সুখ দুঃখ
- আহসানুল হক
সুখ দুঃখ জীবনের এপিঠ আর ওপিঠ
দুটো এতটাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করা বোধহয় সত্যিই কঠিন।
কঠিন দুটোর সীমারেখা চিহ্নিত করা।
একটা মানুষের জীবনে সুখী হতে হলে প্রথম ও প্রধান উপাদান কি?
জানি নব্বই শতাংশ মানুষই বলবে টাকা।
আমি বলি সুস্থতা।
কাড়ি কাড়ি টাকার নীচে চাপা পড়া অসুস্থ একটা মানুষ সুখী হতে পারে?
অসুস্থ বলতে আমি শারীরিক ও মানসিক দুটোর কথাই বলছি।
এই যে কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জনের মানসিকতা! এটা কি মানসিক অসুস্থতা নয়?
টাকা উপার্জনের এই নেশাটাকে আমি মানসিক অসুস্থতাই বলি।
একটা মানুষের কতটুকু টাকা প্রয়োজন?
জানি তোমরা বলবে প্রয়োজনের কোন সীমারেখা নেই।
আসলেও কি সীমারেখা নেই?
টাকার পাহাড় গড়ে রেখে মানুষ এগুলো কোথায় নিয়ে যাবে?
তবে জীবনে টাকারও প্রয়োজন আছে। খাওয়া, পড়া, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা টাকা ছাড়া চিন্তাই করা যায় না।
তবে টাকার আধিক্য অবশ্যই মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আসে। টাকার আধিক্য মানুষ'কে অবৈধ জীবনযাপনের হাতছানি দিয়ে ডাকে।
জীবন চলার জন্য পরিমিত টাকা যেমন স্বস্তির কারণ অপরিমেয় টাকা তেমনি মানুষের জীবনে দুঃখ ডেকে আনে।
সুস্থতার পরের উপাদানটি কি?
পারিবারিক শান্তি।
যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অগাধ ভালোবাসা, বিশ্বাস, পরস্পরের ওপর নির্ভরতা, পরস্পরকে শ্রদ্ধা।
ছেলে মেয়ে নিয়ে একসাথে মিলেমিশে বসবাস।
বাবা-মা বেঁচে থাকলে ওনাদের'কে সাথে নিয়ে একান্নবর্তী পরিয়ার হয়ে এক ছাদের নীচে বসবাস।
আজকালকার যুগে এটা অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
শাশুড়ি-বৌ মা-মেয়ে হয়ে থাকবে - এটা প্রায় অলৌকিক। তবুও কিছু পরিবার তো আছেই শাশুড়ি-বৌ এর হাঁড়িকুঁড়ির ঝনঝনের মধ্যেও সহনীয় পর্যায়ে একসাথে মিলেমিশে আছে; সেটাকে আমরা হিসেবে না ধরি।
আর ভাই-বোন এবং তাদের পরিবারের সাথে একসাথে মিলেমিশে থাকা? প্রায় অসম্ভব একটি ঘটনা। তবুও লক্ষে একটি দুটি পাওয়া যেতে পারে; সেটাকেও হিসেবে না ধরি।
তা হলে কোনটুকু হিসেবের মধ্যে আসবে?
স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে একসাথে এক পরিবার - এটাই আজকালকার একান্নবর্তী পরিবার। ছেলের বিয়ে হলো, ঘরে বৌ আসলো; তো শুরু হলো পান ছেচুনির খটখট। তারপর শিল পাটার ঘষাঘষি, হাঁড়িকুঁড়ি নাড়ানাড়ি। ছেলে আলাদা বাড়ি নিয়ে আলাদা সংসার - স্বস্তি সবার।
আর মেয়ে তো বিয়ে হয়ে জামাই বাড়ি - শ্বশুর বাড়ি গেলো তো ওখানেও একই চিত্র; সংসারটা বড়ই বিচিত্র।
তাহলে কি দাঁড়ালো?
মিলেমিশে থাকার নামই সুখ, আর মতের বা মনের অমিল হলেই সুখ'টা উল্টে গিয়ে মানুষের জীবনে দুঃখ নেমে আসে। পরিবারে শান্তির জায়গায় চলে আসে অশান্তি।
বাকি রইলো স্বামী-স্ত্রী।
পরস্পর আস্থায়, বিশ্বাসে, ভালোবাসায়, নির্ভরতায় জড়াজড়ি করে আছে তো সংসার টিকে আছে সুখের বাতাসে। তবে আজকালকার যুগে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এটার অংশও কমে যাচ্ছে।
বাড়ছে কি?
স্বামী'র পরনারীর প্রতি আর স্ত্রীর পরপুরুষে আসক্তি।
পরকীয়া নামক নতুন এক ভাইরাসে ছেয়ে যাচ্ছে আজকালকার সমাজ ব্যবস্থা।
ভার্চুয়াল জগত এক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী, বিষদ না বলি। ওটা আজকাল ঘর ঘরের কাহিনী।
যৌবনের কিংবা শেষ যৌবনের একটা বয়সে যত পরকীয়াতেই আসক্তি থাকুক না কেন, প্রৌঢ়ত্বে কিংবা বেলা শেষে কিন্তু দুজন দুজনার; যদি না পরকীয়া ভাইরাস এনাদের আলাদা করে দিয়ে থাকেন। এ বয়সটাতে সন্তানরা যার যার সংসারে, বাবা-মা গত হয়েছে সেও অনেক দিন হয়ে গেছে। ভাই-বোন? সাধারণত: ওরা তো স্বার্থের সম্পর্কে, যদিও কিছু ব্যতিক্রম তো থাকেই। তো রইলো কে? যতদিন স্বামী বেঁচে ততদিন স্ত্রী, যতদিন স্ত্রী বেঁচে ততদিন স্বামী।
তারপর একাকীত্বের এক অসহনীয় সময় - কবর পর্যন্ত।
তাহলে মোদ্দাকথা কি দাঁড়ালো?
"শক্ত করে হাতটা একটু ধরো
সুখী সুন্দর দাম্পত্য গড়ো"
১১ অক্টোবর, ২০২২
#হিবিজিবি_কথা
সুখ দুঃখ
- আহসানুল হক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন