শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

নানা রকম সম্পর্ক





নানা রকম সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


সম্পর্কগুলো বড্ড অদ্ভুত,
নানা রঙের সম্পর্ক
নানা রকম সম্পর্ক;

কিছু সম্পর্ক রক্তের
কিছু বন্ধুত্বের
কিছু ভালোবাসার
কিছু টাকার
কিছু সম্পর্ক শুধুমাত্র নামে,
তবে সব সম্পর্কেই জড়িয়ে আছে কোন না কোন স্বার্থ;

কোন কোন সম্পর্কে ভালোবাসা আছে, কোন কোন সম্পর্কে বন্ধন
কোন কোন সম্পর্কে অনুভূতি কাজ করে, কোন কোন সম্পর্ক জগদ্দল
সম্পর্কগুলো হাসায়, কাঁদায়
সম্পর্কগুলো ভালোবাসায় ভাসায়, ক্ষরণে ডোবায়
নানা রকম সম্পর্ক;

যে কোন সম্পর্কেই দুজনায় যদি মিলে যায়, তবে স্বর্গ
আর নয়তো ধ্বংস;

তোর আর আমার সম্পর্কে ভালোবাসা আছে, বন্ধন নেই
তোর আর আমার সম্পর্কে অনুভূতি আছে, স্পর্শ নেই
তোর আর আমার সম্পর্কে অনুভব আছে, আমরা কেও কারো কাছে নেই
তোর আর আমার মাঝে দূরত্ব অনেক অথচ সম্পর্কের শেকড় অনেক গভীর
তোর আর আমার মাঝে একটা সম্পর্ক তো আছেই অথচ কোন নাম নেই;

আচ্ছা!
তোর আর আমার সম্পর্কের কি নাম দেয়া যায় বলতো?







সময় কোথায়?



সময় কোথায়?
- যাযাবর জীবন


কেন রে তুই রাত পাঠালি আমার শহরে?
তুই তো ঠিকই নীল দেখছিস তোর শহরে, দুপুর রোদে;

আমারও যে বড্ড নীল দেখতে ইচ্ছে করে তোর সাথে!
আমারও যে নীলে ভাসতে ইচ্ছে করে তোকে নিয়ে!
আমারও তো তোকে দেখতে ইচ্ছে করে দুপুর হয়ে
আমার যে তোকে বড্ড ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, ভালোবাসায় ডুবে;

একদিন যখন তোর শহরে রাত নামবে
একদিন যখন তোর জানালায় চাঁদ উঠবে
একদিন যখন আমার শহর রোদে ভাসবে
একদিন যখন আমার শহরে নীল আসবে
দেখিস, আমি ঠিক তখন পৌঁছে যাব তোর কাছে, জ্যোৎস্না ডানায়;

এক সময় না এক সময় দূরত্ব পারি দিতে হয় ভালোবাসায়,
স্থানের ও মনের;

আজ বড্ড মন কেমন করছে তোর পাঠানো রাতে
আজ অন্ধকারে বড্ড বেশী কালো দিয়ে ফেলেছিস, আমার নির্ঘুম চোখে
আজ কেন জানি খুব বেশী দেখতে ইচ্ছে করছে তোকে;
জীবন অতটা সময় দেবে কি একবার তোর কাছে যেতে?





হিম হিম শীত রাত



হিম হিম শীত রাত
- যাযাবর জীবন


হিম হিম শীত রাত
গায়ে চাদর প্যাঁচানো
ওম ওম কোমল উলেন চাদর;

আচ্ছা!
তোর কি সেই রাতটার কথা মনে আছে?
সেই প্রথম রাতটার কথা!

সেটাও তো কোন এক শীতের রাতই ছিলো,
হিম হিম শীতার্ত রাত,
সে রাতে গায়ে চাদর ছিলো না কোনো;
এক মগ কফিতে অনেকটা সময় পাড় করে দিয়েছিলাম আমরা, সহজ হতে গিয়ে
তারপর আরো এক মগ গরম চায়ে আরেকটু সময়
এবার তুই বেশ সহজ হয়ে গিয়েছিলি, খানিকটা সহজ আমি
প্রকৃতিতে শীত শীত ভাব থাকলেও হাতে কাপের গরম
মনে ওম ওম,
কাপের গরম?
কি জানি! হয়তো মনের;

তারপর আরো কিছু সময় টুকটাকের পর বললি আরেক কাপ কফি হলে কেমন হয়?
ধোঁয়া ওঠা কফির কাপে বাষ্পীভূত হচ্ছিলো সময়
বাষ্পীভূত মন
চা কফি থেকে ঠোঁটে ছোঁয়া পেতে তিন কাপ,
তারপর আর শীত লাগে নি আমাদের কারোরই;

ভোর বেলায় তোর প্যাঁচানো বাহুর ওমে একবার চোখ মেলেছিলাম
তারপর আবার ওম ওম ঘুম,

সেটাও এক শীত রাত ছিলো
সারারাত গায়ে প্যাঁচানো ছিলি তুই
আর ওম ওম কোমল ঘুম।




ছোপ ছোপ অন্ধকার



ছোপ ছোপ অন্ধকার
- যাযাবর জীবন


ছোপ ছোপ কিছু কালো ঝুলে থাকে রাতের অন্ধকারে
কিছু কালো মনে,
মন কোথায়?
সে তো কবেই হারিয়ে গিয়েছে তো'তে;

ভালোবাসায় অনেক না বলা কথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে
যে ভালোবাসে সেই বোঝে
প্রেমিকের কথোপকথন চলে প্রেমিকার সাথে
একা একা মনে মনে
নির্ঘুম চোখে
ছোপ ছোপ কালো অন্ধকারে সারারাত ধরে;

কিছু ঘুম আসুক রাতের চোখে
ছিটে ফোঁটা কিছু আসুক না হয় আমার চোখে,
ঘুম তো সেই কবেই হারিয়েছি তো'তে
ছোপ ছোপ ভালোবাসায়, রাতের ঝুলন্ত কালো অন্ধকারে;

আমার সাথে কোন একরাতে ঝুলবি নাকি?
নির্ঘুম ভালোবাসার ঝুলে।













শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

সৃষ্টির সবচেয়ে বড় আশ্চর্য




সৃষ্টির সবচেয়ে বড় আশ্চর্য
- যাযাবর জীবন


পৃথিবীতে এই যে এত এত মানুষ!
কেও কারো মত না,
না চেহারায় না আচারে না ব্যবহারে
না অনুভূতিতে না অনুভবে;

অথচ আশ্চর্যের বিষয় আমাদের অনুভূতির নামগুলো এক;

পৃথিবীর ছয়শ কোটি মানুষের ছয়শ কোটি মন
ছয়শ কোটি মনের ছয়শ কোটি অনুভূতি
অথচ ঘুরেফিরে সবাই অল্পকিছু অনুভূতির আবর্তে ঘুরছে,

হয় সুখের অনুভূতি কিংবা দুঃখের অনুভূতি
আনন্দের অনুভূতি কিংবা বেদনার অনুভূতি
ভালোলাগার অনুভূতি আর ভালো না লাগার অনুভূতি
ভালোবাসার অনুভূতি নয়তো ঘৃণার অনুভূতি,

এর চেয়েও মজার বিষয় হলো
পৃথিবীর ছয়শ কোটি মানুষ মাত্র দুটি দলে বিভক্ত,
ভালো
আর মন্দ;

ছয়শ কোটি মানুষ
ছয়শ কোটি মন,
কেও কারো মত না
কারো সাথে কারো মেলে না,
অথচ সবাই মিলে মাত্র একটি জাতি
মানব জাতি;

ছয়শ কোটি মুখোশের আড়ালে
সৃষ্টির সবচেয়ে বড় আশ্চর্য।






শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯

পথের শেষে



পথের শেষে
- যাযাবর জীবন


ঐ যে রাস্তাটা
দূরে বহুদূরে চলে গেছে!
একদিন আমরা পথ হাঁটা শুরু করব দুজনে,
হয়তো অল্প কিছু সময়
হয়তো অল্প কিছু পথ,
আর নয়তো দীর্ঘ হতে হতে শেষ পর্যন্ত অসীম জীবনপথ;
কে জানে!

চুপ করে কি আর পথ হাঁটা যায়?
একসাথে পথ হাঁটতে হাঁটতে টুকটাক কথা
দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা,
একটা দুটো কথায় কি আর মানুষ বোঝা যায়?
তাইতো একটু হাঁটতে চাই লম্বা একটি পথ;

একদিন টুকটাক কথা থেকে জীবনের গল্প
দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা
গল্পে গল্পে কি আর মানুষ বোঝা যায়?
একসাথে চলতে হয় লম্বা একটি পথ;

হাঁটতে হাঁটতে একসময় হয়তো হাতে হাত ছুঁয়ে যাবে
একজন হয়তো তড়িৎ হাত সরিয়ে নেবে
আর নয়তো মুঠোয় মুঠো ভরে যাবে
পথ চলতে চলতে, পথের শেষে;

পথ পথের জায়গায় থাকে
অবস্থান পরিবর্তিত হয় মানুষের,
দুজন হাতে হাত ধরে পথ চলে একসাথে
কিংবা ভুল বোঝাবুঝিতে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন পথের মাঝে;

আমরা কত ভাবেই না একজন আরেকজনকে বোঝার চেষ্টা করি!
আদৌ কি পারি?

আমাদের দুজনার পথের শেষটা কোথায়?
সময় বলে দেবে।






বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯

কথার কথা



কথার কথা
- যাযাবর জীবন



কত সহজেই না মানুষ'কে ছোট করা যায়!
কথা দিয়ে;
কত সহজেই না মানুষ'কে বড় করা যায়,
কথা দিয়ে;

কথা বলতে কি আর ট্যাক্স দিতে হয়?
ভ্যাট?
অর্থ খরচ হয়?
উঁহু!
শুধু মুখ দিয়ে বলে দিলেই হয়,
কথা বলতে গিয়ে কে আর আগুপিছু চিন্তা করে?
কি সহজেই না মানুষ কঠিন কঠিন সব কথা
বলে ফেলে!

কারো কথায় মধু ঝরে
কারো কথায় বিষ
কারো কারো কথা তো পুতি দুর্গন্ধময়!
কথার কথা
মুখ ফস্কে, কথার ছলে

কারো কথায় ভালোবাসা ঝরে
কারো কথায় ঘৃণা
কারো কথায় মনখারাপ
কারো কথায় বীণা;

কেও কথায় বন্ধু গড়ে
কারো কথায় শত্রু বাড়ে
আমরা শুধু বলে ফেলি
কথার কথা, মুখ ফস্কে;

অথচ, একটাবার যদি চিন্তা করতাম!
কথা বলার আগে;
জীবনটা খুব অন্যরকম হত,
তাই না?






মন জানান দেয়



মন জানান দেয়
- যাযাবর জীবন


এই যে বহু বহুদিন আমাদের দেখা হয় না!
অথচ পরস্পর পরস্পরের মনে;
খুব আশ্চর্য একটা অনুভূতি না?

মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে;

এই যে অনেক অনেক দিন পর পর
দুজন দুজনার প্রতি নেটে ঢিল ছোঁড়া
হয় তুই কিংবা আমি;
খুব মজার না?

মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে;

এই যে অনেক অনেক দিন কথা হয় না!
তারপর একদিন হঠাৎই মুঠোফোন বেজে ওঠে
হয় আমার কিংবা তোর
আর আমরা দুজন দুজনার নিঃশ্বাস শুনি
খুব আজব না?

মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে;

এইভাবেই বেশ চলে যাচ্ছে আমাদের দিনগুলি
এভাবেই বেশ কেটে যাচ্ছে আমাদের রাতগুলি
দুজন পৃথিবীর শেষ দু প্রান্তে অপেক্ষায় বসে
আর দুজন দুজনকে এক অদ্ভুত ভালোবেসে;

জানিস!
মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে,
অথচ আমাদের দেখা হয় না;

এভাবেই কোন একদিন দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত না হয় আরো বহু বহুদিন খেলব আমরা,
দূর থেকে;

তারপর অপেক্ষার খেলা খেলতে খেলতে যখন অনেকদিন তোর মুঠোফোন একবারও বাজবে না
অনেক অনেকদিন এপাশ থেকে কেও নেটে ঢিল ছুঁড়বে না
একদিন যখন আমার কথা তোর খুব, খুব মনে হবে,
তুই পাগলের মত নেটে ঢিল ছুঁড়তেই থাকবি
এপাশ নীরব রবে,
তুই মুঠোফোনের বোতাম টিপতেই থাকবি
এপাশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখাবে,
তখন
ঠিক তখনই
তোর মন ভয়ে কেঁপে উঠবে;

মন ঠিকই জানান দেয়,
প্রিয়জনের না থাকা।



ঐ যে! আকাশ।





ঐ যে! আকাশ।
- যাযাবর জীবন


স্বার্থের গণ্ডি পার হতে পেরেছিলো কে কবে?
এই যে মায়া মমতা ভালোবাসা!
এই যে নানা রকম সম্পর্ক!
সবকিছু ছাপিয়ে স্বার্থটাই বড় হয়ে ওঠে,
স্বার্থের কাছে;

স্বার্থ তো স্বার্থই;
কখনো টাকার
কখনো বা অন্য কিছুর,
প্রত্যেকটা সম্পর্কের পেছনেই থাকে স্বার্থ;

স্বার্থের গণ্ডি কতদূর?

অন্যের ক্ষেত্রে উপদেশ;

নিজের ক্ষেত্রে ঐ তো! ঐ দেখা যায়,
কি দেখা যায়?
ঐ যে! আকাশ।







আমি একতরফা রাত



আমি একতরফা রাত
- যাযাবর জীবন


তুই একতরফা প্রেম করেছিস
ভালোবেসেছিস
কখনো চাঁদ হয়েছিস
কখনো রাত,
গাছেরও হয়তো অনুভূতি থাকে
অনুভব দাগ কাটে না পাথরে;

সব মেঘে কি আর বৃষ্টি ঝরে?
সব রাতে চাঁদনি!
আমি শুধুই অন্ধকার
অনুভূতি ও মনে;

আমি একতরফা রাত
ভালোবাসা ও প্রেমে।




অন্য কারো ঘর




অন্য কারো ঘর
- যাযাবর জীবন


যেদিন থেকে তুই হয়েছিলি পর
যেদিন থেকে তুই অন্য কারো ঘর
সেদিন থেকে তুই অনেক দূরে
ভৌগলিক অবস্থানে,
মন থেকে?
মন কি আর মানে রে?
মনের তো কত ইচ্ছেই মনে মনে!
কল্প চোখে;

মাঝে মাঝে বড্ড অস্থির লাগে আজকাল
মাঝে মাঝে কেমন আছিস জানতে ইচ্ছে করে,
তোরও কি করে না?
তবে কেন ডাকিস ইথারে ইথারে?
কেন ডাকিস ঠারে ঠোরে ইশারাতে?
কেন আকুল ডাকিস নীরব হয়ে, নৈঃশব্দ্যের রাতে?

একবার অবশ্যই যাব তোর কাছে,
নিজেকে ভেঙে;
নিজের ঘর দেখতে অন্য কারো ঘরে।





আগুন আগুন, রিপুর আগুন



আগুন আগুন, রিপুর আগুন
- যাযাবর জীবন


আগুন আগুন,
কোথায় আগুন?
আগুন আমার মনে;
আগুনে পুড়ি আমি
রিপুগুলোর সনে;

আগুন পুড়তে দেখেছ?
পড়ে থাকা ছাই?
মানুষ পুড়তে দেখেছ?
হতাশায় নাই নাই;

এই যে সম্ভব আর অসম্ভব সব চাওয়া
আর না পাওয়ার হতাশায় পুড়ে পুড়ে যাওয়া;

রিপু পোড়ালে কি হয়?

শরীরের মাঝে মানুষ রয়
রিপু পুড়ে পুড়ে মানুষ হয়।



মন'রে মন



মন'রে মন
- যাযাবর জীবন


মন'রে মন যখন তখন
কোথায় কোথায় চলে,
দিনে'তে চাঁদে রাতে সূর্যে
আকাশ বাতাস জলে;
যখন চোখ ঘুমিয়ে থাকে, তুই স্বপ্নচোখে
দিবা নিশীথে আলো আঁধারে, মন তোর কথা বলে.........





থাক না অনুভব, আমার কাছে



থাক না অনুভব, আমার কাছে
- যাযাবর জীবন



কেও কেও কবিতা লিখে
কেও কেও গল্প
কেও উপন্যাস
কেও খটমটে প্রবন্ধ,
যে যাই লিখে তা প্রকাশ করে ছাপা অক্ষরে
রংবেরং এর প্রচ্ছদ সকল, ছাপা বইয়ের মলাটে;

কারো কারো লিখা মানুষকে টানে
কেও কেও বিখ্যাত হয়ে ওঠে অল্পদিনে
আর কারো কারো বই উলুতে কাটে;

ইশশ! আমি যদি লিখতে পারতাম ওদের মত করে!!
আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে, বিখ্যাত হতে;

আমি জলরঙে মন লিখি সাদা রং ক্যানভাসে
আমি ক্রমাগত রাত আঁকি অন্ধকার কলমে
আমি মনে মনে কবিতা লিখি, মনের খাতা ভরে
তোকে মনে এলে;

এখন কেই বা আর কষ্ট করে মন পড়ে বল?
সবাই কি আর বিখ্যাত হতে পারে?

তোকে কাগজে লিখার দরকার হয় নি আমার কখনো;

অনুভব?
থাক না আমার কাছে!




মনের করিডোরে অন্ধকার



মনের করিডোরে অন্ধকার
- যাযাবর জীবন


মনের লম্বা করিডর, সুনসান নিস্তব্ধতা
সারারাত একটা বেঞ্চে বসেছিলাম আর পেছন ফিরে দেখা,
রাতটা ছিলো পূর্ণিমা, আকাশে বিশাল একটা চাঁদ
মনটা ছিলো অমাবস্যা, অন্ধকারের হাহাকার;

সাগরে একটা নৌকা দুলছিলো
মনের ভেতরে দুলছিলাম আমি
চোখে জীবনের অনেকগুলো কালো অধ্যায়
অন্ধকার করছিলো আমায়;

জ্যোৎস্নায় অন্ধকার দেখে কে?
জীবনে অন্ধকার যেচেছে যে;

আমি সারারাত অন্ধকার যেচেছি মনের করিডোরে
জ্যোৎস্নার তীব্র আলোতে।




দলছুট



দলছুট
- যাযাবর জীবন


কেও কেও জন্ম নেয় ভালোবাসা দিতে
কারো কারো জন্মই হয় ভালোবাসা পেতে
খুব অল্প সংখ্যক জন্মায় ভালোবাসা দিতে ও পেতে,
যেমন তুই;

আমি এদের কারো দলেই পড়ি না
না পেরেছি কাওকে ভালোবাসতে
না পেয়েছি ভালোবাসা কারো কাছ থেকে,
গাছের জন্মই হয় গাছ হয়ে থাকতে।


দুঃখের ফেরিওয়ালা



দুঃখের ফেরিওয়ালা
- যাযাবর জীবন


শুধু শুধুই তুই দুঃখের ফেরি করিস
ঝুড়িতে দুঃখ ভরে
একবার ঝুড়িতে আমাকে উঠিয়েই দেখ না
ভালোবাসায় আপন করে;

আমি তো ঘাটে ঘাটে ঘুরি
হয়ে আকাশ ঘুড়ি
তবুও মাঝে মাঝে যখন তখন
তোকেই মনে করি;

ও ফেরিওয়ালা এবার নামা আমায়
খালি কর তোর ঝুড়ি
আমার আকাশে নীল হ তুই
আমি মেঘ হয়ে হয়ে উড়ি........



কিছু কিছু নীরবতা



কিছু কিছু নীরবতা
- যাযাবর জীবন


কিছু কিছু সময় কথা
কিছু কিছু সময় নীরবতা
কিছু কিছু সময় ঠোঁট
কিছু কিছু সময় চুপ
কিছু কিছু সময় ভালোবাসা
কিছু কিছু সময় কামের দৌরাত্ম্য
কিছু কিছু সময় দূরে থাকা
কিছু কিছু সময় দূরত্ব
ভালোবাসা সবাই বোঝে না
বোঝে না ভালোবাসার মাহাত্ম্য;

কিছু নীরবতা আজ উড়িয়ে দিলাম আকাশে;
ভালোবাসা বুঝে নিস।



খুব নিশীথে, ক্ষণে ক্ষণে



খুব নিশীথে, ক্ষণে ক্ষণে
- যাযাবর জীবন


এই যে তোকে মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে,
এই যে তুই ঘুমিয়ে থাকিস মনে;
আমিও কি কোথাও আছি?
তোর মনে? গোপন কোনো কোণে;

কোথাও তো কিছু আছেই
কোথাও কেও থাকেই
যার জন্য একটা কেমন কেমন অনুভব
একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি
মনের ভেতর
খুব গোপন কোনো কোণে;

আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

কেন যে অযথা মন খারাপ হয় খুব নিশীথে, ক্ষণে ক্ষণে?
কারণে আর অকারণে।




সিকোয়েন্স



সিকোয়েন্স
- যাযাবর জীবন


পৃথিবীতে আসার একটা নিয়ম আছে
আছে সিকোয়েন্স
আছে সিরিয়াল,
আগে দাদা
পরে বাবা
তারপর আমি
তারপর সন্তান
তারপর নাতি নাতনি,
সিকোয়েন্সটা খুব সহজ
একের পর এক
নিয়ম মেনে;

যাওয়ার নিয়ম কোথায়?
কে আগে যায়?
কে পরে?

যাওয়ার কোন নিয়ম নেই
নেই সিকোয়েন্স
নেই সিরিয়াল
কে যে কার আগে যাবে কে বলতে পারে?
বাবার আগেই চলে যায় সন্তান
দাদার আগে নাতি কিংবা নাতিন
এর মাঝে সবচেয়ে ভারী বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ;

যাবার একটা সিকোয়েন্স থাকলে বড্ড ভালো হতো,
মৃত্যু নিয়ম মানে কোথায়?



সাথে করে কি নিয়ে যাচ্ছি?



সাথে করে কি নিয়ে যাচ্ছি?
- যাযাবর জীবন


কাঁচের আয়নায় বাইরেটুকু দেখা যায়, যতটুকু চোখ দেখে
মনের আয়না দেখে সবটুকু, ভেতর থেকে;
মাঝে মাঝে আমি আমায় দেখে শিউরে শিউরে উঠি
মানুষের খোলসে মানুষ নাকি?

এই যে তোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা!
আর ঘেঁষে থাকার অনুভব
মনে সান্ত্বনার অনুভূতি, কেও তো আছে পাশে!
আমার নিজেরই স্বার্থে, স্বার্থানুভব;

আজকাল বড্ড ভয় হয় একলা হতে
এই যে তোকে ছুঁয়ে থাকা! শরীরে শরীর ঘেঁষে
মনের মাঝে এক স্বস্তি স্বস্তি বোধ
কেও তো আছে!
কেও তো ছুঁয়ে আছে আমায়!
শরীরটা শীতল হওয়ার আগে;

একদিন ঘুমের মাঝে তোর হাতে বরফ অনুভূতি হতেই
ধরফরিয়ে উঠে বসবি
লাইট জ্বেলে দেখবি
ধুকপুক শুনতে বুকে কান পাতবি,
নৈঃশব্দ্যতা কানে তালা লাগাবে তোর
হয়তো চিৎকার করে কাঁদবি;

আরে বোকা!
মরণে ভয় কি?
শুধু আমলনামার দিকে তাকিয়ে খুব ভয় করে;
সাথে করে কি নিয়ে যাচ্ছি?







মৃত্যুঞ্জয়



মৃত্যুঞ্জয়
- যাযাবর জীবন


একটা সময় ছিলো কাছে আসার
একটা সময় ছিলো ভালোবাসার
একটা সময় ছিলো অনুভবের
আর দুজন দুজনাতে একাকার;

এখন দুজনার সময় দূরত্বের
সময় স্মৃতির জাবর কাটার
এখন অনুভবে শুধুই অনুতাপ
আর দূরত্ব দুজনার;

একসময় মনে ঝুল পড়ে
একসময় ভালোবাসায় শ্যাওলা ধরে
একসময় অনুভূতি ভোঁতা হতে থাকে
একটা সময় একাকীত্বে জীবন কাটে;

একটা সময় ছিলো, তুই আমি আর ভালোবাসা
এখন সবকিছু ছাপিয়ে ক্ষুধা
একসময় অনুভূতিগুলোর মৃত্যু হয়
একটা সময় সব সঙ্গই বিষময়;

একদিন আমি ছিলাম একদিন তুইও ছিলি
একদিন মন ছিলো আমাদের ভালোবাসার
আজ আমি আছি এখানে, অনেকটা দূরত্বে তুইও আছিস সেখানে
আর সময়ের সাথে সাথে মনটাও বদলে গেছে দুজনার;

সময়ে বদলে যায় অনুভব, সময় বদলে দেয় সব
কেও তাড়াতাড়ি বোঝে কেও বুঝেও অবুঝ হয়ে রয়,
কোন একদিন খুব হঠাৎই মরণ ডাক দিয়ে বলবে, 'আয়'
কে কবে হতে পেরেছিলো মৃত্যুঞ্জয়?









ঘুম পাড়ানি গান



ঘুম পাড়ানি গান
- যাযাবর জীবন


কোন কোন রাতে মনে কবিতা আসে
কোন কোন রাতে তুই
কোন কোন রাত শুধুই অন্ধকার
সব স্বপ্নে কি আর জ্যোৎস্না থাকে

চুইয়ে পড়া জ্যোৎস্নায় অপেক্ষায় হরিণ
দূরে কোথাও থেকে হরিণীর ডাক
আমায় ডাকে না কেও অমাবস্যা পূর্ণিমায়
নির্ঘুম চোখ অন্ধকারে চেয়ে থাকে
ঘুমের অপেক্ষায়

চোখের আয়নায় অনুভূতির ছায়া
মনের আয়নায় তোর বসবাস, পারদ হয়ে
নির্ঘুম বালিশটা তোর প্রতীক্ষায়
আমি ঘুম'কে ডাকতে থাকি
আয়, আয়, আয়!

কোন কোন রাত বড্ড লম্বা হয়
চোখ নির্ঘুম হলে
কোন কোন রাত অন্ধকার হয়
তোর কথা মনে হলে

আমি আমাকে ঘুম পাড়াই
ঘুম জাগানিয়া গানে।






অপাত্রে ভালোবাসা





অপাত্রে ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


অনেক রাত হয়েছে
রাতেরও ঘুম পেয়েছে,
তুই কেন এখনো জেগে?
আমি তো চুমু খেয়েছি সেই দুপুরের ঠোঁটে
রাতেও কি তার আবেশ থাকে?

আচ্ছা! আজ আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলি?
অনুভূতি দেখেছিলি কোনো?
কোন রঙ ছিলো কি আমার চোখে?

জলের রঙ যত স্বচ্ছই হোক না কেন!
আমি লবণ চাখতে পারি দূর থেকে
অনুভূতি হয়তো লুকোনো যায়
কান্না কিন্তু ঠিক ভেসে ওঠে চোখে,
মিছেমিছিই অপাত্রে ভালোবাসা ঢালিস
চোখের জলে;

অনেক রাত হয়েছে
এবার ঘুমিয়ে পড়,
আমি রাত্রি চাখি রাতের ঠোঁটে।






রক্ত সম্পর্ক



রক্ত সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


আপন কোথায়?
অভিধানের পাতায়;

সম্পর্কে?
হাসিও না তো!

আপন টাকা
তারচেয়ে আপন স্বার্থ
তারচেয়ে বেশী আপন লোভ
আমার কাছে আপনার চেয়ে আপন আমার রিপুগুলো,
প্রেম প্রীতি ভালোবাসা সম্পর্ক
এগুলো সব কাগজের পাতায়
অভিধানে
কাব্যে আর কবিতায়;

তা হলে এই যে পারিবারিক বন্ধন!
বন্ধু বান্ধব
আত্মীয় স্বজন!

আরে!
দিনের সূর্যে আলো খুঁজছ?
কিংবা রাতের অন্ধকারে, কালো?
এই যে বাবা মা
এই যে পরিবার
এই যে সন্তান
এই যে রক্ত সম্পর্কগুলো
তোমরা যাকে আপনার চেয়ে আপন বলো,
যতক্ষণ দিয়ে যাবে ততক্ষণই তোমার দাম
তুমি আমি
এরা ওরা
আমরা তোমরা
প্রত্যেকটা সম্পর্কই লেনদেনের পরিণাম;

কি বিশ্বাস হয় না?
জীবন যেচে দেখ,
একবার দেওয়া বন্ধ করেই দেখ না!
সব আপনেরই পর চেহারাটা দেখবে স্বচ্ছ ভাবে
একদম দিনের আলোয় ফকফকে আয়নায় চোখের সামনে
এর মাঝে সবচেয়ে বেশী পর চেহারাটা কে দেখাবে জানো?
তোমারই নিজের সন্তান!

খুব খারাপ লাগছে কথাগুলো তাই না?
কি করব বলো?
অভিধানের সাথে জীবনের মিল খুঁজে পাই না;

জীবনে সব চেয়ে বেশী কে কাঁদায় জানো?
রক্ত,
হয়তো লবণাক্ত বলে।







পরিবর্তন



পরিবর্তন
- যাযাবর জীবন


পরিবর্তন চারিদিকে
বদলাচ্ছে সব কিছু;
ঘণ্টায়, মিনিটে, সেকেন্ডে
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে
বদলাচ্ছি আমি
বদলাচ্ছে জীবন;

সময়ের সাথে বদলে যায় চাহিদা
বদলায় চাহিদার ধরণ
সময়ের সাথে সময়ই বদলে যায়
বদলে যায় জীবন

সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াই
আয়নার মানুষটার কাঁধে দেখি হাজারো চাহিদার বোঝা
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আয়নার সামনে নিজেকে প্রশ্ন করি
ও হে! আজকের প্রাপ্তি কি?
চাহিদা ও প্রাপ্তির মাঝে ফারাক আকাশ পাতাল
ফারাক কাল ও আজকের মাঝে
ফারাক গত আর আগামীর মাঝে;

আমি পরিবর্তন দেখছি সময়ের
পরিবর্তন দেখছি নিজের
পরিবর্তন সম্পর্কের
পরিবর্তন অনুভূতির
পরিবর্তন মানুষের
পরিবর্তন জীবনের;

একটু পরেই গত হয়ে যাবে এখন
এখনটা আগামী হবে তখনকার গত
সময় বদলাচ্ছে দ্রুত,
টিক টিক টিক টিক
সময়ের ড্রাম বাজছে,
শুনতে পাচ্ছ?

সামনে কি আছে?
অনেক অনেক ভাঙন?
নাকি নতুন আরো কিছু সম্পর্ক নিয়ে
ক্রম পরিবর্তনশীল নতুন আরেকটি জীবন;

আমরা ঘড়ি দেখি, সময় চোখে দেখি না
পরিবর্তিত মানুষ দেখি, পরিবর্তন চোখে দেখি না;
আমি মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়ে আয়নার দিকে চেয়ে থাকি,
জীবনের বদলে যাওয়া দেখি,
পরিবর্তিত আমাকে দেখি;
বদল অনুভবের
বদল অনুভূতির
বদল সম্পর্কের
বদল চেহারার
বদল জীবনের,
আচ্ছা!
সাদা চুল দাঁড়িতে ছাওয়া
কুঁচকানো চামড়ায় মোড়া
আয়নার ঐ মানুষটা কি আসলেও আমি?
কই!
এই তো সেদিন কান্না করছিলাম মায়ের কোলে;

সময় আলোর গতিতে চলে।












মানুষ মানুষ অমানুষ



মানুষ মানুষ অমানুষ
- যাযাবর জীবন


চারিদিকে কেমন এক শান্তি শান্তি অশান্তি
আর সুখ সুখ অসুখ
আরে নাহ! ক্যান্সার ফ্যান্সার না
আরো ভয়ঙ্কর নাম না জানা অন্য কোন অসুখ,
শারীরিক?
কিছুটা হয়তো!
তবে বেশীরভাগ মানসিক;

চারিদিকে এখন নারী নারী পুরুষ
কারো কারো ফ্যাশনের নামে হাতে চুড়ি
কেও কেও কানে দুল পড়ি
বাইরে এক একজন বাঘের বাচ্চা
ঘরে বৌ এর গোলামী;
চারিদিকে ইদানীং পুরুষ পুরুষ রমণী
না হয়েই বা করবে কি?
যা দিনকাল পড়েছে!
শিশুগুলোও ধর্ষণের শিকার
দ্বিধা হও ধরণী;

মানুষ এখন মানুষ মারে নির্লিপ্তে
মনের খুশিতে পিটিয়ে পিটিয়ে
রাস্তাঘাটে সমবেত হয়ে
মনের ভেতর শঙ্কা হলে
আরে আরে! বোধহয় ছিনতাইকারী?
হতে পারে ছেলেধরা!
হোক সে পুরুষ কিংবা নারী
ধ্যাত! মরে গেছে?
বেশ তো চলছিলো খেলা খেলা
খেলার ছলে;
মানুষ না অমানুষ?

মানুষ এখন মানুষ মারে নির্লিপ্তে
ঘরের ভেতর কয়েকজনের মিলে
মনের সুখে পিটিয়ে পিটিয়ে
অন্য ঘরানার দোহাই দিয়ে
কিংবা শুধু মতের মিল না হলে
একজন পেটায় বাকি সবার হাততালি
আরে, আরে! মরে গেলো নাকি?
ধ্যাত! আনন্দটাই মাটি;
মানুষ না অমানুষ?

আমাদের দুটো চোখ আছে তবুও বড্ড দৃষ্টিভ্রম
আমাদের দুটো কান আছে তবুও বধির
আমাদের একটি মুখ আছে, একদম বোবা
আমাদের দুটো হাত আছে, শেকল পড়ানো
আমাদের দুটো পা আছে, মাটির স্ক্র্যাচের
আচ্ছা! আমাদের মন আছে কি?
অনুভব?
অনুভূতি?

আছে তো!
মন আছে, বোধশুন্য
মনের মাঝে আছে সুখ সুখ অসুখ
কারো অল্প কারো বেশী,
আমাদের বিশেষত্ব কি?
মাংস দেখলেই আমরা মাংসাশী;

আচ্ছা! আমরা কি মানুষ না অমানুষ?
ইদানীং আমরা সবাই মানুষ মানুষ অমানুষ।






















হৃদয় বাড়ি



হৃদয় বাড়ি
- যাযাবর জীবন


হৃদয় এক বিশাল বাড়ি
চারটি ঘর, চার দরজা
প্রতি ঘরেই চাবি আছে
কোথাও নেই তালা,
পুরো বাড়িটাতেই তোর বাস
ভালোবাসায় একলা,

একদিন কোন একটি চাবি কাজ না করলেই
ঘুমিয়ে যাবে বাড়ি
চারিদিক সুনসান নিস্তব্ধতা
আর বাকি দরজাগুলোতে লাগবে তালা,
সেদিন তুই মুক্ত
ভালোবাসাহীন একলা।





ভালোবাসা নামলো বলে!



ভালোবাসা নামলো বলে!
- যাযাবর জীবন


যখন রাতের বেলায় অন্ধকার নেমে আসে
তখন কেন যেন তোর কথা খুব পড়ে মনে
আর আমি অন্য কেও বনে যাই মনে
কোথায় রে তুই?
কার সনে?

যখন রাতের বেলায় মনে রাত নামে
তখন,
ঠিক তখনই আমি অন্ধকার হই তো'তে,
আর অন্ধকারটাকে যখন আপন করে ধরতে যাই
তখনই স্বপ্নগুলো ঘুম হয়ে যায় চোখে
তারপর তুই আমি আর ঘুম খেলা করি, রাত্রির চোখে;

আমি ঘুমের মাঝেই তোকে পাই
আলো'তে হারাই
ওরে ও চোখ, অন্ধকার নেমেছে
ঘুমা এখন রাত্রির কোলে
ভালোবাসা এই নামলো বলে!




ভুলে থাকা কি যায়?




ভুলে থাকা কি যায়?
- যাযাবর জীবন


মানুষ কতকিছুই না ভুলে যায়!
মন যখন ভুলাতে চায়,
কখনো বা স্মৃতি'তে ধুলো জমে যায়
কখনো কালের বিবর্তনে মন থেকে হারিয়ে যায়,
ভালোবাসা কি ভোলা যায়?

এক এক সময় খুব ইচ্ছে করে ভুলে যেতে
ইচ্ছে করে মন থেকে মুছে দিতে তোকে
কতদিন যে কতভাবে স্মৃতি'তে রাবার ঘষেছি!
কতদিন কতভাবে রক্তে ধুয়েছি হৃদয়
লবণে ধুয়েছি চোখ,
ভালোবাসা কি মুছতে পেরেছি
নাকি ধুতে পেরেছি তোকে?
শুধুশুধুই ভুলতে চেয়ে অশ্রু ডেকেছি স্মৃতি খুঁড়ে;

এই যে দিনের বেলায় সূর্য থেকে আলো ছুঁড়িস!
এই যে রাতের বেলায় চাঁদের টর্চ জ্বালিস!
এই যে কাজের সময় স্মৃতির খোঁচায় বিরক্ত করিস!
এই যে ঘুমের সময় চোখে স্বপ্ন হয়ে বসিস!
কাছে আসতে পারিস না?
খুব কাছে!

কই, আমি তো দিনের বেলায় আলো ছুঁতে পারি না
অন্ধকার ধরতে পারি না রাতের বেলায়
স্মৃতির কাঁটা হতে পারি না কারো মনে
স্বপ্ন হতে পারি না কারো চোখে,
তবে ভালোবাসতে পারি রে
অনেক ভালো
যেখানে মন ডুবে থাকে মনে
আর তুই রক্তের অণু, পরমাণুতে;

আমি স্মৃতি'কে মাঝে মাঝে বড্ড বকা দেই
হৃদয়'কে কড়া শাসন,
কত অনুনয় বিনুনয়! তোকে ভুলিয়ে দিক পোড়া মন;
আমি সত্যিই ভুলে যেতে চাই
ভুলে যেতে চাই ভালোবাসা
ভুলে যেতে চাই স্মৃতি
ভুলে যেতে চাই তোকে,
একবার তো একলা হয়ে বাঁচি!
একটাবার ভালোবাসাহীন
একটাবার তুইহীন
আমার আমি হয়ে থাকি;

এই যে দূর, দূর থেকে এত এত ঢিল ছুড়ি!
শব্দের
বাক্যের
কবিতার
তোর গায়ে লাগে?

তোর বরফ নীরবতা আমার কান জমিয়ে দেয় মাঝে মাঝে,
নৈঃশব্দ্যতা বড্ড বুকে বাজে;

কখনো বরফ ভাঙার ভয়াবহ শব্দ শুনেছিস?
শুনবি কিভাবে?
কখনো মন ভাঙার চিৎকারে কেঁদেছিস?
কাঁদবি কিভাবে?

তুই বোবা ও বধির।

















সময়ের পথ হাঁটা



সময়ের পথ হাঁটা
- যাযাবর জীবন


সময়'কে দেখা যায় না
ছোঁয়া যায় না
অনুভব করা যায় না,
তবুও সময় ছিলো
সময় আছে
সময় থাকবে,
কালের সময়ে;
সময়'কে কে আর ধরে রাখতে পারে?
সময় হেঁটে চলে সময়ের পথ ধরে;

সময় আসে, সময় চলে যায়, সময়ের পথ ধরে
পৃথিবীতে মানুষ আসে সময়ের হাত ধরে
পৃথিবী থেকে মানুষ চলে যায় সময় ফুঁড়িয়ে গেলে
কালের চাকায় সময় ঘুরে, সময়ের পথ ধরে;

আমরা পৃথিবীতে আসি আমাদের সময় হলে
আমরা হাসি, খেলি, বেঁচে থাকি আমাদের সময়ে
রোগ, শোক, দুঃখ, বেদনা ভোগ করি আমাদের সময়ে
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা আর মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ি আমাদের সময়ে
আমরা আমাদের দীর্ঘ এক জীবন পাড়ি দেই মহাকালের অণু সময়ে,
তারপর একসময় থমকে যাই নিথর হয়ে
পৃথিবী ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হয়, মৃত্যুর সময় হলে;

সময় কি আর থমকে থাকে?
সময় চলতে থাকে তার পথে, সময়ে;
সেই সুদূর অতীত থেকে হেঁটে হেঁটে অজানা এক সুদূর ভবিষ্যতের পানে।






মন খুলে খুলে



মন খুলে খুলে
- যাযাবর জীবন


শরীরে কি আছে ?
দলা দলা চর্বি
স্থানে স্থানে মাংসপিণ্ড
চামড়া দিয়ে মোড়ানো,
চর্বি আর মাংসের ভেতর কিছু হাড়গোড়
তারও ভেতরে ফুসফুস, যকৃৎ, কলিজা, হৃদয়;

হৃদয়?
সে আবার কি?
তোমরা যাকে মন বলো,
আরে ওটাই তো যত গণ্ডগোলের মূল
ওখানেই যত অনুভব;

তাহলে শরীরের প্রতি শরীরের এত টান কেন?
কেন এত ইচ্ছে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখার?
কেন রিপুর তাড়না?
কতক্ষণের টান?
কিছু মিনিট না হয় ঘণ্টা
তারপর তো পুরোটাই মন
আনন্দ কিংবা বেদনা;

আচ্ছা!
মনে কি থাকে?
সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, ঘৃণা
দম্ভ, অহংকার, ক্রোধ, আর রিপুর তাড়না
পাওয়ার খুশি আর না পাওয়ার বেদনা?
মন কেন শরীর ছুঁতে চায়?
কামনায় কিংবা ভালোবাসায়;
শরীরের অংশ বলে?

আচ্ছা! মন কি শরীরের অংশ?
তাহলে দেখা যায় না কেন?

আমার একবার খুব মন দেখতে ইচ্ছে করে,
মন খুলে খুলে।







অলীক ইচ্ছেগুলো



অলীক ইচ্ছেগুলো
- যাযাবর জীবন


অনেকদিন দুপুর দেখি নি একসাথে
অনেক দিন মেঘ দেখি নি
বৃষ্টিতে ভিজি নি
অনেক দিন আকাশ দেখি নি একসাথে,
অনেক অনেকদিন তোকে যে দেখি নি!
কেমন আছিস রে তুই?
কোথায় আছিস?

একদিন আমরা অন্যরকম এক দুপুর দেখেছিলাম
অনেক অনেকদিন আগে
দুজন একসাথে
চোখে চোখে;

সেদিন সূর্য উঠেছিলো, না মেঘ জমেছিলো, না বৃষ্টি নেমেছিলো তা দেখিনি
সেদিন গরম ছিলো না ঠাণ্ডা ছিলো কেও অনুভব করি নি,
সেদিন শুধুই চোখে চোখ ছিলো
হাতে হাত
মনে মন
আর মাঝে মাঝে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে ভালোবাসার অনুভূতি,
সেই এক অদ্ভুত স্বপ্নের দুপুরে;
মনে আছে?

এখন আমার আকাশে দুপুর নেমেছে
আমার একবারও জানালা দিয়ে উঁকি দিতে ইচ্ছে করছে না
একবারও জানতে ইচ্ছে করছে না
আজ কি রোদ উঠেছে? না মেঘ ভাসছে? নাকি বৃষ্টি নেমেছে?

আজ খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোকে
ইচ্ছে করছে সেই সেদিনের মত তোর হাত ধরে বসে থাকতে
ইচ্ছে করছে চেয়ে থাকতে তোর চোখে
আর ডুবে যেতে তোর ঠোঁটে;
মাঝে মাঝে আমার কি সব অদ্ভুত ইচ্ছেই না মনে আসে!
অসম্ভব সব অলীক ইচ্ছেগুলো
ঝনঝন করে মনের ভেতর
মনখারাপের দ্বিপ্রহরে;

আচ্ছা! তোর মনেও কি এমন অলীক ইচ্ছে জাগে?
কেও উত্তর দেয় না,
চুপ করে থাকে দুপুর
কানে তালা লাগায় নিস্তব্ধতার হুঙ্কার,
আর দুপুর বেলায় রাত নামে আমার চোখে, মনখারাপে;
ঝাপসা চোখে কি দুপুর দেখা যায়?




ভার্চুয়াল ধোঁকা


ভার্চুয়াল ধোঁকা
- যাযাবর জীবন


ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলো ভার্চুয়ালেই ভালো
বাস্তবে চলে আসলেই বড্ড কাঁদায়
ভালোবাসায় কিংবা ধোঁকায়



ইচ্ছের দাসত্ব



ইচ্ছের দাসত্ব
- যাযাবর জীবন


ইচ্ছের দাসত্বে জীবন পাড়ি,
ইচ্ছেগুলো ইচ্ছেমতন
মনের ভেতর যখন তখন
ইচ্ছেকে কখনো দাস বানাতে পারি নি
ব্যর্থতা আমারই;

যখন ইচ্ছে পাহাড়ে
ইচ্ছে হলো তো নদী কিনারে
ইচ্ছে হলেই সমুদ্রের ধারে,
ইচ্ছের দাসত্বে শরীর টেনে নিয়ে যাই
ইচ্ছে মনের ইচ্ছে বড়াই,
অথচ আমার তো ইচ্ছে করে পাহাড় হতে
নদী হতে
সাগর হতে,
ইচ্ছে আর বাস্তবের মাঝে বিস্তর ব্যবধান
ব্যবধান সাধ আর সাধ্যের মাঝে;

একদিন খুব ইচ্ছে করে প্রকৃতি হতে
ইচ্ছে করে মেঘ হতে
বৃষ্টি হতে
কখনো ইচ্ছে করে ঝড় হতে
কখনো ইচ্ছে সব ওলোট পালট করে দিতে,
ইচ্ছে করে আকাশ হতে,
অথচ মানুষের সীমাবদ্ধতা শুধুই নীলে;

এই যে শরীর!
সত্তর ভাগ জল
অথচ না পারি নদী হতে না হতে পারি সাগর;
মাটির তৈরি মানুষ অথচ ইচ্ছে করলেই পারি না মাটি হতে,
মজার বিষয় কি জানো?
মাটি হতেই হয় কোন এক সময়, ইচ্ছের বিরুদ্ধে;

আমার ইদানীং একদম ইচ্ছে করে না মাটি হতে,
ইচ্ছে করে পাহাড় হতে
কখনো ইচ্ছে করে সাগর হতে
খুব বেশী ইচ্ছে করে আকাশ হতে
আর ইচ্ছে করে ইচ্ছের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে।









গন্তব্য কোথায়?



গন্তব্য কোথায়?
- যাযাবর জীবন


ট্রেন আসে
ট্রেন যায়
দিনে, দিনের নিস্তব্ধতা ভেঙে
রাতে, রাতের নীরবতা
বিকট শব্দে হুইসেল বাজে কুউউউউউ
ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
ষ্টেশনে ট্রেন আসে
ষ্টেশন জীবন্ত হয় কিছুক্ষণের জন্য
কিছু মানুষ নামে
কিছু ওঠে
যে যার গন্তব্যে
কু ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক ট্রেন চলে যায়
ষ্টেশন নীরব হতে থাকে ব্যস্ততা কমে যায়
এই ফাঁকে একটুখানি ঝিমিয়ে নেয় ঘুম চোখে
সজাগ মন অপেক্ষায়
পরবর্তী ট্রেন আসার
ট্রেন আসে
ট্রেন যায়

ষ্টেশন পড়ে থাকে ষ্টেশনে
মানুষ নামে
মানুষ ওঠে
ট্রেন চলে যায়,
মানুষের গন্তব্য আছে
গন্তব্য আছে ট্রেনের
ষ্টেশনের কোন গন্তব্য নেই
ষ্টেশন দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়;

আমার নিজেকে মাঝে মাঝে ষ্টেশন মনে হয়
কত মানুষ নামলো বুকে পা দিয়ে
কত মানুষ উঠলো আমায় মাড়িয়ে
যে যার গন্তব্যে,
আমি বসে একঠায়,
ভাবছি ষ্টেশনটার একটা নাম দেব,
কি নাম দেয়া যায়?
আচ্ছা!
অপেক্ষা নামটা কেমন হয়?

ধ্যাত!
কি সব আজেবাজে ভাবছি
ষ্টেশন তো ব্যবহারের জন্যই
মানুষ তো মাড়াবেই;

আমি কার গন্তব্য?
আমারই বা গন্তব্য কোথায়?
আমি কার অপেক্ষায়?
কিসের অপেক্ষায়?










ঘুমন্ত রাত



ঘুমন্ত রাত
- যাযাবর জীবন


কারো ভালোবাসার প্রকাশ প্রচণ্ড আবেগে
কেও কেও বুকের ভেতর চেপে রাখে
আমি কাওকে ভালোবাসতেই পারলাম না
আবেগ প্রকাশ করবো কি করে?

তবে খুব বুঝতে পারি কেও কেও আমায় ভালোবাসে
কেও অল্প স্বল্প
কেও প্রচণ্ড ভাবে
অল্পস্বল্প ভালোবাসার টান আমি উপেক্ষা করে যাই
প্রচণ্ড ভালোবাসার কাছে নিজেকে বড্ড তুচ্ছ মনে হয়
আমি নিজেতে নিজে বড্ড অসহায় হয়ে যাই;

ভালোবাসায় আমার বড্ড ভয়
আবেগহীন মনে কি জানি এক সংশয়,
পড়ন্ত বেলায় কি আর সূর্যোদয় হয়?
কে বোঝাবে তোকে?
শুধু শুধুই ভালোবেসে কষ্ট দিস মনটাকে;

তার থেকে সূর্য ভালোবাস
তাপ বিলাবে
মেঘ ভালোবাস
বৃষ্টি দেবে
জ্যোৎস্না ভালোবাস
আলো দেবে;

কেন রাত জাগিস ভালোবাসায়?
কেন অপেক্ষা করিস আমার আশায়?
আমি তো ঘুমন্ত রাত,
আমায় ভালোবেসে কি হবে?




মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯

কামাই



কামাই
- যাযাবর জীবন


খালি হাতে আসি
খালি হাতে যাই
মাঝখানের সময়টায় কতকিছুই না কামাই!

শিশুকালটা কাটে আদর সোহাগ কামানোতে
ছেলেবেলা দাদা দাদী নানা নানীর প্রশ্রয়ে
পড়ালেখা স্কুল আদর শাসন কতকিছুই জোটে
কৈশোরে মনে ভালোলাগার ফুল ফোটে
যৌবনে ভালোবাসার পূর্ণ জোয়ার
প্রেমের পথে বাঁধা, মানে কি গোয়ার?

জীবন তো শুধুই কামানোর পালা
শিক্ষা দীক্ষা থেকে শুরু করে টাকা পয়সা
অর্থ বিত্ত সম্পত্তি থেকে স্বার্থ আর শত্রুতা
কেও ভালোবাসা পেতে সম্পর্ক কামাতে যায়
কেও স্বার্থের আক্রোশে সম্পর্ক হারায়
জন্মের পর থেকে কত কিছুই না কামাই!
কামাতে কামাতে কত কিছুই না হারাই!

আচ্ছা! এই যে মুঠো মুঠো টাকা পয়সা জমাতে জমাতে
উপচে পড়া ব্যাঙ্ক
মুঠোটা একবার খুলে দেখ তো ভাই!
হাতের তালু থেকে আকাশ পর্যন্ত বিশাল এক শূন্য
কোথায় কাড়ি কাড়ি টাকা?
কোথায় তোমার কামাই?

এই যে সম্পত্তি গড়তে গড়তে
সম্পদের পাহাড়
খোলা মাঠে চিৎ হয়ে একবার শুয়ে দেখ তো ভাই!
চোখ থেকে ঐ দূর আকাশ পর্যন্ত শূন্যতা দেখছ?
কোথায় দেখা যায় সম্পদ?
কোথায় তোমার কামাই?

এই যে পরপুরুষ, পরনারীতে প্রেম ভালোবাসা
এই যে পরের অর্থে লোভ লালসা
পর-সম্পত্তি আত্মসাতের ইচ্ছা
আর ক্রমাগত রিপুর কাছে নত মাথা
কি করছি কামাই?
আদতে কতটুকু কামাই আর কতখানি খোয়াই?

খালি হাতে আসি আমরা খালি হাতে যাই,
আর জীবন পথের প্রতিটা বাঁকে
কুড়িয়ে কুড়িয়ে পাপ কামাই,
এবার একটু থামি
একটু পেছন ফিরে দেখি
কতটুকু কামাতে গিয়ে কতটুকু হলো খোয়াই!

ঐ যে পড়ে আছি আমি
নিথর নীরব
সারাটা জীবন ছিলাম কামাইয়ে কামাইয়ে সরব,
তোমরা দয়া করলে তবেই না মাটি!
আচ্ছা! আজ ছোট্ট একটা ঘর কামাই হবে তো?
মাটির ঘর!








সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পাথর জীবন


পাথর জীবন
- যাযাবর জীবন



সন্ধ্যা নামছে জীবনে, মন বলে ঘরে চলো
সেই ভোর থেকে পাহাড় বাইছ
বরফ কাটছ,
সেই দুপুর থেকে সাগর সেঁচছ
নৌকা বাইছ,
সেই সন্ধ্যা থেকে লাঙল চষছ
মাটি কাটছ,
অনেক তো হয়েছে ঘামঝরা
ক্লান্ত হওনি! বলো?
এবার ঘরে চলো;

একটা জীবন
পাথরের মত কঠিন
ধাপে ধাপে সময় পার
পড়ালেখা সংসার
ছেলেমেয়ে হলেই কাঁধে জোয়াল
ক্ষুধা, দারিদ্র আর কঠিন সময় পার,
বড্ড পরিশ্রান্ত চোখ ছলোছলো;
নিজেকে দেখো না আয়নায়?
অনেক ক্লান্ত তুমি
ঘুমোবার সময় হয়েছে, এবার ঘরে চলো;

কেও কেও রাত্রিতে ঘুমায়
তুমি তখনো জেগে থাকো সংসার টানায়
এত কাজও করতে হয়?
কাজ না করলে কে খাবার দেবে বলো?
হাঁড়ি খুলতেই তো ভয়
এতগুলো মানুষ
এতগুলো মুখ
কাজ না করলে খাব কি?
আমার যে আহার জোটাতে হয়!

উঁহু! অনেক হয়েছে কাজ
ক্লান্ত তুমি আজ
একটু ঘুমিয়ে নাও
একটু বিশ্রাম
এবার ঘরে চলো,
যাব তো!
ঘুমবো
আমি একবারেই ঘুমবো
একবারেই ঘরে যাব
সকাল, সন্ধ্যে কিংবা রাতে
কি আসে যায়!
সেই শবই তো,
না হয় পড়ে থাকবে মাটির আশায়।






জায়েজ



জায়েজ
- যাযাবর জীবন


প্রেমের কথা বললেই যত আপত্তি
আমি নাকি প্যাতপ্যাতা প্রেম লিখি
ভালোবাসার কথা বললে বলিস
আরে ধ্যাত! ভালোবাসা বলে কিছু আছে নাকি?
চুমুর কথা বললে বলিস বেটা বদ
শরীরের কথা বললে আমি চরিত্রহীন,
অথচ নিজেরা যখন প্রেম করিস?
কথায় তখন গন্ধ হয় না
ঠোঁটে ঠোঁট অমলিন
আর শরীরে শরীরে বিলীন,
এবার সবকিছু করা যাবে
নিজের বেলা তো!

আসলে করায় দোষ নেই
গোপনে করায়,
বললেই যত দোষ
দোষ লিখায়
প্রমাণ যে থেকে যায়!

প্রেম
প্রীতি
ভালোবাসা,
কাম
শরীর
বিছানা;
সব, সব
সবই সম্ভব!!

শুধু লিখতে মানা
মানা ছবি আঁকতে
মানা কাব্যে ভালোবাসতে,
প্রেম করতে মানা কবিতার শরীরে
শরীর খুলতে মানা কাব্যের মনে;
বাকি সব জায়েজ
চুপিচুপি গোপনে।







অভিমানের মুখে ছাই




অভিমানের মুখে ছাই
- যাযাবর জীবন


জেগে আছি রাত, জেগে থাকি
অভ্যাসের দাস হয়ে গেছি
তুই ভেবে নিস না তোর জন্য জেগে থাকি,
আমার কি দায় পড়েছে ঘুম চোখে কষ্ট নেবার
তোর কথা মনে করার?
আর তোকে ভেবে রাতভর কবিতা আঁকার?

এই যে রাত রাত অন্ধকার
এই যে আধো আধো চাঁদ
এই যে জোনাক জ্বলা মিটিমিটি আকাশ
এই যে বৃষ্টি বৃষ্টি মন
আর মন উদাস বাতাস!
তুই কি ভেবেছিস তোর জন্য এদের কাছে আসি
তোর কথা মনে করে এদের খুঁজি?
আমার কি দায় পড়েছে তোকে মনে করার?
তুই কে রে আমার?

এই যে ভুল ভেবে ভেবে আমরা জটিল জালে জড়াই!
প্রেমের জালে
ভালোবাসার জালে
জলে জালা পড়লেই তো তীব্র টান!
মাছ আটকেছে না ভালোবাসা! তা বুঝতে না বুঝতে হাত থেকে জাল ছুটে যায়
ভালোবাসা ধরা পড়ে না জালে
ভালোবাসা ধুয়ে যায় জলে
তোর আর আমার,
ভাগ্যিস রাতের অন্ধকারে কান্না দেখা যায় না!
আমরা অন্ধকার রাতে চোখ বন্ধ করে অশ্রু লুকাই;

ঐ যে আয়নাটা দেখছিস?
দিনের বেলায় কিন্তু সব ফকফকে
তুই তোকে দেখিস
আমি আমাকে
একদম স্বচ্ছ পরিষ্কার,
কখনো আয়নার ওপাশটা দেখেছিস
গাঢ় করে পারদের পরত দেয়া থাকে
যাতে আয়নার দুপাশ থেকে আমরা পরস্পরকে দেখতে না পাই
তবুও মন কি মানে?
আয়নায় ক্রমাগত উঁকি দিয়ে যাই
যদি তোকে দেখতে পাই!
আর অহেতুক নিজের প্রতিবিম্বের সাথে ক্রমাগত করে যাই লড়াই;

ভালোবাসার লড়াইয়ে কে জিতেছিল কবে?
শুধু শুধুই অভিমানের বড়াই!

আমি জেগে আছি রে!
তুই নিদ্রা ভেবে ভুল করিস না
একবার ডাক দিয়েই দেখ!
অভিমান পুড়িয়ে দেব ভালোবাসার আগুনে,
তারপর তোর বুকেতে ঠাঁই;

আহ! কতদিন তোর বুকে মুখ রাখিনি
কতদিন তোকে পাঁজরে পিষে ধরি নি,
ভালোবাসা ভুল করে অভিমানে, খুব নীরবে
কোন একদিন একটাবার ডেকেই দেখ না!
অভিমানের মুখে ছাই।








কিছু থাকা আর না থাকা



কিছু থাকা আর না থাকা
যাযাবর জীবন


তোর আর আমার মাঝে কিছু একটা ছিলো
কিছু একটা বন্ধন
কিছু খোলা আর কিছু বাধা
অথচ যখনই আয়নায় তাকাই
প্রতিবিম্বে কোথাও তুই নাই;
উপহাসে আয়না
হো হো শূন্যতা।

তোর আর আমার মাঝে কিছু একটা তো ছিলো
অদৃশ্য একটা সুতা
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা
যখনই বৃষ্টি ধরতে যাই
হাত বাড়ালে কোথাও তুই নাই;
রিমঝিমিয়ে বৃষ্টি পড়ে
ভেজাতে পারে না আমায়।

তোর আর আমার মাঝে কিছুতো একটা ছিলো
অদৃশ্য একটা ঘর
অদৃশ্য সংসারে আমরা পরস্পর
অথচ যখনই ঘরে ঢুকতে যাই
চারিদিক খুঁজি, কোথাও তুই নাই;
চার দেয়ালের ঘর
শূন্যতার বসবাস।

তোর আর আমার মাঝে কিছুতো একটা ছিলো
যখনই তাকাই বুকের ছাতি খুঁড়ে
কোথায় হৃদয়? তুই পুরোটা জুড়ে
এ যে কি এক অসহনীয় অনুভব! অথচ বুঝতে গেলে নাই
বুকের ভেতর শত খোঁড়াখুঁড়ি, কোথায় তোকে পাই?
অলিন্দ নিলয় খুলে খুঁজি
ওখানে পুরোটাই রক্ত।

তোর আর আমার মাঝে কিছু তো একটা ছিলোই
হয়তো ভালোবাসার বন্ধন
মানুষ বলে রসায়ন
দুজন দুজনে, দুজন দু ভুবনে, পরস্পরের মনে ঠাঁই
অনেক দূরত্বে দুজন আমরা দুজন, স্পর্শে কোথাও নাই;
স্পর্শে তো ভালোবাসা থাকে
আমায় পাবি কোত্থেকে?

তোর আর আমার মাঝে কিছু তো একটা ছিলোই
কিছু কিছু দোষ
কিছু আক্রোশ
দোষ কিছু আমার হয়েছিলো তোকে ভালোবেসে
দোষ কিছু তোর হয়েছিলো আমায় কাঁদিয়ে
কিছু দোষ ছিলো সময়ের, কিছু পরিস্থিতির
এখন দূর থেকে ভালোবাসি, আর কপাল'কে দুষি
তুই, আমি দুজনেই।








চোখের আলো-অন্ধকার



চোখের আলো-অন্ধকার
- যাযাবর জীবন


আমি যেদিকেই তাকাই শুধুই তুই;

এই যে খোলা আকাশ নীল নীল
দিনের বেলায় কি প্রখর এক সূর্য
সূর্যের দিকে তাকাই চোখ ঝলসাই
সেখানেও তুই সূর্য হয়ে
এই যে খোলা আকাশ ধুসর ধুসর
রাতের বেলায় কি মায়াবী এক চাঁদনি!
চাঁদের দিকে তাকাই, ইচ্ছে করে চাঁদটাকে গিলে খাই
কোথায় চাঁদ? চাঁদনি হয়ে তুই;

আজকাল আর কোথাও যেতে হয় না
আজকাল আর চোখ খুলতে হয় না
আজকাল চোখ বন্ধ করতে হয় না
কি দেখব চোখ খুলে কিংবা বন্ধ করে?
তুই তো চোখের ভেতরে
চাঁদ হয়ে সূর্য হয়ে
আলো হয়ে অন্ধকার হয়ে

আমি একটা মনের কথা বলছি রে
যে কানের থেকেও বেশী শুনতে পায়
যে চোখের থেকেও বেশী দেখতে পায়
যে নাকের থেকেও বেশী ঘ্রাণ পায়
আমি কান বন্ধ করেও তোর শব্দ শুনি
আমি চোখ বন্ধ করেও তোকেই দেখি
আমি নাক বন্ধ করেও তোর গায়ের গন্ধ শুঁকি,
আমার চোখের আলো অন্ধকার তুই
আমার মনের আলো আর অন্ধকারেও তুই;

কারণহীন এক এক দিনে
কারণে আর অকারণে এক এক রাতে
হঠাৎ হঠাৎই তোর কথা মনে এলে
ক্রমাগত দিন রাত্রি তাঁতে
চাঁদ সূর্য সেলাই এ
আলো আঁধার হাতে
আমি তোকে বুনে যাই
শুধু তোকেই বুনে যাই,
কবিতা বোনা আর তোকে বোনার মাঝে আমি আজো পার্থক্য বুঝি নাই;

এই তুই তুই রোগটা আমার কবে থেকে জানিস?
যেদিন খুব হঠাৎই চোখ পড়েছিলো তোতে
আশ্চর্য সেই এক ভরা পূর্ণিমা রাতে,
তারপর থেকে আমি আর কোন নারী দেখি নি।





আকাশের জন্মদিন



আকাশের জন্মদিন
- যাযাবর জীবন


আকাশটা আকাশে খুব ভালো ছিলো;

আকাশে আকাশ হয়ে
নীল রঙের শাড়ী পড়ে চুলে মেঘ জড়িয়ে
এখানে ওখানে উড়ে বেড়াতো
কখনো সূর্য হতো
কখনো ঝমঝম বৃষ্টি
তার মনের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীতে দিন হতো কিংবা রাত্রি
আকাশটা কখনো নীল হতো কখনো লাল কখনো আলো
তার মনের সাথে রঙ বদলে সাদা কিংবা কালো

আকাশে আকাশ আকাশ একটা মেয়ে ছিলো
আকাশের মত মন
একদিন ভালোবেসে মাটিতে নেমে এলো
তারপর থেকে ঋতু বদল
তারপর থেকে সময়
আর তারপরই মেয়েটার জীবন,

আসলে যতক্ষণ আকাশ ততক্ষণই বিশালতা
মাটিতে নামলে সবাই তো মানুষই
কেও সাদা কেও কালো
আর হাজারো আশা নিরাশা;

আকাশটা আকাশেই ভালো ছিলো
শুধু শুধুই মাটিতে নামালো মন
মানুষকে ভালোবেসে
দুঃখ কষ্টের মানুষের জীবন

একদিন আকাশ আবার আকাশ হবে
যেদিন মন থেকে ভালোবাসা মুছে যাবে
আবার মেঘের সাথে ভাসবে
রঙের সাথে খেলবে
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে পৃথিবীর দিকে তাকাবে যখন তখন
কখনো নীল হয়ে কখনো লাল কখনো অন্ধকার
মাঝে মাঝে খুব বেশী পৃথিবীর কথা মনে হলে
মাটিতে নেমে আসবে বৃষ্টির সাথে
রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিমিয়ে,
মানুষগুলো বলবে -
ধ্যাত! আকাশটা হয়েছে কি?
বড্ড কাঁদছে;
আকাশের কান্নায় মানুষের কি এসে যায়?


..........................................................


একদিন আকাশ থেকে একটা মেয়ে নেমে এসেছিলো
পৃথিবী ভালোবেসে
আজ কি জানি এক মনখারাপে আকাশ হয়ে গেছে,

আজ মেয়েটার জন্মদিন
তাই বড্ড কাঁদছে
তোমরা চেন তাকে?

আমি শুভেচ্ছা জানাতে পারি না
পারি না এটা ওটা দিতে
মাঝে মাঝে টুকটাক মনের কথা
পারি আকাশে লিখে দিতে............









অনন্ত ঘুম




অনন্ত ঘুম
- যাযাবর জীবন


এখানে আর ভালো লাগছে না
এখানে চারিদিকে বড্ড অশান্তি
এখানে একটা পেট রয়েছে
রয়েছে ক্ষুধা তৃষ্ণা আর বুভুক্ষু
রয়েছে অর্থ কদর্যতা আর স্বার্থ
এখানে মন নামের রয়েছে অদ্ভুত এক অনুভব
রয়েছে অনুভূতিহীন কিছু সম্পর্ক
আর রয়েছে ভালোবাসা নামের অনর্থ;

এক একটা সময় মনে হয় অনেক দূরে চলে যাই
অনেক অনেক দূরে কোথাও
যেখান থেকে আর কখনো ফিরতে হবে না
যেখান থেকে আসলে ফেরা যায় না;

যেখানে সময় বলে কিছু নেই
যেখানে ক্লান্তি নেই শ্রান্তি নেই
যেখানে ক্ষুধা নেই স্বার্থ নেই
যেখানে নেই কোন লেনদেন
যেখানে নেই মায়া মমতা ভালোবাসা
যেখানে কেও থাকে না কারো অপেক্ষায়
যেখানে কোন অনুভূতিই কাজ করে না;

সেখানে শুধুই আমি থাকব
একার আমিতে আমিত্বময় হয়ে
এখানে থেকে অনেক অনেক দূরে
কোন এক নির্জন একলা মাটির ঘরে
কোন এক অজানা ঘুমের দেশে
স্বপ্নহীন গাঢ় নিশ্চিন্ত এক অনন্ত ঘুম ঘুমবো
অনন্ত থেকে অনন্তকাল জুড়ে।







শরীর কেন্দ্রিক সম্পর্ক



শরীর কেন্দ্রিক সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


আজকাল সম্পর্কগুলো বড্ড কেমন যেন!
নামে তো সম্পর্ক, গভীরতা কোথায়?
নাকি নর আর নারী শুধুই কামের কাঙাল?
সম্পর্কের এ কেমন দিনকাল?

বাচ্চা বাচ্চা স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েগুলো
ওদের তো খেলার বয়স
দৌড়াদৌড়ি হৈ চৈ কোথায়?
সারাদিন দেখি মোবাইল যন্ত্রের ভেতরে বসবাস
বয়সে প্রাপ্ততা আসতে যতই দেরী থাক না কেন
বন্ধুত্বে কিংবা ক্লাসের সঙ্গী সাথীতে চারিদিকে নগ্নতা বিলাস
আজকাল ভার্জিনিটি যেন ডিকশনারিতে
প্র্যাক্টিক্যালেই এদের যত বিশ্বাস;
এরা যতটা সামনা সামনি
নেটে তার থেকে অনেক অনেকগুণ বেশী
ভার্চুয়াল সম্পর্কের শুরুতেই কাপড় খোলা
ফ্যাশন হয়েছে দাঁড়িয়েছে নগ্নতা,
আর ভার্চুয়াল সম্পর্ক?
সে তো আরো জগাখিচুড়ি
হাত কাটাকুটি থেকে নিয়ে আত্মহত্যা
নিত্য নৈমিত্তিক ভার্চুয়াল সম্পর্কের অবস্থা;

এদের আর কি বলব!
আজকালকার স্বামী স্ত্রী
কে যে কার স্বামী আর কে যে কার স্ত্রী!
এর সাথে ওর
তার সাথে তার শুধুই শারীরিক জড়াজড়ি;

আজকাল তো কখনো কখনো নারী নিজেই জানে না
বাচ্চাটা কার ঔরস্য
চারিদিকে এত এত আনন্দ, এত এত সম্পর্ক
কখন যে কিভাবে, কার সাথে কি করতে গিয়ে
কি হতে কি হয়ে গেলো?
ফলশ্রুতি নারীর পেটে এক দলা মাংসপিণ্ড
কার ঔরসজাত?
কার ঔরস্য?
কি আজব! তাই না?
আজকালকার শরীর কেন্দ্রিক সম্পর্ক।








ভার্চুয়াল টিং



ভার্চুয়াল টিং
- যাযাবর জীবন


বেশ কিছুদিন তোর কাছ থেকে কিছু শুনি নি
বেশ কিছুদিন নীরব হয়ে আছে মুঠোফোন,
তুই ভালো আছিস তো!
ভালো আছে তোর মন?

জানিস! আজ না পুরনো দিনগুলোর কথা বড্ড মনে পড়ছে
সেই পুরনো কাগজ কলমের চিঠি লিখার দিনগুলোর কথা,
আচ্ছা! তোর কি লাল ডাকবাক্সের কথা মনে আছে?
এক সময় লাল ডাকবাক্স উঠে গেলেও তুই কিন্তু চিঠি লিখতি নিয়মিত
মিষ্টি গন্ধ-ওয়ালা নানা রঙের কাগজে গাঢ় কালো ফাউন্টেন কলমে
পোস্টঅফিসের বদৌলতে,
মাঝে মধ্যে বাহারি সুন্দর খামগুলোর মাঝে তোকে খুঁজতাম কল্প রঙে,
বাসার ঠিকানাটা তোর মুখস্থই ছিলো
সপ্তাহে একটা না হলেও মাসে তিনটা চিঠি তো নিশ্চিত ছিলো,
তারপর সময়ের গতি দ্রুত হয়ে গেলেও চিঠির গতি হয়েছিলো ধীর
প্রথমে পাক্ষিক, পরে মাসিক, তারপর তো কালেভদ্রে
জানিস! আজো সেই সুগন্ধি কাগজে লেখা তোর চিঠির স্তূপ সাজানো আছে
বইয়ের আলমিরার গোপন ঘরে
কাঠের তাকে সারে সারে;
বড্ড মিস করি আজো মাখন কাগজে ফাউন্টেন কালির দাগ
সবুজ, হলুদ, নীল আরো কত কত বাহারি রঙের খাম!
কি অদ্ভুত আবেগেই না চিঠি লিখতি ভালোবাসার রঙ মাখিয়ে
সেই কাগজে চিঠি লিখার দিনও শেষ হয়ে গিয়েছে যুগের পরিবর্তনে;

তারপর আসলো নেটের যুগ
কালেভদ্রে টুং করে উঠতো ইমেইল আলাপন
তোর নাম ভেসে আসতেই মনের ভেতর কি এক আনন্দ নহর!
তুই বুঝবি না,
এক সময় কালেভদ্রে থেকে মোটামুটি নিয়মিত ইমেইল চিঠি
তারপর তো ভার্চুয়ালের কত উন্নতি!
ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসআপ আরো কত কি?

এখন তো যখন তখন
তোর মনে হলেই আমার মোবাইলে টিং
আমার মনে হলো তো তোর মোবাইলে ঢিং
কিন্তু বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে তোর কোন খবর নেই
ভার্চুয়ালে তোর অনুপস্থিতি
আর আমার বড্ড কেমন কেমন
জানিসই তো!
তোর খবর না পেলে আমি হয়ে যাই অন্যরকম;

তুই ভালো আছিস তো!
আমি ভালো নেই
ভালো নেই তুইহীন;
চিঠি চোখে পড়লে মোবাইলে টিং ছুঁড়িস,
কিছু লিখতে হবে না
শুধু একটা ডট এঁকে দিয়ে একটিবার টিং।








ভার্চুয়াল হিপোক্রেট



ভার্চুয়াল হিপোক্রেট
- যাযাবর জীবন


গভীর রাত
অন্ধকার ঘর
স্বামী স্ত্রী বিছানায়
পরস্পরের পেছন ফেরা
দুজনই মাঝে মাঝে মুচকি হাসে
মাঝে মাঝে দুজনারই ভ্রুকুঞ্চন মোবাইলের ম্যাসেঞ্জারে
মোবাইলে আলোতে অন্ধকার ঘরে দূর থেকে দুজনকে আধো ভৌতিক লাগে
দুজন খুব মেতে আছে মোবাইল হাতে
পরস্পরকে পেছন দিয়ে
ভার্চুয়ালে;

অথচ একটু আগেও এরা ছিলো দুজন দুজনার বাহুডোরে
দুজন দুজনার শরীরে শরীরে
অস্থির কামে
ভালোবাসা না শরীরের টানে?
কে জানে?
কে জানে?

রাগমোচনের পর কিই বা করার থাকে?
কাম মিটে গেলে শরীর কি আর ভালো লাগে?
কোন রাতে কাম না মিটলেও সেই একই দৃশ্য
দুজন মোবাইল হাতে ভার্চুয়ালে
পরস্পর পেছন ফিরে,
রাত গভীর হতে থাকে
ঘর অন্ধকার
দুজন দুপাশ ফিরে শুয়ে থাকে
ঘুমে চোখ বুজে আসার আগ পর্যন্ত মোবাইল হাতে;

আচ্ছা! এরা কি ভার্চুয়ালে প্রেম করে?
নাকি এরা অন্য নারী কিংবা অন্য পুরুষের প্রতি আসক্ত?
এরা দুজন তো দুজনার হাতের নাগালে
মনের নাগালের কি অনেক দূরত্ব?
আচ্ছা! স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা মানেই কি কাম?
শরীর মিটে গেলে কিংবা না মিটলেও কেন এরা রাত জেগে থাকে?
বাস্তব জীবন রেখে কিসের আসায় প্রতিদিন রাত জাগে ভার্চুয়ালে?
রাত গভীর হলেই এদের মনের মাঝে কি জানি এক অতৃপ্তি
কি জানি এক অস্বস্তি গলার ভেতর কাঁটার মত খচখচ করে
দুজন রাত জেগে থাকে দুদিক ফিরে মোবাইল হাতে, ভার্চুয়ালে,
এ কাহিনী কি শুধুই এদের?
উঁহু!
আমার
তোমার
তার ও তার
প্রতিটা ঘরে ঘরের;

একদিন হয়তো শুধুই ভার্চুয়াল থাকবে
সম্পর্ক মরে যাবে
মরে যাবে ভালোবাসা;

আমরা এটা জানি,
তুমি
আমি
আমরা
তোমরা
প্রত্যেকেই জানি,
তবুও নির্ঘুম রাত কাটাই ভার্চুয়ালে চোখ রেখে,

প্রমাণ চাও?
আয়নায় তাকাও
কিংবা মোবাইলের সেলফি ক্যামেরায়,
দেখতে পাচ্ছ নিজেকে?
বিশ্বাস হলো তো এখন!
আরে বোকা, এবার আমাকে দেখ
সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো আমিই
দেখ না ঘুম রেখে রাত জেগে ভার্চুয়ালে কেমন কবিতা বুনছি!
হিপোক্রেসির চূড়ান্ত তো আমিই;

ঘুমাতে ঘুমাতে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলাম
ঘুমাতে ঘুমাতে একবার তোর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিলাম;
একদিন,
একদিন কি নিদারুণ ভাঙচুর ভালোবাসায় তোকে আপন করেছিলাম,
একদিন ঘুম হতো না তোর স্পর্শ ছাড়া
অথচ দেখ!
আজ ঘুম আসে না ভার্চুয়ালের স্পর্শ ছাড়া,
তোর ঘুমন্ত মুখটায় তাকিয়ে নিজের ভেতর কেন জানি আরেকবার ভাঙচুর ভালোবাসা উপলব্ধি করে
নিজেই হিপোক্রেট বনে গেলাম।









সম্পর্কের সাতকাহন





সম্পর্কের সাতকাহন
- যাযাবর জীবন


সম্পর্কগুলো বড্ড খিটমিটে
বিশেষ করে সাংসারিক
আরো নির্দিষ্ট করে নারী কেন্দ্রিক;

আমার মা তোমার মা তার মা ওর মা
আমার স্ত্রী তোমার স্ত্রী তার স্ত্রী ওর স্ত্রী
আমার বোন তোমার বোন তার বোন ওর বোন
আমার মেয়ে তোমার মেয়ে তার মেয়ে ওর মেয়ে
এরা শুধুমাত্র সংসার করে
কারো সাথে কারো নাই বন্ধন
একমাত্র মা-মেয়ের মিল আছে
আর বাকি কেও কারো নয় আপন;

আমার দাদীর বনে নি আমার বাবার দাদীর সাথে
আমার মার বনে নি আমার দাদীর সাথে
আমার বোনের বনে নি তার শাশুড়ির সাথে
আমার মেয়ের বনে নি তার শাশুড়ির সাথে
অথচ এদের সবাইকে নিয়েই পারিবারিক বন্ধন;

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটা মেয়ের ক্ষেত্রেই একমাত্র মায়ের বাড়ি আপন
মামা মামী চাচা চাচী খালা খালু ফুপু ফুপা
তাঁদের সন্তান
তাঁদের সন্তানের ঘরের সন্তান
আপন ভাইবোন
তাঁদের ছেলেমেয়ে
তাঁদের ছেলেমেয়ের ঘরের ছেলেমেয়ে
মায়ের বাড়ির প্রত্যেকেই প্রতিটা মেয়ের আপন,
আমার মা তোমার মা তার মা ওর মা
আমার স্ত্রী তোমার স্ত্রী তার স্ত্রী ওর স্ত্রী
আমার বোন তোমার বোন তার বোন ওর বোন
আমার মেয়ে তোমার মেয়ে তার মেয়ে ওর মেয়ে
প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সারাটা জীবন;

অথচ একটা মেয়েরা জীবনের সিংহভাগ সময় কাটে শ্বশুর বাড়িতে
শাশুড়ি ননদ দেবর জা
প্রতিটা সম্পর্কের সাথে লড়ে লড়ে
সারাটা জীবন
এদের কাছে শুধুমাত্র স্বামী সন্তান আপন,
আমার মা তোমার মা তার মা ওর মা
আমার স্ত্রী তোমার স্ত্রী তার স্ত্রী ওর স্ত্রী
আমার বোন তোমার বোন তার বোন ওর বোন
আমার মেয়ে তোমার মেয়ে তার মেয়ে ওর মেয়ে
প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সারাটা জীবন;

আমার মা কারো কন্যা
তার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ শাশুড়ি ননদের সাথে দা কুমড়া,
আমার স্ত্রী কারো কন্যা
তার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ আমার মা বোনের সাথে দা কুমড়া,
আমার পুত্রবধূ কারো কন্যা
তার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ আমার স্ত্রীর আর মেয়ের সাথে দা কুমড়া,
আমার বোন আমার মায়ের কন্যা
আমার মায়ের সাথে চরম বনিবনা
অথচ তার শাশুড়ি ননদের সাথে দা কুমড়া,

আমার বাবা তোমার বাবা তার বাবা ওর বাবা
আমার তোমার তার ওর বাবার বাবা
আমি তুমি সে ও
আমার ছেলে তোমার ছেলে তার ছেলে ওর ছেলে
আমার তোমার তার ওর ছেলের ছেলে
প্রত্যেকটা পুরুষই ভুক্তভোগী
যার যার মা ও স্ত্রীর নিত্য খিটিমিটিতে
যার যার সংসার জীবনে,
অথচ আমার তোমার ওর তার সংসারে
প্রতিটা নারীই আমাদের একান্ত আপন,
আমার দাদি
আমার মা
আমার স্ত্রী
আমার মেয়ে
আমার বোন
প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছে নিজেদের মধ্যে
গলা ছেড়ে
কিংবা ঠাণ্ডা লড়াইয়ে,
আর যুগ যুগ এভাবেই চলে আসছে আমাদের
প্রতিটা পরিবারের সাংসারিক সম্পর্কের সাতকাহন;

একটি মেয়েও কি বলতে পারবে আমি শ্বশুর বাড়ি নিয়ে খুশি?
একজন পুত্রবধূও কি বলতে পারবে শাশুড়ির সাথে খুব ভালো সম্পর্ক!
একজন শাশুড়িও কি বলতে পারবে তার পুত্রবধূই শ্রেষ্ঠ!

যদি বলতে পারে তবে আমি বলব
একবার আয়নার সামনে দাঁড়াও
তারপর জোড় গলায় আয়নার প্রতিচ্ছবি'কে সত্যি কথা বলো;

ও কি?
আয়নাটা থেকে প্রতিচ্ছবি কোথায় উধাও হয়েছে?

আসলে নিজেকে মিথ্যা বলা যায় না,
কোথায় আমাদের পারিবারিক বন্ধন?












একদিন হঠাৎ



একদিন হঠাৎ
- যাযাবর জীবন


একদিন তোর চোখ চেয়ে চেয়ে
বসে থাকতাম সারাদিন চায়ের কাপে
তুই সামনে বসে নখ খুঁটতি লজ্জায়
আর চা ঠাণ্ডা হতো তোর কাপে,
একদিন আমি সিগারেট ঠোঁটে
সারাদিন গাছে হেলান দিয়ে
তুইও বসে থাকতি দিয়াশলাই হাতে
গায়ে অলস হেলান দিয়ে,
একদিন আমি অকারণ রাস্তা-হাঁটা
সূর্য মাথায় করে
তুইও অকারণ আমার পাশেপাশে
দুপুর রোদে পুড়ে পুড়ে,
একদিন আমি খোলা মাঠে শুয়ে
ঝুমঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
তুই বুকের ওপর বড্ড শুয়ে থাকতি
যেন আমার ছাতা হয়ে হয়ে,
একদিন আমি সারারাত জেগে জেগে
গায়ে হিমের ডানা
তুইও নির্ঘুম পাশেপাশে আর
চাঁদটা হয়ে যায় জ্যোৎস্না,
প্রতিদিন পাশাপাশি থেকে থেকে
তুই ভালোবাসা হয়ে গেলি
তুইও তো আমায় ভালোবেসে বেসে
সারাটা জীবন জড়াজড়ি হয়েছিলি;

একদিন সময়টা থমকে যাবে
আর থমকে যাব আমি
তুই হঠৎই চমকাবি, আমার দিকে চেয়ে
চোখ কাঁদবে তোর জানি
খুব শীগগির আমি ঘুমবো
একদম চোখ বন্ধ নিঃশব্দ
অস্থির হবি তুই, হবি অশান্ত
তবুও শুনবো না কান্নার শব্দ।








অন্ধকারের ক্ষুধা




অন্ধকারের ক্ষুধা
- যাযাবর জীবন


শরীরে বড্ড ক্ষুধা;

আচ্ছা!
ক্ষুধা কি শরীরে?
নাকি পেটে?
তবে কেন কাম ঝরে চোখে?

এই যে এত এত ভালো ভালো প্রেমের কথা!
কত কত রাত জেগে কত কত জ্যোৎস্না
কত কত সময় নিয়ে চোখাচোখি কথা
কত ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ
তারপরই না একটুকু ছোঁয়াছুঁয়ি
কিছুদিন হাতে হাত
চোখেচোখে কি এক অনুনয়!
আরেকটু সময়
একটু অগ্রসর চায়ের কাপে
হাতে হাত খেলতে খেলতে হাত চলে যায় গালে
গালে হাত বুলোতে বুলোতে স্পর্শ ঠোঁটে
প্রথমে একটুখানি হাতের স্পর্শ
তারপর আরেকটু সাহস
ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই ভালোবাসার আদর;

এভাবে আরো কিছু দিন
তারপর তো কামনা
ডাক দেয় বিছানা,
ওটুকু যেতে কারো মাস লেগে যায়
কারো আরেকটু বেশী সময়,
দিনে দিনে বিছানা ডাকলে তাতে ভালোবাসা কোথায়?
ও তো শুধুই শরীরে শরীর;

এই যে এত চেষ্টা
এত এত সাধনা
প্রেমের আলাপন
ভালোবাসার কাব্য কথন,
পরিণতিতে বিছানা?
ধ্যাত!
বড্ড সস্তা হয়ে গেলো না?

আধাঘণ্টার শরীর ছানাছানি
দশ সেকেন্ডের রাগ-মোচন
তারপর দুজন দুপাশ ফিরে ক্লান্তির ঘুম,
ভালোবাসার কাব্যে মাঝে কোলবালিশটা বড্ড বেমানান;

এই যে চাঁদ, চাঁদনি আর জ্যোৎস্না
এই যে মেঘ, বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা হাওয়া
এগুলো কিছু না?
তবে কি রাগ-মোচনের আগের অনুভবটাই ভালোবাসা?

আমি ভালোবাসার অনুভূতিটাই বুঝতে পারি না
আমার কাছে কামই প্রেম
অন্ধকারের ক্ষুধা
তারপর গভীর নিদ্রা নেমে আসে ক্লান্ত শরীরে;

রতি-ক্লান্ত শরীর তো ঘুমায়
তবুও কেন দুচোখ জেগে জেগে শার্সির ওপাশের অন্ধকার দেখে?

কিছু কিছু প্রশ্নে উত্তর জানা হয় না।







একাকীত্বের মধ্যরাত




একাকীত্বের মধ্যরাত
- যাযাবর জীবন


কোথায় রে আকাশ?
মনের ভেলায়;

মন কোথায় থাকে?
বুকের খাঁচায়;

চাঁদ কোথায়?
চাঁদনি রাতে;

সূর্য কোথায়?
সকাল হলে;

আচ্ছা! দিনের বেলায় কি তারা গোনা যায়?
সূর্য দেখা যায় রাতের আকাশে?
অমাবস্যায় কি চাঁদ হাসে?
দিনের আকাশটা তো নীল হয়ে থাকে তাহলে রাতের আকাশ কেন কালো?

আমি আকাশ ছুঁতে চেয়েছিলাম
তুই ছুঁতে চেয়েছিলি আমায়
তোর চাওয়া পূর্ণতা পেলেও
অপূর্ণ রয়ে গিয়েছি আমি,
মন কি আর ছোঁয়া যায় রে?
মন তো আকাশই,
তোর আকাশ;

তুই ভালোবাসা না ছুঁয়েই আমায় ছুঁয়ে দিয়েছিস
শরীর তো পেয়েছিলি!
আমি কি পেয়েছিলাম?
শরীরে কি আর ভালোবাসা থাকে রে?
আমি তো আকাশ ছুঁতে চেয়েছিলাম
ছুঁতে চেয়েছিলাম তোর মন;

দেখ! আমার এই অপূর্ণতার মাঝে তুই কত দূরে সরে গিয়েছিস!
এই যে তুই আমার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছিলি
ধরে রাখতে পেরেছিস কি আমায়?
আরে বোকা! ভালোবাসা ছাড়া কি শরীর ধরে রাখা যায়?

আজ কত দূরে আমি?
কত দূরে তুই?
তোর কি আজো আমার কথা মনে হয়?
আমার কিন্তু প্রায়শই তোর কথা বড্ড মনে হয়,
যখন জ্যোৎস্না থাকে মধ্যরাতের আকাশে
আর আমার ঘুমগুলো সব জ্যোৎস্নায় ভাসে
আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

কত কতদিন হয়ে গেলো দেখি নি তোকে!
আমার আকাশ কেমন আছে?
কেমন আছে তোর মন?

আমি ভালো নেই রে
ভালো নেই
ভালো নেই
আজ জ্যোৎস্নাভাসা মধ্যরাতে;

আজ বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো তোর সাথে
তোকে আর কোথায় পাব বল?
তাই খাতায় কলমে মনের সাথে না হয় করলামই একটু ছল,
না হয় কবিতার ভাষায় কিছু দুঃখ ওড়ালাম
না হয় চাঁদনি রাতে কিছু জ্যোৎস্না পোড়ালাম;

জানিস! একাকীত্ব না বড্ড কাঁদায়।






নিক্তির পরিমাপ



নিক্তির পরিমাপ
- যাযাবর জীবন


তুই প্রায়শই জিজ্ঞাসা করিস
ভালোবাসো?

আমি উত্তরে বলি বাসি রে বাসি;

পরক্ষণেই তোর প্রশ্ন
কতটুকু?

এ প্রশ্নটাই আমায় বড্ড বিব্রত করে,
আমি আসলে কখনোই ভেবে দেখি নি কতটুকু
ভালোবাসা পরিমাপের কোন নিক্তিও আমার কাছে নেই;

যদি আমি তোকে বলি মেঘের মত ভালোবাসি
তবে কি আসলে ভালোবাসা হয়?
মেঘ তো বাতাসের সাথে সাথে উড়ে যায়
যখন তখন যেখানে সেখানে
আমার ভালোবাসা তো শুধুই তোতে;

যদি বলি বৃষ্টির মত ভালোবাসি!
আরে বৃষ্টি তো ঝরে গেলেই শেষ হয়ে যায়
আমার ভালোবাসা কি শেষ হবার?

যদি বলি জ্যোৎস্নার মত ভালোবাসি!
কিন্তু অমাবস্যায় জ্যোৎস্না তো হারিয়ে যায়,
আমার ভালোবাসা কি হারাবার?

যদি বলি দিনের মত ভালোবাসি!
তবে তো বলতে হয় দিন অন্ধকারে মিলিয়ে যায়,
আমার ভালোবাসা কোথায় মিলায়?

যদি বলি রাতের মত ভালোবাসি!
আরে আরে! রাত তো কালো
আমার ভালোবাসার পুরোটাই আলো;

আচ্ছা!
তুই কি আকাশ পরিমাপ করতে পারিস?
সাগরের জল?
তবে কেন আমার ভালোবাসা পরিমাপ করতে যাস?

আরে বোকা, ভালোবাসা কি নিক্তিতে পরিমাপ করা যায়?
ভালোবাসা তো বুকের গভীরে
হৃদয়ের খুব ভেতরে
তবে কেন পরিমাপ করতে চাস?
খুব বেশী জানতে ইচ্ছে হলে না হয় বুক চিড়ে দেখ
ওখানে পুরোটাই তুই
রক্তের সাথে মিলেমিশে একাকার;

ভালোবাসা পরিমাপ করতে হয় না,
শুধু ভালোবাসতে হয়।








একার জীবন



একার জীবন
- যাযাবর জীবন


একদিন তুই ছিলি
একদিন আমি
আর আমাদের মাঝে অনেক অনেক ভালোবাসা;

ভালোবাসার মাঠে ফসল হয়
ভালোবাসার গাছে ফল ধরে,
তারপর গোলা ভরা ধান
ঝুড়ি ভরা ফল
সন্তান সন্ততি
সংসার
জীবন আনন্দময়;

তারপর একদিন ঝড় ওঠে
একদিন খুব শিলাবৃষ্টি
ফসলের মাঠ পানিতে সয়লাব
ফলগুলোতে শিলার আঘাত
জীবন চলার পথে অর্থের পদাঘাত
কোথায় কোথায় জানি স্বার্থের আঘাত;
কার জীবনে উত্থান পতন নেই?
তাই বলে কি বাবা মাকে এতটাই দূরত্বে দিতে হয়?
বৃদ্ধাশ্রম আজকালকার ঘরে ঘরের পরিণয়;

আমাদের জীবনে আসলে কেও নেই
এখন শুধুই তুই আর আমি
অর্থ আর স্বার্থের টানাপোড়নে বাকি সবাই পর
তাও তো একসাথে আছি এটাই বা কম কিসে?
না হয় খুব সাধারণ এক বৃদ্ধাশ্রমের আবাসে;

একটা কথা বলি শোন,
এখন আমি ছাড়া সংসারে আর সবাই'কে ভুলে যা
তবেই পুরনো স্মৃতি তোকে আর কাঁদাবে না;
আর যেদিন আমিও থাকবো না সেদিন ভেবে নিস
তোর আপন কেও ছিলোই না;

মানুষ একা আসে
একাই যায়
মাঝখানে স্বামী-স্ত্রীর হাত ধরাধরির অনুভূতি
আর মন ছোঁয়াছুঁয়ির অনুভব,
তারপর আবার একার জীবন
মাটি হওয়া পর্যন্ত।








রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শুদ্ধ ব্যাকরণ




শুদ্ধ ব্যাকরণ
- যাযাবর জীবন


প্রায়শই আঙুলটা তুলি
এর দিকে
ওর দিকে
তার দিকে
তোর দিকে,
অকারণে দোষ ধরতে;
কখনো খেয়াল করে দেখাই হয় নি
তিনটা আঙুল ঈশারা করে আছে আমারই দিকে,
বৃদ্ধাঙ্গুলি কখনো আকাশের দোষ ধরে কখনো মাটির
জীবনের সকল ভুল ব্যাকরণ আঙুলের ভুল ইশারাতে
আর কানফাটা ভাঙনের শব্দ
বিশ্বাসের
সম্পর্কের
জীবনের;

ইশশ!
সেদিন তোর দিকে আঙুল তোলার আগে আয়নায় তাকালে
আজ জীবনটা বড্ড অন্যরকম হতো রে!
তোর একটা ভুল ধরে দিতে গিয়ে আমি নিজেকে শুধরে নিতে পারতাম অন্তত তিনবার;
কানে তালা লাগাতো না ভাঙনের শব্দ;

একবার খুব শুদ্ধ হতে ইচ্ছে করে জীবন গড়নে,
একবার জীবনের শুদ্ধ ব্যাকরণ শিখতে ইচ্ছে করে শুদ্ধ আঙুলি হেলনে।





চল পেছন থেকে একবার আয়না দেখি



চল পেছন থেকে একবার আয়না দেখি
- যাযাবর জীবন


ভুল থেকেই মানুষ নাকি শিক্ষা লাভ করে
অথচ আমরা ক্রমাগত ভুলটাই শিখছি;

সমস্যার মূল হচ্ছে
আমরা ভুল স্বীকার করি না,
বরং খুব বিরক্ত হই কেও আমাদের ভুল ধরিয়ে দিলে;
অথচ আমরা নিজেরা কি করি?
অন্যের ভুল ধরার জন্য মুখিয়ে থাকি
ছিদ্রাহ্নেষণে আমাদের জুড়ি মেলা ভার
আয়নায় কিন্তু পেছনটাও দেখা যায়
তবে সখ করে কে আর নিজের পেছনের বিশাল গর্তটা দেখতে চায়?
ইচ্ছাকৃত তাকানো হয় না আয়নায়
কখনো হঠাৎ চোখ পড়ে গেলে চট করে আকাশ দেখি;

মজার ব্যাপার কি জানো?
জীবনে যখনই কিছু ভুল করেছি
কিছু না কিছু শিখেছি,
হোক নিজে নিজে ভুল করে
কিংবা কেও ধরিয়ে দিলে;

ছিদ্রাহ্নেষণে কি নিজের ছিদ্র বুজে যায়?
ভুলের সমাধিতে অবগাহন আর কতকাল?

চল পেছন থেকে একবার আয়না দেখি।






নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে




নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে
- যাযাবর জীবন


আমার পূর্বের তেমন কোন স্মৃতি নেই,
শুধু ফাঁকা মাথায় তুইভরা অবশ বিবশ একটা অনুভব;

মাঝে মাঝে খুব হঠাৎ হঠাৎই একটি দুটি স্মৃতির আয়না চোখের সামনে,
তখনই, ঠিক তখনই খুব অসহ্য হয়ে উঠি
চোখের সাথে কথা বলি, তোকে খুঁজি
কানের সাথে কথা বলি, তোর শব্দ শুনতে চাই
মনের সাথে কথা বলি
কোথাও তুই নাই;

যখন খুব গরম ছোটে, তোরা বলিস গ্রীষ্মকাল
আমার একটু একটু মনে পড়ে প্যাচপ্যাচে ঘামে ভেজা দুটো শরীর
আর তুই লেপ্টে আছিস আমার বুকে,
আচ্ছা! নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে?

যখন খুব শীত অনুভব, তোরা বলিস শীতকাল
আমার একটু একটু মনে পড়ে লেপের তলায় নগ্ন দুটো শরীর
ওম নিচ্ছে দুজন দুজনে
আচ্ছা! নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে?

যখন ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি, তোরা বলিস বর্ষাকাল
আমার মনে পড়ে ছাদের ওপর কাকভেজা দুটো শরীর
হাসছে, খেলছে, নাচছে, তারপর দুজনার নগ্ন শরীরেও বৃষ্টি নামছে
আচ্ছা! নগ্নতায় কি ভালোবাসা আছে?

আমি শরীর বুঝি না
কাম বুঝি না
প্রেম বুঝি না
বুঝি শুধু তোকে,
যখনই তোর কথা মনে পড়ে
ইচ্ছে করে ওমে ওমে ভিজে যাই তোতে;

আচ্ছা!
একে কি ভালোবাসা বলে?






দুজনে দুজনে, মনে মনে



দুজনে দুজনে, মনে মনে
- যাযাবর জীবন


মন থাকলে যে কারো সাথে
যে কোন সময়
যে কোন কারণে
প্রেমে তো পড়াই যায়,
ইচ্ছে করলেই কি প্রেম করা যায়?
প্রেম হয় দুজনে
প্রেমে পড়ে দুজনে, মনে মনে;

ইচ্ছে করলেই কি ভালোবাসা যায়?
ভালোবাসতে হলে দুজন লাগে
ভালোবাসতে হলে দুটো মন লাগে
ভালোবাসতে হলে দুটো মনের এক হতে হয়
তবেই না ভালোবাসা হয়;

আমি কতবার প্রেমে পড়েছি রাতের
কত কত ভালোবেসেছি চাঁদনি
কতবার মন দিয়েছি বৃষ্টিকে
সবই একতরফা
আমার মনের অভিলাষ
কেও তারা বলে নি আমার সাথে প্রেম কর
আমাকে ভালোবাস;

ইচ্ছে হলেই মনে ভালোবাসা আসে
সেটা কি ভালোবাসা হয়?
ভালোবাসতে হলে দুজন লাগে
দুপক্ষের ভালোলাগাতেই না ভালোবাসা হয়;

আমার একতরফা প্রেমে তোর কি আসে যায়?
আমার একতরফা ভালোবাসা স্বপ্নেই রয়ে যায়,
তুই তখন অন্য কোনো খানে
তুই তখন অন্য কারো সনে,
ভালোবাসা পোড়ায়।





শরীরে কি আছে?




শরীরে কি আছে?
- যাযাবর জীবন


শরীরে কি আছে?
তবুও পুরাটাই শরীর;

শরীরের উপরিভাগে চামড়া
কারো সাদা
কারো কালো
কারো বাদামী;
আবৃত করে রাখে হাড়গোড় কংকাল
তার নিচে রক্তমাংস
বৃক্ক, কিডনি, পাকস্থলী, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র
চোখ আছে, নাক আছে, কান আছে
আর আছে ক্রমাগত ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকা একটুকরো মাংস
তোমরা বলো হৃদপিণ্ড;

এ যন্ত্রটি বড্ড অদ্ভুত
এর নিজস্ব কোন লজিক নেই
শুধু নানা রঙের অনুভূতি
নানা পদের আবেগ,
এটি কখনো অযৌক্তিক আবেগে নিজের পথে চলে
হৃদপিণ্ডের অযৌক্তিক আবেগ পুরুষ জাতির মাঝে একটু বেশীই,
হৃদয় কিন্তু কখনো কখনো বুদ্ধিমান হয়ে মস্তিষ্কের লজিক মানে
নারী জাতিতে এর বেশ ভালোই প্রমাণ মেলে;

শরীরে আসলে কিছু নেই
চামড়া, মাংস, হাড়গোড়
লজিক ভরা একটি মস্তিষ্ক
আর আবেগ ভরা একটি হৃদয়,
তোমরা মাঝে মাঝে মনের কথা বলো?
বলতে পার মন কোথায় থাকে?
হৃদয়ে না মস্তিষ্কে?
যত মন মনই করো না কেন!
আমাদের পুরো জীবনটাই শরীর নির্ভর;

কাম! সে তো মনেরই একটি অনুভব
শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে
কখনো কখনো জীবনকে করে তছনছ;
কামের বাস কোথায়?
হৃদয়ে না মস্তিষ্কে?
নাকি দুজনে একসাতে মিলেমিশে?
কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে?
মস্তিষ্ক করলে তাও সামলে উঠা যায়
হৃদয় করলেই বিপদ
মনে তো হয় হৃদয়ই কামের নিয়ন্ত্রক;

এত সর্বনাশ কেন চারিদিকে
শরীরে ও সম্পর্কে?

শরীরে কিছু নেই,
দলা দলা চর্বি
দলা দলা মাংস
লোলুপ নজর
আর আছে কাম,
আছে সম্পর্কের ভাঙন।








মানুষের ভেতরে পশু



মানুষের ভেতরে পশু
- যাযাবর জীবন


মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্ব লাগে
পশু হওয়া যায় খুব সহজেই;

পশুর খুব কাছে আসতে নেই
যে কোন সময় আঁচড়ে দিতে পারে
কামড়ে দিতে পারে
ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষতি করতে পারে,
বিশেষ করে মানব পশুর;

একদিন তুই কাছে এসেছিলি
আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে নষ্ট করেছিলাম তোকে
তারপর থেকে তুই নষ্টা মেয়ে,
আমার গায়ে কিন্তু কলঙ্ক লাগে নি;
আমি সেদিনও পশু ছিলাম
আজও আছি
মানব পশু;

শারীরিক ক্ষুধায় মনুষ্যত্ব কাজ করে না
সে পেটের ক্ষুধাই হোক
কিংবা কামের,
পেটের ক্ষুধা মিটে গেলেই কাম মাথা চাড়া দেয়
আর তখন সবাই পশু,
মানব পশু;

চামড়ার খাঁচায় কিছু হাড়গোড়
কংকাল এর ভেতর হৃদপিণ্ড
ওখানে লাল লাল রক্ত
মানুষ কিংবা পশুর,
কোন কোন হৃদপিণ্ড মনুষ্যত্ব ধারণ করে
তোমরা তাকে মানুষ বলো
আমার শুধুই ক্ষুধা
শুধুই পশুত্ব;

কোন এক সময় আমিও মানুষ ছিলাম
কিছু স্বপ্ন ছিলো চোখে
কিছু ভালোবাসা ছিলো হৃদয়ে,
স্বপ্ন ভেঙে যেতে সময় লাগে না
সময় লাগে না ভালোবাসা মরে যেতে,
আজ আমাকে দেখ!
মানুষের চামড়ার মোড়ানো কিছু রক্ত মাংস,
মন মরে মাটি হয়ে গেছে কবেই!
মনুষ্যত্ব মরে পশুত্ব,
এখন একমুষ্টি হৃদপিণ্ডে নিয়ন্ত্রণহীন পশুত্বের চাষাবাদ
আর অপেক্ষা শরীরটা মাটি হওয়ার;

আজ
কাল
কিংবা পরশু,

মানুষ হিসাবে কবর দিও কিন্তু!