সম্পর্কের গণ্ডিতে বাঁধা মানুষের জীবন
জন্ম থেকে মৃত্যু, জীবনের প্রতিটা ধাপে ধাপে সম্পর্ক
এগুলো চাইলেও আছে না চাইলেও থাকবে
এর মাঝেই হাসি কান্না দুঃখ বেদনা
জীবনের সাথে ওতপ্রোত
এর মাঝেই আমাদের অস্তিত্ব;
তবে মাঝে মাঝে সম্পর্কগুলো বড্ড ভাবায়
সম্পর্কগুলো হাসায় কাঁদায়
সম্পর্কগুলো সম্পর্কহীনতায় ভাসায়,
কখন জানো?
যখন কোন এক সময় তোমার খুব প্রয়োজন ঐ সম্পর্কগুলো
যখন প্রয়োজন হয়ে পরে নিজের মানুষগুলো
ঠিক তখন
ঠিক তখনই যেন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যেতে দেখা যায় নানাবিধ সম্পর্কগুলো
বড্ড কঠিন, তাই না?
কঠিন তবে আজব না;
সুঁই সুতোয় গেঁথে গেঁথে এক একটি সম্পর্ক গড়ে এসেছ আজ পর্যন্ত
এক একটি সম্পর্ক এক এক সুঁই এ
এক একটি সম্পর্ক এক একটি সাদাকালো কিংবা রঙিন সুতোয়
অনেক যত্ন করে
অনেক আদরে
অনেক ভালোবাসায়,
এগুলোর বেশীর ভাগই রক্ত সম্পর্কীয়
জন্ম থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া
আমাকে চাষ করে সম্পর্ক ফলাতে হয় নি
শুধু গেঁথে রাখতে হয়েছিলো সুতোয় বেঁধে
বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান
এই তিনটা সম্পর্ক রক্তের,
আর স্বামী-স্ত্রী? ওটা তো ওপরওয়ালার বিশেষ বিবেচনা
জন্ম মৃত্যুর মতই গেঁথে দিয়েছিলো জীবনের সাথে
মাঝে মাঝে চিন্তা করি
- কখনো কখনো রক্ত সম্পর্ক ছাপিয়েও ও সম্পর্কটাই এত আপন হয়ে যায় কিভাবে বেশী!
এই যে মাঝে মাঝে জীবনে কিছু কালো অধ্যায়ের হঠাৎ সূচনা ঘটে!
কেও কি জানে আগে থেকে?
সম্পর্কগুলো কিন্তু তখন ঠিকই কথা বলে
রঙ দেখায় নানা রঙে
তোমার সুঁই সুতোয় গাঁথা সম্পর্কগুলো কি ঠিক থাকে?
ধাক্কা এলে?
নাকি রক্ত সম্পর্কগুলো রক্তাক্ত করে রক্তের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলে?
একবার পরীক্ষা হয়েই যাক না!
মনে সাহস আছে?
আচ্ছা তাহলে মনে কর একদিন খুব হঠাৎ তুমি হসপিটালে
অচ্ছুৎ এক মহামারীর কোলে
ধরার কেও নেই, নেই ছোঁয়ার
ঐ যে রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো!
এ্যাম্বুলেন্স ডেকে হসপিটালে কোনমতে ফেলে এসেছিলো
তারপর তুমি তোমার;
মরে গেলে তো বেঁচেই গেলে
আর নয় তো বেঁচে বর্তে কোনমতে জ্ঞান ফিরলো কদিন পরে
বেঁচে যখন আছই! তাহলে কেও তো এসেছিলোই হসপিটালে,
বিলগুলো পরিশোধ করতে! কে?
আচ্ছা! কে কে খবর নিয়েছিলো! এ কদিন কেমন ছিলাম! চলছিলো কি করে?
উঠে বসলে ধুঁকে ধুঁকে
মোবাইল স্ক্রিণটার দিকে তাকিয়ে থাকলে দুচোখে অশ্রু নিয়ে
তুমি বিশ্বাস করবেই না! কি কি সব খেলা দেখিয়েছিলো জীবনটা এ কদিনে!
দেখি তো কয়টা মিসকল আছে ওখানে?
বাবা কিংবা মা? - বেঁচে থাকলে হয়তো!
ভাই বোন? - হায়! দুরাশা!
সন্তান? - একটা দুটো কলও কি থাকবে না? এ কেমন কথা!
হায়! তাহলে এতদিন কাদের জন্য করেছি!
আমি কে? শুধুই সম্পর্ক চাষি!
দুঃখ পেও না, সামনে বাড়ও;
খুব আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে এমন কিছু কল এসেছিলো তোমার খবর নিতে!
যেগুলো তুমি কখনো চিন্তাই করতে পারবে না স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে,
ভেবে পাচ্ছ না হারিয়ে যাওয়া এসব মানুষগুলো এখনো কিভাবে তোমায় স্মরণ করে!
আর ঐ অতি পরিচিত, অতি আদরের সম্পর্কগুলো!
সারাক্ষণ যারা তোমাকে ঘিরে থাকে! যাদের তুমি আপন ভাবো!
শ্বশুর বাড়ি! দেবর ননদ! শালা শালি! কি আপন করেই না ঘিরে থাকে, চারিদিকে!
অথচ! মোবাইলে কার কার কয়টা মিসকল লিস্ট দেখলে!
কষ্ট পেলে!
ধ্যাত! পেও না
এটা জীবন, এটা সম্পর্কের ছলনা;
তাহলে স্বামী কিংবা স্ত্রী? - আরে বোকা ওটা মিসকলে পাবে না, চোখ খুলে দেখ!
আছে, কোথাও না কোথাও আছে, হসপিটালেই আছে! কাছে কিংবা দূরে, সামনে কিংবা পাশে;
অচ্ছুৎ রোগে তার কি যায় আসে!
সে ছিলো, পাশেই আছে, তোমাকেই ঘিরে
অথচ ওটা তো রক্তের সম্পর্ক নয়! তা হলে কেন এমন হয়!
আমি উত্তর খুঁজে পাই নি;
এটাই বাস্তব এটাই জীবন এটাই সম্পর্কের ছবি
আমাদের মনগড়া সম্পর্কগুলো নিয়ে আমরা স্বপ্ন জগতে বিচরণ করি
হাসি খেলি আনন্দ করি আর সুখের সময় সবাই মিলে একসাথে ঘোরাঘুরি
আর কাটিয়ে যাই সম্পর্কহীন এক সম্পর্কের পৃথিবী;
তুমি সম্পর্ক বুঝেছ?
আমি কিন্তু ঠিক বুঝেছি,
আমরা আমিত্বে বাঁচি।
১৮ অক্টোবর, ২০২০
#কবিতা
সাহস আছে! সম্পর্ক যাচার
- যাযাবর জীবন
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন