শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৮

গিরগিটি মন



গিরগিটি মন
- যাযাবর জীবন


কত রঙের গিরগিটি!
কত রঙের মন
আমিও খোলস বদলাই
যখন তখন

নানা রঙের মানুষ
ভিন্ন ভিন্ন সংসার ধরন
মুহূর্তে বিচ্ছেদ
তুচ্ছ কোন কারণ

কতরকম সাপ দেখি
সময়ে খোলস বদল
আমার দাঁতেই যত বিষ
কথার কামড়ে প্রবল

স্বার্থে স্মরণ করা
আর মুহূর্তে ভুলে যাওয়া
আমার চরিত্রই যে এমন
পকেট ভারী করা

কত মনের রঙ দেখি
প্রেমের কত যে ঢং
আমিই গিরগিটি
বদলাই ক্ষণে ক্ষণ

কতরকম ভালোবাসা!
শরীর নির্ভর
শরীরে শরীর না মিললে
ভাঙে কত ঘর

কত রঙের মানুষ দেখে
কাটিয়ে দেই দিন
গিরগিটি শুধু আমিই রে
রঙে রঙে রঙিন।




হিপোক্রেটের ঘর



হিপোক্রেটের ঘর
- যাযাবর জীবন


হঠাৎ দেখা, কোথাও কোথাও
ভালো লাগা, কারণ ছাড়াই
ভালোবাসা, খুব সহসাই
কাছে আসা, প্রায় প্রায়শই
মনের মাঝে, প্রেম প্রেম
শরীর শরীর, প্রেমের ভাষা;

আনন্দ, বেদনা, রাগ, দুঃখ
হাসি, কান্না, মান, অভিমান
সবই মানব অনুভূতি;
তারপর?

তোর স্বামী আছে
আমার স্ত্রী
অথচ আমরা ভালোবাসায় মাতি
যখন সামনে থাকি,
আর বাকিটা সময় সংসার জীবন
দুজনারই সংসারে মন
পরিবার, পরিজন সন্তান সন্ততি
ঘিরে থাকে সর্বক্ষণ;

ওরে ও নারী, যখন ইচ্ছা স্বামী
যখন ইচ্ছা প্রেমী
হায় পুরুষ! ঘরে সুন্দরী বৌ
প্রেমিকা অগুনতি
হিপোক্রেসির কি চরম উদাহরণ!

কি ভয়ানক হিপোক্রেসিতেই না বাস আমাদের
পরকীয়া ভাইরাস কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমাদের
খুঁড়ে খুঁড়ে নড়বরে করে দিচ্ছে সংসার,
জানি আমরা সব জানি
বুঝি আমরা সবই বুঝি
তবুও ভাইরাস মনে ঢুকাই আমরা নিজেরাই
জেনে কিংবা অজান্তে
বুঝে ও না বুঝে
ইচ্ছে বা অনিচ্ছাতে
সহসা ও প্রায়শই
কারণে আর অকারণে;
অশান্তি দিকে দিকে, পরকীয়া ঘিরে
ভাঙন চারিদিকে, হিপোক্রেটের ঘরে;

মানুষ মাত্রেই ভুল
ইচ্ছে কিংবা অনিচ্ছেতে
শুধরে নাও হে প্রেমী
শুধরে নাও প্রেমিকা
সময় থাকতে,
তুমি, আমি, সে আর আমরা আমরা সবাই মিলে;

আজ হয়তো একটুখানি কষ্ট হবে
তবুও বোধে আসো হে বোদ্ধা;
ভাঙন রোধ হবে।







পাথরের আয়না দর্শন



পাথরের আয়না দর্শন
- যাযাবর জীবন


আয়নায় দেখেছিস নিজেকে?
তোর হাসি
তোর কান্না
তোর রাগ
তোর অভিমান
তোর ঠোঁট বাঁকানো
কিছুই দেখিস নি?
চোখ নেই নাকি তোর?
নাকি ঘরে আয়না নেই?

পাথর ভাঙলে শুধুই পাথর
ভাগ্যিস পাথরের হৃদয় থাকে না;
না হলে কবেই আমি তোতে বিলীন হয়ে যেতাম!
তোকে দেখে,
ভালোবেসে আর ভালোবেসে।


বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮

ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টিনূপুর



ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টিনূপুর
- যাযাবর জীবন


আজ রোদের ব্যালকনিতে মেঘের ছায়া
টিনের চালে ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টিনূপুর
মনের চালে তুই

কালকেও রোদে ভিজেছি দুজন
ভিজেছি প্রেমে
আর প্রজাপতির ওড়া-উড়ি দুজনকে ঘিরে
আজ তুই মেঘের ওপারে
বৃষ্টি কাঁদছে
ডানা ভাঙা জলফরিং বুকের চাতালে

যেদিন খুব বেশী রোদ ওঠে
যেদিন ঘামে চপচপ
যেদিন গরমে ভাপ ওঠে
আমি তোর কথা ভাবি
ঠাণ্ডায় ছেয়ে যায় ভেতর

যেদিন খুব বেশী শীত পড়ে
যেদিন ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে থাকি
যেদিন লেপ মানে না শীত
আমি তোর কথা ভাবি
গরম অনুভব বুকের ভেতর

যেদিন ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি নামে
যেদিন মাঠ ঘাট রাস্তা জলে থৈ থৈ
যেদিন বৃষ্টি আর থামতেই চায় না
আমি তোর কথা ভাবি
যেন ভিজছি দুজন বৃষ্টি-বিলাসে

আজ সকাল থেকেই আকাশে মেঘ
আজ খুব বৃষ্টি ঝরছে রে
আয় নাচি বৃষ্টিনূপুরের ছন্দে ছন্দে
প্রজাপতি ডানা মেলে,
আয় ভিজি সেই সেদিনের মত
হাতে হাত রেখে
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টিতে।






বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

ভার্চুয়াল প্রেম উপাখ্যান




ভার্চুয়াল প্রেম উপাখ্যান
- যাযাবর জীবন


ভার্চুয়ালে পরিচয়
ভার্চুয়ালে দেখা
ভার্চুয়ালে ভালো লাগা
ভার্চুয়ালে প্রণয়,
হাজার হাজার মাইল দূরে দুজন
তবুও প্রেমানুভূতিতে খুব কাছে
সময়ের ব্যবধান? তাও তো আছে,
তবুও কি এক অদৃশ্য টানে
অপেক্ষায় থাকে দুজনে;

একটা সময় ছিল চিঠি-যুগ
প্রণয় হতো তখনো
কাছাকাছি! প্রায় অসম্ভব
হলেও বছরে দুবছরে এক অধবার
তারপর ডাকবাক্স ও অপেক্ষা
দুজন দুজনার;
সে সময় মাঝে মাঝে দূর থেকে চোখের দেখা
কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়তো জীবনে এক অধবার
কোন পালা পর্বণে
শারীরিক স্পর্শ? সে শুধুই কল্পনায়;

আজকাল আর চিঠির যুগ কোথায়?
কোথায় অনুভূতির প্রকাশ পত্র লেখায়?
এখন সব নগদ নগদে
নগদে দেখা, নগদে প্রেম
নগদে অভিমান, নগদে বিচ্ছেদ
মাউসের একটা ক্লিকে, ভার্চুয়ালে;

আজকালকার প্রেমের ধরণও বদলে গেছে
আজকাল তো ভালো লাগতে না লাগতেই ঠোঁটে ঠোঁট
হোক সে সামনাসামনি কিংবা ভার্চুয়ালে
শরীরে শরীর মিলতে সময় আর লাগে কোথায়?
সামনে থাকলে নগদে
ভার্চুয়ালে ক্যামেরার সামনে
প্রেমে আকুল
শরীর ব্যাকুল
কাপড় খোলে দুজনা
উত্তেজনায় ভিডিওক্যাম আর মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ স্ক্রিন
কাম-স্খলন কার?
খুব ইচ্ছা হয় জানার;

হয়তো কোন একটা সময় আসবে
নিকট ভবিষ্যতে,
নতুন কোন আবিষ্কার
কোন এক ধরণের ভার্চুয়াল ষ্টিমুলেশন
সরাসরি মাথার নিওরণ কোষে,
অনুভূতিগুলো তীব্র হতে হতে
সত্যিকারের অনুভূতির খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাবে
কিংবা কে জানে! হয়তো দুটি অনুভূতির মাঝে কোন পার্থক্যই থাকবে না;
একজন গোলকের পূর্ব পাশে আরেকজন পশ্চিম পাশে
একজন উত্তর মেরুতে একজন দক্ষিণ মেরুতে
দুজনার প্রেম কাহিনীর সূচনা থেকে পরিণয় ভার্চুয়ালে,
প্রেম হবে
ভালোবাসা হবে
চুমু হবে
শরীর হবে
কাম-স্খলন
সংসার জীবন
সবই ভার্চুয়ালে;
ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল
আর নয়তো আবিষ্কৃত নতুন কোন ডিভাইসের দুপাশে দুজনে,
মাথায় অনুভূতির ষ্টিমুলেশন
আর ভার্চুয়ালে সংসার জীবন;

খুব একটা কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষায় আছি!
নতুন শিশুর আগমন হবে কিভাবে?
ভার্চুয়ালে।






মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮

কফি চুমু




কফি চুমু
- যাযাবর জীবন


ঝুম ঝুম বৃষ্টি
কীবোর্ডে ভালোবাসা লিখছি
কফির কাপে চুমুক;

আহ! কফির কাপ না হয়ে তুই হলে কি ভালোই না হতো
চুমুতে চুমুতে ভালোবাসা
আর বৃষ্টি বিলাস
তুই থাকলে কবিতার দরকার কোথায়?
চুমুর বদলে কফির কাপ! বড্ড বাতুলতা
কীবোর্ডটা ঝিমাতো
ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ঘুমিয়ে যেত;
বৃষ্টি ভেজা আলসে রাতে
তুই আর আমি ঠোঁটে ঠোঁটে
ভালোবাসায় কবিতার দরকার কি রে?

এক এক সময় মনে হয়
মন
দেহ
কাম
ভালোবাসারই নাম;

ধ্যাত!
তাই আবার হয় কি?
শরীর কি সৌন্দর্য?
কই? অন্ধকারে তোকে দেখি না তো!
তবুও ঐ যে স্পর্শানুভব!
আর ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা, ভালো লাগা
সে তো শরীর নয়
নয় বাহ্যিক সৌন্দর্য,
তবু কেন মন কাঁদে একটু স্পর্শের জন্য;

আরে কাম তো পশু আর পশুতে
দেহের লুটোপুটি দেহতে;
আচ্ছা! পশুর মনে কি ভালোবাসা আছে?
মিলনের সুখ সুখ কষ্ট বোঝে ওরা,
বিচ্ছেদের কষ্ট কষ্ট কান্নায় চোখ ভিজে ওদের?
তবে তো আমিও ওদেরই গোত্রের;
তোর বিচ্ছেদে কাঁদছে বৃষ্টি
কফির কাপে আমি
কীবোর্ডে হাত
আর সব হিবিজিবি;

তুই থাকলে কফি চুমু
নয়তো কবিতার প্রয়াস।







তুই আর আমি, প্রতিদিন




তুই আর আমি, প্রতিদিন
- যাযাবর জীবন


আমি প্রতিদিন তোর খোঁজ করি
প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও তোর ওয়ালে উঁকি মারি
তুই কেমন আছিস বুঝতে চেষ্টা করি
যখন বুঝি তোর মন খারাপ
মনআদর দেই দূর থেকে
মন ভালো থাকলে একটু খুনসুটি;
আচ্ছা! আমি কি তোকে ভালোবাসি?

আজ সকাল থেকেই আকাশ ঝরছে
কখনো বৃষ্টি ঝুমঝুমান্তি
কখনো টিপটিপান্তি
একদম তোর ভালোবাসার মত
কখনো দস্যু কখনো চুমু
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে তোকে;

চুমু মানেই ঠোট চুমু হতেই হবে কে বলেছে?
চা চুমুতেই আমার বেশ চলে যায়
তুই সামনে থাকলে,
একটু চোখের দেখা
একটু হাতে হাত
একটু আদর স্পর্শ
চোখে চোখে তাকিয়ে থাকা
আর মাঝে মাঝে টুপ করে তোর চোখ থেকে বৃষ্টি ঝরা
তারপর চলে যাবার সময় মন খারাপ
বড্ড বেশী ভালোবাসিস বুঝি আমায়?

এভাবেই বেশ চলে যাচ্ছে দিনের পর দিন
মনে মনে তুই আর আমি, প্রতিদিন;
ভার্চুয়ালে কিংবা সত্যিকার জীবনে
মিলেমিশে দুজনে!


মনে মনে মন



মনে মনে মন
- যাযাবর জীবন


মন থাকলেই মলিন হয় মন
হৃদয় থাকলে ব্যাথানুভুতি
বাকি সবই নানা রঙের অনুভূতি;
সুখ দুঃখ, রাগ অনুরাগ
আনন্দ বেদনা, হাসি কান্না
মান অভিমান
সবই মনের কথা আর কষ্ট কষ্ট অনুভূতি;

হৃদয় এর বাস বুকে
মনের বাস কোথায়?
মাথায় খুঁজলাম মন ওখানে তো মগজ
আর চিনচিনে ব্যথা
বুকে খুঁজলাম
ওখানে হৃদয়
আর কষ্ট কষ্ট ব্যথা;

মাঝে মাঝে খুব বেশী মন খারাপ হয়
যখন আকাশে মেঘ করে
যখন ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়ে
যখন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া দেয়
যখন জ্যোৎস্না খেলে
তখনই, ঠিক তখনই মন কেমন করে;
আর তোর কথা মনে পড়ে যখন
মনের উথালপাথাল বড্ড বেশী রকম
তুই কেন রে ভালোবাসা?
তুই কেন মন?

মনের বাস শরীরের কোথায়
খুব জানতে ইচ্ছে করে;

একবার মনটাকে হাতে পেলে
ঠিক কবর দিয়ে দিতাম, তোর মনের ভেতরে;
তখন নিশ্চয়ই বুঝবি, কান্না কাকে বলে।


সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮

ঘুমের দেশে



ঘুমের দেশে
- যাযাবর জীবন


আজকাল কি যে হয়েছে!
চোখ আর মনের নয়
ইচ্ছের নয় ঘুম
ইদানীং চোখ বন্ধ যখন তখন
ঘুম, অনেক অনেকক্ষণ;

স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি স্বপ্নহীন ঘুমই কি মৃত্যু?

মাঝে মাঝে খুব ভাবি
যখন অনেক অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে পড়ি
যখন চোখ মেলি ধরফরিয়ে উঠে পড়ি
প্রথমেই চোখ যায় ঘড়ির কাঁটায়
চোখ'কে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না,
চৌদ্দ ঘন্টা, ষোল ঘন্টা মানুষ কিভাবে ঘুমায়?
স্বপ্নহীন কালো ঘুম
মৃত্যুর খুব কাছাকাছি ঘুম;

দিন দিন ঘুমের সময় বাড়ছে তো বাড়ছেই আমার
কমে যাচ্ছে পৃথিবী দেখার সময়
ছয় ঘন্টা থেকে শুরু করে আজ ষোলো ঘন্টায় পৌঁছেছে ঘুম
তবে কি আমি মৃত্যুর দ্বারে চলে এসেছি?

কোন এক দিন স্বপ্নহীন এক শেষ ঘুম ঘুমোব
যোল, আঠারো, চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়ে যাবে
তোরা চিৎকার করে ডাকবি ঘুম ভাঙাতে
আমি তখন চলে গিয়েছি অন্য দেশে,
তোরা কাঁদবি বুক চাপড়ে
তারপর শুইয়ে দিবি মাটির খাটে,
আমি তখনো ঘুমে
গভীর কালো ঘুমে
স্বপ্নহীন অন্যদেশে;

আচ্ছা ও দেশে কি ঘুম ভাঙে?
স্বপ্ন বসে চোখে?
ওখানে কি দিন আছে?
রাত আছে?
ওখানে কি জ্যোৎস্না দেখা যায়?
ওখানে কি চাঁদনি হাসে?
ওখানে তোকে দেখতে পাব ইচ্ছে হলে?

কত কত প্রশ্ন যে মনে আসে!
উত্তর খুঁজি ঘুমের মাঝে
স্বপ্নহীন কালো কালো ঘুম;
কাঁদিস না কিন্তু, একেবারে ঘুমিয়ে গেলে।







নদী নারী ও মাটি



নদী নারী ও মাটি
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসি নদী
ভালোবাসি নারী
তারা কেও আপন নয়
আপন শুধু মাটি;

ভালোবাসা! সে তো কচুরিপানা;
সময়ের সাথে সাথে স্রোতে ভাসে
নারী হাসে,
তারচেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়া ভালো
নারীতে নয়,
নারীর ছলাকলা
আমার বোধগম্য নয়;

ধ্যাত! নদীকেই বা ভালোবেসে কি হবে?
সে তো বয়ে চলে স্রোতের সাথে সাথে
কত কত প্রেমিক দুকুলে কাঁদে
নদী কুলকুল হাসে
খুব করুণা হলে পাড় ঝাঁপিয়ে প্রেমিকের পা ভেজায়
তারপর আবার তার পথে বয়ে যায়
স্রোতের সাথে সাথে,
নারী কি নদী নয়?

নারী কাছে আসে
কাছে টানে
পাশে বসে ভালোবাসার কথা কয়
তারপর হাসতে হাসতে বিদায়;

নদী পা ভেজায়
নারী চোখ
নদী ও নারী ভালোবাসার কথা কয়
প্রেমিকের ডুব সাঁতার
নদী কিংবা নারীতে,
কেও সাঁতরে তীরে ওঠে কেও টুপ করে ডুবে যায় অতলে
নদী ও নারী বয়ে যায় তার পথে
কে ডুবলো কে ভাসলো তাতে তাঁদের কি আসে যায়?

জানিস!
মাঝে মাঝে তোর কথা আমার খুব মনে হয়
ভালোবাসা কি ভোলা যায়?

যখন তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে
যখন তোকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে
আমি নদী দেখি,
আর মনে মনে ভাবি
ইশশ! এখন যদি তুই কাছে থাকতি!
আচ্ছা শোন! আমাকে ভালোবাসতে হবে না তোর
ভালোবাসার কথা বলতেও হবে না
ছলনার কথা আর কত শুনব বল?
তার চেয়ে মনে মনে হাতে হাত ধরে চুপ করে বসে থাকি চল;

যতক্ষণ কাছে থাকিস আমার জড়িয়ে ধরতে হবে না
কথা দিচ্ছি আমি তোকে একবারও ভালোবাসার কথা বলব না
খুব ইচ্ছে করলেও চুমু খাব না
শুধু তোর পাশে বসে থাকব
আর মন ভরে দেখব
তবুও একবার কাছে আসিস
মাত্র একবার
শেষ বেলায়;

তারপর তো তুই নদী
যথাযথ যথারীতি
সেই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত;

জানিস!
মাটি কখনো আলাদা করে নি আমায়, তার থেকে
সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত আমার কাছে মাটি আছে
ভালোবেসে;
তোকে আর কোথায় পাব বল!
শেষ বেলায়ও মাটি হব
যাব মাটির দেশে।









শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮

চোরাগলি



চোরাগলি
- যাযাবর জীবন


একটা মেয়ে
বড্ড বোকা
গলি পথে হেঁটে গিয়েছে একা
হেঁটে গিয়েছে আলোর দিকে
ভালোবাসা সামনে আছে ভেবে;

আমিও হেঁটে গিয়েছিলাম ঐ গলিপথে একা
সামনে আলো ভেবে;
তারপর কি হয়েছিল জানিস?
গলির শেষ মাথায় থমকে গিয়েছিলাম
ওটা ছিল চোরাগলি
তারপর দেয়াল
শক্ত ইটের
সামনে যাওয়ার পথ নাই
পেছনে অন্ধকার;

ওরে ও মেয়ে!
গলিপথে এগিয়ে যেতে নেই
ওখানে প্রেম নেই
ওখানে শুধুই ভালোবাসার হাতছানি
আর স্বপ্নের চোরাবালি
তারপর নীল
গাঢ় ঘন নীল;

আমি পেছন ফিরে অন্ধকার দেখেছিলাম
আর স্বপ্নহীন চোখ রাত
মন শুধুই নীল হয়েছিল বেদনাতে
ভালোবাসার মানুষ?
দেয়ালের ওপাশে
ধরা ছোঁয়ার অনেক বাইরে;

এ দেয়াল ইটের দেয়াল নয় রে
এ দেয়াল মনের দেয়াল
সম্পর্কের দেয়াল
অনুভূতির দেয়াল;
দেয়ালের ওপাশে প্রেমের হাতছানি
এপাশে রাত;

ভালোবাসার সার্থকতা নীলে
কারো জীবন আকাশ নীল
কারো সাগর নীল,
তুই নীলচাষ করে গেছিস আমার বুকের চাতালে
তারপর হারিয়ে গেছিস নীলে?

আচ্ছা! গলিপথের শেষে কিছু পেয়েছিস রে?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।






টুকরো টুকরো আমি



টুকরো টুকরো আমি
- যাযাবর জীবন


যখন মেঘের মন খারাপ তখন আকাশ কালো
আর বৃষ্টি
ভিজি আমি;

যখনই চাঁদের মন খারাপ তখনই অমাবস্যা
আর রাত
আমি অন্ধকার;

যখন আমার মন খারাপ তখন আমি হাসি
যখন খুব বেশি মন খারাপ হয় তখন তোর কথা মনে করি
যখন চোখ বৃষ্টি
তখন আকাশ দেখি;

ভেজা চোখে আকাশ দেখেছিস কখনো?
দিনে কিংবা রাতে?
ধ্যাত!
আমি কি বোকা তাই না রে?
তোর চোখ ভিজবে কিভাবে?

তোর চোখের সব কান্না তো সেদিনই দিয়ে দিয়েছিলি আমার চোখে
আমাদের প্রথম দেখাতে;
তারপর থেকে তোর জীবন দিন
আমি রাত্রি,
তোর জীবনে হাসি
আমি কান্না,
তোর আকাশ চাঁদনী
আমি অন্ধকার;

তোর কাছে ভালোবাসা মানে টুকরো টুকরো আমি,
আমার কাছে তুই মানেই পৃথিবী।






বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮

পাখি কেমন আছে?



পাখি কেমন আছে?
- যাযাবর জীবন


অনেক দিন পাখি দেখি না আকাশে,
মনাকাশে;
পাখি কেমন আছে?

ভালো থাক পাখি
আকাশ থাক নীল
সবুজ থাক বনানী
আর তুই স্বপ্নিল;

কালো আকাশে কি আর ডানা মেলা যায়?
পাখির যে মেঘ হতে বড্ড মন চায়;
পাখির পালকে মেঘের ঘষা
আমার চোখ বৃষ্টি
ভালোবাসা বড্ড কাঁদায়
ধ্যাত! অনাসৃষ্টি;

পাখি ডানা মেলে মেঘের ভেলায়
সময় কোথায় তার নীচে তাকাবার?
পাখি উড়ে চলে আকাশ নীলে
ঐ দূর দূরান্তে ডানা মেলে মেলে
নিচে সাগর, বেদনা নীল
আর তুই স্বপ্নিল;

ধ্যাত!
ভালোবাসা বড্ড লবণ,
আর সাগর নীল নীল।












কু ঝিক ঝিক



কু ঝিক ঝিক
- যাযাবর জীবন


সময় এর ভরসা কোথায়?
সময় তো টিক টিক টিক টিক;
ভরসা কোথায় জীবনের?
রেলের চাকায় জীবন
কু ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
ষ্টেশন যে কার কোথায়? কে জানে?

জীবনের শুরু কোথায়?
মায়ের জঠরে;
তারপর সময় চাকায়
কু ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক;

এক এক জন স্বপ্নে এক এক ষ্টেশন দেখে
এক এক জন এক এক ষ্টেশনে নামতে চায়
কেও ষ্টেশন পায়
কারো বা কু ঝিক ঝিক ষ্টেশনের আগেই থেমে যায়
সময়ের ভরসা কোথায়?
ভরসা কোথায় জীবন গাড়ির?

জীবন রেলে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি
ঐ তো ষ্টেশন দেখা যায় সামনে,
আর মাত্র কিছুটা পথ
আমি শেষ ষ্টেশনের যাত্রী;

আমি এখনো কু ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক.....................

কে জানে সময় কখন থেমে যাবে?
কোথায় থেমে যাবে রেলের চাকা?

শেষ ষ্টেশনে কি আছে?
কে জানে?

হয়তো জানব,
ষ্টেশনে গাড়ি পৌঁছলে;

কিংবা কু ঝিক ঝিক থেমে যাবে, পথের মাঝে।





বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮

প্রকাশ, অনুভূতির



প্রকাশ, অনুভূতির
- যাযাবর জীবন


এক একজনের অনুভূতির প্রকাশ এক এক রকম
কেও হাসতে হাসতে কাঁদে
কেও কাঁদতে কাঁদতে হাসে
কারো কারো হাসিমুখ দেখলে বোঝার উপায় নেই মনকষ্ট
কারো শুধুই কান্নার অভিনয়ে স্বার্থ তীরের খেলা
কখনো সফলতায় বিদ্ধ কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট

কেও ভালোবাসায় কাঁদে কেও হাসে
কেও প্রেমজালে ফাঁসে
কেও ধীর-স্থির কেও অস্থির
কেও বাচাল কেও বধির
কেও চপলতায় ঝর্ণা কেও স্থিরতায় পাহাড়
স্বার্থের সম্পর্কে পৃথিবীতে কে কার?

তুই অস্থির তুই অস্থির
ক্ষুধায় ও পিপাসায়
কাজে আর অলসতায়
সফলতা ও ব্যর্থতায়
হাসিতে ও কান্নায়
ভালোবাসা আর না বাসায়
প্রেমে কিংবা কামে
অনুভূতির প্রকাশ তোর জানে জনে জনে
আমি পাথর চোখে চেয়ে দেখি
পাহাড় মনে মনে।








আদর মেয়ে



আদর মেয়ে
- যাযাবর জীবন


তোর হাতে বড্ড আদর;
যখন হাত বুলাস হাতে
যখন হাত বুলাস মাথায়
যখন হাত বুলাস গায়ে
আদর অনুভব মনের ভেতরে
আদর তোর স্পর্শে স্পর্শে;

কাছে আসলেই বুঝি আদর দিতে হয়?

ওরে ও আদুরে মেয়ে!
একদিন আদর মেখে দিয়ে যাস আদুর গায়ে,
আদরে আদরে।

তোর মনে বড্ড আদর;
যখন মন রাখিস মনে
যখন নাক ঘষিস বুকে
যখন হৃদয় হৃদয়ে
আদর অনুভব মনের গভীরে
আদর তোর অস্তিত্ব জুড়ে;

ভালোবাসলেই বুঝি আদর দিতে হয়?

ওরে ও আদুরে মেয়ে!
একদিন আদর মেখে দিয়ে যাস আদুর হৃদয়ে,
আদরে আদরে।


ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভালোবাসা






ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


তোকে ছুঁয়েছিলাম বলেই ভালোবাসা
তুই ছুঁয়ে দিয়েছিলি বলেই কান্না
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় আমরা
কেও কারো থেকে কম না
তুই শরীর ছুঁতে ভালোবাসিস
আমি মন ছুঁয়ে চলি
তুই ভালোবাসার কথা বলিস
আমি সম্পর্ক মেনে চলি
তুই ভালোবেসে কাঁদিস
আমি সান্ত্বনার কথা বলি
তুই আমায় ছুঁয়ে চলিস
আমি মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলি;

আয় একবার বৃষ্টি ছুঁই দুজন মিলে
একবার জ্যোৎস্না ছুঁই
একবার পাহাড় ছুঁই
তারপর চল সাগর অবগাহনে,

একবার সাগর সাঁতারে মেপেই দেখি না!
কত লবণাক্ততা তোর চোখের কোণে।


ভাল করেই জানি


ভাল করেই জানি
- যাযাবর জীবন


তোকে ছুঁয়ে থাকে একজন
সে ভাবে তুই তার
অথচ তোর মনে আমি
খুব ভাল করেই জানি

সে ভাবে তুই তার ঘর
অথচ সে তোর পর
তোর মনে আমি
খুব ভাল করেই জানি

শরীর ছুঁয়ে থাকলেই কি ভালোবাসা হয়?
মনকে জিজ্ঞাসা কর, মনে কে রয়;

ভালোবাসা খুব কাঁদায়
তাই না রে?



লবণ বিনিময়



লবণ বিনিময়
- যাযাবর জীবন


কত বৃষ্টি ঝরিয়েছিস তুই
কত কান্নায় জল
কত কত ভিজিয়েছিস তুই
কত করেছিস ছল;

কত কত বৃষ্টি দিয়ে
ভালোবাসা নিয়ে গেলি
বৃষ্টি কোথায়? কান্না সব
লবণ চোখে চলি।


কেও আসে নি



কেও আসে নি
- যাযাবর জীবন


কথা দিয়েছিলি তুই আসবি;

আমি অপেক্ষায় ছিলাম,
কেও আসে নি;

কিছু তপ্ত হাওয়া বয়েছিল
দরজায় দোল খাচ্ছিল কিছু লূ বাতাস,
বারবার ঘর আর বাইরে আমার চোখ
নিজেও ঘুরে এসেছি দরজার ওপাশে কয়েকবার
অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা চারিদিকে
আর শূন্যতার হাহাকার;

সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা অপেক্ষা করে
এক সময় সূর্যটাও ডুবে গেলো টুপ করে,
তারপর চারিদিক আধার;

চাঁদ ছাড়া চাঁদনি হয়েছিলো কবে?
আর তুই ছাড়া আমি,
রাত মানেই কি অন্ধকার?
তবে স্বপ্ন দিয়েছিলি কেন রে চোখে?
আসার আশা দিয়ে;

জেগে থাকলে পদধ্বনি নিঃশব্দতার
আর খর চোখে সূর্য কিরণ
সমুদ্র কি পুরোটাই লবণ?

স্বপ্নের পৃথিবীতেই তুই আমার
আর বাকি রাত অন্ধকার।




হারানো অনুভূতি



হারানো অনুভূতি
- যাযাবর জীবন


তোর কাছে কিছু ছিল আমার
আমার কাছে তোর
অর্থ নয় বিত্ত নয়
শুধুই মনেতে মন ক্ষয়;

লাভ লোকসানের হিসেব করিনি কখনো আমরা,
না তুই না আমি
ইচ্ছাকৃত মন ক্ষয়ে কেমন জানি এক অনুভব, সুখ সুখ
আর ছিল আমাদের দুজনার ভয়াবহ প্রেমের অসুখ;

সময়ের স্রোতে সময় হারিয়েছে
নদীর স্রোতে গড়িয়েছে জল
জীবন স্রোতে কাছে এসেছে কতজন
মরণের স্রোতে হারিয়েছে আপনজন,
একদিন খুব হঠাৎ তোর জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি
হারিয়ে ফেলেছিলাম আমিও তোকে
চোখের আড়ালে যোজন যোজন দূরে আমরা
তবুও তুই এখনো রয়ে গিয়েছিস কোথায় জানি আমার বুকে;

সময় হারিয়ে যায়
মানুষ হারিয়ে যায়
কই? অনুভূতি তো হারাই নি আমি
আচ্ছা! ভালোবাসা কি হারায়?

অনেক হারানোর মাঝে কেন জানি তুই
এখনো আমার পুরো অস্তিত্ব জুড়ে,
আচ্ছা! আমায় কি তোর মনে পড়ে?
মাঝে মাঝে বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।


খোলস মেয়ে



খোলস মেয়ে
- যাযাবর জীবন


ও রে ও ঝিনুক মেয়ে
সবাই দেখে খোলস তোর
বাইরে থেকে শক্ত জবর
ভেতরটা তোর কোমল মাখন
বুকের ভাজে আমার যখন

ও রে ও খোলস মেয়ে
সবাই ভাবে নারকেল তোকে
বাইরে থেকে শক্ত ভীষণ
ভেতরটা তোর তুলতুল তুল
কচি ডাবের শাঁসের মতন

ও রে ও শামুক মেয়ে
গুটিয়ে থাকিস সবার থেকে
বাইরেটা তোর শক্ত খোলস
নরম আদর ভেতরটাতে
ইচ্ছে করে চুমু খেতে

ও রে ও কঠিন মেয়ে
খোলস তোর সারা গায়ে
জানি আমি কার জন্য
খোলস থেকে বাইরে এলেই
খুবলে খেতে ওরা বন্য

ও রে আমার প্রেম কন্যা
ভালোবাসায় গলাই খোলস
প্রেমে তুই যে মানুষ অন্য
আদরে তোর গলিয়ে খোলস
ভালোবেসে আমি ধন্য।


বোকা মেয়ে



বোকা মেয়ে
- যাযাবর জীবন


অনেক বুঝি ভালোবাসিস?
তাই কি এত দূরে থাকিস?

আরে আরে দুষ্ট মেয়ে
রাখ না আমায় জড়িয়ে ধরে
একটিবার শক্ত করে;

কি হবে রে ছুঁয়ে দিলে?
হাতে হাতে
ঠোঁটে ঠোঁটে;
হ্রদয় তো কবেই ছুঁয়েছিস
শরীর ছোঁয়ায় কেন দূরে?

ও কি রে?
কান্না কেন চোখেচোখে?
আরে আরে দেখ দেখ
লবণ পানি চোখের কোণে
বোকা মেয়েরে, বোকা মেয়ে।


ময়ূর মেয়ে



ময়ূর মেয়ে
- যাযাবর জীবন


ময়ূর মেয়ে, ও ময়ূর মেয়ে
নাচতে পারিস?
মেঘের ভেলায় মেঘ হয়ে তুই
উড়তে জানিস?

ও মেয়ে!
দেখ না রে দেখ!
আকাশে কোথাও বৃষ্টি নেই
তবুও কেন এমন করে পেখম মেলিস?

ভোলাবি আমায়?
কি দরকার?
এমনিতেই তোকেই তোকে ভালোবাসি
মনে মনে খুব তা জানিস,
খুব তা জানিস;

বল না রে তুই!
বল না আমায়,
কেন রে এত ভালোবাসিস?



ভালো থাকার ঠিকানা


ভালো থাকার ঠিকানা
- যাযাবর জীবন


ভালো থেকো আকাশ
ভালো থেকো বাতাস;

বড্ড ভালোবাসতাম তোকে সাগর
আমি ছিলাম নীল
বড্ড ভালোবাসতাম তোকে পাহাড়
আমি ছিলাম পাথর;

ভালো থেকো সবুজ
ভালো থেকো নীল
আমি ভালো নেই
আমি ভালো নেই;

ভালো থাকিস চাঁদ
ভালো থাকিস চাঁদনি
ভালো থাকিস বৃষ্টি
ভালো থাকিস নদী;

ভালো থাকিস মন
ভালো থাকিস পাখি
ভালো থাকিস তুই
কাঁদিস না রে আঁখি।

তোর সাথে এবার আর দেখা হলো না
হয়তো কখনো আবার হতে পারে
হয়তো আর হবেও না;
কার যে কোথায় মৃত্যুর ঠিকানা!

আমার ঠিকানা তো তোর জানাই
ছোট্ট অন্ধকার ঘরটাও তোর চেনা
ওখানে তো আর যেতে পারবি না!
ওখানে অনেক নিষেধাজ্ঞা অনেক বাঁধা,
তবুও তুই মাঝে মাঝে
এখান থেকে মনে মনে চিঠি লিখিস
আমি তোর হৃৎস্পন্দন পড়ে নেব ওখান থেকে;

তুই আমায় ভালোবাসতে শিখিয়েছিলি
আমি তোকে ভালোবাসা শিখিয়ে গেলাম।




মানুষ থেকে দূরে



মানুষ থেকে দূরে
- যাযাবর জীবন



মানুষের মাঝে মানুষ
মানুষের মাঝেই পশু;

স্বার্থের থাবা দেখেছ কখনো?
অর্থের লালসা?
স্নেহ, মায়া, মমতা, প্রেম, ভালোবাসা
কতরকম অনুভূতির কথাই না বইয়ে লিখা!
কোথায় না খুঁজেছি এগুলো হেথা হোথা,
উঁহু! স্বার্থের কাছে সব ফাঁকা
অর্থের বিনিময়ে সম্পর্কে ধোঁকা
আমিই ছিলেম বোকা
বড্ড বেশী বোকা;

ইদানীং গুটিয়ে গিয়েছি নিজেতে নিজে
মানুষ থেকে অনেক দূরে
উঁহু! যা ভাবছ তা নয়;
আরে, মানুষ তো সৃষ্টির সেরা জীব
আমিই পশু;

তাইতো মানুষের সংস্পর্শে যেতে বড্ড ভয় পাই
কি জানি! মানুষের কাছাকাছি গেলে যদি পশু হইয়া যাই?


সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮

গোপন ড্রয়ার



গোপন ড্রয়ার
- যাযাবর জীবন


বুকের আলমারিতে অনেকগুলো তাক
কিছু আলোকিত কিছু অন্ধকার

কয়েকটা ড্রয়ার একদম খালি
কয়েকটায় স্বার্থের বাস
কিছু ড্রয়ার খুলতেই আমার ভয় হয়
ওখানে নিজেই তালা দিয়ে রেখেছি জীবনের বীভৎস অন্ধকার;

কয়েকটা হ্যাঙ্গারে আনন্দ ঝোলানো
কয়েকটায় কান্না
কয়েকটায় ঝলমল করছে ভালোবাসার কিছু স্মৃতি
কয়েকটায় কালো কালো বেদনা

সবগুলো তাকেই কিছু কিছু সম্পর্কের বাস
দুই নিলয় ও ডান অলিন্দর ভাঁজে থরে থরে সাজানো
কিছু সম্পর্ক দুষিত রক্ত হয়ে বয়ে চলে শিরায়
কিছু সম্পর্ক দুষিত রক্ত বিশুদ্ধ করে ধমনীতে বয়ে যায়
বাম অলিন্দে শুধুই তোর বসবাস;

ভালোবাসার সম্পর্কগুলোর কথা মনে হলেই মুখ হাসে
স্বার্থের সম্পর্কগুলোর কথা মনে হলেই মন কান্না
তবুও এরা রয়ে যায় বুকের খাঁচায়
থরে থরে সাজানো আলমারির তাঁকে;

আমার ফুসফুসে একটা গোপন ড্রয়ার আছে
ড্রয়ারটা "তুই ড্রয়ার"
যখন খুব বেশী মন খারাপ হয়
যখন দম আটকে আসে
আমি ড্রয়ার থেকে তোকে বের করে অক্সিজেন নেই
মন চাঁদনি হয়ে গেলেই আবার ড্রয়ারে তালা দিয়ে রাখি,
এ ড্রয়ারের খবর কেও জানে না
এ ড্রয়ারের কোন ডুপ্লিকেট চাবিও নেই
আমি মন চাবিতে খুলি, মন চাবিতেই বন্ধ করি;

যেদিন আমি থাকবো না, সেদিন সবাই আমার আলমারির সবগুলো তাক খুলে খুলে দেখবে
সমস্ত ড্রয়ার থেকে সরিয়ে নেবে সকল হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা
আমায় খুলে খুলে ভাগ করে নেবে কিছু কাগজের অর্থ আর কালো কালো স্বার্থ;

তবে 'তুই' নামক গোপন ড্রয়ারটা কেও খুলতে পারবে না,
তুই হয়তো একটা শেষ চেষ্টা করবি এ ড্রয়ারটা খোলার
তোর যে অনেক সাধ ছিল আমার সত্যিকারের 'তুই'টা কে জানার;

মন চাবি কোথায় পাবি রে?
সে তো হারিয়ে গেছে দেহ ঠাণ্ডা হতে না হতেই।







বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১৮

তোর আর আমার হারজিত



তোর আর আমার হারজিত
- যাযাবর জীবন


একটা তুই ছিলি
একটা আমি
একটা সময়ে দুই জোড়া চোখ
একটা কামরায় বন্ধ দরজা
এক কাপ চায়ে দু ঠোঁট কাপে
একটা বিকেলে চোখাচোখি
একটা সন্ধ্যায় ভালো লাগা
একটা চাঁদে কাছে আসা
চায়ের কাপ থেকে ঠোঁটে ঠোঁট
একদিন বৃষ্টি দুজনে ভেজা
একটা সম্পর্ক, ভালোবাসা;

একটা ভালোবাসা হলো
একটা সম্পর্ক হলো;

তারপর সময়ের চাকায়
সময় গড়ালো
সূর্য উঠলো সূর্য ডুবলো
চাঁদ উঠলো জ্যোৎস্না হলো
চাঁদ ডুবলো অমাবস্যা এলো
দিন ফুঁড়লো রাত ফুঁড়লো
মাস গড়ালো বছর গড়ালো;

তারপর হঠাৎ একদিন
একটা উথালপাথাল ঝড় উঠলো;
একদিন সম্পর্কে একটা ভুল বোঝাবুঝি এলো
একদিন একটা অভিমান হলো
একদিন একটা রাগ
একদিন একটা ইগো
তারপর অনেকগুলো যুদ্ধ হলো;

প্রেম, ভালোবাসা, সম্পর্ক
রাগ, অভিমান, ইগো আর ভুল বোঝাবুঝির মাঝে;
ফলাফল কি হলো জানিস?

অভিমানের জয় হলো
জয় হলো ইগোর
জিতে গেলো রাগ,
হেরে গেলাম আমি
হেরে গেলি তুই
হেরে গেলো সম্পর্ক;

আসলে ভুল বোঝাবুঝির যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়
সব সময়ই জয় হয় ইগোর
হেরে যায় সম্পর্ক;

অনেক পরে বুঝেছিস তুই
অনেক পরে বুঝেছি আমি
হেরে গিয়ে।









অনলাইন কাহিনীর ভার্চুয়াল গালি



অনলাইন কাহিনীর ভার্চুয়াল গালি
- যাযাবর জীবন


আজকালকার দিনে সব অনলাইন ভিত্তিক
জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে;

আগের দিনের মত দোকান দোকান ঘুরে কাপড়চোপড় পছন্দ করার দিন শেষ হতে চলেছে
দোকানদারের সাথে দরকষাকষি, মন কালাকালির যুগ আর নেই,
সবই এখন অনলাইন;
নেটে নেটে সাইট ঘুরে কাপড় পছন্দ কর
ফিক্সড প্রাইস ট্যাগ লটকানো আছে
ডিসকাউন্টের হাতছানি আছে
পছন্দ হয় তো নিয়ে নেও না হয় তো অন্য সাইটে ঢু মারো;
এখন তো নিত্য কাঁচা বাজারও অনলাইনে
চাল, ডাল, তেল, নুন, সাবান, তরিতরকারি, মাছ মাংস
ঔষধ পত্র, ডাক্তার, কবিরাজ
কি নেই ভার্চুয়ালে?
শুধুমাত্র অসুস্থ হয়ে কিংবা এক্সিডেন্ট করে আধমরা হলে হসপিটালে;

পরিবহণ দরকার? মোবাইলের এপসে ঘরের দোরগোড়ায়
বাসার ড্রাইভার ছুটিতে?
কাজের বুয়া চলে গেছে?
আরে, আরে! সমাধান তো আছে রে
হাতের কাছে,
ঘণ্টা ভিত্তিক, দৈনিক, সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক
কাজের বুয়া, ড্রাইভার, মালী, দারোয়ান
শুধু মোবাইল এপস এ একটা টিপ
ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ঘষে দাও, ঘরের দোরগোড়ায় উপস্থিত;
ঘরের চাবি হারিয়ে গেছে? তালাওয়ালা চাই?
স্যানিটারি মিস্ত্রী, কাঠ মিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রি
সব, সব আছে
কার্ড ঘষায় দেরি
ভার্চুয়ালে সব হাতের কাছে;

একাকীত্ব? রাত-সঙ্গী দরকার?
ছেলে চাই না মেয়ে?
নেটে তো আছে - ছবি দেখে বেছে নাও না বাপু
যার যার কার্ডের ক্ষমতা বলে
এখন টাকা কথা বলে না, কার্ড কথা বলে;

ইদানীং অনলাইনে প্রেমের ছড়াছড়ি
বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়ে থেকে ষাট বছরের বুড়ি,
প্রেম জমতেও সময় লাগে না, গলতেও সময় লাগে না
কীবোর্ডে ভালোবাসা, কীবোর্ডেই হতাশা
ভার্চুয়ালে কবুল কবুল
ক্যাম অন করে সোহাগ-রাত,
অনলাইন প্রেমের জয় জয়কার;
অপেক্ষায় আছি, কবে সন্তান জন্ম দিয়ে রেকর্ড গড়বে ভার্চুয়াল।

আজকাল তো টাকার লেনদেনও কমে গেছে
যা দিনকাল পড়েছে!
চোর বাটপার, পকেটমার
ছিনতাই, রাহাজানি
কে আর পকেট ভরা টাকা রাখে?
কার্ড ঘষলেই পছন্দের পণ্য বাড়ি বয়ে;
কে জানে!
হয়তো একটা সময় আসবে কাগজের টাকা দেখা যাবে যাদুঘরে।

গল্প কবিতার বই ছাপা হতো ছাপাখানায়, কোন এককালে ধুন্ধুমার
আজকাল অনেক ছাপাখানা উঠেই গেছে
এখনো অবশ্য কিছু বই ছাপা হয় কাগজে
একুশে বইমেলা
লেখক পাঠক মিলন-মেলা
কবি লেখক সম্মেলন
একুশে বইমেলার বিশাল আয়োজন;
কাগজের বই কিন্তু বিক্রি হয় এই একমাস ধরে
কয়টা পড়া হয়?
বেশীর ভাগ শোভা পায় ঘরের আলমিরাতে
মনে মনে অহংবোধের আনন্দ
- আমার একটা বিশাল লাইব্রেরী আছে
তাতে থরে থরে সাজানো নামী দামী সকল লেখকের বই আছে;
আর আছে কাজের লোক
সপ্তাহে কিংবা মাসে একবার দুবার ঝাড়পোঁছ করে চকচকে রাখে বই এর আলমিরা
বাড়িতে মেহমান আসলে চমকে দিতে হবে না! বই এর কালেকশন দেখিয়ে;
ও অহংকারী ভাই আপনার সমস্ত বই এর কালেকশন এখন মোবাইলে
পি ডি এফ লাইব্রেরীতে
একটা বোতাম চাপলেই চোখের সামনে,
শুধু পড়ার সময় নেই আমাদের কারো
অথচ পুরোটা সময় আমরা মোবাইলে ব্যস্ত
নেটে, ভার্চুয়ালে;

আচ্ছা! অনলাইনে কি কেও কি এই লেখাটা পড়ছে?
নিশ্চয়ই আমায় অকথ্য গালি দিচ্ছে ভার্চুয়ালে;
ভাগ্যিস!
শ্রবণ যন্ত্র আবিষ্কার হয় নি এখনো ভার্চুয়াল গালি শোনার।






বুধবার, ৪ জুলাই, ২০১৮

তুই'ই কবিতা, তুই শব্দের কারিগর




তুই'ই কবিতা, তুই শব্দের কারিগর
- যাযাবর জীবন


একটা কবিতা লিখতে বলেছিলি আমায় তুই,
তোকে নিয়ে;
তুই একটা পাগল, প্রেম পোকা
আমি কবিতার কি বুঝি রে বোকা?

শব্দের পিঠে শব্দ গাঁথলেই কি আর কবিতা হয়?
যার মন আছে তাকে দিয়েই কাব্য হয়
যেমন তুই,
যে প্রেম করতে জানে তার কবিতা হয়
যেমন তুই,
যে ভালোবাসতে জানে সে সবার হৃদয়ে রয়
যেমন তুই,
তোর কলমেই তো কাব্য হয়
তোর কলমেই কবিতা হয়
আমি কারো নই রে
আমার কেও নয়,
আমাকে দিয়ে কিভাবে কবিতা হয়?

নিজের ভেতর অনেক আঁতিপাঁতি খুঁজেছি আমি
মন বলে কোথাও কিছু পাই নি
প্রেমে আমার বড্ড এলার্জি
ভালোবাসা?
সেটা আবার কি?
আমি তো শব্দের কারিগর নই
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?

তুই যখন বৃষ্টির গায়ে রোদের রংধনু দেখিস
আমি চাঁদের গায়ের কলঙ্ক দেখি
বৃষ্টির গানে তোর যখন তা ধেই ধেই নাচ
মধ্য দুপুরে আমার মাথায় তীব্র রোদের আঁচ,
চাঁদ আর সূর্যের দূরত্বে ব্যবধান অনেক
ব্যবধান রোদ আর জ্যোৎস্নার
ব্যবধান দিনের সাথে রাতের
ব্যবধান নৌকার সাথে জাহাজের,
ব্যবধান ভালোবাসার সাথে ঘৃণার
বিশাল ব্যবধান তোর সাথে আমার;

তুই যখন কবিতা পরিস
আমি ছাত্র পড়াই পেটের টানে
তুই যখন ভালোবাসায় চন্দ্রাহত
আমি ঠা ঠা রোদে পুড়তে পুড়তে খাদ্যাহ্নেষণে,
আমার হাত মজুরের
আমার হৃদয় পাথরের
আমি কবিতার কি বুঝি রে!
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?

ক্ষুধার সাথে পেট কথা কয়
চাঁদ, আমার চাঁদ-রুটি নয়
লেখকের কলমে গল্প হয়
কবির কলমে কবিতা
তোর মনে ভালোবাসা
আমার পেট চেনে ক্ষুধা;

কবিতা লিখবে সে
তোকে ভালোবাসে যে,
আমি পাথর হৃদয়
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?

আরে বোকা! তুই তো নিজেই কবিতা
তুই'ই শব্দের কারিগর
তোর হৃদয়ে ভালোবাসা রয়
তোর কলমেই কবিতা হয়;
আমার পাথর হৃদয়
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?





মঙ্গলবার, ৩ জুলাই, ২০১৮

মন নয়, অভিনয়



মন নয়, অভিনয়
- যাযাবর জীবন


মন তো মন'ই
কখনো ভালো কখনো খারাপ;

ক্ষণে ক্ষণে পিঠ, ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে দিচ্ছিলি হাত
কাল ছিলো তোর বড্ড বেশী মন খারাপ,
তবুও ঠোঁটে হাসি ধরে রেখেছিলি
যতক্ষণ একসাথে ছিলি,
মুখে আবোল তাবোল কথার ফুলঝুরি
যাতে আমি বুঝতে না পারি
তুই কি জানিস?
আমি মন পড়তে পারি;

হাতে যখন হাত বুলাচ্ছিলি
তোর হাত কাঁপছিল
পিঠে যখন হাত রেখেছিলি
তোর মন কাঁদছিল,
তোর উচ্ছল হাসির শব্দের গভীরে, কতটুকু কান্না ছিলো?

কাল কিন্তু তুই চোখ রাখিস নি চোখে
ভয় পেয়েছিলি কি?
আমি চোখ পড়ে নেব বলে,
অভিনয়ে কেন এত পাকা ভাবিস নিজেকে?
আমি তো জানিই আমায় বোকা ভাবিস তুই
আরে হাতে হাত না ধরলেও মন যে আমি ছুঁই;

কাল তোর পুরো স্পর্শ জোড়া কান্না ছিলো রে বোকা মেয়ে
আমি মন পড়ি, চেহারায় ভুলি না রে
অনেক ভয় বুঝি!
আমায় হারাতে;

মন তো মন'ই
ভালো, খারাপ চলতেই থাকে
কখনো যদি হারিয়েই যাই
হাসিমুখে অভিনয় করে যাস মন খারাপে।





সোমবার, ২ জুলাই, ২০১৮

মজাই মজা



মজাই মজা
- যাযাবর জীবন


এক একজন এক এক কাজে মজা পায়
এক এক জনের কাছে মজার ধরণ এক এক রকম;

কেও খেয়ে মজা পায় কেও খাইয়ে
কেও কাজ করে মজা পায় কেও অকাজ
কেও প্রেম করে মজা পায় কেও অভিনয় করে মজা নেয়
কেও মজা পায় মন খেলায় কেও শরীর খেলায়
কেও দুঃখে কাঁদে আমি হাসি
কারো প্রেমে ক্ষরণ আমার কবিতার চরণ;

আমি সব কিছুতেই মজা পাই
আমি সব কিছুতেই হাসি;

আজকাল কি কেও আর ভালো কথা বলে?
তবুও যদি কেও ভুলে দু একবার বলে বসে
আমি মুচকি হাসি, আর মনে মনে বলি গাধা'টা বলে কি!
সবাই যখন আমায় মন্দ বলে, আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি
কখনো সামনে, কখনো আড়ালে;
আমি ভালো কথায় হাসি
খারাপ কথায় হাসি
বকলে হাসি
মারলে হাসি
কেও যখন প্রেম করতে চায় আমার পুরো শরীর দুলিয়ে হাসি পায়,
এই হাসিই মাঝে মাঝে তোর জন্য হয়ে যায় বড্ড বৈরি
তুই তো জানিস না! আমার মন পাথরে তৈরি;

মৃত্যুর কথা মনে হলে সবাই দেখি ভয়ে শিওরে ওঠে
আমি আমার কবরের জায়গা খুঁজি হাসিমুখে
আচ্ছা! মৃত্যু কি খুব মজার কিছু?
মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে;

আমি বোধহয় পুরোপুরি মানুষ নই
মাটি দিয়ে বানানোর সময় ওপরওয়ালা কিছু পাথর মিশিয়ে দিয়েছিলো কি আমার মাঝে?
বুক ধুকপুক থেমে গেলে একবার কেটে দেখিস তো ওখানে হৃদয় না পাথর আছে?
তারপর শুইয়ে দিস মাটির কবরে;
কে জানে? ওখানেও হয়তো অট্টহাসি হাসবো তোরা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলে;

তুই আমার সব কিছুতেই মজা পাস
কাঁদিস প্রত্যাখ্যানের মজায়;
আমি কিছু লিখলেই তোর মন কবিতা
এত ভালোবাসিস কেন রে বোকা?






আমার পৃথিবী আমি




আমার পৃথিবী আমি
- যাযাবর জীবন


আমার পৃথিবী কে?

প্রথমেই আমি
তারপরই টাকা সবচেয়ে দামী,
তারপর ক্রমানুসারে
বাবা মা
জীবন সঙ্গী
সন্তান
বন্ধু বান্ধব
আত্মীয় স্বজন;

আমার পৃথিবীতে এখন প্রেমের স্থান নেই কোথাও
তবে বুকের খাঁচার কোনাঘরে এক 'তুই' এর বাস,
খুব গোপনে, ঘুমঘোরে
আর সময় আমার কাছে অনেক অনেক দামী;

দেখিস নাই কেমন চোখের নিমিষে ফুরিয়ে যায় সময়!
শিশুকাল যেতে না যেতেই কৈশোর
যৌবন পেরোনোর আগেই বার্ধক্য
তারপর শুধুই মাটির টান,
আসলেই রে সময় অনেক দামী!
যার ফুরোয় সেই বোঝে,
বড্ড স্বার্থপর আমি;

একটা সময় ছিলো মনে প্রেম ছিলো
চোখে ভালোলাগা ছিলো
এখন চোখে পুরনো কিছু স্মৃতি ভাসে
মনে পুরনো ক্ষত আসে
আমি স্মৃতি চাপা দিয়ে যাই কাজের কবরে;

স্মৃতি মাঝে মাঝে বড্ড কাঁদায়
জীবনে হারানো প্রেমের অনুভূতির স্থান কোথায়?
দিনে সূর্য দহন আর রাতে অন্ধকার বিলাস
চোখে ঘুম কোথায়?
ঔষধ কোম্পানিগুলোর বড্ড লাভ;

আচ্ছা টাকা দিয়ে কি সময় কেনা যায়?
টাকা না সময়
কোনটা বেশী দামী?

বড্ড স্বার্থপর আমি।









জল খেলা



জল খেলা
- যাযাবর জীবন


জলপরী তুই জলের মাঝে জলকেলি
বয়ে যাওয়া পানি তোকে ছুঁয়ে যায়
আমি পাড়ে বসে ঈর্ষায়
আমায় নিয়ে যা তোর সাথে
দুজন মিলে ফুল তুলি;

পদ্ম দেখেছিস?
লাল লাল,
শাপলা গুলো বড্ড বেগুনী
তুই সবুজ শ্যাওলা মেখে আমায় কেন মন দিলি?
এবার সাদা মেঘ হ, আমার আকাশে
তারপর দুজন নীল হই ভালোবেসে
চল দুঃখ ভুলি;

পানি ছুঁয়েছে তোকে,
আমারও যে বড্ড ইচ্ছে করে তোর ঠোঁট ছুঁতে;
অনেক খেলা হয়েছে পানিতে
এবার উঠে আয় জলপরী,
আয় চুমু খেলি।

অন্ধকারে অন্ধকার



অন্ধকারে অন্ধকার
- যাযাবর জীবন


অন্ধকারে অন্ধকার
রাত বড্ড কালো;

অথচ মন একসময় দিন ছিলো
তুই ছিলি, ভালোবাসা ছিলো
সকাল ছিলো, সূর্য ছিলো
বিকেল ছিলো চায়ের কাপে
সন্ধ্যে ছিলো দুজনাতে
রাত্রি বেলায় চাঁদ ছিলো, জ্যোৎস্না ছিলো
অমাবস্যায় জোনাক ছিলো, তারা ছিলো
তুই ছিলি তাই অন্ধকারেও আলো ছিলো;

এখন শূন্যতায় শূন্যতা
মন বিষণ্ণতা
নীল দেখি না আকাশে
নীল দেখি না সাগরে;
একা একা কি আকাশ দেখা যায়? ওপরে তাকালেই তো বৃষ্টি
একা একা কি সাগরে নামা যায়? পা বাড়ালেই তো লবণ,
বালির ঘর ভেঙে গেছে কবেই! ঠুনকো অভিমানের বাতাসে;
ভাগ্যিস ঝড় সইতে হয় নি আমাকে;

একদিন খুব অভিমান ভাঙা ঝড় ওঠে যদি
তবে আবার না হয় ঘর বাঁধব ফুঁসে ওঠা সাগর তলে
তুই আমি দুজনে;

আর নয়তো অপেক্ষার প্রহর একা একা
তারপর ছোট্ট মাটির ঘর, একদম একা
অন্ধকারে সংগোপনে।



অশুদ্ধ



অশুদ্ধ
- যাযাবর জীবন


কেও শরীর নিয়ে খেলে
কেও মন,
কেও প্রেমে কাঁদে
কারো কুকুর জীবন;

যার কারবার শরীর নিয়ে সে ছলনা খেলে
প্রেমের ছলনা,
ছলনা পেকে গেলে ঘরে আসে চুপিসারে
চোরের আচরণে শরীর খেলে
তারপর স্নান করে শুদ্ধ হয়ে প্রস্থান পেছন দরজায়;
তারপর আবার নতুন কোনো শরীরের খোঁজ
আবার স্নান
আবার, আবার, আবার....
মনে মন রাখার তার সময় কোথায়?
কখনো পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে না যে
ভুল করে মাতৃ জঠরে রেখে গেলো নতুন জীবন;

যদি শরীর খেলায় সন্তান জন্মদানের দায়িত্ব শুধুই মায়ের
তবে কুকুর আর ছলনাকারীর মাঝে পার্থক্য কোথায়?

আর যারা মনে মন দিয়ে বসে
যাদের শরীর ডাকে প্রেমের টানে
মনে মন প্রতিস্থাপিত হয় শরীরে
সারা জীবন তাদের শুধুই কাঁদার.....

মানুষ হবার দুঃখ অনেক
সব কথা সবাইকে বলা যায় না
কিছু কথা আছে খুব গোপন
প্রেমিক প্রেমিকার শুধুই কান্না......

এক এক সময় ভাবি
কেন যে প্রেমিক হতে গিয়েছিলাম?
যদি শরীর নিয়ে খেলতাম!
তা হলে তো জলডুবেই শুদ্ধ হয়ে যেতাম;

প্রেমিক হওয়ার যন্ত্রণা অনেক,
কুকুরের জলডুব
শুদ্ধ না হলেই তার কি আসে যায়?

শুধুমাত্র মা'ই জানে সন্তানের পিতৃ পরিচয়।


পাহাড় ডিঙানোর স্বপ্ন



পাহাড় ডিঙানোর স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন


রাত নিঃসঙ্গ হতেই একা হয়েছিলো চাঁদ
মনে নিঃসঙ্গতা আসতেই কবিতায় হাহাকার
একাকীত্বের আকাশে চাঁদ হেসেছিল কবে?
অমাবস্যার আঁধারে মাঝে মাঝে মিটিমিটি আশার জোনাক;

বড্ড গুমোট ছিলো সে রাত
দমবন্ধ আর মনবন্ধ
নিঃশব্দতা চিড়ে নি কোন রাতপাখি
শুধু তোর প্রস্থানের আকাশ ফাটা গর্জনে বধির হয়েছিলাম আমি;

সেও তো অনেক দিন,
তারপর আর কোন শব্দ শুনি নি;

আজ অনেক দিন পর কেন জানি হঠাৎ প্রস্থানের শব্দে কানে তালা লাগলো আবার,
দমবন্ধ না হলেও বুকের কোথায় জানি হাহাকার;

আসলে তুই, আমি, সে, আমরা সবাই এক অসহায় একাকীত্বে;
কখনো সূর্যোদয়ে
কখনো দুপুর রোদে
কখনো হেলানো বিকালে
কখনো বা নিঃসঙ্গ রাতে;

কেও কেও হাত ধরলেই মন আদর
কেও শরীর ছানলেও বিরক্তি
আসলে স্পর্শে মন অনুভব,
বড্ড আদরে হাত ধরে ছিলি তুই
মন ছুঁয়েছিলো মনে;

একদিন ঠিক দেখিস বরফ শরীরে রোদের ওম মাখব
একদিন রাত হবে ভোর
তারপর না হয় ঠোঁট ছোঁবে ঠোঁট,

অমাবস্যা রাতে হঠাৎ চাঁদ দেখলে চমকে উঠিস না সেদিন
আমরা নিশ্চয়ই কোন এক একাকীত্ব রাতে এক হব
তারপর পায়ে পায়ে হেটে যাব বহু বহুদূর, রাত থেকে ভোর
যতসব স্বপ্ন দেখেছিলাম সাগর, নদী, বন আর পাহাড় ডিঙানোর।