শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৯

ঈর্ষার জীবন


ঈর্ষার জীবন
- যাযাবর জীবন


ঈর্ষা;
কেও বলে ব্যাধি
কেও বনে অনুভব
মনের অনুভূতিতে আগুন লাগলে
আগুনে ধোঁয়া না বের হয়ে মন পুড়লে
মন পুড়ে পুড়ে ছাই হলে
তাকে কি ঈর্ষা বলে?

বন পোড়া ছাইয়ে কত কিছুই না করা যায়!
মন পোড়া ছাই দিয়ে কি হয়?

কোন এককালে কাঠকয়লার ছাইয়ে দাঁত মাজতাম
আজকাল নতুন পেস্ট বের হয়েছে দেখি - 'চারকোল'
নতুন মানুষগুলো পুরনোতে ফিরে যাচ্ছে
আচ্ছা মনপোড়া ছাইয় কখনো কারো উপকারে লেগেছিল?

তবুও আমাদের মন পোড়ে
ঈর্ষায়
জ্বলনে
দগ্ধ হই নিজেতে নিজে,
মাঝে মাঝে ঈর্ষা বোধবুদ্ধি লোপ করে দেয়
কি বলছি
কাকে বলছি
সঠিক বলছি না ভুল বকছি
বোধবুদ্ধি কাজ করে না সে সময়,
শুধু ঈর্ষার আগুনে রাগের ঘি
সম্পর্ক নষ্ট করায় এর থেকে বেশী আর লাগে কি?

এইতো আমার মন নদীতে আগুন লাগলো
রাগের ঘি এর মুখটা ফেটে গেলো
তারপর তোর সাথে সম্পর্কটাই চুকিয়ে দিলেম
বোধবুদ্ধিহীন হয়ে;
খুব কি উপকার হয়েছিলো কারো?
পরিতাপের আগুনে কি একটুও জ্বলি নি আমরা এরপর?
তাহলে তো বলব ভালোই হয়েছে;
পশুতে পরিতাপ থাকে বলে জানা নেই;

মানুষ হওয়ার বড় কষ্ট কোথাও না কোথাও আগুন জ্বলেই
কোথাও না কোথাও পোড়া গন্ধ ছোটেই
রাগের নাকে গন্ধ লাগে না তবে আশেপাশের লোকজন ঠিকই বোঝে কাবাব সিদ্ধ হচ্ছে
তারপর একসময় দেখে সম্পর্কটাই পুড়ে গিয়েছে;

কোন দরকার ছিলো না কিন্তু
ছিলো এক তুচ্ছ কারণ
ঈর্ষায় নামক ব্যথিতে সম্পর্কের খান খান ভাঙন।

আয় একবার ভালোবাসা পোড়াই ঈর্ষার আগুনে
তারপর দুজন দুদিকে হাঁটা দেই পেছন না ফিরে।





আগে তো মানুষ হও




আগে তো মানুষ হও
- যাযাবর জীবন


কুকুর বিড়াল ইঁদুর শুকর
আর সকল পশুকুলের জন্ম হয় রাস্তাঘাটে, বনে বাদারে;
জন্মের পরেই এরা মায়ের ওলানে,
কতগুলোর বাবা চিহ্নিত আছে?

কিছু কিছু মানব শিশুর জন্ম কিন্তু হয় বাবার পরিচয় ছাড়া
কিংবা হয়তো বাবার পরিচয় আছে
তবে বাবা নামক জন্তু লজ্জা পায় সমাজের কাছে পরিচয় দিতে
অথচ রাতের আঁধারে শিশ্নের ক্ষুধা মেটাতে কিন্তু লজ্জা ছিলো না এদের,
মায়ের কিন্তু বিকল্প নেই
জন্মের আগে সন্তান পেটে ধরে
জন্মের পর বুকে ধরে;

তবে সাধারণত মানব শিশুর জন্ম হয় হসপিটালে কিংবা ঘরে
এদের বাবা থাকে
মা থাকে
ভাই বোন, পরিবার থাকে,
তবুও কি মানুষ হয় সন্তানগুলো?
মনুষ্যত্ব কি দেখা যায় এদের মাঝে?
তবে কেন বাবা মার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে?
যে মা পৃথিবীর সাথে লড়াই করে সন্তানকে মানুষ করে
সেই মাই পর হয়ে যায় বৌ এলে ঘরে,
খুব বিচিত্র এক সমাজ ব্যবস্থায় বাস করছি আমরা,
আসলে কি সমাজ বলে কিছু আছে?
না স্বার্থের কাছে সব বিকিয়ে গেছে?

তুমি তো মানুষ হও নি হে আদম সন্তান
হয়েছ স্বার্থপর
তোমার চুল থেকে পা পর্যন্ত অর্থ
প্রত্যেকটা অংশে জিহ্ব বের করা স্বার্থ
আরে, আগে তো মানুষ হও
তারপর না হয় সম্পর্ক;

পশুর ক্ষুধা লাগলে আক্রমণ করে
শিকার ধরে
উদর পূর্তি করে
আর তুমি!
ওরে মানব, তুমি তো হত্যা কর শুধুই লোভে
প্রতিনিয়ত হত্যা করে যাচ্ছ সম্পর্ক
কারণ!
তুচ্ছ কিছু অর্থ
আর নখদন্ত বের করা স্বার্থ;

আগে তো মানুষ হও
তারপর না হয় হয়ো বাবা মা, হয়ো সন্তান;

ভাইবোন?
সে আবার কি?
নিক্তিতে স্বার্থের পরিমাণ।







পুরোটাই স্বার্থ



পুরোটাই স্বার্থ
- যাযাবর জীবন


যতক্ষণ টাকা ততক্ষণ স্বার্থ
তারপর পুরোটাই অনর্থ;

বাবা মা ভাই বোন সন্তান
বন্ধু বান্ধব পরিজন
যতক্ষণ পকেট গরম ততক্ষণ সম্পর্ক
যখনই পকেট ফাঁকা তখনই অনর্থ
যতক্ষণ দিতে থাকবে ততক্ষণই সম্পর্ক
যখনই দেওয়া বন্ধ তখনই অনর্থ
কোথায় সম্পর্ক?
পুরোটাই অনর্থ;

কোথায় সম্পর্ক?
কিসের সম্পর্ক?
স্বার্থ
পুরোটাই স্বার্থ;

একটা সম্পর্ক খুঁজছি
স্বার্থের ঊর্ধ্বে,
আমার মত বোকা আর কে আছে?




খারাপবাসা




খারাপবাসা
- যাযাবর জীবন


প্রিয়জনকে ভালো তো আমরা সবাই বাসতেই চাই,
ভালোবাসা কি আর সবাই গ্রহণ করে?
যেমন তুই;

তোকে ভালোবাসতে গেলেই
আনন্দ বার বার ঠেলে দেয় আমায় বিষাদের কাছে,
তার থেকে তোকে একটু খারাপ বেসে না হয় বৃষ্টি নিলাম
তাতেও যদি তোর আপত্তি থাকে
তবে খুব বেশী খারাপ বাসতে বাসতে না হয় রাত্রি হলাম;
তবুও সূর্য তোরই থাক
হাসিটুকু থাকুক তোর মুখে
আর জ্যোৎস্না তোর রাতে;

তোকে সবুজ করতে আমি বারবার নীল হবো
খারাপ বেসে,
যেদিন তুই নীল ভালোবাসবি
আমায় না হয় মনে করিস ভালো কিংবা খারাপ বেসে।






প্রথম দেখা নারী



প্রথম দেখা নারী
- যাযাবর জীবন


তাকে আমি চিনতাম না
একদিন হঠাৎ শরীরে তারুণ্য আসতেই চোখের সামনে সে,
মনের ভেতর কোথায় যেন এক অচেনা সুর বাজছিল
খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন
এক অবাক করা ভালো লাগা
খুব হঠাৎই কেমন জানি অন্যরকম অনুভব,
সে ছিলো এক কিশোরী
আমার দেখা প্রথম নারী;

কই আগে তো এমন হয় নি!
নারী তো কতই দেখেছি;
ছেলেবেলা থেকে মা দেখেছি
বোন দেখেছি
খালা, ফুপু, চাচী, মামী
কত নারীই তো দেখেছি,
কই, তাঁদের দেখে কখনো তো অন্যরকম কোন অনুভব আসে নি
বিশেষ কোন অনুভূতি জাগে নি,
তবে তোকে দেখেই কেন অন্যরকম অনুভূতি?
যেন অন্য কোন এক আমি;

এই যে তোর জন্য হঠাৎ হঠাৎ মন খারাপ,
সময় অসময় এত এত ভালোলাগা!
এত এত দরদ!
এত এত মায়া!
কই, অন্য কারো জন্য তো লাগে নি!
একে কি ভালোবাসা বলে?

তুই কাছে থাকলেই চারিদিকে ভালোলাগার বসন্ত বাতাস
আর রাতভর জ্যোৎস্না,
তুই কাছে না থাকলে মনখারাপের বিষণ্ণ বাতাস লেপ্টে ধরে আমায়
আর রাত্রি জুড়ে অমাবস্যা;

কতযুগ পার করে দিয়েছি
তোকে দেখতে দেখতে,
তবুও দেখার কি শেষ হয়েছে?
কতযুগ পার করে দিয়েছি
তোকে চিনতে চিনতে,
আদতে কি চেনা হয়েছে?

কই, আমার কাছে এখনো তো তুই আনকোরা
প্রথম দেখা সেই নারী,
ভালোবাসায় আমি বড্ড আনাড়ি।




আহ কি দিনই না ছিলো! সেইসব দিনগুলো



আহ কি দিনই না ছিলো! সেইসব দিনগুলো
- যাযাবর জীবন


মধ্যবিত্ত জীবনটা উত্থান পতনে ভরা
বিশেষ করে আমরা যারা সত্তর বা আশির দশকে জন্ম নিয়েছি
তারা যুদ্ধ করতে করতেই এগিয়ে চলেছি
জীবন যুদ্ধ,
উচ্চবিত্তরা সবসময়ই আলাদা;

প্রতিযোগিতা তো সব যুগেই থাকে
তবে আমরা বোধহয় খুব বেশী অসুস্থ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হই নি আমাদের সময়ে,
ফ্যামিলি প্ল্যানিং তখনো বোধহয় অতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নি,
চাচা, মামা, ফুফু, খালা সবার ঘরেই তিন চার পাঁচ থেকে আট দশটি সন্তান,
মহল্লার ভেতর টিনের চালে ঘেরা ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি
বাড়িতে হয়তো দু তিনটে শোবার ঘর, আর একটি বড় ড্রইং রুম
সবাই মিলে গাদাগাদি একসাথে বসবাস, একসাথে হৈ চৈ,
আমাদের কারো নিজস্ব বলে কিছু ছিলো না
এর জামা ও, তার প্যান্ট সে
যে যেটা সামনে পেত, যার যেটা গায়ে লাগতো সেদিনের জন্য সেটাই তার
সৌহার্দের একান্নবর্তী পরিবার,
আহ কি দিনই না ছিলো! আমাদের সেইসব দিনগুলো,
উচ্চবিত্তদের জীবন আমার জানা নেই;

ছেলেবেলায় আমাদের প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রধান ছিল
ভাই বোনদের মাঝে প্রতিযোগিতা,
কে কার আগে ঘুম থেকে উঠবে
কে কার আগে স্কুলের জন্য তৈরি হবে
কে কার আগে হোমওয়ার্ক শেষ করে খুনসুটিতে মাতবে
কে কার আগে খাওয়ার পাটিতে বসবে
মা আজ কার পছন্দের ভর্তাটা বানিয়েছে
মা আজ কার পছন্দের সব্জী রান্না করেছে
কে কার আগে যার যার পছন্দের মুরগীর টুকরোটা তুলে নেবে
(রানটা কিন্তু ছিলো বাবার, ওদিকে নজর দিতাম না কেও)
কে কার আগে মাছের প্রিয় টুকরোটা নেবে
(মাথাটা কিন্তু বাবার, ওদিকে নজর দিতাম না কেও)
কে তাড়াতাড়ি বিছানায় যাবে, কে মায়ের পাশের জায়গাটা দখল করবে
এই সব পারিবারিক ইতং বিতং আর কি,
আহ কি দিনই না ছিলো! আমাদের সেইসব দিনগুলো,
উচ্চবিত্তদের জীবন আমার জানা নেই;

আমাদের প্রতিযোগিতা ছিলো স্কুলে
তখন সাধারণত সব ভাইবোনই একই স্কুলে পড়ার রেওয়াজ ছিলো
তবুও মাঝে মধ্যে যদি প্রাইমারি আর সেকেন্ডারি লেভেলে স্কুল আলাদা হয়ে যেত,
সকালে উঠেই কে কার আগে তৈরি হবে
কে কার আগে স্কুলে যাবে
আবার কে বাসে করে স্কুলে যাবে কিংবা আসবে
কে কে দলবেঁধে হেঁটে যাবে কিংবা ফিরবে
ইত্যাদি ইত্যাদি,
আবার বন্ধুবান্ধবদের মাঝে
কে হোমওয়ার্ক করে নিয়ে গেলো
অনুপস্থিত বন্ধুর প্রক্সি কে দিলো
কে স্যারের স্কেলের বাড়ি খেলো
কাকে বেঞ্চের ওপর দাঁড়াতে হলো
কে কে আজ নীলডাউন হলো
ইত্যাদি ইত্যাদি,
বাড়ি ফেরার পথে এর ওর গাছের দিকে নজর দিতে একটুও ভুল হতো না
কার গাছে কাঁচামিঠা আম ধরেছে, কার গাছে আম পেকেছে
কোন গাছের ডাবে বেশী পানি
কোন গাছের কাঁঠাল মিষ্টি
কোনদিন কার গাছে হামলা দেয়া হবে
দুষ্টুমি আর দুষ্টুমি,
আহ কি দিনই না ছিলো! আমাদের সেইসব দিনগুলো,
উচ্চবিত্তদের জীবন আমার জানা নেই;

তবে একটা জিনিষ ছিলো না আমাদের মাঝে
সম্ভবত তখনকার কারো মাঝেই,
তা হলো বাবা-মার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা
যত অপছন্দই হোক না কেন তবুও বাবা-মার অবাধ্য হওয়া,
আসলে এটা সাহসের কোন ব্যাপার না
অবাধ্য হওয়াটা তখন মনেই আসতোই না,
হয়তো কখনো সখনো একটু মন খারাপ হতো
তারপর সব ভুলে যেতাম খেলার মাঝে,
আহ কি দিনই না ছিলো! আমাদের সেইসব দিনগুলো,
উচ্চবিত্তদের জীবন আমার জানা নেই;

আজকাল পুরনো দিনগুলোর কথা মনে হলেই বড্ড ভাবালু হয়ে যাই
একান্নবর্তী শব্দটাকে ডিকশনারির পাতায় পাতায় খুঁজে যাই
কোথায় ভাই, কোথায়ই বা বোন
কোথায় সন্তান
পরিবার পরিজন!

সেদিন হুট করেই চাচাতো ভাইটা মারা গেলো
ভাই-ভাবীর এক ছেলে এক মেয়ে
প্রতিষ্ঠিত দুজনই
খুব বেশী রকমই প্রতিষ্ঠিত
একজন কানাডা থেকে একজন থাকে আমেরিকা
এখন তারা উচ্চবিত্ত,
ভাই-ভাবী পুরো বাড়িতে একা
পুরো বাড়ী না বলে বরং পোড়োবাড়ি বললেই বোধহয় ভালো হয়,
একটা কাজের মহিলা আছে, যার কাঁধে পুরো সংসার
সংসার বলতে ভাই-ভাবীর দেখাশোনা
সময় সময় বাড়ির বাজার সদাই করা
মাসে মাসে বিল বাট্টা দেয়া
আর বয়স্ক ভাই-ভাবীর দেখাশোনা;
ভাতিজা ভাতিজি আসে বছরে কিংবা দু বছরে একবার
এক সপ্তাহ কিংবা বেশী হলে দশ দিনের জন্য
তাদের সন্তানদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে বেশী থাকলে
বয়স্ক বাবা-মাকে ওখানে নিয়ে কোথায় রাখবে?
কেই বা তাঁদের দেখাশোনা করবে?
তো যা বলছিলাম -
ভাই মারা যাওয়াতে ভাতিজাকে ফোন করে বললাম
তোমার বাবা মারা গিয়েছেন, দাফন করে ফেলি;
শুনে তার সন্তানত্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো,
কি বলেন চাচা? বাবা'কে শেষ দেখা দেখব না?
আপনি ফ্রিজারের ব্যবস্থা করেন আমি দেখি কত তাড়াতাড়ি আসতে পারি,
আমি মৃদু স্বরে বললাম
বাবা, মুর্দার কষ্ট হয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করতে হয়,
শুনে কি রাগ! কি রাগ!
আপনাকে যা করতে বলেছি তা করেন
না পারলে আমি অন্য কাওকে দিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি,
অগত্য!
ভাই এর ঠিকানা হলো বারডেমের ফ্রিজার
তাও অনেক কষ্টে, অনেক দেন দরবার করে সেখানে একটু জায়গা করতে পেরেছি;
ভাতিজা আমার এলেন দিন পাঁচেক পরে
এর আগে তার ফ্লাইট শিডিউল ম্যাচ করে নি,
মাটি দেয়া সম্পন্ন হলো মৃত্যুর ছয় দিন পর;
তার দুদিন পর ভাতিজা আমার মাকে একা ফেলে রেখে আবার উড়াল দিলো
কত কাজ ফেলে রেখেই না তাকে আসতে হলো!
আর কাওকে তো লাগবেই বাড়ি পাহারা দেবার
তাছাড়া কাজের বুয়া তো আছেই
মা বাড়ির পাহারাদার,
হ্যাঁ! আমি আমার মধ্যবিত্ত ভাই এর উচ্চবিত্ত ভাতিজার গল্প বলছি।

এক এক সময় ভাবি
একসময় বুড়ো বুড়ি আমরাও পরে থাকবো একা
ছেলে মেয়েগুলো যার যার কাজে
হয় দেশে কিংবা বিদেশে
তারাও কি উচ্চবিত্ত হয়ে উঠবে?
আচ্ছা! খুব বেশী উচ্চবিত্ত হলে কি পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়?
মনুষ্যত্ব লোপ পায়?

ভাগ্যিস বিত্ত আমায় উচ্চ করে নি;

ওহে মানুষ! যত উচ্চবিত্তই হও না কেন!
ছায়াটা কিন্তু মাটিতেই পড়বে।













আমি মৃত্যুর কথা বলছি




আমি মৃত্যুর কথা বলছি
- যাযাবর জীবন


চোখের আর দোষ কোথায়?
দৃষ্টিতেই তো দৃষ্টিভ্রম
অনেক হলো দেখা
চশমার পাওয়ার বাড়ছে
তারপর ছানি,
ওহে চোখ! তোমারও বয়স হয়েছে মানি,
এবার ঘুমের আয়োজন
শান্তির ঘুম
তারপর অন্ধকার;

কানের আর দোষ কোথায়?
অনেক হলো শোনা
সুখ দুঃখ, ভাব ভালোবাসার কথা
বাগবিতণ্ডা ঝগড়া
চিৎকার চেঁচামেচি
বেদনা আর কান্নার হাহাকার,
এবার বধির হওয়ার পালা
মাটির ঘর নৈঃশব্দ্যতায় ছাওয়া;

মুখের আর দোষ কোথায়?
অনেক হলো বলা
কিছু প্রয়োজনীয় কথা
আর বেশীরভাগ অহেতুক বাচালতা
এখন কথা বলার কেও নেই
একটা বয়স পরে কথা বলার কেও থাকে না
এখন মাঝে মাঝে গাছের সাথে কথা বলি
মাঝে মাঝে নিজের সাথে
মাঝে মাঝে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে
তবুও চুপ করে থাকি
এবার একেবারেই স্তব্ধ হয়ে যাব
কেও কথা বলে না মাটির ঘরে;

সময় গড়ায় সময়ের স্রোতে
সময় বদলে দেয় জীবনটাকে
সময় বদলে দেয় মানুষ'কে
এক সময় সময়টাই থমকে যায় স্তব্ধ হয়ে
হ্যাঁ!
আমি মৃত্যুর কথা বলছি।





ওহে মানব! বয়স হয়েছে তোমার




ওহে মানব! বয়স হয়েছে তোমার
- যাযাবর জীবন


একটি দুটি দাঁড়িতে পাক
তারও অনেক পরে চুল
শণে সাদা বাছার হিড়িক
তারপর ক্রমাহ্নয়ে সাদার দৌরাত্ম্য
একসময় অল্প কিছু হাতে গোনা কালো
কলপে কদিন সাদা লুকোনো যায়?
ওহে মানব!
এটা বয়স,
মুক্তি নাই কারো;

একটি দুটি দাঁত নড়া
কুড়মুড়ে হাড় চিবুনোতে নিষেধাজ্ঞা
একসময় আক্কেল উঠিয়ে ফেলতে হয় ব্যথায়
তারপর একসময় খাওয়ার মাঝে টুপ করে একটি দুটি দাঁত খসা
শুরু হলো দাঁত পড়া
ডেন্টিষ্টের পোয়াবারো
নকল দাঁত লাগানো,
নকল দাঁতে কি আর হাড় চিবুনো যায়?
ওহে মানব!
বয়স থেকে কোথায় পালাবে?

একটি দুটি রোগ বালাই
ডাক্তারের সাবধানতা
গ্যাসের চাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, রক্তচাপ
মুখরোচক খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা
এখন তো হরহামেশা হার্ট, কিডনি, লিভারে সমস্যা
সমস্যা শরীরের বিভিন্ন কলকব্জায়,
ফলমূল, শাকসবজি কদিন আর খাওয়া যায়?
ওহে মানব!
বয়স হয়েছে তোমার;

বয়স'কে আটকাতে পেরেছে কে কবে?






সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯

মন




মন
- যাযাবর জীবন


মন যার মনের কথা শোনে না,
সে চোখের থেকেও বেশী দেখতে চায়
সে নাকের থেকেও বেশী ঘ্রাণ পেতে যায়
সে মুখের থেকেও বেশী বলতে যায়;
আদতে সে সামনে থেকেও ভালোবাসা চোখে দেখে না
খুব কাছে থেকেও ভালোবাসার ঘ্রাণ তার নাকে লাগে না
যখন ভালোবাসার কথা বলতে হয় তখন হয়ে থাকে বোবা;

ভালো তো বাসে সবাই, কজন ভালোবাসা পায়?

ভালোবাসতে হলে মনকে মনের বশ করতে হয়
আর নয়তো সময় ক্ষেপণ আর মন ক্ষয়;

মনের দরজা খোলাই থাকে,
তবুও কেও কেও ভালোবাসার কড়া নাড়ে
যে বুঝে সে মনে মন ঢুকিয়ে দরজায় তালা আঁটে
যেমন তুই আটকা পড়ে আছিস;
আর কেও কড়া নাড়া বুঝতেই ভুল করে,
ভালোবাসা সে আটকাবে কি দিয়ে?
আমি আজো মুক্তো চাতক;

মন যার মন বোঝে না
সে ভালোবাসাই বোঝে না।






পথ মাড়ানো




পথ মাড়ানো
- যাযাবর জীবন


পথের যাত্রা পথে
চলে নিজ মনোরথে,
মানুষও চলে পথে
পথ মাড়িয়ে, একে অন্যকে;

কেও পথ আগলায়
কেও পথ কাটে
একজন আটকায় অন্যকে
আগে যাবার তাড়া সবারই
যদিও গন্তব্য সবার একই;

এই যে তাড়াহুড়া!
এই যে পথ আটকানো!
গন্তব্য কোথায় জানো?
মাটির ঘর সবার অপেক্ষায়
আগে যেতে পারব?
তবুও অন্যের পথ কাটা
আর অনাবশ্যক পথ আগলানো;

সব জেনে বুঝেও মানুষ আমরা
মানুষই তো!
অন্যের পথ আটকানো, পথ মাড়ানো
খুবই স্বভাবজাত।





মন কেমন করা অনুভূতি




মন কেমন করা অনুভূতি
- যাযাবর জীবন



সবাই ভালোবাসার কথা বলে
অথচ ভালোবাসার সংজ্ঞা জানা নেই আমার;

আমি শুধু বুঝি
মাঝে মাঝে মন যেন কেমন করে আমার!

কখনো দিনে
যখন মাথার ওপর সূর্য থাকে
কখনো রাতে
যখন উথালপাথাল জ্যোৎস্না হাসে

কখনো ভোরে
যখন সূর্যোদয়ে আকাশ ডিমের কুসুম
কখনো সন্ধ্যায়
যখন সূর্যাস্তের লালে রাঙা হয় মেঘ

কখনো গ্রীষ্মে
যখন খুব রোদ তেতে ওঠে
কখনো বর্ষায়
যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে

ঠিক তখনই
ঠিক তখনই মন যেন কেমন করে;

যখন তুই সামনে থাকিস পলক ফেলি না দুচোখে
আর মন বড্ড মায়া মায়া
যখন তুই চোখের আড়াল কোথায় জানি কি নেই
আর মনের ভেতর কাঁটার খোঁচা
যখন তুই গভীর ঘুমে আমি চেয়ে থাকি তোর দিকে
যখন আমি ঘুমের দেশে তখন থাকিস তুই স্বপ্ন চোখে;

যতক্ষণ তুই সামনে থাকিস মন বড্ড মায়া মায়া
যতক্ষণ তোকে ছুঁয়ে থাকি মন বড্ড মায়া মায়া
যখনই তুই সামনে নেই মনের ভেতর তুই তুই
আর তোর কথা মনে এলেই চোখের ভেতর কাঁটা কাঁটা;

আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?
অনুভূতিগুলো আমি একদমই বুঝতে পারি না;

বোঝা আর না বোঝার অনুভূতির মাঝে
ভালোবাসার সংজ্ঞা খুঁজে যাই।






একটি দুটি ছুটির সময় ও ইট পাথরের কঙ্কাল




একটি দুটি ছুটির সময় ও ইট পাথরের কঙ্কাল
- যাযাবর জীবন


বছরের একটি দুটি ছুটির সময়
আলো ঝলমলে শহরটাকে বড্ড ম্লান মনে হয়;

ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষগুলো ছুটে চলে যে যার শেকড়ে
বাবা মা ভাই বোন আর প্রিয়জনের কাছে,
এদের কারো শেকড় শহরে নয়
এক এক জনের শেকড় এক এক গ্রামে;

নগর সভ্যতায় রাশি রাশি অট্টালিকাগুলো দাঁড়িয়ে থাকে একা, এসময়
একটি দুটি লাইট জ্বলে কোন কোন অট্টালিকায়
একটি দুটি ল্যম্পপোষ্টের আলোতে রাস্তায় একটি দুটি মানুষজন
আর সারি সারি ইট পাথরের কঙ্কালগুলো দাঁড়িয়ে থাকে আধো অন্ধকারে

আবার ছুটি শেষ হতেই ব্যস্ত হয়ে পড়বে শহর
গাড়ির চাপে পিষ্ট হবে রাস্তা
মানুষের ভারে হাঁপিয়ে উঠবে অট্টালিকাগুলো
চারিদিকে হৈচৈ কোলাহলে মুখরিত হবে নগর
মানুষের জন্য নগর
মানুষ দিয়েই নগরায়ন

শহরের নিজস্ব কোন প্রাণ নেই
মানুষই শহরের প্রাণ।







ইচ্ছে করে খারাপ হতে




ইচ্ছে করে খারাপ হতে
- যাযাবর জীবন


আমরা সবাই ভালো মানুষ,
তবুও কখনো কখনো আমাদের সবারই একটু আধটু খারাপ হতে ইচ্ছে করে;
মনের খুব ভেতরের ইচ্ছে
কেও যাতে না জানে
খুব গোপনে,
বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের কাওকে দেখলে;

খারাপ হওয়ার একটি ইচ্ছে নির্ভর করে বয়সের সাথে সাথে,
শুরুটা কারো কৈশোরে কারো যৌবনের প্রারম্ভে;

একটা সময় ইচ্ছেটা প্রতিদিন
কারো কারো তো দিনে একাধিকবার,
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইচ্ছেটা কমে আসে
সপ্তাহে তিন চার বার
একটা সময় এসে সপ্তাহে একবার
তারপর পাক্ষিক
তারপর মাসিক
তারপর কখনো সখনো কালেভদ্রে,
যতদিন যৌবন ততদিনই খারাপ হওয়ার ইচ্ছে;

মানুষ হওয়ার ভালো দিক হলো
নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি টান রয়ে যায় শেষ দম পর্যন্ত,
শুধু খারাপ হওয়ার ইচ্ছেটা মরে যায় যৌবন মরার সাথে সাথে;

নারীর তুলনায় পুরুষের খারাপ হওয়ার ইচ্ছেটা রয়ে যায় অনেকদিন ধরে,
আমার এখনো ইচ্ছে করে
খারাপ হতে।





ঠিকানা




ঠিকানা
- যাযাবর জীবন


সময় পেরিয়ে গেলেই ছুটির ঘণ্টা
সময় আর ফুরোতে চায় না,

পথ পেরিয়ে এলেই তোর দেখা
পথের আর শেষ হয় না,

জীবন পেরিয়ে এলেই মাটির ঠিকানা
যেতেই হয় তবুও যেতে মন চায় না;

পেন্ডুলামে দুলছে জীবন-ঘড়ি
জানা নেই কখন বাজবে শেষ ঘণ্টা
কত বন্ধুর পথে হেঁটেছি
জানা নেই শেষ পথের শেষটা
আপাতত মাথার ওপর ছাদ তো আছে
বড্ড ভাবায় শেষ বাসস্থানের ঠিকানা;

ওখানে আমি একাই যাব
কাওকে সঙ্গে নেব না।





কাল্পনিক আমি




কাল্পনিক আমি
- যাযাবর জীবন


আমি নিজেকেই চিনি না নিজে;

মাঝে মাঝে প্রশ্নবোধক চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি
মাঝে মাঝে স্বচ্ছ পুকুর জলে
সেখানে শুধুই ছায়া পরে,
আয়না কথা বলে না
কথা বলে না প্রতিচ্ছবি
অ-সহিষ্ণু হয়ে ওঠে নিস্তব্ধ নীরবতা;

মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে নিজেকে জানতে,
আয়নার প্রতিচ্ছবির নয়
তার ভেতরের রক্ত মাংসের মানুষটাকে
কিন্তু সেখানে উঁকি দিতেই সংশয়,
রক্ত তো লাল
তার ভেতরে বড্ড অন্ধকার
আর অন্ধকারেই বড্ড ভয়,
মাঝে মাঝে বড্ড ঘৃণা হয় অন্ধকার খুঁড়ে
এক দানবের দিকে চোখ পড়লেই
নিজেকে জানার ইচ্ছেটা যায় মরে;

ঐ যে আয়নার প্রতিচ্ছবিটা?
সেটা কি আমি?
নিস্তব্ধতা কথা বলেছিল কবে?

প্রতিনিয়ত এক কাল্পনিক আমি'কে খুঁজতে খুঁজতে
রাত গ্রাস করে নেয় আয়না
তারপর তো পুরোটাই অন্ধকার;

মাঝে মাঝে খুব মানুষ দেখতে ইচ্ছে করে আয়নায়।





ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সংসারের মূল্য




ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সংসারের মূল্য
- যাযাবর জীবন


আজকাল প্রেম যেন বড্ড সস্তা হয়ে উঠেছে
বিবাহিত প্রেমিক প্রেমিকা সংসারে সংসারে,
পরকীয়া নাকি একে বলে;

যখনই প্রেমিক প্রেমিকা সামনা সামনি
পাগলের মত দুজন দুজনার
প্রেমে প্রেমে
মনে মনে
হৃদয়ে হৃদয়ে
তারপর
শরীরে শরীরে;

অথচ একজনের কিন্তু স্বামী আছে
আরেকজনের আছে স্ত্রী
তবুও সব ভুলে গিয়ে এক ভয়ংকর পরকীয়া খেলায় মাতামাতি
আজকালকার যুগের প্রেম আর কি!

এটা প্রেম?
না রিপুর তাড়না?
চারিদিকে ভাঙনের শব্দ শুনি;

ভাঙন দেখছ না?
চারিদিকের ভাঙন!
খান খান ভাঙ্গন!

ভাঙন সম্পর্কে
ভাঙন সংসারে
ভাঙন জীবনের পরতে পরতে,
একটু সাময়িক শারীরিক সুখের জন্য নিত্য ভাংছে সংসার
ছারখার হচ্ছে জীবন,
খুব কি প্রয়োজন?

ফলাফল দেখছ?
কি হচ্ছে আজকাল চারিদিকে, দেখছ না?
মানুষ নামের অমানুষ সব আমার তোমার সন্তানেরা;
কি অবলীলায়ই না একজন আরেকজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে এখানে ওখানে
ধর্ষণ গুম আর খুন তো কাগজের পাতায় পাতায়
মূল্যবোধ কবেই হারিয়ে গেছে! ডিকশনারির পাতায়;

কেন এমনটা হচ্ছে?
ভেবেছি কখনো?
ঘরের ভাঙনের ফ্রাষ্ট্রেশন মেটায় এরা ঘরের বাইরে
আর আমার তোমার ঘরে জন্ম নেয় নিত্য নতুন ফ্রাঙ্কেষ্টাইন
ভাঙনের হতাশা থেকে এরা অমানুষ
অমানুষ থেকে ক্রাইম;

একটু চিন্তার সময় বোধহয় হয়েছে এবার
ভাঙন রোধে বিকল্প চিন্তাধারার,
ভাঙনের সংসারগুলোর দশা আজ বড্ড দৈন্য
এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সংসারের মূল্য হবে শূন্য।







সৃষ্টিকর্তা দায়ী



সৃষ্টিকর্তা দায়ী
- যাযাবর জীবন


সবার জন্মই তো নাপাকি থেকে
এক ফোঁটা বীর্যে কত কোটি প্রাণ?

একটি ক্রোমোজোমই তো মাত্র নিষিক্ত হয়
পুরুষ কিংবা নারী কে জানে কি হয়?
অহংকার কেন রে তোর পুরুষ হওয়ার?
কেন এত দেমাগ রে সুন্দরী নারী?
জন্মে কোথায় ছিলো তোর হাত?
শোকর নেই সৃষ্টিকর্তার;

মিলন তো পশুতে পশুতেও হয়
বীর্য বের হয়
সেখানেও জন্মে ক্রোমোজোম দায়ী
কুকুর কিংবা হায়েনা হয়ে তো জন্মাই নি
শোকর কোথায় রে মানব সন্তান? সৃষ্টিকর্তার;

ভালো থেকে খারাপে
উত্থান থেকে পতনে
ধনী থেকে গরীবে
আর চাওয়ার সাথে পাওয়ার সামঞ্জস্য না হলে
সৃষ্টিকর্তা দায়ী;

রোগে শোকে
বন্যা খরায়
এক্সিডেন্ট কিংবা মৃত্যুতে
জীবনে বিপর্যয় নেমে এলে
সৃষ্টিকর্তা দায়ী;

প্রেম প্রণয়ে
সংসার জীবনে
সম্পর্কের ভাঙনে
জীবনে হাহাকার নেমে এলে
সৃষ্টিকর্তা দায়ী;

জীবনের সকল খারাপ পরিস্থিতিতে
কখনো ভেবেছি কি? কোথায় ভুল ছিলো আমার!
অথচ কি অবলীলায়ই না বিষোদ্গার করি
একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই দায়ী;

মানুষ হয়ে জন্মেছিলাম
পশু হয়ে নয়
শোকর করেছিলাম? সৃষ্টিকর্তার।
তবে কেন এই দায়ভার?






মনের বৈপরীত্য




মনের বৈপরীত্য
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসা তোর কাছে কবিতা
আমার কাছে খটমটে প্রবন্ধ
তবুও আমি তোকে পড়তে চেয়েছিলাম
তুই কি আমায় পড়েছিলি?

আমি কি বলতে চেয়েছি তুই শুনিসই নি
তুই কি বলতে চেয়েছিস আমি বুঝিই নি
তবুও আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম
তুই কি ভালোবাসা বুঝেছিলি?

আমরা মন খুলে খুলে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম
অথচ শরীর খুলে খুলে কামে মত্ত ছিলাম
আমি রিপু বুঝিই নি
তুইও প্রেম বুঝিস নি;

আমরা একই বইয়ের একই পৃষ্ঠার দুই পাতা
অথচ কেও কাওকে দেখছি না
দুজন দুজনকে ভালো তো বেসে যাচ্ছি
অথচ কেও কারোটা বুঝছি না;

ভালোবাসা কি এমনই?
খুব দুর্বোধ্য?
একই মনে বাস করে
মনের বৈপরীত্য।








রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৯

প্রেমসূত্র



প্রেমসূত্র
- যাযাবর জীবন


যতদিন যৌবন শরীর আমার
যতদিন যৌবন শরীর তোমার
যতদিন যৌবন শরীরে প্রেম
তারপর দেখা যাবে, কে কার হলেম;

পুরুষগুলো বড্ড ছোঁকছোঁকে
যেখানে সেখানে শরীর শুঁকে,
ঘরে মহাপুরুষ সেজে থাকে
বাইরে এর ওর হাঁড়িতে শুঁকে
এক নারীতে সন্তুষ্ট কজন?
শুধুমাত্র মনে মন লাগিয়েছে যে জন;

মেয়েগুলো বড্ড ছটফটে
সেজেগুঁজে যেখানে সেখানে ছোটে
যতদিন ঘরের মানুষ যৌবনে টগবগ
ততদিনই স্বামীসুখে আহ্লাদে ডগমগ
স্বামীর যৌবন সবজি তো এখানে ওখানে ঘাটা
বোঝা যায় কার প্রেমেতে ছিলো কতটুকু আঠা;

যতদিন যৌবন
প্রেম আর প্রেম
তারপর দুজন কে কার হলেম?
যদি মনে মন থাকে তবেই প্রেমসূত্র
সকল প্রেমের উৎস
প্রেমে কামসূত্র।










শরীর সর্বস্ব জীবন




শরীর সর্বস্ব জীবন
- যাযাবর জীবন


একটা সময় শরীরটাই সব,
একটা সময় শরীরটা শব;

যতদিন শরীরে যৌবন
ততদিনই শরীর জুড়ে রিপুর আড়ত
শরীর সর্বস্ব জীবনে
শরীরটাই সব;

তারপর তো রোগ বালাই ব্যথা বেদনা
ডাক্তার ঔষধ চেয়ার বিছানা
অসহনীয় একাকীত্ব আর প্রহর গোনা
মাঝে মাঝে কিছু পুরনো স্মৃতির অনুভব;

একটা সময়, সময় থেমে যায়
একটা সময় চোখ অন্ধকার
তারপর এক সময় মাটির শরীর পড়ে থাকে
মাটিতে হয়ে শব;

শরীর সর্বস্ব জীবনের সমাপ্তিতে শব।





জেগেছিস কখনো? আমার মত স্বপ্নহীন হয়ে হয়ে!




জেগেছিস কখনো? আমার মত স্বপ্নহীন হয়ে হয়ে!
- যাযাবর জীবন


চোখ জেগে থাকে অন্ধকারে, জেগে থাকে কালো রাত
রাতের সাথে সাথে জেগে থাকে, আকাশে মেঘ আর চাঁদ
আমি রাত জেগে থাকি, আর জেগে থাকে চোখের ঘুম
ক্লান্ত চাঁদ ঘুমিয়ে পড়লে, রাতের চোখে নামে ঘুম;
ঘুম তুই কোথায়?
তোর চোখে;

জেগে থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে গেলে, তুই নেমে আসিস দুচোখে
অথচ তোর জন্যই জেগে থাকা, তবুও স্বপ্ন আসে না চোখে
জেগেছিস কখনো? আমার মত স্বপ্নহীন হয়ে হয়ে!
রাত জেগেছে, জেগেছে অন্ধকার, আমার সঙ্গী হয়ে;
স্বপ্ন তুই কোথায়?
তোর চোখে;

আমার কাছে রাত মানে তুই
ঘুম মানেও তুই
স্বপ্ন বলতে বুঝি তোকে
স্বপ্নহীন দুচোখে
তুই মেঘ তুই বৃষ্টি
তুইই চাঁদ, তুইই চাঁদনি;

তুইহীন আমি?
কেন অমাবস্যা দেখিস নি!





আজকালকার সন্তান




আজকালকার সন্তান
- যাযাবর জীবন


সময়ের কি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে?
খুব দ্রুত গতিতে আজকালকার সন্তানরা এগিয়ে যাচ্ছে
রকেটের বেগে,
চিন্তা চেতনায়
আচার ব্যবহারে
কিংবা মনুষ্যত্বে;

না কি আমরাই পিছিয়ে আছি? সেই আদিম যুগে;

বাবা নামক অদ্ভুত এক মেশিন আছে
টাকা ছাপায়
চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য?
কি আর বলব? টাকার গায়েই তো লিখা থাকে
"চাহিবা মাত্র ইহার বাহক'কে দিতে বাধ্য থাকিবে"
বাবার সাধ্য কি টাকা পকেটে রাখার?
বাহক তো সন্তান;

মা নামের অদ্ভুত এক দাসী আছে
চাহিবা মাত্র নিজেকে উজাড় করে দেবার
সে খাদ্য হোক
আসবাবপত্র
দামী গ্যাজেট
বাড়ির সবচেয়ে ভালো ঘর
কিংবা অন্য কিছু,
টাকা বাবার;

এ তো গেলো বাল্যকাল আর কৈশোরের কথা,
এক সময় সন্তান বড় হয়
যৌবনে পদার্পণ
এখন তো সঙ্গীর প্রয়োজন;
আজকাল আর বাবা-মা সন্তানের সঙ্গী কোথায় খোঁজে?
এক এক জনের সঙ্গী সঙ্গিনী তো যার যার কাছে,
বাবা মায়ের দায়িত্ব টাকার যোগার
দামী শাড়িটা
ডিজাইনার গহনাটা
সবচেয় প্রেষ্টিজিয়াস বিবাহ হলটা না হলে
কি আর বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ হয়?
আয়োজন সবার
টাকা বাবার;

তারপর সন্তানের ঘরে সন্তান আসে
তিন রুম ফ্ল্যাটে কি আর সংস্থান হয়?
হাঁড়িকুঁড়ির নিত্য ঠোকাঠুকি হতেই হয়
আলাদা বাড়ি কিন্তু সন্তানের জন্য প্রযোজ্য নয়
বাপের ভিটা বলে কথা;

আরে বাপটাতো বুড়া
টেঁসে যাবে যে কোন সময়
না হয় অপেক্ষার আরেকটু সময়!
তারপর না হয় বুড়িটার সংস্থান করা যাবে
স্টোর রুমটায় চলবে না?
না হয় কাজের মেয়েটার সাথে!
আরে বুড়িটারও তো বয়স হয়েছে!
দেখাশোনার মানুষ লাগে
কাজের মেয়েটা না হয় রাতের বেলা দেখেশুনে রাখবে!
বেশী যন্ত্রণা হলে আজকাল কি আর বৃদ্ধাশ্রমের অভাব পড়েছে?

আচ্ছা! আমাদেরও তো সময় ছিলো
আমরাও তো সন্তান ছিলাম এক সময়!
কই এসব চিন্তা কি কখনো মাথায় এসেছে?

আজকালকার ধর্মীয় মূল্যবোধ,
সে আবার কি?
মোল্লাগুলো মসজিদে যায় দেখি,
আরে দোস্ত, জানিস আমার বাপটাও আজকাল বড্ড মোল্লা বনে গেছে
সারক্ষণ ধর্মের কথা জপে
নামাজের সময় হলে মাথাটা খারাপ করে দেয়
রোজার দিনগুলোতে তো বাসায় থাকাই দায়!
আর বুড়িটার কথা তো ছেড়েই দিলাম
না জায়নামাজ থেকে ওঠে
না হাত থেকে তসবীহ রাখে
যন্ত্রণার তোরা বুঝবি কি?

আজকালকার মনুষ্যত্ব?
ঐ যে কিশোর ছেলেটা
কি অবলীল ভাবেই না পিটিয়ে মেরে ফেলেছে মা টাকে
নিথর দেহটা রাস্তায় পড়ে ছিলো রক্তাক্ত
নিথর দেহেই যেন শরীরের সমস্ত ঝাল মেটানো,
আর বাকি সব সঙ্গী সাথীরা মাছ চোখে তাকিয়ে দেখেছে
কেও কেও ভিডিও করে ভার্চুয়ালে ছেড়েছে;
আর ঐ যে যুবকদল!
দা বটি হাতে রাস্তার মাঝে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে ছেলেটাকে
প্রেমের বলি
আর বাকিরা কাপুরুষের মত ভিডিও করেছে;
এরাও তো কারো না কারো সন্তান
মনুষ্যত্ব কোথায় বলো তো দেখি?
সমাজের পচন দেখতে পাচ্ছ তোমরা?
আমরা কোথায় চলেছি?

হে পুত্র
হে কন্যা
তোমরা সন্তান হয়েছ,
মানুষ হয়েছ কি?

ব্যর্থতা আমাদেরই।