বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১২

যাযাবরের অসহায় অবলোকন

আমার দৈনতা  আমার অহংকার
থাকুক না কিছু দৈনতা  আমাকে ঘিরে আমার মাঝে
ভিখিরির মত পথচলা আর জীবন যাপনে আমার কোন লজ্জা নেই
শতচ্ছিন্ন দু টুকরো কাপড়ে লজ্জা ঢাকি; তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই
দুমুঠো ভাত জুটলে একবেলা খেয়ে কাটাই আরেকবেলা উপোষ দেই
তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না 
আমি এমন জীবন যাপনেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি আজকাল 
যেদিন থেকে বেছে নিয়েছি যাযাবরের জীবন
আর পথে পথে ঘুরে দেখি রংগলীলার খেলা
তথা কথিত সাহেব আর মেম সাহেবদের ইতি বৃত্তান্ত। 

আমার দুঃখ লাগে যখন বুড়ো ভিখারি রাস্তার পাশে পড়ে থাকে অসহায় হয়ে
একটি টাকার জন্য হাত পেতে গাড়ি-ওয়ালা স্যুট টাই পড়া ভদ্রলোকের কাছ থেকে গালি খেয়ে ফেরে
কিংবা ট্রাফিক সিগন্যালে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করে দুটি টাকার জন্য
কালো কাঁচের ওপাশ থেকে মেলে না সাড়া, নামে না কালো কাঁচ ঢাকা গাড়ির আয়না
বিরক্ত মুখে পাশে বসা সুন্দরী বান্ধবীকে নিয়ে মত্ত তারা কিসের নেশায়
অথচ টাকার পাহাড়ে বসে থেকে টাকা ওড়ায় বেশ্যা-পাড়ায় 
কিংবা পাঁচ তারা হোটেলের কামরায় তথা কথিত বান্ধবীর বাহুডোরে সুখে বিভোর 
অথচ দুটি টাকা ভিক্ষে পেলে পথে পড়ে থাকা বুড়ো মানুষটির ভাগ্যে জুটতো 
হয়তো দুমুঠো ভাত আজকের জন্য। 


আমার কষ্টে বুক ফেটে যায় যখন দেখি রাতের আঁধারে কালো গাড়ির কাঁচ নেমে যায়
অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ানো নারী-মাংসের খোঁজে 
লোলুপ দৃষ্টি বাড়িয়ে খুঁজে বেড়ায় কোথায় পাওয়া যায় ভিখিরিনী এক 
কেমন করে তাকে ফুঁসলিয়ে তুলে নেয়া যায় এসি দেয়া কালো কাঁচের গাড়ির ভেতর
তারপর নোংরা শিশ্নের ক্ষুধা নিবারণ, বড়লোক নামধারী স্যুট কোট পড়া মহাজন
অথচ বাড়িতে তার সুন্দরী স্নেহময়ী স্ত্রী অপেক্ষা করছে ভাতের থালা নিয়ে 
কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বসে থাকে বাবার ফেরার পথ চেয়ে, একসাথে খাবে বলে
আর বাবা তার মত্ত, মেয়ের বয়সী রাস্তার এক বেশ্যার বাহুডোরে 
এসি দেয়া গাড়ির ঠাণ্ডা সিটে হেলান দিয়ে শরীরের ক্ষুধা মেটাচ্ছে অবলীলায় অনুতাপহীনতায়
তারপর হয়ত কিছু টাকা ছুড়ে দিচ্ছে মেয়ের বয়সী নারীর পানে 
ভিক্ষে দেবে না কিন্তু উসুল করে মিটিয়ে নেবে দেহের নোংরা ক্ষুধা 
দেনা পাওনার যুগে এর থেকে আর বেশি কি আশা করার আছে। 

আমি দৈন জীবন কাটিয়ে যাচ্ছি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে 
আর অসহায় অবলোকন তথাকথিত উচ্চ সমাজের কীর্তিকলাপ 
জীবনটা ভালোই কেটে যাচ্ছে দেখে দেখে চারিদিকে 
নিচু সমাজের একজন হয়ে, অনেক কাছ থেকে তাদের জীবন যাপন দেখে
আসলে আমরা অনেক অনেক দূরে সরে যাচ্ছি মানবিকতার কাছ থেকে 
প্রাগৈতিহাসিক যৌন অনাচারের দিকে পথভ্রান্ত পথিকের মত এগিয়ে চলেছি যেন 
বিবেক বুদ্ধি মানবিকতা সব বিসর্জন দিয়ে 
আজ যেন মেঘের গা বেয়ে চুইয়ে পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায় কামরস 
বৃষ্টির অনাবিল স্বচ্ছ বারিধারার বদলে
যেন কুকুরের নোংরা কুৎসিত লালারাশি রূপে 
আজ সোনালী রোদের গা বেয়ে ঘাম ঝরে 
যেন আসন্ন কেয়ামতের দিকে ধেয়ে চলেছি আমরা 
পাপাচারের সকল সীমা ছাড়িয়ে; 
আজ কেন জানি ঘৃণা জাগে মনে চারিদিকের এইসব অনাচার দেখে
মনুষ্যত্ব নামক কোন এক অর্বাচীন বোধ গেঁথে আছে 
কেন যেন মনের অনেক গভীরে
হয়তো মানুষ হয়ে জন্মেছিলেম বলে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন