বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০

কথার টিপ্পনী

বল্টুটা কিঞ্চিত বোকা 

পদে পদে তাই খায় ধোঁকা 

অফিসে বসের কথার টিপ্পনী 

আর বল্টুর সমস্ত শরীর জুড়ে জ্বলুনি; 


একদিন জ্বলুনি সইতে না পেরে নিজেকে বললো

ধ্যুর ছাতা! সইব না আর কথার খোঁটা 

নিজেই ব্যবসায় নামি, সহ্য করব না কারো কথা

মানুষের কথায় মনে লাগে বড্ড ব্যথা;  


চাকরি ছেড়ে বল্টু নামলো ব্যবসায় 

কথার খোঁটা থেকে একটু মুক্তি যে চায় 

অনেক চিন্তা করলো, কি করা যায়?

বন্ধু বান্ধব সব বিভিন্ন কোম্পানির মাথায়;    


ভাবলো বন্ধুরা আছে যখন 

টুকটাক কাজ তো পাবই তখন  

কি করা যায়? ভাবে ওদের কাছে যাই

তারপর বুদ্ধি নিয়ে শুরু করলো ব্যবসা সাপ্লাই; 


নানা রকম আইটেম বল্টুর ব্যবসায় 

ওগুলো নিয়ে বন্ধুদের অফিসে অফিসে যায়

কদিনেই বন্ধুদের বিরক্তি চোখে ভাসে 

চুন পড়তে থাকে বল্টুর ব্যবসার আশে; 


বিশজন বন্ধুর অফিসে ঘুরলে কাজ দেয় একজন

কমদামী মালের কোয়ালিটি নিয়ে তর্জন গর্জন 

স্যাম্পলের সাথে বল্টু সাপ্লাই মিলিয়ে দেখায়

তোমার কম দামির মালের অর্ডারে আমার কি দায়! 

  

কম তেলে মুচমুচে ভাঁজতে যদি না পারো

ব্যবসায় এসেছ কেন? অন্য কিছু করো 

কথা কাটাকাটিতে বন্ধু আটকে দেয় বিল

অর্ধেক বিল তুলতেই বল্টুর বন্ধুত্বে লাগে খিল; 

 

ঠোকর খেয়ে বুঝলো বল্টু, ব্যবসায় ঝামেলা বেশী 

এখানে কাউকেই করা যায় না খুশি 

কাজ পেতে এক কথা, কাজ পেলে আরেক

বিল তুলতে টেবিলে টেবিলে, ঘুষ যন্ত্রণা আরেক;  


একজন বসের কথার হুলে চাকরিটা দিয়ে ছেড়ে

হাজার বস চারিদিকে এখন বল্টুর জীবন ঘিরে 

কথার টিপ্পনী সয়ে সয়েই জীবন চলে হরেদরে  

আর কথা বেচেই আজকাল বল্টুর পেট ভরে। 


 


৩০ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

কথার টিপ্পনী 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





  


চুলকানির মলম

আমাদের বড্ড আজব এক চুলকানি রোগ হয়েছে

আমরা যখন তখন চুলকাই, যেখানে সেখানে;


আগে চুলকাতাম মুখে মুখে 

তারপর মুখেমুখে থেকে ছড়িয়ে একটা সময় কিছু রগরগে খবরের কাগজে

আজকাল যুগের উন্নতিতে ব্যাপক চুলকানি ভার্চুয়াল জুড়ে

যখন তখন, যেখানে সেখানে, যাকে তাকে নিয়ে; 


এ চুলকানি শরীরের নয়, মনের

কারো উন্নতি দেখলে চুলকায়

কারো অবনতি দেখলেও চুলকায়,

কেও ভালো থাকলেও চুলকায়

কেও খারাপ থাকলেও চুলকায়, 

কেও বিয়ে করলেও চুলকায়

কেও বিয়ে না করলেও চুলকায়,

কারো বাচ্চা হলে চুলকায়

কারো বাচ্চা না হলেও চুলকায়,

কারো সংসারে শান্তি দেখলে চুলকায়

কারো সংসারে অশান্তি দেখলেও চুলকায়,

কাউকে আনন্দে থাকতে দেখলে চুলকায়

কেউ দুঃখে আছে জেনেও চুলকায়,

ঘরে বাইরে, সামনে পেছনে, ওপরে নীচে

যে যেখানেই থাকুক না কেন

যে যেভাবেই থাকুক না কেন

অন্যের থাকা ও না থাকা নিয়ে আমাদের বড্ড চুলকায়

দিনে, রাতে, ঘুমে, জাগরণে শুধুশুধুই আমাদের চুলকায়; 


সেদিন একটা খবর দেখলাম এক বয়স্ক লোক বিয়ে করেছেন 

অল্প বয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন 

সে নিয়ে দুনিয়ার চুলকানি পুরো ভার্চুয়াল জুড়ে, 

আরে বাবা! ওনার বিয়ের প্রয়োজন হয়েছে, বিয়ে করেছেন

ওনার ট্যাঁকে ক্ষমতা আছে, বিয়ে করেছেন

দুজনার সম্মতিতে কবুল পড়েই বৈধ উপায়ে বিয়ে করেছেন 

জোর করে করেছেন?

আমার আপনার ওর তার এত চুলকাচ্ছে কেন?

আমরা করতে পারছি না বলে?

নাকি ঈর্ষা পুরো মন জুড়ে চুলকাচ্ছে

আর তা ছড়িয়ে দিচ্ছি ভার্চুয়ালের দেয়ালে দেয়ালে, 

আচ্ছা! আমার চুলকানিতে তার কি এসে গেলো!

অথচ চুলকিয়ে চুলকিয়ে আমার তো পুরো মনটাই ছিলে গেলো, 

উনি তো সুখের দাম্পত্য কাটাচ্ছে রে ভাই!

শুধু শুধু আমার আপনার চোখেই ঘুম নাই, 

এতই যদি চুলকায়! অমন একটা বিয়ে করে দেখিয়েই দেই না!

ধ্যাত! কি সব আজেবাজে কথাই যে বলো না? 


ও হে! উনি বৈধ বিয়ে করেছেন

আর আমি আপনি ওরা তারা ও তারা, যাদের খুব চুলকাচ্ছে

চলুন তাদের একটু দেখি!  

ঐ যে পাশের বাড়ির সুন্দরী! হোক না মেয়ের বয়সী কিংবা মায়ের

সুযোগ পেলেই দু চোখ ভরে দেখি আর মন ভরে চাখি

ওতে দোষ নেই কিন্তু!

আয়নার সামনে হঠাৎ একদিন লাইটটা জ্বালিয়ে মনের ভেতরটায় উঁকি, 

ওকি! ওকি! 

কেন আয়না দেখালে? দিলে তো পরকীয়ার ছুটি করে!

আরে! আরে! লাইটটা কেন জ্বালালে? 

বেশ তো ছিলাম আধো অন্ধকারে হোটেল ঘরে 

বাচ্চা মেয়েটার সাথে জড়াজড়ি করে

আচ্ছা, বলো তো! একটু খরচের জায়গা না থাকলে টাকা কামিয়ে লাভ কি?


ও ভাই! আয়নায় তাকাই

আসেন মনের চুলকানিতে মলম লাগাই,

চুলকানির মলম? সেটা আবার কি? 

ওটা তাদের জীবন, আমার কিছু নয় 

এটুকুই বোধোদয়;  আর লাগে কি?  

অন্যভাবে দেখি! 

আমি আমারটা কামাই, আমারটাই খাই

ওর কি হলো আর না হলো, তাতে আমার কি? 

ওটুকু ভাবতে পারলেই চুলকানি সেরে যাবে 

নয় কি? 


ভাবতে পারছেন না?

তবে চুলকিয়ে যান। 


৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

চুলকানির মলম 

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



  

বন্ধুত্বের স্পর্শাবলি

স্পর্শ খুব অন্যরকম একটা অনুভূতি, 

খুব ভেতরের; 

 

স্পর্শ তো  অনেক রকমই হয়ে থাকে 

প্রতিটা সম্পর্কেই কিছু না কিছু স্পর্শ প্রতিনিয়ত নানা কারণেই ঘটে,   

আজ না হয় শুধুমাত্র বন্ধুত্বে স্পর্শের কথাই বলি! 

শুধুমাত্র ছেলে আর মেয়ে বন্ধুর মধ্যকার নানারকম স্পর্শাবলি; 


ছেলে আর মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব তো হতেই পারে!

বেশিরভাগ বন্ধুত্ব অবশ্য শুধুই নামে 

সত্যিকারের বন্ধুত্ব? 

সে বোঝা যায় স্পর্শে এলে, ভাবছ বন্ধুদের মধ্যে স্পর্শ কেন?

তাও আবার ছেলে আর মেয়ে বন্ধুর মাঝে!

আরে একসাথে চলতে ফিরতে গেলে 

কত কারণে কতভাবেই তো স্পর্শ লেগে যেতে পারে! 


এই ধরো কোথাও একসাথে যাবার প্রয়োজন হলে,

সে গাড়িতেই হোক কিংবা রিক্সাতেই

স্পর্শ তো লেগেই যায়, কোন না কোন কারণে;  

কিংবা ধরো পথ চলতে হঠাৎ হোঁচট খেলে

হাতটা ধরার প্রয়োজন হতেই পারে, 

কিংবা উঁচু নিচু অথবা পিছল পথে পথ চলতে 

হাতটা তো ধরতে হতেই পারে;


ছেলে আর মেয়ের মধ্যে সত্যিকারের বন্ধুত্ব কখন বোঝা যায় জানো?

যখন মেয়েটা এতটুকু অস্বস্তি অনুভব না করেই  

ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাশাপাশি একসাথে রিক্সায় ঘুরতে পারে, 

বন্ধুর পথ চলায় এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই 

প্রয়োজনে ছেলে বন্ধুর হাতটা শক্ত করে ধরতে পারে, 

পথ চলায়, হাত ধরায়, পাশাপাশি যাত্রায় 

মনে এতটুকু অস্বাচ্ছন্দ্য বোধের কোন অনুভূতি স্পর্শ না করে; 

    

মেয়েদের অনুভবগুলো বড্ড তীক্ষ্ণ, অনুভূতিগুলো প্রচণ্ড জোরালো 

মুহূর্তের স্পর্শে তারা চিনে নেয় স্পর্শের ধরণ 

আর মনে স্বস্তির বোধ! ওটাই তো বন্ধুত্ব টিকে থাকার কারণ,

একটা ছেলে আর একটা মেয়ের বন্ধুত্ব;


বন্ধুত্বের স্পর্শ একদম আলাদা একটা অনুভূতি, 

শুধুমাত্র বন্ধুই চেনে, বন্ধু ছেলে আর মেয়ে হলে।  


 

২৯ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা


বন্ধুত্বের স্পর্শাবলি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





নানা রকম উপহার

কত কত উপহারই না পেয়েছি জীবনে!

নানা রকম উপহার,

কিছু উপহার মানুষের দেয়া 

আর কিছু কৃতিত্বের স্বীকৃতি; 


বস্তুগত কিছু উপহার এখনো সাজানো আছে আলমারিতে

ওগুলোর দিকে চোখ পড়লেই মনে পড়ে যায় পুরনো সব দিনের কথা

প্রত্যেকটা উপহারেই জড়িয়ে আছে অনেকগুলো স্মৃতি 

কিছু আনন্দের আর কিছু বেদনার, তবে ওগুলো গোনা গুনতি,

বস্তুগত উপহারের মধ্যে লেখকদের হাত থেকে পাওয়া 

ছাপা অক্ষরের বইগুলো আমার কাছে সবচেয়ে বেশী দামি; 


অবস্তুগত উপহার আমার ঝুলিতে অনেক অনেক বেশী,

ভাবছ, অবস্তুগত উপহার আবার কি?

প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, মিথ্যাচার, ধূর্ততা, অপমান আর পদে পদে ধোঁকা

এগুলোও তো উপহারই, আর জীবনে এগুলোর কোনটাই তো কম পাই নি,   

আপন কিংবা পর জীবনের এক একটা স্তর, 

উপহার দিয়ে গেছে বিভিন্ন জনে, যেগুলো পুরো স্মৃতির আলমারি ঠাঁসা 

আর মস্তিষ্কের পুরোটা জুড়ে এলোমেলো ছড়ানো ছিটানো 

অবস্তুগত উপহারের বাসা; 


কি ভাবছ! এ উপহারগুলো আমায় খুব কষ্ট দিচ্ছে?

আরে নাহ! কোন একটা সময় দিয়েছিলো, আমার খুব দুর্দিনে 

তারপর সময়ের সাথে সাথে উপহারগুলো তো রয়ে গেছে

তবে কষ্টগুলো সয়ে গেছে

আর যারা ঐ উপহারগুলো দিয়েছিলো! তারা তো এখন সামনেও আসে না,  

কখনো ভুলে সামনে পরে গেলে চোখ তুলে তাকাতেই পারে না! 


অবস্তুগত হাজার দুঃখের উপহারের ফাঁকে ফাঁকে

অন্যরকম কিছু উপহার লুকিয়ে আছে

যেগুলো আনন্দ দেয়

যেগুলো দুঃখের উপহারগুলোকে ভুলিয়ে দেয়,  

কিছু সত্যিকারের বন্ধু  

ব্যর্থ কিছু প্রেম 

দাম্পত্য

বাবা-মা

সন্তান

কিছু কিছু মানুষের অযাচিত ভালোবাসা 

স্মৃতির আলমারিতে এগুলোও কম নয় ঠাসা;  


আজকাল কেন জানি প্রায়শই ঘরের আলমারিটার সামনে যাই 

বস্তুগত উপহারগুলোতে চোখ বুলাই, কিছু স্মৃতি খুঁড়ে; 


আবার যখনই একলা থাকি, মনের আলমারিটা খুলে খুলে দেখি

ওখানে থরে থরে সাজানো সুখ ও দুঃখের অবস্তুগত উপহারগুলো,  

আমি একটি একটি করে উপহার নামাই, কিছুক্ষণ চেয়ে থাকি

ঝেড়ে মুছে আবার মনের আলমারিতে তুলে রাখি, স্মৃতির পালক মুড়ে; 


মানুষের জীবনে কত রকম উপহারই না থাকে! 

আমি অবস্তুগত উপহারে পরিপূর্ণ, স্মৃতির উপহারের ভীরে। 



২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা


নানা রকম উপহার 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





দৃষ্টি

চোখ অনেক কথাই বলে, 

মানুষের চোখ; 


পুরুষের চোখের ভাষা একরকম

নারীর অন্যরকম

পুরুষ কবে নারী পড়তে চেয়েছে? চোখ পড়ে;

নারী কিন্তু পুরুষ পড়ে নেয়, চোখ পড়ে; 


কেউ কেউ চোখ পড়তে পারে, কেউ পারে না

বেশিরভাগ মানুষ চোখের দিকে তাকায়ই না

ওরা শুধু অবয়ব দেখে, তাকিয়ে থাকে শরীরের দিকে

বিশেষ করে পুরুষ লোকে, সামনে যখন নারী থাকে; 


নারী কিন্তু চোখ দেখেই মন পড়ে নিতে পারে

পুরুষের মনের ভাষা যখন চোখে ফুটে ওঠে

বিশেষ করে চোখে যখনই নোংরা লালসা ভাসে 

বোকা পুরুষ শুধু শুধুই দূর থেকে বিকৃত দৃষ্টি হানে;


ওহে! দৃষ্টি হানছ কেন?

 - আরে! আমি তো শুধু দেখছি!


দেখছ না চাখছ?

 - নিজের কাজে যাও তো বাপু!


পুরুষের দৃষ্টি পেছন থেকেও নারীর পিঠে বিঁধে থাকে  

নারী সামনে হাঁটে অস্বস্তি নিয়ে, আপাদমস্তক নিজেকে ঢেকে ঢুকে।


 

২৭ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা


দৃষ্টি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 


 






স্বপ্নের সমাপ্তি

একদিন স্বপ্নগুলো স্বপ্ন নিয়ে খেলছিল চোখের ভেতর 

একদিন স্বপ্নে স্বপ্নে তুই চলে এসেছিলি স্বপ্নের ভেতর 

অনেক কথোপকথনের পরে 

স্বপ্নে স্বপ্নে তুই চলে এলি ঘরে

তারপর ঘুমটা ভাংতেই চোখে আলো

কোথায় তুই? 

খুঁজতে খুঁজতে খুঁজতে খুঁজতে 

মন করে ফেলেছিলেম কালো; 


তারপর পার হয়ে গেছে বহু বহুদিন

এখনো শোধ করা হয়নি সেদিনকার স্বপ্নের ঋণ, 

তারও অনেক অনেকদিন পর 

সূর্যের দিন আর অন্ধকার ঘর 

অনেকগুলো তারার রাত অনেকগুলো অন্ধকার

অনেকগুলো চাঁদ, অনেক রাত জ্যোৎস্নার 

রাতগুলোতে কিছু আলো এসেছিলো

সবুজ বনে হলদেটে দাগ কেটেছিলো 

কিছু বর্ষা ছিলো, ছিলো কিছু বৃষ্টি 

কিছু শীত ছিলো আর ধুসর কুয়াশা

অনেকগুলো শরৎ এসেছিলো, সাদা সাদা মেঘে

অনেকগুলো গ্রীষ্ম এসেছিলো, ভ্যাপসা গরম নিয়ে

বসন্তগুলো এলো আর গেলো নতুন পাতা মেলে 

স্বপ্ন কিন্তু আর আসে নি 

চোখে ঘুম বসে নি

তুই আসবি কি করে? 

তবুও মনের আশে চোখের পাশে পাশে 

স্বপ্ন খেলা করে 

একদিন তুই আসবি বলে

গাঢ় ঘুম স্বপ্ন হলে;  


একদিন খুব জ্যোৎস্না হবে

টকটকে গাঢ় হলুদ জ্যোৎস্না 

সেদিন কুয়াশা থাকবে না আকাশে

থাকবে না সাদাকালো মেঘ 

সেদিন স্বপ্নেরা নেমে আসবে চোখ বেয়ে 

চাঁদের বুড়ি আসবে তোকে নিয়ে,  

দেখিস! আসবেই একদিন সময় 

অপেক্ষার প্রহর 

ছোট কিংবা বড়

লম্বা কিংবা খাটো 

একদিন শেষ হতেই হয়! 


২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ 


স্বপ্নের সমাপ্তি

 - যাযাবর জীবন 







স্মৃতির ঝুল গাছ

ঐ গাছটা দেখছো?

ঝুল গাছ,

রাশি রাশি স্মৃতির ঝুল নেমে এসেছে ডালগুলো থেকে; 

 

আসলে গাছ নয় 

আমি বলবো মহীরুহ,

তোমরা শতবর্ষী অশথ মহীরুহ দেখেছ, 

আমার এ গাছটার বয়স মাত্র সত্তুর বছর

অথচ অশথ থেকে হাজার গুণ বেশী ঝুল নেমে এসেছে, 

স্মৃতির ঝুল

অনেক অনেকগুলো ডাল থেকে;


ডালগুলো নানা রকম আবেগের, 

কিছু আনন্দের, কিছু দুঃখের, কিছু ভালোবাসার, কিছু কান্নার

কিছু কিছু অন্যরকম অনুভবের 

কিছু ডাল শুধুই স্মৃতির, জীবনের অনেকগুলো ঘটে যাওয়া ঘটনার, 

আনন্দের বড় ডাল'টায় অট্টহাসির একটি ঝুলও নেই 

আসলে ওটা আমার প্রকৃতিতেই ছিলো না, 

অথচ দুঃখের বড় ডালটারও একটি ঝুল কিন্তু আছে বিশাল এক অট্টহাসির

তোমরা ভাবছ দুঃখের ডালে অট্টহাসি!

আচ্ছা সে কথায় পরে আসি;


মায়ের পেটের স্মৃতি মনে নেই

ঝুলডালে ঝুলছে না জন্মের সময়কার স্মৃতিও 

তারপর থেকে কিছু কিছু স্মৃতি জমা হতে থাকে ঝুল ডালে

সেই ছোট্ট সময়কার স্বাধীনতা সংগ্রামের খুব আবছা একটি স্মৃতি

বাগানে গর্ত করে বসে থাকার কথা ঝুলছে ঝুলডালে,

একদিনের ঘটনা,

তখন বয়স বোধহয় বছর দশেক 

কার বাড়িতে জানি দাওয়াতে গিয়ে মিষ্টি খাওয়ার বায়নায় গড়াগড়ি করেছিলাম মাটিতে 

মায়ের কি লজ্জা! হাবলা ছেলেটার অবুঝ বায়না 

ঐ স্মৃতিটা আজো ঝুলছে নামহীন একটি ডালে, আমি ওটার কোন নাম দেই নি 

তবে যখনই মনে পড়ে, একা একা মুচকি হাসি;


আনন্দ ডালে কত কত আনন্দের স্মৃতিই না ঝুল খেয়ে আছে!

বেশীরভাগ ছোটবেলার, বন্ধুদের সাথে হাসি খেলার

সেই যে ভোর বেলায় সবাই মিলে ফুটবল খেলতে যেতাম!

তারপর কোনমতে বাসায় ঢুকেই দৌড়ে স্কুলের প্রস্তুতি

আর স্কুল জীবন? সে তো পুরোটা জুড়েই আনন্দ আর খুশি

মাঝে মধ্যে অবশ্য অল্প একটু দুঃখ 

অল্প একটু কষ্ট, ঐ দুঃখ ডালে একটি চিকন ঝুলে, 

আর মহীরুহের বিশাল এক ডাল জুড়ে স্কুলের আনন্দ স্মৃতি

শত শত হাজার হাজার ঝুল নেমে এসেছে আনন্দ ডাল থেকে

আসলে স্কুল জীবনটা প্রত্যেকেরই বোধহয় অন্যরকম অনুভূতি;  


কলেজ জীবন? 

পুরো স্মৃতিই আমি রেখেছি ঘটনা ডালে

নটরডেমের ছাত্রদের আনন্দ করার অবসর হয় না

তবুও ওখান থেকেই ঝুলছে অল্প কিছু আনন্দ আর বেশিরভাগ শাসনের ঝুল;


বিশ্ববিদ্যালয় জীবন?

পুরোটাই আনন্দের আর বাকিটুকু ঘটনার ঘনঘটা

যার বেশিরভাগ ছাত্র রাজনীতির নিস্পেষণে পেষা

এ স্মৃতির ঝুলগুলো এখনো বেশ তাজা; 


ভালোবাসার জীবন?

স্মৃতিতে ঠাঁসা, হাজার হাজার ঝুল মহীরুহের বিশাল ডাল জুড়ে

কোনটা রেখে কোনটায় ঝুলব! 

সেই ক্লাস ফোর থেকে তো শুরু  

প্রেম ছিলো? নাকি নারীতে প্রথম আকর্ষণ?

লিঙ্গের বিভাজন, নর ও নারীর বোধন;

তারপর তো এক একটা ঝুল, এক এক সময় এক একজন 

সিংহভাগ ঝুল অল্প একটু নেমেই শেষ হয়ে গিয়েছে

বেশিরভাগ আনন্দের আর অল্প কিছু কষ্টের, 

তারপর তো জীবনে তুই এলি 

 - তুই থাকতে ভালোবাসার ডালে আর কেউ বসে! 

 - একটি তুই এ জীবন পার

 - কজনার ভাগ্যে জোটে? 

ভালোবাসার ডালের বাকি সব ঝুলগুলোই গুটিয়ে গিয়েছিলো তোর জীবন কালে;


স্মৃতির মহীরুহ তে সবচেয়ে আনন্দের ঝুল? 

 - আমার জীবনে তোর আসার দিনটার স্মৃতি

তারপরের আনন্দের ঝুল?   

 - আমার প্রথম সন্তান হওয়ার আনন্দ

তারপর তো প্রতিটা সন্তান এক একটা আনন্দ, এক একটা খুশি

আনন্দের ডালে ঝুল রাশি রাশি; 


দুঃখ ডালে জীবনের কত কত দুঃখগুলোই না ঝুলছে! 

ঐ যে প্রথম দুঃখের বড় ঝুলটা?  

 - আমার একটা সন্তান মারা যাওয়ার দুঃখ, 

সেটা কত বড়? 

 - বাবার কোলে সন্তানের লাশ তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না, 

যতদিন তুই ছিলি, ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম সমস্ত দুঃখগুলি 

আর দুঃখ ঝুলগুলোকে একটি একটি করে আড়াল করে রেখেছিলি ভালোবাসার ঝুলে, 

তারপর সেই ভয়াবহ স্মৃতি

হুট করে কিছু না বলেই চলে গেলি

একটি মৃত্যু একটি জীবন'কে কিভাবে ওলোটপালট করে দেয় আগে বুঝি নি, 

তারপর তো ভালোবাসার ডাল ভেঙে পুরোটাই দুঃখের ঝুলে

সেও তো বছর পাঁচেক হয়ে গেছে;  


জানিস! তারপর না স্বার্থের ঝুল দেখেছি

আগেও দেখেছিলাম অনেকবার, তবে তুই সামলে নিয়েছিলি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই 

তবে এবার আসলো সন্তানদের কাছ থেকে,

ওদেরই বা দোষ দেই কি করে! 

ওদেরও তো জীবন আছে! আছে প্রাইভেসি

ছেলের তিন হাজার স্কয়ারফুটের ফ্ল্যাটে একটা বুড়ো বড্ড বেশী,  

মেয়েগুলো তো সব বিদেশে, যার যার সংসারে

বাপকে দেখবে কিভাবে?

কিছু ডলার পাঠিয়ে যার যার কর্তব্য 

ও হে! এর থেকে বেশী কি আশা করো? 

আত্মীয় স্বজন? সে তো একমাত্র ছিলি তুই - আত্মার সাথে জড়িয়ে 

আর বাকিরা? 

আরে ওরা তো ছিলো টাকার আর স্বার্থের

বুড়োর দরকার ফুরিয়েছিলো তাদের অনেক আগেই, 

ভাই বোন? 

ওদেরও তো যার যার জীবন, 

ভাইটাকেই কোনদিন জানি এখানে চলে আসতে হয় আমার সঙ্গী হয়ে!  

ভালোই হবে, স্মৃতির ডালে ঝুলব দুজনে মিলে, 

ঐ যে দুঃখের অট্টহাসির কথা বলেছিলাম না!

 - ওটা একবারই হেসেছিলাম, যেদিন বৃদ্ধাশ্রমে এসেছিলাম; 


জীবন নামের গাছে কত রকম স্মৃতির ঝুলই না ঝুলে!

আমি বৃদ্ধাশ্রমের ঝুল বারান্দায় বসে ঝুলছি স্মৃতির ঝুল গাছে। 



২৩ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা

স্মৃতির ঝুল গাছ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 





 

স্মৃতির গাড়ি

চোখের পলকে উড়ে যায় সময় 

স্মৃতির পালকে জমে থাকে কিছু স্মৃতি,  

সময় একটা অদৃশ্য গাড়ি 

মুহূর্তগুলো পিছু ফেলে মুহূর্তের ঝড়ো গতি; 


ভালোবাসার প্রথম দেখা, মনে আছে? 

এই তো সেদিন! অথচ পার হয়ে গেছে যুগ যুগ

মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি সময়কে ধরে রাখা যেত!

আয়নার চেহারায় এত কি বলিরেখা হতো? 

 

সময় দৌড়চ্ছে সময়ের দৌড়, সময় কি দেখা যায়? 

মাঝে মধ্যে ঝাপ্সা চোখ কিছু ঝাপ্সা স্মৃতির বেদনায় 

চোখ অতটা খারাপ নয় তবুও চশমার কাঁচ ঘোলা ঘোলা  

শীতের কুয়াশায় মনে যখনই কিছু অলস স্মৃতির খেলা;   


স্মৃতির কিছু পালক ওখানে ছিলো, কিছু পালক এখনো এখানে  

কিছু স্মৃতি মধু মাখা ছিলো, কিছু তিক্ত আর ছিলো কিছু মিশ্র    

পালকগুলোয় মন বুলোতেই মনে মনখারাপের ছায়া   

আর স্মৃতিগুলো মন খুঁড়তেই মনে ভালোবাসার কায়া।



২৩ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা

স্মৃতির গাড়ি

 - যাযাবর জীবন 









কলমের আঁক

ওহে কলম! 

এই যে তুমি লিখ!

সব কি তোমার কথা?


 - নাহ!

কিছু আমার, কিছু তার, কিছু ওর

আর বাকিগুলো অনুর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা;


আচ্ছা! এই যে ক্রমাগত লিখে যাচ্ছ!

পেছনের লিখাগুলো পড়ে দেখ? 


  - আরে নাহ!

এত সময় কোথায়? 

আমি ব্যস্ত লিখায়; 


এই যে লিখছ!

এগুলোর কথা মনে থাকে? 


 - উঁহু! আসলে থাকে না

যখন যা মনে আসে সেটুকুতেই কাগজে কাটাকুটি

তারপর স্মৃতি থেকে ছুটি;


তবে লিখে লাভ কি?


 - লাভের জন্য তো লিখি না!

 

তবে লিখ কেন?


 - মন ভালো হলে, মন খারাপ হলে

কেও আনন্দ দিলে, কেও দুঃখ দিলে

অসংগতি দেখলে, পশুত্ব দেখলে 

কোন অনুভব অনুভূতিতে দাগ কাটলে;


লিখার পর?


 - লিখার পর হালকা হয়ে যাই 

তারপর সব ভুলে যাই;


আনন্দ ভুলে যাও? দুঃখ?

মানুষের দেয়া কষ্ট?


 - আমার অনুভূতি প্রবল

সে সুখেরই হোক আর দুঃখের

দুটোই নাড়া দিয়ে যায়, কিন্তু প্রকাশ তো করতে পারি না

তাই কাগজে আঁকি, কিছুদিন খুব আনন্দে থাকি কিংবা দুঃখে

তারপর ধীরে ধীরে স্মৃতিগুলো ফিকে হয়ে আসে

ভুলে যাওয়া রোগ, ওটা আমার প্রকৃতিতে

ভাগ্যিস ভুলে যাই! না হলে স্মৃতিগুলো বড্ড বেশী খুঁড়ত নিওরণ কোষে;


কোন একদিন লিখতে ভুলে গেলে?


 - কবর দিয়ে দিও নিথর কলম'টাকে। 



২১ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা


কলমের আঁক

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




 

স্পর্শের সমাপ্তি

এই যে আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে থাকিস!

মুঠোতে ভরে হাত, 

এভাবেই বছরের পর বছর পার হয়ে হয়ে 

স্পর্শে স্পর্শে কেটে যাচ্ছে যুগ যুগ রাত;


সেই যে প্রথম রাত থেকে শুরু

আঙুলে আঙুল, হাতে হাত

তিরিশ বছর হয়ে গেলো আজো রাতে মুঠোবন্দি হাত

ওখানে ভালোবাসা, নির্ভরতা আর ঘুমনোর অভ্যাস;


জীবনের হিসেবে তিরিশ বছর বেশ অনেকটাই সময়

মহাকালের হিসবে হয়তো তিরিশ সেকেন্ড মাত্র!

আমরা আমাদের জীবনের হিসেবেই বাঁচি, জীবনকে ঘিরে

সুখ দুঃখ হাসি কান্নার অনুভব সব দাম্পত্য ঘিরে;


কোন এক রাতে হাতে হাত ধরে ঘুমোতে যাবি 

তাহাজ্জুদের এলার্মে কিংবা ফজরের আজানে ঘুম ভেঙে উঠবি

আমার হাত তখনো তোর মুঠোবন্দি,  

হয়তো কোন এক গরমের রাতে ফ্যান চলছে ফুল স্পীডে

এই গরমেও হাতটা কি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ঠেকছে?  

কিংবা হয়তো কোন এক শীতের রাতে লেপমুড়ি দুজনে

লেপের ওমের নিচেও হাতটায় বরফ অনুভূতি, 

একটু কি চমকে উঠলি? 

     

নামাজে ওঠার জন্য ধাক্কা দিবি, 

ও কি? শরীরটা বেশ ভারী ভারী 

মুঠো খুলে গায়ে হাত রাখতেই  

হাতে অন্যরকম অপরিচিত এক ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভূতি, 

ধরমর করে উঠে বাতি জ্বালাবি 

নিঃশ্বাসের আশ্বাসে নাকে আঙুল রেখেই স্তব্ধ 

বুকে কান পেতে স্পন্দন অনুভবের চেষ্টা

তারপর আকুল কান্না;


শব নামাজ পড়বে কিভাবে রে! 


 

২০ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

স্পর্শের সমাপ্তি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০

হাতে হাতে গল্প

বাসর রাত হাতে হাত 

ভয় আর শিহরণ বেশী কিংবা অল্প 

আঙুলে হাতের খেলায় রচে কিছু গল্প 

 

হাতে হাতে খেলা 

পুরোটা রাতের বেলা 

আর আবেগের কিছু গল্প 

 


হাতের চাপে হাত 

হাতে হাত ঘষাঘষি 

অল্প কিংবা বেশী ভাবাবেগ কিছু আসি 

 

মুঠোতে মুঠো বন্ধ

শরীরে শরীর 

ঘরময় ম ম কাম গন্ধ  

 

আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে হাতের ওপর হাত 

শরীর শরীর কথায় পার হয় রাত 

ভালোবাসার পুরো রাত 

 

ভালোবাসার বিনিময় শেষে 

ক্লান্ত শ্রান্ত দুজন অবশেষে 

হাতে হাত জড়িয়ে রয় 

 

ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকে কাম

শরীর কথা কয় 

শরীরে শরীরে ভালোবাসার বিনিময় 

 

ভালোবাসায় ভালোবাসা, কামে কাম 

শরীর জুড়ে আবেশ জড়িয়ে রয়

ভালোবাসা কথা কয় 

 

২০ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

হাতে হাতে গল্প 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



স্পর্শে চেনা

স্পর্শ তো সবাই চেনো

স্পর্শের অনুভূতিগুলোও সবাই জানো

অনুভূতিগুলোর পার্থক্য বুঝতে পারো?

স্পর্শ আর স্পর্শের পার্থক্য?

আমি পুরুষ আর নারীর স্পর্শের কথা বলছি; 


স্পর্শগুলো এক এক বয়সে এক এক রকম

এক এক বয়সের স্পর্শের এক এক ধরণ, 

কৈশোরের স্পর্শে কিছু কামের আবেশ  

যৌবনের স্পর্শে প্রবল কামাবেগ 

প্রৌঢ়ত্বের স্পর্শে নির্ভরতার আবেশ

বার্ধক্যের স্পর্শ, কেও তো আছে অনুভবের!  


স্পর্শ মানে শুধু ছুঁয়ে দেখা নয়

স্পর্শ মানে ছুঁয়ে থাকা

শরীরে শরীরে, মনে মনে

স্পর্শ যদি মনে নাই হলো তাহলে আর অনুভূতি দাগ কাটে কোথায়?

কেউ যুগ যুগ স্পর্শে অনুভূতিহীন দিন কাটায় 

কেউ বা একটু ছুঁয়ে দিয়েই অনুভবে হারায়

সে ভালোবাসার অনুভবই হোক কিংবা ঘৃণার অথবা নির্ভরতার;  


কিছু পুরুষ শুধুই ছুঁয়ে যায় 

সকল নারীই অনুভব করে 

অল্প কিছু পুরুষও আছে, অনুভূতি হৃদয়ে ধরে; 


স্পর্শ সবচেয়ে ভালো চেনে নারী। 

 

১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

স্পর্শে চেনা 

 - যাযাবর জীবন 

 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



সংজ্ঞার খোঁজে

স্বাধীনতা দিবসে কোথায় জানি পরাধীনতার শিকলের ঝনঝন ঝনঝন শব্দ 

বিজয় দিবসে পরাজয়ের গ্লানিবোধ 

তবে কি স্বাধীনতা আসে নি?

বিজয় রচে নি?


শহীদ দিবসে আজো কি শহীদ হচ্ছে না বর্ডারে?  

ভাষা দিবসে ভাষার অবমাননা! 

নারী দিবসে ধর্ষণ 

পুরুষ দিবসে খুন;


বাবা দিবসে ভিটে ছাড়া হয় বৃদ্ধ বাবা 

মা দিবসে বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ মা 

বোন দিবসে স্বার্থের কথোকথা

ভাই দিবসে ভাগ বাটোয়ারা;  


ভালোবাসা দিবসে ভায়োলেন্স 

বিবাহ বার্ষিকীতে পরকীয়া 

জন্মদিনে মৃত্যুর সমন 

এগুলো আজকাল খুব হরেদরে; 


বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান এগুলো এক একটা শব্দ

সম্পর্কের সাথে জড়িত, 

কিছু সম্পর্ক আমারও আছে, আছে কিছু স্বার্থ 

একটা ঘরও আছে আমার, আর আছে কিছু মানুষ; 

সম্পর্কগুলোতে সুখ আছে কি?  

সুখের সংজ্ঞা খুঁজছি; 


স্বাধীনতা, বিজয়, ভাষা, শহীদ এগুলোও এক একটা শব্দ 

দেশের সাথে জড়িত, 

আমার একটা দেশ আছে, লাল সবুজের পতাকা আছে

আমার একটা ভাষা আছে, আমার ভাষায় দিবস আছে; 

আমি কি স্বাধীন?

স্বাধীনতার সংজ্ঞা খুঁজছি। 



১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ 

#কবিতা

সংজ্ঞার খোঁজে 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





কলম তুমি মনের ভাবে

কলম তুমি কখন লিখ?.

যখন আমার মন খারাপ; 


মন খারাপে কি লিখ? 

কবিতার টুকরো শব; 


কেন কান্না লিখতে পার না? 

পারি তো! যখন আমার হাসি পায়! 


মাঝে মাঝে যে হাসি আঁক?

ওটা চরম মন খারাপে; 


আর কান্না পেলে? 

সূর্যাস্ত দেখি, জ্যোৎস্না আঁকি; 


ভালোবাসা আঁকতে পারো? 

অপছন্দ যখন ঘিরে ধরে;  


রিপু লিখ কখন?

কাম সাগরে ডুব দিয়ে; 


আচ্ছা! স্বার্থ আঁকতে পার? 

এঁকেছি তো! সম্পর্ক ভেঙে; 


তাহলে সম্পর্ক আঁকবে কি দিয়ে? 

একলা রাতে, অন্ধকারে; 


একদিন কিছু আনন্দ এঁকে দেখাও না! 

ওটা তো এঁকেই যাচ্ছি, কাঁদতে কাঁদতে।


১৫ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

কলম তুমি মনের ভাবে 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




সকাল দেখা

সূর্য প্রতিদিনই ওঠে

সকাল প্রতিদিনই আসে,  

এক একটা সকাল এক এক রকম 

প্রত্যেকটা সকালই নতুন, প্রত্যেকটা প্রত্যেকটার থেকে আলাদা

প্রত্যেকটাই কিন্তু সকাল অথচ একটার সাথে অন্যটার পার্থক্য কি ভীষণ!

 

আমি প্রাকৃতিক পার্থক্যের কথা বলছি না 

বলছি না ঋতুভেদের কথা 

শীতের কুয়াশার সকালের সাথে তো বর্ষার বৃষ্টিস্নাত সকাল আলাদা হবেই

কিংবা হেমন্তের সকালের সাথে বসন্তের 

অথবা গ্রীষ্মের সকালের সাথে শরতের; 


আমি ভাবাবেগের পার্থক্যের কথা বলছি

ভাবাবেগে সকাল দেখার কথা বলছি; 


ধর রাতে খুব ভালো ঘুম ঘুমিয়ে, ঘুম থেকে উঠে সূর্য দেখা 

আর সারারাত না ঘুমিয়ে দুপুরে সকাল দেখা, এক হলো? 

কিংবা ধর একাকী রাত কাটিয়ে সকাল হওয়া 

আর রাতে প্রেম শেষে প্রিয়ার বুকে শুয়ে সকাল দেখা, এক হলো?

অথবা সারারাত দুজনে তুমুল ঝগড়ায় সকালে একজন বাড়ি ছেড়ে যাওয়া

আর ভোরের সূর্যে মিটমাট হয়ে প্রেমে মত্ত হয়ে সকাল দেখা, এক হলো?

সকালে তো কত কিছুই হতে পারে! 

কত ভাবাবেগেরই তো পরিবর্তন হয়ে যায় যা ছিলো রাতের অন্ধকারে, তাই না? 

  

আমি নতুন সূর্যে নতুন সকাল দেখতে চাই ধনাত্মক ভাবাবেগে

ঋণাত্মক চিন্তাভাবনা নতুন সূর্যকে কেবল কুয়াশায়ই ঢেকে রাখে

প্রকৃতিতে নয় কিন্তু! মনের গহীন কারাগারে, 

ভাবাবেগের সাথে সকালের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছ? 

মনটা বড় অদ্ভুত, তাই না! 


পূবাকাশে ঐ যে সূর্য উঠছে,  

ঐ দেখ পাখিগুলো উড়ছে

চলো সকাল দেখি। 


১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

সকাল দেখা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 





আঙুলে আঙুলে গল্প

প্রথমে যেদিন আঙুল ছুঁয়ে দিলি আঙুলে

সেদিন মনে এক অন্যরকম শিহরণ

তারপর আঙুলে আঙুল রেখে কিছু পথ

 

একদিন কফি শপে টেবিলের দুপাশে দুজন

আঙুলে আঙুল স্পর্শে ভাবাবেগ

আর ঠাণ্ডা কফির কাপ  


ঘনিষ্ঠতায় আরেকটু কাছে আসা

টেবিলের একপাশে বসে আঙুলে আঙুলে খেলা

কফির কাপ চুমুকের অপেক্ষায়


তারপর নির্ভরতা

আঙুল থেকে হাতে হাত

একসাথে বাড়ি ফেরা  


আঙুলের নির্ভয়তা হৃদয় ছুঁয়ে দিতেই

বুকের ওপর হাত

ভালোবাসার ধুকপুক  


হৃদয় হৃদয় ছুঁয়ে দিতে ঘর বাঁধার স্বপ্ন

তারপর আবার আঙুলে আঙুলে

বন্ধনে আংটি বিনিময়


আংটিতে আংটি আঙুলে আঙুল

জোড়া বেঁধে রয়

ভালোবাসা কথা কয়  


নির্ভরতায় নির্ভরতা, ভালোবাসায় ভালোবাসা

শরীরে শরীর জড়িয়ে রয়

ভালোবাসা কথা কয় 


০৯ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

আঙুলে আঙুলে গল্প 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




সময়ের পরিবর্তন

একটা সময় ছিলো সারারাত শুয়ে থাকতি বুকের ওপর

বুকের ধুকপুকে ঘুমপাড়ানি গান 

আর পুরোটা বিছানা খালি,

  

একটা সময় বুক থেকে নেমে এলি হাতের ওপর

তখনো একটা বালিশেই বেশ হয়ে যেত

বিছানাটা তখনো বেশ খালি খালি,  


তারপর দুটো বালিশ এলো

যার যার বালিশে মাথা রেখে হাতে হাত স্পর্শ 

বিছানার কিছু জায়গা নষ্ট,  


তারপর সময়ের সাথে একটা বালিশ এলো পাশবালিশ হয়ে, 

আজকাল যার যার বালিশ আর যার যার কোলবালিশ

ওরাই পুরোটা বিছানা দখল করে থাকে, 

এক কোনে তুই 

এক কোনে আমি;


সময় কতকিছুই না বদলে দেয়! 

অনুভূতিগুলো কি বদলায়?

ভালোবাসা?


আজকাল পুরনো স্মৃতিগুলো বড্ড ভাবায়। 


    

০৮ ডিসেম্বর, ২০২০

#কবিতা 

সময়ের পরিবর্তন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



  

স্পর্শে অনুভব, স্পর্শে অনুভূতি

স্পর্শ চেনো? 

স্পর্শে অনুভব, স্পর্শে অনুভূতি; 


কিছু স্পর্শ আনন্দের

অনুভব ভরসার

কিছু স্পর্শ গা রিরি করা

অনুভব ঘৃণার,

কিছু স্পর্শ পরিচিত 

কিছু অপরিচিত

কিছু স্পর্শ অনুভব জাগায়   

কিছু স্পর্শ মানুষ চেনায়;  


বাবার স্পর্শ নির্ভরতার 

মায়ের স্পর্শ আদর মাখা

ভাইয়ের স্পর্শ ভ্রাতৃত্বের 

বোনের স্পর্শ স্নেহে ভরা 

সন্তানের স্পর্শে সিক্ততা, 

এ সম্পর্কগুলো রক্তের তবুও স্পর্শ স্বল্প সময়ের

একটি স্পর্শ সারাজীবনের, সেটি দাম্পত্যের; 


স্বামী স্ত্রী যুগ যুগ পরস্পরের স্পর্শে কাটায়, 

কিছু দম্পতি ভালোবাসায়

কিছু দম্পতি অনুভূতিহীন হয়ে 

আর কিছু দম্পতি বিশেষ সময়ের স্পর্শ সয়ে যায়, বিবমিষায় 

এরা কিছুটা বাধ্য হয়েই দাম্পত্য কাটায়

স্পর্শ অসহ্য হয়ে গেলে বিচ্ছেদে দুজন দুদিকে;


আমি স্পর্শের কথা বলছি, 

আচ্ছা! স্পর্শ কি শুধুই ছুঁয়ে দেয়া? 



০৭ ডিসেম্বর, ২০২০

#কবিতা

স্পর্শে অনুভব, স্পর্শে অনুভূতি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





সুখ দুঃখ পিঠাপিঠি

এই যে কাঁদছ! 

অনেক দুঃখ বুঝি?

গতকালের কথা স্মরণ করো তো!

ওখানে অনেক আনন্দ ছিলো

হাসি ছিলো তোমার মুখে

তাই না?


ঐ যে শীতের পাতাঝরা ন্যাড়া ন্যাড়া গাছগুলো দেখছ!

ওগুলো চিরদিন কি এমনই ছিলো?

গতকালের বর্ষায় তো সবুজ দেখে চোখ জুড়িয়েছিলে

তবে শীতের গাছগুলোকে দেখে মন খারাপ কেন?

এই তো! সামনেই বসন্ত

আবার কচি কচি পাতায় ছেয়ে যাবে গাছগুলো

তারপর হালকা সবুজ থেকে গাঢ় সবুজে রং বদলাবে পাতাগুলো 

আবার শীতের আগমনে লাল হতে হতে ঝরে যাবে

এটাই গাছের জীবনচক্র 

তাই না? 

একটু ভেবে দেখো তো! 

মানুষের জীবনের সুখ দুঃখগুলোও এমনই 

তাই না?


ঐ যে মরা নদীটাকে দেখছো! জীর্ণ শীর্ণ খালের মত 

ওগুলো সবসময় কি এমনই ছিলো?

এই তো গত বর্ষায় প্রমত্তা হয়েছিলো দুকুল ছাপানো 

আজ মরা নদী দেখে তবে মন খারাপ কেন? 

আবার মেঘ করবে আবার বৃষ্টি নামবে

আবার মরা নদীতে জোয়ার আসবে 

ফুলে ফেঁপে কলকল ছলছল করে দুকুল ছাপাবে  

তারপর আবার হেমন্তে পানি নামতে নামতে শীতে মরা খাল 

এটাই নদীর জীবনচক্র

তাই না? 

একটু ভেবে দেখো তো! 

মানুষের জীবনের সুখ দুঃখগুলোও তেমনি  

তাই না?


দুঃখ মানুষের জীবনেই আসে

কিছুদিন থাকে তারপর মিলিয়ে যায়

অল্প কিছু থাকে বেশ কিছুদিন ধরে 

সুখও মানুষেরই জীবনেই আসে 

কিছুদিন থাকে আবার দুঃখে ছায়

অল্প কিছু ভাগ্যবান দুঃখ থেকে দূরে; 

 

অন্ধকার দেখছ? 

পেছনে চাঁদও আছে 

সূর্য দেখছো

রাত কিন্তু সামনে, 

সুখ আর দুঃখ দুটোই ক্ষণস্থায়ী আর পিঠাপিঠি ভাইবোন

এ দুটোকে নিয়েই জীবনের যত আয়োজন। 


০৪ ডিসেম্বর, ২০২০

#কবিতা

সুখ দুঃখ পিঠাপিঠি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




চুলকানি

চুলকানি আজকাল চারিদিকে 

চুলকানি পদে পদে 

বিরাট চুলকানি শরীর ও মনেতে 

নিজেকে চুলকে চুলকে অন্যের জীবন চুলকাই হেসে,  

চুলকাতে চুলকাতে ঘা করে ফেলেছি স্বভাব ছেয়ে গেছে বিষে 

আমরা খুব ভালো চুলকাতে জানি অপরের মন ঘষে ঘষে;   

 

কেন আমি সোজা চলি

কেন আমি বাঁকা চলি 

কেন আমি হেঁটে চলি

আমি কেন দৌড়াই

কেনই বা আমার হামাগুড়ি,  

আমার চলনে বলনে অন্যের চুলকানি; 


কেন আমি ভাত খাই 

কেন আমি রুটি খাই 

খাই না কেন মুড়ি  

সবজি কেন এত প্রিয় 

গরুতে কেন এলার্জি,  

আমার খাওয়া দাওয়ায় অন্যের চুলকানি; 


কেন আমি আস্তিক 

কেন নই নাস্তিক 

কেন নামাজ পড়ি, মসজিদে কেন 

কেন রোজা রাখি 

আর মানি ধর্ম,  

আমার ধর্মে কর্মেও অন্যের চুলকানি;  


কেন আমি শার্ট পড়ি 

কেন পড়ি ফতুয়া 

কেনই বা স্যুট টাই কখনো পড়ি না 

কাপড়টাই কেন পড়ি

উলঙ্গ কেন থাকি না,  

আমার কাপড় চোপড়ে অন্যের বড় চুলকানি


কেন আমার টাকা নাই 

আমার কেন এত আছে 

আমার কেন ঘর নাই

কেন আমার বাড়ি আছে 

কেন আমি থাকি এখানে ওখানে,  

আমার জীবনযাত্রায় অন্যের খুব চুলকানি;


মানুষের এই যে এত এত চুলকানি! এর ঔষধ নেই কোন?

চুলকানির এত ঔষধ বাজারে তবুও চুলকানি থামে না কেন? 

চুলকানি চুলকানি শরীরেতে চুলকানি 

তারচেয়ে অনেক বেশী চুলকানি মনে, 

কে কোথায় কেমন আছে, কার কি দোষ ত্রুটি 

ক্রমাগত খুঁড়তে থাকি জনে জনে;  


আদতে দোষ তো ঔষধের না, দোষ স্বভাবের 

কাওকে দেখলেই আমাদের চুলকায়

হোক তার খারাপ আর ভালো

চুলকাতে চুলকাতে আমাদের মন হয়ে গেছে কালো,  

আমার পদে পদে তুমি চুলকাও, তোমার প্রতি পদে আমি 

চুলকানি চুলকানি, দুনিয়ার চুলকানি; চুলকাতে আমরা সবাই জানি।


০৩ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা

চুলকানি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 


 






নদীর গল্প

আমি নদীর কথা বলছি

নদীর গল্প বলছি, 

নদী দেখেছ?

নদী?


ঐ যে কুলকুল বয়ে যায়!

কখনো উচ্ছল কিশোরী দুরন্ত ছলছল   

কখনো পাড় ভাঙ্গা উদ্ভিন্ন যৌবনা 

কখনো ক্লান্ত রমণীর শ্রান্ত লয়ে বওয়া;     

  

নদী কত রকমের জানো?

কিছু ছোট, কিছু বড় 

কিছু মরে যাওয়া, কিছু উন্মত্ত পাড় ভাঙ্গা 

কোথাও ঘোলা পানি, কোথাও সবুজাভ, কোথাও বা নীলচে আভা 

কিছু নদীর পানি টলটলে পরিষ্কার, কিছু নোংরা ময়লা আবর্জনায় কালো  

কিছু নদী না হয় নষ্ট হয়েই গিয়েছে, ভালোও তো অনেক আছে!  


নদীর রূপ জানো?

ভোরের সূর্যে একরকম, দুপুরে আরেকরকম, 

সূর্যাস্তে লালের আভায় রঙিন আর রাতে মিশমিশে কালো;  


নদীর স্বরূপ চেনো? 

গ্রীষ্মে একরকম, শীতে অন্যরকম 

বর্ষায় তাকে চিনতেই পারবে না! উদ্ভিন্ন প্রমত্তা;  


তোমরা তো নদী দেখ সূর্যে, দিনের আলোতে

চন্দ্রে দেখেছ?

জ্যোৎস্নায়? ও রূপ ভুলতে পারবে না; 


একই নদী কত কত রঙ

কত তার ঢং 

ক্ষণে ক্ষণে বদলায় নারীর মতন; 


নদীর বাঁক দেখেছ? 

গভীরতা মেপেছ? 

আগে নারীকে জানো; 


নদী ও নারীর কি অদ্ভুত সাদৃশ্য,  

তাই না? 



০৩ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

নদীর গল্প 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



বিবেকের বোধোদয়

জীবনের প্রতিটা স্তরে আলাদা আলাদা বোধের জন্ম হয়

বোধের সাথে সাথে চাহিদার ধরণ

চাহিদার সাথে সাথের প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা 

আকাঙ্ক্ষার সাথে সাথে চারিত্রিক পরিবর্তন;


শিশুকাল আর কৈশোরের বোধ আলাদা

আলাদা চাহিদা

কৈশোর আর যৌবনের বোধ আলাদা

আলাদা চাহিদার তীব্রতা 

আলাদা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা 

অপ্রাপ্তিতে অসন্তোষের ধরণও আলাদা

অসন্তোষে মানুষ থেকে অমানুষের সূচনা

সম্ভবত এ সময়টাই জীবনের টার্নিং পয়েন্ট 

টার্নিং পয়েন্ট মানুষ হওয়া আর বখে যাওয়া   

টার্নিং পয়েন্ট মনুষ্যত্ব ও পশুত্বের বিভাজন

তারপর মনুষ্যত্ব ও পশুত্ব বোধে জীবন যাপন;


যৌবন আর প্রৌঢ়ত্বের বোধ আলাদা

আলাদা জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি 

আলাদা চাহিদা ও প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা 

যৌবনের পশুত্ব প্রৌঢ়ত্বে স্তিমিত হয়ে আসা

যৌবনের মনুষ্যত্ব প্রৌঢ়ত্বে গভীর হয়ে বসা 

পরকালের বোধ মাথায় আসা 

মৃত্যুর চিন্তা উঁকি দিচ্ছে কি?

বেশিরভাগ মানুষের এবার ধর্মে কর্মে মন 

আর অল্প কিছু মানুষের পশুত্বে জীবন যাপন; 

 

প্রৌঢ়ত্ব আর বার্ধক্যের বোধ কাছাকাছি

পিছু ফেলে আসা জীবনের দিকে উঁকি 

কিছু ভুল হয়ে গেলো কি? 

মৃত্যু চিন্তা ধর্মকর্ম পরকাল এগুলোই বেশি 

চাহিদা খুব বেশি টানে কি?

আকাঙ্ক্ষা শারীরিক সুস্থতা 

সন্তানের মঙ্গল আর পারিবারিক স্বস্তি;


জীবনের শুরু থেকেই মনের মধ্যে একটা বোধের জন্ম

আমরা বোধের মধ্যে থাকি, বোধের মধ্যেই বাঁচি

এক এক জনের বোধোদয় জীবনের এক এক সময়ে

প্রত্যেকেরই পরিবর্তন বিবেকের বোধোদয়ে। 


 

০২ ডিসেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

বিবেকের বোধোদয়

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।  




 








  


পথের পথ

ঐ যে পথটা যে দেখছিস 

মিলিয়ে গেছে দূরে বহুদূরে, সেই প্রায় দিগন্তের কাছে 

কোথায় গেছে? আকাশে মিশে? 

নাকি অন্য কোন দেশে? 


একদিন আমিও ঐ পথ হেঁটে চলেছিলাম একা 

সরল সোজা, উঁচু নিচু, এবড়োথেবড়ো বন্ধুর পথ

পথ তো একাই চলতে হয় 

পথের কিংবা জীবনের পথ

মাঝে মধ্যে হয়তো সঙ্গী জোটে, কিছু পথ একসাথে হাঁটে

তারপর আবার যে যার পথে আলাদা;


এই যে পথটা দেখছিস! এটা কিন্তু শুধু একটা পথ নয়

আমি বলি প্রতীক, 

জীবনের পথও কিন্তু এমনই

কোথাও সরল সোজা, কোথাও আঁকাবাঁকা 

কোথাও বা এবড়োথেবড়ো বন্ধুর,  

আর শুরুতে পথটা চলতে হয় একা

মাঝে মধ্যে পথের সঙ্গী মেলে, মাঝে মধ্যে জীবন সঙ্গী

পথের সঙ্গী অল্প কিছু পথ চলে, বন্ধুর পথ হলে সে অন্য পথ ধরে 

বেশীরভাগ জীবন সঙ্গী পুরোটা পথ সঙ্গে চলতে চায়  

কেউ কেউ হাঁড়িকুঁড়ির ঠোকাঠুকিতে মাঝপথেই পথ আলাদা হয়ে যায় 

কেউ কেউ হাঁড়িতে হাঁড়ি ঠুকে ঠুকে বন্ধুর পথে এগিয়ে যায়  

আর বাকিরা পথের শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, অনুভবে একসাথে 

জীবনের সাথে ওতপ্রোত গাঁটছড়া বেঁধে;


কোন এক পথের বাঁকে পথ চলতে গিয়ে 

দেখা হয়েছিলো আমাদের দুজনের

একটি দুটি করে পদক্ষেপ একসাথে 

কিছুক্ষণ পথ চলার পর চোখাচোখি, একটু মুচকি হাসি

তারপর কদমে কদম মেলানো,   

চুপ করে কি আর পথ হাঁটা যায়?

একসাথে পথ চলতে চলতে টুকটাক কথা চলেই আসে 

টুকরো কথা থেকে পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা; 


সেই যে পথ চলা শুরু আজো চলছি 

আজো জীবন পথে কথা বলছি 

আজো পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা করছি 

একসাথে, এক থেকে, এক পথে;  


সেদিন পথে চলতে চলতে কথা বলতে বলতে 

হাতের স্পর্শে প্রেমের খুনসুটি

মুঠোতে মুঠো পুরে নিতেই নির্ভরতার গন্ধ 

চোখে চোখে তাকিয়ে থেকে ভালোবাসার রঙ চেনা  

এবার শক্ত হাতে হাত ধরে পথ চলা,  

সে হাত আর ছাড়া হয় নি

তারপর তো আমার জীবন পথের সঙ্গী; 


এভাবেই পথ থেকে জীবন জীবনের গল্প 

কখনো ভালোবাসা বেশী কখনো অভিমান অল্প 

এবড়োথেবড়ো বন্ধুর পথ সরল করার চেষ্টায় দুজনাই রত 

সুখে দুঃখে জীবন পথ পাড়ি অবিরত আর অবিরত,

পথ কিন্তু ঠিক পথের জায়গায় পথে 

অবস্থানের পরিবর্তন শুধু মানুষের মাঝে

চলায়, বলায়, ভালোবাসায় 

অনুভব আর অনুভূতিতে; 


মানুষের পরিবর্তনে জীবন পথ বদলে যায়

ঐ যে রাস্তাটা দেখছিস! ওটা কিন্তু ঠিকই রয়ে যায়,

মানুষ হয়তো জীবন রাস্তা থেকে প্রয়োজনে সরে যায়

পথটা পথের জায়গায় ঠিক রয়ে যায়;


আবার নতুন কেউ পথ মাড়াবে 

আবার নতুন জোড়া হাতে হাত পরবে 

আবার নতুন একটা গল্প হবে

রাস্তার পথ থেকে আবার জীবনের পথ হবে;


কেউ পথ হাঁটে একা একা 

কেও সঙ্গী খোঁজে, 

পথের আর সঙ্গী কোথায়? 

একাকী পথ সবাইকেই পথে ধরে। 


কি ভালোই না হতো!

পথের শেষটা যদি আগেই দেখা যেত

পথের পথের 

কিংবা জীবন পথের। 


০১ ডিসেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

পথের পথ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

না বলা কথা

কি জানি একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম তোকে,

জরুরী একটা কথা; 


তোর চোখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ভুলে গেলাম সে কথা 

আর কথাগুলো হারিয়ে গেলো কথাদের ভিড়ে

আসলে যখন আমাদের দেখা হয় তুই কথা বলতে থাকিস

আমি তোর চোখ চেয়ে থাকি, তোকে দেখতে থাকি

আর তোকে দেখতে দেখতে ভুলে যাই আমার যত কথা, 

তোকে দেখতেই কথাগুলো হারিয়ে যায় কথাদের ভিড়ে

বলা হয় না কোন জরুরী কথা, 

তুই বলেই যাস আর আমি শুনেই যায় তোর যত কথোকথা; 

 

আচ্ছা! কখনো কি বলেছি? - 'ভালোবাসি তোকে'

দেখ! কথায় কথায়, কথার খেই হারিয়ে ভালোবাসার কথাটাই বলা হলো না। 



৩০ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

না বলা কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





কথা

'কথা' ছোট্ট একটা শব্দ,  

অথচ কি বিশাল তার ব্যাপ্তি!  


কথা দিয়ে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ 

কথা দিয়ে ভাবের প্রকাশ 

কথা দিয়ে সম্পর্কের সূত্রপাত 

আবার কথা দিয়েই সম্পর্কের সর্বনাশ;


কাওকে ছোট করবে? - কথা

কাওকে বড় করবে? - কথা

কাওকে তিরস্কার করবে? - কথা 

কারো প্রশংসা করবে? - কথা;  


কথাতেই মধু ঝরে কথাতেই বিষ 

কথা দিয়েই ভালোবাসা কথাতেই ঘৃণা 

কথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর কানকথা 

অথচ প্রাত্যহিক জীবনে এটার'ই সবচেয়ে বেশি চর্চা;  


মাঝে মাঝে কথা বলতে বলতে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি 

কথা বলতে বলতে প্রায়শই চিন্তা করি না কাকে কি বলছি   

কখনো ভাবি না কাকে কি বলা উচিৎ আর না উচিৎ  

ভাবি'ই না আমার কথাগুলোই কারো কানে লাগতে পারে বিষ; 


অথচ কথা বলার সময় একটু যদি চিন্তা করতাম!

যদি কানকথা থেকে নিজেকে সংবরণ করতে পারতাম! 

তাহলে হয়তো সম্পর্কগুলো অনেক সুন্দর হতো

কিংবা হয়তো জীবনটাই আমাদের অন্যরকম হয়ে যেতো। 


২৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





অর্থ, স্বার্থ ও সম্পর্ক

অর্থ,  

ছোট্ট একটা শব্দ অথচ ব্যাপ্তি ভয়াবহ 

একে ধরা যায়, ছোঁয়া যায়

একে ঘিরেই জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড   

অর্থে সম্পর্ক গড়া 

অর্থে সম্পর্কের ভাঙন 

আর অর্থেই যত অনর্থ,   

আচ্ছা! জীবনে কোনটার প্রয়োজন বড়! 

সম্পর্কের না অর্থের? 

কোনটা ভালো? 

সম্পর্কহীন অর্থের পাহাড় 

নাকি অর্থহীন সম্পর্কের নদী?  

উত্তর খুঁজছি; 


স্বার্থ, 

শুনতে কেমন জানি গা গোলানো একটা শব্দ 

অথচ সম্পর্কের সাথে ওতপ্রোত   

একে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না 

তবুও একে ঘিরেই সব অনর্থ, 

স্বার্থের প্রয়োজনে সম্পর্কের জোড়া

স্বার্থে আঘাত লাগলেই সম্পর্কহীনতা 

আর সম্পর্কে যত অনর্থ,  

কোনটা খারাপ? 

সম্পর্কের প্রয়োজনে স্বার্থ 

নাকি স্বার্থের প্রয়োজনে সম্পর্ক?  

ভাবছি। 



২৮ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

অর্থ, স্বার্থ ও সম্পর্ক  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



মোমবাতির ধোঁয়া

একটা ম্যাচের কাঠি  

একটা মোমবাতি 

মনের বারুদে চিন্তা ঘষতেই কিছু শব্দের আওয়াজ

কবিতার মোমবাতিটা জ্বললো কি?


চিন্তা পুড়ছে 

মোমবাতি গলছে

ছাই হচ্ছে সলতে 

অল্প একটু সময় বাকি,  

গলে পড়া ভাবনা

আর গলে যাওয়া মোমবাতি

কিছু লেখা হলো কি? 

এখনো একটু বাকি, 

গুমোট ভাবনা  

নিভু নিভু মোমবাতি

এই যাহ! অন্ধকার

কবিতার ইতি; 


আগুনে হাত দিয়েছিলে?

ছুঁয়েছিলে জ্বলন্ত শিখা?

তাপ ছিলো শব্দে?

নাকি মোমবাতি নিভিয়ে দিয়েছিলে ভাবনার ভাপে?

বাক্যের কোলাহল পাও নি? 

তবে আর কবিতা হলো কি?


পুড়ে যাওয়া ছাই তো দেখেছ 

আগুন পুড়তে দেখেছ? 

কাগজে কলম ঘষে শুধু শব্দই পোড়াই

আর কিছু বাক্যের ছাই,   

আঁচর কাটার মত নখ কোথায় শব্দের?  

কোথায় জ্বলন্ত মোমবাতি বাক্যের? 

ঐ তো অল্প একটুমাত্র সলতে পোড়া কাব্যের ধোঁয়া,   

বড্ড সাধ! একদিন একটা আস্ত কবিতা পোড়ানোর।  


২৮ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

মোমবাতির ধোঁয়া

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




খিদার টেরেন

বেইন্না অইতে না অইতেই পেডের ভিত্রে লাইন দিয়া টেরেন ছুডে,  

ক্ষিদার টেরেন;  

হুইইইইইই সিদা দুইপাত লাইন দিয়া টেরেন দৌড়ায় 

একখান পাতে নাকে ভাতের ঘেরান আরেকখান পাতে বাজারোত নাই কাম  

দুইট্টা লাইন এক না অইলে খাওন আইব কোইত্থন? 

আমি তো গতর খাডায় খাই, কাম না থাকলে গতর খাডামু কই?


পেট কি বুঝে কাম আছে না নাই? ক্ষিদাও তো বুঝে না

বিয়ান অইলেই চিল্লাইয়া খাওন চায় পেট

সুয্যি যত মাতার উপ্রে উডে ক্ষিদা তত চেগাইয়া উডে

যহন আর সইহ্য অয় না 

তহন আমি বড় মাইনেগো বাড়ির কাছের ডাষ্টবিন আতাই

ঐহানেও আমার লাহান আরো কয়জনের লাইন  

লাইন দিয়া রাকছে পাড়ার নেড়ি কুত্তাগুলাইনও  

আমগো বেবাক্তের পেডে খিদা, বেবাক্তে মিল্যা ডাষ্টবিন আতাই 

যার ভাগে যা উডে তাই দিয়াই বিয়ানের নাস্তা খাই; 

 

মাঝে মইধ্যে কপাল বালা অইলে ভাগে বালা খাওন পাই

মাঝে মইধ্যে বড়নোকগো রাইতের পার্টির ফালায় দেওয়া মজার খাওন 

মাঝে মইধ্যে হেগোর দোকান থাইক্কা কিন্না আনা প্যাকেট খাওন

বড়লোকের পুলাপাইন আদ্দেক খায়, আদ্দেক ফালায় দেয়

ভাগ্যিস ফালায়! 

যেদিন আদা খাওন প্যকেট পাই হেইদিন আমার ঈদ

আর যেদিন ডাষ্টবিনে কুত্তাগো লগে মারামারি কইরাও কিছু জুটে না 

হেইদিন থাল পাততে অয় মসজিদের সামনে, ভিক্কার থাল 

তয় ভিক্কা করতে আমার বড় লাজ লাগে

যুয়ান মানু আত পাও আছে তাও কাম নাই বইলা ভিক্কা করন লাগে 

ভিক্কার টেকায় হাইঞ্জাকালে দুইডা চাইল কিন্না বস্তিত ফিরি

চুলাত আগুন দিলেই পেডের আগুন দপদপাইয়া চেগায় উডে

ভাতের মারের গন্ধে বেড়ার ভাঙ্গা ঘর ম ম করবার থাহে

এক চিমডি লবন ফালাইয়া ফ্যান সহ গরম ভাতে চুমুক  

ইশশ! যেন মধু! 


মধুর নামডা খালি হুইন্নাই গেলাম, মধু কিন্তুক আমার কপালো জুটে নাই   

কেমনে জুটব কও! বড়লোকেরা যে ডাষ্টবিনে খাওন ফালায়! 

একটা দুইডা মধুর খালি বোতল ফালাইবার পারে না?

না হয় এক ফোডা দুই ফোডা চাইট্টা চাইট্টা খাইতাম!

জানো! একদিন দুফুর বেলায় ফুটপাতে গুমায় আছিলাম

হেইদিন হপন দেকছিলাম মধু খাইতাছি

মধুর টেশ বুঝনের আগেই পুলিশের লাডির বাড়ি

বাবাগো মাগো কইরা উইঠঠা দিসি দৌড়  

হেরপর থাইক্কা কেন জানি মধুর হপন আমার মাতায় ঢুইক্কা গেসে 

তোমরা দেইক্ষো, একদিন আসমানে খুব জ্যোৎস্না অইলে 

আমি ঠিক চান্দের রুডির মইধ্যে হপনের মধু মাখায় খামু,  

গরীব অওনের অনেক জ্বালা 

পেট খিদা সইবার পারে না; 


আইচ্ছা! একটা কতা বড় জানবার মন চায় 

এই যে বড়নোকেরা! এগোর খিদা কি আমগোর থন আলাদা? 


২৬ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

খিদার টেরেন 

  - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০

মানুষ হওয়ার অক্ষমতা

মানুষই তো ভুল করে, 

কখনো বুঝে, কখনো না বুঝে

কখনো দুষ্টুমির ছলে কখনো অন্য কোন কারণে 

ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত 

জেনে কিংবা না জেনে,  

নানা কাজেই ভুল করে ফেলে সময়ে অসময়ে

কিংবা ভুল হয়েই যায় কারণে আর অকারণে

কথায়, কাজে, ব্যবহারে কিংবা আচার আচরণে,     

মানুষ হলে;


আচ্ছা! অনুতপ্ত হলে কি ক্ষমা পাওয়া যায়?

কিংবা ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে?

এটা বোধহয় মানুষের পক্ষে কঠিন

একবার কেউ ভুল করলে সহজে তাকে আর বিশ্বাস করে না 

বিশ্বাস করলে তবেই না ক্ষমা করবে! তাই না? 


নিজের ভুলের সে কিন্তু ঠিকই ক্ষমার আশা করে, 

অন্যের থেকে;   

অথচ নিজে ক্ষমা করতে পারে না অন্যের ভুলের, 

মানুষ হওয়ারও কিছু অক্ষমতা থাকে;


প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু ভুল থাকে যে

আয়নার সামনে দাঁড়ালেই ওগুলো দগদগে ঘায়ের মত ফুটে ওঠে

পুরনো সব অমোচনীয় ভুলগুলো, 

যেগুলো নিয়ে মানুষ অনুতপ্ত তো হয়!  

তবে ক্ষমা চাওয়ার আর সময় হয় না সময় মতন

কিংবা যার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা 

সে মানুষগুলোই হয়তো হারিয়ে যায় চিরতরে  

আর আয়না ফাটে অনুতাপের ভাপে,  

মাঝে মাঝে মনে হয় পুরনো ভুলগুলো যদি রাবার ঘষে মুছে ফেলা যেত!


 

২৬ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

মানুষ হওয়ার অক্ষমতা

 - যাযাবর জীবন  


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




ভয়, আবারও সে - গল্প

চারিদিকে করোনা নামক মহামারী। মহামারীর ছোঁয়া লেগেছে আমাদের বাড়িতেও - করোনা আঘাত হেনেছে। করোনাক্রান্ত আমি  আইসোলেটেড তিন তলায় এক রুমে; স্ত্রী চার তলায় আরেক রুমে। আমরা একান্নবর্তী পরিবার, আমাদের বাড়িটা চারতলা বাড়ি; পুরোটা জুড়েই আমরা থাকি। নিচতলা কমন, দোতলায় ছোট ভাই তার ফ্যামিলি নিয়ে, আমি তিনতলায় আমার ফ্যামিলি নিয়ে; চারতলাটা ছোট বোনের। সে শ্বশুর বাড়ি থেকে এ বাসায় আসলে থাকে, নতুবা আমরা দু ভাই মাঝে মাঝে আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করি। চারতলায় ছোট বোনের জন্য করে দেওয়ার পরও এক পাশটায় বেশ খানিকটা খোলা ছাদ ছিলো। বাসার কাজের লোকদের থাকার জন্য এবং একটা বড় রান্নাঘরের প্রয়োজনীয়তায় ঐ খোলা অংশটায় আপাতত একটা টেম্পোরারি রান্নাঘর ও কাজের লোকদের থাকার জন্য ঘর করে নিয়েছি, উপরে টিনের চাল দিয়ে। যেহেতু বাসায় করোনাক্রান্ত দুইজন রুগী  (আমি ও আমার স্ত্রী) সুতরাং সে চারতলায় আমার বোনের বেডরুমে আইসোলেশনে আর আমি তিনতলায় আমার বেড রুমে; বাচ্চারা যার যার রুমে। তিন আর চারতলা জুড়ে আমরা সবাই আইসোলেশনে। যেহেতু আমার স্ত্রী চারতলায় তাই তার সাহায্যকারীরা (কাজের লোকেরা) তাই আপাতত: তার বেডরুমের পাশেই ড্রইং রুমে বিছানা করে থাকছে। 


একদিন অনেক রাত। আমি গভীর ঘুমে ছিলাম। ঘুমের মধ্যেই যেন ধুম ধুম ধুম ধুম শব্দ পাচ্ছি, ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে, রেশ কাটছে না। এর মধ্যে ফোনের শব্দ। ঘুমের ঘোরেই ফোনের স্ক্রিনে দেখি আমার স্ত্রীর চেহারা ভেসে উঠেছে। মোবাইল ঘড়িতে দেখি রাত আড়াইটা, কি ব্যাপার? এত রাতে? হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো, শব্দ পাচ্ছ না? আমি ততক্ষণে বিছানায় উঠে বসেছি; ধুম ধুম করে কে জানি হাঁটছে। হ্যাঁ, পাচ্ছি তো! সে বললো, ছাদে হাটার শব্দ পাচ্ছি, দেখতো এত রাতে ওখানে কে হাঁটে? হাঁটলে কি এত জোড়ে শব্দ হয়? মনে হলো কে যেন দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি ঘুম থেকে উঠে সিঁড়ি ঘরে যেতেই মনে হলো নাহ! শব্দ তো ছাদ থেকে না! নিচ থেকে আসছে মনে হলো। আমি নিচতলার ড্রইং রুমে ঘুরে এলাম, উঁহু! এখানে তো কেউ নেই? আবার মনে হলো ওপর থেকে আসছে। কেমন যেন গা ছমছম করছিলো। পুরো বাড়ি ঘুমিয়ে, আমি একা; তবুও ধীর পায়ে ছাদের দিকে রওয়ানা দিলাম। সবগুলো লাইট জ্বালিয়ে ছাদে উঁকি দিলাম। তারপর ছাদে পা রাখলাম, পুরো ছাদ ঘুরে দেখলাম।  উঁহু! ওখানে কেউ নাই তো! তাহলে? আবার মনে হলো নিচে থেকে শব্দ আসছে। এবার সত্যিই কেমন জানি ভয় ভয় করছিলো। কেমন এক অশরীরী ভয়, ছাদের দরজা লাগিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতেই যেন জমে গেলাম। কেমন এক অদ্ভুত ভয়ে হাত পা সব জমে গেলো, আমি ছুটে নামতে চাইলাম; কিন্তু যেন পা ফেলতে পারছিলাম না সিঁড়িতে, সরসর করে মাথার পেছনের সব চুল যেন দাঁড়িয়ে গেলো এক অশরীরী ভয়ে। কতক্ষণ জমে ছিলাম ওখানে মনে নেই, এক মিনিট, দুই মিনিট কিংবা পাঁচ মিনিট! হিসেব নেই। তারপর একসময় সম্বিত ফিরে পেতেই, ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে লাগলাম। হঠাৎ করেই মনে হলো, আচ্ছা! ভাতিজারা কেও কি ট্রেডমিলে হাঁটছে? ট্রেডমিলে হাঁটলে গভীর রাতে এমন বাড়ি কাঁপানো শব্দ হতে পারে। ভেবে এবারকার গন্তব্য ছোট ভাই এর দোতলায়। প্রথমে নিজের ঘরে গিয়ে আগে মুখে মাস্ক পড়ে নিলাম তারপর দোতলায় গিয়ে ওদের ঘরের দরজা নক করলাম। রাত প্রায় তিনটা, এত রাতে ডাকার ফলে ছোট ভাই এর বৌ মনে হয় বেশ ভয় পেয়েই বের হয়ে এলো; আমি উঁকি দিয়ে ওদের ড্রইং রুমে দেখলাম ট্রেডমিল খালি, ওখানে কেও নেই। এত রাতে দরজায় শব্দ শুনে এর মধ্যে ভাতিজা দুইটাও বের হয়ে এলো। ছোট ভাই ঘুমচ্ছিল, ওকেও ডেকে তোলা হলো। কি হয়েছে কি হয়েছে বলে সেও বের হয়ে এলো; ছোট ভাইকে বললাম কোন শব্দ শুনছিস? সে বললো না। ভাই বৌকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমরা শুনছ? তারাও বললো না। এবার ওদের ডেকে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেলাম, এবার শুনছিস? সবাই বললো হ্যাঁ! শুনছি তো! কে যেন ধুম ধুম করে হাঁটছে, নাকি দৌড়চ্ছে? আমি বললাম, সব জায়গা খুঁজে দেখেছি; কোথাও কিছু পাই নি তাই ভাবলাম ভাতিজারা কেও কি দোতলায় ট্রেডমিলে হাঁটছে কি না? ভাতিজারা বললো না তো বাপ্পা, এত রাতে ট্রেডমিল করব কেন? আমাদের বাড়ির রাতের ঘটনা ও 'সে' এর কথা ইতিমধ্যে সবারই জানা হয়ে গেছে, ফলশ্রুতিতে এবার ছোটভাই এর বৌ এর চোখেমুখে ভয় দেখলাম, সে দোয়া দরূদ পড়া শুরু করেছে। এবার আমি ও ছোট ভাই দুজনে মিলে আবার পুরো বাড়ির বাতি জ্বালিয়ে নিচ তলা থেকে চেক করা শুরু করলাম। একে একে নিচতলা, দোতলা, তিনতলা, চারতলা চেক করে এবার ছাদের দিকে রওয়ানা হলাম। ধুমধুম শব্দ এখনো হচ্ছিলো, তবে যেন আগের থেকে অনেক স্তিমিত হয়ে এসেছে। যেহেতু দু ভাই মিলে একসাথে গেলাম এবার আর ভয়টয়ের তোয়াক্কা করলাম না। ছাদে গিয়ে প্রতিটি কোনা দেখলাম, ছাদের পানির ট্যাংকির চারিপাশে ঘুরে দেখলাম, ছাদ থেকে উঁকি মেরে নিচে দেখলাম, উঁহু! কোথাও কিছু নেই। শব্দটা কিন্তু রয়েই গেলো। এবার মনে হচ্ছে নিচ তলার কোথাও থেকে আসছে। আমরা আবার ছাদের দরজা লাগিয়ে নিচে নেমে আসলাম। আমাদের নামার সাথে সাথে শব্দ স্তিমিত হতে লাগলো। এবার দোতলার সিঁড়ি ল্যান্ডিং এ দাঁড়াতেই শব্দ পুরোপুরি থেমে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম; আর কোন শব্দ পেলাম না। প্রায় চারটা বাজতে চললো। ভাই চলে গেলো তার রুমে আমি  তিনতলায় আমার রুমে। এখন আর ঘুমানোর কোন মানে হয় না, তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে গেলাম, একবারে ফজর পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। 


বেশ কিছুদিন কেটে গেলো, আমরা আলহামদুলিল্লাহ্‌ দুজনাই সুস্থ হয়ে আবার আগের জীবনে ফিরে গেলাম। এর মধ্যে একদিন বড় ভাতিজা একদিন দৌড়ে এসে বললো, বাপ্পা বাসায় কি হচ্ছে? আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন রে বাবা? কি হয়েছে? বললো, আমি নাস্তা খাব বলে ডিম ভেজে টেবিলে রেখে রুটি ভেজে এনে দেখি ডিম নেই। আমি বললাম হয়তো তোর ছোট ভাই দুষ্টুমি করে খেয়ে নিয়েছে। সে বললো - বাসায় তো কেউ নাই, মা'ও নাই ভাই'ও নাই; আমি একা তাই তো নাস্তা বানাচ্ছিলাম। আমি বুঝলাম সবই। বললাম তুই'ই বোধহয় মনের ভুলে ডিম ভেজে খেয়ে নিয়েছিস। ভাতিজা বললো - কি যে বলো না! আমি কি পাগল হয়ে গেছি? আমি বুঝলাম সব, বললাম মা নেই তো তোর একা একা ডিম ভাজার কি দরকার পড়েছিলো? তুই তিনতলায় এসে নাস্তা করলেই তো পারতি! ভাতিজাও বুঝলো, বললো - 'সে'! তাই না? আমি তাকে ভোলানোর জন্য বললাম, আরে নাহ! মাথা থেকে ওগুলো সরিয়ে ফেল; আলতু ফালতু বিষয় নিয়ে চিন্তা করিস না। আয় নাস্তা খাই একসাথে। 


কয়েকদিন পর। হঠাৎ করেই কাজের মেয়েগুলো হুড়মুড় করে নেমে এলো নীচে, আমার স্ত্রীকে বললো আজ রাতে চারতলায় গিয়ে থাকতে। কেন জিজ্ঞাসা করতেই বললো তাদের অনেক ভয় করছে, চারতলার টিনের চালে কে যেন ক্রমাগত হাটাহাটি করছে। আমি বুঝে গেলাম কিছু একটা নিয়ে 'সে' অসন্তুষ্ট হয়েছে। স্ত্রীকে বললাম, যাও আজ ওদের নিয়ে চারতলায় থাকো গিয়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়দিনও তাদের ভয় কাটলো না - কিছু একটা দেখে বেশিই ভয় পেয়েছে মনে হলো। আমি এ ভয়ের স্বরূপ জানি, সুতরাং তাদের ভয় কাটার সময় দিলাম। 


এরমধ্যে বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো। আমাদের বাসায় মধ্য বয়স্ক এক কাজের মহিলা আছে। এ আমাদের বাসায় আজ প্রায় বিশ বছর হয়ে গেছে। আমাদের বাসা থেকেই বিয়েশাদী হয়েছে, দুটো বাচ্চাও হয়েছে। খুবই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। স্বামী নিয়ে থাকে আমাদের বাসার খুব কাছেই। সকালে আসে, সারাদিন কাজকর্ম করে রাতে খাওয়া দাওয়া করে বাসায় যায়। কখনো প্রয়োজনে তার বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আমাদের এখানেই রাতে থেকে যায়। করোনার এ দুর্দিনে সে তার বাচ্চা নিয়ে আপাতত আমাদের বাসাতেই আছে। ভয়ডরহীন ডাকাবুকো মহিলা। সেদিন হঠাৎ করেই রাত প্রায় এগারোটার দিকে দৌড়ে তিনতলায় নেমে এলো, ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে আছে। এসে বললো এ বাসায় থাকা যাবে না, বাসায় কোন একটা সমস্যা আছে। জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে? বললো চারতলার ড্রইংরুম গুছিয়ে সে সিঁড়িঘর দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলো; হঠাৎ দেখে কালো মত মানুষের অবয়বে কি যেন ধোঁয়ার মত তার সামনে দিয়ে ঝড়ের বেগে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো, তারপর শুরু হলো রান্নাঘরের টিনের ছাদে দাপাদাপি। সে ভয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে। 


আমি ঠিক বুঝে পাচ্ছি না, হঠাৎ করেই তার অসন্তুষ্টির কারণ কি? একটা কারণ কি হতে পারে যে আমরা এ বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠে যাওয়ার প্ল্যান করছি!  কিংবা অন্য কোন গূঢ় কারণ এর মাঝে নিহিত আছে! আমি নিশ্চিত সে কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এমন করছে না। কিছু একটা তো আছেই! সেটা যে কি ঠিক বুঝে উঠছি না। সময় বলে দেবে। 


(বিঃদ্রঃ এটা একটা অতিপ্রাকৃত সত্য ঘটনা। কেউ এটাকে একক গল্প মনে করেও পড়তে পারে। যারা আমার ভয় এর আগের পার্টগুলো পড়েছে তাদের জন্য এটা চতুর্থ পার্ট। প্রতিটা পর্বই আলাদা লিখতে চেষ্টা করলাম যাতে আগেরটা না পড়লেও কোন অসুবিধা না হয়।) 

        

২৬ নভেম্বর, ২০২০ 


#অতিপ্রাকৃত গল্প 


ভয়, আবারও সে 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



পুরুষ ও কাপুরুষ

কি দেখছিস রে?

উঁচু হয়ে থাকা বুক?

ও তো কাপড় দিয়ে ঢাকা,

কাপড়ের ওপর থেকেই?

বল তো কি দেখা যায় ওতে?

অসংযত দৃষ্টিতে ওটুকুই দেখছি মন হেনে, 

কেন রে? 

মায়ের টা খাস নি? 


কি দেখছিস রে?

শরীরের ভাঁজ? 

কোথায় কি খাঁজ? 

কাপড়ের ফাঁকে ফাঁকে একটু উঁকি? 

ওটুকুতেই লোলুপ দৃষ্টি?  

অবদমিত কামনায় দেখছি মনে মনে, 

কেন রে? 

বোনেরটাও দেখিস নাকি? 


নারীর আলাদা একটা বোধ থাকে

জানিস তোরা?

দূর থেকে কোথায় কি দৃষ্টি হানছিস 

ঠিক বুঝে যায় ওরা, 

এক একজনার এক একরকম স্পর্শ 

যখনই ছুঁয়ে দিস দেহ 

স্পর্শে স্নেহ, স্পর্শে ভালোবাসা, স্পর্শে কামনা

এদের থেকে ভালো বোঝে না কেহ;


কেন খামখাই দৃষ্টি হানিস? 

কুদৃষ্টি হেনে, 

কেন খামাখাই স্পর্শ করিস?

আর কামোদ্রেক মনে! 


সংযত দৃষ্টি আর সংযত ব্যবহার  

তড়িৎ বুঝে নেয় নারী সংযত মন আছে তোরই    

শ্রদ্ধা ওটাতেই আর নারীর চোখে তুই পুরুষ, 

তোর খারাপ দৃষ্টি আর কামনার স্পর্শ! 

নারীর চোখে শুধুই তুই ঘৃণার পাত্র   

পুরুষ নয় রে, তুই কাপুরুষ।  


  

২৪ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

পুরুষ ও কাপুরুষ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





অভিমানের রঙ

কেউ অভিমানে ডুব দেয়, কেউ ভাসে

অভিমান আকাশে হাসে, মনাকাশে

কেউ অভিমানে লাল, কেউ লালের রঙ বোঝে

কেউ অভিমানের আকাশে রংধনু রঙ খোঁজে;  


কেউ অভিমান করে, কেউ ভাঙানোর চেষ্টায় 

কিছু অভিমান ভাঙে কিছু রয়েই যায়

অভিমান থাক আর নাই থাক মন দুজনারই কাঁদে

মন এক অদ্ভুত ঘর, নানা অনুভূতির ফাঁদে; 


অভিমান ভাংতেই মন ভালোবাসায়

হাসি আনন্দে দুজনা সময় কাটায়

তারপর আবার ঘটনায় নতুন মান 

আবার নতুন করে ভাঙানো অভিমান;


সময়ের সাথে চলতেই থাকে ক্রমাগত 

এটাই জীবন আর নানা রকম সম্পর্ক 

হাসি কান্না, সুখ দুঃখ, আর অনুরাগ অভিমান 

সম্পর্কের সাথে ওতপ্রোত জীবন যাপনের নাম। 



২৩ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

অভিমানের রঙ

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 

 




সম্পর্কের খোসা

সম্পর্কগুলো বাইরে থেকে বোঝা যায় না, 

বাইরে থেকে ওগুলো দেখতে খুব সুন্দর

অনেকটা ফলের মত, নানা রঙের ছিলকার আবরণে জড়ানো 

কোন কোন সম্পর্কের ভেতরটা টক মিষ্টি কাঁচা

কোনটা সুস্বাদু সুমিষ্ট পাকা

কোন কোনটার খোসার বাইরে থেকেই সুগন্ধ বের হতে থাকে 

কোন কোনটা বাইরে সতেজ দেখায় অথচ খোসা ছাড়ালেই দুর্গন্ধ বের হয় 

সবগুলো সম্পর্কই বাইরে থেকে কোন না কোন আবরণে ঢাকা; 


সে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কই হোক 

কিংবা ভাই-বোনের  

অথবা বাবা-মা আর সন্তানেরই হোক,  

আজকাল অবশ্য বাবা-মা আর সন্তানের সম্পর্ক বিয়ের আগে পর্যন্ত 

তারপরের'টা নির্ভর করে মায়ের সাথে স্ত্রীর সম্পর্কের উপর 

আর বৌ-শাশুড়ি সম্পর্ক! সে আর নাই বললাম,  

তাহলে আর সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্ক মধুর হবে কি করে?

আর বাবা! সেও তো মায়ের কথাতেই

স্বামী যেমন স্ত্রীর, 

এ সংসার কেমিস্ট্রি, মূলত একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভুক্তভোগী

আমরা বাইরে থেকে সতেজ সবুজ সুন্দর খোসা দেখি;


পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে ভেতরে কিছু কি পাও? 

সম্পর্কের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে শুধু 'সম্পর্ক' নামটাই রয়ে যায় 

এজন্য আমরা খুব সাবধানে সম্পর্কগুলোকে খোসায় মুড়ে রাখি, 

কিছুটা লোকলজ্জার ভয়ে 

বাকিটা অভ্যাসে,  

তাহলে ঐ যে অনুভব আর অনুভূতি? 

আরে, খারাপ আর ভালো

আনন্দ আর বেদনা 

হাসি আর কান্না 

ভালোবাসা আর ঘৃণা 

সে তো সম্পর্কে কিছু থাকেই, 

সকল সম্পর্কে। 


২২ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

সম্পর্কের খোসা

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।  




ঢাকা টু চট্টগ্রাম

কু ঝিক ঝিক রেলের চাকায় দম

রেলের কামরায় বন্ধ আমরা ক'জন

হাসি গানে খেলাতে

বন্ধুরা সব বন্ধুর সাথে 

সাঁই সাঁই পাড় হচ্ছে গ্রাম 

আমরা ক'জন ঢাকা টু চট্টগ্রাম;


এরা সব পঁচাশি ব্যাচের

বয়সে পঞ্চাশ তো পেরোলো

কে বলবে এদের দেখে?

বয়স এদের নয় ষোলো! 

হাসি গানে সাঁই সাঁই পাড় হচ্ছে গ্রাম 

এরা যাচ্ছে সবাই মিলে, গন্তব্য চট্টগ্রাম;


ওখানে মিলন মেলা নানা রকম খেলা 

ওখানে একসাথে সবাই একটা পুরো বেলা 

ওখানে আয়োজনে ওরা চট্টগ্রাম বাসি 

এখানে রেলের কামরায় কয়েকজন ঢাকা নিবাসী 

ওখানে অনুষ্ঠান খাওয়া দাওয়া নাচ গান 

এখানে রেলের কামরায় এরা যাচ্ছে চট্টগ্রাম; 


ওখানে পরিচয় হবে এখানকার লোকের

সবাই পঁচাশির, সবাই বাংলাদেশের 

কেউ কেউ দেশের বাইরে, ওরাও যোগ দেবে

সামনাসামনি না পারলেও ভার্চুয়ালে দেখবে 

ওখানে আমরা সবাই চট্টগ্রামের মেহমান

একসাথে মিলেমিশে সবাই যাচ্ছি চট্টগ্রাম। 


১৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

ঢাকা টু চট্টগ্রাম

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



স্তরে স্তরে ফারাক

টাকা একটা অদ্ভুত জিনিস

না থাকলে হাহাকার

অতিরিক্ত যার, পাপের হাতছানি তার 

চাহিদা সবার; 


এই চাহিদাটাও খুব অদ্ভুত

কেউ খুব অল্পতে তুষ্ট

কেউ কোন কিছুতেই নয় সন্তুষ্ট 

ক্ষুধা সবার; 


ক্ষুধাটাও বড্ড অদ্ভুত

সবার পেটেই লাগে

কেও কম খায় কেউ বেশি

ক্ষুধায় ক্ষুধায় ফারাক; 


ফারাক জীবনের স্তরে স্তরে

থাকা আর না থাকায়

চাওয়া ও পাওয়ায়

তুষ্টি ও অতৃপ্তিতে;


অতৃপ্তি একটা ব্যাধি 

অতৃপ্তি মানুষের মনে  

অতৃপ্ত মন পাপের উৎস 

ফারাক মানুষ ও মনুষ্যত্বে;  


টাকার পেছনে দৌড় সকলের

অসম রেস চাহিদার 

প্রাপ্তিতে সন্তুষ্টি ক'জনার?   

চাহিদা ও প্রাপ্তির বিশাল ফারাক। 

 


১৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

স্তরে স্তরে ফারাক

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।