মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২

সম্পর্কের অট্টহাসি

 সম্পর্কের অট্টহাসি

 - আহসানুল হক 


আমার কারও সাথেই কোন সম্পর্ক নেই,

নিজেকে ছাড়া; 

তোমাদের কি অন্য কারও সাথে সম্পর্ক আছে? 

নিজেকে ছাড়া?  


না, না 

আমাকে উত্তর দিয়ে বিব্রত হতে হবে না 

ঐ যে সামনের আয়না দেখছ না! 

মনের বাতি জ্বালিয়ে তাকে উত্তর দাও, খুব গোপনে

যেন আর কেও না শোনে;


এই যে সম্পর্ক নামক এক গন্ডির মধ্যে আমরা আবদ্ধ! 

সেই জন্মের পর থেকে,

এগুলো নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছ? 

কখনো?  

একান্তে, খুব গোপনে!  

আমাকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে তোমাদের, 

তাই না? 

আসলে কি জানো! 

সম্পর্কগুলো কিন্তু জীবনের সাথে জড়িয়েই থাকে, স্বাভাবিক নিয়মে; 


সেই যে জন্মেরও আগে মায়ের নাড়ির সাথে

জন্মের পরে মায়ের কোলে, মায়ের বুকের ঘ্রাণে 

একটা সময় বাবার আদরে, চেনা হয়ে যায় বাবার ঘর্মাক্ত শরীরের ঘ্রাণ 

ক্রমান্বয়ে ভাই বোন,  আত্মীয় স্বজনরা 

তারপর জীবনে বন্ধু বান্ধব 

চেনার গন্ডি বাড়তে থাকে, সময় গাড়ির চাকায়;


একটা সময় বান্ধবী

থেকে প্রেমিকা,  

জীবন সুন্দর,  জীবনের চাকা 

ভালো লাগার সম্পর্ক থেকে ভালোবাসা 

প্রেমিকা থেকে স্ত্রী 

ভালোবাসার ডুব সাঁতার থেকে সম্পর্কের গভীরে ডুব দেয়া

সম্পূর্ণ অন্য এক সম্পর্ক,  রক্তের সম্পর্ক ছাড়া;


তারপর সন্তান, তাদের গায়ের ঘ্রাণ 

অন্যরকম জীবন,  অন্য এক সম্পর্ক,  নিম্নগামী ভালোবাসা 

তারপর শুধুই একাকীত্বের নিজের সময়

একলা নিজেকে নিয়ে ভাবা; 

আবার স্বার্থপর এর মত কথা,  

তাই না?


এই যে শত শত সম্পর্কের মাঝে আমি একলার একলা! 

এই যে হাজার মানুষের ভীড়েও একাকীত্বের হাহাকার! 

কখনো অনুভব করেছ তোমরা? 

খুব নির্জনে, একান্তে খুব একলা!

একটা সময় বাবা-মায়ের চিরচেনা ঘ্রাণ আর পাওয়া যায় না 

বাবা-মা একটা সময় ছেড়ে চলে যায়,

নিয়তি; 


একটা সময় ভাই-বোন, 

স্বার্থের গতি; 


একটা সময় বন্ধু বান্ধব, 

সময় কাটানোর ছল; 


একটা সময় ছেলে-মেয়ে,  

তাদের নিজেদের সংসার; 


বাকি রইলো কে? 

স্ত্রীর জন্য স্বামী 

স্বামীর জন্য স্ত্রী, 

কতক্ষণ?  

যতক্ষণ কথা বলা

যতক্ষণ জেগে থাকা

যতক্ষণ পাশে থাক,

তারপর?  

অন্ধকার, একাকীত্ব আর আমি;


তোমরা হয়তো জিজ্ঞেসা করবে,

তাহলে সম্পর্কগুলো? 

ওগুলো সময়ের 

ওগুলো মানুষের 

ওগুলো নামের, 

কিছু স্বার্থের কিছু অর্থের

কিছু ক্ষরণের কিছু দহনের 

কিছু ভালোলাগার কিছু খারাপ লাগার 

কিছু অনুভূতির কিছু অনুভবের;


রইলাম শুধু আমি

শুধুই আমি

সম্পর্কের জংগলে একাকীত্বের একলা গাছ

একলা দাঁড়িয়ে আমি; 


সম্পর্কের সাগরে একাকীত্বের একলা ঢেউ 

একলা ডুবন্ত আমি;


সম্পর্কের তারার মেলায় 

অমাবস্যার একলা চাঁদ 

একাকীত্বের একলা আমি; 


আর বাকি সব সম্পর্কগুলো? 

নামে ওরা ভীষণ দামী; 

বিশ্বাস করো! 

অন্ধকার আয়নার সামনে একলা দাঁড়িয়ে তুমিও একাকীত্বই দেখবে; 


কেও আমার মত নৈঃশব্দের চিৎকারে বলে ফেলে, 

কেও গলাফাটা বোবা চিৎকারে তোমাদের মত একলা কাঁদে; 

সম্পর্কগুলো সম্পর্কের নামে হো হো অট্টহাসে।


#কবিতা 


সম্পর্কের অট্টহাসি

 - আহসানুল হক 


২৫ অক্টোবর, ২০২২

দ্বিখণ্ডিত অমানুষ

 দ্বিখণ্ডিত অমানুষ 

 - আহসানুল হক 


মানুষের ঘরে জন্ম আর 

মানুষের মাঝে বসবাস

মানুষের ভেতরেই তার   

অমানুষের অমনিবাস; 


সেই ছোটবেলায়, 

যখন থেকে মানুষের ভাষা বুঝতে শিখা শুরু

শুরু মানুষের মত বুঝ হওয়া,   

তখন থেকেই শুনে আসছি - মানুষ হ 

মানুষের মত মানুষ হ,

সেই থেকে আমার মানুষ হওয়ার চেষ্টা;


বাবা মা পড়ালেখা করিয়েছেন, শিক্ষিত করে তুলেছেন

আর ক্রমাগত উপদেশ-বাণী - মানুষ হ, মানুষের মত মানুষ হ;


স্কুল কলেজে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকরা শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন 

আর ক্রমাগত উপদেশ-বাণী - মানুষ হ, মানুষের মত মানুষ হ;


ময় মুরুব্বী আর আত্মীয়-স্বজনদের যখন যেখানে যথেচ্ছা উপদেশ-বাণী

 -  মানুষ হ, মানুষের মত মানুষ হ;


আমি ক্রমাগত তাদের উপদেশ-বাণী শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছি

 - আমাকে মানুষ হতে হবে, মানুষের মত মানুষ,

অথচ কেউ কখনো বলে নি মানুষ হতে হয় কি করে!


হ্যাঁ! 

আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি ওখানে মানুষেরই অবয়ব,

হাত পা, চোখ নাক মুখ আর গড়নে একটা মানুষই দাঁড়িয়ে আছে;

তাহলে শেষ পর্যন্ত আমি মানুষ হয়েছি বোধহয়

আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি থেকে হো হো হাসি

তারপরই থমকে যাই;


হো হো হাসিতে ঠোঁটের ভেতর দিয়ে দাঁত জিহ্বা দেখা যায়

ঐ জিহ্বা দিয়ে কত মিথ্যা কথাই না বলেছি

ঐ দাঁত দিয়ে কত হারামই না কামড়েছি

ঐ মুখ দিয়ে কত গীবতই না করেছি! 

ঐ যে চামড়ার চোখের ভেতর আরেকটি চোখ!

ঐ চোখ দিয়ে কত ভালো কে খারাপ নজরে দেখেছি! 

ঐ যে হাত! 

ওটা দিয়েই তো রোজগার! 

 - হারাম হালাল কতটুকু বেছেছি? 

ঐ যে পা! 

 - কত খারাপ জায়গাতেই না চলে গিয়েছি! 

ঐ যে মনের ভেতর আরেকটি মন!

পাপে পরিপূর্ণ - আর কেউ না জানুক আয়না তো জানে!

তবে!

তবে আর মানুষ হলাম কোথায়?

মানুষের অবয়ব থাকলেই কি মানুষ হওয়া যায়?


অথচ মজার বিষয় কি জানো?

মানুষ হতে গিয়ে অমানুষ হয়ে হয়েও, পুরোপুরি কিন্তু অমানুষও হতে পারি নি;


ওকথা কেন বলছি?


মানুষ সাধারণত হাসে

আমি হাসতে হাসতে কখনো কেঁদে ফেলি;

মানুষ সাধারণত কাঁদে

আমার কান্না আসে না তবুও মাঝে মধ্যে কাঁদতে গিয়ে হেসে ফেলি;

মানুষ ভালোবাসে

অথচ আমি! ভালোবাসতে বাসতেই ঘৃণায় নীল হয়ে যাই;

মানুষ ঘৃণা করে 

আর আমি? ঘৃণা করতে গিয়েও ভালোবেসে ফেলি; 

তবে কি আমি মানুষ নই? 


অমানুষের নাকি চোখে ভাব খেলা করে না 

অথচ ঠোঁট হাসলেই আমার চোখ হাসে, দুঃখে কাঁদে;

অমানুষের নাকি মনে আবেগ থাকে না 

বেশীরভাগ অমানুষের নাকি মনই থাকে না, 

অথচ আমার এখনো আকাশ ভালো লাগে 

ভালো লাগে নদী, পাহাড়, সমুদ্র  

ঝুম বৃষ্টি নামলেই আমি খোলা আকাশের নীচে 

আকাশে চাঁদ হাসলেই আমি জ্যোৎস্নায় ভাসি   

তবে কি আমি পরিপূর্ণ অমানুষ হতে পারি নি?  


আয়নার সামনে দাঁড়ালেই দ্বিখণ্ডিত আমি,

আয়নায় ওটা কার প্রতিচ্ছবি?

মানুষ?

না অমানুষ?


মানুষের এত কাছাকাছি অমানুষের বাস?

আমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারি না, তোমরা চিনবে কি করে? 


 

#কবিতা 


০৩ নভেম্বর, ২০২২


দ্বিখণ্ডিত অমানুষ  

 - আহসানুল হক 



 

 


সবুজ টিয়া

 সবুজ টিয়া 

 - আহসানুল হক 


ঐ যে দেখ গাছের মাথায় 

সবুজ পাখি ঠোঁটটি লাল 

লোকে বলে টিয়া পাখি 

সবুজ পাতার গাছটি তাল; 


হিংস্র হলেও পোষ মানে 

টুকটুক টাক কথাও বলে

কামড়ে ধরে লাল ঠোঁটে 

মরিচ খায় ক্ষিদে পেলে;  


চোখের বলয় কমলা রঙের 

পালক কলাপাতা-সবুজ

পিঠের কিছু ফিকে নীলচে

ধূসর আভাযুক্ত ও হলুদ; 


স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পাখি

দেখতে দুজন একই রকম

পুরুষ টিয়ার থুতনি কালো      

স্ত্রীর থুতনি সবুজ গড়ন;  


গ্রাম গঞ্জ আর শহরে'তে 

সবখানেতেই দেখা মেলে

গভীর চোখে চেয়ে থাকে  

আলসে বসে গাছের ডালে; 


বাংলায় নাম সবুজ টিয়া 

লাল ঠোঁট আর সবুজ পেট  

ইংরেজিতে নাম তার 

Rose-ringed Parakeet. 


#কবিতা 


সবুজ টিয়া 

 - আহসানুল হক 


০৩ নভেম্বর, ২০২২ 


সুখ দুঃখ - হিবিজিবি কথা

 সুখ দুঃখ

 - আহসানুল হক 


সুখ দুঃখ জীবনের এপিঠ আর ওপিঠ

দুটো এতটাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করা বোধহয় সত্যিই কঠিন। 

কঠিন দুটোর সীমারেখা চিহ্নিত করা। 


একটা মানুষের জীবনে সুখী হতে হলে প্রথম ও প্রধান উপাদান কি?

জানি নব্বই শতাংশ মানুষই বলবে টাকা। 

আমি বলি সুস্থতা। 

কাড়ি কাড়ি টাকার নীচে চাপা পড়া অসুস্থ একটা মানুষ সুখী হতে পারে?

অসুস্থ বলতে আমি শারীরিক ও মানসিক দুটোর কথাই বলছি। 

এই যে কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জনের মানসিকতা! এটা কি মানসিক অসুস্থতা নয়?

টাকা উপার্জনের এই নেশাটাকে আমি মানসিক অসুস্থতাই বলি। 


একটা মানুষের কতটুকু টাকা প্রয়োজন?

জানি তোমরা বলবে প্রয়োজনের কোন সীমারেখা নেই। 

আসলেও কি সীমারেখা নেই?

টাকার পাহাড় গড়ে রেখে মানুষ এগুলো কোথায় নিয়ে যাবে?



তবে জীবনে টাকারও প্রয়োজন আছে। খাওয়া, পড়া, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা টাকা ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। 

তবে টাকার আধিক্য অবশ্যই মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আসে। টাকার আধিক্য মানুষ'কে অবৈধ জীবনযাপনের হাতছানি দিয়ে ডাকে। 

জীবন চলার জন্য পরিমিত টাকা যেমন স্বস্তির কারণ অপরিমেয় টাকা তেমনি মানুষের জীবনে দুঃখ ডেকে আনে। 


সুস্থতার পরের উপাদানটি কি?

পারিবারিক শান্তি। 

যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অগাধ ভালোবাসা, বিশ্বাস, পরস্পরের ওপর নির্ভরতা, পরস্পরকে শ্রদ্ধা।

ছেলে মেয়ে নিয়ে একসাথে মিলেমিশে বসবাস। 

বাবা-মা বেঁচে থাকলে ওনাদের'কে সাথে নিয়ে একান্নবর্তী পরিয়ার হয়ে এক ছাদের নীচে বসবাস। 

আজকালকার যুগে এটা অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। 

শাশুড়ি-বৌ মা-মেয়ে হয়ে থাকবে - এটা প্রায় অলৌকিক। তবুও কিছু পরিবার তো আছেই শাশুড়ি-বৌ এর হাঁড়িকুঁড়ির ঝনঝনের মধ্যেও সহনীয় পর্যায়ে একসাথে মিলেমিশে আছে; সেটাকে আমরা হিসেবে না ধরি।

আর ভাই-বোন এবং তাদের পরিবারের সাথে একসাথে মিলেমিশে থাকা?  প্রায় অসম্ভব একটি ঘটনা। তবুও লক্ষে একটি দুটি পাওয়া যেতে পারে; সেটাকেও হিসেবে না ধরি। 

তা হলে কোনটুকু হিসেবের মধ্যে আসবে? 

স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে একসাথে এক পরিবার - এটাই আজকালকার একান্নবর্তী পরিবার। ছেলের বিয়ে হলো, ঘরে বৌ আসলো; তো শুরু হলো পান ছেচুনির খটখট। তারপর শিল পাটার ঘষাঘষি, হাঁড়িকুঁড়ি নাড়ানাড়ি। ছেলে আলাদা বাড়ি নিয়ে আলাদা সংসার - স্বস্তি সবার। 

আর মেয়ে তো বিয়ে হয়ে জামাই বাড়ি - শ্বশুর বাড়ি গেলো তো ওখানেও একই চিত্র; সংসারটা বড়ই বিচিত্র। 

তাহলে কি দাঁড়ালো? 

মিলেমিশে থাকার নামই সুখ, আর মতের বা মনের অমিল হলেই সুখ'টা উল্টে গিয়ে মানুষের জীবনে দুঃখ নেমে আসে। পরিবারে শান্তির জায়গায় চলে আসে অশান্তি। 


বাকি রইলো স্বামী-স্ত্রী। 

পরস্পর আস্থায়, বিশ্বাসে, ভালোবাসায়, নির্ভরতায় জড়াজড়ি করে আছে তো সংসার টিকে আছে সুখের বাতাসে। তবে আজকালকার যুগে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এটার অংশও কমে যাচ্ছে। 

বাড়ছে কি? 

স্বামী'র পরনারীর প্রতি আর স্ত্রীর পরপুরুষে আসক্তি। 

পরকীয়া নামক নতুন এক ভাইরাসে ছেয়ে যাচ্ছে আজকালকার সমাজ ব্যবস্থা। 

ভার্চুয়াল জগত এক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী, বিষদ না বলি। ওটা আজকাল ঘর ঘরের কাহিনী।


যৌবনের কিংবা শেষ যৌবনের একটা বয়সে যত পরকীয়াতেই আসক্তি থাকুক না কেন, প্রৌঢ়ত্বে কিংবা বেলা শেষে কিন্তু দুজন দুজনার; যদি না পরকীয়া ভাইরাস এনাদের আলাদা করে দিয়ে থাকেন। এ বয়সটাতে সন্তানরা যার যার সংসারে, বাবা-মা গত হয়েছে সেও অনেক দিন হয়ে গেছে। ভাই-বোন?  সাধারণত: ওরা তো স্বার্থের সম্পর্কে, যদিও কিছু ব্যতিক্রম তো থাকেই। তো রইলো কে? যতদিন স্বামী বেঁচে ততদিন স্ত্রী, যতদিন স্ত্রী বেঁচে ততদিন স্বামী। 

তারপর একাকীত্বের এক অসহনীয় সময় - কবর পর্যন্ত। 



তাহলে মোদ্দাকথা কি দাঁড়ালো? 


"শক্ত করে হাতটা একটু ধরো

  সুখী সুন্দর দাম্পত্য গড়ো" 

 

১১ অক্টোবর, ২০২২


#হিবিজিবি_কথা  


সুখ দুঃখ

 - আহসানুল হক 
















মাটির গন্ধ - হিবিজিবি কথা

 মাটির গন্ধ 

 - আহসানুল হক    


মাটির একটা সোঁদা গন্ধ আছে। এখনকার চল্লিশ বা পঞ্চাশোর্ধ জেনারেশন যারা একসময় গ্রামে কাটিয়েছে তারা সেটা পায়; আর শহুরে কিংবা নতুন প্রজন্ম দুর্গন্ধ বলে নাক সিটকায়। এরা মাটির গন্ধই বোঝেই না। মাটির শরীর মাটির গন্ধ বুঝলে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক নয় কি?  


মাটির আলাদা আলাদা গন্ধ আছে। 

কুয়াশায় ভেজা মাটির গন্ধ একরকম আবার বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ আরেক রকম। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামলে একরকম সোঁদা গন্ধ আবার ঝুম বৃষ্টিতে সোঁদা গন্ধ ধুয়ে যাওয়া মাটির আলাদা একটা গন্ধ। কাঁদা মাটির গন্ধ সম্পূর্ণ অন্যরকম। জঙ্গলে পাতা পচে পড়ে থাকলে সে মাটির গন্ধ একদম আলাদা রকম। 


হাল চাষ দেওয়ার পর মাটি থেকে যে গন্ধ বের হয় সেটায় কৃষকের আশা মিশে থাকে। শহরের মানুষ তা বুঝবে কি করে? ধানের চারা লকলক করে বেড়ে উঠলে সবুজ ক্ষেতের ভেতর থেকে একরকম গন্ধ বের হয়। ঘাসও কিন্তু সবুজই হয়, তবুও ঘাসের মাঠের গন্ধের সাথে ধানের ক্ষেতের গন্ধের একটা ফারাক আছে। ফারাক আছে কাঁচা সবুজ ধানের ক্ষেতের সাথে সোনালী পাকা ধানের গন্ধের। ফারাক আছে ধান কেটে ফেলার পরে খড়ের গাঁদার সাথে ভেজা মাটি মিশে থাকা গন্ধের। আমরা ইট কাঠ পাথরের নগরীতে বাস করি, মাটির গন্ধের তারতম্য বুঝব কি করে?


শহরে থাকি আর গ্রামে, দেশে থাকি আর বিদেশে - মাটির শরীর একদিন ঠিক গন্ধ পাবে মাটির; সাড়ে তিনহাত মাটির তলায় শুয়ে। 



১০ অক্টোবর, ২০২২ 


#হিবিজিবি_কথা 


মাটির গন্ধ 

 - আহসানুল হক    

গ্রাম্য শহর - মনকথা

গ্রাম্য শহর 

 - আহসানুল হক 


মানুষের গ্রাম থাকে, থাকে গ্রামের বাড়ি। আমার কোন গ্রাম নেই, নেই গ্রামের বাড়ি। 


এই শহরেই আমার জন্ম, এই শহরেই বেড়ে ওঠা। সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি এটাই আমার গ্রাম, এটাই আমার বাড়ি, এখানেই আমার নাড়ি। 


একটা সময় এই শহরটা ঠিক শহর ছিলো না, ছিলো গ্রাম গ্রাম একটা মফঃস্বল অনুভব। এখানে বিল্ডিং বলতে ঐ উঁচু তিন দলা একটা বিল্ডিং, আর চারিদিকে ধু ধু খেলার মাঠ। অনেক দূরে দূরে এক একটা বাড়ি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে টিমটিমে কুপির বাতি আর নয়তো হ্যারিকেন। যারা একটু অবস্থাপন্ন ছিলো তাদের বাড়িতে হ্যাজাকের সাদাটে আলো। 


তারপর এক সময় কারেন্ট আসলো, ওটা আমার কেন জানি ভালো লাগতো না। তার থেকে ঢের বেশি ভালো ছিলো জোনাকির আলো, জ্যোৎস্না হলে তো কথাই নেই। আর যেদিন কারেন্ট চলে যেতো? আমরা এক ভোঁ দৌড়ে খাল পাড়ে। আমাদের আর পায় কে? বিকেলের খেলা দুপুর রাত অবধি গড়াতো; যতক্ষণ বাবা বা চাচার বাজখাই রাম-বকা কানে না ঢুকতো। 

আজকালকার ছেলেমেয়েরা কুপিবাত্তি চেনে কোথায়? হ্যারিকেন বাত্তির নাম শুনলেও হ্যাজাক বাতির কথা কয়জন জানে আমার সন্দেহ আছে।  


খালটা মরে গেছে সেই কবেই! নদীগুলোও প্রায় মরো মরো। জ্যোৎস্নার আলোতে নদীর পানিতে ঝিকিমিকি খেলা দেখি না কতযুগ হয়ে গেছে! তাও ভালো! যে এখনো চাঁদ ওঠে, এখনো জ্যোৎস্না ফোটে; এখনো কারেন্ট চলে গেলে রাতের বেলায় ছাদ আমায় আয়! আয়! ডাকে। 


আমি প্রায়শই জ্যোৎস্না রাতে ছাদের ওপর পাটি পেতে ঘুমিয়ে পড়ি। শেষ রাতের দিকে কেমন এক হিম হিম অনুভূতিতে দু হাঁটু পেটের ভেতর কুঁকড়ে শুয়ে থাকি, যেন মায়ের পেটের ওমের ভেতর শুয়ে আছি। দূর থেকে কুকুরের কান্না শোনা যায়। এখনো রাতে কুকুর কাঁদলে কেন জানি মনে অশুভ চিন্তা উঁকি দেয়। আহা! কোথায় জানি কাকে কি অলক্ষণ ডাকছে। কুকুরে কুউউউউউ কুউউউউউউ কান্নার সাথে জ্যোৎস্না মাখতে মাখতে ঘুমিয়ে পড়ি। 


আশেপাশের তিন চারটি মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে। আমি আলসেমি ছেড়ে উঠে পড়ি। তারপর নামাজ পড়ে ঘরের বিছানায় কাঁথা-মুড়ি শুয়ে পড়ি। বৌ নামাজ শেষ করে শুতে এসে মাঝে মধ্যে খোঁচা দেয় - চাঁদনির সাথে প্রেম হলো? 


আমি মৃদু হেসে হু হলো, বলে পাশ ফিরি।  


শহর আমাকে অনেক দিয়েছে, নাগরিক সভ্যতা; ইট কাঠের দালান থেকে বড় বড় অট্টালিকা। 

কিছু কি কেড়ে নেয় নি?

গ্রাম, মেঠো-পথ, ধানক্ষেত, নদী-নালা, খাল-বিল, খেলার মাঠ; পড়শিদের সাথে আন্তরিকতা!

এ শহর আমাকে অর্থ দিয়েছে - স্বার্থপরতা শিখিয়ে।

এ শহর আমাকে সম্পর্কহীন করেছে - আত্মীয়তার বন্ধন কেড়ে নিয়ে। 


আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় - সুযোগ দিলে তুমি কি আবার গ্রামে ফিরে যাবে?


আমি এক কথায় জবাব দিব - 'হ্যাঁ'। 



১০ অক্টোবর, ২০২২


#মনকথা 


গ্রাম্য শহর 

 - আহসানুল হক 


কারেন্ট নাই - রম্য

 কারেন্ট নাই 

 - আহসানুল হক 


গতকাল একটা ব্যড়াছ্যাড়া দিন ছিলো। ভোর ১১টায় ঘাইম্মা ভিজ্জা ঘুমের থন উইট্টা দেহি কারেন্ট নাই। উইট্টাই লেহার অযোগ্য একটা গাইল দিলাম। কারে দিলাম নিজেও জানি না। সরকার'রে না সিস্টেমরে না কারেন্ট কারখানার মালিকরে নাকি ভুসভুইস্যা গরম'রে কিচ্ছু কইবার পারি না। 


একদিকে প্যাচপ্যাচা ঘামা শইল আরেকদিকে দেহি তলপেডে চাপ দৌড়াইয়া বাথরুমে ঢুকবার গিয়া দেহি বাথরুম বন্ধ। ব্যাপার কি? চিক্কুর দা কইলাম বেটাইমে বাথরুমে কিডা রে? 

বৌ তার থাইক্কা দ্বিগুণ চিক্কুর দা উত্তর দিলো আমি বাথরুমে ঢুকলেই তর বাথরুম লাগে? ইট্টু শান্তিতে যে ছুডুঘরে বমু তর লাইজ্ঞা হেইডাও পারি না। আমার দিরং হইব তুই পুলার বাথরুমে যা। 

তলপেডে প্রেশার বাড়তাছে। আমি দৌড়াইয়া পুলার বাথরুমে ঢুকতে গিয়া দেহি ঐডাও বন্ধ। ধাক্কা দিতে পুলায় চিল্লায় উঠলো - কেডা রে খবিশের মত দরজা বাইড়াইতাছে। আমি মিনমিন কইরা কইলাম, বাপ তাড়াতাড়ি বাইর হ। পুলায় কইলো কেমনে বাইর হমু? আমার মাথায় শ্যাম্পু করছি, শইল ভিজা। আর তোমার বাথরুমে কি সমিস্যা? আমি কইলাম আমারটাতে তর মায় ঢুকছে। অহন আমার ইমারজেন্সি রে বাপ। পুলা কইলো -  কিচু করার নাই, তুমি আপুরটাতে যাও। 


দৌড়ায় মাইয়ার বাথরুমে বইতে বইতে লুঙ্গি মনে হয় নস্ট হইয়া গেলো। বুইড়া বয়সে এই এক জ্বালা। কিচুতেই কনট্রোল করা যায় না। :( 


যাউজ্ঞা কি জানি কইতাছিলাম? ও কারেন্টের কতা। বুইড়া বয়সে এই হইছে আরেক জ্বালা। এক কতা কইতে কইতে কুনহানদা আরেক কতার ভিত্রে ঢুইক্কা যাই! হুদাই মাইন্সের কাছে গাইল খাই। 


বাথরুমে বইয়া ত্যাগে আরামের সুখের লগে গরমে ঘামতে ঘামতে গোসল হইয়া ভাবলাম ঘাইম্যা যহন গোসল কইরাই ফালাইছি তাইলে একবারে ঝর্ণার তলে খাড়াইয়া পানি গোসল দিয়া তারবাদে বাইর হমু। ওম্মা! ত্যাগের সুখ ধোয়াধায়ির পালা আধাআধি শেষ আইতেই দেহি পুশ শাওয়ারের পানির চাপ কমতে কমতে বন্ধই হইয়া গেলো। 

এইডা কি তামশা? যাউজ্ঞা, বালটিত কিচু পানি ছিলো, অগত্যা পুশ শাওয়ার থুইয়া বালটি মগই ভরসা। 

গোসল মাতায় উঠলো। ঘামতে ঘামতে বাইর হইতে হইতে আবার অকথ্য কিচু গালি। কারে দিলাম বুঝলাম না। এলা মনে লয় পানির সরকাররে গাইল দিলাম। 


ইন্টারকমে চিক্কুরদা কেয়ারটেকাররে পানি নাই কেরে চিল্লাচিল্লি করতেই উনি জানাইলেন, স্যার লাইনে পানি নাই। ট্যাংকিতে যদ্দুর পানি আছে কারেন্টের লাইজ্ঞা উঠাইতে পারতাছি না। আমি আবার কারেন্টের সরকারকে কইষ্যা গাইল দিয়া ফুন থুইয়া দিলাম। 


ভাবছিলাম পেত্তেকদিনের লাহান লোডশেডিং। ঘন্টা খানেকের মইধ্যেই চইলা আইব। 

এক ঘন্টা যায়, দুই ঘন্টা যায়, তিন ঘন্টা যায় - ও মা! কারেন্টের সরকার মনেলয় আইজ আপিস বন্ধ কইরা বাইত গেসে গা। কারেন্টের কুনু খবরই নাই। ঘটনা কি? 

এইবার নেটের ভিত্রে ঢুইক্কা দেহি তুলকালাম কাণ্ড। দেশের আদ্দেক জায়গায় কারেন্ট নাই। কি সব গ্রিড গ্রুডে নাকি সমিস্যা হইছে, কহন কারেন্ট আইব কেউ কতি পারে না। তাও ভালা আইজ আসমান মেঘলা মেঘলা। চাইরটা বাজাইয়া দুপুরে খাওনের পর আমি ঘরের ভিত্রে গরমে টিকতে না পাইরা ছাদে গিয়া আধা উদাম হইয়া শীতল পাটি পাইত্তা ঘুম দিলাম। ঘুমের থাইক্কা প্রিয় আমার আর কিচু নাই। 


বাজখাই এক চিক্কুরে ধরফরাইয়া উইট্টা দেহি বৌ রনাঙ্গিণী মূর্তি ধইরা সামনে খাড়ায় আছে। আমি ভ্যবলার মত কইলাম, আবার কি হইলো? চিক্কুর পারতাছ কেরে? বৌ কইলো মিন্সের আক্কলডা কি? সারাদেশ জুইড়া কারেন্ট নাই, হাইঞ্জা হইয়া আইছে আর হেরে আমি সারা বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে তন্ন তন্ন কইরালছি; মোমবাতি কি আসমান থাইক্কা পড়ব রে? ঘরে বাত্তি দিতে হইব না? তড়া কইরা গিয়া মোমবাত্তি লইয়া আয়।

 

আমি অতি সুবোধ বাধ্য স্বামী। বৌ কইতে যা দেরি, আমি দৌড়াই নীচে নামতে যাইতেই বৌ চিক্কুর দা কইলো, বেলাইজ্জার বেলাইজ্জা লুঙ্গিডা ঠিক মত গিট্টু দিয়া যা, তুই নীচে যাইতে যাইতেই তো খুইল্লা পড়ব; আর শইল্যে একটা গামছা জড়ায় যা। বাড়ির মইধ্যে উদাম থাকস দেইহা উদাম গায়ে মহল্লা চষবি? 

আমি ঘরে ঢুইক্কা গামছা পড়তে পড়তে কইলাম, কয়ডা মোমবাতি আনুম? বৌ কইলো আইজ কারেন্ট আইব কি না কিডা জানে? গোটা দশেক লইয়া আয়। আমি কইলাম তাইলে একশ টিয়া দে। দশ টিয়া কইরা দশটা একশ টিয়াই তো লাগে তাই না? বৌ একশ টিয়ার নোট ছুইড়া দিতেই আমি খপ কইরা ধইরা দরজার দিকে। উনি পিছন থাইক্কা গজগজ করতেই আছেন - শালা ফকির, পকেটে একটা টেকাও থাকে না, টেকা পয়সা যে কই উড়ায় কি করে! ইত্যাদি ইত্যাদি। কউজ্ঞা, বৌরা না কইলে কি গফ'রা কইব? এইগুলা শুনতে নাই, জবাব তো ভুলেও দিতে নাই। 


আমি বাড়ির বাইরে গিয়া বন্ধুগো আড্ডায় ঢুইকা গেলাম। মোমবাতি আর মাতায় নাই। ঘন্টাখানেক পরে পুলায় খুঁজতে আইছে - বাপজান, মায় তোমারে ডাকে। আমার পেডের ভিত্রে গুড়গুড়াইয়া উঠলো। আইজ জানি কপালে কি আছে? 


আমি দৌড়ায় দোকানে গেলাম মোমবাতির লাইজ্ঞা। দোকানদার সালাম'রে কইলাম - আমারে দশটা মোমবাত্তি দে। সালাম কইলো দশটা মোমবাত্তি নাইক্কা। দুইট্টা আছে। আমি কইলাম যা আছে তাই দে। হেয় কইলো দুইট্টা না, একটা দিবার পারি। আইচ্ছা দে কইয়া আমি একশ টেকার নোট দিয়া কইলাম নব্বই টেকা ফেরত দে। হেয় কইলো কিয়ের নব্বই টেকা? আমি কইলাম মোমবাত্তির দাম দশ টাকা কইরা না? হেয় কইলো একটা মোমবাত্তি একশ টিয়া, নিলে নেন নাইলে রাস্তা মাপেন। 


আমি কইলাম - কস কি হা পু? মোমবত্তি কবের থন একস টিয়া হইছে? ইডা কি সোনার পানি দা ধুইয়া আনছস? হেয় আমার হাতের থন মোমবাত্তিডা টান দা লইয়া ক্যাশে রাইক্ষা কয় আফনে কুন দুনিয়ায় থাহেন। আইজ হাইঞ্জার থন মাইন্সে মোমবাত্তির লাইজ্ঞা দোকানে লাইন লাগায় দিসে। পেরথমে বেচছি বিশ টাকা কইরা, তারপর চল্লিশ, তারপর পঞ্চাশ তারবাদে আশি। এই দুইট্টা মোমবাত্তি আমার বাড়ির লাইজ্ঞা রাকছিলাম। একশ টিয়া কইরা দিলে আফনেরে একটা দিবার পারি আর বাকিডা পাঁচশ দিলেও দিমু না। আমার বাড়িতেও তো বাড়িওয়ালি আছে! ঘরে পিদিম না জ্বালাইলে হেয় আমারে জ্বালায় দিব। আফনে সারা মহল্লায় কেরে সারা ঢাকা শহরে কুনু দোকানে মোমবাত্তি খুইজ্জা বাইর কইরা দেহেন দেহি?         


আমি অবাক হইয়া হা কইরা চিন্তাইতাছি কি করুম? পুলা কইলো, বাপজান একটা পাইছ লইয়া লও। বাড়ি আন্ধার। তোমারে হাইঞ্জা বেলায় মোম কিনতে পাডাইছে, তুমি আড্ডাত পাইরা ভুইল্লা গেছ। আইজ তোমার খবর আছে। 


অগত্য নগদ একশ টিয়া দিয়া একটা মোমবাত্তি লইয়া বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। পুলারে কইলাম - তর মায়ে বিশ্বাস করব একটা মোমবাত্তির দাম একশ টিয়া? কনফার্ম কইব আমি বিড়ি খাইয়া টিয়া উড়ায়ালছি। 


পুলায় কইলো - সম্ভাবিলিটি আছে। 


বাড়ির কাছাকাছি গিয়া পুলার হাতে মোমবাত্তি দিয়া কইলাম - বাপজান তুই লইয়া যা; আমি তর ফুফুর বাড়ির থন ঘুইড়া আহি। রাইতে না আইলে বুঝবি তর ফুফু আইতে দেয় নাই। 


পুলা হাইস্যা কয় - পলাইতাছ, না? 


আমি মনে মনে কইলাম - আগে ঘরে বৌ আহুক রে বাপ, তারবাদে বুঝবি। মনকতা কইতে কইতে ঝিরঝির বৃষ্টি'তে ঘুটঘুইট্টা আন্ধার রাস্তায় নাইম্যা গেলাম।  


০৫ অক্টোবর, ২০২২ 


#রম্য  


কারেন্ট নাই 

 - আহসানুল হক 

অন্তর্দহন

 অন্তর্দহন 

 - আহসানুল হক 


বিচ্ছেদের পরেও মনে পড়ে তাকে 

ভালোবাসা ছিলো তো কখনো!  

তারপর প্রতিদিনের খুঁটিনাটি সংসারে 

হাড়ি-কুড়ি বাসনের ঝনঝনানো;   


কথা কাটাকাটি থেকে অভিমান

অভিমানে রাগ, রাগ থেকে দূরত্ব 

একটা সময় আলাদা দুজন  

তারপর থেকে বিচ্ছেদের একাকীত্ব; 

 

আজো মাঝেমাঝেই খুব একলা রাতে 

মনে পড়ে তাকে, রাগে কিংবা ঘৃণায় 

আসলে কি পুরোটাই তার দোষ ছিলো?  

অন্ধকারে দেখি না নিজেরে আয়নায়;


অভিমানে দুজন আলাদা হলেও  

মনে কি কখনো পড়ে না তাকে? 

তবে কেন নির্ঘুম চোখ একলা আকাশে

চাঁদের দিকে চেয়ে থাকে? 


একলা বিছানা একাকীত্বে কাঁদে 

স্মৃতি সাথে নিয়ে কাঁদি আমি 

ভালোবাসা আজও অনুভবে 

কেউ না জানুক, জানে অন্তর্যামী। 


০৪ অক্টোবর, ২০২২ 


#কবিতা 


অন্তর্দহন 

 - আহসানুল হক 


কাছে ও দূরে

 কাছে ও দূরে 

 - আহসানুল হক 


মানুষই ভালোবাসে

মানুষই দুঃখ দেয়;  


যখন দুঃখ পাই, পাহাড়ের কাছে যাই 

পাহাড়ের বিশাল নিস্তব্ধতার মাঝে হারিয়ে যাই 

অনুভূতিহীন পাহাড় কথাই বলতে পারে না 

দুঃখ দেবে কি করে?   


যখন কষ্ট পাই, নদীর কাছে যাই 

নদীর কুলকুল ধ্বনির মাঝে হারিয়ে যাই

নদী কথা বলে নিজের সাথে  

ডুবন্ত মানুষে তার কি যায় আসে? 


যখন কান্না পায়, সাগরের কাছে যাই 

সাগরের নোনা জলে চোখের জল মেশাই 

সাগরের গর্জন নিজের সাথে 

মানুষের কান্নায় তার কি যায় আসে? 


কাছের মানুষগুলো যখন দূরে ঠেলে দেয়!

স্বার্থ কিংবা অর্থের কারণে 

আমি প্রকৃতির কাছে চলে যাই 

সম্পর্কহীনতায় একাকীত্বের সম্পর্ক গড়তে; 


মানুষ ভালোবাসে, মানুষই দুঃখ দেয়

মানুষ হাসায়, মানুষই কাঁদায়;


যখন দুঃখ পাই, পাহাড়ের কাছে যাই  

পাহাড় আপন করে নেয় নিস্তব্ধ বিশালতায়


যখন কষ্ট পাই, নদীর কাছে যাই  

নদী আমাকে ডুবিয়ে দেয় কষ্টগুলো বুকে ধরে 


যখন কান্না পায়, সাগরের কাছে যাই 

সাগর নিজেই নোনা হয় আমার কান্না শুষে নিয়ে 


যখন মানুষ দূরে ঠেলে দেয়, প্রকৃতির কাছে যাই 

প্রকৃতি নিজের করে নেয়, মাটিতে মাটি করে;


মানুষই ভালোবাসে কাছে এসে 

মানুষই দুঃখ দেয় দূরে সরে

আমি ও আমার অনুভূতিগুলোর বসবাস 

আমাতেই, - কাছে ও দূরে।    


২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ 


#কবিতা 


কাছে ও দূরে 

 - আহসানুল হক 





পার্থক্য কোথায়?

 পার্থক্য কোথায়? 

 - আহসানুল হক 


খাদ্য জীবের প্রথম চাহিদা, 

এক এক জীবের খাদ্যাভ্যাস একেক রকম

কেউ তৃণভোজী কেউ মাংসাশী 

একমাত্র মানুষেরই সবকিছু চলে 

 - কাঁচা বা রান্না, হারাম ও হালাল, পেটে হজম হলে;


খাদ্যের প্রকারভেদ মানুষের মাঝেই সবচেয়ে বেশি 

আদতে প্রকারভেদ মানুষেরই মাঝে,  


প্রকারভেদ স্থানানুযায়ী 

 - পাহাড় অঞ্চলের মানুষ আর নদীর পাশের মানুষ

 - মরুভূমির মানুষ আর বরফের দেশের মানুষ; 


প্রকারভেদ খাদ্যের যোগানের সাথে 

খাদ্যের যোগান আর্থিক সংগতির সাথে 

বদলে যায় খাদ্য, খাদ্যাভ্যাসে

  - যদিও ধনী গরীব সবার পেটেই ক্ষুধা নাচে;


ধর্মের প্রকারভেদ অনুযায়ীও খাদ্যের কিছু বিধিনিষেধ থাকে 

বিধিনিষেধ থাকে বয়সের ব্যবধানে 

বিধিনিষেধ অসুখ বিসুখ আর ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে 

বেশীরভাগ মানুষই বিধিনিষেধ মেনে খাদ্য গ্রহণের চেষ্টায় থাকে 

অল্প কিছু ব্যতিক্রম তো সব জায়গাতেই আছে;


কাঁচা বা রান্না 

আমিষ বা নিরামিষ 

মাছ বা মাংস

শক্ত বা নরম 

হারাম বা হালাল 

খাদ্যের যতই প্রকারভেদ থাকুক যতই 

থাকুক যত অসামঞ্জস্য প্রাপ্তি আর চাহিদার মাঝে 

 - মানুষ মাত্রই খাদ্য গ্রহণ করে; 


খাদ্য গ্রহণ মানেই বর্জ্য ত্যাগ 

 - এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম,  

আচ্ছা! কোন ভাবে কি বোঝা যায়, কোনটা কোন শ্রেণীর মানুষের বর্জ্য?

  - ধনীর না গরীবের? সাদার না কালোর? 

 - হিন্দুর না মুসলমানের, খৃষ্টান না বৌদ্ধের?  

 - পাহাড়ি না নদী পাড়ের? মরুভূমির না মেরু অঞ্চলের? 


এই যে আমরা মানুষের মাঝে শ্রেণিভেদ করি!  

আদতে পার্থক্য কোথায়? 

 - মানুষে মানুষে! 



মৃত্যু অমোঘ বিধান, 

প্রতিটা জীবিতেরই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয় 

ধুঁকে ধুঁকে কিংবা হঠাৎ করে 

নির্দিষ্ট একটা বয়সের পরে কিংবা যে কোন সময় - হঠাৎ করে 

জন্মেই কেউ মারা যায়, কেউ শতায়ু পায়; 


অথচ মানুষই মানুষে মানুষে  সবচেয়ে বেশি প্রকারভেদ করে, 

শ্রেণিতে শ্রেণিতে আর গোত্রে গোত্রে ভাগাভাগি করতে করতে মুখে বুলি ঝাড়ে 

 - মানুষ মানুষের তরে; 


মানুষে মানুষে প্রকারভেদ গায়ের রঙ অনুযায়ী

 - সাদা, কালো, হলদেটে কিংবা বাদামী বলে

প্রকারভেদ আর্থিক অবস্থান অনুযায়ী 

 - ধনী, গরীব কিংবা মধ্যবিত্ত হলে

প্রকারভেদ স্থান অনুযায়ী 

 -  পাহাড়ি মানুষ, মরুভূমির মানুষ কিংবা বনাঞ্চলের

প্রকারভেদ ধর্মানুযায়ী 

 -  হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃস্টান বিভাজনে; 

 

এক এক জায়গার মানুষ এক এক রকম

এক এক মানুষের আকার আকৃতি এক এক রকম 

মানুষের ধর্ম গোত্র বর্ণ এক এক রকম 

মানুষে মানুষে বিভাজন! মানুষেই করে 

 - যদিও মরতে হয় সবাইকেই, কেউ থাকে না চিরতরে; 


মানুষ মরে যত্রতত্র, হরেদরে 

সুস্থ অবস্থায় ফট করে কিংবা রোগে শোকে ভুগে ভুগে 

স্বাভাবিক নিয়মে কিংবা এক্সিডেন্টে, 

যতক্ষণ শ্বাস চলে ততক্ষণই তাকে মানুষ বলে

তারপর মানুষ নামক জীবটি, মানুষ নাম হারিয়ে খাটিয়ায় পড়া থাকে 

 - শব হয়ে;

 

ধর্মানুযায়ী এক এক শবের সৎকার এক এক ভাবে 

কোন শব পুড়ে যায় আগুনে 

কোন শবের স্থান হয় মাটির তলে,

মাটির তৈরি মানুষ ছাই হয় কিংবা মাটি হয়, মরে গেলে;  


এই যে পুড়ে ছাই হলো কিংবা মাটি হলো! 

সেখান থেকে বুঝতে পারবে শবটা কোন শ্রেণীর মানুষ ছিলো? 

 - ধনী না গরীব? সাদা না কালো? 

 - পাহাড়ি না নদী পাড়ের? মরুভূমির না মেরু অঞ্চলের? 

 - হিন্দু না মুসলমান? বৌদ্ধ না খৃস্টান? 


এই যে আমরা মানুষের মাঝে শ্রেণিভেদ করি!  

আদতে পার্থক্য কোথায়? 

 - মানুষে মানুষে! 


২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ 


#কবিতা 


পার্থক্য কোথায়? 

 - আহসানুল হক 


একলা মা, একলা বাবা

 একলা মা, একলা বাবা 

 - আহসানুল হক 


জীবনের এক এক স্তর, মানুষের একেক রকম

প্রতিটা স্তরেই আমরা আসলে বড্ড একলা ভীষণ

কখনো বাবা, কখনো মা কখনো বা সন্তান আমি

কখনো সুখ, কখনো দুঃখ, জীবনটা এমনই জানি; 


একটা সময় স্বামী স্ত্রী দুজনার মাঝে গভীর প্রণয় ছিলো 

দুজনার ভালোবাসায় ঘর আলো করে একটি শিশু এলো   

তারপর আরেকজন, তারপর মতের অমিল যখন তখন 

প্রায়শই ঝগড়া আর নিত্য কথা কাটাকাটি, স্বামী স্ত্রী দুজন;  


একসময় আমরা দুজন আলোচনায় আলাদা হয়ে গেলেম

ছেলে মেয়ে দুটোকে আমরা দুজন ভাগাভাগি করে নিলেম

তুমি সিঙ্গেল বাবা হয়ে মেয়েকে নিয়ে আছ বড্ড সুখে

আমি সিঙ্গেল মা হয়ে যত কালিমা মেখেছি লোক মুখে;  


সিঙ্গেল বাবা হওয়া যতটা সহজ মা হওয়াটা বড্ড কঠিন

চাকরি করে সন্তান পালন ভয়াবহ কাটে মায়ের দিন 

বাবারও হয়তো বেশ কষ্ট হয়, একা সন্তান পালনে 

একলা মা দিনরাত খেটে মরে অর্থের প্রয়োজনে;  


এক সময় দুজনাই বোঝে জীবনের ভুলগুলো 

শুধু শুধুই তুচ্ছ কারণে দুজনে মিলে ঝগড়া করেছিলো 

সিঙ্গেল বাবা আর সিঙ্গেল মায়ের সন্তানরা দুঘরে বড় হয় 

বাবা আর মায়ের দুজনেরই নামেই তো সন্তানের পরিচয় 


এক সময় দু'ঘরে দু সন্তান বড় হয়ে পাখা মেলে

এক সময় দু'ঘরে একলা বাবা মা সন্তানদের বিয়ে হলে

এক সময় সিঙ্গেল বাবা একলা বাসায় একা ধুঁকে 

অন্য বাসায় সিঙ্গেল মা কাঁদে আদরের পুত্র শোকে;  


একসময় সন্তানরা বড় হলে যে যার পথ দেখবেই 

সিঙ্গেল বাবা আর সিঙ্গেল মায়ের কান্নায় চোখ ভিজবেই  

দু বাসায় দুজনার চোখের পানি, একা একা কথা বলে  

একাকীত্বের সমাপ্তি হবে, দুজনার ভবলীলা সাঙ্গ হলে।


  

একলা মা, একলা বাবা 

 - আহসানুল হক 



#কবিতা


১৯ জুন, ২০২২




   

জীবনের রূপ রঙ

 জীবনের রূপ রঙ 

 - আহসানুল হক 


একটা বয়স থাকে মন যেমন তেমন 

কখনো খেলা, কখনো আড্ডা কখনো মৌজ মাস্তি

আর প্রেমে পড়া? সে তো যখন তখন

সেটা কৈশোরে অথবা যখন যৌবন; 


বয়সের সাথে সাথে মন বদলায়, বদলে যায় মানসিকতা

তারপর জীবনের দৌড়, আর জীবনের প্রয়োজনে টাকা উপার্জন

সংসার, পরিবার, সন্তান সন্ততি, তাদের প্রতিষ্ঠিত করার যত আয়োজন

তারও কিছু পরে অবসর, কিছুটা থিতু হয়ে বসার সময় 

সময় পেছনে তাকানোর, সময় পাওয়া আর না পাওয়ার হিসেব কষার

সন্তানরা? যার যার জীবনে; বাকি সময়টা স্বামী স্ত্রী দুজনার    

কোন একজন ছেড়ে গেলে আরেকজনের স্মৃতির জাবর কাটা 

আর একাকীত্বের এক জীবন, এ সময়টা বড্ড অন্যরকম; 


এ বয়সটাতে কারও সুখ, কারও দুঃখ; এক একজনের জীবন একেক রকম 

তবে সবাই পুরনো স্মৃতির জাবর কাটে, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজন

মাঝে মধ্যে পুরনো বন্ধুবান্ধবদের মিলন মেলা, আর কিছু নিত্য যোগাযোগ 

এ সময়টা কথা বলার, এ সময়টা জীবন'কে বোঝার, পেছনে তাকাবার; 

এ সময়টায় বেশীরভাগ ধর্মে মেতে ওঠে, পরকালের প্রস্তুতি নেয় 

আর বাকি অবসর সময় পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে হাসি গল্পে মেতে

এই যে সহচার্য! এটা শুধুই মানসিক; সময় কাটানোর উপাচার্য মাত্র 

এ সময়টা ঠিক প্রেমের জন্য উপযুক্ত সময়, বন্ধুত্বটুকুই ঠিক আছে   

ঢলা যৌবনে প্রেম মানায় না, তবে কিছু মানুষ থাকে যাদের আলু ত্রুটি যায় না 

আজকাল যদিও পরকীয়া নামক এক ভাইরাসের আক্রমণ বড্ড প্রকট

তবে ওটা আসলে প্রেম না, আমি বলি শরীর; ঐ যে! আলুর দোষ 

যৌবনে তাও না হয় আলু সয়; ঢলা যৌবনে? শর্করা বাদ দিতে হয় 

সবাই বোঝে; বেশীরভাগই মেনে চলে, আর লাজ-লজ্জাহীন অল্প কিছু থাকে

এদের সবাই'কে নিয়েই সুখে দুঃখে মিলেমিশে রঙ রূপের মনুষ্য জীবন। 


 

জীবনের রূপ রঙ 

 - আহসানুল হক 


#কবিতা 


১৩ জুন, ২০২২


তেরো বয়স বয়সটা

তেরো বছর বয়সটা  

 - আহসানুল হক 



তেরো খুবই একটা আশ্চর্য বয়স 

কলির পরে ফুল, বারোর পরে তেরো

প্রথম প্রথম মনে প্রেম আসে তখন 

বড্ড মন কেমন কেমন! কি যেন চায় আরও; 


তেরো বছর বয়সটা একদম অন্যরকম 

কৈশোর হলেও যেন ঠিক কৈশোর না

যৌবন হব হব করেও পুরোপুরি যৌবন না 

বারোর কোঠা পার হতে না হতেই, আসে তেরো;


যৌবন তেরোতেই আসি আসি, কৈশোরটা ছিলো বারো

তের'কে যতই লোকে অপয়া বলুক না!  

একবার ভেবে দেখো, সবারই বয়স ছিলো তেরো 

আর পাশের বাড়ির মেয়েটি! ক্ষণেক্ষণে মনে পড়তো আরও;


তেরো'তে যৌবনের ঘণ্টা, তেরো'তে প্রেম 

কামের প্রথম শিহরণ, সেও সেই তেরোতেই

চুপেচুপে সিগারেট আর নিষিদ্ধ কাজের প্রতি আকর্ষণ

বন্ধুবান্ধব এক হয়ে শুরু সেই অপয়া তেরোতেই;


তেরো'তেই হয়েছিলো আমাদের প্রথম প্রেম 

তেরো'তেই প্রথম মন কেমন কেমন 

তেরো'তেই তার আঁখি'তে আঁখি মিলেছিলো  

আর হৃদয়ে হৃদয়ে ভালোবাসার গুঞ্জন;


তেরো মাস প্রেম করার তেরো তম দিনে 

তেরো রঙের তেরোটা গোলাপ দিয়েছিলাম তাকে 

তেরোবার গোলাপের ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে  

তেরোবারই বলেছিলো ভালোবাসে আমাকে; 

    

কোন এক জন্মদিনে উপহারে তাকে  

তেরোটা শাড়ি কিনে দিলাম 

তেরোবার তেরো রঙের শাড়ি বদলিয়ে শেষে 

শাড়িহীন প্রেমে বিলীন হলাম; 


আজো প্রতি চন্দ্রমাসের তেরো তারিখে আমরা

দুজনাই আকাশের দিকে চেয়ে থাকি 

যদিও দুজন বিচ্ছেদে দুদিকে 

তবুও তেরো'তে চাঁদের জ্যোৎস্না দেখি;  


লোকে তেরো'কে যতই অপয়া বলুক 

আমাদের জীবনের সোনালী সময় 

তেরো'তেই আমাদের প্রথম প্রেম

সারাজীবনেও কি তেরো ভোলা হয়?



তেরো বয়স বয়সটা 

 - আহসানুল হক 



#কবিতা 


১৩ জুন, ২০২২ 


 




 


 





   




 

মাটির তৈরি ঘর

 মাটির তৈরি ঘর 

 - আহসানুল হক 


মাটির তৈরি শরীর তোর,  মাটির তৈরি ঘর

রুহুটা ঘর ছাড়িলে,  শরীর হইবে পর

এক ফুঁৎকারে রুহ শরীরে, এক ফুঁৎকারে বাহার

রুহুটা ঘর ছাড়িলে,  শরীর মাটির আহার;


শরীর হইলো মাটির দলা, রুহু বিহনে 

রুহুটা কোথায় আছে কেউ কি তা জানে? 

বিজ্ঞানীরা রুহু খোঁজে শরীরের ভেতর 

রক্ত মাংস মাটি যে হয়, শরীর ছাড়লে পর;


রুহু হইলো আল্লাহর ইচ্ছা, জীবন আর মরণ 

মানুষের সাধ্য কি করিতে খণ্ডন 

এক ফুঁৎকারে জীবন তোর এক ফুঁৎকারে মরণ

ক্ষণিকের পৃথিবীটা পরীক্ষার মতন ;


কেন এত আস্ফালন, কিসের অহংকারে?   

চোখটা বন্ধ হইলেই তো, যাবি মাটির ঘরে 

দুদিন এর এই পৃথিবী,  কি করেছ সঞ্চয়? 

রুহুটা ঘর ছাড়িলেই জবাব দিতে হয়;


আস্তিক নাস্তিক যত মানুষ, আল্লাহ সবার এক 

হিসাব নিবেন জনে জনে, হাসর হবে এক  

সাক্ষী দিবে অঙ্গ অঙ্গ, ভালো খারাপ কাজ 

দুদিনের বাহাদুরিতে যাহাই করছ আজ;


রুহুর বাস শরীরেতে, মানুষ ভেজাল খাটি 

রুহুটা ঘর ছাড়িলেই শরীর তোর মাটি 

এত কিসের অহংকার মানুষে করে? 

দুদিনের জীবন শেষে যাবি মাটির ঘরে।


মাটির তৈরি ঘর 

 - আহসানুল হক 


#কবিতা 


১০ জুন, ২০২২



মন সব জানে

 মন সব জানে 

 - আহসানুল হক 


বার এ বসে আমি, মদের গেলাসে 

চোখ বুঁদে আসে, কি এক আয়েশে 

পেগের পর পেগ, চানাচুর প্লেটে  

খিদে টান দেয়, একসময় পেটে 

অর্ডার হাঁকি বার টেন্ডারকে ডেকে 

হালাল চিকেনের খোঁজ করি হেঁকে 

মদের সাথে হালাল মুরগী!  যায় না

আমার পেট, হারাম কিছু খায় না;


অফিসে বসে, ক্ষমতার চেয়ারে 

মুই কি হনু রে! আহারে আহারে 

ফাইলের বোঝা, টেবিলটা জুড়ে 

ড্রয়ারে ঘুষ এলে, হাত সাইন করে 

কোরবানি সামনে, গরু কিনতে হবে

ঈদের আগে ঘুষ, কিছু বাড়তি দেবে 

ঘুষের টাকায় কোরবানি, হয় নাকি?

হুজুরদের কথা শুনলে, চলে নাকি?


কাড়ি কাড়ি টাকা, অবৈধ রোজগার 

সৎ পথে আয়, ইদানীং কে করে আর 

ব্যাঙ্কের ভল্ট উপচানো, টাকার পাহাড় 

তিল তিল ঘুষে, সঞ্চয় হয়েছে আমার 

এবার হজ্জ করে,  সৎ হয়ে যাবো 

লাক্সারি হজ্জ প্যাকেজ, শেষ ঘুষটা খাব

সব পাপ ধুয়ে যায়, হজ্জ করে এলে

ঐ তো তোমাদের, ঐ হুজুররা বলে;


হালাল মুরগী, খুঁজছ বারে বসে? 

কুকুরের মাংস, খাও পেট ঠেসে 

ঘুষের টাকায় কেন কিনছ গরু? 

শুয়োর কোরবানি, তুমিই কর শুরু

অসৎ রোজগারে হজ্জ করছ কেন? 

সৎ পথ না চিনলে, ভিক্ষা ভালো জেনো

হারাম রোজগারে, হালাল কিছু হয় না 

মন সবই জানে, লোভ মানতে চায় না।


মন সব জানে 

 - আহসানুল হক 


#কবিতা 


০১ জুন, ২০২২

একাকীত্বের একা

 একাকীত্বের একা 

 - আহসানুল হক 


আমি মাঝে মাঝে বড্ড একা হয়ে যাই

আসলে আমি মাঝে মাঝে একাই হতে চাই, 

অনেক মানুষের ভিড়েও তোমাদের মনে কখনো একাকীত্ব বাসা বেঁধেছে? 

আমার কিন্তু বেঁধেছে, 

আসলে ইচ্ছে করেই বাঁধিয়েছি একাকীত্বের ইচ্ছে বাসা 

মানুষের ভিড়ে আমার একাকীত্বের একা ; 


আকাশটাকে খেয়াল করে দেখেছ কখনো?

লক্ষ গ্রহ নক্ষত্র বুকে নিয়েও কেমন একলা একা? 

রাশি রাশি মেঘের সারিগুলোকে দেখ! 

ওর মাঝে লক্ষ লক্ষ বৃষ্টির ফোঁটা, প্রতিটি ফোঁটাই কিন্তু পড়ছে একা; 

নদী, সাগর আর মহাসাগরের দিকে তাকাও!  

ক্রমাগত ঢেউ এর ঢেউ, একের পর এক, অথচ প্রতিটা ঢেউ ভাংছে একা;


অনেক মানুষের মাঝেও আসলে আমরা কোন না কোন সময় সবাই একা

আয়নার সামনে যখনই দাঁড়াই, একটাই মানুষ দেখি ওখানে, বড্ড একা

চোখ বন্ধ করে যখনই নিজের মাঝে একা হয়ে যাই! 

নিঃসীম এক একাকীত্বের দেখা পাই, 

ভাবনার গভীরে উঁকি দিয়ে দেখি - জন্মেছি একা

মৃত্যুর গহ্বরে ডুব দিয়ে দেখি - যেতে হবে একাই 

 

১৩ মে, ২০২২


#কবিতা 


একাকীত্বের একা 

 - আহসানুল হক 


পরচর্চা

 পরচর্চা 

 - আহসানুল হক 


কারও কারও জীবনে সঠিক সময়ে বিয়েটা হয়ে ওঠে না 

হয়তো জীবিকার প্রয়োজনে অথবা অন্যকোন কারণে, 

কারও সময়ে বিয়ে হয়, আবার সময়ের অনেক আগেই বিধবা হয়

কিংবা বিপত্নীক, সেটা যার যার কপাল

তাই বলে কি মানুষ সারাজীবন একা কাটায়? 


কেউ কেউ কাটিয়ে দেয় 

কেউ কেউ জীবনের কোন একটা মোড়ে জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনী খুঁজে নেয়

এটাই স্বাভাবিক, এটাই হওয়া উচিৎ, 

একটা বয়সে একাকীত্ব অসহ্য লাগে

একটা বয়সে এসে কথা বলার মানুষ লাগে

যাদের আগে বিয়ে হয়েছিলো, সন্তান থাকলে ওরা একসময় যার যার জীবনে

যার যার সঙ্গী বা সঙ্গিনী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় নিজের জীবনে

বুড়ো বাবা কিংবা মা'কে দেখার মত এত সময় কোথায় আজকালকার সন্তানদের

কিংবা মানসিকতা? 

 

অনেকে তাই একটু বয়স হলেও সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজে 

আবার অনেকেই একটু বেশি বয়সেই বিয়ে করে,  

যে করে খুব ফুর্তিতে করে না, হয়তো করে অনেকটাই বাধ্য হয়ে 

তবে আশেপাশের লোকজনের আনন্দ ধরে না, গল্পে মাতার 

গীবতের চর্চা ঘরে ঘরে, পরচর্চা যে একটা অসুস্থ আনন্দ এটাই মানুষ জানে না  

আশেপাশের মানুষগুলোর মধ্যে এক একজনের এক এক রকম চর্চা 

 - শালা বুইড়া ভাম, বিয়া করছে, দেখছ নি করছেডা কি কাম? 

 - বুড়ি বেডি রঙ মাইখ্যা সং সাজছে, বুইড়া বয়সে মনে রঙ লাগছে; 

 - বুইড়া বয়সের বুড়াবুড়ি, বিয়া কইরা সাজছে ছোড়াছুড়ি;


 আজকাল তো আবার ফেসবুক ট্রল 

- বুড়া মিয়ার ইঞ্জিনের ওভারহোলিং  

- বুড়ি রসে টসটস 

- ও চাচামিয়া, সামলাইতে পারবা? 

- ও খালা! ধরলা তো ধরলা, যুয়ানডাই ধরলা? 

ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি 

আশেপাশের মানুষের মুখ পরচর্চা আর গীবতের লাদি, 

কেন রে বাবা! কোথায় তোদের চুলকানি?

তুই ওরটা খাস না ও তোরটা খায়?

যার যার তেল তার চরকায়,

তাই না?   


আরে বাবা! যে বিয়ে করেছে সে করেছে তার প্রয়োজনে 

তুইও করে ফেল না তোর দরকার হলে!  

পরের শয়নকক্ষে তোর আড়ি পাতার দরকারটা কি? 

আসলে খাইছলত, সহজে যায় নি?


তুই তোর ঘরে উঁকি দে 

ওখানেও অনেক গল্প আছে 

তোদের ঘর থেকেও হাড়ি খুন্তি ঝনঝন, কেউ শুনছে না তো! 

তোদের স্বামী স্ত্রীর নিত্য কুৎসিত ঝগড়া নিয়ে কেউ ট্রল বানাচ্ছে না তো! 

তুই যতটাই অন্যের গীবত করবি, তোরটাও মানুষ করবে তত;


এই যে তুই গীবত করলি! তোর উপকার হলো টা কি? 

এই যে আমি শুনলাম! আমারই বা লাভ হলো কি? 

আরে ভাই তোমরা বুঝবে না, এটা মনের ফুর্তি 

এছাড়া আর কি?


আজকাল পরের হাড়ির খবর কে আর নিতে যায়! 

আরে বাবা যায়, যায়! 

যার হাড়িতে ভাত কম সেই অন্য হাড়িতে চায়।



০১ মে, ২০২২


#কবিতা


পরচর্চা 

 - আহসানুল হক 






শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

ইচ্ছেগুলো পাখির ডানায়

মানুষের কতরকম ইচ্ছেই না থাকে! 

আমার ইচ্ছে করে পাখি হতে,

পিঠে একজোড়া ডানা থাকলে বেশ হতো

নিমিষেই মিটিয়ে দিতেম তোর আর আমার দূরত্ব; 


আকাশের দিকে চোখ মেলতেই চোখে নীলের ধাক্কা 

আমি ঝকঝকে আকাশের কথা বলছি

আকাশ কখনো কখনো ধুসর হয়, কখনো কখনো কালো

যখন তার মন খারাপ তখন আকাশ কাঁদে, তোমরা বৃষ্টি বলো; 


আমার খুব ইচ্ছে করে কোন একদিন ঐ মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে

না, না, ইকারাসের ডানায় নয়, পাখির ডানায় 

সূর্যের ওপারটায় যদি কখনো পাখা মেলে উড়ে যাওয়া যেত! 

আচ্ছা! সূর্যের ওপারে কি ভালোবাসার নগরী আছে? 


আমি সূর্যোদয় দেখি, সূর্যাস্ত দেখি

ভালোবাসা দেখব বলে,

কখনো চোখ ঝলসে দেয় সূর্য কখনো অন্ধকার

আমি তো তোর হয়েই থাকি, তুই কার?


আকাশের ওপরে কি আছে? আরেকটা আকাশ? 

তার ওপরে? মহাকাশ? আচ্ছা মহাকাশও কি নীল? 

তবে তো নিশ্চয়ই ওখানে দুঃখ অনেক বেশি 

একবার বড্ড ইচ্ছে করে পাখির ডানায় নীল পেরোতে;


একদিন আমি ঠিক পাখি হব, ঐ অনেক ওপরে আকাশে উঠে যাব

একদিন আকাশের নীলগুলো ছুঁয়ে দেব, নীলে কান্নাগুলো গুলিয়ে নেব 

একদিন ঠিক ভালোবাসতে শিখব, আকাশের ওপরের ভালোবাসার নগরীতে 

তারপর না হয় ঘুমিয়ে পড়ব, তোমরা আমায় রেখে দেবে সাড়ে তিন হাত মাটিতে।


 


৩০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ইচ্ছেগুলো পাখির ডানায় 

 - আহসানুল হক 




    

ভবিষ্যৎ পৃথিবী

 কোন এক চৈত্রের দুপুর, মাথার ওপর দুপুরের খাড়া রোদ 

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে একটু ছায়ার আশায় এক লোকাল পার্কে ঢুকে গেলাম

ডালপালা ছড়ানো একটা বড় আম গাছ দেখে হেলান দিয়ে তার ছায়ায় বসে পড়লাম 

বসে থাকতে থাকতেই ঝিমুনি চলে এলো, হয়তো চোখটাও লেগে গিয়েছিলো

হঠাৎ করেই ঝিমুনি চটে গেলো, আশেপাশেই কোথাও থেকে খিলখিল হাসির শব্দ 

তার সাথে টুকটাক কিছু কথা ভেসে আসছিলো, ভালো করে কান দিতেই লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠলো

দুজনের প্রেম ভালোবাসার ঘন মুহূর্তের কথাবার্তা চলছিলো

প্রেমিক প্রেমিকা এগুলো পার্কে বলে না নিশ্চয়ই, দম্পতিরা বন্ধ দরজার ওপাশে বলতে পারে

একটু পরেই কাম শীৎকার, আমি আর থাকতে না পেরে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়িয়ে যেতেই দেখি 

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, চারিদিক কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে অন্ধকার 

হিমেল বাতাসে শরীরে শীত শীত একটা অনুভূতি, চৈত্রের গরমে শীত লাগছে কেন? 

আমার হেলান দেয়া গাছের ঠিক উল্টোদিকে একজোড়া শরীর জোড়া লেগে আছে

খোলা পার্কে? আমাকে দেখেও তাদের কাজের কোন ব্যত্যয় হলো না 

আমার সামনেই বাকি কর্ম সম্পন্ন করছিলো দেখে লজ্জায় মাথা ঘুরিয়ে রাখলাম 

ওরা কর্ম সম্পাদন করে চোখ টিপে বললো - কি হে কাকু! পারফর্মেন্স কেমন দেখলে? 

আমি ধমকে উঠে বললাম, অসভ্যের দল তোদের লজ্জা সরম নেই?


ওরা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো

তারপর কি জিজ্ঞেস করলাম বুঝে উত্তর দিলো - এতে লজ্জা সরমের কি আছে?

তুমি করো না? 

আমি আবার চটে গিয়ে বললাম, দুষ্টের দল এগুলো খোলা আসমানের নীচে করতে আছে?

এগুলো দম্পতিরা গোপনে করে, ঘরের দরজা দিয়ে; তোরা শুরু করেছিস চৈত্রের বিকেলে 

তাও খোলা আকাশের নীচে বনে বাদাড়ে;


ওরা এবার বড় বড় চোখ করে বললো, দম্পতিরা করে মানে?

আজকাল দম্পতি পেলা কোথায় চাচা মিয়া? 

ওগুলো তো আদিম যুগের মানুষের কারবার ছিলো

বিয়েশাদী উঠে গেছে সেই কবেই? 

আর পৌষের সন্ধ্যায় তুমি চৈত্র পেলে কোথায়? স্বপ্ন দেখছ নাকি?  


এবার আমার আশ্চর্য হওয়ার পালা,

বিয়ে শাদী উঠে গেছে মানে?

কবে থেকে রে বুড়বকের দল? তোদের বাবা-মা বিয়ে করেন নি?

নাকি বিয়ে ছাড়াই তোরা দুনিয়াতে এসেছিস?


ওরা বললো? বিয়ে? বাবা-মা? 

ওহ তুমি বায়োলজিক্যাল বাবা-মার কথা বলছ?

আরে বাবা-মা থাকবে না কেন? তবে ওদের খবর কে রাখে? 

নিশ্চয়ই খবর নিলে পাওয়া যাবে সেন্ট্রাল ডাটাবেজে?


আমি চোখ বড় বড় করে বললাম - মানে?

মানে কি আবার চাচা মিয়া? তুমি কোন দুনিয়ায় বাস করছ?

আজকাল বাচ্চাকাচ্চা হতে আবার বিয়ে করতে হয় নাকি? 

দুজন ইচ্ছে করলেই বাচ্চা নিতে পারে,  

আমি বললাম - বিয়ে ছাড়াই বাচ্চা?


ওরা জবাব দিলো - হ্যাঁ! এটাই তো স্বাভাবিক

যখন যাকে ভালো লাগে কয়দিন একসাথে থাকি তারপর ভালো না লাগলে যে যার পথে

এর মধ্যে কারো ইচ্ছে হলে বাচ্চা নিয়ে নেয়, যতদিন খুশি বাচ্চাকে ডলাডলি করে আদর করে  

তারপর আবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছে হলে বাচ্চার রেখে দেয় 

ইচ্ছে না হলে বাচ্চাকে বাচ্চা ব্যাংকে জমা দিয়ে দেয়

তারপর আবার নতুন কারো সাথে কিছুদিন থাকাথাকি, পছন্দ না হলে আবার অন্য কেউ

ছেলে মেয়ে দুজনেরই সমান অধিকার, এটাই এখনকার আইন;


আমি বললাম - তোমাদের নিশ্চয়ই বাচ্চা হয় নি?

মেয়েটি বললো আরে কি বলো কাকু? হয়েছে তো তিনটা  

আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম - এই বয়সে তুমি তিনজনের বাবা?

মেয়েটি হেসে দিয়ে বললো - আরে আমি ওর বাচ্চাদের বাবা হতে যাবে কেন? 

তার সাথে তো মাত্র সপ্তাহ খানেক ধরে থাকা শুরু করেছি, ওর তিনজন বাচ্চার তিন বাবা

ছেলেটি কিছুটা লজ্জিত মুখ করে বললো - আমারও দুটো আছে, প্রথমটা ওর মা রেখে দিয়েছে  

আর দ্বিতীয়টা আমিও রাখি নি আর যার পেট থেকে হয়েছে সেও রাখে নি - বাচ্চা আছে বাচ্চা ব্যাংকে 

তোমার ইচ্ছে হলে নিয়ে নিতে পারো চাচা মিয়া, ওটা কিউট একটা মেয়ে; 


আমার মাথা কাজ করছিলো না 

কি সব শুনছি?

একবার ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি, মাথা ঝাড়া দিয়ে শরীরে চিমটি কাটলাম 

নাহ! ব্যথা পাচ্ছি তো! তারমানে স্বপ্ন না

আমি দুপুরে শুয়েছিলাম, চৈত্রের দুপুরে

আকাশে ছিলো কাঠফাটা রৌদ্দুর, গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিলো 

গাছে গাছে সবুজ পাতা ছিলো, 

অথচ ঘুম ভেঙেছে শীত শীত আমেজ নিয়ে, সন্ধ্যার প্রাক্কালে, ওরা বলছে পৌষের সন্ধ্যে  

ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম আম গাছের জায়গায় হেলান দিয়ে আছি অশ্বত্থ গাছে 

আমি এবার ছেলেমেয়ে দুটোকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি আসলেই পৌষ মাস?

ওরা বললো হ্যাঁ তো কাকু 

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম - চৈত্র মাসে ঘুমিয়ে পৌষ মাসে উঠলাম?

ছেলেমেয়ে দুটি বড় বড় চোখ করে বললো - তোমার মাথা খারাপ হয়েছে চাচা মিয়া

আট মাস কেউ ঘুমায়? 

এবার আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এটা কোন সাল বাবা?

ওরা বললো, দিন তারিখ ভুলে গেছ চাচা মিয়া? তোমার কি ডিমনেশিয়া? 

এটা দুহাজার সাতাত্তর সাল

আমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম - তাই তো হওয়ার কথা, তাই তো হওয়ার কথা

পঞ্চাশ বছর পরেও পৃথিবীটা টিকে আছে এটাই তো বেশি;   


কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে, 

আমি গভীর পুকুরের তলদেশ থেকে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি 

মায়াবতী একটি ছোট্ট বালিকা হাতে ফুল নিয়ে আমার গায়ে ধাক্কা দিচ্ছে 

আমায় চোখ মেলতে দেখতেই বললো - আফনেরে বোবায় ধরছিল চাচাজান

এই দুফুর রৈদে পার্কে কি করেন? বাইত যান

বলে সে ফুল বিক্রি করতে আবার পার্কের অন্যদিকে ছুটে গেলো,

যাহ্‌! এতক্ষণ কি সব আজগুবি স্বপ্ন দেখছিলাম!

তবে ওটা কি স্বপ্ন ছিলো? আমার কাছে মনে হচ্ছিলো একদম সত্যি ঘটনা

আচ্ছা! পৃথিবী কি আসলেই ঐদিকে যাচ্ছে?

বিয়েশাদী উঠে যাবে পৃথিবী থেকে? বাচ্চা ব্যাংকে বাবা-মায়ের ফেলে দেয়া বাচ্চারা থাকবে?

আজকাল অবশ্য এমনিতেই যা সব শুরু হয়েছে! 

পরকীয়া ঘরে ঘরে, দম্পতিদের মাঝে ঝগড়া ছাড়াছাড়ি নিত্য দিনের ঘটনা 

ডি এন এ টেস্ট পর্যন্ত যেতে হচ্ছে বাচ্চার বাবার পরিচয় নিশ্চিত করতে,   

আমি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কথা চিন্তা করতে করতে 

ছোট্ট মায়াবতী মেয়েটির অপসৃয়মান অবয়বের দিকে তাকিয়ে রইলাম

তারপর ধীরে ধীরে বাসার পথ ধরলাম .........


 


৩০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ভবিষ্যৎ পৃথিবী 

 - আহসানুল হক 




    

ভুক্তভোগী সন্তান

মানুষ বেঁচে থাকার একটা মাধ্যম খুঁজে 

সম্পর্কগুলো তার মধ্যে অন্যতম

এই সম্পর্কগুলোকে ঘিরেই মানুষের জীবন চলে

আবার সম্পর্কগুলোই সম্পর্কহীনতায় জীবনকে একলা ছুঁড়ে ফেলে;


আচ্ছা! বলতে পারো সকল সম্পর্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আপন কোনটি? 

চোখ বুঝে পঁচানব্বই ভাগ উত্তর মিলবে বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক

চার ভাগ হয়তো বলতে পারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক 

আর এক ভাগ বলতে পারে বাকি অন্যান্য সমস্ত সম্পর্ক; 


একটা মায়ের অনেকগুলো সন্তান থাকলেও অনেকগুলো সন্তানের একটিই মা 

একটা বাবার অনেকগুলো সন্তান থাকলেও সন্তানগুলোর বাবা একজনই 

বাবা-মায়ের অনেকগুলো সন্তান হলেও এক একজন এক এক রকম 

এক একজন সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের আচরণ এক একরকম

মজার ব্যাপার কি জানো? সব সন্তানের কাছে বাবা-মা একই রকম

তোমরা খেয়াল করেছে ব্যাপারটা? আমি কিন্তু করেছি; 


কোন এক ছেলে কিংবা মেয়ে বাবা-মায়ের জন্য হয়তো জান দিয়ে করেই যাচ্ছে!

অথচ বাবা-মায়ের একচোখা আদর অন্য এক সন্তানের জন্য, বড্ড চোখে লাগে 

সাধারণত মেয়েরা বাবা-মায়ের জন্য যতই করে থাকুক না কেন!

আমাদের দেশের বাবা-মার চোখের মণি হয়ে থাকে ছেলে সন্তান

চারিপাশের পরিবারগুলোর মধ্যে এটাই স্বাভাবিক দেখা যায় 

প্রচুর ব্যতিক্রমের গল্প আছে, কেউ বলতে চায় না, আমি চোখে দেখেছি; 


সন্তান বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, কিংবা স্বার্থপরের মত বৌ নিয়ে আলাদা থাকে

এটা আমাদের চারিপাশে খুব কমন; যৌথ পরিবার একসাথে মিলেমিশে? 

শহরে আজকাল এই ধ্যান ধারণাই বদলে গেছে, গ্রামে বা মফস্বলে এখনো হয়তো আছে   

কিন্তু অনেক বাবা-মাই ওনাদের অনেকগুলো সন্তানের মধ্যে বিশেষ একটি সন্তানকে 

সবসময়ই অতিরিক্ত দিয়ে থাকেন, সে আদর সোহাগই হোক কিংবা সহায় সম্পত্তিই 

আর কোন একজনকে সারাজীবনই বঞ্চিত করে, দেখেছ তোমরা? আমি দেখেছি;  


আমরা স্বাভাবিক নিয়মগুলো দেখেই অভ্যস্ত, উল্টোটা হলেই চোখে বড্ড লাগে

অথচ তোমাদের পঁচানব্বই ভাগ সবচেয়ে আপন সম্পর্কের মাঝে বহুভাগ উল্টোটা হয়ে থাকে

সন্তানরা এগুলো খুব সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখে, বাবা-মায়ের অশ্রদ্ধা কোন সন্তানই বা করে! 

ক্রমাগত অবহেলা সয়ে সয়ে ভুক্তভোগী সন্তানরা নিজের মাঝে গুমরে মরে  

আর সৌভাগ্যবান ঐসব সন্তানরা! সারাজীবন বাবা-মায়ের আদরে থাকে ঘরে   

ঐ বাবা-মা দের কেউ দেখেছ তোমরা? ঐ ভুক্তভোগী সন্তানদের? আমি দেখেছি।


 

৩০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা


ভুক্তভোগী সন্তান

 - আহসানুল হক 

 

 

 

        

নিজের সাথে মুখোমুখি

একদিন সকালের রোদে চা এর কাপ হাতে দুজন বসব মুখোমুখি 

না, না, দুজন বলতে আমি আর অন্য কেউ না

আমি আর আয়নার ওপারের আমি

শুধু আমরা দুজন, মুখোমুখি;


রোদ ভিজিয়ে চা খাব আর নিজেদের মধ্যে একটু আলাপন 

পুরনো কিছু সুখের স্মৃতি, কিছু কষ্টের কান্না আর আয়নার ওপারের আমি

টুপ করে চায়ের কাপে রোদ চুইয়ে পড়বে সুখের ঝলমলে স্মৃতিগুলো নিয়ে

আমি রোদ আড়াল করে দুঃখগুলো এক চুমুকে শেষ করে আকাশটার দিকে তাকাবো

ওখানে কিছু মেঘ উড়ছে, সাদা সাদা পেঁজা তুলোর মত 

পাশেই একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ঝেঁপে লাল টকটকে ফুল ফুটেছে

আমি কষ্টের রক্ত-লাল চা চুমুক দিয়ে উদাস চোখে তাকিয়ে দেখি

একটা কোকিল ডাকছে পাশের ডালপালা-হীন কড়ই গাছটাতে, 

হঠাৎ করেই আমার মন ভালো হয়ে গেলো

কান্নাগুলো চুমুকে গিলে ফেললে মন তো এমনিতেই ফুরফুরে হয়ে যায়

তার উপর আবার আলো ঝলমলে কুহুকুহু ডাকের সকাল,

শব্দরা খেলা করছে মাথায় 

একটা কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে, 

থাক, এখন লিখব না

শব্দগুলোকে সারাদিন কাজের ফাঁকে লুকিয়ে রাখব

তারপর সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যের পরে না হয় আবার ফিরে আসব

ঝুল বারান্দায় আবার চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার নিজেকে দেখব! 


আজ চাঁদ উঠবে কি? জ্যোৎস্না হবে?

অনেকদিন হয়ে গেছে চাঁদের হিসেব রাখি না 

আগে চন্দ্রমাস প্রায় মুখস্থই থাকতো,

সেই অনেকদিন আগে, যখন তোর জন্য রাত জাগতাম!

তোর জন্য কবিতা লিখতাম

আর জ্যোৎস্না হোক কি অমাবস্যা! প্রতি রাতে তোকে ভালোবাসতাম;  

আজকাল ঐসব মনে হলে বড্ড হাসি পায়

কি ছেলেমানুষই না ছিলাম! 

প্রেম ছিলো, ভালোবাসা ছিলো, হাসি ছিলো, কান্না ছিলো 

অভিমান ছিলো, রাগ ছিলো, আর ছিলো মান ভাঙানোর দায়

আজ তুই কোথায়? আমিই বা কোথায়? 

আসলে জীবনটা কবিতা না, 

সব সময় সোজাসাপ্টা গল্পও না 

আমার কাছে আজকের জীবনটা যেন অনেকটা রসকষহীন প্রবন্ধের মত

শুধু আমার কাছে না রে! যারা জীবন দেখেছে যারা জীবনের গভীরে গিয়েছে

ওদের সবার কাছেই জীবনটা হয়তো প্রবন্ধই ঠেকেছে, 

বেশীরভাগ মানুষের জীবন খাতা কষ্ট করে পড়তে হয়

ওটা খুব সহজ কোন রম্য গল্প নয়, নয় কবিতা 

কে আর প্রবন্ধ পড়তে চায়? 

জীবনটা কবিতা হলে আসলে খুব খারাপ হতো না

অনুভবে অনুভবে প্রেম, অনুভবে অনুভবে জীবন পাড়, 

জীবনটা বেশীরভাগ মানুষের কাছে পেটের ধান্ধা! প্রবন্ধের কঠিন সংসার; 


আজ রাতে আবার না হয় আরেকবার বসব ইজিচেয়ারে, চায়ের কাপ হাতে 

চাঁদ উঠলে জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়ে একটা কবিতা লিখব 

অমাবস্যা থাকলে না হয় জীবনের প্রবন্ধটাকে খুলে পড়ব 

তারপর নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া 

অন্ধকারে নিজের সাথে কথা বলতে সুবিধা হয় 

ভুলগুলো সহজেই বের করা যায় নিজের সাথে নিজের কথায়,

আয়নার সামনে নিজের সাথে মুখোমুখি বসে। 


২৯ এপ্রিল, ২০২২ 


#কবিতা 


নিজের সাথে মুখোমুখি 

 - আহসানুল হক 

বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২

কোথায় চলেছি আমরা?

সুঁই এর খোঁচা খেয়েছ কখনো?

খেলতে গিয়ে পায়ে কাঁটা ফোটে নি কার? 

পড়ে গিয়ে ছিলে যায় নি, কেটে যায় নি এমন কেউ আছে?

খেলতে গিয়ে, পড়ে গিয়ে কিংবা এক্সিডেন্টে হাত পা ভেঙেছে কখনো?

আচ্ছা! মাথা ব্যথায় কাতরায়নি এমন কেউ আছে?

চরম মাইগ্রেনে কাউকে কাউকে দেয়ালে মাথা ঠুকতে দেখেছি আমি

তাহলে কেটে ছিঁড়ে যাওয়ার, ভেঙ্গে কিংবা মচকে যাওয়ার যন্ত্রণা 

শারীরিক কষ্ট, ব্যথা বেদনা তো তোমরা জানই,

জানো না?


রান্না করতে গিয়ে তেলের ছিটায় ফোস্কা পড়ে নি এমন গৃহিণী আছে?

কিংবা সিগারেটের আগুনে হাত পোড়ায় নি এমন খুঁজে পাওয়া ভার

আগুনে পোড়া, ইলেকট্রিক শক লেগে পোড়ার মত বড় এক্সিডেন্টের কথা বাদই দিলাম    

নিদেন পক্ষে ম্যাচের কাঠি জ্বালাতে গিয়ে পোড়ার জ্বলুনি সয় নি, এমন কেউ আছে?

পোড়ার যন্ত্রণা কি ভয়াবহ কষ্টের যার না পুড়েছে সে বুঝবে না; 


এই যে ব্যথা বেদনার কথা বলছি! 

এই যে পোড়ার কষ্টের কথা বলছি! 

কেন জানো? 

একটু পরে বলছি;  


আচ্ছা! তোমরা তো নিশ্চয়ই কোরবানি দিতে দেখেছ

নিদেন পক্ষে মুরগি জবাই করা দেখে নি কে?

মাংস খায় না এমন মানুষ হাতে গোনা,

মৃত্যু যন্ত্রণায় প্রাণীগুলোর ছটফট করা দেখেছ?

নাকি শুধু মাংসই খেয়েছ? 

এই যে প্রাণীগুলোর ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণার কথা বলছি! 

কেন জানো? 


কারণ আমিও মৃত্যু'কে গলায় পড়েই জন্মেছি 

শুধু আমি না

আমি, তুমি, সে ও আর আমরা সবাই,

পশু পাখি সহ সমস্ত প্রাণীকুল

প্রত্যেকটা জীবিত'কেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে,

মৃত্যুটা যে কি কষ্টের! কি ভয়াবহ কষ্টের! কখনো চিন্তায় আসে কি?

উঁহু! আসে না, আসলে মৃত্যুর কষ্টটা আমরা অনুধাবনই করতে পারি না,

একদিন, মাত্র একদিন একটা মুরগি জবাই করে তার মৃত্যু যন্ত্রণাটা নিজ চোখে দেখ, 

বুঝতে পারবে মৃত্যু যন্ত্রণা কাকে বলে; 


মৃত্যু যন্ত্রণা সইতে পারার মত শক্তিই যেখানে আমার নেই!

সেখানে দোযখের আগুন সইব কিভাবে?

অথচ কি অবলীলায়'ই না আমরা এগিয়ে চলেছি দোযখের দিকে!  

পৃথিবীর তুচ্ছ অর্থ, স্বার্থ আর খ্যাতির নেশায়। 


২৮ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


কোথায় চলেছি আমরা?

 - আহসানুল হক 









শব্দের উপহাস

আজকাল মাথা কোন কাজ করে না

কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে, কখনো একদম ফাঁকা 

কোথাও বসে থাকলে বসে বসেই ঝিমাই

তখন শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করে, 

কখনো যেখানে বসে আছি সেখানেই শুয়ে পড়ি 

কখনো শরীরটাকে টেনে বিছানায় নিয়ে যাই 

সাদা ছাদটার দিকে তাকিয়ে থাকি, অথবা চোখ চোখ বন্ধ করে রাখি

ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে জেগে থাকি, অথবা ঘুমিয়ে পড়ি নিজের অজান্তে;


আজকাল মাথায় একটা দুটো শব্দ খেলা করে

খুব হঠাৎ হঠাৎই, দমকা হাওয়ার মত 

মাঝে মধ্যে শব্দগুলোকে সাজাতে চেষ্টা করি 

বেশীরভাগ সময় পারি না,

দুটো তিনটে চারটে শব্দ মিলে মাথার ভেতর শব্দজট তৈরি হয়

আমি শব্দগুলোর দিকে অসহায় চেয়ে থাকি, এরা বড্ড যন্ত্রণা দেয়;


আজকাল কোনকিছু গুছিয়ে চিন্তা করতে পারি না

সামনে মানুষজন কথা বলতে থাকে আমি শোনার ভান করে তাকিয়ে থাকি

অল্প কিছু কথা শুনি, অল্প কিছু বুঝি আর বেশীরভাগ কথাগুলো শুনিই না

আমার আসলে কোনকিছু শুনতে ইচ্ছে করে না 

আমার কোনকিছু বুঝতে ইচ্ছে করে না  

যত বেশি কথা শুনি! শব্দগুলো কানে গুঞ্জন তোলে 

আমার ভাবনার শব্দগুলো আর ওদের কথার শব্দগুলো মিলে 

সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায়

অনেকটা যেন শব্দে শব্দে শব্দ দূষণের মত, 

অথচ একটা সময় এই শব্দ নিয়ে খেলতেই বড় ভালো লাগতো

ওগুলোকে কাগজে আঁকতাম, শব্দের আগে পিছে কিছু শব্দ জুড়ে দিতাম 

কখনো শব্দ দিয়ে লাইন বানাতাম কখনো পুরো প্যারা, 

শব্দ জুড়তে জুড়তেই ওগুলো কখনো হয়ে যেত কবিতার লাইন 

ছন্দে কিংবা ছন্দ হীনতায়, 

কখনো শব্দ গাঁথতে গাঁথতে পুরো গল্পই গেঁথে ফেলতাম,

সেগুলো আজ শুধুই স্মৃতি;


আজকাল কোনকিছুই পারি না 

তবুও মাঝেমধ্যে একটা দুটো তিনটা শব্দ এসে মাথার ভেতর গুঞ্জন তোলে

বেশি শব্দ চলে এলেই শব্দগুলো মাথার ভেতর শব্দজট তৈরি করে

যেন বলতে চায় আমাদের কাগজে আঁক, আমাদেরকে গাঁথ 

আমি অসহায় শব্দদের কোলাহল শুনি, 

মাঝে মধ্যে খুব বেশি অসহ্য মনে হলে চোখ বন্ধ করে থাকি

কিংবা মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে রাখি, 

তখন ঘন অন্ধকারেও শব্দগুলো হো হো করে হাসে,

শব্দের উপহাস শুনতে শুনতে কেটে যায় আমার ঘুমঘুম দিনরাত্রি। 


 

২৭ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


শব্দের উপহাস

 - আহসানুল হক 




   

 




চশমায় মানুষ দর্শন

খালি চোখে আজকাল মানুষ দেখতে ইচ্ছে করে না 

মানুষের রিপুগুলো বড্ড উগ্র হয়ে ফুটে ওঠে 

লোভের লোলুপ দৃষ্টি ইদানীং কেন জানি অসহ্য লাগে

অথচ এগুলোই দেখতে হয় খালি চোখে, মানুষের চোখে তাকিয়ে; 


তাই আজকাল চোখের ওপর চশমার পর্দা রাখি, খুব গাঢ় রঙের

অনেকটা কালোর কাছাকাছি, যদি কালোতে কালোতে কাটাকাটি হয়ে যায়!   

রিপুর রঙ তো কালোই, তাই না?  

আচ্ছা স্বার্থের রঙ কি? 

মানুষ অর্থের রঙিন রঙ দেখে মোহিত হয় 

অর্থের লিপ্সার রঙও কি রঙিন? 

আচ্ছা! রঙিন অর্থ পকেটে ঢুকতেই কি মন কালো হয়ে যায়?

সবার নয় নিশ্চয়ই,

আমি মাঝে মাঝে মানুষের মাঝে মানুষ খুঁজি;  


আজকাল চারিপাশটা একটু দূর থেকে দেখতে চাই

তাই মাঝে মধ্যে চোখে ক্যামেরা লাগাই, 

লম্বা লেন্স দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি কিংবা পাহাড়ের

অথবা সমুদ্রের, প্রকৃতির রঙে কোথাও স্বার্থের কালো রঙ নেই 

পাখিদের মধ্যে নেই স্বার্থের দ্বন্দ্ব, কোত্থেকে থাকবে বলো!

পাখিদের আকাশটা অনেক অনেক বড়; 

  

পশুদের মধ্যে অবশ্য কিছু মারামারি দেখি, সেটুকু খাদ্য নিয়ে

আশ্চর্য হয়ে দেখি ক্ষুধা মিটে গেলেই ওদের হিংস্রতা কমে যায়, 

অথচ মানুষের হিংস্রতা কমে না, কমে না তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা 

লোভের কাছে পরাজিত মানুষ গলাটিপে হত্যা করে আপন সম্পর্কগুলোকে

তারপর রাশিরাশি বিত্তের ওপর শুয়ে বসে একলা জীবন কাটায়,  

খোলা চোখে এদের দেখলে আমার বড্ড মায়া হয়; 


আমার মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে এদের মস্তিষ্কটা মাইক্রোস্কোপের নীচে নিয়ে দেখতে 

নিওরণ কোষের একটা ছবি যদি অনেক বড় করে দেখতে পেতাম?

ভালো করে জুম করে খুঁজে দেখতাম ওখানে আসলে মনুষ্যত্ব কোথাও আছে কি না! 

চোখে প্লাস পাওয়ারের চশমাটা লাগিয়ে ডিকশনারির দিকে তাকিয়ে আছি

মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা পড়ছি, 

আজকাল ওটা শুধুমাত্র ডিকশনারিতেই পাওয়া যায়।  




   

২৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


চশমায় মানুষ দর্শন 

 - আহসানুল হক 


ক্ষুধাপোকা

ক্ষুধা লাগলেই খেতে চায় প্রাণীকুল 

সে পশুপাখিই হোক কিংবা মানুষ 

খাওয়ার চাহিদা জানান দেয় ক্ষুধা; 


হিংস্র পশুপাখি শিকার করে খায়

গৃহপালিত পশুপাখি মানুষ যা দেয় তাই খায় 

মানুষেরও ক্ষুধা লাগে, ক্ষুধা লাগলেই জানান দেয় 

কেঁদেকেটে কিংবা অন্য কোন উপায়ে, মানুষকেও খেতে হয় 

বেঁচে থাকা পশু-প্রাণী সকলেই ক্ষুধায় কাতরায়, সবাইকে খেতেই হয়; 


শিকারি পশুপাখি ক্ষুধা না লাগলে শিকার করে না 

ওরা অকারণ হত্যা করে না, পেটে ক্ষুধা না থাকলে তো না ই  

হত্যা করে না গৃহপালিত পশুপাখি অকারণে  

শুধুমাত্র মানুষই অকারণ হত্যা করে, কখনো বা খেলার ছলে;   

একমাত্র মানুষই খেতে চায় ক্ষুধা না লাগলও  

ওটা আসলে ক্ষুধা না, ক্ষুধা নামক এক পোকা - চোখে ক্ষুধাপোকা, মনের ক্ষুধাপোকা 

মানুষ যত না ক্ষুধা লাগলে খায়! তার থেকে বেশী খেতে বসে চোখের ক্ষুধায়

আসলে কি খায়? এক পেটে আর কতটুকুই আটে? 


ক্ষুধার্ত মানুষ পেটের ক্ষুধায় খাদ্য চায় 

পোকা আক্রান্ত মানুষ চোখের ক্ষুধায় সব চায়

যত পায় তত চায়, আরও চায়, আরও চায়

মানুষের চোখের ক্ষুধার কোন শেষ নেই, শেষ নেই লোভের 

লোভ রিপুটা যেমন অসীম, মানুষের চাহিদাও যেন অসীম; 


লোভে কি পাওয়া যায়? কি দেয় লোভ আমাদের?

অর্থ বিত্ত, টাকা পয়সা, সহায় সম্পত্তি রাশিরাশি

একবার মেপেই দেখি না এক বসায় কতটুকু খেতে পারি! 

খাওয়ার প্লেটটা একবার সামনে নিয়েই না হয় বসি;

 

লোভে কি হারায়? 

সম্পর্ক, 

তারপর? 

লোভটুকুই থেকে যায়, সম্পর্কহীনতায়। 



২৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ক্ষুধাপোকা

 - আহসানুল হক 




  




  

ওপরে ওঠার বাসনা

সবারই দেখি অনেক তাড়া

অনেক দূরে যাওয়ার, অনেক ওপরে যাওয়ার

জীবনে অনেক ওপরে ওঠার বাসনা 

জীবনে অনেক দূরে যাওয়ার ইচ্ছে, অনেক দূরে; 


আমারই কোন তাড়া ছিলো না কখনো 

ওপর কিংবা দূর আমার মনের অনেক দূর 

আমি এই ভালো, এক পা এক পা করে 

যখন ভোর হয় আমি সূর্য ওঠা দেখি পিঠে রোদ মাখি

যখন বৃষ্টি হয়, বৃষ্টিতে ভিজি, বৃষ্টি বিলাস করি

যখন চাঁদ ওঠে, আমি ছাদে চলে যাই কিংবা খোলা মাঠে

উদোম গায়ে শুয়ে থাকি, সারা শরীরে জ্যোৎস্না মেখে 

জ্যোৎস্নাস্নান করি, হেঁড়ে গলায় গান গাই গলা ছেড়ে;  


তোমাদের মত আমার এত তাড়া নেই, জীবনে ওপরে ওঠার  

যারা ওপরে উঠতে চায় তারা গায়ে রোদ মাখতে পারে না 

তারা বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না, তারা জ্যোৎস্না বিলাস জানে না 

তাদের শুধু টাকা, টাকা আর টাকা 

টাকার তলায় চাপা পড়ে যায় সময় 

টাকার তলায় চাপা পড়ে দিনরাত্রি আর চন্দ্রসূর্য 

এগুলোর আসলে তাদের জীবনে কোন মূল্যই থাকে না 

তার ওপরে দিকে তাকিয়ে থাকে আর টাকা টাকা করে

টাকা টাকা করে হারিয়ে ফেলে ঘুম, হারিয়ে ফেলে শান্তি 

হারিয়ে ফেলে পরিবার, হারিয়ে যায় সম্পর্ক 

সবকিছু হারিয়েও তারা ওপরে উঠতে চায়, অনেক ওপরে

ঐ বিশাল টাকার পাহাড়ের ওপরে;   


তারচেয়ে এভাবেই আমি ঢের ভালো আছি

এক পা দু পা করে পথ চলি 

গায়ে রোদ মেখে ঘেমে নেয়ে যতটুকু প্রয়োজন পাথেয় কুড়োনোর চেষ্টায় থাকি

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পরিশ্রমের ঘাম ধুয়ে ফেলি, বৃষ্টি বিলাসের ছলে

কখনো কখনো ব্যর্থতার কান্না ধুয়ে নেই ঝুম বৃষ্টির জলে,

আসলে মানুষের প্রয়োজন কতটুকু?

পেট ভরতে কি অনেক খাবার লাগে? 

চোখের ক্ষুধার অবশ্য শেষ নেই কোন, শেষ নেই মনের ক্ষুধার

আমার ছোট্ট একটি সংসার, প্রয়োজন অল্প একটু খাবার

তার জন্য আমার ঐ ওদের মত অত ওপরে ওঠার দরকার নেই

মাথার ওপর টিনের একটা ছাদ

দুবেলা পেটে দু মুঠো ভাত 

আর সন্তান সন্ততি পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে বসবাস। 


২৫ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 



ওপরে ওঠার বাসনা 

 - আহসানুল হক  

সইত্য কতা - রম্য

ভাইরে!

সইত্য কতার ভাত নাই। এইডা আইজ বুইড়া বয়সে আইয়া বুঝলাম। 


হেই বাইল্যকাল থাইক্কা বাবায় শিখাইছে মিছা কতা কতি অয় না।

আমি আবার বাবার চরম ভক্ত, বাবায় যা কয় তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। 

 

একবার ছুডুবেলায় দাদার চাইলের মোটকির থাইক্কা আম চুরি কইরা খাইছিলাম। দাদায় আমার আমগুলা খাইলো কুন বদমাইশ কইরা হুলুস্থুলুস লাগায় দিছিলো; আমি ডরের চোডে হেইদিন বাইত আহি নাই। যদি আমারে জিগাইলে মিছা কতা কতি না পারি! তয় তো দাদার কাডি হাতের কিল একটাও মাটিত পড়ব না। 


তো যা কইতাছিলাম! এই হাছা কতা কওনে লাইজ্ঞা আমার গেবনে কুচ্চু ওইলো না। কুচ্চু মানে কইতাছি কুনু ব্যবসাই করবার পারলাম না। কেন? আমি মিছা কতা কতি পারি না। যেই ব্যবসাই করবার যাই, কাস্টমারে ঐ প্রোডাক্ট বা সার্ভিস লইয়া কিচু জিগাইলে আমি বেবাক সইত্য সইত্য কইয়া দেই। 

এতে অয় কি? মাসখানেক পর বাপের ইনভেস্ট করা টেকার ব্যবসা ডুইব্বা পানির তলানিত গিয়া ঘুমায়। বাপ কয়দিন গাধা গরু কইয়া চিল্লাপাল্লা কইরা আবার নয়া আরেক ব্যবসা দিয়া বহায় দেয়। হাছা কতা কইয়া হেইডারও চব্বিশটা বাজায় দেই। (ঐদিন নেটে একটা  ভিডু দেখতাছিলাম। স্যাটায়ার একটা ভিডু, ব্যবসায়ী সইত্য কতা কইতাছিলো আর তার ব্যবসার চৌদ্দডা বাজতাছিলো।  ভিডুডা দেইহা কেন জানি আমার গেবনের কতা মনে হইয়া গেলো। আরে আমিও তো এইতানই করছি সারা গেবন। হাছা কতায় কি ব্যবসা অয়?) 


যেমুন একবার ফলের দোকান দিয়া বইলাম - ফল একটা নিজে খাইয়া দেহি দুইন্যার চুক্কা। কাস্টমার আইয়া জিগাইলো, ভাই ফল মিস্টি না টক। আমি কইলাম ভাই দুইন্যার চুক্কা। একবার খাইলে থুতাইতে থুতাইতে বমি কইরালবেন। -  


একবার কাপড়ে দোকান দিয়া বইলাম, কাপড় কইতে তো আমি আবার গামছা ছাড়া কিচু বুঝি না। তো বাবায় কইলো তুই তো গামছা পইড়া বইয়া থাকস! তো এই গামছা লইয়াই না হয় কিচু একটা কর। আমি উৎসাহে গামছা দা ফতুয়া পাঞ্জাবি বানাইয়া দোকান দিয়া বইলাম। গামছার লট আনছিলাম শ্যামলির থন। রাস্তার পাশে থানে থানে গামছা টানায় বইয়া থাহে দেকছুইন মনে লয়। তো বানানের পর একটা গামছা নিজেই পড়লাম। ওমা? বৈকালিন হাঁটাহাঁটির পরে ঘাইম্যা বাইত আইয়া গামছা খুলার পর দেহি প্যান্টের রঙ বদলাইয়া গেসে। গামছার থন ঘামেই রঙ উইট্টা প্যান্টে মাখামাখি হইয়া গেসে। গামছা ধুইয়া দেহি খাইপ্পা চিপা হইয়া গেসে। ফতুয়ার ভিত্রে আমার ভোটকা শরীর আর ঢুকে না। ব্যাপার কি? বৌ কইলো তরে ঠকাইছে। দুই লম্বরি গামছা দিয়া দিসে। আমি কইলাম এই গামছা দা এতলি ফতুয়া আর পাঞ্জাবি বানাইলাম যে! বৌ কইলো তুই কুচু না কইয়া বেইচ্চা লা। 

এহ! আমারে জিগাইলে আমি বুঝি মিছা কতি পারুম? পরদিন কাস্টমারে আইয়া পেরথমেই জিগাইলো, ভাই রঙ উঠবো না তো? আমি কইলাম রঙ উঠব মানে? একবার ভিজাইয়া দেহুইনই না! এককালে আফনের বাকি কাপড় চোপড়ও গামছার রঙে রঙিন হইয়া যাইব। বেডায় আগুন দৃষ্টিতে আমার দিকে চাইয়া থাইকা দোকান থন বাইর হইয়া গেলো। আরেকজন জিগায় ভাই ধোয়ার পর খাপব না তো! আমি কইলাম ভাই তিন সাইজ বড় লইয়া যান। তাইলে খাইপা খুইপা ঐডার ভিত্রে আটতেও পারেন। কাস্টমারে কুচু না কইয়া বাইর হইয়া গেলো। আমার ব্যবসার লালবাত্তি জ্বললো। 


একটা একটা কইরা গেবন ভর খালি ব্যবসা করার ট্রাই কইরা গেলাম। আমার কপালে ব্যবসা হইলো না। কেমনে হইব? হাছা মাতি যে! 


এক এক কইরা বেবাক ব্যবসা ডুবানের পরে একদিন বাপে কইলো, তুই এত গাধা কেরে? আমি বাপরে কইলাম, আমারে মিছা কতা কতি না কইরা আফনে মিছা মাততাছেন কেরে?

বাপে আচানক হইয়া কইলো - আমি আবার মিছা কই মাতলাম।

আমি কইলাম এই যে অক্ষণে কইলেন! জলজ্যন্ত একটা মানুষরে গাধা কইলেন। এইডা মিছা না। 

বাবায় কপাল চাপড়াইয়া কইলো - তরে লইয়া কি করুম বাপ? আমি মইরা গেলে তুই কেমনে চলবি?

আমি কইলাম - সইত্য কতা বইলা। আফনেই না শিখাইছেন সইত্য যতই তিতা হোক কক্ষণো যাতে মিছা না মাতি। চিন্তা কইরেন না গো বাবা - এই দুইন্যায় অহনো তিতা খাওনের লোক আছে। 


অহন বেকার বইয়া থাকতে থাকতে চিন্তাইতে থাকি - আসলে তিতা খাওনের লোক পিত্থিমিতে আছে নাকি? 

চিন্তাইতে চিন্তাইতে চিন্তার ফিলিপস বাত্তি জ্বইল্লা উইট্টা কয় - উঁহু! সইত্যের তিতা কেউ খায় না। 


#অনুভবের_অনুভুতি 

#রম্য 


সইত্য কতা 

 - আহসানুল হক 


   

ক্ষুধার রঙ

ক্ষুধা পেটে কথা ভালো লাগে না

ভালো লাগে না কবিতা  কিংবা গল্প  

ক্ষুধা পেট খাদ্য চায়, কাব্য না 

টাকায় খাদ্য সংস্থান বেশী কিংবা অল্প 

অসহ্য ক্ষুধা নিয়ে এদিক ওদিক চাই 

যদি কোথাও খাদ্যের সংস্থান কিছু পাই! 


চাটুকার'কে সবাই পছন্দ করে, কম আর বেশী

আমি একদম সহ্য করতে পারি না 

অথচ আমি নিজেই চাটুকার, স্বার্থের প্রয়োজনে 

অর্থের প্রয়োজনে, ক্ষুধা নিবারণের আয়োজনে 

ক্ষুধা পেটের লজ্জা শরম বলে কিছু আছে নাকি?

খাদ্যের জন্য মানুষ কি না করে? আয়নায় দেখি; 


একটা সময় গল্প লিখতাম, এর ওর তার গল্প 

এখন নিজেকেই নিজে গল্প বলি, ক্ষুধার গল্প 

একটা সময় কবিতা লিখতাম, মনে প্রেম ছিলো

এখন ক্ষুধা কলম পিষাচ্ছে, চাকরি নিতে হলো 

কতদিন পেটে ভরিয়েছি এক আঁজলা পানি খেয়ে!   

সন্তানদের ভরণ পোষণ করতে হয় টাকা দিয়ে; 


টাকা বড্ড আজব এক বস্তু, টাকা যার খাদ্য তার

তার থেকেও আজব ক্ষুধা, যার পেট ক্ষুধা তার 

তবুও মানুষ হওয়ার যন্ত্রণা, পরিবারের খাবার জোগাড়

বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান; পারিবারিক বন্ধন; ওটাই সংসার

খাদ্য যোগাতে অর্থের প্রয়োজন, বাবা হওয়ার দায়ে  

চাকরি কিংবা ব্যবসা, অর্থ উপার্জন যে কোন উপায়ে;   

     


মাথার ভেতরে কোথায় জানি কেমন যেন এক বোধের অনুভূতি কামড়ায়

আমি মনে শব্দের রঙ দেখি, ওরা হাসে, খেলে, কখনো কখনো দৌড়ায়  

একসময় হাতে এসে বসে, চুলকায়, যতক্ষণ হাত কলমের ছোঁয়া না পায়, 

কোন এক সময় কলমের শব্দ-বমি করতাম ছন্দে কিংবা ছন্দ-হীনতায়

কেউ কেউ ওগুলোকে কবিতা বলতো, অনুভবে কিংবা অনুভবহীনতায় 

আজকাল ক্ষুধার রঙ দেখি, কলমের রঙ কবেই ফুরিয়ে গিয়েছে ক্ষুধায়!  


২৩ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


 

ক্ষুধার রঙ 

 - আহসানুল হক 



আপন কে?

জীবনে কার সাথে কতটুকু সময় কাটাই আমরা?

পেছন ফিরে একবার দেখিই না জীবনটা! 

আপন পর মাপার আসলে কি কোন নিক্তি আছে?

অমন একটা কিছু থাকলে খুব ভালো হতো মানুষ চেনার জন্য;


সেই শিশু অবস্থা থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেন মা,

রাতভর শিশুর ঘ্যানঘ্যান কান্নায় ঘুমোতে পারেন না বাবা

হয়তো কিছুদিন চেষ্টা করেন বাবা,  

ওনার তো সকালে অফিস না করলেই চলে না

ফলশ্রুতি কিছুদিনের মধ্যেই বিছানা কিংবা ঘর আলাদা;   

মায়ের বিছানায় তিন, পাঁচ কিংবা সাত বছর! তারপর বিছানা আলাদা

মায়ের গায়ের গন্ধ আজ আর মনে পড়ে না

বাবার ঘামের গন্ধ খুব কম ছেলেদের স্মৃতিতে থাকে 

মেয়েদের থাকতেও পারে, ওরা কেন জানি একটু বাবা-ঘেঁষা থাকে; 


বিছানা আলাদা হওয়ার পর হয় অনেকটা সময় কেটে যায় একলা 

অথবা বড় ভাইবোন থাকলে বিছানা ভাগ করে নেয়া 

কৈশোর থেকে যৌবনের একটা সময় পর্যন্ত এভাবেই চলে যায়,

তারপর প্রাকৃতিক নিয়মেই জীবন সঙ্গী

কারো প্রেম করে, কারও বিয়ে বাবা-মায়ের পছন্দে

যৌবনে একজন চলেই আসে বিছানার অধিকার নিয়ে;

তারপর জীবন চলে জীবনের চাকায় 

সংসার, সন্তান সন্ততি; তারপর নিজের পরিবার 

কারো সংসারে বাবা-মা সঙ্গে থাকেন, তবে আজকাল বেশীরভাগই আলাদা

ভাই-বোন যার যার সংসারে, সন্তানরা একটু বড় হলে স্কুল-কলেজ পড়ালেখায় ব্যস্ত

একজনই থেকে যায় পাশে, বিছানার অধিকারে বিছানা দখল করে 

সেই যে যৌবনে যে এসেছিলো ঘরে 

সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে, অসুখে-বিসুখে, ভালো-মন্দে পাশে থাকে 

কোন একজন ওপার যাত্রায় চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত; 


মধ্য পঞ্চাশে এসে জীবনটা বড্ড অন্যরকম ঠেকে 

জীবনের বোধগুলো অন্যরকম লাগে

পেছন ফিরলেই চেনা মানুষগুলোর অচেনা চেহারাগুলো চোখে ভেসে ওঠে

খুব সহজেই আলাদা করে ফেলা যায় কে পাশে ছিলো দুর্দিনে, 

মধ্য পঞ্চাশের এ দলটার মধ্যে অল্প কিছু বিপত্নীক কিংবা বিধবা 

আর খুব অল্প কিছু অংশ আলাদা জীবন কাটায়, যাদের বনিবনা হয় নি সংসারে

আর বাকি সৌভাগ্যবানদের জীবনে সঙ্গী বা সঙ্গিনী আছে পাশে

মৃত্যু এসে পরস্পরকে আলাদা করে দেবার আগ পর্যন্ত; 


আমি জীবনের পেছনের প্রত্যেকটা পর্যায় খুলে খুলে দেখতে থাকি

আপন আর পর যাচি; 


লোকে বলে বাবা-মা সবচেয়ে আপন,  

তাহলে ওল্ড-হোমগুলো এত রমরমা ব্যবসা কেন? 

অন্যদিকে দেখি বাবা-মা কোন এক সন্তানকে বঞ্চিত করে 

তাদের স্নেহ থেকে, এমন কি তাদের সহায় সম্পত্তি থেকে

হ্যাঁ, আপন বাবা-মাই করে, কিভাবে করে?

আপন সন্তানরাই বা কিভাবে বাবা-মা'কে ওল্ড-হোমে ফেলে রাখে? 


 - ভাই বোন?

ছোটবেলায় আপন 

তারপর মারামারি কাটাকাটি, সম্পত্তির ভাগ চলে আসে যখন; 


আর কে রইলো জীবনে?

সন্তান-সন্ততি? 

ঐ যে বললাম! কবে ওল্ড-হোমের চেহারা দেখব এই ভয়ে আছি; 


বাকি রইলো একজন

ঐ যে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন বিছানার অধিকার নিয়ে এসেছিলো যৌবনে!

আছে, এখনো আছে

সুখে-দুঃখে, অভাবে-অনটনে, হাসি-কান্নায়, অসুখে-বিসুখে 

পাশেই আছে, কাছেই আছে, জীবনের সাথে লেপ্টে আছে; 



তাহলে জীবনে কে সবচেয়ে বেশী আপন?

আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে হয় বোধহয় আমিই,

সবকিছু দেখে, সবকিছু জেনে, সবকিছু বুঝেই বলছি স্বার্থপরের মতন;


যেভাবেই মনকে আড়াল করি না কেন! 

খুব ভালো করেই জানি

যুগ যুগ পাশে থাকা মানুষটা হাত ছেড়ে দেবে না কখনো।  

 


২১ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 



আপন কে? 

 - আহসানুল হক 







  


 


রুটিন

জীবনের শুরুতে মায়ের বুকে, বাবার কোলে  

ঐ সময় বাঁধাধরা কোন রুটিন থাকে না  

রুটিন থাকে না খাওয়ার, ঘুমানোর, কান্না-হাসির 

অন্যান্য কোনকিছু বোঝার মত বুদ্ধিই থাকে না;


মানব শিশু বড় হতে হতে রুটিনে বাঁধা পড়ে

রুটিন করে খাওয়া, ঘুম, পড়ালেখা, খেলাধুলা

রুটিন না মানলে বাবা-মায়ের শাসন

রুটিনের ছকে অভ্যস্ত হয়ে যায় জীবন; 


তারপর যৌবনে কিছু রুটিনের হেরফের

কিছু প্রেম, কিছু দুষ্টুমি, কিছু অবাধ্যতা

নব্বই এর দশক পর্যন্তও এমনই দেখেছি  

আজকালকার ছেলেমেয়েদের আর রুটিন কোথায়?


প্রৌঢ়ত্বে এসে রুটিনে কিছু হেরফের হতে থাকে

খাওয়ায় অনীহা, সন্তানদের নিয়ে টেনশন 

অসুখ-বিসুখ, শারীরিক সমস্যাগুলো শরীরে বাসা বাঁধে

শুরু হয় ঘুমের সমস্যা, বদলে যেতে থাকে ঘুমের রুটিন; 


বার্ধক্যে শরীরটাই বড় সমস্যা, বদলে যায় সকল রুটিন 

বদলে যায় অসুখের ধরণ, স্মৃতিশক্তি লোপ পায়  

রুটিনের সাইকেল কারো ঘুরে যায় তিনশত ষাট ডিগ্রী

সাইকেল বদলে যায় ঘুমের, তখন ঘুমঘুম জাগরণ; 


আজকাল অনেক কিছুই মনে করতে পারি না 

মনে করতে পারি না পুরনো কথা, পুরনো স্মৃতি 

মনে রাখতে পারি না নামাজের রাকাত, খাওয়া, ঘুম

বার্ধক্য কি সময়ের আগেই ঘিরে ধরেছে আমায়? কে জানে? 


একসময় আট ঘণ্টা ঘুমাতাম, আজকাল ঘুমের ঠিক নেই 

ঘুমের সাইকেল বাড়ছেই, কখনো বারো কখনো বা ষোলো 

যেদিন চব্বিশ পুরো হবে সেদিন হয়তো আর চোখ মেলব না  

মৃত্যু আসবেই, ঘুমাতে ঘুমাতে একবারেই ঘুমিয়ে গেলে মন্দ হয় না। 


১৯ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 

 

রুটিন 

 - আহসানুল হক 


  

ঐ বয়রা - হিবিজিবি কথা

 ইফতারের সময় হয়ে আসছে, রিক্সা খুঁজে পাচ্ছি না। 

একের পর এক রিক্সা সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, একের পর এক রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞাসা করছি - ভাই বনানী যাবা? কেউ কেউ মুখে না করছে, কেউ মাথা নাড়ছে কেউ আমার কথার পাত্তাই না দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে। যেন ওদের কোথাও যাওয়ার কোন তাড়া নেই, যেন আজকের ইনকামের কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে, যেন একজন দুজন বৃদ্ধ রাস্তায় আমাকে পৌঁছে দেও বলে চিৎকার করতে থাকুক; তাদের কিছু আসে যায় না। 


বৃদ্ধদেরও মেজাজ খারাপ হয়, গরমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আমার মেজাজ তখন তুঙ্গে। সামনে এক রিক্সা দেখলাম হেলতে দুলতে প্যাডেল মারছে। ডাকলাম এই বাবা বনানী যাবা? শুনলো না। আবার ডাকলাম এই রিক্সা বনানী যাবা? পাত্তাই দিলো না। এবার জোরে ডাকলাম এই রিক্সাওয়ালা - উঁহু, শালা পাত্তাই দিচ্ছে না; নাকি শুনছে না। আবার কয়েকবার এই রিক্সা এই রিক্সা করে ডেকে শেষমেশ রাগের চোটে কর্কশ স্বরে ডেকে উঠলাম এই ব্যাটা বয়রা। আশেপাশের অনেকগুলো রিক্সায় বসে থাকা লোকজন হো হো করে হেসে উঠলো। রিক্সাওয়ালা রক্তচক্ষুতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে - বয়রা ডাকেন কেন চাচামিয়া? আমি বললাম - এতক্ষণ তরে বাবা, সোনা কতকিছু কইলাম; তুই পাত্তাই দিলি না। বয়রা কইয়া ডাইক্কা দেখলাম তুই আসলেও কানে খাটা কিনা? ফিক করে হেসে দিয়ে বললো উঠেন। 

আমি দিরং না কইরা রিক্সায় উইট্টা বইলাম। আশেপাশের রিক্সা থেকে তখনো লোকজন টিটকারি মারতাছে - ঐ বয়রা! ঐ বয়রা! ঐ বয়রা। 


১৯ এপ্রিল, ২০২২


#হিবিজিবি_মন 


ঐ বয়রা 

 - আহসানুল হক 


চিরতা

মানুষের পৃথিবীতে অমানুষের বসবাস কম না 

মানুষের আদলে ঘোরাফেরা, আসলে মানুষ না 

একদল মানুষ আছে ঘামে ভেজে রোদে পোড়ে 

অন্যদল এদের মাথার ওপর, হাতে ছড়ি ঘোরে;


তেলা মাথাতেই লোকে দেখি ঘি ঢালে টনে টনে

তেল ঢালতে ঢালতেই তাকে গালি দেয় মনে মনে

বিপরীত মানসিকতা আজকাল হরেদরে পদে পদে 

বৈপরীত্যের বিচিত্র চরিত্র দেখি আপদে বিপদে; 

   

চরিত্র বলতে আজকাল আছে নাকি কোন কিছু?

এ তার বৌ এর, সে তার জামাই এর পিছু পিছু

যুগ যুগের সংসারে হঠাৎ একদিন দেখি ভাঙন 

পরকীয়া নামের এক ভাইরাস নাকি তার কারণ;

 

প্রেম আজকাল হয়ে গেছে স্কুলের বাচ্চাদের খেলা  

পরস্পর শরীর উন্মোচন, প্রেমের নামে ছোটবেলা 

কলেজে উঠতেই অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এবরেশন

জানা স্বত্বেও ভুল করে ফেলে নিতে প্রোটেকশন;

 

চরিত্র নিয়ে আজকাল বোকারাই কথা বলে 

শরীর খেলার পরে শরীর'টা ধুয়ে নিলেই চলে 

সম্পর্কে সত্য কথা ইদানীং বলে নাকি কেউ?

সত্য বললেই তো সম্পর্কে লাগে ভাঙনের ঢেউ;  


ধোঁকাবাজি পদে পদে টাকার গন্ধ যেখানেই থাকে 

কাগজের টাকা সবচেয়ে আপন, সম্পর্ক দূরে থাকে

টাকায় কি না কেনা যায়! বন্ধু বান্ধব আর আপন জন 

কপর্দকহীন হয়ে একবার দেখই না কে তোমার আপন?


স্বার্থ সবাই চেনে যখন যেভাবে যেটাতে যার সুবিধা  

স্বার্থে আঘাত লাগলেই মানুষের হয়ে যায় অসুবিধা   

সত্য কথা বলে না কেউ চলতে ফিরতে সংসারে  

সত্য'কে তিতা জেনে চিরতা কজন রাখে ঘরে?


১৭ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 



চিরতা 

 - যাযাবর জীবন 


আলগা চোখ


আজকাল চোখের লেন্সের ওপর একটা পর্দা ফেলে দেই,  

চোখে রোদ চশমা লাগাই 

কিংবা ক্যামেরার লেন্সে মানুষ দেখি,

আমি বলি আলগা চোখ;


চোখের লেন্স তীব্র ক্ষমতাসম্পন্ন, বড্ড বেশী প্রখর  

সবকিছুই দেখে নেয়, মানুষের বাহির ও ভেতর; 

স্থির হয়ে সামনে বসে থাকা মানুষকে দেখে ৫৭৬ মেগাপিক্সেলে 

আর ১ কোটি আলাদা রঙ,   

চলমান বস্তু চোখ কত দ্রুত দেখে জানো? 

৭৭৭ গিগাপিক্সেল প্রতি সেকেন্ডে, সে গতি তোমরা কল্পনাও করতে পারো না

খোলা চোখে দেখতে পাই প্রচণ্ড গতিবেগে চারিপাশের সম্পর্কের ভাঙন;


স্বার্থ, সম্পর্ক আর অনুভূতিগুলো

ক্যামেরার চোখ ধরতে পারে সেগুলো?

মানুষ মাঝে মাঝে এত নিষ্ঠুর! এত কদর্য স্বার্থের রূপ

অনুভূতির প্রখরতা! রিপুর কদর্যতা  

চারিদিকে ঝনঝন কাঁচের মত ভেঙে পড়া সম্পর্কের ভাঙন 

আজকাল আর সহ্য হয় না,   

তাই ইদানীং খোলা চোখে মানুষ দেখতে ইচ্ছে করে না 

তার থেকে খালি চোখে আকাশ দেখি, গাছপালা, নদীনালা, পশুপাখি

মানুষের দিকে তাকাতেই হলে চোখে রোদ চশমার একটা আবরণ লাগাই

কিংবা মাঝে মাঝে দেখি ক্যামেরার চোখে  

ক্যামেরা আর কত মেগাপিক্সেলেই বা মানুষ'কে দেখাবে?

ওর তো সর্বোচ্চ ক্ষমতা মাত্র ১০৮ মেগাপিক্সেল! 

ওটুকু তাও সয়; 


আর আবরণ ছাড়া খোলা চোখে?

৫৭৬ মেগাপিক্সেলে মানুষের অনুভূতিগুলোও পড়া যায়,  

নগ্ন চামড়ার মানুষ তাও চোখে দেখা যায় 

ভেতরের নগ্নতা? সে বড্ড পীড়া দেয়। 


১৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


আলগা চোখ 

 - যাযাবর জীবন 



 



অনুভূতির চোখ

আলোকে কি বন্দী করে রাখা যায়? 

দিন'কে বন্দী করেছিলো কে কবে?

সূর্য'কে? 

রাতের চাঁদ'কে মেঘ বন্দী করার চেষ্টা করলেও আলো ছড়ায়;


কে কবে বন্দী করে রাখতে পেরেছিলো অন্ধকার?

রাত যতই কালো হোক আকাশে তারা ফুটবেই

চাঁদ উঠবেই 

শেষমেশ সূর্য এসে দূর করে দেবে অন্ধকার;


মাঝে মধ্যে দিনের বেলায় মেঘ এসে সূর্য'কে ঢেকে দিতে চায়

মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় জ্যোৎস্না'কে 

আসলে কি আলো ঢাকা যায়?

একদম কালো মেঘ হলেও আলোর আভা আকাশে থেকেই যায়;


বন্দী করা যায় না অনুভূতিগুলোকে, হোক সে সুখের কিংবা দুঃখের 

মন ভেদ করে কোন না কোন উপায়ে বের হয়ে আসেই

তারপর ছড়িয়ে যায় মস্তিষ্কের পড়তে পড়তে

অনুভূতিরও চোখ আছে চোখের ছায়ায়, মনের মায়ায়; 


আয়নায় আমরা নিজেদের হাসতে দেখি, কাঁদতে দেখি

চেহারায় হাসি কান্না না দেখা গেলেও চোখ ঠিকই অনুভূতির কথা বলে 

তবে আজকাল আর চোখ পড়ার মানুষ কোথায়?

মানুষ শুধু বাহির দেখে, চেহারা পড়ে, বাকিটুকু নিজে নিজে ধারণা করে;


আমি খুব যত্ন করে অনুভূতিগুলো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি 

তবুও মাঝে মধ্যে কিভাবে যেন সূর্যের ফাঁক গলে কান্নাগুলো বেরিয়ে যায়

খুশিগুলো অবশ্য আটকে ফেলতে পারি অমাবস্যার ছায়ায় 

আমার চোখ পড়ার কেউ নেই, চোখের মায়ায়। 



১৬ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


অনুভূতির চোখ 

 - যাযাবর জীবন 




সাদাকালো মন

মাথার ওপর সূর্য ছিলো একদিন তপ্ত দুপুর

নদীতে পাখির জলকেলি, সাঁতার হাপুরহুপুর

চরে রোদের তেজ, গরমে অস্থির আমরা 

নদী পাড়ে বালুর গরমে পুড়ে যায় চামড়া; 


সাথে নৌকা ছিলো একটা চরে চরে ঘোরার

শিকারি ক্যামেরা কাঁধে পাখির ছবি তোলার

কখনো নৌকোয় কখনো চরে কখনো পানিতে

যেখানেই পাখি সেখানেই পাখির হাতছানিতে;


চখাচখি কিছু নদীতে জলকেলি করছিলো 

বকের দল লম্বা ঠোঁটে পানিতে মাছ খুঁটছিলো 

হঠাৎ ক্যামেরার লেন্সে পাকড়া উল্টা ঠোঁটি 

দৌড়ে ক্যামেরা তাক করতে গিয়ে ছিঁড়লো চটি; 


বালির গরমে পা পুড়ে, ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক করে

লেন্সে চোখ থাকলে পা এর কথা কে মনে করে?

হঠাৎ বকের ঝাঁক পাখা মেলে দিলো দূর আকাশে 

চর জুরে তপ্ত গরমের লু হাওয়া বইছিলো বাতাসে; 


একজোড়া টার্ন পাখি প্রেমে মত্ত ছিলো নদী তীরে

পুরুষ পাখিটি মেয়েকে খুশি করার চেষ্টায় মাছ ধরে  

মিলনের আশায় মেয়ে পাখিকে খাওয়ায় এনে মাছ 

একমাত্র মানুষই ঝগড়ায় করে সম্পর্কের সর্বনাশ; 


ইদানীং আর মানুষের ছবি তুলতে ইচ্ছে করে না 

ওরা রঙ বদল করে ক্ষণে ক্ষণে ক্যামেরায় ধরে না

তার থেকে পাখির ছবি তোলা ঢের বেশি ভালো 

সাদা আর বাদামী মানুষগুলোর মন দেখেছি কালো।


 

১৩ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


সাদাকালো মন 

 - যাযাবর জীবন 




পাখির ডানায়

আমার ডানা নেই তবুও উড়তে মন চায়, পাখির ডানায়

মাছেরা নদীতে সাঁতার কাটে, আমি হেঁটে বেড়াই ডাঙায় 

ভালোবাসা কখনো বড্ড ভাসায়, ডোবায়, কাঁদায়, হাসায়  

স্বার্থ আপন সব সম্পর্কগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে কাঁদায়; 


খুব ইচ্ছে করে পাখি হতে, স্বার্থের ওপরে উঠে যেতে

মানুষ হয়ে জন্ম, স্বার্থের আঘাত সইতে হয় মাথা পেতে 

যখন খুব রক্তাক্ত হই! কোন একটা পাহাড়ে চলে যাই

যখন খুব কান্না পায়! চুপিচুপি একা সাগরে চলে যাই; 


ভাগ্যিস পাহাড় সম্পর্কের কথা বলে না দূরে ঠেলে দিয়ে

সাগর স্বার্থের কথা বলে না কখনো, সম্পর্কের খোঁটা দিয়ে 

একদিন খুব ইচ্ছে করে আকাশে চলে যাব সবকিছু ছেড়ে

শরীরটা মাটি হয়ে গেলে কে পাবে আমায় মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে!



১২ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


পাখির ডানায় 

 - যাযাবর জীবন 


বোধের রঙ

প্রতিদিন রাত হয় আকাশ কালো করে 

আসলে আকাশ কি কালো? 

সূর্য-বাতিটা ধুসর হতে হতে নিভে যায় প্রতিদিন সন্ধ্যায়

মাসের কিছু সময় আকাশে চাঁদ উঠে 

সূর্যের ঘুমের সাথে সাথে মাসের বাকি সময়টা চাঁদও ঘুমায়, 

আমরা আকাশ'কে অন্ধকার হতে দেখি

কখনো কখনো কালোর ভেতর তারা'র মিটমিট  

আসলে আকাশ কি কালো?    


আকাশ কি রঙ বদলায়?

ঊষালগ্নে কিংবা গোধূলি বেলায় আকাশটা লাল রঙ ছড়ায়

সূর্যের মেজাজের সাথে সাথে কখনো হালকা নীল, কখনো আকাশী 

আবার ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টির পরে সূর্য হেসে উঠলে 

মেঘের ভেলার ওপারে গাঢ় রঙের নীল দেখা যায় 

সন্ধ্যার ঠিক আগ দিয়ে আকাশটা নিজেকে কেমন যেন ধুসর করে ফেলে

আমি আকাশে রঙের খেলা দেখি

আকাশের রঙ বুঝতে বুঝতে কখনো হৃদয় খুলে তাকাই, কখনো অনুভূতি

খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি অনুভূতিগুলোর মাঝে রঙের তারতম্য 

ঠিক আকাশের রঙের মত মনে রঙের খেলা;


কখনো মন প্রশান্ত থাকলে অনুভূতি ঘিরে সবুজ রঙের একটা বলয় তৈরি হয়  

অনুভূতির চারিদিকে কখনো লাল রঙের প্রলেপ দেখি ভালোবাসায়

রাগ আর উত্তেজনায়ও অনুভূতি লাল হয়ে যায় কখনো 

আবার মন প্রশমিত হয়ে আসলে অনুভূতিতে নীলের খেলা দেখি 

মনে খুশির আধিক্যে অনুভূতিতে কখনো হলুদ কখনো কমলা 

শান্ত মন দেখে শুভ্র সাদা 

দুঃখবোধ মনকে ধুসর করতে থাকে 

খুব মাঝে মাঝে উৎকণ্ঠায়, ভয়ে আর অতিরিক্ত দুঃখভারে 

কাঁদতে কাঁদতে অন্ধকার হয়ে যাই রাতের মত 

হ্যাঁ, আমারও কান্না আসে; দুচোখ ছাপিয়ে 

ব্যথা বেদনা দুঃখবোধ তো মানুষেরই থাকে! 


আমি মাঝে মাঝে আকাশের রঙ দেখি মাঝে মাঝে বোধের 

তারপর আকাশ হতে চাই অনুভূতিতে  

মনের অনুভূতিগুলো আকাশের মত ছড়িয়ে দিতে,

কি বোকাই না আমি! মানুষ কি আকাশ হতে পারে? 



১১ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


বোধের রঙ 

 - যাযাবর জীবন 


তৃষ্ণার্ত

সে দিনটায় গরম ছিলো, গুমোট আবহাওয়া

পাহাড় বাইতে গিয়েছিলাম সাথে চৈত্রের হাওয়া 

কাঠফাটা রৌদ্দুর খাড়া মাথার ওপর 

মাটি ফেটে চৌচির পাহাড়ের ভেতর; 


সে দিনটায় কেন জানি মন খারাপ ছিলো

আকাশে তাকিয়ে ভাবছিলাম মেঘের কি হলো?   

নীলাকাশে দূর দূরান্তেও দেখিনি মেঘের ভেলা 

রাগাহ্নিত সূর্যটা করছিলো গরমের সাথে খেলা;


সাথে আনা পানি শেষ হয়ে গিয়েছিলো 

দুপুর চড়তেই তৃষ্ণায় ছাতি ফাটছিলো 

কে বলেছে হীরে মণি মুক্তো অমূল্য! 

তৃষ্ণার্ত জানে একঢোক পানির মূল্য;   


সারাদিন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত বিকেলে 

কানে কুলকুল শব্দ পানির কথা বলে 

আরেকটু এগোতেই সামনে ঝর্ণা ধারা 

পানি দেখতেই মন খুশিতে পাগলপারা;


অঞ্জলি ভরা পানিতে পিপাসা মেটালাম 

ঝর্ণায় নেমে পড়ে নিজেকে ভেজালাম 

অপরূপ সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা আল্লাহ্‌ মহান 

ফাবি আইয়ে আলা ই রব্বিকুমা তুকাজ্জিবান। 



১০ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


তৃষ্ণার্ত 

 - যাযাবর জীবন 




ঘাসের শিশির

ঘাসের গন্ধ ভাসে ঘাসে

মাটির কিছু গন্ধ মিশে আছে 

ভোরের গন্ধ ঘাসের শিশিরে  

রোদের গন্ধ নিয়ে সূর্য হাসে; 

 

ঐ দূরে হালকা কুয়াশা 

নদীর ওপর আবছা ধোঁয়াশা 

ঘুমভাঙা পাখিরা ঘর ছেড়েছে

রোদ মেখে নিচ্ছে খোলা পালকে;


ঘাসের ওপর সকালের শিশির

সোনারোদ চকচক করে 

ঘাসফড়িং রোদ মাখে ডানায়

বসবাস ঘাসের ঘরে; 


আমি শরীরে মাটির গন্ধ শুঁকি 

বাতাসে মেঠো ঘাসের গন্ধ ওড়ে  

আমি হাত বাড়িয়ে রোদ ছুঁতে যাই

ঘাসের শিশির টুপ করে ঝরে পড়ে। 


  

০৯ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


ঘাসের শিশির

 - যাযাবর জীবন 

 

তারপরের জীবন

নিজেকে আয়নায় একবার দেখি, একবার দেখি অন্ধকারে 

এখানে প্রখর সূর্যালোক, আর ঐ তো ওখানে শুয়ে আছি কবরে

এই যে বেঁচে থাকা ও মরে যাওয়া! মুহূর্তের পার্থক্য মাত্র 

পেছনের অগোছালো জীবনটা'কে দেখি, সময়ক্ষেপণ যত্রতত্র

কি নিদারুণ অপচয়ই না করে ফেলেছি সময়ের, অর্থ উপার্জনে 

কতটুকু পেটের প্রয়োজন ছিলো? বেশীরভাগটুকুই অপ্রয়োজনে; 


আজকাল হুটহাট করেই কাছের মানুষগুলো চলে যাচ্ছে

চলে যাচ্ছে বলতে পৃথিবী ছেড়ে অন্য এক ভূবনে পারি জমাচ্ছে 

এই তো সকালেই পাশের বাড়ির চাচার সাথে কথা বলছিলাম 

দুপুরে খেতে বসতে না বসতেই ও বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ 

খাবার প্লেটটা রেখেই দৌড়ে গিয়ে শুনি নেই, চাচা চলে গিয়েছেন 

চলে গিয়েছেন বলতে মৃত্যু নামক অজানা ভূবনে পারি জমিয়েছেন;  


এই তো কাল সকালে নাস্তা করতে করতে খবর এলো 

মহল্লার এক ছোট ভাই কার্ডিয়াক এরেস্ট, হঠাৎ করেই 

টার্মটা খুব কমন, ছোট বড় মানে না, মানে না বয়স 

টেনে নামিয়ে দেয় কবর নামক ঘরে, যখন তখন ধরেই     

হুট করে উদয় হয়, এসে চেপে বসে বুকের ওপরে   

হাসিখুশি মানুষগুলোকে টেনে নিয়ে যায় মৃত্যুর ওপারে;


আমরা বলি কার্ডিয়াক এরেস্ট, অথবা ব্রেন হেমারেজ

ছোট বড় কত কত অসুখ! কত এক্সিডেন্ট প্রহরে প্রহরে 

জীবিত মানুষগুলো হুট হঠাৎ করেই চলে যায় মৃত্যুর ওপারে, 

মৃত্যু কোন নিয়ম মানে না, বয়স মানে না, মানে না সময় 

জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, প্রযোজ্য প্রত্যেকের জন্য   

এটাই আল্লাহ্‌ তায়ালার অমোঘ বিধান, বিশ্বাসীদের জন্য;  


মৃত্যুর আগে যার একটা নাম ছিলো, ঐ তো শুয়ে আছে লাশ 

গোসল করে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে সাদা কাফনে, অপেক্ষা দাফনে 

একটু পরেই জানাজা শেষে নামিয়ে দেয়া হবে অন্ধকার কবরে 

আজকাল মৃত্যুর কথা বড্ড মনে হয়, মৃত্যু দেখে চারিধারে 

মৃত্যুর পরের জীবনটা কেমন হবে? সে তো কর্মফলের দায়   

বিশ্বাসীরা প্রস্তুতি নেয় আগে থেকে, খুব দেরী না হয়ে যায়!  

 

০৪ এপ্রিল, ২০২২


#কবিতা 


তারপরের জীবন 

 - যাযাবর জীবন 


মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২

ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন

ঐ যে বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা'কে দেখছ অসহায়! 

হাতে হাত রেখে বসে আছে বিকেল বারান্দায়; 


একসময় ওদেরও যৌবন ছিলো, চোখে ছিলো পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন 

সংসার শুরু করেছিলো, ক্রমে ঘরে সন্তান এলো, বাবা-মায়ের চোখের রত্ন  

বেঁচে থাকা মানেই পেট, সংসার মানেই অনেকগুলো মুখের আহার 

তারপর জীবন যুদ্ধ, আর ওখানে একের পর এক চাহিদার পাহাড় 

একজনের আয়ে চাহিদা মেটে না, আরেকজন কাজে বাড়ায় হাত 

তখনো ওদের চোখে কিছু স্বপ্ন থাকে, পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো একসাথ; 


একটা সময় ক্রমাগত চাহিদার চাপে, স্বপ্ন ছোট হতে লাগলো

একসময় পৃথিবীর স্বপ্ন স্থগিত রেখে চোখে দেশ বেড়ানো আঁকলো 

একসময় কিছু টাকার সঞ্চয়, ছেলেটাকে ভালো কলেজে ভর্তি করার ভয় 

বেড়ানো পড়ে হবে, আপাতত ছেলেকে ভর্তি করে বাবা-মায়ের চোখে জয় 

সন্তানের ভবিষ্যতই সকল বাবা-মায়ের কাছেই সবচেয়ে বড় চাওয়া 

বেড়ানোর স্বপ্নগুলো? থাক না! হবে কোন একদিন কোথাও যাওয়া; 


একটা সময় জীবনে প্রৌঢ়ত্ব এলো, তখনো কিন্তু চোখে বেড়ানোর স্বপ্ন ছিলো 

হাতে কিছু টাকাও জমেছিলো, তারপর কোথা দিয়ে কি যে হয়ে গেলো! 

হঠাৎ করেই কোন একদিন বুকে ব্যথা, এম্বুল্যান্সের প্যাঁ পোঁ শব্দ 

জমানো টাকাগুলো দিয়ে অপারেশন, না হলে জীবনটাই হতো স্তব্ধ! 

তারও অনেকদিন পর আবার কিছু সঞ্চয়, ছেলেমেয়েরা কিছু দেয় হাতে

বেড়ানোর স্বপ্ন? বার্ধক্য উপহাস করে বুড়োবুড়ির দিকে চেয়ে থাকে; 


আমাদের সংসারটা শুরু হয়েছিলো অন্যদের থেকে কিছু আগে, সেই কৈশোরে 

কৈশোরে, যৌবন থেকেও চোখে স্বপ্ন অনেক অনেক বেশি থাকে, চোখ ভরে 

তারপর যথারীতি সংসার, একের পর এক সন্তান আর তাদের চাহিদার পাহাড় 

দুজনার দম হাঁসফাঁস চাহিদার বিশাল হাঁ করা মুখে জোগাতে টাকা নামক খাবার

আজ প্রৌঢ়ত্বে এসে কোন এক জ্যোৎস্না রাতে ছাদের ওপর আমরা দুজন 

এখনো স্বপ্ন দেখি, একদিন বেড়িয়ে যাব, পৃথিবী না হোক শুধুই দেশ ভ্রমণ; 


কারও স্বপ্ন বাস্তব হয় কারোর'টা স্বপ্নই থেকে যায় 

নাই বা সত্যি হলো তবুও চোখে কিছু স্বপ্ন রয়ে যায়। 



৩০ মার্চ, ২০২২


#কবিতা 


 ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন 

 - যাযাবর জীবন 



   

মোবাইলদানব

একটা সময় ছিলো, যখন একদময়ই সময় পেতাম না 

তখন ইচ্ছেমত ঘুরতাম, ফিরতাম, খেলতাম, বেড়াতাম

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে এক টেবিলে খেতাম

হাসি গল্পে সবাই মিলে বাসায় একসাথে আড্ডা জমাতাম 

বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলায় বা আড্ডায় মেতে উঠতাম

কখনো মন খারাপে একাকী আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম; 


তারপর একটা সময় মোবাইল নামক এক যন্ত্রদানব এলো

তারও পরে ভার্চুয়াল নামে এক নতুন জগৎ তৈরি হলো 

ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের বদল শুরু হলো 

ধীরে ধীরে জীবনে সময়ের সংকোচন শুরু হলো 

বাস্তব সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে মোবাইলে বন্দী হতে লাগলো 

তারপর একসময় জীবনটাই আমাদের ভার্চুয়ালময় হলো;  


এখন প্রচুর অবসর, তবুও সময়ের বড্ড অভাব  

আজকাল প্রকৃতির মাঝে ঘোরাফেরা হয় না বললেই চলে

 - কিন্তু প্রচুর ঘুরি, ভার্চুয়ালে;

আজকাল ঘাম ঝরিয়ে খেলাধুলা প্রায় বন্ধ হয়েই গিয়েছে

 - তবুও প্রচুর খেলি, মোবাইলে;

আজকাল সপ্তাহান্তে পরিবারের সাথে এক টেবিলে বসা হয়

 - চুপচাপ খাবার টেবিলে, যে যার মোবাইলে;

ইদানীং বন্ধুদের সাথে আগের থেকেও আড্ডা অনেক বেড়ে গেছে

 - তবে সামনাসামনি নয়, ম্যাসেঞ্জার চ্যাটে;

আজকাল মন খারাপের বিশাল আকাশটা সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে ঠেকেছে 

 - মোবাইল স্ক্রিনে, ভার্চুয়াল জগতের সীমাবদ্ধতায়; 


আজকাল যখন খাবার টেবিলে সন্তানদের ডেকে পাই না!

কিংবা তাদের ডেকে নিয়ে আসলেও ওদের চোখ থাকে মোবাইলে! 

আজকাল যখন নির্ভেজাল আড্ডা মারার জন্য বন্ধুদের খুঁজে পাই না

কিংবা কখনো দাওয়াত করে নিয়ে এলেও আড্ডার বদলে ব্যস্ততা সেলফিতে! 

আজকাল ভাই-বোনদের সময়ের অভাব ভার্চুয়াল মিটিং এর ব্যস্ততায় 

তখন, ঠিক তখনই পুরনো দিনের কথাগুলো বড্ড বেশি মনে পড়ে যায়; 


মোবাইল সভ্যতা আমাদের কি দিয়েছে?

কি দিয়েছে আমাদের ভার্চুয়াল?

কিছু ভাঙন, একরাশ একাকীত্ব  

আর কিছু নষ্ট সম্পর্কের আড়াল?  


উন্নতির শিখরে উঠতে গিয়ে আমরা অবনতির চরমে নেমে যাই নি তো?

এক একবার ভাবি, পুরনো সম্পর্কগুলো ফিরে পেলে কি ভালোই না হতো! 


২৬ মার্চ, ২০২২


#কবিতা 


মোবাইলদানব 

 - যাযাবর জীবন 


এদের ভালোবাসা

আমার পিঠে ডানা নেই 

আছে ওড়ার মন 

কখনো ইচ্ছেয় উড়ি কখনো বাধ্য হয়ে

আচ্ছা! তোমরাই বলো? মন খারাপ হলে মন কি আর মনে থাকে?

উড়ে বেড়ায় না আকাশে? 

মাঝে মধ্যে আমাকে উড়তে হয় পেটের টানে

কাজের জন্যে,

তারপর আবার পৃথিবীতে ফিরে আসি আপনজনের মাঝে;  


আমি মেঘ নই তবুও ভাসতে ইচ্ছে হয় 

মেঘের মত মেঘের সাথে,  

যখন আমার খুব মন খারাপ হয়! 

যখন পৃথিবীর সমস্ত কিছু অসহ্য মনে হয়!

আমি মনকে আলাদা করে ফেলি শরীর থেকে

মন ভাসিয়ে দেই মেঘের সাথে 

তারপর কান্না হয়ে আবার ফিরে আসি পৃথিবীর কাছে,

যতই আকাশে উড়ি কিংবা মেঘের ভেলায় ভাসি

আমার সকল ভালোবাসা পৃথিবীর পরে

আমি বাঁচি পৃথিবীর মানুষগুলোকে জড়িয়ে ধরে; 


আমি নদী নই তবুও ডুবতে ইচ্ছে করে 

ঢেউয়ে ভেসে ঢেউয়ে ডুবে 

পানির একটা অন্যরকম আলাদা রূপ আছে

সে কান্না ধুইয়ে দেয় মানুষের চোখ এড়িয়ে 

আমি মন খারাপে ডুবে যেতে যেতে কান্নাগুলো ডুবিয়ে দেই নদী জলে 

আবার একসময় ভুস করে ভেসে উঠে চলে আসি মানুষের কাছে, কান্না ধুয়ে

তারপর আবার ভালোবাসার মানুষগুলোর ভেতর ডুবে যাই ভালোবেসে; 


মানুষের কত রকম ইচ্ছেই না জাগে! 

ওড়ার, ভাসার কিংবা ডোবার!

এই ইচ্ছেগুলো কোত্থেকে আসে?

মনের আঘাত থেকে?


সবচেয়ে বড় আঘাত দেয় কারা?

যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, তারা; 


তবুও বারবার এদের কাছেই আবার ফিরে আসি

এদেরই ভালোবাসি,


এদের ভালোবেসেই উড়ি, ভাসি কিংবা ডুবি - এদেরই ভালোবাসায়। 


২৫ মার্চ, ২০২২


#কবিতা 


এদের ভালোবাসা

 - যাযাবর জীবন 


ভালোবাসার খাদ

আজ আকাশের দিকে তাকিয়েছিস? 

এত্ত বড় একটা চাঁদ,

একদিন তুই ছিলি, আমি ছিলাম, ভালোবাসা ছিলো 

আর ছিলো ভালোবাসায় অল্প একটু খাদ; 


খাদের কথা কেন বলছি জানিস?

স্বর্ণে খাদ না মেশালে কি গয়না হয়ে ওঠে রে? 

ভালোবাসায় খাদ না মিললে আমাদের বন্ধন হয়েছিলো কিসে?

আজ কখনো তুই একা, কখনো আমি আর একা ঐ চাঁদ; 


আজকাল তোর কথা একদমই ভাবতে চাই না; 


তবুও যখন রোদ তেতে ওঠে তোর রাগ মনে পড়ে

যখন কুয়াশা ঝড়ে! অভিমানের বাষ্প ওড়ে 

যখন ঝুমঝুম বৃষ্টি নামে, কারও কান্না ঝরে পড়ে

সূর্যাস্তে যতই তুই মন থেকে ডুবে যাস!

পরদিন ঠিক স্মৃতিতে উঠে যাস সূর্যোদয়ে,

অমাবস্যায় যতই মন'কে ঘুম পারিয়ে রাখি!

জ্যোৎস্নায় ঠিক আকাশে ভাসিস আলো হয়ে; 


আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

তাহলে ঐ যে আমাদের ভালোবাসার খাদ!  

হয়তো ওটাও ছিলো মনের একটা ফাঁদ, 

দেখ! মনে তুই আসতেই আকাশে বিশাল একটা চাঁদ। 


২২ মার্চ, ২০২২


#কবিতা 


ভালোবাসার খাদ 

 - যাযাবর জীবন 


চল বন্ধু চল

চল বন্ধু চল, আমার সাথে চল

মনের কথা বল

হাঁটতে হাঁটতে পথ, মনের দ্বৈরথ

জীবন কথা বল;


চল বন্ধু চল, হাত হাত রেখে

মনের টানে দুজন, পথ চলি হেঁটে

বন্ধুত্বের স্পর্শ, সবাই কি আর বোঝে?

ভালোবাসা ভেবে, ওদের কথা সাজে;


চল বন্ধু চল, বন্ধু হয়ে চলি

সুখ দুঃখের গল্পে, কিছুটা পথ হাঁটি

বন্ধুত্বে ভালোবাসায় কোথায় বল ক্ষতি

হাঁটতে হাঁটতে পথ, জীবন কথা বলি।


১৪ মার্চ, ২০২২


#কবিতা


চল বন্ধু চল

- যাযাবর জীবন 

কাছাকাছি আর পাশাপাশি

ভালোবাসার খুব কাছেই ঘৃণার বাস 

অভিমানের দূরত্বে বসবাস ইগোর  

ইগোর একদম কাছে সম্পর্কের ফাটল 

রাগ লোলুপ তাকিয়ে থাকে সম্পর্কের ফাটলের দিকে 

রাগাহ্নিত ইগো ভেঙে চুরচুর করে দেয় সম্পর্ক

তারপর হৃদয়ের পুরোটা জুরে ক্ষরণের বাস;


কিছুদিন দিনগুলো তেতে থাকে সূর্যের রাগে

কিছুদিন মনাকাশে মেঘের ঢাকঢাক গুড়গুড় 

কিছুদিন মনে প্রচণ্ড শ্রাবণের বর্ষণ 

তারপর অনেকগুলো রাত ধরে মন অমাবস্যা; 


আকাশ কি আর চিরদিন কালো থাকে?

ওখানেও চাঁদের উঁকি সময়ের সাথে 

তারপর জ্যোৎস্নার হাসি পুরো আকাশ জুরে

মানুষের মন জুরে অদ্ভুত রংধনু 

না সেখানে কান্না স্থায়ী হয়! না হাসি

না অমাবস্যা! না জ্যোৎস্না; 


মনের খুব কাছেই মস্তিষ্কের বাস

মস্তিষ্ক মন'কে সুমন্ত্রণা দেয়, আবার কুমন্ত্রণা

ভালো, খারাপ, রাগ অভিমান ভালোবাসা আর ঘৃণা

হাসি কান্না নিয়েই মানুষ, জীবন থেমে থাকে না।  



১৪ মার্চ, ২০২২


#কবিতা


কাছাকাছি আর পাশাপাশি 

 - যাযাবর জীবন