সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১২

বৃদ্ধাশ্রম আজ নতুন এক নিবাস



খালি গাঁয়ে মায়ের গর্ভে শুয়ে থাকে শিশু
তার কোন কাপড়ের প্রয়োজন হয় না
মা ওম দেয় পেটের ভেতর থেকে
খাবার আহরণ মায়ের নাড়ির সাথে যুক্ত হয়ে
নিশ্চিত নিরাপদ ঠিকানা
মায়ের গর্ভ।

মায়ের গর্ভে ধীরে ধীরে বড় হয় শিশু
গর্ভ ছেড়ে পৃথিবীর মুখ দেখার চঞ্চলতা
সে যেন প্রকৃতির নিয়মের মধ্যে থেকে
খোদা তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে
মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন জন্ম নেয় পৃথিবীতে
খালি গাঁয়ে, হয়ে অসহায়;
শাড়ির আঁচলে চেপে মা ওম দিয়ে যায়
খিদেয় দুগ্ধ পান করায় পরম মমতায়।

ধীরে ধীরে শিশু বড় হয়
মুখে ভাষা ফোটে ধীরে ধীরে
চিনে নিতে থাকে অচেনা এক পৃথিবীরে।

কোন কোন সৌভাগ্যবান শিশু জন্ম নেয় সোনার চামচ মুখে করে
বাবা তার পাশে বটবৃক্ষের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে
সকল প্রকার ঝড় ঝাঁপটা বুকে করে নিতে
আগলে রাখে আপন শিশুকে।

কিছু শিশু দুর্ভাগা হয়ে জন্মায় বাবা হীন এই পৃথিবীতে
হয়তো তার জন্মের আগেই
কোন এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পিতাকে হারায়
মা হয়ে পড়েন অসহায়, তবু এ যে মায়ের নিজের সন্তান তার
শত গঞ্জনা সয়ে হাতে তুলে নেন শিশুর লালন পালনের ভার
নিজে না খেয়ে খাবার তুলে রাখে আদরের মানিকের জন্য
পরম মমতায় শত কষ্ট সহ্য করে।

এক সময় শিশু বড় হয়
অচেনা পৃথিবীর গণ্ডিতে ধীরে ধীরে পদচারণ ঘটায়
মায়ের আঁচল ছেড়ে বের হয়ে পড়ে
নতুন পৃথিবীকে চিনে নিতে।

সৌভাগ্যবান সন্তানদের সুযোগ মেলে পড়ালেখা করে মানুষ হওয়ার
আর দুর্ভাগারা পরে থাকে অবহেলায় অসহায়
তবু জীবন চলতে থাকে জীবনের মত করে
সুখ দুঃখে ভরা এই পৃথিবীতে।

শিশু সন্তান এক সময় বড় হয়
কৈশোর পার হয়ে যৌবনে পা দেয়
মায়ের আঁচলের তলা থেকে বের হয়ে
খুঁজে নিতে চায় নিজের পৃথিবী।

ভুলে যায় এক এক করে বাবা মায়ের অতীত কষ্টের কথা
শত কষ্ট বঞ্চনা সয়ে তাদের লালন পালনের কথা
এখন তার নিজেরাই হতে চায় বটগাছ
বিবর্ণ ডালপালা-হীন শুকনো কিছু পাতায় পাতায়।

এক সময় অনেক আশায় বুক বেঁধে
বাবা মা সন্তানের বিয়ে দিতে চায়
পরবর্তী প্রজন্মের মুখ দেখবে বলে অনেক আশায়
ততদিনে বাবা মা কর্মক্ষমতা হারায়
যে সন্তানকে বুকে ধরে আগলে রেখে মানুষ করেছে
তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।

আজকের এ যুগটা যে পালটে গেছে বাবা মা তা ভুলে যায়
ঘরে নতুন বৌ আসে, শাশুড়ি বৌ এর নিত্য ঠোকাঠুকি
একজন মাটির কলস তো আরেকজন কাঁসার হাড়ি
দিনে দিনে প্রতিদিন বেড়ে যায় হাড়ি কলসের লড়াই
সন্তানের কানে বিষ
বিষময় সংসার
কাহাতক সওয়া যায়?

কোন এক দিন সময়ের প্রয়োজনে দুটি সংসার আলাদা হয়ে যায়
ছিটকে পরে নাড়ির বন্ধন বৌ এর ভালোবাসায়
হয়তো কোন বাবা মা পড়ে থাকে ঘরের কোনায়
কিংবা নতুন বসবাস কোন আলাদা বাসায়।

আদরের ধন আর মায়ের থাকে না হয়ে যায় বৌ এর একার
যুগের হাওয়া কিংবা নিয়তির পরিহাস
দুর্ভাগিনী স্বামী হারা মা
হয়তো লাথি ঝাঁটা খেয়ে কোন মতে টিকে থাকে
সন্তানের সংসারে মুখ বুজে হার মেনে
অনেক আদর করে সংসারে বৌ এনে;
বাকিদের স্থান হয় কোন এক বৃদ্ধাশ্রমে
অসহায় একা একা
জীবনের এক নির্মম পরিহাস
কখনো কি ভাবে না সন্তান
তার জীবনেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে একই ইতিহাস?






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন