শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

ইচ্ছেগুলো পাখির ডানায়

মানুষের কতরকম ইচ্ছেই না থাকে! 

আমার ইচ্ছে করে পাখি হতে,

পিঠে একজোড়া ডানা থাকলে বেশ হতো

নিমিষেই মিটিয়ে দিতেম তোর আর আমার দূরত্ব; 


আকাশের দিকে চোখ মেলতেই চোখে নীলের ধাক্কা 

আমি ঝকঝকে আকাশের কথা বলছি

আকাশ কখনো কখনো ধুসর হয়, কখনো কখনো কালো

যখন তার মন খারাপ তখন আকাশ কাঁদে, তোমরা বৃষ্টি বলো; 


আমার খুব ইচ্ছে করে কোন একদিন ঐ মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে

না, না, ইকারাসের ডানায় নয়, পাখির ডানায় 

সূর্যের ওপারটায় যদি কখনো পাখা মেলে উড়ে যাওয়া যেত! 

আচ্ছা! সূর্যের ওপারে কি ভালোবাসার নগরী আছে? 


আমি সূর্যোদয় দেখি, সূর্যাস্ত দেখি

ভালোবাসা দেখব বলে,

কখনো চোখ ঝলসে দেয় সূর্য কখনো অন্ধকার

আমি তো তোর হয়েই থাকি, তুই কার?


আকাশের ওপরে কি আছে? আরেকটা আকাশ? 

তার ওপরে? মহাকাশ? আচ্ছা মহাকাশও কি নীল? 

তবে তো নিশ্চয়ই ওখানে দুঃখ অনেক বেশি 

একবার বড্ড ইচ্ছে করে পাখির ডানায় নীল পেরোতে;


একদিন আমি ঠিক পাখি হব, ঐ অনেক ওপরে আকাশে উঠে যাব

একদিন আকাশের নীলগুলো ছুঁয়ে দেব, নীলে কান্নাগুলো গুলিয়ে নেব 

একদিন ঠিক ভালোবাসতে শিখব, আকাশের ওপরের ভালোবাসার নগরীতে 

তারপর না হয় ঘুমিয়ে পড়ব, তোমরা আমায় রেখে দেবে সাড়ে তিন হাত মাটিতে।


 


৩০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ইচ্ছেগুলো পাখির ডানায় 

 - আহসানুল হক 




    

ভবিষ্যৎ পৃথিবী

 কোন এক চৈত্রের দুপুর, মাথার ওপর দুপুরের খাড়া রোদ 

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে একটু ছায়ার আশায় এক লোকাল পার্কে ঢুকে গেলাম

ডালপালা ছড়ানো একটা বড় আম গাছ দেখে হেলান দিয়ে তার ছায়ায় বসে পড়লাম 

বসে থাকতে থাকতেই ঝিমুনি চলে এলো, হয়তো চোখটাও লেগে গিয়েছিলো

হঠাৎ করেই ঝিমুনি চটে গেলো, আশেপাশেই কোথাও থেকে খিলখিল হাসির শব্দ 

তার সাথে টুকটাক কিছু কথা ভেসে আসছিলো, ভালো করে কান দিতেই লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠলো

দুজনের প্রেম ভালোবাসার ঘন মুহূর্তের কথাবার্তা চলছিলো

প্রেমিক প্রেমিকা এগুলো পার্কে বলে না নিশ্চয়ই, দম্পতিরা বন্ধ দরজার ওপাশে বলতে পারে

একটু পরেই কাম শীৎকার, আমি আর থাকতে না পেরে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়িয়ে যেতেই দেখি 

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, চারিদিক কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে অন্ধকার 

হিমেল বাতাসে শরীরে শীত শীত একটা অনুভূতি, চৈত্রের গরমে শীত লাগছে কেন? 

আমার হেলান দেয়া গাছের ঠিক উল্টোদিকে একজোড়া শরীর জোড়া লেগে আছে

খোলা পার্কে? আমাকে দেখেও তাদের কাজের কোন ব্যত্যয় হলো না 

আমার সামনেই বাকি কর্ম সম্পন্ন করছিলো দেখে লজ্জায় মাথা ঘুরিয়ে রাখলাম 

ওরা কর্ম সম্পাদন করে চোখ টিপে বললো - কি হে কাকু! পারফর্মেন্স কেমন দেখলে? 

আমি ধমকে উঠে বললাম, অসভ্যের দল তোদের লজ্জা সরম নেই?


ওরা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো

তারপর কি জিজ্ঞেস করলাম বুঝে উত্তর দিলো - এতে লজ্জা সরমের কি আছে?

তুমি করো না? 

আমি আবার চটে গিয়ে বললাম, দুষ্টের দল এগুলো খোলা আসমানের নীচে করতে আছে?

এগুলো দম্পতিরা গোপনে করে, ঘরের দরজা দিয়ে; তোরা শুরু করেছিস চৈত্রের বিকেলে 

তাও খোলা আকাশের নীচে বনে বাদাড়ে;


ওরা এবার বড় বড় চোখ করে বললো, দম্পতিরা করে মানে?

আজকাল দম্পতি পেলা কোথায় চাচা মিয়া? 

ওগুলো তো আদিম যুগের মানুষের কারবার ছিলো

বিয়েশাদী উঠে গেছে সেই কবেই? 

আর পৌষের সন্ধ্যায় তুমি চৈত্র পেলে কোথায়? স্বপ্ন দেখছ নাকি?  


এবার আমার আশ্চর্য হওয়ার পালা,

বিয়ে শাদী উঠে গেছে মানে?

কবে থেকে রে বুড়বকের দল? তোদের বাবা-মা বিয়ে করেন নি?

নাকি বিয়ে ছাড়াই তোরা দুনিয়াতে এসেছিস?


ওরা বললো? বিয়ে? বাবা-মা? 

ওহ তুমি বায়োলজিক্যাল বাবা-মার কথা বলছ?

আরে বাবা-মা থাকবে না কেন? তবে ওদের খবর কে রাখে? 

নিশ্চয়ই খবর নিলে পাওয়া যাবে সেন্ট্রাল ডাটাবেজে?


আমি চোখ বড় বড় করে বললাম - মানে?

মানে কি আবার চাচা মিয়া? তুমি কোন দুনিয়ায় বাস করছ?

আজকাল বাচ্চাকাচ্চা হতে আবার বিয়ে করতে হয় নাকি? 

দুজন ইচ্ছে করলেই বাচ্চা নিতে পারে,  

আমি বললাম - বিয়ে ছাড়াই বাচ্চা?


ওরা জবাব দিলো - হ্যাঁ! এটাই তো স্বাভাবিক

যখন যাকে ভালো লাগে কয়দিন একসাথে থাকি তারপর ভালো না লাগলে যে যার পথে

এর মধ্যে কারো ইচ্ছে হলে বাচ্চা নিয়ে নেয়, যতদিন খুশি বাচ্চাকে ডলাডলি করে আদর করে  

তারপর আবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছে হলে বাচ্চার রেখে দেয় 

ইচ্ছে না হলে বাচ্চাকে বাচ্চা ব্যাংকে জমা দিয়ে দেয়

তারপর আবার নতুন কারো সাথে কিছুদিন থাকাথাকি, পছন্দ না হলে আবার অন্য কেউ

ছেলে মেয়ে দুজনেরই সমান অধিকার, এটাই এখনকার আইন;


আমি বললাম - তোমাদের নিশ্চয়ই বাচ্চা হয় নি?

মেয়েটি বললো আরে কি বলো কাকু? হয়েছে তো তিনটা  

আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম - এই বয়সে তুমি তিনজনের বাবা?

মেয়েটি হেসে দিয়ে বললো - আরে আমি ওর বাচ্চাদের বাবা হতে যাবে কেন? 

তার সাথে তো মাত্র সপ্তাহ খানেক ধরে থাকা শুরু করেছি, ওর তিনজন বাচ্চার তিন বাবা

ছেলেটি কিছুটা লজ্জিত মুখ করে বললো - আমারও দুটো আছে, প্রথমটা ওর মা রেখে দিয়েছে  

আর দ্বিতীয়টা আমিও রাখি নি আর যার পেট থেকে হয়েছে সেও রাখে নি - বাচ্চা আছে বাচ্চা ব্যাংকে 

তোমার ইচ্ছে হলে নিয়ে নিতে পারো চাচা মিয়া, ওটা কিউট একটা মেয়ে; 


আমার মাথা কাজ করছিলো না 

কি সব শুনছি?

একবার ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি, মাথা ঝাড়া দিয়ে শরীরে চিমটি কাটলাম 

নাহ! ব্যথা পাচ্ছি তো! তারমানে স্বপ্ন না

আমি দুপুরে শুয়েছিলাম, চৈত্রের দুপুরে

আকাশে ছিলো কাঠফাটা রৌদ্দুর, গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিলো 

গাছে গাছে সবুজ পাতা ছিলো, 

অথচ ঘুম ভেঙেছে শীত শীত আমেজ নিয়ে, সন্ধ্যার প্রাক্কালে, ওরা বলছে পৌষের সন্ধ্যে  

ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম আম গাছের জায়গায় হেলান দিয়ে আছি অশ্বত্থ গাছে 

আমি এবার ছেলেমেয়ে দুটোকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি আসলেই পৌষ মাস?

ওরা বললো হ্যাঁ তো কাকু 

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম - চৈত্র মাসে ঘুমিয়ে পৌষ মাসে উঠলাম?

ছেলেমেয়ে দুটি বড় বড় চোখ করে বললো - তোমার মাথা খারাপ হয়েছে চাচা মিয়া

আট মাস কেউ ঘুমায়? 

এবার আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এটা কোন সাল বাবা?

ওরা বললো, দিন তারিখ ভুলে গেছ চাচা মিয়া? তোমার কি ডিমনেশিয়া? 

এটা দুহাজার সাতাত্তর সাল

আমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম - তাই তো হওয়ার কথা, তাই তো হওয়ার কথা

পঞ্চাশ বছর পরেও পৃথিবীটা টিকে আছে এটাই তো বেশি;   


কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে, 

আমি গভীর পুকুরের তলদেশ থেকে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি 

মায়াবতী একটি ছোট্ট বালিকা হাতে ফুল নিয়ে আমার গায়ে ধাক্কা দিচ্ছে 

আমায় চোখ মেলতে দেখতেই বললো - আফনেরে বোবায় ধরছিল চাচাজান

এই দুফুর রৈদে পার্কে কি করেন? বাইত যান

বলে সে ফুল বিক্রি করতে আবার পার্কের অন্যদিকে ছুটে গেলো,

যাহ্‌! এতক্ষণ কি সব আজগুবি স্বপ্ন দেখছিলাম!

তবে ওটা কি স্বপ্ন ছিলো? আমার কাছে মনে হচ্ছিলো একদম সত্যি ঘটনা

আচ্ছা! পৃথিবী কি আসলেই ঐদিকে যাচ্ছে?

বিয়েশাদী উঠে যাবে পৃথিবী থেকে? বাচ্চা ব্যাংকে বাবা-মায়ের ফেলে দেয়া বাচ্চারা থাকবে?

আজকাল অবশ্য এমনিতেই যা সব শুরু হয়েছে! 

পরকীয়া ঘরে ঘরে, দম্পতিদের মাঝে ঝগড়া ছাড়াছাড়ি নিত্য দিনের ঘটনা 

ডি এন এ টেস্ট পর্যন্ত যেতে হচ্ছে বাচ্চার বাবার পরিচয় নিশ্চিত করতে,   

আমি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কথা চিন্তা করতে করতে 

ছোট্ট মায়াবতী মেয়েটির অপসৃয়মান অবয়বের দিকে তাকিয়ে রইলাম

তারপর ধীরে ধীরে বাসার পথ ধরলাম .........


 


৩০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ভবিষ্যৎ পৃথিবী 

 - আহসানুল হক 




    

ভুক্তভোগী সন্তান

মানুষ বেঁচে থাকার একটা মাধ্যম খুঁজে 

সম্পর্কগুলো তার মধ্যে অন্যতম

এই সম্পর্কগুলোকে ঘিরেই মানুষের জীবন চলে

আবার সম্পর্কগুলোই সম্পর্কহীনতায় জীবনকে একলা ছুঁড়ে ফেলে;


আচ্ছা! বলতে পারো সকল সম্পর্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আপন কোনটি? 

চোখ বুঝে পঁচানব্বই ভাগ উত্তর মিলবে বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক

চার ভাগ হয়তো বলতে পারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক 

আর এক ভাগ বলতে পারে বাকি অন্যান্য সমস্ত সম্পর্ক; 


একটা মায়ের অনেকগুলো সন্তান থাকলেও অনেকগুলো সন্তানের একটিই মা 

একটা বাবার অনেকগুলো সন্তান থাকলেও সন্তানগুলোর বাবা একজনই 

বাবা-মায়ের অনেকগুলো সন্তান হলেও এক একজন এক এক রকম 

এক একজন সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের আচরণ এক একরকম

মজার ব্যাপার কি জানো? সব সন্তানের কাছে বাবা-মা একই রকম

তোমরা খেয়াল করেছে ব্যাপারটা? আমি কিন্তু করেছি; 


কোন এক ছেলে কিংবা মেয়ে বাবা-মায়ের জন্য হয়তো জান দিয়ে করেই যাচ্ছে!

অথচ বাবা-মায়ের একচোখা আদর অন্য এক সন্তানের জন্য, বড্ড চোখে লাগে 

সাধারণত মেয়েরা বাবা-মায়ের জন্য যতই করে থাকুক না কেন!

আমাদের দেশের বাবা-মার চোখের মণি হয়ে থাকে ছেলে সন্তান

চারিপাশের পরিবারগুলোর মধ্যে এটাই স্বাভাবিক দেখা যায় 

প্রচুর ব্যতিক্রমের গল্প আছে, কেউ বলতে চায় না, আমি চোখে দেখেছি; 


সন্তান বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, কিংবা স্বার্থপরের মত বৌ নিয়ে আলাদা থাকে

এটা আমাদের চারিপাশে খুব কমন; যৌথ পরিবার একসাথে মিলেমিশে? 

শহরে আজকাল এই ধ্যান ধারণাই বদলে গেছে, গ্রামে বা মফস্বলে এখনো হয়তো আছে   

কিন্তু অনেক বাবা-মাই ওনাদের অনেকগুলো সন্তানের মধ্যে বিশেষ একটি সন্তানকে 

সবসময়ই অতিরিক্ত দিয়ে থাকেন, সে আদর সোহাগই হোক কিংবা সহায় সম্পত্তিই 

আর কোন একজনকে সারাজীবনই বঞ্চিত করে, দেখেছ তোমরা? আমি দেখেছি;  


আমরা স্বাভাবিক নিয়মগুলো দেখেই অভ্যস্ত, উল্টোটা হলেই চোখে বড্ড লাগে

অথচ তোমাদের পঁচানব্বই ভাগ সবচেয়ে আপন সম্পর্কের মাঝে বহুভাগ উল্টোটা হয়ে থাকে

সন্তানরা এগুলো খুব সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখে, বাবা-মায়ের অশ্রদ্ধা কোন সন্তানই বা করে! 

ক্রমাগত অবহেলা সয়ে সয়ে ভুক্তভোগী সন্তানরা নিজের মাঝে গুমরে মরে  

আর সৌভাগ্যবান ঐসব সন্তানরা! সারাজীবন বাবা-মায়ের আদরে থাকে ঘরে   

ঐ বাবা-মা দের কেউ দেখেছ তোমরা? ঐ ভুক্তভোগী সন্তানদের? আমি দেখেছি।


 

৩০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা


ভুক্তভোগী সন্তান

 - আহসানুল হক 

 

 

 

        

নিজের সাথে মুখোমুখি

একদিন সকালের রোদে চা এর কাপ হাতে দুজন বসব মুখোমুখি 

না, না, দুজন বলতে আমি আর অন্য কেউ না

আমি আর আয়নার ওপারের আমি

শুধু আমরা দুজন, মুখোমুখি;


রোদ ভিজিয়ে চা খাব আর নিজেদের মধ্যে একটু আলাপন 

পুরনো কিছু সুখের স্মৃতি, কিছু কষ্টের কান্না আর আয়নার ওপারের আমি

টুপ করে চায়ের কাপে রোদ চুইয়ে পড়বে সুখের ঝলমলে স্মৃতিগুলো নিয়ে

আমি রোদ আড়াল করে দুঃখগুলো এক চুমুকে শেষ করে আকাশটার দিকে তাকাবো

ওখানে কিছু মেঘ উড়ছে, সাদা সাদা পেঁজা তুলোর মত 

পাশেই একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ঝেঁপে লাল টকটকে ফুল ফুটেছে

আমি কষ্টের রক্ত-লাল চা চুমুক দিয়ে উদাস চোখে তাকিয়ে দেখি

একটা কোকিল ডাকছে পাশের ডালপালা-হীন কড়ই গাছটাতে, 

হঠাৎ করেই আমার মন ভালো হয়ে গেলো

কান্নাগুলো চুমুকে গিলে ফেললে মন তো এমনিতেই ফুরফুরে হয়ে যায়

তার উপর আবার আলো ঝলমলে কুহুকুহু ডাকের সকাল,

শব্দরা খেলা করছে মাথায় 

একটা কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে, 

থাক, এখন লিখব না

শব্দগুলোকে সারাদিন কাজের ফাঁকে লুকিয়ে রাখব

তারপর সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যের পরে না হয় আবার ফিরে আসব

ঝুল বারান্দায় আবার চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার নিজেকে দেখব! 


আজ চাঁদ উঠবে কি? জ্যোৎস্না হবে?

অনেকদিন হয়ে গেছে চাঁদের হিসেব রাখি না 

আগে চন্দ্রমাস প্রায় মুখস্থই থাকতো,

সেই অনেকদিন আগে, যখন তোর জন্য রাত জাগতাম!

তোর জন্য কবিতা লিখতাম

আর জ্যোৎস্না হোক কি অমাবস্যা! প্রতি রাতে তোকে ভালোবাসতাম;  

আজকাল ঐসব মনে হলে বড্ড হাসি পায়

কি ছেলেমানুষই না ছিলাম! 

প্রেম ছিলো, ভালোবাসা ছিলো, হাসি ছিলো, কান্না ছিলো 

অভিমান ছিলো, রাগ ছিলো, আর ছিলো মান ভাঙানোর দায়

আজ তুই কোথায়? আমিই বা কোথায়? 

আসলে জীবনটা কবিতা না, 

সব সময় সোজাসাপ্টা গল্পও না 

আমার কাছে আজকের জীবনটা যেন অনেকটা রসকষহীন প্রবন্ধের মত

শুধু আমার কাছে না রে! যারা জীবন দেখেছে যারা জীবনের গভীরে গিয়েছে

ওদের সবার কাছেই জীবনটা হয়তো প্রবন্ধই ঠেকেছে, 

বেশীরভাগ মানুষের জীবন খাতা কষ্ট করে পড়তে হয়

ওটা খুব সহজ কোন রম্য গল্প নয়, নয় কবিতা 

কে আর প্রবন্ধ পড়তে চায়? 

জীবনটা কবিতা হলে আসলে খুব খারাপ হতো না

অনুভবে অনুভবে প্রেম, অনুভবে অনুভবে জীবন পাড়, 

জীবনটা বেশীরভাগ মানুষের কাছে পেটের ধান্ধা! প্রবন্ধের কঠিন সংসার; 


আজ রাতে আবার না হয় আরেকবার বসব ইজিচেয়ারে, চায়ের কাপ হাতে 

চাঁদ উঠলে জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়ে একটা কবিতা লিখব 

অমাবস্যা থাকলে না হয় জীবনের প্রবন্ধটাকে খুলে পড়ব 

তারপর নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া 

অন্ধকারে নিজের সাথে কথা বলতে সুবিধা হয় 

ভুলগুলো সহজেই বের করা যায় নিজের সাথে নিজের কথায়,

আয়নার সামনে নিজের সাথে মুখোমুখি বসে। 


২৯ এপ্রিল, ২০২২ 


#কবিতা 


নিজের সাথে মুখোমুখি 

 - আহসানুল হক 

বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২

কোথায় চলেছি আমরা?

সুঁই এর খোঁচা খেয়েছ কখনো?

খেলতে গিয়ে পায়ে কাঁটা ফোটে নি কার? 

পড়ে গিয়ে ছিলে যায় নি, কেটে যায় নি এমন কেউ আছে?

খেলতে গিয়ে, পড়ে গিয়ে কিংবা এক্সিডেন্টে হাত পা ভেঙেছে কখনো?

আচ্ছা! মাথা ব্যথায় কাতরায়নি এমন কেউ আছে?

চরম মাইগ্রেনে কাউকে কাউকে দেয়ালে মাথা ঠুকতে দেখেছি আমি

তাহলে কেটে ছিঁড়ে যাওয়ার, ভেঙ্গে কিংবা মচকে যাওয়ার যন্ত্রণা 

শারীরিক কষ্ট, ব্যথা বেদনা তো তোমরা জানই,

জানো না?


রান্না করতে গিয়ে তেলের ছিটায় ফোস্কা পড়ে নি এমন গৃহিণী আছে?

কিংবা সিগারেটের আগুনে হাত পোড়ায় নি এমন খুঁজে পাওয়া ভার

আগুনে পোড়া, ইলেকট্রিক শক লেগে পোড়ার মত বড় এক্সিডেন্টের কথা বাদই দিলাম    

নিদেন পক্ষে ম্যাচের কাঠি জ্বালাতে গিয়ে পোড়ার জ্বলুনি সয় নি, এমন কেউ আছে?

পোড়ার যন্ত্রণা কি ভয়াবহ কষ্টের যার না পুড়েছে সে বুঝবে না; 


এই যে ব্যথা বেদনার কথা বলছি! 

এই যে পোড়ার কষ্টের কথা বলছি! 

কেন জানো? 

একটু পরে বলছি;  


আচ্ছা! তোমরা তো নিশ্চয়ই কোরবানি দিতে দেখেছ

নিদেন পক্ষে মুরগি জবাই করা দেখে নি কে?

মাংস খায় না এমন মানুষ হাতে গোনা,

মৃত্যু যন্ত্রণায় প্রাণীগুলোর ছটফট করা দেখেছ?

নাকি শুধু মাংসই খেয়েছ? 

এই যে প্রাণীগুলোর ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণার কথা বলছি! 

কেন জানো? 


কারণ আমিও মৃত্যু'কে গলায় পড়েই জন্মেছি 

শুধু আমি না

আমি, তুমি, সে ও আর আমরা সবাই,

পশু পাখি সহ সমস্ত প্রাণীকুল

প্রত্যেকটা জীবিত'কেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে,

মৃত্যুটা যে কি কষ্টের! কি ভয়াবহ কষ্টের! কখনো চিন্তায় আসে কি?

উঁহু! আসে না, আসলে মৃত্যুর কষ্টটা আমরা অনুধাবনই করতে পারি না,

একদিন, মাত্র একদিন একটা মুরগি জবাই করে তার মৃত্যু যন্ত্রণাটা নিজ চোখে দেখ, 

বুঝতে পারবে মৃত্যু যন্ত্রণা কাকে বলে; 


মৃত্যু যন্ত্রণা সইতে পারার মত শক্তিই যেখানে আমার নেই!

সেখানে দোযখের আগুন সইব কিভাবে?

অথচ কি অবলীলায়'ই না আমরা এগিয়ে চলেছি দোযখের দিকে!  

পৃথিবীর তুচ্ছ অর্থ, স্বার্থ আর খ্যাতির নেশায়। 


২৮ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


কোথায় চলেছি আমরা?

 - আহসানুল হক 









শব্দের উপহাস

আজকাল মাথা কোন কাজ করে না

কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে, কখনো একদম ফাঁকা 

কোথাও বসে থাকলে বসে বসেই ঝিমাই

তখন শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করে, 

কখনো যেখানে বসে আছি সেখানেই শুয়ে পড়ি 

কখনো শরীরটাকে টেনে বিছানায় নিয়ে যাই 

সাদা ছাদটার দিকে তাকিয়ে থাকি, অথবা চোখ চোখ বন্ধ করে রাখি

ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে জেগে থাকি, অথবা ঘুমিয়ে পড়ি নিজের অজান্তে;


আজকাল মাথায় একটা দুটো শব্দ খেলা করে

খুব হঠাৎ হঠাৎই, দমকা হাওয়ার মত 

মাঝে মধ্যে শব্দগুলোকে সাজাতে চেষ্টা করি 

বেশীরভাগ সময় পারি না,

দুটো তিনটে চারটে শব্দ মিলে মাথার ভেতর শব্দজট তৈরি হয়

আমি শব্দগুলোর দিকে অসহায় চেয়ে থাকি, এরা বড্ড যন্ত্রণা দেয়;


আজকাল কোনকিছু গুছিয়ে চিন্তা করতে পারি না

সামনে মানুষজন কথা বলতে থাকে আমি শোনার ভান করে তাকিয়ে থাকি

অল্প কিছু কথা শুনি, অল্প কিছু বুঝি আর বেশীরভাগ কথাগুলো শুনিই না

আমার আসলে কোনকিছু শুনতে ইচ্ছে করে না 

আমার কোনকিছু বুঝতে ইচ্ছে করে না  

যত বেশি কথা শুনি! শব্দগুলো কানে গুঞ্জন তোলে 

আমার ভাবনার শব্দগুলো আর ওদের কথার শব্দগুলো মিলে 

সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায়

অনেকটা যেন শব্দে শব্দে শব্দ দূষণের মত, 

অথচ একটা সময় এই শব্দ নিয়ে খেলতেই বড় ভালো লাগতো

ওগুলোকে কাগজে আঁকতাম, শব্দের আগে পিছে কিছু শব্দ জুড়ে দিতাম 

কখনো শব্দ দিয়ে লাইন বানাতাম কখনো পুরো প্যারা, 

শব্দ জুড়তে জুড়তেই ওগুলো কখনো হয়ে যেত কবিতার লাইন 

ছন্দে কিংবা ছন্দ হীনতায়, 

কখনো শব্দ গাঁথতে গাঁথতে পুরো গল্পই গেঁথে ফেলতাম,

সেগুলো আজ শুধুই স্মৃতি;


আজকাল কোনকিছুই পারি না 

তবুও মাঝেমধ্যে একটা দুটো তিনটা শব্দ এসে মাথার ভেতর গুঞ্জন তোলে

বেশি শব্দ চলে এলেই শব্দগুলো মাথার ভেতর শব্দজট তৈরি করে

যেন বলতে চায় আমাদের কাগজে আঁক, আমাদেরকে গাঁথ 

আমি অসহায় শব্দদের কোলাহল শুনি, 

মাঝে মধ্যে খুব বেশি অসহ্য মনে হলে চোখ বন্ধ করে থাকি

কিংবা মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে রাখি, 

তখন ঘন অন্ধকারেও শব্দগুলো হো হো করে হাসে,

শব্দের উপহাস শুনতে শুনতে কেটে যায় আমার ঘুমঘুম দিনরাত্রি। 


 

২৭ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


শব্দের উপহাস

 - আহসানুল হক 




   

 




চশমায় মানুষ দর্শন

খালি চোখে আজকাল মানুষ দেখতে ইচ্ছে করে না 

মানুষের রিপুগুলো বড্ড উগ্র হয়ে ফুটে ওঠে 

লোভের লোলুপ দৃষ্টি ইদানীং কেন জানি অসহ্য লাগে

অথচ এগুলোই দেখতে হয় খালি চোখে, মানুষের চোখে তাকিয়ে; 


তাই আজকাল চোখের ওপর চশমার পর্দা রাখি, খুব গাঢ় রঙের

অনেকটা কালোর কাছাকাছি, যদি কালোতে কালোতে কাটাকাটি হয়ে যায়!   

রিপুর রঙ তো কালোই, তাই না?  

আচ্ছা স্বার্থের রঙ কি? 

মানুষ অর্থের রঙিন রঙ দেখে মোহিত হয় 

অর্থের লিপ্সার রঙও কি রঙিন? 

আচ্ছা! রঙিন অর্থ পকেটে ঢুকতেই কি মন কালো হয়ে যায়?

সবার নয় নিশ্চয়ই,

আমি মাঝে মাঝে মানুষের মাঝে মানুষ খুঁজি;  


আজকাল চারিপাশটা একটু দূর থেকে দেখতে চাই

তাই মাঝে মধ্যে চোখে ক্যামেরা লাগাই, 

লম্বা লেন্স দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি কিংবা পাহাড়ের

অথবা সমুদ্রের, প্রকৃতির রঙে কোথাও স্বার্থের কালো রঙ নেই 

পাখিদের মধ্যে নেই স্বার্থের দ্বন্দ্ব, কোত্থেকে থাকবে বলো!

পাখিদের আকাশটা অনেক অনেক বড়; 

  

পশুদের মধ্যে অবশ্য কিছু মারামারি দেখি, সেটুকু খাদ্য নিয়ে

আশ্চর্য হয়ে দেখি ক্ষুধা মিটে গেলেই ওদের হিংস্রতা কমে যায়, 

অথচ মানুষের হিংস্রতা কমে না, কমে না তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা 

লোভের কাছে পরাজিত মানুষ গলাটিপে হত্যা করে আপন সম্পর্কগুলোকে

তারপর রাশিরাশি বিত্তের ওপর শুয়ে বসে একলা জীবন কাটায়,  

খোলা চোখে এদের দেখলে আমার বড্ড মায়া হয়; 


আমার মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে এদের মস্তিষ্কটা মাইক্রোস্কোপের নীচে নিয়ে দেখতে 

নিওরণ কোষের একটা ছবি যদি অনেক বড় করে দেখতে পেতাম?

ভালো করে জুম করে খুঁজে দেখতাম ওখানে আসলে মনুষ্যত্ব কোথাও আছে কি না! 

চোখে প্লাস পাওয়ারের চশমাটা লাগিয়ে ডিকশনারির দিকে তাকিয়ে আছি

মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা পড়ছি, 

আজকাল ওটা শুধুমাত্র ডিকশনারিতেই পাওয়া যায়।  




   

২৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


চশমায় মানুষ দর্শন 

 - আহসানুল হক 


ক্ষুধাপোকা

ক্ষুধা লাগলেই খেতে চায় প্রাণীকুল 

সে পশুপাখিই হোক কিংবা মানুষ 

খাওয়ার চাহিদা জানান দেয় ক্ষুধা; 


হিংস্র পশুপাখি শিকার করে খায়

গৃহপালিত পশুপাখি মানুষ যা দেয় তাই খায় 

মানুষেরও ক্ষুধা লাগে, ক্ষুধা লাগলেই জানান দেয় 

কেঁদেকেটে কিংবা অন্য কোন উপায়ে, মানুষকেও খেতে হয় 

বেঁচে থাকা পশু-প্রাণী সকলেই ক্ষুধায় কাতরায়, সবাইকে খেতেই হয়; 


শিকারি পশুপাখি ক্ষুধা না লাগলে শিকার করে না 

ওরা অকারণ হত্যা করে না, পেটে ক্ষুধা না থাকলে তো না ই  

হত্যা করে না গৃহপালিত পশুপাখি অকারণে  

শুধুমাত্র মানুষই অকারণ হত্যা করে, কখনো বা খেলার ছলে;   

একমাত্র মানুষই খেতে চায় ক্ষুধা না লাগলও  

ওটা আসলে ক্ষুধা না, ক্ষুধা নামক এক পোকা - চোখে ক্ষুধাপোকা, মনের ক্ষুধাপোকা 

মানুষ যত না ক্ষুধা লাগলে খায়! তার থেকে বেশী খেতে বসে চোখের ক্ষুধায়

আসলে কি খায়? এক পেটে আর কতটুকুই আটে? 


ক্ষুধার্ত মানুষ পেটের ক্ষুধায় খাদ্য চায় 

পোকা আক্রান্ত মানুষ চোখের ক্ষুধায় সব চায়

যত পায় তত চায়, আরও চায়, আরও চায়

মানুষের চোখের ক্ষুধার কোন শেষ নেই, শেষ নেই লোভের 

লোভ রিপুটা যেমন অসীম, মানুষের চাহিদাও যেন অসীম; 


লোভে কি পাওয়া যায়? কি দেয় লোভ আমাদের?

অর্থ বিত্ত, টাকা পয়সা, সহায় সম্পত্তি রাশিরাশি

একবার মেপেই দেখি না এক বসায় কতটুকু খেতে পারি! 

খাওয়ার প্লেটটা একবার সামনে নিয়েই না হয় বসি;

 

লোভে কি হারায়? 

সম্পর্ক, 

তারপর? 

লোভটুকুই থেকে যায়, সম্পর্কহীনতায়। 



২৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ক্ষুধাপোকা

 - আহসানুল হক 




  




  

ওপরে ওঠার বাসনা

সবারই দেখি অনেক তাড়া

অনেক দূরে যাওয়ার, অনেক ওপরে যাওয়ার

জীবনে অনেক ওপরে ওঠার বাসনা 

জীবনে অনেক দূরে যাওয়ার ইচ্ছে, অনেক দূরে; 


আমারই কোন তাড়া ছিলো না কখনো 

ওপর কিংবা দূর আমার মনের অনেক দূর 

আমি এই ভালো, এক পা এক পা করে 

যখন ভোর হয় আমি সূর্য ওঠা দেখি পিঠে রোদ মাখি

যখন বৃষ্টি হয়, বৃষ্টিতে ভিজি, বৃষ্টি বিলাস করি

যখন চাঁদ ওঠে, আমি ছাদে চলে যাই কিংবা খোলা মাঠে

উদোম গায়ে শুয়ে থাকি, সারা শরীরে জ্যোৎস্না মেখে 

জ্যোৎস্নাস্নান করি, হেঁড়ে গলায় গান গাই গলা ছেড়ে;  


তোমাদের মত আমার এত তাড়া নেই, জীবনে ওপরে ওঠার  

যারা ওপরে উঠতে চায় তারা গায়ে রোদ মাখতে পারে না 

তারা বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না, তারা জ্যোৎস্না বিলাস জানে না 

তাদের শুধু টাকা, টাকা আর টাকা 

টাকার তলায় চাপা পড়ে যায় সময় 

টাকার তলায় চাপা পড়ে দিনরাত্রি আর চন্দ্রসূর্য 

এগুলোর আসলে তাদের জীবনে কোন মূল্যই থাকে না 

তার ওপরে দিকে তাকিয়ে থাকে আর টাকা টাকা করে

টাকা টাকা করে হারিয়ে ফেলে ঘুম, হারিয়ে ফেলে শান্তি 

হারিয়ে ফেলে পরিবার, হারিয়ে যায় সম্পর্ক 

সবকিছু হারিয়েও তারা ওপরে উঠতে চায়, অনেক ওপরে

ঐ বিশাল টাকার পাহাড়ের ওপরে;   


তারচেয়ে এভাবেই আমি ঢের ভালো আছি

এক পা দু পা করে পথ চলি 

গায়ে রোদ মেখে ঘেমে নেয়ে যতটুকু প্রয়োজন পাথেয় কুড়োনোর চেষ্টায় থাকি

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পরিশ্রমের ঘাম ধুয়ে ফেলি, বৃষ্টি বিলাসের ছলে

কখনো কখনো ব্যর্থতার কান্না ধুয়ে নেই ঝুম বৃষ্টির জলে,

আসলে মানুষের প্রয়োজন কতটুকু?

পেট ভরতে কি অনেক খাবার লাগে? 

চোখের ক্ষুধার অবশ্য শেষ নেই কোন, শেষ নেই মনের ক্ষুধার

আমার ছোট্ট একটি সংসার, প্রয়োজন অল্প একটু খাবার

তার জন্য আমার ঐ ওদের মত অত ওপরে ওঠার দরকার নেই

মাথার ওপর টিনের একটা ছাদ

দুবেলা পেটে দু মুঠো ভাত 

আর সন্তান সন্ততি পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে বসবাস। 


২৫ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 



ওপরে ওঠার বাসনা 

 - আহসানুল হক  

সইত্য কতা - রম্য

ভাইরে!

সইত্য কতার ভাত নাই। এইডা আইজ বুইড়া বয়সে আইয়া বুঝলাম। 


হেই বাইল্যকাল থাইক্কা বাবায় শিখাইছে মিছা কতা কতি অয় না।

আমি আবার বাবার চরম ভক্ত, বাবায় যা কয় তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। 

 

একবার ছুডুবেলায় দাদার চাইলের মোটকির থাইক্কা আম চুরি কইরা খাইছিলাম। দাদায় আমার আমগুলা খাইলো কুন বদমাইশ কইরা হুলুস্থুলুস লাগায় দিছিলো; আমি ডরের চোডে হেইদিন বাইত আহি নাই। যদি আমারে জিগাইলে মিছা কতা কতি না পারি! তয় তো দাদার কাডি হাতের কিল একটাও মাটিত পড়ব না। 


তো যা কইতাছিলাম! এই হাছা কতা কওনে লাইজ্ঞা আমার গেবনে কুচ্চু ওইলো না। কুচ্চু মানে কইতাছি কুনু ব্যবসাই করবার পারলাম না। কেন? আমি মিছা কতা কতি পারি না। যেই ব্যবসাই করবার যাই, কাস্টমারে ঐ প্রোডাক্ট বা সার্ভিস লইয়া কিচু জিগাইলে আমি বেবাক সইত্য সইত্য কইয়া দেই। 

এতে অয় কি? মাসখানেক পর বাপের ইনভেস্ট করা টেকার ব্যবসা ডুইব্বা পানির তলানিত গিয়া ঘুমায়। বাপ কয়দিন গাধা গরু কইয়া চিল্লাপাল্লা কইরা আবার নয়া আরেক ব্যবসা দিয়া বহায় দেয়। হাছা কতা কইয়া হেইডারও চব্বিশটা বাজায় দেই। (ঐদিন নেটে একটা  ভিডু দেখতাছিলাম। স্যাটায়ার একটা ভিডু, ব্যবসায়ী সইত্য কতা কইতাছিলো আর তার ব্যবসার চৌদ্দডা বাজতাছিলো।  ভিডুডা দেইহা কেন জানি আমার গেবনের কতা মনে হইয়া গেলো। আরে আমিও তো এইতানই করছি সারা গেবন। হাছা কতায় কি ব্যবসা অয়?) 


যেমুন একবার ফলের দোকান দিয়া বইলাম - ফল একটা নিজে খাইয়া দেহি দুইন্যার চুক্কা। কাস্টমার আইয়া জিগাইলো, ভাই ফল মিস্টি না টক। আমি কইলাম ভাই দুইন্যার চুক্কা। একবার খাইলে থুতাইতে থুতাইতে বমি কইরালবেন। -  


একবার কাপড়ে দোকান দিয়া বইলাম, কাপড় কইতে তো আমি আবার গামছা ছাড়া কিচু বুঝি না। তো বাবায় কইলো তুই তো গামছা পইড়া বইয়া থাকস! তো এই গামছা লইয়াই না হয় কিচু একটা কর। আমি উৎসাহে গামছা দা ফতুয়া পাঞ্জাবি বানাইয়া দোকান দিয়া বইলাম। গামছার লট আনছিলাম শ্যামলির থন। রাস্তার পাশে থানে থানে গামছা টানায় বইয়া থাহে দেকছুইন মনে লয়। তো বানানের পর একটা গামছা নিজেই পড়লাম। ওমা? বৈকালিন হাঁটাহাঁটির পরে ঘাইম্যা বাইত আইয়া গামছা খুলার পর দেহি প্যান্টের রঙ বদলাইয়া গেসে। গামছার থন ঘামেই রঙ উইট্টা প্যান্টে মাখামাখি হইয়া গেসে। গামছা ধুইয়া দেহি খাইপ্পা চিপা হইয়া গেসে। ফতুয়ার ভিত্রে আমার ভোটকা শরীর আর ঢুকে না। ব্যাপার কি? বৌ কইলো তরে ঠকাইছে। দুই লম্বরি গামছা দিয়া দিসে। আমি কইলাম এই গামছা দা এতলি ফতুয়া আর পাঞ্জাবি বানাইলাম যে! বৌ কইলো তুই কুচু না কইয়া বেইচ্চা লা। 

এহ! আমারে জিগাইলে আমি বুঝি মিছা কতি পারুম? পরদিন কাস্টমারে আইয়া পেরথমেই জিগাইলো, ভাই রঙ উঠবো না তো? আমি কইলাম রঙ উঠব মানে? একবার ভিজাইয়া দেহুইনই না! এককালে আফনের বাকি কাপড় চোপড়ও গামছার রঙে রঙিন হইয়া যাইব। বেডায় আগুন দৃষ্টিতে আমার দিকে চাইয়া থাইকা দোকান থন বাইর হইয়া গেলো। আরেকজন জিগায় ভাই ধোয়ার পর খাপব না তো! আমি কইলাম ভাই তিন সাইজ বড় লইয়া যান। তাইলে খাইপা খুইপা ঐডার ভিত্রে আটতেও পারেন। কাস্টমারে কুচু না কইয়া বাইর হইয়া গেলো। আমার ব্যবসার লালবাত্তি জ্বললো। 


একটা একটা কইরা গেবন ভর খালি ব্যবসা করার ট্রাই কইরা গেলাম। আমার কপালে ব্যবসা হইলো না। কেমনে হইব? হাছা মাতি যে! 


এক এক কইরা বেবাক ব্যবসা ডুবানের পরে একদিন বাপে কইলো, তুই এত গাধা কেরে? আমি বাপরে কইলাম, আমারে মিছা কতা কতি না কইরা আফনে মিছা মাততাছেন কেরে?

বাপে আচানক হইয়া কইলো - আমি আবার মিছা কই মাতলাম।

আমি কইলাম এই যে অক্ষণে কইলেন! জলজ্যন্ত একটা মানুষরে গাধা কইলেন। এইডা মিছা না। 

বাবায় কপাল চাপড়াইয়া কইলো - তরে লইয়া কি করুম বাপ? আমি মইরা গেলে তুই কেমনে চলবি?

আমি কইলাম - সইত্য কতা বইলা। আফনেই না শিখাইছেন সইত্য যতই তিতা হোক কক্ষণো যাতে মিছা না মাতি। চিন্তা কইরেন না গো বাবা - এই দুইন্যায় অহনো তিতা খাওনের লোক আছে। 


অহন বেকার বইয়া থাকতে থাকতে চিন্তাইতে থাকি - আসলে তিতা খাওনের লোক পিত্থিমিতে আছে নাকি? 

চিন্তাইতে চিন্তাইতে চিন্তার ফিলিপস বাত্তি জ্বইল্লা উইট্টা কয় - উঁহু! সইত্যের তিতা কেউ খায় না। 


#অনুভবের_অনুভুতি 

#রম্য 


সইত্য কতা 

 - আহসানুল হক 


   

ক্ষুধার রঙ

ক্ষুধা পেটে কথা ভালো লাগে না

ভালো লাগে না কবিতা  কিংবা গল্প  

ক্ষুধা পেট খাদ্য চায়, কাব্য না 

টাকায় খাদ্য সংস্থান বেশী কিংবা অল্প 

অসহ্য ক্ষুধা নিয়ে এদিক ওদিক চাই 

যদি কোথাও খাদ্যের সংস্থান কিছু পাই! 


চাটুকার'কে সবাই পছন্দ করে, কম আর বেশী

আমি একদম সহ্য করতে পারি না 

অথচ আমি নিজেই চাটুকার, স্বার্থের প্রয়োজনে 

অর্থের প্রয়োজনে, ক্ষুধা নিবারণের আয়োজনে 

ক্ষুধা পেটের লজ্জা শরম বলে কিছু আছে নাকি?

খাদ্যের জন্য মানুষ কি না করে? আয়নায় দেখি; 


একটা সময় গল্প লিখতাম, এর ওর তার গল্প 

এখন নিজেকেই নিজে গল্প বলি, ক্ষুধার গল্প 

একটা সময় কবিতা লিখতাম, মনে প্রেম ছিলো

এখন ক্ষুধা কলম পিষাচ্ছে, চাকরি নিতে হলো 

কতদিন পেটে ভরিয়েছি এক আঁজলা পানি খেয়ে!   

সন্তানদের ভরণ পোষণ করতে হয় টাকা দিয়ে; 


টাকা বড্ড আজব এক বস্তু, টাকা যার খাদ্য তার

তার থেকেও আজব ক্ষুধা, যার পেট ক্ষুধা তার 

তবুও মানুষ হওয়ার যন্ত্রণা, পরিবারের খাবার জোগাড়

বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান; পারিবারিক বন্ধন; ওটাই সংসার

খাদ্য যোগাতে অর্থের প্রয়োজন, বাবা হওয়ার দায়ে  

চাকরি কিংবা ব্যবসা, অর্থ উপার্জন যে কোন উপায়ে;   

     


মাথার ভেতরে কোথায় জানি কেমন যেন এক বোধের অনুভূতি কামড়ায়

আমি মনে শব্দের রঙ দেখি, ওরা হাসে, খেলে, কখনো কখনো দৌড়ায়  

একসময় হাতে এসে বসে, চুলকায়, যতক্ষণ হাত কলমের ছোঁয়া না পায়, 

কোন এক সময় কলমের শব্দ-বমি করতাম ছন্দে কিংবা ছন্দ-হীনতায়

কেউ কেউ ওগুলোকে কবিতা বলতো, অনুভবে কিংবা অনুভবহীনতায় 

আজকাল ক্ষুধার রঙ দেখি, কলমের রঙ কবেই ফুরিয়ে গিয়েছে ক্ষুধায়!  


২৩ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


 

ক্ষুধার রঙ 

 - আহসানুল হক 



আপন কে?

জীবনে কার সাথে কতটুকু সময় কাটাই আমরা?

পেছন ফিরে একবার দেখিই না জীবনটা! 

আপন পর মাপার আসলে কি কোন নিক্তি আছে?

অমন একটা কিছু থাকলে খুব ভালো হতো মানুষ চেনার জন্য;


সেই শিশু অবস্থা থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেন মা,

রাতভর শিশুর ঘ্যানঘ্যান কান্নায় ঘুমোতে পারেন না বাবা

হয়তো কিছুদিন চেষ্টা করেন বাবা,  

ওনার তো সকালে অফিস না করলেই চলে না

ফলশ্রুতি কিছুদিনের মধ্যেই বিছানা কিংবা ঘর আলাদা;   

মায়ের বিছানায় তিন, পাঁচ কিংবা সাত বছর! তারপর বিছানা আলাদা

মায়ের গায়ের গন্ধ আজ আর মনে পড়ে না

বাবার ঘামের গন্ধ খুব কম ছেলেদের স্মৃতিতে থাকে 

মেয়েদের থাকতেও পারে, ওরা কেন জানি একটু বাবা-ঘেঁষা থাকে; 


বিছানা আলাদা হওয়ার পর হয় অনেকটা সময় কেটে যায় একলা 

অথবা বড় ভাইবোন থাকলে বিছানা ভাগ করে নেয়া 

কৈশোর থেকে যৌবনের একটা সময় পর্যন্ত এভাবেই চলে যায়,

তারপর প্রাকৃতিক নিয়মেই জীবন সঙ্গী

কারো প্রেম করে, কারও বিয়ে বাবা-মায়ের পছন্দে

যৌবনে একজন চলেই আসে বিছানার অধিকার নিয়ে;

তারপর জীবন চলে জীবনের চাকায় 

সংসার, সন্তান সন্ততি; তারপর নিজের পরিবার 

কারো সংসারে বাবা-মা সঙ্গে থাকেন, তবে আজকাল বেশীরভাগই আলাদা

ভাই-বোন যার যার সংসারে, সন্তানরা একটু বড় হলে স্কুল-কলেজ পড়ালেখায় ব্যস্ত

একজনই থেকে যায় পাশে, বিছানার অধিকারে বিছানা দখল করে 

সেই যে যৌবনে যে এসেছিলো ঘরে 

সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে, অসুখে-বিসুখে, ভালো-মন্দে পাশে থাকে 

কোন একজন ওপার যাত্রায় চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত; 


মধ্য পঞ্চাশে এসে জীবনটা বড্ড অন্যরকম ঠেকে 

জীবনের বোধগুলো অন্যরকম লাগে

পেছন ফিরলেই চেনা মানুষগুলোর অচেনা চেহারাগুলো চোখে ভেসে ওঠে

খুব সহজেই আলাদা করে ফেলা যায় কে পাশে ছিলো দুর্দিনে, 

মধ্য পঞ্চাশের এ দলটার মধ্যে অল্প কিছু বিপত্নীক কিংবা বিধবা 

আর খুব অল্প কিছু অংশ আলাদা জীবন কাটায়, যাদের বনিবনা হয় নি সংসারে

আর বাকি সৌভাগ্যবানদের জীবনে সঙ্গী বা সঙ্গিনী আছে পাশে

মৃত্যু এসে পরস্পরকে আলাদা করে দেবার আগ পর্যন্ত; 


আমি জীবনের পেছনের প্রত্যেকটা পর্যায় খুলে খুলে দেখতে থাকি

আপন আর পর যাচি; 


লোকে বলে বাবা-মা সবচেয়ে আপন,  

তাহলে ওল্ড-হোমগুলো এত রমরমা ব্যবসা কেন? 

অন্যদিকে দেখি বাবা-মা কোন এক সন্তানকে বঞ্চিত করে 

তাদের স্নেহ থেকে, এমন কি তাদের সহায় সম্পত্তি থেকে

হ্যাঁ, আপন বাবা-মাই করে, কিভাবে করে?

আপন সন্তানরাই বা কিভাবে বাবা-মা'কে ওল্ড-হোমে ফেলে রাখে? 


 - ভাই বোন?

ছোটবেলায় আপন 

তারপর মারামারি কাটাকাটি, সম্পত্তির ভাগ চলে আসে যখন; 


আর কে রইলো জীবনে?

সন্তান-সন্ততি? 

ঐ যে বললাম! কবে ওল্ড-হোমের চেহারা দেখব এই ভয়ে আছি; 


বাকি রইলো একজন

ঐ যে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন বিছানার অধিকার নিয়ে এসেছিলো যৌবনে!

আছে, এখনো আছে

সুখে-দুঃখে, অভাবে-অনটনে, হাসি-কান্নায়, অসুখে-বিসুখে 

পাশেই আছে, কাছেই আছে, জীবনের সাথে লেপ্টে আছে; 



তাহলে জীবনে কে সবচেয়ে বেশী আপন?

আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে হয় বোধহয় আমিই,

সবকিছু দেখে, সবকিছু জেনে, সবকিছু বুঝেই বলছি স্বার্থপরের মতন;


যেভাবেই মনকে আড়াল করি না কেন! 

খুব ভালো করেই জানি

যুগ যুগ পাশে থাকা মানুষটা হাত ছেড়ে দেবে না কখনো।  

 


২১ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 



আপন কে? 

 - আহসানুল হক 







  


 


রুটিন

জীবনের শুরুতে মায়ের বুকে, বাবার কোলে  

ঐ সময় বাঁধাধরা কোন রুটিন থাকে না  

রুটিন থাকে না খাওয়ার, ঘুমানোর, কান্না-হাসির 

অন্যান্য কোনকিছু বোঝার মত বুদ্ধিই থাকে না;


মানব শিশু বড় হতে হতে রুটিনে বাঁধা পড়ে

রুটিন করে খাওয়া, ঘুম, পড়ালেখা, খেলাধুলা

রুটিন না মানলে বাবা-মায়ের শাসন

রুটিনের ছকে অভ্যস্ত হয়ে যায় জীবন; 


তারপর যৌবনে কিছু রুটিনের হেরফের

কিছু প্রেম, কিছু দুষ্টুমি, কিছু অবাধ্যতা

নব্বই এর দশক পর্যন্তও এমনই দেখেছি  

আজকালকার ছেলেমেয়েদের আর রুটিন কোথায়?


প্রৌঢ়ত্বে এসে রুটিনে কিছু হেরফের হতে থাকে

খাওয়ায় অনীহা, সন্তানদের নিয়ে টেনশন 

অসুখ-বিসুখ, শারীরিক সমস্যাগুলো শরীরে বাসা বাঁধে

শুরু হয় ঘুমের সমস্যা, বদলে যেতে থাকে ঘুমের রুটিন; 


বার্ধক্যে শরীরটাই বড় সমস্যা, বদলে যায় সকল রুটিন 

বদলে যায় অসুখের ধরণ, স্মৃতিশক্তি লোপ পায়  

রুটিনের সাইকেল কারো ঘুরে যায় তিনশত ষাট ডিগ্রী

সাইকেল বদলে যায় ঘুমের, তখন ঘুমঘুম জাগরণ; 


আজকাল অনেক কিছুই মনে করতে পারি না 

মনে করতে পারি না পুরনো কথা, পুরনো স্মৃতি 

মনে রাখতে পারি না নামাজের রাকাত, খাওয়া, ঘুম

বার্ধক্য কি সময়ের আগেই ঘিরে ধরেছে আমায়? কে জানে? 


একসময় আট ঘণ্টা ঘুমাতাম, আজকাল ঘুমের ঠিক নেই 

ঘুমের সাইকেল বাড়ছেই, কখনো বারো কখনো বা ষোলো 

যেদিন চব্বিশ পুরো হবে সেদিন হয়তো আর চোখ মেলব না  

মৃত্যু আসবেই, ঘুমাতে ঘুমাতে একবারেই ঘুমিয়ে গেলে মন্দ হয় না। 


১৯ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 

 

রুটিন 

 - আহসানুল হক 


  

ঐ বয়রা - হিবিজিবি কথা

 ইফতারের সময় হয়ে আসছে, রিক্সা খুঁজে পাচ্ছি না। 

একের পর এক রিক্সা সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, একের পর এক রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞাসা করছি - ভাই বনানী যাবা? কেউ কেউ মুখে না করছে, কেউ মাথা নাড়ছে কেউ আমার কথার পাত্তাই না দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে। যেন ওদের কোথাও যাওয়ার কোন তাড়া নেই, যেন আজকের ইনকামের কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে, যেন একজন দুজন বৃদ্ধ রাস্তায় আমাকে পৌঁছে দেও বলে চিৎকার করতে থাকুক; তাদের কিছু আসে যায় না। 


বৃদ্ধদেরও মেজাজ খারাপ হয়, গরমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আমার মেজাজ তখন তুঙ্গে। সামনে এক রিক্সা দেখলাম হেলতে দুলতে প্যাডেল মারছে। ডাকলাম এই বাবা বনানী যাবা? শুনলো না। আবার ডাকলাম এই রিক্সা বনানী যাবা? পাত্তাই দিলো না। এবার জোরে ডাকলাম এই রিক্সাওয়ালা - উঁহু, শালা পাত্তাই দিচ্ছে না; নাকি শুনছে না। আবার কয়েকবার এই রিক্সা এই রিক্সা করে ডেকে শেষমেশ রাগের চোটে কর্কশ স্বরে ডেকে উঠলাম এই ব্যাটা বয়রা। আশেপাশের অনেকগুলো রিক্সায় বসে থাকা লোকজন হো হো করে হেসে উঠলো। রিক্সাওয়ালা রক্তচক্ষুতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে - বয়রা ডাকেন কেন চাচামিয়া? আমি বললাম - এতক্ষণ তরে বাবা, সোনা কতকিছু কইলাম; তুই পাত্তাই দিলি না। বয়রা কইয়া ডাইক্কা দেখলাম তুই আসলেও কানে খাটা কিনা? ফিক করে হেসে দিয়ে বললো উঠেন। 

আমি দিরং না কইরা রিক্সায় উইট্টা বইলাম। আশেপাশের রিক্সা থেকে তখনো লোকজন টিটকারি মারতাছে - ঐ বয়রা! ঐ বয়রা! ঐ বয়রা। 


১৯ এপ্রিল, ২০২২


#হিবিজিবি_মন 


ঐ বয়রা 

 - আহসানুল হক 


চিরতা

মানুষের পৃথিবীতে অমানুষের বসবাস কম না 

মানুষের আদলে ঘোরাফেরা, আসলে মানুষ না 

একদল মানুষ আছে ঘামে ভেজে রোদে পোড়ে 

অন্যদল এদের মাথার ওপর, হাতে ছড়ি ঘোরে;


তেলা মাথাতেই লোকে দেখি ঘি ঢালে টনে টনে

তেল ঢালতে ঢালতেই তাকে গালি দেয় মনে মনে

বিপরীত মানসিকতা আজকাল হরেদরে পদে পদে 

বৈপরীত্যের বিচিত্র চরিত্র দেখি আপদে বিপদে; 

   

চরিত্র বলতে আজকাল আছে নাকি কোন কিছু?

এ তার বৌ এর, সে তার জামাই এর পিছু পিছু

যুগ যুগের সংসারে হঠাৎ একদিন দেখি ভাঙন 

পরকীয়া নামের এক ভাইরাস নাকি তার কারণ;

 

প্রেম আজকাল হয়ে গেছে স্কুলের বাচ্চাদের খেলা  

পরস্পর শরীর উন্মোচন, প্রেমের নামে ছোটবেলা 

কলেজে উঠতেই অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এবরেশন

জানা স্বত্বেও ভুল করে ফেলে নিতে প্রোটেকশন;

 

চরিত্র নিয়ে আজকাল বোকারাই কথা বলে 

শরীর খেলার পরে শরীর'টা ধুয়ে নিলেই চলে 

সম্পর্কে সত্য কথা ইদানীং বলে নাকি কেউ?

সত্য বললেই তো সম্পর্কে লাগে ভাঙনের ঢেউ;  


ধোঁকাবাজি পদে পদে টাকার গন্ধ যেখানেই থাকে 

কাগজের টাকা সবচেয়ে আপন, সম্পর্ক দূরে থাকে

টাকায় কি না কেনা যায়! বন্ধু বান্ধব আর আপন জন 

কপর্দকহীন হয়ে একবার দেখই না কে তোমার আপন?


স্বার্থ সবাই চেনে যখন যেভাবে যেটাতে যার সুবিধা  

স্বার্থে আঘাত লাগলেই মানুষের হয়ে যায় অসুবিধা   

সত্য কথা বলে না কেউ চলতে ফিরতে সংসারে  

সত্য'কে তিতা জেনে চিরতা কজন রাখে ঘরে?


১৭ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 



চিরতা 

 - যাযাবর জীবন 


আলগা চোখ


আজকাল চোখের লেন্সের ওপর একটা পর্দা ফেলে দেই,  

চোখে রোদ চশমা লাগাই 

কিংবা ক্যামেরার লেন্সে মানুষ দেখি,

আমি বলি আলগা চোখ;


চোখের লেন্স তীব্র ক্ষমতাসম্পন্ন, বড্ড বেশী প্রখর  

সবকিছুই দেখে নেয়, মানুষের বাহির ও ভেতর; 

স্থির হয়ে সামনে বসে থাকা মানুষকে দেখে ৫৭৬ মেগাপিক্সেলে 

আর ১ কোটি আলাদা রঙ,   

চলমান বস্তু চোখ কত দ্রুত দেখে জানো? 

৭৭৭ গিগাপিক্সেল প্রতি সেকেন্ডে, সে গতি তোমরা কল্পনাও করতে পারো না

খোলা চোখে দেখতে পাই প্রচণ্ড গতিবেগে চারিপাশের সম্পর্কের ভাঙন;


স্বার্থ, সম্পর্ক আর অনুভূতিগুলো

ক্যামেরার চোখ ধরতে পারে সেগুলো?

মানুষ মাঝে মাঝে এত নিষ্ঠুর! এত কদর্য স্বার্থের রূপ

অনুভূতির প্রখরতা! রিপুর কদর্যতা  

চারিদিকে ঝনঝন কাঁচের মত ভেঙে পড়া সম্পর্কের ভাঙন 

আজকাল আর সহ্য হয় না,   

তাই ইদানীং খোলা চোখে মানুষ দেখতে ইচ্ছে করে না 

তার থেকে খালি চোখে আকাশ দেখি, গাছপালা, নদীনালা, পশুপাখি

মানুষের দিকে তাকাতেই হলে চোখে রোদ চশমার একটা আবরণ লাগাই

কিংবা মাঝে মাঝে দেখি ক্যামেরার চোখে  

ক্যামেরা আর কত মেগাপিক্সেলেই বা মানুষ'কে দেখাবে?

ওর তো সর্বোচ্চ ক্ষমতা মাত্র ১০৮ মেগাপিক্সেল! 

ওটুকু তাও সয়; 


আর আবরণ ছাড়া খোলা চোখে?

৫৭৬ মেগাপিক্সেলে মানুষের অনুভূতিগুলোও পড়া যায়,  

নগ্ন চামড়ার মানুষ তাও চোখে দেখা যায় 

ভেতরের নগ্নতা? সে বড্ড পীড়া দেয়। 


১৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


আলগা চোখ 

 - যাযাবর জীবন 



 



অনুভূতির চোখ

আলোকে কি বন্দী করে রাখা যায়? 

দিন'কে বন্দী করেছিলো কে কবে?

সূর্য'কে? 

রাতের চাঁদ'কে মেঘ বন্দী করার চেষ্টা করলেও আলো ছড়ায়;


কে কবে বন্দী করে রাখতে পেরেছিলো অন্ধকার?

রাত যতই কালো হোক আকাশে তারা ফুটবেই

চাঁদ উঠবেই 

শেষমেশ সূর্য এসে দূর করে দেবে অন্ধকার;


মাঝে মধ্যে দিনের বেলায় মেঘ এসে সূর্য'কে ঢেকে দিতে চায়

মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় জ্যোৎস্না'কে 

আসলে কি আলো ঢাকা যায়?

একদম কালো মেঘ হলেও আলোর আভা আকাশে থেকেই যায়;


বন্দী করা যায় না অনুভূতিগুলোকে, হোক সে সুখের কিংবা দুঃখের 

মন ভেদ করে কোন না কোন উপায়ে বের হয়ে আসেই

তারপর ছড়িয়ে যায় মস্তিষ্কের পড়তে পড়তে

অনুভূতিরও চোখ আছে চোখের ছায়ায়, মনের মায়ায়; 


আয়নায় আমরা নিজেদের হাসতে দেখি, কাঁদতে দেখি

চেহারায় হাসি কান্না না দেখা গেলেও চোখ ঠিকই অনুভূতির কথা বলে 

তবে আজকাল আর চোখ পড়ার মানুষ কোথায়?

মানুষ শুধু বাহির দেখে, চেহারা পড়ে, বাকিটুকু নিজে নিজে ধারণা করে;


আমি খুব যত্ন করে অনুভূতিগুলো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি 

তবুও মাঝে মধ্যে কিভাবে যেন সূর্যের ফাঁক গলে কান্নাগুলো বেরিয়ে যায়

খুশিগুলো অবশ্য আটকে ফেলতে পারি অমাবস্যার ছায়ায় 

আমার চোখ পড়ার কেউ নেই, চোখের মায়ায়। 



১৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


অনুভূতির চোখ 

 - যাযাবর জীবন 




সাদাকালো মন

মাথার ওপর সূর্য ছিলো একদিন তপ্ত দুপুর

নদীতে পাখির জলকেলি, সাঁতার হাপুরহুপুর

চরে রোদের তেজ, গরমে অস্থির আমরা 

নদী পাড়ে বালুর গরমে পুড়ে যায় চামড়া; 


সাথে নৌকা ছিলো একটা চরে চরে ঘোরার

শিকারি ক্যামেরা কাঁধে পাখির ছবি তোলার

কখনো নৌকোয় কখনো চরে কখনো পানিতে

যেখানেই পাখি সেখানেই পাখির হাতছানিতে;


চখাচখি কিছু নদীতে জলকেলি করছিলো 

বকের দল লম্বা ঠোঁটে পানিতে মাছ খুঁটছিলো 

হঠাৎ ক্যামেরার লেন্সে পাকড়া উল্টা ঠোঁটি 

দৌড়ে ক্যামেরা তাক করতে গিয়ে ছিঁড়লো চটি; 


বালির গরমে পা পুড়ে, ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক করে

লেন্সে চোখ থাকলে পা এর কথা কে মনে করে?

হঠাৎ বকের ঝাঁক পাখা মেলে দিলো দূর আকাশে 

চর জুরে তপ্ত গরমের লু হাওয়া বইছিলো বাতাসে; 


একজোড়া টার্ন পাখি প্রেমে মত্ত ছিলো নদী তীরে

পুরুষ পাখিটি মেয়েকে খুশি করার চেষ্টায় মাছ ধরে  

মিলনের আশায় মেয়ে পাখিকে খাওয়ায় এনে মাছ 

একমাত্র মানুষই ঝগড়ায় করে সম্পর্কের সর্বনাশ; 


ইদানীং আর মানুষের ছবি তুলতে ইচ্ছে করে না 

ওরা রঙ বদল করে ক্ষণে ক্ষণে ক্যামেরায় ধরে না

তার থেকে পাখির ছবি তোলা ঢের বেশি ভালো 

সাদা আর বাদামী মানুষগুলোর মন দেখেছি কালো।


 

১৩ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


সাদাকালো মন 

 - যাযাবর জীবন 




পাখির ডানায়

আমার ডানা নেই তবুও উড়তে মন চায়, পাখির ডানায়

মাছেরা নদীতে সাঁতার কাটে, আমি হেঁটে বেড়াই ডাঙায় 

ভালোবাসা কখনো বড্ড ভাসায়, ডোবায়, কাঁদায়, হাসায়  

স্বার্থ আপন সব সম্পর্কগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে কাঁদায়; 


খুব ইচ্ছে করে পাখি হতে, স্বার্থের ওপরে উঠে যেতে

মানুষ হয়ে জন্ম, স্বার্থের আঘাত সইতে হয় মাথা পেতে 

যখন খুব রক্তাক্ত হই! কোন একটা পাহাড়ে চলে যাই

যখন খুব কান্না পায়! চুপিচুপি একা সাগরে চলে যাই; 


ভাগ্যিস পাহাড় সম্পর্কের কথা বলে না দূরে ঠেলে দিয়ে

সাগর স্বার্থের কথা বলে না কখনো, সম্পর্কের খোঁটা দিয়ে 

একদিন খুব ইচ্ছে করে আকাশে চলে যাব সবকিছু ছেড়ে

শরীরটা মাটি হয়ে গেলে কে পাবে আমায় মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে!



১২ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


পাখির ডানায় 

 - যাযাবর জীবন 


বোধের রঙ

প্রতিদিন রাত হয় আকাশ কালো করে 

আসলে আকাশ কি কালো? 

সূর্য-বাতিটা ধুসর হতে হতে নিভে যায় প্রতিদিন সন্ধ্যায়

মাসের কিছু সময় আকাশে চাঁদ উঠে 

সূর্যের ঘুমের সাথে সাথে মাসের বাকি সময়টা চাঁদও ঘুমায়, 

আমরা আকাশ'কে অন্ধকার হতে দেখি

কখনো কখনো কালোর ভেতর তারা'র মিটমিট  

আসলে আকাশ কি কালো?    


আকাশ কি রঙ বদলায়?

ঊষালগ্নে কিংবা গোধূলি বেলায় আকাশটা লাল রঙ ছড়ায়

সূর্যের মেজাজের সাথে সাথে কখনো হালকা নীল, কখনো আকাশী 

আবার ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টির পরে সূর্য হেসে উঠলে 

মেঘের ভেলার ওপারে গাঢ় রঙের নীল দেখা যায় 

সন্ধ্যার ঠিক আগ দিয়ে আকাশটা নিজেকে কেমন যেন ধুসর করে ফেলে

আমি আকাশে রঙের খেলা দেখি

আকাশের রঙ বুঝতে বুঝতে কখনো হৃদয় খুলে তাকাই, কখনো অনুভূতি

খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি অনুভূতিগুলোর মাঝে রঙের তারতম্য 

ঠিক আকাশের রঙের মত মনে রঙের খেলা;


কখনো মন প্রশান্ত থাকলে অনুভূতি ঘিরে সবুজ রঙের একটা বলয় তৈরি হয়  

অনুভূতির চারিদিকে কখনো লাল রঙের প্রলেপ দেখি ভালোবাসায়

রাগ আর উত্তেজনায়ও অনুভূতি লাল হয়ে যায় কখনো 

আবার মন প্রশমিত হয়ে আসলে অনুভূতিতে নীলের খেলা দেখি 

মনে খুশির আধিক্যে অনুভূতিতে কখনো হলুদ কখনো কমলা 

শান্ত মন দেখে শুভ্র সাদা 

দুঃখবোধ মনকে ধুসর করতে থাকে 

খুব মাঝে মাঝে উৎকণ্ঠায়, ভয়ে আর অতিরিক্ত দুঃখভারে 

কাঁদতে কাঁদতে অন্ধকার হয়ে যাই রাতের মত 

হ্যাঁ, আমারও কান্না আসে; দুচোখ ছাপিয়ে 

ব্যথা বেদনা দুঃখবোধ তো মানুষেরই থাকে! 


আমি মাঝে মাঝে আকাশের রঙ দেখি মাঝে মাঝে বোধের 

তারপর আকাশ হতে চাই অনুভূতিতে  

মনের অনুভূতিগুলো আকাশের মত ছড়িয়ে দিতে,

কি বোকাই না আমি! মানুষ কি আকাশ হতে পারে? 



১১ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


বোধের রঙ 

 - যাযাবর জীবন 


তৃষ্ণার্ত

সে দিনটায় গরম ছিলো, গুমোট আবহাওয়া

পাহাড় বাইতে গিয়েছিলাম সাথে চৈত্রের হাওয়া 

কাঠফাটা রৌদ্দুর খাড়া মাথার ওপর 

মাটি ফেটে চৌচির পাহাড়ের ভেতর; 


সে দিনটায় কেন জানি মন খারাপ ছিলো

আকাশে তাকিয়ে ভাবছিলাম মেঘের কি হলো?   

নীলাকাশে দূর দূরান্তেও দেখিনি মেঘের ভেলা 

রাগাহ্নিত সূর্যটা করছিলো গরমের সাথে খেলা;


সাথে আনা পানি শেষ হয়ে গিয়েছিলো 

দুপুর চড়তেই তৃষ্ণায় ছাতি ফাটছিলো 

কে বলেছে হীরে মণি মুক্তো অমূল্য! 

তৃষ্ণার্ত জানে একঢোক পানির মূল্য;   


সারাদিন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত বিকেলে 

কানে কুলকুল শব্দ পানির কথা বলে 

আরেকটু এগোতেই সামনে ঝর্ণা ধারা 

পানি দেখতেই মন খুশিতে পাগলপারা;


অঞ্জলি ভরা পানিতে পিপাসা মেটালাম 

ঝর্ণায় নেমে পড়ে নিজেকে ভেজালাম 

অপরূপ সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা আল্লাহ্‌ মহান 

ফাবি আইয়ে আলা ই রব্বিকুমা তুকাজ্জিবান। 



১০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


তৃষ্ণার্ত 

 - যাযাবর জীবন 




ঘাসের শিশির

ঘাসের গন্ধ ভাসে ঘাসে

মাটির কিছু গন্ধ মিশে আছে 

ভোরের গন্ধ ঘাসের শিশিরে  

রোদের গন্ধ নিয়ে সূর্য হাসে; 

 

ঐ দূরে হালকা কুয়াশা 

নদীর ওপর আবছা ধোঁয়াশা 

ঘুমভাঙা পাখিরা ঘর ছেড়েছে

রোদ মেখে নিচ্ছে খোলা পালকে;


ঘাসের ওপর সকালের শিশির

সোনারোদ চকচক করে 

ঘাসফড়িং রোদ মাখে ডানায়

বসবাস ঘাসের ঘরে; 


আমি শরীরে মাটির গন্ধ শুঁকি 

বাতাসে মেঠো ঘাসের গন্ধ ওড়ে  

আমি হাত বাড়িয়ে রোদ ছুঁতে যাই

ঘাসের শিশির টুপ করে ঝরে পড়ে। 


  

০৯ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ঘাসের শিশির

 - যাযাবর জীবন 

 

তারপরের জীবন

নিজেকে আয়নায় একবার দেখি, একবার দেখি অন্ধকারে 

এখানে প্রখর সূর্যালোক, আর ঐ তো ওখানে শুয়ে আছি কবরে

এই যে বেঁচে থাকা ও মরে যাওয়া! মুহূর্তের পার্থক্য মাত্র 

পেছনের অগোছালো জীবনটা'কে দেখি, সময়ক্ষেপণ যত্রতত্র

কি নিদারুণ অপচয়ই না করে ফেলেছি সময়ের, অর্থ উপার্জনে 

কতটুকু পেটের প্রয়োজন ছিলো? বেশীরভাগটুকুই অপ্রয়োজনে; 


আজকাল হুটহাট করেই কাছের মানুষগুলো চলে যাচ্ছে

চলে যাচ্ছে বলতে পৃথিবী ছেড়ে অন্য এক ভূবনে পারি জমাচ্ছে 

এই তো সকালেই পাশের বাড়ির চাচার সাথে কথা বলছিলাম 

দুপুরে খেতে বসতে না বসতেই ও বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ 

খাবার প্লেটটা রেখেই দৌড়ে গিয়ে শুনি নেই, চাচা চলে গিয়েছেন 

চলে গিয়েছেন বলতে মৃত্যু নামক অজানা ভূবনে পারি জমিয়েছেন;  


এই তো কাল সকালে নাস্তা করতে করতে খবর এলো 

মহল্লার এক ছোট ভাই কার্ডিয়াক এরেস্ট, হঠাৎ করেই 

টার্মটা খুব কমন, ছোট বড় মানে না, মানে না বয়স 

টেনে নামিয়ে দেয় কবর নামক ঘরে, যখন তখন ধরেই     

হুট করে উদয় হয়, এসে চেপে বসে বুকের ওপরে   

হাসিখুশি মানুষগুলোকে টেনে নিয়ে যায় মৃত্যুর ওপারে;


আমরা বলি কার্ডিয়াক এরেস্ট, অথবা ব্রেন হেমারেজ

ছোট বড় কত কত অসুখ! কত এক্সিডেন্ট প্রহরে প্রহরে 

জীবিত মানুষগুলো হুট হঠাৎ করেই চলে যায় মৃত্যুর ওপারে, 

মৃত্যু কোন নিয়ম মানে না, বয়স মানে না, মানে না সময় 

জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, প্রযোজ্য প্রত্যেকের জন্য   

এটাই আল্লাহ্‌ তায়ালার অমোঘ বিধান, বিশ্বাসীদের জন্য;  


মৃত্যুর আগে যার একটা নাম ছিলো, ঐ তো শুয়ে আছে লাশ 

গোসল করে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে সাদা কাফনে, অপেক্ষা দাফনে 

একটু পরেই জানাজা শেষে নামিয়ে দেয়া হবে অন্ধকার কবরে 

আজকাল মৃত্যুর কথা বড্ড মনে হয়, মৃত্যু দেখে চারিধারে 

মৃত্যুর পরের জীবনটা কেমন হবে? সে তো কর্মফলের দায়   

বিশ্বাসীরা প্রস্তুতি নেয় আগে থেকে, খুব দেরী না হয়ে যায়!  

 

০৪ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


তারপরের জীবন 

 - যাযাবর জীবন