কারেন্ট নাই
- আহসানুল হক
গতকাল একটা ব্যড়াছ্যাড়া দিন ছিলো। ভোর ১১টায় ঘাইম্মা ভিজ্জা ঘুমের থন উইট্টা দেহি কারেন্ট নাই। উইট্টাই লেহার অযোগ্য একটা গাইল দিলাম। কারে দিলাম নিজেও জানি না। সরকার'রে না সিস্টেমরে না কারেন্ট কারখানার মালিকরে নাকি ভুসভুইস্যা গরম'রে কিচ্ছু কইবার পারি না।
একদিকে প্যাচপ্যাচা ঘামা শইল আরেকদিকে দেহি তলপেডে চাপ দৌড়াইয়া বাথরুমে ঢুকবার গিয়া দেহি বাথরুম বন্ধ। ব্যাপার কি? চিক্কুর দা কইলাম বেটাইমে বাথরুমে কিডা রে?
বৌ তার থাইক্কা দ্বিগুণ চিক্কুর দা উত্তর দিলো আমি বাথরুমে ঢুকলেই তর বাথরুম লাগে? ইট্টু শান্তিতে যে ছুডুঘরে বমু তর লাইজ্ঞা হেইডাও পারি না। আমার দিরং হইব তুই পুলার বাথরুমে যা।
তলপেডে প্রেশার বাড়তাছে। আমি দৌড়াইয়া পুলার বাথরুমে ঢুকতে গিয়া দেহি ঐডাও বন্ধ। ধাক্কা দিতে পুলায় চিল্লায় উঠলো - কেডা রে খবিশের মত দরজা বাইড়াইতাছে। আমি মিনমিন কইরা কইলাম, বাপ তাড়াতাড়ি বাইর হ। পুলায় কইলো কেমনে বাইর হমু? আমার মাথায় শ্যাম্পু করছি, শইল ভিজা। আর তোমার বাথরুমে কি সমিস্যা? আমি কইলাম আমারটাতে তর মায় ঢুকছে। অহন আমার ইমারজেন্সি রে বাপ। পুলা কইলো - কিচু করার নাই, তুমি আপুরটাতে যাও।
দৌড়ায় মাইয়ার বাথরুমে বইতে বইতে লুঙ্গি মনে হয় নস্ট হইয়া গেলো। বুইড়া বয়সে এই এক জ্বালা। কিচুতেই কনট্রোল করা যায় না। :(
যাউজ্ঞা কি জানি কইতাছিলাম? ও কারেন্টের কতা। বুইড়া বয়সে এই হইছে আরেক জ্বালা। এক কতা কইতে কইতে কুনহানদা আরেক কতার ভিত্রে ঢুইক্কা যাই! হুদাই মাইন্সের কাছে গাইল খাই।
বাথরুমে বইয়া ত্যাগে আরামের সুখের লগে গরমে ঘামতে ঘামতে গোসল হইয়া ভাবলাম ঘাইম্যা যহন গোসল কইরাই ফালাইছি তাইলে একবারে ঝর্ণার তলে খাড়াইয়া পানি গোসল দিয়া তারবাদে বাইর হমু। ওম্মা! ত্যাগের সুখ ধোয়াধায়ির পালা আধাআধি শেষ আইতেই দেহি পুশ শাওয়ারের পানির চাপ কমতে কমতে বন্ধই হইয়া গেলো।
এইডা কি তামশা? যাউজ্ঞা, বালটিত কিচু পানি ছিলো, অগত্যা পুশ শাওয়ার থুইয়া বালটি মগই ভরসা।
গোসল মাতায় উঠলো। ঘামতে ঘামতে বাইর হইতে হইতে আবার অকথ্য কিচু গালি। কারে দিলাম বুঝলাম না। এলা মনে লয় পানির সরকাররে গাইল দিলাম।
ইন্টারকমে চিক্কুরদা কেয়ারটেকাররে পানি নাই কেরে চিল্লাচিল্লি করতেই উনি জানাইলেন, স্যার লাইনে পানি নাই। ট্যাংকিতে যদ্দুর পানি আছে কারেন্টের লাইজ্ঞা উঠাইতে পারতাছি না। আমি আবার কারেন্টের সরকারকে কইষ্যা গাইল দিয়া ফুন থুইয়া দিলাম।
ভাবছিলাম পেত্তেকদিনের লাহান লোডশেডিং। ঘন্টা খানেকের মইধ্যেই চইলা আইব।
এক ঘন্টা যায়, দুই ঘন্টা যায়, তিন ঘন্টা যায় - ও মা! কারেন্টের সরকার মনেলয় আইজ আপিস বন্ধ কইরা বাইত গেসে গা। কারেন্টের কুনু খবরই নাই। ঘটনা কি?
এইবার নেটের ভিত্রে ঢুইক্কা দেহি তুলকালাম কাণ্ড। দেশের আদ্দেক জায়গায় কারেন্ট নাই। কি সব গ্রিড গ্রুডে নাকি সমিস্যা হইছে, কহন কারেন্ট আইব কেউ কতি পারে না। তাও ভালা আইজ আসমান মেঘলা মেঘলা। চাইরটা বাজাইয়া দুপুরে খাওনের পর আমি ঘরের ভিত্রে গরমে টিকতে না পাইরা ছাদে গিয়া আধা উদাম হইয়া শীতল পাটি পাইত্তা ঘুম দিলাম। ঘুমের থাইক্কা প্রিয় আমার আর কিচু নাই।
বাজখাই এক চিক্কুরে ধরফরাইয়া উইট্টা দেহি বৌ রনাঙ্গিণী মূর্তি ধইরা সামনে খাড়ায় আছে। আমি ভ্যবলার মত কইলাম, আবার কি হইলো? চিক্কুর পারতাছ কেরে? বৌ কইলো মিন্সের আক্কলডা কি? সারাদেশ জুইড়া কারেন্ট নাই, হাইঞ্জা হইয়া আইছে আর হেরে আমি সারা বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে তন্ন তন্ন কইরালছি; মোমবাতি কি আসমান থাইক্কা পড়ব রে? ঘরে বাত্তি দিতে হইব না? তড়া কইরা গিয়া মোমবাত্তি লইয়া আয়।
আমি অতি সুবোধ বাধ্য স্বামী। বৌ কইতে যা দেরি, আমি দৌড়াই নীচে নামতে যাইতেই বৌ চিক্কুর দা কইলো, বেলাইজ্জার বেলাইজ্জা লুঙ্গিডা ঠিক মত গিট্টু দিয়া যা, তুই নীচে যাইতে যাইতেই তো খুইল্লা পড়ব; আর শইল্যে একটা গামছা জড়ায় যা। বাড়ির মইধ্যে উদাম থাকস দেইহা উদাম গায়ে মহল্লা চষবি?
আমি ঘরে ঢুইক্কা গামছা পড়তে পড়তে কইলাম, কয়ডা মোমবাতি আনুম? বৌ কইলো আইজ কারেন্ট আইব কি না কিডা জানে? গোটা দশেক লইয়া আয়। আমি কইলাম তাইলে একশ টিয়া দে। দশ টিয়া কইরা দশটা একশ টিয়াই তো লাগে তাই না? বৌ একশ টিয়ার নোট ছুইড়া দিতেই আমি খপ কইরা ধইরা দরজার দিকে। উনি পিছন থাইক্কা গজগজ করতেই আছেন - শালা ফকির, পকেটে একটা টেকাও থাকে না, টেকা পয়সা যে কই উড়ায় কি করে! ইত্যাদি ইত্যাদি। কউজ্ঞা, বৌরা না কইলে কি গফ'রা কইব? এইগুলা শুনতে নাই, জবাব তো ভুলেও দিতে নাই।
আমি বাড়ির বাইরে গিয়া বন্ধুগো আড্ডায় ঢুইকা গেলাম। মোমবাতি আর মাতায় নাই। ঘন্টাখানেক পরে পুলায় খুঁজতে আইছে - বাপজান, মায় তোমারে ডাকে। আমার পেডের ভিত্রে গুড়গুড়াইয়া উঠলো। আইজ জানি কপালে কি আছে?
আমি দৌড়ায় দোকানে গেলাম মোমবাতির লাইজ্ঞা। দোকানদার সালাম'রে কইলাম - আমারে দশটা মোমবাত্তি দে। সালাম কইলো দশটা মোমবাত্তি নাইক্কা। দুইট্টা আছে। আমি কইলাম যা আছে তাই দে। হেয় কইলো দুইট্টা না, একটা দিবার পারি। আইচ্ছা দে কইয়া আমি একশ টেকার নোট দিয়া কইলাম নব্বই টেকা ফেরত দে। হেয় কইলো কিয়ের নব্বই টেকা? আমি কইলাম মোমবাত্তির দাম দশ টাকা কইরা না? হেয় কইলো একটা মোমবাত্তি একশ টিয়া, নিলে নেন নাইলে রাস্তা মাপেন।
আমি কইলাম - কস কি হা পু? মোমবত্তি কবের থন একস টিয়া হইছে? ইডা কি সোনার পানি দা ধুইয়া আনছস? হেয় আমার হাতের থন মোমবাত্তিডা টান দা লইয়া ক্যাশে রাইক্ষা কয় আফনে কুন দুনিয়ায় থাহেন। আইজ হাইঞ্জার থন মাইন্সে মোমবাত্তির লাইজ্ঞা দোকানে লাইন লাগায় দিসে। পেরথমে বেচছি বিশ টাকা কইরা, তারপর চল্লিশ, তারপর পঞ্চাশ তারবাদে আশি। এই দুইট্টা মোমবাত্তি আমার বাড়ির লাইজ্ঞা রাকছিলাম। একশ টিয়া কইরা দিলে আফনেরে একটা দিবার পারি আর বাকিডা পাঁচশ দিলেও দিমু না। আমার বাড়িতেও তো বাড়িওয়ালি আছে! ঘরে পিদিম না জ্বালাইলে হেয় আমারে জ্বালায় দিব। আফনে সারা মহল্লায় কেরে সারা ঢাকা শহরে কুনু দোকানে মোমবাত্তি খুইজ্জা বাইর কইরা দেহেন দেহি?
আমি অবাক হইয়া হা কইরা চিন্তাইতাছি কি করুম? পুলা কইলো, বাপজান একটা পাইছ লইয়া লও। বাড়ি আন্ধার। তোমারে হাইঞ্জা বেলায় মোম কিনতে পাডাইছে, তুমি আড্ডাত পাইরা ভুইল্লা গেছ। আইজ তোমার খবর আছে।
অগত্য নগদ একশ টিয়া দিয়া একটা মোমবাত্তি লইয়া বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। পুলারে কইলাম - তর মায়ে বিশ্বাস করব একটা মোমবাত্তির দাম একশ টিয়া? কনফার্ম কইব আমি বিড়ি খাইয়া টিয়া উড়ায়ালছি।
পুলায় কইলো - সম্ভাবিলিটি আছে।
বাড়ির কাছাকাছি গিয়া পুলার হাতে মোমবাত্তি দিয়া কইলাম - বাপজান তুই লইয়া যা; আমি তর ফুফুর বাড়ির থন ঘুইড়া আহি। রাইতে না আইলে বুঝবি তর ফুফু আইতে দেয় নাই।
পুলা হাইস্যা কয় - পলাইতাছ, না?
আমি মনে মনে কইলাম - আগে ঘরে বৌ আহুক রে বাপ, তারবাদে বুঝবি। মনকতা কইতে কইতে ঝিরঝির বৃষ্টি'তে ঘুটঘুইট্টা আন্ধার রাস্তায় নাইম্যা গেলাম।
০৫ অক্টোবর, ২০২২
#রম্য
কারেন্ট নাই
- আহসানুল হক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন