বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১২

দহনে নির্বাসন একা বালুচরে


দহনে নির্বাসন একা বালুচরে

মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হয় তবু মেনে নিতে হয়
জীবন থাকে না থেমে, নিয়তি আমারে এনেছে টেনে এইখানে
চারিদিকে যেন শুষ্ক বালিয়াড়ি আর কাশবন, চোরাকাঁটা কিছু আছে তারি মাঝে জুড়ে
কোথা থেকে কিভাবে যেন টেনে নিয়ে এসেছে আমায় এই বালুনদীর তীরে
শোধ করে যাচ্ছি আজ একা পড়ে পড়ে সমস্ত পূর্ব পাপের সব ঋণ
জনসমুদ্রের ভীর থেকে একাকী জীবন বেছে নিয়েছি আজ
নিয়েছি একাকী নির্বাসন, কাটাই বালুনদী তীরে একাকী রাত আর দিন।

মনের মাঝে আজ আর কোন ক্ষোভ নেই,দুঃখ নেই, কষ্ট নেই
আত্মীয় পরিজন বিহীন আজ এক বৈরি পরিবেশে বসবাস করে যাচ্ছি
নিজের দোষে, যাযাবরের জীবন বেছে নিয়েছিলেম বলে
ঠকিয়ে গিয়েছিলেম তোমাদের সকলেরে
ইচ্ছে ঘুড়ির ডানায় উড়ে প্রতিদিন হত্যা করে গিয়েছিলেম
তোমাদের মনের সকল বাসনাকে,
ছিল যতসব সুন্দর জীবন যত প্রিয়জন, আত্মীয় স্বজন সকলে মিলে আমাকে ঘিরে
শুধু একটু ভালবাসা চেয়েছিল সবাই আর একটু সময় তোমাদের দেবার
ছিল না সেদিন আমার কাছে
সময় আর ভালোবাসাগুলো সব দিয়েছিলেম বিলিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার পাপে;
যদি পাপ-মুক্ত হতে পারি তবে ফিরব আবার তোমাদেরই কাছে,
আবার আমি আগের মতন যদি হতে পারি তবেই, না হায় রয়ে যাব একা পড়ে
এই নির্জন বালুনদী তীরে, একা একা পড়ে রব বালুচরে
শোধ করতে সব পাপের ঋণ, নিজেকে নিজে কষ্ট দিয়ে
দহনের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে।





আমি খুব ভালো করেই জানি আজ দাঁড়াবে না কেও এসে পাশে
বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-কন্যা-পুত্র পরিজন ছিল একদিন আমার চারিদিক জুড়ে
আজকের সুধী সমাজের স্বনামধন্য কিছু বন্ধু বান্ধবও ছিল অনেক বেশি
তোমাদের সকলের মনের ভেতর থেকে আজ অবহেলার তুচ্ছ সাগরে ভেসে গেছি
শুধুমাত্র আমার স্বেচ্ছাচারিতার পাপে।

জন্মটাই ছিল হয়তো শনিতে আমার তাই পাইনি কভু বৃহস্পতির সাক্ষাৎ
মঙ্গল আমায় ছেড়ে চলে গেছে ফেলে রেখে এক অজানা অমঙ্গলের দেশে
ছুঁড়ে ফেলে রেখে গেছে আমায় এই কর্দমাক্ত মড়া বালুনদীর তীরে
যেখানে বসবাস করে কিছু হায়েনার দল, কুকুরে আর নেকড়ে মিলে মারামারি করে
একটুকরো মৃতদেহ ঘিরে সে হোক না কোন পশুর কিংবা ডানা ভাঙ্গা পাখির, হঠাৎ পড়ে
গিয়েছিল এই বিরান বালুচরে।

দিনের বেলায় রোদে পুরে পড়ে থাকি একা মনে মনে পান করে যাই তোমাদের সব কন্ঠসুধা
কুলুকুলু বয়ে যাওয়া নদীজলের ঢেউয়ে, গভীর ভালোবাসায় শুনিয়ে গিয়েছিলে যা আমারে
আর তৃষ্ণা মেটাই পান করে বালুনদীর বালুমাখা পানির ময়লা জলে দিয়ে।
রাতের অন্ধকারে হৃদয় পুড়ে পুড়ে পড়ে থাকি একা মনে মনে ভেবে যাই তোমাদের কথা
চাঁদ আর তারাদের দিকে তাকিয়ে, হৃদয় পুড়ে যায় যখন আমার স্বেচ্ছাচারিতার কথা মনে পড়ে
ক্ষুধা নিবৃত করি হাত দিয়ে মাছ ধরে, পুড়িয়ে খাই হৃদয়ের আগুন জ্বালিয়ে।

মানুষের মাঝে থেকে বুঝিনি আমি মানুষের মায়া,
ভালোবাসা যেন আমার কাছে ছিল এক নিত্য ছলনা
আগে বুঝি নি ভালোবাসা আর সত্যের টান এতো ব্যাপক আর বিশাল
যেন ভরা কাটালের ভাটার টানের মত
এখন বুঝতে পারি মায়ার টান, হৃদয়ের টান, ভালোবাসার টান
তোমাদের থেকে অনেক দূরে চলে এসে বালুচরের দেশে
যখন মরা বা ভরা কাটালের টান পড়ে বালুনদীতে
আমার পায়ের তলদেশ থেকে বালু সরে যায়
সৃষ্টি হয় গহীন কুয়ার মত খাদ,
আমিও যেন ভাটার টানের মাঝে তলিয়ে যেতে থাকি
গহীন খাদের গাঢ় অন্ধকারে।

আজ আমি ঋণ শোধ করে যাচ্ছি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে
একা একা পড়ে থেকে বালুনদীর বালুচরে
মানুষের ভালোবাসা অন্তরে কিভাবে পোড়ায় তা বুঝে নিতে
ঠিক যেমন তোমাদের অবহেলা করে, দুঃখ দিয়ে, কষ্ট দিয়ে
ছলনার মাঝে গড়ে তুলেছিলেম
পাপের পাহাড় সব সম্পর্ককে তুচ্ছ করে
শুধুমাত্র মনের ইচ্ছে মেটাতে এক যাযাবর জীবন বেছে নিয়ে।

স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম আর অত্যাচারে শরীরটাকে প্রায় ধ্বংসের দিকে দিয়েছি ঠেলে
অনেক তো হয়েছে আনাচার, এখন বুঝি হয়েছে সময় বোধোদয় আর শুদ্ধির কাল
তাই আজ আমি মনের আকাশে ডানা মেলে দিয়েছি
নিজেকে শুধরে নিতে আগুনের পাখি হয়ে
অনুতাপের আগুনে অনেক পুড়ে আশা করে যাই
সত্যের আগুন যেন আমায় পুড়িয়ে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে দেয়
ভালোবাসার বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে পোড়া সব ছাই।









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন