রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১২

মধ্য বয়সের নতুন কবিতা ভাবনা:




দ্বিধা দ্বন্দ্বের দোলায় দুলছে মন
দুলছি আমি
দুলছে আমার সময়
বয়সের দোষে
আজ এই মধ্যবয়সে এসে।

আগের দিনের কবিতাগুলো পড়ি নতুন করে বারংবার
মনের মাঝে কি এক ভালো লাগার ভাব জেগে রয় সারা দিন রাত্রি ধরে
যেন কবিতাগুলো আমার মনেরই কথা কয়
সেই সব কবিতাগুলো যেগুলো বাল্যকাল থেকে শুনে এসেছি মা খালাদের মুখে
ঘুম পাড়ানি গানের মত করে বাজত যেগুলো কানে, ঘুম এসে যেত চোখে
সুকুমার, সুকান্ত, জীবনানন্দ, নজরুল, রবিঠাকুর, আহসান হাবীব আরো কত কত
শুধু সবার নাম নিতে গেলে কবিতা না হয়ে হয়ে যাবে মহাকাব্য যত
থাক বাদ দেই সে সব কথা।

একটু বড় হয়েছি, নিজে নিজে পড়তে শিখেছি
যা সামনে পাই গোগ্রাসের মত গিলেছি
গল্প, উপন্যাস, কবিতা যখন যা পেয়েছি
পড়ার ফাঁকে ফাঁকে, মা বাবার চোখ লুকিয়ে
সাহিত্যের যেন এক নতুন রস মনের মাঝে নতুন করে ঢুকে পড়েছিল
একটু একটু করে, প্রতিদিন নতুন নতুন লেখকের লেখা পড়ে।

তারপর আস্তে আস্তে পঠিত সব শব্দমালা মাথার মাঝে কি এক জট পাকিয়ে যেত মাঝে মাঝে
কেমন এক অন্যরকম চাপ দিয়ে যেত যেন শব্দজটের মাঝে
খুব প্রথম প্রথম দু চারটি শব্দ মালা নিয়ে কাঁচা বাক্য তৈরি মনের মাঝে
তারপর সময় বয়ে যায়,
দেখি শব্দের পর নতুন শব্দ এসে যোগ হতে থাকে শব্দ ভাণ্ডারে
মাথার মাঝে;
বাক্য তৈরি করার চেষ্টা করতে হয় না, নিজে থেকেই বের হয়ে আসে,
কবিতা লেখা শুরু।
লেখার আইডল ছিলেন ছেলেবেলার সব বিখ্যাত কবিতাগুলোর লেখক গুরু।

চেষ্টা করতাম তাঁদের মত ভাবতে – দুঃসাহসিক চেষ্টা
চেষ্টা করতাম কিছু লিখতে – সেটাও অনেক দুঃসাহস করে
তারপর একসময় দেখলাম এভাবে হয় না, এভাবে হতে পারে না
আমরা কেও কারো মত নই
তার থেকে শুরু করলাম নিজের ধাঁচের লেখালেখি
প্রকৃতি নিয়ে, জীবন নিয়ে, দুঃখ নিয়ে, পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে।

তারপর জীবনে প্রেম এলো
এবার যেন কবিতার সংজ্ঞাই বদলে গেল
লেখায় চলে আসল প্রেম, প্রেমের গীত গাই প্রেমের কবিতা লিখি
তাকে নিয়ে স্বপ্ন আঁকি কবিতার ছলে।
একসময় ভালোবাসার বিচ্ছেদ
শুরু হল বিচ্ছেদের কবিতা, প্রেমের সাথে মেলানো মেশানো
দিন যায় রাত যায় লেখা থেমে থাকে না
সব প্রেম বিরহের কবিতায় খাতার পর খাতা শেষ করে ফেলেছি
মধ্য বয়সে এসে হঠাৎ একদিন যেন বোধোদয় হল, এ আমি কি করছি?
একি কবিতা লিখছি নাকি কবিতা নামের রক্তস্রাব করছি।

ইন্টারনেটের যুগ এখন
কবিতাকে দিলেম ছুটি
এবার পড়ালেখা কিছু ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে
নতুন নতুন লেখকের কবিতা পড়ছি একে একে
যেন চমকে উঠছি হঠাৎ হঠাৎ তার মধ্যে কিছু কবিতা পড়ে।
এখানে এসে দেখেছি শত শত, হাজারে হাজারে নতুন লেখক, নতুন কবি
লিখে যাচ্ছেন তাঁদের মনের কথামালা
বেশিরভাগই মিলে যাচ্ছে আমার কথার সাথে
তবে কি সকলের প্রেমের ভাষা একই? প্রেমের দুঃখবোধও মনে হয় একই
তার প্রকাশ ভঙ্গিও একইরকম শুধু ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যার যার মতন।
পরিচয় হতে থাকল নতুন নতুন সব লেখকের সাথে
ইন্টারনেটের বদৌলতে
আমি পড়ি তাঁদের সমালোচনা করি
তারাও মাঝে মাঝে আমার লেখা পড়ে সমালোচনা করে
ভালোই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি
নতুন নতুন কবির সাথে পরিচয় হয়ে।

হঠাৎই যেন এক ধাক্কা খেলাম কোন এক ফোরামে
পিনপিনে কাঁদুনি গাঁথা গেঁথে যাচ্ছি বলে
পাটা পুঁতা দিয়ে ধুয়ে বেটে ছারখার করে দিচ্ছে যেন দানব কিছু
কি ব্যাপার?
কমেন্টগুলো পড়ি আর লজ্জায় লাল হয়ে যাই
এগুলো নাকি কবিতা হয় না, এগুলো হয় হিজরাদের কান্না।
সুধাই তাঁদের - তবে কবিতা কি?
উত্তর পাই –
এ যুগের কবিতায় প্রেম বলে কিছু নেই
এ যুগের কবিতায় প্রেমের বিরহ বলে কিছু নেই
সবই শরীর নির্ভর, শুধু মাত্র সেক্স।
যে যত সেক্সি ভাষায় কবিতা লেখতে পারবে সে তত এ যুগের কবি।
লজ্জার মাথা খেয়ে ভাবি, মানেটা কি?
বুঝতে পারি না ঠিক মত আবার সুধাই আমি
সেক্সের বর্ণনা কবিতাতে? সে কি কবিতা হবে নাকি রসময় গুপ্তের লেখা হবে
উত্তর পাই তাতে কি এসে যায়?
এখন প্রেমের নামে চলছে সেক্সের জোয়ার
প্রেম এখন আমার মত কিছু গাধা গরুর জোয়াল টানা পুরনো কালের লাঙ্গল ভার
এখনকার কবিতায় থাকবে রগরগে শারীরিক প্রেমের খুঁটিনাটি সব কথা
নারী শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রতিটা অংশের বর্ণনা যতটা পারা যায় খোলামেলা ভাষায়
থমকে থাকি আমি, শুধাই এখানে ছন্দ লাগে না? ভাব লাগে না?
উত্তর পাই কিচ্ছু লাগে না, ইলেক্ট্রিসিটির তারে জড়িয়ে নাও তোমার গলিত মস্তিষ্কের কোষ
তারপর প্রেম বিরহ সব ভুলে লিখে যাও মনে যা আসে
সেটাই হয়ে যাবে কবিতা।
হায় সেলুকাস
তবে এতদিন আমি কি লিখেছি
সব কবিতা নামের রক্তস্রাব।

কবিতার চারণ ভূমিতে ভালোবাসার বীজ বুনে বুনে
জল ঢেলে গেছি এতকাল কিসের অন্বেষণে
আসলে কবিতার চারণ ভূমি কোনটা জীবন না মন প্রেম না বিরহ
নাকি কষ্ট কষ্ট সুখের মতন করে প্রেমিকার কথা ভাবা
আর কলমের কালিতে তার ছবি একে যাওয়া
কবিতার ভাষায়? স্বপ্নের ডানায় ভর করে জীবনের বিচরণ আকাশের গায়
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে, তুমি আমি দুজনে
দেখাব তোমাকে আরেক জীবন কবিতার কল্পলোকে।
ধুর ছাই এসব প্যানপ্যানে ভাষা ছেড়ে আমিও হতে চাই
আজকের যুগের নতুন কবি
আমি নতুন করে কবিতা লেখতে চাই নোংরা ভাষায়
শরীরের বর্ণনা, সয়ে মনের সব যাতনা
পান করলাম না হয় নীল বিষ আর
পুরনো কবিতার ভাষাকে দিলেম জলাঞ্জলি।

এখন আমি আজকের দিনের নতুন কবিতা লিখছি -
নাহ লিখতে গিয়েও কেমন জানি এক ভয় কাজ করছে
নারী শরীরের বর্ণনা দিতে গিয়ে আমার কাছে কেমন বমি বমি লাগছে
তার থেকে দেখি না পুরুষ শরীরের বর্ণনা দিয়ে কিছু লেখা যায় কি না?

যেমন হতে পারে -

""""""""""""""""""""""""""""""""
জাঙ্গিয়া পড়া ছেড়ে দিয়েছি সেই কত দিন হয়ে গেছে
ইদানীং আর মনেও থাকে না
কেন পড়তাম
কি ছিল তার কার্যকারিতা
কি উপকার
কি বা তার অপকার
আমি আমার মত থাকি
আমার ছোট সাহেব থাকে তার মত
কেও কাওকে এখন আর বিরক্ত করি না
কেও কারো কাজে নাক গলাই না
মাথা ঘামিয়ে মস্তিষ্ক উত্তপ্ত করি না
মনের মাঝে যাতে কোন উত্তেজনা দানা না বাঁধে
তাই এখন আর আমি কোন মেয়ের দিকে তাকাই না
মস্তিষ্কের উত্তেজনায় উনি রেগে যান অনেক,
সাপের মত ফোঁস ফোঁস করে ফণা তুলে উঠেন
আমি অসহায় বোধ করি বড্ড বেশি;
যদি ভুলক্রমে কেও আমার জিপারের দিকে তাকিয়ে থাকে
আফসোস হয় শুধু মাঝে মাঝে তখনই,
জাঙ্গিয়া পড়ি না বলে।

তাই আমি এখন সাধারণত ভাব ধরে বসে থাকি
ভাবুকের মত একদম কামহীন,
নারী বিবর্জিত ভাবনা শুধুমাত্র একটি জাঙ্গিয়ার জন্য,
কিংবা তা না পড়ার জন্য।

যখন আমি বসে থাকি সেও যেন শুয়ে থাকে চুপচাপ
মাঝে মাঝে শুধু এপাশ ওপাশ করে
আমার পাশ ফেরার সাথে সাথে
যখন আমি হেঁটে বেড়াই নীরব পথিকের দৃষ্টিতে
চারিদিক দেখে দেখে
তখন উনি ঝুলতে থাকেন পেন্ডুলামের মত এদিক ওদিক
যেন মস্কোর ঘণ্টা বাজিয়ে যাচ্ছেন
কুঁচকির গাঁয়ে গাঁয়ে বাড়ি দিয়ে
সময় বলেন না কিছুই তিনি আজকাল,
সারাক্ষণ করে থাকেন মুখভার
শুধু পেন্ডুলামের ঘড়িটা পড়ে আছে কালের নিদর্শন হয়ে।
"""""""""""""""""""""""""""""""""

হায় সেলুকাস?
এ আমি কি লিখলাম কবিতার ভাষায়
একি সত্যি কবিতা লিখলাম নাকি হল কবিতা নামের দূষিত রক্তস্রাব।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন