বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২০

একটি দুঃখী ব্রাশের আত্মকাহিনী - রম্য

#রম্য

আমি একটি দুঃখি ব্রাশ; গরীব লোকজন আমারে দিয়া দাঁত মাজে। ব্রাশ সমাজে আমার অবস্থান নিচের দিকে, আমার জীবন শুরু জিঞ্জিরার চিপে। ওরা যদিও আমার গায়ে সিল মাইরা সেনসোডাইন নাম লাগাইছে, তবুও আমি নকল সেনসোডাইন। আমার বিক্রি ফুটপাতে। 


আসল সেনসোডাইন বিক্রি হয় মনোহারি দোকানে, ১০০ থাইক্কা ১৫০টাকা দরে।আমারে কিছু গরীব মানুষ ফুটপাতে লইয়া বয়, দরদাম বিশ টাকা থাইক্কা শুরু হয়। কিছু ভালো মানুষ আছে ২০টাকাতেই কিনে, কেও দরদাম করতে করতে ১০টাকায় নামায়; আর কিছু বদমাইশ আছে দামাদামিতে তিনটা কিনে ২০টাকা দরে। আমার কদর কমে সস্তার দরে। 


তবে ঐ ওপরতলার সেনসোডাইন থাইক্কা আমার ব্যবহারের ক্ষেত্র অনেক বেশি, এইটা ভাইব্বা আরাম লাগে। বড় লোকেরা দাঁত ব্রাশ করার কাজে ব্যবহারের পর ব্রান্ডের সেনসোডাইন ফিক্কা ডাস্টবিনে ফালায় দেয়, তাও এক থাইক্কা দেড় মাস পরে পরে; ওগোর জীবন ঐ এক দেড় মাসেই সীমিত;  তারপর জায়গা হয় ভাগারে।


আমার বিচিত্র জীবন, নতুন ব্রাশ পাইয়া গরীব পোলাপাইনগুলা খুশি হয় সবচেয়ে বেশী, ব্রাশ করব কি কামড়াইয়া কামড়াইয়া আমারে ফাতাফাতা কইরা ফালায়, যত কামড়ায় আমার সুখ তত বাইরা যায়। আহহারে! বাচ্চাটা কি সুন্দর কামড়াইতাছে; মাঝে মাঝে আনন্দে আমার চোক্ষে পানি আইসা যায়! তয় বাড়ির গিন্নিগুলো বড্ড খচ্চর, বাচ্চারে ব্রাশ কামড়াইতে দেখলে ডাইনি বুড়ীর লাহান হা হা কইরা ছুইট্টা আহে মাঝে মইধ্যে মুখের ঝাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকে মাঝে মইধ্য বাচ্চার পিঠে ধুম ধুম হাতের শান্তি করে; আসলে বাচ্চার উপ্রে জামাইয়ের কিলগুলার শোধ লয়, আমার মনে হয়।

তারপর মাসের পর মাস দাঁতের ঘষায় আমার ছালছিবড়া উইঠা যায়, যহন আর দাঁত মাজনের লাহান ছিবড়ায় দম থাহে না তহন হাতবদল হইয়া আমি খন্নাস গিন্নির কবলে, আমার দিয়া হের চিরুনির ময়লা পরিস্কার করে, ইশশ! তহন কি অপমানডাই না লাগে!


আরে ব্রাশের কাম দাঁত ঘষা, তা ছোবড়া উইঠা গেলে ফালায় দে! তা না। চলতে থাকে আমার চিরুনির ময়লা পরিস্কার করার কাম, যতদিন ছোবড়ায় থাকে দম! তারপর যহন ডান্ডির গায়ে চুলের লাহান ছিবড়া বইলাও কিছু থাকে না তহন খালি ডান্ডিখান। আমি ভাবলাম এইবার বুঝি ফালাইব আমারে। কিসের কি? বেটি আমার ডান্ডি কামে লাগায় তার পেটিকোটের ফিতার ড্রাইভার হিসাবে। পেটিকোটের ফিতা আটকাইলো তো আমার ডান্ডি, জামাই এর পায়জামার ফিতা লাগাইব, তো আমার ডান্ডি! পেটিকোটের চিপের ভিত্রে দিয়া ফিতা লইয়া ছুটতে ছুটতে দম আটকাইয়া আহে; মান ইজ্জত তো খুইয়া বইছি হেই খন্নাস বেটির চিরুনীর পরিস্কার করতে গিয়াই! ভাবি কতদিন আর এইভাবে ধুইকা ধুইকা জীবন? ততদিন যতদিন না হের পেটিকোটের চিপের ভিত্রে হান্দাইয়া ডান্ডির টেমপার মইরা গিয়া দম আটকাইয়া ভাইঙ্গা দুই টুকরা হইয়া যাই। তারপর শান্তি। আমারে ঢিলা দিয়া ফালায় দেয় বাড়ির চিপায়, নইলে ডাষ্টবিনে।  


আমি চিরকুটের গান গাইতে থাকি মরতে মরতে, আহারে জীবন! জীবন জীবন......... 


১০টাকার ব্রাশের এক থেকে দুই বছরের জীবন, আর কে পারে মানুষরে এত কম টাকায় এত বেশীদিন সার্ভিস দিতে? 



০৭ জুলাই, ২০২০ 

#রম্য 

একটি দুঃখী ব্রাশের আত্মকাহিনী 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন