মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০

বাবা-মা হওয়ার দায়

আজকালকার অবস্থা দেখে কেন জানি প্রায়শই মনে হয় 

আমরা বোধহয় ছেলেমেয়েকে সঠিক পথ দেখাতে পারি নি 

পড়ালেখা তো করাচ্ছি ঠিকই, সুশিক্ষিত হচ্ছে কি? 

মানবিক মূল্যবোধগুলো গড়ে উঠছে কি?

এই যে আজকাল এদের মধ্যে এত অনাচার দেখি!

বাবা-মায়ের প্রতি অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা, ক্ষেত্র বিশেষে বিতৃষ্ণা

এই যে নেশার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া

ভালো খারাপের আলাদা করতে না পারা! 

কিংবা করতে পারলেও খারাপটা বেছে নেওয়া 

সম্ভব অসম্ভব সব চাহিদা বাবা-মায়ের ওপর চাপিয়ে দেওয়া

প্রাপ্তিতে উনিশ থেকে বিশ হলেই বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড! 

এমন'কি তুচ্ছ অভিমানে আত্মহত্যার নামে বাবা-মাকে দুঃসহ যন্ত্রণায় ফেলে যাওয়া, 

সবই তো দেখছি, সবই তো সইছি 

না সয়েই বা উপায় কি? বাবা-মা যে হয়েছি!


আচ্ছা! এটা কি আসলে ইংরেজি মিডিয়ামের শিক্ষা ব্যবস্থার অবদান?

এদের মাঝে দেশপ্রেম কোথায়? 

 - ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা

 - একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার 

 - একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল 

এ গানগুলো তারা জানে? 

কিংবা 

- একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয় 

- আমারও দেশেরও মাটিরও গন্ধে ভরে আছে সারা মন 

- আমায় যদি প্রশ্ন করে 

এ গানগুলো তারা শোনে?

কিংবা 

- এক নদী রক্ত পেরিয়ে 

- এক সাগর রক্তের বিনিময়ে  

- জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো 

এ গানগুলো তারা বোঝে?

আচ্ছা! আমার সোনার বাংলা গানটা কি ওরা জানে?

এর অর্থ বোঝে? 

তবে কেন এ গানকে রিমেক করে কিংবা রিমিক্স!  


অথচ কানে সারাক্ষণ হেড-ফোন লাগিয়ে কি এক নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে 

কান থেকে হেড-ফোনটা খুলে তোমার কানে একবার লাগিয়ে দেখ তো!

ঝনঝন, দ্রিম দ্রিম বাজনার সুরে ওপাশ থেকে ভেসে আসবে বিকট চিৎকার 

একবার শুনলে তুমি কখনই শুনবে না আর;


এরা বাবা-মায়ের কষ্ট বোঝে না 

বাবার আয়ের সীমাবদ্ধতা বোঝে না 

এদের শুধু চাহিদা আর চাহিদা  

অর্থের মূল্য এরা বুঝেও বোঝে না; 


বরং বাংলা মিডিয়ামের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে কিঞ্চিত হলেও দেশপ্রেম দেখেছি

এরা পয়লা বৈশাখে বটতলায় জড়ো হয় আর মুখরিত - এসো হে বৈশাখ এসো এসো 

একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে এদের কণ্ঠে - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

এদের কণ্ঠেই জয় বাংলা বাংলার জয়

এদের কণ্ঠেই কারার ঐ লৌহ কপাট ভাংরে তোরা কররে লোপাট 

দেশপ্রেম এরা কিছুটা হলেও জানে

এরা ইতিহাস ঘাটে এরা ভূগোল নিয়ে মাতে

এরা ভাষাকে ধারণ করে 

এরা বাংলার রূপ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে

এরা কাগজে কলমে বাংলায় কবিতা লেখে

এরা বাংলা'কে ভালোবাসে; 


এরা বাবা-মায়ের কষ্ট বোঝে

বাবার আয়ের সীমাবদ্ধতা বোঝে

মায়ের ভাতটান বোঝে হাড়ি দেখে 

এরা অর্থের মূল্য বোঝে, চলে পয়সার হিসাব কষে কষে; 


আমি দু'দলকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে আকাশ পাতাল বিভেদ দেখছি

বিভেদ মানসিক, বিভেদ মূল্যবোধের, বিভেদ মনুষ্যত্বের তারতম্যের

মাঝে মাঝে খুব ভাবি, আচ্ছা! তবে কি আমরা এদের সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি

তবে কি গড্ডলিকা প্রবাহে ইংরেজি মিডিয়ামে দিয়ে ভুল করেছি!


এটা কি শিক্ষাব্যবস্থার দোষ!

না কি দোষ আমাদের?

 -  মানবিক অনুভূতিগুলোকে সন্তানের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়া

 -  পারিবারিক মূল্যবোধ শেখাতে ব্যর্থ হওয়া 

 -  কিংবা অন্য কিছু!

কই! চেষ্টার তো ত্রুটি করি নি!

সন্তানের কোন চাহিদা পুরণ না করে শান্তি পাই নি!

এদের জন্যই তো সব সাদ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে উদয়াস্ত খেটে গেছি

তবে কম পড়লো কিসে?


আমি মাঝে মাঝে অসহায় হয়ে উত্তর খুঁজি আকাশে বাতাসে, 

আয়নাও কথা বলে না আমার সাথে 

হয়তো অভিমান করেছে - সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায়;

বাবা-মা হওয়ার দায় এড়াবো কিভাবে? 



১৮ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা 

বাবা-মা হওয়ার দায়

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন