শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০

কন্টাক্ট লিস্ট

আমার যে কত কত কন্টাক্ট আদতে তা নিজেই জানি না,
কোন এক সময় ফোন নাম্বার লিখে রাখতাম ডায়রিতে
তখন অল্প স্বল্প গোনা গুনতি কিছু মানুষেরই ফোন ছিলো
বেশ কিছুতো মুখস্থই থাকতো আর বাকিগুলো ডায়রিতে,
আজকাল ভিজিটিং কার্ডের যুগ, ডায়রি লিখে কে?

তারপর মোবাইলের যুগ, মোবাইল মানুষের হাতে হাতে
আর কন্টাক্ট ফোন নাম্বারগুলো ষ্টোর থাকতো মোবাইলে
মোবাইলটা হারালো তো সব নাম্বার হারালো
আবার নতুন করে নাম্বার যোগার করার পালা
তবে তখনো খুব কাছের মানুষগুলোর নাম্বার মুখস্থ থাকতো;

এখন এন্ড্রয়েডের যুগ, আমরা ডিজিটাল হয়ে গেছি 
মোবাইল নাম্বার ষ্টোর থাকে গুগুল সার্ভারে
আজকাল তো ভিজিটিং কার্ডও ভার্চুয়াল হয়ে গেছে
মোবাইল হারিয়ে গেলেও সমস্যা নেই, গুগুল তো আছে!
নাম্বার মুখস্থ করার দিন পার হয়ে গেছে
আজকাল আবার এক একজনের দু তিনটি করে নাম্বার
নিজের তৃতীয় নাম্বারটা গুগুল থেকে বের করে দিতে হয়।
মনে হয় ডিজিটাল হতে হতে স্মরণশক্তি লোপ পেয়ে গেছে;

যুগের অগ্রগতিতে কন্টাক্ট বাড়ছে আর বাড়ছে,
একবার মোবাইল হারানোর পর নতুন মোবাইলে
নাম্বার সিনক্রোনাইজ করতে গিয়ে নিজেই হতভম্ব
ও কি? আমার মোবাইল কন্টাক্ট লিস্ট দশ হাজার ছাড়িয়েছে!
ব্যক্তিগত ভাবে চিনি ক'জনকে?
যোগাযোগ আছে কজনার সাথে?

একদিন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একটা মেসেজ পেলাম
ভাইয়া আপনাকে এড করতে পারছি না
মেসেজ দিচ্ছে আপনার ফ্রেন্ডলিষ্ট পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে,
আমি আশ্চর্য হয়ে দেখি আসলেও তাই
দুটি প্রোফাইলেই পাঁচ পাঁচ দশ হাজার বন্ধু!
কবে? কিভাবে?
ব্যক্তিগত ভাবে চিনি ক'জনকে?
যোগাযোগ আছে কজনার সাথে?

এই যে কন্টাক্ট লিস্টে ঘুমিয়ে থাকা আর ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ রাখা!
একটা পার্থক্য আছে না?
কেন শুধু শুধু গুগুল'কে কষ্ট দেওয়া?
যাদের কথা আমার নিজেরই মনে নেই
তাঁদের মনে রাখা, গুগুলের কি এমন ঠ্যাকা?

কন্টাক্ট লিস্ট এর ক'জনার সাথে যোগাযোগ হয়?
ক'জনার সাথে আছে ব্যক্তিগত পরিচয়?
কথা হয় নিয়মিত?
দেখা সাক্ষাৎ? বছরে, দুবছরে একবার?
মেলামেশা আছে?
সামাজিকতা, বাসায় যাওয়া
নিদেন পক্ষে মাসে দুমাসে হায় হ্যালো বলা?
তবে এরা কেন পড়ে আছে কন্টাক্ট লিস্টে?
আমার জানা নেই,
তোমরা জানো কি?

আসলে কন্টাক্ট বাড়াতে বাড়াতে মানুষের সাথে যোগাযোগটাই হারিয়ে গেছে
আর সম্পর্কের ভিতটাই নষ্ট হয়ে গেছে ভার্চুয়ালের ডামাডোলে,
সম্পর্ক থাক আর নাই থাক কন্টাক্টগুলো ঠিক রয়ে গেছে, গুগুল সার্ভারে
কি কাজে, কে জানে?

এক একসময় ভাবি, যদি গুগুল সার্ভার ক্রাশ করে!
আমার সাধের কন্টাক্টগুলোর কি হবে?
আবার কি তখন ফিরে যাব ডায়রির যুগে?
খারাপ হয় না কিন্তু!
অল্প কিছু কন্টাক্ট, নিয়মিত যোগাযোগ
আবার না হয় নতুন করে সম্পর্কের ভিত তৈরি হবে!


২৮ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
কন্টাক্ট লিস্ট
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।





আমি মানুষ রাক্ষস তাই

বক রাক্ষসের নাম তো সবাই জানো
মানুষ রাক্ষস চেনো?
চেনো না? আমাকে দেখো,
আমি যখন যা পাই, খাই
আমার কোন বাছবিচার নাই
আমি মানুষ রাক্ষস তাই;

ঠিকাদারি ব্যবসায় ক টাকা আর লাভ করা যায়?
এই টেবিল, ঐ টেবিল, সেই টেবিল
এই স্যার, ঐ স্যার, সেই স্যার
সবাই'কে খাইয়ে তারপরই তো কাজ পাই
আমি কি খাই?
আরে আমিও খাই,
ইট খাই, বালু খাই, সিমেন্ট খাই
রড খাই, পাথর খাই
শ্রমিকের ঘাম খাই, রক্ত খাই, মজুরী খাই
খেতে খেতে খেতে খেতে পেট ভরে যায়
মন কি ভরে?
মন না ভরলে লোভ চিবিয়ে খাই
আমি মানুষ রাক্ষস তাই;

বিভিন্ন ব্যবসায় ক টাকা আর লাভ বলো?
সে পাইকারিই হোক কিংবা খুচরোই
মন আমার খাই খাই
আমি ওজন খাওয়া শুরু করি
তারপর হয়ে যাই ভেজালের কারবারি
মজুদদারি, কালোবাজারি কি না করি?
এগুলো অন্যায়?
জ্ঞান দিতে এসো না তো!
তোমাদের সুযোগের অভাবে ভালোমানুষি 
জানি, আমি খুব জানি
লোভী বললে? হ্যাঁ রে ভাই, আমি লোভ চিবিয়ে খাই
আমি মানুষ রাক্ষস তাই;

কি বললে?
বই খাচ্ছি কেন?
আরে বই তো ছাগলে খায়
তোমরা বই দিয়ে ঠোঙা বানিয়ে যেগুলো ফেলো ডাস্টবিনে,
আমি বুদ্ধি খাই, মগজ খাই
ক্রমাগত তোমাদের মগজে হাতুড়ি পেটাই
পেটাতে পেটাতে মিথ্যাকে সত্য বানাই
কদিন লাগে একটা মিথ্যাকে সত্য বানাতে!
ওদের, তাদের আর তাঁদের সাথে মিলে মিশে
আমি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকেই খেলে ফেলি অবশেষে
অমানুষ বললে? ধ্যাত! গালটাও দিতে পারিস না রে ভাই
আরে বোকা! আমি তখমা লাগানো সর্বভুক
আমার জন্য কোন নিয়ম কানুন নাই
আমি সব খাই
আমি মানুষ রাক্ষস তাই;

ধর্ম-কথা?
আমি মনবন্ধ করে রাখি রে ভাই
সুদ খাই, ঘুষ খাই, হারাম খাই
মদ, মেয়েমানুষ যখন যা পাই
আরে রিপুর কামড় মাথায় উঠলে কখনো কখনো
বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলোও রেহাই নাই,
আমি রাক্ষস আমি খোক্কশ, খাই না এমন কিছু নাই
কৃষি শিল্প ইমপোর্ট এক্সপোর্ট ব্যাংক বীমা শিক্ষা চিকিৎসা
রাস্তাঘাট নদীনালা ভূমি এমন কি দেশটাকে খেয়ে খেয়ে
এখন তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকা কিছু সো কলড সততাগুলোকে খাই
আর তো খাবারের কিছুই বাকি নাই,
মানুষকে চুষে চুষে রক্ত ঘাম খেতে খেতে
একদিন খুব ইচ্ছে একটা আস্ত মানুষই খেয়ে ফেলব,
আচ্ছা আস্ত মানুষ কোথায় পাই?
আমি মানুষ রাক্ষস তাই।

২৭ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
আমি মানুষ রাক্ষস তাই
 - যাযাবর জীবন 


 ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।


লবণ ছিটানোর আনন্দ

লাগুক আর নাই লাগুক মানুষ লবণ ছিটাবেই,
কেও একটু বেশি ছিটায় কেও অল্প
তরকারিতে না হলেও আঙ্গুলের মাথায় অল্প একটু লাগায়ই,
লাগায় ক্ষতে;
নিজের জন্য না ছিটালেও
ছিটায় আরেকজনের জীবন পথে;

এই যে আত্মীয় স্বজন! বন্ধু বান্ধব পরিজন
এক একজন কতই না আপন
অথচ তাঁদেরকে তোমার ক্ষতটা দেখাও তো একটু!
মলম লাগাক আর নাই লাগাক লবণ কিন্তু একটু লাগিয়েই দিবে
সুন্দর করে গায়ে সান্ত্বনার হাত বুলানোর ছলে,
এজন্যই আপনজনকেও ক্ষত দেখাতে নেই
একান্ত বাধ্য না হলে;

লবণ ছিটানোতে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে
অসুস্থ ধরনের এক পৈশাচিক আনন্দ,
অথচ আমরা নিজেদের মানুষ বলি, তাই না!
কখনো কোন পশুকে লবণ লাগাতে দেখেছ?
স্বজাতির অন্য কোন পশুর ক্ষতে!
অথচ মানুষ একজন আরেকজনকে লবণ লাগায়
পৈশাচিক আনন্দে, ক্ষত পেলেই তাতে।  

২৬ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
লবণ ছিটানোর আনন্দ
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।


হঠাৎ হঠাৎই

কাল মানুষটার সাথে কত্ত মজা করেছি গল্পে আড্ডায় মেতে
সেও হাসি দুষ্টুমিতে আসর মাতিয়ে রেখেছিলো আড্ডা শেষ হতে হতে
আজ খবর পেলাম, নেই সে; খুব আশ্চর্য! তাই না?
না, আমি কাঁদব না;

এই যে হুটহাট কাছের মানুষগুলোর চলে যাওয়া, মেনে নেয়া যায়?
বলা নেই কওয়া নেই খুব হঠাৎ হঠাৎই এক একজন নাই হয়ে যায়
কিছুদিন তার কথা মনে পড়ে তারপর যে যার ব্যস্ততায়
জীবন এগিয়ে চলে, সময়ের পায় পায়;

কারো জন্যই কিছু থেমে থাকে না, রয়ে যায় কিছু স্মৃতি
খুব কাছের মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে এটাই হয়তো রীতি
তাদের মধ্যে সবচেয়ে অসহায় একজন, জানো সে কে?
ওপরওয়ালা জীবন সঙ্গিনী করে পাঠিয়েছিলো তাকে যে;

মৃত্যুটা অবধারিত জানা আছে সবার
সময়টা অনির্ধারিত জানা নেই কখন যে আসবে কার
কে জানে কাল সকালটা দেখব কি দেখব না!
সময়ই বলে দেবে, তাই না?

২৪ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
হঠাৎ হঠাৎই
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।


কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি

আমাকে চিনছেন বস?
আপনার অফিসের টুকটাক সাপ্লাই এর কাজ করি
খেয়ে পড়ে চলে যাচ্ছিলো আলহামদুলিল্লাহ
কখনো কোন কমপ্লেইন করি নি
কখনো একটি টাকাও বেশি বিল করি নি
জানামতে কখনো খারাপ কোন মাল সাপ্লাই দেই নি
তবুও মাঝে মধ্যে বিল আটকে যেত,
কখনো অল্প, কখনো বেশ খানিকটা
বেশি আটিকে গেলে ধর্না দিতাম
বারবার অফিসে যেতাম
তারপর কোন এক সময় তিরস্কারের থাবা
ধ্যাৎ! কটা তো মাত্র টাকা, আগামী মাসে পেয়ে যাবা;

আপনারা বড় মানুষ, আমার বলার কিছু থাকে না
মুখ বুজে চলে আসি,
অথচ ঐ অল্প কটি টাকাই যে আমার পুঁজি তা বোঝার বুঝ আপনাদের কখনো হয় নি
কতবার মাস পার করে দিয়েছি! ঐ অল্প কটি টাকার আশায়
অন্য কোথাও সাপ্লাই দিতে পারি নি পুঁজির পুরোটা আপনার অফিসে পড়ে থাকায়, 
আমাদের মত সাধারণ সাপ্লাইয়ারদের কে আর বাকি দেয় বলুন?
প্রতিদিন যেতাম আপনার অফিসে, প্রতি সপ্তাহে
ধর্না দিতে, বস! বিলের পুরো টাকাটাই বাকি,
একসময় বিরক্ত হয়ে বিল কেটে কুটে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন মাল খারাপ অজুহাতে
অথচ আপনার পারচেজ ডিপার্টমেন্ট মাল বুঝে নিয়েছিলো পাই পাই গুনে গুনে
কোয়ালিটি দেখে, ওয়ার্ক অর্ডারের সাথে স্যাম্পল মিলিয়ে
তাই নয় কি?

কিছু বলতে পারি নি সেদিন
অপমান হজম করে চলে এসেছি
এর পরও তো কাজ করতে হয় আপনাদের মতই কোন অফিসে
আপনাদের তো আবার খুব দহরম মহরম অন্যান্য অফিসগুলোর সাথে
যদি ভুলক্রমে আমার মালের নষ্ট সার্টিফিকেট দিয়ে দেন অন্য অফিসের বস বন্ধুকে?
আমার কাছ থেকে কি আর মাল নেবে?
সে তো আর মাল যাচাই করবে না
নির্দ্বিধায় আপনারই কথা মেনে নেবে;

আসলে আমরা বড্ড অসহায় আপনাদের মর্জির কাছে
তাই মুখ বুজে সয়ে যাই আপনাদের কথা
আপনারা যা বলেন তাই সঠিক
ভুল যা কিছু সব আমাদেরই
অথচ ক্যামেরার সামনে কতই না করে যাচ্ছেন চ্যারিটি!
বস! আপনার চ্যারিটির মালগুলো কিন্তু আমারই সাপ্লাই দেয়া
জানেন কি?
ধ্যাত! তা কি আর আপনার জানতে বাকি?
বস! মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তবেই টুকটাক ব্যবসা করি
আর আপনারা বিলে কলম চালান এসির ঠাণ্ডা হাওয়ায়, ঠাণ্ডা মাথায়
কিংবা আমাদের বিল আটকে রাখাটাই হয়তো আপনাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি;

বস! অনেক দিন তো হয়ে গেলো
প্রায় ছমাস ধরে ছোট্ট একটা বিল আটকে আছে, আমার পুরোটা পুঁজি
ফোন করলে প্রতিবারই বলেন বুঝিরে বুঝি
তবুও দোহাই দিয়ে যাচ্ছেন করোনার মহামারী; 
আপনার বেতন কিন্তু চলছে বস
আপনাদের খাওয়া পড়ার কিন্তু কমতি হয় নি
অফিসের ভাড়াও বাকি পড়ে নি
গাড়ির তেলের খরচ, ড্রাইভার, মালী, দারোয়ানের বেতন
সবই কিন্তু চলছে বহাল তবিয়তে
কর্পোরেটের তকমা এঁটে
শুধু আমরাই নগণ্য সাপ্লাইয়ার
আমাদের ক্ষেত্রেই যত অজুহাতের বলিহারি।

২৩ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি
 - যাযাবর জীবন
 

দিন আর রাতের তফাৎ

সকালটা দেখি না কতদিন!
আমি ঘুমে থাকতেই সূর্য আকাশে
চারিদিকে পাখির কিচিমিচি
দু-একটি আমার জানালায় বসে

দুপুরটা দেখা হয় প্রতিদিন
কাছে যাওয়া হয় না
সূর্যের প্রখর উত্তাপ
চামড়ায় সয় না

বিকেলটা বিষণ্ণ
আধো আধো আলো
পাখিরা ঘরে ফিরছে
ওরা বেশ আছে ভালো

সন্ধ্যাটা বড্ড টানে
কাছে যেতেই যত ভয়
লাল আকাশটা দেখলেই
কেন জানি মন খারাপ হয়

চাঁদ আমার বড্ড প্রিয়
জ্যোৎস্না তার থেকেও বেশি
অমাবস্যার রাতগুলো কালো
যখন ঘুমিয়ে থাকে শশী

সবার কাছে রাতটা ঘুমানোর
জেগে থাকি আমি
আমার নিদ্রাহীন চোখে
ঘুমটা সবচেয়ে দামী

প্রহর প্রহর আলসেমিতে
দিন গিয়ে রাত এলো
কর্মজীবীর কর্মহীনতায়
নষ্ট হলো কাজের সময়গুলো

অসহনীয় এক সময়ের ভেতর
আজকে আমরা সবাই
দিন আর রাতের তফাৎ
সত্যিই আজ আমার কাছে নাই।

২২ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
দিন আর রাতের তফাৎ
 - যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।





ক্ষরণের রঙ লাল


ভোরটা না দিনের, না রাতের
না সূর্যের, না চাঁদের
সন্ধ্যাটাও ঠিক তেমনি;

ভোরবেলাটার যেন সুখ নেই, আছে অসুখ
সন্ধ্যাবেলাটারও যেন আনন্দ নেই, আছে বিষাদ
দুজনারই কেমন যেন মন খারাপ আর ঘুমঘুম অবসাদ;

ঊষালগ্নে পাখিরা কিচিমিচি ঘর ছাড়ে
কিচিমিচি ঘরে ফেরে গোধূলি লগ্নে
লগ্ন দুটি মনে করিয়ে দেয় পাখিদের আবাস;

আমি ঊষালগ্নে ঘুমঘুম জেগে থাকি
অর্ধ জাগ্রত চোখে সূর্যোদয় দেখি
আকাশটা লাল হতে হতে নীল হয়ে যায়;

আমি গোধূলি লগ্নে জেগে জেগে ঘুমাই
অর্ধ ঘুমন্ত চোখে সূর্যাস্ত দেখি
আকাশটা লাল হতে হতে কালো হয়ে যায়;

আমি আকাশের রঙ বদল দেখি ভোর ও সন্ধ্যায়
সূর্য খুঁজি, চাঁদ খুঁজি; কেও নাই; ভোর ও সন্ধ্যায়
শুধু আমি আছি আর আছে রঙ বদলের আকাশ;

আমি সারাদিন মানুষের বদল দেখি, যখন তখন রঙ বদলায়
আমি মানুষের ভেতরের অন্ধকার দেখি, সূর্যের ছায়ায়
একদিন আমারও বড্ড অন্ধকার হতে ইচ্ছে করে রঙ বদলের খেলায়;

আমি রাতভর মানুষের পশু হওয়া দেখি, রিপুর তলায়
মানুষের পশুত্বের নখদন্ত দেখি, জ্যোৎস্নার ছায়ায়
অন্ধকারে আমারও বড্ড পশু হতে ইচ্ছে করে, পশুত্বের খেলায়;

ভোরটা আসলে মন খারাপের সন্ধ্যাটাও তাই
আধো আলো, আধো অন্ধকারে আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই
তারপর অনুভূতিগুলো কামড়ে ধরে আবার অনুভূতিশুন্য হয়ে যাই

ঊষালগ্নে আয়নার সামনে দাঁড়াতে নেই, ওখানে অনুভবগুলো বড্ড প্রকট
আয়না দেখতে হয় না গোধূলি লগ্নে, ওখানে অনুভূতিগুলো বড্ড বিকট
ক্ষরণের রঙ লাল, প্রকৃতি কিংবা মনে।

২১ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
ক্ষরণের রঙ লাল
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।




 

প্রেমের স্বরবর্ণ

অনন্যা এক বালিকা সেদিন চোখে পড়েছিলো
আড়ম্বর ছিলো না তার চালচলনে
ইতিহাস গড়তে হয় নি তাকে প্রেম নিবেদনে
ঈগল নজর ছিলো আমার অষ্টাদশী তোতে     
উইভিল হয়ে ঢুকে গিয়েছিলাম তোর জীবনে 
ঊর্ধ্বাকাশে উড়েছিলাম তারপর থেকে দুজনে
ঋণী করে রেখেছিলো কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী সেদিন
এস্রাজের সুরে সেই থেকে নতুন জীবন 
ঐকল্য ঝেড়ে আমাদের নতুন জীবনের শুরু
ওরা কখনোই বুঝবে না প্রেমের স্বরবর্ণ     
ঔদাসীন্যে ব্যর্থ জীবন যাদের।


20 আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
প্রেমের স্বরবর্ণ
- যাযাবর জীবন

নিশ্চিত অন্ধকারের অনিশ্চিত জীবন

একটা আশ্চর্য রকম অদ্ভুত জীবন কাটাচ্ছি আমরা
খাচ্ছি, দাচ্ছি, ঘুমচ্ছি; সবই ঠিক আছে
তবুও কোথায় যেন জীবনের সুর কেটে গেছে,
জীবনটা কেমন যেন বদলে গেছে;

আগে ভোর হতো ঘুম থেকে ওঠার পরে
এখন ঘুমাতে যাই সকাল হওয়ার পরে
আগে ঘর্মাক্ত দুপুর কাটতো অফিসের ব্যস্ততায়
এখন মধ্য দুপুরে চোখের অলস সকাল
সকালের নাস্তা খাই নি কতদিন হয়ে গেছে!
আজকাল নাস্তা হয় একবারে দ্বিপ্রহরের আহারে
ভুলেই গেছি প্রকৃতি দেখি না কতদিন
ঘরের ভেতর মাছচোখে প্রকৃতি দেখি ডিজিটাল স্ক্রিণে
ঐ যে 'ডিজিটাল স্ক্রিণ' দেখছ না?
মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভিস্ক্রিণ
ইদানীং জীবনটা আটকে আছে ওর মধ্যেই,
দিন নেই রাত নেই, সকাল নেই সন্ধ্যে নেই
ওখানেই বসে থাকি, ওখানেই হাসি, ওখানেই কাঁদি
ওখানে পরস্পর সাক্ষাৎকার, সামাজিক মেলামেশা
ভার্চুয়াল নামক এক অধরা জগতে,
বড্ড আশ্চর্যরকম অদ্ভুত এক অলস জীবন কাটাচ্ছি আমরা
খাচ্ছি, দাচ্ছি, ঘুমচ্ছি; সবই ঠিক আছে
তবুও বদলে গিয়েছে সবই অনিশ্চয়তায় ছেয়ে,
কর্মহীন জীবন কয়দিন ভালো লাগে?

খেতে তো হয়ই, মুখ খাচ্ছে প্রতিদিনই
চোখ কিন্তু সঞ্চয়ের দিকে
কেমন হরহর করে নেমে যাচ্ছে সঞ্চয়ের কাঁটা
যেন ভাটার পানি নামছে, তীব্র বেগে
অথচ ক্ষুধা নামার কোন লক্ষণই'তো দেখছি না
বরং অলস বসে বসে ক্ষুধা যেন ঊর্ধ্বমুখী জোয়ারের টানে
তারপর? একদিন সঞ্চয় তলানিতে ঠেকলে?
নিশ্চিত অন্ধকারের অনিশ্চিত জীবন, তাই না?


১৮ আগস্ট,২০২০

#কবিতা
নিশ্চিত অন্ধকারের অনিশ্চিত জীবন
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।



রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০

পথ মাড়িয়ে পথের শেষে

পথ কি আর পথ মাড়ায়?
মানুষই পথ মাড়ায় পথে পথে
একে অন্যের ঘাড়ে চেপে
পেছন থেকে টেনে ধরে, একে অন্যকে;

কেও সামনে বাড়বে? কোথায় জানি কার লাগে
পথ আগলায়, পথ আটকায়, পথ কাটে, পথ মাড়ায়
পিছু কামড়ে ধরে একে অন্যকে, হায় হায় 
এই বুঝি আমার থেকে সে ওপরে উঠে যায়!

পিছু টেনে ধরতে জুড়ি নেই মানুষের স্বভাবে
জুড়ি নেই পিছুকথা বলতে, কামড় দিতে পেছন থেকে
কথার কামড় খেয়েছ কখনো?
সাপের বিষ সম;

আচ্ছা! কেও যদি ওপরে উঠেই যায় 
আমার ক্ষতি কি? একবারও কি ভাবায়?
ঈর্ষা মানুষের এক সহজাত রিপু 
আর রিপুর কাছে পরাজিত মানুষই পথ মাড়ায়;

এই যে পিছু কথা, পিছু কামড় আর পথ মাড়ানো
তোমার গন্তব্য কোথায় জানো?
পথের শেষটায় অপেক্ষায় মাটির ঘর, শেষ গন্তব্য 
তবু শুধু শুধুই একে অন্যের পথ আটকানো।

১৬ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
পথ মাড়িয়ে পথের শেষে
 - যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।


ধুসর পথে

সবুজের ওপারে সবুজ
তার ওপারে নীলাকাশ
সবুজ চিড়ে একটা পথ
পথটা ধুসর, এবড়ো থেবড়ো অচেনা
একদিন আমরা এই পথ ধরে হেঁটে যাব
না হয় নাই থাকলো কোন গন্তব্য
পথে যেতে যেতে না হয় চিনে নেব পথ
হাঁটতে হাঁটতেই না হয় কিছুটা আমরা চিনবো নিজেদের!
তারপর পথটাই বলে দেবে আমাদের গন্তব্য,
মিলনের কিংবা বিচ্ছেদের;
কত গল্পই তো লেখা হয় পথে পথে
আমরা না হয় একটা কবিতা আঁকবো পথ হেঁটে,
মিলনের কিংবা বিচ্ছেদের।

১২ অগাস্ট, ২০২০

#কবিতা
ধুসর পথে
- যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।

মুখোশের আড়ালে মুখোশ

অনুভূতিগুলোর বিভিন্ন নাম আছে, আলাদা আলাদা;
সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সন্তোষ-অসন্তোষ
প্রেম প্রীতি, রাগ অভিমান, ভালোবাসা ঘৃণা
খুব কঠিন কি অনুভূতিগুলো চেনা?

একটু কঠিন বৈকি,
উঁহু! তোমার নিজের অনুভূতির কথা বলছি না;
মানুষের চেহারায় নাকি অনুভূতি ফুটে ওঠে!
তাই কি? মানুষ যে আজকাল থাকে মুখোশ পড়ে!
অনুভূতি বুঝব কি করে?

আরে, মানুষ'কে কেন বলছি?
আমি নিজেই তো মুখে মুখোশ পরি,
মানুষকে দেখানোর দরকার আছে কি আমার অনুভূতিগুলো
নিজেতে নিজে দুমড়ানো মোচড়ানো তার থেকে ঢের ভালো, 
বিশেষ করে ঋণাত্মক অনুভূতিগুলো'তো একান্তই আমার
মুখোশের আড়ালে মুখ ঢাকি বারবার,
হাসি মুখে দুঃখ ঢাকতে পারে কজনা?
সুখি সুখি চেহারার মুখোশে থাকুক না ঢাকা অশান্তি আর ঘৃণা; 

ক্ষুধাও কিন্তু একটা অনুভূতি
পেটের ও শরীরের
এ অনুভূতিটা খুব সহজে ঢেকে রাখা যায় না,
ক্ষুধায় কেঁদেছ কখনো? হাসি মুখে?
কামের ক্ষুধা সে তো মাঝে মধ্যেই ভেসে ওঠেই চোখে মুখে
আমি মুখোশের আড়ালে, মুখোশ মুখে;

ধনাত্মক অনুভূতিগুলো হঠাৎ হঠাৎ দেখে ফেলে সবাই
খুব সাবধানে ঋণাত্মক অনুভূতিগুলোতে শুধু আমি একাই,
হাসি আটা মুখোশ মুখে
আমাকে পাশে পাবে কিন্তু তোমাদের দুখে;

মানুষের কাছে আমার কিছু অনুভূতি না হয় রইলোই অজানা!
এতই সোজা! মানুষ চেনা;
মুখোশের আড়ালেও কিছু মুখোশ থাকে
আয়নার সামনেও আমি মুখোশ মুখে।


১৩ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
মুখোশের আড়ালে মুখোশ
 - যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।


অন্ধকার জীবন

তীব্র গরম পরেছে
হাঁসফাঁস জীবন
এসিটা ছাড়তেই ঘর ঠাণ্ডা
আহহ্! শান্তি, শান্তির ঘুম; 
ওহে মূর্খ মানব! কবরে এসি কোথায়?

পিঠের তলায় একটা ছোট্ট মাটির ঢেলা
কিংবা নুড়ি-পাথর রেখে দেখ 
বড্ড কষ্ট,  তাই না?
ঘুমাতে পারবে আদৌ?
শুয়ে থাকতে পারবে কতক্ষণ? 
এক মিনিট, দু মিনিট!
তাও খুব চেষ্টা কিরে হয়তো, প্রচণ্ড ব্যথা সয়ে;
একবার কবরের কথা ভাব তো!
পিঠের নিচে মাটি, বালি কিংবা নুড়ি-পাথর
শুয়ে থাকতেই হবে, যুগ যুগান্তর;

মনে কর দুপুর বেলায় সূর্যটা হঠাৎ নিভে গেলো
চারিদিকে মিশমিশে অন্ধকার
কোথাও কোন আলো নেই
কতক্ষণ সইতে পারবে?
কিংবা রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে
বাতি জ্বালানোর কোন উপায় নেই
একটানা কতক্ষণ সইতে পারবে?
একদিন, দুদিন, বড়জোর তিনদিন?
তারপর? একবার চিন্তা করে দেখো তো!
কবরে বাতি কোথায়? ভেবে দেখেছ?

ওগুলো ভাববার সময় কোথায়?
এ জীবনে নগদে যা পাওয়া যায়
লুটেপুটে খায়,
চোখের ক্ষুধা মেটাতে পেরেছে ক'জনায়?
মনের ক্ষুধা? 
আচ্ছা! পেটে কতটা আঁটে?
কবরের ভেতর কে খাওয়াবে তোমাকে?

ধ্যাৎ!  বাজে কথা বলো না তো!
মরে গেলে খাবারের কি দরকার?
কি এসে যায় অন্ধকারে? 
কি আসে যায় গরম আর ঠাণ্ডাতে?
কি আসে যায় বিছানাতে?
নাস্তিক তো তুমি নও ওহে মানব
তবে এ প্রশ্নগুলো করছ কেন?
একবার ভেবে দেখ
একবার, মাত্র একবার।

১২ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
অন্ধকার জীবন
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।




অহংকার, অহমিকা আর দম্ভের মাটি

মানুষের বড্ড অহংকার টাকার 
অহমিকা রূপের
দম্ভ ক্ষমতার
কারো অল্প স্বল্প কারো পুরোটা স্বত্বা জুড়ে
পা পড়ে না তাদের মাটিতে, ভাবে আমি কি হনু রে  
অথচ মানুষ ভুলে যায় সৃষ্টি তার এক ফোঁটা নোংরা বীর্য থেকে; 

এই যে তোর টাকার অহংকার!
কাড়ি কাড়ি টাকা আর গাড়ি গাড়ির গর্ব
আলিশান বাড়ি, নিজেই ব্যাঙ্ক বানিয়ে বসেছিস আজ!
আচ্ছা! টাকাগুলো এসেছে কোথা থেকে?
ঘামঝরা শ্রমে? সাদা পথে?  
নাকি কালো পথে?
উঁহু! আমাকে নয়, আয়নাকে জবাব দে অতীত দেখে
ভুলিস না তোর সৃষ্টি নোংরা বীর্য থেকে

এই যে রূপের অহংকার!
উজ্জ্বল গৌরবর্ণ, পানকাট চেহারা, কে দিয়েছে?
আচ্ছা! বলতে পারিস যৌবন কদিনের?
তারপর তো পার্লার, আর তারপর না হয় কসমেটিক সার্জারি!
টাকার বলিহারি; তারপর?
শরীরের ভেতরের একটা মন থাকে না? একবার একটু দেখতো আয়নাতে!
তোর গৌরবর্ণ চামড়ার মত ফর্সা কি?
উঁহু! আমাকে নয়, আয়নাকে জবাব দে ভেতর দেখে, নিজেকে যেচে
ভুলিস না সৃষ্টি কিন্তু তোর নোংরা বীর্য থেকে

এই যে তোর আজকের ক্ষমতার দম্ভ!
কিসের বলে? কদিন ধরে?
টাকায় কেনা? আচ্ছা! টাকাটা সবসময় থাকে রে?
অস্রের বলে? সেও তো টাকারই জোর, তাই না রে?
রাজনীতি? আরে ও তো ক্ষণে ক্ষণে বদলায় রঙ, বদলায় নীতি
পাশার দান পাল্টে গেলে! একবার ভেবেসিছ তখন কি হবে?
উঁহু! আমাকে নয়, আয়নাকে জবাব দে বিবেক চেখে
ভুলিস না সৃষ্টি কিন্তু তোর নোংরা বীর্য থেকে

এই যে এক ফোঁটা বীর্য থেকে সৃষ্টি!
কে করলো? কেন করলো? কখনো ভেবেছিস কি?
নাকি তুই শুধুই অহংকার, অহমিকা আর দম্ভের মাটি?
অথচ আজ মাটিতে পা পড়ে না তোর,
তুই যে মাটি, সেটা তো জানিস? মানিস? 
নাকি স্বীকার করতে অহংবোধে বাঁধে? অহমিকায় লাগে?
দম্ভে কি আঘাত দিলাম? মাটি বলে;
উঁহু! আমাকে নয়, আয়নাকে জবাব দে মানুষ হয়ে 
ভুলিস না সৃষ্টি কিন্তু তোর একফোঁটা নোংরা বীর্য থেকে

তারপর?
একদিন তো সেই মাটিতেই যাবি
অহংকার, অহমিকা আর দম্ভ সব একসাথে পেঁচিয়ে নিয়ে
সাদা কাপড়ে,
আর মিশতে হবে মাটিতে, মাটি হয়ে
ঘুমাতে হবে মাত্র সাড়ে তিন হাত ঘরে, অন্ধকারে।

১১ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
অহংকার, অহমিকা আর দম্ভের মাটি
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।









 


শরীরের মন খারাপ

মাঝে মাঝে সকালের মন খারাপ হতেই পারে
সকালটা মুখ লুকোয় কুয়াশার ভাঁজে
মাঝে মাঝে দুপুরেরও মন খারাপ হয়
সূর্য লুকায় মেঘের ওপারে
মাঝে মাঝে মেঘেরও মন খারাপ হতে পারে
তাই হয়তো মেঘ বড্ড কাঁদে
মাঝে মাঝে বিকেলের মন খারাপ হলে
বিকেলটাই ঢলে পড়ে সন্ধ্যের কোলে
আর রাতের মন খারাপ হলে?
রাত ঘুমিয়ে যায় অন্ধকারের কোলে;

আচ্ছা! মানুষের কি মন খারাপ হয়?
আরে হয়! হয়!
মানুষেরও তো মাঝে মধ্যে মন খারাপ হতেই পারে;

এই যে আজকাল চারিদিকে কেমন থম ধরে আছে!
এই যে আজকাল করোনা নামক মহামারীতে পৃথিবী ছেয়ে গেছে!
এই যে আজকাল হাতে কোন কাজ নেই!
এই যে আজকাল পকেট ফাঁকা হতে হতে শূন্যের কোঠায়!
এই যে সবেধন চাকরিটা চলে গেলো
এই যে ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়লো
এই যে হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই
এই যে চারিদিকে শুধু মৃত্যু সংবাদ
এই যে আজকাল পকেট টান অথচ খিদেয় ওষ্ঠাগত প্রাণ, 
মন খারাপ হয় না?
নাকি এগুলো মন খারাপের কোন কারণ না? 

আচ্ছা! মন খারাপ হলে মানুষ কি করে?
কি জানি? আমি তো ক্রমশ: ডুবে যেতে থাকি অন্ধকারে,
ডুব দিলেই কি মন ভালো হয়?
উঁহু! ডুব দিলে অন্ধকারেরও মন খারাপ হয়
হতাশা ছেয়ে বসে মনের গভীরে
ক্ষুধার জানান দেয় পেট চিৎকার করে 
আমি ভুশ করে জেগে উঠি অন্ধকার থেকে
তারপর পাগলের মত ছোটাছুটি খাদ্যের সন্ধানে;

তবে কি মানুষের মন খারাপের মূল কারণ ক্ষুধা?
হয়তো!
প্রথমে পেটের
তারপর শরীরের
তারপর মনের; 

পেটের ক্ষুধা মিটলেই শরীরের মন খারাপ
শরীরের ক্ষুধা মিটে গেলে মনের মন খারাপ
তারপর অসীম চাহিদার হাহাকার
মন জুড়ে রিপুর কারবার
আর আমার পুরোটা জুড়ে আমিত্বের সমাহার; 

আয়নায় অনেকবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি  
আমার আমিত্বের ভেতরে আসলে আমি কার?

আয়না উত্তর জানে
মন জানে
মুখ স্বীকার করে না,
তাই না?

১০ আগস্ট, ২০২০


#কবিতা
শরীরের মন খারাপ
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।




মনচোর

সেই সুদূর অতীতের এক কাকডাকা ভোর
চোখ মেলতেই দেখেছিলাম ঘরে এক চোর
প্রথমে বুঝি নি, চোখ ডলে দেখি পরনে শাড়ি
মাথায় ঝাঁকড়া চুলের ঢেউ যেন কোমর ছাড়ি

আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই ফিক করে একমুখ হাসি
মন গেয়ে উঠেছিলো, ভালোবাসি ভালোবাসি
জানালায় সূর্য হেসেছিলো, আর ঘরে তুই
পলকহীন মুগ্ধ আমি তোর দিকে চেয়ে রই 

ভালোবাসা বুঝতে বুঝতে আমাদের দুপুর হয়ে গেলো
আকাশেও সূর্যটা ততক্ষণে বড্ড তেঁতে উঠেছিলো
বাইরের তাপ ভেতরের ভাপ মিলেমিশে জগাখিচুড়ি
কি বোকাই না ছিলাম, আর ভালোবাসায় আনাড়ি

বিকেল হতে না হতেই আকাশে মেঘ, মন বৃষ্টি
আমিই কি ছাই বুঝেছিলেম ভালোবাসার অনাসৃষ্টি
হঠাৎ ঝড়ে কেমন সব তালগোল পাকিয়ে গেলো
আর ছিটকে দুজন দুদিকে, ভালোবাসার কি এলো গেলো? 

ভালোবাসার কিছু না এলে গেলেও দুজনাই রাত জাগে
আর ভেবে ভেবে সারা, কার ভুলটা হয়েছিলো আগে? 
অনেকদিন হয়ে গেলো কেও দেখে না এখন আর জ্যোৎস্না
জানালায় খিল আটা, মন বন্ধ; তবুও কেন যেন চারচোখ কান্না 

নির্ঘুম রাত শেষে প্রতিদিন ফিরে আসে, নতুন কাকডাকা ভোর
মৃত অনুভূতিতে আজ কোথাও নেই কারো মনচোর
ভালোবাসা একসময় মরে যায়ই, অনুভূতির মৃত্যুতে
জীবন কি থেমে থাকে? তরতর এগিয়ে চলে সময় নদীতে।


০৯ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
মনচোর
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।

লোক হাসানো

দশ মিনিটের শরীর গরম
দশ মিনিটের ঝাপাঝাপি
দশ সেকেন্ডের কামস্খলন
ব্যাস, এটুকুই প্রেম, আর প্রেমের সাতকাহন;

কোন একটা সময় শরীর ছিলো বিয়ের পরে
তারপর একটা সময় শরীর এলো প্রেমের ঘরে
আজকাল আর প্রেম কোথায়?
শরীরটাই হরেদরে;

এখন শরীর চাখতে প্রেম লাগে না
যত না শরীর বিকোয় পতিতালয়ে
তারচেয়ে বেশী বিকোয় স্কুল কলেজে
উঁহু! টাকার বিনিময়ে নয়
শরীর চেনার জন্য
মজা করার জন্য,
আরে এদের তো শরীর চেনার বয়সই হয় নি!
ধ্যাত! তুমি বোকা নাকি?

যেখানে টাকা কথা বলে সেখানেই শরীর
যেখানে স্বার্থ সেখানেই শরীর
যেখানে লেনদেন সেখানেই শরীর
আর কর্পোরেট ছাপ মারা অফিস গুলো?
তোমরাই ভালো জানো! 
শুধু শুধু পতিতালয়ের দোষ দিচ্ছ কেন?

বিছানায় যেতে আজকাল প্রেম লাগে কে বলে?
বোকার মত কেনই বা প্রেম খোঁজো পরকীয়ার তলে? 
পরকীয়া তো শরীরই, তাই না?
দশ সেকেন্ডের স্খলন
তার জন্য হরেদরে ভাংছে সংসার জীবন,
আরে তাতে কি?
আগে শরীরটা তো চাখি!

একটা সময় ছিলো শরীরের পবিত্রতা
আজকাল ওগুলো শুধুই কথার কথা
পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই শরীর হয়ে যায় শুদ্ধ
ভালোবাসা! সে তো শরীরের ভেতরই কারারুদ্ধ;  

এখন শরীরটাই চলে এসেছে মনে
যার সাথে ভালো লাগে বিছানায় তার সনে
কামস্খলনে শরীর আলাদা যখন
আনন্দ তো হলো, যাও না বাবা এখন!

শরীরের শুদ্ধতা? নৈতিকতা? ভালোবাসা?
আপাতত ডিকশনারিতে দেখে নিও,
শোনো! কদিন পরে এগুলোও আর জিজ্ঞাসা করো না
লোকে পাগল ভাববে, শুধু শুধু লোক হাসিও না।


০৭ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
লোক হাসানো 
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ Mimo Sukh





ক্ষুধার কাব্য

আজকাল বড্ড শাসনে রাখতে হয় কলম'কে 
একটু ছাড় দিলেই প্রেম লিখা শুরু করে,
অথচ প্রেম’কে ভুলে গিয়েছি আমি সেই কবে!
যেদিন ক্ষুধা নখদন্ত বের করে আঁচর দিয়েছিলো পেটে
সেদিন থেকে আমার কলম ক্ষুধা লিখে ক্ষুধাপেটে, 
অথচ দেখ! কবিরা কি সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে!
চাঁদের সাথে রুটির তুলনা করে
ভরাপেটে আয়েশ করে কাগজে কলমে
অথচ রুটিটা কামাতে হয় আমাকেই যব বুনে বুনে
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, কাজ করে যাই মুখবুজে ক্ষুধাপেটে;

আমার কলমে কি প্রেম লিখলে চলে!
অথচ আকাশে মেঘ দেখলেই মন উড়ে চলে
ঝুমঝুম বৃষ্টি হলেই মন প্রেম বলে
নদীতে সূর্যাস্তে মন ভেসে চলে
নদীতে ভাসতে ও ডুবতে মন প্রেম বলে,
রাতে চাঁদ উঠলেই মন চাঁদে চলে
জ্যোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে মন প্রেম বলে
অথচ প্রেম’কে ছুটি দিয়েছি সেই কবে!
এখন শুধুই পেট কথা বলে, ক্ষুধা কথা বলে
ক্ষুধার কি আর প্রেম লিখলে চলে?

কোন একদিন হয়তো আর আকাশের দিকেই তাকাব না
কোন একদিন হয়তো বৃষ্টির ফোঁটায় মন বিরক্ত হবে 
কোন একরাতে হয়তো চাঁদ দেখে খিল দেব জানালায়
কোন একরাতে হয়তো চোখ জ্যোৎস্না দেখে মন অমাবস্যা হবে
কোন একদিন হয়তো মন থেকে আবেগ ধুয়েমুছে যাবে 
কোন একদিন হয়তো ক্ষুধা লিখতে লিখতে প্রেম ভুলে যাব,
সেদিন হয়তো কলমটা কাঁদবে
সেদিন হয়তো খাতাটা সাদা হয়ে রবে
সেদিন হয়তো ভালোবাসা মরে যাবে
আর পড়ে থাকবে আবেগশূন্য কিছু কবিতার শব
আমি চিৎকার করে করে সেদিন বলবো
ক্ষুধাই কাব্য, ক্ষুধাই কবিতা আর ক্ষুধাই আমার সব।


০৬ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা  
ক্ষুধার কাব্য
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।












স্মৃতির সাথে কথোপকথন

কিছু কিছু রাত আসে কিছু গল্প নিয়ে
কথা বলে মনের সাথে
কিছু স্মৃতিচারণ, কিছু কল্পকথন, কিছু দুঃখ গাঁথন
আমি চুপচাপ মনের সাথে কথা বলি একান্তে একা একা
রাস্তাটা গভীর রাতে বেশ ফাঁকা ফাঁকা
একটি দুটি রিক্সা টুং টাং শব্দ
মাঝে মধ্যে চিড়চিড় করে পিচ কাটে একটি দুটি গাড়ির চাকা
সে কয়েক মুহূর্ত
তারপর আবার মনের সাথে আমি একা;

কখনো কখনো রাতটা অন্ধকার
কখনো কখনো আকাশে জ্যোৎস্না
কখনো চাঁদ আর তারার সাথে মেঘের খেলা
কোন কোন রাতে খুব চিড়চিড়ে গরম
কোন কোন রাতে ভিজে বাতাসে মন নরম
আমি পাটি পেতে ছাদে
আর মন স্মৃতির ফাঁদে;

ছাদ থেকে মন বেয়ে বেয়ে আকাশে উঠে যেতে থাকি
ওখানে মেঘেদের ছুঁয়ে দিতেই ভিজতে থাকি স্মৃতির বৃষ্টিতে
তারপর এক সময় চুপচুপে ভেজা হয়ে নেমে আসি ছাদে
ও কি! ওখানে দেখি জ্যোৎস্নার বান ডেকেছে
চাঁদের সাথে গল্পে মেতে উঠে আমি সাঁতার কাটি জ্যোৎস্না স্রোতে
তারপর পেছনে ফেলে আসা একরাশ দুঃখগুলো পিছু ডাকে
আমি নদী হই কান্নায় ডুবে
স্মৃতিগুলো গল্প শোনায়, হাসায়, কাঁদায়
ভাসায় ডোবায় স্মৃতির জোয়ারে
তারপর একসময় ঘুম এসে চোখ চুমতেই
আমি তলিয়ে যাই গভীর অন্ধকারে।


০৫ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
স্মৃতির সাথে কথোপকথন
 - যাযাবর জীবন


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।



মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০

আজকের বাস্তবতা

স্তরে স্তরে মানুষের জীবন
জীবনের স্তরে স্তরে আনন্দ
স্তরে স্তরে বেদনা
স্তরে স্তরে সমস্যা 
সমস্যার মধ্যে দিয়ে যে যায়, শুধু সেই জানে
বাইরে থেকে কেও বোঝে না;

একটা সময় মানুষের জীবন কাটে দুর্দান্ত দাপটে
দেবার মত কত কিছুই না থাকে তখন তার কাছে!
সন্তানের জন্য উপার্জন
তাদের যথাযথ শিক্ষা
পরিবারের ভরন পোষণ
বছরের ছুটি ছাটায় সামর্থ্য অনুযায়ী ভ্রমণের আয়োজন, 
সে সময়টা শুধুই দেবার
বাবা-মায়ের জন্য
পরিবারের জন্য
সন্তানের জন্য
ভাই-বোনের জন্য;

তারপর কালের স্রোতে সময় যায়
ধীরে ধীর মানুষ নত হতে থাকে বয়সের কাছে
কর্মক্ষমতা কমতে কমতে কোন একটা সময় শূন্যের কোঠায়
বিলুপ্ত হয় দেবার ক্ষমতা
জরা ব্যাধি ভর করে শরীরে
একটা সময় মানুষকে হারতেই হয় বয়সের কাছে,
সে সময়টা বড্ড করুণ;

সারাজীবন যে দিয়ে এসেছে তার এবার নেবার পালা
এক সময়ের দুর্দান্ত প্রতাপের সন্তান এখন অসহায় বাবা-মা
একটা বয়সের বাবা-মা জীর্ণ হয়
একটা সময় চোখের জ্যোতি কমে যায়
একটা সময় তাদের লাঠির প্রয়োজন হয়
প্রয়োজন পথ্য সেবার 
কিন্তু কে দেবে?
তিল তিল করে মানুষ করা সন্তান, আবার কে?

আরে সে তো এখন উড়াল ডানায়
উল্কার বেগে সংসার চাকায়
তার নিজের সংসার,
বুড়ো বাবা-মাকে কজন করে?
দিন দিন মনের সংকোচনে আজকাল কে কার তরে!

একটা বাবার আহাজারি শুনবে?
বাবা’রে তোর সন্তান বড় হচ্ছে, এক ঘরে তোর আর কুলোয় না
আমি বুঝি, তাই তো আমার ঘরটাও তোকে ছেড়ে দিয়েছি
ঐ দু রুমের ফ্ল্যাটটাই তো সম্বল ছিলো সারাজীবনের সঞ্চয়ে
আপাতত ড্রইংরুমে বেশ তো মানিয়ে নিয়েছি তোর মা’কে নিয়ে
তোষক বিছিয়ে
আর তো কিছু সঞ্চয় নেই তোকে দেবার,
শোন না বাবা! তোর মায়ের ঔষধ শেষ হয়ে গেছে সপ্তাহ হলো
আমার চশমার কাঁচ ভেঙে ফেলেছে তোর ছেলে মাসের উপর হলো
মাথার ওপর ফ্যানটা সারারাত বড্ড ঘটঘট আওয়াজ করে
তোর মার ঘুমাতে বড্ড কষ্ট হয়
তোর সাথে এক টেবিলে বসে খাই না কতদিন হয়ে গেছে!
তোর কি বাবা একটুও সময় হয় না!
আচ্ছা, তবুও ভালো থাকিস তোরা
যেভাবে থেকে সুখ পাস
আমাদের অনেক ভাগ্য এখনো রেখেছিস ড্রইং রুমে
ঐ যে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা! তোর ঐ চাচার কথা মনে আছে?
তার ছেলেটা তোর চাচাকে রেখে এসেছে বৃদ্ধাশ্রমে; 

বাবাদের বয়স হলে দেবার মত কিছুই থাকে না
মিনি মাগনায় উপদেশ শোনার সময় তো তোদের আজকাল হয় না
উপদেশ তোদের ভালোও লাগে না;
একটা অনুরোধ করব, রাখবি?
আমি মরে গেলে তোর মা’কে বাকি জীবনটা ড্রইং রুমে থাকতে দিবি?
ও বেচারির যে কেও নেই, আমি ছাড়া।

একটা মায়ের আহাজারি শুনবে?
না থাক, সইতে পারবে না।

০৩ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
আজকের বাস্তবতা 
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।





হঠাৎ আসা প্রেম

আমি প্রায়শই সমুদ্রের ধার ঘেঁষে হেঁটে যাই
দূর দূরান্তের পথে, বালিয়াড়ি ধরে;

একদিন হাঁটতে হাঁটতে চাঁদের মত একটা মেয়ে চোখে পড়েছিলো
দেখতাম প্রায়শই সমুদ্রে পা ভিজিয়ে বসে থাকতো
আর তাকিয়ে থাকতো চাঁদের দিকে
জ্যোৎস্না গায়ে মাখতো
আর না দেখা এক প্রেমিকের কথা ভাবতো
চাঁদের কলঙ্কে জ্যোৎস্নার কি আসে যায়
কিই আসে যায় সমুদ্রে পা ডুবিয়ে থাকা মেয়েটির ভাবনায়!

একদিন চাঁদ দেখতে দেখতে সে চেপে বসে এক মনের চন্দ্রযানে
তারপর উড়ে চলে দূর দূরান্তের পানে
ঐ তো দেখা যায়, ঐ দূরে কে যেন!
অনেকটা তার স্বপ্ন পুরুষের মত 
প্রেমিক হবে কি?
জানে না; 

বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়, জানার আকাঙ্ক্ষায়
একদিন দুদিন তিনদিন তারা ফুলবনে ঘুরে বেড়ায়
তারপর একদিন চন্দ্রযানে ঘুরে আসে মঙ্গল থেকে
তারপর কোন একদিন স্বপ্ন পুরুষ তাকে প্রেম নিবেদন করে
আর মেয়েটি ভাসতে থাকে প্রেম জোয়ারে
দুজন ডুবতে থাকে সমুদ্রের গভীরে
ভালোবাসা তো সমুদ্রই, তাই না?

কদিন বেশ চুটিয়ে প্রেম চলে তাদের
দুজনই ডুবে দুজনই ভাসে
আর ডুবডুবান্তি খেলায় ক্ষণে ক্ষণে তারা খিলখিল হাসে, 
বেশ কেটে যাচ্ছিলো সময়গুলো
একটা স্বপ্ন সবেমাত্র গড়তে শুরু করেছিলো দুটো অন্তরে,
ঘর বাঁধার?
হয়তো!

তারপর একদিন হঠাৎ কোথা থেকে এক দমকা হাওয়া এলো
দরজা জানালা বন্ধ করতে না করতেই প্রচণ্ড ঝড়
বাইরে লণ্ডভণ্ড ঝড়, ঝড় তাদের ভেতরে, ঝড় সম্পর্কে
খুব তুচ্ছ কিছু কারণ নিয়ে,
থাকুক না হয় সেগুলো গোপন হয়ে;

ধীরে ধীরে আকাশ ছেয়ে যায় কালো মেঘে
চাঁদ লুকিয়ে পড়ে অমাবস্যা হয়ে
ওদিকে প্রেমিক তার মনের সমস্ত বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে
এদিকে মেয়েটি আঁতিপাঁতি হারানো প্রেম খোঁজে,
বুঝতে চেষ্টা করে কোথায় ভুল হয়েছিলো তার!
বুঝতে বুঝতেই জীবনে নেমে আসে অন্ধকার;

তারপর একসময় চিরতরেই হারিয়ে যায় প্রেমিক
যেভাবে হঠাৎ এসেছিলো ঠিক সেভাবেই হঠাৎ করে, হঠাৎ আসা প্রেম সাধারণত হঠাৎই মিলিয়ে যায়
কেও সাবধান হয় আর বোকারা ডুবে যায়
আর মেয়েটির প্রতিমুহূর্ত কাটে প্রেমিকের ফিরে আসার অপেক্ষায়;

আজো মেয়েটিকে মাঝে মাঝেই দেখি
সমুদ্রে পা ভিজিয়ে বসে থাকে
আর চেয়ে থাকে ঐ দূরে, শূন্যদৃষ্টিতে
আমি হঠাৎ হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করি
- কেন লবণ বাড়াচ্ছিস সমুদ্রের?

সে চমকে তাকায় আমার দিকে, বিহ্বল উত্তর দেয়
- ওপার থেকে যদি সে সমুদ্রের লবণ চাখে! 
- যদি আমার কান্না চেখে চিনতে পেরে ফিরে আসে!

আমি জিজ্ঞাসা করি
- ফিরে আসলেই তাকে গ্রহণ করবি?

এবার সে হেসে উত্তর দেয়
- না রে! আগে ভালোবাসার কাটাকুটি খেলব,
                     তারপর বড্ড সাধ, একবার তার লবণ চাখার;   

মেয়েটি আবার ঘুরে বসে
বোবা হয়ে চেয়ে থাকে দূর সমুদ্রের দিকে
হয়তো ভালোবাসা পোড়াচ্ছে তীব্র রোদে!

আমি আবার হেঁটে চলি দূর দূরান্তের পথে, বালিয়াড়ি ধরে। 

০১ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
হঠাৎ আসা প্রেম 
 - যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।





সম্পর্কের ইট ভাটা

সম্পর্কগুলো ইটের মত
যত্রতত্র পড়ে থাকে এখানে ওখানে
ওগুলোকে গাঁথতে হয় আবেগ নামক সিমেন্ট দিয়ে;

রক্তের সম্পর্কগুলো একই ভাটার ইট
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পুরোটা খোলা জুরে
দেয়াল গাঁথতে হয় ভালোবাসার সিমেন্ট ভরে
কেও পারে, দেয়াল শক্ত হয়
কেও বা ব্যর্থ হয়, ইটগুলো যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়;

ভালোবাসার ইটগুলো এক একটি এক এক ভাটার
এখানে মাঝে মাঝে মাত্র দুটি ইট জোড়া লাগে
প্রেমের আবেগে
আবেগের তীব্রতায় সিমেন্টের রকমফের
কোন কোন সিমেন্টে ছলনার বালুর আধিক্য
ফলশ্রুতিতে সম্পর্কের অপমৃত্যু
আবার নতুন আবেগে নতুন দু ভাটার দুটি ইট, 
প্রেমের আবেগে আবার নতুন ভাবে ফিট
তবে কোন কোন সিমেন্টে জোরালো আবেগ মাখা
টিকে গেলো তো একদম মিলেমিশে আঠা;

বিয়ের ইট দুটোও ভিন্ন ভাটার
কবুল সিমেন্টে বাইরে থেকে জোড়া লাগানো 
তারপর ধীরে ধীরে ভালোবাসার আবেগে সিমেন্টে পানি ঢালে
বিশ্বাসে কিওরিং করে
সিমেন্ট শক্ত হয়, বন্ধনের দেয়াল গড়ে
বেশিরভাগ দেয়াল শক্ত হতে হতে ঘর তৈরি হয়
তারপর অটুট বন্ধনের ইমারত,
আর অল্পকিছু জোড়া ইটে দুর্বল আবেগেরে সিমেন্ট পড়ে
কোন কোন ইটের জোড়া খুলে যায় ঝুরঝুর হয়ে
কোন কোন জোড়া জোর করে বাইরে থেকে দেয়া পানিতে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকে
আর অল্প কিছু জোড়া খানখান হয়ে ছিটকে যায় দুদিকে;

বন্ধুত্বের ইটগুলো এক এক ভাটা থেকে কুড়ানো
এক অদৃশ্য আঠায় জোড়া লেগে যায় কারণ ছাড়াই
কিছু কিছু ইট শুধুই জোড়া লেগে থাকে
কিছু কিছু ইট কারণ ছাড়াই শক্ত প্রাচীর গড়ে
আবার কোন কোন ইটগুলো চেষ্টার সিমেন্টেও জোড়া লাগানো যায় না

সম্পর্কগুলো নির্ভর করে কিছুটা ভাটার উপর
কিছুটা ইটের ওপর
আর বাকিটা সিমেন্টের ওপর;

শুধুই পিকেট বানায় খুব অল্প কিছু ভাটা
এরাই সম্পর্ক বুক দিয়ে আগলায়
এরাই পরিবারের মাথা;

কিছু কিছু রক্ত সম্পর্কের ইটগুলো সিমেন্টের দুর্বলতা সত্ত্বেও
বাইরের সকল ঝড় ঝঞ্ঝা সয়েও এক হয়ে থাকে
আবার ভালোবাসার শক্ত সিমেন্ট সত্ত্বেও
রক্ত সম্পর্কের ইটগুলোরই তুচ্ছ স্বার্থে চুরচুর আলাদা দিন কাটে; 

সিমেন্টের কোয়ালিটি নির্ভর করে আবেগের ঘনত্বের ওপর
ভালোবাসা, বিশ্বাস আর সততার কিওরিং এ দেয়াল শক্ত হয়
ঘর তৈরি হয়, গড়ে ওঠে ইমারত;
আবার মিথ্যা, ছলনা আর অসততার সিমেন্ট ইটগুলোকেই আলগা করে ফেলে
কিওরিং নষ্ট হতে হতে সম্পর্কের বাঁধন আলগা হতে থাকে
একসময় ঝুরঝুর দেয়াল ভেঙে দেয় সম্পর্কের খেসারত;

সম্পর্কের ইট ভাটায় আমরা সকলেই এক একটা ইট
কারো জন্ম পিকেট হওয়ার জন্য কারো শুধুই ইট কেও হয় ঝুরঝুরে মাটি
কেও আবেগের সিমেন্টে ইমারত গড়ে কেও অতি আবেগে জোড়া ভাঙে 
কেও পরিবার নিয়ে দিন কাঁটায় কেও বা একলা, একাকীত্বটুকুই সাথি।


০২ আগস্ট, ২০২০

#কবিতা
সম্পর্কের ইট ভাটা 
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।







 




নানা রকম দাম্পত্য

দাম্পত্য,
এক আজব সম্পর্ক;

সম্পর্কটা কেমন?
পতি পত্নী ছাড়া আর কেও জানে না;

কোন সম্পর্কে তাল লয় সুর সব ঠিক থাকার পরেও কোথায় জানি সূক্ষ্ম ফাটল!
কারো সাধ্য নেই বাইরে থেকে বোঝার
অথচ সূক্ষ্ম ফাটলে আলাদা বিছানা
আর নির্ঘুম সারারাত
বাইরের কেও জানতেও পারে না;

কোন সম্পর্কে সবকিছু ঠিক থাকার পরেও ইগো নামে এক ভাইরাস ঢোকে;
দুজনার একসাথে এক বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে থাকা
অথচ সম্পর্ক বিভাজনে ইগোর কোলবালিশটা
দুজনারই মন পোড়ে
অথচ হাতটা বাড়ানো হয় না ইগোর ওপারে
দাম্পত্য গুমরে কাঁদে কোলবালিশের দু পাড়ে; 

কিছু সম্পর্ক তো পুরোই অদ্ভুতুড়ে, 
সারাদিন দুজনার মুখেই মরিচের ঝাল
অথচ কেও কাওকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না
আর রাতে দুজন দুজনকে জড়িয়ে নির্ভরতার ঘুমে
ভালোবাসাটা বাইরে থেকে বোঝাই যায় না;

কারো কারো অবস্থান দুজন দুজন থেকে অনেক অনেক দূরে
জীবিকার প্রয়োজনে
তবুও একজন আরেকজনের মনের ঘরে
এর আকাশে চাঁদ তো ওর ঘরে জ্যোৎস্না
এর আকাশে বৃষ্টি তো ওর মনে কান্না
ভালোবাসা? হিসেব বোঝে না;

আবার কোন সম্পর্ক পুরোটাই বেসুরা
হাঁড়িকুঁড়ি ঝনঝন থেকে খাট আলাদা হতে হতে
ঘর আলাদা
সন্তান আলাদা
তারপর আলাদা হয়ে যায় দাম্পত্য,
আজকাল খুব হচ্ছে;

এই যে দাম্পত্যে কলহ ঘরে ঘরে!
অথচ একজনের জন্য আরেকজনের মন কিন্তু ঠিকই পোড়ে
তবুও ইগো চলে আসে সম্পর্কের ওপরে
আর অভিমানগুলো সম্পর্ক ছাপিয়ে;

এক একজনের দাম্পত্য এক এক রকম
আর দাম্পত্যের সম্পর্কগুলোও নানা রকম
কখন যে হাসায় আর কখন যে কাঁদায়! কেও বলতে পারে না,   
কারোটা রংধনু রঙিন কারোটা সাদাকালো
কারোটা সুখের কারোটা দুঃখের 
কিছু হাসায় কিছু কাঁদায়
কিছু ভালোবাসায় আর কিছু হরেদরে জীবন পার করে যায়,
কারোর সাথে কারোটা মেলে না। 

৩১ জুলাই, ২০২০

#কবিতা
নানা রকম দাম্পত্য
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।


নানা রঙে রঙিন

কত রঙের মানুষ দেখি
কত রঙের মন!
আমিও বদলাতে শিখেছি
গিরগিটির মতন

খোলস বদলায় গিরগিটি
প্রয়োজন মতন
আমিও গিরগিটি সাজি
যখন তখন

খোলস বদলায় সাপ
প্রয়োজন হলে
আমার দাঁতেও বিষ
ছোবল খেলে

গিরগিটি আর সাপ
খুবই তুচ্ছ প্রাণী
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মানুষ 
নিজেকে দেখে জানি

একই জাতের সকল পশু
একই আচরণে বন্য
শত মানুষের শত রূপ
সবাই সবার থেকে ভিন্ন

পশুকুলে সবচেয়ে হিংস্র
মানুষ নামের পশু
অথচ জন্মের সময়
সকলেই অবলা শিশু

অর্থ অনর্থের মূল 
রঙ বদলায় মানুষ
সম্পর্কে অর্থ মানেই 
পুড়ে যাওয়া ফানুস

কতরকম সম্পর্ক দেখি
রঙের দুনিয়ায়
স্বার্থের প্রয়োজনে
মুহূর্তে রঙ বদলায়

মুহূর্তেই সম্পর্ক তৈরি 
কত তার ধরন!
আবার মুহূর্তেই বিচ্ছেদ
তুচ্ছ কোন কারণ

প্রেমের কত রঙ দেখি
প্রেমিকের কত ঢং
তুচ্ছ কারণে প্রেম বদলায় 
প্রেমিকা ক্ষণে ক্ষণ

রংবেরঙের ভালোবাসা
বেশিরভাগ শরীর নির্ভর
শরীরের চাহিদা না মিটলে
হরেদরে ভাঙছে ঘর

সম্পর্কও খোলস বদলায়
সাপের মতন
মানুষ খোলস বদলায়
স্বার্থের প্রয়োজন

নানা রঙের মানুষ দেখে
আমিও হচ্ছি রঙিন
সাপ আর গিরগিটি সেজে
বেশ কাটিয়ে দিচ্ছি দিন।


২৯ জুলাই, ২০২০

#কবিতা
নানা রঙে রঙিন  
 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।




ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব ও প্রেম

কোন একদিন বন্ধু ছিলো তারা
ফেসবুক নামক ভার্চুয়ালে
অনেক তাদের খাতির ছিলো
যেন দুই ভাই গলে গলে

একদিন হঠাৎ নেটের জগতে
এক সুন্দরীর আগমন ঘটে
বন্ধু দুজন একসাথে তারা
সুন্দরীর প্রেমে পড়লো বটে

তারপর কোন একদিন ম্যাসেঞ্জারে
দু বন্ধুর কথোপকথন
একসাথেই তাদের অনুরক্তির কথা
ম্যাসেঞ্জারের দু প্রান্ত দুজন

দুজনার ম্যাসেঞ্জারে একসাথে ভাসে
অপর বন্ধুর মনের কথা
থতমত খেয়ে দু বন্ধু দু প্রান্তে
হঠাত নির্বাক দু স্রোতা

এক নারীতে দুজন মজেছে
দুজনের মনেতেই পাল
প্রেমের পালেতে দুদিকের হাওয়াতে
বন্ধুত্ব বড্ড নাজেহাল

বাক বিতণ্ডায় ম্যাসেঞ্জার গরম
এ বলে তার দোষ
আমি আগে প্রেমেতে মজেছি
তুই এখন সরে বোস

ওদিক থেকে উত্তর যায় 
সুন্দরী আমার প্রণয়িনী
তুই বজ্জাত তুই ধোঁকাবাজ 
যেন রণাঙ্গনের কাহিনী

একটা দুটো বিতণ্ডা হতে হতে
ভরে ওঠে ম্যাসেঞ্জার চ্যাট
গরম কথায় দুজন দুজনকে
একসাথে ব্লক মারে, ধ্যাত!

সেই থেকে তারা দুজন আলাদা
বন্ধুত্বটাই গেলো হারায় 
সুন্দরী কিন্তু দুজনার সাথেই
চুটিয়ে গল্প করে যায়

সুন্দরীর ম্যাসেঞ্জারে রাত জেগে জেগে
ত্রিমুখী চ্যাট চলে
দুজন একসাথে কোন এক শুভরাতে
সুন্দরীকে ভালোবাসি বলে

হতভম্ব সুন্দরী থমকে গিয়ে
দুজনকে দুহাত ঝাড়ে
রাগাহ্নিতা বলে বন্ধুত্বের বন্ধনে
প্রেম হয় কি করে!   

অনেক অনুনয় ম্যাসেঞ্জারের দুদিকে
সুন্দরী তখন বড্ড বিপাকে
বুঝিয়ে দুজনকে বিরক্ত হয়ে
দুটোকেই ব্লক করে দেয় ফেসবুকে

বন্ধুত্বের মাঝখানে নারী আসলেই
সম্পর্কের অবনতি
সুন্দরীর কাছে ব্লক খেয়ে দুজন
বুঝতে পারে পরিণতি

ভার্চুয়াল প্রেম বড্ড ঠুনকো
মনের গোপন অভিলাষ
বন্ধু বন্ধু'তে ফাটল ধরায়
থাকে বন্ধুত্বের লাশ

পুরনো বন্ধু দুজন দুজনকে মিস করে
নিজেদের ভুলগুলো বুঝে 
সব ভুলে তারপর পুরনো বন্ধুত্ব তারা
নতুন করে পায় খুঁজে।

২৮ জুলাই, ২০২০

#রম্য_কবিতা
ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব ও প্রেম 
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।


















কে উত্তর দেবে?

সময়ের গাড়ি কি খুব দ্রুত চলে?
নাকি ঘষটে ঘষটে!
কিছু একটা হবে, তবে সময় গড়াচ্ছে;

দেখতে দেখতে প্রায় চারমাস হয়ে গেলো
গৃহবন্দী চারমাস, ইচ্ছে করে কি?
উঁহু! ঐ যে কি এক করোনা ছেয়ে গেলো পৃথিবী জুড়ে!
এ তারই সূত্র ধরে;

প্রথম দুমাস খুব ভয়ে ভয়ে
তারপরের মাসটায় একবার দুবার বের হওয়া হয়েছিলো নিত্য প্রয়োজনে
তারপরের মাসটায় যেন অনেকটা ভয় কেটে যাচ্ছে,
জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে;

তাই কি?
কারো কারো কাছে হয়তো কিছুটা স্বাভাবিক!
যাদের চাল চুলোর হিসেব করতে হয় না
যারা চাকরি হারায় নি
কিংবা যাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির পরিমাণ যৎসামান্য;

আর যারা চাকরি হারিয়েছে?
যাদের ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে?
যাদের সঞ্চয় তলানিতে ঠেকেছে?
তারা বুঝছে,
হ্যাঁ, তারাই বুঝছে সময় কি দৌড়চ্ছে না থমকে গেছে!

একটা চাকরি হারানো মানে একটা পরিবার পথে বসে যাওয়া,
একটা ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে যাওয়া মানে আট দশটা পরিবারের হতাশা,
তারাই বোঝে যারা ভুক্তভোগী
আর বাকিদের সময় ক্ষেপণ;

কারো সময় থমকে আছে, কারো দৌড়চ্ছে
ক্ষুধা কি থেমেছে পেটের?
খরচ কি কমেছে কোথাও?
এই যে দৈনন্দিন ভাতের যোগান
এই যে সন্তানের পড়ালেখা
নিত্য প্রয়োজনীয় এটা, ওটা
এই যে এখানে ওখানে হন্যে হয়ে কাজ খোঁজা!
এগুলোতে পয়সা লাগে না?

পয়সা?
সে তো তলানিতে;

তারপর!
কে উত্তর দেবে?

২৭ জুলাই, ২০২০

#কবিতা
কে উত্তর দেবে?
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।




মেনে নেয়া

আমি অনুভবে খুব বুঝি, কে কে যেন প্রায়শই আমার খোঁজ করে
প্রতিদিন বহু বহুবার করে উঁকি মারে আমার ওয়ালে, 
হয়তো আমাকে বুঝতে চেষ্টা করে কিংবা হয়তো অন্য কিছু
আচ্ছা! আমি কি নিজেই আমাকে বুঝতে পারি?
সে বুঝবে কিভাবে?
ভালোবাসে কি?
কে জানে!

এই যে দূর দূর থেকে অনুভব! আর দূর দূরান্তের অনুভূতি!
বড্ড ব্রীড়া দেয় আজকাল, কখনো পীড়া,
কোন এক সময় ভালো লাগতো হয়তো
কিন্তু বদলে যাওয়ার পরে অনুভূতিগুলোই পীড়া; 
ভালোবাসাটা বোঝা যায় খুব সহজেই
বদলে যাওয়াটা কি মেনে নিতে কষ্ট হয়?
কই! আমার তো কষ্ট হয় নি বদলাতে!
আগে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগতো
এখন বৃষ্টি দেখতেই বেশী ভালো লাগে
আগে নদী দেখলেই ভেসে যেতাম, বয়ে যেতাম
এখন শুধুই নদীর বয়ে যাওয়া দেখি
আগের অনুভূতি ছিলো ঠোট চুমুতে
এখন চা চুমুতেই আনন্দ পাই বেশি 
আগে টান ছিলো ভালোবাসার
এখন মৃত্যুর টানটাই বেশি;

আজকাল দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছে আমার অনুভূতিহীন
অথচ একটা সময় ছিলো ভার্চুয়ালে তুই,আমি, ও, সে আর তারা ছিলো প্রতিদিন;
জীবনটাই পরিবর্তনশীল হোক সে ভার্চুয়ালে কিংবা সত্যিকার জীবনে,
পরিবর্তনটা সবাই মেনে নিতে পারে না
মেনে নিতে পারে না প্রিয়জনের মৃত্যু
অথচ মেনে নিতে হয়,
তাই না? 

বদলে যাওয়াটাও একপ্রকার মনের মৃত্যু,
সবাই বোঝে না।


২৬ জুলাই ২০২০

#কবিতা
মেনে নেয়া 
 - যাযাবর জীবন  

শালার ডোনেশন

এক সময় কোন এক অনলাইন কবিতার গ্রুপ থেকে নোটিশ এলো -
 বইমেলা উপলক্ষে কবিতা আহ্বান,
আমি এ জাতীয় আহ্বানে সাড়া দেই না কখনো;

এক সময় গ্রুপ এর নেতা গোছের একজনের কাছ থেকে আবেদন এলো
 - ভাই, একটি দুটি কবিতা দেন
   গ্রুপ এর কিছু বাছাই করা লেখকের কবিতা নিয়ে বই ছাপাবো 

আমি বললাম
 - ভাই, আমি কবিতা লিখতে পারি না

উত্তর এলো
 - খুব ভালোই পারেন, গ্রুপে তো ঠিকই দেন
 বই এর জন্য একটি দুটি দেন;

আমি প্রেমে গদগদ হাবিজাবি একটি লেখা পাঠিয়ে দিলাম;


কয়েকদিন পর মেসেজ এলো
 - ভাই অভিনন্দন, আপনার কবিতা সিলেক্ট হয়েছে

আমি বললাম
 - খুব ভালো, তা এখন কি করতে হবে?

জবাব এলো
 - অনেক খয় খরচায় বিষয় তো! তাই সবার কাছ থেকে ডোনেশন চাইছি;

একটু অবাক হয়ে বললাম
 - ডোনেশন নিয়ে কবিতার বই? তা কত ধরেছেন?

ওরা পাহাড় প্রমাণ এক দাম হাঁকল
 - আমি বললাম এ দিয়ে তো পুরো একটা বই বের করা যায়
   আর এক কবিতার জন্য এত ডোনেশন?

দু দিন পরে আবার মেসেজ আসলো
 - ভাই কিছু ডোনেশন দেন

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কত?

এবার টিলা ডাকল
 - আমি বললাম
 - ভাই বাদ দেন

আরো দু দিন পরে আবার ফোন
 - ভাই অল্প কিছু দেন

আমি বললাম
 চিন্তা করে দেখি

দুদিন আমার দিক থেকে কোন সাড়া না পেয়ে একটা মেসেজ এলো
 - ভাই আপনার লেখাটা কবিতা হয় নি

আমি উত্তর পাঠালাম 
 - ভাই আগেই তো বলেছিলাম, আমি কবিতা লিখতে পারি না;

তারপর কোন একদিন দেখি গ্রুপে ব্লক হয়ে গিয়েছি
 - আমি মনে মনে হেসে বললাম, শালার ডোনেশন!   


২৫ জুলাই, ২০২০

#কবিতা
শালার ডোনেশন
 - যাযাবর জীবন 



  

ক্ষুধার ব্যঞ্জনবর্ণ

কয়েদী পেট পাথর চাপা ক্ষুধা 
খয়ের খাঁ জীবন কেটে যাচ্ছে বেশ
গরম হলেই কি আর গরম দেখানো যায়?
ঘষটে ঘষটে জীবন পার, আমজনতার
ঙ রঙ দেখে দেখে ক্ষুধায় চোখ অন্ধকার; 

চাটার মানসিকতা চারিদিকে 
ছা পোষা একঘেয়ে জীবনে 
জিহ্বা সংযত না করতে পারলেই
ঝড়ের ঝাপটা বড্ড বেশী পিঠের পরে
ঞ’র কুজ কি আর ঝঞ্ঝা সামলাতে পারে?

ট্যাঁকে জোড় আছে কজনার?
ঠকছে হরেদরে আমজনতা
ডামাডোল বাজিয়েই আজকাল ডাকাতি চলে 
ঢাক বাজিয়ে ছুড়ি চালায় গলে
ণত্ব বিধান না মেনেই ঋণে জর্জরিত সকলে;

তথাকথিত কিছু তঞ্চক সমাজের মাথা
থামাবে কে তাদের তঞ্চকতা?
দায়িত্ব কথাটা আজকাল ডিকশনারির শোভা
ধকল সইতে গেলেই বড্ড হ্যাপা
নিরাশায় ছাওয়া ঐ মুখগুলো আর ক্ষুধা; 

পাশ কাটানো মানসিকতা সবার মাঝেই কমবেশি
ফিকির করতে হয় আগে পেটের
বাঁকা পথেই যখন পকেট ভারী
ভক্তি গদগদ চেহারায় কি চাটাই চাটে উরি! 
মধু মুখ দেখেই সন্তুষ্ট ওপরওয়ালা ভারি;

যেনতেন ভাবেই সাধারণের দিনাতিপাত
রবার ঘষে ঘষে দুঃখগুলো মোছা
লোভ কার না আছে সুস্থ জীবনের? 
শুধু ক্ষুধায় অন্ধকার চারিধার 
ষড়রিপু রক্তে আর যত ব্যভিচার;

সবকিছুর মূলেই ক্ষুধা
হাসি ফোটে পেট ভরলেই
ড় তে ভরপুর ক্ষুধার কামড় 
ঢ় আসলেই রূঢ় বাস্তব 
য়’তে ক্ষুধায় কাতর জনগণ 
ৎ তে অকস্মাৎ মরণ 
ং ক্ষুধার অংশ 
ঃ তে দুঃখ কেন্দ্রবিন্দু 
“ঁ” আদতে ক্ষুধার চঁন্দ্রবিন্দু। 


২৪ জুলাই, ২০২০

#কবিতা
ক্ষুধার ব্যঞ্জনবর্ণ
- যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।





ভুলে ভরা জীবন

ওহে জীবন, একটু দাঁড়াও না!
তোমাকে একটু রিওয়াইন্ড করে দেখি।
ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃত অনেকগুলো ভুলে ভরা এ জীবন।
যদি পারি শুধরে নেব আর না হয় ভুলগুলোই আরেকবার পাতা উল্টে উলটে দেখব।
কিছু ভুল হয়তো আর শোধরানোই যাবে না
এখনো হয়তো সময় আছে কিছু ভুল শুধরে নেবার।

যদি মনের আয়নায় ধরা পড়ে সেগুলো
এখনো হয়তো শুধরে নেয়া যাবে ভুলগুলো।

আমি জানি, খুব ভালো করেই জানি; জীবনের ফিতে রিওয়াইন্ড করা যায় না।
তবুও, পিছু ফিরে দেখতে ক্ষতি কি?
হয়তো ভুলগুলো নতুন করে চোখে ঠেকবে, জীবনের যত সব ভুল।

ঐ যে দাদা দাদী, নানা নানী শুয়ে আছে মাটির ঘরে

অন্ধকার
আলো নেই কোথাও
বাতি দেবার কি কেও নেই?

আছে, তবে দেয়া হয় না
ইচ্ছে করেই কিংবা অজানা থাকার কারণে।

তাদের সন্তানেরা, সন্তানদের সন্তানেরা, তাদের সন্তানেরা যতবার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে
যতবার আসসালাতু আসসালামু আলাইকুম ইয়া এহলাল কাবুরে বলে সালাম দিবে
ততবার তাদের অন্ধকার ঘরে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বলে উঠবে।

জানি
আমরা জানি
তবুও ভুল করে ভুলে যাই
কিংবা সময়ের আজকাল বড্ড অভাব পড়েছে আমাদের
তাই সময় দেয়া হয় না তাঁদের।

ভার্চুয়াল জগতটাকে বড্ড বেশি সময় দিতে হয়। দু কানে দুটা মোবাইল তার আবার চারটা সিম;

বড় বেশি ব্যস্ত
ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে কথা বিনিময়
আই প্যাড কিংবা ল্যাপটপ সারা দিন।

সেই কবেই তো স্মৃতি থেকে ধুয়ে মুছে দিয়েছি
দাদা দাদীর কোলের স্পর্শ তাদের স্নেহ, অনুভব ভালোবাসার;
এখন এত সময় কোথাও মরে যাওয়া বুড়োবুড়ির খোঁজ নেবার!

কখনো জেগেছি কি মনে একবার?
ঐ অন্ধকার ঘরে যেতেই হবে একদিন আমার।
আশায় সেদিন পথ চেয়ে থাকব আমার সন্তানদের,
তাদের সন্তানদের, তাদের সন্তানদের;
যদি আসে কেও তারা একবার!!!


///////////

একটু সময় হয় কি আমাদের আজ?
বুড়ো বাবা মায়ের পাশে দুদণ্ড বসার।

কেমন আছে, কি খায় না খায় কে খবর রাখে?
কাজের লোক তো রাখা আছে অর্থের বিনিময়ে
দায়িত্ব পালন তো হচ্ছেই তবে আর আমার বোঝার দরকার কি আছে?

তাদেরও তো আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে জাগে।
একটু কি মোবাইলটা বন্ধ করে মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারি না?

১০মিনিটের জন্যই না হয়
২৪ ঘণ্টায় একবার

বুড়ি মায়ের যে বড্ড ইচ্ছে করে ছেলেকে জড়িয়ে রাখতে কোলের পরে;
কে বোঝে?
মোবাইলের বোতাম টেপা বড্ড জরুরী

বাবার পাশে দু দণ্ড বসে তার খবর নেবার সময় আছে কার?
৫ মিনিটই না হয় ২৪ ঘণ্টায় একবার!!

কি অমানুষিক কষ্ট করে দশ মাস পেটে ধরে পৃথিবীতে এনেছিল মা
একটু অসুখ হলে সারা রাত মাথার পাশে একঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো বাবা
উদয়অস্ত পরিশ্রমে নিজেরা খেয়ে আর না খেয়ে আমার উদর ভরে রাখতেন দুজনা
আজ কি সুন্দর প্রতিদান দিচ্ছি তাদের একা ফেলে রেখে, ঘরের কোনে
কেও কেও আমরা তো আরো এক কাঠি বারা, ঝামেলা মনে করে ওনাদের রেখে আসছি কোন বৃদ্ধাশ্রমে।
স্বয়ং ওপরওয়ালা যেখানে প্রতিদান লিখে রেখেছেন পর জনমে, বাবা মায়ের পায়েরতলে
সেখানে বেহেস্ত ঘরে ফেলে আমি বোকার রাজা কোথায় না ঘুরে ফিরি এ জনমের পার্থিব সুখ সন্ধানে
আর বৃদ্ধ বাবা মা পড়ে থাকেন খুব অবহেলায় এখানে ওখানে।


কখনো ভেবেছি একবার?
আমিও বৃদ্ধ হব একদিন;
আমার সন্তান কি সময় দেবে আমাকে সেদিন?
নাকি একই প্রতিদান তারাও দেবে আমায় যা আমি দিচ্ছি নিজের বাবা মা'কে।

////////////////

এই যে জীবন দাঁড়াও না রে ভাই একটুখানি
একটি কথা শুনে যাও
না হয় খুব অল্প কিছু সময়ের জন্য
খুব অল্প কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে।

আমি জানি তুমি অনেক ব্যস্ত; সময় তোমার আগে আগে দৌড়চ্ছে
তুমি রেসের ঘোড়া
ছুটে চলেছ টগবগে
কে কার আগে দৌড়ে যাবে?

কোথায় ছুটেছ তোমরা জানো কি গন্তব্য?
নাকি অজানার উদ্দেশ্যে পাগলা দৌড়ের মহড়া
কি জানি বাপু!
আমি হয়তো বোকা
তোমাদের ঘোড়দৌড় বুঝি না।

কত মানুষই না এসেছে আমাদের জীবনে
কত বন্ধু বান্ধব, কত আত্মীয় স্বজন
এদের মাঝে কেও পরিচিত, কেও অপরিচিত,
কারো সাথে বা খুব অল্প পরিচয়।
কারো সাথে হয়তো একদিনের দেখা, কারো সাথে আলাপ মুঠোফোনে কিংবা ল্যান্ডলাইনে।
এদের মাঝে কেও রিয়াল কেও ভার্চুয়াল।
কত পদের,
কত বর্ণের,
কত রঙের,
কত ঢঙের মানুষের সাথেই না পরিচয়।

এদের মাঝেই কেও জীবনে থাকে জীবনের সাথে মিশে
কেও ছেড়ে যায় স্বার্থের কারণে,
কেও রয়ে যায় স্বার্থ হাসিল করতে।

প্রতিদিন জীবন ধারায় কত মানুষ নতুন করে যোগ হচ্ছে;
কাজে আর অকাজে,
জীবনের প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে।
কত মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে অবহেলায়।
পেছন ফিরে দেখি কি আমরা তাদের, হারিয়ে ফেলার পরে কি ভাবায়?
শুধু ছুটে চলা আর ছুটে চলা ছুটে চলা
বল্গাহরিণের মত।

//////////////////////

আজকাল দিনকাল কেমন জানি হয়ে গেছে
আমি ঠিক বুঝি না
হয়তো আমি পুরনো
কিংবা আমার জ্ঞান বুদ্ধিগুলো খুব সেকেলে।

আজকাল ছেলেমেয়েগুলোকে দেখি সারক্ষণ ভার্চুয়াল জগতে
কি সকালে ঘুম থেকে উঠে
কি বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে
কি সন্ধ্যের অবসরে
কি বা রাতে ঘুমের আগে;
হয় ল্যাপটপে নেটের জালে
নয় ডেস্কটপে খেলার ছলে
ইঁদুর হাতে বড্ড মনোযোগে
চোখের পলক পড়ে না মনিটর থেকে
আর না হয় মোবাইলের বাতি জ্বলে
ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমের আগে পর্যন্ত;

এদের খেলা বলতে ল্যাপটপ
এদের পড়া বলতে আইপড
এদের বন্ধু বলতে মোবাইল
এদের খাওয়া দাওয়া ধ্যান জ্ঞান মুরগীর রেসিপি
ভাজা কিংবা ঝাল ছাড়া তরকারি;

আমাদের মাঠে ঘাটে দৌড়ে বেড়ানো ছেলেবেলা তবে কি ভুল ছিল?

/////////////////////////////////////////

আজকালকার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কগুলো আমি ঠিক বুঝি না
হয়তো আমি এ যুগের কেও না
কিংবা দাদা-দাদী, নানা-নানী, বাবা-মা, চাচা-চাচি সম্পর্কগুলো ভুল দিশায় চলছিল
তাই হয় তো বড্ড অবজ্ঞায় তারা পুরনো কালের মানুষ
আজকালকার নতুন জমানায় কিংবা আজকালকার মানুষগুলোর কাছে।

এখনকার কিছু স্বামী-স্ত্রীর বসবাস একখাটে
অনেক বড় খাট, ঘরের এপার আর ওপার জুড়ে
মাঝে কোলবালিশের বেড়া
দু-জন দুপাশ ফিরে;
আর কিছু স্বামী-স্ত্রীর বসবাস দু-ঘরে দুখাটে
একজনের স্পর্শে অন্যজনের যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে;

একজনের হাতে আই-ফোন আরেকজনের এন্ড্রয়েড
রাতের আঁধারে ঘরের বাতিটা ডিম করে জ্বালানো
দুজনই খুব ব্যস্ত ফেসবুক বন্ধনে।

একজনার হয়তো আজ জন্মতিথি
অন্যজন সেজন্য খুব বিজি, সবার আগে হ্যাপি বার্থ ডে উইশ জানানোর আকুতি
কোথায়? - ফেসবুকে;
অথচ প্রিয় মানুষটি শুয়ে আছে কোলবালিশের ওপাশে, কিংবা পাশের ঘরে
হাত বাড়িয়ে প্রিয়ার সঙ্গ পাওয়া হয় না অথচ ভার্চুয়াল সঙ্গের জন্য মন কেমন করে
নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস।

বড্ড আজব
আমার বোধগম্য নয় আজকালকার স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক।
কিংবা হয়তো এটাই এখনকার রীতি, আমিই পুরনো হয়ে গেছি।
দিনকাল যেভাবে এগিয়েছে, কবে হয়তো দেখব ভার্চুয়াল মেলামেশাতেই সন্তান চলে এসেছে
নতুন নতুন কত কি আবিষ্কার, পুরানো মানুষদের অত কিছু জানার কি আছে দরকার;
কিংবা হয়তো শারীরিক মেলামেশার দরকারই পড়ে না - ফেসবুক আছে না?

ধরা ছোঁয়ার বাস্তবের মানুষগুলোকে পায়ে ঠেলে কি নেশায় আমরা ঘুরি বেড়াই ভার্চুয়াল জগত ঘিরে?

ভার্চুয়ালের আগ্রাসনে আজ কত শত সংসার উচ্ছন্নে।
ভাঙ্গনের চিত্র দেখি নিত্যই চারদিক চেয়ে।


////////////////////

আজকালকার পরিবার,
যদিও একঘরে বাবা-মা বাস করে তবুও তাদের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব
আর নয়তো দুজন দুঘরে একই ছাদের নিচে,
ভাই-বোন এক এক জন এক এক দিকে
কেও বাসায় কিংবা বন্ধুর বাসায় আর নয়তো আউটিংএ
কোথায়?
বাবা-মার জানার নেই কোন দরকার;
আরে ফেসবুক আছে না? স্ট্যাটাস আপডেট দেখে নিলেই হয়
যদি মায়ের একটুখানি অবসর হয়,
তারপর আবার নিজের ভার্চুয়াল জগতে, ভার্চুয়াল বন্ধু বান্ধবের সাথে;
বাবার এত সময় কোথায়?
ভাগ্যিস পেটের টানে খুব মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে যায় খাবার টেবিলে
না হলে হয়তো আর কিছুকাল পড়ে বাবা-মা, ভাই-বোনের দেখা হবে উৎসব পার্বণে।

কি যুগ পরেছে রে হায়
কারো সময় নেই কারো খবর নেবার
এখন হয়ে গেছে ভার্চুয়াল সংসার, ভার্চুয়াল পরিবার।

///////////////////////////

একদিন এর মাশুল গুনতেই হবে;
দেখো তোমরা, খুব দেরী না হয়ে যায়

ওহে ভার্চুয়াল জীবন
একটু দাঁড়াও না রে ভাই!
একটু রিওয়াইন্ড করে জীবনটাকে দেখি না একবার!
ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃত অনেকগুলো ভুলে ভরা এ জীবন।
যদি পারি শুধরে নেব আর না হয় ভুলগুলোই আরেকবার পাতা উল্টে উলটে দেখব।
হয়তো এখনো সময় আছে কিছু ভুল শুধরে নেবার।






ছুঁড়ে ফেলা প্রতিদান

ভাই বন্ধু কাছের লোকজন
এককালেতে ছিল সবই রে
পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন
চারিদিক যে ছিল রে ঘিরে
কালের নৌকোয় গা ভাসিয়ে
একে একে চলে গেলো অ
অনেক অনেক দূরে......
কেন?
জানি না
কেন
জানি না
হয়তো জানি 
তবু আমার মন মানে না।

সেদিন সুদিন ছিল ঘিরে
অর্থ ছিল কাড়ি কাড়ি
সবার কাছেই মূল্য ছিল
সবাই তখন চারিদিকে
আমাকেই যে ঘিরে ছিল
কালেররররর বিবর্তনে
ভাগ্য দেবী মুখ ফেরালো
যে মানুষগুলো ছিল ঘিরে
আমায় ছেড়ে একে একে
অনেক দূরে গেল ছেড়ে
হায়রেএএ মাআআনুষসসস
হায়রে হায় হায়রে এ মানুষ।

পথের ফকির আমি হলাম
তবেই যেন মানুষ চিনলাম
সবাই হলো টাকার গোলাম
সব হারিয়ে এই বুঝলাম
শূন্য যেদিন পকেট আমার
বন্ধু স্বজন সব হারালাম
হায়রে মানুষ
এ তুই কি করলি আচার
তোদের এটা কেমন বিচার
মনুষ্যত্ব পথের ধুলায়
মানুষ ওরে সালাম তোমায়।

দুর্দিন কাটে অনাহারে এ এ
অসুখ দেহে ডানা মেলে
বন্ধু বান্ধব তাই দেখে
ঐ আকাশে গেল উড়ে
কোথায়  
কোথায় 
কোথায় 
স্বার্থ যেথায়......

স্বার্থ যেথা বন্ধু সেথা
সম্পর্কের মূল্য কোথা
প্রশ্ন করি যারেই আমি
মুচকি হেসে হেঁটে চলে
ভেবে পাই না শ্রেষ্ঠ জাতি
নিজেরে এরা মানুষ বলে।

আজকে আমি বুঝতে পারি
স্বার্থের ইটে গড়ে মাকান
কেও কারো নয় ত্রিভুবনে
মানুষ খোঁজে টাকার দোকান
কাজ ফুরোলে যে যার পথে
চুষে নিয়ে ছিবড়ে করে
হয়না দ্বিধা একটুখানি
ফেলে দিতে ডাস্টবিনেতে
হায়রে মানুষ
হায়রে হায় হায়রে মানুষ।

তালা বন্ধ আমার দোকান
আর কিছু নেই অবশিষ্ট
যদি কিছু চেয়ে ফেলি
হায়রে স্বজন দেখায় পৃষ্ঠ
অবাক আমি চেয়ে দেখি
খোঁজে তারা নতুন দোকান
যেথায় ভরা অনেক মালে
ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপরে
স্বার্থ গুলো হাসিল হলে
যে যার পথে হেঁটে চলে
পিছে ফিরে একবার না চায়
কি পরিণয় দোকান খানায়
ওপরওয়ালা নিয়া সময়
বানাইছে যে স্বার্থের কারিগর
মানুষ বলিস কারে তোরা
এই নাকি রে তোর পরিচয়
চাই না আমি এমন মানুষ
জ্বালিয়ে পিদিম স্বার্থ ফানুস
যা উড়ে যা অনেক ওপর
খোদা-তালার শ্রেষ্ঠ মানুষ
হায়রে মানুষ
হায়রে হায় হায়রে মানুষ।


টাকা কড়ি বাড়ি গাড়ি
দুই দিনেরই বাহাদুরি
আমায় দেখে শিক্ষা নে রে
পথের ফকির রাস্তায় ঘোরে
কাল যে ছিল আমার সময়
তোরা তখন ছিলি ঘিরে
উড়িয়েছি যে তোদের পিছে
আমার যত ছিল ঢেলে
বেহিসাবি জীবনেরই
প্রতিদান আজ যে মেলে
বুঝি নি যে জীবন ফুলে
মধু শেষ হয়ে গেলে
মৌমাছি সব উড়ে চলে
নতুন ফুলের সন্ধানেতে
ছিবড়ে হওয়া নিঃসাড় ফুল
ঢলে পড়ে মৃত্যুরই কোলে
ছিবড়ে করে আমায় তোরা নিয়ে গেলি প্রাণ
অনেক বড় বন্ধুত্বের দিলি রে প্রতিদান।


তুমি, তুমি আর তুমি


নিঃস্তব্ধতা খেলা করে কোলাহল মুখরিত ব্যস্ত নগরীর ভাজে ভাজে
কোথায় যেন ডাকাতিয়া সুরের করুন আর্তনাত কেঁদে ফেরে
আছরে পড়া কাঁচের ঝনঝন শব্দে ভেংগেচুরে তচনচ করে নিতে
মনের গভীরে বাসা বেঁধে থাকা ওই নিঃস্বংগতা ভেঙ্গে দিতে।

নিঃস্বংগতা রয়ে যায় হাজার মানুষের ভিরের মাঝে মাঝে
কে যেন হাত বাড়িয়ে ডাকে আয় আয় রবে অচিন কোন ভূবন থেকে
ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিয়ে চায় যেন মনের ভেতরেতে গেড়ে বসে
হ্রদয়ের গভীর হতে টেনে হিচরে নিঃস্বংগতাগুলি বের করে নিয়ে এসে।

শুন্যতার হাহাকার কথা কয় এক জীবনের সকল পাওয়ার মাঝে থেকে
না দেখা সব স্বপ্নগুলো তবু জেগে রয় নিদ্রাহীন আঁখির পলকে
হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যেতে চায় কে যেন আমায় নিজের করে নিতে
না পাওয়া সব বেদনাগুলির মাঝে বসবাসরত সব শুন্যতাগুলি ভরে দিতে।

একাকীত্ব বয়ে চলে শত নদীর টন টন পানির স্রোতের টানে টানে
না বলা কথামালাগুলো মনে গেথে রয় ফুলোমালা গাঁথা হলো না বলে
সুঁই এ সুতো ভরা হলে ফুলের সন্ধানে কোন পথ পানে ছুটে চলে আনমনে
আমার একাকীত্বের কবর দেয়া হবে বলে ফুলগুলো সব গাছ হতে পেড়ে আনে।





শিরিষ কাগজে ঘসা স্কাল্পচারের মূর্তি খানি দেখি
অনভ্যাস্ত হাত বুলিয়ে চলি ভাস্কর্যের গায়ে
কোন এক বোদ্ধা খোঁজে কিংবা আমি খুঁজে বেড়াই
তোমার স্পর্শ ওই ভাস্কর্যের মূর্তির গায়।

রাতের কোলাহলে ব্যস্ত রাস্তায় কোন পথে হেঁটে চলি
আলো দিতে থাকে মাঝ রাতের সোডিয়াম লাইটগুলি আমার গায়
হলুদ আলোগুলি খুঁজে ফেরে তোমাকে কিংবা আমার আঁখিদুটি
হারিয়ে যাওয়া তোমাকে যদি পাই তাই হেঁটে যাই ক্লান্ত পায়।

অন্ধকারের তারার ভিরে জ্বলে ওঠে চাঁদ আকাশে আলো দিতে
খুঁজে পেতে তোমাকে ওই অন্ধকারের ঘুটঘুটে পথে
অন্ধকারের তারা খোঁজে কিংবা জোনাকি আলো জ্বেলে
তোমার রূপের আলোর দিশা গভীর অন্ধকারের ভিরে।

একটু একটু করে যেব অবয়ব হয়ে ধরা পড় তুমি
ছায়া ছায়া হিম কুয়াশার ওপার তীরে
তোমারই ছায়া যেন খুঁজে ফিরি আমি
আলোর দিশা রূপে আজো অন্ধকারের ভিরে।

স্বপ্নের মাঝে তুমি আছ আছ তুমি আমারই কল্পনায়
হাত বাড়িয়ে আলো আধারে খুঁজি তোমায় তায়
রেখেছিলে আমায় তুমি কতনা ভালোবাসায় মুড়ে
তাইতো আছ তুমি আজো আমার সাড়া অস্তিত্ব জুড়ে।


তারে দেখার সাধ

মেঘের কোলে ভাসে যার মুখ

ছায়া পড়ে তার ঘন কালো দীঘির জলে

একটু একটু করে অস্পষ্ট ভাবে দেখা দিতে চায়

রংধনু রঙের অস্পষ্ট আলোর ঝলকানিতে

আমি অপার তাকিয়ে রই যদি একটিবারের তরে

দেখা যায় তারে, মন ভরে মন ভরে।



দেখা যায় তার দূর থেকে ধুসর কুয়াশার মত মুখ

মধ্য দুপুরের কাঠ ফাটার রৌদ্রের মাঝে মিটিমিটি জ্বলে

চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে থাকি আমি

যদি একবারের মত ভালো করে তার

মুখখানি দেখতে পাওয়া যায়।



ঘন বরিষণে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে তার গান শোনা

কিংবা বৃষ্টির মাঝে চশমার কাঁচ ঘষে

তাকে দেখতে পাওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া

কিংবা জ্যোৎস্না রাতে আলোর আকাশের দিকে তাকিয়ে

তার প্রতিবিম্ব দেখা,

মনে আশা যদি তারে একবার দেখা যায় স্পষ্ট করে।



লাল গাড়ীর ঘন কালো কাঁচ ঘেরা আধো অন্ধকারে

ভুস করে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কাঁদা পানি ছিটিয়ে

সামনে দিয়ে রানীর মত চলে যায় সে যে

তবুও নির্লজ্জ আমি এক বেহায়া তার পথ চেয়ে

প্রতিদিন তার নীল গেট এ দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনি

সাথে করে হ্রদয় গোলাপ আর ভালোবাসার ডালি

যদি মুহূর্তের তরে দেখা যায় তার সাথে।



কি বোকা আমি ছিলেম আজ অবধি

কখনো খুলে দেখিনি আমারই হ্রদয় আয়না খানি

সে যে রয়ে গেছে মোর হৃদয় কোনের

আলোকিত ওই আয়নাঘরে

যেথা হতে চোখ বুজেই দেখা যায় তারে।




স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক - লিরিক

স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন

বানাইছেন ওপরওয়ালা
মানব আর মানবীর সম্পর্ক
স্বামী স্ত্রী নাম দিয়া;
গাঁট বাইন্ধাছেন দুজনেতে
অদৃশ সুতায় ভালোবাইসা
বানছেন সম্পর্ক ওপর হতে
অনেক আশে ওপরওয়ালা;
সম্পর্কের বিড়ম্বমা
রিপুর তাড়না
তাইরে নাইরে তা না না না
মুখ মারে দুইজন পরের ক্ষেতে
পানি খায় দুইজন পর গোয়ালেতে
ওপর ওয়ালায় উপরে বইসা
দেখে ফাটল মানব সংসারে;
ওপরওয়ালা উপরে বইসা
দেখে মাইনসের রংতামাশা
সম্পর্ক কই দেহ বাসনা
রিপুর তাড়নায়
তা না না না;
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বানাইছিলেন
অনেক আশে ওপরওয়ালা।