শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১

অনুজ আর অগ্রজ

ছোট একটা চারাগাছ ছিল 

পাশাপাশি অনেকগুলো

একটা ক্ষেত,  

সবুজ সবুজ ঝাল ঝাল মরিচ

সবুজ মরিচটা এক সময় স্বপ্ন দেখতো ঐ দূরে দালানে উঠবে

তার খুব জানতে ইচ্ছে করতো দালানগুলোতে কি থাকে 

কখনো যাওয়ার সুযোগ হয় নি,  

একসময় সবুজ মরিচের গায়ে বয়সের দাগ লাগলো 

সবুজে লাল ধরলো 

তারপর কোত্থেকে এক মেশিন এসে ওদের পিষে ফেললো,

একদম গুড়ো গুড়ো; 


মরিচ ক্ষেতটার ঠিক পাশের ক্ষেতে কিছু হলুদ গাছ ছিলো

তার অন্যপাশে ধনে ক্ষেত  

বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো তাদের সাথে 

সবাই মিলে ওরা বাতাসে দুলতো একসাথে 

কখনো বৃষ্টিতে ভিজতো 

কখনো পুড়তো রোদে,  

একটা সময় হলুদ গাছের মূলগুলো শুকিয়ে এলো

তারপর মেশিন গুড়ো,  

একসময় পাকা ধনে রোদে শুকিয়ে গেলো

তারপর মেশিন গুড়ো; 


একটা সময় মরিচের খুব মন খারাপ হতো

একটা সময় হলুদের 

কোন একটা সময় ধনের,.

আজ খুব হঠাৎই তাদের দেখা হয়ে গেলো 

বিশাল এক দালানে, ঐ যেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো কোন এক কালে

দালানের ভেতর ছোট এক রান্নাঘর 

রান্নাঘরে ছোট্ট এক হাঁড়ি  

সেখানেই দেখা হয়ে গেলো সবার সাথে খুব হঠাৎই 

এতদিন পর দেখা হতেই পরস্পরে জড়িয়ে ধরলো তারা 

তারপর ঝোলে আলুতে মিশে সে কি মাখামাখি! 

হঠাৎ করেই উনুন থেকে নামার আগে হাঁড়ির ভেতর  দুটো সবুজ কাচা মরিচ,  

হুট করে অগ্রজকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেললো ওরা; 


মাঝে মধ্যে দেখা হয়েই যায়! কোথাও না কোথাও

অনুজ আর অগ্রজের।


৩১ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


অনুজ আর অগ্রজ

 - যাযাবর জীবন 

বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

চাহিদার রকমফের

এক একজনের চাহিদা এক একরকম

এক একজনের চাহিদার প্রায়োরিটি এক একরকম 

এক একজনের কাছে এক একসময় প্রায়োরিটি বদলায়

এক একজনের কাছে জীবনের মানে এক একরকম;


এই ধর যেমন একজন ধূমপায়ী

ঐ যাকে তোমরা বল চেন স্মোকার 

তার ধ্যান ধারণায় সিগারেটের একটি টান, 

আবার ধর যে মদ্যপায়ী 

যার প্রতিদিন না খেলে চলেই না 

তার চাহিদা এক ঢোক হলেও মদ্য পান,

আর ঐ যে প্রতিদিন নতুন শরীর না হলে যার চলে না

যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়, বেশ্যা-পাড়ায়

তার কাছে নারীই পণ্য, মেটাতে কাম

অথবা অন্যকোন দলের চাহিদা অন্যকিছু;


আর সংসারের ঘানি কাঁধে ন্যুব্জ কুঁজো ঐ লোকটা! 

যার নুন আনতে পান্তা ফুঁড়োয়?

সে বোঝে ভাতের কত দাম,   

যে ছবি আঁকে! 

নেশার ঘোরে কিংবা পেট পালতে 

তার কাছে ক্যানভাসে রংতুলির একটা টান,

ঐ যে ফটোগ্রাফারটা দেখছ!

ক্লিক ক্লিক ছবি তোলে! ওটাতেও তার পেট চলে 

সেই শুধু জানে সঠিক সময়ে একটা সঠিক ক্লিকের কি দাম! 

কিংবা নানা পেশার লোকের নানারকম অবস্থান; 


যদি সংসারের কথা চিন্তা করি!

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান 

সবাই মিলেমিশে এক বাড়িতে অবস্থান,

সব সময় কি তা আর ঘটে?

শাশুড়ি বৌ এর ঝগড়াটাও তো চিন্তা করতে হয় বটে

তারপর এক একজনের আলাদা আলাদা বাসস্থান,  

স্বামী-স্ত্রী, আজকাল একেক সংসারে এক একরকম দেখি 

রাতে ঘুমুতে যাওয়ার সময় দুজন হাতে হাত একটু জড়াজড়ি 

সুখী দাম্পত্যে আজকাল এটার অনেক বড় একটা অবদান,

বিভিন্ন সংসারে বিভিন্ন রকমও ঘটে;  


এই যে আমাদের চারিপাশে নানা রকম মানুষজন! 

এদের এক একজনের সুখে বা দুঃখের এক এক কারণ,  

এদের প্রত্যেকের চাহিদা প্রত্যেকের থেকে ভিন্ন 

একজনের অবস্থান আরেকজন থেকে অন্য 

কেউ চাকুরীজীবী কেউ ব্যবসায়ী কেউ নিজেকেই করে পণ্য  

বেশীরভাগই অসুখী, আর অল্প কেউ নিজ অবস্থানেই ধন্য;  


আমরা একজনের চাহিদা অন্যজন বুঝি না 

একে অন্যকে না বুঝেই অকারণ করে যাই সমালোচনা। 

  


২৭ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


চাহিদার রকমফের 

 - যাযাবর জীবন 


মানুষ পোকা

কোথাও আলো জ্বললেই আলো পোকাদের ভিড়

অন্ধকারের পোকারাও ছুটে আসে অন্ধকারে,  


আলো কিংবা অন্ধকার, যে কোন পোকারাই শরীর হলেই বসতে চায়  

এরা শরীরে বসতে চায় প্রেমের ছলে, কামের ছলে 

বেশীরভাগ শরীরে বসতেই পারে না 

অনেকগুলো ইতিউতি শরীর ঘাটে তারপর নিজেই উড়ে যায়

অল্প কিছু নিজের অপুষ্ট শরীর নিয়ে শরীরেই মরে যায়   

আর অল্প কিছু পোকা শরীরের বদলে লেগে থাকে মন আঠায়; 


এরা প্রেম করে, এরা প্রেমে পড়ে 

তারপর যতদিন শরীর ততদিনই শরীরে লেগে থাকার চেষ্টা,  

এদের মাঝেও কিছু পোকা উড়ে যায় মধুর মিষ্টতা শেষে 

কিছু পোকা নেমে যায় শরীরের ভাঁটায়  

আর কিছু কিছু অন্য কোন কারণে  

অল্প কিছু পোকা মরা নদীতেও সাঁতরায়, শরীর জড়িয়ে;


উড়ে যাওয়া, ভেসে যাওয়া, নেমে যাওয়া পোকাদের কথা কে আর মনে রাখে?  

দাম্পত্যের শেষ গোধূলিতে পরস্পর জড়িয়ে থাকা পোকাগুলোকেই লোকে মানুষ বলে।

 

২৬ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


মানুষ পোকা 

- যাযাবর জীবন 


আলোতে অন্ধকারে

ঘুটঘুটে অন্ধকার

কামাতুর রাত 

দুটি শরীর বিছানায় কাত 

হাতে হাত স্পর্শ থেকে শরীরে শরীর

ঠোঁটে ঠোঁট চুমুর চিৎকার 

শরীরে শরীর কাম শীৎকার 

বাতি নেভানো ঘর, ঘন অন্ধকার

ওখানে স্বামী স্ত্রী অথবা নর ও নারী,  

নরের কল্পনায় বিছানায় অপ্সরা মেনকা সুন্দরী   

নারীর কল্পনায় সুঠাম সুদর্শন নায়ক এক ভারী  

অন্ধকারে শরীরে শরীর, কল্পনায় নর ও নারী 

কল্পনায় নায়ক ও নায়িকার কাম, বাস্তবে বিছানায় ঘাম  

রতি শেষে ক্লান্ত দেহ বিছানায় কাত 

খাটের দুপ্রান্ত থেকে হাতের ওপর হাত; 


খুট করে বেড সুইচটা জ্বলে উঠতেই কল্পনার অবসান

কোথায় নায়ক? 

কোথায় নায়িকা? 

এক কাতে ঘর্মাক্ত শুয়ে ভুঁড়িওয়ালা সেই পুরনো চেহারা      

আরেক কাতে আটপৌরে ঢলা যৌবনা 

যারা চোখের সামনে থাকে সারা দিনমান,  

বেশ তো ছিলো অন্ধকারে কামঘন কল্পনার বাসর

আলোতে আয়না, আলোতে কঠোর বাস্তবতার আসর;


অন্ধকারে কল্পনার বাসরে মনের ঘরে কত চেহারাই না খেলা করে! 

ধাক্কা খেতে হয় খুট করে আলো জ্বাললে। 


  

২৩ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


আলোতে অন্ধকারে 

 - যাযাবর জীবন 


     


সম্বোধন

সম্বোধন'টা কি খুব জরুরী?

একটা আছে রক্তের সম্পর্ক, ওখানে নানা রকম সম্বোধন

আরেকটা পাড়াতো, মুখ চেনা; সেখানেও সম্বোধন

আর আজকাল সম্পর্কের নতুন মাধ্যম হলেও 

আমাদের সবচেয়ে বেশি দেখাশোনা হয় ভার্চুয়ালে 

এটাও পরিচিতির একটা নিমিত্ত, এখানেও কিছু কিছু সম্বোধন;


এখানকার সম্বোধনগুলো কেন জানি না বেশীরভাগই লোক দেখানো

কিছু কিছু তো রীতিমত তৈলমর্দন

তৈলমর্দন অবশ্য আমাদের অনেকটা মজ্জাগত

তবুও যখন ভার্চুয়ালে পরিচিত, অপরিচিত, আধা-পরিচিত

শুধুমাত্র কে কোন কর্পোরেটের কত বড় মাথা

কে কোন ব্যবসায় আছে!

কার অর্থনৈতিক স্ট্যাটাস ভার্চুয়াল ফুটে কতটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে

সেটা অনুধাবন করে যখন সম্বোধন নির্ধারণ হয়

তখন, ঠিক তখনই কেন জানি আমার কাছে বিসদৃশ মনে হয়;


ভার্চুয়ালে কারো সম্বোধন ভাই কিংবা বোন

কারো দিদি কিংবা দাদা 

কেউ তো স্যার ছাড়া কথাই বলে না

আর ঘানি ভাঙা খাঁটি তেলের মালিশ;


দাদা-দিদি, ভাই-বোন একটা সম্পর্ক 

ওটা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট 

ভার্চুয়ালে আমাদের কিছু স্বার্থ নিশ্চয়ই থাকতেই পারে,

চট করে বন্ধু সম্বোধন'টা আসলে একদমই মৌখিক 

বন্ধু আমার কাছে অনেক বড় সম্পর্ক

যাকে সব বলা যায়, যে চুপ করে পাশে বসে থেকেও সব দুঃখ বুঝে যায়

তা না হলে আর বন্ধু কোথায়?

ভার্চুয়ালে আছে নাকি এমন বন্ধু?

তবে আর সম্বোধনে কি আসে যায়? 


ভার্চুয়ালে সাধারণত আমি সম্বোধনটা উহ্যই রাখি 

দেখাই যাক না সম্পর্ক কোথায় নিয়ে যায় আমাদের!

প্রতিদিনই তো কত কত সম্পর্ক বদলায়, কারণে আর অকারণে

কে বলেছে সম্বোধন করতেই হবে সম্বোধনের নিয়মে? 


থাকুক না সম্বোধনহীন কিছু সম্পর্ক! 



২৩ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা


সম্বোধন

 - যাযাবর জীবন 

জীবনের স্তরগুলো

মানুষের একটাই জীবন তবে জীবনের অনেকগুলো স্তর 

শিশু থেকে কৈশোর, যৌবন হয়ে প্রৌঢ়ত্ব, বৃদ্ধ তারপর  

একটা পার হতে না হতেই আরেকটা, মৃত্যুতে সমাপ্তি 

সম্পর্ক, অর্থ, স্বার্থ, দ্বন্দ্ব জীবনের প্রতিটা স্তরের প্রাপ্তি;     


জীবনের স্তরগুলো অদ্ভুত, একই মানুষ, কত তার রূপ! 

শিশুকাল মায়ের কোলে, চেনা শুরু হয় পৃথিবীর রঙ রূপ, 

বাবা আরেকটু পরে, তারপর ভাই বোন আর আত্মীয়-স্বজন

জীবনের স্তরে স্তরে নতুন নতুন মানুষ, যখন যাকে প্রয়োজন; 


ছেলেবেলা খেলা-খেলা, তখনও মোটামুটি মা সর্বস্ব জীবন

বাবার কাছে হয়তো বায়না, তারপর আহ্লাদ বড় ভাই-বোন 

বন্ধুত্ব বলে নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে তখন

ক্রমে ক্রমে সম্পর্কের রূপ বদলায় জীবন যেখানে যেমন;


কৈশোরে বাবা-মার থেকে হঠাৎই কিছুটা, দূরত্ব তৈরি হয় 

বন্ধু বান্ধবরা আপন হতে থাকে, অল্প কিংবা বেশি পরিচয়     

স্কুলে, মহল্লায়, খেলার মাঠে ওদের'কে আপন করে নিয়ে   

তার চেয়েও আপন যেন পাশের বাড়ির ঐ ছেলে বা মেয়ে; 


যৌবনে প্রেমে, প্রেমিকের কাছে প্রেমিকাই সবচেয়ে আপন 

এ নিয়ে কথা কাটাকাটিতে বাবা-মায়ের সাথে দূরত্ব ভীষণ

লেখাপড়ায় মন নেই, মন উচাটন আর প্রেমময় জীবন

প্রেমে সবকিছু রঙিন রঙিন, স্তরটার নামই যে যৌবন!


বিয়ের পর থিতু, বাবা-মা ভাই-বোন, সবাই মিলেমিশে

শ্বশুর বাড়ি আপন আপন লাগে শ্যালিকা যদি বসে পাশে 

মেয়েদের ক্ষেত্রে শ্বশুর বাড়ি দেবর ননদ সব আপন করে   

তারপর স্বামী-স্ত্রী কাহন, সংসারে ভাঙন, জীবনের এ স্তরে; 

 

এরপর চাকরি জীবন, কেউ ব্যবসায়, নয় বাবার ঘাড়ে খায়

সংসারে নতুন শিশুর আগমন, নতুন খুশি বংশ পরম্পরায় 

ছেলেরা বাবা হয়, মেয়েরা মা, সন্তানগুলো সংসার ভরায়

বংশবৃদ্ধি এভাবেই হয়ে আসছে এই মানব সংসার ধারায়; 


অনেকটা পথ সন্তান মানুষ করতে, এরমাঝে পরকালে বাবা-মা

এ জীবনটা টাকার, টাকার পেছন পেছন কে আর ছোটে না? 

জীবনের এ স্তরে রয়ে যায় ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব মাঝে মাঝে 

আত্মীয় স্বজন কোথায় আর আজকাল? কখনো হয়তো কাজে;  


সন্তানরা বড় হলে যে যার পথে, বাবা-মার জন্য সময় কোথায়? 

ব্যস্ত তারা সংসারে আর কাজে, জীবন যাকে যেখানে নিয়ে যায়, 

বাবা-মা গত হয়েছে অনেক দিন, ভাই-বোন? যার যার সংসারে 

বন্ধুবান্ধব? মাঝে মাঝে একসাথে হয়, একটু সময় বের করে;  


আজকাল কথা বলারও কেউ নেই, বাসায় শুধু দুটো বুড়োবুড়ি 

মাঝেমাঝে পরস্পর কথা, বিকেল বারান্দায় দুজনে চা দিয়ে মুড়ি

বাকি সময়টা পরকালের চিন্তা, ধর্ম কর্ম শেষে ঘুম কাঁথা মুড়ি

জীবনের শেষ স্তরে বুড়ির জন্যে বুড়ো আর বুড়োর জন্যে বুড়ি;


একটা সময় হয় বুড়ো মারা যাবে কিংবা বুড়িটাই ঘুমোবে আগে  

তারপরের জীবনটা একাকীত্বের, ওরা বুঝে গিয়েছে আগেভাগে

জীবনের শেষ স্তরে আগের স্তরগুলো চোখের সামনে উঠে ভেসে  

স্তরের পরতে পরেতে স্বার্থগুলো সম্পর্কের আষ্টেপৃষ্ঠে ছিলো মিশে। 



১৫ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


জীবনের স্তরগুলো 

 - যাযাবর জীবন 


বাড়ি আর ঘর

কোন একটা সময় আমরা বাড়িতে বাস করতাম

কোন একটা সময় দিনশেষে আমরা বাড়িতে ফিরতাম, 

টিনের চাল দেওয়া খোলা উঠোনের বাড়ি

উঠোনে কিছু ফল ফলাদির গাছ আর সেখানে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ   

বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুপুদের নিয়ে এক ছাদের নীচে বসবাস,  

মাঝে মধ্যে মামারা কিংবা খালারা বেড়াতে এলে 

সে দিনগুলো যেন প্রায় ঈদের খুশি,

আগে বাড়িটাতে মায়া ছিলো, ভালোবাসা ছিলো সম্পর্কগুলোতে 

এখন সে-সকলই যেন ইতিহাস; 

  

আজকাল আমরা ঘর বলি, কাজের শেষে ঘরে ফিরি 

কারো দুই বেডরুম এপার্টমেন্ট, কারো বা তিন বেডরুম  

ইটের পর ইট গাঁথা খোপ খোপ ইমারত 

উঠোনের জায়গায় আড়াই ফিট বাই সাড়ে তিন ফিট বারান্দা

পাশের বিল্ডিং একদম লাগোয়া, মনে হয় হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে

ঐ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখব কিভাবে? 

আকাশ দেখার ইচ্ছে হলে মাঝে মধ্যে ছাদে চলে যাই

নীলের মাঝে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসি 

ঘরের কোণে বসে মাঝে মধ্যে স্মৃতি খুলে খুলে দেখি

তার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দু-কামরার বেডরুমে ঘুমিয়ে থাকি, 

বাড়িটা ভাগ হতে হতে আজ খোপ খোপ এপার্টমেন্ট ঘর

এক এক ভাই বোন এক এক এপার্টমেন্টে 

দেখা হয় মাঝে মাঝে, সিঁড়িতে কিংবা লিফটে

আজকাল ইট কাঠের ইমারতে মায়া খুঁজে পাই নাই

ভালোবাসার বন্ধন বড্ড আলগা সম্পর্কগুলোতে   

তাও বাড়ির বদলে একটা ঘর তো পেয়েছি! এই তো বেশি; 


আজকাল অবশ্য বাড়ির দরকারই ফুরিয়ে গিয়েছে

আজকালকার শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে গিয়েছে 

বদলেছে ছেলেমেয়েদের মানসিকতা 

এখন আর একান্নবর্তী সংসার ওদের পছন্দ হয় না

ওদের প্রাইভেসি দরকার, 

সন্তানরা চাকুরী কিংবা ব্যবসায় রত, যার যার মত 

ফ্ল্যাট কিনে আলাদা হয়ে নিজের মত টোনাটুনির সংসার 

বাবা-মাই তাদের কাছে আজকাল দায় হয়ে পড়েছে! 

দাদা-দাদী, চাচা-চাচীর ওরা তো অনেক দূরে, 

মাঝে মধ্যে অবশ্য সবার সাথে দেখা হয় পালা পার্বণে,  

আজকাল বাবা-মায়ের থেকে ছেলে মেয়ে সব আলাদা, ঘরে ঘরে  

তাহলে আর বাবা-মায়ের বাড়িরই বা কি দরকার?


আমরা বেশ আছি বুড়োবুড়ি 

আর আমাদের দু বেডরুমের ছোট্ট সংসার,

একটা বেডরুম খালিই পড়ে থাকে

যদি কখনো কোন ছেলেমেয়ে এক রাতের জন্য থাকতে আসে! 


মাঝে মধ্যে ছেলেমেয়েদের কথা বড্ড মনে হয়

মাঝে মধ্যে নাতি নাতনিদের দেখতে ইচ্ছে হয়,

ওরা বড্ড ব্যস্ত, তাও ভালো! আজকাল মাঝে মধ্যে ভিডিও কল করে

কখনো সখনো ওদের দেখা মেলে মোবাইলের ওপারে,

ইদানীং মাঝে মধ্যে খুব চিন্তা হয়,

 - একদিন টুপ করে মরে গেলে বুড়িটা বড্ড একা হয়ে যাবে।  


১২ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


বাড়ি আর ঘর 

 - যাযাবর জীবন 


আমাদের বাংলাদেশ

কলাবাগানে কলাগাছের সারি দেখেছ কখনো তোমরা? 

ভোমরা নামের বন্দর আছে, আছে হুলফোটানো ভোমরা,

ময়লাপোতায় কে কবে আর পুঁতে রেখেছে ময়লা? 

বড়পুকুরিয়াতে পুকুর নেই পাওয়া যায় সেথা কয়লা;


গাইবান্ধায় কেউ কি আর খোঁজে? আছে বান্ধা গাই!   

ছাগলনাইয়ায় পাগল হয়ে কে ছাগল খোঁজে ভাই?  

চিলমারি'তে তো চিলই নাই, মারবে'টা তবে কি? 

ভুরুঙ্গামারি'তে ভুরুতে কোথায় কে আর লাগায় ঘি; 


ভুয়াপুরের মানুষ'কে ভুয়া বললে খেতে পার পিঠে কিল

ভূতের গলিতে ভুতে কবে এসে মেরেছিলো চালে ঢিল?   

চাঁদপুরে রাতদিন চাঁদ খুঁজে, এমন পাগল আছে কি? 

কাউয়ার চরে কাউয়া না ডাকলে আমি করব'টা কি?


সোনাডাঙ্গার মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে কে কবে পেয়েছে সোনা

শিয়ালডাঙ্গায় শিয়ালের ডাক এখন আর যায় না শোনা, 

শালের উৎপাদন নেই তাতে কি? নাম তো বরিশাল 

হাতিরপুলে হাতি ছিলো নাকি, সেই কোনো এক কাল; 

 

কলাকোপায় নেই কলা গাছ, দা'য়ে কোপাবে'টা কি?  

ভাঙ্গায় নতুন রাস্তা গড়েছে এই তো সেদিন দেখেছি,  

পাগলা'তে পাগল হয়েছি একটা পাগল খুঁজতে গিয়ে

হেমায়েতপুরে পুরেছে সকল পাগল তাড়িয়ে নিয়ে;

 

ভেড়ামারায় তো ভেড়াই নেই তাহলে মারবেটা কি? 

ফকিরাপুলের রাস্তা ভরা ফকির, সাথে ছেলে বৌ ঝি, 

কাঠালবাগানে কাঠাল খেতে গিয়ে হাতে মেখেছি তেল 

বেলতলায় বেল গাছ কই, যে ন্যাড়া মাথায় পড়বে বেল!   


নোয়াখালী'তে মাথা নোয়ায় না, রেগে গেলে দেয় গালি 

কোথাও একটু খালি জায়গা নেই, নাম তার মহাখালী, 

বাঁশখালিতে উজাড় হয়েছে কেটে কেটে সব বাঁশঝাড়

এলিফ্যান্ট রোডে এলিফ্যান্ট নাই, নামটাই আছে তার;

 

কে বলেছে মতলবের মানুষ মতলব করে সারাদিন ধরে

কোনাপাড়ায় কোনাকাঞ্চিতে বসে না কেউ কোনা করে,   

গলাচিপায় চিপে ধরে গলা, এটা একদম ডাহা মিছে

চরফ্যাশনে ফ্যাশন নেই কোথাও, সবাই মাছের পিছে; 


হাঁটুভাঙ্গায় কবেই বা বসেছিলো কে? হাঁটু ভেঙ্গে গেড়ে

একটা দুটো কামরাঙ্গা গাছ, খুঁজে পাবে কামরাঙ্গির চরে, 

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ের সারি, মাটির রঙ কোথাও রাঙা 

ডাঙ্গা আছে, নেই কোন শিয়াল নাম তবুও শিয়ালডাঙ্গা; 

   

লোহা গড়ে না কেউ, নেইকো লোহা তবু নাম লোহাগড়া 

জাহাজমারায় কত যে জাহাজ ডুবোচড়ে খেয়েছে ধরা,   

ডিমের চরে কোথাও নেই ডিম, চারিদিক ধু ধু বালিয়াড়ি 

রাজবাড়ি'তে রাজা নেই এখন, বাড়ি আছে সারি সারি; 

 

বাঘমারায় বাঘ মারতে গিয়ে নাকি শিকারির মুখ কালো 

বোয়াল মারি'তে বোয়াল ধরতে গিয়েও বোকা হতে হলো

চ্যাংড়া বান্ধায় চ্যাংড়া ছেলেপেলেকে কেউ রাখে না বেন্ধে 

লাভ লেনে ভালোবাসা খুঁজতে যায় বোকা আর অন্ধে; 

  

বুড়িমারিতে বুড়ি মারে না কেউ, বয়সে মারা যায় ওরা  

গুড়া পাওয়া যায় না, বগুড়া'কে যতই করুক গুড়া গুড়া  

ভোলা'তে ভোলায় না কেউ, বাচ্চারা না করলে কান্নাকাটি 

ঝালকাঠিতে ঝাল কোথায়? স্বরূপকাঠিতে কে খুঁজে কাঠি?    


চৌষট্টি হাজার গ্রাম চৌষট্টি হাজার নাম একটি সে দেশ 

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এখানে মিলেমিশে আছে বেশ,   

লাখো শহীদের মৃত্যুর বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীন দেশ 

আমরা সবাই বাংলায় কথা বলি, আমাদের বাংলাদেশ। 


১১ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


আমাদের বাংলাদেশ

 - যাযাবর জীবন 


অজানা অপেক্ষার ঘড়ি

মানুষ জন্মের পর বেড়ে ওঠে ধীরে ধীরে 

শিশুকাল থেকে নিয়ে বৃদ্ধ অবস্থা স্তরে স্তরে 

ছেলেবেলাটা বড্ড মধুর, খেলা খেলা সারাবেলা 

এর মাঝেই কিছু বোধোদয় 

একজন দুজন করে দাদা-দাদী, নানা-নানী 

কোথায় জানি চলে যায়! কোন এক মৃত্যু নামক জায়গায়

সেই বয়সে আমরা মৃত্যু বুঝি না তবে ওনাদের চলে যাওয়া বুঝি 

একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয় আদরের জায়গাগুলোতে; 

 

তারপর মানব শিশু আরেকটু বড় হয় 

জীবন মৃত্যু বুঝতে শিখে 

তারপর জীবনের বিভিন্ন স্তরে একজন দুজন করে গুরুজনের বিদায় 

সেটা ততদিনে সহনীয় হয়ে গিয়েছে, পরিণত হয়ে গিয়েছে অভ্যাসে 

তারপর একটা সময় যৌবন পার হয়ে সংসার ধর্মে 

এখানে সেই ছোট্ট মানব শিশুটা জীবনটাকে বুঝে গিয়েছে 

বুঝে গিয়েছে মৃত্যু নামক এক এক অমোঘ বিধান,   

স্বাভাবিক নিয়মে এবার বাবা-মায়ের পালা 

সারাক্ষণ ভয় ভয়, কখন জানি ওনাদের কি হয়

তারপর কালের স্রোতে একে একে ওনারা বিদায় হন 

থেমে থাকে না মানুষের বয়স, থেমে থাকে না মৃত্যুর মিছিল 

বাবা-মায়ের পরে একে একে চাচা-চাচী, খালা-খালু, মামা-মামী

তারপরের সিরিয়ালে আমি, আমার ভাই-বোন, আমার জেনারেশন; 

 

মৃত্যু ভয় এবার আমার মনে 

না চাইলেও কোথাও না কোথায় এ ভয়ের বাস খুব গোপনে 

একটা অদ্ভুত অপেক্ষাটা, প্রতীক্ষা এক অজানা গন্তব্যের  

অপেক্ষা এক অজানা সময়ের 

আজ, কাল, পরশু

এখন, তখন, যে কোন মুহূর্তে

মৃত্যুটা আসবেই, সময়'টা কেউ জানে না,  

অপেক্ষায় আছি আমি 

ভেতরে ভেতর পরকালের কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছি 

হাজার হোক আস্তিক তো! 


কোথায় জানি একটা ঘড়ির কাঁটা অবিরাম ঘুরে যাচ্ছেই 

অপেক্ষার ঘড়ি 

টিক টিক টিক.........    


১০ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


অজানা অপেক্ষার ঘড়ি 

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিটেড। 






মনের আড়াল

ভার্চুয়াল জুড়ে রাশি রাশি ছবির মহরৎ 

এক একজনের এক এক ভঙ্গিমায় ছবি 

ক্ষণে ক্ষণে নতুন নতুন ছবির পোস্ট 

আর এদের প্রত্যেকের মুখে দেখি হাসি;


আমি ছবিগুলো মাঝে মধ্যেই দেখি 

কখনো বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়েই দেখি 

হাসির আড়ালে কোথায় যেন হাহাকার

ঠোঁটের আড়ালে একটু কান্না কি? 


একদিন একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম,

এই যে ক্ষণে ক্ষণে ছবি পোস্ট করিস!

কি এমন আনন্দ উপভোগ করিস?

আমি জানি ওর জীবন'টা বিষাদময়;


সে একটু থমকে গিয়ে উত্তর দিলো  

দাদাভাই, হাসি দিয়ে কান্না লুকাই

ছবির মহরতে নিজেকে ক্রমাগত ভুলাই 

সবাই আনন্দ দেখে, কান্না বোঝে কি? 


আমার খুব মন খারাপ হলো 

বললাম কিন্তু এটা যে হিপোক্রেসি! 

সে হেসে বললো নিজেকে আড়াল দেয়া 

তারপর করুণ হাসিতে কান্না লুকলো;  


আরেকজন বললো মেয়েদের দুঃখ জানো?  

কোথাও আমাদের দুর্বলতা খুঁজে পেলেই 

ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় একদল হায়েনা 

দুর্বলতা ঢাকি হাসিতে, নিজেকে বাঁচাতে; 


ভার্চুয়াল থেকে কত কিছুই না শেখা যায়!

ভেতরে বাইরে দুই মানুষ হিসাবে বাঁচা যায় 

এখন আমিও হাসিমুখে সবার সাথে মিশি 

আজকাল আমিও খুব কান্না লুকিয়ে হাসি। 



০৯ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


মনের আড়াল  

 - যাযাবর জীবন 



    

রঙের কারবার

দেখাদেখি থেকে মুখ-চেনা, মুখ-চেনা থেকে পরিচয়

পরিচয় ঘন হতে হতে ভালোলাগা, আরেকটু এগোয় 

এগোতে এগোতে কখনো যদি তাদের হয়ে যায় প্রেম!   

এভাবেই'তো ভালোবাসা হয়, নাকি ভুল বললেম? 


প্রেম মানেই মন কেমন কেমন, কাছে থাকার বাসনা 

একটু ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার আকাঙ্ক্ষা কেউ বলে কামনা 

আকাঙ্ক্ষা প্রবল হতে হতেই হয়ে যেতে পারে পরিণয়  

তারপর সংসার? এই তো হয়ে আসছে, এই তো হয়;   


প্রথম প্রেমের সেই প্রবল টান! আর ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার বাসনা  

ভালোবাসার মানুষগুলো সংসারে এলেই আগের মত থাকে না 

প্রতিদিন ডালভাত মুখের একই স্বাদ, ভালো আর লাগে কত?  

ঘটিবাটি খুটখাট খুঁটিনাটি কথাকাট সময়ে শুরু হয়ে যায় যত 

দুজন দুজনার কাছে খোলামেলা হতে হতে বড্ড আটপৌরে বাজে 

প্রেম করার সময় কোথায় আর? মন এখন কেবল সংসার কাজে; 

 

ভালোবাসার মানুষের সাথে সংসারের মানুষটির মিল খুঁজে পাওয়া ভার 

কিছু ক্ষেত্রে ভালোবাসার আবেগটা রয়ে যায় অভ্যাসে হয়তো দুজনার 

কিছু ক্ষেত্রে ভালোলাগার সেই তীব্রতা একটা সময় ফিকে হতে থাকে

ছেলেমেয়ে বড় হতে হতে সংসারটাই বড় হয়ে যায় সংসারের বাঁকে  

কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন দুটো মানুষের ভিন্নতা মেনে নিতে পারে না দুজন 

মনোমালিন্যের চরমে পথ ভিন্ন হতে হতে সংসারে বিচ্ছেদ তখন; 

 

প্রেমিক আর স্বামী একই ব্যক্তি হয়েও দুজন আদতে এক নয়

একই ঘরে বসবাসরত প্রেমিকা আর স্ত্রী রূপ কখনো এক হয়?

কেউ মেনে নেয়, কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মানিয়ে চলে ছলে বলে  

বাকিরা স্বাধীনচেতা, সময়ে আলাদা হয়ে যায় পরিস্থিতির কবলে; 

 

স্বামীদের প্রেমিক রূপ ফিরে আসে বিছানায় বাতি বন্ধ হয়ে গেলে     

স্ত্রীরা আয়নায় প্রেমিক খোঁজে নিজের প্রেমিকা রূপ একদম ভুলে 

প্রেম আর সংসার এক নয়, গুরুজনে বলে গিয়েছেন বার বার 

প্রেমের সময়টা রঙিন লাগলেও সংসারই আদতে রঙের কারবার। 




০৮ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 



রঙের কারবার

 - যাযাবর জীবন




     



 

   

  

ভাতের ক্ষুধা

ওদিকে দেখ, ঐ যে গ্রামে,  

ক্ষেতের আলে লাঙ্গল কাঁধে হেঁটে চলছে কৃষক 

ক্ষেত চষলে ফসল, পেটে ভাত,  

হাপরে দম দিতে দিতে লাল হয়ে ওঠা লোহায় বাড়ি কামারের

কিছু একটা বানাতে পারলে টাকা, পেটে ভাত, 

মাটির ছাঁচে কাদা মাখা হাতে কুমার 

পাতিল বানাতে পারলে টাকা, পেটে ভাত; 


ওদিকে দেখ, এই শহরে, 

ধুঁকে ধুঁকে রিক্সা টানছে রিক্সাওয়ালা 

রিক্সা টানতে পারলেই পয়সা, পেটে ভাত,  

মাথায় ইটের বোঝা নিয়ে উঁচু ইমারতে মজুর

দিনান্তে টাকা, পেটে ভাত,  

ঝুলে ঝুলে বাদুর ঝোলা হয়ে অফিসে ছুটছে কর্মীর দল

মাস শেষে বেতন, পেটে ভাত, 

কেউ বা গাড়িতে করে অফিসে কিংবা ব্যবসার কাজে

এদেরও ব্যবসা হলে টাকা, পেটে ভাত;


এরা সবাই বাবা অথবা মা 

ক্ষুধা কি? বোঝে এরা 

এরা পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে

সন্তান যাতে ক্ষুধাটুকু না বোঝে,

তবুও কোন কোন সংসারে পেট চিনে যায় ক্ষুধা, সন্তানের পেট 

ক্ষুধা পেত ভাতের মূল্য বুঝে যায় খুব হঠাৎ করেই 

আর ক্ষুধা চিনে চিনে হঠাৎ করেই যেন বড় হয়ে যায় সন্তান

দেখতে না দেখতে মাথায় তুলে নেয় সংসারের বোঝা 

বাবা না হয়েও এরা যেন হয়ে যায় বাবা 

মা না হয়েও হয়ে যায় মা 

বের হয়ে পরে কাজে, বের হয় খাদ্যাহ্নেষণে  

পরিবারের বাকি সদস্যদের বুঝতে দিতে চায় না ক্ষুধা;


কাজই টাকা

টাকাতেই ভাত

ভাতে নিবারণ ক্ষুধা 

গ্রামে কিংবা শহরে, দেশে আর বিদেশে 

আমরা সবাই ছুটছি টাকার পিছে 

পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে,  

  - আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। 


০৮ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


ভাতের ক্ষুধা 

 - যাযাবর জীবন 




 




  

 

গ্রাম স্বপ্ন

গ্রামের ধার ঘেঁসে বয়ে চলা ছোট নদী 

সেই কবে থেকে জানি কুলকুল কুলকুল বয়ে চলেছে পানি জোয়ার আর ভাটায়,     

নদীর পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম 

গ্রামের এক কোনে নদীটির ঠিক ধার ঘেঁসেই ছোট্ট একটি মাটির বাড়ি 

ওপরে টিনের চৌচালা চাল, 

টিনের চালের একপাশ ঘেঁসে লাউ টাল 

লকলকে লাউডগা বেড়ে উঠে কিছু পাতা ছড়িয়ে গিয়েছে টিনের চালে

একটি দুটি কিশোরী লাউ বেশ ডগমগ বেড়ে উঠেছে 

লাউ মাচার এক পাশে মাটির চাড়িতে ভুষি গুলচ্ছে কিষাণী মেয়ে  

বাঁশের খুঁটিতে গাই বেঁধে দুধ দোয়াচ্ছে গ্রাম্য বধূ

একথাল ভাত খেয়ে লুঙ্গি মালকোঁচা মেরে লাঙ্গল কাঁধে মাঠের দিকে রওয়ানা দিলো চাষি 

সকালের সোনা রোদ তেরছা হয়ে লাউয়ের ডগার ফাঁক দিয়ে চুইয়ে নামছে

হালকা শীতের সকালে ঘাস থেকে চুইয়ে উঠছে কুয়াশার ভাপ 

ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরের ফোঁটা রোদ পড়ে চিকচিক করছে

আমি লোভাতুর বিহ্বল তাকিয়েছিলাম গৃহস্থ বাড়িটির দিকে; 


নদীর পাড় ঘেঁসে মাটির ঘর

কুলকুল বয়ে যাওয়া পানির শব্দ 

কিচকিচ শালিকের ঝাঁক 

ভোরের তেরছা রৌদ্র

ঐ দূরে দিগন্ত জুড়ে সবুজ ধানের মাঠ 

এখানে জীবনটা কত সুন্দর! 

আহ! আমার যদি এমন একটা ঘর থাকতো!

এমন একটা মাটির ঘর!

এমন একটা নদী! 


এক এক সময় ভাবি কি আছে ইট পাথরের নগরীতে?

এখানে স্বার্থ নামের অনর্থ ক্রমাগত আঁচরে খাচ্ছে আমাদের;

আমি প্রায়শই একটা গ্রামের স্বপ্ন দেখি 

স্বপ্ন দেখি একটা মাটির বাড়ির

উঠোনে ধান শুকচ্ছে, ঢেঁকিতে ধান ভানছে গ্রাম্য বধূর দল

কালো গাইয়ের দুধে পিঠা ভিজছে উনুনে

লাউয়ের মাচায় কচি কচি লাউ 

সিমের টালে সারি সারি সিম ঝুলছে

আমি রোধ পোহাচ্ছি সকালের সোনারোদ মেখে মেখে

ছোট ছোট বাচ্চারা হুটোপুটি করছে উঠোন জুড়ে

আমার চোখ ভিজে উঠছে কি এক মায়ায়

আহারে! আহারে! 

জীবনের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো অধরাই রয়ে গেলো 

নগর এসে গ্রাম'কে কবর দিয়ে দিলো

অন্ধকারে ঢাকা পড়ে রয়ে যায় আমার গ্রাম-স্বপ্ন।   


 

০৭ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


গ্রাম স্বপ্ন 

 - যাযাবর জীবন 

  


প্রেম করে কিংবা না করে

কত জনই তো কবিতা লিখে

প্রেমের কবিতা, 

প্রেম লিখতে গেলে কেন আঘাত পেতেই হবে? 

আঘাত না পেয়ে কি প্রেমের কবিতা লেখা যায় না? 

আরে প্রেম করলেই তো প্রেমের কবিতা লেখা যায়,  

যায় না?

হয়তো যায় না, গেলে তো মানুষ থেকে প্রেমের কবিতা হয়ে যেতো বেশি 

প্রেম কে নাই বা করে, কম আর বেশি? 


কেউ কেউ একাধিক প্রেম করে, 

ওরা সবাই কি প্রেমের কবিতা লিখে? খাতা ভরে ভরে

কত প্রেমিক প্রেমিকাই তো আছে যারা কবিতাই বোঝে না, 

তাই বলে কি ওরা প্রেম করে না? 

আরে করে, করে

ওরাও প্রেম করে 

একটি দুটি থেকে শুরু করে হালি হালি প্রেমে পরে

ডজন ডজন প্রেম করে 

কবিতা বুঝলেও করে, না বুঝলেও করে; 

 

এদের মাঝে কেউ কেউ প্রেম করে করে ধোঁকা খায়, বোকা বনে 

আবার কেউ বা প্রেমিকাকে নিয়ে সংসার গড়ে 

এদের মাঝে কেউ কেউ হয়তো কবিতা বোঝে

কেউ হয়তো কবিতা লিখে 

আর কারো কাছে কাব্য মানেই বাতুলতা;


তবে এদের মাঝে কেউ কেউ ঐ যে ধোঁকা খেয়ে বোকা হয়!  

কিংবা ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা! 

তাদের মধ্যে একটা দল, খুব দুঃখ পেলে কাগজে কলম ঘষার চেষ্টা করে

কেউ কেউ উস্কোখুস্কো চুলে মুখ ঢেকে রাখে 

কেও চেহারা আড়াল রাখে সিগারেটের ধোঁয়ায়,  

কেউ কেউ আপন মনে বিড়বিড় করে কি কি সব কথা বলে

তারপর কোন একটা সময়ে হাতের কলম আঁকতে শুরু করে কাগজে 

দুষ্ট লোকেরা ঠাট্টার ছলে বলে ধোঁকা-কথন, ছ্যাঁকা-গাঁথন   

তবে বোদ্ধাদের কেউ কেউ বলে কবিতা

এভাবেও নাকি কবিতা লেখা হয়

এভাবেও নাকি কিছু কবিতার জন্ম হয়;


আমি কবিতা লিখতে শিখি নি

কবিতা যে আসলে কি? তা হয়তো জীবনে বুঝিই নি; 

মাঝে মাঝে মন যখন খুব খারাপ থাকে! 

 - তখন কাগজে কলম ঘষি,  

মাঝে মাঝে মন যখন খুব ভালো থাকে! 

 - তখনো কাগজে কলম ঘষি, 

কখনো হয়তো কোন এক রূপবতী নারী দেখি 

তখন মন উচাটন হয়, কখনো কখনো মন বিহ্বল   

 - আমি কাগজে কলম ঘষি, 

মাঝে মধ্যে রূপবতীদের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে আয়নায় চোখ যায়

আয়নার মানুষটাকে দেখে মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায় 

 - আমি বাস্তবে ফিরে আসি, তারপর যথেচ্ছা কাগজে কলম ঘষি হিবিজিবি,  

আমি প্রেমিক হয়ে কিংবা না হয়েও চিন্তার বিভোরে হারাই 

কাগজ কলম সামনে পেলে মনের অজান্তেই আঁক দিয়ে যাই,


একটা কথা কি জানো?

শুধুশুধুই আমি কাগজে কলম ঘষে যাই

সাদা কাগজে কিছু অর্থবহ কিংবা অর্থহীন কালো দাগ ফুটে ওঠে 

আমি কুটিকুটি করে কাগজ ছিঁড়ে বাতাসে ওড়াই, 

দুঃখ একটাই - একটা কবিতাও লিখতে পারলাম না জীবনে,  

প্রেম করে কিংবা না করে।   




০৭ ডিসেম্বর, ২০২১


#কবিতা 



প্রেম করে কিংবা না করে 

 - যাযাবর জীবন 





 


সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১

দাম্পত্যের স্পর্শানুভূতি

স্পর্শ অনুভব, স্পর্শে অনুভূতি 

কিছু অনুভব ভালো লাগার

কিছু অনুভব ভালোবাসার 

কিছু অনুভূতি ভালোবাসার

কিছু অনুভূতি ঘৃণার,

স্পর্শে অনুভব বোঝা যায়

স্পর্শে চেনা যায় অনুভূতি 

মনে যদি ভালোবাসা থাকে কিংবা ঘৃণা; 


পরস্পর বিরোধী বিপরীতমুখী এই দুটি তীব্র অনুভূতি সবচেয়ে বেশি বোঝে কে জানো? 

দাম্পত্য;


দাম্পত্যে ভালোবাসা থাকলে, তীব্র ভালোবাসা

এরা জড়িয়ে রয় জীবনের শেষ পর্যন্ত 

স্পর্শে, অনুভবে, অনুভূতিতে

ভালোবাসার অনুভূতিতে;


আবার কখনো দাম্পত্যে অবিশ্বাস থেকে ঘৃণা, তীব্র ঘৃণা 

এদের ছাড়াছাড়ি হতে সময় লাগে না  

ঘৃণানুভূতি পরস্পর স্পর্শে, অনুভবে আর অনুভূতিতে

তীব্র ঘৃণার এক বিবমিষা অনুভূতি; 


কিছু অসহনীয় দাম্পত্য ঘৃণা নিয়েও বয়ে যেতে হয় 

কিছু লোকলজ্জা আর লোকভয়ে, কিছু সামাজিক চাপে  

কিছু সন্তানদের দিকে চেয়ে আর কিছু অসহায়ত্বে  

এদের থেকে দুঃখী আর কেও নয়; 


সুখী দাম্পত্যে রাতভর পরস্পর জড়িয়ে থাকে স্বামী স্ত্রী  

শরীরে শরীরে স্পর্শের মাধুর্য ভালোবাসা ছড়ায়,    

অন্যদিকে রাতের পর রাত বালিশ ভেঁজে অসুখী দাম্পত্যের কান্নায়  

দাম্পত্য এদের ক্ষেত্রে শুধুই একটি নাম, দুজন আলাদা বিছানায়।  


৩০ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


দাম্পত্যের স্পর্শানুভূতি 

 - যাযাবর জীবন 




রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১

একটা মেয়ে

একটা মেয়ে সারাদিন 

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত 

সন্ধ্যা থেকে ভোর 

কোন একদিন আমি হয়েছিলাম তোর;


একটা মেয়ে অবোধ্য

মাঝে মাঝে কুয়াশা 

মাঝে মাঝে ধোঁয়াশা 

বুঝতে গিয়েও বুঝতে না পারার হতাশা; 


একটা মেয়ে ঘুম ভাঙা সকাল

ভোরের সূর্য

শরীরে নরম রোদ মেখে রয়, 

দুপুরের বিষণ্ণতা

বিকেলের মন খারাপ

চায়ের কাপে লেগে রয়, 

সন্ধ্যার গোধূলি 

দিগন্তের কুয়াশা 

রাতের সাথে কথা কয়, 

একটা মেয়ে দিনে সূর্য 

রাতে চাঁদ 

অমাবস্যায় তারা হয়ে রয়;   


একটা মেয়ে আমার ঘরে 

সকালে ঘুম ভাঙায় আদরে 

দুপুরে অভিমানে রাগ করে 

বিকেলে অভিমানে বিষণ্ণ রয়, 

সন্ধ্যায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনে

রাতে ঘরে ফিরলেই জ্যোৎস্না হয় 

তারপর রাতভর জড়িয়ে রয় 

কেউ কেউ ভালোবাসা কয়; 


মেয়েটা জানে না   

সে আছে বলেই কুয়াশা কেটে ভোর হয়  

সূর্য উঠে হয় সকাল 

তার অভিমানে আকাশে মেঘ জমে 

কেঁদে ফেললেই বৃষ্টি নামে  

তার হাসিতে আকাশে জ্যোৎস্না হাসে 

মন খারাপে অমাবস্যা 

সে আছে বলেই চার দেয়াল আমার ঘর; 


মেয়েটা জানে না সেই আমার লেখার কলম

আর তার সাথে কাটানো দিনগুলো লেখার খাতা 

মেয়েটাকে কখনো বুঝতেই পারে নি  

সেই আমার কবিতা। 

 

২৫ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা


একটা মেয়ে

 - যাযাবর জীবন 




(ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।) 






দ্বৈত জীবনের কথা

কখনো শুনেছ কারো দুটো জন্মদিন থাকে? 

আমার আছে,

আরে নাহ!  

আমি দুবার জন্ম নেই নি, 

একটা আসল আরেকটা সার্টিফিকেটের 

এখন সার্টিফিকেটে কেন অন্য একটা তারিখ হতে হয়

সেটা জানা নেই আমার

এটাই সত্য;


কখনো শুনেছ কারো দুটো বিবাহ বার্ষিকী থাকে? 

আরে নাহ! দুটো বিয়ে করে না কিন্তু

কিছু মানুষ দুটো, তিনটে, চারটে বিয়ে করে

তাদের দু, তিন বা চারটে বার্ষিকী থাকতে পারে, 

আমার কিন্তু একটিই বিয়ে 

তবুও আমরা দুটি বিবাহ বার্ষিকী পালন করি বছরে

একটি আসল, খুব অল্প লোকে জানে

আরেকটি লোক দেখানো 

এটাও সত্য; 


কখনো শুনেছ একটা মানুষের দুটো চেহারা থাকে?

আমার আছে

একটা খুব ভালো মানুষী চেহারা, তোমরা সবাই যাকে চেন

আরেকটা খুব কুৎসিত, অন্ধকার, কালো 

ওকে তোমরা কখনো দেখ নি

আমি ঐ চেহারাটা কাউকে দেখতেও দেই নি

ওটা শুধু আমি দেখি,

খুব মাঝে মাঝে তাকে আয়নায় ভেতরে দেখি

মাঝে মাঝে ঘন কালো অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে দেখি 

মাঝে মাঝে আমার ভালোমানুষি চেহারার ভেতর থেকে ওকে বের করে আনি 

ওর সাথে কথা বলি, ওর রিপুগুলোকে আয়নায় দেখে আঁতকে উঠি 

তারপর ভয়ে বাতি জ্বালিয়ে থরথর কাঁপতে থাকি,

একটা শরীরের ভেতরে দুইজন মানুষের দ্বৈত এক জীবন পার করছি, 

এটাও সত্য।   


২৫ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


দ্বৈত জীবনের কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছোটবেলা বড়বেলা

ছোটবেলায় দিনগুলোকে অনেক বড় মনে হতো,  

হবে নাই বা কেন?  

সেই কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো তারপর স্কুল 

দুপুরে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে পড়তে বসা 

বিকেলে খেলার মাঠে দৌড়ানো তারপর আবার সন্ধ্যায় বাসায় এসে পড়ার টেবিলে 

রাত দশটা বাজতে না বাজতেই দুচোখ ঘুমে ঢলে পড়তো, 

রাত দশটা থেকে সকাল পাঁচ বা ছয়টা, ছোট চোখে বিশাল ঘুমের ব্যাপ্তি 

বিশাল দিনের ব্যাপ্তি সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা 

ছোট বেলায় আমরা এক একটা দিন কাটাতাম বিশাল, কাটাতাম বিশাল এক একটা রাত

কি আনন্দেই না কেটে যেত খেলাধুলো আর লেখাপড়ায় মাসের পর মাস;


আর এখন! 

কোন দিক দিয়ে সকাল হয়! সকাল হতে না হতেই দুপুর! 

দুপুর হতে না হতেই সূর্য ঢলে পড়ে 

সন্ধ্যা লাগতে না লাগতেই চোখের নিমিষে রাত্র দশটা এগারোটা বারোটা বেজে যায় 

ঘুমোতে যেতে যেতে একটা দুইটা তিনটা 

চোখ ডলতে ডলতে কোনমতে সকাল আটটা বা নয়টায় ঘুম থেকে ওঠা 

ঘুম ঢুলুঢুলু চোখে অফিসে, আর অফিসে ঢোকামাত্র কি যে হয়ে যায়!

কোথা দিয়ে যে দিন যায়! চোখের নিমিষে সন্ধ্যা, ট্রাফিক ঠেলে বাসায় আসতে আসতে রাত

ঘুমাতে যেতে যেতে রাত একটা দুইটা তিনটা

বড়বেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দিনগুলো বড্ড বেশি ছোট হয়ে গিয়েছে

খুব ছোট হয়ে গিয়েছে রাত

রুটিনে বাঁধা জীবন, কেটে যাচ্ছে মাসের পর মাস; 


সময় কিন্তু সময়ের জায়গাতেই আছে শুধু বদলে গেছি আমরা 

ছোট থেকে বড় হতে হতে বদলে গেছে আমদের সময়গুলো  

কোন একদিন যখন ছোট ছিলাম দিনগুলো বড় ছিলো বড় ছিলো রাত, 

আজ বড় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দিনগুলো ছোট হয়ে গেলো আর আর ছোট হয়ে গেল রাত;


আজকাল মাঝে মাঝে মনে হয় সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারলে কি ভালোই না হত!

মায়ের কোলে, বাবার পিঠে 

খাওয়া পড়ার চিন্তা নাই, সংসার চালানোর ধান্ধা নাই; শুধু লেখাপড়া আর খেলাধুলা

আজকাল বড্ড বেশি ক্লান্ত লাগে

মাথাটা বড্ড বেশি ভার ভার লাগে

সংসারটা চালাতে হবে, সংসারের মানুষগুলোর মুখের আহার, দৈনন্দিন আনুষঙ্গিক খরচাদি 

আহ! মাথায় সবসময়ই একটা চিন্তার ভার 

চিন্তায় চিন্তায় কোথা দিয়ে দিন যায়! কোথা দিয়ে রাত!

দিন ছোট হতে হতে ছোট হয়ে গিয়েছে রাত;      


এভাবে দিনগুলো ছোট হতে হতে একসময় দিন ফুরোবে নিমিষে  

একসময় রাত ছোট হতে হতে রাত রয়ে যাবে ঘুমঘোরে   

একদিন নিমিষে চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসে চোখের নিমিষে আমি কবরে।


২৪ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 



ছোটবেলা বড়বেলা

 - যাযাবর জীবন 


ভাতের মর্ম

এক সানকি ভাত

একটু লবণ ছিটা 

জুঁই ফুলের মত সানকিতে ফুটে থাকা ভাত 

গরম কিংবা পান্তা 

ভাতের মর্ম বোঝে ক্ষুধা ; 


তোমরা ভাত খাও

খেতে গিয়ে ছিটাও

খেতে খেতে ছিটাও

নষ্ট কর, ফেলে দাও

কেন? 

ভাতের অভাব বোঝ নি কখনো; 


ক্ষুধা পেটে একবার খেয়েই দেখ না! 

সত্যিকারের ক্ষুধা পেটে 

যে পেটে ভাত পড়ে নি দিনের পর দিন, অভাবে 

তখন, ঠিক তখনই প্লেট থেকে ভাত খাবে দানা দানা কুড়িয়ে; 


ভাতের মর্ম জানে ক্ষুধা 

অস্তিত্ব নাড়িয়ে দেয়া ক্ষুধা,

স্বপ্নে জুঁই ফুলের মত ফুটে থাকে ভাত

গরম বা পান্তা 

একটু লবণ ছিটা 

ব্যাস।




২৩ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


ভাতের মর্ম 

 - যাযাবর জীবন 


(ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।) 

 





শব্দরা থেমে গেলে

মাঝে মধ্যে একটা দুটো শব্দ আসে মাথায়

মাঝে মধ্যে একটা দুটো লাইন 

মাঝে মধ্যে একটা দুটো শব্দ চলে আসে কলমের ডগায় 

মাঝে মধ্যে একটা দুটো লাইন

তারপর হাত স্তব্ধ  

কলম স্তব্ধ  

মাথা শূন্য

আমি কখনো কলম কামড়াই, কখনো হাত

কখনো মাথা ঠুকি দেয়ালে

অসহায় দৃষ্টিতে কলমের দিকে তাকিয়ে থাকি মন স্তব্ধ হলে;


মন স্তব্ধ হলে শব্দরা থেমে যায় চেতনায় 

শব্দরা থেমে গেলে স্তব্ধ হয় কলম 

কলম থেমে যাওয়ার বেদনা বোঝে হাত

হাত থেমে যাওয়ার বেদনা জানে খাতা 

কবিতা কাঁদে স্তব্ধ মনের কান্নায়, 

অনেকদিন হয়ে গেছে কলম আঁকে নি শব্দের আঁকিবুঁকি।


২১ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


শব্দরা থেমে গেলে 

 - যাযাবর জীবন 



মানুষ হওয়ার জন্য

মাঝে মধ্যে প্রতিচ্ছবি দেখি আয়নায় 

চমকে উঠি

ওটা আমি নই, আমি নই 

অন্য কেউ; 


দিনের প্রতিচ্ছবিতে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ

রাতের প্রতিচ্ছবিতে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ

আলোতে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ

অন্ধকারে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ; 


সাদা আমির সাথে কালো আমির পার্থক্য বিশাল 

পার্থক্য দিনের আমির সাথে রাতের আমির 

আয়না আমাকে দেখায়, আর প্রতিচ্ছবি 

আমি চমকে উঠি

আঁতকে উঠি

যখনই আয়নায় নিজেকে দেখি 

ওটা আমি নই, আমি নই 

অন্য কেউ; 


রাত আর দিনের পার্থক্য বিশাল

বিশাল পার্থক্য আলো আর অন্ধকারের

যোজন যোজন পার্থক্য মানুষ আর পশুতে,

মাঝে মাঝে আমি কেমন যেন বড্ড পশু বনে যাই

ভেতর থেকে পশুর গর্জন শুনলেই দৌড়ে আয়নার সামনে যাই

রিপুতে মোড়া পশু দেখলেই ঘৃণার চাবুক পড়ে বিবেকে

আয়না মানব শুধরে নিতে চায় নিজেকে  

মনুষ্যত্ব হয়তো এখনো বেঁচে আছে কোথাও,  

মাঝে মধ্যে আয়নায় তাকাতে হয় 

মাঝে মধ্যে নিজেকে নিজে যাচতে হয় 

মানুষ হওয়ার জন্য।


২১ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


মানুষ হওয়ার জন্য

 - যাযাবর জীবন 


স্বপ্নে স্বপ্নে তুই

বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই কোমল একটা আলো এসে পড়লো গায়ে

জানালা দিয়ে রাতের দিকে তাকাতেই দেখি আকাশে চাঁদ 

নারকেল পাতায় পিছলে কাঁচের শার্শি গলে লুটোপুটি খেলছে গায়ে

আমি ঠোঁট বাড়িয়ে দিলাম চাঁদের দিকে

জ্যোৎস্না আমার মুখ চুমতেই কোথা থেকে জানি হিংসুটে মেঘ এসে আড়াল দিলো আকাশে

জানালা'টা পুরোপুরি খুলে দিতেই হালকা হিম বাতাস জড়িয়ে ধরলো আমায় আদর করে

সরসর ভৌতিক শব্দে নারকেল পাতা দুলছে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে

আমি অন্ধকার'কে চোখ জড়িয়ে ধরতে বললাম,  

চোখে ঘুম বাসা বাঁধলে তবেই না তুই আসবি স্বপ্নে স্বপ্নে।


#কবিতা 


১৮ নভেম্বর, ২০২১


স্বপ্নে স্বপ্নে তুই 

 - যাযাবর জীবন  


এক পলকের দেখা

এক পলকের দেখা 

পলকে পলক ফেলা 

ভালো লাগলো? আবার তাকালো 

তারপর আবার, তারপর আবার  

চোখাচোখি হতেই থাকলো;  


এবার চোখ ইশারা

বুকে সাহস সঞ্চয় 

কাছে আসা, পাশে বসা

আঙুলে আঙুল থেকে হাতে হাত

ঘন নিঃশ্বাস,  

ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতেই ভালোবাসা 

স্পর্শ থেকে স্পর্শানুভূতি 

হৃদয়ে হৃদয়ানুভূতি 

সময়ের সাথে সাথে বোঝাপড়া

তারপর মিলন কিংবা ক্ষরণ,

পলকে পলক ফেলাটাই কাল হয়েছিলো;


কারো জীবন কাটে অবহেলায় 

কারো ভালোবাসায় 

কারো বোঝাপড়ায়

কারো মানিয়ে চলায় 

কারো বিচ্ছেদে আর কান্নায়,

এক পলকের সেই দেখাটাই কাল হয়েছিলো জীবনে। 


#কবিতা 


১৮ নভেম্বর, ২০২১


এক পলকের দেখা

 - যাযাবর জীবন 


রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১

শিক্ষিত মূর্খ

তোমরা লেখাপড়া করেছে

বড় বড় ডিগ্রী নিয়েছ, 

শিক্ষিত হয়েছ কি?

আমাকে তো তোমাদের স্কুলে ভর্তিই করো নি; 


কেনই বা করবে বলো?

সেই শৈশব থেকেই তো আমাকে আলাদা করে দিয়েছ,

আলাদা আচার, আলাদা ব্যবহার 

আর আমার প্রতি তোমাদের উপহাস,

কখনো ঠারেঠোরে কখনো নির্লজ্জের মত সামনাসামনি

আরে আমি তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই সন্তান

অবুঝ জ্ঞানে এইটুকু জানি; 


আমি জানলে কি হবে বলো?

একবার ভেবেছ কি? আমার প্রতি তোমাদের ব্যবহারটা কি হলো? 

না হয় তোমাদের থেকে বুদ্ধিমত্তায় আমার একটু কমই হলো!

না হয় তোমাদের মত আমার অঙ্গে অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন একটু কমই হলো!

না হয় আমার কথা বলায় একটু জড়তাই হলো!

না হয় আমার হাঁটায়, চলায় একটু আড়ষ্টতাই পেলো! 

না হয় আমার বোধ বুদ্ধি তোমাদের থেকে অনেকটাই কম হলো!

তবুও আমি তো তোমাদেরই কারো সন্তান, কারো ভাই

তবে আমাকে কেন বিশেষ সন্তান উপাধি দেয়া হলো?

কেন আমাকে তোমাদের স্কুল থেকে ছাড়িয়া আলাদা স্কুলে দেয়া হলো? 

আমাকে তোমাদের থেকে আলাদা করে দিয়ে রক্ত সম্পর্কের সাথে কেন উপহাসটা করা হলো?

তোমরাই বলো;    

আরে এত এত পড়ালেখা করে ডিগ্রী হাসিল করে তোমাদের কি এমন বিশেষ উন্নতি হলো? 


কি ভেবেছ তোমরা? 

বোধ বুদ্ধিহীন জড় পদার্থ? 

আরে আমিও বুঝি তোমাদের জীবনের অর্থ, 

অথচ তোমরা অর্থ বলতে বোঝ শুধুই টাকা কড়ি 

তোমরা অর্থ বলতেই বোঝ স্বার্থ, 

ও হে শিক্ষিত ভাই বোন! সবই বুঝি

শুধু তোমাদের মত ভাব প্রকাশ করতে পারি না,

আমি বোবাচোখে দেখি, সুধু চেয়ে চেয়ে দেখি 

তোমরা শিক্ষিত হয়েছ, মানুষ হয়েছ কি? 

তোমারা নিজেদের ডিগ্রিধারী বলো 

আমি বলি শিক্ষিত মূর্খ; 


আমার কাছে তোমাদের মত ডিগ্রী নেই নি তবুও নাম পেয়েছি বিশেষ সন্তান

আমি প্রত্যেকটা উপহাস বুঝি যেগুলো তোমরা আমায় পদে পদে করেছ দান,

এবার একটু থামো, একবার ভাবো, একবার আয়নার দিকে ফেরো 

আর আমার জায়গায় একটাবার তুমি নিজেকে চিন্তা করো।  



৩০ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


শিক্ষিত মূর্খ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






   

রঙের সংসার

শুধু কি রং মেখেই সং সাজতে হয়?

রং না মেখে সং সাজা যায় না? 


কেউ রং মেখে সং সাজে, কেউ না মেখে;  

রং না মেখে সং সাজা কেমন?

মানুষগুলোকে দেখ, 

এদের কান্না চেপে হাসতে হয়

কখনো হাসতে হাসতে কাঁদতে হয়

ঐ যে ওদিকে ওরা! 

ওদের হাসিখুশি মুখ দেখে কে বলবে মনে একরাশ বেদনা সয়? 

মানুষ হওয়ার বড় যন্ত্রণা হলো মুখোশ-হীন এক মুখোশ মুখে চলতে হয়; 


মানুষকে রং না মেখেও কেন সং সাজতে হয়?

সংসার কথা কয়; 


সংসার এক বড্ড আজব জায়গা,

এখানে অনেকগুলো মানুষ রয়

আর মানুষ মাত্রই আঘাত দেয় 

আঘাত পেলেই জানা হয়; 

এখানে বাবা-মা রয়, রয় স্বামী-স্ত্রী

ভাই-বোন, সন্তান সন্ততি 

এরা কি আপন নয়? তবুও মনে কি যেন এক ভয় 

সংসারে মানুষগুলো এদের থেকেই বড় বড় আঘাতগুলো সয়;


তবুও মানুষ রং না মেখেও সং সাজে

সংসারে সং সেজে ঢং করে, হাসিখুশি থাকার, ভালো থাকার 

ভেতরে অভাব কথা কয়, স্বার্থ কথা কয়, কান্না কথা কয় 

বাইরের মানুষ কি করে জানবে একটা সংসারে কি হয়? 


৩০ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


রঙের সংসার 

 - যাযাবর জীবন  


     

 

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

ঈর্ষান্বিত প্রেম

চুড়ি তোর হাতে, ঈর্ষান্বিত আমি 

তোকে নূপুর পায়ে দেখি, আমি ঈর্ষায় জ্বলি  

তোর কপালে টিপ, ঈর্ষান্বিত মন 

ওরা কেন তোকে ছুঁয়ে দেয়? যখন তখন! 


সেদিন তুই নীল জামাটা পড়েছিলি

ঈর্ষায় নীল হয়েছিলাম আমি,  

ঐ যে ওদিন! লাল শাড়ির আঁচল টেনে দিলি

আমার ঈর্ষায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা খেয়াল করেছিলি?

 

যখনই তুই সেঁজেগুজে আয়নার সামনে দাঁড়াস

আয়নাকে আমার বড্ড হিংসে হয় 

হিংসে হয় আমার বৃষ্টি'কে যখন তোকে ভিজায়

হিংসে হয় বাতাস'কে যখন তোর চুল ওড়ায়; 


অথচ ওগুলোর একটাও আমি হতে পারব না, 

তাহলে পারব কি? আরে আমি তো হয়েই আছি!

প্রেমিক হলে সেগুলোর একটাও হতে হয় না

শুধু ঈর্ষা করতে হয়, যেগুলো তোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। 


১৯ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা


ঈর্ষান্বিত প্রেম 

 - যাযাবর জীবন 


ঝড় সয়ে সয়ে

মানুষ হওয়ার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা কি জানো? 

যাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বড় বড় আঘাত পেয়েছ তাদের সাথেই কথা বলতে হয় হাসি মুখে

তাদের সাথেই বসবাস করতে হয়, সকলের সামনে ভাব ধরে সুখে;  

খুব বিপরীত ধর্মী একটা অবস্থা, তাই না? 

কি করবে? মানুষ হওয়ার যন্ত্রণা; 


মানুষ সবচেয়ে বেশি আঘাত পায় কার কাছে থেকে জানো?

একদম একান্ত আপন জনদের কাছ থেকে,

বাবা-মা পায় সন্তানের কাছে থেকে আর সন্তান পায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে  

আর না হয় স্বামী পায় স্ত্রী থেকে অথবা স্ত্রী পায় স্বামী থেকে 

আর ভাই বোন? এদের তো জন্মই হয়েছে আঘাত দিতে;


মানুষ সবচেয়ে বেশি আঘাত পায় কিসে জানো?

যখন এই খুব আপন জনে'রা, রক্তের সম্পর্কগুলো আঘাত হানে মনে 

তুচ্ছ অর্থ আর স্বার্থের জন্য 

সম্পত্তি? সে তো রক্তের সম্পর্কে রক্তারক্তি কাণ্ড;


বাবা-মা'য়ের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক আছে কষ্ট দেন সন্তানদের, তবে আছে 

কিন্তু আজকাল বাবা-মা'কে কষ্ট দেওয়া সন্তান যেন ঘরে ঘরে,  

এই তো কিছুদিন আগেও বৃদ্ধাশ্রম ছিলো আলোচনার বিষয়  

আর আজকাল! পরিণত হয়েছে ব্যবসায় 

হবেই বা না কেন? 

বৃদ্ধ বাবা-মা'কে ঘরে না রেখে ওখানে রাখলে ঘরের শান্তি বজায় থাকে যে; 

     

ঘরের শান্তির কথা আসতেই চলে আসে স্বামী-স্ত্রীর কথা 

এই তো মাত্র কিছুদিন আগেও, আমাদের বাবা-মায়েদের আমলে   

স্বামী-স্ত্রী বলতেই দুজনার মতের মিল, স্বামী-স্ত্রী বলতেই পরিবার 

স্বামী-স্ত্রী বলতেই বন্ধন, স্বামী-স্ত্রী মানেই সুখের ঘর, শান্তির আশ্রয়;  


আর আজকাল! 

যদিও চিরকালই স্বামী-স্ত্রী মিলেই পরিবার,

তবুও ইদানীং যেন স্বামী-স্ত্রী'তে মতের অমিল ঘরে ঘরে 

মতের অমিল থেকেই হয়তো ঘর বিমুখতা 

হয়তো সেখান থেকেই পরকীয়ার সূত্রপাত, তারপর নিত্য অশান্তি  

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সন্তানদের দিকে তাকিয়ে কোন একজনকে মেনে নিতে হয়

মানিয়ে চলতে হয়, মানিয়ে চলায় দাম্পত্যের মাধুর্যতা কোথায়?   

আর তা না হয় বিবাহ বিচ্ছেদ তো হরেদরে,

যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম!

এই সব আপনজনের কাছ থেকে আঘাতে পেয়েও আমাদের মানিয়ে চলতে হচ্ছে ঘরে ঘরে

অশান্তির চরমে বাস করেও সবার সামনে ভাব ধরে থাকতে হয় মুখে মেকি হাসি ধরে;


এটা মানুষ হওয়ার যন্ত্রণা,  

মনে এক আর মুখে এক, সংসারে বাধ্য হয়ে  

আমরা বৈপরীত্যের এক জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি মনে অশান্তির ঝড় সয়ে সয়ে। 


১৮ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


ঝড় সয়ে সয়ে

 - যাযাবর জীবন 


   


দর্শনধারী

মানুষ মূলত দর্শনধারী,

নাকি ওটা শুধু আমিই? 

প্রথম দর্শনে কাওকে ভালো না লাগলে তার প্রতি কেন জানি একটা ঋণাত্মক ধারণা মনে গেঁথে বসে, 

সে যত ভালো মানুষই হোক না কেন! 

কেন জানি তার প্রতি কোথাও একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েই যায়;


আমার তো হয়,

হয়তো মানুষ হিসাবে আমি একটু নিচু মনের, 

তোমাদের কারো হয় কি? 

হয় না?

তবে তো তোমরা সত্যিই অনেক ভালো মানুষ; 


ধ্যাত! শুধু শুধুই আমি উল্টো কথা বলছি,

আগ বাড়িয়ে আমি কারো সাথে মিশতেই পারি না! তার আবার ভালো লাগা আর মন্দ লাগা কি? 

আরে নাই যদি মিশতে পারলাম তার প্রতি ধনাত্মক আর ঋণাত্মক ধারণা হবে কিভাবে? 

তবে আমার ক্ষেত্রে অনেকবারই হয়েছে যে কারো সাথে প্রথম দেখায় 

কেন জানি অনেকেরই আমাকে পছন্দ হয় নি,

অপছন্দের একটা আলাদা দৃষ্টি আছে 

 - আমার দৃষ্টিশক্তিটা হয়তো শকুনের থেকেও তীব্র,    

অপছন্দের আছে অন্যরকম একটা ঘ্রাণ

 - আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয় হয়তো কুকুরের থেকেও প্রবল, 

সেসব ক্ষেত্রে আমি সাধারণত চুপ হয়ে যাই, কিংবা একটু তফাতে সরে যাই;


অনেকেই পছন্দ আর অপছন্দ বুঝতে পারে না

তারা কলকল করে যেতেই থাকে, 

কারও বিরক্তির উদ্রেক হলো কি হলো না তাতে যেন তাদের কিছুই যায় আসে না

আমি মাঝে মধ্যে ভাবি, আমার অনুভূতিগুলো তাদের মত হলে হয়তো খারাপ হতো না,

অন্তত সাবলীল ভাবে মানুষের সাথে তো মিশতে পারতাম!

তীক্ষ্ণ অনুভূতি সম্পন্ন মানুষগুলো সহজে মিশতে পারে না।  


 

১৮ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


দর্শনধারী 

 - যাযাবর জীবন 


মানসিকতার বদল

আমরা সহজে মানুষের দেয়া ব্যথা বেদনা ভুলতে পারি না,

মানুষ হওয়ার এই এক যন্ত্রণা;


অথচ খুব সহজেই ভুলে যাই মানুষের ভালো কাজগুলোকে

মানুষের দেয়া আনন্দগুলোকে

মানুষের দেয়া খুশিগুলোকে,

অথচ সেই একই মানুষের হাজার ভালো কাজের ভিড়ে যদি একটা কটু কথা বলে!

যদি তার একটা আচরণ আমার মনোপুত না হয়!

যদি তার কোন একটা কথায় আমার মনে রাগের উদয় হয়! দুঃখ পাই, 

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই কথাটাকে আর ভুলতে পারি না,

আমাদের জীবন কাটে এর, ওর, তার প্রতি একটা বিবমিষা ভাব নিয়ে

কখনো বিবমিষা পরিণত হয় ঘৃণায়

শুধু কারো কোন একটি কথায়, কিংবা আচরণে

যা আমাকে ব্যথিত করেছিলো জীবনের কোন এক সময়ে;


সেই একটি কথা কিংবা আচরণ তার সমস্ত ভালো কথাগুলো

ভালো আচরণগুলো, তার সমস্ত ভালোমানুষিগুলোকে ছাপিয়ে যায়

সময়ের স্রোতে সময় গড়ায়; 


আমরা ক্ষমা করতে পারি না, 

ক্ষমা করতে পারি না মানুষের দু চারটি কথাকে

মানুষের দু চারটি কাজকে, মানুষের দু চারটি আচরণ'কে,  

অথচ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছি মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে

আমার প্রতিদিনের হাজার ভুলের জন্য, নানা অপরাধের জন্য, জানা ও অজানা পাপের জন্য, 

তাই না? 

এভাবে কখনো ভেবেছি কি?


একবার আমরা মানসিকতা'টা একটু বদলেই দেখি না! 

একটু মানসিকতার বদলে হয়তো বদলে যেতে পারে পৃথিবী; 


আমি বলছি না একজন সন্ত্রাসী'কে ক্ষমা করে দিতে

আমি বলছি না একজন ধর্ষক'কে ক্ষমা করে দিতে 

আমি বলছি না একজন খুনিকে ক্ষমা করে দিতে,  

আমি বলছি দৈনন্দিন জীবনে যারা আমার কাছের মানুষ  

বন্ধু বান্ধব,  আত্মীয় স্বজন 

যাদের কোন কথায়, আচরণে, কাজে 

মনে আঘাত লেগেছিল 

ফলশ্রুতিতে যাদের থেকে আমরা দূরে সরে আছি,  

তাদের ভুলগুলিকে ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে, একটাবার তাদের ক্ষমা করেই দেখি না!

সম্পর্কগুলোকে সুযোগ দিলে হয়তো ভাঙা সম্পর্কগুলো আবার নতুন ভাবে জোড়া লেগে উঠবে

হয়তো নতুন সম্পর্কগুলো সেই প্রথমকার সম্পর্কগুলো থেকেও সুন্দর হয়ে উঠবে,

শুধু দরকার একটু পরিবর্তিত মন মানসিকতার

শুধু দরকার একটু ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির, 

তাই না? 


মন থেকে অভিমান মুছে ফেলে একবার আয়না'কে জিজ্ঞাস করেই দেখ না!

আয়না মিথ্যা বলে না। 


১৭ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


মানসিকতার বদল

 - যাযাবর জীবন 


কাব্য না ছবি?

এক একবার ফেসবুকের ওয়ালে চোখ যায়, 

এক একবার আয়নায়;


ফেসবুক দেয়ালে হরেক রকম লেখা

কত সুন্দর সুন্দর গল্প!

কি ভালো ভালো এক একটা কবিতা! 

আমি প্রায়শই মুগ্ধ হয়ে পড়ি,

তারপর লেখার নীচে লেখকের ছবি দেখি

ছবিটা দেখলেই খুব মনে মনে ভাবি

এ লেখার সাথে ছবিটার সম্পর্ক কি?

কোথাও কোন সম্পর্ক না পেয়ে লেখকের প্রোফাইলে যাই

গিয়েই থমকে যাই, 

প্রতিটা লেখায় নানা অঙ্গভঙ্গিমায় সেঁটে দেয়া আছে 

লেখকের এক একটা দারুণ দারুণ সব ছবি, 

মাঝে মধ্যে ভাবি, আমি কি লেখকের লেখা পড়ছি? নাকি তাকে দেখছি?

দূর দূর দিয়ে লেখার সাথে ছবির কোথাও সংগতি না পেয়ে ভাবি

 - আসলে অসংগতি আমার মনে,

 - কিংবা এটাই আজকালকার রীতি;


মাঝে মধ্যে আয়নায় আমার চোখ চলে যায়

ওখানে যে অবয়ব দেখা যায় সেটার সাথে 

দূর দূর দিয়ে কোন সংগতি খুঁজে পাই না আমার কোন লেখায়,

আর ঐ চেহারাটা কোন লেখার সাথে সেঁটে দিলে?

 - রক্ষে আছে? আরে একটা দুটো যে পাঠক যাও আছে! 

 - ওরাও দৌড়ে ভাগবে ছবি দেখার সাথে সাথে, 

চারিদিকে সুন্দর চেহারার জয় জয়কার 

ওখানে কাকের কি দরকার? 


আমি মাঝে মধ্যে ভাবি,

এই যে আজকাল ভালো ভালো সব লেখাগুলো ফেসবুকে আসে!

এর সাথে নানা ভঙ্গিমায় লেখকের ছবি কেন ভাসে?

কোথাও জবাব খুঁজে পাই না

সম্ভবত প্রশ্নটা করাই আজকালকার অসংগতি,

আসলেই তাই কি?


আমি মাঝে মাঝে খুব ভাবি,

তারপর রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, সুকুমার রায়, জীবনানন্দ দাশ

শীর্ষেন্দু, সুনীল, সংকর, হুমায়ূন আহমেদ, আহমেদ সফা 

ইত্যাদি লেখকদের বইগুলোর পাতায় পাতায় খুঁজতে থাকি লেখকদের ছবি;

কোথায় ছবি? ওদের পুরো বই জুড়ে তো ঠাসা ঠাসা কলমের বুননে 

শুধুই গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর নানা কাব্য-গাঁথা 

লেখকের ছবি যেন ওখানে বাতুলতা;


তাহলে আজকাল ফেসবুক লেখকদের কি হলো?

লেখার সাথে সাথে কেন ছবি দিতে হলো?

কি জানি বাপু? আমি বোধহয় সেই পুরনো দিনের লেখকদের মতই পুরনো

পুরনো আমার চিন্তা-চেতনা, পুরনো সব ধ্যান ধারণা

আজকালকার লেখাতে বোধহয় ছবি সাঁটাই রেওয়াজ;


মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব চিন্তা মাথায় খেলা করে -

আচ্ছা! সুকান্তের প্রতিটা কবিতার সাথে সাথে তার একটা ছবি হলে কেমন হতো?

 - খুব খারাপ হতো না মনে হয়।

জীবনানন্দ দাশের কবিতার সাথে? 

 - ওটা আরও ভালো হতো, কাশবনে একছবি, সবুজ ধানের ক্ষেতে আরেকটা, ইত্যাদি ইত্যাদি; 

নজরুলের প্রতিটা কবিতার সাথে সাথে তো তার একটা করে বাবরি দোলানো ছবি! 

 - উফফ! কেন যে উনি সে কালে জন্মেছিলেন? বড্ড আফসোস হয়; 

আচ্ছা! গীতবিতানের প্রতিটি গানের সাথে সাথে যদি রবিবাবু একটি করে ছবি সেঁটে দিতেন!

 - তাহলে কি আর হতো? 

 - গীতবিতানের পৃষ্ঠার সংখ্যা না হয় দ্বিগুণ হতো!

 - বই এর ওজন না হয় মাথায় করে বইতাম! 

 - হাতে না রেখে মাটিতে রেখে পড়তাম!

 - তবুও তো পাতায় পাতায় রবিবাবুকে দেখতাম!


খুব একটা খারাপ হতো না,

কি বলো? 



১৪ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


কাব্য না ছবি? 

 - যাযাবর জীবন 


ভুলের খেসারত

একজন মানুষের ছোট খাট একটা ভুল

একটা পরিবার'কে তছনছ করে দিতে পারে,

তোমরা কেউ কেউ হয়তো দেখেছে, কেউ কেউ অনুভব করেছ

আচ্ছা! তোমরা কি কেউ এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছ? 


ঐ যে ঐ পরিবারটার দিকে তাকাও-

 - ছেলেটা প্রেম করছিলো, তারপর একদিন কি যে হলো! কিছুদিন খুব মনমরা হয়ে থাকতো। তারপর কেউ কিছু বুঝার আগে হুট করে ফ্যানে ঝুলে পড়লো। একবার চিন্তাও করলো না বাবা-মায়ের ওপর দিয়ে কি যাবে। চিন্তা করে নি ভাই-বোনগুলোর কথা। তারপর থেকে পরিবারটার মুখে হাসি দেখি নি। 


ঐ পরিবারটাকে দেখ-  

 - ছেলেটা বেশ পড়াশুনা করছিলো। ইন্টারমিডিয়েট পড়তে পড়তে বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে মজা করে একদিন কি একটা ড্রাগস টেস্ট করলো। তারপর থেকে টেস্ট করতেই থাকলো। টেস্ট করতে করতে একসময় এডিক্টেড হয়ে গেলো। তার আর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা হয় নি। বছরে কিছুদিন রিহ্যাব সেন্টারে থাকে, তারপর বাবা-মা ভালো হয়ে গেছে মনে করে বাসায় নিয়ে আসে। একসময় আবার ঢুকে যায় সেই অন্ধকার জগতে, আবার কিছুদিন রিহ্যাব সেন্টার আবার বাসা। এই করে প্রায় বছর পাঁচেক পার হয়ে গেলো। অথচ ড্রাগের নেশাটা খুব ক্যাজুয়ালি টেস্ট করতে করতে করে ফেলেছিলো। আজকাল মধ্যবিত্ত বাবা'র আর সাধ্যে কুলোয় না ওকে রিহ্যাব সেন্টারে দিয়ে আসতে। এই পরিবারটার মুখ থেকেও হাসি চলে গিয়েছে অনেক দিন হলো।   


আর ঐ পরিবারটাকে দেখ - 

 - মেয়েটা বেশ ভালোই পড়ালেখা করছিলো। মেট্রিক দিতে দিতে প্রেমে পড়ে গেলো। তারপর বাসা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেশ প্রেম চলতে লাগলো। কোন এক সময় শরীর কথা বলে উঠলো, উঠতি যৌবনে কয়জনই বা কাম সম্বরণ করতে পারে? প্রেমিকের বন্ধুর বাসা, হোটেল, গেস্ট হাউস করতে লাগলো। একসময় পেট জানান দিলো। বাবা-মা জানলো, জানলো ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন, জানলো পাড়া পড়শিরা। প্রেমিক তখন আর তাকে চেনে না। আর এত জানাজানি মেয়েটা সহ্য করতে না পেরে একদিন একগাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিথর হয়ে গেলো। আর বাবা-মা! ওরা যেন বুঝতেই পারলো না ওদের কি লজ্জা পাওয়া উচিৎ না দুঃখ পাওয়া উচিৎ। ঐ পরিবারটাকেও আমি আর কখনো হাসতে দেখি নি। 


ঐ যে বিশাল দোতলা বাড়িটি দেখছ! 

 - ও বাড়ির ছেলেটার বায়না ছিলো একটা হোন্ডা কিনে দেওয়ার। বাবা অনেক করে মানা করা সত্ত্বেও মা আর দাদীকে হাত করে বাবা'কে রাজী করিয়েছিল। বাবা হোন্ডাটা কিনে দেওয়ার সময় পই পই করে মানা করেছিলো - বাবা'রে জোরে চালাস না। হিরোইজম দেখাতে যাস না। যৌবন না শোনে মুরুব্বীদের কথা। বন্ধুদের সাথে রেসের পাল্লা দিতে গিয়েছিলো। বাসায় ফিরলো লাশ হয়ে। নিমিষে পরিবারটির খুশির বাতি নিভে গিয়েছিলো। এই পরিবারটির মুখেও আমি হাসি দেখি নি।  


ঐ যে মহল্লার সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বী! 

 - ওনাকে সবাই শ্রদ্ধা ভক্তি করে। অথচ একদিন ইউনিভার্সিটিতে পড়া ছেলেটা'কে খুঁজতে বাসায় পুলিশ এলো। ওদের কাছেই জানতে পারলো ছেলেটা নাকি পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে আছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাক-মেইল, বোমাবাজি, ধর্ষণ, খুন এমন কোন অপরাধ নেই যেটাতে সে জড়িত নয়। অথচ মহল্লায় ভালো ছেলে বলতে তার উদাহরণ দেওয়া হতো। কবে কখন থেকে কিভাবে সন্ত্রাসী হয়ে গেলো বাবা মা কখনো বুঝতেই পারে নি। আজ মুরুব্বী মহল্লায় মাথা নিচু করে হাঁটেন। ওনার মুখ থেকে হাসি মুছে গিয়েছে চিরতরে। 


আচ্ছা! এই যে আমাদের আমাদের সন্তানদের ছোটখাটো ভুলো গুলো 

কিংবা আমাদেরই ভাই-বোনদের

অথবা হয়তো বা আমাদেরই! 

মুহূর্তে করে ফেলা ভুল; 

একটি ছোট্ট ভুল পুরো পরিবারটিকে কি অসহায় বানিয়ে ফেলে, বোধগম্য হয়? 


এমন পরিবার দেখলে তোমরা তাদের লজ্জা দিও না,

লবণ ছিটাতে যেও না তাদের দুঃখে;


কে জানে! 

এই, ঐ আর সেই, সেই পরিবারগুলোর মধ্যে তো কাল তোমার আমার পরিবারও সামিল হতে পারে। 

 


১৫ অক্টোবর, ২০২১২


#গদ্য_কবিতা


ভুলের খেসারত 

 - যাযাবর জীবন 




 



 



  

মানুষের তৈরি

এই যে সূর্যটা দেখছ!

সকালে ওঠে রাঙা হয়ে, দুপুরে তেতে থাকে সাদা হয়ে 

সন্ধ্যায় আবার লাল হয় ঘুমোতে গিয়ে, 

 - এটা মানুষ তৈরি করে নি;


এই যে চাঁদটা দেখছ!

কখনো ধনুকের মত বাঁকানো, কখনো রুটির মত গোল

পূর্ণিমায় স্নিগ্ধ আলো দেয়, অমাবস্যায় অন্ধকার হয়ে যায়,  

 - ওটা মানুষ তৈরি করে নি;


এই যে নদ নদী সাগর মহাসাগর!

এই যে ভূপৃষ্ঠের অসীম জলরাশি!

এই যে হিমবাহ, এই যে জলপ্রবাহ!

 - এগুলো মানুষ তৈরি করে নি;


এই যে উঁচু নিচু ভূমি!

এই যে ছোট বড় টিলা আর সুউচ্চ বিশাল বিশাল পাহাড়! 

এই যে নান রঙের কঠিন কোমল মাটি!

 - এগুলোও মানুষ তৈরি করে নি;


এই যে লাখো উড়ন্ত পাখি!

এই যে কোটি রকম প্রাণী!

কোমল ও হিংস্র ধরণে, রঙ আর বৈচিত্র্য গড়নে; 

 - ওগুলো মানুষ তৈরি করে নি; 


এই যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা এক কোষী প্রাণী

ঐ যে দূরবীন যন্ত্রে দেখা কোটি তারা রাশি 

আর দৃষ্টিসীমার বাইরের সৃষ্টি সকল! 

 - ওগুলোও মানুষ তৈরি করে নি;

 


এই যে রাশি রাশি পানির সাগর আর মহাসাগর  

আর তার মাঝে বসবাসরত মৎস্য ও প্রাণীকুল! 

এই যে গ্রহ, নক্ষত্র, সৌরজগৎ আর মহাকাশ 

আর তার মাঝে বাস করা পক্ষী ও পশুকুল! 

ঐ যে উড়ন্ত ডানায় উড়ে চলা পাখি

ঐ যে বনে বাদারে ডাঙায় হিংস্র শ্বাপদকুল

এই যে ক্ষুধা! আর ক্ষুধা নিবারণের জন্য শস্যদানা

এই যে তৃষ্ণা! আর তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানি,   

এই যে জন্ম আর ঐ যে মৃত্যু! 

আর ঐ মানুষ নামক বুদ্ধিমান প্রাণী!

 - এর কিছুই তো মানুষ তৈরি করে নি!  

     

তবে এগুলো আসলো কোত্থেকে? 

ভাবনায় কখনো এসেছে কি?

 - নাকি মানুষ এগুলো নিয়ে কখনো ভাবেই নি! 


আচ্ছা! মানুষ কি কি তৈরি করেছে?

ওরা শস্যদানা দিয়ে রুচিকর খাবার তো বানিয়েছে!

 - শস্যদানা কি বানাতে পেরেছে?

ওরা পানিতে নানা রঙ ও উপকরণ মিশিয়ে পানিয় তো বানিয়েছে!

 - পানি কি বানাতে পেরেছে? 

ওরা রাস্তা, ঘাট বানিয়েছে, বাঁধ দিয়েছে নদীতে

 - মাটি কি বানাতে পেরেছে?  

ওরা গ্রহ, উপগ্রহ, সৌরজগৎ তো দেখেছে! 

 - সামান্য চোখটাও কি বানাতে পেরেছে?  

এত এত বুদ্ধির চর্চা করা মগজটাও তো বানাতে পারে নি

 - তবে আর কি বানিয়েছে? 


বানিয়েছে,

আরে, বানিয়েছে;


মানুষ লোভ বানিয়েছে, হিংসা বানিয়েছে, বানিয়েছে হিংস্রতা 

বানিয়েছে হানাহানি, মারামারি, কাড়াকাড়ি 

বানিয়েছে ধনী, গরীব আর সামাজিক বৈষম্য

বানিয়েছে সাদা, কালো আর বাদামী চামড়ার দল, আর বর্ণ বৈষম্য 

বানিয়েছে অর্থ, স্বার্থ আর মানুষে মানুষে বিভেদ;


মানুষ জন্ম নিয়েছে, জন্ম দেখেছে 

 - অনুভব করতে পারে নি, 

মানুষ মৃত্যু দেখেছে, মারা যাওয়ার সময় মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুগেছে 

 - অনুভূতিটা বলে যেতে পারে নি, 

যদি পারতো! তবে পৃথিবীটা অনেক অন্যরকম হতো;


জন্ম আর মৃত্যু 

আর এর মাঝের কিছু সময় 

এটুকুই মানব জীবন 

আর কিছু নয়; 


সমস্ত সৃষ্টিকুল আর তার স্রস্টা 

 - মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা, 

কারো কাছে ইহকালই সব, বিশ্বাসীদের পরকাল 

যাদের আছে আল্লাহ্‌র ভয়।  



১২ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


মানুষের তৈরি 

 - যাযাবর জীবন 





বন ডাকে মন

একটু ছুটি মানেই কোথাও একটু অবসর

একটুকু দম নিতে তাই ঘরের বাইরে ঘর  

সবুজ বন ডাকে, ডাকে সতেজ বাতাস

কাশবন নাচে আর দিগন্ত নীল আকাশ,  


বনে বানর ছিলো আর ছিলো কিছু হরিণ

ছিলো রাঙা প্রজাপতি আর কিছু ফড়িং

সাপ আর গুইসাপের ছিলো কিছু ভয়

একলা বনে হাঁটতে গেলেই মনে সংশয়, 


বনে বাঘের ভয়, তবুও চোখ খোঁজে তাকে

কোথায় লুকিয়ে আছে, কোন গাছের ফাঁকে? 

পানির কুমির, কাদায় শুয়ে থাকে ডাঙায়

একটু ছুটি পেলেই, বন ডাকে আমায়,  

 

বন ডাকলেই কেমন জানি ছুটি ছুটি করে মন 

সময়টা বের করেই বনে ছুট দেই তখন  

কদিন বনে কাটিয়ে ছুটি শেষে ঘরে ফেরা

ওখানে বেশ ছিলাম, ছিলো না কাজের তাড়া,  

 

পশুপাখির সাথে মিশে বেশ কাটিয়ে দিলাম 

জঙ্গলে গিয়ে কিছুটা কি জংলী হয়েছিলাম?   

এবার ঘরে ফেরার পালা, চল মন ঘরে চল

আর দিনরাত ইট-কাঠের সাথে কথা বল।   


  

১১ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


বন ডাকে মন 

 - যাযাবর জীবন


 

 


নিস্তব্ধতার কলম

সবসময় তো আমি কথা বলেই যাচ্ছি

আর কথা বলছে প্রকৃতি;


তোমরা প্রকৃতির কথা শুনেছ কি?  


এই যেমন ভোরে কথা বলে ওঠে সূর্য 

দুপুরে চিড়বিড় করে কথা বলে গরম

বিকেলটাইয় বিষণ্ণ শব্দের মন খারাপ

সন্ধ্যে হলেই ঝিঁঝিঁর ডাক

রাতে কথা বলে ওঠে অন্ধকার 

অনেক দূরে মদন টাকের ডাকে চমকে ওঠে শিশুরা 

শেষ রাতের দিকে চিৎকার করে ডাকে নৈঃশব্দ্যতা 

আর কারো কানে কানে ফিসফিস কথা বলে অশরীরী কিছু ভয়  

কোন কোন রাতে মধ্যে আকাশে হাসতে হাসতে কথা বলে ওঠে চাঁদ

জ্যোৎস্না কথা বললেই মন ভয়কে করে ফেলে জয়; 


আর আমার কথা? 

কত আর বলবো? 


আমি মাঝে মধ্যে আনন্দের কথা বলি 

মাঝে মধ্যে বলি দুঃখের কথা 

প্রায়শই নানাভাবে বলে থাকি বিভিন্ন সম্পর্কগুলোর কথা,  

এই যেমন বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিবার, সন্তান 

আর তাদের কথা দিয়ে বলা বিভিন্ন শব্দের ব্যথা,  

মাঝে মধ্যে বলি সম্পর্কগুলোতে বসবাসরত নানা স্বার্থের কথা 

আর স্বার্থ বিকট শব্দে সম্পর্ক ভেঙে দিলে 

মাঝে মধ্যে অসহ্য হয়ে উঠে বলি স্বার্থে সম্পর্কহীনতার কথা; 

কান্নার কথা কত আর বলব বলো?   

তার থেকে অনেক ভালো মুখ বন্ধ করে চুপকথা, 

নৈঃশব্দ্যতার বেদনা না হয় একলাই মগজ খুঁড়ুক আমার

তোমাদের সাথে শুধু হো হো হাসির শব্দে বিলিয়ে যাই আনন্দগাঁথা; 


আচ্ছা ওসব কথা বাদ দাও,


জীবন জীবনের যায়গায় থাক 

দুপুর রোদে চামড়া পুড়ে যাক 

আমি ঘাম-ক্লান্ত দেহে নিঃশব্দে চেয়ে দেখি 

শব্দ করে রোদে জ্বলছে কিছু কবিতা, 

বেদনাগুলো দুঃখের ভেতর থাক 

মধ্য রাতে স্মৃতিগুলো পুড়ে যাক 

আমি নিঃশব্দ স্মৃতি-ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে দেখি 

শব্দ করে অন্ধকারে পুড়ছে কিছু কবিতা, 

কবিতারা জ্বলতে থাক

আমি মুখ খুলব না

কবিতারা পুড়তে থাক 

আমি কথা বলব না, 

আমি চুপ হয়ে থেকে নিস্তব্ধতার কলমে লিখে যাব 

নৈঃশব্দ্যতার কবিতা। 


০৩ অক্টোবর, ২০২১


#কবিতা 


নিস্তব্ধতার কলম

 - যাযাবর জীবন 




বন্ধু

বন্ধুরা একসাথে 

বহুদিন পর

দেখা হতেই আলিঙ্গন 

বুকের ভেতর 


বন্ধুরা একসাথে 

বহুদিন পর

আড্ডা গল্পে মাতে 

সময় বেখবর 


বন্ধুত্বের বাঁধনে 

বন্ধু সবাই

একসাথে মিলেমিশে 

সময় কাটাই 


বন্ধুত্বের অধিকার

বন্ধুদের টেনে আনে 

অলস আড্ডা সময়

কবিতা গানে গানে


চায়ের কাপে কাপে   

পুরনো স্মৃতিচারণ  

স্মৃতির খুনসুটি  

কালের বিবর্তন 


বন্ধুদের হুটোপুটি 

চায়ের আড্ডায় 

কেউ কবিতা বলে 

কেউ গান গায় 


সিগারেটের ধোঁয়ায় 

সময় উড়ে যাক 

কালের বিবর্তনে 

হৃদয়ে বন্ধু থাক।


#কবিতা 


৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১


বন্ধু

 - যাযাবর জীবন 

মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নীল চাঁদ

কাল চাঁদ দেখেছি নদীতে সারা রাতভর 

আর তোকে ভেবে মন জ্যোৎস্নার ঘর 

আজ সারা দিনভর সূর্যটা পুড়িয়েছে বেশ

যদিও মনে ছিলো কাল রাতের কিছু রেশ;


দিনে প্রখর সূর্য আর আকাশের নীল রঙ 

রাত নামতেই তুই নামলেই মন অন্যরকম 

রাতে চাঁদ, রাতে তারা, পুরো আকাশটা ভরা 

শুধু মনটা জানি কেমন কেমন তুই ছাড়া; 


মাঝে মাঝে দিনের বেলাতেও তোকে মন চায়   

একদিন না হয় দুপুর স্বপ্নে তো তুই চলে আয়!  

মন পুকুরে তুই নামলেই মন শ্যাওলা সবুজ  

এই দেখ! তোর কথা ভাবতেই মন অবুঝ; 


স্বপ্নে স্বপ্নে তুই আর আমি স্বপ্নের কথা কই! 

হয়তো কখনো চোখ খুলতেই দেখব সামনে তুই

সেদিন খুব জ্যোৎস্না হবে আর আকাশে নীল চাঁদ

আর আয় আয় ডাকবে তোর ভালোবাসার ফাঁদ।


 

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


নীল চাঁদ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 





একা একা মন

নদীতে রাত, নদীরও রাত

তবুও কুলকুল ঢেউ চলছে

অথচ রাতটা ঠিক ঘুমিয়েছে, 

ঘুম নেই নদীর, ঘুম নেই ঢেউয়ের 

ক্রমাগত পাড়ে ভাঙছে ঢেউ

নদীর পাড় আছে, পাড়ে কোথাও নেই কেউ; 


আকাশে রাত, আকাশেরও রাত

ঘুমঘুম ঘুমে রাত ঘুমিয়েছে 

বেহায়া চোখে জেগে আছে অন্ধকার 

আর সাথে জেগে আছে চাঁদ, 

জেগে আছে সুনসান নিস্তব্ধতা 

আর মনে শূন্যতার ফাঁদ; 


আড়মোড়া ভাঙছিল মেঘ 

ইতিউতি জ্যোৎস্নার ভাঁজে  

মোড়াচ্ছিলো মন মরমর 

অসময়ে তোর উঁকি মনের খাঁজে, 

আমি চাঁদ দেখি, চাঁদে তোর মুখ 

চাঁদের উঁকিতেই মনে মনসুখ; 


একা একা রাত, একা একা চাঁদ

একা জ্যোৎস্নার সুখ 

একা নদী, একা ঢেউ 

আর পাড়ে আছড়ে পড়া দুখ,

খোলা চোখে জ্যোৎস্না, খোলা চোখে নদী

আর চোখ বন্ধ করলেই তোর মুখ। 


২১ সেপ্টেম্বর,  ২০২১


#কবিতা 


একা একা মন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 




মনে আয়

হঠাৎ করেই চোখ মেলে, চারিদিকে ঘন বন  

আর চোখে সবুজ দেখে দেখে, সবুজ সবুজ মন 

বনে ঝরে পড়া পাতা, আর গুল্মলতা

কাকে জানি মনে হতেই, মনে মনে কথা 

নাম না জানা কিছু গাছ, অচেনা কিছু ফুল 

তোকে কি মনে পড়ছে? নাকি মনের ভুল? 


জালের মত খাল আর কিছু নদী 

ঢেউ এর পর ঢেউ, বয়ে চলে নিরবধি 

জোয়ার আর ভাটা, ঢেউ কুলকুল 

মন কেমন কেমন, তোতে মশগুল; 


তুই কে? 

বনে বন্য

ফুল, লতাগুল্ম 

জলে বয়ে চলা 

মনে কথা বলা,

আচ্ছা! তুই কি নারী? 

ভালোবাসায় আমি বড্ড আনাড়ি; 


ঐ চেয়ে দেখ! 

এত্ত বড় এক চাঁদ উঠেছে, 

আকাশে জ্যোৎস্নার গান 

বনে বন্য ঘ্রাণ 

বড্ড মন কেমন করছে! তুই কোথায়?  

মনে মন চাইছে, একবার মনে আয়।


২০সেপ্টেম্বর,  ২০২১


#কবিতা 


মনে আয় 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 




কিছু ছাড় দেয়া, কিছু মানিয়ে নেয়া

এই যে চেনা নেই,  জানা নেই 

আগে কখনো দেখাও হয় নি 

পরের বাড়ির একটা মেয়ে হুট করে জীবনে চলে এলো,   

তারপর আমার ঘরটাকেই নিজের ঘর বানিয়ে, জীবন হয়ে গেলো!  

ব্যাপারটা ঠিক কেমন জানি, একদম অন্যরকম না? 

আমার তো মাঝে মাঝে অদ্ভুত লাগে,

তোমাদের কারো লাগে কি? 


কেউ কেউ প্রেম করে বিয়ে করে 

কেউ বিয়ে করে প্রেম করে 

কারো কারো আবার বিয়ের পরেও প্রেম হয় না 

তবুও ঠিকই সংসার কররে যাচ্ছে,  

এরা কি প্রেম বোঝে না? 

নাকি দাম্পত্যে বনিবনা হয় না? 

আচ্ছা! ভালোবাসা না থাকলে দুটি মানুষ একসাথে সংসার করে কেন? 

আমার ঠিক বোধগম্য হয় না; 


তবে কেউ কেউ সাহসী হয়

বনিবনা না হলে ক্রমাগত চেষ্টা করে যায় 

তারপরও না পারলে তখন খুব ভদ্রভাবে আলোচনা করে দুজন আলাদা হয়ে যায়,

এটাই হওয়া উচিৎ 

তবুও সব ক্ষেত্রে এটা হয় না 

পুরুষ শাসিত সমাজে, পুরুষদের মেনে নিতে কষ্ট হয়

তাদের অহং বোধে আঘাত লাগে 

খুব সহজে তারা ছেড়ে দিতে চায় না 

অত্যাচারের নিত্য চিত্র আমরা খবরের কাগজে পড়ি; 


এর আবার ব্যতিক্রমও আছে 

কিছু স্ত্রী আছে তারাও খুব সহজে ছাড় দেয় না

খোরপোষ, ভরণপোষণ এগুলোর জন্য অনেক খারাপ কিছু করে ফেলতেও দ্বিধা-বোধ করে না

এমনকি আজকাল তো মেয়েদের পক্ষে কিছু আইন হওয়াতে ও শ্রেণীটার বেশ সুবিধাই হয়েছে 

অনেক স্বামীকে বিনা অপরাধে যে জেলের ভাতের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে 

এগুলোও খবর হয়েছে, 

জোরাজুরিতে কি আর সংসার হয়? 

ওটা তো দুটো মনের মিলন 

তাই না? 


কোন কোন দাম্পত্য প্রেমের কলকল 

কোন কোন দাম্পত্য কলহের কোলাহল 

কিছু ছাড় দেয়া, কিছু মানিয়ে নেয়া

এটাই দাম্পত্য, 

আর নয়তো ছাড়াছাড়ি তো আকছারই হচ্ছে।


০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


কিছু ছাড় দেয়া, কিছু মানিয়ে নেয়া

 - যাযাবর জীবন 



পক্ষপাতিত্ব

ভাই-ভাই সম্পর্ক কিংবা ভাই-বোন সম্পর্ক, বাবা-মায়ের জন্য 

একই বাবার ঔরসে, একই মায়ের পেট থেকে জন্ম 

রক্তের একটা টান তো থাকবেই! এটাই শাশ্বত, এটাই সত্য

বাবা-মা আর ভাই-বোনের মাঝে পারস্পরিক টান, সংসারের মাধুর্য;  


ভাই-বোনদের মধ্যে সম্পর্ক সাধারণত মধুরই হয়, যদি স্বার্থ না আসে

যদি জীবনের কোন মোড়ে স্বার্থ এসে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চায়ই    

বেশিরভাগ বাবা-মাই ভাই সে ফাটলগুলো বন্ধ করতে সচেষ্ট থাকেন

স্বার্থের মূলে মলম লাগিয়ে সম্পর্কগুলো মধুর করার চেষ্টায় রত থাকেন; 


আমরা সাধারণত দেখি সন্তানরাই বড় হয়ে বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে থাকে

সে ঘরে বৌ এনেই হোক! কিংবা অর্থাভাব অথবা অন্য কোন কারণ  

যদিও এটা কোনভাবেই উচিৎ না তবুও দেখছি, নয় এটা চোখের ভ্রম 

চারিদিকে দেখতে দেখতে আজকাল আমাদের চোখে সয়ে গেছে বৃদ্ধাশ্রম; 

  

তবে অল্প কিছু এমন বাবা-মাও থাকেন, যারা পক্ষপাতিত্ব করেন  

সন্তানে সন্তানে পক্ষপাতিত্ব করতে গিয়ে রক্তের সম্পর্কটাই নষ্ট করে দেন

অথচ এই একটা জায়গায় সন্তানের ভরসা থাকে সবচেয়ে বেশি, তাই না? 

সন্তানের মন কখন ভেঙে যায় জানেন? বাবা-মায়ের পক্ষপাতিত্বে; তাই না?


০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


পক্ষপাতিত্ব

 - যাযাবর জীবন 


সম্পর্কের টান

টাকা পয়সা, সম্পত্তি এগুলো বস্তুগত

তবে সম্পর্ক'কে করে ফেলে যখন তখন ক্ষত 

স্বার্থ নামক অদৃশ্য এক ভাইরাস আছে  

সম্পর্ক থেকে সম্পর্ক'কে আলাদা করতে জুড়ি নেই এর মত;


আচ্ছা, সম্পর্ক কি? 

কিছু রক্তের টান 

কিছু কাগজে কলমের সাইন 

আর কিছু অনুভব অনুভূতি; 


ওটা ভাঙে কিভাবে?

সম্পর্কে অর্থ এলে 

সম্পর্কের মাঝে স্বার্থ এলে 

কিংবা খলের কানকথায় কান দিলে; 


স্বার্থ নামক ভাইরাসটা কখনো কখনো 

সম্পর্কের ভেতরে বসবাসরত মানুষগুলোর মনুষ্যত্বটাই মেরে ফেলে,

মনুষ্যত্ব মরে গেলে মানুষ আর মানুষ থাকে কই? 

মানুষ যদি মানুষই না থাকে ওখানে সম্পর্ক থাকবে কি করে?  


আমি বহু সম্পর্ক হারিয়েছি, স্বার্থ ভাইরাসের কারণে 

তবুও মাঝে মাঝেই কোথায় যেন কিসের এক টান আমাকে কাঁদায়  

ওগুলো রক্তের টান কি? নাকি অনুভূতির? নাকি মৃত সম্পর্কের? 

একলা হলেই কেমন জানি লোনা লাগে চোখ; তোমরা কেউ কাঁদো কি?


০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


সম্পর্কের টান 

 - যাযাবর জীবন 



এক সেকেন্ড ব্যবধান

এক সেকেন্ড ব্যবধানে কত কিছুই না হয়ে যায়!


ঐ যে বিছানায় পড়ে আছে একটা নিথর দেহ, যেন জীবিত লাশ   

অথচ সেদিন কি সুন্দর সময়ই না কাটাচ্ছিল পরিবারের সবার সাথে! 

হাসি আনন্দে গল্প করতে করতে খাচ্ছিলো খাবার টেবিলে বসে 

হঠাৎ করেই জানি কি হলো

সেকেন্ডের ব্যবধানে মাটিতে পড়ে গেলো,

দৌড়োদৌড়ি, এম্বুলেন্স, হাসপাতাল 

হাসপাতালের বিশাল এক বিল মিটিয়ে বাসায় নিয়ে এলো 

একটা জীবিত লাশ,

সব কথা শোনে, সব বুঝে, অনুভূতিগুলোও যেন আগের থেকে তীক্ষ্ণ  

শুধু নড়তে পারে না, বলতে পারে না

নিথর বিছানায় পড়ে থাকে,

খাবার টেবিলে পড়ে যাওয়ার এক সেকেন্ড আগে কেউ ভেবেছিলো? 


এক সেকেন্ডের ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝি, একটু কথা কাটাকাটি

একটা দাম্পত্য হয়ে যেতে পারে মাটি, 

ঐ যে দম্পতিটা দেখছ!

সুখী দম্পতি বলে এক সময় সবাই খুব প্রশংসা করতো 

সবার সাথে হাসতো, গাইতো, গল্পে আনন্দে মেতে থাকতো

হঠাৎ করেই কোন একদিন কোন এক মুহূর্তে কি নিয়ে জানি বিবাদ হলো

বিবাদটা চারা থেকে মহীরুহ হলো 

তারপর বিচ্ছেদে গড়ালো,

এক সেকেন্ডের সেই কথা কাটাকাটির আগে 

এরা দুজনের কেউ ভেবেছিলো?   


এক সেকেন্ডের ব্যবধানে চলে যেতে পারে প্রাণ, 

মনে কর পরিবারের সবাই মিলে ছুটিতে গেলে 

গাড়িতে সবাই মিলে হাসি আনন্দে গল্পে মেতে ছিলে

হঠাৎ করেই ওপাশ থেকে একটা বাস কিংবা ট্রাক

বিশাল একটা শব্দ ধারাম,

লোকজনের চিৎকার, চেঁচামেচি, এম্বুলেন্স, হসপিটাল

ওখানে পরিবারের কারো হয়তো হাত কাটা পড়লো

কিংবা কারো হয়তো পা, অথবা অন্য কোন অঙ্গ

তবুও তো বেঁচে আছে! 

আর পরিবারের ঐ যে সদা হাস্যোজ্জল ছেলেটা!

মাত্র কলেজ পাশ করে বের হয়েছিলো

হসপিটালে নিতে নিতে নিথর হয়ে গেলো

বেড়াতে যাবার আগে কেউ ভেবেছিলো?  


এক সেকেন্ডের ব্যবধানে কত কিছুই না ঘটে যায়, 

অসুখ বিসুখে কেউ কেউ হয়তো বিছানায় পড়ে রয় 

কথায় কথায় কথা কাটাকাটিতে হয়তো সম্পর্ক হারায় 

কিংবা কোন এক্সিডেন্টে শরীরের কোন অঙ্গ হারায়

এমন কি এক সেকেন্ড ব্যবধানে বলা নেই কওয়া নেই 

একটা সুস্থ সবল মানুষ লাশ বনে যায়। 


০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


এক সেকেন্ড ব্যবধান

 - যাযাবর জীবন 



বডি

আহা বেচারা জীবনভর কি কঠোর পরিশ্রমটাই না করেছে! 

নেশার মত শুধু টাকা কামিয়েছে 

আর সম্পদের পাহাড় গড়েছে,  

বেচারা কিছু নিয়ে যেতে পারলো না;


কাকে বলছ?

ঐ বডিটাকে?


বডি? 

 - নাম নেই কোন?


নাম ছিলো তো! যতদিন বেঁচে ছিলো

শবের কোন নাম থাকে না

আহা, দেখো কেমন কাঠের খাটিয়ায় অসহায় শুয়ে আছে বেচারা;


অথচ কি দুর্দান্ত প্রতাপ প্রতিপত্তিই না ছিলো!

যতদিন বেঁচে ছিলো, 

কোন সমস্যা সামনে এলেই টাকায় সব কিনে নিতো

টাকায় কি কেনা না যায়? 

যদি কিছু কিনতে ব্যর্থ হতো তাহলে ছিনিয়ে নিতো ক্ষমতায়, 

আজ ক্ষমতা কোথায়? 


আচ্ছা! বডিটা কোথায় যাবে?

কেন? 

 - ঐ তো মাটির ঘরে, 


ওখানে এসি আছে? বিছানায় ম্যাট্রেস লাগানো হয়েছে?

নতুন চাদরটা বিছিয়ে দিও কিন্তু, 

নরম বালিশটা দিতে ভুলো না,  

ইলেকট্রিক কানেকশনগুলো ভালো করে চেক করে দিও

আই পি এস এর ব্যাটারিটাও চেক করো

কারেন্ট গেলে যাতে সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠে

অন্ধকার উনি একদমই সহ্য করতে পারেন না;  


আরে বোকা!

ও ঘরে বাতি থাকে না, এসি তো অনেক দূরে 

ম্যাট্রেস কোথায় দিবে? ও ঘরটায় থাকে না বিছানা

দামি চাদর? সাদা মার্কিনের কাপড় কেনা হয়েছে

গোসলের পরেই পড়িয়ে দেবে   

তারপর শুইয়ে দেবে বাঁশ দিয়ে ঢেকে মাটির বিছানায়;


বডি পচতে পচতে কবরের ভেতরেই দুর্গন্ধ ছড়াবে

তারপর একসময় মাটির সাথে মিশে গিয়ে মাটি হবে,

এত অহংকার কিসের হে মানব?



০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


বডি 

 - যাযাবর জীবন 









শরতের ডাক

সেই ছোটবেলা থেকেই ছবি তোলার বড্ড শখ 

কথায় আছে না! শখের তোলা আশি টাকা

আজকাল তোলার মাপ ক'জনারই বা আছে জানা? 

আরে বাবা! ইদানীং স্বর্ণই বা কেনে ক'জনা? 


ক্যামেরা অবশ্য তোলার মাপে বিকিকিনি হয় না 

ওটার কেনাবেচা অনেকটা ব্র্যান্ডের মাপে 

ব্র্যান্ড শব্দটাতেই আমার আবার আপত্তি 

আসলে আপত্তি না, পয়সার ঘাটতি - হিপোক্রেসি;  


একসময় ব্র্যান্ডের ক্যামেরার দিকে লোভাতুর তাকিয়ে থাকতাম 

সেলুলয়েড যুগে পাই পাই জমিয়ে কমদামী একটা কিনেছিলাম 

সেটাই কাল হয়েছিলো - তারপর থেকে ক্লিক ক্লিক এর নেশা  

সেলুলয়েড ফিল্ম এর যুগ আজ ইতিহাস, স্মৃতির ঘষা কাঁচ;   


এরপর এলো ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ, মেগাপিক্সেল 

ব্র্যান্ড ছাড়া ছোট একটা কিনেছিলাম - ডিজিটাল ক্যামেরা  

তিল তিল চাকরির পয়সা জমিয়ে, শখ তো মিটলো! 

চাকরি করে আর ক টাকাই সঞ্চয় থাকে বলো! 


যুগে যুগে ক্যামেরায় মেগাপিক্সেল বাড়তে থাকে

এর ওর হাতে যখন দেখি প্রফেশনাল ক্যামেরা

আমার তখন ব্র্যান্ডছাড়া ডিজিটাল ক্যামেরা ভরসা   

আমার বড্ড মন কেমন কেমন করে - বোধহয় ঈর্ষা;  


পয়সা আর পয়সা জমিয়ে কি আর প্রফেশনাল ক্যামেরা হয়? 

টাকা জমানো শুরু, তারপর কোন এক সময় - ইচ্ছেতে কি না হয়? 

কষ্টের টাকায় শখ পূরণের আনন্দই আলাদা, প্রফেশনাল ক্লিক শুরু  

আজকাল সবাই দেখি মোবাইলেই ক্লিক ক্লিক - সবাই ছবির গুরু; 


অনেক দিন ধরেই আমি ঘরবন্দী, করোনায় ওলোটপালট জীবন

ক্যামেরাটাও আলমারিবন্দী অবহেলায়, ওরও মন কেমন কেমন  

মাঝে মধ্যে ঝেড়ে মুছে রাখি, মাঝে মধ্যে টুকটাক কথা বলি ওর সাথে  

বড্ড অভিমানিনী, আমার স্পর্শ পেলেই লুটিয়ে পড়ে হাতে;

 

ঘরবন্দী থাকতে থাকতে মনে কেমন যেন অলসতায় ধুলো জমেছে    

ধুলো জমেছে ক্যামেরার লেন্সগুলোতে, ধুলো জমেছে ইচ্ছেগুলোতে  

আজকাল প্রায়শই ক্যামেরা হাতছানি ডাকে - আয়, আয়, আয় 

শরতের সাজে প্রকৃতি সেজে যেন ডাকছে আমায় - তুই কোথায়? 


০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

#কবিতা


শরতের ডাক 

 - যাযাবর জীবন 


অর্থে সম্পর্কের বিভেদ

ওরা এক মায়েরই সন্তান,  

দুই ভাই 

পিঠাপিঠি 

ছেলেবেলাটা একই রকম 

একই স্কুল একই কলেজ 

ইউনিভার্সিটিতে এসে দুজন দু ডিপার্টমেন্ট 

পড়ালেখা শেষে একজন চাকরি,  একজন ব্যবসায়

সময়ের চাকায় সময় গড়ায়

বিয়েশাদী,  সন্তান   

যার যার আলাদা সংসার 

চাকরিজীবীর কর্পোরেট চাকরি 

ধাপে ধাপে উন্নতি 

বেশ ওপরে উঠে যায়, জীবন খেলায়, 

যত ওপরে উঠে ততই চেহারায় জেল্লা ফোটে

কথা কয় টাকায়; 


ব্যবসায়ীর শুরুতেই কিছু কষ্ট, তারপর বেশ উন্নতি 

তারপর একটা সময় টাকার পাহাড়

তারপর হঠাৎ করেই ব্যবসায় ঘাটা 

ব্যবসা মানেই জোয়ার আর ভাটা 

একের পর এক ব্যবসা পরিবর্তন 

কপাল সবগুলোতেই ফাটা

বয়সের আগেই বড্ড বুড়িয়ে গেছে বেচারা ব্যবসায়ী ভাই টা; 


আজকাল খুব ক্বচিৎ কদাচিৎ দেখা হয় দুজনে

কোন বিশেষ পালা পার্বণে, 

দেখা হলেই চাকরিজীবী ভাই এর চোখে করুণা 

করুণার চোখ দেখে ব্যবসায়ী ভাই এর চোখে ফোটে বেদনা

চাকরিজীবী ভাই বোঝে না,

অথচ কোন একসময় এরা দুজন ভাই ছিলো

ছিলো গলায় গলায় ভাব

আজ একজন অসহায় চেয়ে থাকে আরেকজন ভাবসাবে বাপ; 


টাকা বড্ড আজব বস্তু 

বিভেদ বুঝিয়ে দেয় সম্পর্কে।


০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


অর্থে সম্পর্কের বিভেদ  

 - যাযাবর জীবন 


সমঝোতার বন্ধন

দাম্পত্য একটি বন্ধন

পবিত্র, 

যার যার ধর্মে কবুল পড়ে দুজন দুজনকে জীবনের সাথে জুড়ে নেয়া

সে প্রেমের বিয়েই হোক কিংবা পারিবারিক ভাবে জুড়ে দেয়াই হোক;


যদিও জন্ম মৃত্যু আর বিয়ে, মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার পূর্ব নির্ধারিত!

তবুও কি জুড়ে নেয়ার আগে যাচার চেষ্টা করা হয় না?

হয়তো! 

যারা প্রেম করে! আর যারা প্রেমে পড়ে! 

- তারা কি পরস্পর না যেচেই পড়ে?

পারিবারিক ভাবে যাদের জুড়ে দেয়া হয়! 

 - তারা কি পরস্পর'কে যাচে না?

অল্প কিছু থাকে চাপিয়ে দেয়া; 


এত যাচাই বাছাই এর পরেও সব দাম্পত্য টেকে না

 - প্রেমের বিয়েতে প্রেম অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কোথায় জানি উবে যায় 

 - জুড়ে দেয়া দাম্পত্যের আঠা কেন জানি আলগা হয়ে যায় 


ছোট্ট একটু ভুল বুঝাবুঝি থেকে দাম্পত্য ভাঙনে গড়ায় 

কিছু দাম্পত্য সন্তানের দিকে তাকিয়ে ঠুনকো কাঁচের মত টিকে তো রয়!

তাতে আসলে কি সন্তানের মঙ্গল হয়? 

বাবা মায়ের নিত্য লড়াই দেখতে দেখতে সন্তানগুলো কি স্বাভাবিক রয়?

নাকি অসহনীয় এক পরিবেশে এদের জীবন ছেয়ে যায় বিতৃষ্ণায়? 

তার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া কি ভালো নয়!


কেউ বোঝে

সম্মানজনক-ভাবে আলাদা হওয়ার পথ খোঁজে,  

আর কেউ জোড় করে আঠার মত লেগে থাকে  

যে সকল দাম্পত্যগুলো গড়তে গড়তে ভেঙে গিয়েছিলো ঝুরঝুর কাঁচের মত; 


আর বাকি দাম্পত্যগুলো একেকটা একেক রকম

একটার সাথে আরেকটা মিলাতে যায় বোকারা

কোনটা দিনে হাঁড়িকুঁড়ি ঝনঝন করেও রাতে নিস্তব্ধ হয়ে যায় খাটে

আর কোনটা হাসি গল্পে মেতে হাতে হাত রেখে;


দাম্পত্য সমঝোতার বন্ধন 

জোড় করে আঠা লাগিয়ে রাখার বস্তু নয়। 


০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


সমঝোতার বন্ধন 

 - যাযাবর জীবন 


  


 

ঢেকে রাখা দুঃখগুলো

দুঃখগুলো একদম নিজস্ব, ঢেকে রাখতে হয় 

মানুষকে দেখে ফেললেই বিপদ

প্রথমে আহা উঁহুর বন্যা 

কিছুদিন পর ওখানেও একটু একটু টোকা

কোন একদিন আশ্চর্য হয়ে দেখবে কেউ কেউ ওখানে দিয়েছে খোঁচা 

তারপর পালা পার্বণে সুযোগে নানাজন দিচ্ছে লবণের ছিটা

ভালো লাগবে?


তার থেকে দুঃখগুলো থাকুক না একদম আমার নিজের মনে ঢাকা  

মাঝে মধ্যে না হয় খুব বৃষ্টি হলে চোখ ভাসাবো কেঁদে

বৃষ্টির সাথে চোখের জল মিশে গেলে কান্না বুঝবে কে?

কিংবা যখন একা থাকব, অথবা গভীর রাতে নির্জনে

যখন আশেপাশে কেউ থাকবে না তখন

একা একা অন্ধকার হবে দুঃখগুলোকে ভেবে;


মানুষ আমার দুঃখগুলো জেনে কি করবে? 

তোমার নুন ছিটা খেতে ইচ্ছে করলে ঢোল পিটাও, 

আমি বেশ ভালো আছি এই একা 

আমার দুঃখগুলো সব মনের চাদরে রাখা আছে ঢাকা।


 

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


ঢেকে রাখা দুঃখগুলো 

 - যাযাবর জীবন 



   

নানা রকম দাম্পত্য

এক এক দাম্পত্য এক এক রকম

এক এক দাম্পত্যের পরিণাম এক এক রকম;


দাম্পত্য দুটি মানুষের বন্ধন

একসাথে পথচলা 

একসাথে ঘরবাঁধা 

একসাথে বসবাস

একসাথে হাতে হাত ধরে জীবন  যাপন;


একসাথে কি সবাই হাতে হাত ধরে জীবন যাপন করতে পারে?

তাহলে দাম্পত্যে বিচ্ছেদ হবে কেন?


কিছু দম্পতি একসাথে পথ চলা তো শুরু করে, 

কতদূর যেতে পারে? 

কিছু দাম্পত্য পথের শুরুতেই পথ শেষ করে দেয়

কিছু দাম্পত্য কিছুদূর একসাথে এগোয় তারপর হাত ছেড়ে দেয়

কিছু দাম্পত্য বহুদূর একসাথে চলার পর খুব আশ্চর্যজনক ভাবে বিচ্ছেদে গড়ায়

কিছু দাম্পত্যের বিচ্ছেদ হয় মৃত্যুতে;


দম্পতিরা বেশীরভাগই ঘর বাঁধে

কেউ অল্প সময়ের জন্য

কেউ অনেকটা সময় পারি দেয় 

কেউ আমৃত্যু একসাথে রয়ে যায়,

আর অল্প কিছু দাম্পত্য রয়ে যায় শুধুই কাগজে কলমে

এদের শুরুও কাগজে কলমে, সমাপ্তিও কাগজে কলমে

একসাথে ঘর আর বাঁধা হয় নি এদের জীবনে;


আচ্ছা! এই যারা আমৃত্যু একসাথে রয়ে যায়

এরা কি সবসময় সুখী হয়?

এদের মধ্যেও তো কত দাম্পত্য কলহ!

কত কত মান অভিমান, কত কত বিরহ! 


ঐ যে ওদের দেখ!

ওরা কিন্তু দম্পতি, 

একসাথে এক ছাদের নীচে আমৃত্যু বসবাস করেও 

এরা পরস্পর কথা বলে না, কথার আদান প্রদান সন্তানের মাধ্যমে 

কিছু দম্পতি তো বছরের পর বছর একদম কথা না বলেই কাটিয়ে দেয়

কিছু দম্পতি এক ছাদের নীচে তো রয়, তবুও রাতে এদের বিছানা আলাদা হয়,  

এরা একসাথে কেন থাকে?

কেউ কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ লোকলজ্জার ভয়ে

কেউ সন্তানের দিকে তাকিয়ে, বাকিরা কোন না কোন কারণে;  


আর ঐ যে ওদিকে চেয়ে দেখ!

ওরাও দম্পতি, 

দু'জনই সারাদিন বাইরে কঠোর পরিশ্রমে কাটায়, জীবিকা নির্বাহে 

সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে সন্তানের ফাই ফরমাস, রান্না বান্না, এটা সেটা 

তারপরেও রাতে পরস্পরের হাতে হাত না রাখলে এদের ঘুম আসে না; 


কত রকম মানুষই না আছে আমাদের মাঝে!

আছে কতরকমের দম্পতি

আছে কত রকমের দাম্পত্য,

একটির সাথে আরেকটির কোনরকম মিলই খুঁজে পাওয়া যায় না। 



০২ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


নানা রকম দাম্পত্য 

 - যাযাবর জীবন 



  

খাদ্য ও ক্ষুধা

খেতে কে না পছন্দ করে!

সবাই কি আর খেতে পারে?


কারো পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকে 

খুব মাঝে মধ্যেই খাদ্য জোটে

সেটা খাদ্যের অভাবে কিংবা অর্থের, 


কারো পেটে ক্ষুধা থাকে, মনে খাওয়ার বাসনা   

খাবারও সামনে থাকে, তবুও খেতে পারে না 

অরুচি কিংবা অন্য কোন অসুখের কারণে,


কারো পেটে ক্ষুধা থাকে, ক্ষুধা থাকে মনে  

অর্থেরও কোন অভাব নেই খাবার কেনার জন্য 

রুচির অভাব নেই মুখে, দেদার খেতে পারে    

অসুখও নেই কোন যে খেতে বাঁধা আছে

তবুও এরা খেতে পারে না, কৃপণতার জন্য 

এরা শুধু টাকা চেনে, টাকা জমায় আর টাকা গুনে,  


কত রকম মানুষই না আছে পৃথিবীতে! 

 আছে কত রকমই না ক্ষুধা!  


০১ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


খাদ্য ও ক্ষুধা 

 - যাযাবর জীবন 

দোষের পাঁচ

দোষ 

সবাই করে 

একটা মানবিক  ত্রুটি 

কখনো ভুলে হতেই পারে  

আমার করায় কোন দোষ নেই  

অন্যে করলেই দোষ দেখি 

পরের পিছন শুঁকতে 

ভালো লাগে

ছিদ্রাহ্নেষী 



পরনিন্দা 

কারো অনুপস্থিতিতে 

আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে 

ভাইয়ের মাংস খাওয়া বলে 

অথচ আমরা নিত্যই খাই চিবিয়ে 

এটা চরম খারাপ জেনেশুনে 

তবুই করেই যাচ্ছি 

আসলে স্বভাবে 

গীবত 



রিপু 

আমার আছে  

মানুষ মাত্রেই থাকে  

কারো বেশি কারো কম   

এত বাছবিচার করে চলা যায়!  

আমার দিকে তাকাও কেন? 

অন্যে করলে দোষ 

আয়নায় দেখি 

লোভাতুর   


লোভ 

কার নেই? 

অর্থ অনর্থের মূল  

আমি ধোয়া তুলসী পাতা? 

টাকা দেখলে এক হাত জিহ্বা  

আলজিহ্বাও বের হয়ে যায় 

আর চকচকে চোখ 

ঢাকব কিভাবে? 

লোভী 



স্বার্থ 

শুনতে খারাপ

সম্পর্ক নাড়িয়ে দেয় 

সকল ঝগড়া ফ্যাসাদের মূল  

অর্থ সম্পত্তি সম্পর্ক থেকে দামী

স্বার্থে সম্পর্ক ছিন্ন হয়  

তবুও স্বার্থের জয়    

সম্পর্কের নয়  

স্বার্থপর  


৩১ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


দোষের পাঁচ 

 - যাযাবর জীবন 







 

জুড়ে দেয়া পারিবারিক সম্পর্কগুলো

জুড়ে দেয়া সম্পর্কগুলো কেমন যেন বড্ড অন্যরকম

হ্যাঁ, বিবাহ সূত্রে জুড়ে দেয়া পারিবারিক সম্পর্কগুলো, 

ওগুলো কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়

কখনো অবোধ্য, কখনো বড্ড ভাবায়; 


এই ধর যেমন, শাশুড়ি আর বৌ এর সম্পর্ক, 

শাশুড়ি কেন জানি কখনোই মা হতে পারে না 

মেয়ে হতে পারে না কেন জানি বৌগুলো,  

অথচ কি নির্বিকারেই না ছেলে বনে যায় মেয়ের স্বামীটা  

কি সহজেই না মা হয়ে যায় ছেলেগুলোর শাশুড়ি

বৌগুলো পারে না কেন? কেন পারে না বৌ এর শাশুড়ি? 


জায়ে জায়ে গলায় গলায় মিল দেখেছ তোমরা? আমি দেখি নি

অথচ ভায়রা আর ভায়রা কি সহজেই না বন্ধু বনে যায়! 

মা আর ছেলেতে কোথায় জানি একটা অন্যরকম মিল থাকে 

অথচ ছেলের ঘরে বৌ আসলেই মা বনে যায় পুরোদস্তর শাশুড়ি 

তখন কেন জানি ছেলে থেকে বেশি আপন হয়ে যায় মেয়ের স্বামী, 

অন্যরকম আলাদা একটা মিল থাকে বাবা আর মেয়েতে 

শ্বশুর আর মেয়ে জামাই এর খুব একটা গলায় গলায় ভাব না হলেও

ওদের মাঝে খুব একটা খারাপ সম্পর্ক সচরাচর দেখা যায় না,

আমি পারিবারিক এ সমস্যাগুলো একদমই বুঝতে পারি না 

অথচ প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি একই ঘটনা; 


তুমি, আমি, তোমরা, আমরা চোখের সামনে জুড়ে দেয়া এই সম্পর্কগুলো দেখছি

জুড়ে দেয়া সম্পর্কগুলোর ভেতরের ফাঁকগুলো বড্ড চোখে লাগে, মনে বাজে  

এ ফাঁপা সম্পর্কগুলোতে নিজেকে না জুড়ে নেয়া যায়! না বিচ্ছিন্ন করা যায়!  

প্রায় সংসারেই ভুক্তভোগী ছেলেগুলোকে এ সম্পর্কগুলো সময় সময় কাঁদায়। 


২৯ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


জুড়ে দেয়া পারিবারিক সম্পর্কগুলো  

 - যাযাবর জীবন 



  

লবণের ছিটা

লবণ ছিটাতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার 

কোথাও লাগুক আর নাই বা লাগুক

একটু লবণের ছিটা তো দিবেই!  

আরে না, না! তরকারিতে না; লবণের ছিটা দেবে মনেতে   

মাঝে মধ্যে আমিও ছিটাই, তুমি ছিটাও না? 

কারো ক্ষতে লবণ ছিটিয়ে দেখই না 

এর থেকে মজা! অন্য কিছুতেই পাবে না; 


সব মানুষই মনে হয় লবণ ছিটায়

কেও একটু কম কেউ বা বেশি,  

কোথাও একটু ক্ষত দেখলেই হলো 

ওখানে মলম লাগাবে না রে! লবণ ছিটাবে 

এক চিমটি হলেও একটু ছিটা দিবেই দিবে 

গায়ে সান্ত্বনার হাত বুলোতে বুলোতেই লবণ ছিটাবে,

লবণ ছিটানোতে ওরা অন্যরকম একটা আনন্দ পায়; 


আমি আজকাল খুব যত্ন করে ক্ষতগুলো ঢেকে-ঢুকে রাখি

তবুও সব ক্ষত কি আর ঢাকা যায়!

কোথাও যদি দেখা যায় ক্ষতের একটু উঁকি!

ওমনি কাছের মানুষগুলো এক চিমটি লবণের ছিটা দিয়ে যায়

হ্যাঁ, কাছের মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশি লবণ ছিটায় 

গায়ে মাথায় সান্ত্বনার হাত বুলাতে বুলোতে,

খবরদার ক্ষত দেখিও না কিন্তু, কাছের মানুষগুলো'কে।  


২৭ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


লবণের ছিটা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।