কবিতা লিখব কি করে?
- যাযাবর জীবন
…………………………………
সবাই কি আর কবিতা পড়ে?
কেও কেও পড়ে,
যারা পড়ে তারা বুঝেই পড়ে
আর বাকিরা চোখ বুলায়, খুব অবহেলায়;
কেও ভাত রাঁধে কেও রুটি বানায়
তরকারি কিন্তু সবাই চাখে
রাঁধুনি হয় কজনা?
তোমরা ঐ যে মাস্টার শেফ, মাস্টার শেফ খেলো!
কোটি টাকা খরচ করে ঢাক, ঢোল, ডামামা পিটিয়ে অনুষ্ঠান করো!
আরে বাবা যতই বাইরে চাখো! মা এর রান্না না খেলে কি আর মন ভরে?
কিংবা যার মা নেই সে মাষ্টার শেফের রান্না খেয়ে এসেও
বৌ এর রান্না চাখে, হাত চেটেপুটে;
ধ্যাত! দিলাম তো গুবলেট করে!
বাংলার মাঝে ইংরেজি একটা শব্দ ঢুকিয়ে দিয়ে
আমি আসলে লিখতেই জানি না
কবিতা তো অনেক দূরে!
আমার আঁকিয়েদের অনেক হিংসে হয়
কি সুন্দর সাদা ক্যানভাসে রঙ ফুটিয়ে তোলে!
নীল নীল বেদনাগুলো
লাল লাল ক্ষরণগুলো
জলরঙে চোখের জল আঁকে
সাদা আর ধুসর মিলিয়ে মেঘ
আরো কত কি?
আচ্ছা! ওদের আর্টিস্ট বলে নাকি?
এই ধ্যাত! আবার দিলাম তো ইংরেজি ঢুকিয়ে
বাংলাটা আজো শেখাই হলো না
কবিতা তো অনেক দূরে!
আমি কবিতা বুঝি না
কখনো কবিতা লিখিই নি,
মনের ভেতরের কিছু শব্দ গুঞ্জন করে
- কিছু শব্দ আসে মেঘের থেকে
- কিছু শব্দে ডাকে পাখি
- কিছু শব্দ আসে প্রকৃতি থেকে
- নৈঃশব্দ্যরও কিন্তু অনেক শব্দ থাকে
- আর কিছু কিছু শব্দ থাকে মনের অনুভূতিতে
আমি শব্দগুলোকে সাদা কাগজে কাটাকুটি করি
শব্দগুলো দিয়ে মনে মনে কথা বোনার চেষ্টা করি
অর্ধেক কথা বুঝি বাকিটা নিজেই বুঝি না
না বোঝা অর্ধেক কথাগুলো মাথার ভেতর কেমন জট পাকিয়ে যায়
বোধ্য অর্ধেক কথাগুলোকে কেও কেও কবিতা বলে
আর বাকি লোকেরা আমায় ডাকে, অর্ধমানব বলে;
একদিন মেয়েটা বিকেলে আম ভর্তা বানিয়ে নিয়ে এলো
আমি বুঝে নিয়েছিলাম তার হাতখরচে টান পড়েছিলো
বললাম মানিব্যাগ পকেটে আছে, সে ফিক করে হেসে দিয়েছিলো
আচ্ছা! ঐ হাসিটার মূল্য কি টাকা থেকে বেশী?
একদিন ছেলেটা দুপুরে মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো আর বন্ধুর জুতোর গল্প করছিলো
আমি মনে মনে হেসেছিলাম, বিকেলে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম মার্কেটে;
কোন জুতাটা কিনবি বাপ? তার খুশি দেখে কে?
আচ্ছা! ঐ খুশিটা কি কোথাও কিনতে পাওয়া যায়?
একদিন দুপুরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো
বৌ বলছিলো ওর মার স্পেশাল খিচুড়ির কথা
আমি বুঝে নিয়েছিলাম, গাড়ি বের করে ওকে নিয়ে সোজা শ্বশুর বাড়ি
আচ্ছা! আনন্দ কি টাকায় কেনা যায়?
একদিন মা বলেছিলো
আজ রাতে একটু তাড়াতাড়ি ফিরিস বাবা
আমি বুঝেছিলাম আমার পছন্দের কিছু রান্না হবে
আমি বিকেল বেলায়ই ফিরে এসেছিলাম, বাসা ইলিশের গন্ধে ম ম করছিলো;
জীবনে মাত্র একদিনই বাবা বলেছিলো
আজ অফিসে না গেলে হয় না খোকা?
আমি বুঝে নিয়েছিলাম ওনার শরীর ভালো নেই
আমি সেদিন অফিস যাই নি, অথচ কি এক আশ্চর্য অভিমানে জানি বাবা অন্যভূবন পাড়ি দিলো;
আচ্ছা! কান্নার কি কোন শব্দ আছে?
চোখের জলের তো রঙ আছে,
আঁকিয়েরা জলরঙে চোখের জল আঁকে
কান্না আঁকে কি রঙে?
ভেতর থেকে দমকে দমকে আসা কান্নাগুলোকে কি ছবিতে আঁকা যায়?
কষ্টগুলো কি কবিতায় লিখা যায়?
কান্নাগুলো?
আমি না কখনো কাঁদতে পারি নি,
তাই হয়তো জটবাধা অবোধ্য শব্দগুলো কবিতা হয় নি;
অর্ধমানবের সবকিছুই বোধহয় অর্ধেক,
অর্ধেক বোধ
অর্ধেক বুদ্ধি
অর্ধেক আনন্দ
অর্ধেক কষ্ট
অর্ধেক আবেগ
অর্ধেক ভালোবাসা
আচ্ছা! তোমরা যে ইমোশন বলো! সেটা কি?
ধ্যাত! আবার দিলাম তো বাংলার ভেতরে ইংরেজি ঢুকিয়ে কবিতাটাকে অর্ধেক করে!
বাংলাটা আমার কখনো শেখাই হবে না
কবিতা লিখব কি করে?
১৫ মে, ২০২০
#কবিতা

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন