হীরক রাজ্য
- যাযাবর জীবন
করোনা ভাইরাসে পৃথিবীব্যাপী তোলপাড়
এদেশে ওদেশে সেদেশে মৃত্যুর হাহাকার
ঘরে থাকার নির্দেশ দিলো প্রতিটা দেশের সরকার
করোনা থেকে বাঁচতে লক-ডাউন দরকার;
আমাদের দেশে আমরাও বেশ কিছুদিন যাবত আছি লক-ডাউনে
সময় কাটানো বড্ড মুশকিল
টেলিভিশন আর সিনেমা দেখে, পরিবারের সাথে গল্পে মেতে
কতটা সময়ই বা পাড় করা যায়!
এ সময় কিছু বন্ধু বান্ধব মিলে গ্রুপ করলো ফেসবুকে
যার উদ্দেশ্য হলো আমরা আবার ফিরে যাব বাল্যকালে
একই বৎসরে যারা পাশ করেছিলাম শুধু তারাই হবে মেম্বার
একজন রাজা হলো, আর কিছু মন্ত্রী পরিষদ গঠন হলো
সবার অলক্ষ্যে সেই পুরনো রাজনীতি ঢুকে গেলো!
অথচ আমরা চাই নি কোন রাজা
চাই নি রাজনীতি
বন্ধুত্বের মাঝে চেয়েছিলাম নির্মল আনন্দ
চেয়েছিলাম সমনীতি;
সমনীতি কি আর কোথাও আছে আজকাল?
সেই তো রাজা
সেই তো রাণী
সেই তো মন্ত্রী
সেই তো উজির
আর সেই পুরাতন রাজনীতি
অথচ আমরা চেয়েছিলাম সকলে মিলে এক সমনীতি;
কোন একদা রাজনীতির খেলায় ট্রাম্প নামে হবুচন্দ্র এক রাজা এলো
গোপাল ভাঁড় লজ্জায় কোন বনে জানি পালালো
উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী এলো কিম জং উন
নাকাল পৃথিবী দেখে মাথা ঘোরে বন বন বন
ধুরন্ধর এক প্রেসিডেন্ট এলো চিনে শি জিনপিং
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে দিলো ভাইরাসের দামামায় বাড়ি দিলো ঢিং
নিজের দেশের কিছু মানুষ বলি দিলো ভাইরাসের টোকায়
ট্রাম্প, বরিস জনসন, সারজিও মেটারেলা পড়ে গেলো ধোঁকায়
কাতারে কাতারে মানুষ মরতে লাগলো পৃথিবী জুড়ে
আমরা সবাই কোয়ারেন্টাইনের নামে বন্দী সকলে যার যার ঘরে;
তা যা বলছিলাম!
একঘরে থেকেও ফেসবুক গ্রুপে বেশ চলছিলো বন্ধুত্বের আড্ডা
বাধ সাধলো কিছু সভাসদ, কিছু রানীই যে তাদের সব
একদা আমি কিছু করল্লা দিলাম বন্ধুদের রেঁধে খেতে
রাণীরা রস চিপরে খেয়ে বলে ইশশ! বড্ড তিতে
মন্ত্রী পরিষদে বিচার বসলো করল্লার
বদল হলো করল্লার সাপ্লাইয়ার
রাজার কাছে সাপ্লাইয়ার আবেদন করলো আমি তো করল্লার রস খেতে দেই নি
রাজা বললো মন্ত্রী পরিষদ বিচার করে নি?
আমি বললাম বিচারে তো সাজা শূল! কিন্তু এ সাজা তো ভুল
রাজা হেসে বললো আমি তো পুতুল, ও হে আমি কাঠ পুতুল;
কিছু বন্ধু বান্ধব সবাই মিলে গড়েছিলো বন্ধুত্বের গ্রুপ
সংবিধান কিছু বানিয়েছিলাম, খেয়ে গেলো মন্ত্রীপরিষদের ভুত
আমরা ভোটের রাজনীতিতে বানাই নি রাষ্ট্রনেতা
পুতুল রাজা বলে আমার মুখবন্ধ, নেই কোন কথা
মন্ত্রী পরিষদে কিছু বন্ধু বান্ধব ছিলো
তাদের বললাম এ কি বিচার হলো?
মুখে কুলুপ এঁটে
তারা লজ্জায় লেপের নীচে,
প্রজা সাধারণের আসলে এ গ্রুপে কোন বক্তব্য নেই
মন্ত্রী পরিষদ নম নম করে রাণীগনই চালায় রাজ্য সেই
রাণীগন তবলায় তাল দেয় মন্ত্রীগন নাচে ধেই ধেই
আমাদের একটা রাজ্য আছে আসলে কোন রাজা নেই;
প্রতিদিন ভার্চুয়ালে শত শত গ্রুপ যে গড়ে!
প্রথম প্রথম খুব রমরমা, গ্রুপটা ভালোই চলে
তারপর অল্প কিছু হীরক মন্ত্রীসভার কুটচাল চালে
গ্রুপটা ধীরে ধীরে মুখ থুবড়ে পড়ে;
হীরক রাজা অনেক আশায় গড়েছিলো গ্রুপ
মন্ত্রীসভার কান্ড দেখে সেও হয়ে যায় চুপ
গ্রুপ ভাঙলে মত্রীসভার না কিছু যায়, না আসে
হীরক রাজার বুক ফেটে যায়, ভেতরে কাঁদে মুখে হাসে।
৩০ এপ্রিল, ২০২০
বিঃদ্রঃ এটি একটি কাল্পনিক হীরক রাজ্যের কাহিনী, কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী না।