ভাইরে!
সইত্য কতার ভাত নাই। এইডা আইজ বুইড়া বয়সে আইয়া বুঝলাম।
হেই বাইল্যকাল থাইক্কা বাবায় শিখাইছে মিছা কতা কতি অয় না।
আমি আবার বাবার চরম ভক্ত, বাবায় যা কয় তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি।
একবার ছুডুবেলায় দাদার চাইলের মোটকির থাইক্কা আম চুরি কইরা খাইছিলাম। দাদায় আমার আমগুলা খাইলো কুন বদমাইশ কইরা হুলুস্থুলুস লাগায় দিছিলো; আমি ডরের চোডে হেইদিন বাইত আহি নাই। যদি আমারে জিগাইলে মিছা কতা কতি না পারি! তয় তো দাদার কাডি হাতের কিল একটাও মাটিত পড়ব না।
তো যা কইতাছিলাম! এই হাছা কতা কওনে লাইজ্ঞা আমার গেবনে কুচ্চু ওইলো না। কুচ্চু মানে কইতাছি কুনু ব্যবসাই করবার পারলাম না। কেন? আমি মিছা কতা কতি পারি না। যেই ব্যবসাই করবার যাই, কাস্টমারে ঐ প্রোডাক্ট বা সার্ভিস লইয়া কিচু জিগাইলে আমি বেবাক সইত্য সইত্য কইয়া দেই।
এতে অয় কি? মাসখানেক পর বাপের ইনভেস্ট করা টেকার ব্যবসা ডুইব্বা পানির তলানিত গিয়া ঘুমায়। বাপ কয়দিন গাধা গরু কইয়া চিল্লাপাল্লা কইরা আবার নয়া আরেক ব্যবসা দিয়া বহায় দেয়। হাছা কতা কইয়া হেইডারও চব্বিশটা বাজায় দেই। (ঐদিন নেটে একটা ভিডু দেখতাছিলাম। স্যাটায়ার একটা ভিডু, ব্যবসায়ী সইত্য কতা কইতাছিলো আর তার ব্যবসার চৌদ্দডা বাজতাছিলো। ভিডুডা দেইহা কেন জানি আমার গেবনের কতা মনে হইয়া গেলো। আরে আমিও তো এইতানই করছি সারা গেবন। হাছা কতায় কি ব্যবসা অয়?)
যেমুন একবার ফলের দোকান দিয়া বইলাম - ফল একটা নিজে খাইয়া দেহি দুইন্যার চুক্কা। কাস্টমার আইয়া জিগাইলো, ভাই ফল মিস্টি না টক। আমি কইলাম ভাই দুইন্যার চুক্কা। একবার খাইলে থুতাইতে থুতাইতে বমি কইরালবেন। -
একবার কাপড়ে দোকান দিয়া বইলাম, কাপড় কইতে তো আমি আবার গামছা ছাড়া কিচু বুঝি না। তো বাবায় কইলো তুই তো গামছা পইড়া বইয়া থাকস! তো এই গামছা লইয়াই না হয় কিচু একটা কর। আমি উৎসাহে গামছা দা ফতুয়া পাঞ্জাবি বানাইয়া দোকান দিয়া বইলাম। গামছার লট আনছিলাম শ্যামলির থন। রাস্তার পাশে থানে থানে গামছা টানায় বইয়া থাহে দেকছুইন মনে লয়। তো বানানের পর একটা গামছা নিজেই পড়লাম। ওমা? বৈকালিন হাঁটাহাঁটির পরে ঘাইম্যা বাইত আইয়া গামছা খুলার পর দেহি প্যান্টের রঙ বদলাইয়া গেসে। গামছার থন ঘামেই রঙ উইট্টা প্যান্টে মাখামাখি হইয়া গেসে। গামছা ধুইয়া দেহি খাইপ্পা চিপা হইয়া গেসে। ফতুয়ার ভিত্রে আমার ভোটকা শরীর আর ঢুকে না। ব্যাপার কি? বৌ কইলো তরে ঠকাইছে। দুই লম্বরি গামছা দিয়া দিসে। আমি কইলাম এই গামছা দা এতলি ফতুয়া আর পাঞ্জাবি বানাইলাম যে! বৌ কইলো তুই কুচু না কইয়া বেইচ্চা লা।
এহ! আমারে জিগাইলে আমি বুঝি মিছা কতি পারুম? পরদিন কাস্টমারে আইয়া পেরথমেই জিগাইলো, ভাই রঙ উঠবো না তো? আমি কইলাম রঙ উঠব মানে? একবার ভিজাইয়া দেহুইনই না! এককালে আফনের বাকি কাপড় চোপড়ও গামছার রঙে রঙিন হইয়া যাইব। বেডায় আগুন দৃষ্টিতে আমার দিকে চাইয়া থাইকা দোকান থন বাইর হইয়া গেলো। আরেকজন জিগায় ভাই ধোয়ার পর খাপব না তো! আমি কইলাম ভাই তিন সাইজ বড় লইয়া যান। তাইলে খাইপা খুইপা ঐডার ভিত্রে আটতেও পারেন। কাস্টমারে কুচু না কইয়া বাইর হইয়া গেলো। আমার ব্যবসার লালবাত্তি জ্বললো।
একটা একটা কইরা গেবন ভর খালি ব্যবসা করার ট্রাই কইরা গেলাম। আমার কপালে ব্যবসা হইলো না। কেমনে হইব? হাছা মাতি যে!
এক এক কইরা বেবাক ব্যবসা ডুবানের পরে একদিন বাপে কইলো, তুই এত গাধা কেরে? আমি বাপরে কইলাম, আমারে মিছা কতা কতি না কইরা আফনে মিছা মাততাছেন কেরে?
বাপে আচানক হইয়া কইলো - আমি আবার মিছা কই মাতলাম।
আমি কইলাম এই যে অক্ষণে কইলেন! জলজ্যন্ত একটা মানুষরে গাধা কইলেন। এইডা মিছা না।
বাবায় কপাল চাপড়াইয়া কইলো - তরে লইয়া কি করুম বাপ? আমি মইরা গেলে তুই কেমনে চলবি?
আমি কইলাম - সইত্য কতা বইলা। আফনেই না শিখাইছেন সইত্য যতই তিতা হোক কক্ষণো যাতে মিছা না মাতি। চিন্তা কইরেন না গো বাবা - এই দুইন্যায় অহনো তিতা খাওনের লোক আছে।
অহন বেকার বইয়া থাকতে থাকতে চিন্তাইতে থাকি - আসলে তিতা খাওনের লোক পিত্থিমিতে আছে নাকি?
চিন্তাইতে চিন্তাইতে চিন্তার ফিলিপস বাত্তি জ্বইল্লা উইট্টা কয় - উঁহু! সইত্যের তিতা কেউ খায় না।
#অনুভবের_অনুভুতি
#রম্য
সইত্য কতা
- আহসানুল হক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন