আমাদের বড্ড আজব এক চুলকানি রোগ হয়েছে
আমরা যখন তখন চুলকাই, যেখানে সেখানে;
আগে চুলকাতাম মুখে মুখে
তারপর মুখেমুখে থেকে ছড়িয়ে একটা সময় কিছু রগরগে খবরের কাগজে
আজকাল যুগের উন্নতিতে ব্যাপক চুলকানি ভার্চুয়াল জুড়ে
যখন তখন, যেখানে সেখানে, যাকে তাকে নিয়ে;
এ চুলকানি শরীরের নয়, মনের
কারো উন্নতি দেখলে চুলকায়
কারো অবনতি দেখলেও চুলকায়,
কেও ভালো থাকলেও চুলকায়
কেও খারাপ থাকলেও চুলকায়,
কেও বিয়ে করলেও চুলকায়
কেও বিয়ে না করলেও চুলকায়,
কারো বাচ্চা হলে চুলকায়
কারো বাচ্চা না হলেও চুলকায়,
কারো সংসারে শান্তি দেখলে চুলকায়
কারো সংসারে অশান্তি দেখলেও চুলকায়,
কাউকে আনন্দে থাকতে দেখলে চুলকায়
কেউ দুঃখে আছে জেনেও চুলকায়,
ঘরে বাইরে, সামনে পেছনে, ওপরে নীচে
যে যেখানেই থাকুক না কেন
যে যেভাবেই থাকুক না কেন
অন্যের থাকা ও না থাকা নিয়ে আমাদের বড্ড চুলকায়
দিনে, রাতে, ঘুমে, জাগরণে শুধুশুধুই আমাদের চুলকায়;
সেদিন একটা খবর দেখলাম এক বয়স্ক লোক বিয়ে করেছেন
অল্প বয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন
সে নিয়ে দুনিয়ার চুলকানি পুরো ভার্চুয়াল জুড়ে,
আরে বাবা! ওনার বিয়ের প্রয়োজন হয়েছে, বিয়ে করেছেন
ওনার ট্যাঁকে ক্ষমতা আছে, বিয়ে করেছেন
দুজনার সম্মতিতে কবুল পড়েই বৈধ উপায়ে বিয়ে করেছেন
জোর করে করেছেন?
আমার আপনার ওর তার এত চুলকাচ্ছে কেন?
আমরা করতে পারছি না বলে?
নাকি ঈর্ষা পুরো মন জুড়ে চুলকাচ্ছে
আর তা ছড়িয়ে দিচ্ছি ভার্চুয়ালের দেয়ালে দেয়ালে,
আচ্ছা! আমার চুলকানিতে তার কি এসে গেলো!
অথচ চুলকিয়ে চুলকিয়ে আমার তো পুরো মনটাই ছিলে গেলো,
উনি তো সুখের দাম্পত্য কাটাচ্ছে রে ভাই!
শুধু শুধু আমার আপনার চোখেই ঘুম নাই,
এতই যদি চুলকায়! অমন একটা বিয়ে করে দেখিয়েই দেই না!
ধ্যাত! কি সব আজেবাজে কথাই যে বলো না?
ও হে! উনি বৈধ বিয়ে করেছেন
আর আমি আপনি ওরা তারা ও তারা, যাদের খুব চুলকাচ্ছে
চলুন তাদের একটু দেখি!
ঐ যে পাশের বাড়ির সুন্দরী! হোক না মেয়ের বয়সী কিংবা মায়ের
সুযোগ পেলেই দু চোখ ভরে দেখি আর মন ভরে চাখি
ওতে দোষ নেই কিন্তু!
আয়নার সামনে হঠাৎ একদিন লাইটটা জ্বালিয়ে মনের ভেতরটায় উঁকি,
ওকি! ওকি!
কেন আয়না দেখালে? দিলে তো পরকীয়ার ছুটি করে!
আরে! আরে! লাইটটা কেন জ্বালালে?
বেশ তো ছিলাম আধো অন্ধকারে হোটেল ঘরে
বাচ্চা মেয়েটার সাথে জড়াজড়ি করে
আচ্ছা, বলো তো! একটু খরচের জায়গা না থাকলে টাকা কামিয়ে লাভ কি?
ও ভাই! আয়নায় তাকাই
আসেন মনের চুলকানিতে মলম লাগাই,
চুলকানির মলম? সেটা আবার কি?
ওটা তাদের জীবন, আমার কিছু নয়
এটুকুই বোধোদয়; আর লাগে কি?
অন্যভাবে দেখি!
আমি আমারটা কামাই, আমারটাই খাই
ওর কি হলো আর না হলো, তাতে আমার কি?
ওটুকু ভাবতে পারলেই চুলকানি সেরে যাবে
নয় কি?
ভাবতে পারছেন না?
তবে চুলকিয়ে যান।
৩০ ডিসেম্বর, ২০২০
#কবিতা
চুলকানির মলম
- যাযাবর জীবন
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন