শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২০

মুখোশের ভেতর মুখোশ

মুখোশের ভেতর চেহারা, মুখোশের ভেতর মুখ

মুখোশ খুললেই আয়নায় চমকে উঠি, ওটা কার মুখ?


মুখোশের ভেতর মনের কাম লুকাই বাইরে আমি সাধু বনে যাই

হাসি মুখ সবাইকে দেখাই ক্রোধে উন্মত্ত চেহারা মুখোশে লুকাই 

বাইরে আলাভোলা মাটির মানুষ মুখোশের ভেতর লোভ আকাশে  

সবার সামনে ভালো মানুষ সেজে স্বার্থ ঢেকে রাখি রঙ্গিন মুখোশে 


মুখোশের বাইরে প্রেম প্রীতি ভালোবাসা ভেতরে রাগ অভিমান ঘৃণা 

বড্ড কঠিন মুখোশ পড়া মানুষগুলোর অনুভূতিগুলো চেনা 

সবার মুখেই মুখোশ আঁটা কারো রঙ্গিন কারো সাদাকালো 

ভেতরের চেহারা যতই কদাকার হোক বাইরেটা জমকালো 


আমি মনের যত আবেগ লুকাই হাসির মুখোশ পড়ে 

মনের ভেতরই রিপু লুকাই ভালোমানুষি ভাব ধরে 

হাসির মুখোশে দুঃখগুলো ঢাকতে পারে বলো ক'জনা? 

থাকুক না মুখোশে ঢাকা আমার সকল কালো আর ঘৃণা


বিপরীত এক জীবন আমাদের মুখোশের ভেতর মুখ 

দুঃখগুলো মনের মুখোশে সকলকে দেখাই সুখ

মুখোশ দেখে সবাই ভাবে, আহা! কি সুন্দর জীবন 

মুখোশের আড়ালে পরাজিত এক কান্নায় ভরা মন 

 

মুখোশের ভেতরেও মুখোশ থাকে যার যার মন জানে 

আয়না কখনো মিথ্যা বলে না মনের সাথে মনে। 


৩১ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

মুখোশের ভেতর মুখোশ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

আজকালকার ডিজিটাল সন্তান

আজকাল সন্তানের কাছে বোধহয় খুব বেশি আশা করে ফেলছি!

আরে ওদেরও তো জীবন আছে! আছে সাদ আহ্লাদ, আনন্দ বেদনা 

আজকাল ওরা বড় হয়েছে, যার যার জীবন তার তার 

ওদের চাহিদাগুলো ঠিক যেন আমাদের সাথে মেলে না, 

কেন যে ভুলে যাই! ডানা গজালেই তো উড়ে যায় পাখির ছানা 

আরে! এগুলো তো মানুষের বাচ্চা, তাই হয়তো মায়া'টা কাটে না; 


আচ্ছা! কখনো আমার ছেলের পায়ের দিকে তাকিয়েছিলে?

তাকাও নি! তবে তো ব্র্যান্ডের জুতা কাকে বলে দেখই নি

সারাজীবন আমাকেই বলে এসেছ, ছেঁড়া স্যান্ডেলটা বদলাও

আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছি, আরে বাবা! আরও কদিন চলবে, 

আর না হলে মুচি তো আছে! এখনই হয় নি ফেলার কন্ডিশন 

জানো! আমার ছেলেটার না বড্ড ব্র্যান্ড ফ্যাসিনেশন;


আমার মেয়ের জামাটা দেখেছ? সে আবার কমফোর্ট খুঁজে 

আরে! ব্র্যান্ডের মাঝেই, ওটা আরও বড় সমস্যা, দুটোর কম্বিনেশন 

খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর! কি বললে? আমার ছেঁড়া পাঞ্জাবিটা! 

ওটা কিছু না, ওপর থেকে ভেতরের তালি বোঝাই যায় না,  

আর না না! এখনো হয় নি ফেলে দেয়ার কন্ডিশন 

আমার মেয়েটা বড্ড চ্যুজি আর তার ব্র্যান্ড ফ্যাসিনেশন;


এদের মানুষ করতে করতেই নিজের সব সাদ আহ্লাদ দিয়েছি বিসর্জন

মানুষ হয়েছে কি? কি জানি? হাতেপায়ে একটু বড় হতেই তো শুরু 

নানারকম চাহিদার আলাপন, আর নিত্য নতুন জামা জুতোর ফ্যাশন, 

সকাল সন্ধ্যা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের চাহিদা, এটাই বাবা হওয়া

তিনবেলা মুখরোচক রান্না আর সন্তানের খাওয়া নিয়ে বায়না, এটাও মা হওয়া 

আমরা হয়তো শুধু বাবা-মা'ই হয়েছি, কিংবা সন্তানের চাহিদা পূরণ মেশিন; 


আজকাল সন্তানদের মাঝে মাঝে কাছে পেতে ইচ্ছে করে 

ইচ্ছে করে একসাথে বসে একটু গল্প করতে, একসাথে বসে খেতে

এরা ডিজিটাল সন্তান লেপ্টে থাকে ল্যাপটপে কিংবা মোবাইল স্ক্রিনে

বাবা-মায়ের ডাকে বড্ড বিরক্ত! এখন ব্যস্ত আছি, ডিস্টার্ব করো না তো!

মাঝে মধ্যে এক বাসায় বাস করেও সপ্তাহে দেখা হয় না, এটা কিছু হলো! 

আমরা তো এনালগ যুগের! ওদের দেখতে ইচ্ছে করে, কি করব বলো?


ওহ! তোমার সন্তান বড় হলো! এবার তো বিয়ের সময় হলো

ধারদেনা করে বিয়ের আয়োজন বাবা-মায়েরই করতে হলো,

তারপর? আরে আর বলো না, শ্বশুর বাড়িটাই আপন হয়ে গেলো 

বাবা-মা? আরে মরে তো যায় নি! বাসাতেই আছে, যেখানে ছিলো, 

মেয়ে তো শ্বশুর বাড়িতে, আলাদা সংসারে, শ্বশুর শাশুড়ি ভালো 

ছেলেটা? বুড়োবুড়ির সাথে আর কি থাকা যায়? এবার আলাদা হলো;


উড়তে শিখলেই পাখির ছানা আলাদা, যৌবনে পশুর ছানা 

বিয়েতে বুদ্ধি পাঁকে, আলাদা হয়ে যায়, আদরের মানুষ ছানা

বাবা-মা? আরে মাসে ছ'মাসে দেখতে আসে আদরের সন্তান

একলা দুজন দুজনার সহায়, সম্বল ঐ তো মাস গেলে পেনশন, 

ছেলের বড় চাকরি, রেফারেন্স শ্বশুরের, গাড়ি বাড়ি ঠাটবাট

কিছুই নেই বাবার, শ্বশুর বাড়িতে ছেলের লজ্জায় মাথায় হাত;


ডিজিটাল যুগের সন্তান ওরা বড্ড বেশি ডিজিটাল হয়ে গেছে

এনালগ যুগের বাবা-মা শুধু তাদের কাছে যন্ত্রণাই বয়ে এনেছে

পুরনো যুগের চিন্তাভাবনায় কেন যে বাবা-মা এতটা আদি?

ছেলেমেয়ে দুজনে মিলে বুদ্ধি করে এদের বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দি,

এখানে আসার পর বুড়িটা টেঁসে গিয়েছে আমায় ফেলে একা 

বৃদ্ধাশ্রমে বসেই লিখছি আমার কাহিনী, কাগজে কলমে আঁকা।  

  


৩০ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

আজকালকার ডিজিটাল সন্তান 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





সময়ের বিস্মৃতি

একদিন ঘুম ভাংতেই ধড়ফড় উঠে বসি

একদিন ঘুম ভাংতেই পেছনের জীবনে উঁকি  

দর্পণের আর ভেতরের চেহারার মাঝে বিশাল ফারাক

মানুষের চেহারায় ওটা কি মানুষ নাকি?


এই যে দুটো চেহারা, ভেতর আর বাইরের!

কতই না কদাকার স্বার্থ রিপু আর লোভের 

সময়ে যদি দর্পণের দিকে তাকাতাম!

আজ হয়তো ওখানে মানুষ দেখতে পেতাম; 


কোন একদিন হয়তো ঘুমিয়ে যাব দিনে 

হয়তো সূর্য তখনো ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয় নি 

কোন একদিন হয়তো রাতের ঘুম ভাঙবে না 

আকাশে জ্বলতে থাকবে প্রিয় চাঁদনি; 


কোন একদিন হয়তো ঝুম বৃষ্টি নামবে

আমিই নামব না সেদিন বৃষ্টিবিলাসে

অপলক শুয়ে শুয়ে বৃষ্টি দেখতে থাকব

ঘোলা হয়ে যাওয়া মনিতে নিথর চোখে;  


এই যে সারাক্ষণ তোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি! 

আজকাল ভীত মনের কিছু সান্ত্বনার অনুভূতি 

কেও তো আছে পাশে! ছুঁয়ে ছুঁয়ে থেকে  

গা ঠাণ্ডা হতে হতে পাব স্পর্শের উষ্ণ অনুভূতি;


ঘুমঘোরেই তোর হাতে বরফ অনুভূতি হতেই 

হয়তো ধড়ফড়িয়ে উঠে বসবি, বাতি জ্বালবি 

কান পাতবি বুকে, ধুকপুক কোথায়? নৈঃশব্দ্যতা 

আকুল কাঁদবি, বাড়ি জেগে যাবে তোর চিৎকারে;  


আরে মরণে ভয় কি রে বোকা? তুই'ই ছিলি শেষ স্পর্শে 

শুধু পেছনে তাকিয়ে ভয়, আমলনামায় কি নিয়ে যাচ্ছি সাথে!

একদিন সবাইকে যেতেই হয়, পেছনে রেখে যায় কিছু স্মৃতি 

কিছুদিন কাঁদবি, তারপর ফিকে হতে হতে সময়ের বিস্মৃতি।  


৩০ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

সময়ের বিস্মৃতি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বিশেষ সন্তান

তোমাদের স্কুলে আমার জায়গা হয় নি
না, না! তাতে আমার কোন দুঃখ নেই
আমি পড়ছি তো! পড়ছি বিশেষ স্কুলে
বিশেষ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে, তাদের ছায়া তলে;

এখানে আমরা সবাই বিশেষ শিশু
বিশেষ বিশেষ গুণে গুণান্বিত
কেও সব বুঝে, কিছু বলে না  
কেও অল্প স্বল্প বুঝে, বেশী বেশী বলে
কেও কিছু বুঝে না, শুধুই কথা বলে 
আমি তোমাদের অর্ধেক কথা বুঝেই চুপ করে থাকি,  
আমরা বোঝা আর না বোঝার দোলায় দোদুল্যমান
তোমরা সর্ব বোদ্ধা তবুও নও আমাদের সমান;

কিভাবে সমান হবে আমাদের বলো?
সমান হলে তো আমাদেরকে তোমাদের স্কুলেই জায়গা দিতে 
তোমাদের সাথে খেলতে নিতে
আমাদের সাথে তোমাদের টিফিন ভাগ করে খেতে 
তোমাদের পাশে বসতে দিতে
যেগুলো আমাদের বুঝতে কষ্ট হয় সেগুলো বুঝিয়ে দিতে, 
কই তোমাদের চোখে সব সময় দেখি কেমন এক অবজ্ঞা
একটু বোধহয় ঘৃণা, তাই না? 
অথচ আমরাও কিন্তু তোমাদেরই মত শিশু
হয়তো বুদ্ধিবৃত্তিতে তোমাদের থেকে একটু কম
কিংবা কে জানে! হয়তো তোমাদের থেকে অনেকটাই বেশী, 
তাই হয়তো তোমাদের মনে একরকম ভয়ের দোলা দোলে 
যদি এই বিশেষ শিশুরা তোমাদের থেকে ভালো ফল করে ফেলে!

ওহে! আমরা তোমাদেরই ভাই বোন
তোমাদেরই বাবা-মায়ের সন্তান 
কই আমার বাবা-মা তো ফেলে দেয় নি আমাকে!
তোমরা কেন ফেলে দিলে? 
আমাদের দেখে কেন তোমাদের চোখে এত ভয়?  
আর মনে সবসময়ই এক ধরণের অবজ্ঞার খেলা,     
ওহে! আমাদেরও হাসি পায়, আমাদেরও কান্না পায়
আমরা কিন্তু সবচেয়ে বেশি বুঝি তোমাদের অবহেলা;  

তোমরা আমাকে যতই অবহেলা কর আর কর অপমান 
আমি গর্বিত, আমি আমার বাবা মায়ের বিশেষ সন্তান। 


২৯ অক্টোবর, ২০২০

#কবিতা 
বিশেষ সন্তান
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






 

অসংগতি

চারিদিকে বিবর্ণ সময় আর অসম অস্থির প্রতিযোগিতা 

আমার চোখ দেখে মেকি ন্যাকামি, কান শোনে অসংগতির কথা; 

 

কারো সময় জয়ের কারো পরাজয়ের

কারো লক্ষ্য পণ্যের কারো পসারের 

আজকাল সময় বড্ড শারীরিক আর আর অস্থির কামনা

চাবি দেওয়া রবোটিক জীবন কোথাও যেন থামে না, 

সময় ডিজিটাল হতে হতে কবে নিজেই ডিজিটাল হয়ে গেছি!

বাস্তবতার ছোঁয়ায় মাঝে মধ্যেই আঁতকে উঠে বলি, ওকি!


আচ্ছা! তোমরাই বলো কোথায় আছে মানবতা!

অসংগতি! সে তো জীবনের ভাঁজে ভাঁজে, তোমার চোখ দেখছে না? 


চাকরির বাজার? আজকাল দুরাশা আর হাহাকার

সরকারি চাকরি? ওহে! রেখেছ তো ঘুষের টাকার জোগাড়  

বেসরকারি? ওপর মহলের রেফারেন্স সঙ্গে আছে কি? 

কিংবা মামা চাচা কিংবা শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় নাকি?

নিদেন পক্ষে কোন রাজনৈতিক দলের সিল ছাপ্পড় মারা!

কি বললে? কিছুই নেই! অন্য কিছু বল বাবা চাকরি ছাড়া;


কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড? সে তো ঘিয়ের খনি

ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেলেও তেল মারা হয় না বলেই জানি

ওখানেও শরীর বিক্রি কর্পোরেট দরে 

দরটা যে কি তা কর্ম ভেদে নির্ভর করে

শরীরটা কি নারী নাকি পুরুষের?

আজকাল মাংস হলেই চলে রুচির বদল বসের,

কেও পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন বানায়

কেও পণ্যের বিজ্ঞাপন বনে যায় 

ওটাও এক রকম তেলেসমাতি

পণ্য বনতে গেলেও আজকাল শুতে হয় নাকি;


চাহিদা যখন নারী মাংসের পণ্যের অবয়ব 

ক্যামেরার সামনে যাওয়ার জন্য আজকাল খুলে দেয় সব 

এও এক অসম প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপনের বাজার 

এক এক পণ্যের এক এক বিজ্ঞাপনে শরীরটা যার তার; 


ওহে! এটা শোবিজ জগৎ, রঙ আর ঢঙে বিজ্ঞাপনের তেলেসমাত

পণ্য যাই হোক না কেন! শরীর প্রদর্শনেই বিজ্ঞাপনের বাজিমাত; 


কথাগুলো বড্ড র হয়ে গেলো, তাই না!

কি করব বলো! চোখে তো আর ঠুলি লাগিয়ে থাকি না!

অসংগতিগুলো বড্ড চোখে লাগে আর অস্থির ওষ্ঠাগত প্রাণ 

কিংবা ডিজিটাল যুগে আমিই এনালগ, যুগের সাথে বেমানান, 

অসংগতি জীবনের প্রতিটা পদে পদে আর দৈনন্দিন জীবন চলায়

অনেকের গায়ে হুল ফুটে যায় যে কোন অসংগতির কথা বলায়;  


যেটুকু দেখছি সেটুকুই লিখছি কারো কারো অবশ্য গাত্রদাহ 

সাদা কাগজে অসংগতি আঁকলেই অনেকেরই পেছনে হয় প্রদাহ, 

হয়তো তোমরাই ঠিক আমিই বেঠিক শুধুশুধুই অসংগতি লিখে যাই

সকল সরল সোজা মানুষের ভীরে, হয়তো আমিই উল্টা মানুষ'রে ভাই;   


আমার সামনে অসংগতি দেখি, পেছনে অসংগতি আর অসংগতি চারিধার 

অসংগতির মাঝেই সংগতি খুঁজে বেড়াই, নিজেকে হারিয়ে বারবার। 




২৮ অক্টোবর, ২০২০


#কবিতা 

অসংগতি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২০

যাত্রা - গল্প

#গল্প

বেশ ভালোই কাটছিলো দিনগুলো। স্ত্রী সন্তান, ভাই-বোন সবাইকে নিয়ে; মা’ও জীবিত ছিলেন সংসারে। আলহামদুলিল্লাহ্, আর কি চাই। টাকা পয়সার ঘাটতি! তা হয়তো ছিলো খানিকটা, কিন্তু সংসারে শান্তির কাছে ওটাকে খুব বেশী আমল পায় নি কখনো। গাধার খাটনি খাটতাম সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যার পর বাসা। পঞ্চাশ বছরের পুরুষের জীবনে আর কি চাওয়ার থাকে? 


একদিন শুক্রবার সন্ধ্যার পর সবাই মিলে চায়ের টেবিলে খোশগল্পে মশগুল ছিলাম। মা বললেন, প্রেশারের ঔষধটা শেষ হয়ে গেছে রে খোকা। ছেলে বললো আমি নিয়ে আসি, আমি বললাম না রে, তোরা গল্প কর আমিই গিয়ে নিয়ে আসি; বলে বাসায় পড়ার গেঞ্জিটা খুলে একটা শার্ট পরে রওনা দিলাম ঔষধ কিনতে। বৌ কে জিজ্ঞাসা করলাম, বাসার জন্য আর কিছু লাগবে কিনা? বৌ বললো, নাহ! কিছু লাগবে না। 


ফার্মেসী বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা রাস্তা, বড় রাস্তাটা পাড় হয়ে যেতে হয়। আমি সাবধানে দেখেশুনে রাস্তা পার হয়ে ফার্মেসীতে গিয়ে ঔষধ কিনলাম; পরিচিত দু-জনের সাথে দেখা হলো, কুশলাদি বিনিময় করতে করতে পাঁচ ছয় মিনিট দেরি হয়ে গেলো। ঔষধ নিয়ে আবার বাসার দিকে রওনা দিলাম। সাবধানেই রাস্তা পার হচ্ছিলাম, কোথা থেকে হুট করে রাস্তার উল্টোদিক থেকে এক হোন্ডা এসে প্রায় গায়ের ওপর উঠিয়ে দিচ্ছিলো, আমি হোন্ডা থেকে গা বাঁচাতে একদিকে লাফ দিয়ে সরে যেতে গিয়ে হঠাৎ হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম, হাঁটুতে বেশ ব্যথা পেয়েছি; চোখে অন্ধকার দেখছি। কোনমতে চোখ কচলে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই রাস্তার সাথে গাড়ির টায়ার ঘষার প্রচণ্ড শব্দ কানে আসলো, চোখের সামনে দেখলাম একটা দৈত্যাকৃতি বাসের অবয়ব। পর-মুহূর্তেই মাথায় যেন কেও হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারলো; তারপর আর কিছু মনে নেই। 


আমি কি বেঁচে আছি? চারিদিকে অনেক মানুষের কথাবার্তা; কে কে যেন কি কি সব বলছে। আমার কি চোখ বন্ধ না খোলা? কিছুই বুঝতে পারছি না, সব যে কেমন আবছা ঘোলা ঘোলা। চেষ্টা করছি জোর করে পুরোপুরি চোখ মেলতে, কিন্তু কিছুতেই চোখের পাতা নড়াতে পারছি না। এ আমি কোথায় আছি? অর্ধ খোলা চোখে কোন পরিচিত মুখ নজরে পড়ছে না। কে যেন চোখে টর্চ মারলো, বুঝতে পারছি কিন্তু চোখের পাতা নাড়াতে পারছি না। ডাক্তার মনে হয়, তারমানে আমি এখনো বেঁচে আছি, কিন্তু পরিচিত জনারা কোথায়? ডাক্তার কি যেন বলছে, শব্দগুলো যেন মাথায় ঢুকি ঢুকি করেও ঢুকছে না। তারপর আবার চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। 


কতক্ষণ পর সম্বিৎ ফিরে পেলাম জানি না। এবার পরিচিত গলা, ভাই এর গলা, আমার স্ত্রীর গলা, ছেলেমেয়ের গলা। ভাই যেন চিৎকার করে কাকে কি বলছে, ওর কথাগুলো বুঝতে পারছিলাম না। ভাইটা চিরকালই গোয়ার গোবিন্দ অথচ ওর চিৎকার চেঁচামেচিই যেন আমার সম্বিৎ ফিরিয়ে আনলো। স্ত্রী সন্তানদের কান্না শুনছি। আমি প্রাণপণে কিছু বলতে চাচ্ছি অথচ ঠোঁট নাড়াতে পারছি না, আমার স্ত্রী সন্তানকে দেখতে চাচ্ছি অথচ চোখ আগের মতই আমার বশে নেই; আধো আধো আলো আধো আধো অন্ধকারে শুধু ওদের কথাগুলোই কানে যাচ্ছে। ডাক্তারের সাথে আমার ভাই তর্ক করছে, চিকিৎসা নিয়ে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে; আরো কি কি যেন! ডাক্তার বললেন সরকারি হসপিটালে আমরা এর থেকে বেশী সুযোগ সুবিধা দিতে পারি না। ওদের কথা থেকে বুঝলাম আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালে। আমার স্ত্রী বলছেন তাহলে আমরা অন্য কোন প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে যাই! ডাক্তার বলছে, লাভ হবে না; চোখের মণি ডাইলুট হয়ে গেছে, ওরা এর মধ্যেই সিটি স্ক্যান করে ফেলেছে; মস্তিষ্কের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ড্যামেজ দেখাচ্ছে। রোগী এখনো বেঁচে আছে এইতো আশ্চর্য! আমিও আশ্চর্য হয়ে গেলাম। তাদের কথা সব শুনছি, কিছু কিছু বুঝছি কিছু বুঝছি না; অসাড় হয়ে পড়ে আছি। ডাক্তার বললেন এখানে এভাবে ফেলে রাখলে কোন লাভ নেই, আপনারা ভেন্টিলেটর খুঁজুন; ওখানে রেখে অন্তত চেষ্টা করে দেখতে পারেন, এখানে থাকলে এমনিতেই মারা যাবে। আমার ভাই, স্ত্রী আরো কে কে যেন চারিদিকে ফোন দিতে লাগলো, শেষমেশ ভেন্টিলেটর এর সন্ধান মিললো শহরের দামী প্রাইভেট হসপিটালগুলোর একটাতে।   খবর পেতে যা দেরি, এবার এ্যাম্বুলেন্স খোঁজার পালা, ওটা পেতে দেরি হলো না। ওরা সবাই মিলে তাড়াহুড়ো করে আমাকে এ্যাম্বুলেন্সে ওঠালো। তারপর আবার অন্ধকার। 


এবার সম্বিৎ ফেরার পর শুনি কে যেন কথা বলছে, একটু পর হালকা নীল এপ্রোন পড়া এক নার্স এসে যেন মাথার কাছে কি করলো, কাকে যেন ডাকলো। একটু পর দেখি সাদা এপ্রোন গায়ে এক ডাক্তার পাশে এসে দাঁড়ালো; চোখের মাঝে আবার টর্চ ফেললো, অনেকক্ষণ ধরে চোখে টর্চের আলো, আমার অসহ্য লাগছে আবার কিছু বলতেও পারছি না। এবার চোখের পাতা টেনে ধরে আবার টর্চ জ্বালালেন নিভালেন, আবার জ্বালিয়েই রাখলেন; আমার চোখে কি খুঁজছে ওরা? জীবন না মৃত্যু! জানি না। শুধু অনুভব করতে পারছিলাম শরীরে বিভিন্ন জায়গায় কি কি যেন লাগানো আছে, কি সেটা বুঝছিলাম না। কোথাও যেন মেশিনের ক্রমাগত টিকটিক টিকটিক শব্দ, আমি আবার তলিয়ে গেলাম অন্ধকারে। 


কতক্ষণ, কতদিন এভাবে কেটেছে জানি না, মাঝে মধ্যে স্ত্রীর গলা শুনতে পাই, মাঝে মধ্যে ভাই এর, মাঝে মধ্যে ছেলেমেয়ের; একবার যেন মায়ের গলাও পেলাম। কেন জানি বাবাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে, অথচ আমি জানি বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন প্রায় ছ বছর হলো; তবুও কেন বাবার কথাই মনে হচ্ছে? জানি না। 


একদিন সম্বিৎ ফিরলো মায়ের ডাকে, অনেক দূর থেকে যেন ডাক শুনতে পাচ্ছি; খোকা উঠ, খোকা উঠ! আমার ঔষধের দরকার নেই, তুই চোখ খোল। আমি প্রাণপণে উঠে বসার চেষ্টা করছি, অথচ অসাড় শরীরটা কোন কথাই শুনলো না। বোন কাঁদতে কাঁদতে এসে মা'কে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলো, মা কিছুতেই যাবেন না। এর মধ্যে ভাই এলো, ভাই বোন মিলে কথা বলছিলো – ভাবীর কাছে তো আর টাকা নেই রে, এদিকে প্রত্যেকদিন ভেন্টিলেটর চার্জ তো বিশাল অঙ্কের টাকা, ভাবী তার ভাই বোনের কাছ থেকে ধার করছে, আমাদেরও যতটুকু সম্ভব দেওয়া উচিৎ; মা কাঁদতে কাঁদতে ভাইকে বললেন আমার সঞ্চয়ে যা আছে তা ব্যাঙ্ক থেকে উঠিয়ে নিয়ে আয়।  

একদিন স্ত্রী এসে অনেক অনেকক্ষণ হাত ধরে পাশে বসে রইলো, বিড়বিড় করে কি যেন দোয়াদরূদ পড়ছে! আমি প্রাণপণে ওর হাতে হাত রাখতে চাইছি অথচ অসাড় শরীরটা এক সুতোও নড়াতে পারলাম না। আচ্ছা! আমি তো সব শুনছি, আধো আধো কিছু দেখছিও তবুও শরীরে কোথাও কোন সাড়া পাচ্ছি না কেন? একদিন শুনি ডাক্তার ভাইকে বলছেন, আপনারা শুধু শুধুই গুচ্ছের টাকা খরচ করছেন ভেন্টিলেটরে; কোন লাভ হচ্ছে না; এবার ভেন্টিলেটরটা সরিয়ে নিন, ওনাকে যেতে দিন। আমি চমকে উঠলাম। 


একদিন শুনি আমার স্ত্রী আমার ছেলেকে বলছেন, তোর বোনের বিয়ের জন্য আলমারিতে রাখা গয়নাগুলো নিয়ে বেঁচে দিয়ে আয় বাবা, সবার কাছ থেকেই তো ধার করে ফেলেছি, আর তো কেও বাকি নাই। বিল পরিশোধ না করলে তো তোর বাবাকে আর এখানে রাখতে পারবো না; হু হু করে বিল বেড়েই চলেছে। আমার কান্না পেয়ে গেলো, চোখের জল কি গড়ালো! নাহ! তাহলে তো ওরা দেখতে পেত।

 

আজকাল বেশিরভাগ সময় অন্ধকারেই থাকি, মাঝে মাঝে যেন এখানে ফিরে আসি। এক একবার যেন জীবিতরা আমায় টানে, ওদের কাছে বড্ড ফিরে আসতে ইচ্ছে করে; আবার এক একসময় যেন আমার মৃত বাবা, দাদা দাদীর ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। ঘোরের মধ্যে ঠিক বুঝতে পারছি না আমার স্ত্রী সন্তানদের ফিরে আসবো না বাবার কাছে চলে যাব! কোন একদিন সম্বিৎ ফিরলো ডাক্তারের উত্তপ্ত কথায়। ডাক্তার বলছেন আপনারা বিল ক্লিয়ার করুন নয়তো আমরা ভেন্টিলেটর খুলে দিতে বাধ্য হবো। ভাই অনেক কাকুতি মিনতি করছে, আর দুটো দিন সময় দিন; ওনার ফ্ল্যাটটা বিক্রি করারা চেষ্টা করছি। আমার ভাই ডাক্তারকে বলছেন, ভাই আপনার তো অনেক টাকা, আপনি কিনে নেন না! আমরা অনেক সস্তায় ছেড়ে দেব, আমার ভাই কে বাঁচাতে না পারলে ফ্ল্যাট দিয়ে কি করবো? আমার ভেতরটা কেঁপে উঠলো। ফ্ল্যাটটা বেঁচে দিলে আমার ছেলেমেয়েগুলো কোথায় থাকবে? ওদের তো মাথাগোঁজার ঠাই ঐ ফ্লাটটাই। আমি আল্লাহ্‌কে ডাকতে লাগলাম, হে আল্লাহ্! আমাকে এবার নিয়ে যান, আমার সন্তানদের মাথার ওপরের ছাদটা'তো থাকুক! মনে মনেই কাঁদছি শুধু, কেও শুনছে না। 


ভাই এর মুখ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির কথা শোনার পর থেকে হঠাত করেই আমার জীবিতদের মাঝে ফিরে আসার ইচ্ছেটা অসাড় হতে শুরু করলো, সমস্ত স্বত্বা দিয়ে যেন চিৎকার করে বলতে চেষ্টা করছি আমার সন্তানদের মাথার ছাদের বিনিময়ে আমি ফিরতে চাই না। আমি একমনে আল্লাহ্‌কে ডাকতে লাগলাম আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাবার জন্য। 


হয়তো মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমার ডাক শুনতে পেলেন। আমার প্রায় অসাড় সম্বিতে একদিন ডাক্তারদের চিৎকার শুনতে পেলাম; নার্স হার্ট-বিট কমে যাচ্ছে, পালস নেমে যাচ্ছে! দৌড়ে কি জানি একটা ইনজেকশন আনতে বললেন, বুকের ওপর যেন আচমকা এক শক অনুভব করলাম; ওরা কি শক দিয়ে আমার হৃদপিণ্ড চালাতে চাচ্ছে? হবে হয়তো! আমার চোখের ওপরের আধো আলোটা ধীরে ধীরে কমে আসতে লাগলো, সামনে একটা অন্ধকার গহ্বর দেখতে পেলাম, গহ্বর এর দূর ওপাশটায় যেন এক অপার্থিব আলো। অনেক দূরে ওপাশে আলোতে যেন বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, তারও পেছনে যেন দাদা দাদী, ওনাদের পাশে নানা নানী; ইশারায় যেন আমাকে ডাকছেন। আমি ওদের ডাকে সাড়া দিয়ে গহ্বরে ঢুকে যেতে যেতেই যেন খুব সহসাই আমার সমস্ত জীবনটা চোখের সামনে চলে আসতে লাগলো, আমার জন্ম, আমার শৈশব, আমার কৈশোর, যৌবন, বিয়ে সংসার ছেলেমেয়ে সব, সব দেখতে লাগলাম ছবির মত; তারপর প্রৌঢ়ত্বে এসে ধাক্কা খেলাম বাসের সাথে। আমি গহ্বরের ভেতরে ঢুকে যেতে লাগলাম, মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি – যাক! আমার স্ত্রী সন্তানদের মাথার ওপরের ছাদটা'তো থাকবে! থাকুক। ওরা ভালো থাকুক, অনেক অনেক ভালো; অনেক অনেক অনেক ভালো। তারপর একসময় সব অন্ধকার হয়ে গেলো। 


০২ অক্টোবর, ২০২০ 


#গল্প

যাত্রা 

- যাযাবর জীবন 

 


একটি দুঃখী ব্রাশের আত্মকাহিনী - রম্য

#রম্য

আমি একটি দুঃখি ব্রাশ; গরীব লোকজন আমারে দিয়া দাঁত মাজে। ব্রাশ সমাজে আমার অবস্থান নিচের দিকে, আমার জীবন শুরু জিঞ্জিরার চিপে। ওরা যদিও আমার গায়ে সিল মাইরা সেনসোডাইন নাম লাগাইছে, তবুও আমি নকল সেনসোডাইন। আমার বিক্রি ফুটপাতে। 


আসল সেনসোডাইন বিক্রি হয় মনোহারি দোকানে, ১০০ থাইক্কা ১৫০টাকা দরে।আমারে কিছু গরীব মানুষ ফুটপাতে লইয়া বয়, দরদাম বিশ টাকা থাইক্কা শুরু হয়। কিছু ভালো মানুষ আছে ২০টাকাতেই কিনে, কেও দরদাম করতে করতে ১০টাকায় নামায়; আর কিছু বদমাইশ আছে দামাদামিতে তিনটা কিনে ২০টাকা দরে। আমার কদর কমে সস্তার দরে। 


তবে ঐ ওপরতলার সেনসোডাইন থাইক্কা আমার ব্যবহারের ক্ষেত্র অনেক বেশি, এইটা ভাইব্বা আরাম লাগে। বড় লোকেরা দাঁত ব্রাশ করার কাজে ব্যবহারের পর ব্রান্ডের সেনসোডাইন ফিক্কা ডাস্টবিনে ফালায় দেয়, তাও এক থাইক্কা দেড় মাস পরে পরে; ওগোর জীবন ঐ এক দেড় মাসেই সীমিত;  তারপর জায়গা হয় ভাগারে।


আমার বিচিত্র জীবন, নতুন ব্রাশ পাইয়া গরীব পোলাপাইনগুলা খুশি হয় সবচেয়ে বেশী, ব্রাশ করব কি কামড়াইয়া কামড়াইয়া আমারে ফাতাফাতা কইরা ফালায়, যত কামড়ায় আমার সুখ তত বাইরা যায়। আহহারে! বাচ্চাটা কি সুন্দর কামড়াইতাছে; মাঝে মাঝে আনন্দে আমার চোক্ষে পানি আইসা যায়! তয় বাড়ির গিন্নিগুলো বড্ড খচ্চর, বাচ্চারে ব্রাশ কামড়াইতে দেখলে ডাইনি বুড়ীর লাহান হা হা কইরা ছুইট্টা আহে মাঝে মইধ্যে মুখের ঝাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকে মাঝে মইধ্য বাচ্চার পিঠে ধুম ধুম হাতের শান্তি করে; আসলে বাচ্চার উপ্রে জামাইয়ের কিলগুলার শোধ লয়, আমার মনে হয়।

তারপর মাসের পর মাস দাঁতের ঘষায় আমার ছালছিবড়া উইঠা যায়, যহন আর দাঁত মাজনের লাহান ছিবড়ায় দম থাহে না তহন হাতবদল হইয়া আমি খন্নাস গিন্নির কবলে, আমার দিয়া হের চিরুনির ময়লা পরিস্কার করে, ইশশ! তহন কি অপমানডাই না লাগে!


আরে ব্রাশের কাম দাঁত ঘষা, তা ছোবড়া উইঠা গেলে ফালায় দে! তা না। চলতে থাকে আমার চিরুনির ময়লা পরিস্কার করার কাম, যতদিন ছোবড়ায় থাকে দম! তারপর যহন ডান্ডির গায়ে চুলের লাহান ছিবড়া বইলাও কিছু থাকে না তহন খালি ডান্ডিখান। আমি ভাবলাম এইবার বুঝি ফালাইব আমারে। কিসের কি? বেটি আমার ডান্ডি কামে লাগায় তার পেটিকোটের ফিতার ড্রাইভার হিসাবে। পেটিকোটের ফিতা আটকাইলো তো আমার ডান্ডি, জামাই এর পায়জামার ফিতা লাগাইব, তো আমার ডান্ডি! পেটিকোটের চিপের ভিত্রে দিয়া ফিতা লইয়া ছুটতে ছুটতে দম আটকাইয়া আহে; মান ইজ্জত তো খুইয়া বইছি হেই খন্নাস বেটির চিরুনীর পরিস্কার করতে গিয়াই! ভাবি কতদিন আর এইভাবে ধুইকা ধুইকা জীবন? ততদিন যতদিন না হের পেটিকোটের চিপের ভিত্রে হান্দাইয়া ডান্ডির টেমপার মইরা গিয়া দম আটকাইয়া ভাইঙ্গা দুই টুকরা হইয়া যাই। তারপর শান্তি। আমারে ঢিলা দিয়া ফালায় দেয় বাড়ির চিপায়, নইলে ডাষ্টবিনে।  


আমি চিরকুটের গান গাইতে থাকি মরতে মরতে, আহারে জীবন! জীবন জীবন......... 


১০টাকার ব্রাশের এক থেকে দুই বছরের জীবন, আর কে পারে মানুষরে এত কম টাকায় এত বেশীদিন সার্ভিস দিতে? 



০৭ জুলাই, ২০২০ 

#রম্য 

একটি দুঃখী ব্রাশের আত্মকাহিনী 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




ডিজিটাল যুগের এনালগ মানুষগুলো

আজকাল কারো সাথে মন খুলে কথা বলাটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে, 

হয়তো কারো কুশল জানতে দেখা করতে গেলাম তার সাথে

খুব আপ্যায়ন করে ঘরে তো ঢোকালো!

তারপর মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে গেলো, 

একটা ফোন রাখে তারপর একটা প্রশ্ন - কেমন আছ?

আমি উত্তর দেবার আগেই আবার মোবাইলটা বেজে ওঠে

এক মিনিট ভাইজান! বলেই মোবাইলটা কানে

সময়ের কাঁটা গড়ায় দশ বারো পনেরো মিনিট ধরে 

আমি বসে থাকি, ঘরের সাজসজ্জা দেখি 

এক সময় মোবাইল আলাপন শেষ হলে আরেকটা প্রশ্ন - এদিকে কোন কাজে?

আমি জবাব দেওয়ার আগেও মোবাইল স্ক্রিনটায় কারো চেহারা ভেসে ওঠে

ঝনঝন মোবাইল রিঙের শব্দে ড্রইং রুম মুখরিত, 

ভাইজান এক মিনিট! বলেই আবার যথারীতি মোবাইলটা কানে

সময়ের কাঁটা গড়াতে গড়াতে ধৈর্যের কাঁটায় টান পড়ে

দশ মিনিট পরে মোবাইলটা রেখে - আর বলবেন না ভাই 

এই মোবাইলটা যে কি যন্ত্রণার হয়েছে! - তারপর চা দিতে বলি?

বলতে বলতেই আবার মোবাইলে কল ঢুকে,

এবার আমিই বলি - হ্যাঁ ভাই, কথা বলে নেন এক মিনিট

আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে,

উনি কথা বলতে বলতেই আমি উঠে যাই

উনিও কথা বলতে বলতেই উঠে এসে দরজা খুলেন

মোবাইলটা কানে লাগিয়েই বলেন - আরেকদিন এসেন কিন্তু! 

আমি সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকি, পেছনে বন্ধ দরজার শব্দ কানে,

কুশল আর জানা হয় না আমার সামনাসামনি

কি আর করা! কোন একদিন জেনে নেব মোবাইল ফোনে! 


এ কিন্তু শুধুমাত্র একটা ঘটনা একজনের

একদম একইরকম হাজারো ঘটনা আমাদের চারিপাশে 

বাসা কিংবা অফিসে,

কারো কুশল জানতে হলে আজকাল সামনাসামনি দেখা করাই বিড়ম্বনা

তার থেকে ভালো মোবাইল ফোনে,

হয়তো কিছু সময় অপেক্ষারত দেখায় মোবাইল ফোনটা 

তাতে কি? 

সামনাসামনি বসে থেকে ঘড়ির কাঁটা গোনার বিড়ম্বনা এর চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী;


এটা ডিজিটাল যুগ, আমরা ডিজিটাল হয়েছি 

সম্পর্কগুলোও যেন ডিজিটাল হচ্ছে ধীরে ধীরে

সন্তানরাই তো এখন কথা বলে ভিডিও কলে

মাঝে মধ্যে ওদের বাসায় দাওয়াত দেই খুব ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হলে

কোন একটা সময় সন্তানও হয়তো বলে বসবে - কি সব যে ন্যাকামো করো না!

ভিডিও কলে তো দেখা হচ্ছেই তবুও কেন পুরনো সামনাসামনি ছুঁয়ে দেখার বায়না?


আহহারে! ওরা কি বুঝবে সামনাসামনি ছুঁয়ে দেখার আনন্দ!

ডিজিটাল যুগে সবটুকু এদের আজ শুধুই ভার্চুয়াল আনন্দ 

আমি মাঝে মধ্যে নিজেকেই জিজ্ঞাসা করি

এই যে দুটো মানুষের একার জীবন! বাবা-মা নামক বুড়োবুড়ি

একজন মরে গেলে আরেকজনের কি হবে?

ধ্যাৎ! শোন নি আজকাল মহল্লা মহল্লায় বৃদ্ধাশ্রম হবে! 

  

ডিজিটাল যুগের এটা কি আশীর্বাদ না অভিসম্পাত?

আয়না উত্তর দেয়, ওহে! তোমার এখনো এনালগ যুগেই বাস। 


 


২৮ অক্টোবর, ২০২০


#কবিতা

ডিজিটাল যুগের এনালগ মানুষগুলো 

 - যাযাবর জীবন 


ছবি: নেট থেকে সংগৃহীত। 





কুশল জিজ্ঞাসা

কেও একজন কুশল জিজ্ঞাসা করলো অনেকদিন পরে

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পড়ে গেলাম ভাবনার ঘরে,

আজকাল কেও আর এমনি এমনিই কুশল জিজ্ঞাসা করে না

হয় করে অর্থের প্রয়োজনে 

কিংবা স্বার্থের 

শুদ্ধ কুশল জিজ্ঞাসায় ভ্যাবাচ্যাকা তো খেতেই হয়!


অনেক দিন পর আয়নার সামনে দাঁড়াই, নিজেকেই নিজে কুশল সুধাই

ওহে মানব! কেমন আছ? কেমন কাটছে তোমার জীবন? 

একটু ভেবে বলি - সকালটা পারি দিয়েছিলাম ক্ষুধা পেটে, অনেকটা পথ হেঁটে হেঁটে 

দুপুরটা কেটেছিল পা ঘষটে ঘষটে, কিছু খাদ্যাহ্নেষণে 

বিকেলটা ছেঁড়া স্যান্ডেলটা সামলাতে সামলাতে চলে গেলো সন্ধ্যের পেটে!

সন্ধ্যা তো নেমেছেই আমার জীবনে আর হাঁটছি আমি অন্ধকারের দিকে

আর রাত! সে তো আমি নিজেই; 


তাহলে আর বাকি থাকলো কি?

ঐ তো! সকালে ক্ষুধা, দুপুরে ক্ষুধা, রাতে ক্ষুধা! আর ক্ষুধা পেটে ঘুমোতে যাওয়া,

আর কিছু নাই?

আছে তো! সন্তানদের কিছু আবশ্যিক চাহিদা! 

খাওয়ার খরচ, পড়ার খরচ, টিউশন ফিস, আজকাল আবার অনলাইন ক্লাস, নেটের বিল  

আর কিছু নেই? 

আছে তো! নেই নেই নেই নেই হাহাকার! 

বৌ এর চিন্তিত মুখের জিজ্ঞাসা! - কিছু হলো! আজ কিছু হলো!

আর তলানিতে পড়ে থাকা কিছু খুচরো পয়সা;


এর মধ্যে যদি কেও কুশল জিজ্ঞাসা করে

তাহলে তো চমকে যেতেই হয়! 

আচ্ছা! কি উত্তর দেব তাকে?


এক সময় আমিও ভালো ছিলাম

এক সময় চাকরি ছিলো

এক সময় সকাল উঠে অফিস যেতাম আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা

বাচ্চা কাচ্চাদের জন্য হাতে কিছু না কিছু থাকতোই

মাস শেষে বেতন হতো,  

তখন মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতাম সবাই মিলে

প্রজাপতির পেছনে দৌড়তাম, কখনো ফড়িং এর পেছনে 

পাহাড় বাইতাম, নদী সাঁতরাতাম, সাগরে পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম

এক সময় না প্রচুর ছবি তুলতাম! 

জানো! সেদিন ক্যামেরাটা বিক্রি করার সময় বড্ড কষ্ট হয়েছিলো

খুব খুব শখের ছিলো;


কোথা থেকে যে কি হয়ে গেলো!

করোনা নামের এক মহামারী এলো

চাকরিটাও গেলো,  

সঞ্চয় আর কতটুকুই বা থাকে! 

বসে খেতে খেতে কিছু খুচরো পয়সা আজ তলানিতে;

আচ্ছা! তোমাদের কারো কি এমন হয়েছে?

নাকি সব হাহাকার শুধু আমারই ঝুলিতে!  



২৭ অক্টোবর, ২০২০ 

#কবিতা

কুশল জিজ্ঞাসা

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




সম্পর্কে সম্পর্কহীন

সকাল হলেই পাখির ডাক দুপুর হলেই মন 

মেঘ জমলেই খারাপ হয় আকাশেরও মন    

বৃষ্টি নামলেই মন খারাপ, কোথায় থাকে মন?  

মনটা কি তবে আকাশ? কেন মুহুর্মুহু বদলায় রং?

মনের ভেতর যত অনুভূতি, মনের ভেতর মন  

সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতের যখন তখন; 


দিনের বেলায় আকাশ নীল ধানের ক্ষেতে সবুজ

বিকেল বেলায় মন খারাপ সূর্যের মত হলুদ 

সন্ধ্যে হলেই কুসুম লাল, কুয়াশায় ঢাকা মন 

অমাবস্যায় অন্ধকার, জ্যোৎস্নায় চাঁদের মতন, 

পূর্ণিমাতে হলুদাভ, আমার তখন মন খারাপ 

আকাশটাকে মেঘ ছাইলে, আকাশেরও মন খারাপ!  

     

একটা তুই, একটা আমি আর ছিল কিছু বোধ 

সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কমবেশি কিছু অনুভব

কিছু হাসি ছিল, কিছু কান্না আর ছিল কিছু গল্প   

আঙুলে আঙুলে, ঠোঁটে ঠোঁটে খেলার, কবিতা ছিলো অল্প;   

মান অভিমান আর ঈর্ষা রাগের কিছু মানবিক অনুভূতি

যে কোন সম্পর্কের যতি টেনে দিয়ে করে ফেলে খুব ক্ষতি; 


সম্পর্কে যতি হয়ে গেলেই মনের মন খারাপ 

রঙগুলো তখন অসহ্য লাগে সাদাকালোও লাগে খারাপ 

শব্দগুলো কানে বাজে তখন, শব্দগুলোও খারাপ 

গল্প কবিতা গানের সুর সবকিছুতেই মন খারাপ,   

দিনের বেলায় দিন খারাপ রাতের বেলায় রাত 

মন খারাপে মনের ওপর থাকে না কারো হাত; 


সব খারাপের ভালো দিক হলো ভালোগুলোও সব কালো

সব কালোতেই অন্ধকার, ভালো নেই আমি ভালো 

কোন একসময় কেটে যায় অন্ধকার, সময় যত গড়ায় 

রাতের কালো শেষ হয়ে গিয়ে সূর্যের পেছনে হারায়,

সূর্যোদয়ে আকাশ রাঙা, মন হয়ে ওঠে আবার দিন

খারাপ সময় কাটিয়েই ওঠে, একসময় আসে সুদিন;  


থেমে থাকে না জীবন কারো জন্যই, জীবনের চলাচল 

পেট থাকলেই ক্ষুধা, শরীর থাকলেই কাম, লাগবে কিনা বল!   

পেছনের সম্পর্ক ভুলে গিয়ে আবার নতুন সম্পর্কের শুরু 

নতুন বর্ষায় আবার মেঘ ডাকবে, আকাশ ডাকলেই গুরুগুরু,  

দিনের মাঝেই রাতের বাস রাতের ভেতর দিন 

মানুষের মাঝেই মানুষের বাস, সম্পর্কে সম্পর্কহীন। 



২৫ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

সম্পর্কে সম্পর্কহীন

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 







বৃষ্টির খিচুড়ি

বাইরে ঝুম খিচুড়ি নেমেছে

সাথে ডিম ভুনা আরো জমেছে

মাঝে মধ্যে বাতাসে একটু একটু আঁচার 

ধ্যাত! বেগুন ভাজা নামে নি এ কেমন বিচার?

বেগুন দিয়ে ছ্যাঁচা গরুর ভুনা

আহা! নেই কোন তুলনা 

আমি বৃষ্টির প্লেট হাতে করে বসে আছি

লাঞ্চের পরে একমগ কফি না হলে জমে কি?


বিকেলে একপেট খিচুড়ি ঘুম না হলে জমবে? 

একটু আদর সোহাগ হবে নাকি! চুমু ডুবিয়ে! 


২৪ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা

বৃষ্টির খিচুড়ি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



 



ভার্চুয়ালের হাতছানি ঘরে ঘরে মনে

সুন্দরী একটা চেহারা!

তেল মারা কমেন্ট

বড্ড আজব! তাই না? 

উঁহু! এতে আজবের কি হলো?

চোখ সুন্দর দেখলেই মনে পড়বে প্রভাব

সুন্দরের জয়গান মানুষেরই স্বভাব,  

এটাই শাশ্বত এটাই স্বাভাবিক 

আর তেল মারতে তো আমরা দিগ্বিদিক; 


আচ্ছা! এই যে  নিজস্ব একান্ত বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত!

খুলে দিচ্ছি সবার সামনে!

এটা মনের কোন দিক? 

কাকে দেখাতে চাইছি নিজেকে খুলে খুলে! 

আদতে আমিই বোধহয় মানসিক, 

তোমরা সবাই ঠিক ভাই

তোমরা সবাই ঠিক।  


মাঝে মাঝে কিছু কমেন্ট পড়ি!

লজ্জায় নিজেতে নিজেই মরি 

এই যে হাজার মানুষের মধ্যে একটা সস্তা কমেন্ট ছুঁড়ে দিলাম!

ঐ সুন্দরীর বন্দনা গেয়ে গেলাম, আচ্ছা! আমি কি পেলাম? 

এগুলো ভাবতে গেলে ভার্চুয়ালে এসো না 

তোমার যতসব উদ্ভট ভাবনা,  

ও ভাই! এগুলোই স্বাভাবিক 

আদতে তুমিই একটা মানসিক;


মানসিক, মানসিক শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা

ঐ যে সুন্দরীর ছবিটা দেখছ! সে কিন্তু আমার খালা

খালার মনে বড্ড জ্বালা সময় তার কাটে না 

রঙচঙে রাঙিয়েও বয়সটা বাঁচে না 

আসলে অস্থির এক জীবন তার একাকীত্বে ভরা!

আমি তো জানি! সময় কাটাতে এসে ফেসবুকে পড়েছে ধরা, 

বয়সটা কত হলো! পঞ্চাশ পেরোলো খালা 

অথচ ছবিতে কি দেখছ! খুব বেশী হলে পঁয়ত্রিশ শালা;


তেল মারা কমেন্টে খালা গলে ওঠে

না দেখা পুত্র বয়সী নরে খালার মন ছোটে 

আমি বারবার সাবধান দেই, ও রে ও খালা!

বয়সটার দিকে তাকাও ফেসবুকে করো না খেলা 

কার মন কি চায়! সেই শুধু জানে

ভার্চুয়ালের হাতছানি ঘরে ঘরে মনে; 


একদিন খালার সাথে ভার্চুয়াল প্রেম তুঙ্গে 

খালার প্রেমিক দূর দেশে, খালা বসে বঙ্গে 

দুজনাতে কথা হয়, ফেসবুক কথা কয় 

তারপর একদিন দুজন সামনাসামনি হয়

নরের মোহ ছোটে নারীর ঢলা দেহ 

খালা কেঁদে কেঁদে কয় পৃথিবীতে কারো নয় কেহ;


আমি খালাকে বলি, সাবধান করেছিলাম

খালা জ্বলে উঠে বলে আমি প্রেম করেছিলাম 

আমি বলি খালা'গো আয়নায় বয়সটা দেখ 

পরকালের চিন্তা কর এবার ফেসবুকটা রাখো,

আসলে যার যার দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজে নিজে ঠিক 

আমিই যত নচ্ছার, আমিই মানসিক; 


ভার্চুয়াল জীবন হয়তো অল্প কিছু দিলো

মূল্যবোধ কেড়ে নিয়ে কিছু মেকি বিলালো 

এখানে লাইক আর কমেন্টে সার্থকতা মিলে!

ডিকশনারিতে নৈতিকতা অন্ধকারের তলে 

ওহে! এটা দেখানোর জগৎ, এডিট প্রোফাইল পিক  

আমিই বোকার হদ্দ, তোমরা সবাই ঠিক ঠিক ঠিক। 


 

২৪ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

ভার্চুয়ালের হাতছানি ঘরে ঘরে মনে

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





শব্দগুঞ্জন

কিছু মৌমাছি উড়ছে 

উড়ছে কিছু ধ্বনি 

কিছু প্রজাপতি নাচছে 

ফুল নড়ছে পাপড়ি দুলছে

দুলছে কিছু শব্দ

আমি শব্দের কোলাহলে শব্দের গুঞ্জন শুনি; 


কিছু পাড় ভাংছে

ভাংছে কিছু গল্প 

নদী বইছে ক্রমাগত 

কুলকুল ঢেউয়ের কবিতা শুনি 

যত গভীর নদী তত ভাঙন পাড়ের    

আমি শব্দের কোলাহলে ভাঙনের শব্দ শুনি;   


দিনের কিছু শব্দ আছে ক্রমাগত বাজতে থাকে

রাতের কিছু শব্দ নৈঃশব্দ্যতায় কান পেতে 

সূর্যের শব্দগুলো বড্ড কানে বাজে 

জ্যোৎস্নারও কিছু শব্দ মনের ভেতর সাঁজে  

শব্দগুলো কিছু শব্দের শব্দ 

কিছু শব্দগুলোতে শব্দের জব্দ   

শব্দে শব্দে কিছু গল্প হয় 

থরে থরে কিছু শব্দ জোড়া লেগে জীবন কাহিনী কয়; 


আমি কান পেতে শুনি শব্দের হাহাকার 

আর কাগজে কলম ঘষে শব্দের কুটিকুটি

অনেকক্ষণ ঘষার পর সাদা কাগজটার দিকে চেয়ে থাকি

কই! কোন আঁকই তো পড়লো না, ও কি!

 

শব্দগুলো তো মনে ভাসে! কাগজে দাগ পড়ে না 

কলম ঘষাই সারা, কাব্য আর হয় না 

আমি ক্রমাগত শব্দ খুঁজে যাই প্রচণ্ড শব্দহীনতায়

আর বৃথাই বাক্য জুড়তে যাই মনের কাব্য কবিতায়;


সবাই'কে দিয়ে কি আর কাব্য হয়!

আমার শুধুই শব্দগুঞ্জন, এগুলো কবিতা নয়। 


২৪ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

শব্দগুঞ্জন

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






পুরুষের ব্যাকরণ

পুরুষ মানুষ গুলো বড্ড গোবেচারা

সেই যে বাল্যে মায়ের কাছ থেকে গো দিয়ে শুরু

মৃত্যুর আগেও সন্তানের কাছে তুচ্ছ বেচারা

আর মাঝখানের বিশাল এক সময় জুড়ে!

 - গ অক্ষরের নানা ব্যাকরণ

 - গ এর সমার্থক আর বিকল্প শব্দের প্রয়োগ  

 - গ এর নানা পদ  

এগুলো ভাষা'কে সমৃদ্ধ করতে না কিন্তু!

পুরুষ'কে বিশেষায়িত করতে; 


এই যে পুরুষ শব্দটা!

সে তো নিজেই বিশেষ্য পদ 

বেচারা দিয়ে বিশেষায়িত

মাঝে মধ্যে বেচারার আগে গো বসিয়ে দিয়ে বিশেষ্যের বিশেষণ লাগায় নারী 

মাঝে মধ্যে বোকা লাগিয়ে দিয়ে সর্বনামের বিশেষণ করে দেয়

প্রেমিক আর স্ত্রী'রা কি করে জানো? ও এর সাথে গো লাগিয়ে বিশেষণের বিশেষণ করেই ছাড়ে

এগুলো বিশেষায়ণ না বিশেষণের অতিশায়ন, কোন পুরুষটাই কবে জানতে চেয়েছে?

পুরুষ মাত্রই নানা বিশেষণ গলায় ঝুলিয়ে চলে;


এই যে পুরুষের সর্বনাম আমি, আমরা!

স্ত্রী জাতির কাছে কিন্তু সামীপ্যবাচক তুমি তোমরা 

একটা দূরত্ববাচক তৈরি করেই রাখে ঐ ওরা দিয়ে

আর সাপেক্ষ সর্বনাম তো যত্রতত্র - 'যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা

তাই আজকাল আর কিছু বলিই না';


এই যে পুরুষের প্রকারভেদ! 

উত্তম মধ্যম আর নাম পুরুষ;

কখনো নারীর প্রকারভেদের কথা শুনেছ?


আচ্ছা! অব্যয়'কে ভেঙে দেখ তো! 

'ন ব্যয়' - অর্থাৎ যে পদের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না 

  - যার সঙ্গে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না 

  - পুরুষ, বচন বা লিঙ্গ ভেদে যে পদের রূপের বা চেহারারও কোন পরিবর্তন হয় না

তোমরাই বলো! পুরুষের বাইরে ও ভেতরে কি এক না?

আমি না হয় বিদেশি অব্যয় ব্যবহার করেই বলি - 'আলবৎ' 


আচ্ছা! বলতে পার ক্রিয়া পদ কাকে বলে

 - যে পদ দিয়ে কোন কাজ করা বোঝায় তাকেই ক্রিয়া পদ বলে

পুরুষ ছাড়া আর কোন পদ আছে কলুর বলদ টানে?

ও হে নারী! তোমরা যত ইচ্ছে অসমাপিকা ক্রিয়ার উদাহরণই দেখাও না কেন!

সমাপিকা ক্রিয়া কিন্তু একটিই হয় 

পুরুষ ছাড়া কর্মে সমাপন আর কিসে হয়? 

জানি তো! তোমরা বলবে প্রযোজক ক্রিয়া

আমরা সেটা জানি ও মানি; তোমাদের প্রযোজনায় সংসারে দেখেছি কত অপ্রয়োজনীয় ক্রিয়া! 

সেই যে বাল্যকাল থেকে শুরু! 

গ ঘাড়ে চাপিয়েছি গুরু;

গ বিশেষ্য না বিশেষণ! সেটাও তোমরাই বলো!

পুরুষ আপত্তি করে না কোন কিছুতেই। 


 


২৩ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

পুরুষের ব্যাকরণ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 










গন্ধ শুঁকার আনন্দ

মানুষের মধ্যে কি কুকুর প্রবৃত্তি প্রবল? 

তা না হলে কেন গন্ধ শুঁকি?


এই যে চেনা নাই জানা নাই 

কারণ নাই অকারণ নাই

নাক মানুষের পেছনে দিয়ে ঠিক বসে থাকি

কিসের এত গন্ধ শুঁকি! 


অন্যের পিছনের গন্ধে কি মাতোয়ারা কিছু আছে?

আমার তো মনে হয় আছে

নাইলে কেন সবাই এত গন্ধ শুঁকে?

ওহে! আমার পেছনটা খুব ভালো করে ধুয়েছি,

তবুও শুঁকছ? শুঁক, শুঁক 

ওখানেই সুখ আছে সবটুকু যেন

এই যে আমার সারাদিন এত এত কাজ! পেটের ধান্ধা!   

তোমার কি কাজ নেই কোনো?  


আরে বাবা! পেছন শুঁকার মজা তুমি কি বুঝবে?

ওখানে কত রকম গন্ধ আছে! একটু শুঁকবে?

ওখানে নানা রকম গল্প থাকে, কবিতা থাকে, গান থাকে 

অর্থ থাকে, স্বার্থ থাকে, রিপু থাকে 

আমি ওর পেছনে কবিতা শুঁকি

মানুষকে শোনাই গান গেয়ে 

পেছন শুঁকে শুঁকে আমি গল্প বের করি

তারপর একে ওকে তাকে বলি উপন্যাস বানিয়ে,  

সে তুমি বুঝবে না, তারচেয়ে এসো গন্ধ শুঁকো 

ওর গল্প শুঁকো, তার কবিতা শুঁকো; 


জানো! ঐ যে লোকটাকে দেখছ! তার জীবনটা নানা রঙে রাঙানো

ঐ যে তার পাশের লোকটাকে দেখছ! বৌ তাকে ছেড়ে চলে গেছে

তার পাশের লোকটা! ও না পরকীয়ায় মত্ত! 

ঠিক তার পাশের জন, প্রতিরাতে মদ খেয়ে ঘরে ফেরে

তার পাশের জন............ 

ক্রমাগত.....................   

এসো আমার সাথে গন্ধ শুঁকো

মানুষের পেছনে কত রঙের কত ঢঙের গন্ধই না আছে!

একবার শুঁকতে শুরু করলে তোমার নেশা লেগে যাবে; 


আচ্ছা! আমি কি নেশাচ্ছন্ন হয়ে পরেছি?

না হলে এর ওর কথায় কেন মানুষের পেছনের গন্ধ শুঁকি!  

জানো! একদিন না মানুষের পেছন শুঁকতে শুঁকতে

আয়নায় চোখ যেতেই চমকে উঠলাম, ওকি!


আমি যে নিজের পেছনটাই শুঁকার চেষ্টা করছি!   

জিহ্বাটা যেন অনেকটা বের হয়ে এসেছে! 

কোমরটা অনেকটাই বেঁকে গেছে, একটু কি লেজ দেখা যাচ্ছে! 

আমি বোধহয় ধীরে ধীরে কুকুর হয়ে উঠছি; 


শুঁকছি, শুঁকছি আর শুঁকছি

ক্রমাগত মানুষের পেছনটা শুঁকছি।  



২২ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

গন্ধ শুঁকার আনন্দ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





মৃত সভ্যতা

ঐ যে বড় বড় অট্টালিকা 

আর ইট পাথরের দেয়াল 

ওখানে আলো ঝলমল কংক্রিটের কঙ্কাল 

ওহে! ওটা সভ্যতা, ওটা নগরায়ন 

এক সময় নদী ছিলো ওখানে 

ছিলো সভ্যতার ভাসমান জীবন;


শহর গ্রাস করছে গ্রাম 

গ্রাস করছে নদী 

একসময় ইট পাথরগুলো পড়ে থাকবে 

খুঁজতে হবে মরা নদী, 

একসময় পুতি দুর্গন্ধময় কিছু ছোট ছোট নালা

বর্জ্য নিষ্কাসনের জন্য নগরায়নে ঐটুকুই খোলা 

এই যে আজ দেখছ এখানে নিয়ন বাতির সভ্যতা

রাতের বেলায় এখানে বেলেল্লাপনা আর অসভ্যতা 

একসময় আকাশে এখানে অনেক ছিলো তারা 

একসময় বন ছিলো, ছিলো পশুপাখিতে ভরা

এক সময় সবুজ ছিলো, ধানক্ষেত দিগন্ত জোড়া 

আজ এখানে মানুষের কংকাল, পশুবৃত্তিতে মোড়া;


আজ এখানে চারিদিকে আকাশ প্রমাণ অট্টালিকা 

অট্টালিকার চূড়ায় বসে দেখছি নিচের নগর সভ্যতা 

আজ দালানগুলো প্রায় মেঘ ছুঁয়েছে আকাশে 

জ্যোৎস্নার বদলে নিয়ন দিন করে ফেলেছে পুরো আকাশটাকে 

এখানে আজ চারিদিক শুধুই আলো ঝলমল 

আর পুরোটা কংক্রিটের জীবন, মনুষ্য কোথায় বল! 


আজ ঐ অট্টালিকার চূড়ায় বসে নীচে আকাশ দেখি 

দূর দূর কোথাও নেই নদী যেন কংক্রিটের পৃথিবী 

একদিন ইট কাঠ দালানের ভীরে মানুষ হারিয়ে যাবে

মনুষ্যত্ব তো হারিয়েছিলই মানুষ, সভ্যতা সেই কবে!


আজ ইট কাঠের কংকাল দেখে বড্ড মন কাঁদে 

আজ একটি মরা নদী খুঁজি কংক্রিটের ভাঁজে ভাঁজে 

সভ্যতার চূড়ান্তে এসে যখন নদী সব মরে যায় 

আদতে সভ্যতাই মরে, মনুষ্যত্বের অসভ্যতায়।


২১ অক্টোবর, ২০২০ 



#কবিতা 

মৃত সভ্যতা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




 



 


ভার্চুয়ালটা জীবন না

আমরা কেউ কেউ বোধহয় ভার্চুয়ালে বাঁচি

ভার্চুয়ালে খাই দাই ঘুমাই 

ভার্চুয়ালে কান্না হাসি 

ভার্চুয়ালে মনকলা খাই

আর ভার্চুয়ালে জীবন কাটাই; 


ঐ যে আয়নায় দেখা যায় চেহারাটা!

মাঝে মাঝে দ্বিধাহ্নিত হয়ে তাকাই 

ওটা কি আসল না ভার্চুয়াল চিন্তায় পড়ে যাই 

কবেই যে ভুলে গেছি! আমার আসল জীবনটাই! 

এখন জীবনের মানে বলতেই কিছু লাইক, কিছু কমেন্ট

ক্ষণে ক্ষণে অস্থির কিছু প্রোফাইল ছবি

ক্ষণে ক্ষণে অস্থির কিছু গ্রুপ তৈরি 

এর ওর সাথে সারাক্ষণ খোঁচাখুঁচি, 

আর মনের মাঝে সত্যিকারের ঈর্ষা নিয়ে ভার্চুয়ালে বাঁচি; 

ও আমার বন্ধুর ওয়ালে ভালোবাসার ইমো দিয়েছে!

আমারটায় দিলো না? 

আমি কি এতটাই ফেলনা!

আর মনের দুঃখে আহা উঁহু কান্না;  


ঐ যে ওকে দেখছ! 

ওকে কিন্তু আমিই পরিচয় করিয়ে দিয়েছি তার সাথে

এখানেই এই ভার্চুয়ালে 

অথচ দেখ! দেখ! 

আজ সে আমার থেকে ওর বেশী আপন হয়ে গেছে!

ছিঃ! ছিঃ! মানুষ এত খারাপও হতে পারে!

হায়! আমার মানসিকতা!

ওহো আমার না রে এটা ভার্চুয়াল মানসিকতা,

তোমার বুদ্ধি কম, তুমি বুঝবে না; 

ও এখন তার সাথে মেশে, আমার সাথে মেশে না

আহা! জীবনটা এমন কেন? 

আমি কি এতটাই ফেলনা!

আর মনের দুঃখে আহা উঁহু কান্না;  

 

ঐ যে ওকে তার সাথে দেখছ না! 

জানো এক সময় না আমার সাথে খুব ভাব ছিলো

কথা হতো প্রতিদিন ভার্চুয়াল চ্যাটে,

অথচ আজকাল কেমন যেন বড্ড বেশী বদলে গেছে

এখন তো কল দিলে ধরে না ই, একটা কল ব্যাকও করে না

অথচ ম্যাসেঞ্জারের সবুজ বাতিটা চব্বিশ ঘণ্টা

নতুন প্রেমিক জুটেছে হয়তো 

ব্যস্ত থাকে তাদের সাথে

অথচ পরিচয় কিন্তু আমার মাধ্যমে, তাই না?

আমি কি এতটাই ফেলনা!

মনের দুঃখে আহা উঁহু কান্না; 


এক এক সময় আমার ভার্চুয়াল জীবনের দিকে তাকাই

এক এক সময় সামনে আয়না পড়লে দেখি 

মাঝে মধ্যে চমকে উঠি 

তারপর বোধোদয়ের লজ্জায় নিজেই মাটিতে মিশে যাই;

কোথায় যাচ্ছি আমি?

কি এক জীবন কাটাচ্ছি!

রক্ত মাংসের মানুষগুলোকে উপেক্ষা করে আজ ভার্চুয়াল হয়ে গেছি;

আচ্ছা! আজ অসুস্থ হলে ভার্চুয়াল চিকিৎসা করাবে?

নাকি লাইক আর কমেন্টে অসুখ ভালো হয়ে যাবে?

ওহে কাঁচের আয়না!

ওহে প্রতিচ্ছবি!  

তুমি রক্ত মাংসের মানুষ, 

ভার্চুয়ালটা জীবন না। 




২১ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

ভার্চুয়ালটা জীবন না

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




 







জমানো টাকা

এই যে আজ দিনটা চলে গেলেই ফুরিয়ে গেলো! 

আজকের মেঘ মেঘ সূর্যটা কি কাল উঠবে?  

আজকের বৃষ্টি দুপুরটা কাল আসবে?  

আজকের পড়ন্ত বিকেলের রাঙা? 

আজকের মন খারাপের সন্ধ্যা?  

আজকের চাঁদ! আজকের জ্যোৎস্না!  

এই যে আজকের রাতের চোখের স্বপ্নগুলো!  

কাল আসবে? 

বলো আসবে? 


জানি আসবে না 

সময় ফিরে আসে না 

তবুও আমরা সময়ের পেছনে দৌড়াই 

অযথাই, 

আসলে কিন্তু অযথা না  

আমরা দৌড়াই টাকার জন্য

সময়ের সাথে দৌড়াই সকাল সন্ধ্যা

বুঝ হওয়ার পর থেকে মাটিতে শোওয়ার আগ পর্যন্ত 

আমরা টাকা কামানোর জন্য বাঁচি

আমরা টাকা জমানোর জন্য বাঁচি, 

একটু ভেবে দেখ তো! ঠিক বলছি কি না?


এই যে টাকা টাকা টাকা টাকা 

উদয়াস্ত কষ্ট করে কামাই!

পেটে কতটুকু আঁটে? কতটুকু খাই?

তবুও সারাক্ষণ নাই নাই নাই নাই; 

এই যে সারাজীবনের জমানো সঞ্চয়!  

সাথে করে কি নিয়ে যাই?

অথচ কাড়াকাড়ি, হানাহানি, মারামারি

তুমি আমি, সে ও আমরা সবাই;


আচ্ছা! কি করব জমানো ঐ টাকার পাহাড় দিয়ে? 

শুয়ে শুয়ে মাটির ঘরে! 


একটু ভালো ভাবে বাঁচতে গেলে কিছু টাকার প্রয়োজন তো আছেই!

কতটুকু? 

চাহিদাকে অসীম না করে পেছন ফিরে না হয় একবার জীবনটার দিকে তাকাই!

ওখানে টুকরো টুকরো সুখ ছড়িয়ে আছে

 সুখ আছে সকালের রৌদ্দুরে

 সুখ আছে সন্ধ্যার সূর্যাস্তে 

 সুখ আছে ঋতুদের খাঁজে খাঁজে 

 সুখ আছে মেঘেদের ভাঁজে ভাঁজে 

 সুখ আছে প্রিয়জনের চেহারার মাঝে 

 সুখ আছে প্রতিটা ঘরে ঘরে, 

অথচ টাকা নামক এক অসুখ কিনে টাকার পেছনেই দৌড়াই

মাঝে মাঝে নিজের বোকামিতে নিজেই অবাক হয়ে যাই;


সূর্য ডুবলেই আজকের দিনটা হয়ে যাবে গত 

কাল আবার নতুন সূর্য নতুন দিন

নতুন রাত নতুন চাঁদ 

টিক টিক টিক টিক, সময় গড়িয়ে যাচ্ছে অবিরত; 

শুধু টাকার জন্য না বেঁচে জীবনের জন্য না হয় একটু বাঁচি!

শুধু স্বার্থের জন্য না বেঁচে না হয় প্রিয়জনের জন্য একবার বাঁচি! 


মাটি ডাকলে কেউ কিন্তু টাকা চাপা দেবে না আমায়!

ওগুলো তবে কি কাজে আসবে? 


২১ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

জমানো টাকা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





ফেসবুক স্ট্যাটাস

আমি ভুগছি 

ভুগছি বড় কোন ক্রাইসিসে

শুধু আমিই না! সম্ভবত আমি তুমি তোমরা সবাই; 

 

আমি কিন্তু ভুগছি নিজে নিজে 

তা না হলে কথায় কথায় কেন ফেসবুকে হাত চলে? 

আমার পেট খারাপ 

আমার মাথা ব্যথা 

আমার মন খারাপ

আমার করোনা 

আমার ক্যান্সার 

এই জানো! আমার না পেট কাটবে আজ

এগুলো স্ট্যাটাস? 

হ্যাঁ রে! এগুলো ফেসবুকেরই স্ট্যাটাস

আমি কি হনু রে! বাপরে বাপ! 

আমার অসুখে কারো কিছু আসবে যাবে!  

তবে কেন আহা উঁহু পেতে চাইছ? 

কি করবে শত খানেক আহা উঁহু ইমো দিয়ে? 

রোগ সারবে? 

সুস্থ হয়ে যাবে! 

আরে বাবা অসুখ করেছে চিকিৎসা নাও 

বিশ্রাম করো;  

জীবনে ভুল যদি কিছু হয়েই যায়! তবে আছে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার দরবার

নামাজে বস, ক্ষমা চাও 

ওনার থেকে বেশী আর কে দেবে তোমায়! 

ভাবো! দয়া করে ভাবো। 

ফেসবুক স্ট্যাটাস চিকিৎসা না; 

 

হয়তো বাবা মারা গিয়েছেন বহু বছর আগে, এই দিনে  

কে জানে! মা হয়তো আমার জন্মের সময়, আজকের তারিখে 

আমি কি করি? স্ট্যাটাস দেই ফেসবুক নিরিখে 

সকালে সন্ধ্যায়, দিনে রাতে 

মৃত মা বাবার ছবি লটকে দিয়ে ফেসবুক ওয়ালে

দিবসের স্মরণে,   

আমরা শিক্ষিত হচ্ছি না মূর্খ? 

এই যে উঠতে বসতে স্ট্যাটাস!  

বল তো রে আয়না! কার কি আসে যায়! 

আমার বাবা মা আমারই 

তোমারটা তোমারই  

ওনারা কেউ কেউ হয়তো মারা গিয়েছেন ওনাদের সময় 

আজ যদি ওনাদের কথা মনেই হয়! 

রব্বীর হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা 

পড়ে ফেলি না! 

আমার বাবা মায়ের জন্য দোয়া ফেসবুক করবে না 

তাই না? 

ওহে মূর্খ আয়না! ভাবো, দয়া করে ভাবো।

ফেসবুক স্ট্যাটাস বাবা-মায়ের জন্য দোয়া না; 


আমি কি কষ্ট দিলাম কারো মনে?

কি করব বলো! 

অসংগতি গুলো বড্ড চোখে লাগে নিজের কাছে 

অসংগতিগুলো মাঝে মাঝে একদম হৃদয়ের গভীরে এসে বাজে 

আমরা অস্থির এক অসংগতির জীবন কাটাই 

খাই দাই ঘুমাই 

আর উঠতে বসতে ফেসবুক স্ট্যাটাস মারাই; 


কোন একদিন হয়তো অনেক অপ্রয়োজনীয় স্ট্যাটাসের ভিড়ে  

খুব প্রয়োজনীয় একটা কথা বলব! 

আমার বাকি হাজারটা স্ট্যাটাসের মাঝে কারো নজরেই পড়বে না

অথচ হয়তো সেটাই ছিলো আমার জন্য আমার সবচেয়ে জরুরী ফেসবুক স্ট্যাটাস

হয়তো খুব সমস্যায় পড়েই দিয়েছিলাম! 

মানুষ যথারীতি ভেবে নিয়েছে - আরে! ঐ দেখ! ফেসবুক স্ট্যাটাস!

ও তো উঠতে বসতে পোষ্টায়, শালা খাটাশ। 


১৯ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

ফেসবুক স্ট্যাটাস

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 







মনের মাঝে ছিলো

তোর হাতের শোভাটাই চুড়ির ভাগ্য, কপালের শোভা টিপ 

শাড়িটা জড়িয়ে রয় তোকে প্যাঁচিয়ে শরীর

জানিস! আয়না'কে না আমার বড্ড ঈর্ষা হয়! 

ওখানে পুরোটাতেই তুই আর পুরোটা জুড়েই তোর অবয়ব রয়; 


আজকাল কোথাও থাকি না আমি কারো খুব কাছে

সাধারণত আজকাল ইচ্ছে করে না চোখ খুলে কিছু দেখতে

তবে যখনই কোথাও হালকা হিমেল বাতাস বয়!

যখনই অস্তিত্বের গভীরে কোন অনুভূতি কথা কয়, 

তখন, ঠিক তখনই কোথা থেকে জানি কিছু গোপন ইচ্ছেগুলো 

মনের গহীনে উঁকি দেয়

আমারও যেন ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে বাতাস হতে 

আমারও তখন ইচ্ছে করে কারো মন ছুঁয়ে দিতে;


নতুন করে কারই বা মন ছুঁয়ে দেব আর!

একটাই তো মন ছিলো বইয়ে দেবার

সে তো কবে থেকেই তোর কাছে ছিলো রে নদী!

যখন যেখানেই ছিলি, মন সাথে নিয়েই চলেছিস নিরবধি; 

আজ যদি খুব হঠাৎ করে পুরনো এক চেনা চেনা বাতাস তোকে ছুঁয়ে দেয়!

চিনতে পারবি পুরনো নিঃশ্বাস! 

জানিস! মাঝে মাঝে না বড্ড প্রগলভ হতে ইচ্ছে করে,

মনের মাঝে কোথায় জানি লুকিয়ে থাকেই ভালোবাসার আশ্বাস; 

 

আজকাল মাঝে মাঝে খুব হঠাৎই তোকে দেখতে ইচ্ছে করে 

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আগের মত ভালোবাসতে  

মাঝে মাঝে খাতায় কলম চালাই আর সাদা কাগজে তোর আঁক 

তোকে নিয়ে কবিতা লিখা হয় না বহু বহুদিন

ভালোবাসাটুকু'তো এখনো সেই আগের মতই অমলিন 

ওটুকু না হয় শুধুই আমার অস্তিত্বে একান্ত হয়ে থাক!


এই যাহ্‌! তোকে নিয়ে কবিতা এঁকেই ফেললাম!

আবার আগের মত কাঁদতে বসিস না লো 

আমাদের সময়গুলো অনেক বদলে গেছে এখন

এগুলো শুধুই কিছু অনুভব, মনের মাঝে ছিলো। 


১৯ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

মনের মাঝে ছিলো

 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 








স্বপ্নঘোর

ভোরের আকাশে রবির টুকি

পাতার ফাঁকে ফাঁকে একটি দুটি পাখির উঁকি

সকাল হচ্ছে প্রকৃতিতে

সূর্য উঠছে আকাশে;


একটি দুটি করে কিচিমিচি পাখির কাকলি

এক একজন গান গাইছে এক এক সুরে

পাখিদের নিজস্ব কিছু গান আছে, পাখিরাই বোঝে

এবার খাদ্যাহ্নেষণ, নীড় ছেড়ে;


আমি জানালার ঘুলঘুলিতে তাকাই

কোথা থেকে জানি একফালি সূর্য রশ্মি

মনবন্ধ করে আবার কাঁথা মুড়ি দেই 

মন আমার নয়, আমি মনের বশ্যি;


একদিন আলস্য ছেড়ে দিয়ে খুব ভোরে  

আমিও হয়তো মিশে যাব পাখিদের ভিড়ে 

হয়তো পাহাড়ের ডাক শুনে কিংবা সাগরের 

আর নয়তো আকাশ ডাকলেই যাব উড়ে


হয়তো হেমন্তের কিছু শিশির পড়ে থাকবে ঘাসের বনে

কিংবা বসন্তের সুর লাগবে কোন এক দিন মনে

কে জানে শরৎ কবে ডাকবে?

কে জানে আমি কার ডাকের অপেক্ষায়.................. 


আচ্ছা! প্রকৃতি না ডেকে যদি ডাক আসে অন্য কোথাও থেকে?

যদি ঘুমঘোরে চলে যেতেই হয় একদিন ঘুমঘরে? 

সেদিন কি বর্ষা কাঁদবে?

কোথায় জানি দ্রিম দ্রিম দ্রিম দ্রিম মাদল বাজছে স্বপ্নঘোরে.........   


 

১৯ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা

স্বপ্নঘোর 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 








সাহস আছে! সম্পর্ক যাচার

সম্পর্কের গণ্ডিতে বাঁধা মানুষের জীবন 

জন্ম থেকে মৃত্যু, জীবনের প্রতিটা ধাপে ধাপে সম্পর্ক

এগুলো চাইলেও আছে না চাইলেও থাকবে

এর মাঝেই হাসি কান্না দুঃখ বেদনা 

জীবনের সাথে ওতপ্রোত 

এর মাঝেই আমাদের অস্তিত্ব; 


তবে মাঝে মাঝে সম্পর্কগুলো বড্ড ভাবায়

সম্পর্কগুলো হাসায় কাঁদায়

সম্পর্কগুলো সম্পর্কহীনতায় ভাসায়,  

কখন জানো?

যখন কোন এক সময় তোমার খুব প্রয়োজন ঐ সম্পর্কগুলো

যখন প্রয়োজন হয়ে পরে নিজের মানুষগুলো 

ঠিক তখন 

ঠিক তখনই যেন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যেতে দেখা যায় নানাবিধ সম্পর্কগুলো 

বড্ড কঠিন, তাই না?

কঠিন তবে আজব না; 


সুঁই সুতোয় গেঁথে গেঁথে এক একটি সম্পর্ক গড়ে এসেছ আজ পর্যন্ত 

এক একটি সম্পর্ক এক এক সুঁই এ 

এক একটি সম্পর্ক এক একটি সাদাকালো কিংবা রঙিন সুতোয়

অনেক যত্ন করে 

অনেক আদরে 

অনেক ভালোবাসায়,

এগুলোর বেশীর ভাগই রক্ত সম্পর্কীয় 

জন্ম থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া

আমাকে চাষ করে সম্পর্ক ফলাতে হয় নি 

শুধু গেঁথে রাখতে হয়েছিলো সুতোয় বেঁধে

বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান

এই তিনটা সম্পর্ক রক্তের, 

আর স্বামী-স্ত্রী? ওটা তো ওপরওয়ালার বিশেষ বিবেচনা

জন্ম মৃত্যুর মতই গেঁথে দিয়েছিলো জীবনের সাথে

মাঝে মাঝে চিন্তা করি

 - কখনো কখনো রক্ত সম্পর্ক ছাপিয়েও  ও সম্পর্কটাই এত আপন হয়ে যায় কিভাবে বেশী!  


এই যে মাঝে মাঝে জীবনে কিছু কালো অধ্যায়ের হঠাৎ সূচনা ঘটে!

কেও কি জানে আগে থেকে?

সম্পর্কগুলো কিন্তু তখন ঠিকই কথা বলে

রঙ দেখায় নানা রঙে

তোমার সুঁই সুতোয় গাঁথা সম্পর্কগুলো কি ঠিক থাকে?

ধাক্কা এলে?

নাকি রক্ত সম্পর্কগুলো রক্তাক্ত করে রক্তের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলে?

একবার পরীক্ষা হয়েই যাক না! 

মনে সাহস আছে?


আচ্ছা তাহলে মনে কর একদিন খুব হঠাৎ তুমি হসপিটালে

অচ্ছুৎ এক মহামারীর কোলে 

ধরার কেও নেই, নেই ছোঁয়ার 

ঐ যে রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো! 

এ্যাম্বুলেন্স ডেকে হসপিটালে কোনমতে ফেলে এসেছিলো 

তারপর তুমি তোমার; 


মরে গেলে তো বেঁচেই গেলে

আর নয় তো বেঁচে বর্তে কোনমতে জ্ঞান ফিরলো কদিন পরে

বেঁচে যখন আছই! তাহলে কেও তো এসেছিলোই হসপিটালে, 

বিলগুলো পরিশোধ করতে! কে? 

আচ্ছা! কে কে খবর নিয়েছিলো! এ কদিন কেমন ছিলাম! চলছিলো কি করে?

উঠে বসলে ধুঁকে ধুঁকে 

মোবাইল স্ক্রিণটার দিকে তাকিয়ে থাকলে দুচোখে অশ্রু নিয়ে

তুমি বিশ্বাস করবেই না! কি কি সব খেলা দেখিয়েছিলো জীবনটা এ কদিনে!

দেখি তো কয়টা মিসকল আছে ওখানে?


বাবা কিংবা মা? - বেঁচে থাকলে হয়তো!   

ভাই বোন? - হায়! দুরাশা!

সন্তান? - একটা দুটো কলও কি থাকবে না? এ কেমন কথা! 

হায়! তাহলে এতদিন কাদের জন্য করেছি! 

আমি কে? শুধুই সম্পর্ক চাষি! 

দুঃখ পেও না, সামনে বাড়ও; 


খুব আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে এমন কিছু কল এসেছিলো তোমার খবর নিতে!

যেগুলো তুমি কখনো চিন্তাই করতে পারবে না স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে,

ভেবে পাচ্ছ না হারিয়ে যাওয়া এসব মানুষগুলো এখনো কিভাবে তোমায় স্মরণ করে!

আর ঐ অতি পরিচিত, অতি আদরের সম্পর্কগুলো!

সারাক্ষণ যারা তোমাকে ঘিরে থাকে! যাদের তুমি আপন ভাবো! 

শ্বশুর বাড়ি! দেবর ননদ! শালা শালি! কি আপন করেই না ঘিরে থাকে, চারিদিকে!

অথচ! মোবাইলে কার কার কয়টা মিসকল লিস্ট দেখলে!

কষ্ট পেলে! 

ধ্যাত! পেও না

এটা জীবন, এটা সম্পর্কের ছলনা;  


তাহলে স্বামী কিংবা স্ত্রী? - আরে বোকা ওটা মিসকলে পাবে না, চোখ খুলে দেখ! 

 আছে, কোথাও না কোথাও আছে, হসপিটালেই আছে! কাছে কিংবা দূরে, সামনে কিংবা পাশে; 

 অচ্ছুৎ রোগে তার কি যায় আসে!   

 সে ছিলো, পাশেই আছে, তোমাকেই ঘিরে 

 অথচ ওটা তো রক্তের সম্পর্ক নয়! তা হলে কেন এমন হয়! 

 আমি উত্তর খুঁজে পাই নি; 


 এটাই বাস্তব এটাই জীবন এটাই সম্পর্কের ছবি 

 আমাদের মনগড়া সম্পর্কগুলো নিয়ে আমরা স্বপ্ন জগতে বিচরণ করি  

 হাসি খেলি আনন্দ করি আর সুখের সময় সবাই মিলে একসাথে ঘোরাঘুরি 

 আর কাটিয়ে যাই সম্পর্কহীন এক সম্পর্কের পৃথিবী;  

  

তুমি সম্পর্ক বুঝেছ?

আমি কিন্তু ঠিক বুঝেছি,

আমরা আমিত্বে বাঁচি। 



১৮ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

সাহস আছে! সম্পর্ক যাচার  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






খবর

এই! আজ খবরটা দেখেছ!

এই যে দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটা ছিলো না!

সে কাল রাতে মারা গেলো

আহা! দেশের কি অপচয়টাই না হলো!


আরে তুমি গতকালের খবর তো দেখই নি!

কাল যিনি মারা গেলেন না!

উনি টাকার থেকেও খ্যাত ছিলেন বেশী 

ওনার অনেক ছিলো সম্মান 

অথচ, কি অকালেই না ঝরে গেলো প্রাণ!


তুমি গত সপ্তাহের খবর তো দেখই নি!

ঐ যে নিউজ ফিড জুড়ে একটা ছবি স্ক্রল হচ্ছিলো!

গায়ে স্বর্ণের অলংকার!

স্বর্ণের গাড়ি, স্বর্ণের বাড়ি, এমনকি স্বর্ণের বিমান

টাকার অংকে তার ছিলো না কোন পরিমাণ

অথচ কি হলো!

সেই তো মাটিতেই গেলো!


আচ্ছা! এই যে টাকা পয়সা

ধন সম্পদ 

মান সম্মান!

সারা জীবন ধরে একটু একটু করে কামাই, 

সাথে করে কতটুকু নিয়ে যাই?

কিসের বিনিময়ে কি হারাই?

দম্ভে উনিশ থেকে বিশ হলে 

স্বরূপ দেখা যায় তার;  

আয়না কথা বলে আয়না ভাষায়

আয়না কথা বলে স্বার্থের টোকায়,   

এক ফোঁটা বীর্য থেকে তৈরি মানব

কি তার অহংকার!

কখনো কি ভাবে!

গন্তব্য কোথায় কার?


মাটির ঘর হাসে

মাটির ঘর ডাকে 

মাটির ঘর অপেক্ষায় বসে থাকে 

বীর্যের মাটি হতে;


ওহে! হিসেব দিতে পারবে তো!

যা কিছু কামিয়েছ!


১৮ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

খবর 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





প্রস্তুতি

সময় কি খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে? 

এই যে সকাল হচ্ছে!

হতে হতেই রাত

এই যে রাত নামছে!

নামতে নামতেই সকাল,

কই দৌড়ে তো ধরতে পারছি না কাউকেই! 


আজকাল সকাল ধরতে গেলে সূর্য মাথার ওপরে

দুপুর ধরতে গেলে রবি বিকেলের কোলে

সন্ধ্যে ধরতে গেলে আকাশে চাঁদ খেলে

চাঁদটা ধরতে গেলে অন্ধকার কথা বলে

সময়গুলো ছুটছে যেন সময়ের আগে

আমিই শুধু পেছন থেকে থাকি চেয়ে;


এই যে একটি একটি করে দিন যাচ্ছে!

আসলে কি দিন যাচ্ছে! 

নাকি এগোচ্ছি আমি?

এগোচ্ছি তো অবশ্যই এক গন্তব্যের দিকে

এমন এক গন্তব্য যা সবাই জানি 

তবুও ইচ্ছে করে ওখানে কেউ পৌঁছতে চাই না, 

তাই না?


একটা সময় ছিলো যেন দিন কাটতেই চাইতো না!

দিনমান কাজ, কাজ আর কাজ

পড়ালেখা, পড়ালেখা আর পড়ালেখা

খেলা খেলা আর খেলা 

সেই ভোর থেকে রাত অবধি

তবুও কতই না অবসর ছিলো!

আনন্দ অফুরান;

আর আজকাল!

সময়ের সাথে দৌড়ে দৌড়ে যেন হয়রান! 

কোথায় যে সকালের মাথা আর কোথায় যে বিকেলের হাত! 

বুঝতে বুঝতেই ঝরে যায় জীবন থেকে এক একটি রাত; 


আজকাল ঘুমগুলোও চোখ থেকে যাচ্ছে কমে,

হয়তো সামনে লম্বা ঘুমের প্রস্তুতি মনে মনে; 

ঐ ঢং ঢং ঘণ্টা বাজছে শোনো!

কাউকে না কাউকে ডাকছে ক্রমাগত, 

প্রস্তুতি নিয়েছ তো! 


১৮ অক্টোবর, ২০২০


#কবিতা

প্রস্তুতি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





ক্লাব-৮৫ - আমার একটাই বাড়ি

এই যে আজকাল নেটে আসি

ক্লাবে ঢুকি

কত কত বন্ধুবান্ধব এখানে!

তবুও কতজনের কত রকম উঁকি! 

আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি;


ভার্চুয়ালে বন্ধুর অভাব কোথায়?

আমার বন্ধুর সংখ্যার দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে নিজের চোখই ছানাবড়া হয়ে যায়!

এত বন্ধু আমার!

কই! প্রয়োজনে কাছে পেয়েছি কজন'কে?

ক'জন খোঁজ নিয়েছে আমার সেই সব দুর্দিনে!

অথচ তারা কিন্তু জানতো ঠিকই, দূর থেকে

দেখতো হয়তো! অসহায় অবস্থা

মজা করতো কেও কেও

টিকা টিপ্পনীও শুনেছি কখনো কখনো

কিছু বলিনি কখনো,

কি হবে বলে?

যার যার জীবন, সেই খেলে;


এই যে নেটে আসি! 

কত কিছুই না দেখি!

আমরা এখানে সবাই একই বয়সী 

তিন চতুর্থাংশ পার করে এসেছি জীবনে

বাকি অল্প একটুই তো পথ!

কেটে যাবে কোনমতে,

তবুও এখানে কি বিষম রেষারেষি! 

কি বিষম প্রচেষ্টা নিজেকে জাহির করার!

একই গ্রুপে কত কত বিভাজন! কত কত ভাগ!

কয়েকজনের তো দেখি আবার গ্রুপে গ্রুপে সদ্ভাব; 


কয়েকজন এখানে থেকেই নতুন গ্রুপ চালায়, 

এখান থেকেই নতুন করে আমন্ত্রণ - 

 একটা কবিতার গ্রুপ করেছি আলাদা

 একটা নাচের

 একটা গানের

 একটা গল্পের

 একটা কৌতুকের

 একটা কোমর দুলানোর 

 একটা এমনি এমনিই,

চলে এসো না আমার গ্রুপে! 

একটু ঢু মেরে যাও না হয় ওমনি!


বন্ধুই তো! 

আমি মানা করতে পারি না,

গ্রুপে যাই, ঢু মারি

এখানে ওখানে ঘুরি

এখানকার পোস্ট ওখানে পড়ি

ওখানকার পোস্টগুলো এখানে পড়ি

তারপর একই পোস্ট গ্রুপে গ্রুপে দেখতে দেখতে একসময় ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়ি; 


আচ্ছা! কেন এই ফাটল?

কেন এই বিভাজন?

কখনো প্রশ্ন করেছি নিজেকে?

আজকাল আর কোথাও যাই না ক্লাব থেকে 

এখানেই থাকি

এখানেই হাসি

এখানেই কাঁদি

এখানেই ঘুম থেকে উঠি

এখানে শুয়ে শুয়েই রাতে ঘুমিয়ে পড়ি;


ক্লাব-৮৫ 

আমার একটাই বাড়ি। 



১৭ অক্টোবর, ২০২০


#কবিতা

ক্লাব-৮৫ - আমার একটাই বাড়ি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






  

নজর নিজের ঘরে

পেপারে প্রায়শই খবর আসে
ধর্ষণ হচ্ছে
খবরের নিউজ ফিডে ক্রল হচ্ছে, ধর্ষণ 
এখানে হচ্ছে, ওখানে হচ্ছে 
আমরা চোখ বুলাই, খেয়াল করি কি?
গভীরে যাই কি?

একদিন খবরের কাগজ খুলতেই দেখলাম 
ধর্ষণ হয়েছে
আমার খুব কাছাকাছিই 
আরেকদিন খবর পেলাম, আমার মহল্লাতেই
এবার টনক নড়োলো 
হচ্ছে টা কি?

আরে আরে! ঘরে ঢুকে যাচ্ছে নাকি? 
ধর্ষক! এরা তো বয়স মানে না
নারী হলেই হলো
মাংস হলেই বলে চলো 
ঘরে আমার মা আছে শত্তুর ঊর্ধ্ব
স্ত্রী আছে পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব
বোন আছে চল্লিশ ঊর্ধ্ব 
কন্যা আছে যুবতী
হায় হায়! এবার আমার কি হবে গতি?

ধর্ষক কারা?
ঐ তো সেদিন দেখলাম মহল্লার কিছু যুবক
একদিন দেখলাম আমারই বয়সী প্রৌঢ় 
একদিন দেখলাম ছোট ভাই এর সমবয়সী
একদিন দেখলাম একজন আমার ছেলের বয়সী  
এরা কারা?
আমার তোমার তার আর আমাদের বন্ধুর সন্তান
তাদের ভাই, তাদের পরিবার
তাই না?
এরা তো প্রতিদিনের মুখচেনা
তবুও ধর্ষক?
চারিদিক কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে,
আচ্ছা! আমার ছেলেটাও তো এদেরই খেলার সাথী
আমার ছোট ভাই, ভাইস্তা, ভাইগ্না
কি করছে ওরা?
আসলে জানি কি?

এই যে আজকের সমাজ ব্যবস্থা!
একই বাড়িতে বসবাস অথচ চার দেয়ালে বন্ধী জীবন 
কে কার সম্পর্কে কতটুকু জানি?
ঘরের কেওড় বন্ধ করে ওপারে ছেলে কি করে?
বন্ধ ঘরের ওপাশে মেয়ে কি করে?
আদতে জানি কি?
একটু ভাবি!
আমার ঘরেই ধর্ষক তৈরি হচ্ছে নাকি!

আজ ঘরের ভেতর ঘর
সমাজের ভেতর সমাজ
অথচ আমাদের নিজেদের অবস্থান কি?
আমি কি ঠিক আছি?
নাকি বন্ধ বাথরুমের দরজার ওপাশে খুলেছি পর্ণগ্রাফি
পরকীয়ায় মত্ত হয়েছি নাকি!  
একবার না হয় আমি নিজেকেই যাচি!

হয়তো ধর্ষণ আমারই মনে 
হয়তো ধর্ষক আমারই ঘরে 
ঘর থেকেই তো সমাজ, তাই না?  
আগে নিজের ঘরে একটু নজর দিয়েই দেখি না! 



১৬ অক্টোবর, ২০২০ 

#কবিতা 
নজর নিজের ঘরে
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






 

ভাবনার ডানাগুলো

ভাবনাগুলোর কোন নির্দিষ্ট ডানা থাকে না, 

তবে থাকে;   

কখনো পোকার ডানা 

কখনো পাখির ডানা

মাঝে মধ্যে উড়োজাহাজের ডানা তো কখনো বা রকেটের ডানা,

কোথা কোথা থেকে জানি আজকাল ডানাগুলো উড়ে আসে! 

ভাবনার দেহে বসে 

তারপর উড়িয়ে নিয়ে যায় আমাকে কোন কোন সুদূর পানে! 


ভাবনার গায়ে ডানা লেগে গেলেই সে যে কি বিশাল বিশাল দূরত্ব পাড়ি দেয়!

তোমরা চিন্তাও করতে পারবে না,

অথচ একা একা নিশ্চিন্তে শুয়ে ছিলো ভাবনা

হয়তো একা একা গরম-তন্দ্রা

হয়তো একা একা শীত-নিদ্রা

ডানাগুলো এসে পিঠে বসেই আর একা থাকতে দিলো না;


একদিন প্রজাপতির এক ডানা এসে ভাবনার পিঠে চেপে বললো, চল

ওমনি গা ঝাড়া দিলো ভাবনা

দুজনে মিলে ফুলের মাঠে, সবুজ ক্ষেতে দাপিয়ে বেড়ালো সারাদিন

তারপর সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বললো, অনেক হয়েছে; এবার ঘরে চল;

একদিন পাহাড়ের ডানা ডাকতেই ছুট দিলাম পাহাড়ে

চারিদিকে কি অপরূপ শোভা আহারে

বেশ কিছুদিন পাথরে, বরফে কাটিয়ে আবার ক্লান্ত থিতু 

বললাম অনেক হয়েছে, এবার ঘরে চল;  

একদিন নদী ডাকলো, একদিন সাগর

একদিন প্রকৃতি ডাকলো, একদিন ডাক দিয়ে বসলো ঝড়

একদিন দিন ডাকলো, একদিন রাত 

একদিন চাঁদ ডাকতেই ঘর থেকে বের হয়ে জ্যোৎস্না দেখলাম

একদিন সূর্য ডাকতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ ঝলসালাম;


একদিন একদিন খুব ভাবি!

আচ্ছা! ঐ যে কোন এক সুদূর থেকে একদিন বিশেষ এক মৃত্যু-ডানা পিঠে বসে বলবে

চল রে, এবার চল! 

সে যাত্রাটা বড্ড একমুখী হয়ে যাবে না! 

সেদিন সেই যে চলে যাব! আর তো ফিরে আসা হবে না

ফিরে এসে তোদের বলে যেতে পারব না, কেমন ছিলো যাত্রাটা, 

তাই না?


আমার ভাবনায় একটা মৃত্যু-ডানা উড়ে এসে বসার অপেক্ষায়

আজ, কাল বা পরশু.........

তারপর, ঐ তো শব!  


খুব হঠাৎ একদিন একদম চুপ হয়ে গেলে ভুলে যাস কিন্তু সব। 

 


১৫ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

ভাবনার ডানাগুলো 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





স্পর্শের হাহাকার

ছোট্ট একটা ঘর

দুটা ঘুলঘুলি

জানালাই বলি!


একচিলতে করে আলো আসে, পর্দাটা সরিয়ে দিলে

আমি পর্দা ফেলে অন্ধকার করেই রাখি

আপাতত: বাইরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি

আমার এখন একাকী নিভৃতে কারাবাস,

কি এক পজিটিভ এলো! ওলোটপালট সর্বনাশ;


এ ঘরে সব আছে

টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মোবাইল, ইন্টারনেট

এ ঘর থেকে আমি পৃথিবী দেখতে পারি

কথা বলতে পারি যার তার সাথে যতক্ষণ ইচ্ছে

মুঠোফোনে কিংবা ভিডিও চ্যাটে

নেট অন করলেই হাতের মুঠোয় পৃথিবী 

আজকালকার জামানায় এর থেকে বেশী চাওয়ার আর আছেই বা কি?


আছে, আছে

আরে এটুকুই কি পৃথিবী?

তাহলে ঐ যে একটু স্পর্শ!

প্রিয়জনের একটু ছোঁয়া!

একবার বুকে জড়িয়ে ধরা!

একবার চামড়ার চোখে দেখা!

না হয় দূর থেকেই

তোমরা কেও কেও অনুভূতি বলো

আমি বলি হৃদয়ের হাহাকার

এখানে সবকিছু থেকেও যেন কিছুই নেই আমার;


এখানে রক্ত মাংসের মানুষ নেই একটাও

অথচ খুব ইচ্ছে করে একটা মানুষের স্পর্শ নিতে 

এখানে প্রিয়জনগুলো ছড়িয়ে আছে দূরে দূরে 

বন্ধ দরজার ওপাশে 

এপাশে আসার অনুমতি নেই কারো 

অথচ বুক ভরা হাহাকার!

তাদের ও আমার; 

শুধু একটিবার যদি একটু জড়িয়ে ধরতে পারতাম!  

ওটুকুই,

ব্যাস! ঠিক ওটুকুই যেন বাকি রয়ে গেলো চাওয়ার!




১৪ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা

স্পর্শের হাহাকার 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




 


 

'+' চিহ্ন

'+' চিহ্নটার শাব্দিক অর্থ জুড়ে দেয়া, 

তাই না?

সে হোক অংকে, কথায় কিংবা সম্পর্কে;  


অথচ ২০২০ 

'+' হয়ে গেলো পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর চিহ্ন 

জীবনটাকে করে দিলো বিষ; 


এখন '+' অর্থ জুড়ে দেয়া নয় বরং ছিঁড়ে ফেলা

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনুভূতিগুলোকে 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্কগুলোকে 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো পুরো জীবনটাকেই;


এই যে + আর + এর মিলনে সম্পর্কগুলো!

সে পারিবারিকই হোক, আত্মীয় সম্পর্কই হোক কিংবা রক্তেরই হোক

কাগজে একটা + চিহ্ন! যেন সকল সম্পর্ক ছিন্ন,

হ্যাঁ! আদতে প্রথম প্রথম চারিদিকে সম্পর্ক ছিন্নই দেখেছি 

সম্পর্ক ছিন্ন বাবা-মা আর সন্তানের মাঝে

সম্পর্ক ছিন্ন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে 

ভাই বোন তো অনেক দূরে; 

'+' বহনকারী যেন অচ্ছুৎ, সমাজের বোঝা

হয় একঘরে এককোণে, সম্পর্কহীন বিভীষিকাময় জীবনে

কিংবা হসপিটালের কোন এক কোনে, কোনমতে ফেলে আসা জিন্দা লাশ

মরে গেলো তো যেন বেঁচেই গেলো, 

জানাজা? দাফন? প্রথম দিকে সেও কপালে জুটেছে ক'খানা?

রক্ত সম্পর্কগুলো তো সামনেই আসে নি

কোথাকার কোন কোন মানব-সেবক কিছু কর্মী হাত লাগিয়েছিলো লাশে

হয়তো গোসল দিয়েছিলো যত্ন করেই, হয়তো যত্নেই কবরে রেখেছিলো লাশ

গণকবরেরও নাম কিন্তু শোনা গিয়েছিলো, আর ভয়ংকর বিভীষিকাময় কিছু রাত;


সময়ের সাথে সাথে + চিহ্নটায় হয়তো কিছু সহনীয়তা এসেছে

এখন আর ফেলে আসে না গণ হসপিটালে, 

মানবিকতা কি হঠাৎ বেড়ে গেলো? 

উঁহু! ভয়টা হয়তো কমে গেছে অনেকটাই 

হয়তো  সময়ের সাথে কিছু ফিরে এসেছে সম্পর্কের মানবিকতাটুকুও 

তবুও কিন্তু পনর কিংবা বিশ দিন ঘরবন্দী, একা একা 

একা ঘরে বিশ দিন! থেকেই দেখ তো! 

বিস্ময় লাগে? না বিষ? 

মাঝে মধ্যে বাবা-মায়ের সাথে মোবাইল কথন

মাঝে মধ্যে স্বামী -স্ত্রী কিংবা সন্তানদের সাথে ভিডিও চ্যাটে দর্শন 

এটুকু সর্বোচ্চ,  

আরে বাবা! একই বাড়িতেই তো আছ! দরজার সামনে খাবার দিয়ে যাচ্ছে সময় মত

সেটুকুই কম কিসে! 

আর আজকাল লাশের গোসল হয়, কাফন হয়, জানাজা হয়, দাফন হয়

আত্মীয়-স্বজনরাও আসে ভয়ে ভয়ে, দেখে দূর থেকে;


খুব খারাপ লাগলো কি?

আমি কিন্তু চারিদিকের চিত্রটাই তুলে ধরেছি;

কেও কি কখনো চিন্তা করেছ!

এই একটা + এ কতকিছু - হলো!


ওহে! ওটা '+' নয় 

ওটা মৃত্যুভয় 

নিজেকে নিজের থেকে বেশী ভালোবাসা! মানুষের আর কোনকিছুতেই নয়। 




১৩ অক্টোবর, ২০২০


#কবিতা  

'+' চিহ্ন

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।