জীবনের পিছুটান
- যাযাবর জীবন
কি দারুণ একটা সময় ছিল ছেলেবেলা!
সবার সাথে হাসি খেলা
বাবা মা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন
সবাই ছিল আত্মার আত্মা, বড্ড আপন;
সময়ের পিঠে চড়ে সময় গড়ায়
ছেলেবেলা গড়িয়ে কৈশোর হয়ে যৌবনে পৌঁছায়
অনেকের মাঝে তখন মাঝে মাঝে বড্ড লাগে একা
একটু মন কেমন কেমন
কি যেন একটা, কি যেন একটা
বাসায় সুন্দরী কেও এলে চোখ ঠারে ঠোরে
ও পাড়ার বড় বাড়ির মেয়েটাকে দেখি আড়ে আড়ে
বড্ড মন কেমন করে
কোন একদিন মেয়েটাও হয়তো দেখলো চোখ চেয়ে
ইশারা ছিল কি চোখে? মৃদু হাসি ঠোঁটে?
ইশশ! মন কেমন করে
মন কেমন করে,
তারপর কিছুই ভালো লাগে না
কেমন যেন বিষণ্ণতা আর একা একা
একা একা,
এক দিন খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম জেনে
বড় বাড়ির সুন্দরী বিয়ের পিঁড়িতে
আহা! সেদিনের কথা মনে এলে এখনো মন কেমন করে;
সময়ের পিঠে চড়ে সময় গড়ায়
একসময় যৌবনের ভেলা আমার ঘরেও বাসর সাজায়
একি? মানুষের ঘরে লাল টুকটুকে পরী!
আহা মধু, মরি মরি;
পরী আমার হলো তো মধু মধু
আমি পরীর হলাম তো জীবন ধুতুরা শুধু;
সময় গড়ায়, সময় গড়ায়
ট্যাঁ টোঁ, বাচ্চা কাচ্চা সংসার
পকেটে টাকা তো জীবন চিনি চিনি
আর নয়তো সংসার বিষোদ্গার,
এ ছাড়া তো আছেই নিত্য নতুন
মা বৌয়ের ঝনঝন হাঁড়িকুঁড়ি
চুলায় হাঁড়িতে আমি
আর না হয় দুজনার শিল-পাটার ঘষাঘষি
কোথায় মশলা? পাটায় আমি,
বাহ! কি সুন্দর সংসার
কখনো মধু মধু
আর নয়তো বিষোদ্গার।
সময়ের চাকা গড়াতে গড়াতে প্রৌঢ়ত্ব
পেছনে তাকালে দেখি কাঁঠালের আমসত্ত্ব
কোথায় ছেলেবেলা?
কোথায় যৌবন?
কোথায়ই বা আত্মীয় স্বজন?
স্বার্থ আছে তো মৌমাছির দল মৌচাক ঘিরে
আর নয়তো দুধের মাছি স্বজন সকলই উড়ে উড়ে;
বাচ্চা কাচ্চা বড় হয়
যার যার সংসার হয়
তারপর আমি কার? কে আমার?
মাঝে সাঝে পালা পর্বনে আবার কখনো একসাথে
সাথে যৌবনের পরী হয়ে আসা বুড়ি থাকে তো সময়টা ভালোই কাটে
আর নয়তো একার জীবন একা কাটে
এটাই সংসার
এটাই জীবন
সময় চাকায় গড়ায় জীবন;
তারপর এক সময় মাটি হয় মাটি
ছেলে মেয়ে, পাড়া পড়শি, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব
সবাই আসে, কাঁদে কিছু সময়
মাটিকে মাটিতে শুইয়ে দিতে দিতে
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
বড্ড ভালো লোক ছিল গো;
পিছুটান কিছু রয়ে গেলো কি?
রয়ে গেলো তো সন্তানের মাঝে এক টুকরো স্মৃতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন