শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

মেয়েরা কেমন?



মেয়েরা কেমন?
- যাযাবর জীবন

--------------------------------------------------

মেয়েদের শরীরে মায়ার অংশ অনেক বেশী,
ছেলেদের থেকে;
- ছেলেদের ক্রমাগত করে যাওয়া অন্যায়গুলোকে বারবার মাফ কিন্তু মেয়েরাই করে; তোমরা করতে কি?

মেয়েদের মনের হিংস্রতা অনেক অনেক বেশী,
ছেলেদের থেকে;
- কি বিশ্বাস হলো না? মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে কেড়ে নাও তো দেখি!

মেয়েদের সহনশীলতাও কিন্তু অনেক বেশী,
ছেলেদের থেকে;
- ক্রমাগত লাঠিঝাটা খেয়েও সংসার মেয়েরাই করে; তোমরা করতে কি?

মেয়েদের ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা অনেক অনেক অনেকগুণ বেশী,
ছেলেদের থেকে;
- সন্তান জন্মদানের ব্যথা কি যে অসহনীয়! তোমরা জানো কি?

বেশীরভাগ মেয়েরাই ভালোবাসে মন থেকে
বেশীরভাগ ছেলেরা শারীরিক;
- কামুক শব্দের বহুল ব্যবহার কি প্রমাণ করে? কামুকী শব্দটা জীবনে ক'বার শুনেছ?

তোমরা ভাবছ, ছেলে হয়েও কিভাবে মেয়েদের কথা এত বেশী জানি?
আমি আয়নায় আমাকে দেখেছি,
আর খুব কাছ থেকে দেখেছি আমারই কন্যা জায়া ও জননী।


৩০ মে, ২০২০

#কবিতা

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, কিছুটা এডিট করা









ঘন বিরহ



ঘন বিরহ
- যাযাবর জীবন

.........................................................

আজ অনেকদিন পর কেন জানি তোর কথা খুব মনে পড়ছে
কেমন আছিসরে তুই?
কোথায় আছিস?
কতদূরে?

আচ্ছা! কত, কতদিন হয়ে গেলো, দেখিনা বলতো তোরে?
দিন ক্ষণের হিসেব কে আর রাখে?
অথচ একদিন তুই পথ গুনতি আঙুলের কড়ায় কড়ায়
পথ গুনতাম আমি মূহুর্তের ভগ্নাংশের লহমায়,
কোথায় উধাও হলো সে দিনগুলো?
কতদূরে?

আজকাল ব্যস্ততায় আমি
হয়তো ব্যস্ত তুইও
যার যার অবস্থানে
যার যার কর্মস্থলে
কিংবা তুই পাক্কা গৃহিণী হয়ে কারো ঘরে,
তবুও খুব হঠাৎ হঠাৎই মাথার ভেতর কি এক চেনে চেনা অচেনা অনুভূতি পাক দিয়ে দিয়ে ঘুরে
খুব হঠাৎ হঠাৎই কারণে আর অকারণে তোর কথা মনে পড়ে;
আচ্ছা তোরও কি কখনো এমনি হয়?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে;

কখনো তোর সাথে চিঠি লেখার খেলাটা খেলা হয় নি রে!
অথচ প্রেমের খেলায় বড্ড পটু ছিলি তুই
খুব হঠাৎ হঠাৎই তোর মন ভালো তো ঠোঁট ভিজতো ঠোঁটে
আবার কারণে অকারণে তোর মন খারাপ তো কান্না ভিজতো চোখে,
মনে পড়ে?

এখনো কি তেমনই আছিস তুই?
এখন কার ঠোঁট ভেজাস খুব হঠাৎ হঠাৎ?
কান্না মোছার কে আছে আজকাল?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে,
কিভাবে জানব বল?
কোথায় তুই আজ?
আমা হতে বহু বহুদূরে;

প্রেম করলি, যেচে পড়ে তুই
বিচ্ছেদ, তাও তো তোরই রে!
কেন?
একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে রয়ে গেলো অন্তরে,
কখনো কারণটা জানা হবে কি?
উত্তরটা আমি সময়ের ওপরই ছেড়ে দিয়েছি;

আচ্ছা! এই যে আজ এত যুগ পরে তোকে চিঠি লিখছি!
চিঠিটা তো কখনো পোস্ট করাই হবে নারে!
কোনো হলুদ খামে ভরে,
কি করে করব বল?
এখন তো আর সেই লাল রঙ এর ডাকবাক্সর দিন নেই!
নেই তোর কোনও ঠিকানাও,
আজকাল কোথায় আর ডাকহরকরা?
চিঠিটা পাঠাবো কোথায় তাই বুঝছি না,
অবশ্য বোধবুদ্ধি আমার কখনোই তেমন ছিলো না
অর্ধমানব নামটা কিন্তু তোরই দেয়া;

তবুও আজ না হয় ঐ নীলের ঠিকানাতেই উড়িয়ে দিলাম চিঠিখানা!
যদি কখনো উড়ে তোর হাতে পড়েই যায়,
তবে এই অনেকগুলো কেন'র উত্তর জানিয়ে দিস আমায়;
দিবি তো?
উঁহু! আমি জানি তুই দিবি না
হয়তো মনে হাসবি
হয়তো মনে মনে বলবি
- সেদিন তোকে বিচ্ছেদ উপহার দিয়েছিলাম একটা ঘন বিরহের কবিতার জন্য
- এতদিন লাগলো লিখতে?

ঠিক বলছি কি?
তাও তো জানা হবে না।

২৯ মে, ২০২০

#কবিতা

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত


//////////////////////////////////////////////////////








ভার্চুয়াল সম্পর্কের বেড়াজালে



ভার্চুয়াল সম্পর্কের বেড়াজালে
- যাযাবর জীবন

...................................................

ভার্চুয়ালটা বড্ড অদ্ভুত এক জগৎ,
এখানে সবকিছুই অদ্ভুত;

ভার্চুয়ালটা কি?
নেটের এপারে আমি, ওপারে তুমি;

তবুও অদ্ভুত এই জগতে অদ্ভুত ভাবেই এক একজনের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে,
কারো কারো সাথে সম্পর্ক খুব আপন হয়ে যায়
কাওকে কাওকে না দেখেই খুব আপন মনে হয়
কাওকে কাওকে না দেখেই ভালোবাসা হয়ে যায়
এ ভালোবাসা'কে প্রেম বলো না;
স্নেহ, মায়া, মমতার সম্পর্ককেও কিন্তু ভালোবাসাই বলে
কাওকে ভাইয়ের মত আপন লাগে, কাওকে বোনের মত
কাওকে মেয়ের মত তো কাওকে কাওকে মায়ের মত,
আর কিছু সম্পর্ক থাকে যেগুলোকে নাম দেয়া যায় না
তবুও এরাই ভার্চুয়ালে খুব আপন হয়ে ওঠে, বন্ধুর মত
আমার সুখে আনন্দিত হয়, দুঃখে কাঁদে;

আর প্রেম? হ্যাঁ, তাও হয় কারো কারো মাঝে
তবে ওটিতে আমার বড্ড আপত্তি আছে
এটা যার যার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার
কারো হয়েই গেলে আমার কি বলার আছে?
তবে আমি নিজেকে এর থেকে সরিয়ে রাখি বহু, বহুদূরে,
খারাপ দিকগুলো নিয়ে না হয় আজ কথা নাই বা বললাম!

কখনো কখনো ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলো আপন হতে হতে সামনা সামনি হয়ে যায়
কখনো কখনো আরেকটু অগ্রসর হয়ে বাসায় আসা যাওয়া
কখনো কখনো বা আত্মীয়তা,
আর বাকী সম্পর্কগুলো রয়ে যায় ভার্চুয়ালে;
নেটের ভেতর হাসা, নেটের ভেতর কাঁদা
ভালো আর খারাপ লাগা অনুভবের এক অদ্ভুত সম্পর্কের বেড়াজালে;

তারপর একদিন হয়তো কেও একজন মেসেজ দিতেই থাকবে, দিতেই থাকবে
কোন উত্তর নেই এদিক থেকে;

মৃত্যুটা কিন্তু অদ্ভুত নয়, ওটা অবশ্যম্ভাবী
আসবেই একদিন, আজ কাল বা পরশু
একসময় জানাজানি হয়
মনখারাপ হয়
কেও কেও হয়তো দু ফোঁটা চোখের জল ফেলে
না দেখা এক ভার্চুয়াল বন্ধুর কথা মনে করে
তারপর একসময় ফিকে হয়ে আসে পুরনো স্মৃতি;
দিন গড়িয়ে মাস যায়
তারপর ভুলে যায়
নতুন কিছু সম্পর্ক এসে পুরনো সম্পর্ক'কে ঢেকে ফেলে নতুন আবরণে
আবার অদ্ভুত নতুন এক ভার্চুয়াল সম্পর্কের বেড়াজালে;

মৃত'কে কে আর মনে রাখে?
কিংবা মৃত সম্পর্ক'কে।


২৪ মে, ২০২০

#কবিতা

ছবি: নেট থেকে সংগৃহীত








স্থান সংকুলান



স্থান সংকুলান
- যাযাবর জীবন

................................................

কে বলেছে ভোঁতা অনুভূতিতে যন্ত্রণা আঁচর ফেলে না?
শুধু কি তীক্ষ্ণ অনুভূতির জন্যই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর বেদনা?
বাবা-মায়ের কষ্ট সন্তানরা কখনোই কি বোঝে না?
বাবা-মায়ের বোধহয় কষ্ট থাকতেই নেই, তাই না?

সন্তানের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে বাবা-মা
তাদের খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া; শেষ নেই তবুও আবদার
কয়জন সন্তানের মাথায় আসে! বাবার কতটুকু ক্ষমতা আছে দেবার?
কয়জন সন্তান মায়ের কান্না বোঝে যখন মেটাতে পারে না তাদের চাহিদার?

বিনিময়?
এটা ওটা সেটা খাওয়ার ক্রমাগত চাহিদা
এ স্কুল ভালো না ও কলেজে পড়বো না
জামা-জুতো, স্টাইলের তো নেই কোনো সীমা
নিত্যনতুন গ্যাজেটের অসীম চাহিদা
পড়ালেখা? - গোল্লা;
নেশা? - কোনটা না!
প্রেম? - ওটা তো মনে হয় আজকালকার ফ্যাশন
তারপর অপরিপক্ব প্রেমের পরিণাম নামে হাত-পা কাটাচ্ছেরা,
চাহিদা আর প্রাপ্তির ঘাটতি? - ইমোশনাল ব্ল্যাক-মেইল, আত্মহত্যার হুমকি
আরো কত কি?
কয়টা বলবো?

তারপর?
বিয়ের পর বাই বাই টা টা
তারপর বুড়োবুড়ি একা
মেয়ে বলে আমার শ্বশুর বাড়িতে সমস্যা
ছেলে বলে আমার বৌ এর সমস্যা
বুড়িটা বড্ড ক্যাটক্যাট করে
বুড়োটা করে জ্বালাতন
সময়ের গড্ডালিকায় গড়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রম
ওরে ছেলে!
ওরে ও মেয়ে!
তোরা না মায়ের নারী কাঁটা ধন!
বাবার কথা মনে আছে?
মনে আছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জোয়াল কাঁধে বাবার ঘামের ক্রন্দন!
হায় বৃদ্ধাশ্রম!

আজকাল বোধহয় অনুভূতি শুধু স্বামী আর স্ত্রী
বাবা-মা? বড্ড বোঝা;
সন্তান? - ওগুলোকে তো মানুষ করতে হবে!
ঘরের বড্ড সংকুলান;
ওরে আমার সন্তান!
এই যে বললি তোর সন্তানদের মানুষ করতে হবে!
তোরা মানুষ হয়েছিস কি?
তবে আমি কেন কাঁদি?

ভালোই হয়েছে তোর মা টা আগে আগে চলে গিয়ে
তার অনুভূতি বড্ড তীক্ষ্ণ ছিলো,
সইতে পারতো না তোদের কাণ্ডকারখানা
আমি বৃদ্ধাশ্রমের ছাদের দিকে চেয়ে আছি, আমার ভেজা চোখ কিছু দেখে না;

একটা সময় বোধহয় বাবা'দের অনুভূতি বলে কিছু থাকে না
কিভাবে থাকবে বল? তোরা সংসারে আসার পর থেকেই তো আমার ঘামের কান্না।

তবুও মাঝে মাঝে অনুভূতিগুলো কেন যে এত যন্ত্রণা দেয়?
অসার হয়ে আসা অনুভূতিগুলো;

আজকাল শরীরটা বড্ড খারাপ হয়, একা বিছানা থেকে উঠতে পারি না
এখানে একটা ছেলে আছে আমাকে দেখাশোনা করে
আমার মত আরো অনেক'কে
তাও সেবা তো করে! হোক না অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে!
তারও তো সংসার আছে
মানুষ করতে হবে তারও সন্তানকে;

বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধু দোয়া করি,
আমার সন্তানের সন্তানরা যেন মানুষ হয়
ওরা যেন বুঝতে পারে বাবা-মায়ের বেদনা
তা নইলে তো এক সময় বৃদ্ধাশ্রমেও কারো স্থান সংকুলান হবে না।

২৩ মে, ২০২০

#কবিতা











সরল পথ




সরল পথ
- যাযাবর জীবন

.........................................

ইদানীং প্রতিদিন চারিদিকে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি
শুনি আমরা শুনি
জানি আমরা জানি
তবুও আয়না থেকে মুখ লুকিয়ে রাখি
যদি ওখানে আমারই মৃত্যুর ছায়া দেখি!

জীবন আর মৃত্যুর দূরত্ব কত?
একটি মাত্র নিঃশ্বাস, তারপরই তো মৃত
এই যে চোখের সামনে প্রতিদিন শত শত
তবুও কি আয়না দেখি?
উঁহু! মুখ লুকিয়ে রাখি,
ওখানে মৃত্যুর ছায়া
আর কানে প্রতিধ্বনি;

এই যে প্রতিদিন রাকাতে রাকাতে সিরাতল মুসতাকিম বলি!
আসলে কি সরল সোজা পথে চলি?
আল্লাহ্‌ তায়ালা যাকে ইচ্ছে তাকে হেদায়েত দান করেন;
আমি হেদায়েত চেয়েছি কি?
আয়নাকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখি!
মুখ ঢাকছ কেন? ও কি! ও কি!

যারা সরল পথ কামনা করে, পথটা তাদের জন্য হয়তো বন্ধুর
তবে মৃত্যুটা কিন্তু সহজ
মুমিনের রূহ বের হতে সময় লাগে না, সোজা পথে;
তোমরা জানো, সবই জানো
তবুও কেন মুখ লুকিয়ে রাখো, মৃত্যু থেকে?

আরে বোকা! একটা মাত্র নিঃশ্বাস
ইমানদারের পরকালে বিশ্বাস,
এই যে এখন কথা হচ্ছে তোমাদের সাথে মনে মনে!
একটু পর হয়তো আমি মৃত্যুঘুমে!
কাল হয়তো তোমরাও জানবে
দায়সারা কেও কেও হয়তো ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন বলবে,

এরপর কিন্তু তোমার পালা, জানো কি?


২০ মে, ২০২০

#কবিতা









টাকা টাকা




টাকা টাকা
- যাযাবর জীবন

.........................................

টাকা টাকা টাকা টাকা টাকা............

টাকা টাকা করে জীবনটা শেষ করে দিচ্ছি, এক একজনা;
কি করব বলো?
টাকা ছাড়া তো জীবন চলেও না;

যার টাকা নেই সে বলে - "টাকায় কি না হয়?"
ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই শুরু হয়
- খাবারে টাকা
- পোষাকে টাকা
- যাতায়াতে টাকা
- মাথা গোঁজার ঠাঁই এ টাকা,
এমন কি শান্তিতে ঘুমাতে চাও? এসিটা চালাও;
বিদ্যুৎ বিল দেবে কে?
- ওখানেও যে টাকা!
অথচ ঘর্মাক্ত পরিশ্রমের ফসল - মাস শেষে হাত ফাঁকা;


আর যার টাকা আছে সে বলে - "টাকায় কি হয়?"
এই যে গাড়ি, বাড়ি, সহায়, সম্পত্তি, মিল, ফ্যাক্টরি!
- শান্তি কোথায়?
- ঘুম?
এসির বাতাস ওদের ঘুম আনাতে পারে না,
এই যে এক এক জনের কাড়ি কাড়ি টাকা!
তবুও কিন্তু একবারও বলে না
- আর লাগবে না,
টাকার পাহাড়ের ওপর টাকার পাহাড় চাপায়
অথচ মুঠোটা খোলে না;


বড় অদ্ভুত আমরা
কারো অভাবের তাড়নায় দীর্ঘশ্বাস
কারো টাকার চাপে নাভিশ্বাস
নিজেদের মাঝে দুটো শ্রেণী করে নিয়েছি
- হ্যাঁ, মানুষ, মানুষই তো আমরা;

আচ্ছা! কখনো পশুতে পশুতে শ্রেণিভেদ দেখেছ?
- কাক আর কাকে?
- শেয়ালে শেয়ালে?
- সিংহে সিংহে?
ওরাও লড়ে
এক টুকরো মাংসের জন্য লড়ে
একজোট হয়ে,
আর আমরা?
আমরা লড়ি টাকার জন্য
- নিজেদের মাঝে শ্রেণিভেদ করে;

দুটি শ্রেণীর মানুষই আমরা টাকার পেছনে দৌড়চ্ছি
দৌড়চ্ছি আর দৌড়চ্ছি
ঊর্ধ্বশ্বাসে,
দম ফেলার সময় কোথায়?
অথচ একদিন হুট করে মৃত্যু নামক এক অচিন অতিথি এসে হাত ধরে বলবে,
- চল!

ও হে মানুষ!
সাথে কতটুকু নিয়ে যেতে পারব?

কখনো ভেবেছি কি?


১৯ মে, ২০২০

#কবিতা














আমল



আমল
- যাযাবর জীবন

..........................................

আজকাল বড্ড গরম পড়ছে এখানে
এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে
আচ্ছা! মাটির ওপরেই যে এত গরম!
গরমটা মাটির তলায় কেমন হবে?
নাকি ওপর থেকে কিছুটা ঠাণ্ডা হবে?


আচ্ছা! তাহলে গরম দেশের কি অবস্থা এখন?
৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গরম?
ঘর থেকে কিছুক্ষণ বাইরে থাকলে তো চামড়া পুড়ে যায়
মাঝে মধ্যে আগুন ধরে যায় গাছে গাছে
তবে গরমটা মাটির তলায় কেমন হবে?
শরীরটা সিদ্ধ হতে কতক্ষণ সময় নেবে?
নাকি ওপরের গরম থেকে কিছুটা সহনীয় হবে?


ঠাণ্ডার দেশের কি অবস্থা?
মাইনাস ১০ থেকে -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঠাণ্ডা?
ঘর থেকে কিছুক্ষণ বাইরে থাকলে তো ফ্রস্টবাইট হয়ে যায়
চারিদিকে বরফ আর বরফ, যতটুকু চোখ যায়
ওখানে মাটির তলাটা কেমন ঠাণ্ডা হবে?
শরীরটা জমে যেতে কতক্ষণ সময় নেবে?
নাকি ওপরের ঠাণ্ডা থেকে কিছুটা সহনীয় হবে?


একদিন উত্তর জানব আমি
একদিন উত্তর জানবে তুমি
একদিন উত্তর জানা হবে আমাদের সবার
কিন্তু উত্তরটা জানানো হবে না আর তোমাদের কাছে এসে
ওখান থেকে ফেরা যায় না পৃথিবীতে,
যার যার সঞ্চয় তাকেই নিয়ে যেতে হয়
ঠাণ্ডার কাটানোর জন্য উষ্ণ আমল
গরম কাটানোর জন্য শীতল আমল
এক কথায় নেক আমল;

আমল কুড়ানোর সময়টা সীমিত এ পৃথিবীতে
আজ
কাল
কিংবা পরশু ডাক দিতে পারে মাটি,
কে কবে এক সেকেন্ড বেশী সময় পেয়েছে? ডাকে সাড়া দিতে,
কবর আজাব'কে ভয় করো;

কেও বদ আমল কুড়ায়
কেও নেক আমল
একবার পেছনে তাকিয়ে দেখিই ন!
কার কতটুকু, কি আমল কুড়ানো হয়েছে?
টিক টিক টিক টিক
সময় বয়ে যাচ্ছে
মাটি ডাকছে;
কবর আজাব'কে ভয় করো।


১৭ মে, ২০২০


#কবিতা







কথা-সংশ্লেষণ



কথা-সংশ্লেষণ
- যাযাবর জীবন

.................................

এই জানো?
সেদিন না আমাদের বাড়ির পেছনে বাঘ এসেছিলো?

কি?
হ্যাঁ! সত্যিই বলছি;

কে বলেছে?
পাশের বাসার ভাবী;

বিড়ালের বাঘ হতে সময় লাগে না
আমরা চিলের পেছনে আজো দৌড়ে চলেছি, কান উদ্ধারে;
অথচ মুখটাকে যদি একটু লাগাম দিতে পারতাম!

আরে বাবা! বিড়ালে আমার কি ক্ষতি করেছে?
কেন তাকে বাঘ হতেই হবে?

কি আসে যায় চিল উড়ে গেলে?
কানটা তো কানের জায়গাতেই আছে;

আরে, আমার কিছু আসে যায় না তো!
তবে ঐ আর কি!
মুখটা একটু চুলকায়;

শোনা কথায় আমরা বড্ড বেশী বিশ্বাস করি
তারপর হয় মুখের চুলকানি,
এর সাথে ওর সাথে কানাকানি করে আমার চুলকানি তো আগে সারি!

তারপর?
তারপর ওদের চুলকানি!

সে করে তার সাথে ওর সাথে
ও করে তাদের সাথে ওদের সাথে
এরা ওরা তারা তারা হতে হতে হতে হতে
কানে কানে ঘুরে আসতে আসতে এক সময়
কেও একজব আবার কানাকানি করে আমার সাথে,
খুব আশ্চর্য হয়ে শুনি
আম, কাঁঠাল হয়ে গেছে; আনারস হতে হতে।
আরে, আমার কথা না!
শোনা কথা;

একটা সত্যি কথা বলতে মানুষের বড্ড কষ্ট হয়
অথচ একটা মিথ্যা কথা ছোটে শব্দের বেগে,
কান থেকে কান হয়ে সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়
কথা সংশ্লেষণ হয় মুখের চুলকানিতে;

কথা-সংশ্লেষণ কাকে বলে জানো?
যে দানবীয় প্রক্রিয়ায় মানবের মাধ্যমে সবুজ একটা কথাকে অন্ধকারের উপস্থিতিতে
মুখ ও কানের দ্বারা সমালোচনার বিক্রিয়ায় দুর্গন্ধ নির্গত করে রংধনু রঙে রাঙিয়ে
জনে জনে কানাকানি করে মুখের চুলকানি বন্ধ করে;
আরে, আমার কথা না!
শোনা কথা।


১৬ মে, ২০২০

#কবিতা







কবিতা লিখব কি করে?




কবিতা লিখব কি করে?
- যাযাবর জীবন

…………………………………

সবাই কি আর কবিতা পড়ে?
কেও কেও পড়ে,
যারা পড়ে তারা বুঝেই পড়ে
আর বাকিরা চোখ বুলায়, খুব অবহেলায়;

কেও ভাত রাঁধে কেও রুটি বানায়
তরকারি কিন্তু সবাই চাখে
রাঁধুনি হয় কজনা?
তোমরা ঐ যে মাস্টার শেফ, মাস্টার শেফ খেলো!
কোটি টাকা খরচ করে ঢাক, ঢোল, ডামামা পিটিয়ে অনুষ্ঠান করো!
আরে বাবা যতই বাইরে চাখো! মা এর রান্না না খেলে কি আর মন ভরে?
কিংবা যার মা নেই সে মাষ্টার শেফের রান্না খেয়ে এসেও
বৌ এর রান্না চাখে, হাত চেটেপুটে;
ধ্যাত! দিলাম তো গুবলেট করে!
বাংলার মাঝে ইংরেজি একটা শব্দ ঢুকিয়ে দিয়ে
আমি আসলে লিখতেই জানি না
কবিতা তো অনেক দূরে!

আমার আঁকিয়েদের অনেক হিংসে হয়
কি সুন্দর সাদা ক্যানভাসে রঙ ফুটিয়ে তোলে!
নীল নীল বেদনাগুলো
লাল লাল ক্ষরণগুলো
জলরঙে চোখের জল আঁকে
সাদা আর ধুসর মিলিয়ে মেঘ
আরো কত কি?
আচ্ছা! ওদের আর্টিস্ট বলে নাকি?
এই ধ্যাত! আবার দিলাম তো ইংরেজি ঢুকিয়ে
বাংলাটা আজো শেখাই হলো না
কবিতা তো অনেক দূরে!

আমি কবিতা বুঝি না
কখনো কবিতা লিখিই নি,
মনের ভেতরের কিছু শব্দ গুঞ্জন করে
- কিছু শব্দ আসে মেঘের থেকে
- কিছু শব্দে ডাকে পাখি
- কিছু শব্দ আসে প্রকৃতি থেকে
- নৈঃশব্দ্যরও কিন্তু অনেক শব্দ থাকে
- আর কিছু কিছু শব্দ থাকে মনের অনুভূতিতে
আমি শব্দগুলোকে সাদা কাগজে কাটাকুটি করি
শব্দগুলো দিয়ে মনে মনে কথা বোনার চেষ্টা করি
অর্ধেক কথা বুঝি বাকিটা নিজেই বুঝি না
না বোঝা অর্ধেক কথাগুলো মাথার ভেতর কেমন জট পাকিয়ে যায়
বোধ্য অর্ধেক কথাগুলোকে কেও কেও কবিতা বলে
আর বাকি লোকেরা আমায় ডাকে, অর্ধমানব বলে;

একদিন মেয়েটা বিকেলে আম ভর্তা বানিয়ে নিয়ে এলো
আমি বুঝে নিয়েছিলাম তার হাতখরচে টান পড়েছিলো
বললাম মানিব্যাগ পকেটে আছে, সে ফিক করে হেসে দিয়েছিলো
আচ্ছা! ঐ হাসিটার মূল্য কি টাকা থেকে বেশী?

একদিন ছেলেটা দুপুরে মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো আর বন্ধুর জুতোর গল্প করছিলো
আমি মনে মনে হেসেছিলাম, বিকেলে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম মার্কেটে;
কোন জুতাটা কিনবি বাপ? তার খুশি দেখে কে?
আচ্ছা! ঐ খুশিটা কি কোথাও কিনতে পাওয়া যায়?

একদিন দুপুরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো
বৌ বলছিলো ওর মার স্পেশাল খিচুড়ির কথা
আমি বুঝে নিয়েছিলাম, গাড়ি বের করে ওকে নিয়ে সোজা শ্বশুর বাড়ি
আচ্ছা! আনন্দ কি টাকায় কেনা যায়?

একদিন মা বলেছিলো
আজ রাতে একটু তাড়াতাড়ি ফিরিস বাবা
আমি বুঝেছিলাম আমার পছন্দের কিছু রান্না হবে
আমি বিকেল বেলায়ই ফিরে এসেছিলাম, বাসা ইলিশের গন্ধে ম ম করছিলো;

জীবনে মাত্র একদিনই বাবা বলেছিলো
আজ অফিসে না গেলে হয় না খোকা?
আমি বুঝে নিয়েছিলাম ওনার শরীর ভালো নেই
আমি সেদিন অফিস যাই নি, অথচ কি এক আশ্চর্য অভিমানে জানি বাবা অন্যভূবন পাড়ি দিলো;

আচ্ছা! কান্নার কি কোন শব্দ আছে?
চোখের জলের তো রঙ আছে,
আঁকিয়েরা জলরঙে চোখের জল আঁকে
কান্না আঁকে কি রঙে?
ভেতর থেকে দমকে দমকে আসা কান্নাগুলোকে কি ছবিতে আঁকা যায়?
কষ্টগুলো কি কবিতায় লিখা যায়?
কান্নাগুলো?
আমি না কখনো কাঁদতে পারি নি,
তাই হয়তো জটবাধা অবোধ্য শব্দগুলো কবিতা হয় নি;

অর্ধমানবের সবকিছুই বোধহয় অর্ধেক,
অর্ধেক বোধ
অর্ধেক বুদ্ধি
অর্ধেক আনন্দ
অর্ধেক কষ্ট
অর্ধেক আবেগ
অর্ধেক ভালোবাসা
আচ্ছা! তোমরা যে ইমোশন বলো! সেটা কি?
ধ্যাত! আবার দিলাম তো বাংলার ভেতরে ইংরেজি ঢুকিয়ে কবিতাটাকে অর্ধেক করে!
বাংলাটা আমার কখনো শেখাই হবে না
কবিতা লিখব কি করে?


১৫ মে, ২০২০

#কবিতা










ভ্রমণ




ভ্রমণ
- যাযাবর জীবন

..............................


ভ্রমণ একটা নেশা,
যাদের আছে তারাই জানে;

এ নেশা সিগারেট, মদ কিংবা অন্যান্য মাদক থেকেও অনেক কড়া
যার রক্তে একবার পৃথিবী ডাকে, সে অস্থির হয়ে পড়ে
পৃথিবী দেখার তরে;

কত দেশই না দেখেছি!
ঘুরেছি মহাদেশ
কত শত বন জঙ্গল
কত হাজার পাহাড় সারি
দেখেছি কত কত মৃত সভ্যতা
একে একে দেখেছি পৃথিবীর বিভিন্না আশ্চর্যগুলো
দিনের পর দিন কত নদীতে বয়ে গিয়েছি
কত সাগর দিয়েছি পাড়ি;

কু ঝিক ঝিকে গড়িয়েছে শত শত মাইল রেলপথ
গাড়ির নীচে গড়িয়েছে হাজারে হাজারে মাইল পিচ ঢালা রাজপথ
মেঠো পথ হেঁটেছি দিগন্ত পর্যন্ত
হেঁটেছি সাগর তীর ধরে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত
তবুও কি নেশা কেটেছে
পায়ে যার সরিষা সে আবার কবে হেঁটেছে?

এত যে ঘুরেছি তবুও মনে হয়
ইশশ! আরেকটু যদি ঘুরতে পারতাম!
এইবারের ঘোরাটা বোধহয় ঠিকমত হয়নি
আসলে ঘুরতে বের হয়ে কখনই তৃপ্তি মেটেনি;

সিগারেট, মদ আর মাদকে কয় টাকাই বা খরচ হয়?
কিন্তু ভ্রমণ যার রক্তে
তাকে একবার জিজ্ঞাসা কর, কোথায় তার সঞ্চয়?
ঘুরতে গেলেই তো টাকা, ভ্রমণের একমাত্র বাধা;

ইশশ! আমার যদি একটা ডানা থাকতো!
ঝুম বৃষ্টিতে মেঘের ডানায় ডানা মেলানোটা স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেলো
ভ্রমণ পিপাসুর পাখি মন
আদতে বাস্তবতায় তো মানুষেরই জীবন;

খুব ইচ্ছে করে একদিন পৃথিবী ঘোরা শেষ করে চাঁদে যাব
মঙ্গলে যাব
শনির বলয় ছোঁব
মানুষের সব স্বপ্ন কি আর পূরণ হয়?

তবে তোমরা দেখ! একদিন আমার সময় আসবে,
একদিন আমি ঠিকই উড়াল দেব
মস্ত দামী এক প্রাইভেট প্লেনে চড়ে
বিজনেস ক্লাসের সামনের সিটে বসে,
আরে ভেবো না তোমরা!
এ যাত্রায় আমার কোন খরচই হবে না
অথচ গোটা একটা রিজার্ভ প্লেন থাকবে শুধুই আমার জন্য
যাত্রী একমাত্র আমি,
আলোর বেগে আকাশ পাড়ি দিতে দিতে ছুটে যাব এক নতুন দেশে;

তারপর ভুলে যাব পেছনের সবকিছু,
সবকিছু পাওয়ার খুশি
যত কিছু না পাওয়ার হতাশা
সব আনন্দ, সব দুঃখ গাথা
সব
সব ভুলে গিয়ে নতুন এক দেশে পৌঁছে যাব
পৌঁছে যাব আমার নতুন গন্তব্যে;

তবে তোমাদের সাথে কিন্তু আমার আর দেখা হবে না,
মৃত্যুর দেশ থেকে কেও ফিরে আসে না।


১৪ মে, ২০২০


#কবিতা



করোনার সাথে সন্ধি




করোনার সাথে সন্ধি
- যাযাবর জীবন

....................................

প্রিয় করোনা,
আপনি ছোট্ট থেকে ছোট্ট এককোষী ভাইরাস
অথচ আজ আপনাকে করা হয়েছে মহান
নাম দেয়া হয়েছে মহামারি;

কি বিপুল সমারোহ মৃত্যুযজ্ঞ করে বেড়াচ্ছেন সারা পৃথিবী ব্যাপী!
আপনি তো মহান কিংবা মহীয়সী অথচ কেন তাহলে বিধ্বংসী?
আপনার জন্য আজ থেমে গেছে সব কর্মকাণ্ড
থেমে গেছে গাড়ির চাকা
থেমে গেছে রেলের চাকা
থেমে গেছে বাজার সদাই
তেলের মূল্যকে আপনি শূন্যতে নামিয়ে এনেছেন
পুরো পৃথিবী জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন
আজ রাস্তা খালি
আজ অফিস খালি
আজ আমরা সবাই আপনার ভয়ে ঘরবন্দী
আপনার জন্য আজ থেমে আছে পৃথিবী,
অথচ আপনি কে?
এককোষী এক ভাইরাস মাত্র!

আপনি কি জানেন পৃথিবীর মানুষের ক্ষমতা?
অস্রের ক্ষমতা জানা আছে আপনার?
যুদ্ধের?
কি নেই মানুষের?
পিস্তল, রাইফেল, শটগান, মেশিনগান
টর্পেডো, মর্টার, কামান
যুদ্ধ জাহাজ, যুদ্ধ বিমান
বিনা কারণেই আমরা মানুষরা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি
আর অগণিত লাশের সারি,
সন্ত্রাস দমানোর নামে একতরফা সন্ত্রাস দেখেছেন আপনি?
ধর্মের নামে কাটাকাটি ভাঙ্গাভাঙ্গি হানাহানি?
রাহাজানি, ছিনতাই, গুম, খুন হরদম এক্সিডেন্ট
এগুলো তো দেশে দেশে নিত্যদিনের কারবার
সর্দি, কাশি, জ্বর, ক্যান্সার, এইডস, স্ট্রোক, আরো কত বীভৎস অসুখ, বিসুখের হাহাকার!
কই? তবুও এত মানুষ তো এর আগে একসাথে মরে নি!
আপনি মহান কিংবা মহীয়সী
এককোষী ভাইরাস
অথচ লাশের রাজত্ব কায়েম করে দখল করে নিয়েছেন পুরো পৃথিবী;

হে মহান আপনি যা বলবেন আমরা তাই করবো
আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই করব
আপনি যা খেতে চান তাই খাওয়াবো
যা পড়তে চান তাই পড়াব
শুধু একবার চেয়েই দেখেন না!
আমরা দেবো
উপহার হিসাবে আপনাকে সব দেবো,
আমাদের ক্ষুধা দেব
মন্দা দেব
খরা দেব
দুর্ভিক্ষ দেব
কাতারে কাতারে লাশ বিছিয়ে তো দিচ্ছিই, আরো আরো দেবো
তবুও এবার সন্তুষ্ট হন
এবার সমাপ্তি টানেন;

আমরা সাদা পতাকা উড়িয়েছি,
আসেন সন্ধি করি
দয়া করে আপনি আপনার বংশ বৃদ্ধি বন্ধ করে
মানুষকে বাঁচতে দিন
আপনি পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোন এক অজানা গ্রহে বসতি গড়ুন
পৃথিবীটা মানুষের, মানুষকেই থাকতে দিন
আর নয়তো কিছুদিন পরে শুধু আপনারাই থাকবেন
আর মানব শূন্য এ পৃথিবী;

আচ্ছা! তখন খাবেন কি?
একবার ভেবে দেখেছেন কি!

সন্ধিপত্র দেখে আবার রেগে যেয়েন না যেন
খুব বেশী লাভ হবে না তাতে আপনার
মানুষ ফুরিয়ে এলে আপনার খাবারও ফুরিয়ে যাবে
তখন তো আপনিও ঐ লাশেরই কাতার;

কবর দেবে কে আপনাকে?


১৩ মে, ২০২০

#কবিতা

ছবিঃ নেট থেকে






কালিহীন কলমের কবিতা



কালিহীন কলমের কবিতা
- যাযাবর জীবন

........................................

প্রেম তো দেখি প্রায় সবাই করে
কেও কেও আবার প্রেমে পড়ে
প্রেম নাকি হৃদয়ে থাকে?
আচ্ছা! হৃদয় কি?

কেও বলে মন
কেও বলে হৃদপিণ্ড
কেও বলে অনুভূতি
সে যাই হোক না কেন!
তার বাস কোথায়?
আমি তাকে খুঁজছি;
এক বুজুর্গ বললেন তার বাস মাটির ঘরে;

আরে ধ্যাত!
এ কি হতে পারে?
কি সব আজেবাজে কথা যে বলে না!
মাটিতে রক্ত কোথায়?
এই যে এত এত প্রেম করে!
আর প্রেমে মরে!
প্রেমে তো ক্ষরণ
ক্ষরণে রক্ত
প্রেমিকার অবহেলা রক্তাক্ত করে না?
ছলনা ক্ষরণ ঘটায় না?
আরে ঘটায়, ঠিকই ঘটায়
ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে রক্তের নহর বয়;
আমি মাটিতে রক্ত খুঁজে বেড়াই
যেখানে সব বিফলতার গল্প,
কোথায় রক্ত?

বুজুর্গ বললেন, আরে বোকা!
শরীরটাই তো মাটি
মাটি দিয়ে ঘেরা মাংস, হাড্ডি, পেশী আর হৃদয়
কলিজা গুর্দা যকৃত আরো কত কিছু ওর ভেতরে রয়!
মরে গেলে মানুষ কি আর মানুষ রয়!
তখন কত কত যে তার নাম হয়!
কেও বলে বডি, কেও লাশ, কেও শব
আর বডিকে মাটিকে ঠেলে ফেলে দিয়ে আসে মাটির গর্তে সব।

আচ্ছা! আমাকে মাটির গর্তে দিয়ে আসার পর তুই কয়দিন আমায় মনে রাখবি?
কখনোই জানা হবে না;

এই যে মাটির ভেতর হৃদয়
তার ভেতরে প্রেম
কিছু অনুভূতি
অনুভূতিতে কবিতার জন্ম
বেশীরভাগই তো অসফলতার গল্প
আর সফল প্রেম কিছু অল্প;

এই যে এত এত কবিতার জন্ম হয়?
আচ্ছা! বলতে পারিস, শুধু শুধুই কেন এত হৃদয়ের লেনদেন হয়?

এই যে তুই বারবার কানের কাছে গুনগুন করিস
ভালোবাসি, ভালোবাসি আর ভালোবাসি;
তখন আমার না খুব প্রেমের সংজ্ঞা জানতে ইচ্ছে করে!

একদিন যখন চাঁদ ঘুমিয়ে যাবে আকাশের বুকে
তুই আমায় প্রেমের সংজ্ঞা বুঝিয়ে দিস সারারাত গুনগুনিয়ে মনের সুখে;

তারপর না হয় একদিন একটা আস্ত প্রেমের কবিতা লেখার চেষ্টা করব
মনের ক্যানভাসে কালিহীন কলম হাতে,
কোন এক তুইহীনা রাতে।



১২ মে, ২০২০

#কবিতা









"না" বলে দে




"না" বলে দে
- যাযাবর জীবন

................................


সেই তো মেয়ে সেই তো শরীর
গুচ্ছ গুচ্ছ মাংস
নারী রূপে কামদেবী
মনে কামের অংশ
সেই তো শরীর সেই তো স্তন
ছোট কিংবা বড়
লোলুপ চোখে কামুক হাতে
অসহায় নিষ্পেষণ
সেই তো কোমর চিকন মোটা দলা দলা মাংস
সেই তো কাম পা প্যাঁচানো চামড়ার বাঁশের অংশ
ধ্যাত! এটা প্রেম হলো?

প্রেম করতে শরীর লাগে?
মন হলে চলে না?
আসল প্রেম কখনোই
সাদাকালো মানে না,
কাম করতে শরীর লাগে
মনের কিবা দাম?
পেটিকোট তোলা লুঙ্গি খোলা
ঝাপাঝাপি কাম;

কামের কথা যখন বলি তখন আমি খারাপ
তোমরা যখন প্রেম করো, করো কামের আলাপ
ঝোপের ধারে সুযোগ পেলে শরীর ছানাছানি
প্রেমের নামে ঠোঁটে ঠোঁট ভালোই আমি জানি,
সুযোগ পেলে পাটক্ষেতে পোয়াতি হয়েছে জনে জন?
প্রেমের দামে বিয়ের পিড়িতে বসেছে তারা কজন?
কাম মিটলে কোথায় প্রেম মেয়েগুলো কেন বোকা?
নিত্য দেখে ভার্চুয়ালে দিচ্ছে সবাই ধোঁকা;

কবে বুঝবে মেয়েগুলো বিয়ের আগের কাম
বাচ্চা একটা নষ্ট করবে এটাই প্রেমের দাম
কবে শিখবে মেয়েগুলো প্রেম মানেই শরীর
কাম মিটলে শূন্য দাম নারী মাংসের ভরির;

একবার তো রুখে দাড়া শক্ত করে বল 'না"
বিয়ের আগে শরীর নয় যতই ছলনা
তারপর দেখ কোথাকার প্রেম কোথায় গিয়ে ঠেকে
একবার তোরা না বলেই দেখ মনটা করে বেঁকে
সোজা হবে পুরুষগুলো সোজা চামড়ার দণ্ড
চেহারাগুলো দেখতে পাবি পুরুষ যত ভণ্ড
মনে যদি থাকে প্রেম বিয়ের পিঁড়িতে বসবে
আদর যত্ন সোহাগে ঘরটা তোর ভরবে।


৪মে, ২০২০


#কবিতা





কবিতা বুঝি না



কবিতা বুঝি না
- যাযাবর জীবন


আজকাল বোধহয় কবিতা বদলে গিয়েছে
কিংবা বদলে গিয়েছে কবিতার ধরণ;

কোথায় এখন আর
চোখে চোখ দেখা হলো
প্রেম হলো তারপর চুমোচুমি.........
সেই থেকে শুরু
তারপর বিছানা
বিছানা থেকে বিচ্ছেদ
বিচ্ছেদ থেকে কবিতা
এখন ওসব পুরনো দিনের প্যানপ্যানানি?

আজকাল কবিতার ধরণ বদলে গিয়েছে
বদলে গিয়েছে কবিতার আকার
ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী
তাল মিলিয়ে ছোট হয়েছে কবিতা;

এখনকার কিছু কবিতা তো একদম সোজা সাপ্টা

কোথাও কোথাও এক লাইনের কবিতা

- "প্রেম মানে কাম"

- কোথাও প্রেম নেই"

- "প্রেমে ভেজা"

- "শরীরে প্রেম খেলা"

ব্যাস, এই টুকুই,
এগুলো কিন্তু এক একটা কবিতা
বোঝা ঠেলা!

আরে বাবা এক কথায় প্রকাশ পড় নি?
তেমনি আর কি!


কিংবা যদি টেনে আরেকটু বড় করতে হয় তবে

- "চোখাচোখি থেকে ঠোঁট
তারপর দুজনা"

- "তুমি আমি আর প্রেম
অপেক্ষায় বিছানা"

- "একদিন তুমি একদিন আমি একদিন বৃষ্টি
ভিজেছিলাম দুজনা"


এখন যার যা ইচ্ছে বুঝে নাও!

কেন ভাব সম্প্রসারণ কর নি?
তেমনি আর কি?

পুরনোকে কে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়?
প্রতিদিন নতুন ভাবের নতুন সংজ্ঞার নতুন আকৃতির কবিতার সৃষ্টি হয়
প্রতিদিন নতুন নতুন ধারার কবির জন্ম হয়
কেও কারো থেকে কম নয়;

এই যে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল পড়েছি!
জসীমউদ্দীন, ফররুখ আহমেদ, আল মাহমুদ
জীবনানন্দ দাস, সুকুমার রায়, সুকান্ত
রফিক আজাদ, আবুল হাসান, জয় গোস্বামী
হেলাল হাফিজ, সামসুর রহমান, নির্মলেন্দু গুণ
আরো কত কত?
কোন কবি কার থেকে বেশী ভালো?
প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয়
প্রত্যেকের লেখারই এক একটা আলাদা আলাদা ধরণ
প্রত্যেকেই যার যার ঘরানার শ্রেষ্ঠ কবি
আমি পড়ে যাই সবই;

পড়ার কি আর শেষ আছে?
এই যে এত এত যে কবিতা পড়ছি!
তবুও আজো কবিতা বুঝতে পারি নি।

১০ মে, ২০২০




কাম বললেই দোষ




কাম বললেই দোষ
- যাযাবর জীবন

..............................

প্রেম কি?
কত কত কবিতা! কত গল্প! কত উপকথা!
কত কত গান! কত কাব্য-গাথা;
কবিদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই
লেখকদের গল্প উপন্যাসের
গীতিকারের অভাব হয় না গানের কথার
সুরকারের অভাব হয় না সুর গাঁথার!
আসলে প্রেম কি?
নিজেকে অনেক ভাবে প্রশ্ন করেছি;

একটাই উত্তর পেয়েছি সমস্ত প্রেম দেখে
একটাই উত্তর দিয়েছে আমার ভেতর থেকে
এক শব্দে প্রেম হলো কাম;

আচ্ছা বলো তো, প্রেম হয় কার কার মাঝে?
সাধারণত নর ও নারীতে
তবে আজকাল নারীতে নারীতেও বেশ প্রেম দেখি
প্রেম দেখি নর আর নরের মাঝে,
ওখানে শরীর নেই? কাম নেই?

প্রেম যদি শুধু কাব্যিক প্রেমই হতো তাহলে আমি বলবো কাব্যে শরীর আসে কেন?
কেন বারে বারে কবিতায় চোখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে চোখ
গল্পে ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঠোঁট
তারপর গলা বেয়ে নামতে নামতে বুক
বুক থেকে নেমে নাভির অনেক নীচে
তারপর তো উপন্যাসে ঠিকই টেনে নিয়ে যায় বিছানা দুজন দুজন'কে,
কবি সাহিত্যিকরা বলে প্রেমের লৌহদণ্ড ভিজছে রমণে
কি সুন্দর পাশ কাটানো কথা?
কাব্যিকদের চতুরতা;
আমি বাবা অতশত বুঝি না
আমার একদম সোজাসাপ্টা কথা,
আচ্ছা! পাঠকের মাঝে রসময় পড়ে নি কে?
কবিরা পড়েছে?
সাহিত্যিকরা পড়ে নি?
এ মা! ছিঃ! আর্য সমাজে ও নাম নিতে হয় কি?
স্কুলে কোন এক বাল্যকালে বইয়ের তলে......
ধ্যাত! দিলে তো ঘেঁটে ঘ করে!

আচ্ছা! শরীর আসলেই কি প্রেম নোংরা হয়ে যায়?
নাকি শারীরিক মিলনে প্রেমের সার্থকতা পায়?
তবে কাম শব্দটায় তোমাদের এত বিবমিষা কেন?
তোমরা শুধুই কামটুকুই পরেছ
তারপর আরো কিছু যে বলতে চেয়েছি আগে বাড়তে দিয়েছ?
তার আগেই চ্যাঁচামেচি করে দিলে তো সব গুবলেট করে
আগে বাপু পুরোটা তো শোনো!

কামের সাথে তো মনও আছে,
দুটি হৃদয়ের এক হতে হয়
দুটি মন কবিতা হতে হয়
কবিতার কথাগুলোতে সুর দিতে হয়
সুরের সাথে তাল মিলতে হয়, লয় মিলাতে হয়
তবেই না প্রেমের গান হয়!
আর প্রেমের সার্থক মিলন হয়!
আর নয়তো ধর্ষণ তো মানুষই করে,
কুকুরে করলে রমণ!
পশুতে কোথায় মন?

তাই বলে সব প্রেমিক তো আর কামুক নয়!
নাহ! কখনোই নয়;
আচ্ছা! প্রেমের সাথে কাম মেলালে কি হয়?

০৯ মে, ২০২০

#কবিতা











ভালোবাসার দিন




ভালোবাসার দিন
- যাযাবর জীবন

.................................

একদিন হঠাৎ তোকে দেখতেই ডেকে বলেছিলাম, শোন!
সেই সেদিন থেকেই হারিয়েছিলাম তোতে মন

তারপর যতবারই তোকে দেখি
আমি কি আর আমার মাঝে থাকি?

একদিন দুদিন করে চোখে চোখ হলো
তোমরা একে প্রেমের শুরু বলো

একদিন দুদিন করে হাতে হাত
মেঠো পথ ধরে দুজন সাথে সাথ

তারপর কোন একদিন তুই আমার হলি
ভালোবাসায় আমাতে বিলীন হলি

এখন যখনই তোর চোখে চোখ তাকাই
মনের অনুভূতিগুলো তোর থেকে লুকাই

ঐ অনুভূতিগুলো বড্ড যে গাঢ়!
তোকে দেখলে কেমন যেন হয়ে যাই আরো

যখনই তোর ভেজা ঠোঁট দেখি
যখন তখন তাতে ভালোবাসার চুমু আঁকি

চুমুতে কি ভালোবাসা থাকে
তোর চোখ কি দেখে?

তোর গলার তলায় ঐ যে তিল
চাঁদের আলোতেও কেমন ঝিলমিল

গলা থেকে আদর দিতে দিতে নীচে নামি
আর নিজেকে ক্রমশ হারাতে থাকি আমি

তোর সবুজ শাড়িটাতে যখন বাঁধা পাই
ধীরে, খুব ধীরে আঁচল সরিয়ে নামাই

তারপর তোর গায়ের সোঁদা গন্ধ
আমায় করে তোলে একদম অন্ধ

যখন তোর বুকে মুখ গুঁজি
ওখানে আমি পৃথিবীর যত সুখ খুঁজি

তারপর তো সেই কত কত আদর!
লজ্জায় তুই গায়ে টেনে নিস চাদর

ভালোবাসা কারা করে জানিস? ভালোবাসার সুজন;
আর আমরা দুজনার গাঁয়ে লেপ্টে থাকি দুজন

একসময় ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরিস তুই
আমি তোর দিকে চেয়ে সারারাত জেগে রই

আচ্ছা! বলতো দেখি ভালোবাসা কোথায় থাকে?
রক্তের ফোঁটায়, লোহিত কণিকায় আর হৃদয়ের প্রতিটা বাঁকে বাঁকে

রাতভর তোকে দেখে বোঝার চেষ্টা করি, ভালোবাসার মানে কি
রাত কেটে ভোর হয়, অথচ আজো আমি তোকেই বুঝি নি

তোকে বোঝা আর না বোঝার দ্বন্দ্বে কেটে যাক দিন
বছরের প্রতিটা দিনই আমাদের ভালোবাসার দিন।


০৭ মে, ২০২০

#কবিতা















মানুষ হয়েছি কি?



মানুষ হয়েছি কি?
-যাযাবর জীবন

…………………………………………………

আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম
- এই যে জীবনে এতগুলো বছর পাড়ি দিয়ে এলাম!
- আদতে জীবনে কি করতে চেয়েছিলাম
- আর কি করেছিলাম
- কিই বা হলাম!

খুব ছোটবেলায় একবার মনে আছে স্যার জিজ্ঞেস করেছিলো
- বড় হয়ে কি হবি?
- আমি সেদিন কোন জবাব দিতে পারি নি, আমার বুদ্ধি ছোট বেলা থেকেই বোধহয় কম ছিলো, তাই স্যাররা কিছু জিজ্ঞেস করলে চট করে কোন জবাব মাথায় আসতো না;

- অথচ বন্ধুবান্ধবকে জিজ্ঞেসে করতে কেও বললো ডাক্তার হবে, কেও ইঞ্জিনিয়ার কেও ব্যবসায়ী, কেও লেখক, কেও কবি, কেও ফটোগ্রাফার তো কেও আর্টিস্ট;

-
আমি এখনো ভেবে পাই না কেন সেদিন কোন জবাব দিতে পারি নি!
পরে আমি এই নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি, আসলে আমি কি হতে চাই? কি হলে ভালো হয়? কি করলে জীবনে উন্নতি করা যায়! আমার মাথায় কিছুই ঢোকে নি;
রাতে বাবার কাছে শুয়ে শুয়ে বাবাকে বললাম, বাবা! স্যার জিজ্ঞেস করেছিলো বড় হয়ে কি হবি?
আমি জবাব দিতে পারি নি।

বাবা মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোর মন কি বলে? তুই কি করতে পছন্দ করিস?
আমি বললাম, পড়তে ভালো লাগে না; আমার শুধু ভালো লাগে সারাদিন টৈ টৈ করে বনে বাদারে ঘুরে বেড়াতে, গাছে গাছে পাখির বাসা খুঁজতে, নদীতে ঝাপাঝাপি করতে, সূর্যাস্ত দেখতে, জ্যোৎস্না দেখতে আর তোমার গায়ের গন্ধ নিতে।
বাবা বলেছিলো, পাগল ছেলে; তোকে নিয়ে আমার বড্ড চিন্তা হয়। কি করবি তুই বড় হয়ে?
আমি বললাম, জানি না;
বাবা বুকে নিয়ে বললো আচ্ছা! থাক তোকে জানতে হবে না,
শুধু মনে রাখিস, জীবিকার জন্য যাই করিস আর নাই করিস “মানুষ হোস”
তাহলে কখনো জীবনে ঠেকবি না;
আমি বাবার কথাটি মনে রেখেছি
সারাজীবন মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি।

তবে বাবার কথাটি ঠিক হয়নি আমার ক্ষেত্রে,
মানুষ হয়তো কিছুটা হয়েছি, তবে ঠকেছি
মানুষ হতে গিয়ে প্রতিটা পদে পদে ঠকেছি
বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন যে যেভাবে পেরেছে প্রতিটা পদে পদে ঠকিয়েছে
ওরা আমায় বড্ড বোকা মনে করতো, কিন্তু আমি সব বুঝতাম,
রাগের বদলে আমার মাঝে মাঝে খুব হাসি পেয়ে যেতো তাদের ঠকানোর ধরণ দেখে –
জানো?
- মানুষ হতে গেলে মিথ্যা বলা যায় না
- মানুষ হতে গেলে চুরি করা যায় না
- মানুষ হতে গেলে ঠকবাজি করা যায় না
- অথচ ঠকতে হয় পদে পদে
- মানুষ হতে গেলে সবাই সরলতার সদ্ব্যবহার করে
- আদতে মানুষ হতে গিয়ে সকলের কাছে বোকাই হয়ে রয়েছি
- মানুষ হতে গিয়ে হয়তো মাত্র অর্ধমানব হয়েছি;
তবুও, তবুও তো বাবার কথা রাখার চেষ্টা করেছি!
অন্য কিছু না হয়ে মানুষ হওয়ার চেষ্টায় অর্ধমানব হয়ে রয়ে গিয়েছি
কালের বিবর্তনে বাকিটুকুও নিশ্চয়ই হয়ে যাব, মাটি হওয়ার আগে দিয়ে;

ওপারে গিয়ে বাবাকে অন্তত বলতে তো পারব!
চেষ্টা করেছি;
শুধুমাত্র মানুষ হওয়ারই চেষ্টা করেছি।


০৬ মে, ২০২০



দাম্পত্যের নির্ভরতা



দাম্পত্যের নির্ভরতা
-যাযাবর জীবন


আজকাল সময়গুলো খুব খারাপ যাচ্ছে
শুধু আমার সময়ই নয়, চারিদিকের সময়
তবে এই যে সেদিন, লকডাউনে যখন চারিদিক বন্ধ
কোন কারণ ছাড়াই হুট করে অচেতন পড়ে গেলাম
দৌড়ে এলো সবাই, হৈ চৈ কান্নাকাটি
কি ভেবেছিলো ওরা? হয়তো মরে গেছি!
খুব বেশীক্ষণ অচেতন ছিলাম না, চেতন ফিরে ভয়ার্ত মুখগুলোকে দেখছিলাম
আচ্ছা! আমি কি মরে গিয়েছিলাম? উঁহু! তাহলে কিভাবে চোখ খুললাম!
ইশশ! এবার মরে গেলে ভালোই হতো!
দুদিন কাঁদতো, দিন পনরো মন খারাপ করে থাকতো
তারপর তো সেই চিরাচরিত জীবন যাপন
মৃতকে সেভাবে আর মনে রাখে কে?

রাখে, কেও কেও রাখে
- বাবা মা যদি বেঁচে থাকে, আহহারে বলে বিলাপ করে, যখনই মৃত সন্তানের কথা মনে পড়ে
তাও কতদিন? দুমাস, ছমাস খুব বড়জোর বছর।

- সন্তানরা মনে করে, খুব মাঝে মাঝে, যখন অন্য কোন ছেলেমেয়েকে দেখে বাবার হাত ধরে হাঁটতে;
তাও খুব বেশী দিন নয়, মৃত্যুর অল্প কিছুদিন মাত্র; খুব বড়জোর মাস ছয়েক।

- একমাত্র মনে রাখে স্ত্রী, কারণে আর অকারণে যখনই মনে পড়ে; কোন একটা ভালোমন্দ কিছু রান্না করলে, খাওয়ার টেবিলে।
রাতের একলা প্রহরে বড্ড কাঁদে, হাত বাড়িয়ে আমার বদলে বালিশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে;
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে যখন ভালোবাসা থাকে, স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক যখন পবিত্র হয়।
আর না হলে কে বাঁচলো আর কে মরলো কার তাতে কি যায় আসে!

সেদিন থেকে রাতে ঘুম ভাংলেই হাত বাড়াই,
হাত বাড়িয়েই হাতের স্পর্শ পাই,
আছে! পাশে কেও আছে! খুব মমতায় জড়িয়ে আছে আমার পাশেপাশে
আধো ঘুমে তাকাই, আধো অন্ধকারে ওকে দেখি, তারপর আবার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যাই।
এই যে স্পর্শ! এ শুধু স্পর্শ নয় এক নির্ভরতা, এক বিশ্বাস
যে পাশে আছে, যে কাছে আছে, যে জড়িয়ে আছে নির্ভরতায়, জড়িয়ে আছে মমতায়
সে থাকবে, সেই থাকবে আমার প্রয়োজনে; আমার দুর্দিনে পরম ভালোবাসায়
সে আর কেও নয়, আমার স্ত্রী
এই যে দুজন দুজনার ভালোবাসা!
এই যে দুজন দুজনার নির্ভরতা!
এটাই তো দাম্পত্য, তাই না?

আর বাকি সব মধ্যবিত্তের আয় ব্যয়ের সামঞ্জস্য
দৈনন্দিন বাজার সদাই, রান্নাবাটি
বাবা মার দেখাশোনা
সন্তান সন্ততি পড়ালেখা
বাড়ি ভাড়া, এটা ওটা বিভিন্ন ছোটখাট টাকা পয়সার হিসাব কিতাব
আর অন্যান্য খুঁটিনাটির সংসার।


৫মে, ২০২০


#কবিতা









করোনার মৃত্যু




করোনার মৃত্যু
- যাযাবর জীবন


আজ যদি করোনা ভাইরাস ঢোকে আমার নাকে
আজ যদি করোনা ভাইরাস ঢোকে আমার মুখে
ওখান থেকে গলায় গিয়ে বসবে
একদিন
দুদিন
তিনদিন থিতু হবে;
বুঝতে চেষ্টা করবে আমার প্রকৃতি
আমি কি দুর্বল না সবল প্রতিদ্বন্দ্বী;

মাঝে মাঝে একটু গলায় আদর করে দেবে
আমি হাঁচি দেব,
মাঝে মাঝে গলায় একটু খামচি দেবে
আমি কাশি দেব,
আগে বুঝতে চেষ্টা করবে আমার প্রকৃতি
আমি কি দুর্বল নাকি সবল প্রতিদ্বন্দ্বী;

এবার একটু একটু করে শ্বাসনালী বেয়ে ভেতরে ঢুকতে থাকবে
কোথাও কি কোন প্রতিরোধ আছে? চারিদিকে চাইবে
তারপর সোজা ফুসফুসে
ওহ! এতক্ষণে শান্তি,
এ ব্যাটা তো একদম দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী;

সবল হলে সতর্ক হতো প্রথমবার হাঁচি দিতেই
সবল হলে বার বার ভাপ নিতো কাশি হলেই
সবল হলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় গরম পানি, চা, দুধ, সুপ খেতেই থাকতো
সবল হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতো
সবল হলে দু চারটা জানা অজানা এন্টিবায়োটিকের ঢাল দিয়ে বসতো
সবল হলে প্রকৃতি থেকে কালিজিরা নিতো, মধু নিতো
কাঁচা হলুদ, রসুন, আদা ইত্যাদি প্রাকৃতিক প্রতিষেধক নিতো
ঘণ্টায় ঘণ্টায় একটা একটা করে অস্র দিয়ে আমায় ব্যতিব্যস্ত করে তুলতো
গলা থেকে ফুসফুসে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করতে করতে আমি হয়তো দুর্বল হয়ে যেতাম
কিংবা দুর্বল হতে হতে মারাও যেতে পারতাম;

আহ! এখন শান্তি, ফুসফুসে ঢুকে গেছি
বেটা দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী,
হয়তো আমাকে সিরিয়াসলি নেয়ই নি
হয়তো ভেবেছে সাধারণ হাঁচি কাশি
হয়তো ভেবেছে কি আর হবে?
শরীর গরম হলে প্যারাসিটামলে যাবে
ব্যাটা রামবোকা, দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী
এখন বুঝবি ঠেলা! আমি আমার ঘরে ঢুকে গিয়েছি;

এখন এখান থেকে ধীরে ধীরে তোর ফুসফুস খাব
তোর কিডনি খাব
তোর হৃদযন্ত্র খাব
তারপর তোকে শব করে আমি তোর সাথেই মাটি হব,
মাটি হব কি? না পুড়ে যাব?

তোর জন্য মায়াও হয়, করুণাও হয়
কি করব বল? আমি তো আর নিজে নিজে তৈরি হয়ে আসি নি!
আমাকে তোরাই তৈরি করেছিস হে বোকা মানব জাতি!
জানিস তো! আমার কোন ধর্ম নেই
যে দেহে আমার বাস আমি সেই ধর্মের করি ভাইরাস চাষ
যতক্ষণ তোর জীবন, ততক্ষণ বেঁচে আছি আমি
তারপর তোর সাথে সাথে হয় পুড়ে যাব নয়তো মাটি হব,
তবুও আমি তোকে মেরেই ছাড়ব;

আমার কত ভাইবোনকে পুড়িয়ে দিয়েছে!
শব হওয়ার সাথে সাথে,
সেটা যার যার ধর্মের রেওয়াজ অনুযায়ী।

আচ্ছা! তুই শব হওয়ার পর কি তোর আলাদা কবর হবে?
নাকি অন্যান্য শবের সাথে এক গর্তে ফেলে দেবে?
আমার জানাজাটা হবে তো?
হাজার হোক আমি তো একটা মুসলমান দেহে ঢুকেছি!
তোকে শব করে শব হয়েছি
অন্তত জানাজাটা তো আশা করতেই পারি!

০৩মে, ২০২০

#কবিতা





স্বীকার করেছি কি ঋণ?



স্বীকার করেছি কি ঋণ?
- যাযাবর জীবন


একটা সময় ছিলো সবুজ সবুজ দিন
দিনের আকাশ নীল নীল, রাতে তারা ঝিলমিল
পাখির কিচিমিচি, বাচ্চাদের ছোটাছুটি
অফিস আদালত, সপ্তাহে দু একদিন ছুটি
পার্কে, বন্ধুর বাড়িতে, খুশি আর আড্ডায় মেতে
টাকা পয়সা বাড়ি গাড়িতে ভরপুর ছিলো আমার দিন
হে আল্লাহ্‌, শোকর করি নি সেদিন তোমার কাছে সে ঋণ

আজ বড্ড দুর্দিন, আজ আমাদের সময়টা খারাপ যাচ্ছে
আজ মহামারী মৃত্যুর হাহাকার, কবরের জায়গা হচ্ছে না লাশের সারি
তবুও আমরা তো বেঁচে আছি, এখনো খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমচ্ছি
মাথার ওপর ছাঁদটাও আছে বহাল তবিয়তে
কাটাতে হচ্ছে না অসহনীয় রাত হাসপাতালের মেঝেতে
এটা কি কম নাকি? আরে! এখনো ভালো আছি
এটা আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে অনেক বড় ঋণ;

আমরা আল্লাহ্‌কে ডাকি যখনই আমাদের দুর্দিন
আমরা বড্ড স্বার্থপর, হ্যাঁ আমাকেই বলছি; সুদিনে ওনাকে স্মরণ করেছি?
আমি তো করিনি! তুমি করেছ? তুমি, তুমি, তোমরা?
হাসি আনন্দে ভেবে নিয়েছিলাম, চিরদিন রয়ে যাবে এ সুদিন
অথচ যখনই বিপাকে, অসুখ বিসুখে; তখনই জায়নামাজে, সেজদায় পড়ে
দুহাত তুলে মোনাজাত ধরে, ওহে স্বার্থপর জাতি! কেন বারবার বলো; হে আল্লাহ্‌, দূর কর এই দুর্দিন
সুখের সময় ওনাকে স্মরণ করেছিলে কয়দিন? সেদিন তো স্বীকার করি নি তার ঋণ।





বিড়াল মরে



বিড়াল মরে
- যাযাবর জীবন


যখন আমি ছোট্ট ছিলাম
বেশ কাটতো হেলা খেলায়
মায়ের চোখ পাশ কাটাতাম
লুকিয়ে পড়ে দাদীর ছায়ায়
বেশ কেটেছে ছেলেবেলা
বেশ কেটেছে কিশোর জীবন
সমস্যাটা চলে এলো
যখন দেহে একটু যৌবন;

একদিন এক মেয়ে দেখলাম, মনের মাঝে ভীষণ কেমন
স্কুল পালালাম বেশ কয়েকদিন মায়ের বকা যেমত তেমন
একদিন খুব সাহস করে গেলাম মেয়ের পিছু পিছু
মেয়ে ভাবলো ছেলেধরা কিংবা হয়তো অন্য কিছু
সে যে কি ভীষণ চিৎকার! শুনতে যদি তোমরা একবার
কান মলেছি তারপর থেকে, জীবনে ও পথ মাড়াবো আর

সময় গেলো সময় গলো
শরীরে পূর্ণ যৌবন এলো
মেয়ে দেখলেই ছোঁকছোঁক
আমার তখন শরীরে জোঁক

একদিন হঠাত চোখে পড়লো রিক্সায় এক অপ্সরা
মনের মাঝে বাঁশি বাজলো, খুশিতে আমি আত্মহারা
হোন্ডা তখন ছিলো আমার নিলাম পিছু মনের বলে
পার্কে ঢুকে দেখি মেয়ে, শুয়ে আছে বন্ধুর কোলে
চোট বড্ড লেগেছিলো সেদিন আমার ঐ কচি দিলে
কার না খারাপ লাগে বলো মনের সাথে এমন হলে?

তারপর অনেকদিন পার হয়ে গেলো
কত সুন্দরী এলো গেলো!
আমার চোখে ঐ অপ্সরা
বন্ধুর হাতে বগল তলা;

একদিন অনেক মনের দুঃখে চলে গেলাম সাগর পারে
সূর্যাস্তের লালাভ আলোয় পরী দেখি এক বালির ধারে
মনের ভেতর কেমন কেমন মৃদুমন্দ সাগর বাতাস
ছটফটানি ছটফটানি বড্ড আমার মনটা উদাস
সূর্যাস্তের অনেক পড়েও সাগর পারে কৌতূহলে
দেখব আমি পরী মেয়েটি থাকছে কোথায় কোন হোটেলে
পাশের হোটেলে ছিলো তারা রাত্রি বেলায় পেলাম খোঁজ
হানিমুনে এসেছে তারা, থাকছে গত তিন রোজ
আমার কেন এমন হয়? দুর্ভাগ্য ঘিরে রয়
রাতের বাসে ঢাকায় ফিরলাম, নারী-ভাগ্য আমার নয়;

অনেকদিন পর একদিন খুব হঠাত একটা মেয়ে কাছে এলো
সামনে বসে চোখে চোখে খুব আচানক চোখ তাকালো
কোমল কণ্ঠে বললো আমায়, তোমায় আমার ভালো লাগে
মাথা তখন ঝিমঝিমাঝিম এ কথা কেও বলেনি আগে,
সেই যে এলো, থেকেই গেলো
বিয়ের পিঁড়িতে সবাই বসালো
তারপর আর আমি কোথায়?
বৌ এর আঁচল যখন যেথায়;

চলছে জীবন রেলের গাড়ি
বাপের বাড়ি শ্বশুর বাড়ি
বৌ এর মন যখন যেথায়
পেছন পেছন আমি সেথায়

শখ ছিলো একটা প্রেম করবো
হাতি ঘোড়া বাঘ মারব
বিয়ের পরে বৌটা ঘরে
খাটের ওপর বিড়াল মরে।




০১মে, ২০২০

















হীরক রাজ্য



হীরক রাজ্য
- যাযাবর জীবন


করোনা ভাইরাসে পৃথিবীব্যাপী তোলপাড়
এদেশে ওদেশে সেদেশে মৃত্যুর হাহাকার
ঘরে থাকার নির্দেশ দিলো প্রতিটা দেশের সরকার
করোনা থেকে বাঁচতে লক-ডাউন দরকার;

আমাদের দেশে আমরাও বেশ কিছুদিন যাবত আছি লক-ডাউনে
সময় কাটানো বড্ড মুশকিল
টেলিভিশন আর সিনেমা দেখে, পরিবারের সাথে গল্পে মেতে
কতটা সময়ই বা পাড় করা যায়!

এ সময় কিছু বন্ধু বান্ধব মিলে গ্রুপ করলো ফেসবুকে
যার উদ্দেশ্য হলো আমরা আবার ফিরে যাব বাল্যকালে
একই বৎসরে যারা পাশ করেছিলাম শুধু তারাই হবে মেম্বার
একজন রাজা হলো, আর কিছু মন্ত্রী পরিষদ গঠন হলো
সবার অলক্ষ্যে সেই পুরনো রাজনীতি ঢুকে গেলো!
অথচ আমরা চাই নি কোন রাজা
চাই নি রাজনীতি
বন্ধুত্বের মাঝে চেয়েছিলাম নির্মল আনন্দ
চেয়েছিলাম সমনীতি;
সমনীতি কি আর কোথাও আছে আজকাল?
সেই তো রাজা
সেই তো রাণী
সেই তো মন্ত্রী
সেই তো উজির
আর সেই পুরাতন রাজনীতি
অথচ আমরা চেয়েছিলাম সকলে মিলে এক সমনীতি;

কোন একদা রাজনীতির খেলায় ট্রাম্প নামে হবুচন্দ্র এক রাজা এলো
গোপাল ভাঁড় লজ্জায় কোন বনে জানি পালালো
উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী এলো কিম জং উন
নাকাল পৃথিবী দেখে মাথা ঘোরে বন বন বন
ধুরন্ধর এক প্রেসিডেন্ট এলো চিনে শি জিনপিং
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে দিলো ভাইরাসের দামামায় বাড়ি দিলো ঢিং
নিজের দেশের কিছু মানুষ বলি দিলো ভাইরাসের টোকায়
ট্রাম্প, বরিস জনসন, সারজিও মেটারেলা পড়ে গেলো ধোঁকায়
কাতারে কাতারে মানুষ মরতে লাগলো পৃথিবী জুড়ে
আমরা সবাই কোয়ারেন্টাইনের নামে বন্দী সকলে যার যার ঘরে;

তা যা বলছিলাম!
একঘরে থেকেও ফেসবুক গ্রুপে বেশ চলছিলো বন্ধুত্বের আড্ডা
বাধ সাধলো কিছু সভাসদ, কিছু রানীই যে তাদের সব
একদা আমি কিছু করল্লা দিলাম বন্ধুদের রেঁধে খেতে
রাণীরা রস চিপরে খেয়ে বলে ইশশ! বড্ড তিতে
মন্ত্রী পরিষদে বিচার বসলো করল্লার
বদল হলো করল্লার সাপ্লাইয়ার
রাজার কাছে সাপ্লাইয়ার আবেদন করলো আমি তো করল্লার রস খেতে দেই নি
রাজা বললো মন্ত্রী পরিষদ বিচার করে নি?
আমি বললাম বিচারে তো সাজা শূল! কিন্তু এ সাজা তো ভুল
রাজা হেসে বললো আমি তো পুতুল, ও হে আমি কাঠ পুতুল;

কিছু বন্ধু বান্ধব সবাই মিলে গড়েছিলো বন্ধুত্বের গ্রুপ
সংবিধান কিছু বানিয়েছিলাম, খেয়ে গেলো মন্ত্রীপরিষদের ভুত
আমরা ভোটের রাজনীতিতে বানাই নি রাষ্ট্রনেতা
পুতুল রাজা বলে আমার মুখবন্ধ, নেই কোন কথা
মন্ত্রী পরিষদে কিছু বন্ধু বান্ধব ছিলো
তাদের বললাম এ কি বিচার হলো?
মুখে কুলুপ এঁটে
তারা লজ্জায় লেপের নীচে,
প্রজা সাধারণের আসলে এ গ্রুপে কোন বক্তব্য নেই
মন্ত্রী পরিষদ নম নম করে রাণীগনই চালায় রাজ্য সেই
রাণীগন তবলায় তাল দেয় মন্ত্রীগন নাচে ধেই ধেই
আমাদের একটা রাজ্য আছে আসলে কোন রাজা নেই;

প্রতিদিন ভার্চুয়ালে শত শত গ্রুপ যে গড়ে!
প্রথম প্রথম খুব রমরমা, গ্রুপটা ভালোই চলে
তারপর অল্প কিছু হীরক মন্ত্রীসভার কুটচাল চালে
গ্রুপটা ধীরে ধীরে মুখ থুবড়ে পড়ে;

হীরক রাজা অনেক আশায় গড়েছিলো গ্রুপ
মন্ত্রীসভার কান্ড দেখে সেও হয়ে যায় চুপ
গ্রুপ ভাঙলে মত্রীসভার না কিছু যায়, না আসে
হীরক রাজার বুক ফেটে যায়, ভেতরে কাঁদে মুখে হাসে।


৩০ এপ্রিল, ২০২০

বিঃদ্রঃ এটি একটি কাল্পনিক হীরক রাজ্যের কাহিনী, কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী না।



চোখ দেখা




চোখ দেখা
- যাযাবর জীবন


প্রথম দেখায় কারো যে জিনিষটা আমায় বড্ড টানে
তা হলো মানুষের চোখ;
আমার নিজের চোখে কোন অনুভূতি নেই
লোকে বলে পাথর চোখ;

তবে কেন জানি পাথর চোখ বাকি সব চোখের অনুভূতি পড়তে পারে
শুধু পারেই যে তা কিন্তু না
কাওকে কাওকে তো ভেতর থেকে টেনে এনে দেখে ফেলি
তারপর নিজেই লজ্জায় পড়ে যাই,
কি সুন্দর মায়াবী দু চোখ! অথচ ভেতরে কি কুৎসিত কালো একটা মন
আবার কিছু কিছু চোখ আছে আমার মত ভাবলেশহীন
অথচে মনের ভেতরটা কানায় কানায় পূর্ণ এক আশ্চর্য মায়ায়;
ছেলেদের চোখ পড়া খুব সহজ
মনের ভাব চোখের ওপর চলে আসে
সে রাগত হলে চোখে আগুন জ্বলে
দুঃখ পেলে কাঁদে
হাসিতে তাদের চোখ হাসে;
মেয়েদের চোখ পড়া বড্ড কঠিন
আরো জটিল হয়ে যায় তারা যখন অভিনয় করে;
কারো কারো চোখে যখন তখন জল আসে
কারো কারো চোখে অভিমান খেলা করে
কারো চোখে রাগের বহিঃপ্রকাশ;
আমি একদৃষ্টে চেয়ে থাকি ওদের দুচোখের দিকে
ওমা! জলে ভরা চোখ অথচ ভেতরে প্রতিহিংসার আগুন!
অভিমানী চোখ অথচ হৃদয়ে কি অসীম মায়া!
রাগত দুচোখের ভেতরে ঢুকতেই অদ্ভুত ভালোবাসার ছায়া;
আচ্ছা! তবে মেয়েগুলো কেন দুচোখে এত অভিনয় করে?

আমি কখন তোর প্রেমে পড়েছিলাম জানিস!
তোর দুচোখ দেখে;
প্রথমে সেখানে কোন ভাব ছিলো না
আমাদের প্রথম দেখায় দুটি কথা বলেই চোখ লুকালি
বড় বড় চোখে চিকচিক করছিলো লবণ
আমি পাথর চোখে ঢুকে গেলাম তোর ভেতর
ওমা! এ যে ভালোবাসার সাগর!
তখনই তোর চোখ টেনেছিলো আমায়
আমি টেনেছিলাম তোকে
বুকে মুখ গুঁজে কি বলেছিলি মনে আছে?
উঁহু! আজ বলবো না
এটা থাকুক না তোর জন্য একটা ধাঁধা;

আমার সবচেয় বড় ভুল হয়েছিল কোথায় জানিস?
তোর চোখ পড়তে গিয়ে,
আমি আটকে গিয়েছিলাম ভালোবাসার মাকড়সার জালে,

অথচ যারা শরীর দেখে তারা সাধারণত ভুল করে না
শরীর দেখা মানেই তো বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখা
শরীর আকৃষ্ট হয় শরীরে
মিলে গেলে লেগে থাকে তারপর ভালো না লাগলে চলে যায় দুজন দুদিকে;
শরীর শরীর খেলায় হৃদয়ের স্থান কোথায়?
মাকড়সার জাল থাকে না শরীরে;

শরীরের আকর্ষণ নেমে যায় শরীর বেয়ে বেয়ে
কাম মিটে গেলে,
অথচ মন আটকে থাকে মাকড়সার জালে
একটি দুটি করে বোনা ভালোবাসার জাল
এ জাল ছিঁড়তে গেলে
কি হয় জানিস?

কিভাবে জানবি বল?
সাগরের লবণ চেখেছিস কখনো?


৩০ এপ্রিল, ২০২০



পছন্দ আর অপছন্দের কারণ



পছন্দ আর অপছন্দের কারণ
- যাযাবর জীবন


জীবনে কত মানুষের সাথেই তো পরিচয় ঘটে!
কত কত পরিচিত মানুষ জীবনের বিভিন্ন অংশে ঘিরে থাকে
পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব; ব্যবসায়িক সম্পর্কের কিংবা শুধুই মুখচেনা;
আচ্ছা! কতজন আমাকে পছন্দ করে?
বেশিরভাগই পছন্দ করে স্বার্থে
অল্প কিছু নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বে
পরিবার তো পরিবারই
আর কয়েকজন ভালোবেসে কারণ ছাড়াই;

মানুষের হৃদয় একটা আজব ঘর
এ ঘরটার এক কুঠুরিতে সে ঢুকিয়ে রাখে যারা তাকে পছন্দ করে
আর অন্য কুঠুরিতে যারা তাকে অপছন্দ করে,
তবে সত্যিকারের মানুষ চেনা!
বড্ড কঠিন,
হৃদয় পারে না;
তার

থেকে পাহাড় চেনা সহজ
সহজ সাগর চেনা
মেঘ চেনা
বৃষ্টি চেনা
আকাশ চেনা
আমি প্রকৃতি চিনতে পারি খুব সহজেই
মানুষ চিনতে পারি না;

ভালো সম্পর্কগুলো খারাপ হয় অর্থে
কত কত বন্ধুত্ব যে নষ্ট করে ফেলেছি টাকা ধার দিয়ে!
মুখের ওপর না বলতে পারাটাও মনে হয় একটা ভালো গুন
আমার মাঝে এই গুনটা শূন্যের কোঠায়,
ফলশ্রুতিতে তারা এখন আমার থেকে অনেক অনেক দূরে,
হঠাৎ সামনাসামনি দেখা হলে চমকে ওঠে
মুখ লুকায় ভীরের মাঝে,
আমি দেখেও না দেখার ভান করি
জানি এরা আর কখনোই ধার ফেরত দেবে না
অল্প কিছু অভাবে, আর বাকিগুলো স্বভাবে
আমি মনে মনে খুব হাসি, এদের মুখচোরা স্বভাবে;

তবে খুব অল্প দু-চারজন কেন যে আমায় অপছন্দ করে তা আমার আজো বোধগম্য হয় নি
মানুষের পছন্দের সুবাস যেমন টের পাওয়া যায়!
অপছন্দের দুর্গন্ধ আমি টের পাই অনেক অনেক দূর থেকে,
আমাকে তাদের অপছন্দ অবোধ্য কোনো এক কারণে;
হয়তো আমার চেহারা খারাপ
বেটে খাটো, ধুমসো মোটা
দাড়িওয়ালা, টাক-মাথা
কিংবা আমার চেহারায় মনে হয় তারা ভূত দেখে
কিংবা আরো খারাপ কিছু,
নাহলে শুধু শুধুই অপছন্দ করবে কেন?
তাও এতটা!
যার দুর্গন্ধ ভেসে আসে অনেক দূর থেকে নাকে;

তা যাই হোক!
আমি তো আর আমার চেহারা বদলাতে পারব না
বদলাতে পারব না স্বভাব
ঐ যে দু চারজন নিঃস্বার্থ বন্ধুবান্ধব
আমার পরিবার
আর দু চারজন অযাচিত ভালোবাসার মানুষ,
এদের নিয়ে খুব ভালো আছি আমি
এরাই আমার জীবনের সুবাতাস।


২৮ এপ্রিল, ২০২০

ডাক্তার সৈনিক



ডাক্তার সৈনিক
- যাযাবর জীবন



একদল সৈনিক
একদল ডাক্তার;

আচ্ছা! ডাক্তারদের কি সৈনিক বলা যায়?
সৈনিক কারা?
দেশ রক্ষায় লড়ে যারা,
তাই না?

এই যে আজকের মহামারী
এই যে করোনা!
শত শত
হাজারে হাজারে
আমার সারাদেশে,
লক্ষ ছাড়িয়েছে পৃথিবী জুড়ে;
এক অচিন শত্রু, প্রাণ নিচ্ছে
কাতারে কাতারে মানুষ কাতরাচ্ছে
মরণ যন্ত্রণায়
চিকিৎসা কোথায়?
এরই মাঝে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে একদল সৈনিক
ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়
চব্বিশঘণ্টা, একনাগাড়ে, ক্রমাগত
এরা সৈনিক নয়?
তবে তো সৈনিকের সংজ্ঞাই বদলে দিতে হয়;

আচ্ছা! তোমরা কি জানো?
আজ এদের কোন বাসাবাড়ি নেই?
দেখা নেই স্বামী স্ত্রীর সাথে সেই কতকাল!
দেখা নেই সন্তানের সাথে;
এরা ক্রমাগত শুধুই ডিউটি দিয়ে যাচ্ছে
হাসপাতালে পড়ে থেকে
তোমাদের বাঁচাতে;

এরা ষোলো থেকে আঠারো ঘণ্টা থাকে হাসপাতালে
যমের সাথে টানাটানি করে
বাকি ছ থেকে আট ঘণ্টা এদের মাথা গুঁজার ঠাঁই দেয়া হয় কোন এক অখ্যাত হোটেলে
এরা টানা সাত থেকে পনর দিন টানা ডিউটি করে, তারপর হয়তো তিন থেকে পাঁচ দিন বাসায় যেতে পারে;
বাসা?
উহু! সেখানেও জড়িয়ে ধরতে পারে না স্বামী স্ত্রী কে,
চুমু খেতে পারে না সন্তানকে,
যে কয়দিন বাসায় থাকার সুযোগ ঘটে এরা থাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে,
বন্দী হয়ে, একদম একলা কোন এক ঘরে;
মাঝে মাঝে দরজা খুলে কেও খাবার ঢুকিয়ে দেয়
আবার খাওয়া হলে বাসন কোষন বের করে স্যানিটাইজ করা হয়;
তারপর তিন বা পাঁচ দিনের ছুটির পর আবার পনেরো দিনের ক্রমাগত অমানুষিক ডিউটিতে ছোটে হাসপাতালে;

তোমরা এদের গালি দাও?
অবহেলার বদনাম কর?
আরে! এরাও তো মানুষ!
শত শত রুগী দেখে ক্লান্ত হয়ে দু একটা ভুল তো হতেই পারে!
আরে! মানুষই তো ভুল করে;

আর একটা যদি ভুল কোনক্রমে হয়!
তখনই দেখা যায়, হলুদ সাংবাদিকতা কারে কয়!
তখনই পুরো নেট জুরে করোনার চেয়ে শক্তিশালী ভাইরাস হয়ে ছড়িয়ে পড়ে,
তোমাদের ভাষায় ভাইরাল বোধহয় একেই বলে;

এরা ডাক্তার, এরা নার্স, এরা ওয়ার্ডবয়
এরা করোনা যোদ্ধা
এরাই আজকের সৈনিক
যুদ্ধ করে যাচ্ছে যমের সাথে, ছিনিয়ে আনতে একটি প্রাণ'কে
যুদ্ধ করছে সম্পূর্ণ অচেনা এক রোগের সাথে
যার কোন প্রতিষেধক তৈরি হয়নি পৃথিবী জুরে,
কাতারে কাতারে মানুষ মরছে অজানা অচেনা এক ভাইরাসে
এদেরই হাতের ওপর দিয়ে
অসম এক যুদ্ধে জয়ী হয়ে
তোমরা প্রতিপক্ষের নাম দিয়েছ করোনা;

লাঠি হাতে কি আর কামানের সাথে যুদ্ধ করা যায়?
এরা কিন্তু করছে
জান প্রাণ দিয়ে লড়ছে
লড়তে লড়তে এরা নিজেরাও মরছে;
অথচ তোমরা অপবাদ দেয়া ছাড়া কিছুই কর না।



২৯ এপ্রিল, ২০২০







মৌনতার চিৎকার



মৌনতার চিৎকার
- যাযাবর জীবন


চুপ,
নৈঃশব্দ্যতা,
মৌনতা,
এগুলোর কি কোন অর্থ আছে?
তবে আমার কানে কেন নৈঃশব্দ্যতার চিৎকার বাজে?
বুকের ভেতরের সমস্ত না বলা কষ্টগুলোর মৌনতাই কি চুপ করে থাকা এক ভয়ংকর চিৎকার?

যখন বুকের ভেতরের চিৎকার অসহ্য হয়ে ওঠে
আমি পাহাড়ে যাই
সুনসান নীরবতার চিৎকার শুনি
নৈঃশব্দ্যতার গান শুনি
তবুও পাহাড়ের বুক ফেটে কান্না বের হয়
তোমরা তাকে ঝর্না নামে ডাকো
পাহাড়ের অশ্রুতে গোসল কর
কখনো পাহাড়ে কান্না শুনেছ কি?
নাকি জানতে চেয়েছ তার নৈঃশব্দ্যতার হাহাকার!
আমার পাথর হয়ে পড়ে রই পাহাড়ের বুকে
তারপর ঐ নীল আকাশটাকে দেখি দুজনে মিলে
পাহাড় কাঁদে ঝর্না হয়ে
আমি নিঃশব্দে;

যখন চোখের ভেতর লবণ লবণ লাগে
আমি সাগরে যাই লবণ ধুতে
সাগরের গর্জন শুনি
ঢেউগুলোর আছড়ে পড়া শব্দ
জানিস! সাগর না সবকিছু বুকে ধরে রাখে
আমার দুঃখ, আমার কান্না, এমনকি আমাকে
আমি ধীরে ধীরে ডুবে যেতে থাকি সাগরে
অথচ আমাকে সে ডুবতেও দেয় না তাতে
একটু পরে ভাসিয়ে এনে আলতো করে তীরে রাখে
চোখের লবণ ধুয়ে নিয়ে নিজে আরেকটু লবণাক্ত হয়
তারপর আমায় ঢেউয়ের গান শোনায়
আমরা দুজন শুয়ে থাকি ওপরের দিকে চেয়ে
আকাশের নীল দেখি দুচোখ ভরে;

জানিস! আমার বোধহয় কখনো আকাশে যাওয়া হবে না
কিন্তু বড্ড আকাশ ধরতে ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে ঐ আকাশের নীলে তোকে আঁকতে
আমি পাহাড়কে বলেছিলাম ইচ্ছের কথা
পাহাড় বলে তার সবুজে তোকে আঁকতে
কিন্তু তুই তো সবুজ নোস
আমি সাগরকে বলেছিলাম ইচ্ছের কথা
সাগর বললো তার সবুজাভ নীলে তোকে আঁকতে
কিন্তু তুই তো সবুজাভ নীল নোস;
তুই আকাশের মত নীল
আমি নীলের মৌনতা দেখি
দেখি আকাশের চুপ করে থাকা
আমার নৈঃশব্দ্যতার চিৎকার আকাশে পৌঁছে কি?
না হলে তোকে আঁকব কোন নীলে?

একদিন দেখিস! ঠিক আমি আকাশে যাব
পৃথিবীতে আর না হয় নাই ফিরর!
তবুও তো নীলে নীল হয়ে রব!

তুই এখান থেকে আকাশ দেখিস
এখান থেকে আমায়
তারপর খুব কান্না পেলে চলে যাস পাহাড়ের কাছে
মৌনতার চিৎকার শুনতে,
নতুবা চলে যাস সাগরের কাছে
অগুনতি ঢেউ গুনতে
কোন একটা ঢেউ হয়তো আমার পায়ে আছড়ে পড়েছিলো কোন একদিন,
যদি চিনতে পারিস ঢেউটা হাতে তুলে নিস
তারপর ছড়িয়ে দিস নীলে।



২৮ এপ্রিল, ২০২০




ভালোবাসার রকমসকম



ভালোবাসার রকমসকম
- যাযাবর জীবন


একটা পরিণত ছেলের আরেকটা ছেলেকে দেখে, মন প্রজাপতি হতেই পারে
সমকামী বড্ড ভালগার একটা শব্দ
ভালোবাসার তো প্রজাপতি মন
যে কারো ঘরেই উড়তে পারে যখন তখন,
তোমার আমার ভালো না লাগতেই পারে!
কোন কোন সমাজে এটাই প্রচলিত এখন;

একটা সুন্দরী মেয়ে দেখলে আরেকটা মেয়ের পেটে ময়ূরী পেখম মেলতেই পারে
সমকামিতায় নারীতে নারীতে এক হতেই পারে মন
শারীরিক ভালোবাসার এটাও এক রকম ধরণ,
তোমার আমার ভালো না লাগতেই পারে!
পাশ্চাত্য সমাজে খুব প্রচলিত এখন;

জায়গীর মাষ্টার'তো আজকাল উঠেই গিয়েছে
একসময় খুব প্রচলিত ছিলো আমাদের সমাজে
টেবিলের ওপরে বই, পাশে হাতে হাত
টেবিলের নীচে হাঁটুর ঘষা হাঁটুতে
ছাত্রী শিক্ষক বায়োলজি পড়া শুরু করে শরীর খুলে খুলে
হয় বিয়ে নয়তো শিক্ষকের তালাক, ছাত্রী পোয়াতি হলে
এটাও এক প্রকার ভালোবাসা, প্রেমের সংজ্ঞায় বলে;

আমি মাঝে মাঝে আয়নাকে জিজ্ঞাস করি, প্রেম কি?
আয়না উত্তর দেয়, এতদিন কি কি দেখলি?
দুদিন চোখে চোখ তারপর হাতে হাত
হালকা অন্ধকার চায়নিজ রেস্টুরেন্ট থেকে বন্ধুর বাড়ি পর্দা টানা ঘর
চুমু খেতে যা দেরী, কাপড় চোপর দুজনারই মেঝেতে
বিছানা না থাকলে মাটিতেই সই!
ওহে বোকারাম! সতীত্ব ডিকশনারির শব্দ
বিয়ের আগে পেট বাঁধে নি, এটাই কৌমার্য;

সমাজে কোথায় যাচ্ছে?
কেন দেখিস না সূর্য অস্ত যায় পশ্চিম দেশে?
ভালোবাসাটা তো সূর্যই
শরীরে যৌবন এলে পূব থেকে ওঠে
পাশ্চাত্যের অনুকরণ করতে করতে পশ্চিমে হেলে
তারপর একসময় যৌবন তো পশ্চিমেই ঢলে;

আয়না আমায় জিজ্ঞাসা করে, তুই কাওকে ভালোবাসিস নি?
আমি উত্তর দেই,
হ্যাঁ, বেসেছি তো!
নিজেকে;
বড্ড স্বার্থপর তুই, আয়না বলে।


২৭ এপ্রিল, ২০২০







তিন পুরুষ



তিন পুরুষ
- যাযাবর জীবন


একটা বিয়ের মূল্য কত?
কিংবা একটা নারীর?

অল্প কিছু দেনমোহর?
তাও তো অনেক দর কষাকষির ফল
কিছু গয়না গাটি?
- উসুল দেয়া হয়ে গেছে দেনমোহরের;
একটা বেনারসি? কিংবা কাতান? কিংবা শুধুই একটা শাড়ী
- যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী;
স্ত্রী কিন্তু চাই অনাঘ্রাতা, কড়করে কুমারী
- বিছানার চাদরে রক্তের দাগ আছে?
ভেবো না এমনিই বলছি! কোথাও কোথাও এটাই রেওয়াজ;
সব মিলে গেলো?
বাহ! এইতো পেয়ে গেলাম বিনি পয়সার দাসী;

একান্নবর্তী পরিবার হলে তো কথাই নেই!
সেই কাক ভোর থেকে শুরু
শ্বশুর শাশুড়ি, দেবন ননদ
হাস মুরগি, গাই বলদ
কুটা বাছা, রান্না বান্না
ঘর ঝাড়পোছ, কাপড় ধোয়া
খাওয়ার পর হাঁড়িকুঁড়ি বাসন মাজা
দুপুর না গড়াতেই রাতের আয়োজন
আবার কুটা-বাছা থেকে শুরু বাসন ধুয়ে শেষ,
আদতে কি শেষ?
এতো গেলো পরিবারের সেবা,
এবার স্বামী রয়ে গেলো না?
আরে অনেক দামে বৌ এনেছি
দিনে সংসারের দাসী
রাতে সেবাদাসী
অসুখ বিসুখ, ক্লান্তি শ্রান্তি!
তাতে স্বামীর কি?

নারীর জীবন বড় অদ্ভুত
জীবনে বাঁধা তার তিন পুরুষ
প্রথম পুরুষ বাবা
- কোলেপিঠে মানুষ
অল্পকিছু দুর্ভাগা, যাদের বাবা থাকে না;

দ্বিতীয় পুরুষ স্বামী
- যার কথা এতক্ষণ বলেছি;
- আচ্ছা! আমার মেয়েটাও তো কারো ঘরে যাবে, সংসার করবে
কখনো মাথায় আসে কি?
তাহলে আরেক ঘরের মেয়ের সাথে এমন আচরণ কি করে করি?

তৃতীয় পুরুষ পুত্র
- এটাও একপ্রকার ভাগ্য;
কারো ভাগ্যে সুপুত্র কারো কুপুত্র
কুপুত্র পাওয়ার চেয়ে পুত্রহীন থাকা বরং ভালো
দেখো না আজকাল চারিদিকে বৃদ্ধাশ্রম!
সিংহভাগ কুপুত্রদের ঠেলে দেয়া আশ্রম
তাও ভালো! আমি ভিক্ষা করতে দেখেছি অনেক মা'কে, পুত্র রাজার হালে থাকে;

আচ্ছা! এই যে তিন পুরুষের কথা লিখলাম!
এরা কারা?
তিনটা পুরুষই তো আমি;
তবে নারীতে নারীতে কেন এত বৈষম্য করি?
- কন্যা আমার কলিজার টুকরা
- বৌ সেবাদাসী
- মা খায় কি খায় না; খবর নেই কি?

আমরা এক একটা আজব প্রাণী
সবাই সবার থেকে ভিন্ন, ভিন্ন আমাদের কাণ্ডকারখানা
আর সংসারটাকে মনে হয় আজব এক চিড়িয়াখানা
এখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা
আর বেশীরভাগ অজানা,
যখন খুব বেশী দ্বিধায় পড়ি
আমি আয়নাকে প্রশ্ন করি;

আমার মাঝে মাঝে খুব লজ্জা হয়
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন একটা পুরুষ দেখি।



২৬ এপ্রিল, ২০২০