সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পাথর জীবন


পাথর জীবন
- যাযাবর জীবন



সন্ধ্যা নামছে জীবনে, মন বলে ঘরে চলো
সেই ভোর থেকে পাহাড় বাইছ
বরফ কাটছ,
সেই দুপুর থেকে সাগর সেঁচছ
নৌকা বাইছ,
সেই সন্ধ্যা থেকে লাঙল চষছ
মাটি কাটছ,
অনেক তো হয়েছে ঘামঝরা
ক্লান্ত হওনি! বলো?
এবার ঘরে চলো;

একটা জীবন
পাথরের মত কঠিন
ধাপে ধাপে সময় পার
পড়ালেখা সংসার
ছেলেমেয়ে হলেই কাঁধে জোয়াল
ক্ষুধা, দারিদ্র আর কঠিন সময় পার,
বড্ড পরিশ্রান্ত চোখ ছলোছলো;
নিজেকে দেখো না আয়নায়?
অনেক ক্লান্ত তুমি
ঘুমোবার সময় হয়েছে, এবার ঘরে চলো;

কেও কেও রাত্রিতে ঘুমায়
তুমি তখনো জেগে থাকো সংসার টানায়
এত কাজও করতে হয়?
কাজ না করলে কে খাবার দেবে বলো?
হাঁড়ি খুলতেই তো ভয়
এতগুলো মানুষ
এতগুলো মুখ
কাজ না করলে খাব কি?
আমার যে আহার জোটাতে হয়!

উঁহু! অনেক হয়েছে কাজ
ক্লান্ত তুমি আজ
একটু ঘুমিয়ে নাও
একটু বিশ্রাম
এবার ঘরে চলো,
যাব তো!
ঘুমবো
আমি একবারেই ঘুমবো
একবারেই ঘরে যাব
সকাল, সন্ধ্যে কিংবা রাতে
কি আসে যায়!
সেই শবই তো,
না হয় পড়ে থাকবে মাটির আশায়।






জায়েজ



জায়েজ
- যাযাবর জীবন


প্রেমের কথা বললেই যত আপত্তি
আমি নাকি প্যাতপ্যাতা প্রেম লিখি
ভালোবাসার কথা বললে বলিস
আরে ধ্যাত! ভালোবাসা বলে কিছু আছে নাকি?
চুমুর কথা বললে বলিস বেটা বদ
শরীরের কথা বললে আমি চরিত্রহীন,
অথচ নিজেরা যখন প্রেম করিস?
কথায় তখন গন্ধ হয় না
ঠোঁটে ঠোঁট অমলিন
আর শরীরে শরীরে বিলীন,
এবার সবকিছু করা যাবে
নিজের বেলা তো!

আসলে করায় দোষ নেই
গোপনে করায়,
বললেই যত দোষ
দোষ লিখায়
প্রমাণ যে থেকে যায়!

প্রেম
প্রীতি
ভালোবাসা,
কাম
শরীর
বিছানা;
সব, সব
সবই সম্ভব!!

শুধু লিখতে মানা
মানা ছবি আঁকতে
মানা কাব্যে ভালোবাসতে,
প্রেম করতে মানা কবিতার শরীরে
শরীর খুলতে মানা কাব্যের মনে;
বাকি সব জায়েজ
চুপিচুপি গোপনে।







অভিমানের মুখে ছাই




অভিমানের মুখে ছাই
- যাযাবর জীবন


জেগে আছি রাত, জেগে থাকি
অভ্যাসের দাস হয়ে গেছি
তুই ভেবে নিস না তোর জন্য জেগে থাকি,
আমার কি দায় পড়েছে ঘুম চোখে কষ্ট নেবার
তোর কথা মনে করার?
আর তোকে ভেবে রাতভর কবিতা আঁকার?

এই যে রাত রাত অন্ধকার
এই যে আধো আধো চাঁদ
এই যে জোনাক জ্বলা মিটিমিটি আকাশ
এই যে বৃষ্টি বৃষ্টি মন
আর মন উদাস বাতাস!
তুই কি ভেবেছিস তোর জন্য এদের কাছে আসি
তোর কথা মনে করে এদের খুঁজি?
আমার কি দায় পড়েছে তোকে মনে করার?
তুই কে রে আমার?

এই যে ভুল ভেবে ভেবে আমরা জটিল জালে জড়াই!
প্রেমের জালে
ভালোবাসার জালে
জলে জালা পড়লেই তো তীব্র টান!
মাছ আটকেছে না ভালোবাসা! তা বুঝতে না বুঝতে হাত থেকে জাল ছুটে যায়
ভালোবাসা ধরা পড়ে না জালে
ভালোবাসা ধুয়ে যায় জলে
তোর আর আমার,
ভাগ্যিস রাতের অন্ধকারে কান্না দেখা যায় না!
আমরা অন্ধকার রাতে চোখ বন্ধ করে অশ্রু লুকাই;

ঐ যে আয়নাটা দেখছিস?
দিনের বেলায় কিন্তু সব ফকফকে
তুই তোকে দেখিস
আমি আমাকে
একদম স্বচ্ছ পরিষ্কার,
কখনো আয়নার ওপাশটা দেখেছিস
গাঢ় করে পারদের পরত দেয়া থাকে
যাতে আয়নার দুপাশ থেকে আমরা পরস্পরকে দেখতে না পাই
তবুও মন কি মানে?
আয়নায় ক্রমাগত উঁকি দিয়ে যাই
যদি তোকে দেখতে পাই!
আর অহেতুক নিজের প্রতিবিম্বের সাথে ক্রমাগত করে যাই লড়াই;

ভালোবাসার লড়াইয়ে কে জিতেছিল কবে?
শুধু শুধুই অভিমানের বড়াই!

আমি জেগে আছি রে!
তুই নিদ্রা ভেবে ভুল করিস না
একবার ডাক দিয়েই দেখ!
অভিমান পুড়িয়ে দেব ভালোবাসার আগুনে,
তারপর তোর বুকেতে ঠাঁই;

আহ! কতদিন তোর বুকে মুখ রাখিনি
কতদিন তোকে পাঁজরে পিষে ধরি নি,
ভালোবাসা ভুল করে অভিমানে, খুব নীরবে
কোন একদিন একটাবার ডেকেই দেখ না!
অভিমানের মুখে ছাই।








কিছু থাকা আর না থাকা



কিছু থাকা আর না থাকা
যাযাবর জীবন


তোর আর আমার মাঝে কিছু একটা ছিলো
কিছু একটা বন্ধন
কিছু খোলা আর কিছু বাধা
অথচ যখনই আয়নায় তাকাই
প্রতিবিম্বে কোথাও তুই নাই;
উপহাসে আয়না
হো হো শূন্যতা।

তোর আর আমার মাঝে কিছু একটা তো ছিলো
অদৃশ্য একটা সুতা
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা
যখনই বৃষ্টি ধরতে যাই
হাত বাড়ালে কোথাও তুই নাই;
রিমঝিমিয়ে বৃষ্টি পড়ে
ভেজাতে পারে না আমায়।

তোর আর আমার মাঝে কিছুতো একটা ছিলো
অদৃশ্য একটা ঘর
অদৃশ্য সংসারে আমরা পরস্পর
অথচ যখনই ঘরে ঢুকতে যাই
চারিদিক খুঁজি, কোথাও তুই নাই;
চার দেয়ালের ঘর
শূন্যতার বসবাস।

তোর আর আমার মাঝে কিছুতো একটা ছিলো
যখনই তাকাই বুকের ছাতি খুঁড়ে
কোথায় হৃদয়? তুই পুরোটা জুড়ে
এ যে কি এক অসহনীয় অনুভব! অথচ বুঝতে গেলে নাই
বুকের ভেতর শত খোঁড়াখুঁড়ি, কোথায় তোকে পাই?
অলিন্দ নিলয় খুলে খুঁজি
ওখানে পুরোটাই রক্ত।

তোর আর আমার মাঝে কিছু তো একটা ছিলোই
হয়তো ভালোবাসার বন্ধন
মানুষ বলে রসায়ন
দুজন দুজনে, দুজন দু ভুবনে, পরস্পরের মনে ঠাঁই
অনেক দূরত্বে দুজন আমরা দুজন, স্পর্শে কোথাও নাই;
স্পর্শে তো ভালোবাসা থাকে
আমায় পাবি কোত্থেকে?

তোর আর আমার মাঝে কিছু তো একটা ছিলোই
কিছু কিছু দোষ
কিছু আক্রোশ
দোষ কিছু আমার হয়েছিলো তোকে ভালোবেসে
দোষ কিছু তোর হয়েছিলো আমায় কাঁদিয়ে
কিছু দোষ ছিলো সময়ের, কিছু পরিস্থিতির
এখন দূর থেকে ভালোবাসি, আর কপাল'কে দুষি
তুই, আমি দুজনেই।








চোখের আলো-অন্ধকার



চোখের আলো-অন্ধকার
- যাযাবর জীবন


আমি যেদিকেই তাকাই শুধুই তুই;

এই যে খোলা আকাশ নীল নীল
দিনের বেলায় কি প্রখর এক সূর্য
সূর্যের দিকে তাকাই চোখ ঝলসাই
সেখানেও তুই সূর্য হয়ে
এই যে খোলা আকাশ ধুসর ধুসর
রাতের বেলায় কি মায়াবী এক চাঁদনি!
চাঁদের দিকে তাকাই, ইচ্ছে করে চাঁদটাকে গিলে খাই
কোথায় চাঁদ? চাঁদনি হয়ে তুই;

আজকাল আর কোথাও যেতে হয় না
আজকাল আর চোখ খুলতে হয় না
আজকাল চোখ বন্ধ করতে হয় না
কি দেখব চোখ খুলে কিংবা বন্ধ করে?
তুই তো চোখের ভেতরে
চাঁদ হয়ে সূর্য হয়ে
আলো হয়ে অন্ধকার হয়ে

আমি একটা মনের কথা বলছি রে
যে কানের থেকেও বেশী শুনতে পায়
যে চোখের থেকেও বেশী দেখতে পায়
যে নাকের থেকেও বেশী ঘ্রাণ পায়
আমি কান বন্ধ করেও তোর শব্দ শুনি
আমি চোখ বন্ধ করেও তোকেই দেখি
আমি নাক বন্ধ করেও তোর গায়ের গন্ধ শুঁকি,
আমার চোখের আলো অন্ধকার তুই
আমার মনের আলো আর অন্ধকারেও তুই;

কারণহীন এক এক দিনে
কারণে আর অকারণে এক এক রাতে
হঠাৎ হঠাৎই তোর কথা মনে এলে
ক্রমাগত দিন রাত্রি তাঁতে
চাঁদ সূর্য সেলাই এ
আলো আঁধার হাতে
আমি তোকে বুনে যাই
শুধু তোকেই বুনে যাই,
কবিতা বোনা আর তোকে বোনার মাঝে আমি আজো পার্থক্য বুঝি নাই;

এই তুই তুই রোগটা আমার কবে থেকে জানিস?
যেদিন খুব হঠাৎই চোখ পড়েছিলো তোতে
আশ্চর্য সেই এক ভরা পূর্ণিমা রাতে,
তারপর থেকে আমি আর কোন নারী দেখি নি।





আকাশের জন্মদিন



আকাশের জন্মদিন
- যাযাবর জীবন


আকাশটা আকাশে খুব ভালো ছিলো;

আকাশে আকাশ হয়ে
নীল রঙের শাড়ী পড়ে চুলে মেঘ জড়িয়ে
এখানে ওখানে উড়ে বেড়াতো
কখনো সূর্য হতো
কখনো ঝমঝম বৃষ্টি
তার মনের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীতে দিন হতো কিংবা রাত্রি
আকাশটা কখনো নীল হতো কখনো লাল কখনো আলো
তার মনের সাথে রঙ বদলে সাদা কিংবা কালো

আকাশে আকাশ আকাশ একটা মেয়ে ছিলো
আকাশের মত মন
একদিন ভালোবেসে মাটিতে নেমে এলো
তারপর থেকে ঋতু বদল
তারপর থেকে সময়
আর তারপরই মেয়েটার জীবন,

আসলে যতক্ষণ আকাশ ততক্ষণই বিশালতা
মাটিতে নামলে সবাই তো মানুষই
কেও সাদা কেও কালো
আর হাজারো আশা নিরাশা;

আকাশটা আকাশেই ভালো ছিলো
শুধু শুধুই মাটিতে নামালো মন
মানুষকে ভালোবেসে
দুঃখ কষ্টের মানুষের জীবন

একদিন আকাশ আবার আকাশ হবে
যেদিন মন থেকে ভালোবাসা মুছে যাবে
আবার মেঘের সাথে ভাসবে
রঙের সাথে খেলবে
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে পৃথিবীর দিকে তাকাবে যখন তখন
কখনো নীল হয়ে কখনো লাল কখনো অন্ধকার
মাঝে মাঝে খুব বেশী পৃথিবীর কথা মনে হলে
মাটিতে নেমে আসবে বৃষ্টির সাথে
রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিমিয়ে,
মানুষগুলো বলবে -
ধ্যাত! আকাশটা হয়েছে কি?
বড্ড কাঁদছে;
আকাশের কান্নায় মানুষের কি এসে যায়?


..........................................................


একদিন আকাশ থেকে একটা মেয়ে নেমে এসেছিলো
পৃথিবী ভালোবেসে
আজ কি জানি এক মনখারাপে আকাশ হয়ে গেছে,

আজ মেয়েটার জন্মদিন
তাই বড্ড কাঁদছে
তোমরা চেন তাকে?

আমি শুভেচ্ছা জানাতে পারি না
পারি না এটা ওটা দিতে
মাঝে মাঝে টুকটাক মনের কথা
পারি আকাশে লিখে দিতে............









অনন্ত ঘুম




অনন্ত ঘুম
- যাযাবর জীবন


এখানে আর ভালো লাগছে না
এখানে চারিদিকে বড্ড অশান্তি
এখানে একটা পেট রয়েছে
রয়েছে ক্ষুধা তৃষ্ণা আর বুভুক্ষু
রয়েছে অর্থ কদর্যতা আর স্বার্থ
এখানে মন নামের রয়েছে অদ্ভুত এক অনুভব
রয়েছে অনুভূতিহীন কিছু সম্পর্ক
আর রয়েছে ভালোবাসা নামের অনর্থ;

এক একটা সময় মনে হয় অনেক দূরে চলে যাই
অনেক অনেক দূরে কোথাও
যেখান থেকে আর কখনো ফিরতে হবে না
যেখান থেকে আসলে ফেরা যায় না;

যেখানে সময় বলে কিছু নেই
যেখানে ক্লান্তি নেই শ্রান্তি নেই
যেখানে ক্ষুধা নেই স্বার্থ নেই
যেখানে নেই কোন লেনদেন
যেখানে নেই মায়া মমতা ভালোবাসা
যেখানে কেও থাকে না কারো অপেক্ষায়
যেখানে কোন অনুভূতিই কাজ করে না;

সেখানে শুধুই আমি থাকব
একার আমিতে আমিত্বময় হয়ে
এখানে থেকে অনেক অনেক দূরে
কোন এক নির্জন একলা মাটির ঘরে
কোন এক অজানা ঘুমের দেশে
স্বপ্নহীন গাঢ় নিশ্চিন্ত এক অনন্ত ঘুম ঘুমবো
অনন্ত থেকে অনন্তকাল জুড়ে।







শরীর কেন্দ্রিক সম্পর্ক



শরীর কেন্দ্রিক সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


আজকাল সম্পর্কগুলো বড্ড কেমন যেন!
নামে তো সম্পর্ক, গভীরতা কোথায়?
নাকি নর আর নারী শুধুই কামের কাঙাল?
সম্পর্কের এ কেমন দিনকাল?

বাচ্চা বাচ্চা স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েগুলো
ওদের তো খেলার বয়স
দৌড়াদৌড়ি হৈ চৈ কোথায়?
সারাদিন দেখি মোবাইল যন্ত্রের ভেতরে বসবাস
বয়সে প্রাপ্ততা আসতে যতই দেরী থাক না কেন
বন্ধুত্বে কিংবা ক্লাসের সঙ্গী সাথীতে চারিদিকে নগ্নতা বিলাস
আজকাল ভার্জিনিটি যেন ডিকশনারিতে
প্র্যাক্টিক্যালেই এদের যত বিশ্বাস;
এরা যতটা সামনা সামনি
নেটে তার থেকে অনেক অনেকগুণ বেশী
ভার্চুয়াল সম্পর্কের শুরুতেই কাপড় খোলা
ফ্যাশন হয়েছে দাঁড়িয়েছে নগ্নতা,
আর ভার্চুয়াল সম্পর্ক?
সে তো আরো জগাখিচুড়ি
হাত কাটাকুটি থেকে নিয়ে আত্মহত্যা
নিত্য নৈমিত্তিক ভার্চুয়াল সম্পর্কের অবস্থা;

এদের আর কি বলব!
আজকালকার স্বামী স্ত্রী
কে যে কার স্বামী আর কে যে কার স্ত্রী!
এর সাথে ওর
তার সাথে তার শুধুই শারীরিক জড়াজড়ি;

আজকাল তো কখনো কখনো নারী নিজেই জানে না
বাচ্চাটা কার ঔরস্য
চারিদিকে এত এত আনন্দ, এত এত সম্পর্ক
কখন যে কিভাবে, কার সাথে কি করতে গিয়ে
কি হতে কি হয়ে গেলো?
ফলশ্রুতি নারীর পেটে এক দলা মাংসপিণ্ড
কার ঔরসজাত?
কার ঔরস্য?
কি আজব! তাই না?
আজকালকার শরীর কেন্দ্রিক সম্পর্ক।








ভার্চুয়াল টিং



ভার্চুয়াল টিং
- যাযাবর জীবন


বেশ কিছুদিন তোর কাছ থেকে কিছু শুনি নি
বেশ কিছুদিন নীরব হয়ে আছে মুঠোফোন,
তুই ভালো আছিস তো!
ভালো আছে তোর মন?

জানিস! আজ না পুরনো দিনগুলোর কথা বড্ড মনে পড়ছে
সেই পুরনো কাগজ কলমের চিঠি লিখার দিনগুলোর কথা,
আচ্ছা! তোর কি লাল ডাকবাক্সের কথা মনে আছে?
এক সময় লাল ডাকবাক্স উঠে গেলেও তুই কিন্তু চিঠি লিখতি নিয়মিত
মিষ্টি গন্ধ-ওয়ালা নানা রঙের কাগজে গাঢ় কালো ফাউন্টেন কলমে
পোস্টঅফিসের বদৌলতে,
মাঝে মধ্যে বাহারি সুন্দর খামগুলোর মাঝে তোকে খুঁজতাম কল্প রঙে,
বাসার ঠিকানাটা তোর মুখস্থই ছিলো
সপ্তাহে একটা না হলেও মাসে তিনটা চিঠি তো নিশ্চিত ছিলো,
তারপর সময়ের গতি দ্রুত হয়ে গেলেও চিঠির গতি হয়েছিলো ধীর
প্রথমে পাক্ষিক, পরে মাসিক, তারপর তো কালেভদ্রে
জানিস! আজো সেই সুগন্ধি কাগজে লেখা তোর চিঠির স্তূপ সাজানো আছে
বইয়ের আলমিরার গোপন ঘরে
কাঠের তাকে সারে সারে;
বড্ড মিস করি আজো মাখন কাগজে ফাউন্টেন কালির দাগ
সবুজ, হলুদ, নীল আরো কত কত বাহারি রঙের খাম!
কি অদ্ভুত আবেগেই না চিঠি লিখতি ভালোবাসার রঙ মাখিয়ে
সেই কাগজে চিঠি লিখার দিনও শেষ হয়ে গিয়েছে যুগের পরিবর্তনে;

তারপর আসলো নেটের যুগ
কালেভদ্রে টুং করে উঠতো ইমেইল আলাপন
তোর নাম ভেসে আসতেই মনের ভেতর কি এক আনন্দ নহর!
তুই বুঝবি না,
এক সময় কালেভদ্রে থেকে মোটামুটি নিয়মিত ইমেইল চিঠি
তারপর তো ভার্চুয়ালের কত উন্নতি!
ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসআপ আরো কত কি?

এখন তো যখন তখন
তোর মনে হলেই আমার মোবাইলে টিং
আমার মনে হলো তো তোর মোবাইলে ঢিং
কিন্তু বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে তোর কোন খবর নেই
ভার্চুয়ালে তোর অনুপস্থিতি
আর আমার বড্ড কেমন কেমন
জানিসই তো!
তোর খবর না পেলে আমি হয়ে যাই অন্যরকম;

তুই ভালো আছিস তো!
আমি ভালো নেই
ভালো নেই তুইহীন;
চিঠি চোখে পড়লে মোবাইলে টিং ছুঁড়িস,
কিছু লিখতে হবে না
শুধু একটা ডট এঁকে দিয়ে একটিবার টিং।








ভার্চুয়াল হিপোক্রেট



ভার্চুয়াল হিপোক্রেট
- যাযাবর জীবন


গভীর রাত
অন্ধকার ঘর
স্বামী স্ত্রী বিছানায়
পরস্পরের পেছন ফেরা
দুজনই মাঝে মাঝে মুচকি হাসে
মাঝে মাঝে দুজনারই ভ্রুকুঞ্চন মোবাইলের ম্যাসেঞ্জারে
মোবাইলে আলোতে অন্ধকার ঘরে দূর থেকে দুজনকে আধো ভৌতিক লাগে
দুজন খুব মেতে আছে মোবাইল হাতে
পরস্পরকে পেছন দিয়ে
ভার্চুয়ালে;

অথচ একটু আগেও এরা ছিলো দুজন দুজনার বাহুডোরে
দুজন দুজনার শরীরে শরীরে
অস্থির কামে
ভালোবাসা না শরীরের টানে?
কে জানে?
কে জানে?

রাগমোচনের পর কিই বা করার থাকে?
কাম মিটে গেলে শরীর কি আর ভালো লাগে?
কোন রাতে কাম না মিটলেও সেই একই দৃশ্য
দুজন মোবাইল হাতে ভার্চুয়ালে
পরস্পর পেছন ফিরে,
রাত গভীর হতে থাকে
ঘর অন্ধকার
দুজন দুপাশ ফিরে শুয়ে থাকে
ঘুমে চোখ বুজে আসার আগ পর্যন্ত মোবাইল হাতে;

আচ্ছা! এরা কি ভার্চুয়ালে প্রেম করে?
নাকি এরা অন্য নারী কিংবা অন্য পুরুষের প্রতি আসক্ত?
এরা দুজন তো দুজনার হাতের নাগালে
মনের নাগালের কি অনেক দূরত্ব?
আচ্ছা! স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা মানেই কি কাম?
শরীর মিটে গেলে কিংবা না মিটলেও কেন এরা রাত জেগে থাকে?
বাস্তব জীবন রেখে কিসের আসায় প্রতিদিন রাত জাগে ভার্চুয়ালে?
রাত গভীর হলেই এদের মনের মাঝে কি জানি এক অতৃপ্তি
কি জানি এক অস্বস্তি গলার ভেতর কাঁটার মত খচখচ করে
দুজন রাত জেগে থাকে দুদিক ফিরে মোবাইল হাতে, ভার্চুয়ালে,
এ কাহিনী কি শুধুই এদের?
উঁহু!
আমার
তোমার
তার ও তার
প্রতিটা ঘরে ঘরের;

একদিন হয়তো শুধুই ভার্চুয়াল থাকবে
সম্পর্ক মরে যাবে
মরে যাবে ভালোবাসা;

আমরা এটা জানি,
তুমি
আমি
আমরা
তোমরা
প্রত্যেকেই জানি,
তবুও নির্ঘুম রাত কাটাই ভার্চুয়ালে চোখ রেখে,

প্রমাণ চাও?
আয়নায় তাকাও
কিংবা মোবাইলের সেলফি ক্যামেরায়,
দেখতে পাচ্ছ নিজেকে?
বিশ্বাস হলো তো এখন!
আরে বোকা, এবার আমাকে দেখ
সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো আমিই
দেখ না ঘুম রেখে রাত জেগে ভার্চুয়ালে কেমন কবিতা বুনছি!
হিপোক্রেসির চূড়ান্ত তো আমিই;

ঘুমাতে ঘুমাতে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলাম
ঘুমাতে ঘুমাতে একবার তোর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিলাম;
একদিন,
একদিন কি নিদারুণ ভাঙচুর ভালোবাসায় তোকে আপন করেছিলাম,
একদিন ঘুম হতো না তোর স্পর্শ ছাড়া
অথচ দেখ!
আজ ঘুম আসে না ভার্চুয়ালের স্পর্শ ছাড়া,
তোর ঘুমন্ত মুখটায় তাকিয়ে নিজের ভেতর কেন জানি আরেকবার ভাঙচুর ভালোবাসা উপলব্ধি করে
নিজেই হিপোক্রেট বনে গেলাম।









সম্পর্কের সাতকাহন





সম্পর্কের সাতকাহন
- যাযাবর জীবন


সম্পর্কগুলো বড্ড খিটমিটে
বিশেষ করে সাংসারিক
আরো নির্দিষ্ট করে নারী কেন্দ্রিক;

আমার মা তোমার মা তার মা ওর মা
আমার স্ত্রী তোমার স্ত্রী তার স্ত্রী ওর স্ত্রী
আমার বোন তোমার বোন তার বোন ওর বোন
আমার মেয়ে তোমার মেয়ে তার মেয়ে ওর মেয়ে
এরা শুধুমাত্র সংসার করে
কারো সাথে কারো নাই বন্ধন
একমাত্র মা-মেয়ের মিল আছে
আর বাকি কেও কারো নয় আপন;

আমার দাদীর বনে নি আমার বাবার দাদীর সাথে
আমার মার বনে নি আমার দাদীর সাথে
আমার বোনের বনে নি তার শাশুড়ির সাথে
আমার মেয়ের বনে নি তার শাশুড়ির সাথে
অথচ এদের সবাইকে নিয়েই পারিবারিক বন্ধন;

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটা মেয়ের ক্ষেত্রেই একমাত্র মায়ের বাড়ি আপন
মামা মামী চাচা চাচী খালা খালু ফুপু ফুপা
তাঁদের সন্তান
তাঁদের সন্তানের ঘরের সন্তান
আপন ভাইবোন
তাঁদের ছেলেমেয়ে
তাঁদের ছেলেমেয়ের ঘরের ছেলেমেয়ে
মায়ের বাড়ির প্রত্যেকেই প্রতিটা মেয়ের আপন,
আমার মা তোমার মা তার মা ওর মা
আমার স্ত্রী তোমার স্ত্রী তার স্ত্রী ওর স্ত্রী
আমার বোন তোমার বোন তার বোন ওর বোন
আমার মেয়ে তোমার মেয়ে তার মেয়ে ওর মেয়ে
প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সারাটা জীবন;

অথচ একটা মেয়েরা জীবনের সিংহভাগ সময় কাটে শ্বশুর বাড়িতে
শাশুড়ি ননদ দেবর জা
প্রতিটা সম্পর্কের সাথে লড়ে লড়ে
সারাটা জীবন
এদের কাছে শুধুমাত্র স্বামী সন্তান আপন,
আমার মা তোমার মা তার মা ওর মা
আমার স্ত্রী তোমার স্ত্রী তার স্ত্রী ওর স্ত্রী
আমার বোন তোমার বোন তার বোন ওর বোন
আমার মেয়ে তোমার মেয়ে তার মেয়ে ওর মেয়ে
প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সারাটা জীবন;

আমার মা কারো কন্যা
তার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ শাশুড়ি ননদের সাথে দা কুমড়া,
আমার স্ত্রী কারো কন্যা
তার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ আমার মা বোনের সাথে দা কুমড়া,
আমার পুত্রবধূ কারো কন্যা
তার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ আমার স্ত্রীর আর মেয়ের সাথে দা কুমড়া,
আমার বোন আমার মায়ের কন্যা
আমার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ তার শাশুড়ি ননদের সাথে দা কুমড়া,

আমার বাবা তোমার বাবা তার বাবা ওর বাবা
আমার তোমার তার ওর বাবার বাবা
আমি তুমি সে ও
আমার ছেলে তোমার ছেলে তার ছেলে ওর ছেলে
আমার তোমার তার ওর ছেলের ছেলে
প্রত্যেকটা পুরুষই ভুক্তভোগী
যার যার মা ও স্ত্রীর নিত্য খিটিমিটিতে
যার যার সংসার জীবনে,
অথচ আমার তোমার ওর তার সংসারে
প্রতিটা নারীই আমাদের একান্ত আপন,
আমার দাদি
আমার মা
আমার স্ত্রী
আমার মেয়ে
আমার বোন
প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছে নিজেদের মধ্যে
গলা ছেড়ে
কিংবা ঠাণ্ডা লড়াইয়ে,
আর যুগ যুগ এভাবেই চলে আসছে আমাদের
প্রতিটা পরিবারের সাংসারিক সম্পর্কের সাতকাহন;

একটি মেয়েও কি বলতে পারবে আমি শ্বশুর বাড়ি নিয়ে খুশি?
একজন পুত্রবধূও কি বলতে পারবে শাশুড়ির সাথে খুব ভালো সম্পর্ক!
একজন শাশুড়িও কি বলতে পারবে তার পুত্রবধূই শ্রেষ্ঠ!

যদি বলতে পারে তবে আমি বলব
একবার আয়নার সামনে দাঁড়াও
তারপর জোড় গলায় আয়নার প্রতিচ্ছবি'কে সত্যি কথা বলো;

ও কি?
আয়নাটা থেকে প্রতিচ্ছবি কোথায় উধাও হয়েছে?

আসলে নিজেকে মিথ্যা বলা যায় না,
কোথায় আমাদের পারিবারিক বন্ধন?












একদিন হঠাৎ



একদিন হঠাৎ
- যাযাবর জীবন


একদিন তোর চোখ চেয়ে চেয়ে
বসে থাকতাম সারাদিন চায়ের কাপে
তুই সামনে বসে নখ খুঁটতি লজ্জায়
আর চা ঠাণ্ডা হতো তোর কাপে,
একদিন আমি সিগারেট ঠোঁটে
সারাদিন গাছে হেলান দিয়ে
তুইও বসে থাকতি দিয়াশলাই হাতে
গায়ে অলস হেলান দিয়ে,
একদিন আমি অকারণ রাস্তা-হাঁটা
সূর্য মাথায় করে
তুইও অকারণ আমার পাশেপাশে
দুপুর রোদে পুড়ে পুড়ে,
একদিন আমি খোলা মাঠে শুয়ে
ঝুমঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
তুই বুকের ওপর বড্ড শুয়ে থাকতি
যেন আমার ছাতা হয়ে হয়ে,
একদিন আমি সারারাত জেগে জেগে
গায়ে হিমের ডানা
তুইও নির্ঘুম পাশেপাশে আর
চাঁদটা হয়ে যায় জ্যোৎস্না,
প্রতিদিন পাশাপাশি থেকে থেকে
তুই ভালোবাসা হয়ে গেলি
তুইও তো আমায় ভালোবেসে বেসে
সারাটা জীবন জড়াজড়ি হয়েছিলি;

একদিন সময়টা থমকে যাবে
আর থমকে যাব আমি
তুই হঠৎই চমকাবি, আমার দিকে চেয়ে
চোখ কাঁদবে তোর জানি
খুব শীগগির আমি ঘুমবো
একদম চোখ বন্ধ নিঃশব্দ
অস্থির হবি তুই, হবি অশান্ত
তবুও শুনবো না কান্নার শব্দ।








অন্ধকারের ক্ষুধা




অন্ধকারের ক্ষুধা
- যাযাবর জীবন


শরীরে বড্ড ক্ষুধা;

আচ্ছা!
ক্ষুধা কি শরীরে?
নাকি পেটে?
তবে কেন কাম ঝরে চোখে?

এই যে এত এত ভালো ভালো প্রেমের কথা!
কত কত রাত জেগে কত কত জ্যোৎস্না
কত কত সময় নিয়ে চোখাচোখি কথা
কত ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ
তারপরই না একটুকু ছোঁয়াছুঁয়ি
কিছুদিন হাতে হাত
চোখেচোখে কি এক অনুনয়!
আরেকটু সময়
একটু অগ্রসর চায়ের কাপে
হাতে হাত খেলতে খেলতে হাত চলে যায় গালে
গালে হাত বুলোতে বুলোতে স্পর্শ ঠোঁটে
প্রথমে একটুখানি হাতের স্পর্শ
তারপর আরেকটু সাহস
ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই ভালোবাসার আদর;

এভাবে আরো কিছু দিন
তারপর তো কামনা
ডাক দেয় বিছানা,
ওটুকু যেতে কারো মাস লেগে যায়
কারো আরেকটু বেশী সময়,
দিনে দিনে বিছানা ডাকলে তাতে ভালোবাসা কোথায়?
ও তো শুধুই শরীরে শরীর;

এই যে এত চেষ্টা
এত এত সাধনা
প্রেমের আলাপন
ভালোবাসার কাব্য কথন,
পরিণতিতে বিছানা?
ধ্যাত!
বড্ড সস্তা হয়ে গেলো না?

আধাঘণ্টার শরীর ছানাছানি
দশ সেকেন্ডের রাগ-মোচন
তারপর দুজন দুপাশ ফিরে ক্লান্তির ঘুম,
ভালোবাসার কাব্যে মাঝে কোলবালিশটা বড্ড বেমানান;

এই যে চাঁদ, চাঁদনি আর জ্যোৎস্না
এই যে মেঘ, বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা হাওয়া
এগুলো কিছু না?
তবে কি রাগ-মোচনের আগের অনুভবটাই ভালোবাসা?

আমি ভালোবাসার অনুভূতিটাই বুঝতে পারি না
আমার কাছে কামই প্রেম
অন্ধকারের ক্ষুধা
তারপর গভীর নিদ্রা নেমে আসে ক্লান্ত শরীরে;

রতি-ক্লান্ত শরীর তো ঘুমায়
তবুও কেন দুচোখ জেগে জেগে শার্সির ওপাশের অন্ধকার দেখে?

কিছু কিছু প্রশ্নে উত্তর জানা হয় না।







একাকীত্বের মধ্যরাত




একাকীত্বের মধ্যরাত
- যাযাবর জীবন


কোথায় রে আকাশ?
মনের ভেলায়;

মন কোথায় থাকে?
বুকের খাঁচায়;

চাঁদ কোথায়?
চাঁদনি রাতে;

সূর্য কোথায়?
সকাল হলে;

আচ্ছা! দিনের বেলায় কি তারা গোনা যায়?
সূর্য দেখা যায় রাতের আকাশে?
অমাবস্যায় কি চাঁদ হাসে?
দিনের আকাশটা তো নীল হয়ে থাকে তাহলে রাতের আকাশ কেন কালো?

আমি আকাশ ছুঁতে চেয়েছিলাম
তুই ছুঁতে চেয়েছিলি আমায়
তোর চাওয়া পূর্ণতা পেলেও
অপূর্ণ রয়ে গিয়েছি আমি,
মন কি আর ছোঁয়া যায় রে?
মন তো আকাশই,
তোর আকাশ;

তুই ভালোবাসা না ছুঁয়েই আমায় ছুঁয়ে দিয়েছিস
শরীর তো পেয়েছিলি!
আমি কি পেয়েছিলাম?
শরীরে কি আর ভালোবাসা থাকে রে?
আমি তো আকাশ ছুঁতে চেয়েছিলাম
ছুঁতে চেয়েছিলাম তোর মন;

দেখ! আমার এই অপূর্ণতার মাঝে তুই কত দূরে সরে গিয়েছিস!
এই যে তুই আমার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছিলি
ধরে রাখতে পেরেছিস কি আমায়?
আরে বোকা! ভালোবাসা ছাড়া কি শরীর ধরে রাখা যায়?

আজ কত দূরে আমি?
কত দূরে তুই?
তোর কি আজো আমার কথা মনে হয়?
আমার কিন্তু প্রায়শই তোর কথা বড্ড মনে হয়,
যখন জ্যোৎস্না থাকে মধ্যরাতের আকাশে
আর আমার ঘুমগুলো সব জ্যোৎস্নায় ভাসে
আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

কত কতদিন হয়ে গেলো দেখি নি তোকে!
আমার আকাশ কেমন আছে?
কেমন আছে তোর মন?

আমি ভালো নেই রে
ভালো নেই
ভালো নেই
আজ জ্যোৎস্নাভাসা মধ্যরাতে;

আজ বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো তোর সাথে
তোকে আর কোথায় পাব বল?
তাই খাতায় কলমে মনের সাথে না হয় করলামই একটু ছল,
না হয় কবিতার ভাষায় কিছু দুঃখ ওড়ালাম
না হয় চাঁদনি রাতে কিছু জ্যোৎস্না পোড়ালাম;

জানিস! একাকীত্ব না বড্ড কাঁদায়।






নিক্তির পরিমাপ



নিক্তির পরিমাপ
- যাযাবর জীবন


তুই প্রায়শই জিজ্ঞাসা করিস
ভালোবাসো?

আমি উত্তরে বলি বাসি রে বাসি;

পরক্ষণেই তোর প্রশ্ন
কতটুকু?

এ প্রশ্নটাই আমায় বড্ড বিব্রত করে,
আমি আসলে কখনোই ভেবে দেখি নি কতটুকু
ভালোবাসা পরিমাপের কোন নিক্তিও আমার কাছে নেই;

যদি আমি তোকে বলি মেঘের মত ভালোবাসি
তবে কি আসলে ভালোবাসা হয়?
মেঘ তো বাতাসের সাথে সাথে উড়ে যায়
যখন তখন যেখানে সেখানে
আমার ভালোবাসা তো শুধুই তোতে;

যদি বলি বৃষ্টির মত ভালোবাসি!
আরে বৃষ্টি তো ঝরে গেলেই শেষ হয়ে যায়
আমার ভালোবাসা কি শেষ হবার?

যদি বলি জ্যোৎস্নার মত ভালোবাসি!
কিন্তু অমাবস্যায় জ্যোৎস্না তো হারিয়ে যায়,
আমার ভালোবাসা কি হারাবার?

যদি বলি দিনের মত ভালোবাসি!
তবে তো বলতে হয় দিন অন্ধকারে মিলিয়ে যায়,
আমার ভালোবাসা কোথায় মিলায়?

যদি বলি রাতের মত ভালোবাসি!
আরে আরে! রাত তো কালো
আমার ভালোবাসার পুরোটাই আলো;

আচ্ছা!
তুই কি আকাশ পরিমাপ করতে পারিস?
সাগরের জল?
তবে কেন আমার ভালোবাসা পরিমাপ করতে যাস?

আরে বোকা, ভালোবাসা কি নিক্তিতে পরিমাপ করা যায়?
ভালোবাসা তো বুকের গভীরে
হৃদয়ের খুব ভেতরে
তবে কেন পরিমাপ করতে চাস?
খুব বেশী জানতে ইচ্ছে হলে না হয় বুক চিড়ে দেখ
ওখানে পুরোটাই তুই
রক্তের সাথে মিলেমিশে একাকার;

ভালোবাসা পরিমাপ করতে হয় না,
শুধু ভালোবাসতে হয়।








একার জীবন



একার জীবন
- যাযাবর জীবন


একদিন তুই ছিলি
একদিন আমি
আর আমাদের মাঝে অনেক অনেক ভালোবাসা;

ভালোবাসার মাঠে ফসল হয়
ভালোবাসার গাছে ফল ধরে,
তারপর গোলা ভরা ধান
ঝুড়ি ভরা ফল
সন্তান সন্ততি
সংসার
জীবন আনন্দময়;

তারপর একদিন ঝড় ওঠে
একদিন খুব শিলাবৃষ্টি
ফসলের মাঠ পানিতে সয়লাব
ফলগুলোতে শিলার আঘাত
জীবন চলার পথে অর্থের পদাঘাত
কোথায় কোথায় জানি স্বার্থের আঘাত;
কার জীবনে উত্থান পতন নেই?
তাই বলে কি বাবা মাকে এতটাই দূরত্বে দিতে হয়?
বৃদ্ধাশ্রম আজকালকার ঘরে ঘরের পরিণয়;

আমাদের জীবনে আসলে কেও নেই
এখন শুধুই তুই আর আমি
অর্থ আর স্বার্থের টানাপোড়নে বাকি সবাই পর
তাও তো একসাথে আছি এটাই বা কম কিসে?
না হয় খুব সাধারণ এক বৃদ্ধাশ্রমের আবাসে;

একটা কথা বলি শোন,
এখন আমি ছাড়া সংসারে আর সবাই'কে ভুলে যা
তবেই পুরনো স্মৃতি তোকে আর কাঁদাবে না;
আর যেদিন আমিও থাকবো না সেদিন ভেবে নিস
তোর আপন কেও ছিলোই না;

মানুষ একা আসে
একাই যায়
মাঝখানে স্বামী-স্ত্রীর হাত ধরাধরির অনুভূতি
আর মন ছোঁয়াছুঁয়ির অনুভব,
তারপর আবার একার জীবন
মাটি হওয়া পর্যন্ত।








রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শুদ্ধ ব্যাকরণ




শুদ্ধ ব্যাকরণ
- যাযাবর জীবন


প্রায়শই আঙুলটা তুলি
এর দিকে
ওর দিকে
তার দিকে
তোর দিকে,
অকারণে দোষ ধরতে;
কখনো খেয়াল করে দেখাই হয় নি
তিনটা আঙুল ঈশারা করে আছে আমারই দিকে,
বৃদ্ধাঙ্গুলি কখনো আকাশের দোষ ধরে কখনো মাটির
জীবনের সকল ভুল ব্যাকরণ আঙুলের ভুল ইশারাতে
আর কানফাটা ভাঙনের শব্দ
বিশ্বাসের
সম্পর্কের
জীবনের;

ইশশ!
সেদিন তোর দিকে আঙুল তোলার আগে আয়নায় তাকালে
আজ জীবনটা বড্ড অন্যরকম হতো রে!
তোর একটা ভুল ধরে দিতে গিয়ে আমি নিজেকে শুধরে নিতে পারতাম অন্তত তিনবার;
কানে তালা লাগাতো না ভাঙনের শব্দ;

একবার খুব শুদ্ধ হতে ইচ্ছে করে জীবন গড়নে,
একবার জীবনের শুদ্ধ ব্যাকরণ শিখতে ইচ্ছে করে শুদ্ধ আঙুলি হেলনে।





চল পেছন থেকে একবার আয়না দেখি



চল পেছন থেকে একবার আয়না দেখি
- যাযাবর জীবন


ভুল থেকেই মানুষ নাকি শিক্ষা লাভ করে
অথচ আমরা ক্রমাগত ভুলটাই শিখছি;

সমস্যার মূল হচ্ছে
আমরা ভুল স্বীকার করি না,
বরং খুব বিরক্ত হই কেও আমাদের ভুল ধরিয়ে দিলে;
অথচ আমরা নিজেরা কি করি?
অন্যের ভুল ধরার জন্য মুখিয়ে থাকি
ছিদ্রাহ্নেষণে আমাদের জুড়ি মেলা ভার
আয়নায় কিন্তু পেছনটাও দেখা যায়
তবে সখ করে কে আর নিজের পেছনের বিশাল গর্তটা দেখতে চায়?
ইচ্ছাকৃত তাকানো হয় না আয়নায়
কখনো হঠাৎ চোখ পড়ে গেলে চট করে আকাশ দেখি;

মজার ব্যাপার কি জানো?
জীবনে যখনই কিছু ভুল করেছি
কিছু না কিছু শিখেছি,
হোক নিজে নিজে ভুল করে
কিংবা কেও ধরিয়ে দিলে;

ছিদ্রাহ্নেষণে কি নিজের ছিদ্র বুজে যায়?
ভুলের সমাধিতে অবগাহন আর কতকাল?

চল পেছন থেকে একবার আয়না দেখি।






নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে




নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে
- যাযাবর জীবন


আমার পূর্বের তেমন কোন স্মৃতি নেই,
শুধু ফাঁকা মাথায় তুইভরা অবশ বিবশ একটা অনুভব;

মাঝে মাঝে খুব হঠাৎ হঠাৎই একটি দুটি স্মৃতির আয়না চোখের সামনে,
তখনই, ঠিক তখনই খুব অসহ্য হয়ে উঠি
চোখের সাথে কথা বলি, তোকে খুঁজি
কানের সাথে কথা বলি, তোর শব্দ শুনতে চাই
মনের সাথে কথা বলি
কোথাও তুই নাই;

যখন খুব গরম ছোটে, তোরা বলিস গ্রীষ্মকাল
আমার একটু একটু মনে পড়ে প্যাচপ্যাচে ঘামে ভেজা দুটো শরীর
আর তুই লেপ্টে আছিস আমার বুকে,
আচ্ছা! নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে?

যখন খুব শীত অনুভব, তোরা বলিস শীতকাল
আমার একটু একটু মনে পড়ে লেপের তলায় নগ্ন দুটো শরীর
ওম নিচ্ছে দুজন দুজনে
আচ্ছা! নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে?

যখন ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি, তোরা বলিস বর্ষাকাল
আমার মনে পড়ে ছাদের ওপর কাকভেজা দুটো শরীর
হাসছে, খেলছে, নাচছে, তারপর দুজনার নগ্ন শরীরেও বৃষ্টি নামছে
আচ্ছা! নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে?

আমি শরীর বুঝি না
কাম বুঝি না
প্রেম বুঝি না
বুঝি শুধু তোকে,
যখনই তোর কথা মনে পড়ে
ইচ্ছে করে ওমে ওমে ভিজে যাই তোতে;

আচ্ছা!
একে কি ভালোবাসা বলে?






দুজনে দুজনে, মনে মনে



দুজনে দুজনে, মনে মনে
- যাযাবর জীবন


মন থাকলে যে কারো সাথে
যে কোন সময়
যে কোন কারণে
প্রেমে তো পড়াই যায়,
ইচ্ছে করলেই কি প্রেম করা যায়?
প্রেম হয় দুজনে
প্রেমে পড়ে দুজনে, মনে মনে;

ইচ্ছে করলেই কি ভালোবাসা যায়?
ভালোবাসতে হলে দুজন লাগে
ভালোবাসতে হলে দুটো মন লাগে
ভালোবাসতে হলে দুটো মনের এক হতে হয়
তবেই না ভালোবাসা হয়;

আমি কতবার প্রেমে পড়েছি রাতের
কত কত ভালোবেসেছি চাঁদনি
কতবার মন দিয়েছি বৃষ্টিকে
সবই একতরফা
আমার মনের অভিলাষ
কেও তারা বলে নি আমার সাথে প্রেম কর
আমাকে ভালোবাস;

ইচ্ছে হলেই মনে ভালোবাসা আসে
সেটা কি ভালোবাসা হয়?
ভালোবাসতে হলে দুজন লাগে
দুপক্ষের ভালোলাগাতেই না ভালোবাসা হয়;

আমার একতরফা প্রেমে তোর কি আসে যায়?
আমার একতরফা ভালোবাসা স্বপ্নেই রয়ে যায়,
তুই তখন অন্য কোনো খানে
তুই তখন অন্য কারো সনে,
ভালোবাসা পোড়ায়।





শরীরে কি আছে?




শরীরে কি আছে?
- যাযাবর জীবন


শরীরে কি আছে?
তবুও পুরাটাই শরীর;

শরীরের উপরিভাগে চামড়া
কারো সাদা
কারো কালো
কারো বাদামী;
আবৃত করে রাখে হাড়গোড় কংকাল
তার নিচে রক্তমাংস
বৃক্ক, কিডনি, পাকস্থলী, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র
চোখ আছে, নাক আছে, কান আছে
আর আছে ক্রমাগত ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকা একটুকরো মাংস
তোমরা বলো হৃদপিণ্ড;

এ যন্ত্রটি বড্ড অদ্ভুত
এর নিজস্ব কোন লজিক নেই
শুধু নানা রঙের অনুভূতি
নানা পদের আবেগ,
এটি কখনো অযৌক্তিক আবেগে নিজের পথে চলে
হৃদপিণ্ডের অযৌক্তিক আবেগ পুরুষ জাতির মাঝে একটু বেশীই,
হৃদয় কিন্তু কখনো কখনো বুদ্ধিমান হয়ে মস্তিষ্কের লজিক মানে
নারী জাতিতে এর বেশ ভালোই প্রমাণ মেলে;

শরীরে আসলে কিছু নেই
চামড়া, মাংস, হাড়গোড়
লজিক ভরা একটি মস্তিষ্ক
আর আবেগ ভরা একটি হৃদয়,
তোমরা মাঝে মাঝে মনের কথা বলো?
বলতে পার মন কোথায় থাকে?
হৃদয়ে না মস্তিষ্কে?
যত মন মনই করো না কেন!
আমাদের পুরো জীবনটাই শরীর নির্ভর;

কাম! সে তো মনেরই একটি অনুভব
শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে
কখনো কখনো জীবনকে করে তছনছ;
কামের বাস কোথায়?
হৃদয়ে না মস্তিষ্কে?
নাকি দুজনে একসাতে মিলেমিশে?
কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে?
মস্তিষ্ক করলে তাও সামলে উঠা যায়
হৃদয় করলেই বিপদ
মনে তো হয় হৃদয়ই কামের নিয়ন্ত্রক;

এত সর্বনাশ কেন চারিদিকে
শরীরে ও সম্পর্কে?

শরীরে কিছু নেই,
দলা দলা চর্বি
দলা দলা মাংস
লোলুপ নজর
আর আছে কাম,
আছে সম্পর্কের ভাঙন।








মানুষের ভেতরে পশু



মানুষের ভেতরে পশু
- যাযাবর জীবন


মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্ব লাগে
পশু হওয়া যায় খুব সহজেই;

পশুর খুব কাছে আসতে নেই
যে কোন সময় আঁচড়ে দিতে পারে
কামড়ে দিতে পারে
ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষতি করতে পারে,
বিশেষ করে মানব পশুর;

একদিন তুই কাছে এসেছিলি
আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে নষ্ট করেছিলাম তোকে
তারপর থেকে তুই নষ্টা মেয়ে,
আমার গায়ে কিন্তু কলঙ্ক লাগে নি;
আমি সেদিনও পশু ছিলাম
আজও আছি
মানব পশু;

শারীরিক ক্ষুধায় মনুষ্যত্ব কাজ করে না
সে পেটের ক্ষুধাই হোক
কিংবা কামের,
পেটের ক্ষুধা মিটে গেলেই কাম মাথা চাড়া দেয়
আর তখন সবাই পশু,
মানব পশু;

চামড়ার খাঁচায় কিছু হাড়গোড়
কংকাল এর ভেতর হৃদপিণ্ড
ওখানে লাল লাল রক্ত
মানুষ কিংবা পশুর,
কোন কোন হৃদপিণ্ড মনুষ্যত্ব ধারণ করে
তোমরা তাকে মানুষ বলো
আমার শুধুই ক্ষুধা
শুধুই পশুত্ব;

কোন এক সময় আমিও মানুষ ছিলাম
কিছু স্বপ্ন ছিলো চোখে
কিছু ভালোবাসা ছিলো হৃদয়ে,
স্বপ্ন ভেঙে যেতে সময় লাগে না
সময় লাগে না ভালোবাসা মরে যেতে,
আজ আমাকে দেখ!
মানুষের চামড়ার মোড়ানো কিছু রক্ত মাংস,
মন মরে মাটি হয়ে গেছে কবেই!
মনুষ্যত্ব মরে পশুত্ব,
এখন একমুষ্টি হৃদপিণ্ডে নিয়ন্ত্রণহীন পশুত্বের চাষাবাদ
আর অপেক্ষা শরীরটা মাটি হওয়ার;

আজ
কাল
কিংবা পরশু,

মানুষ হিসাবে কবর দিও কিন্তু!










বড়বেলা



বড়বেলা
- যাযাবর জীবন


বড়বেলা রে বড়বেলা!
ওরে ও বড়বেলা!
জানিস! আমারও কিন্তু ছিলো এক ছেলেবেলা;
বড্ড অদ্ভুত
বড্ড সুন্দর
বড্ড নিষ্পাপ
বড্ড কোমল
হাসি
আনন্দ
দুষ্টুমি
মায়ের বকুনি
অল্প কিছু পড়ালেখা
আর সারাদিন খেলা খেলা খেলা,
আর দেখ!
বড় হয়ে উঠতেই কেমন ঝামেলা!
যত্তসব হাজার চাপ
দায়িত্বের পাহাড়
টাকা পয়সা
বাজার সংসার
স্বামী স্ত্রী
সন্তান পালন
বাড়ী ভাড়া
বিলের যন্ত্রণা
মাস শেষে পকেটে টান
বৌ এর খিটমিট
সন্তানদের চাহিদা
আরো কত কি?
কত কত যন্ত্রণা;
কেন রে তুই জীবনে এলি?
বড়বেলা
ও বড়বেলা?

ছোটবেলা
ও রে ও ছোটবেলা
কোথায় রে তুই?
বড্ড মনে পড়ে তোকে
আজ বড়বেলার যন্ত্রণাতে!

আচ্ছা!
তুই কি আমায় একবার নিয়ে যেতে পারবি?
সেই পুরনো ছোটবেলায়?
খুব ইচ্ছে করে একবার মায়ের কোলে শুয়ে থাকি
প্রাণভরে বাবার গায়ের মাদক মাদক ঘামগন্ধ নেই
বোনগুলির সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠি
মায়ের আদর নিয়ে ভাইয়ের সাথে একটু হিংসা করি
তারপর বলে করে মা খুব সাধারণ একটা ভাজি দিয়ে ডাল ভাত মেখে নিয়ে আসলে
সব ভাইবোন মিলে গোল হয়ে খেতে বসি
কি এক অবর্ণনীয় সুখই না ছিলো
সবাই মিলে একসাথে খাওয়া
কে আজ রাতে মায়ের পাশে শোবে তা নিয়ে ঝগড়ায় মেতে ওঠা
ছেলেবেলায় আমাদের মাঝে স্বার্থ ছিলো না, ছিলো বন্ধন
পারিবারিক বন্ধন,
একজনের কান্না মুছতে সবার এগিয়ে আসা
একজনের খুশিতে সবার মুখে হাসি
কোথায় গেলো রে সে দিনগুলি?

একটা বার
শুধু একটি বার
একটি দিনের জন্য
আমায় নিয়ে যা না রে সেই পুরনো ছেলেবেলায়!
তারপর না হয় আবার টাকা পয়সা আর স্বার্থের বাস্তবে ফিরে আসব;
বিষময় বড়বেলায়;
তারপর না হয় কুচিকুচি করে কেটে কেটে ভাগ করে নেব ছেলেবেলার ফ্যামিলিটাকে
স্বার্থের পাথর কেটে।








আচ্ছা! তোরও কি এমন হয়?



আচ্ছা! তোরও কি এমন হয়?
- যাযাবর জীবন


সব সময় কি আর কাছে আসা হয়?
নাকি সর্বক্ষণ পাশে থাকা হয়?
তবুও তো মনের ভেতর জড়িয়ে থাকিস দিনরাত্রির অষ্টপ্রহর,
কি অসম্ভব অবলীলায়
আর নিদারুণ ভালোবাসায়;

আচ্ছা! তোরও কি এমন হয়?




চড়াই-উৎরাই



চড়াই-উৎরাই
- যাযাবর জীবন


পথে পথে কতই না চড়াই-উৎরাই!
চড়াই-উৎরাই নারীর
দেহে ও মনে

দেহের চড়াই না হয় বাওয়া যায়
মনের উৎরাইয়ে ঠাঁই পেয়েছে কে নেমে?
তবু নামতেই হয় নারীতে
ডুবে যেতে.......

প্রকৃতি কি নারী?
না হলে এত টান আর কার মাঝে আছে?
তাই তো বারবার ফিরে আসি চড়াই-উৎরাই পেরোতে......




অনুভবের কি শেষ আছে? কিংবা অনুভূতির?



অনুভবের কি শেষ আছে? কিংবা অনুভূতির?
- যাযাবর জীবন


কতদিন ফুল দেই নি তোকে!
কতদিন তুই গান শোনাস নি আমায়!
অনেকদিন আমরা টেলিভিশনের কোনো অনুষ্ঠান দেখিনি একসাথে,
একসাথে দেখিনি চাঁদ ....

আসলে কখনই আমি তোকে ফুল দেই নি
কখনই তুই গান শোনাস নি আমায়
আমরা টেলিভিশনের কোনো অনুষ্ঠান কখনই দেখিনি একসাথে,
একসাথে দেখিনি চাঁদ ....

তবুও কিছুই কি দেই নি তোকে?
তুই কিছু দিস নি আমায়?
আমরা এত দেয়া নেয়ার হিসেব কষেছিলাম কবে রে?
শুধু কি একটা অনুভব জানি ছিলো দুজনার;

আজ তুই পথ চলছিস পথ খুঁজে খুঁজে
আমিও চলছি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
পথ চলার কি শেষ আছে রে?
হ্যাঁ রে আছে;
হয়তো আমার শেষটা দেখবি তুই
কিংবা তোরটা আমি
কিন্তু আমরা কেও নিজেদের পথের শেষটা দেখার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মাই নি
না তুই না আমি,
আচ্ছা! অনুভবের কি শেষ আছে?
কিংবা অনুভূতির?

তোর তো অনেক বুদ্ধি,
তুইই বল না শুনি।






অধঃপাতের সূচনা




অধঃপাতের সূচনা
- যাযাবর জীবন


সিঁড়িটা নেমে গেছে ক্রমাগত নীচে
আমিও নামছি ক্রমাগত
কখনো মনুষ্যত্ব থেকে
কখনো ভালোবাসা থেকে;
আমার অধঃপাতের সূচনা হয়েছিল তোতে,
তোকে ভালোবেসে;

সেই যে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি!
তারপর থেকে আর মানুষ হতে পারি নি;
একটাবার আমায় মানুষ বানিয়ে দিয়ে যা তো!
ভালোবেসে।




অন্ধকারটাই সত্য




অন্ধকারটাই সত্য
- যাযাবর জীবন


একদিন ভাবতাম তুই আমার
একদিন জানলাম কেও আমার নয়
একদিন ভাবতাম স্বপ্ন সত্যি হয়
একদিন জানলাম কেও কারো নয়
একদিন ভাবতাম ভালোবাসাই সব
একদিন দেখলাম আমারই প্রেমের শব
একদিন মনে হতো সম্পর্ক সবচেয়ে আপন
একদিন বুঝলাম টাকার থেকে আপন কেও নয়
একদিন মনে হতো কেও তো আছে!
একদিন জানলাম কেও মানেই টাকা
যেদিন থেকে পকেট গড়ের মাঠ
সেদিন জানলাম সব সম্পর্কই ফাঁকা........

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ!
অন্ধকারটাই সত্য
জীবনের মত।





অন্ধকারের জোনাক পোকা! কতটুকুই তোর আলো!


অন্ধকারের জোনাক পোকা! কতটুকুই তোর আলো!
- যাযাবর জীবন


জোনাক জোনাক কোথায় তুই
কোথায় জ্বালিস আলো?
অন্ধকারে দেখতে তোকে
অন্য রকম ভালো;

জোনাক জোনাক পোড়াস তুই
জ্বালা জ্বালা বুক
ভালোবাসায় আগুন দিতে
অনেক বুঝি সুখ?

ভালোবাসার কচু বুঝিস
জ্বলিস নিজের আলোয়
একবার আমায় ভালোবেসেই দেখ
অন্ধকারের কালোয়;

অন্ধকারের জোনাক পোকা
কতটুকুই তোর আলো!
একটাবার ভালোবেসেই দেখ
পুড়তেও লাগে ভালো।









যাবি আমার সাথে?



যাবি আমার সাথে?
- যাযাবর জীবন


বুকের ভেতর অরণ্য
মন তো জংলী হতেই পারে
বুকের খাঁচায় পশু
আমিতো মাংসাশী হতেই পারি;

ঘি ঢালতে জুড়ি নেই নারীর
কামনার আগুনে
কেন পশুত্ব জাগাস
বারবার প্রলোভনে ;

তার থেকে আকাশ অনেক নীল
শান্তি শান্তি
সাগরটাও বড্ড নীল
জুড়ি নেই ভেজাতে,
আয়, একবার ডুব দিয়ে যা আমার ভেতর
ভালোবাসার অবগাহনে;

চল একবার উড়ি একসাথে নীল নীলে
চল একবার ডুবি একসাথে নীল নীলে
আকাশ ডাকছে
ডাকছে সাগর
যাবি আমার সাথে?
নীল মাখতে নীলে।




মিসামিসি



মিসামিসি
- যাযাবর জীবন


তুই মাঝে মাঝে নেটে চিঠির ঢিল মারিস
মাঝে মাঝে ম্যাসেঞ্জারে মাঝে মাঝে এস এম এস এ মিসের ঢিল,
মাঝে মাঝে তো হুটহাট ফোন করে বলেই ফেলিস
খুব মিস করছিস আমায়;
আরে বোকা আমিও কি মিস করি না তোকে?
শুধু তোর মত দিনে রাতে, চাঁদে সূর্যে বলতে পারি না,
মনের কথা কি সবাই বলতে পারে?

আজকাল প্রায়শই ঘুম হয় না রাতে
একসময় ঘুমের বড়ি খেতাম মুঠো মুঠো
এখন ওগুলো ছেড়ে দিয়েছি,
ঘুম না এলে তোর কথা ভাবতে থাকি
কখনো ভাবতে ভাবতে অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ি
কখনো তুই স্বপ্নে আসিস, ভালোবাসিস
কখনো বা ভোরের পাখির কিচিরমিচির শুনি
কিছু কিছু রাতে না ঘুমলে কি হয়?

তুই বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে বলে বলে আমায় মিস করিস
আমি কিছু না বলেও তোকে তার থেকে অনেক বেশী মিস করি,
তুই আমায় মিস করিস তোর অবসরে, যখন কোন কাজ থাকে না হাতে
আমি তোকে সারাদিনই মিস করি, কাজের মাঝে
আর সারারাত মিস করি মনের মাঝে,
মিসামিসি খেলায় তুই হারাবি কিভাবে আমায়?
আমি শুধু তোদের মত সবকথা বলতে পারি না মুখ ফুটে
তাই হয়তো লোকে আমায় অর্ধমানব ডাকে।

কাল সকালে যখন ঘুম ভেঙে নেট খুলবি
বৃষ্টি নামবে তোর চোখে,
অর্ধ মানবও মাঝে মাঝে কাঁদাতে পারে।






কার কাছে যাব আমি?




কার কাছে যাব আমি?
- যাযাবর জীবন


ক্যামেরাটা অনেক দিন অবহেলায়,
বড্ড অভিমানিনী
আমিও অনেকদিন বড্ড থিতু অলসতায়
লেন্সটায় ধুলো পড়েছে জানি;

ভালো লাগছে না কিছু ভালো লাগছে না,

একদিকে ক্যামেরার হাতছানি
আরেকদিকে প্রকৃতির

কার কাছে যাব আমি?




জেগে জেগে স্বপ্ন




জেগে জেগে স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন


একদিন কোন এক গভীর রাতে
আকাশে মেঘ ভাঙছিল
চোখে ভাঙছিল ঘুম,
অনেকক্ষণ জেগে থেকে থেকেও
না বৃষ্টি এলো
না এলি তুই,
অনেক রাত অবধি স্বপ্নটাকে আটকে রাখতে রাখতে
পাখির কিচিমিচি
আমার কতগুলো রাত ভোর করছিস বলতে পারিস?

কোন একরাতে তোর চোখে স্বপ্ন ধরিয়ে দিয়ে যদি বলি জেগে থাক!
পারবি?
অতটা ভালোবাসা বুকে ধরিস?

না রে, চিন্তা করিস না
ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে সারারাত তোকে জাগিয়ে রাখব না;

তার থেকে তুই ঘুমা
রাত ঘুমাক
আমি জেগে আছি তোর স্বপ্ন শিয়রে;

জানিস! ঘুমিয়ে থাকলে তোকে আরও বেশী মায়া লাগে,
তোর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে একটা জীবন তো কাটিয়ে দেয়া যেতেই পারে!