সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

না বলা কথা

কি জানি একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম তোকে,

জরুরী একটা কথা; 


তোর চোখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ভুলে গেলাম সে কথা 

আর কথাগুলো হারিয়ে গেলো কথাদের ভিড়ে

আসলে যখন আমাদের দেখা হয় তুই কথা বলতে থাকিস

আমি তোর চোখ চেয়ে থাকি, তোকে দেখতে থাকি

আর তোকে দেখতে দেখতে ভুলে যাই আমার যত কথা, 

তোকে দেখতেই কথাগুলো হারিয়ে যায় কথাদের ভিড়ে

বলা হয় না কোন জরুরী কথা, 

তুই বলেই যাস আর আমি শুনেই যায় তোর যত কথোকথা; 

 

আচ্ছা! কখনো কি বলেছি? - 'ভালোবাসি তোকে'

দেখ! কথায় কথায়, কথার খেই হারিয়ে ভালোবাসার কথাটাই বলা হলো না। 



৩০ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

না বলা কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





কথা

'কথা' ছোট্ট একটা শব্দ,  

অথচ কি বিশাল তার ব্যাপ্তি!  


কথা দিয়ে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ 

কথা দিয়ে ভাবের প্রকাশ 

কথা দিয়ে সম্পর্কের সূত্রপাত 

আবার কথা দিয়েই সম্পর্কের সর্বনাশ;


কাওকে ছোট করবে? - কথা

কাওকে বড় করবে? - কথা

কাওকে তিরস্কার করবে? - কথা 

কারো প্রশংসা করবে? - কথা;  


কথাতেই মধু ঝরে কথাতেই বিষ 

কথা দিয়েই ভালোবাসা কথাতেই ঘৃণা 

কথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর কানকথা 

অথচ প্রাত্যহিক জীবনে এটার'ই সবচেয়ে বেশি চর্চা;  


মাঝে মাঝে কথা বলতে বলতে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি 

কথা বলতে বলতে প্রায়শই চিন্তা করি না কাকে কি বলছি   

কখনো ভাবি না কাকে কি বলা উচিৎ আর না উচিৎ  

ভাবি'ই না আমার কথাগুলোই কারো কানে লাগতে পারে বিষ; 


অথচ কথা বলার সময় একটু যদি চিন্তা করতাম!

যদি কানকথা থেকে নিজেকে সংবরণ করতে পারতাম! 

তাহলে হয়তো সম্পর্কগুলো অনেক সুন্দর হতো

কিংবা হয়তো জীবনটাই আমাদের অন্যরকম হয়ে যেতো। 


২৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





অর্থ, স্বার্থ ও সম্পর্ক

অর্থ,  

ছোট্ট একটা শব্দ অথচ ব্যাপ্তি ভয়াবহ 

একে ধরা যায়, ছোঁয়া যায়

একে ঘিরেই জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড   

অর্থে সম্পর্ক গড়া 

অর্থে সম্পর্কের ভাঙন 

আর অর্থেই যত অনর্থ,   

আচ্ছা! জীবনে কোনটার প্রয়োজন বড়! 

সম্পর্কের না অর্থের? 

কোনটা ভালো? 

সম্পর্কহীন অর্থের পাহাড় 

নাকি অর্থহীন সম্পর্কের নদী?  

উত্তর খুঁজছি; 


স্বার্থ, 

শুনতে কেমন জানি গা গোলানো একটা শব্দ 

অথচ সম্পর্কের সাথে ওতপ্রোত   

একে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না 

তবুও একে ঘিরেই সব অনর্থ, 

স্বার্থের প্রয়োজনে সম্পর্কের জোড়া

স্বার্থে আঘাত লাগলেই সম্পর্কহীনতা 

আর সম্পর্কে যত অনর্থ,  

কোনটা খারাপ? 

সম্পর্কের প্রয়োজনে স্বার্থ 

নাকি স্বার্থের প্রয়োজনে সম্পর্ক?  

ভাবছি। 



২৮ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

অর্থ, স্বার্থ ও সম্পর্ক  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



মোমবাতির ধোঁয়া

একটা ম্যাচের কাঠি  

একটা মোমবাতি 

মনের বারুদে চিন্তা ঘষতেই কিছু শব্দের আওয়াজ

কবিতার মোমবাতিটা জ্বললো কি?


চিন্তা পুড়ছে 

মোমবাতি গলছে

ছাই হচ্ছে সলতে 

অল্প একটু সময় বাকি,  

গলে পড়া ভাবনা

আর গলে যাওয়া মোমবাতি

কিছু লেখা হলো কি? 

এখনো একটু বাকি, 

গুমোট ভাবনা  

নিভু নিভু মোমবাতি

এই যাহ! অন্ধকার

কবিতার ইতি; 


আগুনে হাত দিয়েছিলে?

ছুঁয়েছিলে জ্বলন্ত শিখা?

তাপ ছিলো শব্দে?

নাকি মোমবাতি নিভিয়ে দিয়েছিলে ভাবনার ভাপে?

বাক্যের কোলাহল পাও নি? 

তবে আর কবিতা হলো কি?


পুড়ে যাওয়া ছাই তো দেখেছ 

আগুন পুড়তে দেখেছ? 

কাগজে কলম ঘষে শুধু শব্দই পোড়াই

আর কিছু বাক্যের ছাই,   

আঁচর কাটার মত নখ কোথায় শব্দের?  

কোথায় জ্বলন্ত মোমবাতি বাক্যের? 

ঐ তো অল্প একটুমাত্র সলতে পোড়া কাব্যের ধোঁয়া,   

বড্ড সাধ! একদিন একটা আস্ত কবিতা পোড়ানোর।  


২৮ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

মোমবাতির ধোঁয়া

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




খিদার টেরেন

বেইন্না অইতে না অইতেই পেডের ভিত্রে লাইন দিয়া টেরেন ছুডে,  

ক্ষিদার টেরেন;  

হুইইইইইই সিদা দুইপাত লাইন দিয়া টেরেন দৌড়ায় 

একখান পাতে নাকে ভাতের ঘেরান আরেকখান পাতে বাজারোত নাই কাম  

দুইট্টা লাইন এক না অইলে খাওন আইব কোইত্থন? 

আমি তো গতর খাডায় খাই, কাম না থাকলে গতর খাডামু কই?


পেট কি বুঝে কাম আছে না নাই? ক্ষিদাও তো বুঝে না

বিয়ান অইলেই চিল্লাইয়া খাওন চায় পেট

সুয্যি যত মাতার উপ্রে উডে ক্ষিদা তত চেগাইয়া উডে

যহন আর সইহ্য অয় না 

তহন আমি বড় মাইনেগো বাড়ির কাছের ডাষ্টবিন আতাই

ঐহানেও আমার লাহান আরো কয়জনের লাইন  

লাইন দিয়া রাকছে পাড়ার নেড়ি কুত্তাগুলাইনও  

আমগো বেবাক্তের পেডে খিদা, বেবাক্তে মিল্যা ডাষ্টবিন আতাই 

যার ভাগে যা উডে তাই দিয়াই বিয়ানের নাস্তা খাই; 

 

মাঝে মইধ্যে কপাল বালা অইলে ভাগে বালা খাওন পাই

মাঝে মইধ্যে বড়নোকগো রাইতের পার্টির ফালায় দেওয়া মজার খাওন 

মাঝে মইধ্যে হেগোর দোকান থাইক্কা কিন্না আনা প্যাকেট খাওন

বড়লোকের পুলাপাইন আদ্দেক খায়, আদ্দেক ফালায় দেয়

ভাগ্যিস ফালায়! 

যেদিন আদা খাওন প্যকেট পাই হেইদিন আমার ঈদ

আর যেদিন ডাষ্টবিনে কুত্তাগো লগে মারামারি কইরাও কিছু জুটে না 

হেইদিন থাল পাততে অয় মসজিদের সামনে, ভিক্কার থাল 

তয় ভিক্কা করতে আমার বড় লাজ লাগে

যুয়ান মানু আত পাও আছে তাও কাম নাই বইলা ভিক্কা করন লাগে 

ভিক্কার টেকায় হাইঞ্জাকালে দুইডা চাইল কিন্না বস্তিত ফিরি

চুলাত আগুন দিলেই পেডের আগুন দপদপাইয়া চেগায় উডে

ভাতের মারের গন্ধে বেড়ার ভাঙ্গা ঘর ম ম করবার থাহে

এক চিমডি লবন ফালাইয়া ফ্যান সহ গরম ভাতে চুমুক  

ইশশ! যেন মধু! 


মধুর নামডা খালি হুইন্নাই গেলাম, মধু কিন্তুক আমার কপালো জুটে নাই   

কেমনে জুটব কও! বড়লোকেরা যে ডাষ্টবিনে খাওন ফালায়! 

একটা দুইডা মধুর খালি বোতল ফালাইবার পারে না?

না হয় এক ফোডা দুই ফোডা চাইট্টা চাইট্টা খাইতাম!

জানো! একদিন দুফুর বেলায় ফুটপাতে গুমায় আছিলাম

হেইদিন হপন দেকছিলাম মধু খাইতাছি

মধুর টেশ বুঝনের আগেই পুলিশের লাডির বাড়ি

বাবাগো মাগো কইরা উইঠঠা দিসি দৌড়  

হেরপর থাইক্কা কেন জানি মধুর হপন আমার মাতায় ঢুইক্কা গেসে 

তোমরা দেইক্ষো, একদিন আসমানে খুব জ্যোৎস্না অইলে 

আমি ঠিক চান্দের রুডির মইধ্যে হপনের মধু মাখায় খামু,  

গরীব অওনের অনেক জ্বালা 

পেট খিদা সইবার পারে না; 


আইচ্ছা! একটা কতা বড় জানবার মন চায় 

এই যে বড়নোকেরা! এগোর খিদা কি আমগোর থন আলাদা? 


২৬ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

খিদার টেরেন 

  - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০

মানুষ হওয়ার অক্ষমতা

মানুষই তো ভুল করে, 

কখনো বুঝে, কখনো না বুঝে

কখনো দুষ্টুমির ছলে কখনো অন্য কোন কারণে 

ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত 

জেনে কিংবা না জেনে,  

নানা কাজেই ভুল করে ফেলে সময়ে অসময়ে

কিংবা ভুল হয়েই যায় কারণে আর অকারণে

কথায়, কাজে, ব্যবহারে কিংবা আচার আচরণে,     

মানুষ হলে;


আচ্ছা! অনুতপ্ত হলে কি ক্ষমা পাওয়া যায়?

কিংবা ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে?

এটা বোধহয় মানুষের পক্ষে কঠিন

একবার কেউ ভুল করলে সহজে তাকে আর বিশ্বাস করে না 

বিশ্বাস করলে তবেই না ক্ষমা করবে! তাই না? 


নিজের ভুলের সে কিন্তু ঠিকই ক্ষমার আশা করে, 

অন্যের থেকে;   

অথচ নিজে ক্ষমা করতে পারে না অন্যের ভুলের, 

মানুষ হওয়ারও কিছু অক্ষমতা থাকে;


প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু ভুল থাকে যে

আয়নার সামনে দাঁড়ালেই ওগুলো দগদগে ঘায়ের মত ফুটে ওঠে

পুরনো সব অমোচনীয় ভুলগুলো, 

যেগুলো নিয়ে মানুষ অনুতপ্ত তো হয়!  

তবে ক্ষমা চাওয়ার আর সময় হয় না সময় মতন

কিংবা যার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা 

সে মানুষগুলোই হয়তো হারিয়ে যায় চিরতরে  

আর আয়না ফাটে অনুতাপের ভাপে,  

মাঝে মাঝে মনে হয় পুরনো ভুলগুলো যদি রাবার ঘষে মুছে ফেলা যেত!


 

২৬ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

মানুষ হওয়ার অক্ষমতা

 - যাযাবর জীবন  


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




ভয়, আবারও সে - গল্প

চারিদিকে করোনা নামক মহামারী। মহামারীর ছোঁয়া লেগেছে আমাদের বাড়িতেও - করোনা আঘাত হেনেছে। করোনাক্রান্ত আমি  আইসোলেটেড তিন তলায় এক রুমে; স্ত্রী চার তলায় আরেক রুমে। আমরা একান্নবর্তী পরিবার, আমাদের বাড়িটা চারতলা বাড়ি; পুরোটা জুড়েই আমরা থাকি। নিচতলা কমন, দোতলায় ছোট ভাই তার ফ্যামিলি নিয়ে, আমি তিনতলায় আমার ফ্যামিলি নিয়ে; চারতলাটা ছোট বোনের। সে শ্বশুর বাড়ি থেকে এ বাসায় আসলে থাকে, নতুবা আমরা দু ভাই মাঝে মাঝে আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করি। চারতলায় ছোট বোনের জন্য করে দেওয়ার পরও এক পাশটায় বেশ খানিকটা খোলা ছাদ ছিলো। বাসার কাজের লোকদের থাকার জন্য এবং একটা বড় রান্নাঘরের প্রয়োজনীয়তায় ঐ খোলা অংশটায় আপাতত একটা টেম্পোরারি রান্নাঘর ও কাজের লোকদের থাকার জন্য ঘর করে নিয়েছি, উপরে টিনের চাল দিয়ে। যেহেতু বাসায় করোনাক্রান্ত দুইজন রুগী  (আমি ও আমার স্ত্রী) সুতরাং সে চারতলায় আমার বোনের বেডরুমে আইসোলেশনে আর আমি তিনতলায় আমার বেড রুমে; বাচ্চারা যার যার রুমে। তিন আর চারতলা জুড়ে আমরা সবাই আইসোলেশনে। যেহেতু আমার স্ত্রী চারতলায় তাই তার সাহায্যকারীরা (কাজের লোকেরা) তাই আপাতত: তার বেডরুমের পাশেই ড্রইং রুমে বিছানা করে থাকছে। 


একদিন অনেক রাত। আমি গভীর ঘুমে ছিলাম। ঘুমের মধ্যেই যেন ধুম ধুম ধুম ধুম শব্দ পাচ্ছি, ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে, রেশ কাটছে না। এর মধ্যে ফোনের শব্দ। ঘুমের ঘোরেই ফোনের স্ক্রিনে দেখি আমার স্ত্রীর চেহারা ভেসে উঠেছে। মোবাইল ঘড়িতে দেখি রাত আড়াইটা, কি ব্যাপার? এত রাতে? হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো, শব্দ পাচ্ছ না? আমি ততক্ষণে বিছানায় উঠে বসেছি; ধুম ধুম করে কে জানি হাঁটছে। হ্যাঁ, পাচ্ছি তো! সে বললো, ছাদে হাটার শব্দ পাচ্ছি, দেখতো এত রাতে ওখানে কে হাঁটে? হাঁটলে কি এত জোড়ে শব্দ হয়? মনে হলো কে যেন দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি ঘুম থেকে উঠে সিঁড়ি ঘরে যেতেই মনে হলো নাহ! শব্দ তো ছাদ থেকে না! নিচ থেকে আসছে মনে হলো। আমি নিচতলার ড্রইং রুমে ঘুরে এলাম, উঁহু! এখানে তো কেউ নেই? আবার মনে হলো ওপর থেকে আসছে। কেমন যেন গা ছমছম করছিলো। পুরো বাড়ি ঘুমিয়ে, আমি একা; তবুও ধীর পায়ে ছাদের দিকে রওয়ানা দিলাম। সবগুলো লাইট জ্বালিয়ে ছাদে উঁকি দিলাম। তারপর ছাদে পা রাখলাম, পুরো ছাদ ঘুরে দেখলাম।  উঁহু! ওখানে কেউ নাই তো! তাহলে? আবার মনে হলো নিচে থেকে শব্দ আসছে। এবার সত্যিই কেমন জানি ভয় ভয় করছিলো। কেমন এক অশরীরী ভয়, ছাদের দরজা লাগিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতেই যেন জমে গেলাম। কেমন এক অদ্ভুত ভয়ে হাত পা সব জমে গেলো, আমি ছুটে নামতে চাইলাম; কিন্তু যেন পা ফেলতে পারছিলাম না সিঁড়িতে, সরসর করে মাথার পেছনের সব চুল যেন দাঁড়িয়ে গেলো এক অশরীরী ভয়ে। কতক্ষণ জমে ছিলাম ওখানে মনে নেই, এক মিনিট, দুই মিনিট কিংবা পাঁচ মিনিট! হিসেব নেই। তারপর একসময় সম্বিত ফিরে পেতেই, ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে লাগলাম। হঠাৎ করেই মনে হলো, আচ্ছা! ভাতিজারা কেও কি ট্রেডমিলে হাঁটছে? ট্রেডমিলে হাঁটলে গভীর রাতে এমন বাড়ি কাঁপানো শব্দ হতে পারে। ভেবে এবারকার গন্তব্য ছোট ভাই এর দোতলায়। প্রথমে নিজের ঘরে গিয়ে আগে মুখে মাস্ক পড়ে নিলাম তারপর দোতলায় গিয়ে ওদের ঘরের দরজা নক করলাম। রাত প্রায় তিনটা, এত রাতে ডাকার ফলে ছোট ভাই এর বৌ মনে হয় বেশ ভয় পেয়েই বের হয়ে এলো; আমি উঁকি দিয়ে ওদের ড্রইং রুমে দেখলাম ট্রেডমিল খালি, ওখানে কেও নেই। এত রাতে দরজায় শব্দ শুনে এর মধ্যে ভাতিজা দুইটাও বের হয়ে এলো। ছোট ভাই ঘুমচ্ছিল, ওকেও ডেকে তোলা হলো। কি হয়েছে কি হয়েছে বলে সেও বের হয়ে এলো; ছোট ভাইকে বললাম কোন শব্দ শুনছিস? সে বললো না। ভাই বৌকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমরা শুনছ? তারাও বললো না। এবার ওদের ডেকে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেলাম, এবার শুনছিস? সবাই বললো হ্যাঁ! শুনছি তো! কে যেন ধুম ধুম করে হাঁটছে, নাকি দৌড়চ্ছে? আমি বললাম, সব জায়গা খুঁজে দেখেছি; কোথাও কিছু পাই নি তাই ভাবলাম ভাতিজারা কেও কি দোতলায় ট্রেডমিলে হাঁটছে কি না? ভাতিজারা বললো না তো বাপ্পা, এত রাতে ট্রেডমিল করব কেন? আমাদের বাড়ির রাতের ঘটনা ও 'সে' এর কথা ইতিমধ্যে সবারই জানা হয়ে গেছে, ফলশ্রুতিতে এবার ছোটভাই এর বৌ এর চোখেমুখে ভয় দেখলাম, সে দোয়া দরূদ পড়া শুরু করেছে। এবার আমি ও ছোট ভাই দুজনে মিলে আবার পুরো বাড়ির বাতি জ্বালিয়ে নিচ তলা থেকে চেক করা শুরু করলাম। একে একে নিচতলা, দোতলা, তিনতলা, চারতলা চেক করে এবার ছাদের দিকে রওয়ানা হলাম। ধুমধুম শব্দ এখনো হচ্ছিলো, তবে যেন আগের থেকে অনেক স্তিমিত হয়ে এসেছে। যেহেতু দু ভাই মিলে একসাথে গেলাম এবার আর ভয়টয়ের তোয়াক্কা করলাম না। ছাদে গিয়ে প্রতিটি কোনা দেখলাম, ছাদের পানির ট্যাংকির চারিপাশে ঘুরে দেখলাম, ছাদ থেকে উঁকি মেরে নিচে দেখলাম, উঁহু! কোথাও কিছু নেই। শব্দটা কিন্তু রয়েই গেলো। এবার মনে হচ্ছে নিচ তলার কোথাও থেকে আসছে। আমরা আবার ছাদের দরজা লাগিয়ে নিচে নেমে আসলাম। আমাদের নামার সাথে সাথে শব্দ স্তিমিত হতে লাগলো। এবার দোতলার সিঁড়ি ল্যান্ডিং এ দাঁড়াতেই শব্দ পুরোপুরি থেমে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম; আর কোন শব্দ পেলাম না। প্রায় চারটা বাজতে চললো। ভাই চলে গেলো তার রুমে আমি  তিনতলায় আমার রুমে। এখন আর ঘুমানোর কোন মানে হয় না, তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে গেলাম, একবারে ফজর পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। 


বেশ কিছুদিন কেটে গেলো, আমরা আলহামদুলিল্লাহ্‌ দুজনাই সুস্থ হয়ে আবার আগের জীবনে ফিরে গেলাম। এর মধ্যে একদিন বড় ভাতিজা একদিন দৌড়ে এসে বললো, বাপ্পা বাসায় কি হচ্ছে? আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন রে বাবা? কি হয়েছে? বললো, আমি নাস্তা খাব বলে ডিম ভেজে টেবিলে রেখে রুটি ভেজে এনে দেখি ডিম নেই। আমি বললাম হয়তো তোর ছোট ভাই দুষ্টুমি করে খেয়ে নিয়েছে। সে বললো - বাসায় তো কেউ নাই, মা'ও নাই ভাই'ও নাই; আমি একা তাই তো নাস্তা বানাচ্ছিলাম। আমি বুঝলাম সবই। বললাম তুই'ই বোধহয় মনের ভুলে ডিম ভেজে খেয়ে নিয়েছিস। ভাতিজা বললো - কি যে বলো না! আমি কি পাগল হয়ে গেছি? আমি বুঝলাম সব, বললাম মা নেই তো তোর একা একা ডিম ভাজার কি দরকার পড়েছিলো? তুই তিনতলায় এসে নাস্তা করলেই তো পারতি! ভাতিজাও বুঝলো, বললো - 'সে'! তাই না? আমি তাকে ভোলানোর জন্য বললাম, আরে নাহ! মাথা থেকে ওগুলো সরিয়ে ফেল; আলতু ফালতু বিষয় নিয়ে চিন্তা করিস না। আয় নাস্তা খাই একসাথে। 


কয়েকদিন পর। হঠাৎ করেই কাজের মেয়েগুলো হুড়মুড় করে নেমে এলো নীচে, আমার স্ত্রীকে বললো আজ রাতে চারতলায় গিয়ে থাকতে। কেন জিজ্ঞাসা করতেই বললো তাদের অনেক ভয় করছে, চারতলার টিনের চালে কে যেন ক্রমাগত হাটাহাটি করছে। আমি বুঝে গেলাম কিছু একটা নিয়ে 'সে' অসন্তুষ্ট হয়েছে। স্ত্রীকে বললাম, যাও আজ ওদের নিয়ে চারতলায় থাকো গিয়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়দিনও তাদের ভয় কাটলো না - কিছু একটা দেখে বেশিই ভয় পেয়েছে মনে হলো। আমি এ ভয়ের স্বরূপ জানি, সুতরাং তাদের ভয় কাটার সময় দিলাম। 


এরমধ্যে বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো। আমাদের বাসায় মধ্য বয়স্ক এক কাজের মহিলা আছে। এ আমাদের বাসায় আজ প্রায় বিশ বছর হয়ে গেছে। আমাদের বাসা থেকেই বিয়েশাদী হয়েছে, দুটো বাচ্চাও হয়েছে। খুবই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। স্বামী নিয়ে থাকে আমাদের বাসার খুব কাছেই। সকালে আসে, সারাদিন কাজকর্ম করে রাতে খাওয়া দাওয়া করে বাসায় যায়। কখনো প্রয়োজনে তার বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আমাদের এখানেই রাতে থেকে যায়। করোনার এ দুর্দিনে সে তার বাচ্চা নিয়ে আপাতত আমাদের বাসাতেই আছে। ভয়ডরহীন ডাকাবুকো মহিলা। সেদিন হঠাৎ করেই রাত প্রায় এগারোটার দিকে দৌড়ে তিনতলায় নেমে এলো, ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে আছে। এসে বললো এ বাসায় থাকা যাবে না, বাসায় কোন একটা সমস্যা আছে। জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে? বললো চারতলার ড্রইংরুম গুছিয়ে সে সিঁড়িঘর দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলো; হঠাৎ দেখে কালো মত মানুষের অবয়বে কি যেন ধোঁয়ার মত তার সামনে দিয়ে ঝড়ের বেগে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো, তারপর শুরু হলো রান্নাঘরের টিনের ছাদে দাপাদাপি। সে ভয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে। 


আমি ঠিক বুঝে পাচ্ছি না, হঠাৎ করেই তার অসন্তুষ্টির কারণ কি? একটা কারণ কি হতে পারে যে আমরা এ বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠে যাওয়ার প্ল্যান করছি!  কিংবা অন্য কোন গূঢ় কারণ এর মাঝে নিহিত আছে! আমি নিশ্চিত সে কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এমন করছে না। কিছু একটা তো আছেই! সেটা যে কি ঠিক বুঝে উঠছি না। সময় বলে দেবে। 


(বিঃদ্রঃ এটা একটা অতিপ্রাকৃত সত্য ঘটনা। কেউ এটাকে একক গল্প মনে করেও পড়তে পারে। যারা আমার ভয় এর আগের পার্টগুলো পড়েছে তাদের জন্য এটা চতুর্থ পার্ট। প্রতিটা পর্বই আলাদা লিখতে চেষ্টা করলাম যাতে আগেরটা না পড়লেও কোন অসুবিধা না হয়।) 

        

২৬ নভেম্বর, ২০২০ 


#অতিপ্রাকৃত গল্প 


ভয়, আবারও সে 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



পুরুষ ও কাপুরুষ

কি দেখছিস রে?

উঁচু হয়ে থাকা বুক?

ও তো কাপড় দিয়ে ঢাকা,

কাপড়ের ওপর থেকেই?

বল তো কি দেখা যায় ওতে?

অসংযত দৃষ্টিতে ওটুকুই দেখছি মন হেনে, 

কেন রে? 

মায়ের টা খাস নি? 


কি দেখছিস রে?

শরীরের ভাঁজ? 

কোথায় কি খাঁজ? 

কাপড়ের ফাঁকে ফাঁকে একটু উঁকি? 

ওটুকুতেই লোলুপ দৃষ্টি?  

অবদমিত কামনায় দেখছি মনে মনে, 

কেন রে? 

বোনেরটাও দেখিস নাকি? 


নারীর আলাদা একটা বোধ থাকে

জানিস তোরা?

দূর থেকে কোথায় কি দৃষ্টি হানছিস 

ঠিক বুঝে যায় ওরা, 

এক একজনার এক একরকম স্পর্শ 

যখনই ছুঁয়ে দিস দেহ 

স্পর্শে স্নেহ, স্পর্শে ভালোবাসা, স্পর্শে কামনা

এদের থেকে ভালো বোঝে না কেহ;


কেন খামখাই দৃষ্টি হানিস? 

কুদৃষ্টি হেনে, 

কেন খামাখাই স্পর্শ করিস?

আর কামোদ্রেক মনে! 


সংযত দৃষ্টি আর সংযত ব্যবহার  

তড়িৎ বুঝে নেয় নারী সংযত মন আছে তোরই    

শ্রদ্ধা ওটাতেই আর নারীর চোখে তুই পুরুষ, 

তোর খারাপ দৃষ্টি আর কামনার স্পর্শ! 

নারীর চোখে শুধুই তুই ঘৃণার পাত্র   

পুরুষ নয় রে, তুই কাপুরুষ।  


  

২৪ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

পুরুষ ও কাপুরুষ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





অভিমানের রঙ

কেউ অভিমানে ডুব দেয়, কেউ ভাসে

অভিমান আকাশে হাসে, মনাকাশে

কেউ অভিমানে লাল, কেউ লালের রঙ বোঝে

কেউ অভিমানের আকাশে রংধনু রঙ খোঁজে;  


কেউ অভিমান করে, কেউ ভাঙানোর চেষ্টায় 

কিছু অভিমান ভাঙে কিছু রয়েই যায়

অভিমান থাক আর নাই থাক মন দুজনারই কাঁদে

মন এক অদ্ভুত ঘর, নানা অনুভূতির ফাঁদে; 


অভিমান ভাংতেই মন ভালোবাসায়

হাসি আনন্দে দুজনা সময় কাটায়

তারপর আবার ঘটনায় নতুন মান 

আবার নতুন করে ভাঙানো অভিমান;


সময়ের সাথে চলতেই থাকে ক্রমাগত 

এটাই জীবন আর নানা রকম সম্পর্ক 

হাসি কান্না, সুখ দুঃখ, আর অনুরাগ অভিমান 

সম্পর্কের সাথে ওতপ্রোত জীবন যাপনের নাম। 



২৩ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

অভিমানের রঙ

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 

 




সম্পর্কের খোসা

সম্পর্কগুলো বাইরে থেকে বোঝা যায় না, 

বাইরে থেকে ওগুলো দেখতে খুব সুন্দর

অনেকটা ফলের মত, নানা রঙের ছিলকার আবরণে জড়ানো 

কোন কোন সম্পর্কের ভেতরটা টক মিষ্টি কাঁচা

কোনটা সুস্বাদু সুমিষ্ট পাকা

কোন কোনটার খোসার বাইরে থেকেই সুগন্ধ বের হতে থাকে 

কোন কোনটা বাইরে সতেজ দেখায় অথচ খোসা ছাড়ালেই দুর্গন্ধ বের হয় 

সবগুলো সম্পর্কই বাইরে থেকে কোন না কোন আবরণে ঢাকা; 


সে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কই হোক 

কিংবা ভাই-বোনের  

অথবা বাবা-মা আর সন্তানেরই হোক,  

আজকাল অবশ্য বাবা-মা আর সন্তানের সম্পর্ক বিয়ের আগে পর্যন্ত 

তারপরের'টা নির্ভর করে মায়ের সাথে স্ত্রীর সম্পর্কের উপর 

আর বৌ-শাশুড়ি সম্পর্ক! সে আর নাই বললাম,  

তাহলে আর সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্ক মধুর হবে কি করে?

আর বাবা! সেও তো মায়ের কথাতেই

স্বামী যেমন স্ত্রীর, 

এ সংসার কেমিস্ট্রি, মূলত একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভুক্তভোগী

আমরা বাইরে থেকে সতেজ সবুজ সুন্দর খোসা দেখি;


পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে ভেতরে কিছু কি পাও? 

সম্পর্কের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে শুধু 'সম্পর্ক' নামটাই রয়ে যায় 

এজন্য আমরা খুব সাবধানে সম্পর্কগুলোকে খোসায় মুড়ে রাখি, 

কিছুটা লোকলজ্জার ভয়ে 

বাকিটা অভ্যাসে,  

তাহলে ঐ যে অনুভব আর অনুভূতি? 

আরে, খারাপ আর ভালো

আনন্দ আর বেদনা 

হাসি আর কান্না 

ভালোবাসা আর ঘৃণা 

সে তো সম্পর্কে কিছু থাকেই, 

সকল সম্পর্কে। 


২২ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

সম্পর্কের খোসা

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।  




ঢাকা টু চট্টগ্রাম

কু ঝিক ঝিক রেলের চাকায় দম

রেলের কামরায় বন্ধ আমরা ক'জন

হাসি গানে খেলাতে

বন্ধুরা সব বন্ধুর সাথে 

সাঁই সাঁই পাড় হচ্ছে গ্রাম 

আমরা ক'জন ঢাকা টু চট্টগ্রাম;


এরা সব পঁচাশি ব্যাচের

বয়সে পঞ্চাশ তো পেরোলো

কে বলবে এদের দেখে?

বয়স এদের নয় ষোলো! 

হাসি গানে সাঁই সাঁই পাড় হচ্ছে গ্রাম 

এরা যাচ্ছে সবাই মিলে, গন্তব্য চট্টগ্রাম;


ওখানে মিলন মেলা নানা রকম খেলা 

ওখানে একসাথে সবাই একটা পুরো বেলা 

ওখানে আয়োজনে ওরা চট্টগ্রাম বাসি 

এখানে রেলের কামরায় কয়েকজন ঢাকা নিবাসী 

ওখানে অনুষ্ঠান খাওয়া দাওয়া নাচ গান 

এখানে রেলের কামরায় এরা যাচ্ছে চট্টগ্রাম; 


ওখানে পরিচয় হবে এখানকার লোকের

সবাই পঁচাশির, সবাই বাংলাদেশের 

কেউ কেউ দেশের বাইরে, ওরাও যোগ দেবে

সামনাসামনি না পারলেও ভার্চুয়ালে দেখবে 

ওখানে আমরা সবাই চট্টগ্রামের মেহমান

একসাথে মিলেমিশে সবাই যাচ্ছি চট্টগ্রাম। 


১৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

ঢাকা টু চট্টগ্রাম

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



স্তরে স্তরে ফারাক

টাকা একটা অদ্ভুত জিনিস

না থাকলে হাহাকার

অতিরিক্ত যার, পাপের হাতছানি তার 

চাহিদা সবার; 


এই চাহিদাটাও খুব অদ্ভুত

কেউ খুব অল্পতে তুষ্ট

কেউ কোন কিছুতেই নয় সন্তুষ্ট 

ক্ষুধা সবার; 


ক্ষুধাটাও বড্ড অদ্ভুত

সবার পেটেই লাগে

কেও কম খায় কেউ বেশি

ক্ষুধায় ক্ষুধায় ফারাক; 


ফারাক জীবনের স্তরে স্তরে

থাকা আর না থাকায়

চাওয়া ও পাওয়ায়

তুষ্টি ও অতৃপ্তিতে;


অতৃপ্তি একটা ব্যাধি 

অতৃপ্তি মানুষের মনে  

অতৃপ্ত মন পাপের উৎস 

ফারাক মানুষ ও মনুষ্যত্বে;  


টাকার পেছনে দৌড় সকলের

অসম রেস চাহিদার 

প্রাপ্তিতে সন্তুষ্টি ক'জনার?   

চাহিদা ও প্রাপ্তির বিশাল ফারাক। 

 


১৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

স্তরে স্তরে ফারাক

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০

বাবা-মা হওয়ার দায়

আজকালকার অবস্থা দেখে কেন জানি প্রায়শই মনে হয় 

আমরা বোধহয় ছেলেমেয়েকে সঠিক পথ দেখাতে পারি নি 

পড়ালেখা তো করাচ্ছি ঠিকই, সুশিক্ষিত হচ্ছে কি? 

মানবিক মূল্যবোধগুলো গড়ে উঠছে কি?

এই যে আজকাল এদের মধ্যে এত অনাচার দেখি!

বাবা-মায়ের প্রতি অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা, ক্ষেত্র বিশেষে বিতৃষ্ণা

এই যে নেশার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া

ভালো খারাপের আলাদা করতে না পারা! 

কিংবা করতে পারলেও খারাপটা বেছে নেওয়া 

সম্ভব অসম্ভব সব চাহিদা বাবা-মায়ের ওপর চাপিয়ে দেওয়া

প্রাপ্তিতে উনিশ থেকে বিশ হলেই বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড! 

এমন'কি তুচ্ছ অভিমানে আত্মহত্যার নামে বাবা-মাকে দুঃসহ যন্ত্রণায় ফেলে যাওয়া, 

সবই তো দেখছি, সবই তো সইছি 

না সয়েই বা উপায় কি? বাবা-মা যে হয়েছি!


আচ্ছা! এটা কি আসলে ইংরেজি মিডিয়ামের শিক্ষা ব্যবস্থার অবদান?

এদের মাঝে দেশপ্রেম কোথায়? 

 - ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা

 - একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার 

 - একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল 

এ গানগুলো তারা জানে? 

কিংবা 

- একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয় 

- আমারও দেশেরও মাটিরও গন্ধে ভরে আছে সারা মন 

- আমায় যদি প্রশ্ন করে 

এ গানগুলো তারা শোনে?

কিংবা 

- এক নদী রক্ত পেরিয়ে 

- এক সাগর রক্তের বিনিময়ে  

- জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো 

এ গানগুলো তারা বোঝে?

আচ্ছা! আমার সোনার বাংলা গানটা কি ওরা জানে?

এর অর্থ বোঝে? 

তবে কেন এ গানকে রিমেক করে কিংবা রিমিক্স!  


অথচ কানে সারাক্ষণ হেড-ফোন লাগিয়ে কি এক নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে 

কান থেকে হেড-ফোনটা খুলে তোমার কানে একবার লাগিয়ে দেখ তো!

ঝনঝন, দ্রিম দ্রিম বাজনার সুরে ওপাশ থেকে ভেসে আসবে বিকট চিৎকার 

একবার শুনলে তুমি কখনই শুনবে না আর;


এরা বাবা-মায়ের কষ্ট বোঝে না 

বাবার আয়ের সীমাবদ্ধতা বোঝে না 

এদের শুধু চাহিদা আর চাহিদা  

অর্থের মূল্য এরা বুঝেও বোঝে না; 


বরং বাংলা মিডিয়ামের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে কিঞ্চিত হলেও দেশপ্রেম দেখেছি

এরা পয়লা বৈশাখে বটতলায় জড়ো হয় আর মুখরিত - এসো হে বৈশাখ এসো এসো 

একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে এদের কণ্ঠে - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

এদের কণ্ঠেই জয় বাংলা বাংলার জয়

এদের কণ্ঠেই কারার ঐ লৌহ কপাট ভাংরে তোরা কররে লোপাট 

দেশপ্রেম এরা কিছুটা হলেও জানে

এরা ইতিহাস ঘাটে এরা ভূগোল নিয়ে মাতে

এরা ভাষাকে ধারণ করে 

এরা বাংলার রূপ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে

এরা কাগজে কলমে বাংলায় কবিতা লেখে

এরা বাংলা'কে ভালোবাসে; 


এরা বাবা-মায়ের কষ্ট বোঝে

বাবার আয়ের সীমাবদ্ধতা বোঝে

মায়ের ভাতটান বোঝে হাড়ি দেখে 

এরা অর্থের মূল্য বোঝে, চলে পয়সার হিসাব কষে কষে; 


আমি দু'দলকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে আকাশ পাতাল বিভেদ দেখছি

বিভেদ মানসিক, বিভেদ মূল্যবোধের, বিভেদ মনুষ্যত্বের তারতম্যের

মাঝে মাঝে খুব ভাবি, আচ্ছা! তবে কি আমরা এদের সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি

তবে কি গড্ডলিকা প্রবাহে ইংরেজি মিডিয়ামে দিয়ে ভুল করেছি!


এটা কি শিক্ষাব্যবস্থার দোষ!

না কি দোষ আমাদের?

 -  মানবিক অনুভূতিগুলোকে সন্তানের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়া

 -  পারিবারিক মূল্যবোধ শেখাতে ব্যর্থ হওয়া 

 -  কিংবা অন্য কিছু!

কই! চেষ্টার তো ত্রুটি করি নি!

সন্তানের কোন চাহিদা পুরণ না করে শান্তি পাই নি!

এদের জন্যই তো সব সাদ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে উদয়াস্ত খেটে গেছি

তবে কম পড়লো কিসে?


আমি মাঝে মাঝে অসহায় হয়ে উত্তর খুঁজি আকাশে বাতাসে, 

আয়নাও কথা বলে না আমার সাথে 

হয়তো অভিমান করেছে - সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায়;

বাবা-মা হওয়ার দায় এড়াবো কিভাবে? 



১৮ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

বাবা-মা হওয়ার দায়

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






প্রেমের কথা

ছাত্র জীবনের প্রেম - আরেকটু কথা বলি! 

চাকরি জীবনের প্রেম - প্লিজ, পরে কথা বলি!

অবিবাহিত জীবনের প্রেম - চুমু খেতে খেতে কথা বলি!   

বিবাহিত জীবনের  প্রথমদিকের প্রগলভ প্রেম - রাতে কথা বলি!

বিবাহের এক যুগ পরে - সাংসারিক প্রয়োজনে, মাঝে মধ্যে শরীর টানলে  

বিবাহের রজত জয়ন্তী পরে - চোখের সামনে বই আর ফ্যানের ঘটর ঘটর শব্দ         

বিবাহের সুবর্ণ জয়ন্তী কিংবা হীরক জয়ন্তী! - ক'জনার ভাগ্যে জোটে!

কম বেশি কথা হোক আর নাই বা হোক, টানটা কিন্তু ঠিকই থাকে

জীবনের প্রতিটা ধাপে, যাদের একসাথে জীবন কাটে,  

আচ্ছা! এই যে পরস্পরের প্রতি  টান! 

একে কি প্রেম বলে?



১৭ নভেম্বর, ২০২০ 

      

#কবিতা

প্রেমের কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




ভার্চুয়াল মেধা

ভার্চুয়ালটা বড় মজার জায়গা

এখানে লক্ষ কোটি মেধার উন্মোচন; 


আজকাল আমার মত লক্ষ কোটি পাতি লেখকের আবির্ভাব, 

এরা ক্রমাগত লিখছে

কেউ গল্প, কেউ কবিতা, কেউ উপন্যাস, কেউ প্রবন্ধ কেউ বা গান

প্রতিদিন লিখছে, প্রতিনিয়ত, ভার্চুয়ালটা ভরে ভরে 

কেউ ফেসবুকে, কেউ টুইটারে, কেউ ব্লগে, কেও বা অন্য কোন মিডিয়ায়

এদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো লিখছে

আর কেউ শুধু লিখেই যাচ্ছে

বন্ধু বান্ধবরা না পড়েই লাইক দিয়ে যাচ্ছে

না পড়েই কমেন্ট, আজকাল তো আবার কমেন্ট ইমোতে,  

ওগুলো কতটুকু যে সাহিত্য হচ্ছে কে আর আদতে পড়ে দেখে!  

আচ্ছা! পাঠক কোথায় এই লেখক মেলায়? 


ধ্যাত! পাঠক খুঁজো না তো! 

মেধার বিকাশ হচ্ছে, ভার্চুয়ালে; 


আজকাল আমার মত লক্ষ কোটি এমেচার ভিডিও বানাচ্ছে,  

কেউ গল্প বলছে 

কেউ আবৃতি করছে 

কেউ বা গান গাইছে

আর ক্রমাগত ভিডিও বানাচ্ছে  

প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, ভার্চুয়াল ভরে

কেউ ফেসবুকে, কেউ ইন্সটাগ্রামে, কেউ ইউটিউবে, কেউ বা লাইকি'তে

এদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো আবৃতি করছে, কেউ খুবই ভালো গান গাইছে

আর বাকিরা শুধু ভিডিও আপলোড করেই যাচ্ছে,  

বন্ধু বান্ধবরা না শুনেই লাইক দিয়ে যাচ্ছে

না শুনেই কমেন্ট, আজকাল তো আবার কমেন্ট ইমোতে,  

ক'জন মন দিয়ে শোনে আদতে কি আবৃতি হচ্ছে!  

কতটুকু সুরেই বা কে গান গাইছে!  

কতটুকুই বা শ্রুতিমধুর হচ্ছে! 

আচ্ছা! শ্রোতা কোথায়! কোথায়ই বা দর্শক! এই ভিডিও মেলায়?


ধ্যাত! শ্রোতা খুঁজো না তো! 

মেধার বিকাশ হচ্ছে, ভার্চুয়ালে।  


১৬ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

ভার্চুয়াল মেধা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



ভালোবাসায় একসাথে

এত দূরে কেন?

একটু গা ঘেঁষে দাঁড়া 

আরেকটু এগিয়ে হাতে হাত

আচ্ছা চল, ওখানে বসি ঐ ঘাসের বনে 

ওটুকু যখন কাছে আসলিই একবার ঠোঁটটা বাড়া

একটা চুমু, তারপর ফেঁসে যা;


সেই যে ফেঁসে গেলি! 

আজো জড়িয়ে রইলি

জানিস! ভালোবাসা একটা অনুভব

মনের ভেতর কিসের যেন একটা অদ্ভুত টান 

যাকে টানে সেই জানে

আর বাকিদের কুটকথা জনে জনে; 


মজার ব্যাপার হলো আমরা দুজন দুপ্রান্তের মানুষ

তুই উত্তরের আমি দক্ষিণের, তুই মাটির আমি জলের

তুই সূর্য আমি চাঁদ, তুই দিন আমি রাত

অথচ তবুও একটা জায়গায় আমাদের অদ্ভুত মিল 

অনুভবে মনের টানটা যতটুকু তোর ততটুকুই আমার 

আর ভালোবাসায় আমাদের নেই কোন খাঁদ;


আমাদের শুরুটা বড্ড কঠিন ছিলো, তবুও আমাদের হাত ধরা ছিলো হাতে

আমাদের ওপর অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছিলো, তবুও অটল ছিলাম বিশ্বাসে 

আমরা জীবনে অনেক কিছুই পাই নি, পেয়েছি দুজন দুজন'কে

ভালোবাসার মানুষ'কে ভালোবাসায় পেলে আর কি লাগে বল জীবনে! 

জানিস! আজকাল কেন যেন খুব ভয় হয় 

একজন হঠাৎ করেই অন্ধকার হয়ে গেলে আরেকজনের কি হবে? 



১৫ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

ভালোবাসায় একসাথে 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





মানুষ নামের সীলমোহর

আমাদের প্রতিনিয়তই শিখতে হয়,

শিখতে হয় টিকে থাকার জন্য

শিখতে হয় বেঁচে থাকার জন্য 

শিখতে হয় পেট পালার জন্য 

এই যে পড়ালেখা করছি! শিক্ষিত কি হয়েছি?

সার্টিফিকেট নামক একটা কাগজের টুকরো - শিক্ষার মানদণ্ড,

আচ্ছা! মানুষ হওয়াটা কি শিখেছি?

আমি আয়না'কেই জিজ্ঞাসা করছি;


এই যে পেট! এতে এত ক্ষুধা! 

এই পেট পালতে কি কি যে করছি! তা শুধু আমিই জানি,

কি না করছি, জীবনের টিকে থাকার লড়াইয়ে!

কেউ চাকরিতে, কেউ ব্যবসাতে তেল ঢালছি পাত্রে ও অপাত্রে

চাটুকারিতা, ঘুষ, দুর্নীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে

কে কাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আগে যাবে 

কে কাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়ে সামনে বাড়বে  

কে কার পা টেনে ধরে নিজে ওপরে উঠবে, 

প্রতিযোগিতা আর প্রতিযোগিতার লড়াই

সে চাকরিতেই হোক আর কি ব্যবসাতেই! 

কিংবা পেট পালতে অন্য কোন উপায়ে,  

প্রতিনিয়ত, পদে পদে;

 

প্রাপ্তি! 

ঐ যে বললাম, পেট পালছি

আচ্ছা! পেট পালতে কতটুকু লাগে?

কতটুকু খাদ্য ঢোকে এক পেটে? 

ধ্যাত! সেগুলো চিন্তা করার সময় আছে!

আগে তো করায়ত্ত করে নেই নিজের কাছে! 


আচ্ছা! তাহলে বিবেক কি?

ওটা! ডিকশনারির একটা শব্দ

কোন একটা সময় মানুষের ভেতরে ছিলো

আজকাল হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজতে হয়, 

 - খুঁজে পাওয়া যায়?

   যায় কখনো কখনো;    

আর মনুষ্যত্ব?  

 - ওটা কিনে কিনে নিয়েছে অর্থ,

তাহলে সম্পর্ক?

 - ওটাও কিনে নিয়েছে স্বার্থ;


তাহলে মানুষের আর রইলো কি?

আছে তো! 

বড় বড় কথা, উঁচু উঁচু ভাষণ আর গলা ফাটানো বক্তৃতা

ভান, তঞ্চকতা আর ছলনা 

আছে অসীম চাহিদা আর সবকিছু গ্রাস করার অভিলাষ

আছে রিপু নামক অদৃশ্য কিছু অনুভূতি

আর আছে আমার আমিত্ব;   

আরে! আসল জিনিষটাই তো বলা হলো না 

মানুষের আছে মানুষ নামের এক সীলমোহর। 


১৪ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

মানুষ নামের সীলমোহর

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 




  

ছাত্র জীবন, সেকাল ও একাল

আমাদের জীবনটা উত্থান পতনে ভরা 

বিশেষ করে আমরা যারা ষাট, সত্তর বা আশির দশকে জন্ম নিয়েছি; 

প্রতিযোগিতা তো সব যুগেই থাকে 

তবে ছাত্রজীবনে আমরা খুব বেশী অসুস্থ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হই নি বোধহয়;


আমাদের প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রধান ছিল ভাই বোনদের মাঝে প্রতিযোগিতা - 

কে কার আগে ঘুম থেকে উঠবে

কে কার আগে স্কুলের জন্য তৈরি হবে

তখন সাধারণত সব ভাইবোনই একই স্কুলে পড়ার রেওয়াজ ছিলো

তবুও মাঝে মধ্যে যদি প্রাইমারি সেকেন্ডারি লেভেলে স্কুল আলাদা হয়ে যেত

তবেই বিপত্তি,

আবার কে বাসে করে স্কুলে যাবে কিংবা আসবে 

কে কার আগে হোম ওয়ার্ক শেষ করে মায়ের সাথে খুনসুটিতে মাতবে

কে কার আগে খাওয়ার পাটিতে বসবে

মা আজ কার পছন্দের ভর্তাটা বানিয়েছে 

মা আজ কার পছন্দের ভাজি করেছে 

মা আজ কার পছন্দের সবজি রান্না করেছে 

কে কার আগে যার যার পছন্দের মুরগীর টুকরোটা তুলে নেবে 

(রানটা কিন্তু ছিলো বাবার, ওদিকে নজর দিতেম না কেউ) 

কে কার আগে মাছের প্রিয় টুকরোটা নেবে  

(মাথাটা কিন্তু ছিলো বাবার, ওদিকে নজর দিতেম না কেউ)

কে তাড়াতাড়ি বিছানায় যাবে, কে মায়ের পাশের জায়গাটা দখল করবে

এই সব পারিবারিক ইতং বিতং আর কি;


স্কুলে বন্ধুবান্ধবদের মাঝে প্রতিযোগিতা ছিলো -

কে কার আগে স্কুলে যাবে 

কে কার আগে লাস্ট বেঞ্চ দখল করবে 

কে কে দলবেঁধে হেঁটে যাবে কিংবা ফিরবে 

কে হোম ওয়ার্ক করে নিয়ে গেলো 

অনুপস্থিত বন্ধুর প্রক্সি কে দিলো  

কে স্যরের স্কেলের বাড়ি খেলো

কাকে বেঞ্চের ওপর দাঁড়াতে হলো 

কে কবে কি কারণে নীল ডাউন হলো

কে পড়ালেখায় কত ভালো করলো 

কার রেজাল্ট কত ভালো হলো 

ইত্যাদি ইত্যাদি,


আরও ছিলো কিছু দুষ্টুমি -

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এর ওর গাছের দিকে নজর দেয়া 

ফল পাকলে এর ওর গাছে হামলা দেয়া  

ডালিয়া, গন্ধরাজ কিংবা গোলাপ বাগান থেকে ফুল চুরি  

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে খেলার মাঠে কিছু ধমকা ধমকি 

আর খুব বেশি হলে সীমিত আকারে কিছু হাতাহাতি

ইত্যাদি ইত্যাদি; 


আজকালকার প্রতিযোগিতা! 

ভাই বোন তো হাতে গোনা, কিছু ফ্যামিলিতে সন্তান একা 

ঘুম ভাঙায় মোবাইল এলার্ম 

স্কুল! না যেতে পারলেই মনে হয় বেঁচে যায় 

পড়াশোনা! টিচার তো আছেই 

হোম ওয়ার্ক! বড্ড যন্ত্রণার 

রেজাল্ট! খুব গৌণ

খাবার দাবার!  মুরগীর রানটা আমার

মাছ! ইয়াক ইয়াক

পছন্দের খাবার? ফাস্ট ফুড আছে না! 

ঘুমুতে যাওয়া! রাত কাটে অনলাইন গেমে

বাবা মায়ের সাথে সময় কাটানো! - খাবার টেবিলেই সীমিত 

এই সব পারিবারিক ইতং বিতং আর কি;


আরও আছে -   

কার কয়টা গেজেট আছে

কে কোন অনলাইন গেমে পারদর্শী

কে কোন নামকরা স্কুলে পড়ে

কার বাবার কত টাকা আছে 

কার বাবা কোন ক্লাবের মেম্বার 

কে কোন মডেলের গাড়ি চড়ে

কে কোন নামীদামী রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছে

কে কোন অভিজাত এলাকায় থাকে 

কার বাড়ির ইন্টেরিয়র কোন ডিজাইনার করেছে

কার কয়টা ব্র্যান্ডের জুতা আছে

কার কয়টা ব্র্যান্ডের জামাকাপড় আছে 

কে ছুটিতে কোন দেশে বেড়াতে গিয়েছে 

কে কত টাকার শপিং করেছে

ইত্যাদি ইত্যাদি;  


আর দুষ্টুমি! তার তো সংজ্ঞাই বদলে গিয়েছে -

কে কত বয়সে ভার্জিনিটি হারালো 

কে ক'জনার সাথে সেক্স করলো 

কে কোন ব্র্যান্ডের মদ খেয়েছে

কে কে কোন কোন ড্রাগ নিয়েছে  

ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে আজকাল খুব নিত্য নৈমিত্তিক 

এগুলো মামুলি দুষ্টুমির অংশ, 

বড় দুষ্টুমি! 

মারামারি, ধর্ষণ, খুন - বাদ যায় নি,  

এটাই বর্তমান 

এগুলোও আজকালকার ছাত্র জীবনের অংশ।  



১২ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

ছাত্র জীবন, সেকাল ও একাল 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





আলাদা আলাদা সকাল

ভোরের আলোয় হালকা লালের আভা

পূবাকাশে কুসুম ফুটেছে 

হালকা শীতের আমেজে হালকা কুয়াশা

শিশিরের জলরাগ ছাদে দাগ রেখে গেছে,

চোখে শিশির জমতে দেখেছ?   


ভোরে মনখারাপ করে ধুসর ছিলো আকাশ 

সূর্যের আভায় নীল হতে শুরু করেছে 

নীলের মাঝে কিছু মেঘ ইতিউতি 

মেঘেদের বোধহয় সকাল হয়েছে, 

চোখে কেন মেঘ করে?  


কাকগুলো ডাকাডাকি বন্ধ করে দিয়েছে

তাদের সকাল হয় ভোরের আধো অন্ধকারে 

কিছু পাখি মেঘেদের সাথে 

আকাশে ডানা মেলছে উড়ে, 

আমার যদি ডানা থাকতো!  


হালকা শীত শীত অনুভূতির পরশ  

গায়ে মৃদুমন্দ উত্তুরে বাতাস 

আমি সকাল দেখছি নীলে মাখামাখি 

আর ঐ নীল নীল আকাশ,

মাঝে মাঝে বড্ড নীল হয় মন; 


সকালগুলো বড্ড অন্যরকম 

আলাদা আলাদা প্রত্যেকটা সকাল

মানুষগুলো বড্ড একঘেয়ে একই রকম

আকাশটা বিশাল উদার,  

মানুষের মাঝে উদারতা কোথায়?  



১৩ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

আলাদা আলাদা সকাল

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 





ভেজা স্মৃতিগুলো

ভেজাতে জুড়ি নেই তোর, আকাশ

কখনো বৃষ্টিতে কখনো কুয়াশায় কখনো শিশিরে

আমি কখনো ধান কখনো ঘাস 

মাটির বুকে মাটি জড়িয়ে;


ভেজাতে জুড়ি নেই তোর, নারী 

কখনো প্রেমে কখনো কামে কখনো কান্নায়

আমি সব সময়ই পুরুষ 

তোর বুকে তোকে জড়িয়ে; 


ঘন মেঘে বৃষ্টি বড্ড ভেজায় 

ঘন কুয়াশায় শিশির

ঘন প্রেমে চুমু

ভেজাতে জুড়ি নেই কারো, ভিজি একা আমি; 


কোন এক সময় আমিও ভেজাতাম তোকে

ঝুম বৃষ্টিতে হাতে হাত রেখে দুজন ছাদে 

কফির কাপে চুমুকে ও চুমুতে

ঘন ভালোবাসায় বিছানা ভিজতো প্রেমে; 


এখন আর সেই পুরনো অনুভবগুলো কোথায়!

কোথায় সেই আগের অনুভূতি ভালোবাসার! 

কোথায় বা তুই ভেজাতে আমায়!   

আজকাল পুরনো স্মৃতিগুলোই বড্ড ভেজায়। 


১১ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

ভেজা স্মৃতিগুলো

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




দাতা ও গ্রহীতা

সূর্যের সম্পর্ক দিনের সাথে

চাঁদের সম্পর্ক রাতের 

দুজন পরস্পর থেকে যোজন যোজন দূরে 

অথচ দুজনাই কিরণ দাতা   

সূর্য ছাড়া চাঁদের অস্তিত্ব কোথায়? 

চাঁদ ছাড়া কি জ্যোৎস্না হয়?  


রাজনৈতিকের সম্পর্ক ক্ষমতার সাথে 

জনগণের সাথে সম্পর্ক ভোটে 

কেও দাতা নয়

নয় কেও গ্রহীতা

লাভের পুরোটা হিসাব রাজনীতির সাথে

জনগণ ট্যাক্স ভরে; 


চাকরি দাতার সম্পর্ক টাকার সাথে 

চাকরিজীবীর সম্পর্ক চাকরির সাথে  

একজন শ্রম দাতা 

একজন অর্থ দাতা  

পরস্পর পরস্পরের স্বার্থে  

মাস শেষে দুজনাই অর্থ গুনে; 


ব্যবসায়ীর সম্পর্ক টাকার সাথে 

খদ্দেরের সম্পর্ক পণ্যের সাথে

একজন পণ্য দাতা 

একজন অর্থ  

কেউ জিতে কেউ ঠকে 

লাভ ক্ষতির অংক দুজনাই কষে;


বেশ্যার সম্পর্ক টাকার সাথে 

খদ্দেরের সম্পর্ক শরীরের সাথে

দুজনাই দাতা

দুজনাই গ্রহীতা 

কার কতটুকু লাভ হলো কার ক্ষতি

কে হিসাব কষে? 


দিনের সম্পর্ক আলোর সাথে

রাতের সম্পর্ক অন্ধকারে

এরা কেও দাতা নয়

নয় কেও গ্রহীতা 

অথচ একজন অচল আরেকজন ছাড়া 

কেও কিন্তু হিসেব কষে না। 


১০ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

দাতা ও গ্রহীতা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





লোভের সিঁড়ি

সিঁড়ি বেয়ে কারো ওপরে ওঠা 

কারো নিচে নামা;


কেউ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে সব হারায় 

ওপরে ওঠার নেশায় হারিয়ে ফেলে সম্পর্কগুলো

এমন কি মনুষ্যত্ব!  

আরে সম্পর্ক? টাকায় সব কেনা যায়, 

তাই? আচ্ছা আস্থা কেনা যায়?

বিশ্বাস? 

আরে টাকায় সব কেনা যায়; 


টাকায় একটা মানুষ না হয় কিনলে! বন্ধু কিনতে পার?

টাকায় একটা নারী না হয় কিনলে! স্ত্রী কিনতে পার?

টাকায় একটা পুরুষ না হয় কিনলে! স্বামী কিনতে পার?

ভাই কিনতে পার? বোন? 

বাবা কেনা যায়? মা? 

ভালোবাসা?

তাহলে সম্পর্ক কেনা যায় কিভাবে? 

 

আমি সিঁড়ি বাইতে বাইতে ওপরে উঠতে গিয়ে নীচে নেমে যাচ্ছি 

নামছি তো ক্রমাগত নামছিই, 

কখনো ভালোবাসা হারিয়ে, কখনো সম্পর্ক, কখনো মনুষ্যত্ব;   

অথচ উঠতে চেয়েছিলাম একদিন সিঁড়ি বেয়ে, ঐ আকাশে, অনেক ওপরে, 

আকাশ কি আর ধরা যায়? 

তবুও কি এক অদৃশ্য লোভের হাতছানিতে 

হাত বাড়িয়েছিলাম আকাশ ছোঁয়ার, ওপরে ওঠার  

অথচ আজ আমি নামতে নামতে পাতালে, অন্ধকারে

আজকাল আয়নায় তাকাতেও কেমন যেন লজ্জা করে

সব পাওয়ার নেশায় সব সম্পর্কগুলো হারিয়ে

এমন কি মনুষ্যত্বটাও; 


অধঃপতনের সূচনা হয়েছিল কিন্তু নিছক লোভের বসে

আকাশ ছুঁতে গিয়ে; 


আমার আকাশও ছোঁয়া হয় নি!

টাকার পাহাড়ও চড়তে পারি নি, 

মোহের সিঁড়ি বাইতে বাইতে নেমে গেছি পাতালে

লোভের সিঁড়িতে পা দিয়ে। 


আদতে সিঁড়ি বাইতে হয় খুব সাবধানে

উঠতে কিংবা নামতে

একটু তাড়াহুড়োয় সব ওলোটপালট হয়ে যায় জীবনে

কি বিশ্বাস হলো না? তবে আমাকে দেখে যাও ঘন অন্ধকারে। 


১০ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

লোভের সিঁড়ি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 





ভালোবাসার খুনসুটি

আজ বিকেলটা অন্যরকম, কেমন যেন মনমরা নীলচে ধুসর 

অবশ্য এক একটা বিকেল এক একরকম

কোনটা রৌদ্রজ্জ্বল, কোনটা ম্যাড়ম্যাড়ে হলুদ

কোনটা বা রক্তাভ, কোনটা বা মেঘলা ধুসর; 

 

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বিকেলের সাথে কথা বলছিলাম 

বিশেষ কোন কথা না কিন্তু, 

এই সব হাবিজাবি দৈনন্দিন কিছু সুখের কথা, কিছু দুঃখের কথা

আমার পছন্দ আর অপছন্দগুলোর কথা

মনের ভালো লাগা আর খারাপ লাগার কথা 

নানা বয়সে জীবনে আসা কিছু নারী ও তাদের প্রেমের কথা 

আমার নিজস্ব ভালোবাসার কথা

আর আমার ভালোবাসা বলতে তো তুই, শুধুই তুই;


একটা সময় এ, ও, সে হয়ে যখনই তোর কথা চলে এলো

বিকেলটা হঠাৎ করেই কেমন দুপুর হয়ে গেলো

নীলচে আকাশটা কেমন জানি মেঘমুক্ত নীল হয়ে গেলো

সূর্যের তেজ হঠাৎ করেই যেন বেড়ে গেলো

আর মনমরা ভাবটা কোথায় জানি উধাও হয়ে গেলো; 


আজ মনে হয় আর সন্ধ্যে নামবে না

আজ মনে অন্ধকার বসবে না,

আসলে তুই মানেই তো সূর্য, তুই মানেই জ্যোৎস্না 

তুই মানেই আলো তুই মানেই আনন্দ

একটা মানুষের জীবনের একটা তুই থাকলে আর কিছু লাগে?

তুই মনে আসলেই আমি বিকেল ভুলে যাই দুপুর হয়ে 

তুই মনে আসলেই ভুলে যাই দিন, ভুলে যাই রাত

একটা তুই এই আমার পুরোটা জীবনপাত; 


আজ আর আকাশের সাথে গল্প করব না

করব না বিকেলের সাথে গল্প খুঁটিনাটি 

মন যখন তুই তুই, চল চা চুমুতে ডুবি

তারপর একান্তে কিছু ভালোবাসার খুনসুটি। 


০৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

ভালোবাসার খুনসুটি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



মাটির টানে সুখ

শহর থেকে বের হলেই সবুজ সবুজ গ্রাম 

মাটির কাছে এলেই পরে সোঁদা মাটির ঘ্রাণ,  

নীল নীল আকাশ সেথা তাজা তাজা বাতাস 

মনটা ভরে নীল মাখি বুকটা ভরে নিঃশ্বাস;

 

সবুজ সবুজ ধানক্ষেত সবুজ সবুজ মন 

চারিদিকে সবুজ সবুজ ধান মাঠ আর বন, 

নদীর ধারে মন জুড়ানো বাউল বাউল বাতাস 

গ্রামে এলে পাখির ডাকে মন হয়ে যায় উদাস;

  

চিরল চিরল পাতার ফাঁকে কুহু কুহু ডাক

কোথাও কোথাও নদীতে তীক্ষ্ণ কিছু বাঁক,  

ঘাস পাটিতে নদীর ধারে বসেনি বলো কে?

মাটির সাথে গাঁয়ের সাথে সম্পর্ক জুড়েনি যে; 

 

মাটির চুলায় লাকড়ির রান্নায় তরকারির স্বাদ  

যে খায় নি জানবে কিভাবে মাটির হাড়ির স্বাদ? 

গোয়াল ঘরের কালো গাইয়ের দুধ খায় নি যে   

মাটির হাড়ির জ্বালের দুধের স্বাদ জানে নি সে;  


ধুলো মাখা মেঠো পথ এঁকে বেঁকে চলে  

পল্লীগীতি ভাটিয়ালি মাটির কথাই বলে  

দিনমান পাখি ডাকে কোকিল শালিক ডাহুক 

মাটির মানুষ মাটিতে এলেই মাটির টানে সুখ। 



০৯ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

মাটির টানে সুখ

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 




লোভের চোখ

আমাদের অনেক অনেক চাহিদা

অনেক লোভ অনেক লিপ্সা

চাহিদা অর্থের 

সম্পর্ক স্বার্থের,

আমি চলি যে পথে 

লোভ আমার পিঠে চেপে আমার সাথে;  


আমরা কেউ ঘুষখোর কেউ সুদখোর

কেউ মদ্যপ কেউ রিপুর তাড়নায় ধর্ষক 

কেউ জালিয়াত কেউ প্রতারক 

কেউ ভূমিদস্যু কেউ বা খুনি, 

কিসের জন্য? 

কিছু অর্থ, কিছু স্বার্থ  

কিছু জমিজমা, কিছু সহায় সম্পত্তি 

আদতে ভোগ করতে পারি কতটুকু?

পেটে আটেই বা কতটুকু?

আরে! ঐ তো সাড়ে তিন হাত সীমিত মাটির শরীর! 

অথচ চাহিদা কি অফুরন্ত অসীম! 


এই যে সারাটা জীবন শুধু টাকা টাকা করে ছোটা!

কতটুকু নিয়ে যাব সাথে! 

এই যে সারাটা জীবন সহায় সম্পত্তির হা হুতাশ!

কতটুকু নিতে পারব সাথে? 


ঐ তো মাত্র সাড়ে তিন হাত গর্ত

চওড়ায় হাত দেড়েক, 

ওটুকুতেই আটতে হবে 

ওটুকুতেই থাকতে হবে

ওটাই গন্তব্য, ওটাই ঠিকানা,   

তারপর মাটিতে চাপা পড়বে মাটি;  


কি রেখে যাচ্ছি! সাথে কি নিচ্ছি!

কখনো ভেবেছি?

মাটির চোখ তো বন্ধ হবে, 

লোভের চোখ বন্ধ হবে কবে? 



০৮ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

লোভের চোখ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 






 

স্মৃতিহীন ঘুম

জ্যোৎস্না বিদায় নিয়েছে

আকাশে ক্ষয়ে যাওয়া আধ ভাঙা চাঁদ

আর অভিমানে আধ ভাঙা তুই 

রাত ঘন হলেও আমার চোখে ঘুম কোথায়?


সেদিন সারাটা দিন তেতে ছিলো সূর্য, তেতে ছিলি তুই 

লালচে রাগের আভায় সূর্যটা অস্ত যেতেই 

অভিমানের বাষ্প তোর চোখে 

আধ ভাঙা চাঁদের আলোয় চোখের কোণে 

ওটা কি চিকচিক করছিলো রে?

সারারাত কেঁদেছিলি বুঝি? 


আজকাল আর কোথায় ভালোবাসার হাতছানি?

মন খুঁড়লেই এখনো দগদগে তোর দেয়া গ্লানি

রাত হলেই মন অতীত খুঁড়ে

মনের অজান্তেই, হয়তো বা তোর তরে,

অথচ তুই সেই কবেই আমার অতীত হয়ে গিয়েছিস!

কিংবা আমায় অতীত করে দিয়েছিস; 

 

মাঝে মাঝে রাতে বৃষ্টি হলে

মাঝে মাঝে রাতে জ্যোৎস্না হলে

মাঝে মাঝে আকাশে আধ ভাঙা চাঁদ এলে 

মাঝে মাঝে মনে তুই এলে

বড্ড জানতে ইচ্ছে করে

কেমন আছিস তুই? কার সনে; 


মাঝে মাঝে আধ ভাঙা চাঁদটাকেই চিঠি লিখি, 

ও চাঁদ! 

শোন না! 

তুই ঠিক আছিস তো?

ওটা কিসের দাগ? তোর গায়ে 

কেউ ব্যথা দেয় নি তো! 

কোথাও তোর লাগে নি তো!

ঐ ওখানে, সুদূর অতীতে কিছু ফেলে যাস নি তো!   


আমার কাছে তোর অনেকগুলো স্মৃতি রয়ে গেছে

বুকের খাঁচায়, লালে লালে; মনের ভেতর, অনেক গভীরে 

এর পর আবার আকাশে এলে সবটুকু নিয়ে যাস কিন্তু! 

আমি একটু ঘুমোতে চাই স্মৃতিহীন হয়ে। 


০৭ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা

স্মৃতিহীন ঘুম 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বিভিন্ন নামের ডাক

প্রতিটা মানুষেরই আলাদা আলাদা নাম থাকে 

আমারও আছে,

বাবা-মা কিংবা ভাই বোন খুব সুন্দর করে ঐ নামে ডাকে

আমি সাড়া দেই হাসিমুখে, হাত নেড়ে 

কথা বলতে গেলেই আমার কেমন যেন মুখে জড়তা আসে

তবে ওরা, ঐ খুব প্রিয়জনরা আমায় ঠিক বুঝতে পারে;


কিছু কিছু মানুষ আছে খুব দুষ্ট

ওরা আমায় নানাভাবে বিরক্ত করে 

আর নামের বেলায় পাগল বলে ডাকে 

আমি ঐ ডাকের অর্থ বুঝি না, 

কেও কেও আবার ভালো মানুষ আছে

ওরা আমার নাম না জানলেও নাম জিজ্ঞাসা করে

আমি জড়তার কারণে নাম বলতে পারি না 

তবুও তাদের আদর-মাখা চোখ বুঝতে পারি

বাবা-মায়ের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি দিতেই বাবা-মা নাম বলে দেয়

ওরা খুব আদর করে আমার নাম ডাকে, 

ওদের কেউ কেউ বলে আমি নাকি বিশেষ শিশু

আমি ঐ ডাকেরও অর্থ বুঝি না, 

কিন্তু আমি তো এখন বড় হয়ে গিয়েছি! 

যাহ! এত বড় মানুষকে কেও শিশু ডাকে?


আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি

অনেককিছু বুঝতে পারি, শুধু বলতে গেলেই ঐ একটু মুখে বাঁধে 

মানুষের চোখ পড়তে পারি কিন্তু অনেক আগে থেকেই

বেশিরভাগ মানুষের চোখেই না! 

আমাকে দেখলেই কেমন যেন একটু অন্যরকম ভাবের খেলা

যেন আমাকে ঠিক পছন্দ করছে না

অথচ বাবা-মা সাথে আছে বলে কিছু বলতেও পারছে না,

আগে যখন বাবা-মায়ের সাথে কোন বাড়িতে বেড়াতে যেতাম!

তখন ওরা যেন কেমন কেমন চোখে তাকাতও

সেসব বাড়ির আমার বয়সী বাচ্চারা আমার সাথে খেলতো না

আমি চুপচাপ বসে থাকতাম মায়ের হাত ধরে

কিংবা বাবার কোল ঘেঁষে,  

ও বাড়ির বাচ্চাগুলোও কেমন যেন দূর থেকে মুখ টিপে হাসতো

আচ্ছা! ওরা এমন করতো কেন?

আমার বড্ড অভিমান হতো, 

তারপর যখন একটু বড় হলাম!  একটু বুঝতে শিখলাম! 

তখন আমি ঠিক বুঝে গেলাম ওরা আমায় নিয়ে উপহাস করে  

কিছু কষ্ট তো পেয়েই ছিলাম!  

সেসব বাড়িতে আর যেতাম না; 


একসময় বাবা-মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলো

ওখানে দেখলাম বাকি সব ছেলেমেয়েরাই অনেকটা আমার মত

কেউ আমার মত কথায় বাঁধো বাঁধো, কেও হাঁটাচলায়, কেও সাড়া দিতে

কেউ বা অন্য কোন অনুভূতিতে 

অথচ ওখানকার আমরা সবাই কেমন যেন একইরকম, অনুভবে; 

ওখানে কেউ বাঁকা চোখে তাকায় না আমাদের দিকে

ওখানে খেলার ছলে পড়া, খেলতে খেলতে খাওয়া

ওখানে আমরা সবাই মিলে খেলি, মজা করি 

সবাই মিলে একসাথে  

ওখানকার স্যর ম্যডাম'রাও খুব আদর করে

আমাদের সবাইকে 

তবে ঐ স্কুলটাকে সবাই অটিস্টিক স্কুল বলে

আমি ঐ নামেরও কোন অর্থ বুঝি না; 

  

এই যে আমার নিজের একটা নাম থাকতে 

বিভিন্নজন আমায় বিভিন্ন নামে ডাকে!

আমি কোন নামেরই কোন অর্থ বুঝতে পারি না!  

এইজন্যই কি সবাই আমাকে বাবা-মার বিশেষ সন্তান বলে? 

হয়তো! 


একদিন আমার আধো আধো ভাষায় মা'কে জিজ্ঞাসা করতেই মা বললো 

 - তোকে আমি সবচেয়ে বেশি আদর করি তো! তাই সবাই বিশেষ সন্তান ডাকে

আমি মায়ের গলা জড়িয়ে বলি - হুম, আমার আদর সবচেয় বেশি, আমি বিশেষ সন্তান; 


একদিন আমার আধোভাঙা উচ্চারণে বাবা'কে জিজ্ঞাসা করতেই বাবা বললো

 - তুই তো সবচেয়ে স্পেশাল, তাই সবাই তোকে হিংসা করে বিশেষ ডাকে

আমি মাথা ঝাঁকাই, বাবার গলা জড়িয়ে বলি - হুম, হুম আমি বিশেষ, আমি স্পেশাল;  


বাইরের কে কি অন্যান্য নামে ডাকলো,   

আমার কি আসে যায়! 



০৭ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

বিভিন্ন নামের ডাক 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





দাম্পত্য, গভীর এক নদীর নাম

এই যে তোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা!

এটা কি শুধুই ভালোবাসা?

এই যে সারারাত জড়িয়ে রাখা!

ওটা কি শুধুই প্রেম?

ওখানে বেশ খানিকটা প্রেম, অনেকটুকু ভালোবাসা

পুরোটা আস্থা, অগাধ বিশ্বাস  

বুক ভরা অনুভব, মন ভরা অনুভূতি 

আর বহু বহু দিনের ছুঁয়ে থাকার অভ্যাস,

এটা দাম্পত্য, এটা নির্ভরতার অনুপ্রাস;


আবার দাম্পত্য কিন্তু ভঙ্গুর কাঁচ,  

ঐ যে প্রেম! ঐ যে ভালোবাসা! 

ওখানে কখনো যদি পড়ে টান

কিংবা আস্থায় ভারসাম্যহীনতা 

অনুভবে ছাড়া ছাড়া 

অনুভূতিতে খানিক অবজ্ঞা  

শরীরে অনীহা, ছোঁয়াছুঁয়িতে বিবমিষা,     

দাম্পত্যের বারোটা, চারিদিকে হরেদরে 

ছাড়াছাড়ি! আজকাল ঘরে ঘরে; 


অস্থির এক সময়ের ভেতরে চলেছি আমরা

কারো কারো অস্থির জীবন 

কাঁচের দাম্পত্য আর একাকীত্ব যাপন; 


ভরা কাঁটালে জোয়ারের বেগ জানিস!

মরা কাঁটালে ভাটার টান?

দাম্পত্য! গভীর এক নদীর নাম। 


০৭ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

দাম্পত্য, গভীর এক নদীর নাম

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 


 





শব্দ বিভ্রাট

অসংগতি যখন চোখের ওপর 

দুঃখ কিছু ঘরের ভেতর 

কষ্ট যখন বুকের খাঁচায় 

ঠিক তখনই শব্দ ভ্রমর;  


কিছু শব্দ কানে কানে 

কিছু শব্দ মনে মনে 

কিছু শব্দ মাথার ভেতর 

শব্দ ওড়ে তিতলি ডানায়;  


আমি শব্দগুলো ধরতে যাই 

কষ্টগুলো আঁকতে চাই

দুঃখগুলো খাতায় সাজাই 

অসংগতি কি আর সাজানো যায়?


প্রেমে কিছু শব্দ সাজে 

কিছু শব্দ ভালোবাসায়

অনুভূতিরও কিছু শব্দ আছে 

কবিতা হয় প্রেমে পড়লে;  


প্রেম বিরহ বুকের ভেতর 

ধুকধুক শব্দে অলিন্দ নিলয় 

বিচ্ছেদের নাম শোন নি? 

কবিতা হয় ঘন বিরহে;


চারিদিকে কতরকম শব্দ!

হাসি কান্না আর অনুভব অনুভূতি 

শব্দের শব্দে আমি জব্দ 

শব্দ জুড়লেই কি কবিতা হয়?  


অনেকগুলো শব্দ ওড়ে

মাথার ভেতর শব্দ ঘোরে 

আমিই শুধু শব্দ বিভ্রাটে

কবিতা হয় না আমাকে দিয়ে। 

   

০৪ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা  

শব্দ বিভ্রাট 

 - যাযাবর জীবন 

   


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






ডুবঘুমে

বাঁ পাশটায় ধুকপুক 

বাঁ পাশটায় হৃদয় 

মাঝে মাঝে খাঁচা খুলে উঁকি

মাঝে মাঝে মন খুলে দেখি

বাঁ পাশটায় তুই 

তারপর কিছুক্ষণ প্রেম কিছু খুনসুটি

ঐ বিশেষ সময়টুকুতেই আমি তোর,

খাঁচা বন্ধ করে দিতেই চোখ অন্ধকার

আমি রাতের কোলে ঘুমের অতলে;


তুই খাঁচার ভেতরে ডুবঘুমে 

আর ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকিস নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে।\


০২ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

ডুবঘুমে 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বিভক্তি

রাস্তায় তো চড়াই উৎরাই থাকেই 

জীবনের চড়াই উৎরাইগুলো দেখা যায় না

বড্ড ভোগায়,   

এই যে হুট হাট জীবনের খাঁদ বেয়ে নেমে যাওয়া!

কখন কবে, কেও জানে না 

বড্ড কাঁদায়; 


ঐ যে রাস্তাটা দেখছ না!

ওখানে অল্প কয়েকটি বাঁক মাত্র

জীবনের বাঁকগুলো? সহস্র ধারায় বিভক্ত

যে চড়াই উৎরাই দেখে নি সে জীবই বোঝেই নি 

আর কারো কারো পাহাড় ভাংতে ভাংতেই জীবন চলে যায়

কেউ কেউ পুরোটা জীবন জুড়ে শুধু চড়াই'ই বেয়ে যায়

কারো কারো জীবনটা শুধুই নেমে যাওয়া উৎরাই 

খুব অল্প ক'জনার জীবনের রাস্তাটা সোজা 

আর বাকিরা পারি দেয় বন্ধুর পথ 

পাহাড়ের সাথে সখ্যতা আমার

সখ্যতা রাস্তার সাথে; 


কোন একদিন হয়তো ঐ দ্বিধাবিভক্ত রাস্তায় এসে 

ভুল পথে নেমে যাব

কোন একদিন হয়তো উৎরাই এ নামতে নামতে 

ঐ পাহাড়ি নদীতে হারিয়ে যাব

কোন একদিন হয়তো শত বিভক্ত জীবনের মোড়গুলোতে 

স্থবির হয়ে বসে রব, 

আরে! মনও বড্ড বিভক্ত হয় রে! জীবনের মোড়ে মোড়ে;

কোন কোন বিভক্তি অর্থের কারণে

কোনটা স্বার্থের 

কিছু বিভক্তি সম্পর্কের 

কিছু কিছু বিভক্তির কারণ নারী 

কিছু বিভক্তির কারণ রক্ত  

কিছু কিছু বিভক্তির কারণ নিজেই আমি, 

প্রত্যেকটা বিভক্তিই কিন্তু ক্ষরণ ঘটায়

জীবন চলার পথে কিংবা সম্পর্কে;


আমি বিভক্ত রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে জীবনের বিভক্তিগুলো দেখি

আমি বিভক্ত জীবনের দিকে তাকিয়ে বিভক্ত সম্পর্কগুলো দেখি

তারপর আবার রাস্তায় নামি, রাস্তা হাঁটি

জীবন এগিয়ে যাওয়ার, জীবন পথ চলার; 

 

বিভক্তি কি আর জীবনকে থামিয়ে রাখতে পারে? 



০২ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

বিভক্তি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক, ভুটান। 





বৃষ্টিরাতের স্বপ্নবিলাস

টিনের চালে ঝুম বৃষ্টি মন থৈ থৈ

জ্যোৎস্নাতেও আমি কিন্তু তোরই হয়ে রই

মেঘগুলো দেখছিস? সাদা কালো ধুসর!

মেঘ রঙে রাঙানো মনের ওপর আছর 

চাঁদটা দেখছিস? রাত যেদিন চান্নিপসর  

মন যেন সে রাতে জ্যোৎস্নার বাসর;


চাঁদ নেই আজ জ্যোৎস্নায় মন হারাবার

আজ আকাশ ভাঙা বৃষ্টি মন ভেজাবার 

বৃষ্টিতে কান্না ভেজে, বৃষ্টিতে ভেজে মন 

যেদিন চাঁদনি রাত সেদিন জ্যোৎস্নাস্নাত মন

এখানে বৃষ্টি নেমেছে মেঘের ওপর জ্যোৎস্না 

বৃষ্টিতে বৃষ্টি বিলাস, আজ চাঁদটা দেখছি না; 


একদিন খুব সাধ একরাতে ভিজবার

বৃষ্টি ও চাঁদনিতে একসাথে দুজনার 

একহাতে তুই রবি আরেক হাতে মন 

একসাথে ভিজব বৃষ্টি ও চাঁদে দুজন 

একরাতে বৃষ্টি বিলাস একই রাতে জ্যোৎস্না

শুধুই কি স্বপ্নবিলাস? কখনো এমন হবে না?


০১ নভেম্বর, ২০২০


#কবিতা 

বৃষ্টিরাতের স্বপ্নবিলাস 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




মাটিতে মিশে মাটি

একটা সময় আমি ছিলাম 

এখন আমি নই 

হারিয়ে গেছে অনুভূতি 

কোথাও নেই তুই;  


নতুন একটা আলোর ভোর

পুরনো একটা তুই 

তোর পাশেই আমি ছিলাম 

এখন আমি কই?


নতুন দিনে পুরনো আমি

অনুভবের খেদ  

তুই উত্তর আমি দক্ষিণ 

অনেক আমাদের বিভেদ;  


পুরনো দিন ভুলে যা 

পুরনো অনুভব 

একটা সময় আমিই ছিলাম

তোর সকল সব;


নতুন একটা নতুন রোদ

নতুন দিনের ভাঁজে

নতুন করে চিন আমাকে 

নতুন নতুন কাজে;


ইচ্ছে হলেই যায় কি ছোঁয়া?  

আকাশ থেকে নীল

ডানা মেলে উড়ছে দেখ 

আকাশে গাংচিল;  


চিলের ডানায় রৌদ্র ঝিলিক

তোর মনেতে আমি 

আমার মনে অন্ধকার 

আমিই শুধু জানি;   


অনুভূতির নতুন দেয়াল  

কোথাও নেই তুই 

তোর দেয়ালেও নতুন রঙ 

দেয়াল তুলেছিল তুই;  


পুরনো দিন পুরনো খাতা

ফেলে দিয়েছি সব 

মাটি এখন ডাকছে আমায়

হতে হবে শব; 


মাটির ডাক যে শুনেছে

সব ছেড়েছে সে 

কিছুই আর ভালো লাগে না

মাটি ডাকছে যে; 


মাটির ডাক আসলে পরে  

ওটাই আসল ঘাঁটি  

মাটির শরীর মাটি হবে 

মাটিতে মিশে মাটি। 


 

০১ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 



মাটিতে মিশে মাটি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।