শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০

দুপুরের মন খারাপ



দুপুরের মন খারাপ
- যাযাবর জীবন


সকালটা ছেলেবেলা, দুরন্তপনা
ভর দুপুর, ভরা যৌবনের
বিকালটা ঢলে পড়া
সূর্যাস্তে আর আলো কোথায়?
আমি রাত হয়েও সকাল দেখি স্বপ্ন চোখে
সকাল দেখতে দেখতে দুপুরে এসে থমকে যাই
তারপর তো পুরোটাই তুই,
তুই দুপুরে এসে থমকে গেছিস আমার চোখে;
ভালোবাসার মানুষের আবার বিকেল কি রে?

আজ মধ্য দুপুরে আকাশটা সন্ধ্যের ঘ্রাণে রাঙানো কেন রে?
তোর কি মন খারাপ?
আমি কিন্তু দূর থেকেই তোর মনের গন্ধ পাই,
ভালো থাকলেও পাই, খারাপ থাকলেও পাই;
কিভাবে?
আমার মত ভালোবাসলে জিজ্ঞাসা করতি না।

২৬ জুন, ২০২০
#কবিতা

দুপুরের মন খারাপ
- যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা





রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিপোক্রেসি



রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিপোক্রেসি
- যাযাবর জীবন


আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দ্বৈত মানসিকতা,
ভান আর ছলনা
মুখে উত্তর বলি তো মন দক্ষিণে
মানুষের সাথে বাইরের আচার ব্যবহারে পশ্চিম তো ভেতরটা পূর্ব;
আমার, তোমার, তার ও তার
নারী কিংবা পুরুষ, আমাদের সবার;
আচ্ছা! বই এর ভাষায় এটাকে জানি কি বলে?
হিপোক্রেসি?
ধ্যাত! গালি দিও না তো!

আজকালকার প্রেম?
সেতো মূলত ভার্চুয়াল!
নেটে কে দেখছে কার সাথে কি বলছি!
আর সামনা সামনি?
সকালটা স্কুল বা কলেজে সহপাঠী প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে
দুপুরটা কাটে মহল্লার কার সাথে
সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে
প্রেম নাকি ছলনা?
ধ্যাত! তোমরা প্রেম বোঝোই না,
ও তো এমনিই একটু শরীর ছানাছানি
আর! কয়েকটা প্রেমিক/প্রেমিকা না নাচালে বন্ধুবান্ধব বলবে কি?
একে প্রেম বলে কি?
নাকি হিপোক্রেসি?

বিবাহিত জীবনে?
আজকাল এক পুরুষে নারীর আর চলে কই?
এক নারীতেই কি পুরুষের মন ভরে?
রমণ শেষে দম্পতি একজন আরেকজনার ভেতর থেকে ডুব দিয়ে উঠেই
মোবাইল স্ক্রিনে
প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে ভার্চুয়াল প্রেমে,
পরকীয়া তো দেখি আজকাল ঘরে ঘরে, হরেদরে
এটা হিপোক্রেসি নয়?

উঁহু!
এগুলো যতসব আদিকালের বস্তাপচা চিন্তাভাবনা;
প্রেম তোমরা বোঝই না
প্রেমের কাছে শরীরটা তুচ্ছ
সে বিয়ের আগেই হোক আর পরকীয়াই হোক
শরীর মাত্রই প্রেমেরই অংশ
ধুয়ে নিলেই পুত: পবিত্র,
পরকীয়াকে লাইসেন্স দিয়ে দিলে না?
ধ্যাত! জ্ঞান দিতে এসো না;

এবার সংসারে দেখ;
শাশুড়ি বৌ এর সম্পর্ক!
ঘরে ঘরে লড়াই, বাইরের মানুষের কাছে মা-মেয়ের বড়াই;
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক?
বাইরের মানুষের কাছে মধু, হোক না ঘরের ভেতর তেতো!
ভাই-বোনের সম্পর্ক?
সে তো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট
মানুষ শুধু বাইরেরে মিলটুকুই দেখে আদতে সম্পর্কগুলো বিষে ক্লিষ্ট;
এগুলো কি হিপোক্রেসি নয়?
উঁহু!
মানুষের চোখে ভালোমানুষির পরিচয়;

তাহলে ঐ যে হিপোক্রেসি?
ভাষণ দিও না তো!
তুমি
আমি
সে আর সে
সবাই আমরা হিপোক্রেট
কম আর বেশী।

২৪ জুন, ২০২০

#কবিতা
রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিপোক্রেসি
- যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এটিড করা।






কথাদের কথোকথা



কথাদের কথোকথা
- যাযাবর জীবন


সময়ের সাথে সাথে কথাদের জন্ম হয়,
যখন থেকে মন ভালোবাসা হয়;

তারপর প্রেমের আবেশে কথাদের যৌবন আসে
কথাগুলোকে তখন কলকাকলি মনে হয়,
ভালোবাসা কথা কয়;

একসময় ভালোবাসার অনাদরে মন শ্যাওলা হলে
কথাদের গায়েও শ্যাওলা জমে
আর ধীরে ধীরে কথা ফুরোতে ফুরোতে কথাদের যৌবনে টান ধরে;

আরো কিছু সময় পার হলে ধীরে ধীরে ভালোবাসার মৃত্যুতে
কথাগুলো নিশ্চুপ থিতু হয়, কখনোবা কথাগুলোর মৃত্যু হয়;

নিশ্চুপ থিতু কথাগুলো ভালোবাসার সুবাতাস পেলে আবার কথা কয়
আবার কথাদের নতুন জন্ম হয়
আবারও কোন এক ভালোবাসার আঘাতে মরে যেতে;

বড্ড অদ্ভুত কথাদের জীবন;
তাই না?

২৪ জুন, ২০২০

#কবিতা
কথাদের কথোকথা



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা




তোকে আঁকার অনুভব




তোকে আঁকার অনুভব
- যাযাবর জীবন


আঙুলে আঙুল
স্পর্শে ছোঁয়া

ঠোঁটে ঠোঁট
স্পর্শে অনুভব

এ কেমন অনুভূতি?
স্পর্শই সব?

এই যে তোর আঙুল নিয়ে খেলি
ডুব দেই ঠোঁটে
তারপর তোতে,
সে তো শরীর! অল্প একটু সময়ের অনুভব
কাম তো মিটে যায় না হয় চব্বিশ মিনিটে!
তাহলে চব্বিশ ঘণ্টা রক্তে ওটা কিসের টান মিশে?
কেন তোর জন্যে সারাক্ষণ এক আজব অনুভব!

মায়া! উঁহু আরও অনেক বেশি কিছু;
ভালোবাসা!
বলতে পারি কি?

নইলে কেন বারবার, বারবার ঘুরেফিরে তোকেই আঁকি?


২৩ জুন, ২০২০
তোকে আঁকার অনুভব
- যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।



সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

বহু স্বত্বা



বহু স্বত্বা
- যাযাবর জীবন


আমরা বেশীরভাগ মানুষই বোধহয় দ্বৈত জীবন কাটাই
আমাদের বাইরের চেহারা একরকম ভেতরটা অন্যরকম;
আমি সাধারণতর কথা বলছি
ধরে নাও আমি আমার কথাই বলছি!

মাঝে মাঝে অন্ধকারে আয়নার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি,
অন্ধকারে ওটা কার ছায়া? কালোর মাঝেও এতই কালো!
আয়নায় কার গাঢ় অবয়ব, রিপুগুলো এত কালো অবয়ব!
ভয়ে আমার নিজেরই চোখ বন্ধ হয়ে যায় নিজের থেকে,
অথচ দিনের বেলায় আমার কি দারুণ চেহারা, সবার কাছে
ভালো মানুষী যেন ঠিকরে বের হয় চেহারা থেকে;

আচ্ছা! এই যে দ্বৈত স্বত্বার কথা বলছি!
অথচ আমি তো নিজের ভেতর অনেকগুলো স্বত্বা দেখছি,
ঘরে একরকম স্বত্বা, বাইরে অন্যরকম
মা-বাবার সাথে একরকম, সন্তানের সাথে যার কিছু মেলে
আবার স্ত্রীর সাথে অন্যরকম, প্রেমিকার সাথে আরেকরকম
বন্ধুদের সাথে? ও আমি আরেক মানুষ, সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম;

আবার রাতের অন্ধকার হলে যখন রিপুগুলো কামড়ে ধরে!
তখন আমি তো আর আমাকেই চিনি না
মাঝে মাঝে সকাল হলে ভাবি রাতে ওটা কি দেখেছি?
মানুষ না হায়েনা?

আচ্ছা! তা হলে মানুষের স্বত্বা কি অনেকগুলো?
নানা রঙের ঘুড়ির মত! রংবেরং এর রংধনু যত!
মানুষ শুধু শুধুই দ্বৈত স্বত্বার কথা বলে
আমায় আগে দেখলে হয়তো বহু স্বত্বার প্রচলন হতো!


২৩ জুন, ২০২০

#কবিতা
বহু স্বত্বা
- যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।




বোধের গভীরে



বোধের গভীরে
- যাযাবর জীবন


কতটুকু গড়াতে পার নদী? পাহাড় থেকে সাগর!
আমিই বা কতোটুকু পারি? ভাসতে ও ডুবতে;

যতটুকু পেরেছিলাম ভেসেছি,
তারপর একসময় টুপ করে ডুবে গেছি, মরে;
দমবন্ধ প্রেম মানেই তো মরণ! তাই না?

তারপর অনেকদিন হাঁসফাঁস দমবন্ধ থেকে
ভুশ করে ভেসে উঠেছি কোন এক তারার রাতে
আমারও যে একটু আলো হাওয়ার দরকার আছে!
তারপর সাঁতরে সাঁতরে চলে এসেছি তীরে;

এখন আর প্রেম টানে না
আমি পাহাড় থেকে সাগরে নদীর বয়ে যাওয়া দেখি
ভাবলেশ নির্লিপ্ত চোখে;

এক এক সময়ের এক এক ধরণের টান আসে জীবনে,
কখনো পাহাড় টানে, কখনো নদী, কখনো সাগর
কখনো আকাশ কখনো প্রেম কখনো মন,
নিস্তব্ধতার যে ভয়াবহ টান আছে!
নারী বুঝেছিলো কবে?

নীরবতার ভাষা কখনোই বোঝে না নদী
সে কলকল কলকল বয়েই চলে আপন খেয়ালে,
আমি আলুথালু রোদের ভেতর বধির বসে থাকি
বোধের উঠোন ভেঙে বোধহীন তারাদের দেখি, বোধের চোখে;

আজকাল কোথাও কোন টান অনুভব করি না,
না নদীর না নারীর না ভালোবাসার;
শুধু অন্ধকারের এক গভীর ডাক শুনি বোধের গভীরে
সময় হয়েছে এবার অন্ধকার হওয়ার।


২২ জুন, ২০২০

#কবিতা
বোধের গভীরে
- যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা



নেমে যাওয়া পথে



নেমে যাওয়া পথে
- যাযাবর জীবন


রাস্তাগুলো বন্ধুর
কাঁচাপাকা উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা
পথের কিংবা জীবনের;

একবার পেছন তাকিয়ে দেখ!
যে লম্বা পথটা দেখছিস! এটা পেছনে ফেলে আসা
অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া হয়ে গেছে জীবনের;

ঐ যে সামনের পথটা দেখছিস!
অল্প একটুই বাকি মাত্র
এঁকেবেঁকে নেমে গেছে সামনের ষ্টেশনে,
ওটাই শেষ ষ্টেশন;

পথের সাথে সাথে নামছি আমিও
নামতে মন চায় না তবুও নামতে হয়,
এই তো! পথটুকু শেষ হলেই থেমে যাব
ট্রেনটা থেমে গেলেই;

ঐ দেখ! দূরে মেঘ জমছে
কোথাও হালকা কোথাও ভারী
বৃষ্টি নামবে যে কোন সময়, মেঘের কান্না পেলে;
হয়তো অপেক্ষা আমার ষ্টেশনে পৌঁছানোর!
তারপর চারিদিক ভেজাবে অঝোর ধারায়
ভিজবে তোর চোখ কান্নায়, ট্রেনটা থেমে গেলে।

২২ জুন, ২০২০

#কবিতা
নেমে যাওয়া পথে
- যাযাবর জীবন





ফাটছে বস! আমার ফাটছে





ফাটছে বস! আমার ফাটছে
- যাযাবর জীবন


ফাটছে আমার
ফাটছে,
বস! ফাটছে;

এই যে প্রতিদিনের খরচের বাহার!
কোথায় কমছে?

খাবার তো খেতেই হয়
আগে তিন পদ থাকতো,
এখন না হয় এক পদে মানাই,
আমি না হয় নাই খাই, ছেলেমেয়েগুলো তো খাচ্ছে!
সাথে চাল, ডাল, নুন, তেল কোনটাকে বাদ দেবে?

ঔষধ পত্র?
ওটা তো নেসিসিটি, ডালভাতের মত
প্রাত্যহিক'ই লাগে;

বাচ্চাদের স্কুল কলেজের বেতন?
টিচারদের টিউশন ফি!
কে বলেছে ওগুলো সীমিত আকারে?
ফাটছে বস! আমার ফাটছে;

চাকরিজীবীর না হয় বেতন আছে
হোক না সীমিত আকারে, আছে তো!
কিছু তো আছে!
বড় বড় ব্যবসায়ীদের! হোক না দেখানো লোনের টাকা!
তবুও আছে তো ব্যাঙ্ক ভরা! সঞ্চয়েই আছে,
ওদের কিন্তু কিছুই চলছে না সীমিত আকারে;

আমরা যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী!
কৈ এর তেলে কৈ ভাঁজতে শিখি নি,
অফিসটা তো আর ছেড়ে দিতে পারছি না!
ভাড়াটা গুনতে হচ্ছে ঠিকই,
একটা দুটো স্টাফ, সীমিত আকারেই! পালতে তো হচ্ছে!
আমাদের হচ্ছে না টা কি? ব্যবসা;
বস! ঐটাই হচ্ছে না আর সব চলছে যার আর মত;
তাতে ক্ষতি কি?
অল্প কিছু জমানো পুঁজি, ভাংছে;
তলানিতে ঠেকতে ঠেকতে হাতে এখন মাটি ঠেকছে,
ফাটছে বস! আমার ফাটছে।

সমস্যা কি জানো!
বলতে পারি না, সইতে পারি না
চাইতে পারি না কারো কাছে হাত পেতে
মধ্যবিত্তরা পেরেছিলো কবে?
আমি না পারলেও পেট তো চাচ্ছে
ক্ষুধা কামড়াচ্ছে;

ফাটছে বস! আমার ফাটছে।

২১ জুন, ২০২০

#কবিতা
ফাটছে বস! আমার ফাটছে
- যাযাবর জীবন







নদী না নারী?



নদী না নারী?
- যাযাবর জীবন


নদী দেখেছ?
ঐ পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী
প্রচণ্ড বেগে কলকল ছলছল নেমে আসা নদী
উচ্ছল নদী, বুনো পাহাড়ি
সদ্য কিশোরী, উদ্ভিন্ন যৌবনা;

তারপর সময় গড়ায়, গড়ায় নদী সমতলে
গতিতে ধিমে হয়
কলকল সুরে ধীর লয়
আদুরে অলস ঘুমায় সমতল বুকে,
ক্লান্ত নদী, ক্লান্ত নারী;

তারপর আরো কিছু সময়
কোন কোন নদী নালা হতে হতে মরে যায়
সমতল বুকের ছাতায়,
আর কোনটা গড়িয়ে চলে সাগরের টানে
নদীর মন কি ছাই প্রকৃতিই জানে?
কিছু নদী প্রৌঢ়া হতে হতে বৃদ্ধা হয়েও সাগরে নামে
কার টানে কে জানে?
নদীর মন পড়তে পেরেছে কে?
আমিই কি ছাই, নারী পড়েছি?

নদীর পুরোটা জীবনই চলে ইচ্ছেমত
এঁকেবেঁকে এঁকেবেঁকে, ইচ্ছে মেজাজে
সোজা পথে কবে চলেছিল নদী?
নাকি চলে নারী?

নদীর ভালোবাসা দেখেছ কখনো?
দুকুল ছাপানো, ভাসানো, ডোবানো;
নারীর ভালোবাসা? জীবন রাঙানো,
কখনো ডোবানো কখনো ভাসানো;

নদীর রাগ দেখেছ? অভিমান?
কান্নায় ফুঁসে ওঠা বন্যা?
অবুঝের মত পাড় ভাঙে রাগে,
অবুঝ নারী? ভাঙে ঘর
বোবা অভিমান আর অসহনীয় রাগে;

নদীর ভেঙে যাওয়া দেখেছ?
কান্নায় বিভক্ত হয়ে শাখায় শাখায়!
আমি নদীর মরে যাওয়া দেখেছি, রাগ-দুঃখ-অভিমানে;
আমি দেখেছি নারীর ভেঙে টুকরো হওয়া
অব্যক্ত অভিমান আর ডুকরানো কান্নায়;

তোমরা শুধুই নদী দেখই
আর উপভোগ কর তার বাঁক
নদী চেন কি?
কিভাবে চিনবে? নদীতে ডুব দিয়েছ কি?

একবার ডুব দিয়েই দেখ না!
নদীই নারী!

২১ জুন, ২০২০

#কবিতা
নদী না নারী?
- যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।



সরল পথটা বড্ড কঠিন



সরল পথটা বড্ড কঠিন
- যাযাবর জীবন


আজকাল চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল
দু চোখ ক্লান্ত দেখে দেখে
একদিন আমি আর দেখব না এসব
দেখবে না আমার দু চোখ,
কোন এক কালো রাত কিংবা কালো দিনে
আমিও অন্ধকার হব দুচোখ অন্ধকার হয়ে,
আমি না দেখলেও তোমরা দেখবে সেদিন সব
মাটিতে শুইয়ে দিতে দিতে নিথর একটা শব;

তারপর?
আচ্ছা মাটির ঘরটা কেমন?
বরফ বরফ হিম শীতল নাকি আগুণ আগুণ তীব্র গরম?
ওখানে কি কোনো আলো আছে নাকি কালো কালো অন্ধকার চরম?
দাঁড়াও আগে আমি নিজে দেখে নেই
তারপর না হয় বলবো তোমাদের!

আহা! কিভাবে বলবো? ওখান থেকে তো ফেরা যায় না
এটা ওয়ান ওয়ে জার্নি, রিটার্ন টিকেট এখানে মেলে না;

হায়! যদি ফিরতে পারতাম! তবে তোমাদের এসে বলে যেতাম
- দিন আর দ্বীন এর মাঝে আকাশপাতাল পার্থক্য
- পার্থক্য ব্যভিচারী জীবন আর সরল পথের মাঝে
এখানে তারাই ভালো আছে, যারা সরল পথে ছিলো;

সরল পথটা চেন?
উঁহু! ওটা না কিন্তু! ঐ যে সোজা রাস্তাটা চলে গেছে ঐ বহুদূর,
সরল পথ হচ্ছে ঈমানের পথ
নামেই সরল, আসলে বড্ড কঠিন, এবড়ো থেবড়ো, বন্ধুর;

তবে ওখানে যারা কঠিন পথকে সরল করে নিয়েছিলো
এখানে তাঁদের আছে আলো চারিধার
আর ওখানে যাদের কাছে ছিলো ব্যভিচার
এখানে? ওদের জন্য বড্ড বেশি অন্ধকার;

ইশশ!
একবার যদি তোমাদের এসে বলে যেতে পারতাম!
কঠিন হলেও সরল পথটাকে খোঁজো
বড্ড ক্ষণস্থায়ী এ জীবন এটুকু তো অন্তত বোঝো!

এই যে, তোমরা শুনতে পাচ্ছ! পাচ্ছ না!
এখানকার যা কিছু ছিলো তোমাদের সামনে মেলে দিলাম সব,
কি বুঝছ তোমরা? বুঝছ কিছু?
নাকি শুধুই দেখছ, মৃত্যুর মিছিলে সাদা কাপড়ে মোড়া নিথর এক শব।

১৭জুন, ২০২০

#কবিতা
সরল পথটা বড্ড কঠিন
- যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।








তুই হয়ে




তুই হয়ে
- যাযাবর জীবন


যতটুকু ক্ষমতায় ছিলো দিয়েছি তোকে,
তবুও কি পুরোপুরি দেয়া হয়েছে?

আমি আর কতটুকুই বা দিতে পেরেছি তোকে?
একটা পাহাড় চেয়েছিলি, দিতে পারিনি
একটা জঙ্গল চেয়েছিলি, দিতে পারি নি
একটা নদী চেয়েছিলি, দিতে পারিনি
একটা সাগর চেয়েছিলি, দিতে পারি নি
একটা চাঁদ চেয়েছিলি, দিতে পারি নি
একটা আকাশ চেয়েছিলি, দিতে পারি নি

কতোটুকুই দিয়েছি তোকে?
তবুও চেষ্টার কিছু কম তো করি নি;

যখন পাহাড় চেয়েছিলি তোকে নিয়ে গিয়েছিলাম পাহাড়ে
দুদিন পাহাড়ে থেকেই তুই হাঁপিয়ে উঠেছিলি
বললি এখানে নয় এখানে নয় জংগলে চলো

আমরা দুজন মিলে জংগলে চলে গেলাম
দুদিন ঘন জংগলে তাঁবু খাটালাম
জংগলের নিস্তব্ধতা সইলো না তোর, বললি নদী চাই

আমি নদীতে নিয়ে গেলাম তোকে
নৌকোর ওপর দুদিন থেকেই হাঁপিয়ে উঠেছিলি
বললি উঁহু এখানেও হবে না তোর সাগর লাগবে

নিয়ে গেলাম সাগরে, দুদিন অনেক করে বালিয়াড়ি ধরে হেঁটে বেড়ালাম
তোর মন ভরলো না, একদিন সাগর সাঁতারে কিছু লবণ মুখে যেতেই বললি
ধ্যাত! সাগর পচা, লবণে ভরা, তোর চাঁদ চাই

চাঁদে আমি কিভাবে যাই?
একদিন খুব জ্যোৎস্না উঠলো যেদিন তোকে চাঁদ দেখালাম
সারারাত চাঁদের নীচে প্রেম করে বললি উঁহু, চাঁদে দাগ, তোর আকাশটাকেই চাই

আচ্ছা! তুইই বল, আকাশ আমি দেব কিভাবে?
আমি তোকে নীল দিতে চাইলাম তুই বললি হবে না
আমি তোকে ভোরের লাল দিতে চাইলাম তুই বললি বড্ড ফিকে
আমি তোকে সূর্যাস্তের গাঢ় লাল দিতে চাইলাম তুই বললি বেশি লাল
তারপর তোকে রাত দিলাম, অন্ধকারে ভয় পেয়ে তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি
অভিমানে বললি, ওগুলো কিছুতেই তোর মন ভরছে না;

আমি বিহ্বল হয়ে বললাম, তাইলে কি দেব বল তোকে?
অনেক অনেকক্ষণ চিন্তা করে বললি - 'আমি তোমাকেই চাই'

আমি বললাম ব্যাস! ওটুকুই?
তুই আবারও চিন্তা করে বললি
হ্যাঁ,
তোমার কাছে ওটা ওটুকুই
আমার কাছে পাহাড়
ওটুকুই আমার জঙ্গল
ওটুকুই আমার নদী
ওটুকুই আমার সাগর
তুমিই আমার চাঁদ, তুমিই আকাশ
ওটুকু হলেই আমার আর কিছু চাই না, ব্যাস;

আমি আর কতোটুকুই দিতে পারি বল!
তবে সেই থেকে তোকে আমি আমায় দিলাম
পুরোটাই, আমার আর কিছুই রইলো না আমার হয়ে

আর তারপর থেকে আমি তোর হয়ে রইলাম 'তুই হয়ে'।

১৫ জুন, ২০২০

#কবিতা
তুই হয়ে
- যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা







ভেজা রংতুলি





ভেজা রংতুলি
- যাযাবর জীবন


একটা সময় ছিলো
তার জন্য সকাল হতো
ভোর হতো আকাশ
একটা পরিযায়ী পাখি ঢুকতো আমার ঘরে
আমায় জাগিয়ে তুলতো তার নরম ডানাগুলো খুলে খুলে
আর তার বিছানো চুলের ঘাসে লেগে থাকতো কিছু শিশিরের জলরাগ
আমি তার ঠোটের কমলা থেকে একটা কামড় খেতেই
ক্যানভাসে মালটার রঙ ধরে যেত
তার বুকের ডালিম ভাংতেই পেন্সিলের ডগায় চলে আসতো সূর্যের লাল রঙ
আমি জলরং খুঁজতে খুঁজতে একটা নদী খুঁজে যেতাম,
তাকে আঁকব বলে;

তার দুষ্কর বাঁকে বাঁকে নিজেই হারিয়ে গিয়েছি কতবার!
সেদ্ধ হয়েছি তার ভেতর জমিয়ে রাখা বুনোতাপে
ভালোবাসার জলীয়বাষ্পে মেঘ জমে উঠতো আকাশে আকাশে
আমি বুকের পাঁজরে তাকে ঢেকে নিতেই শরীরে ঝড়
প্লাবন ডাকতো নদীতে আর প্রচণ্ড ঢেউ এ নৌকোর দুলুনি
তারপর ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টিতে ধুয়ে যেত রংতুলি;

তাকে আর আঁকা হতো না,
কি করে আঁকব বল!
বৃষ্টিস্নাত ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরটায় ঘুম যে বড্ড টানে
আর তার আদর মেখে থাকে অনুভবের অস্তিত্ব জুড়ে।


১৩ জুন, ২০২০

#কবিতা
ভেজা রংতুলি
- যাযাবর জীবন






চাটুকার বিশেষণ




চাটুকার বিশেষণ
- যাযাবর জীবন


চাটুকারে চাটুকার
চারিদিকে চাটুকার
খোলা আছে হাটু কার
একটু চাটবে, যাকে পাবে তার

চাটাচাটি করে সে
চাটুকারি করে যে
হোক সে মন্ত্রী কিবা হোক রাজাকার
চোখবন্ধ চেটে যায় একমনে চাটুকার

এই যে চাটছিস! পেলি কি কিছু?
তুই বল দেখি, বাকি আছে কি আমার?
তোর আগেও চেটে গেছে
বহু বহু চাটুকার;

কেন? অনেক পেয়েছি উচ্ছিষ্ট, রুটি আর রুজি
চাটায় জুটেছে হালুয়ার চিনি সুজি
চাটার পাশাপাশি আপনাকে করেছি সম্ভাষণ
বিনিময়ে বিশাল প্রাপ্তি, চাটুকার বিশেষণ।

১৩ জুন, ২০২০

#কবিতা
চাটুকার বিশেষণ
- যাযাবর জীবন






বৃষ্টির স্মৃতি



বৃষ্টির স্মৃতি
- যাযাবর জীবন


বৃষ্টি নামলেই মন খারাপ
ঝুম বৃষ্টিতে তো কথাই নেই
মনে আছে তোর!
ঐ যে আমরা ঝুমঝুমান্তি ভিজেছিলাম সেই?

টিপ টিপ টিপ টিপ আকাশের কান্না
আকাশের অভিমান?
ভিজতে ভিজতে ঠোঁটের কোলাজ
বৃষ্টির প্রতিদান;

মেঘ ঘন হতেই তুই ঘন হয়েছিলি বুকে
তুই ঘন হতেই ঠোঁট ছুঁয়েছিল ঠোঁটে
তারপর টিপ টিপ হতে ঝুম বৃষ্টি নামলো
ভিজলাম আমরা ভেজা প্রেম নামলো

আচ্ছা, বলতে পারিস!
স্মৃতিগুলো কেন নেমে আসে আকাশ থেকে?
আর মন খারাপের হাওয়া বয়ে যায় চারিদিকে
দাঁত কামড়ে কলম আমার কেনই বৃষ্টি আঁকে?

বৃষ্টি আঁকে কি? নাকি তোকে?
স্মৃতির বাস কোথায়? মস্তিষ্কে না বুকে?
আজ বৃষ্টি নেমেছে ধুম, ভিজবি আমার সাথে?
নাকি কলমে প্রেম আঁকব? চিরাচরিত মনে করে তোকে।

১৩ জুন, ২০২০

#কবিতা
বৃষ্টির স্মৃতি





নির্ভরতার গন্ধ




নির্ভরতার গন্ধ
- যাযাবর জীবন


একটা সময় ছিলো
যখন বাবা ছিলো,
এখন শুধুই স্মৃতি;

একটা সময় ছিলো
মাথার ওপর ছাতা ছিলো
তুমুল বৃষ্টিতে মাথার ওপর নিশ্চিন্ত ছাতা;

একটা সময় ছিলো
মাথার ওপর ছায়া ছিলো
ছায়াটা কেমন জানো?
ঐ যে ধু ধু প্রান্তরে যখন রোদ মাথার ওপর!
আর মাঠের ঐ বিশাল বটগাছটার ছায়াটা, ঠিক তেমন;

একটা সময় ছিলো
মাথার ওপর ছাদ ছিলো
প্রচণ্ড ঝড়ে মাথার ওপর পাকা ছাদ,
আর আমি বাবার বুকে মুখ গুঁজলেই নির্ভরতায় নির্ভার;

আচ্ছা! নির্ভরতার গন্ধ কেমন জানো?
বাবার গায়ের গন্ধ শুঁকে দেখো;

তারপর একদিন হঠাৎ,
খুব হঠাৎই দেখলাম মাথার ওপর ছাতাটা নেই ঝুম বৃষ্টিতে
প্রচণ্ড রোদে বটগাছটা কোথায় জানি উধাও হয়ে গেছে
এক ঝড়ের রাতে অনুভব করলাম মাথার ওপরে কোন ছাদ নেই;

সে যে কি প্রলয়ঙ্করী এক ঝড়!
প্রকৃতি ও জীবনে,
অথচ আমার কোন নির্ভরতার জায়গা নেই
নেই কোথাও নির্ভরতার গন্ধ,
শুধু পড়ে আছে বাবার কিছু স্মৃতি
আর অসহায় আমি তাই চেয়ে চেয়ে দেখি;

কোথায় জানি কে কে কাঁদছিল,
অথচ আমি গলার ভেতর আটকে রেখেছিলাম
দমকে দমকে আসা প্রচণ্ড কান্নাগুলো,
কে যেন বলছিলো ভেতর থেকে, শক্ত হতে হবে এবার তোমাকে
হতে হবে কারো ছাতা
কারো বটগাছ
কারো মাথার ওপরের ছাদ,
নির্ভরতার গন্ধ আনতে হবে এবার আমার ঘামে
বাবা হতে হবে এবার আমাকে;
সে যে বড় কঠিন কাজ!

প্রকৃতিই বোধহয় বাবা'কে ঘুম পাড়িয়ে রাখে সন্তানের মধ্যে
তারপর একসময় খুব হুট করে বাবা'রা চলে যায় কোন এক অন্য ভুবনে
সন্তানের ভেতর ঘুমন্ত বাবা'কে জাগিয়ে দিয়ে,
আর ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙে ওঠে সন্তানের শুরু হয়ে যায়
বাবা হওয়ার লড়াই;

বাস্তবতাটা বড্ড কঠিন
কঠিন ছাতা হয়ে ওঠা
কঠিনতর বটগাছ হয়ে ওঠা
কঠিনতম মাথার ওপর ছাদ হয়ে ওঠা
কঠিন থেকে কঠিনতম - বাবা হয়ে ওঠা;

নির্ভরতার গন্ধ এমনি এমনি আসে না।


১৩ জুন, ২০২০

#কবিতা
নির্ভরতার গন্ধ
- যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।






মেঘের ভালোবাসা, মেঘের কান্না



মেঘের ভালোবাসা, মেঘের কান্না
- যাযাবর জীবন


আজ সারাদিন মনখারাপের টিপটিপ বৃষ্টি
অনেকদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না
অনেক দিন ভেজা হয় না তোতে
একটু ভিজবি?
চল;

বৃষ্টিতে কোন প্রেম নেই
নেই আবেগ, নেই অনুভূতি
ঝিরঝির করে ঝরছে শুধুই জল
চল আজ বৃষ্টিতে ভালোবাসা মেশাই
চল আজ বৃষ্টিকে ভালোবাসা শেখাই,
চল ভিজি, চল!

এই যে টিপটিপ টিপটিপ ঝরছে!
বৃষ্টিতে শুধুই জল দেখে সবাই
মেঘের কান্না কেও বোঝে না
বোঝে না মেঘের অনুভূতি, মেঘের মন খারাপ
তাই তো বাতাসে মেঘের ইতিউতি চলাচল
কে মেঘের মন বোঝে, বল?
আরে মনে ভালোবাসা থাকলে তবেই না কান্নার জল;

মেঘের আজ বড্ড মন খারাপ
মন খারাপ আমারও
আচ্ছা! তোর মন ভালো আছে আজ?
তবে ভালোবাসাবাসি করি, চল!
আজ ভালোবাসায় বৃষ্টি নামাই
ভালোবাসায় তোকে ভেজাই, চল!

সবাই কি আর ভালোবাসতে পারে রে?
মেঘ পারে, নদী পারে, সাগর পারে
ওদের সবার আছে জল,
আমি তো কেবল শিখছিই আর শিখছি,
মেঘের কান্নায়, বাতাসের হো হো শব্দে
ঝড়ে, ঝঞ্ঝায়, বন্যায় আর সাগর জলে
আর চেখে যাচ্ছি মনের লবণ জল;

আচ্ছা! তোর চোখে কেন এত জল?
অনেক ভালোবাসিস বুঝি?
তাহলে বল
চিৎকার করে বাতাসের হো হো শব্দ ছাপিয়ে দিয়ে বল
"ভালোবাসি"
"ভালোবাসি"
"ভালোবাসি"

তারপর সব ওলোটপালট করে দিয়ে
দুজন ভালোবাসার কান্নায় ভিজি চল।


১১ জুন, ২০২০

#কবিতা
মেঘের ভালোবাসা, মেঘের কান্না





হৃদয় জাগাতে হয়



হৃদয় জাগাতে হয়
- যাযাবর জীবন


এই যে পাগলের মত আদর কর!
শুধু তো শরীরটাকে ছানো
মন বুঝ কি?
নারী চেনো?

আমি ওর মাঝে ডুবে যেতে যেতে কিছু বিড়বিড়ানি শুনছি
বোধগম্য হচ্ছে কি?
ধ্যাত! এ সময় কে হাবিজাবি বুঝতে চায়!
আমি শরীর বুঝি, শরীর খুঁজি
কামে অন্ধে'র আবার বিচার বিবেচনা আছে নাকি?

শাড়ির ভাঁজ খুলতে খুলতে যখন শরীরের ভাঁজে হাত দেই
সূর্যের বিস্ফোরণ তখন আমার গায়
লবণে ভিজতে আমি সাগরে ডুবতে যাই
কে যেন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আমায়;

আমি চমকে উঠে যাই
তোর চোখে তাকাই
ওখানে সূর্য নেই, নেই উত্তাপ
বরফ শীতলতায় বিড়বিড় করছে তোর ঠোঁট
- 'ওখানে নয় ওখানে নয়
এই যে স্তনে ধরে আছ! ঠিক তার দু ইঞ্চি নীচে হৃদপিণ্ড রয়
ওখান থেকে শুরু করতে হয়'
ওখানে প্রাণ আছে
প্রথমে প্রাণ জাগাতে হয়
তারপর প্রেম জাগাতে পারলে তবেই না কাম
আর নয়তো কুকুর রমণে ঝরে শুধুই পুরুষের ঘাম,
আগে নারীকে বুঝতে হয়
নারীতে ডুব দেয়া? এত সোজা নয়;

আমার শরীর হঠাৎ করেই থার্মোমিটারর কাঁটায় হিমাঙ্ক ছুঁয়ে যায়
রিপুর আয়না ভেঙে যেতেই চপেটাঘাত বোধোদয়
তাই তো! পুরুষ হতে হলে আগে প্রেমিক হতে হয়
তারপর হৃদয়টা ছুঁতে হয়
তবেই না নারী কথা কয়!
তবেই না শরীর শরীরের হয়!
হ্যাঁ, নারীতে ডোবা খুব সহজ কাজ নয়।


১১জুন, ২০২০

#কবিতা
হৃদয় জাগাতে হয়
- যাযাবর জীবন



দুষ্ট লোকের কথা



দুষ্ট লোকের কথা
- যাযাবর জীবন


সফল প্রেমিক নাকি প্রেম করে সংসার করে
আর ব্যর্থ প্রেমিক কবিতা লিখে,
দুষ্ট লোকে বলে;

কই!
আমি তো তোর সাথে প্রেম করতে করতেই কবিতা লিখি
অথচ তুই আমার ঘরে
আমি তোর সাথে প্রেম করে করেই তোকে আঁকি
যখনই তুই মন ঘরে,
কবিতার ছলে;

কেও কেও বলে আমার নাকি গল্প ভালো আসে
আমি মাঝে মাঝে কাগজ কলম নিয়ে বসি গল্প লিখব বলে
তারপর এক খাতা তোকে এঁকে প্রেম করি তোর সাথে
তোর ঘরে, আমার ঘরে
প্রেম করে
আর শুধু প্রেম করে,
তোর ঘর আর আমার ঘর তো একই ঘর, তাই না রে?
আর গল্পটা কখন জানি কবিতা হয়ে যায়! তোর মুখ মনে এলে;

আরে প্রেমেও কবিতা হয়!
যদি তালে সুর মেলে
মন ভালোবাসা হলে
আর গল্পগুলো কবিতা হয়ে যায় মনে তুই এলে;
দুষ্ট লোকে খামোখাই বাজে কথা বলে।

১০ জুন, ২০২০

#কবিতা
দুষ্ট লোকের কথা





স্পর্শে অনুভব



স্পর্শে অনুভব
- যাযাবর জীবন



স্পর্শে স্পর্শ আছে, স্পর্শে আছে গন্ধ
কেও স্পর্শই বোঝে না, মন যাদের অন্ধ
কেও স্পর্শে স্পর্শই পায়, কেও পায় অনুভব
স্পর্শে কেও ভালোবাসা পায়, আর অনুভূতিগুলো সব;

স্পর্শের কতই না রকমফের!
যারা অনুভব করে শুধু তারাই জানে
আর বাকিরা?
ডিকশনারিতে স্পর্শ বলে একটা শব্দ আছে মানে;

মায়ের স্পর্শ মায়ের পেট থেকে
মায়ের গায়ের গন্ধ! মায়ের বুকে লেপ্টে থেকে
ওখানে শান্তি শান্তি একটা পবিত্র অনুভব
ও গন্ধে মা'য়ের অস্তিত্ব থাকে;

বাবার স্পর্শ? সে তো নির্ভরতা!
মরুভূমিতে যেন বটের ছায়া
ঝুম বৃষ্টিতে মাথার ছাতা
স্পর্শে অনুভব, স্পর্শে মায়া;

প্রেমিক-প্রেমিকার স্পর্শ! প্রথম প্রথম কামোদ্রেক
তারপর হয়তো পুরোটাই কাম!
তবে যখনই স্পর্শের অনুভবে নির্ভরতা
তখনই আপন করে নেয়ার নাম;

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক পবিত্র, অনুভবে অনুভব
স্পর্শে ভালোবাসা স্পর্শেই সব অনুভব
যখনই স্পর্শে ঘৃণার অনুভূতি, তখনই আলাদা পথ
স্পর্শে নির্ভরতা? পাশাপাশি থাকার শপথ;

সন্তানের স্পর্শ? ছোটহাতে পেয়েছিলাম অনেক
তারপর? হাত বড় হতে হতে মাথায় আমার থেকেও বড়
একসময় তারও পরিবার হয়, দূরে সরে যায় আরও
বাবা-মায়ের স্পর্শ থেকে এখন সন্তানের স্পর্শ প্রিয়;

এই যে ঘুমের মাঝে হাত বাড়িয়ে তোকে খুঁজি!
কেও তো পাশে আছে! হাতে হাত পড়লেই বুঝি
নির্ভরতা আমার থেকে ভালো চেনে আর কে?
ভালোবাসায় তোর হাত, যুগযুগ স্পর্শ করে রেখেছে যে।


১০জুন, ২০২০

#কবিতা
স্পর্শে অনুভব













সপ্তম রিপু



সপ্তম রিপু
- যাযাবর জীবন


কামের বাসনায় এই যে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকি!
আচ্ছা, আমি মানুষ নাকি?
পশুরও তো কাম থাকে, আমার থাকতে দোষ কি?

ক্রোধে অন্ধ হয়ে প্রায়শই এই যে লঙ্কাকাণ্ডগুলো ঘটাই! আমি কি ঘটাতে চাই?
যখন রাগে আমি হিংস্র, তখন কেও আমাকে দেখেছ? আমি কোথায় থাকি আমার বশে?
আরে বাবা রাগ তো পশুতেও দেখায়, আমার থাকলে দোষ কোথায়?

লোভের কি কোন সীমারেখা আছে?
অতৃপ্ত লালসা'কে কেই বা তৃপ্ত করাতে পেরেছে?
লোভী সবাই, আমার হতে দোষ কি?

মোহে অন্ধ থাকি ক্ষণস্থায়ী কিছু ভ্রান্ত ধারণায় আর উল্লসিত ক্ষণপ্রাপ্তিতে
নৈতিক স্খলন? আরে ওগুলো বইয়ের ভাষা,
মায়ার হাতছানি কে না পেয়েছে?শুধু আমায় দোষ দিও না;

মদ তো মানুষেই খায়? কেও মাতাল হতে কেও অহংকারে, কেও দম্ভভরে
অহংকারীর পতন? নিজের চরকায় তেল দাও তো! উপদেশ দিতে এসো না;
আমি এখন অহংকারের রঙ্গিন নেশায়, জানো না আমার দম্ভ কাটে না!

মাৎসর্য্য আবার শব্দ হলো নাকি? তুমি অন্যের ভাল সইতে পার না তাতে আমার কি?
এই যে তুমি এত ওপরে উঠে গেছ! আমারও তো জ্বলে, হ্যাঁ! হিংসায় জ্বলে পুরে শেষ হই আমি
তবুও তোমাকে ছুঁতে পারি কি? না তোমার অবস্থানে পৌছুতে পারি?

সপ্তম রিপু'টি খুঁজছ? আয়না দেখ; আপাদমস্তক রিপুতে রিপুতে পরিপূর্ণ
হাঁটাচলা করা এক রক্ত মাংসের পিণ্ড, আমি নামের এক 'আয়না-মানব';
আমি আয়নায় আমাকে দেখতে পাই না, সপ্তম রিপুর পুরোটাই অন্ধকার।


৮ জুন, ২০২০

#কবিতা
সপ্তম রিপু




স্বীকারোক্তি




স্বীকারোক্তি
- যাযাবর জীবন


মাংসের ওপর চামড়া পরত, ভেতরে হাড়ের কঙ্কাল
হৃদপিণ্ড ফুসফুস যকৃত আরো কত কি? আর মস্তিষ্ক ভরা একটা মাথার খুলি,
আচ্ছা! তাহলে মন কোথায় থাকে? হাড়ে, মাংসে, চামড়ায়, হৃদপিণ্ডে নাকি মস্তিষ্কে?
মন কোথায়? আমিতো রিপুতে মোড়া চামড়ার খোলস দেখি;

কেও না জানুক, আমি তো জানি;

মনের খোলস খুলতে খুলতে দেখি কালো লোভের খোলস
লোভের খোলস ঢাকতে গিয়ে ঢুকে যাই মিথ্যের খোলসে
মিথ্যে ঢাকতে গিয়ে অপরাধের জগতে, তারপর হেরে যাই রিপুর কাছে
ঐ তো আয়নার ভেতরে রক্ত মাংসের জলজ্যান্ত পাপ;

কেও না জানুক, আমি তো জানি

তারপর একসময় চামড়ায় টান ধরে জীর্ণতা
ন্যুজ্ব কুঁজো হয়ে আসে হাড়ের কঙ্কাল
সারারাত পাপ করে ভোরের সূর্যে অনুতাপের নিঃশব্দ চিৎকারে স্বীকার করি
হ্যাঁ, আমিই মন; চামড়ার খোলসে মোড়া রিপুর কাছে পরাজিত একদলা এঁটেল মাটি

কেও না জানুক, আমি তো জানি।


৮ জুন, ২০২০

#কবিতা
স্বীকারোক্তি






বৌ-শাশুড়ি



বৌ-শাশুড়ি
- যাযাবর জীবন


যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে বৌ শাশুড়ির লড়াই
কোন কারণ ছাড়াই,
ট্র্যাডিশন! বোধহয় বলতে পারি;

বোধবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি
এঘরে ওঘরে সেঘরে, আমার ঘরে তারঘরে ওর ঘরে
ডানের ঘরে বাঁয়ের ঘরে, ওপর তলার ঘরে নিচ তলার ঘরে
ঘরে ঘরে ঘরে ঘরে
দিন নাই রাত নাই সকাল নাই সন্ধ্যা নাই
বৌ আর শাশুড়ি ঝগড়া করে;

এই যে ঘরে ঘরে দুজনে লড়ে!
কে জেতে? কেই বা হারে?
কে বলতে পারে?

ঘরে ঘরে শাশুড়ি-বৌ এর অশান্তি
লেগে আছে তো লেগেই আছে যত্রতত্র
এ যেন এক শেষ না হওয়া কাব্য
দা-কুমড়ো তো উপমা মাত্র;

অথচ আজকের শাশুড়ি কিন্তু এক সময়ের বৌ ছিলো
আজকের বৌটাও কিন্তু একসময় শাশুড়ি হবে
এটাই শাশ্বত
এটাই সত্য;

শাশুড়ি কখনোই মা হতে পারে না
তার ব্যবহারে, আচার আচরণে কিংবা কাছে টেনে নেয়ায়,'
কেন? কেও জানে না;

বৌরাও কখনোই মেয়ে হতে পারে না
হয়তো শাশুড়ির কাছ থেকে পাওয়া ব্যবহারে, আচার আচরণে কিংবা দূরে ঠেলে দেয়ায়,
তাই কি? নাকি রক্তে ট্র্যাডিশন! কেও জানে না;

ফলশ্রুতি!
দা-কুমড়োই বলি কিংবা বটি-তরকারি
লেগেই থাকে ঘরে ঘরে
আর ঝনঝন থালা-বাটি হাঁড়িকুঁড়ি;

একজন পাটা তো আরেকজন পুঁতো
দুজনে দিনরাত যেন কাপড়ে চালায় সেলাই সুতো
মশলা কিন্তু একজনই কিংবা কাপড়টা
- আমি, তুমি, ও কিংবা সে,
- একই ব্যক্তি
- মায়েদের সন্তান আর স্ত্রীদের স্বামী
ট্র্যাডিশনের ভুক্তভোগী;

না পারে মা'কে সামলাতে
না পারে বৌকে
বিনা অপরাধে দুজনারই রোষানলের ভাগী;

মা'কে বোঝাতে গেলেই
- কুলাঙ্গার ধরেছি পেটে, বেটা বৌ এর গোলাম
স্ত্রীকে বলতে গেলে
- তোমার ঘরে এসে, বলো আমি কি পেলাম?
ইমোশনাল ব্ল্যাক-মেইলিং এ, কেও কারো থেকে কম যায় না
কথার ছুড়িতে কারোরই ধার কম না,
ছেলেদের বোধহয় হজম শক্তি অনেক বেশী, তাই না?

মায়ের সাথে গলা উঁচুর প্রশ্নই ওঠে না;
পরিবারের মাধ্যমে সমঝোতা? আসলে হয় না
- গুরুজনের একটাই বক্তব্য, স্ত্রী'কে ছেড়ে দাও
আরে বাবা! ও কি আমার সন্তানের মা না? বলতে গিয়ে কেন এরা একবারও ভাবে না?
কেন ভুলে যায়! ওর ঘরেও তো একই কাহিনী;
স্ত্রী'কে কড়া কিছু বলব?
ব্যাস! হয়ে গেলো, বোঁচকাবুচকি নিয়ে বাপের বাড়ি
আমার সংসার সামলায় কে? আমার বৃদ্ধা মায়ের সেবা করে কে?
তথাকথিত গুরুজনেরা এসে?
অগত্য! দায় সব আমারই,
ছেলেদের বোধহয় সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশী, তাই না?

ওহে দেখছ কি? আমি তোমারই ঘরের গল্প করছি
আমার ঘর, তোমার ঘর, পাশের ঘর
তার পাশের ঘর
তারও পাশে
যতদূর চোখ যায়,
প্রতিটা ঘরের প্রায় একই রকম কাহিনী;

হ্যাঁ! আমি বোধহয় নব্বই শতাংশ ঘরের কথাই বলছি;
অল্প কিছু কম হলো কি
কিংবা অল্প কিছু বেশী?
আসলে বৌ-শাশুড়ির চিৎকারে কেও শুনতেই পাচ্ছে না কি বলছি।


০৪ জুন, ২০২০

#কবিতা





অনুভূতির নাম



অনুভূতির নাম
- যাযাবর জীবন


আলোটা বড্ড চোখে লাগছে
বলতেই তুই বাতি নিভিয়ে দিলি
অথচ যদি আমার চোখ পড়তে পারতি তবে বুঝতি
বড্ড চুমু খেতে ইচ্ছে করছিলো তোকে

বড্ড মেঘ করেছে আজ
বলতেই তুই ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলি
অথচ অথচ যদি আমার চোখ পড়তে পারতি তবে বুঝতি
আজ আমার বড্ড মন খারাপ

কি তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, তাই না?
বলতেই তুই জানালার পর্দাগুলো টেনে দিয়ে বললি, দেখো আবার ভিজো না যেন
অথচ অথচ যদি আমার চোখ পড়তে পারতি তবে বুঝতি
তোকে নিয়ে বড্ড ভিজতে ইচ্ছে করছে ঝুম বৃষ্টিতে

আচ্ছা! চোখে কি ভাষা লেখা থাকে না?
তবে পড়তে পারিস না কেন রে?

এই যে রোদ উঠলে তোর মাঝে রাগের তেতে ওঠা দেখি!
এই যে চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে তোকে চুমু খেতে ইচ্ছে করে
এই যে বৃষ্টি হলেই তোর সাথে ভিজতে ইচ্ছে হয়
এই যে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে তোতে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে
এই যে জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে তোকে দেখি
এই যে অন্ধকারে এত এত কবিতা লিখি!

চোখের ভাষা বুঝিস না কেন রে?
বুঝেছি, তুই আমার চোখ পড়তেই চাস না রে!

আসলে ভালোবাসার মানুষের চোখ পড়তে নেই
ওখানের সুখ আর আনন্দটুকু যদিওবা হাসায়
তবে বেদনাগুলো তারচেয়ে অনেক বেশী কাঁদায়।

এই যে তোকে দেখলেই,
তোর চোখ পড়লেই,
আমার ভেতরের যে অনুভূতিগুলো জেগে ওঠে!
এ অনুভূতিগুলোর কি কোন নাম আছে?


০১ জুন, ২০২০

#কবিতা

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত







হিপোক্রেসির কাব্য



হিপোক্রেসির কাব্য
- যাযাবর জীবন

----------------------------
কেও কেও বলে কাব্য হয় বিচ্ছেদে;
একদিন কেও তো ছিলো! এই অনুভবে,
অনুভব তো অনুভবই,
যখনি তার কথা মনে হয়!
যখনই সৃতি দাগ কাটে মনে, কলম দাগ কাটতে বসে যায় কাগজে
কখনো কবিতার ছন্দে, কখনো বা স্মৃতির রোমন্থনে
আরে বাবা!
মনে স্মৃতির জাবর না কাটলে কবিতা হবে কি করে?

আর মিলনে?
সে তো ঘরের বৌ!
এখানে কাব্য কোথায়?
এখানে দৈনন্দিন হাঁড়িকুঁড়ি
বাজার সদাই এর ফর্দ
এটা নাই ওটা নাই
এটা চাই ওটা চাই
সকালে নাস্তা করে অফিস যাই
রাতে রমণ শেষে দুজন দুপাশ ফিরে ঘুমাই;
ধ্যাত! এটা কিছু হলো?

আরে বাবা!
হলো, এটাও হলো
সংসার কারো কাছে যন্ত্রণা
আর কারো কাছে সংসারটাই কবিতা
যে যেভাবে দেখে,
তুমি কিভাবে দেখছ?
ওহে বাছা!
তোমার তো দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর সময় হলো;

আচ্ছা! বৌ কে যখন গভীর আবেগে বুকে জড়িয়ে ধর
তখন, ঠিক তখনই কি পুরনো প্রেমিকা মাথাচাড়া দেয় কখনো?
এই যে সারাদিন বৌ এর সাথে লেপ্টে থাকো!
কবিতায় কেন প্রেমিকা আঁক?

আচ্ছা! হিপোক্রেসিকে কবিতার ভাষায় কি বলে?

৩১ মে, ২০২০

#কবিতা

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, কিছুটা এডিট করা