বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯

কষ্ট করে নষ্ট




কষ্ট করে নষ্ট
- যাযাবর জীবন


কষ্ট পাস?
খুব বেশী?
আরে বোকা আমার কথায় কি কষ্ট পেতে আছে?
আমার কথা কি যায় আসে?
আমি তোর কে?

কষ্ট পেতে হয় আপন জনার কথায়
অভিমান করতে হয় আপন জনার সাথে
রাগ, দুঃখ, কান্নার অনুভূতি
পর মানুষে কি বোঝে?
আমি তোর কে রে?
আমি তোর কে?

একদিন,
কোন একদিন
কষ্ট পেতে পেতে যেদিন সম্পর্কটাই নষ্ট হয়ে যাবে
সেদিন ঠিক বুঝবি
কেও ছিলাম কি আমি তোর?
কোনো দিন, কোনো কালে;

আসলে কেও কারো থাকে না
কেও কারো হয় না
শুধু ভালোবাসার টুকরো টুকরো অনুভব মনের ভেতরে
আর কষ্টগুলো নষ্ট হয় রাতের চাদরে,
আমি তোর কে রে?
আমি তোর কে?

খুব ইচ্ছে করছে একটা রাত নষ্ট করতে
কষ্ট করে;

আজ কি পূর্ণিমা?
দেখ! দেখ!
কেমন অদ্ভুতুড়ে একটা নীলচে আলো ছড়িয়ে আছে চারিদিক জুড়ে
আচ্ছা! কষ্টের আলো কি নীল হয়?
চল না আরেকবার চাঁদটাকে দেখি ঘুম নষ্ট করে!
অকারণে হাতে হাত রেখে দুজনে বসে থাকি সারারাত কষ্ট করে;

তুই আমার কেও কি?
আমি তোর কে?
থাক,
কিছু জবাব না হয় ঢেকে থাক রাতের আঁধারে;

দেখিস!
একদিন ঠিক তোর সবগুলো কষ্ট নিয়ে একটা নষ্ট কবিতা লিখব,
আমার নষ্ট খাতায়,নষ্ট মনে;
সেদিন কষ্ট করে পড়ে নিস
জবাব খুঁজতে হলে -
- তুই আমার কে রে?
- আমি তোর কে?









স্মৃতির আজ কাল ও গত




স্মৃতির আজ কাল ও গত
- যাযাবর জীবন


কিছু পুরনো গল্প
স্মৃতির অসুখ
কিছু পুরনো সম্পর্ক
ভাঙা কাঁচ,
আমরা বর্তমান সময়ে ঘুরেফিরে বেড়াই অতীত সঙ্গে নিয়ে;

বর্তমান সংসারে পুরাতন প্রেমের জাবর কাটি
যখনই একলা থাকি
আর মনে মনে তুলনার পাহাড়,
কি রঙিনই না ছিল সেইসব দিনগুলো!
কি চাঁদনিই না ছিল সেইসব রাত্রিগুলোতে!
কি বৃষ্টিই না হতো টিনের চালে!
আহ! কদম, ডালে ডালে;

কেন?
এখন দিনের গায়ে থেকে রঙ কোথায় উড়ে গেছে?
চাঁদ কি কম জ্যোৎস্না বিলাচ্ছে?
টিনের চাল হয়তো নেই আর, বিল্ডিং এ চারিধার ছেয়ে গেছে
তবে বৃষ্টি! সে কি কম হচ্ছে?
না কি গাছে কদম কম ফুটছে?

স্মৃতির জাবরে এখনকার সাথে তখনকার তুলনা
সে নতুন কিছু নয়,
সবাই কিছু না কিছু করে
কিছু না কিছু একলা সময়ে
একা একা, মনের ঘরে;

তবে দেখিস!
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পুরনো প্রেমের স্বপ্ন ভঙ্গ না হলেই কিন্তু
সম্পর্ক কাটবে ভাঙা স্মৃতির কাঁচে
বড্ড ঠুনকো, সম্পর্কগুলো;

প্রত্যেকটা প্রেমই ভুল
যখনই তা হত,
স্মৃতির আয়না থেকে ভুলের দাগ মুছে দিতে হয় ক্রমাগত
আজকের প্রেম, আগামীর গত।





গণ্ডমূর্খ




গণ্ডমূর্খ
-যাযাবর জীবন


পড়ালেখা আমার কখনোই ভালো লাগে না
আমি স্বভাব ফাঁকিবাজ,
সচরাচর লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র ছিলাম আমি
ফাঁকি দেওয়াই ছিল কাজ,
চিরকালের ফাঁকিবাজ;

পড়ালেখা হয় নি আমার
তাই মূর্খ রয়ে গেলাম আজ;

কোন এক শুভ কিংবা অশুভ মুহূর্তে দেখা হয়ে গিয়েছিল তোর সাথে
সেই থেকে মন কবিতা
আর খাতায় আবোলতাবোল প্রেমের ভয়াবহ কাব্য প্রলাপ,
তাও কি হয়েছে আদতে?
যতসব মূর্খের প্রয়াস!

বয়সের সাথে সাথে একদিন প্রেম ভুত মাথা থেকে নেমে যেতেই আমি আবার গণ্ডমূর্খ
মাথা থেকে প্রেম তো নেমে গিয়েছিল, তুই নামিস নি;
মন থেকে লেখা নেমে গিয়েছিল, খাতা থেকে কলম নামে নি;
যখন তখন তোর কথা মনে হলেই এখনো
মাঝে মধ্যে কলমের বদহজমে দাগ পড়ে খাতায়
অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারি নি আঙুলের হাবিজাবি আঁক
শুধু শুধুই কাগজে রক্তদাগ,
মূর্খ হলে যা হয় আর কি!

একবার কোন এক কবিতার গ্রুপে
তোকে নিয়ে আমার এক পাতার এক ফালতু প্রেম আঁক তুলে ধরতেই
শিক্ষিত কবিগণের উপদেশের তুবড়ি -

কিছু নমুনা বলি,
- আরে বাবা! রাবীন্দ্রিক যুগ আছে নাকি? ছোট লিখ;
- এত বড় লেখা কেও পড়ে নাকি? ছোট লিখ;
- বাপু, আজকাল ছোট কবিতা লিখতে হয়;
- আরে মশাই, শুধু ভাবটুকু তুলে আনো তাহলেই কবিতা হয়;

একজন তো আমার পুরো এক পৃষ্ঠা আবোলতাবোল প্রেম আঁক সংশোধন করে এটিকে কবিতা আকার দিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে বললো
- ভাই, আপনার কবিতাটা সংশোধন করে দিলাম, এবার সংশোধিত পুরো কবিতাটা আবার পোষ্ট করেন
ওনার সংশোধিত কবিতাটি ছিল -
"তোমাকে খুব মিস করছি"

আমি জিজ্ঞাসা করলাম
- ভাই এটি কি কবিতার নাম?

সে হেসে জবাব দিলো
- না রে ভাই এটিই পুরো কবিতা;

জবাবে আমি বললাম
- ভাই, মাফও চাই দোয়াও চাই

মাফ চান কেন?
- এই যে কবিতা লিখতে না শিখেই আপনাদের গ্রুপে পোষ্ট দিয়ে ফেলেছি বলে!

তিনি উত্তর দিলেন
- ঠিক আছে, ঠিক আছে ভাই
সবাই তো আর কবিতা লিখতে পারে না!
সবাই আধুনিক কবিতা বোঝেও না,
ব্যাপার না, চালিয়ে যান;

আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তা কি দোয়া চান?

জবাবে আমি বললাম,
- ভাই, আপনাদের থেকেও ভালো কবিতা লিখতে চাই
আপনাদের থেকেও ছোট
এক লাইনের না কিন্তু!
দোয়া করেন যেন মাত্র এক অক্ষরের কবিতা লিখতে পারি;

জিজ্ঞাসা করলেন, সে আবার কেমন?

- এই যে!
যেমন
'ক' তে তো কবিতা হয়ই,
আমি ক এর মাথার উল্টো শুঁড়টা খুলে নিয়ে ব অক্ষর বানিয়ে একটা বিশাল প্রেমের কবিতা লিখতে চাই;

আমায় গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হলো;

আমার আর কবিতা লিখা শেখা হয় নি ...............

মূর্খদের আসলে জীবনে কখনো কিছু হয় না,

আমি সেদিনও মূর্খ ছিলাম
আজো মূর্খই রয়ে গেলাম।








বোকার কান্ড



বোকার কান্ড
- যাযাবর জীবন


একদিন বুকের বাঁ দিকে খচ করে চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হতেই
বুঝে গেলাম কোথায় জানি গণ্ডগোল,
ডাক্তারের কাছে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই সামনে তুই
বুঝে গেলাম ডাক্তারের কিছু করার নেই এ ব্যথায়
কপালে প্রেম ডাকলে বুকে তো পিন ফুটবেই,
আমি অলীক কল্পনায় বারান্দায় হাসনাহেনার ডাল বুনে বিছানায় নতুন চাদর বিছানো শুরু করেছিলাম
তুই বারান্দা থেকে সূর্যের উঁকি দিয়ে অন্ধকারে নেমে যেতেই আবারও পিন ফুটেছিল বুকে,
প্রেম পিন ফোঁটায়
আসতে ও যেতে,
চালাকেরা ডাক্তার দেখায়
বোকারা কবিতা লিখে ব্যথা নিয়ে;

আমি খুব বোকা,
তাই না রে?

মাসে একবার করে আজব এক চাঁদ উঠে আকাশে,
খুব ছোট থেকে বড় হয় অল্প সময়ে
ঠিক ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার অনুভূতির মতন,
অথচ জ্যোৎস্নাটা না তোর
না আমার,
তবুও খুব ইচ্ছে করে একদিন শুকনো চাঁদে তোকে নিয়ে ভিজতে,
জ্যোৎস্নাস্নানে;
আমি সাদা চোখে হলুদ রঙের জ্যোৎস্না দেখি
কবিরা একে নীল জ্যোৎস্না ডাকে
প্রেমের আগমনে
জ্যোৎস্না নেমে যেতে সময় লাগে না
প্রেমের নির্গমনে,
চালাকেরা বাতি জ্বালায়
বোকারা কবিতা লিখে অন্ধকারে;

আমি খুব বোকা,
তাই না রে?




বুঝি তোকে



বুঝি তোকে
- যাযাবর জীবন


সুন্দর তো সবাই দেখে
আমি দেখি তোকে,
সুন্দর সবাই চায়
আমি চাই তোকে;

কপালে পড়ে থাকা তোর এলোমেলো চুল
ঘর্মাক্ত নাক
টোল বিহীন মসৃণ গাল
অনুভূতিহীন চোখ
বাঁকানো ঠোঁট
গলার ওপরের ছোট্ট তিলটা
সব
সবকিছুই আমার চাই;
আর তোর রাগ!
অভিমান!
আর সকল বোকামি আচরণ!
আরে, তোকে না চাওয়ার এগুলো কি হতে পারে কারণ?

আমি তোর গায়ের রঙ দেখি না
দেখি তোকে
আমি সৌন্দর্য বুঝি না
বুঝি তোকে,
তুই সেজে থাকলি না আটপৌরে
তাতে আমার কি যায় আসে?
আমি চাই তোকে
শুধুই তোকে;

বাইরে চেয়ে দেখ! কেমন এলোমেলো রৌদ্দুর
আয় ছাতার তলে গরম মাখি দুজনে;

দেখ, দেখ! ঐ যে অস্তগামী বিষণ্ণ লাল সূর্য
আয় বিষণ্ণতায় ডুবে যাই ঠোঁটে ঠোঁটে;

চেয়ে দেখ! কেমন উথাল পাথাল জ্যোৎস্নার ঢেউ
চল না একবার, জ্যোৎস্নাস্নানে;

ঐ দেখ! ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি নেমেছে
আয় ভিজি দুজনে;

আমি ভালোবাসা বুঝি না রে,
বুঝি তোকে।










আজকালকার প্রেম




আজকালকার প্রেম
- যাযাবর জীবন


চোখের দেখাতেই ভালো লাগা
চোখ থেকে শুরু
কথা বলার জন্য মন আনচান
মুখ ফুটে ভালোবাসা,

তারপর?

স্পর্শ ছাড়া কি ভালোবাসা হয়?
হাতে হাতে প্রেমের যাত্রা শুরু
তারপর ঠোঁটে ঠোঁট
হাত থেকে শরীর
শরীর ভাঙে বিছানায়
প্রেমের সাতকাহন;

কিছুদিন খুব চলে,
চলতেই থাকে
মান
অভিমান
শরীর কচলে শরীর,
কিছু সম্পর্ক পরিণয়ে গড়ায়,
তারপর তো
ডাল
ভাত
আলুর দম
কচলে কচলে নিরামিষ জীবন;

তবে বেশীরভাগ ছাড়াছাড়ি,
কিছুদিন মনখারাপ ওড়ে ছাদে
ভালোবাসা পোড়ে চাঁদে
তারপর শরীর ধুয়ে শুদ্ধ হতে না হতেই
মন আবার নতুন প্রেমের ফাঁদে;

আবার চোখের দেখা নতুন অন্য একজন
চোখের দেখাতেই ভালো লাগা
চোখ থেকে শুরু

...
...
...
...

চক্রাকারে প্রেম ভাঙে বিছানায়
শরীরের সাতকাহন,
আজকালকার প্রেম! বড্ড অন্যরকম;

বিছানার ডাক উপেক্ষা করতে পেরেছে কজন?
ভালোবাসা?
বছরে ডজন।






শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯

কাছে ও দূরে




কাছে ও দূরে
- যাযাবর জীবন


দূরেই ভালো
দূর থেকেই ভালো

কাছের কাছে অনেক আশা
কাছে আসলে অনেক হতাশা

তুই অনেক কাছে থেকেও অনেক দূরে
আমি অনেক দূরে থেকেও তোর ভেতরে

থাক না কিছু আড়াল
বাইরে ও ভেতরে

থাক না কিছু আড়াল
কাছে ও দূরে





ঘৃণার ভেতর ভালোবাসা




ঘৃণার ভেতর ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


একসময় খুব ভালোবাসতাম তোকে,
ভালোবাসতাম কি?
তবে ঘৃণার কথা বলি কেন?
জনে জনে;

আজ মুখের বুলি তোকে ঘৃণা করি,
করি কি?
তবে মন পোড়ে কেন?
ক্ষণে ক্ষণে;

যখনই বৃষ্টি হয়
যখনই জ্যোৎস্না দেয়
যখনই মন একলা
তখনই তোর কথা মনে হয় আর মন কেমন করে,
এরে কি ভালোবাসা কয়?

যখনই চিড়বিড়ে রৌদ্র ওঠে
যখনই প্রচণ্ড গরম ছোটে
যখনই মানুষের সমুদের গা ঘেঁষা অনেক ভীর
তখনই মন তিক্ত তোতে তোতে,
একে কি ঘৃণা বলে?

এই যে এত যে ঘৃণা মনে মনে
- তবুও কিছু দিন তোর খবর না পেলে বড্ড মন কেমন করে
- তোর খারাপ কিছুর আশংকায় সারাক্ষণ মন কেমন করে

কিছু কিছু দিনগুলোতে তো আমি হারিয়ে যাই কোথায় জানি!
- আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিন
- যেদিন তোকে প্রথম ভালোবাসার কথা বলেছিলাম
- যেদিন তোকে প্রথম চুমু খেয়েছিলাম
- তোর জন্মদিন কিংবা আমার জন্মদিনে

খুব, খুব ইচ্ছে করে তোর সাথে কথা বলতে
খুব ইচ্ছে করে তোকে আরেকটা বার ছুঁয়ে দেখতে
খুব ইচ্ছে করে বুকের ভেতর চেপে ধরতে

পর মুহূর্তেই
- ঐ যে বিচ্ছেদের দিনটার কথা মনে হয়!
সব মন কেমন করা বিবমিষায় পরিণত হয়,
তুই ভালোবাসতে বাসতে দিয়ে গিয়েছিস ঘৃণা
অথচ দেখ!
আমার মনের ঘৃণার মেঘেও মাঝে মাঝে ভালোবাসার বৃষ্টি ঝরে
তোর কথা মনে হলে;

আচ্ছা ভালোবাসা কি তবে ঘৃণা?
নাকি ঘৃণার মাঝে লুকানো থাকে ভালোবাসা?
জবাব খুঁজে পাই না;

কিছু কিছু সময় তোর কথা মনে হলেই কেমন যেন মন বিবমিষা
মনের কোথায় জানি মেঘ হয়ে ভেসে বেড়ায় ঘৃণা,
আর বাকিটা সময় মন কেমন করা মায়া
আর তোতে তোতে ভালোবাসা;

মনের মাঝে কি অদ্ভুত এক লাল আর নীলের সংমিশ্রণ
ভালোবাসা আর ঘৃণার,
তবুও মন কিন্তু সারাক্ষণই তোতে, তোতে
ঘৃণা আর ভালোবাসাতে জড়াজড়ি হয়ে।

ঘৃণার ভেতর লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার শক্তিকে অস্বীকার করতে পেরেছে কে, কবে?
আমি তো পারি নি,
তুই পেরেছিস?






অসীম চাহিদার সীমিত উপভোগ



অসীম চাহিদার সীমিত উপভোগ
- যাযাবর জীবন


এই যে আমাদের এত এত আছে!
তবুও চাহিদার কি শেষ আছে?
কি হবে, এত এত দিয়ে?
কে ভাবে?

পৃথিবীতে এসেছিলাম ভুখা পেটে,
ক্ষুধা জানান দিয়েছিলাম চিৎকার করে কেঁদে
এখন পেটে ভাত তো আছে!
এটাই বা কম কিসে?
শোকর করি কি? ওপরওয়ালার কাছে;

যখন এসেছিলাম, উলঙ্গ ছিলাম
কাপড়ের কোনো বালাই ছিলো কি?
না কি বুঝতাম কাপড় কাকে বলে?
এখন গায়ে পরনের কাপড়টা তো আছে!
এটাই বা কম কিসে?
শোকর করি কি? ওপরওয়ালার কাছে;

যখন পৃথিবীতে এসেছিলাম বাসস্থানের চিন্তা ছিলো কি?
না কি বুঝতাম বাসস্থান কাকে বলে?
মায়ের বুক'কে মাথাগোঁজার আশ্রয় বানিয়েছিলাম,
এখন মাথার ওপর একটা ছাঁদ তো আছে!
এটাই বা কম কিসে?
শোকর করি কি? ওপরওয়ালার কাছে;

না
আদতে করি না,
এই যে এত এত আছে!
তবুও মন ভরে না;

চাই
চাই
আরও চাই,
পেটে জায়গা নাই
তবুও টেবিল ভরা খাবার না দেখলে মন ভরে না;
আলমিরাতে জায়গা ধরে না
তবুও কাপড় দেখলেই কিনতে ইচ্ছে করে;
মাথা গোঁজার জন্য একটি বাড়ি হলেই চলে
তবুও একটির পর একটি অট্টালিকার সাধ মনের ভেতরে;

এই যে
এত এত খাবার
এত এত কাপড়
এত এত সম্পত্তি,
কোথায় নিয়ে যাব?
কার তরে?

আচ্ছা!
মৃত্যুর পর কি ক্ষুধা লাগে?
তাহলে ফ্রিজ ভরা এত খাবার কে খাবে?

আমার আলমারি ভরা এত এত রংবেরঙের কাপড়!
কেন আমায় মাত্র তিন টুকরো সাদা কাপড় পড়িয়ে শুইয়ে দিবে?

কেনই বা আমায় শুইয়ে দিতে হবে সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে?
একটু কি জায়গা হবে না আমার, আমারই বানানো এত এত ঐ বিলাসবহুল বাড়িঘরে?

কে জবাব দেবে?

আচ্ছা!
বলতে পার, মৃত্যু কবে হবে?

ইশশ!
কি ভালোই না হতো, যাবার সময়টা আগে থেকে জানা থাকলে!




ফিরে আসা




ফিরে আসা
- যাযাবর জীবন


একটা সময় ছিলো কানের
একটা সময় ছিলো আমার শোনার,
একটা সময় ছিলো ঠোঁটের
একটা সময় ছিলো তোর কথার
একটা সময় ছিলো ফোনের
আমাদের দুজনার;

তোর ঠোঁট আমার কান
গরম হতো ফোন
মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে হ্যাং হয়ে যেত
কখনো মোবাইলের ব্যালেন্স ফুঁড়িয়ে যেত
তোর কথা কি ফুরোতো?

মনে আছে সে দিনগুলোর কথা?
আজকাল কেই বা মনে রাখে পুরনো কথা?

মনে আছে তোর চলে যাওয়া?
বাঁধা দেই নি সেদিন
কেন চলে গিয়েছিলি জিজ্ঞাসা করি নি একবারও,
আমি এমনই,
তবুও কেও কেও চলে যায় কারণ ছাড়াই;
আমার মন খারাপ হয় কি না?
ধ্যাত!
গাছের আবার মন থাকে নাকি?

আজ অনেকদিন পর আবার নতুন করে তুই,
কোন বাঁধা নেই আজও
কেন ফিরে আসলি জিজ্ঞাসা করি নি একবারও
আমি এমনই,
কেও কেও ফিরে আসে কারণ ছাড়াই;
কি বললি? আমি খুশি হয়েছি কি না?
ধ্যাত!
গাছের আবার মন থাকে নাকি?

পাখি আসে
পাখি বসে
পাখি উড়ে চলে যায়,
গাছ দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়।

গাছেরও মন আছে,
গাছ হাসে
গাছ কাঁদে;

গাছের হাসি দেখেছ তোমরা?
কান্না?
গাছ সবুজ হয় হাসতে হাসতে,
পাতা ঝরায় কাঁদতে কাঁদতে;
কেও বোঝে না।





বৃষ্টির রঙ



বৃষ্টির রঙ
- যাযাবর জীবন


দেখ না কেমন বৃষ্টি নেমেছে আজ!
কোথায় তোর জারুল বকুল সাঁজ?

রাস্তায় রাস্তায় লাল কৃষ্ণচূড়া ফুটে আছে
লালের ফাঁকে ফাঁকে হলুদ সোনালু
জারুলগুলো দেখেছিস? বেগুনীর যে কত রঙবাহার হতে পারে!
একদম তোর মনের মতন;

আমি এত রঙের কথা কেন বলছি জানিস?
বাইরে চেয়ে দেখ,
ঝুম বৃষ্টি নেমেছে;
বৃষ্টিতে জ্যোৎস্নার রঙ বসে না
তাই বলে কি চাঁদে রঙ লাগে না?
আমি তুইহীনা মনের রঙ গুলোচ্ছি ফুলের রঙের সাথে
দেখ, দেখ!
অশ্রুর রঙ লাল হয়ে গেছে;

আচ্ছা!
রাতে বৃষ্টির রঙ দেখতে কেমন?

রাতে কি রঙ দেখা যায়?
নিকষ কালো রাতে!
রাতের সাথে লাল মিশালে দেখতে কেমন লাগে?
হলুদ কিংবা বেগুনী?
কোনো রঙ বোঝা যাচ্ছে কি?

অথচ দেখ!
রাতের সাথে চাঁদ মিলতেই কেমন জ্যোৎস্না রঙ!
তুই মিলে থাকিস আমার সাথে ঠিক যখন,

তুইহীনা?
বড্ড অন্ধকার,
দিন কিংবা রাত।





তুলনা




তুলনা
- যাযাবর জীবন


তুলনা করতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার
কি মেলে তুলনা করে?
মানসিক অশান্তি ছাড়া আর;

কোথায় তুলনা নাই?
সংসারে তো হরে দরে;

স্বামীর সাথে
- ওর স্বামীর এটা করেছে ওটা করেছে
তুমি কি কচুটা করেছ?
- তার স্বামী গাড়ী কিনেছে, বাড়ি কিনেছে
আমি পড়ে আছি তোমার ভাঙা সংসারে;

স্ত্রীর সাথে
- ওর বৌ সারাক্ষণ সেজেগুঁজে থাকে
তুমি কেন ঘরে ফকিরনীর সাঁজে?
- দেখ তার বৌ কি বিশাল চাকরি করে
তুমি সারাদিন হাড়ি ঠেলো সংসারে;

সন্তানের সাথে
- ওর ছেলে স্বর্ণ পাশ দিয়েছে
তুই অশ্বডিম্ব,
- ওর মেয়ে ডাক্তার হয়েছে, তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার
তুই কি হয়েছিস?

ভালোবাসার সাথে
- ওর প্রেমিক এটা দিয়েছে ওটা দিয়েছে
তুমি কি দিয়েছ?
- দেখ, ওরা বিয়ে করে নিয়েছে
আমাদের কি হবে?

শারীরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে
- ও এত মোটা আমি কেন চিকন?
- সে এত চিকন আমি কেন মোটা?

অর্থ বিত্তের ক্ষেত্রে
- ওর এত এত আছে! আমার কেন নাই?
খ্যাতির ক্ষেতে
- ও পেরেছে আমি কেন পারি নাই?

আরও কত, কত.......

তুলনা থেকে শুরু
তারপর ঈর্ষা
ক্ষোভ
ক্রোধ
মানসিক অশান্তি
অনেকক্ষেত্রে তো মানুষ সম্পর্কও নষ্ট করে ফেলে
তুলনার বেড়াজালে;

তুলনা করার আগে একবার আয়নার সামনে দাঁড়াই না!
নিজেকে দেখি
নিজেকে যাচি।



























ভালোবাসার হিসেবনিকেশ



ভালোবাসার হিসেবনিকেশ
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসায় কি হিসেবনিকেশ চলে?
অথচ তুই বুঝে নিতে চাস কড়ায়গণ্ডায়;

ভালোবাসায় আমাদের শুধুই চাইই চাই
দেবার বেলায় আমি নাই,
নিজেরটা বুঝে নিতে চাই ষোলো আনা,
অন্যের অধিকার বুঝিয়ে দিয়েছি কি এক আনা?
অথচ শুনেছি 'ভালোবাসা নাকি বিলিয়ে দেয়া'
আরে বাবা,
স্লোকে জীবন চলে না;

যেদিন আমাদের প্রেম হয়েছিল
সেদিনই আমার প্রথম সূর্যোদয়ের সকাল
ভালোই চলছিল সূর্যে সূর্যে দিনগুলো,
যেদিন থেকে অধিকার ফলানো শুরু করলি
সেদিন থেকেই মনে বিকেলের ঢলা সূর্য,
তবুও খারাপ চলছিলো না
নিত্য খুনসুটি আর মাঝে মধ্যে টোকাটুকি
কখনো বিকেলের বিষণ্ণ গোলাপ আর কখনো অস্তগামী চায়ের কাপে সূর্য;
যখনই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেব কষতে শুরু করলি
তখনই সূর্যাস্ত,
তারপর আর কখনো সূর্য দেখিনি আমি;
আরে বাবা, হিসেব কষে কি আর ভালোবাসা হয়?
নাকি ভালোবাসায় হিসেব কষতে হয়?

চোখের ভাষা পড়েছিস কখনো?
ভালো করে চোখ চেয়ে দেখ
ওখানে ষোলো আনাই তোর,
তখনও
এখনো,
অথচ হিসেব কষতে কষতে সূর্য নামিয়ে দিলি রাতের কোলে,
অন্ধকারে হিসাব কষবি কি করে?

হিসেবের খাতা থেকে বের হয়ে দেখ
তবেই না জ্যোৎস্না দেখবি,
চাঁদ ডুবে যাওয়ার পরেই তো সূর্যোদয়
যদি ভালোবাসা থাকে হৃদয়ে;

আয়, আরেকবার চাঁদ ডুবিয়ে দেই
ভালোবাসার সূর্যে;
হিসেব না কষে।





ভালোবাসার খোঁজে





ভালোবাসার খোঁজে
- যাযাবর জীবন


খুঁজিস কাকে?
অস্থির হয়ে;

আমরা অস্থির হই খুঁজে ফিরে
অস্থির হই ভুল সময়ে খুঁজে
অস্থির হই ভুল জায়গায় খুঁজে,
আছে,
কেও না কেও তো আছেই
প্রত্যেকটা মানুষের জন্য কেও না কেও নির্দিষ্ট হয়ে;

হয়তো এখনো দেখা মেলেনি
হয়তো এখনো ভালো করে খোঁজাই হয় নি
তাই হয়তো তাকে খুঁজে পাস নি,
তবে আছে,
কেও তো একজন আছেই,
মাঝে মাঝে কিন্তু খুঁজতে হয় মনের ভাঁজে
ওখানে দেখেছিস ভালো করে উল্টেপাল্টে?

দেখিস!
একদিন নিশ্চয়ই খুঁজে পাবি তাকে;

সেদিন খুব বৃষ্টি হবে সারাদিন
উথাল-পাথাল জ্যোৎস্না হবে সারারাত,
সেদিন তুই ভিজবি
সাথে সে,
বৃষ্টি
জ্যোৎস্না
আর ভালোবাসার কান্না-বিলাসে।




অভাব-বিলাসী



অভাব-বিলাসী
- যাযাবর জীবন


বড্ড অভাবী আমরা
মানসিক ভাবে,
অভাবী আমরা, স্বভাবে;
অভাব আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
কোষে কোষে
অভাবী আমরা, প্রাচূর্যতার মাঝে ডুবে থেকে;

অভাব নেই কার ঘরে?

কারো খাদ্যের অভাব
কারো বস্রের
কারো টাকার অভাব
কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই এর
কারো সুখের অভাব কারো দুঃখের
কারো ভালোবাসার কারো ভালোবাসার মানুষের,
আর কারো কারো তো অঢেল প্রাচূর্যতার মাঝে ডুবে থেকেও অভাব মনুষ্যত্বের;

আমি নিজেকে বলি অভাব-বিলাসী,
মনে রংবেরঙের ইচ্ছে অভাব তৈরি করি
আর অভাবের বিলাসিতায় হাসি;

মানুষের প্রয়োজন কতটুকু?
সাড়ে তিন হাত মাটি।




গাছের ডায়রি




গাছের ডায়রি
- যাযাবর জীবন


কেও কেও শুনেছি ডায়রি লিখে;

আদতে কি ডায়রি লিখে?
নাকি যত্রতত্র অগোছালো মনের কথাগুলোর কাটাকুটি খেলা
খেলে ডায়রির পাতা ভরে;
আর মনের রংবেরঙের অনুভূতিগুলো ধরে রাখে ডায়রি পাতা জুড়ে;

কেও কেও আছে, মানুষের সাথে কথা বলতে বড্ড লাজুক
অথচ প্রতিনিয়ত কথা বলে
ঝগড়া করে
হাসে
কাঁদে,
নিজের সাথে
একা একা,
আর মাঝে মাঝে ডায়রির পাতায় টুকে রাখে
খুব গোপন কিছু কথা,
মাঝে মাঝে যখন খুব আনন্দ হয়
কিংবা খুব কষ্ট হয়,
মাঝে মাঝে যখন কারো কথা খুব মনে পরে
মাঝে মাঝে যখন ভালোবাসার মানুষের জন্য খুব কান্না পায়!
তখন ডায়রির পাতা উলটিয়ে উলটিয়ে
সুখ আর দুঃখের স্মৃতির জাবর কাটে অন্ধকারে
একা একা;

আজ হঠাৎ করে কোথা থেকে জানি একটা ডায়রির টুকরো পাতা
উড়তে উড়তে চলে এসেছে আমার হাতে,
ফেলে দিতে গিয়েও হঠাত চোখ গেলো টুকরো পাতায়;
কোন একটা মেয়ে অথবা ছেলের মনের কথা
অনেক আবেগ আর অনুভূতি মেশানো ভালোবাসাবাসির কথা,
একটি পাতা পড়ে কি আর পুরো গল্প বোঝা যায়?
তবুও কেন জানি চোখ ভিজে উঠলো একটুকরো ডায়রির পাতায়,
আবেগ অনুভূতিশুন্য মানুষ হয়েও কেন জানি মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো
কি জানি কোন হতভাগা অথবা হতভাগিনী ডায়রি লিখেছিল অনেক ভালোবাসায়;

আমি কখনো ডায়রি লিখি নি,
তোমরাই বল!
গাছ কি ডায়রি লিখে?

গাছেরও হয়তো অনুভূতি থাকে
সময় সময় কাঁদে
সময় সময় হাসে
আচ্ছা! গাছও কি কাওকে ভালোবাসে?

গাছের তলে বসে মানুষ ভালোবাসাবাসি করে
হাসে
কাঁদে
আর যাবার সময় তার ছালে লিখে যায় ভালোবাসাবাসির কথা
কাটাকুটি খেলার ছলে;
গাছ পড়ে,
হাসে
কাঁদে,
তার নিজের কথা লিখা হয় না কখনো ডায়রির পাতা ভরে
কাটাকুটি খেলার ছলে।





নারী ও প্রকৃতি



নারী ও প্রকৃতি
- যাযাবর জীবন


আজ রাতটা অন্যরকম;

একটু বৃষ্টি বৃষ্টি
হালকা বাতাস
তবুও গরম,
ঠিক তোর মতন;

আদর করতে করতে হঠাৎ অভিমান
চুমু খেতে খেতে উল্টো হয়ে শোয়া
রাগ করতে করতে জড়িয়ে ধরা
বকতে বকতে ঠোঁটে ঠোঁট,
সব উল্টো কাজ তোকেই মানায়
আর প্রকৃতিকে;

মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে তোর চোখে জল নামে
আর ওদিকে খাঁ খাঁ রৌদ্দুরের মাঝে ধুম করে বৃষ্টি,
তুই আমায় হর হামেশাই লণ্ডভণ্ড করিস
ভালোবাসায়
আর ঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে প্রকৃতি;
আমি তোকেও বুঝি না
বুঝি না প্রকৃতি,
তবুও তোকেই ভালোবাসি রে নারী
আর ভালোবাসি প্রকৃতি,
তোদের সবগুলো রূপে;

মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে
নারীই কি প্রকৃতি?
না প্রকৃতিই নারী?




একাকীত্বে আমি




একাকীত্বে আমি
- যাযাবর জীবন


আমরা সবাই একা;

এসেছি একা
যেতেও হবে একা,
মাঝে একটা জীবন
অনেকগুলো মানুষ
কিছু সম্পর্ক
কিছু হাসি
কিছু কান্না
কিছু ভালোবাসা,
অনেক মানুষের ভীরেও কেও কেও কিন্তু রয়ে যায় একা,
খুব একা;

কারো কারো একাকীত্বের প্রকাশ ডুকরে কেঁদে
কেও চিৎকার করে কাঁদতে পারে
কেও শুধুই গুমরে মরে
কেও একাকীত্ব লুকিয়ে রাখে হাসির ভীরে;

সুখের সঙ্গী হতে পারে সবাই
দুঃখের সঙ্গী হয় আপন জন,
একাকীত্বের কি সঙ্গী জুটে?
উঁহু!
একাকীত্ব শুধুই একা
বড্ড বেশী একা,
একদম আমার মতন;

হাত ধরবি?
ওখানে যে শুধুই একাকীত্ব!
তবুও ধরবি?
আচ্ছা ধর;

হাতে হাত রেখে এক ছায়াপথ হেঁটে
ক্লান্ত হয়ে একলা চাঁদের আলোয় নিচে বসতেই বোধোদয়,
মুঠোর ভেতর মুঠো রাখলেই কি একাকীত্ব দূর হয়?
- তুই সেদিনও ছিলি একা, আজও একা;

- আর আমি?
তোর হাত মুঠোর মধ্যে ধরে রেখেছি কিন্তু,
চোখের দিকে চেয়ে দেখ!
একাকীত্ব পড়তে পারছিস?
আরে বোকা, হাতে হাত রাখলেই কি একাকীত্বের সঙ্গী হয়?
- আমি সেদিনও ছিলাম একা, আজও একা; বড্ড একা।




আরাম আয়েশ




আরাম আয়েশ
- যাযাবর জীবন


আরাম আয়েশের কত কত রকমফের!

আরে বাবা! মানুষই তো আরামপ্রিয়,
আয়েশের কোথায় শেষ?
সবাই তো করে
আমি করলেই দোষ!

থাকার জায়গাটা একটু বড় না হলে জানি কেমন কেমন লাগে,
কি? চার হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট?
ধ্যাত! ফ্ল্যাট বাসা কি আর আজকাল চলে?
আমার পছন্দ বাড়ি
সামনে বিঘা দু এক এর লন
ট্রিপলেক্স বাড়িটা সব মিলে ষোল হাজার স্কয়ার ফিট হবে হয়তো!
আরে না বাবা!
এর পর দেখে নিও
ঠিক একটা প্রাসাদ বানাবো,
মার্বেল দিয়ে;

আচ্ছা!
শুনেছি ঐ ঘরটা নাকি মাটি দিয়ে বানানো?
খুব বেশী ছোট কি?
কি বললে?
মাত্র সাড়ে তিন হাত!
ধ্যাত!

আমার বাড়ির মেঝেটা দেখেছ?
টাইলসে কি আর মন ভরে?
মোজাইকের সময় তো শেষ হয়ে গিয়েছে সেই কবে?
এখন মার্বেলের যুগ
প্রেস্টিজ হলো ইটালিয়ান,
একটু সাবধান
পা হড়কাতে পারে যখন তখন;

আচ্ছা!
ছোট্ট ঐ ঘরটায় মার্বেল বসানো আছে তো?

বাইরে কি অসম্ভব গরম পড়েছে দেখেছ?
আমি বাপু এসি ছাড়া থাকতেই পারি না
ঐ যে দেখ, আমার শোওয়ার ঘরে ৫ টন এসি লাগানো
বরফ বরফ অনুভূতি না হলে কি আর ঘুম আসে?
মাঝে মাঝে তো লেপ গায় দেই শীত শীত অনুভূতিতে;

আচ্ছা!
ছোট্ট সে ঘরটায় এসি আছে তো?

আমি কোথায় শুই জানো?
তোমাদের ঘরে জাজিম
কারো হয় তো বা সাধারণ ম্যাট্রেস,
আমার ম্যাট্রেসটায় একবার শুয়েই দেখ
যেনতেন ম্যাট্রেস না কিন্তু
ওয়াটার ম্যাট্রেস দেখেছ কখনো?
আমার বালিশটায় হাত দিয়ে দেখ! পাখির পালক দিয়ে বানানো;

আচ্ছা!
ছোট্ট ঐ ঘরের বিছানায় ম্যাট্রেস আছে তো?
তুলার বালিশ তো দেবে নিশ্চয়ই;

হে বান্দা,
বড় ঘরে থাকতে চাও?
সত্তর হাত ঘরে;
শান্তির ঘুম ঘুমাতে চাও?
পুনরুত্থান দিনের তরে;

তবে মুমিন হও।










মানুষের খোলসে আমি কে?



মানুষের খোলসে আমি কে?
- যাযাবর জীবন


জনসংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন
মানুষ কোথায়?
বাড়ছে মানুষের মাঝে পশুবৃত্তি
মনুষ্যত্ব হারায়;

জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কি মানুষ বাড়ে?
তবে তো পশু পাখিও বাড়ছে কাতারে কাতারে;
পশুর পেট থেকে বের হলে তাকে পশু বলে
পাখির পেট থেকে বের হলে তাকে পাখি বলে
মাছের পেট থেকে বের হলে তাকে মাছ বলে
অথচ মানুষ পেট থেকে বের হয়েও কেন শুনতে হয়
মানুষ হ:

কে কবে শুনেছ?
পশু তার সন্তানকে বলেছে, পশু হ!
পাখি তার সন্তানকে বলেছে, পাখি হ!
মাছ তার সন্তানকে বলেছে, মাছ হ!
তবে মানুষের সন্তান'কে কেন শুনতে হয়?
মানুষ হ;

তবে কি মানুষের খোলসে আমরা মানুষ নই?
আচ্ছা! মানুষ হয় কিভাবে?

বাল্যকাল থেকে বাবা মায়ের মুখে শুনে এসেছি
খোকা, তুই মানুষ হ,
শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনে এসেছি
বাবা'রা, তোরা মানুষ হ;
অথচ জীবনে কে কবে এই গালিটা শোনে নি?
'অমানুষ'!
জীবনে কত বার'ই না শুনেছি!
মানুষ হবি কবে?
হায়! আমার আজো মানুষ হওয়া হলো না ভবে;

আচ্ছা! মানুষ বলে কারে?
অমানুষ কি মানুষ নয়?
তবে আমি কে?
কিংবা আমি কি?

উত্তর খুঁজছি.....................



বুধবার, ৮ মে, ২০১৯

দাঁত কামড়ানো অহংকার



দাঁত কামড়ানো অহংকার
- যাযাবর জীবন


আমি অহংকার খাই দাঁতে কামড়িয়ে,
ইগো?
সেটাই তো আমার অলংকার
ভুল করি, আমি?
হতে পারে কখনো?
এক্ষুনি সরি বল ব্যটা মাথামোটা,
ইগোর দাঁতে কেটে কেটে কামড়ে যাচ্ছি সব সম্পর্ক
একা হচ্ছি কি?
ধ্যাত! ব্যাংকে দেখেছিস আমার অর্থ?

আরে ব্যাটা আয়নায় তাকিয়ে কথা বলে কে রে?
আমার চোখ তো ঐ আকাশে ছড়ানো
কবে দেখেছিস মাটিতে হেঁটেছি আমি?
জুতো জোড়া গুইসাপের চামড়া মোড়ানো,
আরে মানুষ আবার মাটির হয় নাকি?
আমি রক্তে মাংসে গড়া
চামড়াটা শুধু একটু মোটা
আর অহংকারে মোড়া,
আর ইগো?
সেটাই তো রে আমার অলংকার;
আমি আকাশ খেতে খেতে নীল খেয়ে ফেলি
জ্যোৎস্না খেতে খেতে চাঁদ
ইগোর তারায় আকাশ পোড়াই
অহংকারে ওড়াই রাত;

কোন এক কালো জ্যোৎস্না রাতে
কামড়াতে কামড়াতে চাঁদটাকে অর্ধেক খাওয়া হতেই
যদি বোধোধয় হয়,
বাকি জ্যোৎস্নাটুকু কি আমায় অর্ধচন্দ্র দেবে?
অহংকারে মুড়ে;

আয়না দেখব না আমি সেদিনও,
যদি লজ্জা করে!






টাকায় কি হয়?



টাকায় কি হয়?
- যাযাবর জীবন


কেও কেও বড় বড় কথা কয়,
টাকায় কি হয়?

কদিন অভুক্ত ছিলে হে ভাষণ দাতা?
পানিতে কেঁচে কদিন পড়েছ, ঘামে ভেজা একমাত্র জামা?
রাত কাটিয়েছ কখনো, ছাদ বিহীন আকাশের নীচে?
বড্ড পটু তোমরা ভাষণ দিতে;

আমি কি বলি জানো?
টাকায় কি না হয়!

যে জীবন দেখেছে সে জানে
টাকা বাবা, টাকা মা আর টাকায় ভাই বোন,
টাকা থাকলে স্বামী–স্ত্রী, সংসার আর আত্মীয়-স্বজন
টাকায় সম্পর্ক
টাকায় সবাই আপন;

পকেটে টাকা নেই?
ওদিক তাকিয়ে দেখ
সম্পর্কগুলো খেলছে দাড়িয়াবান্ধা;
কথা বিশ্বাস হচ্ছে৷ না?
একবার দেখই না দেউলিয়া হয়ে!
না হয় মিছেমিছিই হলে, খেলার ছলে
তবুও সম্পর্কগুলো তো যেচে নিলে!




সইব কিভাবে?



সইব কিভাবে?
- যাযাবর জীবন


এখানে আগুনের তাপ বড্ড বেশী
তেতে আছে আজ সূর্য
পানিতেই গরম সইতে কষ্ট হয়
মাটির ভেতর কিভাবে সইব?

এখানে সূর্যের তাপে ফেটে গেছে নীল
ঘোলাটে নীলাভ পুরো আকাশ
পানি ফেটে ফেটে বাষ্প উড়ছে
পানির রঙ ঘোলাটে সবুজাভ

মেঘের পরদা নেই, সূর্য আর পৃথিবীর মাঝে
চামড়া পুড়ছে তাপে
পানিতে থেকেও পুড়ছি আমি
জলীয় বাষ্পের ভাপে

কোটি কোটি মাইল দূর থেকেও সূর্যের এত তাপ!
কবরের তাপ কত হবে?
হাশরের দিন মাথার ওপর সূর্য থাকবে
সেদিন সইব কিভাবে?






ভালোবাসার চিৎকার



ভালোবাসার চিৎকার
- যাযাবর জীবন


আলোর একটা শব্দ থাকে
দ্রিম দ্রিম দ্রিম দ্রিম মাদলের ঢাক,
বুকের ভেতর বাজে;
আলোর একটা শব্দ থাকে
কান ফাটানো নৈঃশব্দ্যের চিৎকার,
মনের ভেতর লাগে;

সূর্যোদয়ের কিংবা সূর্যাস্তের শব্দ শুনেছিস কখনো?
ছেড়া কষ্টের হাহাকার
ভালোবাসার চিৎকার
একটানা বেজেই চলে
আলো কিংবা অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত;

ধ্যাত, তুই কিভাবে শুনবি বল?
ভালো তো বাসিস নি কখনো;
একবার যদি তোকে সূর্যোদয় দেখাতে পারতাম!
অথবা একবার যদি তোকে সূর্যাস্তের গান শোনাতে পারতাম!
তারপর আমি মাদল হতাম কিংবা নিস্তব্ধ;

কষ্ট চাপিয়ে দিলে নাকি কষ্ট কমে যায়,
আমি ভালোবাসা চাপিয়ে শুনতে চাই তোর ভালোবাসার চিৎকার।


ধুসর মাটিতে মাটি হয়ে যাব মিশে




ধুসর মাটিতে মাটি হয়ে যাব মিশে
- যাযাবর জীবন


বড্ড ঝাঁ ঝাঁ রোদ আজ এখানে
আকাশটা কেমন যেন ধোঁয়াটে নীল নীল
সাগরটা সবুজাভ নীল,
এখানে সবুজগুলোও অন্য রকম
কচি নারকেল আর ঘন কেয়া তে মেলানো মেশানো;

অনেকক্ষণ রোদে হাঁটলে কেমন যেন এক নেশা লেগে যায়
রোদের নেশা
বালির নেশা
গরমের নেশা
সাগরের নেশা
ঢেউ এর নেশা,
মাঝে মাঝে বালু দিয়ে হাঁটি
মাঝে মাঝে পাথর
আর মাঝে মাঝে পানি,
মাঝে মাঝে ধুসর বালু মাখি
মাঝে মাঝে সবুজ পাতা
মাঝে মাঝে নীলাভ সবুজ লোনা জল,
শরীরে নানা রঙ মাখানোর চেষ্টা করছি
মনে নানা রঙের অনুভূতি;

এখানে নানা রঙের সমাহার
কোনটাই প্রকট নয়
সবগুলো রঙই কেমন যেন হালকা হালকা
একটার সাথে আরেকটা মেলানো
আমি মেলানো মেশানো রঙের খেলা খেলছি একা একা
মনে প্রকট অনুভূতি নিয়ে
আর সবুজের সাথে নীলের মিশে যাওয়া দেখছি
হতবিহবল হয়ে;

আমি প্রকৃতির নানা রঙ দেখছি দুচোখ মেলে
আর অনুভূতির নানা রঙ দেখছি মন খুলে খুলে;

একদিন আমি আর কোথাও যাব না
একদিন ভাসবো না নীলে
একদিন সবুজও দেখব না
ধুসর মাটিতে মাটি হয়ে যাব মিশে।




লণ্ডভণ্ড ঝড়



লণ্ডভণ্ড ঝড়
- যাযাবর জীবন


সে অনেক অনেক দিন আগেকার কথা,
একদিন খুব হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গিয়েছিল তোর সাথে
প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা
তার থেকে ভালোবাসা
সেই থেকে কবিতা;

একদিন অনেক সাহস করে তোকে ভালোবাসি বলতেই
ফিক করে হেসে দিয়েছিলি তুই
সেই প্রথম আমার মুক্তো দেখা
তারপর থেকে আমি আর কখনো ঝিনুক কুড়োই নি;

একদিন তুই অভিমানে কেঁদে ফেলতেই আমার হীরক দর্শন
আমি দু আঙুলে দুটি হীরকখণ্ড নিয়ে দুটো স্বচ্ছ কাঁচের বোতলে ভরে রেখেছিলাম
আজো বোতল দুটো সযতনে রেখে দিয়েছি আমি;

একদিন তুই খুব রাগ করতেই দুপুর সূর্য ধাঁধিয়ে দিয়েছিলো আমার দুচোখ
সেই থেকে প্রেম দেখা হয় নি আর কখনো;

একদিন তুই অনেক বকা দিয়ে চলে যেতেই
স্তব্ধ বধির হয়েছিলাম আমি
সেই থেকে আর জ্যোৎস্নার ডাক শুনি নি আজো;

এখনো খুব মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে
আমি চলে যাই
পাহাড়ের কাছে
জানিস! পাথরেও হৃদয় আছে
সেও কাঁদে,
কেন, ঝর্ণা দেখিস নি?

মাঝে মাঝে তোর কথা খুব মনে হলে
আমি চলে যাই
সাগরের কাছে
কান্না ধুয়ে নিতে;

বছরে এক দুবার যখন তোর কথায় বুকে ঝড় ওঠে
আমি খুঁজে খুঁজে ছুটে যাই ঝড়ের মাঝে
বুঝে নিতে কে বেশী লণ্ডভণ্ড করে আমায়;

আজ লণ্ডভণ্ড ঝড়ের রাতে
কেন যেন আবার আমি প্রেমে পড়ে গেলাম,
জানিস কার?
নতুন করে আবারও তোর;
হ্যাঁ রে,
ঝড়কে বুঝতে গিয়ে
আবারও তোকেই লণ্ডভণ্ড ভালোবেসে ফেললাম;

এবার যতই লণ্ডভণ্ড করিস না কেন,
আমার কিছুতেই কিছু যায় আসে না;

একটা কবিতা শুনবি?
নাহ্ থাক,
তোর রাত আর লণ্ডভণ্ড করব না;

তুই ঘুমা।




মৃত মানুষ ফিরে আসে না



মৃত মানুষ ফিরে আসে না
- যাযাবর জীবন


একদিন তোকে দেখতেই মন বলে উঠেছিলো - ভালোবাসি,
সেই থেকে শুরু,
তারপর আমি আর নীল ডায়েরি;

সবাই ভালোবাসার কথা বলতে পারে না
আমিও পারি নি কখনো,
শুধু আঙুল টেনে গেছে হিবিজিবি রেখা
কালো কালিতে, নীল ডায়েরিতে;

যখনই তোকে দেখি
কেমন যেন মন উদাস অনুভূতি
ঠিক বোঝাতে পারব না তোকে,
আমি শুধু চেয়ে থাকি
তোর দিকে
আড়চোখে;

ঐ যে একফোঁটা ঘাম জমে আছে তোর নাকের ওপর
ওটা ঘাম নয় রে, মুক্তোদানা
ঐ যে ঠোঁটের ওপর ছোট্ট একটা তিল
ঐ যে গালের ভাঁজে টোল
ক্ষণে ক্ষণে ভ্রুকুটি
ঠোঁটের মাঝে লেগে থাকা আদর
দীঘল কালো চুলের ঢেউ
শরীরের নানা অচেনা বাঁক
আমায় বড্ড হতবিহবল করে,
ইচ্ছে করে তোর খোলা চুলে হারিয়ে যেতে
ইচ্ছে করে ডুবে যেতে ঠোঁটে
ইচ্ছে করে তোকে জড়িয়ে ধরতে বুকে,
ইচ্ছেগুলোকে গলা টিপে ধরে আমি এক জড় জীবন কাটাই
নীল ডায়েরি হাতে
যেখানে তোকে লিখে যাচ্ছি পাতায় পাতায়
ভালোবাসায় ভরে;

ইদানীং প্রায়শই নীল আকাশের নীচে বসে থাকি নীল হয়ে
কোন এক শ্যাওলা দুপুরের অপেক্ষায়
কিংবা কালো মৃত্যুর,
কোন একদিন সবুজ দুপুর না আসলেও জীবনে
কালো দিন তো আসবেই,
ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলা হবে কি?
কে জানে?

কোন একদিন সুযোগ হলে
কোন একদিন আমার কথা মনে হলে
নীল ডায়েরিতে ভালোবাসা পড়ে যাস এসে
সবুজ সবুজ কোন এক শ্যাওলা দুপুরে;

আমায় খুঁজছিস?
নীলের দিকে তাকা,
মৃত মানুষ ফিরে আসে না।




প্রকৃতি শুধুই ভালোবাসে



প্রকৃতি শুধুই ভালোবাসে
- যাযাবর জীবন


প্রেম মানেই নর
প্রেম মানেই নারী;
আচ্ছা! সব প্রেমে কি আর নারী লাগে?
আমার প্রেম ঝড়ের সাথে,
প্রেমে আমি বড্ড আনাড়ি;

কিংবা আমি বোধহয় মানুষ নই
হয়তো মানুষের অবয়বে অন্য কিছু,
নারীর থেকে নদী আমায় বেশী টানে
কান্না থেকে সাগর জল আমায় অনেক বেশী বিচলিত করে
শরীর ও পাহাড়ের মধ্যে বেছে নিতে হলে আমি পাহাড়ের কাছে যাব,
তাই বলে তোকে আমি তুচ্ছ করি নি কখনো, নারী
আমি তোকেও ভালোবাসি রে নারী
শুধু দুটোর মধ্যে বেছে নিতে হলে?
আমি মিছে কথায় বড্ড আনাড়ি;

আমার কাছে প্রেম মানে প্রকৃতি
ভালোবাসা মানে ঝড়
তাই বোধহয় আমি বারবার ঝড়ের কাছে ছুটে আসি;
নারী নিরাশ করে
ছলনা করে
প্রকৃতি শুধুই ভালোবাসে।




ডাক আসার কথা



ডাক আসার কথা
- যাযাবর জীবন


ঝড় আসার কথা ছিলো
আসে নি
রোদ এসেছে
গরম এসেছে,
সাগর ফুঁসে ওঠার কথা ছিলো
ওঠে নি
ঢেউ উঠেছে
বাতাস ছুটেছে;

যাদের আসার কথা
তারা আসে না
আসে অন্য কেও,
যাদের ভালোবাসার কথা
তারা বাসে না
বাসে অন্য কেও,
আমি একেও বুঝি না
ওকেও চিনি না
শুধু বুঝতে পারি ভালোবাসা
বুঝতে পারি ঘৃণা;

অনেক অপেক্ষার প্রহর শেষে এখন অপেক্ষায় আছি মাটির ডাকের,
মাটি ভুল করে না
একদিন ডাক দেবেই দেবে
তারপর আপন করে শুইয়ে রাখবে তার বুকে
খুব আদর করে ঘুম পারিয়ে
চিরঘুমে।




ভালোবাসার অভিনয়ে



ভালোবাসার অভিনয়ে
- যাযাবর জীবন


মানুষই তো অভিনয় করে
জেগে থাকার সকল প্রহরে,
ঘুমিয়ে গেলে?
ঘুম মানেই তো মৃত্যু
সাময়িক কিংবা চিরতরে;

আমি তো অভিনয় করে যাই ক্রমাগত,
ভালো থাকা ও না থাকার
কাছে আসা আর না আসার
দূরে সরা ও না সরার
প্রেমে পড়া ও না পড়ার
ভালোবাসা আর না বাসার;

তুই কি অভিনয় করিস?
আমার সাথে,
আমায় খুশি করার জন্য না বলতে হবে না তোকে;
মানুষ মাত্রই অভিনয় শিল্পী
ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়
বাধ্য হয়ে কিংবা দায়ে পড়ে,
তুই মানুষ হয়েই থাক আমার জীবনে
কিছু সত্য আর কিছু মিথ্যা অভিনয়ে;

শুধু পাকা অভিনেত্রী হয়ে উঠিস না
ভালোবাসার অভিনয়ে,
মনে বিষ নিয়ে।





বিলীন হ ঝড় তুলে



বিলীন হ ঝড় তুলে
- যাযাবর জীবন


আকাশে রোদ
বাতাস আগুন
সাগরে নাকি ঝড়;

আমি সাগর পাড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি
রোদ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে চোখ
বাতাস পুড়ছে গরমে
আমি পুড়ছি তোতে,

এবেলায় না পারলেও আমার পাশে এসে বসিস ওবেলায়
গরম তুলে দেব ঠোঁটে
তারপর ঝড়ে ঝড় তুলব দুজনে;

ভয় করছে?
বড্ড ভীতু তুই
প্রকৃতির ঝড়ে লণ্ডভণ্ড পৃথিবী
ভালোবাসার ঝড়ে তুই
তোর ঝড়ে আমি,
আয়,
ভয় ভুলে শরীরে বিলীন হ একবার
ঝড় তুলে।




পাখির ঠোঁটে আকাশ ঠুকরে



পাখির ঠোঁটে আকাশ ঠুকরে
- যাযাবর জীবন


আমি আকাশ ঠুকরে একা একা
বৃষ্টি হতে পারিস নি তুই মেঘে
তৃষ্ণা মেটে না চাতক জীবনের
বড্ড তাতানো রোদ চারিদিকে,
বৃষ্টির হাহাকারে নীলাকাশ
আমি ঠোঁট ডুবিয়েছি সাগরে
আছড়ে পড়া ঢেউয়েও খুঁজে পাই না তোকে
তৃষ্ণা মেটাবো কি দিয়ে?
একটা চুমু খেয়ে যা
পাখি ঠোঁটে;

কাল সারারাত একটা পাখি ডাকছিলো কোথায় জানি
খুব করুণ স্বরে
হয়তো সঙ্গিনী হারিয়ে গিয়েছে,
আচ্ছা! আমি কত রাত তোকে ডেকে ডেকে গলা ভেঙেছি
বলতে পারিস?
কত ঢেউ আছড়ে পড়লে পাথরে দাগ কাটে?
আমি সাগর হয়েছি তোর জন্য
এবার তো পাথর থেকে বালি হ,
একটা চুমু খেয়ে যা
পাখি ঠোঁটে;

কেও ভালোবাসার ডাক শোনে কেও বধির থাকে ইচ্ছা করে
আমি বারবারই কড়া নেড়ে যাব তোর দরজায়
পাখি হয়ে
ঢেউ হয়ে
আকাশ হয়ে
সাগর হয়ে
দিন হয়ে
রাত হয়ে,
একদিন তোকে দরজা খুলতেই হবে
বিরক্ত হয়ে
রাগ হয়ে
আর না হয় ভালোবাসায় গলে গিয়ে;

আমি অপেক্ষায় আছি
পাখি ঠোঁটে।




অতল জলে, ভালোবাসার খোঁজে



অতল জলে, ভালোবাসার খোঁজে
- যাযাবর জীবন


মুখে মুখে আমায় ভালবাসি বলতে হবে না তোকে
শুধু মাঝে মধ্যে ঠোঁট ছুয়ে যাস ঠোঁটে
আবেগ কতটুকু আছে বুঝে নেবে আমার ঠোঁট
হৃদয় অনুভব করে নেবে ভালোবাসার গভীরতা;

আমি নীল দিয়ে সাগর বোঝাতে চাই
তোর কাছে নীল মানেই আকাশ
তুই ভালোবাসা খুঁজিস বিশালত্বে
আমার ডুব গভীরে, সাগর কিংবা ভালোবাসার;

হিসেব নিকেষে বড্ড পটু তুই
দেনা পাওনার অংক কষিস ভালোবাসায়
আমার সময় যায় তোকে বুঝতে
আর তারা গুনে গুনে ভালোবাসা খুঁজতে;

কোন একদিন তুই হিসেব কষতে থাকবি ভালোবাসার
আমি ডুবে যাব সাগরে
হয়তো উঠবো কিংবা সমাধি
হিসেব কষে নিস সেদিন কতটুকু কি পেলি;

হিসেবে কি আর ভালোবাসা হয়?
কে আমি?
কে তুই?
কিসে ভালোবাসার পরিণয়?

ডুব দিবি?
হিসেব ছাড়া?
তবে আয় ডুবে যা আমার সাথে,
অতল জলে, ভালোবাসার খোঁজে।





ভালোবাসার পরীক্ষা



ভালোবাসার পরীক্ষা
- যাযাবর জীবন


আকাশটা নেমে এসেছে নিচে
একদম মিশে গিয়েছে সাগরে
নিকষ অন্ধকার সবার চোখে সয় না,
আমি অন্ধকারে সাগর দেখি;
অনেকক্ষণ এক দৃষ্টিতে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকলে
সাগর উঠে যায় আকাশে
কিংবা আকাশ গড়িয়ে নেমে যায় সাগরে;

আমি রাতের দিকে তাকিয়ে অন্ধকারের খেলা খেলি একা একা
তুই সারাদিন খুঁজিস আমায় সূর্যের দিকে চেয়ে
আরে বোকা দিনেও তো আকাশ নামে সাগরে
নীলের সাথে নীল মিশে
সূর্যে আমায় কোথায় পাবি বল?
আমার বাস রাত্রিতে;

দেখ দেখ!
কি চমৎকার এক রাত্রি নেমেছে
একদম মিশমিশে নিকষ কালো
চল, লুকোচুরি খেলি মনের সাথে;

একবার পরীক্ষা দিয়েই দেখ না!
কে বেশী ভালোবাসতে পারে।





দুজনে মিলে চিল অথবা কাক



দুজনে মিলে চিল অথবা কাক
- যাযাবর জীবন


আমার এক পাখির জীবন
আকাশটা মন আকাশ,
এখানে আকাশ ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়;

সবুজ আকাশ দেখেছিস কখনো?
তোর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলেই আমার সবুজ আকাশ,
তোর ভাঙা ডানায় ভালোবাসার প্রলেপ দিতে গেলেই তো চোখ কান্না
আর আমার আকাশে সাগর,
তোর চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা মেঘ ঝরতেই আমার আকাশে সাদার ভেলা
আচ্ছা! মনে করে দেখ তো কতবার লাল করেছিস আমার আকাশ তোর অভিমানে!
তবুও একবারও হলুদ হলি না আমার সাথে জ্যোৎস্না স্নানে,
তুই কি জানিস?
তোর মন খারাপে রাত্রি নামে আমার পুরোটা আকাশ জুড়ে?

তুই কোন আকাশের অপেক্ষায় বসে আছিস?
একবার পাখি হ আমার আকাশে
চল একবার উড়ি সোনালী ডানা মেলে, রূপোর আকাশে
তারপর বাকি জীবনটা না হয় ধুসর কাটাবো
ডানায় ডানায় মিলে
পালকে পালক ঘষে
একসাথে মিলেমিশে;

দুজনে মিলে চিল হলাম বা কাক,
কি যায় আসে?




পাড় ভাঙা নারী



পাড় ভাঙা নারী
- যাযাবর জীবন


কোনো এক ঢলা বিকেলে বসে ছিলাম নদী পাড়ে
পাড় ভাঙা নদী
আমি ভাঙা পাড়ে পা ঝুলিয়ে
আমায় পায়ে খেলা করে পানি বয়ে যাচ্ছে কুলকুল
আচ্ছা! নদীর বুকে কি আমি আছি?
ধ্যাত! তা কি করে হয়!
আমি তো ছিলাম নারীর বুকে
ঠিক তাই,
তুই'ই ছিলি সেই নারী;

বুকে ধরে রাখতে ও ফেলে দিতে সময় লাগে কি তোর?
যখন ইচ্ছে খেলবি
যখন ইচ্ছে ভাঙবি
যখন ইচ্ছে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিবি
তবেই না নারী!

আচ্ছা! এই যে ভাঙা পাড়ে বসে আছি
তুই সুড়সুড়ি দিয়ে বয়ে যাচ্ছিস পায়ে পায়ে,
তোর মনে কি কোন অনুভূতি খেলা করে?
পুরনো কোন অনুভব?
ভালোবাসা কিংবা ঘৃণার?

একবার না হয় অনেক ঘৃণা নিয়ে পাড় ভেঙে দে
ডুবিয়ে নে আমায় তোর অতলে,
চিরতরে;

আমি তো সেই কবেই ডুবে আছি তোতে,
ভালোবেসে।