শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

তিন পুরুষ



তিন পুরুষ
- যাযাবর জীবন


একটা বিয়ের মূল্য কত?
কিংবা একটা নারীর?

অল্প কিছু দেনমোহর?
তাও তো অনেক দর কষাকষির ফল
কিছু গয়না গাটি?
- উসুল দেয়া হয়ে গেছে দেনমোহরের;
একটা বেনারসি? কিংবা কাতান? কিংবা শুধুই একটা শাড়ী
- যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী;
স্ত্রী কিন্তু চাই অনাঘ্রাতা, কড়করে কুমারী
- বিছানার চাদরে রক্তের দাগ আছে?
ভেবো না এমনিই বলছি! কোথাও কোথাও এটাই রেওয়াজ;
সব মিলে গেলো?
বাহ! এইতো পেয়ে গেলাম বিনি পয়সার দাসী;

একান্নবর্তী পরিবার হলে তো কথাই নেই!
সেই কাক ভোর থেকে শুরু
শ্বশুর শাশুড়ি, দেবন ননদ
হাস মুরগি, গাই বলদ
কুটা বাছা, রান্না বান্না
ঘর ঝাড়পোছ, কাপড় ধোয়া
খাওয়ার পর হাঁড়িকুঁড়ি বাসন মাজা
দুপুর না গড়াতেই রাতের আয়োজন
আবার কুটা-বাছা থেকে শুরু বাসন ধুয়ে শেষ,
আদতে কি শেষ?
এতো গেলো পরিবারের সেবা,
এবার স্বামী রয়ে গেলো না?
আরে অনেক দামে বৌ এনেছি
দিনে সংসারের দাসী
রাতে সেবাদাসী
অসুখ বিসুখ, ক্লান্তি শ্রান্তি!
তাতে স্বামীর কি?

নারীর জীবন বড় অদ্ভুত
জীবনে বাঁধা তার তিন পুরুষ
প্রথম পুরুষ বাবা
- কোলেপিঠে মানুষ
অল্পকিছু দুর্ভাগা, যাদের বাবা থাকে না;

দ্বিতীয় পুরুষ স্বামী
- যার কথা এতক্ষণ বলেছি;
- আচ্ছা! আমার মেয়েটাও তো কারো ঘরে যাবে, সংসার করবে
কখনো মাথায় আসে কি?
তাহলে আরেক ঘরের মেয়ের সাথে এমন আচরণ কি করে করি?

তৃতীয় পুরুষ পুত্র
- এটাও একপ্রকার ভাগ্য;
কারো ভাগ্যে সুপুত্র কারো কুপুত্র
কুপুত্র পাওয়ার চেয়ে পুত্রহীন থাকা বরং ভালো
দেখো না আজকাল চারিদিকে বৃদ্ধাশ্রম!
সিংহভাগ কুপুত্রদের ঠেলে দেয়া আশ্রম
তাও ভালো! আমি ভিক্ষা করতে দেখেছি অনেক মা'কে, পুত্র রাজার হালে থাকে;

আচ্ছা! এই যে তিন পুরুষের কথা লিখলাম!
এরা কারা?
তিনটা পুরুষই তো আমি;
তবে নারীতে নারীতে কেন এত বৈষম্য করি?
- কন্যা আমার কলিজার টুকরা
- বৌ সেবাদাসী
- মা খায় কি খায় না; খবর নেই কি?

আমরা এক একটা আজব প্রাণী
সবাই সবার থেকে ভিন্ন, ভিন্ন আমাদের কাণ্ডকারখানা
আর সংসারটাকে মনে হয় আজব এক চিড়িয়াখানা
এখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা
আর বেশীরভাগ অজানা,
যখন খুব বেশী দ্বিধায় পড়ি
আমি আয়নাকে প্রশ্ন করি;

আমার মাঝে মাঝে খুব লজ্জা হয়
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন একটা পুরুষ দেখি।



২৬ এপ্রিল, ২০২০
















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন