সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮

এবড়ো থেবড়ো রাস্তা




এবড়ো থেবড়ো রাস্তা
- যাযাবর জীবন


রাস্তাটা উঁচু নিচু,
এবড়ো থেবড়ো, ভাঙাচোরা;
শরীরের মত, প্রেমের মত, জীবনের মত;
তবুও নিত্যই পথ বাওয়া;

প্রেম কি রে?
অনুভব, অনুভূতি
উঁচু নিচু শরীর বাওয়া,
খানিকক্ষণ ঝাপাঝাপি সুখ, তারপর কান্না হাওয়া;

জীবন কি রে?
কর্ম, অর্থ, স্বার্থ
অর্থের মাপকাঠিতে ধনী গরীব,
দম্ভ, অহংকার, তারপর মাটি হওয়া।








ভালোবাসার ট্রেন



ভালোবাসার ট্রেন
- যাযাবর জীবন


কেও কেও ভালোবাসার ট্রেনে ওঠে পড়ে
বুঝে কিংবা না বুঝে
কেও ইচ্ছে করে, কেও ভুল করে
গন্তব্য না জেনে;

ভালোবাসার ট্রেন একবার ষ্টেশন ছেড়ে দিলে
কার সাধ্য আছে তার গতি থামাবার?

ভালোবাসার ট্রেন শুরুতে একটু একটু করে এগিয়ে চলে
ধীরে ধীরে গতি বাড়তে থাকে
তারপর এক সময় বল্গাহীন গতিতে ছুটে চলে অনিশ্চয়তার দিকে;

শেষ ষ্টেশন কোথায় জানে না প্রেমিক
পথের শেষ জানা নেই ভালোবাসা ট্রেনের,
ঐ দূরে, বহুদূরে
প্রেমিকা নামক মরীচিকা ষ্টেশন দেখা যায়,
কোন ট্রেন পৌঁছায়
কোন ট্রেন তীব্র গতিতে ধেয়ে চলে অনিশ্চিত গন্তব্যে;

ভালোবাসার গন্তব্য কোথায়?
কবিতার টুকরো পাতায়।









অবহেলিত, একতরফা



অবহেলিত, একতরফা
- যাযাবর জীবন


কিছু কিছু ভালোবাসা একপেশে
কিছু কিছু খুব বেশী একতরফা,
সে বাবা মার ভালোবাসাই হোক কিংবা সন্তানের
কিংবা ভাই বোন আত্মীয় পরিজনের
আর নয়তো প্রেমিক প্রেমিকার
কিংবা স্বামী স্ত্রীর;

একই বাবা মায়ের সন্তানদের মধ্যে কেও থাকে দুধে ভাতে
কেও বাবা মায়ের সাথে ডাল ভাতে এক থালে এক পাতে
একজন থাকে চরম অবহেলিত হাঁড়িচাচে;
দুধভাত, ডালভাত ভাই বোনগুলো ভালো মন্দে মিলে মিশে থাকে একসাথে
অবহেলিত চিরকালই বাবা-মা ভাই-বোন থেকে অনেক দূরে,
তবুও সংসারের প্রয়োজনে এরাই হাল ধরে একপেশে
একতরফা সয়ে যায় মুখ বুজে,
সাধারণত সংসারের বড় সন্তানগুলোকে কলুর বলদ বলে;

যারা একতরফা পেয়ে অভ্যস্ত তারা পেতেই থাকে,
টাকা পয়সা, অর্থ বিত্ত
প্রেমিক/প্রেমিকা কিংবা স্বামী/স্ত্রীর ভালোবাসা,
চারিদিক থেকে ভালোবাসার বৃষ্টিতে এরা সিক্ত থাকে
আর মাঝে মাঝে চারিদিক ভেজায় স্বার্থ বৃষ্টিতে;
অবহেলিত একতরফা সয়ে যাওয়া মানুষটি
হয়তো একপেশে ভালোবাসায় ডুবে,
প্রেমিক/প্রেমিকা এরা কোথায় পাবে?
মাঝে মধ্যে স্বামী/স্ত্রীর সাথে,
সংসার ঘানি টেনে কখনো সময় পেলে;

একপেশে পাওয়ার দলের মানুষগুলোকে দেখতে পাচ্ছ?
আয়না দেখ,
একতরফা সয়ে যাওয়া মানুষ দেখেছ?
আমায় দেখ।




ভালোবাসার অভ্যেস



ভালোবাসার অভ্যেস
- যাযাবর জীবন


বোকারা একপেশে ভালোবাসে
একপেশে ভালোবাসায় কাঁদে জীবনভর
আমার একপেশে ভালোবাসাকে তুই ঠেলে সরিয়ে রেখেছিস একপাশে
আর আমায় জড়িয়ে রেখেছিস অভ্যাস বসে;

যেদিন থেকে তুই আমার ভালোবাসা
সেদিন থেকে তুই আমার নীলাকাশ
যখনই তোর আকাশে ডানা মেলি
তখনই তুই রাত
যখনই তুই রাত আমি চাঁদ হই আকাশে
তুই জ্যোৎস্নাস্নান সেরে গভীর ঘুমে অন্ধকারে
যখনই তুই গভীর ঘুমে আমি স্বপ্ন হয়ে তোর চোখে
আমি স্বপ্নে আসতেই তুই চেয়ে থাকিস চোখ বড় করে;

তুই আমার ভালোবাসা
আমি তোর অভ্যেস
ভালোবাসা কি আর বদলায় রে?
অভ্যাস বদলে যায় সময়ের সাথে সাথে;

যখন আমার তোর কথা খুব মনে হয়
যখন আমার তোতে ভিজতে ইচ্ছে হয়
আমি চাঁদের কাছে চলে যাই
তোকে আর কোথায় পাব বল?
চাঁদনিতে ভিজে ভিজে কান্না শুকাই;

যখন আমার খুব মন খারাপ হয়
যখন তোর থেকে অনেক দূরে সরে যেতে ইচ্ছে হয়
আমি সাগরের কাছে ছুটে যাই
সাগর আর কতটুকুই কাঁদাবে বল?
সে তো নিজেই কান্নার জল।

তোকে ভালোবাসা কিংবা না বাসাটা আমার হাতে ছিল
দূরে সরে যাওয়া শুধুই তোর হাতে।





মাটির টান




মাটির টান
- যাযাবর জীবন


এই সবুজ এই গ্রাম
মাটির কাছাকাছি মাটির টান,
সবুজ সবুজ ধানক্ষেত অবুঝ অবুঝ মন
ইচ্ছে হলে মাটি ইচ্ছে হলে বন
ক্ষেতের আল ধরে ধরে এঁকে বেঁকে চলা
গুনগুন ভাটিয়ালি মাটির কথা বলা
গাছের ফাঁকে ফাঁকে হরিয়াল ডাহুক
গ্রামে আসলেই মন মাটি, মাটিতেই সুখ।





ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিকা




ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিকা
- যাযাবর জীবন


ঈর্ষা
সবাই বলে মানবিক ব্যাধি;

টাকা পয়সা
সহায় সম্পত্তি
শিক্ষা দীক্ষা
বন্ধু বান্ধব
প্রেমিক প্রেমিকা
কত কিছুই না মানুষের থাকে!
এগুলোর কোনটাই আমার নেই;

তবে একটা জিনিষ আমার আছে
অনেক বেশী মাত্রাতেই আছে,
ঈর্ষা
এক মানবিক ব্যাধি,
তোমার আছে কি?

সবচেয়ে ভয়াবহ কি জান?
যখন আমি ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিক,
এ ব্যাধি মানবিক নয়
মানসিক;

আরও মজার ব্যাপার জান কি?
প্রেমিক তবুও সহ্য করে,
ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিকা?
প্রেমিককে রক্ষা কর আল্লাহ্‌।





নানা রকম গল্প




নানা রকম গল্প
- যাযাবর জীবন


প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একটা গল্প থাকে,
কারোটা খুব সাদামাটা
বেশীরভাগ গল্পগুলোই বড্ড জটিল;

সাদামাটা গল্পগুলো সাদামাটা জীবনেই শেষ হয়ে যায়
সাদামাটা ভাবে;

জটিল গল্পগুলো বেশীরভাগ রক্তাক্ত করে
একটা গল্প হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে খুব অল্পতে
কিন্তু তার রেশ রয়ে যায় সারাটা জীবন ধরে;

জটিল গল্পগুলো বেশীরভাগ সংসার কেন্দ্রিক;

কারো বাল্য বিবাহ কারো বয়স বৈষম্য
কারো স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য
কোন সংসার পরকীয়ায় আক্রান্ত
আর বিচ্ছেদে দাম্পত্য;

অবহেলিত সন্তানের গল্প বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ
কিংবা দুর্ঘটনায় বাবা-মা হারানো
বাবা-মা হারা সন্তানের কষ্ট, পরগাছা হয়ে জীবন যাপন;

অসুখ বিসুখ, শরীর, স্বাস্থ্য
অর্থ, স্বার্থ
রিপুর তাড়না
বিবেকের দংশন
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা;
প্রতিটা অনুভূতিই এক একটি গল্প তৈরি করে
প্রতিটা গল্পই এক একটা সম্পর্ক তৈরি করে
এক এক ভাবে, এক এক জনের জীবনে
কিছু সুখের সম্পর্ক গড়ার গল্প
আর বেশীরভাগ কষ্টের গল্প,
ভাঙনের গল্প;

ভাঙন
সে নদীরই হোক আর সম্পর্কের,
বড্ড পোড়ায়;
ভাঙন তো চোখের নিমিষে
ভাঙনের গল্প শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়
কষ্টের অনুভূতিটা সারাজীবন কাঁদায়।








মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮

ভালোবাসার বোকামি



ভালোবাসার বোকামি
- যাযাবর জীবন


মন একটা ঘর
ঘরের ভেতর অনুভূতির কেওর
একটা ছোট্ট জানালা, ভালোবাসার;

কেও জানালাটা খোলাই রাখে
চাঁদ ঢোকে, চাঁদনি ঢোকে
ঘর জুড়ে ভালোবাসার জুঁই গন্ধ ম ম করে;
কেও জানালায় উঁকি দেয় ভীরু চোখে
ভয়ে ভয়ে ভালোবাসার গন্ধ শুঁকে
জীবন কেটে যায় অর্ধ-ভোজনে
আর হা হুতাশ বিষণ্ণ নয়নে;
কেও কেও জানালা না খুলে কাঁচের শার্শিতে চাঁদ দেখে
চাঁদনি নাগালের অনেক দূরে
ভালোবাসার গন্ধ শুধুই আফসোসে;
কারো কারো জানালায় শার্শিই থাকে না
এদের বাস অন্ধকারে
জীবন কাটে ঘরের কোণে;

তোর জানালাটা হাট করে খোলা
আমি কোন দলেই পড়ি না
তবুও কেন তুই রক্তাক্ত হোস আমায় ভালোবেসে?

জীবন একটা ঘর
ঘর থেকে বের হলেই পথ
জীবনের পথ;

কেও এগিয়ে যায় দৃপ্ত পায়ে
পথের জয় পথ মাড়িয়ে,
কেও ভীরু ভীরু পা বাড়ায়
জীবন কি আগায়?
কেও এক পা আগায় তো দু পা পিছায়
জীবনে জয় থেকে বেশী পরাজয়,
কেও কেও কেওর বন্ধ করে ঘরে ফিরে আসে
জীবন থমকে থাকে ঘরের কোণে;

তোর দৃপ্ত পদচলা জয় জয়কারে
আমি কোন দলেই পড়ি না
তবুও কেন তুই রক্তাক্ত হোস আমার কাছে এসে?

গোলাপে তো কাঁটা থাকবেই
তবুও কেও হাত বাড়ায় রক্তাক্ত হতে
আর কেও দূর থেকে গন্ধ শুঁকে
তুই ক্যাকটাস আপন করেছিস ভালোবাসায় জড়িয়ে;
এত বোকাও মানুষ হয়?








বৈপরীত্য



বৈপরীত্য
- যাযাবর জীবন


সবাই যখন সাদা দেখে আমি কেন কালো দেখি?
সবাই যখন আলো দেখে, আমার চোখ অন্ধকার;

যখন তুই অনেক খুশি, তোর চোখেতে দুঃখ দেখি
ঠোঁটের কোণে তুই হাসি ধরিস, চোখের কোণে কান্না রাখিস
যখন তুই অভিমানে, রাগের প্রকাশ তোর মনে
যখন তুই সবার সাথে, একাকীত্ব তোর চোখে
যখন অনেক ভালোবাসিস, মনের মাঝে কান্না করিস,
এত বিপরীত অনুভূতি নিয়ে মানুষ বাস করে কিভাবে?

বৈপরীত্য কি তোর মনে না আমার চোখে?
আমিই কেন উল্টো দেখি?
তবে কি আমি উল্টো মানুষ?

উঁহু!
তা কেন হবে?
আমার মন যখন খুশি আমার মুখে তখন হাসি
আমার যখন হাসি পায় আমি হো হো হাসি
আমার যখন মন খারাপ তখন আমার কান্না পায়
আমার যখন কান্না পায় আমি আকুল কাঁদি;

মুখে হাসি নিয়ে চোখ কাঁদানো
আর মনে ভালোবাসা নিয়ে রাগ দেখানো
শুধু তোরই শোভা পায়,
বৈপরীত্য তোর মাঝে, আমার সরল অনুভূতি।




বিশেষ শ্রেণী




বিশেষ শ্রেণী
- যাযাবর জীবন


আজকাল দিনকাল জানি কেমন হয়ে গেছে!

আজকালকার সন্তান বাবার প্রেম দেখে
মায়ের সাথে নয়,
বিছানায় উলঙ্গ অন্য কার সাথে;

আজকালকার সন্তান মায়ের প্রেম দেখে
বাবার সাথে নয়,
উলঙ্গ জড়াজড়ি অন্য কারো সাথে;

আজকালকার বাবা-মা,
পরকীয়া ঘরে ঘরে;

আজকালকার সন্তান
ছেলে কিংবা মেয়ে হোক
শরীর'কে বড্ড সস্তা মনে করে,
আজকালকার সন্তান
স্কুল পর্ব শেষ হওয়ার আগেই
নিজের কৌমার্য হরণের গল্প করে,গর্বভরে;

আমি একটা বিশেষ শ্রেণীর কথা বলছি,
বাংলায় জন্ম নিয়েও যারা ইংরেজিতে ঘেউ করে;
অর্ধ শিক্ষিত বাবা-মা জোর করে ভুল ইংরেজি ঝাড়ে
আর অতি শিক্ষিত সন্তানের কাছে যেন ইংরেজও হার মানে;

কদিন পর এদের সতীত্ব খুঁজতে হবে ডিকশনারিতে।





সম্পর্কের সীমারেখা



সম্পর্কের সীমারেখা
- যাযাবর জীবন


সম্পর্কের একটা সীমারেখা থাকা উচিত
প্রতিটা সম্পর্কের;

এখন সময় লাগে না সম্পর্ক গড়তে
সময় লাগে না সম্পর্ক ভাঙতে
আজকাল সীমারেখা টানা হয় না কোন সম্পর্কে;

ইচ্ছে হলো তো বন্ধু ইচ্ছে হলো তো শত্রু
সীমারেখা নেই ভাব আর আড়ির মাঝে;

ইচ্ছে হলো তো ভালোলাগা ইচ্ছে হলো তো ঘৃণা
ইচ্ছে হলো তো প্রেমিক ইচ্ছে হলো তো বিচ্ছেদ;

পরকীয়া সম্পর্ক তো হরেদরে
পরকীয়া ঘরে ঘরে;

সীমারেখা হীন সম্পর্কগুলোতে বড্ড তাড়া
তাড়া গড়বার
তাড়া ভাঙবার
তাড়া প্রেমের
তাড়া বিচ্ছেদের
তাড়া শরীরের;

চোখাচোখি থেকে ভালোলাগা
ভালোলাগা থেকে ইশারা
ইশারা থেকে কাছে আসা
কাছে আসতে আসতেই প্রেমিক প্রেমিকা
সম্পর্ক শুরু হয় ঠোঁট থেকে
সময় লাগে না কাপড় খুলতে
আজকাল খুব বেশী তাড়া কাপড় খোলার
প্রেমিক প্রেমিকা কিংবা পরকীয়ার
সীমারেখা কোথায় ভালোবাসার
আজকাল প্রেম মানেই কি কাপড় খোলা?
খুব বেশী ভালগার হয়ে গেলো না?
সময় নেই চিন্তা করার;

তারপর
একদিন, দুদিন, তিনদিন
শরীরে শরীর মিলে প্রেমের প্রতিদিন
এক কথা থেকে দু কথা
দু কথা থেকে মনকষা
মনকষা থেকে অভিমান
অভিমান থেকে রাগ
রাগ থেকে বিচ্ছেদ,
বিচ্ছেদে যেন আরও বেশী তাড়া;

কালকের প্রেমিক আজকের চোখের বালি
প্রেমিকার বিরহ, সর্বস্ব কেড়ে নিলো
কাপড় কি জোড় করে খুলেছিল?

কালকের প্রেমিকা আজকের নাগিনী
প্রেমিকের বিরহ, ব্যবহার করে ছুঁড়ে দিল
কাপড় কি আরেকজন এসে খুলেছিল?

আজকাল সবকিছুতেই খুব তাড়া
সীমারেখা ছাড়া
সম্পর্ক গড়া ও ভাঙায়।




চাতক



চাতক
- যাযাবর জীবন


সব ঠোঁটেই চুমু হয়
আমার ঠোট পাখির নয়
তবুও বড্ড উপোষী রয়,

ঠোঁটে ঠোঁটে পাখির প্রেম
আমার বড্ড হিংসে হয়;

এর থেকে পাখি হওয়া ভালো।



কাছের মানুষ



কাছের মানুষ
- যাযাবর জীবন


খুব কাছের মানুষকে আমরা খুঁজে পাই না
অথচ সে আছে, আড়ালে হলেও খুব কাছে,
মনের আয়নায় তাকিয়ে দেখ মন খুলে
ওখানে কেও না কেও তো আছেই
ভালোবেসে, আর ভালোবেসে।




এলোমেলো স্বপ্ন



এলোমেলো স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন


কোন এক একাকী রাতে ভাঙা একটা চাঁদ থাকবে আকাশে
আর থাকবে একটু মেঘ
বাতাস থাকবে এলোমেলো
বাতাসে মেঘ ওড়াউড়িতে কখনো আধো জ্যোৎস্না কখনো ধুসর অন্ধকার,
জানালাটা খুলে রেখেছি
তুই আসবি আমার এলোমেলো স্বপ্ন বেয়ে
চাঁদ থেকে নেমে জ্যোৎস্না হয়ে
জানাল দিয়ে মেঘ ঢুকবে ঘরে
সাথে তুই;

আমি একাকী খাটে
তুই এলোমেলো চুলে আমার বুকে ঝরে পড়তেই আমি এলোমেলো
বুনো মহুয়ার কড়া গন্ধ তোর গায়ে
মাতাল হাওয়ায় একবার জানালা খুলছে আবার বন্ধ হচ্ছে
মাতাল হচ্ছি আমি তোতে
আধো জ্যোৎস্নায় সাদা শাড়িতে তোকে পরী লাগছে;

কোত্থেকে এক দুষ্ট বাতাস শাড়ির আঁচল উড়িয়ে দিতেই আমার চোখ পাহাড়ে
কি সুন্দর আহারে!
এতটা উচ্চতায় আমায় মানায়?
আমি উপত্যকা বেয়ে নামতে থাকি
দীর্ঘ ছন্দে তোর বুকের ওঠানামা দেখছি
একটা ঢোক গিললি কি?
গলা বেয়ে বুক হয়ে নাভিতে নাভিশ্বাস
ততক্ষণে বাতাসে আগুন
পুড়ছি আমি
পুড়ছিস তুই
পুড়ছে কাম;

বড্ড গরমে হাঁসফাঁস
জল কোথায়?
নদীতে;
আমি বললাম ডুব দেব?
তুই বললি বড্ড গভীর
আমি বললাম কি আসে যায়?
তারপর ডুবসাঁতার
তোর শীৎকার;

গোসল সেরে ডাঙায় উঠতেই তুই এলিয়ে পড়লি আমার বুকে
বললি বড্ড ঘুম পেয়েছে
চাঁদের বাতিটা নিভিয়ে দাও এবার,
আমি মেঘকে বললাম পরীর ঘুম পেয়েছে এবার ঢেকে দাও চাঁদ
মেঘ চাঁদ ঢেকে রাখলও সারারাত
পরী আমার বুকে ঘুম
আমি স্বপ্নের বুকে;

আচ্ছা! মাঝে মাঝে স্বপ্নগুলো সত্যি হলে কি এমন ক্ষতি হয়?
স্বপ্ন সত্যি হয় না,
কোন পরী আসে না জানালা বেয়ে
আমার নির্ঘুম একাকী রাত কাটে অন্ধকারে।






কাগজের বন্ধন, কাঁচের সম্পর্ক



কাগজের বন্ধন, কাঁচের সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


দাম্পত্য;
কাগজের বন্ধন,
কাঁচের সম্পর্ক
খুব ঠুনকো কাঁচ
যে কোন সময় ভেঙে যেতে পারে জোর বাতাসে
কিংবা একটু ঘষাতে,
বাতাস, অবিশ্বাসের
ঘষা, কানকথার;

কাঁচ পুরু হতে থাকে সময়ে
প্রেমে
ভালোবাসায়
বিশ্বাসে
শ্রদ্ধাবোধে,
পুরু হয় সম্পর্ক
সুখী হয় দাম্পত্য;

কালের স্রোতে ঝড় আসে ঝঞ্ঝা আসে
বিশ্বাসের দাম্পত্য অটুট থাকে
এক সময়ের ঠুনকো কাঁচ পুরু হতে হতে ক্রিস্টালে পরিণত হতে থাকে
কাঁচের দাম্পত্য পঁচিশ বছরে রজত জয়ন্তী পার করে;

রজত জয়ন্তী অনেকেই পার করে,
কেও সুখী হয়ে
কেও বাধ্য হয়ে
বাধ্য হয় জীবনের মোড়ে মোড়ে
কাঁচের সম্পর্ক ভাংতে পারে না বাধ্য হয়ে;
লোক লজ্জা
সন্তান
পরিস্থিতি
স্বার্থ
কত কিছুই না জড়িয়ে থাকে দাম্পত্য ঘিরে!

আমি অনেক দাম্পত্য দেখেছি
কাঁচের সম্পর্ক ভেঙে গেছে রজত জয়ন্তীর পরে
সেও কোন না কোন পরিস্থিতিতে
কোন না কোন কারণে
পরকীয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে;

পরকীয়া - এক নতুন ভাইরাস
আজকালকার যুগে,
বয়স মানে না
সম্পর্ক মানে না
লোকলজ্জা মানে না
শুধু চুর চুর করে ভেঙে দেয় কাঁচের দাম্পত্য
নিজের অজান্তে;

অনেক কাঁচের দাম্পত্য
প্রেম, ভালোবাসা আর বিশ্বাসে ধীর ধীরে পরিণত হয় অভঙ্গুর হীরে,
যারা অটুল বিশ্বাসে, অপার ভালোবাসায়
দাম্পত্যের পঞ্চাশ বছর পার করে
আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করি তাদের ঘিরে;
এ তো স্রেফ কাঁচের সম্পর্ক নয়
আমি বলি কোহিনূর হীরে।








ভাঙনের সন্তান



ভাঙনের সন্তান
- যাযাবর জীবন


আজকাল প্রেম করতে সময় লাগে না
সময় লাগে না বন্ধনে জড়াতে
সময় লাগে না কবুল বলতে,
কিছুদিন সং সেজে সংসার
ভাঙনের শব্দ আরও কম সময়ে
কাবিননামা ও তালাকনামার মধ্যবর্তী সময়ে
আরেকজন নতুন অতিথি চলে এসেছে
ততদিনে একটি ফুটফুটে শিশু দুজনার মাঝে
তাতে কি হয়েছে?
ভুল বুঝাবুঝি, ইগো আর অহংকারের কাছে সন্তান বড্ড তুচ্ছ
আজকালকার নিত্য কালচার;

আমি পুরনো মানুষ
ভাঙন সয় না
তবু দেখতে হয় প্রতিনিয়ত
নিজেরই আশেপাশে
কাছের ও দূরের মানুষের মাঝে চারিপাশে
ভাঙনের সংসারে বলির পাঠা হয় সন্তান;

বাবা মা আবার প্রেম করে
নতুন সম্পর্ক গড়ে
কিছু সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়
কেও কেও বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই পিঁড়িতেই ফাটল দেখে
দূরে সরে যায়;

যাদের নতুন সংসার তাদের পুরনো মধুচন্দ্রিমা নতুন করে
আগের ঘরের সন্তান থাক না আপাতত দাদী বাঁ নানীর কাছে,
ভাঙনের সন্তানদের কারো হয়তো নতুন বাবা মার সংসারে ঠাই হয়
আর বেশীরভাগ কোথাওকার নয়;
বাবা মার কাছে এরা বড্ড উচ্ছিষ্ট
দাদীর তো আর সংসার নেই, চাচার সংসার
চাচীর দাঁত পিষা,
নানীরও বা সংসার কোথায়, মামার আশ্রয়ে
মামীর কটু কথা;
জীবন কেটে যায় লাথি ঝাঁটায়
ঘৃণার বীজ তো বপন হয়ে গেছে ছোটবেলা থেকেই
কৈশোর কিংবা যৌবন একদম একার
ছেলেগুলো বেশীরভাগ বখে যায়
মেয়েগুলো গুমরে মরে চাচী আর মামীর সংসার যাঁতায়;

কতজন?
কতজন?
ভাঙনের সংসারে জীবন যাপন
কত কত ভাঙন আমার চোখের পাতায়;
এরা বড্ড অসহায়
এদের কেও নেই কোথাও।




অস্থির সময়




অস্থির সময়
- যাযাবর জীবন


আছে
কেও একজন তো আছেই
বুকের কাছাকাছি
মনের একদম কাছে;

সে আমায় জড়িয়ে রয়
আমায় অস্থির করে দিন আর রাতের সকল সময়
চিন্তা, চেতনা আর অনুভবে,
যখনি হাত বাড়াই
তাকে ধরতে যাই
সে স্পর্শের বহুদূরে;

দূরে থেকেও কাছে থাকা যায়
দূরে থেকেও পাশে থাকা যায়
খুব পাশে
একদম বুকের বাঁ পাশে
আচ্ছা! ওখানে কি হৃদয় থাকে?

হৃদয় থাকলেই কি মন কেমন করতে হয়?
কোন একদিন তাকে স্পর্শে পেলে জেনে নেব
কেন সে জড়িয়ে থাকে আপন হয়ে অষ্টপ্রহরের অস্থির সময়?
শিখে নেব তার কাছে, ভালোবাসা কারে কয়।






বোধহীন ভালোবাসা



বোধহীন ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসায় আশা থাকে
আকাঙ্ক্ষা থাকে
ভালোবাসার কিছু চাহিদা থাকে,
তোর কাছ থেকে আমি কোন আশাই করি না
আকাঙ্ক্ষা নেই আমার মাঝে
নেই চাহিদা
আমি বোধহয় তোকে ভালোবাসিই নি;

ভালোবাসায় ঈর্ষা থাকে
আমার দিকে কেও তাকালেই তুই লাল হয়ে যাস,
আমার কোন ঈর্ষা নেই
আমি বোধহয় ভালোবাসিই নি;

ভালোবাসায় রঙ বেরঙের অনুভূতি থাকে মনে
তুই ক্ষণে লাল, ক্ষণে নীল, ক্ষণে সবুজ
রংধনুর সব রং তোর মাঝে
অনেক ভালোবাসিস বুঝি?
আমি অনুভূতি বুঝিই না
আমার কাছে সব কালো আর সাদা
ভালোবাসার অনুভূতি আমার অজানা;

তুই মিছেই ভালোবাসা খুঁজিস বোধহীন পাথরে।




সন্দেহের গর্ত



সন্দেহের গর্ত
- যাযাবর জীবন


একদিন আমি আকাশ ছিলাম
তুই পাখি
অনেক উড়েছিস আমার বুকে
তারপর ভালোবাসার ডানা ভেঙেছিস সন্দেহের ভীষণ ঝড়ে;

একদিন আমি সাগর ছিলাম
তুই মৎসকুমারী
অনেক ডুবেছিস আমার বুকে
তারপর ঈর্ষায় ডুবে গিয়েছিস সন্দেহের তুমুল ঝড়ে;

ভালোবাসায় সন্দেহ শুধুই অবিশ্বাস ডেকে আনে
ভাঙনের কানফাটা শব্দ শুনতে পাস নি তুই,
আমি হারিয়ে গিয়েছি নীলের বুকে
নীল হয়ে;

তোর ভেতরটা দেখেছিস?
ওখানে একটা গর্ত আছে,
অন্ধকার গর্ত
আসলে কবর;
ওখানে একটা লাশ চাপা দেয়া আছে,
তোর ভালোবাসার,
উঁহু!
আমার।

সন্দেহটাকেই আজো বড্ড সন্দেহ তোর,
এখনো ভীষণ সন্দেহ নিয়ে মাঝে মাঝে গর্তে উঁকি দিস
মনে মনে ভাবিস
গর্ত থেকে শবটাকে টেনে তুলবি কি না;
আবার সন্দেহ মাথাচাড়া দিতেই মাটি চাপা দিস ভালোবাসাকে,
উঁহু!
আমাকে।