শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

আজকালকার ডিজিটাল সন্তান

আজকাল সন্তানের কাছে বোধহয় খুব বেশি আশা করে ফেলছি!

আরে ওদেরও তো জীবন আছে! আছে সাদ আহ্লাদ, আনন্দ বেদনা 

আজকাল ওরা বড় হয়েছে, যার যার জীবন তার তার 

ওদের চাহিদাগুলো ঠিক যেন আমাদের সাথে মেলে না, 

কেন যে ভুলে যাই! ডানা গজালেই তো উড়ে যায় পাখির ছানা 

আরে! এগুলো তো মানুষের বাচ্চা, তাই হয়তো মায়া'টা কাটে না; 


আচ্ছা! কখনো আমার ছেলের পায়ের দিকে তাকিয়েছিলে?

তাকাও নি! তবে তো ব্র্যান্ডের জুতা কাকে বলে দেখই নি

সারাজীবন আমাকেই বলে এসেছ, ছেঁড়া স্যান্ডেলটা বদলাও

আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছি, আরে বাবা! আরও কদিন চলবে, 

আর না হলে মুচি তো আছে! এখনই হয় নি ফেলার কন্ডিশন 

জানো! আমার ছেলেটার না বড্ড ব্র্যান্ড ফ্যাসিনেশন;


আমার মেয়ের জামাটা দেখেছ? সে আবার কমফোর্ট খুঁজে 

আরে! ব্র্যান্ডের মাঝেই, ওটা আরও বড় সমস্যা, দুটোর কম্বিনেশন 

খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর! কি বললে? আমার ছেঁড়া পাঞ্জাবিটা! 

ওটা কিছু না, ওপর থেকে ভেতরের তালি বোঝাই যায় না,  

আর না না! এখনো হয় নি ফেলে দেয়ার কন্ডিশন 

আমার মেয়েটা বড্ড চ্যুজি আর তার ব্র্যান্ড ফ্যাসিনেশন;


এদের মানুষ করতে করতেই নিজের সব সাদ আহ্লাদ দিয়েছি বিসর্জন

মানুষ হয়েছে কি? কি জানি? হাতেপায়ে একটু বড় হতেই তো শুরু 

নানারকম চাহিদার আলাপন, আর নিত্য নতুন জামা জুতোর ফ্যাশন, 

সকাল সন্ধ্যা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের চাহিদা, এটাই বাবা হওয়া

তিনবেলা মুখরোচক রান্না আর সন্তানের খাওয়া নিয়ে বায়না, এটাও মা হওয়া 

আমরা হয়তো শুধু বাবা-মা'ই হয়েছি, কিংবা সন্তানের চাহিদা পূরণ মেশিন; 


আজকাল সন্তানদের মাঝে মাঝে কাছে পেতে ইচ্ছে করে 

ইচ্ছে করে একসাথে বসে একটু গল্প করতে, একসাথে বসে খেতে

এরা ডিজিটাল সন্তান লেপ্টে থাকে ল্যাপটপে কিংবা মোবাইল স্ক্রিনে

বাবা-মায়ের ডাকে বড্ড বিরক্ত! এখন ব্যস্ত আছি, ডিস্টার্ব করো না তো!

মাঝে মধ্যে এক বাসায় বাস করেও সপ্তাহে দেখা হয় না, এটা কিছু হলো! 

আমরা তো এনালগ যুগের! ওদের দেখতে ইচ্ছে করে, কি করব বলো?


ওহ! তোমার সন্তান বড় হলো! এবার তো বিয়ের সময় হলো

ধারদেনা করে বিয়ের আয়োজন বাবা-মায়েরই করতে হলো,

তারপর? আরে আর বলো না, শ্বশুর বাড়িটাই আপন হয়ে গেলো 

বাবা-মা? আরে মরে তো যায় নি! বাসাতেই আছে, যেখানে ছিলো, 

মেয়ে তো শ্বশুর বাড়িতে, আলাদা সংসারে, শ্বশুর শাশুড়ি ভালো 

ছেলেটা? বুড়োবুড়ির সাথে আর কি থাকা যায়? এবার আলাদা হলো;


উড়তে শিখলেই পাখির ছানা আলাদা, যৌবনে পশুর ছানা 

বিয়েতে বুদ্ধি পাঁকে, আলাদা হয়ে যায়, আদরের মানুষ ছানা

বাবা-মা? আরে মাসে ছ'মাসে দেখতে আসে আদরের সন্তান

একলা দুজন দুজনার সহায়, সম্বল ঐ তো মাস গেলে পেনশন, 

ছেলের বড় চাকরি, রেফারেন্স শ্বশুরের, গাড়ি বাড়ি ঠাটবাট

কিছুই নেই বাবার, শ্বশুর বাড়িতে ছেলের লজ্জায় মাথায় হাত;


ডিজিটাল যুগের সন্তান ওরা বড্ড বেশি ডিজিটাল হয়ে গেছে

এনালগ যুগের বাবা-মা শুধু তাদের কাছে যন্ত্রণাই বয়ে এনেছে

পুরনো যুগের চিন্তাভাবনায় কেন যে বাবা-মা এতটা আদি?

ছেলেমেয়ে দুজনে মিলে বুদ্ধি করে এদের বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দি,

এখানে আসার পর বুড়িটা টেঁসে গিয়েছে আমায় ফেলে একা 

বৃদ্ধাশ্রমে বসেই লিখছি আমার কাহিনী, কাগজে কলমে আঁকা।  

  


৩০ অক্টোবর, ২০২০ 


#কবিতা 

আজকালকার ডিজিটাল সন্তান 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন