মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০

ছাত্র জীবন, সেকাল ও একাল

আমাদের জীবনটা উত্থান পতনে ভরা 

বিশেষ করে আমরা যারা ষাট, সত্তর বা আশির দশকে জন্ম নিয়েছি; 

প্রতিযোগিতা তো সব যুগেই থাকে 

তবে ছাত্রজীবনে আমরা খুব বেশী অসুস্থ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হই নি বোধহয়;


আমাদের প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রধান ছিল ভাই বোনদের মাঝে প্রতিযোগিতা - 

কে কার আগে ঘুম থেকে উঠবে

কে কার আগে স্কুলের জন্য তৈরি হবে

তখন সাধারণত সব ভাইবোনই একই স্কুলে পড়ার রেওয়াজ ছিলো

তবুও মাঝে মধ্যে যদি প্রাইমারি সেকেন্ডারি লেভেলে স্কুল আলাদা হয়ে যেত

তবেই বিপত্তি,

আবার কে বাসে করে স্কুলে যাবে কিংবা আসবে 

কে কার আগে হোম ওয়ার্ক শেষ করে মায়ের সাথে খুনসুটিতে মাতবে

কে কার আগে খাওয়ার পাটিতে বসবে

মা আজ কার পছন্দের ভর্তাটা বানিয়েছে 

মা আজ কার পছন্দের ভাজি করেছে 

মা আজ কার পছন্দের সবজি রান্না করেছে 

কে কার আগে যার যার পছন্দের মুরগীর টুকরোটা তুলে নেবে 

(রানটা কিন্তু ছিলো বাবার, ওদিকে নজর দিতেম না কেউ) 

কে কার আগে মাছের প্রিয় টুকরোটা নেবে  

(মাথাটা কিন্তু ছিলো বাবার, ওদিকে নজর দিতেম না কেউ)

কে তাড়াতাড়ি বিছানায় যাবে, কে মায়ের পাশের জায়গাটা দখল করবে

এই সব পারিবারিক ইতং বিতং আর কি;


স্কুলে বন্ধুবান্ধবদের মাঝে প্রতিযোগিতা ছিলো -

কে কার আগে স্কুলে যাবে 

কে কার আগে লাস্ট বেঞ্চ দখল করবে 

কে কে দলবেঁধে হেঁটে যাবে কিংবা ফিরবে 

কে হোম ওয়ার্ক করে নিয়ে গেলো 

অনুপস্থিত বন্ধুর প্রক্সি কে দিলো  

কে স্যরের স্কেলের বাড়ি খেলো

কাকে বেঞ্চের ওপর দাঁড়াতে হলো 

কে কবে কি কারণে নীল ডাউন হলো

কে পড়ালেখায় কত ভালো করলো 

কার রেজাল্ট কত ভালো হলো 

ইত্যাদি ইত্যাদি,


আরও ছিলো কিছু দুষ্টুমি -

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এর ওর গাছের দিকে নজর দেয়া 

ফল পাকলে এর ওর গাছে হামলা দেয়া  

ডালিয়া, গন্ধরাজ কিংবা গোলাপ বাগান থেকে ফুল চুরি  

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে খেলার মাঠে কিছু ধমকা ধমকি 

আর খুব বেশি হলে সীমিত আকারে কিছু হাতাহাতি

ইত্যাদি ইত্যাদি; 


আজকালকার প্রতিযোগিতা! 

ভাই বোন তো হাতে গোনা, কিছু ফ্যামিলিতে সন্তান একা 

ঘুম ভাঙায় মোবাইল এলার্ম 

স্কুল! না যেতে পারলেই মনে হয় বেঁচে যায় 

পড়াশোনা! টিচার তো আছেই 

হোম ওয়ার্ক! বড্ড যন্ত্রণার 

রেজাল্ট! খুব গৌণ

খাবার দাবার!  মুরগীর রানটা আমার

মাছ! ইয়াক ইয়াক

পছন্দের খাবার? ফাস্ট ফুড আছে না! 

ঘুমুতে যাওয়া! রাত কাটে অনলাইন গেমে

বাবা মায়ের সাথে সময় কাটানো! - খাবার টেবিলেই সীমিত 

এই সব পারিবারিক ইতং বিতং আর কি;


আরও আছে -   

কার কয়টা গেজেট আছে

কে কোন অনলাইন গেমে পারদর্শী

কে কোন নামকরা স্কুলে পড়ে

কার বাবার কত টাকা আছে 

কার বাবা কোন ক্লাবের মেম্বার 

কে কোন মডেলের গাড়ি চড়ে

কে কোন নামীদামী রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছে

কে কোন অভিজাত এলাকায় থাকে 

কার বাড়ির ইন্টেরিয়র কোন ডিজাইনার করেছে

কার কয়টা ব্র্যান্ডের জুতা আছে

কার কয়টা ব্র্যান্ডের জামাকাপড় আছে 

কে ছুটিতে কোন দেশে বেড়াতে গিয়েছে 

কে কত টাকার শপিং করেছে

ইত্যাদি ইত্যাদি;  


আর দুষ্টুমি! তার তো সংজ্ঞাই বদলে গিয়েছে -

কে কত বয়সে ভার্জিনিটি হারালো 

কে ক'জনার সাথে সেক্স করলো 

কে কোন ব্র্যান্ডের মদ খেয়েছে

কে কে কোন কোন ড্রাগ নিয়েছে  

ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে আজকাল খুব নিত্য নৈমিত্তিক 

এগুলো মামুলি দুষ্টুমির অংশ, 

বড় দুষ্টুমি! 

মারামারি, ধর্ষণ, খুন - বাদ যায় নি,  

এটাই বর্তমান 

এগুলোও আজকালকার ছাত্র জীবনের অংশ।  



১২ নভেম্বর, ২০২০ 


#কবিতা

ছাত্র জীবন, সেকাল ও একাল 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন