মানব তোমার জন্ম কোথায়?
মায়ের পেটে
নাপাকি'তে
একফোঁটা বীর্যে;
তারপর?
মায়ের পেট থেকে বের হতেই কেউ আমায় ধুইয়ে পরিষ্কার করে
খুব যতনে
আমি যখন তখন কাঁথা ভেজাই, শরীর থেকে নাপাকি বের করে
মা এসে পরিষ্কার করে
সেই জন্মের পর থেকে পাঁচ ছয় বা সাত বছর ধরে;
যখন তখন কান্না ছড়াই খিদে পেলে
মা এসে কোলে তোলে, কান্না থামায় স্তন্যদানে
খাওয়ায়, আদর করে, সোহাগ করে
তারপর লালন পালন, প্রয়োজনে শাসন
পারিবারিক বন্ধনে মানুষ করার ছলে
উঠতে বসতে একই কথা জপতে থাকে, মানুষের মত মানুষ হ বলে;
তারপর কৈশোর তারপর যৌবন
এখন আর আমার শরীরের ময়লা কারো পরিষ্কার করে দিতে হয় না
আমি নিজেই বেশ ভালো পারি
ধুয়ে মুছে সাবান শ্যাম্পু ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলি নিজেকে নিজে
আর শরীর থেকে প্রতিদিনের বের হওয়া ময়লা বর্জ্য!
সেও নিজেই পরিষ্কার করি খুব ভালো করে
না হলে যে গা ঘিনঘিন করে!
এই যে শরীর পরিষ্কার রাখা শিখে গিয়েছি!
মন পরিষ্কার করি কি দিয়ে?
রাজ্যের নাপাকি তো মনের মধ্যে প্রতিমুহূর্তে ঘুরেফিরে
সেই শরীরে যৌবন আসার পর থেকে
রিপুগুলো যখন থেকে দাঁত নখ বের করে গেড়ে বসেছে মনের ঘরে,
মাঝে মাঝে আয়নার দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেই
যদি বিবেক কামড় দিয়ে বসে!
যদি রিপুগুলো দমিয়ে দিতে চায়!
আমি যৌবনের দাসত্বে তখন, রিপুর গোলাম; যৌবনের চাহিদা কি ছাড়া যায়!
যে নারীর পেটে করে পৃথিবীতে এসেছি
যে নারীর জন্য পৃথিবী দেখেছি
সে তো মা, তাই না?
যে বোন স্নেহ দিয়ে কোলে করে ছেলেবেলা মাখিয়ে রেখেছিলো আদরে
সে শুধুই বোন, তাই না?
উঁহু! তারা শুধু মা নয়, তারা শুধু বোন নয়
যেদিন থেকে মন ময়লা আর মনে কুডাক
তারা নারী, আলাদা জাত
আমরা পুরুষ, আলাদা জাত
সেদিন থেকেই মনের মধ্যে শুরু হলো নোংরামি
ময়লায় ছেয়ে গেলো মন আর অশুচি হলাম আমি;
এ ময়লা তো ধুতে শিখি নি!
এ ময়লা ধুতে শেখায় না কেউ কাউকে
যারা মনের ময়লা ধুয়ে নিতে পারে নিজ থেকে, তারাই পুরুষ
আর বাকি সব ধর্ষক কাপুরুষ।
ওহে ধর্ষক! কি খুঁড়ছিস নারী দেহে?
বুকের তাল তাল চর্বি?
আরে নরাধম! ওটা খাইয়েই তো জীবন বাঁচিয়েছিল মা,
ভুলে গেলি?
নাকি আরো খুঁড়ছিস! কোথা দিয়ে বের হলি?
১০ অক্টোবর, ২০২০
#কবিতা
মনের ময়লা
- যাযাবর জীবন
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন