মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০

ভুলে ভরা জীবন

ওহে জীবন, একটু দাঁড়াও না!
তোমাকে একটু রিওয়াইন্ড করে দেখি।
ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃত অনেকগুলো ভুলে ভরা এ জীবন।
যদি পারি শুধরে নেব আর না হয় ভুলগুলোই আরেকবার পাতা উল্টে উলটে দেখব।
কিছু ভুল হয়তো আর শোধরানোই যাবে না
এখনো হয়তো সময় আছে কিছু ভুল শুধরে নেবার।

যদি মনের আয়নায় ধরা পড়ে সেগুলো
এখনো হয়তো শুধরে নেয়া যাবে ভুলগুলো।

আমি জানি, খুব ভালো করেই জানি; জীবনের ফিতে রিওয়াইন্ড করা যায় না।
তবুও, পিছু ফিরে দেখতে ক্ষতি কি?
হয়তো ভুলগুলো নতুন করে চোখে ঠেকবে, জীবনের যত সব ভুল।

ঐ যে দাদা দাদী, নানা নানী শুয়ে আছে মাটির ঘরে

অন্ধকার
আলো নেই কোথাও
বাতি দেবার কি কেও নেই?

আছে, তবে দেয়া হয় না
ইচ্ছে করেই কিংবা অজানা থাকার কারণে।

তাদের সন্তানেরা, সন্তানদের সন্তানেরা, তাদের সন্তানেরা যতবার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে
যতবার আসসালাতু আসসালামু আলাইকুম ইয়া এহলাল কাবুরে বলে সালাম দিবে
ততবার তাদের অন্ধকার ঘরে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বলে উঠবে।

জানি
আমরা জানি
তবুও ভুল করে ভুলে যাই
কিংবা সময়ের আজকাল বড্ড অভাব পড়েছে আমাদের
তাই সময় দেয়া হয় না তাঁদের।

ভার্চুয়াল জগতটাকে বড্ড বেশি সময় দিতে হয়। দু কানে দুটা মোবাইল তার আবার চারটা সিম;

বড় বেশি ব্যস্ত
ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে কথা বিনিময়
আই প্যাড কিংবা ল্যাপটপ সারা দিন।

সেই কবেই তো স্মৃতি থেকে ধুয়ে মুছে দিয়েছি
দাদা দাদীর কোলের স্পর্শ তাদের স্নেহ, অনুভব ভালোবাসার;
এখন এত সময় কোথাও মরে যাওয়া বুড়োবুড়ির খোঁজ নেবার!

কখনো জেগেছি কি মনে একবার?
ঐ অন্ধকার ঘরে যেতেই হবে একদিন আমার।
আশায় সেদিন পথ চেয়ে থাকব আমার সন্তানদের,
তাদের সন্তানদের, তাদের সন্তানদের;
যদি আসে কেও তারা একবার!!!


///////////

একটু সময় হয় কি আমাদের আজ?
বুড়ো বাবা মায়ের পাশে দুদণ্ড বসার।

কেমন আছে, কি খায় না খায় কে খবর রাখে?
কাজের লোক তো রাখা আছে অর্থের বিনিময়ে
দায়িত্ব পালন তো হচ্ছেই তবে আর আমার বোঝার দরকার কি আছে?

তাদেরও তো আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে জাগে।
একটু কি মোবাইলটা বন্ধ করে মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারি না?

১০মিনিটের জন্যই না হয়
২৪ ঘণ্টায় একবার

বুড়ি মায়ের যে বড্ড ইচ্ছে করে ছেলেকে জড়িয়ে রাখতে কোলের পরে;
কে বোঝে?
মোবাইলের বোতাম টেপা বড্ড জরুরী

বাবার পাশে দু দণ্ড বসে তার খবর নেবার সময় আছে কার?
৫ মিনিটই না হয় ২৪ ঘণ্টায় একবার!!

কি অমানুষিক কষ্ট করে দশ মাস পেটে ধরে পৃথিবীতে এনেছিল মা
একটু অসুখ হলে সারা রাত মাথার পাশে একঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো বাবা
উদয়অস্ত পরিশ্রমে নিজেরা খেয়ে আর না খেয়ে আমার উদর ভরে রাখতেন দুজনা
আজ কি সুন্দর প্রতিদান দিচ্ছি তাদের একা ফেলে রেখে, ঘরের কোনে
কেও কেও আমরা তো আরো এক কাঠি বারা, ঝামেলা মনে করে ওনাদের রেখে আসছি কোন বৃদ্ধাশ্রমে।
স্বয়ং ওপরওয়ালা যেখানে প্রতিদান লিখে রেখেছেন পর জনমে, বাবা মায়ের পায়েরতলে
সেখানে বেহেস্ত ঘরে ফেলে আমি বোকার রাজা কোথায় না ঘুরে ফিরি এ জনমের পার্থিব সুখ সন্ধানে
আর বৃদ্ধ বাবা মা পড়ে থাকেন খুব অবহেলায় এখানে ওখানে।


কখনো ভেবেছি একবার?
আমিও বৃদ্ধ হব একদিন;
আমার সন্তান কি সময় দেবে আমাকে সেদিন?
নাকি একই প্রতিদান তারাও দেবে আমায় যা আমি দিচ্ছি নিজের বাবা মা'কে।

////////////////

এই যে জীবন দাঁড়াও না রে ভাই একটুখানি
একটি কথা শুনে যাও
না হয় খুব অল্প কিছু সময়ের জন্য
খুব অল্প কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে।

আমি জানি তুমি অনেক ব্যস্ত; সময় তোমার আগে আগে দৌড়চ্ছে
তুমি রেসের ঘোড়া
ছুটে চলেছ টগবগে
কে কার আগে দৌড়ে যাবে?

কোথায় ছুটেছ তোমরা জানো কি গন্তব্য?
নাকি অজানার উদ্দেশ্যে পাগলা দৌড়ের মহড়া
কি জানি বাপু!
আমি হয়তো বোকা
তোমাদের ঘোড়দৌড় বুঝি না।

কত মানুষই না এসেছে আমাদের জীবনে
কত বন্ধু বান্ধব, কত আত্মীয় স্বজন
এদের মাঝে কেও পরিচিত, কেও অপরিচিত,
কারো সাথে বা খুব অল্প পরিচয়।
কারো সাথে হয়তো একদিনের দেখা, কারো সাথে আলাপ মুঠোফোনে কিংবা ল্যান্ডলাইনে।
এদের মাঝে কেও রিয়াল কেও ভার্চুয়াল।
কত পদের,
কত বর্ণের,
কত রঙের,
কত ঢঙের মানুষের সাথেই না পরিচয়।

এদের মাঝেই কেও জীবনে থাকে জীবনের সাথে মিশে
কেও ছেড়ে যায় স্বার্থের কারণে,
কেও রয়ে যায় স্বার্থ হাসিল করতে।

প্রতিদিন জীবন ধারায় কত মানুষ নতুন করে যোগ হচ্ছে;
কাজে আর অকাজে,
জীবনের প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে।
কত মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে অবহেলায়।
পেছন ফিরে দেখি কি আমরা তাদের, হারিয়ে ফেলার পরে কি ভাবায়?
শুধু ছুটে চলা আর ছুটে চলা ছুটে চলা
বল্গাহরিণের মত।

//////////////////////

আজকাল দিনকাল কেমন জানি হয়ে গেছে
আমি ঠিক বুঝি না
হয়তো আমি পুরনো
কিংবা আমার জ্ঞান বুদ্ধিগুলো খুব সেকেলে।

আজকাল ছেলেমেয়েগুলোকে দেখি সারক্ষণ ভার্চুয়াল জগতে
কি সকালে ঘুম থেকে উঠে
কি বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে
কি সন্ধ্যের অবসরে
কি বা রাতে ঘুমের আগে;
হয় ল্যাপটপে নেটের জালে
নয় ডেস্কটপে খেলার ছলে
ইঁদুর হাতে বড্ড মনোযোগে
চোখের পলক পড়ে না মনিটর থেকে
আর না হয় মোবাইলের বাতি জ্বলে
ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমের আগে পর্যন্ত;

এদের খেলা বলতে ল্যাপটপ
এদের পড়া বলতে আইপড
এদের বন্ধু বলতে মোবাইল
এদের খাওয়া দাওয়া ধ্যান জ্ঞান মুরগীর রেসিপি
ভাজা কিংবা ঝাল ছাড়া তরকারি;

আমাদের মাঠে ঘাটে দৌড়ে বেড়ানো ছেলেবেলা তবে কি ভুল ছিল?

/////////////////////////////////////////

আজকালকার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কগুলো আমি ঠিক বুঝি না
হয়তো আমি এ যুগের কেও না
কিংবা দাদা-দাদী, নানা-নানী, বাবা-মা, চাচা-চাচি সম্পর্কগুলো ভুল দিশায় চলছিল
তাই হয় তো বড্ড অবজ্ঞায় তারা পুরনো কালের মানুষ
আজকালকার নতুন জমানায় কিংবা আজকালকার মানুষগুলোর কাছে।

এখনকার কিছু স্বামী-স্ত্রীর বসবাস একখাটে
অনেক বড় খাট, ঘরের এপার আর ওপার জুড়ে
মাঝে কোলবালিশের বেড়া
দু-জন দুপাশ ফিরে;
আর কিছু স্বামী-স্ত্রীর বসবাস দু-ঘরে দুখাটে
একজনের স্পর্শে অন্যজনের যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে;

একজনের হাতে আই-ফোন আরেকজনের এন্ড্রয়েড
রাতের আঁধারে ঘরের বাতিটা ডিম করে জ্বালানো
দুজনই খুব ব্যস্ত ফেসবুক বন্ধনে।

একজনার হয়তো আজ জন্মতিথি
অন্যজন সেজন্য খুব বিজি, সবার আগে হ্যাপি বার্থ ডে উইশ জানানোর আকুতি
কোথায়? - ফেসবুকে;
অথচ প্রিয় মানুষটি শুয়ে আছে কোলবালিশের ওপাশে, কিংবা পাশের ঘরে
হাত বাড়িয়ে প্রিয়ার সঙ্গ পাওয়া হয় না অথচ ভার্চুয়াল সঙ্গের জন্য মন কেমন করে
নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস।

বড্ড আজব
আমার বোধগম্য নয় আজকালকার স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক।
কিংবা হয়তো এটাই এখনকার রীতি, আমিই পুরনো হয়ে গেছি।
দিনকাল যেভাবে এগিয়েছে, কবে হয়তো দেখব ভার্চুয়াল মেলামেশাতেই সন্তান চলে এসেছে
নতুন নতুন কত কি আবিষ্কার, পুরানো মানুষদের অত কিছু জানার কি আছে দরকার;
কিংবা হয়তো শারীরিক মেলামেশার দরকারই পড়ে না - ফেসবুক আছে না?

ধরা ছোঁয়ার বাস্তবের মানুষগুলোকে পায়ে ঠেলে কি নেশায় আমরা ঘুরি বেড়াই ভার্চুয়াল জগত ঘিরে?

ভার্চুয়ালের আগ্রাসনে আজ কত শত সংসার উচ্ছন্নে।
ভাঙ্গনের চিত্র দেখি নিত্যই চারদিক চেয়ে।


////////////////////

আজকালকার পরিবার,
যদিও একঘরে বাবা-মা বাস করে তবুও তাদের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব
আর নয়তো দুজন দুঘরে একই ছাদের নিচে,
ভাই-বোন এক এক জন এক এক দিকে
কেও বাসায় কিংবা বন্ধুর বাসায় আর নয়তো আউটিংএ
কোথায়?
বাবা-মার জানার নেই কোন দরকার;
আরে ফেসবুক আছে না? স্ট্যাটাস আপডেট দেখে নিলেই হয়
যদি মায়ের একটুখানি অবসর হয়,
তারপর আবার নিজের ভার্চুয়াল জগতে, ভার্চুয়াল বন্ধু বান্ধবের সাথে;
বাবার এত সময় কোথায়?
ভাগ্যিস পেটের টানে খুব মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে যায় খাবার টেবিলে
না হলে হয়তো আর কিছুকাল পড়ে বাবা-মা, ভাই-বোনের দেখা হবে উৎসব পার্বণে।

কি যুগ পরেছে রে হায়
কারো সময় নেই কারো খবর নেবার
এখন হয়ে গেছে ভার্চুয়াল সংসার, ভার্চুয়াল পরিবার।

///////////////////////////

একদিন এর মাশুল গুনতেই হবে;
দেখো তোমরা, খুব দেরী না হয়ে যায়

ওহে ভার্চুয়াল জীবন
একটু দাঁড়াও না রে ভাই!
একটু রিওয়াইন্ড করে জীবনটাকে দেখি না একবার!
ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃত অনেকগুলো ভুলে ভরা এ জীবন।
যদি পারি শুধরে নেব আর না হয় ভুলগুলোই আরেকবার পাতা উল্টে উলটে দেখব।
হয়তো এখনো সময় আছে কিছু ভুল শুধরে নেবার।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন