগে
লাল শাড়ি, লাল চুড়ি, আর গাঢ় লাল ঠোঁটে
লিপস্টিক দিয়েছিস কি ভোরে?
আজ সেজেছিস কিভাবে রে?
কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোকে
কিন্তু আমি যে ধরাছোঁয়ার অনেক দূরে!
তাছাড়া আমি সৌন্দর্যের আমি কি বুঝি বল?
তোদের সমাজে আমি যে অচল;

তবে তোকে সবচেয়ে সুন্দর কখন লাগে জানিস?
যখন তুই সাদাকালো হয়ে আমায় সাদাকালো চিনতে পারিস,
আসলে রঙে কি এসে যায়?
রঙের দুনিয়ায়;

পালা পর্বণে কখনো কিছু দেয়া হয় নি তোকে,
কিই বা দেব বল?
দেয়ে থোয়ায় আমি বড্ড অচল,
আজ মন থেকে না হয় কিছু শব্দ ছুঁড়ে দিলাম
দূর সুদূর হতে
কোন একদিন মনে তো করবি!
তোর অন্যান্য দামী উপহারগুলো পুরনো হতে হতে।

















ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা



ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা
- যাযাবর জীবন


ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় আমি সব সময়ই এগিয়ে,
তোর থেকে;

এই যেমন ধর -
- তুই আমায় শরীর ছুঁয়ে দেয়ার অনেক অনেক আগেই আমি তোর মন ছুঁয়ে দিয়েছি;

বুঝলি না?

তবে বলি শোন -
- ভেবে দেখ তো, তোর চোখে জল আসে কেন?
আমার কথা মনে পড়লেই তো! তাই না?

আচ্ছা! আমার কথা মনে পড়ে কেন তোর?
- খুব ভালোবাসিস আমায়, তাই না?

কেন ভালোবাসিস? কখনো ভেবেছিস?
- আরে বোকা! তুই কোন কিছু বোঝার অনেক আগেই আমি তোর মন ছুঁয়ে দিয়েছি;

মন তো বরফ, গরম একটু ছুঁয়ে দিতেই গলে যায়,
কেন অশ্রু গলছে তোর চোখে?
- তোর মন আমি ছুঁয়ে দিয়েছি বলে;

বুঝলি না?
- ভালোবাসা কি আগুন না?
তাহলে পুড়ছিস কেন রে?
তোর গাল বেয়ে কান্না গলা অশ্রু নামছে কেন রে?
- এটা আসলে ভালোবাসা
- তোর অজান্তেই তোকে ছুঁয়ে দিয়েছে বলে রে;

আচ্ছা বল তো!
- কিছু দিন চিঠি না পেলে এত উতলা হোস কেন?
আমার কথাগুলো তোকে খুব ছুঁয়ে যায় তাই না?
কই? তুই তো কখনোই চিঠি লিখিস না আমায়,
তারমানে শব্দ-খেলায় তুই ছুঁতে পারিস নি আমায়?

আমি রোদ হয়ে তোকে ছুঁয়ে দিলে তুই ঘেমে অস্থির
বৃষ্টি হয়ে তোকে ছুঁয়ে দিলে তুই ভিজে একাকার
আদর মেখে তোকে ছুঁয়ে দিলেই তোর আকাশে চাঁদ
কোন কারণে আমার মনখারাপে তোকে না ছুঁলেই তোর অমাবস্যা;
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় আমার কি এগিয়ে থাকা হলো না?

একবার তোর সাথে শেষবার অন্যরকম এক ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে ইচ্ছে করে
সেটা কি জানিস?
- কে কার আগে মৃত্যুকে ছুঁয়ে দিতে পারে!
যে হেরে যাবে, সেই শুধু জানবে
- জিতলো কে।




মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯

প্রত্যাশা



প্রত্যাশা
- যাযাবর জীবন


কিছু না কিছু প্রত্যাশা থাকে সবার কাছেই
কিছু প্রত্যাশা থাকে সবার মাঝেই,
আমার নেই কেন?

আকাশের কাছে প্রত্যাশা নীলের
কিছু প্রত্যাশা মেঘের
কিছু বৃষ্টির,
পাহাড়ের কাছে প্রত্যাশা ঝর্নার
কিছু প্রত্যাশা পাথরের
কিছু সবুজের,
সাগরের কাছে প্রত্যাশা ঢেউয়ের
কিছু প্রত্যাশা লবণের
কিছু নীলের,
সুরের প্রত্যাশা বাঁশির কাছে
হারমোনিয়ামের কাছে
ভায়োলিনের কাছে,
শিল্পীর কাছে প্রত্যাশা শুধুই গানের
চাঁদের কাছে জ্যোৎস্নার
দিনের কাছে সূর্যের
রাতের কাছে ঘুমের
প্রেমিকের কাছে প্রত্যাশা ভালোবাসার
তোর প্রত্যাশা আমার কাছে আসার,
আর মানুষের কাছে প্রত্যাশা শুধুই মানবতার;

জানিস!
অনেক অনেকদিন আগে প্রত্যাশা নামের একটা মেয়ে ছিলো,
আমাকে নাকি খুব ভালোবাসতো
তারপর অনেকদিন ধরে
ক্রমাগত পাথরের গায়ে ভালোবাসার প্রত্যাশা ঘষে ঘষে
প্রত্যাশার মন থেকে নাকি প্রত্যাশাই খসে গিয়েছিলো,
ভালোবাসার প্রত্যাশা;
কোথায় আছে প্রত্যাশা নামের মেয়েটি?
কেমন আছে?
কখনো জানা হয় নি
কখনো জানতে ইচ্ছে করে নি;

আমার কোন প্রত্যাশাই নেই
কারো কাছেই,
আমি বোধহয় মানুষ নই;

যত ভালোবাসার ছবিই আঁকিস না কেন
আর যত প্রত্যাশাই তোর মনে থাকুক না কেন!
কখনো ভালোবাসার প্রত্যাশা করিস না আমার কাছে
কিংবা মানবতার।




চলার নাম জীবন



চলার নাম জীবন
- যাযাবর জীবন



থেমে থাকে না কিছুই
থেমে থাকে না কেওই;

এই যে খুব হুট করে চলে যাওয়া,
- অনুভূতি
- সম্পর্ক
- ভালোবাসা
- কিংবা একটা গোটা মানুষ,
খুব কি যায় আসে?
সময় কি থেমে থাকে?

হয়তো সাময়িক মন খারাপ
হয়তো সাময়িক হাহাকার
তারপর আবার পুরোদমে
- হাসি কান্না
- সুখ দুঃখ
- প্রেম ভালোবাসা
- জীবন,
জীবনটা আসলে এমনই
থেমে থাকে না
থেমে থাকার উপায় নেই;

এই যে আমি তোর জীবনে আমি নেই
এই যে আমার জীবনে তুই নেই
এই যে আমাদের এত এত ভালোবাসা ছিলো
আর এখন তোর আর আমার অনুভূতিহীন মন
কোথাও কি থমকেছে আমাদের জীবন?

এই যে এক একটা জ্যান্ত মানুষ চলে যায় জীবন থেকে
কেও সম্পর্ক ত্যাগ করে
কেও বা চিরঘুমে চিরতরে
খুব কাছের মানুষ
কারো বাবা মা
কারো ভাই বোন
কারো বা সন্তান
কষ্ট তো লাগেই
অনুভূতিতে তো দাগ ফেলেই,
তারপর আবার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই
পৃথিবী ঘুরছে অক্ষের ওপর
আর আমাদের জীবনের দৌড়
এর ওর তার আমার তোর;

থেমে থাকে না কেওই
থেমে থাকে না কিছুই
থামার জন্য নয় জীবন
চলার নামই জীবন;

মানুষের থেমে যাওয়া মানেই চিরঘুম,
তারপর পৃথিবীর কি হলো
পরিজনের কি হলো
কি এসে যায়?
আমি তো মাটির ঘরে
চিরঘুমে
ঘুম শয্যায়।












কাল থাকবো তো? তোমাদের মাঝে



কাল থাকবো তো? তোমাদের মাঝে
- যাযাবর জীবন


এই তো ছিলো
কালও তো সে ছিলো
আমাদের মধ্যেই ছিলো
কি সুন্দর! হাসিখুশি সবার সাথে মিলেমিশে;
কাল সন্ধ্যায় চায়ের কাপে সে আমাদের ছোট্টবেলার টুকরো গল্পগুলোর স্মৃতিচারণ করছিল
খুব সাধারণ গল্প
আমাদের ছেলেবেলার ছোট ছোট চাহিদা আর বিশাল আনন্দ বেদনার গল্প
আমরা বাকি সবাই মিলে আনন্দের স্মৃতিতে কখনো হেসে কুটিকুটি হচ্ছিলাম
কখনো বা কোন দুঃখের স্মৃতিতে মন বিষণ্ণতায় ভরে উঠছিল;
আসলে আমাদের ছোট্টবেলা ছিলো কি ভীষণ অন্যরকম
চাইলেই কি আর সব কিছু পেতাম তখন?
আমি মাঝে মধ্য আশ্চর্য হয়ে ভাবি
- আজকালকার বাচ্চারা কি সৌভাগ্য নিয়েই না জন্মেছে!
শুধু চাইতে দেরী, বাবা মা চেষ্টার ত্রুটি রাখে না আবদার মেটাতে;
আর আমাদের সময়!
বাবা মায়ের হয়তো ক্ষমতা ছিলো দেবার
তবে আমাদের সাহস ছিলো না অতি চাহিদার,
বড়জোর দুই ঈদে নতুন জামা
কিংবা বছরে ছমাসে বাইরে একদিন কোথাও চিনে রেস্টুরেন্টে খাওয়া;
খেলার জন্য একটি আস্ত বল?
নিজের ক্রিকেট ব্যাট?
উঁহু! এত সাহস ছিলো না বাবা,
খুব বড়জোর পাঁচ টাকা দশ টাকা চাঁদা তোলা
তারপর সবাই মিলে একটি নতুন ফুটবল
ক্ষুদ্র চাহিদার কি অসীম পরিতৃপ্তিই না ছিলো আমাদের মাঝে!
আর আজকাল?
তৃপ্তি কথাটা যেন ডিকশনারির শোভা
আর ছেলেপেলের অসীম চাহিদা;

কাল সন্ধ্যায়
গতকাল সন্ধ্যাতেই ঘরোয়া আড্ডায় একসাথে ছিলাম আমরা
হাসি আনন্দে,
আর আজ!
কোথায় সে?
দুপুর না গড়াতেই তাকে রেখে এলাম ছোট্ট মাটির ঘরে
কি ভীষণ ফারাক কাল আর আজকের মাঝে;

জীবনটা বড্ড অদ্ভুত
তার থেকেও অদ্ভুত মরে যাওয়া,
কাল ছিলো আজ নেই
এই আছি এই নেই
বড্ড কেমন, তাই না!
একটা রক্ত মাংসের গোটা মানুষ
হঠাৎ করেই মৃত বনে যায়,
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়
অথচ এর থেকে সত্যি তো আর কিছু নেই,
তাই না?
কেমন আছে সে?
কি করছে ওখানে?
একাকী ছোট্ট ঐ ঘরে;

আছি আর নেই এর কথা ভাবলেই বড্ড মন কেমন করে,
আচ্ছা!
কি সব হাবিজাবি লিখছি মনখারাপের রাতে?
কাল থাকবো তো আমি? তোমাদের মাঝে, তোমাদের সাথে;
কে জানে!!




রঙের ফারাক



রঙের ফারাক
- যাযাবর জীবন


তুই ঘর বানাস
দেয়াল তুলে তুলে
আমি দেয়াল ভাঙি
পৃথিবী দেখব বলে;

কিছু ফারাক তো আছেই আমাদের চিন্তা চেতনায়!
তোর জোড়া দেওয়ার
আমার ভাঙার;

তুই স্বপ্ন জোড়া দিয়ে দিয়ে ঘুমের দেশে
আমি রাত দেখব বলে নির্ঘুম চোখে
ঘুম বলতে তোর বিছানা
বিছানা বুঝতে চাদরের যতদূর তোর হাত যায়,
আমি বিছানা বুঝি সবুজের মাঝে শুয়ে থাকা
ধানের ক্ষেত
ঘাসের মাঠ
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর,
সবুজ তোর কাছে শুধুমাত্র একটি রঙ;
ফারাক তো কিছু আছেই, তোর আর আমার
আমাদের চিন্তা চেতনার;

নীল বলতে তুই আকাশ বুঝিস
একটি মাত্র একক,
আকাশ বলতে আমি অসীম বুঝি
যার মাঝে মেঘের ভেলা
কখনো সাদা কখনো মন খারাপে কালো
যেন এই বুঝি কেঁদে দিলো
কখনো হালকা কখনো ভারী বাতাসে মেঘগুলো কেমন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে চেয়ে দেখেছিস?
কিভাবে দেখবি বল? তুই তো আকাশ বলতেই নীল বুঝিস,
অথচ তোর নীল আকাশটাকে আমি ভোরের আলোয় ধুসর দেখি
আর এক এক সন্ধ্যায় এক এক রকম লাল,
আচ্ছা! বৃষ্টির ফাঁকে আকাশে সূর্যের উঁকি দেখেছিস?
বৃষ্টির ফোঁটায় রংধনু?
তুই তো শুধুই নীল আকাশ নিয়ে পড়ে আছিস, একটি মাত্র এককে,
আমি আকাশ দেখি ধুসর, নীল, লাল আর রংধনুর পরতে পরতে,
আচ্ছা! রংধনু পাহাড় দেখেছিস কখনো?
ফারাক বিস্তর তোর আর আমার
ফারাক রঙ চেনার
আর ফারাক আমাদের চিন্তা চেতনার;

রাত মানেই তোর চোখে ঘুম
রাত মানেই তোর কাছে কালো;
অথচ রাতকে আমি দেখি চাঁদে, দেখি তারার মেলায়
জোনাক দেখেছিস কখনো?
গাছে গাছে, ঘাসে ঘাসে! মাটিতে যেন সহস্র তারা ফুটে আছে
মেঘলা রাতের ধুসর রঙের সাথে তুলনা হয় শুধুমাত্র মনখারাপের
তোর তো মন খারাপ হয় না! বুঝবি কি করে?
চাঁদ দেখেছিস কখনো?
এক এক রাতে চাঁদের এক এক রকম সৌন্দর্য
আমি এক এক রাতে গায়ে মাখি এক এক রকম জ্যোৎস্নালো;
ফারাক তো কিছু আছেই! চিন্তা চেতনায়
তোর আর আমার মাঝে;

তুই ঘর সাজাস
দেয়ালগুলো রাঙিয়ে নানা রঙে
আমি সাদাকালো চোখে পৃথিবী দেখি
দেয়ালগুলো ভেঙে ভেঙে।







মেঘের হাসি কান্না



মেঘের হাসি কান্না
- যাযাবর জীবন


মেঘের হাসি
মেঘের কান্না
অনেকটা তোর মতন;

আকাশটা গুমরচ্ছে অনেকক্ষণ
কান্না জমাট বেঁধেছে মেঘের মাঝে
টুপ করে ঝরে পরলেই তো বৃষ্টি
ঠিক তোর চোখের মতন;
কত অশ্রুই না ধরে রাখিস চোখে!
কান্না হয়ে বয়ে যায় যতটুকু তারচেয়ে অনেক বেশী জমা থাকে চোখে
মেঘের মতন
আর বাতাসে কান্নার চিৎকারে মেঘের গর্জন
আকাশটা মাঝে মাঝে গুমরায়, তোর মতন;

অশ্রু কোথায়? সবই তো জল
আর মেঘের ভেতর কান্নার কোলাহল
সাদা মেঘে কি কান্না নেই?
আরে! জল জমেই তো মেঘ
সাদা মেঘেও কান্না লুকানো আছে
বুকে বেশী ব্যথা হলে সাদা থেকে ধুসর হয়ে কালো হয় মেঘ
তারপর টুপ করে ঝরে পরে বৃষ্টির আদলে,
ঠিক হাসতে হাসতে কান্নায় ভেঙে পড়িস তুই যেমন;

জানিস!
যখনই ঠোঁটের সাথে সাথে তোর চোখ হাসে না
তখনই এক মেঘের ছায়া দেখি তোর চোখে
আর পুঞ্জীভূত বেদনার ঘনঘটা তোর হাসির আড়ালে,
তারপর একসময় কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে তোর চোখেমুখে
আর টুপ করে কান্না হয়ে নেমে আসে তোর চোখে
মেঘের মতন,
আচ্ছা! তোর মন কি মেঘ?
না কি ভুল দেখি আমি, ক্ষণে ক্ষণে
আর ভুল চোখে ভুল ভাবি আপনমনে;

ধ্যাত!
কেন যে ভুল করে ভালোবেসেছিলাম তোকে?
দেখ! কেমন মেঘ ধরে আছে বুকে।







ঘুমন্ত চাঁদ




ঘুমন্ত চাঁদ
- যাযাবর জীবন


মাঝে মধ্যে অলস রাত বড্ড অন্যরকম
মাঝে মধ্যে সময়ের ভাঁজে শুধু শুধুই সময় ক্ষেপণ;

আমি রাতের ভাঁজ দেখি ঘুম ঘুম চোখে
রাতের ভাঁজে অন্ধকার থাকে
অন্ধকারের ভাঁজে কালো
অথচ চাঁদটা উঠতেই অন্ধকারের ভাঁজ খুলে যায়
জ্যোৎস্না দেয় আলো,
আচ্ছা! চাঁদটা কোথায় লুকিয়ে থাকে?
প্রতিরাতে কেন জ্যোৎস্না পাই না ছুঁতে?

সবারই মনের ভাঁজে কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকে অন্ধকার
কেও কেও হঠাৎ হঠাৎ চাঁদ খুঁজে পায়
কেও অন্ধকার ভালোবেসে অমাবস্যায় ঘুমায়,
আমি রাত ক্ষেপণ করি নির্ঘুম তাকিয়ে
কাওকে তো অন্ধকারের সঙ্গী হতে হবে!

দেখ, দেখ!
কেমন অন্ধকার নেমেছে ঝাঁপিয়ে
তোর ঘুম ঘুম চোখ ছাপিয়ে,
আয় না জেগে থাকি আরেকটি নির্ঘুম রাত
তুই
আমি
আর ঘুমন্ত কালো চাঁদ।







ছোট্ট কথা



ছোট্ট কথা
- যাযাবর জীবন


ছোট্ট একটা কথা
অথচ কত ভাবেই না বলা যায়!
- 'ভালোবাসি ';

আপনাকে
তোমাকে
কিংবা তোকে ভালবাসি,
অথবা ভালোবাসি
তোকে
তোমাকে
কিংবা আপনাকে,
সরাসরি সামনা সামনি দাঁড়িয়ে মুখ ফুটে একবার বলে দিলেই হয়
- ভালোবাসি;

বেশীরভাগ সময়ই আমরা সরাসরি বলার সাহস পাই না
তবে ঠারে ঠোরে ইশারাতে কত বার কত ভাবে বলে থাকি -

তোর জন্য কেমন জানি লাগে
মনটা জানি কেমন করে
ভালো লাগে না তুই ছাড়া
ধ্যাত! একদম সময় কাটে না
বড্ড একলা লাগে রে!
তুই ছাড়া কেমন কেমন জানি
ইত্যাদি ইত্যাদি.....................

অপরপক্ষ বোঝে
কিংবা বুঝেও না বোঝার ভান ধরে থাকে,
আমার মন আকুলিবিকুলি
যেন প্রাণ আটকে থাকে গলার কাছে;

আরে বাবা!
মনের আড় ভেঙে একবার সামনা সামনি দাঁড়িয়ে
চোখে চোখ রেখে বলে ফেললেই হয়
- ভালোবাসি;

কি হবে?
হয় রাগত চোখে পাখি উড়ে যাবে
দূর-সুদূরে,
আর নয়তো অশ্রুভেজা দুটি চোখ ভালোবাসায় জড়িয়ে রবে
চিরতরে;

আমি প্রতিদিনই তোর কানে গুনগুনিয়ে যাই
- ভালোবাসি
আর আমার বধির কান অপেক্ষার প্রহর গোনে;

একদিন
কোন একদিন
উত্তরে তুইও চিৎকার করে একবার বলে দিতে পারিস না রে!
- ভালোবাসি তোরে;

বধির কানও ভালোবাসার ডাক শোনে।







রঙিন সাজে তুই



রঙিন সাজে তুই
- যাযাবর জীবন


সাজিস না কেন রে তুই?
রঙিন সাজে;

বাগান দেখিস না? ফুলের সাজে,
পুরোটা বাগান কেমন হেসে হেসে ওঠে সেজে!
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

আকাশ দেখেছিস কখনো? বৃষ্টির সাজে,
মেঘগুলো দেখেছিস কেমন সাদাকালো হয় সেজে!
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

সন্ধ্যা দেখেছিস কখনো? লালের সাজে;
আকাশ কত রঙেই না সাজে, সন্ধ্যাকে লাল করে;
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

রাত্রি দেখেছিস কখনো? জ্যোৎস্নার সাজে;
কালো রাত্রিগুলোও হাসে, জ্যোৎস্না যখন সাজে;
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

বাগান সাজুক, ফুলের জন্য
সকাল সাজুক, ভোরের জন্য
সন্ধ্যা সাজুক, রাত্রির জন্য
রাত্রি সাজুক, জ্যোৎস্নার জন্য
আকাশ সাজুক, মেঘের জন্য
বৃষ্টি সাজুক, রংধনুর জন্য;

তুই না হয় একবার সাজ
আমার জন্য,
রঙিন শাড়িতে তোকে মুড়িয়ে
রেশমি চুড়িতে হাত ছড়িয়ে
কালো কাজলে দুচোখ এঁকে
চুড়ির রঙে, রঙ মেলানো টিপে
ঠোঁটটা রাঙিয়ে টকটকে লাল লিপস্টিকে,
শুধু একবার,
আমার জন্য;

তোকে একবার বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে
রংধনু সাজে।










কবিতার চুপ




কবিতার চুপ
- যাযাবর জীবন


সব সময় কি খাতা কলমে কবিতা লিখতে হয়?
কিছু কিছু সময় তোকে ভাবলেই মন কবিতা হয়;

মাঝে মাঝে রাত কেঁদে কেঁদে অন্ধকারের কথা বলে
আমি সূর্যের দিকে চেয়ে থাকি অন্ধকার দেখব বলে,
মাঝে মাঝে অমাবস্যা হেসে হেসে চাঁদে জ্যোৎস্নার কথা বলে
আমার রাতই দেখা হয় না নির্ঘুম চোখে,
মাঝে মাঝে একাকীত্ব চিৎকার করে বলে মনে তুই আছিস
দূরত্ব লিখে যায় একাকীত্বের কবিতা;

রাতটা নিজে বড্ড নিশ্চুপ থাকে
অথচ শুনে দেখ কত কত কবিতার কলরব প্রতিটা রাতের বাঁকে

দেখিস! একদিন কবিতা একদম চুপ হয়ে যাবে,
তুই সামনে এলে।









হারায় নি দেশ



হারায় নি দেশ
- যাযাবর জীবন


ঐ যে বৃষ্টি ধুম
টিনের চালে ঝুম,

আজকাল কোথায়ই বা টিনের চাল?
নগরায়ণ গ্রাস করেছে সবুজ
তবুও বৃষ্টি দেখলেই মন অবুঝ,
ঐ যে বহেরা
ঐ যে সজনে পাতা
সিম আর কুমড়ো লতায় ছেয়ে যাওয়া এক টুকরো সবুজ
চিড়ল চিড়ল নারকেল পাতার ভেদ করে বৃষ্টির ফোঁটা
আর টিনের চালে রিমঝিম বৃষ্টির গান!
দেখ! বৃষ্টি নেমেছে ঝুম;

আমি গ্রাম হারিয়েছি, মন হারাই নি
সবুজ হারাতে দেই নি,
কৃষ্ণচূড়া লালে
পলাশের লালে
শিমুলের লালে
আর পাতার সবুজে
ধানের সবুজে মিলে মিশে বাংলাদেশ,
তোমরা যাকে সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামলা বল
ওটা আমার দেশ,
বাংলাদেশ।





আধো অন্ধকার, আধো আলো




আধো অন্ধকার, আধো আলো
- যাযাবর জীবন


আকাশে আধো আধো আলো, সকাল হয়েছে কি?
উঁহু! কেমন জানি আধো আধো অন্ধকার, সন্ধ্যা হয়েছে কি?
আমি আধো আধো ঘুম চোখে চেয়ে থাকি
কখনো সন্ধ্যাকে মনে হয় ভোর কখনো বা ভোর'কে সন্ধ্যা ভাবি,
এখন আমি আর সময় বুঝতে পারি না
কিংবা সময়ের ফারাক;
সূর্যোদয়ে লাল আকাশকে সূর্যাস্ত ভেবে ভুল করি প্রায়ই
কখনো সূর্যাস্তে আকাশ লাল হলে সকাল হলো ভেবে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসি,
লাল রঙটা কিন্তু আমার খুব পরিচিত
হবেই না কেন বল? তোর দেয়া রঙ কি ভোলা যায়?
আর সম্পর্কের ফারাক;

একটা ভুল সময়ে ভুল আকাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
হঠাৎ তোকে দেখে ফেলেছিলাম,
তখন বড্ড নীল ছিল আকাশ
তুই আমাকে হালকা, গাঢ় কত কত বর্ণের নীল চিনিয়েছিস!
মনে আছে?
তারপর একে একে মেঘের রঙ চেনালি
সাদা থেকে কালো পর্যন্ত
অশ্রুর রঙ কিন্তু চেনাস নি তখনো;

সময়ের ব্যবধানে এক সময় জ্যোৎস্না চেনাতে চেনাতে রাত চেনালি,
মজার ব্যাপার কি জানিস?
তুই যখনই আমায় অন্ধকার চেনানো শুরু করলি আমি কেন জানি লাল চিনে ফেললাম
আর মাঝখান থেকে কেমন জানি সময়টাকেই হারিয়ে ফেললাম,
তারপর থেকেই বড্ড ভুল হয়ে যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের লালে
বড্ড ভুল হয়ে যায় আধো আধো আলো আর আধো আধো অন্ধকারে;

এখন দিন আর রাত বুঝলেও সময়ের ফারাক বুঝি না
সাদা কালো না বুঝলেও লাল ঠিক বুঝি
আর আধো আধো বুঝতে পারি সম্পর্কের ফারাক;
সেদিন বড্ড ভুল হয়েছিল, নীল আকাশের দিকে তাকানো;

এখানে এখন নিকষ কালো মধ্য রাত
কি লাভ তোকে লাল রঙের চিঠি লিখে?
হয়তো এখন কালো ঘুমে তুই কোন এক দূর দেশে
কিংবা অন্য কাওকে জ্যোৎস্না চেনাচ্ছিস, রঙিন ভালোবেসেচ

আচ্ছা!
তোর চোখ কি লাল চিনেছে কখনো?
সময়ের ফারাকে!
কিংবা সম্পর্কের!