মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২

সম্পর্কের অট্টহাসি

 সম্পর্কের অট্টহাসি

 - আহসানুল হক 


আমার কারও সাথেই কোন সম্পর্ক নেই,

নিজেকে ছাড়া; 

তোমাদের কি অন্য কারও সাথে সম্পর্ক আছে? 

নিজেকে ছাড়া?  


না, না 

আমাকে উত্তর দিয়ে বিব্রত হতে হবে না 

ঐ যে সামনের আয়না দেখছ না! 

মনের বাতি জ্বালিয়ে তাকে উত্তর দাও, খুব গোপনে

যেন আর কেও না শোনে;


এই যে সম্পর্ক নামক এক গন্ডির মধ্যে আমরা আবদ্ধ! 

সেই জন্মের পর থেকে,

এগুলো নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছ? 

কখনো?  

একান্তে, খুব গোপনে!  

আমাকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে তোমাদের, 

তাই না? 

আসলে কি জানো! 

সম্পর্কগুলো কিন্তু জীবনের সাথে জড়িয়েই থাকে, স্বাভাবিক নিয়মে; 


সেই যে জন্মেরও আগে মায়ের নাড়ির সাথে

জন্মের পরে মায়ের কোলে, মায়ের বুকের ঘ্রাণে 

একটা সময় বাবার আদরে, চেনা হয়ে যায় বাবার ঘর্মাক্ত শরীরের ঘ্রাণ 

ক্রমান্বয়ে ভাই বোন,  আত্মীয় স্বজনরা 

তারপর জীবনে বন্ধু বান্ধব 

চেনার গন্ডি বাড়তে থাকে, সময় গাড়ির চাকায়;


একটা সময় বান্ধবী

থেকে প্রেমিকা,  

জীবন সুন্দর,  জীবনের চাকা 

ভালো লাগার সম্পর্ক থেকে ভালোবাসা 

প্রেমিকা থেকে স্ত্রী 

ভালোবাসার ডুব সাঁতার থেকে সম্পর্কের গভীরে ডুব দেয়া

সম্পূর্ণ অন্য এক সম্পর্ক,  রক্তের সম্পর্ক ছাড়া;


তারপর সন্তান, তাদের গায়ের ঘ্রাণ 

অন্যরকম জীবন,  অন্য এক সম্পর্ক,  নিম্নগামী ভালোবাসা 

তারপর শুধুই একাকীত্বের নিজের সময়

একলা নিজেকে নিয়ে ভাবা; 

আবার স্বার্থপর এর মত কথা,  

তাই না?


এই যে শত শত সম্পর্কের মাঝে আমি একলার একলা! 

এই যে হাজার মানুষের ভীড়েও একাকীত্বের হাহাকার! 

কখনো অনুভব করেছ তোমরা? 

খুব নির্জনে, একান্তে খুব একলা!

একটা সময় বাবা-মায়ের চিরচেনা ঘ্রাণ আর পাওয়া যায় না 

বাবা-মা একটা সময় ছেড়ে চলে যায়,

নিয়তি; 


একটা সময় ভাই-বোন, 

স্বার্থের গতি; 


একটা সময় বন্ধু বান্ধব, 

সময় কাটানোর ছল; 


একটা সময় ছেলে-মেয়ে,  

তাদের নিজেদের সংসার; 


বাকি রইলো কে? 

স্ত্রীর জন্য স্বামী 

স্বামীর জন্য স্ত্রী, 

কতক্ষণ?  

যতক্ষণ কথা বলা

যতক্ষণ জেগে থাকা

যতক্ষণ পাশে থাক,

তারপর?  

অন্ধকার, একাকীত্ব আর আমি;


তোমরা হয়তো জিজ্ঞেসা করবে,

তাহলে সম্পর্কগুলো? 

ওগুলো সময়ের 

ওগুলো মানুষের 

ওগুলো নামের, 

কিছু স্বার্থের কিছু অর্থের

কিছু ক্ষরণের কিছু দহনের 

কিছু ভালোলাগার কিছু খারাপ লাগার 

কিছু অনুভূতির কিছু অনুভবের;


রইলাম শুধু আমি

শুধুই আমি

সম্পর্কের জংগলে একাকীত্বের একলা গাছ

একলা দাঁড়িয়ে আমি; 


সম্পর্কের সাগরে একাকীত্বের একলা ঢেউ 

একলা ডুবন্ত আমি;


সম্পর্কের তারার মেলায় 

অমাবস্যার একলা চাঁদ 

একাকীত্বের একলা আমি; 


আর বাকি সব সম্পর্কগুলো? 

নামে ওরা ভীষণ দামী; 

বিশ্বাস করো! 

অন্ধকার আয়নার সামনে একলা দাঁড়িয়ে তুমিও একাকীত্বই দেখবে; 


কেও আমার মত নৈঃশব্দের চিৎকারে বলে ফেলে, 

কেও গলাফাটা বোবা চিৎকারে তোমাদের মত একলা কাঁদে; 

সম্পর্কগুলো সম্পর্কের নামে হো হো অট্টহাসে।


#কবিতা 


সম্পর্কের অট্টহাসি

 - আহসানুল হক 


২৫ অক্টোবর, ২০২২

দ্বিখণ্ডিত অমানুষ

 দ্বিখণ্ডিত অমানুষ 

 - আহসানুল হক 


মানুষের ঘরে জন্ম আর 

মানুষের মাঝে বসবাস

মানুষের ভেতরেই তার   

অমানুষের অমনিবাস; 


সেই ছোটবেলায়, 

যখন থেকে মানুষের ভাষা বুঝতে শিখা শুরু

শুরু মানুষের মত বুঝ হওয়া,   

তখন থেকেই শুনে আসছি - মানুষ হ 

মানুষের মত মানুষ হ,

সেই থেকে আমার মানুষ হওয়ার চেষ্টা;


বাবা মা পড়ালেখা করিয়েছেন, শিক্ষিত করে তুলেছেন

আর ক্রমাগত উপদেশ-বাণী - মানুষ হ, মানুষের মত মানুষ হ;


স্কুল কলেজে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকরা শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন 

আর ক্রমাগত উপদেশ-বাণী - মানুষ হ, মানুষের মত মানুষ হ;


ময় মুরুব্বী আর আত্মীয়-স্বজনদের যখন যেখানে যথেচ্ছা উপদেশ-বাণী

 -  মানুষ হ, মানুষের মত মানুষ হ;


আমি ক্রমাগত তাদের উপদেশ-বাণী শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছি

 - আমাকে মানুষ হতে হবে, মানুষের মত মানুষ,

অথচ কেউ কখনো বলে নি মানুষ হতে হয় কি করে!


হ্যাঁ! 

আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি ওখানে মানুষেরই অবয়ব,

হাত পা, চোখ নাক মুখ আর গড়নে একটা মানুষই দাঁড়িয়ে আছে;

তাহলে শেষ পর্যন্ত আমি মানুষ হয়েছি বোধহয়

আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি থেকে হো হো হাসি

তারপরই থমকে যাই;


হো হো হাসিতে ঠোঁটের ভেতর দিয়ে দাঁত জিহ্বা দেখা যায়

ঐ জিহ্বা দিয়ে কত মিথ্যা কথাই না বলেছি

ঐ দাঁত দিয়ে কত হারামই না কামড়েছি

ঐ মুখ দিয়ে কত গীবতই না করেছি! 

ঐ যে চামড়ার চোখের ভেতর আরেকটি চোখ!

ঐ চোখ দিয়ে কত ভালো কে খারাপ নজরে দেখেছি! 

ঐ যে হাত! 

ওটা দিয়েই তো রোজগার! 

 - হারাম হালাল কতটুকু বেছেছি? 

ঐ যে পা! 

 - কত খারাপ জায়গাতেই না চলে গিয়েছি! 

ঐ যে মনের ভেতর আরেকটি মন!

পাপে পরিপূর্ণ - আর কেউ না জানুক আয়না তো জানে!

তবে!

তবে আর মানুষ হলাম কোথায়?

মানুষের অবয়ব থাকলেই কি মানুষ হওয়া যায়?


অথচ মজার বিষয় কি জানো?

মানুষ হতে গিয়ে অমানুষ হয়ে হয়েও, পুরোপুরি কিন্তু অমানুষও হতে পারি নি;


ওকথা কেন বলছি?


মানুষ সাধারণত হাসে

আমি হাসতে হাসতে কখনো কেঁদে ফেলি;

মানুষ সাধারণত কাঁদে

আমার কান্না আসে না তবুও মাঝে মধ্যে কাঁদতে গিয়ে হেসে ফেলি;

মানুষ ভালোবাসে

অথচ আমি! ভালোবাসতে বাসতেই ঘৃণায় নীল হয়ে যাই;

মানুষ ঘৃণা করে 

আর আমি? ঘৃণা করতে গিয়েও ভালোবেসে ফেলি; 

তবে কি আমি মানুষ নই? 


অমানুষের নাকি চোখে ভাব খেলা করে না 

অথচ ঠোঁট হাসলেই আমার চোখ হাসে, দুঃখে কাঁদে;

অমানুষের নাকি মনে আবেগ থাকে না 

বেশীরভাগ অমানুষের নাকি মনই থাকে না, 

অথচ আমার এখনো আকাশ ভালো লাগে 

ভালো লাগে নদী, পাহাড়, সমুদ্র  

ঝুম বৃষ্টি নামলেই আমি খোলা আকাশের নীচে 

আকাশে চাঁদ হাসলেই আমি জ্যোৎস্নায় ভাসি   

তবে কি আমি পরিপূর্ণ অমানুষ হতে পারি নি?  


আয়নার সামনে দাঁড়ালেই দ্বিখণ্ডিত আমি,

আয়নায় ওটা কার প্রতিচ্ছবি?

মানুষ?

না অমানুষ?


মানুষের এত কাছাকাছি অমানুষের বাস?

আমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারি না, তোমরা চিনবে কি করে? 


 

#কবিতা 


০৩ নভেম্বর, ২০২২


দ্বিখণ্ডিত অমানুষ  

 - আহসানুল হক 



 

 


সবুজ টিয়া

 সবুজ টিয়া 

 - আহসানুল হক 


ঐ যে দেখ গাছের মাথায় 

সবুজ পাখি ঠোঁটটি লাল 

লোকে বলে টিয়া পাখি 

সবুজ পাতার গাছটি তাল; 


হিংস্র হলেও পোষ মানে 

টুকটুক টাক কথাও বলে

কামড়ে ধরে লাল ঠোঁটে 

মরিচ খায় ক্ষিদে পেলে;  


চোখের বলয় কমলা রঙের 

পালক কলাপাতা-সবুজ

পিঠের কিছু ফিকে নীলচে

ধূসর আভাযুক্ত ও হলুদ; 


স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পাখি

দেখতে দুজন একই রকম

পুরুষ টিয়ার থুতনি কালো      

স্ত্রীর থুতনি সবুজ গড়ন;  


গ্রাম গঞ্জ আর শহরে'তে 

সবখানেতেই দেখা মেলে

গভীর চোখে চেয়ে থাকে  

আলসে বসে গাছের ডালে; 


বাংলায় নাম সবুজ টিয়া 

লাল ঠোঁট আর সবুজ পেট  

ইংরেজিতে নাম তার 

Rose-ringed Parakeet. 


#কবিতা 


সবুজ টিয়া 

 - আহসানুল হক 


০৩ নভেম্বর, ২০২২ 


সুখ দুঃখ - হিবিজিবি কথা

 সুখ দুঃখ

 - আহসানুল হক 


সুখ দুঃখ জীবনের এপিঠ আর ওপিঠ

দুটো এতটাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করা বোধহয় সত্যিই কঠিন। 

কঠিন দুটোর সীমারেখা চিহ্নিত করা। 


একটা মানুষের জীবনে সুখী হতে হলে প্রথম ও প্রধান উপাদান কি?

জানি নব্বই শতাংশ মানুষই বলবে টাকা। 

আমি বলি সুস্থতা। 

কাড়ি কাড়ি টাকার নীচে চাপা পড়া অসুস্থ একটা মানুষ সুখী হতে পারে?

অসুস্থ বলতে আমি শারীরিক ও মানসিক দুটোর কথাই বলছি। 

এই যে কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জনের মানসিকতা! এটা কি মানসিক অসুস্থতা নয়?

টাকা উপার্জনের এই নেশাটাকে আমি মানসিক অসুস্থতাই বলি। 


একটা মানুষের কতটুকু টাকা প্রয়োজন?

জানি তোমরা বলবে প্রয়োজনের কোন সীমারেখা নেই। 

আসলেও কি সীমারেখা নেই?

টাকার পাহাড় গড়ে রেখে মানুষ এগুলো কোথায় নিয়ে যাবে?



তবে জীবনে টাকারও প্রয়োজন আছে। খাওয়া, পড়া, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা টাকা ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। 

তবে টাকার আধিক্য অবশ্যই মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আসে। টাকার আধিক্য মানুষ'কে অবৈধ জীবনযাপনের হাতছানি দিয়ে ডাকে। 

জীবন চলার জন্য পরিমিত টাকা যেমন স্বস্তির কারণ অপরিমেয় টাকা তেমনি মানুষের জীবনে দুঃখ ডেকে আনে। 


সুস্থতার পরের উপাদানটি কি?

পারিবারিক শান্তি। 

যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অগাধ ভালোবাসা, বিশ্বাস, পরস্পরের ওপর নির্ভরতা, পরস্পরকে শ্রদ্ধা।

ছেলে মেয়ে নিয়ে একসাথে মিলেমিশে বসবাস। 

বাবা-মা বেঁচে থাকলে ওনাদের'কে সাথে নিয়ে একান্নবর্তী পরিয়ার হয়ে এক ছাদের নীচে বসবাস। 

আজকালকার যুগে এটা অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। 

শাশুড়ি-বৌ মা-মেয়ে হয়ে থাকবে - এটা প্রায় অলৌকিক। তবুও কিছু পরিবার তো আছেই শাশুড়ি-বৌ এর হাঁড়িকুঁড়ির ঝনঝনের মধ্যেও সহনীয় পর্যায়ে একসাথে মিলেমিশে আছে; সেটাকে আমরা হিসেবে না ধরি।

আর ভাই-বোন এবং তাদের পরিবারের সাথে একসাথে মিলেমিশে থাকা?  প্রায় অসম্ভব একটি ঘটনা। তবুও লক্ষে একটি দুটি পাওয়া যেতে পারে; সেটাকেও হিসেবে না ধরি। 

তা হলে কোনটুকু হিসেবের মধ্যে আসবে? 

স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে একসাথে এক পরিবার - এটাই আজকালকার একান্নবর্তী পরিবার। ছেলের বিয়ে হলো, ঘরে বৌ আসলো; তো শুরু হলো পান ছেচুনির খটখট। তারপর শিল পাটার ঘষাঘষি, হাঁড়িকুঁড়ি নাড়ানাড়ি। ছেলে আলাদা বাড়ি নিয়ে আলাদা সংসার - স্বস্তি সবার। 

আর মেয়ে তো বিয়ে হয়ে জামাই বাড়ি - শ্বশুর বাড়ি গেলো তো ওখানেও একই চিত্র; সংসারটা বড়ই বিচিত্র। 

তাহলে কি দাঁড়ালো? 

মিলেমিশে থাকার নামই সুখ, আর মতের বা মনের অমিল হলেই সুখ'টা উল্টে গিয়ে মানুষের জীবনে দুঃখ নেমে আসে। পরিবারে শান্তির জায়গায় চলে আসে অশান্তি। 


বাকি রইলো স্বামী-স্ত্রী। 

পরস্পর আস্থায়, বিশ্বাসে, ভালোবাসায়, নির্ভরতায় জড়াজড়ি করে আছে তো সংসার টিকে আছে সুখের বাতাসে। তবে আজকালকার যুগে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এটার অংশও কমে যাচ্ছে। 

বাড়ছে কি? 

স্বামী'র পরনারীর প্রতি আর স্ত্রীর পরপুরুষে আসক্তি। 

পরকীয়া নামক নতুন এক ভাইরাসে ছেয়ে যাচ্ছে আজকালকার সমাজ ব্যবস্থা। 

ভার্চুয়াল জগত এক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী, বিষদ না বলি। ওটা আজকাল ঘর ঘরের কাহিনী।


যৌবনের কিংবা শেষ যৌবনের একটা বয়সে যত পরকীয়াতেই আসক্তি থাকুক না কেন, প্রৌঢ়ত্বে কিংবা বেলা শেষে কিন্তু দুজন দুজনার; যদি না পরকীয়া ভাইরাস এনাদের আলাদা করে দিয়ে থাকেন। এ বয়সটাতে সন্তানরা যার যার সংসারে, বাবা-মা গত হয়েছে সেও অনেক দিন হয়ে গেছে। ভাই-বোন?  সাধারণত: ওরা তো স্বার্থের সম্পর্কে, যদিও কিছু ব্যতিক্রম তো থাকেই। তো রইলো কে? যতদিন স্বামী বেঁচে ততদিন স্ত্রী, যতদিন স্ত্রী বেঁচে ততদিন স্বামী। 

তারপর একাকীত্বের এক অসহনীয় সময় - কবর পর্যন্ত। 



তাহলে মোদ্দাকথা কি দাঁড়ালো? 


"শক্ত করে হাতটা একটু ধরো

  সুখী সুন্দর দাম্পত্য গড়ো" 

 

১১ অক্টোবর, ২০২২


#হিবিজিবি_কথা  


সুখ দুঃখ

 - আহসানুল হক 
















মাটির গন্ধ - হিবিজিবি কথা

 মাটির গন্ধ 

 - আহসানুল হক    


মাটির একটা সোঁদা গন্ধ আছে। এখনকার চল্লিশ বা পঞ্চাশোর্ধ জেনারেশন যারা একসময় গ্রামে কাটিয়েছে তারা সেটা পায়; আর শহুরে কিংবা নতুন প্রজন্ম দুর্গন্ধ বলে নাক সিটকায়। এরা মাটির গন্ধই বোঝেই না। মাটির শরীর মাটির গন্ধ বুঝলে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক নয় কি?  


মাটির আলাদা আলাদা গন্ধ আছে। 

কুয়াশায় ভেজা মাটির গন্ধ একরকম আবার বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ আরেক রকম। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামলে একরকম সোঁদা গন্ধ আবার ঝুম বৃষ্টিতে সোঁদা গন্ধ ধুয়ে যাওয়া মাটির আলাদা একটা গন্ধ। কাঁদা মাটির গন্ধ সম্পূর্ণ অন্যরকম। জঙ্গলে পাতা পচে পড়ে থাকলে সে মাটির গন্ধ একদম আলাদা রকম। 


হাল চাষ দেওয়ার পর মাটি থেকে যে গন্ধ বের হয় সেটায় কৃষকের আশা মিশে থাকে। শহরের মানুষ তা বুঝবে কি করে? ধানের চারা লকলক করে বেড়ে উঠলে সবুজ ক্ষেতের ভেতর থেকে একরকম গন্ধ বের হয়। ঘাসও কিন্তু সবুজই হয়, তবুও ঘাসের মাঠের গন্ধের সাথে ধানের ক্ষেতের গন্ধের একটা ফারাক আছে। ফারাক আছে কাঁচা সবুজ ধানের ক্ষেতের সাথে সোনালী পাকা ধানের গন্ধের। ফারাক আছে ধান কেটে ফেলার পরে খড়ের গাঁদার সাথে ভেজা মাটি মিশে থাকা গন্ধের। আমরা ইট কাঠ পাথরের নগরীতে বাস করি, মাটির গন্ধের তারতম্য বুঝব কি করে?


শহরে থাকি আর গ্রামে, দেশে থাকি আর বিদেশে - মাটির শরীর একদিন ঠিক গন্ধ পাবে মাটির; সাড়ে তিনহাত মাটির তলায় শুয়ে। 



১০ অক্টোবর, ২০২২ 


#হিবিজিবি_কথা 


মাটির গন্ধ 

 - আহসানুল হক    

গ্রাম্য শহর - মনকথা

গ্রাম্য শহর 

 - আহসানুল হক 


মানুষের গ্রাম থাকে, থাকে গ্রামের বাড়ি। আমার কোন গ্রাম নেই, নেই গ্রামের বাড়ি। 


এই শহরেই আমার জন্ম, এই শহরেই বেড়ে ওঠা। সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি এটাই আমার গ্রাম, এটাই আমার বাড়ি, এখানেই আমার নাড়ি। 


একটা সময় এই শহরটা ঠিক শহর ছিলো না, ছিলো গ্রাম গ্রাম একটা মফঃস্বল অনুভব। এখানে বিল্ডিং বলতে ঐ উঁচু তিন দলা একটা বিল্ডিং, আর চারিদিকে ধু ধু খেলার মাঠ। অনেক দূরে দূরে এক একটা বাড়ি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে টিমটিমে কুপির বাতি আর নয়তো হ্যারিকেন। যারা একটু অবস্থাপন্ন ছিলো তাদের বাড়িতে হ্যাজাকের সাদাটে আলো। 


তারপর এক সময় কারেন্ট আসলো, ওটা আমার কেন জানি ভালো লাগতো না। তার থেকে ঢের বেশি ভালো ছিলো জোনাকির আলো, জ্যোৎস্না হলে তো কথাই নেই। আর যেদিন কারেন্ট চলে যেতো? আমরা এক ভোঁ দৌড়ে খাল পাড়ে। আমাদের আর পায় কে? বিকেলের খেলা দুপুর রাত অবধি গড়াতো; যতক্ষণ বাবা বা চাচার বাজখাই রাম-বকা কানে না ঢুকতো। 

আজকালকার ছেলেমেয়েরা কুপিবাত্তি চেনে কোথায়? হ্যারিকেন বাত্তির নাম শুনলেও হ্যাজাক বাতির কথা কয়জন জানে আমার সন্দেহ আছে।  


খালটা মরে গেছে সেই কবেই! নদীগুলোও প্রায় মরো মরো। জ্যোৎস্নার আলোতে নদীর পানিতে ঝিকিমিকি খেলা দেখি না কতযুগ হয়ে গেছে! তাও ভালো! যে এখনো চাঁদ ওঠে, এখনো জ্যোৎস্না ফোটে; এখনো কারেন্ট চলে গেলে রাতের বেলায় ছাদ আমায় আয়! আয়! ডাকে। 


আমি প্রায়শই জ্যোৎস্না রাতে ছাদের ওপর পাটি পেতে ঘুমিয়ে পড়ি। শেষ রাতের দিকে কেমন এক হিম হিম অনুভূতিতে দু হাঁটু পেটের ভেতর কুঁকড়ে শুয়ে থাকি, যেন মায়ের পেটের ওমের ভেতর শুয়ে আছি। দূর থেকে কুকুরের কান্না শোনা যায়। এখনো রাতে কুকুর কাঁদলে কেন জানি মনে অশুভ চিন্তা উঁকি দেয়। আহা! কোথায় জানি কাকে কি অলক্ষণ ডাকছে। কুকুরে কুউউউউউ কুউউউউউউ কান্নার সাথে জ্যোৎস্না মাখতে মাখতে ঘুমিয়ে পড়ি। 


আশেপাশের তিন চারটি মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে। আমি আলসেমি ছেড়ে উঠে পড়ি। তারপর নামাজ পড়ে ঘরের বিছানায় কাঁথা-মুড়ি শুয়ে পড়ি। বৌ নামাজ শেষ করে শুতে এসে মাঝে মধ্যে খোঁচা দেয় - চাঁদনির সাথে প্রেম হলো? 


আমি মৃদু হেসে হু হলো, বলে পাশ ফিরি।  


শহর আমাকে অনেক দিয়েছে, নাগরিক সভ্যতা; ইট কাঠের দালান থেকে বড় বড় অট্টালিকা। 

কিছু কি কেড়ে নেয় নি?

গ্রাম, মেঠো-পথ, ধানক্ষেত, নদী-নালা, খাল-বিল, খেলার মাঠ; পড়শিদের সাথে আন্তরিকতা!

এ শহর আমাকে অর্থ দিয়েছে - স্বার্থপরতা শিখিয়ে।

এ শহর আমাকে সম্পর্কহীন করেছে - আত্মীয়তার বন্ধন কেড়ে নিয়ে। 


আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় - সুযোগ দিলে তুমি কি আবার গ্রামে ফিরে যাবে?


আমি এক কথায় জবাব দিব - 'হ্যাঁ'। 



১০ অক্টোবর, ২০২২


#মনকথা 


গ্রাম্য শহর 

 - আহসানুল হক 


কারেন্ট নাই - রম্য

 কারেন্ট নাই 

 - আহসানুল হক 


গতকাল একটা ব্যড়াছ্যাড়া দিন ছিলো। ভোর ১১টায় ঘাইম্মা ভিজ্জা ঘুমের থন উইট্টা দেহি কারেন্ট নাই। উইট্টাই লেহার অযোগ্য একটা গাইল দিলাম। কারে দিলাম নিজেও জানি না। সরকার'রে না সিস্টেমরে না কারেন্ট কারখানার মালিকরে নাকি ভুসভুইস্যা গরম'রে কিচ্ছু কইবার পারি না। 


একদিকে প্যাচপ্যাচা ঘামা শইল আরেকদিকে দেহি তলপেডে চাপ দৌড়াইয়া বাথরুমে ঢুকবার গিয়া দেহি বাথরুম বন্ধ। ব্যাপার কি? চিক্কুর দা কইলাম বেটাইমে বাথরুমে কিডা রে? 

বৌ তার থাইক্কা দ্বিগুণ চিক্কুর দা উত্তর দিলো আমি বাথরুমে ঢুকলেই তর বাথরুম লাগে? ইট্টু শান্তিতে যে ছুডুঘরে বমু তর লাইজ্ঞা হেইডাও পারি না। আমার দিরং হইব তুই পুলার বাথরুমে যা। 

তলপেডে প্রেশার বাড়তাছে। আমি দৌড়াইয়া পুলার বাথরুমে ঢুকতে গিয়া দেহি ঐডাও বন্ধ। ধাক্কা দিতে পুলায় চিল্লায় উঠলো - কেডা রে খবিশের মত দরজা বাইড়াইতাছে। আমি মিনমিন কইরা কইলাম, বাপ তাড়াতাড়ি বাইর হ। পুলায় কইলো কেমনে বাইর হমু? আমার মাথায় শ্যাম্পু করছি, শইল ভিজা। আর তোমার বাথরুমে কি সমিস্যা? আমি কইলাম আমারটাতে তর মায় ঢুকছে। অহন আমার ইমারজেন্সি রে বাপ। পুলা কইলো -  কিচু করার নাই, তুমি আপুরটাতে যাও। 


দৌড়ায় মাইয়ার বাথরুমে বইতে বইতে লুঙ্গি মনে হয় নস্ট হইয়া গেলো। বুইড়া বয়সে এই এক জ্বালা। কিচুতেই কনট্রোল করা যায় না। :( 


যাউজ্ঞা কি জানি কইতাছিলাম? ও কারেন্টের কতা। বুইড়া বয়সে এই হইছে আরেক জ্বালা। এক কতা কইতে কইতে কুনহানদা আরেক কতার ভিত্রে ঢুইক্কা যাই! হুদাই মাইন্সের কাছে গাইল খাই। 


বাথরুমে বইয়া ত্যাগে আরামের সুখের লগে গরমে ঘামতে ঘামতে গোসল হইয়া ভাবলাম ঘাইম্যা যহন গোসল কইরাই ফালাইছি তাইলে একবারে ঝর্ণার তলে খাড়াইয়া পানি গোসল দিয়া তারবাদে বাইর হমু। ওম্মা! ত্যাগের সুখ ধোয়াধায়ির পালা আধাআধি শেষ আইতেই দেহি পুশ শাওয়ারের পানির চাপ কমতে কমতে বন্ধই হইয়া গেলো। 

এইডা কি তামশা? যাউজ্ঞা, বালটিত কিচু পানি ছিলো, অগত্যা পুশ শাওয়ার থুইয়া বালটি মগই ভরসা। 

গোসল মাতায় উঠলো। ঘামতে ঘামতে বাইর হইতে হইতে আবার অকথ্য কিচু গালি। কারে দিলাম বুঝলাম না। এলা মনে লয় পানির সরকাররে গাইল দিলাম। 


ইন্টারকমে চিক্কুরদা কেয়ারটেকাররে পানি নাই কেরে চিল্লাচিল্লি করতেই উনি জানাইলেন, স্যার লাইনে পানি নাই। ট্যাংকিতে যদ্দুর পানি আছে কারেন্টের লাইজ্ঞা উঠাইতে পারতাছি না। আমি আবার কারেন্টের সরকারকে কইষ্যা গাইল দিয়া ফুন থুইয়া দিলাম। 


ভাবছিলাম পেত্তেকদিনের লাহান লোডশেডিং। ঘন্টা খানেকের মইধ্যেই চইলা আইব। 

এক ঘন্টা যায়, দুই ঘন্টা যায়, তিন ঘন্টা যায় - ও মা! কারেন্টের সরকার মনেলয় আইজ আপিস বন্ধ কইরা বাইত গেসে গা। কারেন্টের কুনু খবরই নাই। ঘটনা কি? 

এইবার নেটের ভিত্রে ঢুইক্কা দেহি তুলকালাম কাণ্ড। দেশের আদ্দেক জায়গায় কারেন্ট নাই। কি সব গ্রিড গ্রুডে নাকি সমিস্যা হইছে, কহন কারেন্ট আইব কেউ কতি পারে না। তাও ভালা আইজ আসমান মেঘলা মেঘলা। চাইরটা বাজাইয়া দুপুরে খাওনের পর আমি ঘরের ভিত্রে গরমে টিকতে না পাইরা ছাদে গিয়া আধা উদাম হইয়া শীতল পাটি পাইত্তা ঘুম দিলাম। ঘুমের থাইক্কা প্রিয় আমার আর কিচু নাই। 


বাজখাই এক চিক্কুরে ধরফরাইয়া উইট্টা দেহি বৌ রনাঙ্গিণী মূর্তি ধইরা সামনে খাড়ায় আছে। আমি ভ্যবলার মত কইলাম, আবার কি হইলো? চিক্কুর পারতাছ কেরে? বৌ কইলো মিন্সের আক্কলডা কি? সারাদেশ জুইড়া কারেন্ট নাই, হাইঞ্জা হইয়া আইছে আর হেরে আমি সারা বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে তন্ন তন্ন কইরালছি; মোমবাতি কি আসমান থাইক্কা পড়ব রে? ঘরে বাত্তি দিতে হইব না? তড়া কইরা গিয়া মোমবাত্তি লইয়া আয়।

 

আমি অতি সুবোধ বাধ্য স্বামী। বৌ কইতে যা দেরি, আমি দৌড়াই নীচে নামতে যাইতেই বৌ চিক্কুর দা কইলো, বেলাইজ্জার বেলাইজ্জা লুঙ্গিডা ঠিক মত গিট্টু দিয়া যা, তুই নীচে যাইতে যাইতেই তো খুইল্লা পড়ব; আর শইল্যে একটা গামছা জড়ায় যা। বাড়ির মইধ্যে উদাম থাকস দেইহা উদাম গায়ে মহল্লা চষবি? 

আমি ঘরে ঢুইক্কা গামছা পড়তে পড়তে কইলাম, কয়ডা মোমবাতি আনুম? বৌ কইলো আইজ কারেন্ট আইব কি না কিডা জানে? গোটা দশেক লইয়া আয়। আমি কইলাম তাইলে একশ টিয়া দে। দশ টিয়া কইরা দশটা একশ টিয়াই তো লাগে তাই না? বৌ একশ টিয়ার নোট ছুইড়া দিতেই আমি খপ কইরা ধইরা দরজার দিকে। উনি পিছন থাইক্কা গজগজ করতেই আছেন - শালা ফকির, পকেটে একটা টেকাও থাকে না, টেকা পয়সা যে কই উড়ায় কি করে! ইত্যাদি ইত্যাদি। কউজ্ঞা, বৌরা না কইলে কি গফ'রা কইব? এইগুলা শুনতে নাই, জবাব তো ভুলেও দিতে নাই। 


আমি বাড়ির বাইরে গিয়া বন্ধুগো আড্ডায় ঢুইকা গেলাম। মোমবাতি আর মাতায় নাই। ঘন্টাখানেক পরে পুলায় খুঁজতে আইছে - বাপজান, মায় তোমারে ডাকে। আমার পেডের ভিত্রে গুড়গুড়াইয়া উঠলো। আইজ জানি কপালে কি আছে? 


আমি দৌড়ায় দোকানে গেলাম মোমবাতির লাইজ্ঞা। দোকানদার সালাম'রে কইলাম - আমারে দশটা মোমবাত্তি দে। সালাম কইলো দশটা মোমবাত্তি নাইক্কা। দুইট্টা আছে। আমি কইলাম যা আছে তাই দে। হেয় কইলো দুইট্টা না, একটা দিবার পারি। আইচ্ছা দে কইয়া আমি একশ টেকার নোট দিয়া কইলাম নব্বই টেকা ফেরত দে। হেয় কইলো কিয়ের নব্বই টেকা? আমি কইলাম মোমবাত্তির দাম দশ টাকা কইরা না? হেয় কইলো একটা মোমবাত্তি একশ টিয়া, নিলে নেন নাইলে রাস্তা মাপেন। 


আমি কইলাম - কস কি হা পু? মোমবত্তি কবের থন একস টিয়া হইছে? ইডা কি সোনার পানি দা ধুইয়া আনছস? হেয় আমার হাতের থন মোমবাত্তিডা টান দা লইয়া ক্যাশে রাইক্ষা কয় আফনে কুন দুনিয়ায় থাহেন। আইজ হাইঞ্জার থন মাইন্সে মোমবাত্তির লাইজ্ঞা দোকানে লাইন লাগায় দিসে। পেরথমে বেচছি বিশ টাকা কইরা, তারপর চল্লিশ, তারপর পঞ্চাশ তারবাদে আশি। এই দুইট্টা মোমবাত্তি আমার বাড়ির লাইজ্ঞা রাকছিলাম। একশ টিয়া কইরা দিলে আফনেরে একটা দিবার পারি আর বাকিডা পাঁচশ দিলেও দিমু না। আমার বাড়িতেও তো বাড়িওয়ালি আছে! ঘরে পিদিম না জ্বালাইলে হেয় আমারে জ্বালায় দিব। আফনে সারা মহল্লায় কেরে সারা ঢাকা শহরে কুনু দোকানে মোমবাত্তি খুইজ্জা বাইর কইরা দেহেন দেহি?         


আমি অবাক হইয়া হা কইরা চিন্তাইতাছি কি করুম? পুলা কইলো, বাপজান একটা পাইছ লইয়া লও। বাড়ি আন্ধার। তোমারে হাইঞ্জা বেলায় মোম কিনতে পাডাইছে, তুমি আড্ডাত পাইরা ভুইল্লা গেছ। আইজ তোমার খবর আছে। 


অগত্য নগদ একশ টিয়া দিয়া একটা মোমবাত্তি লইয়া বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। পুলারে কইলাম - তর মায়ে বিশ্বাস করব একটা মোমবাত্তির দাম একশ টিয়া? কনফার্ম কইব আমি বিড়ি খাইয়া টিয়া উড়ায়ালছি। 


পুলায় কইলো - সম্ভাবিলিটি আছে। 


বাড়ির কাছাকাছি গিয়া পুলার হাতে মোমবাত্তি দিয়া কইলাম - বাপজান তুই লইয়া যা; আমি তর ফুফুর বাড়ির থন ঘুইড়া আহি। রাইতে না আইলে বুঝবি তর ফুফু আইতে দেয় নাই। 


পুলা হাইস্যা কয় - পলাইতাছ, না? 


আমি মনে মনে কইলাম - আগে ঘরে বৌ আহুক রে বাপ, তারবাদে বুঝবি। মনকতা কইতে কইতে ঝিরঝির বৃষ্টি'তে ঘুটঘুইট্টা আন্ধার রাস্তায় নাইম্যা গেলাম।  


০৫ অক্টোবর, ২০২২ 


#রম্য  


কারেন্ট নাই 

 - আহসানুল হক 

অন্তর্দহন

 অন্তর্দহন 

 - আহসানুল হক 


বিচ্ছেদের পরেও মনে পড়ে তাকে 

ভালোবাসা ছিলো তো কখনো!  

তারপর প্রতিদিনের খুঁটিনাটি সংসারে 

হাড়ি-কুড়ি বাসনের ঝনঝনানো;   


কথা কাটাকাটি থেকে অভিমান

অভিমানে রাগ, রাগ থেকে দূরত্ব 

একটা সময় আলাদা দুজন  

তারপর থেকে বিচ্ছেদের একাকীত্ব; 

 

আজো মাঝেমাঝেই খুব একলা রাতে 

মনে পড়ে তাকে, রাগে কিংবা ঘৃণায় 

আসলে কি পুরোটাই তার দোষ ছিলো?  

অন্ধকারে দেখি না নিজেরে আয়নায়;


অভিমানে দুজন আলাদা হলেও  

মনে কি কখনো পড়ে না তাকে? 

তবে কেন নির্ঘুম চোখ একলা আকাশে

চাঁদের দিকে চেয়ে থাকে? 


একলা বিছানা একাকীত্বে কাঁদে 

স্মৃতি সাথে নিয়ে কাঁদি আমি 

ভালোবাসা আজও অনুভবে 

কেউ না জানুক, জানে অন্তর্যামী। 


০৪ অক্টোবর, ২০২২ 


#কবিতা 


অন্তর্দহন 

 - আহসানুল হক 


কাছে ও দূরে

 কাছে ও দূরে 

 - আহসানুল হক 


মানুষই ভালোবাসে

মানুষই দুঃখ দেয়;  


যখন দুঃখ পাই, পাহাড়ের কাছে যাই 

পাহাড়ের বিশাল নিস্তব্ধতার মাঝে হারিয়ে যাই 

অনুভূতিহীন পাহাড় কথাই বলতে পারে না 

দুঃখ দেবে কি করে?   


যখন কষ্ট পাই, নদীর কাছে যাই 

নদীর কুলকুল ধ্বনির মাঝে হারিয়ে যাই

নদী কথা বলে নিজের সাথে  

ডুবন্ত মানুষে তার কি যায় আসে? 


যখন কান্না পায়, সাগরের কাছে যাই 

সাগরের নোনা জলে চোখের জল মেশাই 

সাগরের গর্জন নিজের সাথে 

মানুষের কান্নায় তার কি যায় আসে? 


কাছের মানুষগুলো যখন দূরে ঠেলে দেয়!

স্বার্থ কিংবা অর্থের কারণে 

আমি প্রকৃতির কাছে চলে যাই 

সম্পর্কহীনতায় একাকীত্বের সম্পর্ক গড়তে; 


মানুষ ভালোবাসে, মানুষই দুঃখ দেয়

মানুষ হাসায়, মানুষই কাঁদায়;


যখন দুঃখ পাই, পাহাড়ের কাছে যাই  

পাহাড় আপন করে নেয় নিস্তব্ধ বিশালতায়


যখন কষ্ট পাই, নদীর কাছে যাই  

নদী আমাকে ডুবিয়ে দেয় কষ্টগুলো বুকে ধরে 


যখন কান্না পায়, সাগরের কাছে যাই 

সাগর নিজেই নোনা হয় আমার কান্না শুষে নিয়ে 


যখন মানুষ দূরে ঠেলে দেয়, প্রকৃতির কাছে যাই 

প্রকৃতি নিজের করে নেয়, মাটিতে মাটি করে;


মানুষই ভালোবাসে কাছে এসে 

মানুষই দুঃখ দেয় দূরে সরে

আমি ও আমার অনুভূতিগুলোর বসবাস 

আমাতেই, - কাছে ও দূরে।    


২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ 


#কবিতা 


কাছে ও দূরে 

 - আহসানুল হক 





পার্থক্য কোথায়?

 পার্থক্য কোথায়? 

 - আহসানুল হক 


খাদ্য জীবের প্রথম চাহিদা, 

এক এক জীবের খাদ্যাভ্যাস একেক রকম

কেউ তৃণভোজী কেউ মাংসাশী 

একমাত্র মানুষেরই সবকিছু চলে 

 - কাঁচা বা রান্না, হারাম ও হালাল, পেটে হজম হলে;


খাদ্যের প্রকারভেদ মানুষের মাঝেই সবচেয়ে বেশি 

আদতে প্রকারভেদ মানুষেরই মাঝে,  


প্রকারভেদ স্থানানুযায়ী 

 - পাহাড় অঞ্চলের মানুষ আর নদীর পাশের মানুষ

 - মরুভূমির মানুষ আর বরফের দেশের মানুষ; 


প্রকারভেদ খাদ্যের যোগানের সাথে 

খাদ্যের যোগান আর্থিক সংগতির সাথে 

বদলে যায় খাদ্য, খাদ্যাভ্যাসে

  - যদিও ধনী গরীব সবার পেটেই ক্ষুধা নাচে;


ধর্মের প্রকারভেদ অনুযায়ীও খাদ্যের কিছু বিধিনিষেধ থাকে 

বিধিনিষেধ থাকে বয়সের ব্যবধানে 

বিধিনিষেধ অসুখ বিসুখ আর ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে 

বেশীরভাগ মানুষই বিধিনিষেধ মেনে খাদ্য গ্রহণের চেষ্টায় থাকে 

অল্প কিছু ব্যতিক্রম তো সব জায়গাতেই আছে;


কাঁচা বা রান্না 

আমিষ বা নিরামিষ 

মাছ বা মাংস

শক্ত বা নরম 

হারাম বা হালাল 

খাদ্যের যতই প্রকারভেদ থাকুক যতই 

থাকুক যত অসামঞ্জস্য প্রাপ্তি আর চাহিদার মাঝে 

 - মানুষ মাত্রই খাদ্য গ্রহণ করে; 


খাদ্য গ্রহণ মানেই বর্জ্য ত্যাগ 

 - এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম,  

আচ্ছা! কোন ভাবে কি বোঝা যায়, কোনটা কোন শ্রেণীর মানুষের বর্জ্য?

  - ধনীর না গরীবের? সাদার না কালোর? 

 - হিন্দুর না মুসলমানের, খৃষ্টান না বৌদ্ধের?  

 - পাহাড়ি না নদী পাড়ের? মরুভূমির না মেরু অঞ্চলের? 


এই যে আমরা মানুষের মাঝে শ্রেণিভেদ করি!  

আদতে পার্থক্য কোথায়? 

 - মানুষে মানুষে! 



মৃত্যু অমোঘ বিধান, 

প্রতিটা জীবিতেরই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয় 

ধুঁকে ধুঁকে কিংবা হঠাৎ করে 

নির্দিষ্ট একটা বয়সের পরে কিংবা যে কোন সময় - হঠাৎ করে 

জন্মেই কেউ মারা যায়, কেউ শতায়ু পায়; 


অথচ মানুষই মানুষে মানুষে  সবচেয়ে বেশি প্রকারভেদ করে, 

শ্রেণিতে শ্রেণিতে আর গোত্রে গোত্রে ভাগাভাগি করতে করতে মুখে বুলি ঝাড়ে 

 - মানুষ মানুষের তরে; 


মানুষে মানুষে প্রকারভেদ গায়ের রঙ অনুযায়ী

 - সাদা, কালো, হলদেটে কিংবা বাদামী বলে

প্রকারভেদ আর্থিক অবস্থান অনুযায়ী 

 - ধনী, গরীব কিংবা মধ্যবিত্ত হলে

প্রকারভেদ স্থান অনুযায়ী 

 -  পাহাড়ি মানুষ, মরুভূমির মানুষ কিংবা বনাঞ্চলের

প্রকারভেদ ধর্মানুযায়ী 

 -  হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃস্টান বিভাজনে; 

 

এক এক জায়গার মানুষ এক এক রকম

এক এক মানুষের আকার আকৃতি এক এক রকম 

মানুষের ধর্ম গোত্র বর্ণ এক এক রকম 

মানুষে মানুষে বিভাজন! মানুষেই করে 

 - যদিও মরতে হয় সবাইকেই, কেউ থাকে না চিরতরে; 


মানুষ মরে যত্রতত্র, হরেদরে 

সুস্থ অবস্থায় ফট করে কিংবা রোগে শোকে ভুগে ভুগে 

স্বাভাবিক নিয়মে কিংবা এক্সিডেন্টে, 

যতক্ষণ শ্বাস চলে ততক্ষণই তাকে মানুষ বলে

তারপর মানুষ নামক জীবটি, মানুষ নাম হারিয়ে খাটিয়ায় পড়া থাকে 

 - শব হয়ে;

 

ধর্মানুযায়ী এক এক শবের সৎকার এক এক ভাবে 

কোন শব পুড়ে যায় আগুনে 

কোন শবের স্থান হয় মাটির তলে,

মাটির তৈরি মানুষ ছাই হয় কিংবা মাটি হয়, মরে গেলে;  


এই যে পুড়ে ছাই হলো কিংবা মাটি হলো! 

সেখান থেকে বুঝতে পারবে শবটা কোন শ্রেণীর মানুষ ছিলো? 

 - ধনী না গরীব? সাদা না কালো? 

 - পাহাড়ি না নদী পাড়ের? মরুভূমির না মেরু অঞ্চলের? 

 - হিন্দু না মুসলমান? বৌদ্ধ না খৃস্টান? 


এই যে আমরা মানুষের মাঝে শ্রেণিভেদ করি!  

আদতে পার্থক্য কোথায়? 

 - মানুষে মানুষে! 


২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ 


#কবিতা 


পার্থক্য কোথায়? 

 - আহসানুল হক 


একলা মা, একলা বাবা

 একলা মা, একলা বাবা 

 - আহসানুল হক 


জীবনের এক এক স্তর, মানুষের একেক রকম

প্রতিটা স্তরেই আমরা আসলে বড্ড একলা ভীষণ

কখনো বাবা, কখনো মা কখনো বা সন্তান আমি

কখনো সুখ, কখনো দুঃখ, জীবনটা এমনই জানি; 


একটা সময় স্বামী স্ত্রী দুজনার মাঝে গভীর প্রণয় ছিলো 

দুজনার ভালোবাসায় ঘর আলো করে একটি শিশু এলো   

তারপর আরেকজন, তারপর মতের অমিল যখন তখন 

প্রায়শই ঝগড়া আর নিত্য কথা কাটাকাটি, স্বামী স্ত্রী দুজন;  


একসময় আমরা দুজন আলোচনায় আলাদা হয়ে গেলেম

ছেলে মেয়ে দুটোকে আমরা দুজন ভাগাভাগি করে নিলেম

তুমি সিঙ্গেল বাবা হয়ে মেয়েকে নিয়ে আছ বড্ড সুখে

আমি সিঙ্গেল মা হয়ে যত কালিমা মেখেছি লোক মুখে;  


সিঙ্গেল বাবা হওয়া যতটা সহজ মা হওয়াটা বড্ড কঠিন

চাকরি করে সন্তান পালন ভয়াবহ কাটে মায়ের দিন 

বাবারও হয়তো বেশ কষ্ট হয়, একা সন্তান পালনে 

একলা মা দিনরাত খেটে মরে অর্থের প্রয়োজনে;  


এক সময় দুজনাই বোঝে জীবনের ভুলগুলো 

শুধু শুধুই তুচ্ছ কারণে দুজনে মিলে ঝগড়া করেছিলো 

সিঙ্গেল বাবা আর সিঙ্গেল মায়ের সন্তানরা দুঘরে বড় হয় 

বাবা আর মায়ের দুজনেরই নামেই তো সন্তানের পরিচয় 


এক সময় দু'ঘরে দু সন্তান বড় হয়ে পাখা মেলে

এক সময় দু'ঘরে একলা বাবা মা সন্তানদের বিয়ে হলে

এক সময় সিঙ্গেল বাবা একলা বাসায় একা ধুঁকে 

অন্য বাসায় সিঙ্গেল মা কাঁদে আদরের পুত্র শোকে;  


একসময় সন্তানরা বড় হলে যে যার পথ দেখবেই 

সিঙ্গেল বাবা আর সিঙ্গেল মায়ের কান্নায় চোখ ভিজবেই  

দু বাসায় দুজনার চোখের পানি, একা একা কথা বলে  

একাকীত্বের সমাপ্তি হবে, দুজনার ভবলীলা সাঙ্গ হলে।


  

একলা মা, একলা বাবা 

 - আহসানুল হক 



#কবিতা


১৯ জুন, ২০২২




   

জীবনের রূপ রঙ

 জীবনের রূপ রঙ 

 - আহসানুল হক 


একটা বয়স থাকে মন যেমন তেমন 

কখনো খেলা, কখনো আড্ডা কখনো মৌজ মাস্তি

আর প্রেমে পড়া? সে তো যখন তখন

সেটা কৈশোরে অথবা যখন যৌবন; 


বয়সের সাথে সাথে মন বদলায়, বদলে যায় মানসিকতা

তারপর জীবনের দৌড়, আর জীবনের প্রয়োজনে টাকা উপার্জন

সংসার, পরিবার, সন্তান সন্ততি, তাদের প্রতিষ্ঠিত করার যত আয়োজন

তারও কিছু পরে অবসর, কিছুটা থিতু হয়ে বসার সময় 

সময় পেছনে তাকানোর, সময় পাওয়া আর না পাওয়ার হিসেব কষার

সন্তানরা? যার যার জীবনে; বাকি সময়টা স্বামী স্ত্রী দুজনার    

কোন একজন ছেড়ে গেলে আরেকজনের স্মৃতির জাবর কাটা 

আর একাকীত্বের এক জীবন, এ সময়টা বড্ড অন্যরকম; 


এ বয়সটাতে কারও সুখ, কারও দুঃখ; এক একজনের জীবন একেক রকম 

তবে সবাই পুরনো স্মৃতির জাবর কাটে, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজন

মাঝে মধ্যে পুরনো বন্ধুবান্ধবদের মিলন মেলা, আর কিছু নিত্য যোগাযোগ 

এ সময়টা কথা বলার, এ সময়টা জীবন'কে বোঝার, পেছনে তাকাবার; 

এ সময়টায় বেশীরভাগ ধর্মে মেতে ওঠে, পরকালের প্রস্তুতি নেয় 

আর বাকি অবসর সময় পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে হাসি গল্পে মেতে

এই যে সহচার্য! এটা শুধুই মানসিক; সময় কাটানোর উপাচার্য মাত্র 

এ সময়টা ঠিক প্রেমের জন্য উপযুক্ত সময়, বন্ধুত্বটুকুই ঠিক আছে   

ঢলা যৌবনে প্রেম মানায় না, তবে কিছু মানুষ থাকে যাদের আলু ত্রুটি যায় না 

আজকাল যদিও পরকীয়া নামক এক ভাইরাসের আক্রমণ বড্ড প্রকট

তবে ওটা আসলে প্রেম না, আমি বলি শরীর; ঐ যে! আলুর দোষ 

যৌবনে তাও না হয় আলু সয়; ঢলা যৌবনে? শর্করা বাদ দিতে হয় 

সবাই বোঝে; বেশীরভাগই মেনে চলে, আর লাজ-লজ্জাহীন অল্প কিছু থাকে

এদের সবাই'কে নিয়েই সুখে দুঃখে মিলেমিশে রঙ রূপের মনুষ্য জীবন। 


 

জীবনের রূপ রঙ 

 - আহসানুল হক 


#কবিতা 


১৩ জুন, ২০২২


তেরো বয়স বয়সটা

তেরো বছর বয়সটা  

 - আহসানুল হক 



তেরো খুবই একটা আশ্চর্য বয়স 

কলির পরে ফুল, বারোর পরে তেরো

প্রথম প্রথম মনে প্রেম আসে তখন 

বড্ড মন কেমন কেমন! কি যেন চায় আরও; 


তেরো বছর বয়সটা একদম অন্যরকম 

কৈশোর হলেও যেন ঠিক কৈশোর না

যৌবন হব হব করেও পুরোপুরি যৌবন না 

বারোর কোঠা পার হতে না হতেই, আসে তেরো;


যৌবন তেরোতেই আসি আসি, কৈশোরটা ছিলো বারো

তের'কে যতই লোকে অপয়া বলুক না!  

একবার ভেবে দেখো, সবারই বয়স ছিলো তেরো 

আর পাশের বাড়ির মেয়েটি! ক্ষণেক্ষণে মনে পড়তো আরও;


তেরো'তে যৌবনের ঘণ্টা, তেরো'তে প্রেম 

কামের প্রথম শিহরণ, সেও সেই তেরোতেই

চুপেচুপে সিগারেট আর নিষিদ্ধ কাজের প্রতি আকর্ষণ

বন্ধুবান্ধব এক হয়ে শুরু সেই অপয়া তেরোতেই;


তেরো'তেই হয়েছিলো আমাদের প্রথম প্রেম 

তেরো'তেই প্রথম মন কেমন কেমন 

তেরো'তেই তার আঁখি'তে আঁখি মিলেছিলো  

আর হৃদয়ে হৃদয়ে ভালোবাসার গুঞ্জন;


তেরো মাস প্রেম করার তেরো তম দিনে 

তেরো রঙের তেরোটা গোলাপ দিয়েছিলাম তাকে 

তেরোবার গোলাপের ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে  

তেরোবারই বলেছিলো ভালোবাসে আমাকে; 

    

কোন এক জন্মদিনে উপহারে তাকে  

তেরোটা শাড়ি কিনে দিলাম 

তেরোবার তেরো রঙের শাড়ি বদলিয়ে শেষে 

শাড়িহীন প্রেমে বিলীন হলাম; 


আজো প্রতি চন্দ্রমাসের তেরো তারিখে আমরা

দুজনাই আকাশের দিকে চেয়ে থাকি 

যদিও দুজন বিচ্ছেদে দুদিকে 

তবুও তেরো'তে চাঁদের জ্যোৎস্না দেখি;  


লোকে তেরো'কে যতই অপয়া বলুক 

আমাদের জীবনের সোনালী সময় 

তেরো'তেই আমাদের প্রথম প্রেম

সারাজীবনেও কি তেরো ভোলা হয়?



তেরো বয়স বয়সটা 

 - আহসানুল হক 



#কবিতা 


১৩ জুন, ২০২২ 


 




 


 





   




 

মাটির তৈরি ঘর

 মাটির তৈরি ঘর 

 - আহসানুল হক 


মাটির তৈরি শরীর তোর,  মাটির তৈরি ঘর

রুহুটা ঘর ছাড়িলে,  শরীর হইবে পর

এক ফুঁৎকারে রুহ শরীরে, এক ফুঁৎকারে বাহার

রুহুটা ঘর ছাড়িলে,  শরীর মাটির আহার;


শরীর হইলো মাটির দলা, রুহু বিহনে 

রুহুটা কোথায় আছে কেউ কি তা জানে? 

বিজ্ঞানীরা রুহু খোঁজে শরীরের ভেতর 

রক্ত মাংস মাটি যে হয়, শরীর ছাড়লে পর;


রুহু হইলো আল্লাহর ইচ্ছা, জীবন আর মরণ 

মানুষের সাধ্য কি করিতে খণ্ডন 

এক ফুঁৎকারে জীবন তোর এক ফুঁৎকারে মরণ

ক্ষণিকের পৃথিবীটা পরীক্ষার মতন ;


কেন এত আস্ফালন, কিসের অহংকারে?   

চোখটা বন্ধ হইলেই তো, যাবি মাটির ঘরে 

দুদিন এর এই পৃথিবী,  কি করেছ সঞ্চয়? 

রুহুটা ঘর ছাড়িলেই জবাব দিতে হয়;


আস্তিক নাস্তিক যত মানুষ, আল্লাহ সবার এক 

হিসাব নিবেন জনে জনে, হাসর হবে এক  

সাক্ষী দিবে অঙ্গ অঙ্গ, ভালো খারাপ কাজ 

দুদিনের বাহাদুরিতে যাহাই করছ আজ;


রুহুর বাস শরীরেতে, মানুষ ভেজাল খাটি 

রুহুটা ঘর ছাড়িলেই শরীর তোর মাটি 

এত কিসের অহংকার মানুষে করে? 

দুদিনের জীবন শেষে যাবি মাটির ঘরে।


মাটির তৈরি ঘর 

 - আহসানুল হক 


#কবিতা 


১০ জুন, ২০২২



মন সব জানে

 মন সব জানে 

 - আহসানুল হক 


বার এ বসে আমি, মদের গেলাসে 

চোখ বুঁদে আসে, কি এক আয়েশে 

পেগের পর পেগ, চানাচুর প্লেটে  

খিদে টান দেয়, একসময় পেটে 

অর্ডার হাঁকি বার টেন্ডারকে ডেকে 

হালাল চিকেনের খোঁজ করি হেঁকে 

মদের সাথে হালাল মুরগী!  যায় না

আমার পেট, হারাম কিছু খায় না;


অফিসে বসে, ক্ষমতার চেয়ারে 

মুই কি হনু রে! আহারে আহারে 

ফাইলের বোঝা, টেবিলটা জুড়ে 

ড্রয়ারে ঘুষ এলে, হাত সাইন করে 

কোরবানি সামনে, গরু কিনতে হবে

ঈদের আগে ঘুষ, কিছু বাড়তি দেবে 

ঘুষের টাকায় কোরবানি, হয় নাকি?

হুজুরদের কথা শুনলে, চলে নাকি?


কাড়ি কাড়ি টাকা, অবৈধ রোজগার 

সৎ পথে আয়, ইদানীং কে করে আর 

ব্যাঙ্কের ভল্ট উপচানো, টাকার পাহাড় 

তিল তিল ঘুষে, সঞ্চয় হয়েছে আমার 

এবার হজ্জ করে,  সৎ হয়ে যাবো 

লাক্সারি হজ্জ প্যাকেজ, শেষ ঘুষটা খাব

সব পাপ ধুয়ে যায়, হজ্জ করে এলে

ঐ তো তোমাদের, ঐ হুজুররা বলে;


হালাল মুরগী, খুঁজছ বারে বসে? 

কুকুরের মাংস, খাও পেট ঠেসে 

ঘুষের টাকায় কেন কিনছ গরু? 

শুয়োর কোরবানি, তুমিই কর শুরু

অসৎ রোজগারে হজ্জ করছ কেন? 

সৎ পথ না চিনলে, ভিক্ষা ভালো জেনো

হারাম রোজগারে, হালাল কিছু হয় না 

মন সবই জানে, লোভ মানতে চায় না।


মন সব জানে 

 - আহসানুল হক 


#কবিতা 


০১ জুন, ২০২২

একাকীত্বের একা

 একাকীত্বের একা 

 - আহসানুল হক 


আমি মাঝে মাঝে বড্ড একা হয়ে যাই

আসলে আমি মাঝে মাঝে একাই হতে চাই, 

অনেক মানুষের ভিড়েও তোমাদের মনে কখনো একাকীত্ব বাসা বেঁধেছে? 

আমার কিন্তু বেঁধেছে, 

আসলে ইচ্ছে করেই বাঁধিয়েছি একাকীত্বের ইচ্ছে বাসা 

মানুষের ভিড়ে আমার একাকীত্বের একা ; 


আকাশটাকে খেয়াল করে দেখেছ কখনো?

লক্ষ গ্রহ নক্ষত্র বুকে নিয়েও কেমন একলা একা? 

রাশি রাশি মেঘের সারিগুলোকে দেখ! 

ওর মাঝে লক্ষ লক্ষ বৃষ্টির ফোঁটা, প্রতিটি ফোঁটাই কিন্তু পড়ছে একা; 

নদী, সাগর আর মহাসাগরের দিকে তাকাও!  

ক্রমাগত ঢেউ এর ঢেউ, একের পর এক, অথচ প্রতিটা ঢেউ ভাংছে একা;


অনেক মানুষের মাঝেও আসলে আমরা কোন না কোন সময় সবাই একা

আয়নার সামনে যখনই দাঁড়াই, একটাই মানুষ দেখি ওখানে, বড্ড একা

চোখ বন্ধ করে যখনই নিজের মাঝে একা হয়ে যাই! 

নিঃসীম এক একাকীত্বের দেখা পাই, 

ভাবনার গভীরে উঁকি দিয়ে দেখি - জন্মেছি একা

মৃত্যুর গহ্বরে ডুব দিয়ে দেখি - যেতে হবে একাই 

 

১৩ মে, ২০২২


#কবিতা 


একাকীত্বের একা 

 - আহসানুল হক 


পরচর্চা

 পরচর্চা 

 - আহসানুল হক 


কারও কারও জীবনে সঠিক সময়ে বিয়েটা হয়ে ওঠে না 

হয়তো জীবিকার প্রয়োজনে অথবা অন্যকোন কারণে, 

কারও সময়ে বিয়ে হয়, আবার সময়ের অনেক আগেই বিধবা হয়

কিংবা বিপত্নীক, সেটা যার যার কপাল

তাই বলে কি মানুষ সারাজীবন একা কাটায়? 


কেউ কেউ কাটিয়ে দেয় 

কেউ কেউ জীবনের কোন একটা মোড়ে জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনী খুঁজে নেয়

এটাই স্বাভাবিক, এটাই হওয়া উচিৎ, 

একটা বয়সে একাকীত্ব অসহ্য লাগে

একটা বয়সে এসে কথা বলার মানুষ লাগে

যাদের আগে বিয়ে হয়েছিলো, সন্তান থাকলে ওরা একসময় যার যার জীবনে

যার যার সঙ্গী বা সঙ্গিনী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় নিজের জীবনে

বুড়ো বাবা কিংবা মা'কে দেখার মত এত সময় কোথায় আজকালকার সন্তানদের

কিংবা মানসিকতা? 

 

অনেকে তাই একটু বয়স হলেও সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজে 

আবার অনেকেই একটু বেশি বয়সেই বিয়ে করে,  

যে করে খুব ফুর্তিতে করে না, হয়তো করে অনেকটাই বাধ্য হয়ে 

তবে আশেপাশের লোকজনের আনন্দ ধরে না, গল্পে মাতার 

গীবতের চর্চা ঘরে ঘরে, পরচর্চা যে একটা অসুস্থ আনন্দ এটাই মানুষ জানে না  

আশেপাশের মানুষগুলোর মধ্যে এক একজনের এক এক রকম চর্চা 

 - শালা বুইড়া ভাম, বিয়া করছে, দেখছ নি করছেডা কি কাম? 

 - বুড়ি বেডি রঙ মাইখ্যা সং সাজছে, বুইড়া বয়সে মনে রঙ লাগছে; 

 - বুইড়া বয়সের বুড়াবুড়ি, বিয়া কইরা সাজছে ছোড়াছুড়ি;


 আজকাল তো আবার ফেসবুক ট্রল 

- বুড়া মিয়ার ইঞ্জিনের ওভারহোলিং  

- বুড়ি রসে টসটস 

- ও চাচামিয়া, সামলাইতে পারবা? 

- ও খালা! ধরলা তো ধরলা, যুয়ানডাই ধরলা? 

ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি 

আশেপাশের মানুষের মুখ পরচর্চা আর গীবতের লাদি, 

কেন রে বাবা! কোথায় তোদের চুলকানি?

তুই ওরটা খাস না ও তোরটা খায়?

যার যার তেল তার চরকায়,

তাই না?   


আরে বাবা! যে বিয়ে করেছে সে করেছে তার প্রয়োজনে 

তুইও করে ফেল না তোর দরকার হলে!  

পরের শয়নকক্ষে তোর আড়ি পাতার দরকারটা কি? 

আসলে খাইছলত, সহজে যায় নি?


তুই তোর ঘরে উঁকি দে 

ওখানেও অনেক গল্প আছে 

তোদের ঘর থেকেও হাড়ি খুন্তি ঝনঝন, কেউ শুনছে না তো! 

তোদের স্বামী স্ত্রীর নিত্য কুৎসিত ঝগড়া নিয়ে কেউ ট্রল বানাচ্ছে না তো! 

তুই যতটাই অন্যের গীবত করবি, তোরটাও মানুষ করবে তত;


এই যে তুই গীবত করলি! তোর উপকার হলো টা কি? 

এই যে আমি শুনলাম! আমারই বা লাভ হলো কি? 

আরে ভাই তোমরা বুঝবে না, এটা মনের ফুর্তি 

এছাড়া আর কি?


আজকাল পরের হাড়ির খবর কে আর নিতে যায়! 

আরে বাবা যায়, যায়! 

যার হাড়িতে ভাত কম সেই অন্য হাড়িতে চায়।



০১ মে, ২০২২


#কবিতা


পরচর্চা 

 - আহসানুল হক