শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১২

নীল জ্যোৎস্নার আলো আঁধারে



নীল জ্যোৎস্নার আলো আঁধারে

নীল জ্যোৎস্নার আলো মাখতে গিয়েছিলেম সারা গাঁয়ে
চাঁদটা আকাশে উঁকি দেয়ার সাথে সাথে
আমার প্রতিটা শিরা-উপশিরার রক্তে জোঁয়ার আসে
প্রতিটা চাঁদনি রাতে, জ্যোৎস্না মাখি গাঁয়ে যেন সাবান ডলে
দূর করতে মনের গ্লানিগুলো সব কথা কই চাঁদের সাথে।
চাঁদনি এসে চুপিচুপি আজ যেন কানেকানে বলে গেল
এমন ভাদর জ্যোৎস্না আর আসবে না তোর জীবনে
আজ হা করে তাকিয়ে থাক আকাশের দিকে
দেখে নে আলো-ছায়ার মায়াবী খেলা
গলায় বেঁধে নে তোর হরিৎ নিয়তি
আমি আকাশের গাঁয়ে যতক্ষণ থাকি।

আজ দেখে যা পাখির দল সব পাগল হয়েছে আমার রূপে
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে ভালোবাসা-বাসি করছে
একজন আরেকজনের সাথে সবকিছু ভুলে গিয়ে
আজ দেখে যা হায়েনা আর নেকড়ের দল সব হিংস্রতা ভুলে
মিলে মিশে একাকার মানুষের দলে
ভালো করে তাকিয়ে দেখ তোর প্রেমিকাও আছে কোথাও দাঁড়িয়ে
হয়তো পান করে যাচ্ছে নীল জ্যোৎস্না নিজেকে হারিয়ে।

মেঘের ছায়া নেমে আসলে হলুদই কি আর ধূসরই-বা কি
ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা হবে তোর স্নায়ু পরিযায়ী
আমি জানি ছিন্নভিন্ন হয়ে থাকে হৃদয় তোর আমার বিহনে
নিঃসঙ্গ ছায়ার মতন লেপ্টে থাকিস আমার সাথে
তাই প্রতিটা জ্যোৎস্না রাতে
আজ আকাশও বেপরোয়া, বেপরোয়া তোর চাঁদ আর চাঁদনি
অন্ধকারে বেঁচে আছিস সেই কতকাল
আজকে না হয় আমার নীল জ্যোৎস্নায় করে নে বসবাস
যার জন্য স্বপ্ন দেখিস দিনরাত।

আমি সেই নীল জ্যোৎস্না আজকে এসেছি তোর ঘরে
আজকে না হয় বেঁচে উঠ আবার নতুন করে
নীল জ্যোৎস্নার আলো আঁধারে
শুধু আজকের মতন শেষবার আমাকে আপন করে;
ভালোবাসার নীল অহল্যা বিষ অনেক করেছিস পান
আজ না হয় তৃষ্ণা মিটিয়ে নে আমার স্নিগ্ধ আলোর
ভুবন ভোলানো এক পেয়ালা মদিরা সুধা পান করে।





যতিচিহ্ন হীন ভালোবাসা তোমার জন্য


যতিচিহ্ন হীন ভালোবাসা তোমার জন্য

প্রতিদিন তোমার ছবি একে যাই রংতুলির আঁচরে মনে মনে
আঁকতে গিয়ে কোথাও থামি না ফুটিয়ে তুলতে তোমার ছবিটা সাদা ক্যানভাসে
রংতুলির এক আঁচরেই একে যাই তোমাকে তুলিতে দ্বিতীয়বার রঙ না মেখে
যদি রঙ লাগাতে গিয়ে থেবড়ে যায় তোমার মুখচ্ছবিটা কোথাও
কিংবা তোমাকে ভাবতে গিয়ে যদি ছেদ পড়ে যায় কোথাও আমার ভাবনায়
তুলিতে রঙ লাগাতে গিয়ে নতুন করে দাগ পড়ে যেতে পারে মনের ক্যানভাসে
তাইতো এক রঙ এ একে যাচ্ছি তোমার ছবিটা এক মনের ভাবনায় সাদা ক্যানভাসে

দাড়ি কমা ছাড়া একটানা লিখে যাচ্ছি তোমাকে ভালোবাসার কথা কবিতার ভাষায়
সেই কতদিন ধরে লিখছি তোমায় এখন আর আমার মনে পড়ে না
তবুও প্রতিদিন তোমাকে ভালোবেসে লিখে চলি কবিতামালা দাড়ি কমা ছাড়া
প্রতিদিন একটি কিংবা দুটি পংত্তি হলেও কোনদিন বাদ পড়ে না
কোথাও থামি না কখনো বিরতি দেই না তোমার কথা লিখতে গিয়ে
যতিচিহ্ন দিয়ে তোমাকে থমকে দেই না ভালোবাসার কবিতা আঁকতে গিয়ে

আমার মনে বড্ড ভয় হয় লেখার দাড়ি বা কমা দিতে গিয়ে তোমাকে আঁকতে কবিতায়
যদি হঠাৎ থমকে যেতে হয় কিংবা তাতে যদি কোথাও নিবের একটা ডট পড়ে যায়
যদি কলমের নিবের পাশে জমে যাওয়া কালি থেবড়ে গিয়ে যতিচিহ্ন পড়ে যায়
কিংবা কবিতার সুর কেটে যায় কোথাও কিংবা তুমি পড়তে গিয়ে যদি থমকে যাও
যাদি থেবড়ে যাওয়া কালিতে আমার ভালোবাসার সুরও কেটে যায় কোথাও
কিংবা একভাবায় তুমি কবিতা হয়ে ফুটে উঠবে না আমার লেখায়
কিংবা তুলিতে রঙ মাখাতে গিয়ে ছেদ পড়ে কল্পনার খাতায়
তবে তো একটানে তোমার ছবি আঁকা হবে না আমার ভাবনায়

তাইতো আমি এক আঁচরে তোমার ছবি একে যাই এক রংতুলির ঘসায়
কিংবা দাড়ি কমা বিহীন কবিতায় ভালোবাসার কথা বলে যাই এক বসায়
যতিচিহ্ন তুমি দিয়ে রেখেছ আমাদের ভালোবাসায়
তবুও আমি পথ চেয়ে থাকি আজো তোমার আশায়
তোমার ছবি একে যাই প্রতিদিন রংতুলির আঁচরের কল্পনায়
তোমাকে একটি করে কবিতা লিখে যাই প্রতিদিন অনেক অনেক ভালোবাসায়.........






বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১২

বাষ্পীভূত অভিমান


বাষ্পীভূত অভিমান

দাঁড়িয়ে আছি আমি দরজার এপাশে মনে শত দ্বিধা নিয়ে
তোমার দরজায় কড়া নাড়ব বলে
একবার হাত ওঠে আবার অভিমানে নেমে যায়
না থাক আজকে নয়, অন্য কোন দিন।
কি জানি তুমি কি দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছ
প্রতীক্ষার প্রহর গুনে দরজার কড়া নাড়ার শব্দ শুনবে বলে
তোমার মনেও যে হাজার অভিমানের দেয়াল আজ
মনে মনে কড়া নাড়ার শব্দ কি পাও
নাকি মনের ভেতর এখনো অন্ধ রাগের কানাড়া রাগিণী
বেজে যাচ্ছে তোমার মনে আজো?

দ্বিধা হাজারো মনে আয়নার এপাশে দাঁড়িয়ে আমার
হয়তো আয়নার ওপাশে তুমিও দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষায়
মাঝে পুরু পারদের প্রলেপ বাঁধা হয়ে আছে
যৌগিক কণিকার কিংবা মনের বাষ্পের প্রলেপ
কি জানি মনে বড় দ্বিধা, দুজনারই
পারদটুকু ঘসে তুলে ফেলা যাবে কি যাবে না
কিংবা বাষ্পের পারদ উঠে গেলে আয়নার ওপাশে
দেখতে পাব কি? দুজন দুজনাকে?

মুঠোফোনটা ইদানীং অনেক যন্ত্রণায় থাকে মনে মনে
অপেক্ষার প্রহর কাটে কখন নাম্বার টেপা হবে তার বাটনে
দ্বিধারা অভিমানে মুঠোফোনটি অলস পড়ে থাকে আমার হাতে
হয়তো ওদিকে তোমার হাতেও
তোমার মুঠোফোনটিরও একই অবস্থা তোমার আমার
দ্বিধারা অভিমানে
দুজনেই হয়তো সময় কাটাই মুঠোফোনের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে
এই বুঝি তার নাম্বারটা ভেসে ওঠে
হায় মুঠোফোন চুপ করে থাকে
প্রতীক্ষা শেষের মধুর ঘণ্টাধ্বনি বাজে না কারো ফোনে।

অভিমানের বাষ্প ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাবে আকাশের ঠিকানায়
একদিন হয়তো আবার দেখা হবে দুজনে দুজনায়
হয়তো আজ, হয়তো কাল, হয়তো সেদিন
আরো অনেক দূরে পড়ে আছে, বাষ্পীভূত হওয়ার অপেক্ষায়;
একদিন দেখিয়েছিলেম তোমায় চোখে চোখ রেখে
অনেক দূরে কোন এক সুদূরে আকাশ মাটিতে বাহু-লগ্না হয়
দিনের শেষে সন্ধ্যে নামে
আলোর সাথে আঁধার মিশে একে অপরের হয়ে।

তেমনি ভাবে তোমার আমার তপ্ত অভিমানের সমাপ্তি হবে
আজ না হলেও কোন এক সুদূরের ভবিষ্যৎ সময়ে
বাহু-লগ্না হয়ে পড়ে থাকবে তুমি আমার বুকের সাথে মিশে
ঠিক আগের মতন করে, ভালোবেসে আর ভালোবেসে;
অভিমানের আকাশের প্রগাঢ় মেঘরাশি
ভালোবাসার রুদ্র তেজদীপ্ততায় পরাভূত হবে একদিন
মিটে যাবে রাগ অনুরাগের সব লেনদেন সেদিন
বেজে উঠবে ধ্রুপদী সাইরেন চারিদিক থেকে
আনন্দ লাহরী সুর তুলবে আকাশে বাতাসে
তোমার আমার মিলনের কালে
কালান্তরের শুভ প্রত্যাশা আমার
খুব কাছের অনাগত ভবিষ্যৎ কালে।







বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১২

মান অভিমানের পালায় দেখি নিজের সর্বনাশ


মান অভিমানের পালায় দেখি নিজের সর্বনাশ


উদ্ধত অন্ধ অহমিকায় বসবাস, তোর আর আমার – দুজনারই;
কেও কারো থেকে কম যাই না আমরা
না ভালোবাসায় না দুঃখ কষ্টে
তবু অন্ধ রাগে আর অভিমানে আত্মাকে আমরা পুড়িয়ে করি ছাই
হার না মানি কেও কারো সামনা সামনি হতে না চাই
তবু দূর হতে লুকিয়ে দেখার অপচেষ্টা জারি রয় দুজনারই
একে অপরকে দূর থেকে দেখব বলে এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারি;
সামনা সামনি হতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, কি যেন এক উদ্ধত অহমিকা বোধ।

মুঠোফোনে কথা বলতে বড্ড মন চায়
যেমন আমার, তেমন তোর; আমাদের দুজনারই
তবু মুঠোফোনকে ব্যস্ত রাখার ছলে
পরস্পর মেতে থাকি অন্য কারো সাথে কথা বলে বলে
হাসি ঠাট্টার ছলে উড়িয়ে দিতে চাই মনের গ্লানিগুলো
তবুও কি মন মানে?
দুজনেই মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি
নিজের অজান্তে, আনমনে
মনের ভেতর কি এক আশা বাস করে
যদি তার নাম্বারটা ভেসে ওঠে মুঠোফোনের কলে
তবুও আমরা অন্ধ হয়ে রই অভিমানে
কথা বলি না কেও কারো সাথে আগের মতন করে
মুঠোফোনে অবিরত, ঘণ্টার পর ঘনটা ধরে
চোখের পানি মনে শুকিয়ে আসে, শুধুমাত্র অন্ধ অহমিকার বলে।

হৃদয় খুলে রেখেছি আমি হাত বাড়িয়ে, ছুঁতে পারছি না তবু তোর হাত
আমার হাতে মুঠো করে; তুইও হয়তো বাড়িয়ে রেখেছিস হাত
আমার হাতের ছোঁয়া পেতে; তবু কেও কাওকে ধরতে পারছি না আজ
দুজনেই করে যাচ্ছি বাস, অন্ধ এক অহমিকার তলে ।

মান আর অভিমানের আগুন জ্বেলে পুড়ে চলেছি আমরা দুজনে
রাগ আর দুঃখগুলো মনে টকটকে লাল আগুন হয়ে জ্বলে
সে আগুনে পুড়িয়ে দিতে চলেছি আমরা নিজেরে নিজে
নিজের ই আত্মাকে গুড়ো করে চলেছি আজ আমরা
কষ্টের হাতুড়িতে বাড়ি মেরে মেরে, সর্ব শক্তি দিয়ে।

কেও আমরা এগোতে পারছি না পরস্পরের দিকে
একটু সহানুভূতিশীল হয়ে, মনের মাঝে দ্বিধার ঝড় ওঠে
অভিমানের দেয়াল যেন মনের মাঝে কাঁটাতারের বেড়া হয়ে আছে
অথচ ভালোবাসার আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি দুজনেই মনে মনে
যেমন সিগারেটের আগুন পুড়ে পুড়ে ছাই করে নিজেকে।







ভালোবাসা – মানব ধর্ম


ভালোবাসা – মানব ধর্ম

তরুণ তরুণীর প্রেম নতুন কথা কয়
একটু ছোঁয়াছুঁয়ি একটু হাত ধরাধরি
যৌবনের সূচনা ঘড়ি
মনে ঘণ্টা বাজিয়ে ভালোবাসায় মাখামাখি
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধরে ওষ্ঠ লেগে রয়
ভালোবেসে দুজনে দুজনে
তারপর সাহস নেই আর অগ্রসর হওয়ার
প্রেমের নামে ছোঁয়াছুঁয়িতে পরিসমাপ্তি।

যৌবনের প্রেম গড়ায় বিয়ের পিঁড়িতে
বেশিরভাগ মানব মানবীর ভালোবাসার শুভ পরিণয়
তারপর শরীরের সাথে শরীর মিশে রয়
মানে না রাত আর দিন, রতিতে মগ্ন প্রতিদিন
নতুন নতুন করে যেন আবিষ্কার দুজনে দুজনার
দেহের প্রতিটা বাঁকে বাঁকে, কি যেন খুঁজে যায় নতুন করে
একজন আরেকজনের সাথে মিলে থাকে
রতি-ক্লান্ত দুটো শরীর তবুও এক হয়ে মিশে রয়
একজন বালিশে মাথা রেখে
আরেকজন হাতের পরে বুকের সাথে মিশে
দাম্পত্য ভালোবাসার মধুর দিনগুলোর সূচনা
এভাবেই যেন হয়,
ভালোবাসার সার্থক পরিণতি
এরেই যেন কয়।

যৌবনের শেষপ্রান্তে কিংবা প্রৌঢ়ত্বের শুরু হয় একসময়
কঠিন বাস্তবতার মুখে এসে ভালোবাসা একটু মুখ থুবড়ে রয়
শারীরিক ভালোবাসার সময় মেলা ভার
তবুও হয়তো কখনো কখনো দুজন দুজনার হয়
মাঝে মাঝে একসাথে, কামের বায়ু হঠাৎ মাথায় যখন চড়ে
শারীরিক ভালোবাসা-বাসির সমাপ্তি হয় একসময়
রতি-ক্লান্ত একজন বিছানার এ কোনায় পড়ে রয় রাতে
খাটের অন্য কোনায় আরেকজন পড়ে থাকে বালিশে মুখ ঢেকে
মাঝে কোলবালিশটা পড়ে থাকে একা
যেন রেখা টেনে দিয়ে প্রেমের সাময়িক যতি, হায়রে নিয়তি
এ বয়সে এসে শারীরিক ভালোবাসার কিছুটা দিতে হয় বিরতি।

প্রৌঢ়ত্বের শেষদিনগুলি চলে আসে দেখতে দেখতে
কিংবা বার্ধক্যের দিকে মানুষ এগিয়ে যায় সময়ের হাত ধরে
বুড়োকে দেখে বুড়ির জাগে না মনে কোন কামভাব
কিংবা বুড়ির চুপসানো দেহ দেখে বুড়োর মনে জাগে না সাড়া
তবু কি এক স্নেহ ভালোবাসায় কাটিয়ে যায় সারা-বেলা
দুজনে দুজনার হয়ে;
যেখানে একজনকে ছাড়া চলে না আরেকজনের
সেই কবে থেকে ভালোবাসা-বাসি শুরু
মনে করতে পারে না বুড়ো আর বুড়ি
শরীরের মাঝে শরীর এখন আর কথা বলে না
তবু দুজন দুজনকে না ধরে ঘুমোতে পারে না
ছোঁয়াছুঁয়ি ছাড়া যেন অপূর্ণ রাত্রিবাস
বুড়ো আর বুড়ির দুজনের হয়ে যায় অভ্যাস
কাম নামক রিপুর হয়েছে পার্মানেন্ট ছুটি
তবু ভালোবাসা টিকে রয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
যেন স্নেহ ভালোবাসায় বাঁধে তাঁরা এক জুটি
জড়িয়ে দুজন দুজনে এক হয়ে মিশে রয়
সত্যিকারের ভালোবাসা মনে হয় এরেই কয়।

শরীরের সাথে শরীরের প্রেম
এতো মনের ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ
হোক না সে মানুষ কিংবা পশু সমাজ
সভ্যতার অন্য কোন সৃষ্টিতে এত প্রেম আর ভালোবাসা
কোথায় দেখা যায়?
একটি দম্পতি সারা জীবন একসাথে মিলেমিশে চলে
দুজন দুজনার হয়ে জন্ম থেকে মৃত্যুতে একে অপরের হয়ে
উপরওয়ালার সেরা সৃষ্টি মানব সভ্যতা একেই বোধহয় বলে।





তোমার ছোঁয়ায় ঘুম-পরী



তোমার ছোঁয়ায় ঘুম-পরী



আজকাল কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি
বোধ বুদ্ধিগুলো ঠিকমত কাজ করে না সবসময়
কেমন এক ঘোর পাওয়া মানুষের মত দিন কাটাচ্ছি
কেন তা নিজেও জানি না।

আজকাল আর কিছুই ভালো লাগে না আমার
অস্থির এক সময়ের কারাগারে বন্দী হয়ে করে যাচ্ছি বসবাস
কোথা দিয়ে দিন আসে কোথা দিয়ে কেটে যায় রাত
নিজেই তা বুঝতে পারি না।

ঘুম পরী এখন আর আমার চোখে এসে বসে না
একটি, দুটি, তিনটি, মাঝে মাঝে লিমিট ক্রস করে পাঁচটি ঘুমের বড়ি
খেয়ে যাচ্ছি রাতের পর রাত, ঘুম নামক সোনার হরিণের ছোঁয়া পেতে
হায়, সে যে কেন আমার কাছে ধরা দেয় না বুঝতে পারি না।

সকাল বেলা অসম্ভব ক্লান্তিতে বিছানা ছাড়ি মাঝে মাঝে
ঘুমের বড়ির নেশায় নেশাচ্ছন্ন হয়ে, সব কিছু কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া লাগে
তবুও উঠতে হয় মাঝে মাঝে, অফিসের খাতিরে; জীবন তো কাটাতে হবে,
পেটে ভাত যোগাতে, সংসার চালাতে; আমায় খাদ্য দেবে কে?

মাঝে মাঝে আর পারি না, যখন ঘুমের বড়িগুলো অবশ করে আনে
আমার চেতনাকে, স্বপ্ন-হীন এক নীদের দেশে পাঠিয়ে দিয়ে
ঔষধগুলোরও তো একটা নিজস্ব শক্তি আছে! যা আমার মধ্যে নেই
তোমাকে হারানোর পরে, তুমি অন্যদেশে পাড়ি জমানোর পর থেকে।

তবে কি আমার বাকি জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দেব?
দুজনার দুই ভুবনে বাস, শুধু কোন একদিন তোমাকে পাওয়ার অভিলাষ
যখন তোমার হয় দিন তখন আমার হয় রাত
কিংবা আমার যখন দিন তোমার তখন রাত।

আচ্ছা ঘুম-পরীরা কি আবার আমার চোখে নেমে আসবে কোনদিন?
রঙিন সব স্বপ্নগুলোকে সাথী করে, আমায় নীদের দেশে নিয়ে যাবে;
যখন তুমি পাশে এসে বসে আমার মাথায় হাত রাখবে
আমার চোখের পাতায় আঙ্গুল ছুঁয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে
আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।








মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১২

নস্টালজিয়া



নস্টালজিয়া




ইদানীং আমার জানি কি এক রোগ বাসা বেধেছে
মনের ঘরে কিংবা হয়তো ছড়িয়ে পড়েছে সারা গাঁয়ে;
এখন আমার সারাক্ষণ তোর কথা মনে পড়ে
নস্টালজিয়া হয়তো বেধেছে বাসা মনের ঘরে
স্মৃতিগুলো বড্ড যন্ত্রণা করে ইদানীং কালে
সেই কত দিন হয়ে গেছে তোর থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেম
তোকে সুখী দেখব বলে, বাস্তবতার কঠিন বেড়াজালে পড়ে
আসলে কি তুই সুখী হতে পেরেছিলি?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, আজ এই শেষ-বেলায় এসে।

তোর কি মনে আছে সেদিন গুলোর কথা
কতই না হাসি ঠাট্টায় কেটে যেত আমাদের সারা বেলা
একে অপরের সাথে লেগে থাকতাম গাঁয়ে গাঁয়ে
আমাদের মাঝে বিচ্ছেদের ছিল না কোন বেলা
তোর কি সেই দিনগুলোর কথা তেমনি ভাবে মনে পড়ে?
আমার মতন করে!! বড্ড জানতে ইচ্ছে করে আজ
নস্টালজিয়ার ঘোরে।

মনে আছে তোর হাতের কঙ্কণ বাজত ঝন ঝন করে
আমি তোর দুহাত ধরে ঝাঁকাতে থাকতাম
কঙ্কণের সুমধুর বাজনার তালে তালে তোকে
মিঠে যন্ত্রণা দেবার ছলে যা তুই চাইতি মনে মনে
তুই কি এখনো হাতে কঙ্কণ পরিস?
খুব জানতে ইচ্ছে করে।

মনে আছে তোর? বৃষ্টির এলেই তুই দৌড়ে চলে যেতি ছাঁদের ওপর
নূপুর পায়ে রিনঝিন শব্দ করে ধেই ধেই নেচে যেতি আপনমনে
কি অবলীলায় শ্যাওলা পড়া সারাটা পিছল ছাঁদ জুড়ে
তোকে থামাতে গিয়ে আমি কতবার পড়ে গেছি পিছল খেয়ে।

তোকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতাম তোর চিবুকের লাল তিলটিকে
তোর টোল পড়া গালে হাসি দেখতে খুনসুটি করতেম ভালোবেসে
কত চাঁদনি রাতে খোলা ছাঁদের নীচে শুয়ে জ্যোৎস্না মেখেছি সারা গাঁয়ে
অমাবস্যায় তাঁরাদের সাথে কথা বলতি তুই আমার বুকে মাথা রেখে।

এখন তুই মাথা রাখিস কার বুকে?
কে তোকে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয় সারা গাঁয়ে
তোর টোল ফেলা গাল দেখে কার মুখ ভরে ওঠে খুশিতে
তোর চিবুকের লাল তিলে কে চুমু খায় ভালোবেসে?

আজ আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে
খুব জানতে ইচ্ছে করে তোর কথা
হায় কত দিন হয়ে গেছে দেখি না তোরে
তবুও সবকিছু গেঁথে আছে আমার স্মৃতিগুলোতে
সবকিছু যেন আগের মতন করে, ছবি হয়ে ভাসে
শুধু তুই নেই কোথাও আমার আশেপাশে।





সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

জবাবদিহিতা উত্তরাধিকারের কাছে



জবাবদিহিতা উত্তরাধিকারের কাছে



আমার হাতে আজ নেই কোন সোনার কাঠি
নেই কোন রূপোর কাঠি
নেই কোন পরশপাথরের যাদু
যা দিয়ে দূর করতে পারি –

আজকের সমাজের সকল অব্যবস্থাকে
পুঁজিবাদীদের ঘুমন্ত বিবেককে
ঘুষখোর আমলাদের ঘুসের নেশা
মজুদদার আর কালোবাজারিদের বিবেকহীনতা
ধর্ম ব্যবসায়ী কিছু মৌলবাদীদের ধর্মান্ধতা
আমারই ড্রাগ এডিক্ট সন্তানের ড্রাগ নেয়ার নেশা
পিম্পরূপী কিছু দালালদের অশ্লীল নোংরা মানসিকতা
পেটের দায়ে বেশ্যা হয়ে যাওয়া কিছু নিশিকন্যার দেহ-বেচা বন্ধ করা
কিংবা পাপাচারী কিছু নোংরা মানুষগুলোর নারীদেহ কেনার বাসনা রোধ করা
দানব-রূপী ট্রাক কিংবা বাস ড্রাইভারগুলোর স্পীডের রাশ টেনে ধরা
হঠাৎ করে হওয়া অহংকারী কিছু বড়লোকদের গরিবের প্রতি করুণা দৃষ্টি
বড় বড় বিবি সাহেবদের তুচ্ছ কাজের লোকের গাঁয়ে লাথি ঝাঁটা
ঈর্ষা আর হিংসার বশবর্তী হয়ে অপরের ক্ষতি সাধনের ইচ্ছাগুলি
কিংবা লোভ নামক এক কুটিল রিপুর হাত থেকে মানুষের মুক্তি।

অথচ সমাজ বদলে আসলেও কি দরকার হয় একটি সোনার কিংবা রূপোর কাঠি?
কিংবা পরশ পাথর নামক সোনার হরিণের অপেক্ষায় কি দিন গুনতে হয়?
আমরা কি পারি না করতে এ সমাজের একটু পরিবর্তন
আঘাত হেনে ভেঙ্গে দেয়া যায় না কি সমাজের সকল চলমান এহেন অব্যবস্থা
সবই সম্ভব, হায় শুধু যদি মনে থাকে একটু সদিচ্ছা।

আর না হয় কোন একদিন দেখা যাবে
কালোবাজারি আর মজুদদারের গুদাম লুটে নেবে সব ক্ষুধার্ত মানুষের দল
পাপের পঙ্কিলতার আগুন বরফ চাপা দেবে আমাদেরই উত্তরসূরির দল
তাঁরা একদিন গড়বে আমাদের দেশেই এক নতুন সমাজ
পাপ-মুক্ত একটি শ্রেণীহীন সমাজ ব্যবস্থা;
তাঁরা কিন্তু বসে থাকবে না কোন পরশপাথরের আশায়
যখন বিবেক জাগ্রত হয়ে পরিণত হবে সোনার কাঠিতে
বিবেকের দংশনের আগুন জ্বালিয়ে নিজের হাতে গড়া
তাঁরা তাঁদের মতন গড়ে তুলবেই এক নতুন স্বপ্নের দেশ
এক নতুন সোনার বাংলাদেশ।

তবে আজ কেন আমাদের হাত বাঁধা, পা বাঁধা, মন বাঁধা
আমাদেরই বিবেকের কাছে
হায় কেন আমাদের বিবেক জাগ্রত হয় না সময় মত
ঘুমিয়ে আছি আমরা আমাদের মত আর
আমাদের বিবেক হয়ে রয় মনের মাঝের এক হিজরে যাতনার মত।
আজ আমি আমার বিবেক জাগ্রত করি নি
তাই আমি পারি নি বদলাতে মানুষগুলোকে
কিংবা মানুষের মনের কু-বাসনাগুলোকে
কাপুরুষ হয়ে জীবন কাটিয়ে যাচ্ছি কোনমতে
দুমুঠো আহার, দুটি ভালো কাপড়, একটু শিক্ষার আলো
জীবন চলে যাচ্ছে জীবনের মত, আর কি চাওয়ার আছে জীবনে?
মনে মনে ভেবে যাই অল্প কিছু দিনই তো আর বেঁচে থাকা
চলুক না এভাবেই
আমিও না হয়ে হয়ে থাকি ঈশ্বরের মত নির্বাক
অবলীলায় যে দেখে যাচ্ছে তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির বিনাশ।

কিন্তু কখনো আমারই সন্তান যদি আমাকেই প্রশ্ন করে বসে-
“কেন তুমি ছিলে সেদিন নির্বাক
কেন সেদিন করনি তুমি প্রতিবাদ?”
কি জবাব দেব তার – “কখনো আমাদের ভাবনায় এসেছে কি?”






শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১২

উলুর পেটে কবিতার বই


উলুর পেটে কবিতার বই



কবিতারা পড়ে থাকে অসহায়
কবিতার বই কিছু, যেন বড্ড অবহেলায়
পড়ে থাকে এখানে সেখানে
অপেক্ষায় কবে যাবে উলুর পেটে।

কবিতার বই যেগুলো ছাপা হয়
কবি নামক বোকা কিছু মানুষের
স্ত্রীর শেষ গয়নার টুকরোটুকু বেচা পয়সায়
অনেক আশা নিয়ে, কেও কিনে নেবে
পড়বে কবির যত যাতনার কথাগুলো
লিখে গিয়েছিল পরম মমতায় সাদা কাগজ ভরে।

কিছু সুহৃদ বন্ধু বান্ধব আসে, বোকা কবি উপহার দেয়
নিজের লেখা কবিতার বইখানি, বন্ধুকে খুশি করার ছলে
হায় বিনি-পয়সার উপহার! তবু পড়া হয় না বন্ধুর কোন লেখা
বইটি পড়ে থাতে অফিসের ড্রয়ারে অযত্নে অবহেলায়
কিংবা হয়তো কখনো দামি এক সেলোফেন কভারে মুড়ে
উপহার হয়ে চলে যায় অন্য কোন এক উপলক্ষ্য ধরে
কিংবা কোন এক বান্ধবীর জন্মদিনের উপহার হয়ে,
অনেক দামী উপহার, কবির নিজের স্বাক্ষর-ওয়ালা বই
বোকা কবির নিজের একটি স্বাক্ষর দিয়ে
বন্ধুকে যা দিয়েছিল উপহার।

বাকি বইগুলো আজও পড়ে থাকে কবির ঘরে
বস্তাবন্দী হয়ে
খাটের নীচে কিংবা স্টোররুমের কোন এক কোনে
অপেক্ষায় দিন গুনে উলুতে খেয়ে খেয়ে
ছাপা অক্ষরের কাগজগুলোর মৃত্যু হবে কবে
স্ত্রীর শেষ সম্বলটুকু অপেক্ষায় প্রহর গোনে
উলুর খাদ্য হওয়ার তরে।










শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২

ঈর্ষা বুড়ি


ঈর্ষা বুড়ি

চরকা কাটে ঈর্ষা বুড়ি বসে বসে ফোকলা দাঁতে
ঈর্ষা সুতো বানায় বসে একা একা একমনেতে
দরি বোনে ঈর্ষা সুতোয় অনেক গুলো একসাথেতে
শক্ত যেন মোটা করে আমার গলায় ফাঁস লাগাতে।

হিংসা বুড়ি হিংসা করে দেখে যদি অন্য-মেয়েকে
আমার সাথে কথা বলে একটু হেসে বন্ধু হতে
রাগে দুঃখে অভিমানে নিজের হাত যে নিজে কাটে
একটু যদি আমায় দেখে অন্য মেয়েতে বাক্যে মেতে।

একটু যদি এদিক ওদিক চলতে গেলে চোখ চলে যায়
ঈর্ষা বুড়ি কামার হয়ে আগুন ঢেলে গজাল বানায়
ইচ্ছে মত গালাগালি চোখ গেলে দেয় গজাল নিয়ে
ভাবে নাকো ভালোবেসে তারে দেখব কি দিয়ে।

ঈর্ষা রিপু মনের মাঝে বুঝতে চায় না অন্য কিছুই
আমার থেকে দূরে ঠেলে আমার যত বন্ধু সবই
বোকা মেয়েটা শুধুই ভাবে মেয়ে বন্ধু অন্য কিছু
বোঝে না কো ভালোবাসি মন দিয়ে যে তাকেই শুধু।







দাম্পত্য ভালোবাসা



দাম্পত্য ভালোবাসা



ভালোবাসা-বাসি নাকি মানুষের মাঝেই রয়
মানব আর মানবী যখন দুজন দুজনের হয়
কিছুদিন প্রেম ভালোবাসা-বাসি তারপর বিয়ে
সুখের এক প্রেমের অধ্যায়ের চরম পরিণয়।

তারপর ছোঁয়াছুঁয়ি হাতে হাত ধরি
একটুকু কাছে আসা ভালবাসা-বাসি করি
মনের সাথে দেহের মিলন প্রেমের সংজ্ঞায় কয়
পাগলের মত অধরের সাথে ওষ্ঠ মিলে রয়
চুলের ঘ্রাণের সৌরভ মাতাল মনে হয়
দেহের ঘ্রাণের গন্ধ কামনার কথা কয়
বুকের ঘামের গন্ধ কামনায় আগুন জ্বালায়
জড়াজড়ি শরীরে শরীরে বন্য ভালোবাসায়
অধীর কামনায় মনের প্রেমের আগুন শরীরেতে পড়ে
দুজনার মনে তখন নতুন শারীরিক ভালোবাসার তরে।

একসময় শরীরের ভালোবাসা শেষ হয়
রতি-ক্লান্ত দুজন বিছানার দুদিকে পড়ে রয়
বিছানায় এসে কথার তুবড়ি তোমায় বড় ভালোবাসি
রমণের পরে যত ভালোবাসা-বাসির কথার সমাপ্তি;
রতি-শেষে নিশ্চুপ হয়ে রয় দুজন দুদিক ফিরে
ভালোবাসা ভাইরাস রাতের আঁধারে গুমরে গুমরে মরে।

আবার কাল রাতে হবে নতুন রমণের জয়
নতুন কামনায় নতুন ভালোবাসায়
ভালোবাসা-বাসি হবে এক নতুন এক উন্মাদনায়
আজকের মত ভালোবাসার ছুটি হয়
রতি-ক্লান্ত দুজনে দুদিকে ফিরে রয়
এ কেমন ভালোবাসা আমার বোধগম্য নয়
এরে বলে এ যুগের দাম্পত্য ভালোবাসা কয়।




অভিমানের আগুন


তোমার অভিমানের আগুন আমায় পুড়িয়ে দিচ্ছে ভেতর থেকে
অনুতাপের আগুনে পুড়ে যাচ্ছি আজ নিজেকে শুধরে নিতে
দৃষ্টি অন্ধ করা এক ঝুম বৃষ্টিপাত হলে ভালো হত আজ
ধুয়ে নিয়ে যেত অনুতাপ আর অভিমানের সব আগুনগুলো
না হয় এখানে ওখানে পড়ে থাকতো পোড়া কিছু ছাইগুলো
কোন এক ঝড়ো বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে শুদ্ধ করত আমাদের।







আগুন


অনন্তকাল জুড়ে পৃথিবীতে আগুন জ্বলে পুড়িয়ে যাচ্ছে চারিধার
কারণে বা অকারণে, বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে সব ছাই
আগুন থেমে গেলে চারিদিক হয়ে ওঠে আগের মত পরিস্কার
হৃদয়ের আগুনে পুড়ে পুড়ে জ্বলে যাচ্ছে প্রেমের বেদনাগুলো
ভালোবাসাতে লাগা আগুন নেভানো বড্ড ভার।





বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১২

দহনে নির্বাসন একা বালুচরে


দহনে নির্বাসন একা বালুচরে

মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হয় তবু মেনে নিতে হয়
জীবন থাকে না থেমে, নিয়তি আমারে এনেছে টেনে এইখানে
চারিদিকে যেন শুষ্ক বালিয়াড়ি আর কাশবন, চোরাকাঁটা কিছু আছে তারি মাঝে জুড়ে
কোথা থেকে কিভাবে যেন টেনে নিয়ে এসেছে আমায় এই বালুনদীর তীরে
শোধ করে যাচ্ছি আজ একা পড়ে পড়ে সমস্ত পূর্ব পাপের সব ঋণ
জনসমুদ্রের ভীর থেকে একাকী জীবন বেছে নিয়েছি আজ
নিয়েছি একাকী নির্বাসন, কাটাই বালুনদী তীরে একাকী রাত আর দিন।

মনের মাঝে আজ আর কোন ক্ষোভ নেই,দুঃখ নেই, কষ্ট নেই
আত্মীয় পরিজন বিহীন আজ এক বৈরি পরিবেশে বসবাস করে যাচ্ছি
নিজের দোষে, যাযাবরের জীবন বেছে নিয়েছিলেম বলে
ঠকিয়ে গিয়েছিলেম তোমাদের সকলেরে
ইচ্ছে ঘুড়ির ডানায় উড়ে প্রতিদিন হত্যা করে গিয়েছিলেম
তোমাদের মনের সকল বাসনাকে,
ছিল যতসব সুন্দর জীবন যত প্রিয়জন, আত্মীয় স্বজন সকলে মিলে আমাকে ঘিরে
শুধু একটু ভালবাসা চেয়েছিল সবাই আর একটু সময় তোমাদের দেবার
ছিল না সেদিন আমার কাছে
সময় আর ভালোবাসাগুলো সব দিয়েছিলেম বিলিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার পাপে;
যদি পাপ-মুক্ত হতে পারি তবে ফিরব আবার তোমাদেরই কাছে,
আবার আমি আগের মতন যদি হতে পারি তবেই, না হায় রয়ে যাব একা পড়ে
এই নির্জন বালুনদী তীরে, একা একা পড়ে রব বালুচরে
শোধ করতে সব পাপের ঋণ, নিজেকে নিজে কষ্ট দিয়ে
দহনের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে।





আমি খুব ভালো করেই জানি আজ দাঁড়াবে না কেও এসে পাশে
বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-কন্যা-পুত্র পরিজন ছিল একদিন আমার চারিদিক জুড়ে
আজকের সুধী সমাজের স্বনামধন্য কিছু বন্ধু বান্ধবও ছিল অনেক বেশি
তোমাদের সকলের মনের ভেতর থেকে আজ অবহেলার তুচ্ছ সাগরে ভেসে গেছি
শুধুমাত্র আমার স্বেচ্ছাচারিতার পাপে।

জন্মটাই ছিল হয়তো শনিতে আমার তাই পাইনি কভু বৃহস্পতির সাক্ষাৎ
মঙ্গল আমায় ছেড়ে চলে গেছে ফেলে রেখে এক অজানা অমঙ্গলের দেশে
ছুঁড়ে ফেলে রেখে গেছে আমায় এই কর্দমাক্ত মড়া বালুনদীর তীরে
যেখানে বসবাস করে কিছু হায়েনার দল, কুকুরে আর নেকড়ে মিলে মারামারি করে
একটুকরো মৃতদেহ ঘিরে সে হোক না কোন পশুর কিংবা ডানা ভাঙ্গা পাখির, হঠাৎ পড়ে
গিয়েছিল এই বিরান বালুচরে।

দিনের বেলায় রোদে পুরে পড়ে থাকি একা মনে মনে পান করে যাই তোমাদের সব কন্ঠসুধা
কুলুকুলু বয়ে যাওয়া নদীজলের ঢেউয়ে, গভীর ভালোবাসায় শুনিয়ে গিয়েছিলে যা আমারে
আর তৃষ্ণা মেটাই পান করে বালুনদীর বালুমাখা পানির ময়লা জলে দিয়ে।
রাতের অন্ধকারে হৃদয় পুড়ে পুড়ে পড়ে থাকি একা মনে মনে ভেবে যাই তোমাদের কথা
চাঁদ আর তারাদের দিকে তাকিয়ে, হৃদয় পুড়ে যায় যখন আমার স্বেচ্ছাচারিতার কথা মনে পড়ে
ক্ষুধা নিবৃত করি হাত দিয়ে মাছ ধরে, পুড়িয়ে খাই হৃদয়ের আগুন জ্বালিয়ে।

মানুষের মাঝে থেকে বুঝিনি আমি মানুষের মায়া,
ভালোবাসা যেন আমার কাছে ছিল এক নিত্য ছলনা
আগে বুঝি নি ভালোবাসা আর সত্যের টান এতো ব্যাপক আর বিশাল
যেন ভরা কাটালের ভাটার টানের মত
এখন বুঝতে পারি মায়ার টান, হৃদয়ের টান, ভালোবাসার টান
তোমাদের থেকে অনেক দূরে চলে এসে বালুচরের দেশে
যখন মরা বা ভরা কাটালের টান পড়ে বালুনদীতে
আমার পায়ের তলদেশ থেকে বালু সরে যায়
সৃষ্টি হয় গহীন কুয়ার মত খাদ,
আমিও যেন ভাটার টানের মাঝে তলিয়ে যেতে থাকি
গহীন খাদের গাঢ় অন্ধকারে।

আজ আমি ঋণ শোধ করে যাচ্ছি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে
একা একা পড়ে থেকে বালুনদীর বালুচরে
মানুষের ভালোবাসা অন্তরে কিভাবে পোড়ায় তা বুঝে নিতে
ঠিক যেমন তোমাদের অবহেলা করে, দুঃখ দিয়ে, কষ্ট দিয়ে
ছলনার মাঝে গড়ে তুলেছিলেম
পাপের পাহাড় সব সম্পর্ককে তুচ্ছ করে
শুধুমাত্র মনের ইচ্ছে মেটাতে এক যাযাবর জীবন বেছে নিয়ে।

স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম আর অত্যাচারে শরীরটাকে প্রায় ধ্বংসের দিকে দিয়েছি ঠেলে
অনেক তো হয়েছে আনাচার, এখন বুঝি হয়েছে সময় বোধোদয় আর শুদ্ধির কাল
তাই আজ আমি মনের আকাশে ডানা মেলে দিয়েছি
নিজেকে শুধরে নিতে আগুনের পাখি হয়ে
অনুতাপের আগুনে অনেক পুড়ে আশা করে যাই
সত্যের আগুন যেন আমায় পুড়িয়ে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে দেয়
ভালোবাসার বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে পোড়া সব ছাই।









ভালোবাসার সৌরভ


ভালোবাসার সৌরভ

ফেলে গিয়েছিলে ভুলে যাবার কালে
খোঁপা থেকে খুলে বেলি মালা খানি
সাঁঝের বেলায়
কি জানি? হয়তো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়
আমি মনে করে নিলেম এটাই তোমার উপহার
সৌরভ জড়িয়ে ধরে রেখেছিল আমায়
সারারাত ধরে
তোমার চুলের গন্ধে মাখানো বেলি মালার;
সারারাত – সারাটি রাত।

সৌন্দর্যের পূজারী আমি সুগন্ধির পাগল
তুমি তা খুব ভালো করেই জানো
তাই হয়তো আমার ভাবনাগুলো নিয়ে
মাঝে মাঝে খেলা করো
আমাকে ভালোবেসে কিংবা
যন্ত্রণার অনলে পোড়াতে – ভালোবাসার।

স্বপ্নে দেখা পরী আমার
দেখা দিয়েছিলে এ-ভুবনে এসে হঠাৎ করেই
আর ছিনিয়ে নিয়েছিলে হৃদয় আমার ভালোবাসে
মাঝে মাঝে একটুকু আসো
পাশে এসে বসো
একটু আদর ভালোবাসার;
মাঝে মাঝে তাই হয়তো বিলিয়ে দিয়ে যাও
আমাকে একটু জড়িয়ে ধরে
তোমার গায়ের অনঙ্গ সুবাস।

আর যাবার কালে
তাই হয়তো দিয়ে গেলে আমায়
বেলি ফুলের গন্ধের সাথে
তোমার গায়ের গোপন সৌরভ
মাখানো ভালোবাসাগুলো
আমি গন্ধে মেতে থাকি
সারারাত – সারাটি রাত।








বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১২

অন্যভুবনে দেখা হবে


অন্যভুবনে দেখা হবে

আমি কোন এক মরণের অপেক্ষায় বসে আছি
তুমিও বসে প্রহর গুনছ অপেক্ষার
পৃথিবীর অন্য এক পারের দেশে
দুজনের হয়তো হবে দেখা আবার
কোন এক অন্যভুবনে বসে
তুমি চাঁদ হয়ে জ্যোৎস্না বিলিয়ে যাবে
আমি শুকতাঁরা হয়ে রব তোমার পাশে এসে
মনে পড়বে হয়তো আমাদের দুজনেরই
উড়তে চেয়েছিলেম আমরা দুজনে একসাথে
ডানা মেলে আকাশের গাঁয়ে।


অবগাহন


অবগাহন

সেদিন আমায় নিয়েছিলে ডেকে
বলেছিল সব ব্যথা দেবে মুছে
ক্ষরণে রক্তের ধারা বয়ে চলেছে আজো
সেদিন দিয়েছিলে যা বুকে
কথা রাখনি তুমি আজো
এরই নাম প্রেম বুঝি?

ক্লান্ত ঘুম ঘুম চোখে আজো তোমায় খুঁজি
রক্তের ধারা বয়ে চলে অবিরত
পাশে নেই তুমি
তুমি ছাড়া কাওকে দেইনি অধিকার মুছে দেবার
তৃষ্ণার্ত পাখি কিছু খেয়ে যাচ্ছে ঠুকরে ঠুকরে
রক্ত আমার চুয়ে পড়ছে যা হৃদয় থেকে।

অপেক্ষার সময়ের অবিরত ধারা বয়ে চলে
ক্ষরণের রক্তধারা ঝর্ণা হয়ে পড়ে
একটা পুকুর ভরে এসেছে আজ ঝর্ণা ধারায় বয়ে
না হয় দেখে যাও একবার এসে
ক্লান্ত পাখি গুলো আজ
উড়ে এসে এসে তৃষ্ণা মেটায়
আমারই রক্তের পুকুরে ডুবিয়ে ঠোঁট।

এখনো হয়তো সময় আছে কিছু বাকি
যদি চাও হৃদয়ের ক্ষত মুছে দিও এসে
এ রক্ত ধারা বন্ধ হবে শুধুই তোমার পরশে
না হয় দেখবে ঝর্ণা ধারায় নদী বয়ে যাবে
যদি থামাতে না চাও
তবে অবগাহন করে যেও একবার হলেও এসে
আমারই রক্তনদী স্রোতে।






কবিতা লেখার যন্ত্রণা



কবিতা লেখার যন্ত্রণা

বড্ড যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস
লেখা নিয়ে, কবিতা নিয়ে
আমার ভাবনাগুলোকে নিয়ে
সহজ ভাবে মানুষ এখন আর কিছু নিতে পারে না
কিংবা নিতে চায় না
বাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে যেন সব সময়
আর তীরের ফলার মত সূচালো কথার আঘাতে করে ক্ষতবিক্ষত
যেন হরণ করে নিতে চায় আমার কবিতার ভাবনা গুলোকে
আমার লেখার চিন্তা চেতনাকে
তাঁদের নিজের মতন করে
অথচ মানুষ বুঝতে চায় না কেন আমি লিখে যাই শুধু আমার মনের খেয়ালে
যত সব অজড় যাতনা থেকে উগরে নিয়ে আসি লেখার মাঝে
আমি কাওকেই খুশি করতে পারি না
সুখী করার ক্ষমতা হারিয়েছি সেই কবে থেকে
যেদিন নীল কালির কলম ধরেছিলেম হাতে
এঁকে দিতে মনের আলপনা কিছু সাদা খাতার পাতায়
কে বুঝতে চায়?

মনের মাঝে হাবিজাবি কিছু কথা কিলবিল করে
এখানে লিখি ওখানে লিখি, লিখে যাই কিছু ব্লগে
সুহৃদ কিছু অবুঝ আছে যারা পড়ে যায় অনুরাগে
মনে হয় যেন তারা কবিতা বোঝে না যে
তাই করে যায় প্রশংসা কিছু, হালকা সমালোচনার সাথে।
আরে বেশির ভাগ বোদ্ধা পাঠক আছে যারা গালি দিয়ে যায়
এখানে ওখানে কিংবা ব্লগে
আমি বলে “হলুদ কলম দিয়া কাগজে লেদাইতাছি”
কেও কেও গালাগালি করে
কেও উষ্টা মারতে চায়
আর কেও কয় কোন হালায় কইছিল তরে লেদাইতে
আইয়া ফেসবুকের ওয়ালে আর ব্লগে, গু এর গন্ধ বাইর হয় বলে
আমার লেখা থাইক্কা।

আমি মুখ বুজে সয়ে যাই সবই
ক্ষরণ হয় হৃদয়ে, দেখার কেও নেই;
বোঝার কেও নেই
বুঝে নিতে হয় আমারটা আমাকেই
মাথা পেতে নিয়ে।

আমার কবিতার ভাষায় প্রেম চলে আসে বেশিরভাগ সময়ে
কি করব বুঝতে পারি না, প্রেম যে আছে মোর মনে
মনে যা থাকে তাইতো ভেসে ওঠে কাগজে কলমে।
ইচ্ছে মত গালি খাই বোদ্ধা সব নতুন পাঠকের কাছে
পিনপিনানি প্রেমের বন্দনা গাঁথা কবিতার ভাষায় লিখে
বড্ড দুঃখ জাগে মনে, হৃদয়ের ওপর রাগ হয়ে যায় অভিমানে
কেন যে জীবনে এসেছিল প্রেম
মাশুল আজ গুনে যাই ব্লগে গালি খেয়ে
কিংবা এখানে ওখানে যা লিখে যাই কাগজে কলমে।

রাগ করে মাঝে মাঝে কলম থেমে যায়
ইচ্ছে করে নতুন কিছু লেখার
আমি মাথা চুলকাই আর ভাবি
কি লেখা যায়, প্রেমের প্যানপ্যানানি বাদ দিয়ে?
ভেবে ভেবে পড়ে যাই অকুল আঁধারে
মাথার মধ্যে শব্দজট পাকিয়ে ওঠে কিছু না লিখতে হলে
বুক জ্বালা করে, এসিডিটি ওঠে চরমে
বমি বমি ভাব হয়
আবার টেবিলে এসে বসি একসময়
সাদা কাগজে এবার কালো কালিতে বমি করব বলে
নতুন করে কিছু ভাবনা এসেছে মাথায়
সমাজ সংস্কার নিয়ে।
লিখি সমাজের কিছু কথা, কিছু অসংগতি
যেগুলো আমার চোখে পড়ে।
আবার বোকার মত ছেড়ে দেই বিভিন্ন ফোরামে আর ব্লগে
এবার যেন গালির পরিমাণ বেড়ে যায়
পারলে যেন ইথারের মাঝে আমার পিণ্ডি চটকায়
আমার সকল বোদ্ধা পাঠকদল মিলে
সমাজ সংস্কার হতে চেয়েছি বলে ।

ধীরে ধীরে পরিচয় হয় নতুন ফোরামের সাথে
নতুন পাঠক কিছু আমার লেখা পড়ে
কিছু উপদেশ বাণী শুনি কান পেতে
কিছু আঁতেল সুহৃদ আছে ভুল করে চলে আসে আমার ব্লগে
পড়ে আমার কিছু লেখা
উপদেশ দেয় এযুগের নব্য কবিতার ভাষা শেখার তরে
আমন্ত্রণ করে নতুন জন্মের কবিদের মাঝে
উপদেশ কিছু নতুন স্টাইলে, নতুন ভাষা প্রয়োগে।
আমি সুবোধ বালকের মত বিভিন্ন ব্লগ ঘুরে বেড়াই
পড়ে যাই নতুন ধারার লেখকদের কবিতা
শিক্ষিত হবার বাসনা নিয়ে
নতুন কিছু শিখিবার তরে,
নতুনত্ব কিছু যদি নিয়ে আসতে পারি
আমার কবিতার পরে।

এখনকার কবিতা পড়ি আর কেমন জানি লাগে মনে
সেক্সের বাড়াবাড়ি কবিতার প্রতিটা লাইনে লাইনে
নতুন স্টাইল ধরে রতি-লীলার কথা পড়ি
কামের নতুন নতুন রূপ দেখি নব্য কবিতার বেশে
নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয়, মূর্খ হয়ে আমি
যেন বাস করছিলাম এতদিন প্রাচীন সভ্যতার কোন দেশে।

হায় এই যদি নব্যধারার কবিতা হয় তবে এতদিন আমি কি লিখে গিয়েছি, হাবিজাবি সব প্রেমের কাঁদুনি; গাধা মানব হয়ে বলতে চেয়েছি সমাজের সংস্কারের কথা কবিতার ভাষায়। হায় লজ্জায় মাথা কাটা যায়, নতুন নতুন শেখা নতুন ধারার বুলি আমার মাথার ভেতর কিলবিলায়, নতুন সব শব্দজটের বেদনায় কাতর নতুন ধারার লেখার প্রসব বেদনায় মন অস্থির হয়ে যায়, এসিডিটির ধাক্কায় এন্টাসিডের পুরো বোতল গলায় ঢেলে কাগজ কলম হাতে করে লুঙ্গি কাছা মেরে বসি। লিখব নতুন কবিতা, নতুন ধারার বেশে কামের চেয়ে বড় বিষয় দুনিয়াতে আর কি আছে?

সাবজেক্ট পেয়ে গেছি মাথার ভেতরে, আমি মনে মনে শব্দ-জাল বুনতে থাকি নতুন করে কবিতা লিখব বলে; যেথায় থাকবে কামের রগরগে বর্ণনা কবিতার প্রতিটি পংত্তিতে পংত্তিতে। নারী পুরুষের বাসনার কথা তাঁদের গোপন সব অঙ্গের বর্ণনা দিতে হবে কবিতার ছলে। একটু এদিক ওদিক চেয়ে দেখি আজকের যুগে বেশিরভাগ নারীপুরুষ জড়িয়ে আছে একে অপরের সাথে পরকীয়ার দলে। ধুর ছাই, এগুলোর কথা কি লেখা যায় কবিতার ভাষায়? কি বলবে সব লোকে?

নারী ও পুরুষ কাকে নিয়ে লিখব? - আচ্ছা শুরু করি না হয় প্রথম কবিতা নারীকে নিয়ে। মাথার মধ্যে কিছু শব্দজট পাকায় আমার কলম কাগজে ল্যাদায়। নারী দেহের বর্ণনা দিয়ে লিখে গেলাম কিছু সত্য কথা কবিতার ভাষায়। এ যে আরেক ভয়ানক বিপদ ডেকে আনলাম নিজেকে নিজে। ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর নারীবাদীদের দল একজোট পাকিয়ে। নারীরা হলো সোচ্চার তাঁদের গোপন কথা লিখেছি বলে, মারতে এলো কিছু যেন পায়ের স্যান্ডেল খুলে। মা বলে ডেকে ক্ষমা চেয়ে আমি পালালাম গর্তের ভেতরে ভয়ে ভয়ে। শুধু একজনকে বলেছিলেম আপা স্যান্ডেল খুলে আমার পিছে (পাছা কই নাই ডরে) মারলে খামখাই স্যান্ডেলটা যাবে ছিঁড়ে, আপনার কোমল পা কষ্ট পাবে পিচ-ঢালা পথের গরমে। যাক বাবা এযাত্রা গেলাম বেঁচে, অনেক গালি খেয়ে।

আমার আগের যায়গায় ফিরে গিয়ে প্রেমের প্যানপ্যানানি শুরু করলাম আবার, দিল উষ্টা আমার আঁতেল কবি বন্ধুর দল আইসা। ভালোই তো লিখেছিলি আগের কবিতাগুলো কামের টাচ দিয়া নারী অঙ্গের গোপন কথা তুইলা ধইরা; আবার কেন শুরু করলি কাঁদুনি গাঁথা? কই যাই আমি, নষ্ট হল যেন আবার আমার মাথা।

এবার লিখলাম পুরুষেরে নিয়ে, যৌবনের খুব স্বাভাবিক দিকগুলোর কথা তুলে ধরলাম কবিতার ছলে। ঝাঁপিয়ে পড়ল এবার কিছু পুরুষের দল ইথারের ভেতর দিয়ে, গালাগালির চরম সীমায় স্থির না থেকে গালি শুরু করলো অশোভন ভাষা ব্যবহারে। একজনের ভাষা ছিল এমন “উষ্টা দিয়া তর দাঁতগুলা ভাইঙ্গা ফালামু বেটা বদ কোনহানকার” । লইজ্জার মাথা খাইয়া কইলাম ভাইজান আপনে উষ্টা দিলে আমি খামু কিন্তুক আমার দাঁতে উষ্টা দিতে হইলে যত উপরে আপনার ঠেং তুলন লাগব তাতে আপনার পেন্টের তলা ফাইট্টা যাওয়ার আশংকা আছে। কথাটা শুইন্না দিল আমারে পুরাপুরি ফেসবুক থাইক্কা ব্লক মাইরা চিরদিনের তরে। আহা বেচারা বড় ভালোমানুষ ছিল পড়তো আমার সব প্রেমের প্যানপ্যানানির কবিতাগুলা আর সুন্দর সুন্দর কমেন্ট মারত। হারাইলাম আমার একখান ফেসবুকের বন্ধুরে চিরতরে, শুধুমাত্র নতুন ধারার কবিতা লেখতে গিয়ে।

অহন আমি বুইজ্ঝা গেছি
আমারে দিয়া কিচ্ছু হইব না
না লেখলাম কবিতা না লেখলাম গল্প-কথা
ময়ূরের পেখম লাগাইতে গেছিলাম আমি কালা কাউয়া
ইথারে উষ্টা খাইয়া হইলাম বেহুশ
স্যান্ডেলের বাড়ি খাইয়া ফিরা আইল হুশ।
অহন সিরিয়াসলি ভাবতাছি আসলে কবিতা কারে কয়?
কবিতা কেমনে লেখে মাইনসে এত সৌন্দর্য কইরা?
পড়তে পড়তে আমার মন যে যায় ভইরা
সেই কবে থাইক্কা স্বপ্ন দেইখা আসতাছি
একটা কবিতা লেখমু মনের মতন কইরা।
ইশশ, একটা যদি ইশকুল পাইতাম
অক্ষনে গিয়া ভর্তি হইতাম
কবিতা লেখা শিকতাম
ঢিলা দিয়া ফালাইয়া দিতাম বেদনার নীল কলমডারে
সাদা কমোডের ভিতরে
সাদা কাগজে হলুদ কলমে ল্যাদানি থুইয়া
কালা কলমে কবিতার ছবি আঁকতাম আপনমনে
যেইটা আসলে কবিতা হইত
গানের ভাষায় গুনগুনাইত
আর, শব্দজটের কবল থাইক্কা মুক্তি পাইয়া
আমি মনের আনন্দে ধেই ধেই কইরা নাইচ্চা বেড়াইতাম
ইশশ খালি যদি আমি একখান সুন্দর কবিতা লেখতে পারতাম!

অজড় যাতনারা জ্যোৎস্না হয়ে নেমে আসে অশ্রুধারার মত
মাশুল গোনে স্বপ্ন দেখার
নৃপ নীহারিকার পেখম-তোলা নৃত্তে উড়ে বেড়ায় মন ময়ূরীরা
মেঘের সাথে ভালোবাসার তৃষ্ণার
কাব্য-চোষা সৃষ্টিশীল ভালোবাসার অচিন কোন সমীরণে গা ভাসাই
কলমের কালিতে অরণি ঘষে জ্বেলে যাচ্ছি অর্ঘ্য অনল তাই।













মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১২

সোনার হরিণের খোঁজে










দৌড় দৌড় দৌড়
খোঁজ খোঁজ খোঁজ

সেই বাল্যকাল থেকে ছুটে বেড়াচ্ছি আমরা কোন এক সোনার হরিণের খোঁজে। শিশুকাল পার হয় কৈশোর আসে নতুন সোনার হরিণ চোখেতে ভাসে দৌড়োই তার পিছনে পিছনে। কৈশোর পার হয়ে আসে যৌবন সোনার হরিণগুলো যেন চোখের সামনে দিয়ে ধাপাধাপি করে ছোটে। যৌবনের উন্মাদনায় ছুটে চলি সোনার হরিণের পিছে। প্রৌঢ়ত্ব আসে জীবনে, সোনার হরিণের ধরা যেন কষ্ট হয়ে ওঠে, থেমে থাকে না ছুটে চলা; কি যেন এক নেশার ঘোরে অধরা সোনার ওই হরিণের পিছে। বার্ধক্য এসে দরজায় কড়া নাড়ে, মৃত্যু এসে দাঁড়ায় সমুখে তবু যেন ধরতে হবে সোনার হরিণটিরে একবারে জন্য হলেও। ছোটা শেষ হয় সাড়ে তিন হাত মাটির তলায় এসে।

মানুষ আমরা ছুটে চলেছি কোন এক সোনার হরিণের পিছে জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু অবধি তবু না পারিলাম তারে ধরিতে। আসলে সোনার হরিণ ধরা যায় না, সে থাকে আমাদের মনের ভেতর কোন এক গহীন কোনে ঘর বেঁধে। মানুষের শুধু শুধুই ছুটে চলা সোনার হরিণের পিছে।



এক একজনের সোনার হরিণ এক এক রকম হয়ে থাকে –

কারো সোনার হরিণ দুবেলা দুমুঠো ভাতের অন্বেষণে, যেন উদরপূর্তি করে খেতে পারে পরিবার পরিজন সহ নিজে।
যারা কষ্টে থাকে ক্রমাগত তাদের সোনার হরিণ কষ্ট থেকে কোনভাবে ছুটে পালিয়ে বের হয়ে যেতে, কষ্টকে পিছে ফেলে।
যারা দুঃখে কাতর ক্রমাগত সুখ নামক সোনার হরিণের পিছে ছোটে, যেন ধরে ফেলবে রেসের দৌড়ে সুখ নামক সোনার হরিণটিরে।
ধনী মানুষ স্বপ্ন দেখে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার পাহাড়, রাশি রাশি গাড়ী বাড়ির লাইন লেগে থাকা তার চারিদিক ঘিরে।
প্রেমিক নামক রেসের ঘোড়া ছোটে সোনার হরিণ নামক এক প্রেমিকার ভালোবাসার ডাকে।
খেলা পাগল দর্শক ছোটে খেলা দেখতে টিকিট নামক এক সোনার হরিণের পিছে, একশ টাকার টিকিট কিনে পাঁচ হাজার টাকা মূল্যে।

সোনার হরিণ যেন এক স্বপ্নে দেখা রেসের ঘোড়া, এক একজন এক একদিকে ছোটে তার স্বপ্নের সোনার হরিণের পিছু পিছু তাকে একবার ছুতে কিংবা ধরে নিজের করে নিতে।

লেখকদের সোনার হরিণ তাঁদের স্বপ্ন দেখায় অন্যরকম করে -

গল্পকার স্বপ্ন দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা শরৎ চন্দ্রের মত কোন একটি শ্রেষ্ঠ গল্প লিখবে বলে;
ঔপন্যাসিক স্বপ্ন দেখে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”, “অলৌকিক জলযান”, “ঈশ্বরের বাগান” এর মত এক মহা ট্রিলজি লেখবে বলে;
ছড়াকার স্বপ্ন দেখে সুকুমার রায়ের মত বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ছড়াকার হতে;
নব্য কবির স্বপ্ন থাকে জীবনানন্দ দাস, সুকান্ত, কাজী নজরুল কিংবা পল্লী কবি জসিমউদ্দিন হতে;
প্রবন্ধ লেখক স্বপ্ন দেখে একটি প্রবন্ধের লেখনীতে মানুষের মনের যত কালিমা আর পাপগুলি সব ধুয়ে ফেলে দিয়ে নর্দমার জলে মানুষ নামক দানবকে মানুষ করে দিতে।

নিরাকার ঈশ্বর যেন কোন এক দূর আকাশে বসে হাসে, মানবের ছোটাছুটি দেখে যায় নিঃস্পৃহ চোখে। যেন সোনার হরিণের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন তিনি সমগ্র পৃথিবী জুড়ে, স্মিত হাসি মুখে দেখে যান মানুষ নামক তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির ছুটে চলা সোনার হরিণের পিছে।

বোকা মানুষগুলো বুঝতে পারে না সোনার হরিণ ছড়িয়ে আছে তার আশেপাশে চারিদিকে, শুধু অদৃশ্য রূপে চড়ে বেড়ায় মানুষকে ধোঁকা দিতে। কিংবা সোনার হরিণ নামক কোন কিছুর অস্তিত্বই নেই কোথাও, সে আছে শুধু মানুষের কল্পনায়, স্বপ্নের ঘোরে মানুষ তাকে ধরতে চায়।








এইতো আমার সোনার হরিণ ধরতে আমি যাই
কাছে গিয়ে দেখি আমি সোনার হরিণ নাই
জন্ম থেকে ধরব বলে সোনার তীর ছুড়ি
শরবিদ্ধ সোনার হরিণ কোথায় গেল মরি
মানুষ হয়ে জন্ম আমার সোনার হরিণ চাই
কবরেতে গিয়ে বুঝি সোনার হরিণ নাই
হাত বাড়িয়ে চারিদিকে সোনার হরিণ খুঁজি
সোনার হরিণ বাস করে মনের ভেতর বুঝি।









অতৃপ্তির ডানা মেলা মানুষ যেন হতে চায় ইকারাস
অথচ তৃপ্তির ভেতরেই আছে সোনার হরিণের বসবাস।






সর্বনাশ


এক পথের ঠিকানা খুঁজে যাচ্ছি - ঠিকানা বিহীন
যেতে যেতে পথে এদিক ওদিক খুঁজি - তোমাকে আমি
মধ্যাহ্নের তপ্ত দুপুরে কিংবা রাতের দ্বিপ্রহরে - অন্ধকারের মাঝে
বাতাশের শোঁ শোঁ শব্দে - তোমার পদধ্বনি
আকাশের নীলে মেঘের ছায়ায় - পাখির ডানায়
নদী পারে কিংবা সাগরের বালুকাবেলায় - বালিয়ারি খুঁড়ে
পথে চলায় ক্লান্ত এখন আমি আর মানুষ নই - যাযাবর হয়ে
তোমার তরেই ভালোবাসা প্রেমের যত অভিলাষ
তোমার মাঝেই হারিয়ে গিয়ে হয়েছিল আমার সর্বনাশ।

অর্ঘ্য অনল


অজড় যাতনারা জ্যোৎস্না হয়ে নেমে আসে অশ্রুধারার মত
মাশুল গোনে স্বপ্ন দেখার
নৃপ নীহারিকার পেখম-তোলা নৃত্তে উড়ে বেড়ায় মন ময়ূরীরা
মেঘের সাথে ভালোবাসার তৃষ্ণার
কাব্য-চোষা সৃষ্টিশীল ভালোবাসার অচিন কোন সমীরণে গা ভাসাই
কলমের কালিতে অরণি ঘষে জ্বেলে যাচ্ছি অর্ঘ্য অনল তাই।


ফিরে আসব আবার



স্মৃতিতে তুমি মনের গহীন আঙ্গিনায়
ঘুমুতে পারি না আমি হয়ে গেছে সেই কতকাল
তোমার ভাবনায় রাতের আকাশে
জেগে রই শুকতারা হয়ে।

তুমি বাস কর এই ভুবনে রঙিন স্বপ্নকে ঘিরে
অন্যভূবনে আমার বাস পড়ে রই তিমির অন্ধকারে
ভালোবাসা-বাসিগুলো মনের মাঝে চিরকালই ছিল আমাদের
মনে মনে, গুনগুন করে কিছু বলতেম আমি তোমার কানে কানে
কিছু শুনতেম তোমার মনের অভিলাষ
ঘর বাধার, আমাকে নিয়ে
কোন এক অচিনপুরে গিয়ে ।

তারপর বাস্তবতার অন্ধকারে হারিয়ে গেলাম দুজন দুদিকে
স্বপ্নগুলোকে মাটিচাপা দিয়ে কঠিন বাস্তবের কাছে হার মেনে
সমাপ্তি ভালোবাসা-বাসি কালের
সমাপ্তি তোমার আমার
চিরবিচ্ছেদের মাঝে।

তুমি কিন্তু এখনো রয়ে গেছ
এই ভুবনের মাঝে
নতুন সাথীকে সংগে করে
নতুন আশায়
নতুন ভালোবাসায়
নতুন এক ঘর করে।

আমি চলে গেলাম অন্যভূবনে পাড়ি দিয়ে
বেদনার গভীর সাগর জলে হেঁটে হেঁটে
একা একা না ফেরার সেই দেশে
তোমার বিচ্ছেদের বেদনা সইতে না পেরে।

এ ভুবনে এসেও তবু কেন তোমার কথা মনে পড়ে?
তাইতো সন্ধ্যার আকাশেতে আমি উঁকি দেই সন্ধ্যাতারা হয়ে
হয়তো তোমার সাথে একবার দেখা হবে ভেবে
সকাল হলে ফিরে যাই শূন্য হাতে ভগ্ন মনে
আটকে যায় চোখ নীরব পৃথিবীর দিকে চেয়ে
দেখি ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি এসে
নিয়ে গেছে তোমাকে ঘুমের দেশে।

হো হো শব্দে ঝড়ের রাতে কান্নার বাতাস বয়ে চলে
যেন আমার হৃদয়ের বেদনার ঢাকের শব্দগুলো ঢেকে দিতে
চাঁদ কান্না বিলিয়ে যায় কভু জ্যোৎস্না বিলিয়ে রাতে
আমার হয়ে, তোমার নতুন ভুবনে আলো দিতে
মেঘ অশ্রু ঝরায় কখনো বৃষ্টি হয়ে
আমার কান্নার লোনাজল মুছে নিতে;
দিকশুন্য হয়ে আমি ভেসে বেড়াই দিকের দিশা দিতে
মধ্য সমুদ্রে রাতের বেলায় আজ দিকভ্রান্ত সব নাবিকেরে
অথচ দিকশুন্য মানুষ কখনো ছিলাম না আমি এ-ভুবনে
তুমিই ছিলে আমার দিকের নিশানা ভালোবাসার ত্রিভুবনে।

সুখে আছ তুমি দেখে যাই প্রতি রাতে
তবু মাঝে মাঝে দেখি এখনো রাত জেগে আমার কথা মনে কর
কেন তা জানি না, কিংবা বুঝতেও পারি না;
আমি টের পাই তোমার ভালোবাসা এখান থেকে
কিন্তু উত্তর না পেয়ে বাক্যহীন হয়ে
ঝুলে থাকি রাতের আকাশেতে
আমি এ-ভুবন থেকেও ভালোবেসে যাই আজো তোমাকে
সেই আগের মতন করে
হয়তো দু-ভুবনের দূরত্বের কারণে
শুধু বুঝতে পারিনা তুমিও অনুভব কর কিনা
আজো আমায় তোমার মনের গহীন কোনেতে।


ভালোবাসা-বাসির ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায়
তোমাকে আমি চিরকালই হারিয়ে দিয়েছিলেম
তুমি তা ভালো করেই জানতে
শুধু পরাজয় টুকু পারনি কভু মন থেকে মানতে
তাইতো সেদিন বাস্তবতার কাছে
হার মেনেছিলে
আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের পথে
হেঁটে চলে গিয়েছিলে।

তবু কেন এখনো ভাবো আমাকে?
সকাল বিকেল আর সাঁঝের আলো আঁধারে
এমন তো হওয়ার কথা ছিল না আমাদের জীবন
একটুকু যদি সেদিন আমাকে বুঝতে ।

বুক ভরা স্মৃতির ছোঁয়াগুলো নিয়ে আবার হয়তো ফিরে আসব আমি এই পৃথিবীর বুকে
সেদিন যেন আবার ঠেলে ফেলে দিও না আমায় অশ্রু নীরে সাগর জলে ভাসিয়ে
জন্মান্তর বলে যদি কিছু থেকে থাকে
আমি একবারের জন্য হলেও আবার ফিরে আসব তোমার কাছে
ওই সুদূর আকাশের পথ পাড়ি দিয়ে,
সেদিন কিন্তু ফিরিয়ে দিও না আমায় আগের মতন করে
সেদিন আবার একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলে
আমি একা হেঁটে চলে যাব সমুদ্রের গভীর জলে
চলে যাব আবার অন্যভূবনে আগের মতন করে,
বারে বারে ফিরে আসব আমি আকাশেতে ধ্রুবতারা হয়ে
দেখতে তোমায়, শুধু তোমাকেই মনে করে।







সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১২

বৃদ্ধাশ্রম আজ নতুন এক নিবাস



খালি গাঁয়ে মায়ের গর্ভে শুয়ে থাকে শিশু
তার কোন কাপড়ের প্রয়োজন হয় না
মা ওম দেয় পেটের ভেতর থেকে
খাবার আহরণ মায়ের নাড়ির সাথে যুক্ত হয়ে
নিশ্চিত নিরাপদ ঠিকানা
মায়ের গর্ভ।

মায়ের গর্ভে ধীরে ধীরে বড় হয় শিশু
গর্ভ ছেড়ে পৃথিবীর মুখ দেখার চঞ্চলতা
সে যেন প্রকৃতির নিয়মের মধ্যে থেকে
খোদা তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে
মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন জন্ম নেয় পৃথিবীতে
খালি গাঁয়ে, হয়ে অসহায়;
শাড়ির আঁচলে চেপে মা ওম দিয়ে যায়
খিদেয় দুগ্ধ পান করায় পরম মমতায়।

ধীরে ধীরে শিশু বড় হয়
মুখে ভাষা ফোটে ধীরে ধীরে
চিনে নিতে থাকে অচেনা এক পৃথিবীরে।

কোন কোন সৌভাগ্যবান শিশু জন্ম নেয় সোনার চামচ মুখে করে
বাবা তার পাশে বটবৃক্ষের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে
সকল প্রকার ঝড় ঝাঁপটা বুকে করে নিতে
আগলে রাখে আপন শিশুকে।

কিছু শিশু দুর্ভাগা হয়ে জন্মায় বাবা হীন এই পৃথিবীতে
হয়তো তার জন্মের আগেই
কোন এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পিতাকে হারায়
মা হয়ে পড়েন অসহায়, তবু এ যে মায়ের নিজের সন্তান তার
শত গঞ্জনা সয়ে হাতে তুলে নেন শিশুর লালন পালনের ভার
নিজে না খেয়ে খাবার তুলে রাখে আদরের মানিকের জন্য
পরম মমতায় শত কষ্ট সহ্য করে।

এক সময় শিশু বড় হয়
অচেনা পৃথিবীর গণ্ডিতে ধীরে ধীরে পদচারণ ঘটায়
মায়ের আঁচল ছেড়ে বের হয়ে পড়ে
নতুন পৃথিবীকে চিনে নিতে।

সৌভাগ্যবান সন্তানদের সুযোগ মেলে পড়ালেখা করে মানুষ হওয়ার
আর দুর্ভাগারা পরে থাকে অবহেলায় অসহায়
তবু জীবন চলতে থাকে জীবনের মত করে
সুখ দুঃখে ভরা এই পৃথিবীতে।

শিশু সন্তান এক সময় বড় হয়
কৈশোর পার হয়ে যৌবনে পা দেয়
মায়ের আঁচলের তলা থেকে বের হয়ে
খুঁজে নিতে চায় নিজের পৃথিবী।

ভুলে যায় এক এক করে বাবা মায়ের অতীত কষ্টের কথা
শত কষ্ট বঞ্চনা সয়ে তাদের লালন পালনের কথা
এখন তার নিজেরাই হতে চায় বটগাছ
বিবর্ণ ডালপালা-হীন শুকনো কিছু পাতায় পাতায়।

এক সময় অনেক আশায় বুক বেঁধে
বাবা মা সন্তানের বিয়ে দিতে চায়
পরবর্তী প্রজন্মের মুখ দেখবে বলে অনেক আশায়
ততদিনে বাবা মা কর্মক্ষমতা হারায়
যে সন্তানকে বুকে ধরে আগলে রেখে মানুষ করেছে
তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।

আজকের এ যুগটা যে পালটে গেছে বাবা মা তা ভুলে যায়
ঘরে নতুন বৌ আসে, শাশুড়ি বৌ এর নিত্য ঠোকাঠুকি
একজন মাটির কলস তো আরেকজন কাঁসার হাড়ি
দিনে দিনে প্রতিদিন বেড়ে যায় হাড়ি কলসের লড়াই
সন্তানের কানে বিষ
বিষময় সংসার
কাহাতক সওয়া যায়?

কোন এক দিন সময়ের প্রয়োজনে দুটি সংসার আলাদা হয়ে যায়
ছিটকে পরে নাড়ির বন্ধন বৌ এর ভালোবাসায়
হয়তো কোন বাবা মা পড়ে থাকে ঘরের কোনায়
কিংবা নতুন বসবাস কোন আলাদা বাসায়।

আদরের ধন আর মায়ের থাকে না হয়ে যায় বৌ এর একার
যুগের হাওয়া কিংবা নিয়তির পরিহাস
দুর্ভাগিনী স্বামী হারা মা
হয়তো লাথি ঝাঁটা খেয়ে কোন মতে টিকে থাকে
সন্তানের সংসারে মুখ বুজে হার মেনে
অনেক আদর করে সংসারে বৌ এনে;
বাকিদের স্থান হয় কোন এক বৃদ্ধাশ্রমে
অসহায় একা একা
জীবনের এক নির্মম পরিহাস
কখনো কি ভাবে না সন্তান
তার জীবনেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে একই ইতিহাস?






কামের বাসনা


কৈশোরে কামের সূত্রপাত কামসূত্রে
যৌবনে কামের দীক্ষা রসময় গুপ্তে,
লুকিয়ে লুকিয়ে নীলছবি চাক্ষুষ অবলোকন
কামের বাসনা কোন কিছু মানে না বাঁধন।
প্রথম হাতেখড়ি বাসার কাজের বুয়া
তারপর যেন মজা পেয়ে যাওয়া
পাশের বাড়ির মেয়েকে প্রেমের ছলনায়
রাত আর দিন ভোলানোর চেষ্টায়;
কাজ করে না সব সময়
তবু ব্যর্থ চেষ্টা জারি হয়ে রয়।
কামের চাহিদা ব্যর্থ হলেই কৌতূহল যায় বেড়ে
টাকার বিনিময়ে নিশিকন্যা খোঁজে রাতের আঁধারে
দেহের চাহিদায় কাতর যৌবনের নেশায়
মানবিক মূল্যবোধ সব কোথায় উড়ে যায়?
তারপর একসময় হয়তো প্রেম আসে জীবনে
রসময় গুপ্তের শিক্ষার সবটুকু প্রয়োগ সেখানে;
বিবাহ নামক লাইসেন্স কোন এক সময় জোটে
কামের বাসনার চরম চরিতার্থতা, বৌ এর ওপর উঠে।
কাম ছাড়া কি আর চাই এই জীবনে
সমাপ্তি ভাবে না মানুষ একদিন হবে মরণে,
কামসূত্র থেকে শুরু বিবাহতে সমাপ্ত
মানুষ কামের দাস করে যায় দাসত্ব;
কৈশোর আর যৌবনের প্রেম কিংবা ছলনা
রতিক্রিয়ার অপর নাম কামের বাসনা।







রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১২

মধ্য বয়সের নতুন কবিতা ভাবনা:




দ্বিধা দ্বন্দ্বের দোলায় দুলছে মন
দুলছি আমি
দুলছে আমার সময়
বয়সের দোষে
আজ এই মধ্যবয়সে এসে।

আগের দিনের কবিতাগুলো পড়ি নতুন করে বারংবার
মনের মাঝে কি এক ভালো লাগার ভাব জেগে রয় সারা দিন রাত্রি ধরে
যেন কবিতাগুলো আমার মনেরই কথা কয়
সেই সব কবিতাগুলো যেগুলো বাল্যকাল থেকে শুনে এসেছি মা খালাদের মুখে
ঘুম পাড়ানি গানের মত করে বাজত যেগুলো কানে, ঘুম এসে যেত চোখে
সুকুমার, সুকান্ত, জীবনানন্দ, নজরুল, রবিঠাকুর, আহসান হাবীব আরো কত কত
শুধু সবার নাম নিতে গেলে কবিতা না হয়ে হয়ে যাবে মহাকাব্য যত
থাক বাদ দেই সে সব কথা।

একটু বড় হয়েছি, নিজে নিজে পড়তে শিখেছি
যা সামনে পাই গোগ্রাসের মত গিলেছি
গল্প, উপন্যাস, কবিতা যখন যা পেয়েছি
পড়ার ফাঁকে ফাঁকে, মা বাবার চোখ লুকিয়ে
সাহিত্যের যেন এক নতুন রস মনের মাঝে নতুন করে ঢুকে পড়েছিল
একটু একটু করে, প্রতিদিন নতুন নতুন লেখকের লেখা পড়ে।

তারপর আস্তে আস্তে পঠিত সব শব্দমালা মাথার মাঝে কি এক জট পাকিয়ে যেত মাঝে মাঝে
কেমন এক অন্যরকম চাপ দিয়ে যেত যেন শব্দজটের মাঝে
খুব প্রথম প্রথম দু চারটি শব্দ মালা নিয়ে কাঁচা বাক্য তৈরি মনের মাঝে
তারপর সময় বয়ে যায়,
দেখি শব্দের পর নতুন শব্দ এসে যোগ হতে থাকে শব্দ ভাণ্ডারে
মাথার মাঝে;
বাক্য তৈরি করার চেষ্টা করতে হয় না, নিজে থেকেই বের হয়ে আসে,
কবিতা লেখা শুরু।
লেখার আইডল ছিলেন ছেলেবেলার সব বিখ্যাত কবিতাগুলোর লেখক গুরু।

চেষ্টা করতাম তাঁদের মত ভাবতে – দুঃসাহসিক চেষ্টা
চেষ্টা করতাম কিছু লিখতে – সেটাও অনেক দুঃসাহস করে
তারপর একসময় দেখলাম এভাবে হয় না, এভাবে হতে পারে না
আমরা কেও কারো মত নই
তার থেকে শুরু করলাম নিজের ধাঁচের লেখালেখি
প্রকৃতি নিয়ে, জীবন নিয়ে, দুঃখ নিয়ে, পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে।

তারপর জীবনে প্রেম এলো
এবার যেন কবিতার সংজ্ঞাই বদলে গেল
লেখায় চলে আসল প্রেম, প্রেমের গীত গাই প্রেমের কবিতা লিখি
তাকে নিয়ে স্বপ্ন আঁকি কবিতার ছলে।
একসময় ভালোবাসার বিচ্ছেদ
শুরু হল বিচ্ছেদের কবিতা, প্রেমের সাথে মেলানো মেশানো
দিন যায় রাত যায় লেখা থেমে থাকে না
সব প্রেম বিরহের কবিতায় খাতার পর খাতা শেষ করে ফেলেছি
মধ্য বয়সে এসে হঠাৎ একদিন যেন বোধোদয় হল, এ আমি কি করছি?
একি কবিতা লিখছি নাকি কবিতা নামের রক্তস্রাব করছি।

ইন্টারনেটের যুগ এখন
কবিতাকে দিলেম ছুটি
এবার পড়ালেখা কিছু ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে
নতুন নতুন লেখকের কবিতা পড়ছি একে একে
যেন চমকে উঠছি হঠাৎ হঠাৎ তার মধ্যে কিছু কবিতা পড়ে।
এখানে এসে দেখেছি শত শত, হাজারে হাজারে নতুন লেখক, নতুন কবি
লিখে যাচ্ছেন তাঁদের মনের কথামালা
বেশিরভাগই মিলে যাচ্ছে আমার কথার সাথে
তবে কি সকলের প্রেমের ভাষা একই? প্রেমের দুঃখবোধও মনে হয় একই
তার প্রকাশ ভঙ্গিও একইরকম শুধু ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যার যার মতন।
পরিচয় হতে থাকল নতুন নতুন সব লেখকের সাথে
ইন্টারনেটের বদৌলতে
আমি পড়ি তাঁদের সমালোচনা করি
তারাও মাঝে মাঝে আমার লেখা পড়ে সমালোচনা করে
ভালোই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি
নতুন নতুন কবির সাথে পরিচয় হয়ে।

হঠাৎই যেন এক ধাক্কা খেলাম কোন এক ফোরামে
পিনপিনে কাঁদুনি গাঁথা গেঁথে যাচ্ছি বলে
পাটা পুঁতা দিয়ে ধুয়ে বেটে ছারখার করে দিচ্ছে যেন দানব কিছু
কি ব্যাপার?
কমেন্টগুলো পড়ি আর লজ্জায় লাল হয়ে যাই
এগুলো নাকি কবিতা হয় না, এগুলো হয় হিজরাদের কান্না।
সুধাই তাঁদের - তবে কবিতা কি?
উত্তর পাই –
এ যুগের কবিতায় প্রেম বলে কিছু নেই
এ যুগের কবিতায় প্রেমের বিরহ বলে কিছু নেই
সবই শরীর নির্ভর, শুধু মাত্র সেক্স।
যে যত সেক্সি ভাষায় কবিতা লেখতে পারবে সে তত এ যুগের কবি।
লজ্জার মাথা খেয়ে ভাবি, মানেটা কি?
বুঝতে পারি না ঠিক মত আবার সুধাই আমি
সেক্সের বর্ণনা কবিতাতে? সে কি কবিতা হবে নাকি রসময় গুপ্তের লেখা হবে
উত্তর পাই তাতে কি এসে যায়?
এখন প্রেমের নামে চলছে সেক্সের জোয়ার
প্রেম এখন আমার মত কিছু গাধা গরুর জোয়াল টানা পুরনো কালের লাঙ্গল ভার
এখনকার কবিতায় থাকবে রগরগে শারীরিক প্রেমের খুঁটিনাটি সব কথা
নারী শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রতিটা অংশের বর্ণনা যতটা পারা যায় খোলামেলা ভাষায়
থমকে থাকি আমি, শুধাই এখানে ছন্দ লাগে না? ভাব লাগে না?
উত্তর পাই কিচ্ছু লাগে না, ইলেক্ট্রিসিটির তারে জড়িয়ে নাও তোমার গলিত মস্তিষ্কের কোষ
তারপর প্রেম বিরহ সব ভুলে লিখে যাও মনে যা আসে
সেটাই হয়ে যাবে কবিতা।
হায় সেলুকাস
তবে এতদিন আমি কি লিখেছি
সব কবিতা নামের রক্তস্রাব।

কবিতার চারণ ভূমিতে ভালোবাসার বীজ বুনে বুনে
জল ঢেলে গেছি এতকাল কিসের অন্বেষণে
আসলে কবিতার চারণ ভূমি কোনটা জীবন না মন প্রেম না বিরহ
নাকি কষ্ট কষ্ট সুখের মতন করে প্রেমিকার কথা ভাবা
আর কলমের কালিতে তার ছবি একে যাওয়া
কবিতার ভাষায়? স্বপ্নের ডানায় ভর করে জীবনের বিচরণ আকাশের গায়
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে, তুমি আমি দুজনে
দেখাব তোমাকে আরেক জীবন কবিতার কল্পলোকে।
ধুর ছাই এসব প্যানপ্যানে ভাষা ছেড়ে আমিও হতে চাই
আজকের যুগের নতুন কবি
আমি নতুন করে কবিতা লেখতে চাই নোংরা ভাষায়
শরীরের বর্ণনা, সয়ে মনের সব যাতনা
পান করলাম না হয় নীল বিষ আর
পুরনো কবিতার ভাষাকে দিলেম জলাঞ্জলি।

এখন আমি আজকের দিনের নতুন কবিতা লিখছি -
নাহ লিখতে গিয়েও কেমন জানি এক ভয় কাজ করছে
নারী শরীরের বর্ণনা দিতে গিয়ে আমার কাছে কেমন বমি বমি লাগছে
তার থেকে দেখি না পুরুষ শরীরের বর্ণনা দিয়ে কিছু লেখা যায় কি না?

যেমন হতে পারে -

""""""""""""""""""""""""""""""""
জাঙ্গিয়া পড়া ছেড়ে দিয়েছি সেই কত দিন হয়ে গেছে
ইদানীং আর মনেও থাকে না
কেন পড়তাম
কি ছিল তার কার্যকারিতা
কি উপকার
কি বা তার অপকার
আমি আমার মত থাকি
আমার ছোট সাহেব থাকে তার মত
কেও কাওকে এখন আর বিরক্ত করি না
কেও কারো কাজে নাক গলাই না
মাথা ঘামিয়ে মস্তিষ্ক উত্তপ্ত করি না
মনের মাঝে যাতে কোন উত্তেজনা দানা না বাঁধে
তাই এখন আর আমি কোন মেয়ের দিকে তাকাই না
মস্তিষ্কের উত্তেজনায় উনি রেগে যান অনেক,
সাপের মত ফোঁস ফোঁস করে ফণা তুলে উঠেন
আমি অসহায় বোধ করি বড্ড বেশি;
যদি ভুলক্রমে কেও আমার জিপারের দিকে তাকিয়ে থাকে
আফসোস হয় শুধু মাঝে মাঝে তখনই,
জাঙ্গিয়া পড়ি না বলে।

তাই আমি এখন সাধারণত ভাব ধরে বসে থাকি
ভাবুকের মত একদম কামহীন,
নারী বিবর্জিত ভাবনা শুধুমাত্র একটি জাঙ্গিয়ার জন্য,
কিংবা তা না পড়ার জন্য।

যখন আমি বসে থাকি সেও যেন শুয়ে থাকে চুপচাপ
মাঝে মাঝে শুধু এপাশ ওপাশ করে
আমার পাশ ফেরার সাথে সাথে
যখন আমি হেঁটে বেড়াই নীরব পথিকের দৃষ্টিতে
চারিদিক দেখে দেখে
তখন উনি ঝুলতে থাকেন পেন্ডুলামের মত এদিক ওদিক
যেন মস্কোর ঘণ্টা বাজিয়ে যাচ্ছেন
কুঁচকির গাঁয়ে গাঁয়ে বাড়ি দিয়ে
সময় বলেন না কিছুই তিনি আজকাল,
সারাক্ষণ করে থাকেন মুখভার
শুধু পেন্ডুলামের ঘড়িটা পড়ে আছে কালের নিদর্শন হয়ে।
"""""""""""""""""""""""""""""""""

হায় সেলুকাস?
এ আমি কি লিখলাম কবিতার ভাষায়
একি সত্যি কবিতা লিখলাম নাকি হল কবিতা নামের দূষিত রক্তস্রাব।






শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১২

ভালোবাসার অভিমান




যখন ইচ্ছে ভালোবাসা, কাছে টেনে নেয়া
উনিশ থেকে বিশ হলেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়া
দেখছি আমি প্রথম থেকেই নতুন কিছু নয়
অভিমানে কষ্ট যে পাও তাতেই আমার ভয়।

তুমি আমি দুই ভুবনের করি দুই সংসার
কষ্ট পাওয়া তোমার একার আমি যে কোন ছার
নিজের ধ্যানে মগ্ন থেকে ভুল করি যে-কেউ
কথার ঝড়ের ফলশ্রুতি অশান্ত এক ঢেউ।

রাগের ঝড় মনের মাঝে বাষ্প হয়ে ফোটে
কথার কাঁটায় মনের মাঝে ঝড় তুলে যে উঠে
অভিমানের কথার চাবুক ঝড়ের মত চলে
অসংলগ্ন গালাগালি বরফ যে যায় গলে।

মনের মাঝে বয়ে চলে রাগের রূপান্তর
একটি ভুলেই দূর করে দাও অন্যরকম পর
অপেক্ষাতে বসে বসে আমি যখন থাকি
তুমি থাক ব্যস্ত তখন তোমার তাতে কি?

ভুলো মনের মানুষ আমি ভুল করি তা মানি
ভেবো একবার মাশুল গুনতে কাঁদতে আমি জানি
কত করে বোঝাই তোমায় বকা-ঝকা আর না
মনের ভেতর দিও উঁকি দেখতে পাবে কান্না।

অন্ধ তুমি রাগলে তখন সবকিছু যাও ভুলে
রক্ত ঝরাও হৃদয়েতে গালির ঝড় যে তুলে
অপমানের কথার চাবুক আমার পিঠের পরে
কষ্টগুলো বুকের ভেতর কান্না হয়ে ঝরে।

বুঝবে হয়তো ভুল তোমার ভাঙ্গবে অভিমান
আজকে না হয় সয়ে যাব তোমার অপমান
তোমায় আমি ভালোবাসি বুঝবে এক দিন
শুধব আমি তোমার দেয়া ভালোবাসার ঋণ।







রম্য রচনা - ভালোবাসাবাসি ও একটি প্রেম কাহিনী



ভালোবাসাবাসি ও একটি প্রেম কাহিনী

রম্য রচনা


কে জানি আমারে আইয়া কইল আমার ভালোবাসার চোরাবালিতে ডুইব্বা মরতে চায়। আমি তারে কইলাম ভালোবাসার চোরাবালিতে আমিও ডুব মারুম তোমার লগে, এক্কেরে ভিতরে হান্দাইয়া যামু, তয় একখান সর্ত আছে। হেয় কইল কি? আমি তারে কইলাম ভিতরে ঢুইক্কা আমি কিন্তুক আর বাইর হমু না, ওইহানেই থাইক্কা যামু। তর লইয়া দম বন্ধ হইয়া মইরা গেলে পড়ে কিন্তুক কইতে পারবি না আমারে বাঁচাও। আমারে আউলা কইরা দিয়া কইল আমি রাজি আছি। আমিও শালার লুঙ্গি কাছা মাইরা কোবতে বানাইতে বানাইতে কইলাম - ওগো তোমাকে নিয়ে আরো গভীরে যেতে আমার ময়না পাখিতুমি যদি থাক পাশে ওইখানে গিয়া চল আমরা ঘর বান্ধি তুমি পাশে থাকলে চোরাবালিতে আমি কচু গাছ বুনিকলা বাগান কইরা দুইন্নার বান্দর রে লইয়া আমুআমিও যে তোরে অনেক ভালোবাসি।

হেয় আমার কবিতার কোপ্তা বানাইয়া দিয়া কইল বান্দর কেন? আমি হেরে কইলাম আরে বুঝলা না? আমার জাত ভাই ছাড়া আমি থাকবার পারি না, তোমার লগে কতক্ষন ইটিশ পিটিশ করুম?

হেয় কইল ওওওওওওওওওওওওওওও

আমিও কইলাম আইচ্ছা ঠিক আছে আমার ময়না পাখি গোওওওওওওওওও

কইয়া দিলাম বান্দরের লাহান একখান ফাল।জিগায় ফালাফালি করতাছ কেন? আমি হেরে কইলাম জাত ভাইয়ের কতা মনে কইরা দিস আমার মনে অহন খুশির বান ডাকতাছে।

তয় একটা সমইস্যা।

আবার কি হইল? সব শর্তই তো মাইন্না গেছি, আমি কইলাম সব শর্ত তো এহোনো কই না, খালি একখান কইছি।

হেয় জিগাইল তয় পরেরটা কি?

আমি কইলাম মাথার মইধ্যে উকুন ভইরা গেছে, আমার মাথার উকুন মাইরা দেও।

হেয় ফাল দিয়া উইডা কইল এইডা কি কও? তোমার মাতায় উকুন আইছে কইত্থন?

আমি কইলাম আরে অভাগার বেটি তুই তো বান্দরের লগে প্রেমে মজছস, সব বান্দরের মাথাতেই উকুন থাকে, আমার মাথা খাউজ্জাইতাছে কইল, মিজাজটা বিলা অইতাছে। অক্ষন উকুন না বাইছা দিলে দিমু কইল ভেংচি। হেইডাতে কাম না অইলে কইল কামুর দিয়া বইতে পারি।

হেয় আতকা খাইয়া কইল, ভেংচি তো বুঝলাম তয় কামুর কেন? আমি কইলাম ওই শালি তরে না কবিতায় কইলাম আমি কচু গাছ বুনতাছি? হেয় কইল হ মনে আছে তো আমি তো তোমারে কচু গাছ বুনতে না করি নাই। আমি কইলাম মান কচু গাছের গোড়ায় কেডা খাউজ্জায় হেইডা তোর জানা নাই?

হেয় কইল, নাতো জানি না। কেডা খাউজ্জায়?

আমি ঘোত ঘোত শব্দ কইরা কইলাম - আরে বেক্কল বেডি শুওরে মানকচু গাছের গোড়া খাউজ্জায়।

হের তহন ফিট খাওয়ার দশা অইছে। ডরাইয়া ডরাইয়া জিগাইল, কেন তুমি কি শুওরও পালবা?

আমি কইলাম কেন জানস না শুওরের ঘোত ঘোত না শুনলে বান্দরের ঘুম আহে না।

অহন আমি তরে লইয়া কেমতে ঘুমাই?

বেডিরে দেহি অহন মুকখান আগের থাইকা কালা হইয়া গেছে, আমারে কইল আইচ্ছা নাইলে তোমারে আমি শুওরও পালতে দিয়াম। আর কোন শর্ত আছে নি তোমার।

আমি কইলাম মাত্র তো শর্ত শুরু করছি তুই একটা একটা কইরা মাইনা যাবি আমি পরেরটা কইবাম।

হে বেডি কইলা আইচ্ছা পরের শর্ত কি?

আমি কইলাম আমগো কিন্তু কোন পোলাপাইন ওইব না। হে বেডির দেহি চোক মুখ উল্টাইয়া যাওয়ার দশা হইছে। জিগাইতাছে কেন? তোমার কি কোন সমস্যা আছে? ভায়েগ্রা টায়েগ্রা খাওন লাগে নি?

আমি কইলাম আরে বেক্কল বেডি আমি এহনো পোলাপাইন, আমার কইত্থন পোলাপাইন ওইব। তুই বেডি রুপবানের মা আর আমি হইলাম রহিম বাদশার পোলা। আমার তো এহনো এইসব করারা বয়স হয় নাই। অহন ক দেহি তুই আমারে আরো বারো বছর পাইল্লা পরে এডাল্ট বানাইয়া বিয়া করবি?

হুইন্না না বেডি কি করল জানুইন?

বেডি দিল রাইতের আউলা কাপর চোপর পইরা দৌড়।

আমি ও বেডির পিছে পিছে দৌড়াইয়া ধরলাম তারে, জিগাইলাম কিরে? তুই আমারে ফালাইয়া দৌড়াইয়া পলাইতাছস কেন?

বেডি আমারে কয়, আমি তর মত বান্দরের লগে গাতায় ঢুকতে চাইছি কেন জানস?

আমি জিগাইলাম কেন?

বেডি কয় আমার তো পেট হইছে, কয়দিনের মইধ্যে বাইচ্চা হইব, হেইয়ার লাই তর লাহান বান্দররে প্রেমের জালে ফালাইয়া আমার বাইচ্চার বাপের নামডা দিতে চাইছিলাম তরে বাপ বানাইয়া। ওহন যদি তুই রহিম বাদশার পোলা হস তাইলে মাইনষেতো ধইরা লাইব তুই অহনো এডাল্ট হস নাই। আমি তো তর গালে দাড়ি দেইহা মনে করছিলাম এইডা বুঝি বুইড়া বান্দর।

আমি কইলাম হায় রে ছেমরি বুইড়া আর পোলাপাইন বেবাক বান্দরের গালেই দাড়ি থাহে হেইডাও জানস না?

হেয় কইল আইচ্ছা যহন আমার তর লগে ভালোবাসা করার সিক্রেট জাইনাই ফালাইছস তো এক কাম কর তর সব শর্তে আমি রাজি তুই আমার যে পোলাডা ওইব হেইডা তরে বাপ ডাকব।

এইবার আমার আউলা হওয়ার পালা, আমি কইলাম মা জননি আপনার চাইরটা পায়ে পড়ি আমারে ক্ষেমা দেন।

আন্নের পোলা আন্নে পালেন আমি গেলাম।

হেয় শুরু করল কান্দাকাটী, কয় আমার পোলার লাইজ্ঞা তুমি একটা বাবা ঠিক কইরা দেও না গো জানের জান ময়না পাখি, হের ছলনায় আমি গইল্লা মোমবাতি হইয়া গেলাম।

কইলাম আইচ্ছা বান্দির ঝি তুই থাক আমার লগে তয় আমার মাথার উকুন যদি পেত্তেক দিন না মাইরা দেস তাইলে তর কইল খবর আছে। বেবাকতেরে আমি কইয়া দিমু তর নাজায়েজ পুলার কতা।

হেয় রাজি হইল, আমরা দুইজনে মিল্লা চোরাবালির গর্তে সুখে সংসার করতে লাগলাম।

দুই মাসের মইধ্যে বেডির একটা পুলা হইল, পেডের তে বাইর হওয়ার আগেই মায়ের পেডের ভিতরে পুলারে কইয়া দিল বাইর হইয়া যেই বান্দর দেকবি হেইডাই কিন্তুক তর বাপ। বেডা পেডের তে বাইর হইয়াই আমারে বাবা কইয়া গলায় ঝুইল্লা পড়ল। আমার প্রেম কাহিনীর সমাপ্তি ঘটল।

কিন্তুক ওহনো ১টা কতা আছে কইল, এইটা আন্নেগো পাঠকগো লাইজ্ঞা।

আমি আমার পুলা সহ ছবি দিলাম এইহানে, আন্নেরাই বিচার কইরা দেহেন আমার চেহারায় যে বয়স দেহা যায় হেই বয়সে আমার একটা পুলা থাকবার পারে কি না।

হায়রে ভালোবাসা - মরছি আমি ভালোবাইসসা।

ছবিতে আমি ও আমার পুলা থুক্কু কার পুলা জানি না তয় হের মায়ে আমার গলায় ঝুলাইয়া দিয়া শিকাইয়া দিছে এইডা তর বাপ।






স্বপ্ন উড়াই স্বপ্ন পুড়াই


খুব ভালো করেই আমি জানি তুমি আমার নও
অন্য কারো,
খুব ভালো করেই তুমি জানো আমি তোমার নই
অন্য কারো,
তবু কোথায় যেন একটা মিল রয়েছে
তোমার-আমার, দুজনেরই
স্বপ্ন দেখায়
আমরা স্বপ্ন দেখি।

স্বপ্ন দেখতে দেখতে তুমি ডানা মেলে দাও আকাশে
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে স্বপ্নের ঠিকানায় চলে যেতে
স্বপ্ন দেখি আমি মাঠে ঘাটে জঙ্গলে
তোমার হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে
দু জনে দু প্রান্তে আকাশে আর পাতালে
স্বপ্ন দেখে যাই দুচোখ ভরে।

গা চিড়বিড় করা রোদ্দুরে জ্বলে জ্বলে
দুজনে দিবাস্বপ্ন দেখি
রাতের চান্নি পসরে জ্যোৎস্না মেখে
দুজনে স্বপ্নে হারিয়ে যাই
হাত ধরাধরি করে
মনে মনে
চোখ খুলে তাকাই দুজনে
শূন্য চারিধার
কেও কারো নয় বাস্তবে
তবু আমাদের দূরত্ব বাড়ে নি কখনো
মনের কাছা কাছি থাকি
আর
দৈনন্দিন স্বপ্ন-পুরীতে করি বসবাস
স্থিত হয়ে থেকে যে যার জায়গায়।

স্বপ্নে তুমি চুল উড়িয়ে দাও খোলা বাতাসে
আঁচল ছড়িয়ে দাও আমায় রোদ্দুর থেকে বাঁচাতে
স্বপ্নে আমি স্বর্ণালু লতার মত তোমায় জড়িয়ে থাকি
ভালোবাসার বাহুডোরে তোমাকে জ্বালাতে;
চোখ মেলে তাকাই দিনের বেলায় দুজনে
খর রোদ এসে ধ্বক করে বাজে দুজনার চোখেতে
চোখ মেলে তাকাই রাতের আঁধারে
কেও কোথাও নেই অন্ধকার ডাকে
তবু আমরা ভালোবাসা-বাসি করি
স্বপ্নের ভুবনে
দুজনে দু প্রান্তে স্থিত হয়ে বসে।

আমাদের স্বপ্নগুলো মাঝে মাঝে হয় লাল
যেন হৃদয় থেকে রক্ত ঝরছে
যখন পাই না দুজন দুজনকে;
আবার মাঝে মাঝে রূপ নেয় গাড় নীলে
যেন কষ্ট কষ্ট দুঃখগুলো
আকাশে বাতাসে ভাসছে;
তবুও থেমে থাকে না আমাদের স্বপ্ন দেখা
রাতে কিংবা দিনে
স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি আমরা
দুজনে দুজনে।

ভালোই তো চলছে আমাদের স্বপ্ন জগতে বেঁচে থাকা
কি হবে বল আর কাছাকাছি এসে
তার থেকে চল দুজনে মিলে
আকাশে বাতাসে স্বপ্ন উড়াই
খর রোদ্দুরে স্বপ্ন পুড়াই
দেখি না কল্পলোকে উড়ে উড়ে
কতটুকু পড়ে থাকে ছাই।





শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১২

প্রশ্নবিদ্ধ আমি





একটা যদি ছবি পাইতাম
রঙ্গিন
চোখ ধান্ধাইয়া দিবার মতন
চাইয়া চাইয়া দেকতাম।

একটা যদি আয়না পাইতাম
পারদ ছাড়া
অর্ধেক ভাঙ্গা ভাঙ্গা
ঘসা কাঁচে নিজেরে একবার দেকতাম।

একটা যদি পাখি পাইতাম
ডানা ছাড়া
উইড়া বেরাইতাছে আমার লাহান
বিহঙ্গ দৃষ্টিতে চাইয়া থাকতাম।

একটা যদি কবিতা পাইতাম
অইন্যরকম
হৃদয় কাড়ার মতন
মনের হাউশ মিটাইয়া পড়তাম।

একটা যদি আকাশ পাইতাম
নীল সাদায় মিলানো
শরতের মেঘে ভরা
চক্ষু ভইরা চাইয়া থাকতাম।

একটা যদি নদী পাইতাম
কুলকুল কইরা
বইয়া চলতাছে
তাইলে আমি ভাইসসা যাইতাম।

একটা যদি সাগর পাইতাম
সরবতের লাহান
মিঠা জলে ভরা
আকন্ঠ পান করতাম।

একটা যদি তুমি পাইতাম
হারানো প্রেমের লাহান
হৃদয় নিংরানো ভালোবাসায়
বুকের ভিতরে বাইন্ধা রাকতাম।

কত চাওয়া চাইয়া গেলাম
দিবাস্বপ্ন দেইক্ষা গেলাম
জীবন ভরা শুন্য খাতা
এখন আমি কি করতাম?




প্রকৃতি আমারে বাঁচতে শেখায়



ভাবাশ্রিত উদারতায় মুগ্ধতা
মনের মাঝে
প্রকৃতির লীলাখেলা দেখি
ভাবনার ডানাগুলো
উড়ে আকাশের গায়
স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজে।

দেখি বিশালতা আকাশের
ডানামেলা পাখির ঝাঁক
উড়ে চলে নতুন ঠিকানায়
কোন অজানায়
ঋতু বদলের পালা শেষ হলে
ঝাঁক বেঁধে দলে দলে।

সারি বাধা পাহাড়ের বন
কোথাও রূপ ধরে সবুজের সমাহারে
কোথাও থাকে বরফে ছেয়ে
যেন এক বরফের দেশ
বসবাস তার যেন আজ
কোন অতীতের এক
বরফের যুগে।

মাইলের পর মাইল জুড়ে
সবুজ ধানক্ষেত
ধান শালিক
কিছু বসে থাকে
খুঁটে খুঁটে কোথা থেকে যেন
খাদ্য নেয় লুটে
নিদারুণ ক্ষত বাজে
তাই দেখে মাঝে মাঝে
কৃষকের বুকে।

সবুজ বনারণ্য অপার
মাইলের পর মাইল
মাঝে নদী বয়ে যায়
চুলের মত অসংখ্য কিছু
জোয়ার ভাঁটায় পানি পায়
নতুন গাছে জীবন আসে
মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়
যেন প্রতিযোগিতায়
কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে।

ভীতসন্ত্রস্ত কিছু হরিণীর দল
চেয়ে থাকে অবাক চোখে
এদিক ওদিক
মাঝে মাঝে চমকায়
বাঘের ছায়া
কোথায় দেখা যায়
ত্রস্ত পায়ে ছোটে
জীবনের তাগিদে।

গাংচিল কিছু উড়ে উড়ে চলে
মাছ খুঁজে খুঁজে
খুটে কাদার মাঝে মাঝে
কিংবা ঝাপ দেয়
নদীর বুকে
বুভুক্ষু অন্বেষণে
পেটের তাগিদে।

শ্রাবণের বরিষণে মেঘের কান্না
মনের মাঝে
মন খারাপের কি এক হাওয়া
চারিদিক বয়ে চলে
যেন প্রেমিকের মনে
ধুয়ে নেয় প্রেমিকের
অশ্রুর লজ্জা।

বিশালতা সমুদ্রের
জলের রাশিমালা
পৃথিবী জুড়ে
বুকের মাঝে টেনে নেয়
সমগ্র মানব জাতীর
অশ্রুর লোনা জল
ধীরে ধীরে বাড়ে তার
লবণাক্তটা।

একটা গ্রহণ চলছে
অনেক দিন থেকে মনের ভেতর
সূর্যের বেগুনী রশ্মি যেন
আমার অস্তিত্বের অনেক ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে ,
একেবারে মাথার চামড়া ভেদ করে
মস্তিষ্কের মাঝে ক্ষত সৃষ্টি করছে
প্রতিনিয়ত তোমাকে ভেবে
আমি চলে যাচ্ছি যেন এক ঘোরের দেশে
আমার কল্পিত স্বপ্নগুলোকে
ঘর বাঁধছি তোমাকে নিয়ে।

কোন এক দিন আমারো মুখে হাসি ছিল
পাশে তুমি ছিলে
ভালোবাসা ছিল
ছিল ছুটে বেড়ানো সাগর সৈকতে
আজ শুধু ঢেউগুলো
একা একা আছড়ে পড়ে
নির্জন বালুকাবেলার বুকে।

কোন একদিন ছুটে বেড়িয়েছি
ঘাসের বনেতে পা মাড়িয়ে
ছুটে বেড়িয়েছি দুজনে মিলে
ছুটে চলা কিছু ত্রস্ত হরিণীর দল
চেয়ে থাকত অবাক চোখে
থমকে দাঁড়াত হাঠাত করে
রাশ টেনে তাঁদের
চঞ্চল হরিণী মন
হয়তো ভাবত কারা এরা
নতুন ডাকাত
লুটতে এসেছে আমাদের বন।


কোন একদিন তোমার অধরে ওষ্ঠ ছুঁয়ে
বুলিয়ে যেতাম পরশ ভালোবাসার
তুমি মুখ লুকোতে আমার বুকেতে
উথাল পাথাল ভালোবাসায়
যেন উঠে যেত সব ঘাসের ছাল
আর আমাদের ছোঁয়ায়
সাড়ি সাড়ি লজ্জাবতীর গাছগুলো
তেমনি ভাবে মুখ লুকোত
লজ্জায় হয়ে লাল।


কোন একদিন আমার ছিল
ছোট্ট একটা আকাশ
বৃষ্টির বিকেলে রংধনু হয়ে
ভেসে থাকতে পূবাকাশে
তুমি ছিলে তার পুরোটা জুড়ে
এখন আমার বিশাল আকাশ
শূন্য তবু চারিধার
আজো মেঘগুলো একসাথে হয়
আমার কষ্টগুলোকে জুড়ে জুড়ে
কালো হয়ে আসে বাতাসে ভেসে
দুঃখগুলোকে উড়িয়ে দিতে
কান্না ঝরিয়ে যায় এখনো তাঁরা
আমার অশ্রু সব ধুয়ে নিতে।

আজ আমি আর স্বপ্ন দেখি না
আগের মত তোমাকে নিয়ে
প্রকৃতি আমারে শিখায়েছে অনেক
নিজেরে নিজে দেখায়ে দিয়ে
আমার চোখেতে আঙুল দিয়ে;
কানে কানে বলেছে বাতাসের রব
উড়িয়ে নিতে ব্যস্ত আবেগের
মিছে ভালোবাসা-বাসির ধুলোরাশি সব।

নতুন আকাশ
নতুন বাতাস
নতুন সাগর
নতুন জলরাশি
প্রকৃতি আমারে দেখায়েছে যেন
নতুন দিনের
নতুন এক পৃথিবী
আমারই চোখে আঙ্গুল দিয়ে
সকল শূন্যতা
ভুলাতে চেয়েছে
যা ছিল সব মনের কোনেতে
ছিড়তে চেয়েছে স্মৃতির মালাগুলো
স্বপ্নভঙ্গ তোমারে নিয়ে।



বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১২

সাগর পারে জিন্দা লাশ



হেই সকাল থাইক্কা শুইয়া আছি
অহন মইধ্য দুপুর
সময় যেন আর কাটে না
অপেক্ষা মৃত্যুর
যেন কোন এক বাইল্যকাল থাইক্কা শুইয়া রইছি সাগর পারে
আসমানের তলে লেংটা খালিগায়ে
কাপর চোপর সব দিসি বিসর্জন আইজকা
আদিম মানুষ হইয়া মরুম খেয়াল জাগছিল কেন জানি মনে
যেইদিন থাইক্কা ফালাইয়া গেছিলা একলা আমারে সাগর পারে
উষ্টা দিসিলা আমারে তুমি তোমার প্রতি অন্ধ প্রেমে
অহন এই দুপুর বেলায় সাগর পারে রইছি আমি শুইয়া
মৃত্যুর প্রতিক্ষায় আসমানের দিকে থাকি চাইয়া
রইদ পড়ে চোখের উপর
চোখ ঝলসাইয়া যায়
ইশশ, একটা যদি গামছা পাইতাম
চোক্ষের উপর দিয়া হুইত্তা থাকতাম
যাউজ্ঞা
লেংটার আবার কাপরের খোয়াব!
রইদ মাথার উপরে উইঠ্ঠা আসে চিড়বিড়াইয়া
আমার শরির জ্বলতে থাকে
রইদের লগে বালুর গরমে
একটু মনে হয় তোমার ছেকা দেওয়া প্রেমে
লাশের লাহান পইড়া রই যেন তপ্ত কড়াইয়ে ফুটতাছে খৈ
শরিল গেল পুইড়া তবু আমি থাকি শুইয়া
একলা একলা সাগর পারে বালু ভাজা হইয়া
বদ কয়েকটা গাংচিল মাথার উপরে দিয়া উড়াউড়ি করতাছে
জোড়ায় জোড়ায় কতগুলি যেন প্রেমের হুড়াহুড়ি খেলতাছে
অসইহ্য লাগে দেকতে প্রেমের মাখামাখি বদ গাংচিল গুলির
হিংসায় গা যাইতাছে জ্বইল্লা
মনে পইড়া যায় একসময় তুমিও আমারে এমনে কইরাই
ডলাডলি করতা ভালোবাসার খেলা খেলতা
যহন তোমার খায়েশ হইত।
আমার খায়েশরে দেহাইতা কলা ছুইট্টা যাইতা চইল্লা
নারির ছলনায় যাইতাম আমি ভুইল্লা
আইজকা আমি পইরা রইছি রোইদ্দের মইদ্ধে একলা
লাশের লাহান বেডা লেংটা হইয়া
যাউজ্ঞা, দেকব কেডায় আমি একলা
আইজকা এই নিরব বালুকাবেলায়।
দুপুরের জোয়ারটার বেশি জোর আছাল না
লাশটারে টানদিসাল একটুহানি পানির লগে
ভাসায় লইয়া যাইতে পারে নাই
অহনো তাই মরি নাই
পেন্ডুলামের ঘড়ির মত রইছি আমি ঝুইল্লা।
আস্তে আস্তে সইন্ধ্যা নামে ধরাচর জুইড়া
আন্ধার আইসা চাইরদিক থাইকা শরিল দিল জুরাইয়া
রাইত নামেরে রাইত নামেরে কইরা রাইতটা গেল আসলেও নাইম্মা
আহহারে কাটফাটা গরম থাইকা শরিলডা যেন গেল জুড়াইয়া
আসমানেতে তাঁরা ফুইট্টা গেছে কত্তগুলি অহনই
আইজ আমাবইস্যার রাইতে
কেউ কোনহানে নাই এই বালুতটে
রইদ নাই
বিস্টি নাই
গরম নাই
তবু মনের মইধ্যে খুইজ্জা বেড়াই
যদি তোমার দেহা পাই
হায় হায় এইডা কি অইল?
আইজকা মনে হয় তুমিও কোনহানে নাই
মনের ভিতরে
কিংবা মগজের মইধ্যে।
আছে খালি চারিদিকে অন্ধার রাইত
তাঁরা কতগুলা মিটমিট করতাছে আসমানেতে
আমার দিকে চাইয়া
আর আছে সাগরের কুলকুল ধ্বনি শব্দ
বাড়ি মারতাছে একটু পর পর
কানের পর্দা ফাটাইয়া
আছে হালকা একটু বাতাস
শরিলডারে দিতাছে জুড়াইয়া
আমি ভাবি আর ভাবি
শুইয়া আকাশের তারারাশির নীচে
শরিরের নীচে ভিজা বালুর বোধোদয়
জোয়ারের পানি কুলকুল বয়
ভিজাইতাছে আমারে একটু একটু কইরা
যেমনে ভিজাইছিলা তুমি আমারে
চউক্ষের জলে ভইরা
জীবনের কত কথা মনের মইদ্ধ্যে উঁকি মারতাছে আইয়া
কবে হইছিল জন্ম আমার
কবে হইছিল বোধোদয়
কোন একদিন তুমি আইছিলা আমার কাছে মনে হয়
শিখাইছিলা ভালোবাসা
শিখাইছিলা প্রেম
হেইদিন থাইকা যেন আমি তোমার হলেম
হায় নারী ছলনা
অহন উষ্টা দিয়া গেছ চইলা সাগর পারে থুইয়া
একলা একলা আমারে ফালাইয়া
অপেক্ষায় অতৃপ্ত জিন্দালাশের শরীর
মৃত্যুর অপেক্ষা।
ধুত ছাই
কেন মনে হইতাছে তোমার কতা আইজকা
লাশের লাহান শুইয়া
আইজকাও কেন ধোঁয়া ধোঁয়া অস্পষ্ট আন্ধারের লাহান
তোমার চেহারা ভাসে মনের মইধ্যে
থুক্কু চউক্ষের মইদ্ধ্যে
বেটা জিন্দা লাশ হইয়া পইড়া আছে লেংটা
সাগর পাড়ে বালু সাতরাইয়া
সারাদিন ধইরা খৈ ভাজা হইয়া
হেই সকাল থাইক্কা আন্ধার রাইত তরি
লাশ হইয়া সাগর জলে ভাসার লাগি।
কত কথা যে ফ্ল্যাশব্যক মনের মইধ্যে
তোমারে লইয়া
দুপুরে জোয়ার আইছিল এট্টুখানি
টাইন্না নিছিল লাশটারে পানির ভিতর অল্পখানি
অহন মরাকাটালের পুরা জোয়ার
একটু পরেই ভাসাইয়া লইয়া যাইব আমারে
সাগরে
টাইন্না নিব তার বুকের মইধ্যে
চিরকালের তরে
তোমার মত ফালাইয়া দিব না কোনদিন
ভালোবাসার খেলা খেলতে খেলতে
উস্টা মাইরা ভিজা বালুর পরে
জিন্দা লাশের কবর হইবই আইজ
সাগরের গহীন জলে।
যাওনের আগে একখান কতা কইয়া যাই
খুব মন দিয়া শুইন কইল তুমি
আসলেও তোমারে কিন্তু
হৃদয় দিয়া ভালোবাসছিলাম আমি।








বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১২

ভালোবাসার দরজায় কড়াঘাত






কতজন এসে দরজায় কড়া নেড়ে গেছে
তুই আমার জীবনে আসার আগে
আবেগ ঘন চোখে তাকিয়ে ভালোবাসার গুনগুনানি শুনিয়েছে
আমার কানে কানে
আমিও হয়তো দুষ্ট কোন মিষ্টি ছলনায় আলগা করেছিলেম
দরজার একটি পাটি হালকা করে
আগলে ধরে দাঁড়িয়েছিলেম চৌকাঠের ওই দ্বারে
হাজার দুষ্ট ছলনাগুলো যাতে ভেতরে আসতে না পারে।

তুই এলি জীবনে এক সাইক্লোন ঝড় হয়ে
ওলোট পালট করে দিলি জীবনটারে মোরে
খুলে গেল আগল আমার উড়ে গেল দরজা
পারিনি ঠেকাতে আমি বন্য তোর ভালোবাসা
যখন আমায় বেঁধে নিলি ভালোবাসার রাহুগ্রাসে
সেদিন থেকেই তোরই হলাম মনের মাঝে হৃদয় থেকে।

শব্দজটের রক্তস্রাব


জন্মের পর থেকে মায়ের মুখ থেকে কিছু শব্দ শুনেছি, বাবার কাছ থেকে কিছু ডাক শুনে এসেছি, ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠেছি আর চারিদিকের শব্দজটের মাঝ থেকে কিছু অক্ষর নিয়ে শব্দ তৈরি করেছি নিজে নিজে। হযবরল শব্দমালা গাঁথতে শিখেছি, ধীরে ধীরে পুরো বাক্য তাও যেন হযবরল। প্রথম প্রথম একটু আধো আধো বোল, তারপর যেন কথার ফুলঝুরি ছুটতো মুখ দিয়ে। এটা কি ওটা কি, এটা কেন সেটা হয়নি কেন ইত্যাদি কথার যন্ত্রণায় অস্থির বাবা মা, দাদা-দাদু, চাচা ফুপু, খালা মামারা। আমি কথা বলা শিখেছি, আমার মায়ের ভাষায়; আমারই বাংলা ভাষায়।

মায়ের মুখ থেকে ছড়া শুনে শুনে ঘুমুতে যেতাম, মাথার মধ্যে কোথায় যেন গান হয়ে বাজতো সেই শব্দমালাগুলি। সে-সময় ওগুলোকে মনে করতাম ঘুম পাড়ানি গান; আজ এত বছর পরে বুঝি আসলে ছিল তা কবিতামালা, বাংলার বিখ্যাত সব কবিদের এক একটি মহান সব কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকুমার রায় আরো কত শত কবিদের কবিতা শুনে বড় হয়েছি তার সবগুলো আজ ঠিক যেন মনেও নেই। তবু আজো সেই সব হাজার বার শোনা শব্দমালা মনের মাঝে কেমন জট পাকিয়ে আসে, যেন কবিতা হতে চায় – যেন আমাকে দিয়ে কিছু লিখিয়ে নিতে চায়। গদ্য না পদ্য, ছড়া না কবিতা ঠিক বুঝতে পারি না। তবে ছোটবেলা থেকে শিখে আসা বর্ণমালা শিক্ষা থেকে শুরু করে বাংলা ডিকশনারির লাখো শব্দ মাথার ভেতরে ঘুরপাক খায় প্রতিনিয়ত। কি জানি এগুলো কি কবিতা না কথামালা বুঝি না। মায়ের পেট থেকে পড়ে যে ভাষায় কথা বলে এসেছি তা সে ভাষাটা বড্ড সহজ মনে হয় – কথা বলতে, কথা বোঝাতে, চিঠি লিখতে, ভালোবাসার কথা বলতে; তবে কি কবিতা লেখাটাও এত সহজ – ঠিক যেভাবে কথা বলি তার মত করে? কি জানি বুঝি না বাবা অতশত, তবে আটপৌরে সাবলীলতায় লেখা চলে আসে মনের ভেতর। কলমের আঁকিঝুঁকি কেটে যাই খেয়ালী মনের ক্যানভাসে গল্পের ছলে, কোন ব্যাকরণ না মেনে। এ কি কবিতা না গল্প নাকি এর এক নতুন নাম গল্প-কবিতা?

মাঝে মাঝে মনের ভেতর কেমন এক বোধ কাজ করে, হঠাৎ করেই সামনে যখন অন্যরকম কিছু দেখি, মাথার ভেতরে যন্ত্রণার কিছু শব্দজট পাকিয়ে ওঠে। চুল টেনে ধরি নিজে নিজে মাথা ঝাঁকি দিয়ে – শব্দজটের হাত থেকে রেহাই পেতে। তবে কি কবিতা এসে মাথায় ভর করছে? প্রসব বেদনায় কাতর হয়ে কাগজ কলম খুঁজে যাই, এদিক ওদিক হাত বাড়াই; শব্দ জটের মধ্য থেকে একটি পূর্ণ বাক্য বের করে আনতে। প্রসব হয় না কবিতা, বের হয়ে আসে কিছু হাবিজাবি কথা সহজ সাবলীল মায়ের ভাষায়, শব্দে শব্দের ঠোকাঠুকিতে ব্যাকরণ বিহীন কিছু বাক্য কথা।

আকাশে মেঘ দেখলেই মনের মাঝে মনে হয় ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে। কি যেন এক অতৃপ্তি, কি যেন নেই, কাকে যেন মনে পড়ছে – মাথার ভেতর ঝনঝন করে শব্দগুলো ভাসছে। মেঘ নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে, বৃষ্টি নিয়ে, শরতের আকাশ নিয়ে, বৈশাখী ঝড়ো-হাওয়া কিংবা শ্রাবণের বারিধারা সব যেন মাথার মধ্যে একসাথে ঘুরপাক খাচ্ছে। কোন একটি না বলা গল্প যেন একটু একটু করে রূপ নিচ্ছে মনের ভেতর, কাওকে খুঁজছি আশেপাশে বলার জন্য মনের আনচান করা শব্দজটের কথা, গল্পের ছলে, কবিতার ভাষায়। হায় আমি যদি কবিতা লিখতে পারতেম তবে তা হয়তো কিছুই হত না; হত শুধু শব্দজটের রক্তস্রাব, কবিতা রূপের প্রসব বেদনায় কাতর এক দীর্ঘশ্বাস।

রাতের আকাশের দিকে চেয়ে থাকি নির্ঘুম চোখে, অন্ধকার রাতে তারার মেলা বসে পুরোটা আকাশ জুড়ে। জ্যোৎস্না রাতে চারিদিক ভেসে যায় আলোর বন্যায়, ঠিক তখনই তোমার কথা মনে পড়তেই মাথার ভেতর শব্দজটগুলো এলোমেলো পাকিয়ে যায়, কেমন এক নীল বেদনায়। মনের মাঝে হাতড়ে বেড়াই চারিধার, তোমার মুখচ্ছবি দেখব বলে স্মৃতির পাতাগুলো খুলে খুলে পড়ে যাই একে একে। তোমায় খুঁজে না পেয়ে মাথার ভেতর ব্যকরণহীন কিছু বাক্য গড়ে ওঠে, না আছে তার কোন সন্ধি না আছে সমাস না আছে কাল। শুধুই অর্থহীন কিছু ভাবনা তোমাকে মনে পড়ার। তোমাকে না পাওয়ার মনের মাঝের সব পুঞ্জিভূত ক্ষোভ দিয়ে একটি বাক্য রচনা করতে চাইছি, এক কথায় প্রকাশ কিংবা না জানা কোন সমাসের ভাষায় মনের সব শূন্যতা নিয়ে একটি বাক্য আগে গঠিত হোক, তারপর না হয় সাজাব বাক্যের পর বাক্য, গল্পের ভাষায় কবিতা লেখার ছলে। তোমার উপেক্ষার কথা লিখে যাব আকাশে বাতাসে নদী স্রোত জলে।

আমার কবিতা লেখার দরকার নেই, লিখে যাব মনের কথাগুলো গল্পের ছলে এলোমেলো ব্যাকরণে। ঘাস ফড়িঙের ডানায় ভর করে লুকিয়ে থাকুক না হয় সেসব কথামালাগুলো, সবুজ ঘাসের বনে।



যাকাত সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য:


আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

যাকাত শব্দটি আরবি। অর্থ পবিত্রতা বা বৃদ্ধি। শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত হলো আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়তের নির্দেশ মুতাবেক এক নির্দিষ্ট (নিসাব) পরিমাণ সম্পদ ছদকা গ্রহণের উপযোগী কোন মুসলমানের অধিকারে দিয়ে দেয়া। এ স্থলে দাতা গ্রহীতা থেকে বিনিময়স্বরূপ কোন ফায়দা হাসিল করতে পারবে না। কোন সুবিধা হাসিল করলে বা হাসিলের আশা রাখলে তার যাকাত আদায় হবেনা।

যাকাত একটি আল্লাহ্‌র বিধান যা ওনার তরফ থেকে ফরজ হিসাবে আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে, কোন ওজর আপত্তিই কিন্তু এর থেকে আপনাকে পাপ-মুক্ত করতে পারবে না। আপনি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হন, অর্থাৎ আপনার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি যদি যাকাত দেবার জন্য এলিজেবল হন তা হলে দয়া করে যাকাত দিন। নিজে যাকাত দিন আপনার অন্য একজন মুসলমান ভাই যার যাকাত সম্পর্কে ধারনা নেই তাকে অনুপ্রাণিত করুন যাকাত দেবার জন্য।


মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের মধ্যে ঈমান আর আকিদা মজবুত করুন।


এখন আসুন জানি যাকাত সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি।


যাকাত কার উপর ফরয ?

• যাকাত দাতাকে মুসলমান হতে হবে।
• প্রাপ্ত বয়স্ক ও বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হবে।
• নিসাব পরিমাণ মাল অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য বা টাকা তার বৎসরের সকল মৌলিক প্রয়োজনের পর অতিরিক্ত থাকতে হবে। (‘নিসাব’ বলা হয় শরীয়তের নির্ধারিত আর্থিক নিম্নতম সীমা বা পরিমাণকে অর্থাৎ যে পরিমাণ সম্পদ-মাল, অর্থ কোন ব্যক্তির সাংসারিক সকল মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর পর বছর শেষে নির্দিষ্ট তারিখে ওই ব্যক্তি মালিকানায় থাকলে যাকাত প্রদান করতে হয় তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘নিসাব’ বলে। মালের প্রকৃতি ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন মালের নিসাব বিভিন্ন। )
• যদি এককভাবে কোন পণ্য বা দ্রব্যের মূল্য নিসাব পরিমাণ না হয় কিন্তু ব্যক্তির সবগুলো সম্পদের মূল্য মিলিয়ে একত্রে সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য মূল্যের সমান হয় তবে ওই ব্যক্তির নিসাব পূর্ণ হবে। অর্থাৎ যাকাত আদায় করতে হবে।
• সাংসারিক প্রয়োজনে গৃহীত ঋণ কর্তনের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হবে।
• স্বামী-স্ত্রীর সস্পদ একই পরিবারের গণ্য হলেও মালিকানা ভিন্ন-হেতু পৃথকভাবে নিজ নিজ সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে।
• নির্ধারিত যাকাত পরিশোধের পূর্বেই সম্পদের মালিক মারা গেলে যাকাত পরিশোধের পর ওয়ারিশগণ মালিক বলে গণ্য হবে।


যাকাত পাওয়ার হক্বদার কে:

নিম্নলিখিত আট খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা ফরয। পবিত্র কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “যাকাত কেবল ফকির, মিসকিন ও যাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য অর্থাৎ নও মুসলিম, দাস মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য, আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ-কারী এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত বিধান এবং আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা : আয়াত শরীফ- ৬০)
• ফকির : ফকির ওই ব্যক্তি যার নিকট খুবই সামান্য সহায় সম্বল আছে।
• মিসকিন : মিসকিন ওই ব্যক্তি যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আত্মসম্মানের খাতিরে কারো কাছে হাত পাততে পারে না।
• আমিল বা যাকাত আদায় ও বিতরণের কর্মচারী।
• মন জয় করার জন্য নওমুসলিম : অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। অভাবে তাদের সাহায্য করে ইসলামে সুদৃঢ় করা।
• ঋণমুক্তির জন্য : জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গত কারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা যাবে।
• দাসমুক্তি : কৃতদাসের মুক্তির জন্য।
• ফি সাবিলিল্লাহ বা জিহাদ : অর্থাৎ ইসলামকে বোল-বালা বা বিজয়ী করার লক্ষ্যে যারা কাফির বা বিধর্মীদের সাথে জিহাদে রত সে সকল মুজাহিদদের প্রয়োজনে যাকাত দেয়া যাবে।
• মুসাফির : মুসাফির অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্ত হলে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।


কাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না:

• উ-লামায়ে ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য কুফরি মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
• নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
• মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণের মতে কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম-এর অন্তর্গত আব্বাস, জাফর, আঁকিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম গণের বংশধরের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণের মতে বৈধ।
• অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে না।
• যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং আছে সেখানে যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোর্ডিং নেই সেখানে যাকাত দেয়া যাবে না।
• দরিদ্র পিতামাতাকে, সন্তানকে, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না।
• প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোর্ডিঙয়ের জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।
• উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
• বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ চাকর-চাকরানীকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।


স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ বা অলঙ্কারের যাকাত কে দেবে?


স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ একই পরিবারের গণ্য হলেও মালিকানা ভিন্ন তাই পৃথকভাবে যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর যদি অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকে তবে স্ত্রীর হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে যাকাত আদায় করতে হবে। অলঙ্কারের যাকাত স্ত্রীর পক্ষে স্বামী আদায় করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

যাকাতের হিসাব কখন থেকে করতে হবে?


যাকাত বছরান্তে ফরয এবং বছরান্তে যাকাতের হিসাব করা ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের যে কোন একটি তারিখকে যাকাত হিসাবের জন্য নির্ধারিত করতে হবে। বাংলা বা ইংরেজি বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদান শরীফ-এ যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। মহান আল্লাহ পাক রমাদানের রহমতের কারণে এ সময় সত্তর গুণ বেশি পুণ্য দান করেন। যাকাত যোগ্য সকল সম্পদ পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নাই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই যাকাত আদায় করতে হবে।


বিগত বৎসরের ক্বাযা (অনাদায়ী) যাকাত:


যদি কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী ক্বাযা যাকাত আদায় করতে হবে।


এখন আসুন জানি আপনার এ বছরের “যাকাত” কিভাবে ক্যালকুলেটর বা হিসাব করবেন:


যাকাতের হিসাব করার জন্য এখন অনলাইনে অনেক অনলাইন ক্যালকুলেটর চলে এসেছে। আপনি গুগলে গিয়ে যাকাত ক্যালকুলেটর দিয়ে সার্চ দিলেই অনেক গুলি লিঙ্ক পেয়ে যাবেন। তার যে কোন একটিতে গিয়ে আপনি আপনার সম্পদের হিসাবগুলো সঠিক ভাবে বসিয়ে গেলেই সেটি নিজ থেকে আপনার প্রদেয় যাকাত হিসাব করে দেবে।

আমি এখানে আপনাদের সুবিধার জন্য কয়েকটি অনলাইন যাকাত ক্যালকুলেটরের লিঙ্ক দিয়ে দিলাম -

http://www.zakatguide.org/bangla/zakat_calculator.html এই লিঙ্কটি সবচেয়ে বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সহজ লিঙ্ক ছিল, কিন্তু এই লিঙ্কে এত বেশি পরিমাণ হিট পরেছে এই শেষ এক মাসে যে এটির ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি শেষ হয়ে গিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। তবে পরবর্তী বছরের হিসাবের জন্য এটিকে সেভ করে রাখতে পারেন।

www.zakatguide.org


http://www.ahkamuzzakat.com/home.php এই সাইটে গিয়ে আপনি যাকাত গণনা পৃষ্ঠায় গেলে অথবা বাম দিকে একটি আইকন পাবেন যেটায় লেখা সরাসরি যাকাতের পরিমাণ বের করুন যাকাত ক্যালকুলেটর , এখানে ক্লিক করলেও যাকাতের সমস্ত খাতগুলো বাংলায় পেয়ে যাবেন।


যদি অনলাইনে হিসাব করতে সমস্যা হয় তবে অফলাইনে এক্সেল ফাইল ডাউন-লোড করে নিয়ে কম্পিউটারে সেভ করে নেন। আপনার সুবিধা মত সময়ে সমস্ত আর্থিক ডাটাগুলো এক্সেল ফাইলে ইনপুট দেলেই আপনার মোট যাকাত সে অটোমেটিক ক্যালকুলেট করে দেবে।


নিচের লিঙ্কগুলো থেকে আপনি অফলাইনে যাকাত ক্যালকুলেশনের স্প্রেডশিট পেতে পারেন -

https://docs.google.com/spreadsheet/ccc?key=0AvQan3TM-Tv8dGhGOFd1a3ZBM1dUVGtXSmI1c1htVXc


http://www.charityalliance.in/contents/2011/zakat-appeal-2011.htm এই লিঙ্কে গেলে উপরের দিকের কর্নারের দিকে Zakat Calculator বাটনটি দেখতে পাবেন। সেটায় ক্লিক করলেই এক্স এল ফরমেট এ যাকাত ক্যালকুলেটর আপনার কম্পিউটারে সেভ হয়ে যাবে।


অথবা
http://www.charityalliance.in/contents/zakatcalculator.xls এই লিঙ্কে ক্লিক করলেই অফলাইন “যাকাত ক্যালকুলেটর” আপনার কম্পিউটারে সেভ হয়ে যাবে।


নিজে যাকাত দিন, অন্যকেও যাকাত দিতে উৎসাহিত করুন। আল্লাহ্‌ আপনাদের মঙ্গল করুন।


ঈদ মোবারক, আগাম ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে।