শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩

অঙ্গাঙ্গী

 অঙ্গাঙ্গী 

 - মোঃ আহসানুল হক


প্রেমে দুজন মিলে - প্রেম-সঙ্গী

অংগ অংগে মিলে - অঙ্গাঙ্গী 

প্রেম অনুভূতি এলে, মন উঠে হেসে 

কাম একটা অনুভব,  প্রেমের শেষে;


প্রেমে অংগ হাসে অংগের ছোঁয়ায়

কামে অংগ অংগে মিশে অংগ হারায় 

প্রেমে পূর্ণতা আসে, কাম কামনায় 

অংগ অংগ বিচ্ছেদে, প্রেম কাঁদায়; 


তোমরা শুধুশুধুই বলও - প্রেম স্বৈর্গিক

মানো আর না মানো - প্রেম জৈবিক। 


২৮ নভেম্বর,  ২০২৩ 


অঙ্গাঙ্গী 

 - মোঃ আহসানুল হক

একাকীত্ব - #হিবিজিবি

 একাকীত্ব 

 - মোঃ আহসানুল হক 



ঐ যে লাল মুনিয়া! 

ঐ যে একাকী প্রিণিয়া

ঐ যে একা বসা ফড়িং

একা একা পানি ছিটাচ্ছে শালিক 

একাকী মাছরাঙাটা উদাস চোখে তাকিয়ে আছে মন খারাপ করে

অথবা একাকী চিলটা উড়ছে আকাশে 

এরা সবাই একা

যেমন একা মানুষ, 

আয়না'কে জিজ্ঞেস করে দেখো তো আয়না কি উত্তর দেয়?

আসলে আমরা সবাই একা

তবুও মানুষ আর পশু পাখি সবাই একটা সময়ের জন্য প্রেমে পড়ে, কিংবা তার বিপরীত লিঙ্গের কাওকে পছন্দ করে। তার সাথে ঘর বাঁধে। মানুষ ঘর বাঁধে প্রেমে পড়ে কিংবা না পড়েও; না হলে তো প্রজন্ম থেমে যাবে। তাই না?   


আজ কবিতার কথা নাই বলি। আজ একটা গল্প বলি। গল্পটা হয়তো আমার বাবা কিংবা মায়ের,  কিংবা তোমার কিংবা তার, ওর আর ওদের; কিংবা হয়তো গল্পটা আমারই,  অথবা তোমার অথবা তার অথবা আমাদের সবারই। আজ না হয় একাকীত্বের কিছু গল্প করি।




একাকীত্ব একটা ভয়াবহ ব্যাধি।  যে এর ভেতর দিয়ে যায় সেই বোঝে আর  আশেপাশের মানুষগুলো হয়তো কিছুটা অনুভব করে।  কিংবা আসলে অনুভব করে না অথবা একাকীত্ব অনুভবের হয়তো কিয়দংশ  উপলব্ধি করে, আর  নয়তো করেই না।  


দীর্ঘদিন সংসার করার পরে প্রাকৃতিক নিয়মেই দুজনের একজনকে আগে চলে যেতে হয়, অন্য আরেকজনকে দিয়ে যায় অঢেল সময় আর একাকীত্ব।  দিনগুলি তবু কোন না কোন ভাবে কেটেই যায়,  দীর্ঘ রাত গুলো কাটে একাকীত্বের বেদনায়। সময় কাটাতে চেষ্টা করে বিশাল খাটে পাশের শূন্য  বালিশটাকে দেখে দেখে, হাত বাড়ায় দীর্ঘশ্বাসের স্পর্শে।  মানুষটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে ঘুমগুলোও যেন কেড়ে নিয়ে গিয়েছে,  ঘণ্টার পর ঘণ্টা চোখ বন্ধ রেখেও ঘুমকে বসানো যায় না চোখে।  কিছুক্ষণ বাতি জ্বালিয়ে কিছুক্ষণ বাতি নিভিয়ে,  কিছুক্ষণ পাশের বালিশটার দিকে চেয়ে থেকে, কিছুক্ষণ শূন্য দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে থেকে বাকি রাতটা কেটে যায় অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে।  মাঝে মাঝে হয়তো একটু ঝিমানির মতো আসে,  ঘুমঘোরেই হাত চলে যায় পাশের বালিশটার দিকে।  শূন্য বালিশের ছোঁয়া লাগলেই মুহূর্তেই দূর হয়ে যায় ঝিমানি ভাবটা।  অনিদ্রার আরেকটা রাত কাটে।  একাকী কাটে সারাটা দিন, ছেলেমেয়েরা কাজে বেরিয়ে গেলে।  এভাবে দিনের পর দিন রাতের পর রাত কেটে যায় - একাকীত্বের বেদনায়।  




সন্তান-সন্ততিরা হয়তো বড় হয়ে গিয়েছে, কারো কারো হয়তো সংসার হয়েছে; আর ওরা  সবাই ব্যস্ত যার যার জীবনে।  তবুও ভালো ওরা সময় করে আসে,  বাবা-মা দুজনের মধ্যে যিনি বেঁচে আছেন তার খোঁজখবর করে,  তাকে কিছু সময় দেওয়ার চেষ্টা করে; কিন্তু সেটুকু আর কতক্ষণ?  ওরা যার যার ঘরে চলে গেলে এ ঘরটায় দিয়ে যায় আবার অসহনীয় একাকীত্ব।  


কাটতে না চাইলেও এভাবেই কেটে যায় আমাদের সময়। ইচ্ছা না থাকলেও এভাবেই কাটাতে হবে জীবনের বাকি কয়টা দিন, মাস কিংবা বছর।  সেই ততদিন,যতদিন ওপারের ডাক না আসে।  


আমি আমার ঘরের কথা বলছি,  তোমার ঘরের কথা বলছি,  তার, তার, ওর - আমাদের সবার ঘরের কথা বলছি।  যে একা পড়ে রইলো তাকে কিছু সময় দেওয়ার চেষ্টা করি, আমরা সবাই।


#হিবিজিবি


১৭ নভেম্বর, ২০২৩ 



একাকীত্ব 

 - মোঃ আহসানুল হক 


মানুষে কি না খায়

 মানুষে কি না খায়

 - মোঃ আহসানুল হক 


মানুষ সবই খায়, নামে সর্বভুক প্রাণী 

আমরা হরেদরে যা খাই, সব কি জানি?  

খাদ্য কিংবা অখাদ্য সামনে যা পাই 

চোখ নাক বন্ধ করে গোগ্রাসে খাই


আজকাল কে আর বাছে হালাল হারাম! 

উদরপূর্তি হলেই হলো, দিয়ে খাদ্যের নাম 

খাদ্য নামে সুদ-ঘুষ মানুষ নির্দ্বিধায় খায়  

ঘুষ কি আমি খাই? আমার হাত চায়;


খেতে খেতে খাদ্য ভাণ্ডার সমাপ্তির শেষে 

দেশ খাওয়া শুরু মানুষের, রাজনীতির বেশে 

রাজনীতি অর্থনীতি সমাজের আর যত নীতি

ঠুকরে সবই খাওয়া, লোভী মানুষের রীতি 


সকল তন্ত্রের দেশের মানুষ ভরপেট খায় 

ক্ষুধিত চেয়ে থাকে সিরিয়া ও গাজায় 

গণতন্ত্রের শিরায় শিরায় স্বৈরাচার সরকার 

রাজতন্ত্রের দেশে তন্ত্র শুধুমাত্র রাজার 


একদিকে টেবিলে সাজানো বিলাসীর প্লেট 

আরেক দিকে ক্ষুধার্তের ক্ষুধিত পেট 

আয়েসি চুমুকে সুরায়, খবরে চোখ যায়     

বিবেকের কাক কি বিবেক ঠোকরায়?   


পোকামাকড় সাপ ব্যাঙ, মানুষ সবই খায়

বাছ বিচার কে আর করে ক্ষুধার যন্ত্রণায়!

ভরা পেটে যখন মানুষ আরও আরও চায়  

টিকটিকিতে দেখে হাসে আর ঠিকঠিকায়


খাদ্য খেতে খেতে আজকাল খাদ্যে অরুচি

মদ ভাং গাঁজার ধোঁয়ায় মুখে আসে রুচি 

নেশার নামে মানুষ নিজের বিবেক চিবায়

টিকটিকির লেজও নাকি নেশাখোরে খায়


টাকা কামড়ে খেতে খেতে বিবেক কামড়ে খায়

স্বার্থ চিবিয়ে খেতে গিয়ে, সম্পর্ক হারায় 

হারাম খেয়ে ভরপেটে, ওড়ায় নীতির ফানুস 

হালাল হলে মানুষে, খেয়ে ফেলতো মানুষ


একদিন খেতে খেতে সব শেষ হয়ে যাবে 

খাদ্য ভাণ্ডার শেষে মানুষে মাটি কামড়ে খাবে 

সব খেলেও মৃত্যুকে, মানুষ কিভাবে খাবে? 

মাটি খেতে খেতে মানুষ, মাটি হয়ে যাবে।


# কবিতা 



১৬ নভেম্বর, ২০২৩ 

 


মানুষে কি না খায়

 - মোঃ আহসানুল হক 


 

নানা রঙের অনুভব

 নানা রঙের অনুভব

 - মোঃ আহসানুল হক 


সকালের ধুসর আকাশ

নীল আকাশ চুইয়ে নামা, দুঃখ সাদা 

সাদা তো শুভ্র, সবার জানা 

সাদায় আবার দুঃখ থাকে?

বুঝবে, নিজে পেলে; 


দুপুরের রুপালি রোদ

হলুদ পাতায় পিছলে নামে, লাল কষ্ট

লাল রং দেখেছি, কষ্ট বুঝি নি

আমরা কেউই বুঝি না 

নিজে না পেলে;  


বিকেলের লাল রোদ

লালচে হতে হতে, কান্না কালো 

কালো তো অন্ধকার, রাত ঘুমোবার

ওতে আবার কান্না কোথায়?

কে বুঝবে? নিজের না এলে;


ঐ যে সোনালী জ্যোৎস্না! 

আকাশ চিড়ে নামে, অশ্রু কালো 

অশ্রুর রঙ হয়? 

দেখি নি তো! 

দেখবে, নিজের চোখে নামলে;


কিছু রঙ কিছু রঙিন, সাদাকালো অনুভূতিহীন

কিছু সম্পর্ক আর সম্পর্ক ভাঙার কষ্ট 

কিছু অর্থ, অর্থে ডেকে আনা অনর্থ 

কিছু স্বার্থ, স্বার্থে সম্পর্ক নষ্ট 

ছোবল মারে সবাই, সাপের বিষে

পেছন ফিরলেই, সুযোগ করে এসে; 


আকাশ

মেঘ

বৃষ্টি,  

রক্ত 

সম্পর্ক

কান্না,  

কিছু প্রেম, কিছু ভালোবাসা 

কিছু অনুভব, কিছু অনুভূতি 

হলুদ, সবুজ, নীল আর সাদা আলো 

লাল, অশ্রু, ক্ষরণ আর কান্না কালো।  



#কবিতা 


১৬ নভেম্বর, ২০২৩


নানা রঙের অনুভব

 - মোঃ আহসানুল হক 


অন্ধকারের বাসর

 অন্ধকারের বাসর

 - মোঃ আহসানুল হক 


অনেক রাত এখন,  

রাতে কাছে আসতে নেই 

অন্ধকারে ভালোবাসতে নেই; 

 

জ্যোৎস্না বাতি জ্বাললেই লোকে জেনে যাবে

আমরা দুজনে এক হয়েছিলাম

চাঁদ আলো জ্বাললেই দেখে ফেলবে 

আমাদের অন্ধকারের বাসর; 


তারচেয়ে এই বেশ ভালো, 

এখানে আমি 

ওখানে তুমি 

দু-ভবনে দুজন  

আর আমাদের ভালোবাসাবাসির ঘর।


#কবিতা 


১৪ নভেম্বর, ২০২৩



অন্ধকারের বাসর

 - মোঃ আহসানুল হক 

বোধোদয়ে বিবেক

 বোধোদয়ে বিবেক 

 - মোঃ আহসানুল হক 


রাত ঘুমিয়েছিলো রাতে 

অন্ধকার খেয়ালে 

অন্ধকার হেলান দিয়েছিলো  

কালোর দেয়ালে

 

দিনের আলোতে জাগে সূর্য 

জ্যোৎস্না কোথায়?

রাত ঘুমিয়ে গেলে অন্ধকারে    

আলো যেথায়; 


আলো আঁধারির খেলা

দিন আর রাতে 

চাঁদ সূর্যের মেলা 

আকাশের সাথে


পাপ আর পুণ্য 

খুব কাছাকাছি

আলো অন্ধকারের 

মতই পাশাপাশি; 


অস্তমিত চাঁদের পিঠে 

বিবেকের উদয় 

রাতের কালো দিনে 

মনের বোধোদয়


মন জেগে উঠলে 

তবেই সূর্যোদয় 

মনকেও মনের মাঝে

কখনো জাগতে হয়; 


ঘুমিয়ে তো যাবই আমরা 

জানি একদিন সবাই

ঘুমানোর আগে বিবেককে 

না হয় একবার জাগাই 


ভালো হাঁটে খারাপের সুতোয়

খারাপের সুতো কাটে বিবেক

ভালোর ঘুম ভাংলেই তবেই 

বোধের উদয়ে বিবেক। 



#কবিতা 


১২ নভেম্বর, ২০২৩ 


বোধোদয়ে বিবেক 

 - মোঃ আহসানুল হক 







নেশার নেশা

নেশার নেশা

 - মোঃ আহসানুল হক 


কত রকম নেশাই না মানুষের থাকে!

কারও ঘুরে বেরানোর, কারও ছবি তোলার

কারও চুপ করে থাকার, কারও কথা বলার

কারও লোক দেখানোর, কারও কাজ চুপিসারে

কেউ লেখালেখি করে, কেউ পড়াশোনা 

কারও ধর্মকর্মে নেশা, কারও ধর্ম বিরোধিতায় 

কেউ নেশাগ্রস্থ কাজে, কেউ নেশা-দ্রব্যের নেশায়,  

আচ্ছা! নেশার কি কোন উপকার আছে?

তবুও আমরা সবাই ছুটছি নেশার নেশায়;  


সব নেশাই ক্ষতিকর - সবাই কিন্তু জানি

নেশা থেকে দূরে থাকা উচিৎ - কয়জন মানি?  

সিগারেট থেকে শুরু ধোঁয়ার নেশা

তারপর গাঁজা থেকে কোকেন হেরোইন

মদ ভাং হাড়িয়া, চরস আফিম 

টিকটিকির লেজেও নাকি নেশা রয়  

সাপ বিচ্ছুর কামড়েও কেউ নেশাগ্রস্থ হয়

সাদা পাউডারের কত রকম যে কত কি? 

গাঁজার নেশায় নেশাখোরদের অপ্রকৃতস্থ হাসি! 

লাল নীল ট্যাবলেট কাশির ঔষধ 

নেশাগ্রস্থের শত পদ - বাবা-মায়ের বিপদ;  


সাদা পাউডার বলতেই মনে পড়লো - সাদা বিষ 

পরিমাণে খেলে উপকার, অতিরিক্ত হলেই বিষ

আমি খাদ্যের কথা বলছি, এটা একটা ধাঁধা    

কি বলতে পারলে না তো! 

লবণ চিনি ভাতের দানা, সবই তো সাদা 

তাই না?

তিলে তিলে চিনির দলা রক্তের শর্করা 

তিলে তিলে বহুমূত্র, তিলে তিলে মৃত্যু 

এটাও এক প্রকার নেশা, তাই না? 


কিছু নেশা খাদ্যে কিছু খাদ্যাভ্যাসে 


কিছু নেশা ঢুকে যায় রক্তে 

নেশার সামগ্রীতে 

নেশার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ - টাকার নেশা  

খারাপ রিপুর নেশা 

স্বার্থের কিছু নেশা আছে আছে লোভের 

স্বার্থ-হানিতে মন বীতশ্রদ্ধ ক্ষোভের 

টাকার নেশা যার রক্তে তার অন্য আর কোন নেশা লাগে না 

টাকার নেশায় বিকোয় মনুষ্যত্ব, বিকোয় রক্ত, বিকোয় সম্পর্ক; 


দিনের কিছু নেশা আছে - জেগে থাকার 

রাতের নেশা - ঘুম আসার 

পড়ুয়ার নেশা - বইয়ে 

ধর্মের নেশা - ধর্মকর্মে

মনুষ্যত্বের নেশা - ভালো কর্মে 

অমানুষের নেশা - খারাপ কাজে 

নেশাখোরের নেশা - নেশার নেশায়;  


কলমেরও কিছু নেশা আছে 


তাইতো এখনো সাহিত্য হয় - কলমের আঁচরে। 


#কবিতা 


০৬ নভেম্বর, ২০২৩ 


নেশার নেশা

 - মোঃ আহসানুল হক 


ঘুম-রাত

ঘুম-রাত 

 - মোঃ আহসানুল হক 


কাঁচের শার্শিতে কুয়াশার মেঘ

মনের শার্শিতে স্মৃতি 

চোখের ওপর ঘুমের পর্দা

রাতভর নিয়েছে ছুটি 


অনুভবের কালো শাড়িতে রাত

আঁচলের ভাঁজে লুকানো ঘুম

রাত-প্যাঁচার ডানা ঝাপটানো 

জ্যোৎস্না ছড়ায় আলো রঙ


কিছু পুরনো স্মৃতির খেলা 

চোখের কোল ঘেঁষা 

জেগে থাকা চাঁদ তারা  

কুয়াশায় চাদরে ঢাকা 


চোখ ঘুমায় চোখ খুলে 

স্লিপিং পিলের হাতছানি  

দিন-ঘুমে অন্ধকার চোখ 

রাত জেগে থাকে নির্ঘুম


ঘাসের ডগায় জোনাক মিটিমিটি 

চোখের ডগায় নির্ঘুম রাত 

ঘুম আর স্লিপিং পিলের সঙ্গম 

ঢুলতে ঢুলতে চোখ ঘুম


একদিন নিশ্চিত ঘুমিয়ে যাব

স্লিপিং পিলের অতল ঘুমে 

ঘুম-রাতে চোখ খুলবে না আর  

ঘুম-সকালে চোখ দৃষ্টিহীন হবে। 


#কবিতা 


০৪ নভেম্বর, ২০২৩ 

 


ঘুম-রাত 

 - মোঃ আহসানুল হক 



উত্তর আমিই জানি

 উত্তর আমিই জানি 

 - মোঃ আহসানুল হক


কাল আসবে কিনা কেউ জানে না

না তুমি, না আমি কিংবা অন্য কেউ; 


আগামীকালের কথা যিনি জানেন, উনি তোমার চিন্তায় হাসেন

যদি ঘুম ভেঙ্গে কালকের সকাল দেখো তবে তুমি ভাগ্যবান

যদি আজ রাতটাই শেষ রাত হয়, তবে খুব একটা আফসোস করো না


জন্ম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যতটুকু পেয়েছ! সেটুকুই তোমার ভাগ্যে ছিল


কেউ একজন লিখে রেখেছেন আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ; 


কালকের সকালটা যদি তুমি না দেখো 

তাহলে তুমি কোথাও এক জায়গায় ঘুমিয়ে আছো,  

মজার ব্যাপার হচ্ছে যেখানে ঘুমিয়ে আছো 

সেখান থেকে এসে বলে যেতে পারবে না তোমার সেখানকার অবস্থান

তুমি কি অবস্থায় আছো,

 সেখানকার দিনগুলো কেমন, রাতগুলো কেমন

ওই জগৎটাই বা দেখতে

 কেমন;


এ জগতের ভালো কর্মফলের প্রতিদান, সে জগতের শান্তির ঘুম হতেই পারে

কিংবা সে জগৎটা দুর্বিষহ হতে পারে এ জগতের খারাপ কাজ গুলোর প্রতিদান

আমরা জানি সে সে জগৎ সম্পর্কে

শুধু বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে সে জগৎ অবশ্যই আছে;


ঘুমানোর আগে প্রায়শই চেষ্টা করি একটু পেছনে ফিরে তাকাতে

একবার মনের আয়নায় নিজেকে দেখতে 

মাঝেমাঝে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করি 

 - ওহে মানব! তোমার পাপ পুণ্যের হিসেব কি?

 


উত্তরটা আমার ভেতরের মানুষটা থেকে আর কে ভালো জানে!


 


#হিবিজিবি_চিন্তা

 


উত্তর আমিই জানি 

 - মোঃ আহসানুল হক

 



০৪ অক্টোবর, ২০২৩

টাকায় কেনা জগত

টাকায় কেনা জগত

 - মোঃ আহসানুল হক 


জন্মের পর থেকেই আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়

লেখাপড়া করে যে - গাড়িঘোড়া চড়ে সে

যেন লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো গাড়িঘোড়া চড়া

ভালো উপার্জন করা

আর উপার্জন সকলই টাকার অংকে,

আজকাল কয়টা বাবা-মা শেখায় ধর্ম!

আসলে কয়জন বাবা-মা'ই আজকাল মানে ধর্ম 

ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা-ব্যবস্থা তা যেন মানতেই নারাজ আমরা

ওগুলো শুধু হুজুরদের পাঠ্য, মরার পর দোয়া-খায়েরে কাজে লাগে

হুজুর কাজে লাগে মৃতের গোসলে, কিংবা মৃতদেহ সৎকারে

মানুষ হওয়ার সাথে, উপার্জনের সাথে ধর্মের সম্পর্ক কি?

তাই না? 


তারপর সেই যে ছোটবেলার শেখানো পথে পথচলা

যেন রেসের ঘোড়া

কে কতটা পড়ালেখা করেছে

কে কতটা ভালো উপার্জনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে

তার প্রতিযোগিতা,

মানুষের মত মানুষ হও হয়তো কোন বাবা-মা বলে থাকেন

কিন্তু মানুষ হওয়ার মাপকাঠিটা যেন ঐ অর্থ উপার্জনেই সীমিত

আর মাঝে মধ্যে রাস্তার কুকুর বেড়াল, পশু পাখির প্রতি মমতা

এখানে ওখানে যুদ্ধ হচ্ছে, তাদের দুরবস্থা ভারচুয়ালে শেয়ার করে সহানুভূতি

খুব বেশি হলে কিছু অনলাইনে সাহায্য কালেকশন

একদল তো আছে এটা করেই বিশাল ব্যবসা ফাদে - সহানুভূতির ফাঁদে 

টাকা উপার্জন - মানুষ হওয়ার মূল কথা,

তাই বলে মনুষ্যত্ব বিসর্জন? 

আরে বোকা মনুষ্যত্ব পুরনো ডিকশনারির একটা অচল শব্দ মাত্র 

আর কয়দিন পরে এটি পাবে ভার্চুয়াল জাদুঘরের শব্দকোষে;   



টাকা উপার্জনের রেসে ছুটতে ছুটতে কতজন কতভাবেই না পা পিছলায়!

লোভ রিপুটা এক্ষেত্রে বড্ড বেশি প্রভাবক 

সবাই জানে, কে ধার ধারে? টাকার হাতছানিতে রিপুও পরাজয় মানে

টাকা আসা শুরু করলো তো মুই কি হনু রে!

টাকা উপার্জনে পা পিছলে পড়ে গেলে সৃষ্টিকর্তা'কে দোষে

অথচ মনে মনে মানেই না সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু আছে

আরে নাহ! এখনো মানুষ পুরোপুরি নাস্তিক হতে পারে নি

দোষারোপ করার জন্য একজন সৃষ্টিকর্তা তো লাগবে!

লোভ'কে তো দোষারোপ করলে দোষ এসে পড়ে নিজের ঘাড়ে

আয়নার মানুষটা কি তা মানতে পারে? 

লোভের শিকার আমরা সবাই 

স্বীকার করি না কেউ

 

রিপুর নদীতে জোয়ার ডাকে 


দুকুল ভাসানো ঢেউ;


তারপর একদিন দুদিন করে খুব তাড়াতাড়ি দিন ফুরোয় 

দেখতে না দেখতে সমবয়সীদের মাঝে চারিদিকে দেখে 

মৃত্যু নামক এক অমোঘ বিধান 

কখনো হয়তো আশেপাশের মৃত্যু দেখতে দেখতেই মৃত্যুর কথা মনে হয়

কখনো সখনো কেউ কেউ পুরনো পথ থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করে

বেশীরভাগ অবশ্য তবুও আমলে নেয় না, চলে পুরনো পথ ধরে; 


একদিন অনেক টাকাওয়ালা এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 

 - আচ্ছা! এই যে এত এত টাকা কামিয়েছ! সৎ উপায়ে তোমার উপার্জন কত?

সে তাচ্ছিল্যের স্বরে জবাব দিলো, সৎ উপায়ে কি টাকা কামানো যায়? তোর নিজের দিকে তাকা

আমি আয়নায় নিজের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থেকে তাকে বললাম, তাই তো! আমিই বোকা; 


তারপর বাদ দে বলে তাকে আবার প্রশ্ন করলাম

  - সারাজীবন কামানো টাকার কতটা তুমি উপভোগ করতে পেরেছ?

 - কতটুকু খাদ্যই বা পুরো জীবনে গলর্ধকরণ করেছ?  

 - মৃত্যুর সময় কত কত টাকা রয়ে যাবে তোমার ব্যাঙ্কে? 

 - তাহলে এই পাগলের মত কেন টাকার পেছনে ছুটছ? 

 - আর কত টাকার পাহাড় জমালে তোমার মনে হবে টাকা কামানো হয়েছে? 


সে হেসে বললো, আবারও বোকার মত প্রশ্ন করছিস, 

আরে টাকা কামানো একটা নেশা, তোর মত বোকারা সেটা বোঝে না, 

 - আর মৃত্যু? আরে বাবা টাকায় আজকাল মৃত্যুকে কেনা যায় - সেটাও জানিস না?

 - টাকা না থাকলে কোথায় পাবি চিকিৎসা? - ক্যান্সার চিকিৎসায় কত টাকা লাগে জানিস?  

 - ভেন্টিলেটর বুঝিস? তোর মত মূর্খ কি বুঝবে টাকার মূল্য!

 - আমার টাকা আছে বলেই না আমি থাকতে পারবো মাসের পর মাস - ভেন্টিলেটর সাপোর্টে, 

 - তোর ক্ষমতা হবে?

 - আমি টাকার পাহাড় গড়তে গড়তে যেদিন টাকায় ঐ এভারেস্ট তলিয়ে দেব

 - আমি টাকার সাগর গড়তে গড়তে যেদিন ঐ প্রশান্ত মহাসাগর ভরিয়ে দেব 

 - সেদিনও আমার টাকার কামানোর নেশা শেষ হবে না; 


আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম প্রকৃতই টাকার নেশা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেশা

 - বাকি সব নেশা এর কাছে নিষ্প্রভ, তোমাকে দেখে আমার তাই মনে হয় 

 - আচ্ছা! দোস্ত বলতে পারো ভেন্টিলেটর সাপোর্ট থেকে ফিরে আসে ক'জনা?

সে এবার ধমক দিয়ে বললো - আবার বোকার মত কথা!  

 - টাকা ছাড়া ঐটুকুও তো যায় না কেনা,


দিনের পর দিন গড়ায়, সূর্য ওঠে চাঁদ ডোবে 

আমি আমার ভবঘুরে জীবনে সে তার টাকার মেশিনে,


একদিন হঠাৎই শুনলাম বন্ধু আমার ভেন্টিলেটরে শুয়ে 

ডাক্তার'রা কাওকে কাছে যেতে দেয় না, 

কিন্তু আমার যে তাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে!

জানতে ইচ্ছে করছে তার বর্তমান অবস্থা,

আমি আই সি ইউ'র বাইরে থেকে মনে মনে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,  

 - তারপর? কেমন আছিস দোস্ত? 


ভেন্টিলেটরে শুয়ে থাকা অচেতন দেহ উত্তর দিলো না; 


তারও দিন দুয়েক পরে আবারও বাইরে থেকে দেখে মনে মনে জিজ্ঞেস করলাম, 

 - কি রে বন্ধু! কেমন বোধ করছিস আজ? - ভেন্টিলেটরে তুই কি ঘুমিয়ে না জেগে? 


এবারও উত্তর দিলো না ভেন্টিলেটরে শুয়ে থাকা বন্ধু আমার;


তার পরদিন আবারও গেলাম বন্ধুর খবর নিতে,

খুব ইচ্ছে করছে জানতে কেমন আছে বন্ধু আমার 

খুব জানার ইচ্ছে টাকায় কেনা ভেন্টিলেটর জগতের মানুষরা কি করে! 


গিয়ে দেখলাম ডাক্তার'রা ভেন্টিলেটর খুলছে

 - মৃতদেহ উত্তর দিলো না। 



২৭ অক্টোবর, ২০২৩


#কবিতা 



টাকায় কেনা জগত

 - মোঃ আহসানুল হক 






অর্ধাঅর্ধির সংসার

 অর্ধাঅর্ধির সংসার 

 - মোঃ আহসানুল হক 


বিয়ে মানেই অর্ধা অর্ধি - অর্ধার্ধি  

স্বামী অর্ধ স্ত্রী অর্ধাঙ্গিনী 


বিছানাটা ভাগাভাগি কোলবালিশটার ছুটি 


সব ক্ষেত্রে তাই কি?  


আজকাল আর একান্নবর্তী সংসার কই? 

সবার যার যার নিজের মত, 

মধ্যবিত্ত পরিবারের বেশিরভাগ গ্রাম থেকে

গ্রামে যে, যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন!

শহুরে জীবন শুরু পড়ালেখার ক্ষেত্রে হল কিংবা মেস

তারপর বিয়ের পর টানাটানির অর্ধার্ধির সংসার সাবলেট 

অর্ধার্ধির সংসারে দুজনারই চাকরি, বেতন যার যেমনই হোক কম কিংবা বেশি 

কাজে? তখন আর অর্ধার্ধি কোথায়?

হোক রান্না-বান্না কিংবা অন্যান্য ঘরের কাজ - এখানে শুধুই পত্নী

এর নামই সংসার,

অর্ধার্ধি? আছে তো! কাগজে কলমে কিংবা দুজনার মনে;  


দুজনার চাকরিতে একটু সচ্ছলতা এলে দু কামরার ফ্ল্যাট

সময়ের সাথে সাথে সংসার বৃদ্ধি, দু এর জায়গায় তিন কামরা 

আজকাল সবকিছুতেই শুধুমাত্র আমরা আমরা; 


সমস্যায় পড়তে হয় গ্রাম থেকে কেউ এলে, বিশেষ করে বাবা-মা 

ছেলে মেয়ে কারও একজনের ঠাই হয় ড্রইং রুমে

সপ্তাহান্তে সন্তানদের মুখ ভার, বাসনা নিজ কামরায় থাকার 

ক্রমাহ্নয়ে 


পতির বাবা-মা'কে ডাল, ভাত, ভর্তায়ও যেন বোঝা মনে হয় 


জায়ার বাবা-মার ক্ষেত্রে? ঠিক হাসি মুখ, মাছ মাংস নিত্য বাজার হয় 

এখানে অর্ধাঅর্ধির হিসেবে লেগে যায় গণ্ডগোল 

বাবা-মা যার যার এ নিয়েই সোরগোল 

এক্ষেত্রে অর্ধার্ধির সংসারে অর্ধার্ধি কোথায়?

অর্ধ আর অর্ধাঙ্গিনীর যার যার আত্মীয়ের বাসায়,

কিছুদিন দূরত্ব দুজনার কথায়, কাজে, মেলামেশায় 

আবার অর্ধার্ধির সংসারে দুজনে অর্ধার্ধি ভালোবাসায়;  


তবু ধরে নেই অর্ধাঅর্ধির সংসারে সকলই সমান ভাগ হয়   

তবে পত্নীর গুণেই কিন্তু সকল সংসার সুখের হয়, 

 

আর সংসারে ভুলগুলো সকলই পতির রয়।



#কবিতা


২৩ অক্টোবর, ২০২৩ 


অর্ধাঅর্ধির সংসার

 - মোঃ আহসানুল হক 

 


দূরে কাছে

 দূরে কাছে 

 - মোঃ আহসানুল হক 


দূর থেকে 


অনেক দূর থেকে দেখলে অনেকটা জায়গাই দৃশ্যমান হয় 


বেশ খানিকটা দূরত্ব থেকে দেখলে প্রকৃতির কোন একটা দৃশ্যকে বড়ই সৌন্দর্যমন্ডিত মনে হয় 


যতই কাছাকাছি যাওয়া যায় ততই দৃশ্যপটের বিভিন্ন ময়লা আবর্জনাগুলো চোখে ভেসে ওঠে 


আরও একটু কাছে গেলে হয়তো বা ময়লার গন্ধও ধ্বক করে নাকে লাগে


অথচ দৃশ্যটা কি সুন্দরই না ছিল দূর থেকে!  




ভালোবাসাবাসি কিংবা দাম্পত্য সম্পর্ক গুলোকে দেখো! 


আমরা দূর থেকে সম্পর্কগুলো দেখি, দেখি মাখামাখি 

দেখি ভালোবাসাবাসি 


ওই দূর থেকেই, 


যতই সম্পর্কগুলোর কাছাকাছি যাওয়া যায় 

ততই সম্পর্কের মাঝে 

হাঁড়ি কুড়ি নাড়ানাড়ির শব্দ পাওয়া যায় 


আরও একটু কাছে যাও! 

শুনতে পাবে দুজনার মাঝে ঝগড়ার সাজে অশ্রাব্য গালাগালি 


অথচ দূর থেকে, ঐ দূর থেকে কি সুন্দরই না লাগছিলো দুজনার ভালোবাসার সম্পর্কগুলি;



দূর থেকেই ভালো লাগে পারিবারিক বন্ধন 

যৌথ পরিবারের একসাথে মিলেমিশে থাকার দেখানো চেষ্টা 


অথচ কাছে গেলেই শুনতে পাওয়া যায় খোকলা হয়ে আসা সম্পর্কের ঝন ঝন কড়া নাড়া 


আরও একটু কাছে গেলে সম্পর্কের মধ্য থেকে ফুটে ওঠে লোভ লালসা 

রেষারেষির পুতি দুর্গন্ধময় যৌথ পারিবারিক আবহাওয়া; 




আমি জানি 


খুব ভালো করেই জানি কাছ থেকে আর দূর থেকে দেখার পার্থক্যগুলো 


একটা সময় এই পার্থক্যগুলো বড্ড বেশি পীড়া দিত 


বিশেষ করে সম্পর্কগুলো, 


তাই সম্পর্ক গুলোর খুব কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকতাম; 


আজকাল দূরত্বে থাকতে চাইলেও কেন জানি সম্পর্কের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে যায় পরিস্থিতি 


বেঁচে থাকতে হয় লোভের গন্ধ 

আর স্বার্থের দুর্গন্ধের মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায়; 




যতই ক্যামেরার আইপিসে মুখ লুকোতে চাই না কেন 


ক্যামেরাই আমাকে খুব কাছ থেকে পৃথিবী দেখায়।



#কবিতা 


দূরে কাছে 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৩ অক্টোবর, ২০২৩ 


চাহিদার আয়না

 চাহিদার আয়না 

 - মোঃ আহসানুল হক 


মানুষের জীবনে খুব বেশী কিছু - চাওয়ার থাকে কি? 

কি বলছ? চাহিদার কি শেষ আছে? - আয়না বলে কি? 

জন্মের পরই ক্ষুধায় কান্না - মা বুকে জড়িয়ে নিলেই ঠিক   

ক্ষুধা মিটলে গলাফাটায় - ভেজা কাঁথা কেউ বদলে দিক; 


বড় হতে হতে চাহিদার লিস্টও - হতে থাকে বড় 

সবকিছু আমারই হতে হবে - তোমরা সবাই সরো  

ছেলেবেলা থেকেই এটা ওটা খাবার - এটা ওটা খেলনা

পড়ালেখাটা চাপিয়ে দেয়া - একদম ভালো লাগে না 

কৈশোরে বিপরীত লিঙ্গ দেখলে - মনে বসন্ত বাতাস

যৌবন আসতে আসতেই মন - প্রেমের শরৎ আকাশ; 

  

কিছু প্রেম, কিছু বিরহ - আর শরীরে শরীরে টান 

লোকে বলে ভালোবাসা - আসলে কাম, রিপুর নাম   

কিছু প্রেম শরীর চেনে কিছু থাকে অচেনা অধরা 

তারপর সংসার নিয়ম নীতিতে দাম্পত্যে বাঁধাধরা; 

 

সংসারের হাজার চাহিদা - হারায় প্রেম, ধিমায় কাম  

টাকা টাকা করে টাকার চিন্তায় - ঝরে শরীরের ঘাম 

মাঝ বয়স আসতে না আসতেই বেঁকে যায় শিরদাঁড়া 

তখন চিন্তায় আসে না, প্রেম করেছিল - হয়ে পাগলপারা

সংসারের চাপ, টাকার চিন্তা - শিরদাঁড়া নুয়ে পড়া

বার্ধক্য তার নাম - বয়সের আগেই শরীরে নামে জরা; 

 

সময়ের অলৌকিক জলযান ডুবে যাবার সময় হলে 

চিন্তা পরকালের - কি আছে সঞ্চয়? মাথায় হিসাব চলে 

চার আনা আট আনার খুচরো কিছু ভালো কাজ 

পেছন ফিরে খুঁজে না পেয়ে - মনে লজ্জার ভাঁজ;  


এত চাহিদার চাপে অপ্রতুল যোগান - ব্যর্থতার দায়ভার

পারি নি মেটাতে প্রিয়জনের চাহিদা - ব্যর্থতা শুধুই আমার  

এ বয়সেও চারিদিকে চাহিদা - টাকায় ভালোবাসা   

কখনো চাহিদার সমাপ্তি হবে - খুব বেশি কি আশা?  

ন্যুজ দেহ দেখেও করুণা হয় না - চারিপাশে প্রিয়জনের বায়না  

আমারই ব্যর্থতার জবাবদিহিতা চাইলে - কথা বলে না আয়না।


#কবিতা 



চাহিদার আয়না

 - মোঃ আহসানুল হক 


২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ 



  


 

সম্পর্ক - বাবা-মা, সন্তান

 সম্পর্ক - বাবা-মা, সন্তান 

 - মোঃ আহসানুল হক 



আয়নায় দাঁড়ালেই প্রতিচ্ছবি

 

মানুষটাকে কি আসলে আমরা চিনি?

 

কেউ দেখেন নর কেউ দেখে নারী

 

লিঙ্গ ভেদে ক্যামেরার সামনে যার যার প্রতিচ্ছবি;


আয়নার মানুষগুলো একজন আরেকজন থেকে কতই না আলাদা

 

একই মানুষের হরেক রকম ব্যবহার, নানা রকম চেহারা  

ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের মানুষের সাথে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ 

অথচ আয়নার মানুষটা কিন্তু এক জনই,

কখনো আয়নার মানুষটাকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি?

একেক জনের সাথে এক একরকম আচরণের কারণ; 


এক একদিন আয়নাকে এক একটা সম্পর্কের সাথে 

ভিন্ন ভিন্ন আচরণের কারণগুলো জিজ্ঞেস করেই দেখি না! 

হয়তো নিজেই উত্তর খুঁজে পাব, কিংবা পাব না 

উত্তর কি সহজে পাওয়া যায়? মনের ভেতর যে খুঁজে না!  


আজ সবচেয়ে কাছের একটা সম্পর্কের দিকে তাকাই - বাবা-মা  

এর থেকে আপন পৃথিবীতে আর কেউ হয় না 

বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের এক রকম চেহারা

 

সন্তানের সাথেও বাবা-মার একই রকম চেহারা 

তবে

 ছেলেবেলার সন্তান আর পূর্ণবয়স্ক সন্তান

 মানুষটা একই হলেও 

বাবা-মার সাথে সম্পর্কটা একই থাকে না, 

একই রকম থাকে না তাঁদের সাথে আচার আচরণ ব্যবহার

সর্বোপরি চিরকাল একই রকম থাকে যখন সন্তানের হয়ে যায় সংসার; 


কথাটা কি ঠিক বলেছি? 

আয়নার মানুষটাকে জিজ্ঞেস করেই দেখি না! 


এই যে মা দশ মাস পেটে রাখলো আর বাবা সন্তান মানুষ করার জন্য বিলিয়ে দিলো! 

সন্তান হিসেবে আমরা ধরেই নিয়েছি - এটাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব,  

ও হে! আয়নার মানুষকে একবার নিজের দায়িত্বের কথাটা জিজ্ঞেস করেই দেখ না!

অবশ্যই কোন উত্তর পাবে না, কিংবা মানুষ'টা উত্তর জানলেও দেবে না,  

বাবা-মা ভাই বোন সন্তান সন্ততি নিয়েই আমাদের সংসার   

তবুও আজকাল বৃদ্ধাশ্রমে ভরে গেছে চারিধার;


আয়না'র মানুষটা সব জানে 

শুধু বিবেক'কে লুকিয়ে রাখে পারদের ওপারে। 



#কবিতা 


সম্পর্ক - বাবা-মা, সন্তান 

 - মোঃ আহসানুল হক 



১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ 


বন্ধুত্ব থেকে কিছুটা বেশি

  বন্ধুত্ব থেকে কিছুটা বেশি

 - মোঃ আহসানুল হক 


সম্পর্কগুলো বড্ড অদ্ভুত

বিশেষ করে রক্তের সম্পর্ক ছাড়া অন্যান্য সম্পর্কগুলো; 


কিছু সম্পর্ক বন্ধুত্ব অথবা তার চেয়ে কিছুটা কম কিংবা বেশি

বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে খুব একটা কিছু বলার নেই

বন্ধুত্ব বন্ধুত্বের জায়গায় থাকে, প্রয়োজনে দেখা মেলে

আর প্রয়োজনে দেখা না মিললে সেটা বন্ধুত্ব ছিলোই না;


আর বন্ধুত্বের কিছু কম আর বেশি?

এই কিছুটা বেশির পরিমাপক কোন যন্ত্র আবিষ্কার হয় নি,

এই কিছুটা বেশি অনেকটাই বেশি হতে পারে

যেমন পেটের ক্ষমতার অতিরিক্ত বেশি খেয়ে খেললে একটা অস্বস্তি ভাব

আবার কম কিন্তু অনেকটাই কম হতে পারে

যেমন জিহ্বা ঐ স্বাদ দ্বিতীয়বার পায়'নি অথবা পেতেও চায় নি,

তার মানে ঐটা নিয়ে না ভাবলেও চলবে;


তবে ভাবনার বিষয়টা কি?

ঐ যে! বন্ধুত্ব থেকে কিছুটা বেশি!  

সম্পর্কের প্রথম প্রথম বন্ধুত্ব, তারপর মন কেমন কেমন করা 

সময় অসময়েই দেখতে ইচ্ছে করা

দেখা হলেই চোখ চেয়ে থাকা

চোখে চোখে কথা মিলে গেলেই ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে

প্রথমে হাত, তারপর গাল, তারপর ঠোঁট 

ঠোঁটে ঠোঁট একবার মিলে গেলেই বাকিটা সহজ

জড়াজড়ি হতে হতে বিছানা

তারপর কামের উন্মত্ততা,

সম্পর্কের হিসেবে একে 'প্রেম' বলে; 


তারপর?

সম্পর্কের পরিণতি - নতুন সম্পর্ক গড়ন কিংবা পুরনো সম্পর্কের ভাঙন 

সম্পর্কের থেকে এই একটু বেশি হয়ে গেলেই সম্পর্ক আর বন্ধুত্ব থাকে না

সেটা দাম্পত্যে গড়ায় কিংবা বিচ্ছেদে; 

 

আচ্ছা! তবে প্রেম কি কাম? অথবা কাম'ই প্রেম?

তুমি আমার হলে আর আমি তোমার হলেম! 



#কবিতা 


১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩



 বন্ধুত্ব থেকে কিছুটা বেশি

 - মোঃ আহসানুল হক 



লেন্সে লেন্সে ক্যামেরার চোখে

 লেন্সে লেন্সে ক্যামেরার চোখে

 - মোঃ আহসানুল হক 


একটা সময় ক্যামেরায় তাকাতাম, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে 

ক্যামেরার লেন্সে চারিপাশের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যেত

স্পষ্ট দেখা যেত মানুষের সুখ দুঃখ হাসি কান্না আর অনুভূতিগুলোর গভীরতা

দেখা যেত খুব কাছের রং গুলো দেখা যেত দূরের অস্পষ্ট হয়ে আসা আলো  

দেখা যেত কাছের অনুভূতিগুলো, দেখতে পেতাম দূরের অনুভবগুলোও  

স্বচ্ছ লেন্সের ঝকঝকে কাঁচের ভেতর দিয়ে ফুটে উঠতো প্রকৃতি 

একই সাথে ফুটে উঠতো মানুষের প্রতিবিম্বগুলোও 

শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দে;  


ওয়াইড এঙ্গেল লেন্সে ছবি তুললে যেমন মানুষের সুখ দুঃখের অনুভূতিগুলো দেখা যায়

তেমনি স্পষ্ট দেখা যায় মানুষের রাগ, দুঃখ, ঘৃণা আর রিপুগুলোকেও

একটা সময় মানুষের রিপুর কদর্যতা দেখে দেখে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম,

খুব কাছে থেকে দেখলে বোঝা যায় মানুষের বেশিরভাগ সুখগুলো মেকি

মানুষের দুঃখ-কষ্টগুলো ক্যামেরায় ঠিকমতো ধরা পড়ছে না 

শাটারের ক্লিক ক্লিকে স্পষ্ট হয়ে আসা রিপুগুলো ক্যামেরার মনিটরে নাচছে

চারিদিকের এত কদর্যতা আর ভালো লাগছিল না, 

একবার ভাবলাম ক্যামেরা বিসর্জন দেব,


তারপর কি একটা চিন্তা করে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল বাদ দিয়ে তুলে নিলাম জুম লেন্স

কাছের মানুষগুলোকে বাদ দিয়ে অনেক অনেক দূর থেকে প্রকৃতি তুলি 

পাখি তুলি এমনকি অনেক দূরের মানুষগুলোর অবয়বও তুলি

সে অবয়বে অনুভূতির তীব্রতা ফুটে ওঠে না, কখনো ফুটে উঠতে চাইলে ক্লিক আর করি না  

জুম লেন্সের একটা সুবিধা হল কাছের কোন কিছুই দেখা যায় না, দেখতে হয় অনেক দূরে

অত দূর থেকে পশুপাখি কিংবা শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দে

মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়তো ভেসে ওঠে 

কখনো হয়তো ছবিতে মানুষের ঘামের ফোঁটা ফুটে ওঠে তবে কষ্টগুলো অতটা অনুভব করা যায় না

মুখে হাসি হয়তো ছবিতে দেখা যায়, মনের খুশিগুলোকে অনুভব করা যায় না

হঠাৎ হঠাৎ হয়তো শাটারের ক্লিকে ভেসে ওঠে একটি দুটি হিংস্র চেহারা 

তবে অতদূর থেকে অনুভব করা যায় না রিপুর কদর্যতা

দূর থেকে জুম লেন্সে শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দে তোলা ছবি - অনেকটাই আমার মত অনুভূতিহীন;


বয়সের সাথে সাথে একটা সময় ফিকে হয়ে আসতে লাগলো স্মৃতিগুলো

কোন একটা ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুকে হঠাৎ হঠাৎই মনে পড়ে যায় 

তার আশেপাশের ঘটনাগুলো আর মনে করতে পারিনা, 

একদিন চিন্তা করলাম এই যে ফিকে হয়ে আসা স্মৃতি! একে ক্যামেরার লেন্সে দেখা যাবে কি? 

কিছু স্পষ্ট আবার কিছু অস্পষ্ট ছবি দেখতে কেমন লাগবে?

কি যেন ভেবে একটা ম্যাক্রো লেন্স কিনলাম, 

ম্যাক্রো লেন্সের মজা কি জানো?

এত পাওয়ার-ফুল লেন্সে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকেই শাটারের ক্লিকে ধরতে পারা যায়

যে নির্দিষ্ট বিন্দুটাকে দেখতে চাও ঠিকমতো ফোকাস করতে পারলে 

সেটাই ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে আর আশেপাশের সবকিছু ঝাপসা 

ঠিক যেন আমার হঠাৎ করে আমার মনে ভেতর চলে আসা স্মৃতিগুলোর মতোই

হঠাৎ হঠাৎ একটি দুটি নির্দিষ্ট স্মৃতি, তারপর মুহূর্তেই আশেপাশের ঝাপসা ঘটনাবলি 

মনের ভেতর স্মৃতির লুকোচুরি খেলা শুরুই হলেই ম্যাক্রো লেন্স হাতে বের হয়ে যাই

ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু, মশা মাছি পোকা মাকড় তুলে নিয়ে আসি ক্যামেরার লেন্সে 

কখনো আরও গভীরে - মশা কিংবা মাছির চোখের ভেতরটাও দেখার চেষ্টা করি 

যেখানটাতে ফোকাস হয় শুধু সেটার ছবিই ওঠে, আর বাকি সব ঝাপসা

ঠিক যেন আমার স্মৃতির মত। 


 

#কবিতা 


১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ 


লেন্সে লেন্সে ক্যামেরার চোখে

 - মোঃ আহসানুল হক 

দাদা বাড়ির গল্প - গল্প

 দাদা বাড়ির গল্প 

 - মোঃ আহসানুল হক 


কিরে নাতিরা ফুস পানি খাবি?


 - রিপন বেক্কলডায় জিগাইলো ফুস ফানি কি দাদা?


দাদায় কইলো পানি খাইয়া ফুস কইরা পাদ দিবি, ওইডারে কয় ফুস পানি? 

 - রিপন কয় যাও দাদা, তুমি খালি খাচ্চর খাচ্চর কথা কও, আমি ফুস পানি খামু না।

 

আমি রিপইন্নার মুখ চাইপ্পা ধইরা দাদারে কইলাম, দাদা  ফুস পানি খামু।

 

 - রিপইন্না ঝামটা দিয়ে মুখ থাইক্কা হাত সরায় দিয়ে কইল, আমি খামু না তোরা খা।

 

আমি কইলাম খাইস না বেক্কল, চাইয়া চাইয়া দেহিস। 


দাদায় হাসতে হাসতে আমারে কইলো, তোর মাথায় বুদ্ধি বেশি।

 

(আমি দাদারে কইলাম না যে ফুসপানি চিনি কেমনে। বকুল চাচায় কইয়া দিছে তোর দাদায় ফুসপানি খাওয়াইতে চাইলে না করিস না। ওইটা হইল গিয়া সেভেন আপ নাইলে পেপসি।)


আমগো তিনজনকে তিনটা ফুসপানি নি দিতেই আমি রিপনেরটা লইয়া দাদারে কইলাম, দাদা হেয় ফুস পানি খায় না; হেরটা আমি খামু। 

কইয়াই বোতল লইয়া ক্ষেতের দিকে দিলাম দৌড়। রিপন বেকুবটা আমার পিছে পিছে দৌড়াইতে লাগলো আর কইতে লাগলো আমারে ফুস পানি দে, আমারে ফুস পানি দে।

আমি হের থন জোড়ে দৌড়াইতে দৌড়াইতে কইতে লাগলাম তুই ফুস কইরা পাদতে থাক, পাদতে থাক। 


যেই গল্পডা বলছি ওটা এই ১৯৭৬/৭৭ এর দিকের গল্প। আমার দাদা বড়ি আশুলিয়া। তোমরা আজকের যে আশুলিয়া দেখছ আর তখনকার আশুলিয়ার কোন সামঞ্জস্য নেই। আশুলিয়া তখন মহাখালি থেকে প্রায় পৌনে একদিনের জার্নি। ঢাকা থেকে সেখানে যাওয়ার তখন মাত্র দুটো রাস্তা। সহজ রাস্তাটা হলো মহাখালি থেকে বাসে গাবতলি। তারপর আবার গাবতলি থেকে আরিচার বাসে সাভার ডেয়ারি ফ্যাক্টরি নেমে সেখান থেকে হয় হেঁটে কিংবা যদি বৃষ্টির দিন হতো তবে গরুর গাড়ি। আরেকটা রাস্তা ছিলো মহাখালি থেকে জয়দেবপুরের বাসে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত। টঙ্গী ব্রিজের নিচ থেকে তখন দাঁড় টানা পালের নৌকা চলতো। তোমরা এখন যে উত্তরা থেকে আশুলিয়া সড়ক দেখছ! এগুলো কিছুই ছিলো না। ছিলো থৈ থৈ অথৈ পানি। বর্ষাকালে তুরাগ নদীতে তখন উথাল পাথাল ঢেউ। বর্ষাকালে আমরা নদী পথে যেতে ভয় পেতাম। শীতকালে ঢেউ কিছু কম থাকতো। টঙ্গী রেল ব্রিজের নিচে থেকে নৌকা নিতাম একবারে আশুলিয়া বাজারে নিয়ে নামাতো। তখন এ পথটুকু দাঁড়বাওয়া নৌকায় যেতে প্রায় ঘন্টা চারেক লেগে যেত। আমি সড়ক পথে সাভার ঘুরে যাওয়া থেকে নদী পথে নৌকায় যেতে বেশি পছন্দ করতাম। নদীর মাঝখানে যখন প্রবল ঢেউ হতো সবাই চিল্লাচিল্লি লাগিয়ে দিলেও আমি সেই ঢেউ এর দোলা প্রচণ্ড রকম উপভোগ করতাম। নদীর মাঝামাঝি জায়গায় একটা হিজল গাছ ছিলো, নদীর মাঝে কোত্থেকে হিজল গাছ এলো তা আমার অল্প বুদ্ধিতে ধরতো না। পরে জেনেছিলাম ঐ অংশটুকু একদম শীতের সময় শুকিয়ে চর পড়ে যেতো আর চরের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতো একটি মাত্র হিজল গাছ। নৌকায় যাওয়ার সময় হিজল গাছের মাথায় নানা রকম পাখি বসে থাকতে দেখতাম। 


(আশুলিয়ার বাকি গল্প অন্য কোন একটা লেখায় বলব) 


 - (চলবে) 

মোবাইল জীবন

 মোবাইল জীবন 

 - মোঃ আহসানুল হক 


আজকাল মোবাইল ফোন আমাদের জীবনেরই অংশ হয়ে গেছে, 

ভোর বেলায় ঘুম ভাঙে মোবাইল এলার্মে 

 - ক'জনার বাসায় এখন এলার্ম ঘড়ি আছে?  

আগে ঘুম থেকে উঠেই ঘড়ি দেখতাম 

 - অফিসের কি দেরি হয়ে গেছে? 

 - দুপুরে লাঞ্চের সময় কাটতো ঘড়ি ধরে

 - অফিস থেকে বের হওয়ার আগে ঘন ঘন চোখ চলে যেত ঘড়িতে,  

আজকাল সময় দেখি মোবাইল স্ক্রিনে 

 - ঘড়ির দিন প্রায় উঠেই গেছে, 

আগে প্রত্যেকের হাতে দামি কিংবা কম দামি একটা ঘড়ি শোভা পেতই 

 - আজকাল বেশিরভাগ মানুষের হাত খালিই থাকে 

 - ঘড়ির ক্বচিৎ কদাচিৎ ব্যবহার আজকাল ফ্যাশন করে, তাও ব্রান্ড প্রদর্শনে; 


আগে আমাদের অবসর সময়গুলো কাটতো 

 - খেলাধুলোয় 

 - ফ্যামিলিকে সময় দেয়ায়

 - আত্মীয়-স্বজনের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সাক্ষাৎকারে 

 - বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডায় বসলে তো উঠানোই যেতো না,  

 

আজকাল সময় কাটে মোবাইল ফোনে, ভার্চুয়ালে

 - খেলাধুলো বলতে ঐ মোবাইল গেম, 

 - ফ্যামিলির সবাই ব্যস্ত যার যার ভার্চুয়াল গ্রুপে

   আমরা মাঝেমাঝে এখনো একসাথে খেতে বসি, যার যার মোবাইল হাতে

   খেতে বসে কথা বলার সময় কোথায়? মোবাইলটা টিং করে ওঠে ম্যাসেঞ্জারে,    

 - আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় যাবার সময় কোথায়? 

   হ্যাঁ, যোগাযোগ এখনো আছে, ফেসবুকে,  

 - বন্ধু-বান্ধবের সাথে এখনো চুটিয়ে আড্ডা হয় 

   শুধুমাত্র ভার্চুয়াল গ্রুপে, দেখা সাক্ষাৎ একবারে যে না হয় তাও কিন্তু না! 

   ভার্চুয়ালে নোটিস দিয়ে তিন বা ছ'মাসে একবার ঘটা করে কোন এক রেস্টুরেন্টে,   


 - আগে রাতে ঘুমাতে যেতাম বাতি নিভিয়ে, শুতে না শুতেই ঘুম, একাকী থাকতে  

   কিংবা কৈশোরে ভাইদের সাথে গল্প করতে করতে

   যৌবনে স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ আলাপে,  


 - আজকাল রাতে ঘুমাতে যাই মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখে 

   অর্ধেক রাত কেটে যায় ম্যাসেঞ্জার চ্যাটে কিংবা ফেসবুকের সুন্দরীদের দেখতে দেখতে 

   বাকি অর্ধেক রাত ভার্চুয়াল পরীদের স্বপ্নে, স্ত্রী কিন্তু ঠিক পাশেই - গভীর ঘুমে 

   আজকাল স্ত্রী বেচারিরও সময়ও কাটে ভার্চুয়ালে, তাদের আলাদা গ্রুপে 

   তবে আমার মত অত রাত জাগতে পারে না, তাকে যে উঠতে হয় সেই কাকভোরে 

   আজকাল আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সেই আগের মত অন্তরঙ্গ সময় কোথায়? 

   তবুও হয় - পাক্ষিক কিংবা মাসিক, কেবলমাত্র শরীরের প্রয়োজনে, 


আগে প্রতিবেলার খাবার টেবিলে স্ত্রী সন্তানদের সাথে সময় কাটতো হাসি, গল্প, আড্ডায় 

 - আজকাল সন্তানদেরই বা সময় কোথায়? 

   তারাও বড় হয়েছে, লায়েক হয়েছে, তাদেরও সময় কাটে মোবাইলে কিংবা ল্যাপটপে

   আজকাল সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে একবেলা একসাথে সবাই মিলে বসতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে হয়

   ইদানীং নিয়ম করে দিয়েছি, একসাথে খেতে বসলে মোবাইলগুলো থাকবে যার যার রুমে

   এতে সবারই আপত্তি থাকলেও, ওরা মেনে নিয়েছে - সপ্তাহে একবেলাই তো! 

কি অদ্ভুত, তাই না? 


আজকাল মোবাইল কেড়ে নিয়েছে 

 - আমাদের ব্যক্তিগত সময়গুলো 

 - কেড়ে নিয়েছে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত সময়গুলো 

 - কেড়ে নিয়েছে সন্তানদের সাথে হাসি গল্পে কাটানো সময়গুলো 

 - কেড়ে নিয়েছে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব 

 - এমন কি কেড়ে নিয়েছে সম্পর্কগুলো;


আজ সম্পর্ক হয় ভার্চুয়ালে 

 - নিত্য নতুন সম্পর্ক গড়ে - প্রতিদিনই ভাঙে

 - আজ নেই কোন সম্পর্ক গড়ার আনন্দ - নেই ভাঙার কষ্ট 

 

আজ আমাদের ব্যক্তিগত জীবন খেয়ে ফেলেছে মোবাইল জীবন   

খেয়ে ফেলেছে সম্পর্ক

আজ আমরা হাসি, কাঁদি কিংবা অনুভূতির ব্যবচ্ছেদ করি ভার্চুয়ালে 

আজ আমরা জীবন কাটাই মোবাইল ফোনে। 


#কবিতা 


মোবাইল জীবন 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৫ মে, ২০২৩ 



ভাতের প্রকারভেদ

 ভাতের প্রকারভেদ 

 - মোঃ আহসানুল হক 


মানুষ তো মানুষই, তবুও কত রকমই তার শ্রেণিভেদ

গরিব, মধ্যবিত্ত আর ধনী 

 

আমি টাকার মাপকাঠিতে শ্রেণিভেদের কথা বলছি,

গরিব তো গরিবই, 

মধ্যবিত্ত আবার তিন প্রকার

 

নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত আর উচ্চ মধ্যবিত্ত 

উচ্চবিত্ত কিংবা ধনী, এরাও  আবার দুই প্রকার

 

ধনী আর অতি ধনী;  

কি অদ্ভুত! তাই না?


সকল শ্রেণিভেদের মানুষের মধ্যে একটা ব্যাপার কিন্তু কমন

 

আর তা হচ্ছে ক্ষুধা

সকল শ্রেণীর মানুষেরই খেতে হয়

 

যার ভাতের ক্ষুধা নাই তাকে কি মানুষ বলা যায়?


গরিবদের ভাত হলেই চলে

 

হোক সে পানিভাত কিংবা লবণ ছিটানো গরম ভাত

সাথে পেঁয়াজ কাঁচামরিচ হলে, তাই ডলে 

কোনদিন হয়তো একটা ভর্তা কিংবা একটা নিরামিষ  

সেদিন খাওয়াটা হয়ে যায় বেশি, 

 

মাসে একবার ডিমের সালুন

, ছয় মাস একবার তেলাপিয়া মাছ 

বছরে একদিন মাংস

, এরা এতেই খুশি;


নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভাতের সাথে একটা ভর্তা, একটা নিরামিষ  

সপ্তাহান্তে তেলাপিয়া মাছ কিংবা ব্রয়লার মুরগি 


মাসে একবার হয় গরু নয়তো খাসি, 

সাধারণ মধ্যবিত্তদের ভর্তা আর নিরামিষের সাথে 

অতিরিক্ত একটা তরকারিতে তেলাপিয়া মাছ 

কিংবা ব্রয়লার মুরগিতে আলু 

পাক্ষিক অথবা মাসিক গরু কিংবা খাসির সাথে পোলাও;


 

উচ্চ মধ্যবিত্তের খাবার মোটামুটি সাধারণ মধ্যবিত্তের মতোই 

হয়তো গরু খাসির সাপ্লাই সাপ্তাহিক

  

মুরগির ক্ষেত্রে হয় তো ব্রয়লারের জায়গায় দেশি 

আর বেলায় বেলায় তরকারির সংখ্যাটা হয়তো আরেকটু বেশি;


উচ্চবিত্তের টেবিলে ভাতের কয়েক প্রকারভেদ

 

কেউ সাদা ভাত, কেউ ফ্রাইড রাইস কিংবা পোলাও

সাদা ভাতও কারো বা ঢেঁকি ছাটা লাল চালের কারো বা পোলাও চালের 


সাথে চার পাঁচ ছয় প্রকার তরকারি

 আর মাছ মাংসের বিভিন্ন প্রকারভেদ, বাসায় দৈনন্দিন

 

সাধারণ উচ্চবিত্তের সপ্তাহান্তে ঘরের খাবার মুখে রুচে না

শহরের কোন এক

 নামীদামী রেস্টুরেন্ট

কিংবা মাসে একবার ফাইভ স্টার,

অতি ধনীদের বাসাতেই ফাইভ স্টার বাবুর্চি 

তবুও বেশিরভাগ দিনই তাদের বাইরে লাঞ্চের পার্টি 

ডিনারের পার্টিতে সাথে রঙিন পানি

ওদের কথা নাই বা বলি 

অত উঁচু ঘরের খবর আমিই কতটুকু জানি!  


সকল শ্রেণীর মানুষই ক্ষুধা মেটায় ভাতে,

 

গরীবের পেট তিন-বেলা ভাত চায় পাতে 

মধ্যবিত্তের সকালে রুটি আর ভালো হয় দুবেলা সাদা ভাত হলে 

 

ধনীদের ব্রেকফাস্ট কাটে ঘুমিয়ে, দুপুর আর রাতে বিভিন্ন পার্টি চলে 

টেবিল ভরা খাবার থাকলেও অতি ধনীদের পেটে শুধুমাত্র জাউভাত চলে 

সাথে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস যদিও

 তাদের খাবারের নেই কোন অভাব 

তবু খেতে হয় মেপে,

 অতিরিক্ত টাকার চাপ সহ্য হয় না পেটে;

 

কি আজব! তাই না?


#কবিতা 


ভাতের প্রকারভেদ  

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৫ মে, ২০২৩ 


মনুষ্যত্বের খোঁজে

 মনুষ্যত্বের খোঁজে 

 - মোঃ আহসানুল হক 


একটা সময় বেশ আঁকাআকি করতাম, কাগজে-কলমে

 

আরে না না, কোন গ্যালারিতে চিত্রাঙ্কন শোভা পায়নি

 

কাগজে আঁকা মানে ওই টুকটাক লিখালিখি আর কি!

 

আরে নাহ! আমার কোনও লেখা কোথাও ছাপা হয় নি 

আমি মনের আনন্দে মন-খাতায় আঁকি 

মনের আনন্দে কাগজে কলমে লিখি; 


কৈশোরে যখন প্রেম করতাম! তখন প্রেম আঁকতাম

 

শরীরে যখন যৌবন, তখন কাম আঁকতাম

 

মন যখন ভালোবাসায় টইটুম্বুর, তখন কবিতা আঁকতাম

 

মন যখন ভেঙে যেত, তখন বিরহ আঁকতাম

 

যখন নদীর কাছে যেতাম, নদীর গভীরতার কথা লিখতাম

 

পাহাড়ে গেলে, পাহাড়ের উচ্চতা

  

জঙ্গলে গেলে, জঙ্গলের বিশালতা 

 

সমুদ্রে গেলে, সমুদ্রের ঢেউ

 

প্রকৃতির কাছে গেলেই, আমি নিজেকে হারিয়ে যাওয়ার কথা লিখতাম

নদী পাহাড় সাগর প্রকৃতি কখনো ধোঁকা দেয় নি

 

ধোঁকা দিয়েছে মানুষ

 

হ্যাঁ, একসময় মানুষকে বিশ্বাস করতাম, মানুষের কথা লিখতাম

 

সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছিল সেটাই - মানুষকে বিশ্বাস করা

 

কথায় বলে সাপ ছোবল মারে, মানুষের ছোবল খেয়েছ কখনো

আমি খেয়েছি পদে পদে, মানুষকে বিশ্বাস করে

 

বিশ্বাসভঙ্গের কথাগুলো আর লিখি নি, লিখতে ইচ্ছে করেনি; 


আজকাল প্রকৃতি দেখি, কখনো লিখি কখনো শুধুই উপভোগ করি

আজকাল পশুপাখি দেখি, কখনো লিখি কখনো শুধুই চোখচেয়ে থাকি  

আজকাল সম্পর্ক দেখি, সম্পর্কের নানা রূপ আঁকার চেষ্টা করি 

আজকাল মানুষও দেখি, তবে মনুষ্যত্ব দেখি না, তাই কিছু লিখি না; 


বনে জঙ্গলে পশু দেখতে যাই, পশুরা মানুষের সামনে পশুত্ব দেখায় না

অথচ কি সহজেই না মানুষ প্রাণীটা সবার সম্মুখে পশুত্ব তুলে ধরে, 

ইদানীং পাখি দেখতে দেখতে আকাশে ডানা মেলে দিতে ইচ্ছে করে

আমার যদি একজোড়া ডানা থাকতো! আকাশ থেকে মানুষ খুঁজতাম,  

মানুষের জঙ্গলে এখনো কোথাও না কোথাও মনুষ্যত্ব নিশ্চয়ই আছে

নাকি মনুষ্যত্ব কেবল ডিকশনারিতেই! কাগজের কোন এক ভাঁজে। 


#কবিতা 


মনুষ্যত্বের খোঁজে 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১১ মে, ২০২৩ 

ভালোবাসা শরীর নয়

 ভালোবাসা শরীর নয় 

 - মোঃ আহসানুল হক 


এই যে নারী পুরুষের প্রেম!

 

এই যে চারিদিক ভালোবাসার ছড়াছড়ি! 

এই যে যৌবন আসতে না আসতে 

 - বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মজে যাওয়া!


প্রেমের নৌকা ভাসিয়ে মন কোকিলের কুহু কুহু ডাক

 

প্রেমের ভাঙ্গনে রোনাজারি, হা হুতাশ 

 

আর বিচ্ছেদের কবিতায় কলমে কাগজ ভরি! 

কেন?

 


নারী আর পুরুষের পরস্পরের প্রতি টান

 

সে তো আছেই, 

থাকবেই

তারপর?


টানটা কি শুধুই মনে মনে?

তবে শরীরে শরীর কেন টানে? 


শুনেছি ভালোবাসা নাকি পবিত্র

 

প্রেম মধুর

 

ওগুলো তো মনের ব্যাপার - মনে, মনের আকর্ষণ

 

শুধুই কি তাই?

  


তবে ওই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার বাসনা?


চোখে চোখ থেকে ঠোঁটে ঠোঁট নামা!

 

হাতে হাতে স্পর্শ থেকে জড়াজড়ি!

 

শরীর শরীরকে টানে বিছানা?


 


তাহলে ভালোবাসা কি শরীর?

 

বড্ড ভালগার হয়ে গেল না?


আচ্ছা! প্রেম কি তবে শরীর? 

উঁহু! ওটাও তো ঠিক মানতে পারি না; 


ওই যে বুড়া বুড়ি!

 ওদের'কে দেখো  

 - একজন না খেলে আরেকজন অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে!

 

 - একজনের ঘুম না এলে আরেকজন মাথায় হাত বুলোতে থাকে! 

 - একজনের অসুখে আরেকজন সারারাত জাগে! 

 - একজন ব্যথা পেলে আরেকজন কাঁদে! 

ওদের তো যৌবন নেই, নেই শারীরিক চাহিদা

 

তবুও সারারাত জড়াজড়ি শুয়ে থাকে পরস্পরকে ছুঁয়ে, 

ওদের দেখলেই বোঝা যায় একজনের জন্য আরেকজনের কি অপার টান!

ওদের দেখলেই মনে হয়, হ্যাঁ! এদের জন্যই রচিত সব ভালোবাসার গান;  


তাহলে তো ভালোবাসা শরীর নয়!

 

তবে কি জীবনের এক এক অবস্থার ভালোবাসা এক এক রকম হয়?


#কবিতা 


ভালোবাসা শরীর নয় 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৯ মে, ২০২৩ 

কাপড় চোপড় - #রম্য

 কাপড় চোপড় 

 - মোঃ আহসানুল হক 


এর আগের দিন লিখেছিলাম খাওয়ার ব্যাপারে। এবার আসি পড়ায়, আরে না লেখাপড়ায় না; কাপড়চোপড় পড়ায়। 


আমার গিন্নি কাপড়চোপড়ে বড্ড ফিটফাট, স্বভাবতই উনি চাইবেন আমিও যাতে উনার মতই ফিটফাট হয়ে চলাফেরা করি। ফিটফাট যে কি করে থাকতে হয় তা কখনো আমার বোধবুদ্ধিতেই আসে নাই। কি শীতে কি গরমে বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে হলে আমার ওপরের অংশে একটুকরা গামছা আর নীচের অংশে ঢোলাঢালা পাতলা একটা পায়জামা কাম প্যান্ট যাতে অনেকগুলো পকেট, আমার বউ এই প্যান্টের নাম দিয়েছে - 'গোপালভার প্যান্ট'। তবে গরমটা আমার আর দশ জনের থেকে একটু বেশিই - আরে বাবা! আমার স্বাস্থ্য টার দিকে আপনার একটু তাকাবেন তো! মানুষের চামড়ার খোলে একটা আস্ত মহিষ ঢুকিয়ে দিলে কি অবস্থা হতে পারে আপনারা চিন্তাই করতে পারবেন না, আমার মত ভুক্তভোগী ছাড়া। আর যদি তা সীলমাছের মত চর্বিযুক্ত মহিষ হয় তবে তো কথাই নেই। আমি শুধু বুঝি আমার গরম লাগে - উথাল পাথাল গরম। মানুষ হওয়ার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হলো বাড়ির বাইরে গেলে কাপড় নামক গায়ে কিছু একটা চাপিয়ে যেতে হয়, আমার মাঝে মধ্যে  বনের পশুপাখিকে বড্ড হিংসে হয়; ওরা কি সুন্দর খালি গায়ে প্রকৃতি প্রদত্ত বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়! আচ্ছা, চিন্তা করুন তো একটা মহিষ শার্ট পড়ে বনে হাঁটছে কিংবা একটা বানর লুঙ্গি পড়ে গাছের ওপর লাফাচ্ছে অথবা একটা গণ্ডার প্যান্ট পড়ে ঘোঁত ঘোঁত করছে, একটা পাখি'কে ডানার ওপর গেঞ্জি পড়িয়ে দিলে সে উড়তে পারবে? মানুষ'কেই কেন ঐসব বাহুল্য গায়ে চাপিয়ে রাখতে হয় তা কে জানে? বাইরে তাও ভদ্রতা করে গায়ে গামছার মত কিছু একটা চাপাই, ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আমার গায়ের গামছাটা ঢিলা দিয়ে খুলে ফেলে দেই, কোনমতে কোমরে একটা লুঙ্গি জড়িয়ে প্যান্টটাকে মেঝেতে ফেলে রেখেই ঠাণ্ডা মেঝেতে চার হাত পা ছড়িয়ে ফ্যানের তলায় চিত হয়ে পেট ভাসিয়ে শুয়ে থাকি। আহ! খালি গায়ে মেঝেতে শুয়ে থাকার চেয়ে আরামদায়ক আর কিছু হতে পারে? উপায় থাকলে লুঙ্গিটা না পড়তে পারলেই ভালো হতো - কি আর করব, বাসায় বাচ্চা কাচ্চা আছে। 


আমার এহেন পশু-কলাপে আমার গিন্নির চরম আপত্তি। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কথা বলে বুঝিয়ে বুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরবর্তীতে মৃদু ভর্ৎসনা করা থেকে শুরু করে অকথ্য বকাবকির পরে আমাকে মানুষ করতে না পেরে এইতো বছর পাঁচেক ধরে ক্লান্ত হয়ে হয়ে ক্ষান্ত দিয়েছেন। তবে সে বাসার অংশটুকুতেই, বাইরে কোথাও যেতে গেলে আমি আমার ইচ্ছেয় কাপড় চোপড় পড়লেই উনি রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। উনার সাথে নিকট আত্মীয় স্বজন কিংবা কোন বন্ধু বান্ধবের (দুর্ভাগ্য বশত আমাদের বেশিরভাগই কমন বন্ধু) বাসায় যেতে গেলে তাও আমার মন খুশি মত গামছা টাইপের ক্যাজুয়াল কিছু একটা পড়তে পারি, কিন্তু কোন অনুষ্ঠানে যেমন বিয়ে শাদী অথবা অন্যান্য পার্টি সেন্টারের দাওয়াতে যেতে গেলেই বিপত্তি বাঁধে। উনি চান আমি আমাকে ওনার মত কাপড়চোপড়ে ফিটফাট করিয়ে আমাকে দাওয়াতে নিয়ে যেতে। সেখানেই বাঁধে বিপত্তি আর বেশিরভাগ দাওয়াতের এই বিপত্তি থেকে শুরু হয় কথা কাটাকাটি তার থেকে গলায় উচ্চস্বর, কিছুক্ষণের মধ্যে আমার রণে ভঙ্গ দেয়া এবং আমার রণাঙ্গন থেকে পলায়ন; ফলশ্রুতিতে ওনার একাই দাওয়াত এটেন্ট করা। 


একদিন হয়েছে কি! আমাদের কোন এক আত্মীয়ের (প্লাস আমার মেয়ের বান্ধবী) বিয়েতে আমাদের দাওয়াত। তো আমার মেয়ে আমাকে শাসিয়ে গেলো যে আজ যেন কোন ভাবেই আমি তার মায়ের কথার অবাধ্য না হই, যেন ভালোমানুষের মত মা যেটা বলেন সেটাই পরিধান করে দাওয়াতে হাজিরা দেই।  আমি ভালোমানুষের মত সন্ধ্যায় রেডি হতে গেলাম। সে কিছু বলার আগেই আমি আমার চিরাচরিত নতুন বানানো একটা গামছার ফতুয়ার সাথে আমার গোপালভার প্যান্ট পড়ে রেডি হয়ে ড্রইং রুমে বসে রইলাম। উনি মেয়ের বেডরুমে (মেকআপ করতে হলে উনি মেয়ের রুম ব্যবহার করেন) রেডি হচ্ছেন। একটু পর মেকআপ এর মাঝে কি একটা কাজে বের হয়ে আমাকে দেখে বললেন রেডি হয়ে নেও। আমি বললাম, নতুন ফতুয়া পড়ে রেডি হয়েছি তো! উনি চোখ গরম করে বললেন, ভালো একটা পাঞ্জাবি পড়। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফতুয়া পাল্টে নতুন বানানো গামছার একটা পাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে বেডরুমে বসে টিভি দেখতে লাগলাম। 


একটু পর উনি শাড়ি পড়ে মেকআপ সেরে আমাদের বেডরুমে ঢুকলেন। ঢুকেই চোখ গরম করে বললেন আবার গামছা পড়েছ? আমি বললাম, তুমি না পাঞ্জাবি পড়তে বললো? আমি তোমার কথা শুনে পাঞ্জাবিই তো পড়লাম। উনি গলা উঁচিয়ে বললেন গামছা পড়তে বলি নাই, তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টাও। আমি করুণ স্বরে বললাম, গামছা ছাড়া আমার আর কোন পাঞ্জাবি নাই। উনি ধমকে উঠে বললেন এইবার ঈদে আড়ং থেকে যে নতুন পাঞ্জাবিটা কিনে দিয়েছি ঐটা পড়। আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম, ঐটা তো ঈদের দিন পড়েছি। উনি আরেকধাপ গলা চড়িয়ে বললেন, ঈদে পড়েছ বলে কি পুরানো হয়ে গেছে? যাও ঐটা পড়ে নাও। আমি আরও মিউমিউ করে বললাম ঐটা একজনকে গিফট করে দিয়েছি। এবার চিৎকার করে উঠলেন - নতুন পাঞ্জাবি গিফট করে দিয়েছ মানে? আমি গলা আরেকধাপ নামিয়ে বললাম, এই, ইয়ে, মানে...... ঈদের দিন পড়েছি তো! একবার পড়া হলেই তো হলো, তাছাড়া আমি ঐসব দামি পাঞ্জাবি পড়ি না, এক বন্ধুর পছন্দ হয়েছিলো তাই ওটা তাকে দিয়ে দিয়েছি। কতক্ষণ চোখ দিয়ে ড্রাগন এর মত আগুন বের করলেন, তারপর বললেন অন্য ভালো কিছু একটা পড়। 


তারপর একের পর এক আমি মডেলিং করেই যাচ্ছি, উনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মেকআপ ফাইনাল করছেন আর আমি আলমারি খুলে একটির পর একটি কাপড় পড়ে তার সামনে দিয়ে ঘুরে আসছি, চোখ ইশারা করে পছন্দ হচ্ছে না বলছেন আর আমি নতুন আরেকটি পড়ে তাকে দেখাচ্ছি (যদিও আমার মেজাজ তখন তালগাছ বাওয়া শুরু করেছে তবে নিচ থেকে আইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়ে টেনে রেখেছি, যেহেতু মেয়ে শাসিয়ে গিয়েছে আজ ঝামেলা করা যাবে না।) 


আমার যেমন খুশি তেমন সাজো চলতে লাগলো, উনার কোনটাই পছন্দ হচ্ছে না। উনি আজ বেশ সুন্দর করে সেজেছেন, সাদা ফুলহাতা ব্লাউজ দিয়ে আমার পছন্দের লাল টকটকে সিল্কের একটা শাড়ি পড়েছেন। খোপায় আবার জুঁই ফুলের মালাও গেঁথে মুখে ময়দার পরতে ফাইনাল টাচ দিচ্ছিলেন।  আমি ওনার সাথে ম্যাচিং করার জন্য এবার ছেলের একটা লাল গেঞ্জি পড়ে ওনার সামনে আসি উনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন উঁহু, তোমার বয়সে এটা মানাচ্ছে না। আমি এবার গলা চড়িয়ে বললাম তাইলে কি পরবো তুমিই বলো। সে ঝাঁজের স্বরে বলল, দেখছ না আমি কি সুন্দর ম্যাচিং করে শাড়ি ব্লাউজ পড়েছি! তুমি আমার সাথে মিলিয়ে কিছু পড়তে পারছ না? এইটাও আমাকে বলে দিতে হবে?

 

এবার সত্যিই আমার রাগ উঠে গেলো, আমি রাগের চোটে সাদা ফুলহাতা গেঞ্জির উপর লাল রঙের তার একটা শাড়ি পেঁচিয়ে ঘরে আসলাম, এসে বললাম আমার সাদা ব্লাউজ নেই তাই গেঞ্জি পড়েছি আর তোমার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে তোমার ড্রয়ার থেকে তোমারই লাল আরেকটা জর্জেট পড়েছি, এবার দেখো একদম খাপের খাপ মিলে গেছে। সে আমার দিকে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়েছিল, তারপর হাতে থাকা চুলের ব্রাশটা ছুড়ে মারলো; ঠকাস করে মাথায় লেগে রক্তারক্তি কান্ড। আমি দৌড়ে পালাতে গিয়ে শাড়িতে পেঁচিয়ে পড়ে গেলাম। ধ্যাত! শাড়ি আবার মানুষে পড়ে? লম্বা এ কাপড়টা এত প্যাঁচ প্যাঁচিয়ে এরা চলে কিভাবে? 


মেয়ের কথা আর রাখা হলো না, আমার সেদিনকারও বেড়াতে যাওয়া মাথায় উঠলো। এটা নতুন কিছু নয়, আমাদের সংসদে প্রায়শয়ই এরকম হয়। সে রাগ করে একা একাই অনুষ্ঠানে চলে গেল, আর আমি খালি গায়ে লুঙ্গি পড়ে চিত হয়ে ফ্যান ছেড়ে ভুড়ি ভাসিয়ে মনের আনন্দে টিভির চ্যানেল ঘুরাতে থাকি।



#রম্য 


কাপড় চোপড় 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৮ মে, ২০২৩ 

কি খাব? কিভাবে খাব? - #রম্য

 কি খাব? কিভাবে খাব? 

 - মোঃ আহসানুল হক 


আমরা পুরুষরা যাই করি না কেন কিছুই বউদের মনের মত হয় না। সে খাওয়াতেই হোক কিংবা পরাতে অথবা অন্য কোন কাজে। 


আজ না হয় শুধু খাওয়ার গল্পই বলি। 

আমার বউ খাওয়ার ব্যাপারে খুবই গোছানো। সে বাইরে গেলে খায় ছুরি আর কাটা চামচ দিয়ে, আমি খাই কবজি ডুবিয়ে। বাইরে কোন দাওয়াতে গেলেই তার ব্যাগের ভেতর সব সময় এক সেট কাটা চামচ ও ছুরি থাকে, আরে বাবা আমার চোখ গেলে দেওয়ার জন্য না; যদি দাওয়াতে যাদের ওখানে গেলো ওরা যদি ছুরি বা কাটা চামচ না দেয়! সে কোন রিস্ক নেয় না, তৎক্ষণাৎ ব্যাগ থেকে ছুড়ি আর কাঁটাচামচ বের করে বসে যায় খেতে। আর আমি? আরে খাওয়া সামনে পেলে আমার হাত ধোয়ার কথা মনেই থাকে না! খাওয়ার পরে তো হাত তো ধোবই তাহলে খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার দরকার'টা কি? হাত ধুতে হয়, হাতে ময়লা থাকে ইতং বিতং যত্তসব আজাইরা যুক্তি, এগুলো আমার মাথায় ধরে না, আর এটা নিয়ে তার যন্ত্রণার শেষ নেই। 


তারপর ধরো খাওয়ার সময়টা সে অত্যন্ত পরিপাটি করে খায়, একটা ভাতও তার প্লেটের বাইরে পরতে দেখিনি কখনো। আরে বাবা এভাবে কি গুনে গুনে ভাত খাওয়া যায়? তাও ছুড়ি কাঁটাচামচ দিয়ে? বাঙালি ভাত খাবে আমার মত করে, ভাত মাখতে মাখতে কব্জি পর্যন্ত আইঠা উঠে যাবে, গামলা থেকে ভাত নিতে গেলে চামচ থেকে একগাদা ভাত পড়বে টেবিল জুড়ে, প্লেটের চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওরা জুঁই ফুলের মত শোভা বর্ধন করবে। ডাল কিংবা তরকারি নিতে গেলে টেবিলের উপরে একগাদা ডাল তরকারি ফেলে মাখামাখি করব, আরে বাবা টেবিলেরও তো ভাত তরকারি খেতে ইচ্ছে করে, শুধু বলতে পারে না বলে কি টেবিলকে খাবার দেব না? আমি বাবা অতটা নিষ্ঠুর না। টেবিলে খেতে বসব আর টেবিল জানবেই না ওখানে কি খাওয়া হলো, সেও কি হয়? আমার বউকে কে বোঝাবে? একদিন তো এই নিয়ে চরম লেগেই গেল আমাদের মাঝে আমাদের অবশ্যি সকালে-বিকালে, রাতে-দিনে, শীতে-গরমে, আলো-অন্ধকারে, কারণ আর অকারণে এমনিতেই লাগে। তা একদিন হয়েছিল কি? ভাত নিতে গিয়ে আমি ভাতের পেট টাই উল্টে ফেলে দিলাম, অগত্যা দ্বিতীয় একটা প্লেট নিতে হল। দ্বিতীয় প্লেটে ভাত বাড়তে গিয়ে ভাতের বলটাই উল্টে ফেলে দিলাম, সেটা করলেও হত ;  ডাল নিতে গিয়ে ডালের বাটি পুরোটাই উল্টে ফেলে টেবিলটাই মাখামাখি করে ফেললাম। আর যায় কই? একগাদা লেকচার দেওয়ার পরে বউ আমাকে চোখ আগুন করে হাতে কাটা চামচ আর ছুরি দিয়ে বসিয়ে দিল ভাত খাওয়াতে। শাসিয়ে বললো আমায় নাকি এখন থেকে ছুড়ি আর কাঁটাচামচ দিয়েই ভাত খেতে হবে, বউ বলে কথা! আমি বউ এর অবাধ্য হব এত খারাপ আমি নই, অপত্য। আমি খুব সাবধানে আঙুলে করে ভাতের গামলা থেকে একটি একটি ভাত প্লেটের মধ্যে নেই, কাটা চামচ দিয়ে ভাতটাকে ধরার চেষ্টা করি, যথারীতি ব্যর্থ হই; তারপর বউ কে আড়াল করে বাম হাতে একটা ভাত ধরে ডানহাতে ছুরি নিয়ে ভাতটাকে কাটার চেষ্টা করি। প্লেটে ছুরির ঘষায় চ্যাআআআআআআআআ করে শব্দ হয়। বউ ওঘর থেকে দৌড়ে আসে - কি হলো, কি হলো? চ্যা চ্যা করে কে? আমি বলি তোমার কাঁটাচামচ আর ছুড়ি, ওরা তারস্বরে কান্না জুড়ে দিয়েছে আমার হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য। বউ চোখ গরম করে বললো, সেটি হবে না বাছা। পড়েছ আমার হাতে ভাত খেতে হবে কাঁটাচামচে। বউ পেছন ফিরতেই অর্ধ কাটা ভাতটাকে টুপ করে জিভ দিয়ে চেটে খেয়ে ফেলি। তারপর আরেকটি ভাত কাঁটাচামচ দিয়ে ওঠাতে না পেরে আবার বাম হাতে তুলে প্লেটে ফেলি, ছোটবেলার বায়োলজি প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের ব্যাং ডিসেকশনের কথা মনে করে ভাত ডিসেকশন করার চেষ্টা করি - যথারীতি ব্যর্থ হয়ে জিহ্বা দিয়ে চেটে খেয়ে ফেলি। খেলাটা বেশ ভালোই লাগছিলো। বাম হাতে একটি ভাত নেই এবার ডান হাতে ছুরির মাথা দিয়ে এক ফোঁটা ডাল ওঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি, তারপর প্লেট থেকে ভাত চেটে খেয়ে ডালে ভেজানো ছুরির মাথা চাটি। বাহ! ডাল ভাত কাঁটাচামচ আর ছুরি। কিছুক্ষণ মন দিয়ে চেষ্টা করে ডালের বাটি ধরে এক চুমুকে খেতে গিয়ে বিষম খেয়ে খক খক খক খক। আমার খক খক শুনে বউ দৌড়ে এসে দেখে ততক্ষণে ডালের বাটি থেকে পুরো ডাল আমার গামছায় পড়ে মাখামাখি। ব্যাস আর যায় কই! বউয়ের চিল্লাচিল্লিতে দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে সোজা মহল্লার হোটেলে গিয়ে ঢুকি। তারপর ডালে মাংসে ঝোলে ভাতে কবজি পর্যন্ত মাখিয়ে ডাল-ভাত-তরকারি টেবিল ফেলে ছড়িয়ে আয়েশ করে ভাত খেয়ে ঘরে ফিরি। বাঙালি কি কাটা চামচ আর ছুরি দিয়ে ভাত খেতে পারে? তোমরাই বলো! আমার গিন্নিকে কে বোঝাবে? 


আজ হঠাৎ করে খাওয়ার কথা মনে এলো কেন? 

গতবছর আরাকুলে গিয়েছিলাম ছবি তুলতে। গিয়ে দেখি নীল-লেজের সুঁইচোরা গিন্নি ঠোঁটে করে ফড়িং ধরে ধরে নিয়ে আসছে। তারপর কিছুক্ষণ ঠোঁটের মধ্যে ফড়িং ধরে রেখে তার জামাই'কে না দিয়ে টুপ করে গিলে ফেলছে। গিন্নি সুঁইচোরা'কে দেখে আমার গিন্নির কথা মনে পড়ে গেলো। আরে আমার গিন্নি এতটা নিষ্ঠুর না। সে ভালোমন্দ কিছু খাবার রান্না করলে আমাকেই গিনিপিগ হতে হয়। আমি ভালো সার্টিফিকেট দিলে তবেই সে টেস্ট করে। 


এই লেখাটার কি নাম দেওয়া যায়?

কি খাব? কিভাবে খাব? 

নাকি বউ এর গিনিপিগ? 

তোমরাই বলো। 



Bird ID: Blue tailed bee eater (নীল লেজ সুঁইচোরা)  

আরাকুল, ঢাকা 

June 2022


#রম্য 


কি খাব? কিভাবে খাব? 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৩ মে, ২০২৩ 



 

গল্প না কবিতা?

 গল্প না কবিতা? 

 - মোঃ আহসানুল হক 


প্রতিটি ছবির পেছনে একটা গল্প থাকে। কখনো গল্পগুলো লিখতে ইচ্ছে করে কখনো করে না। কিছু গল্প সুখের কিছু কষ্টের, কিছু হাসি আনন্দের। সবগুলো গল্পেই জড়িত থাকে কিছু অনুভূতি, থাকে কিছু অনুভব। আমি মাঝে মাঝে ছবির পেছনের গল্পটা লিখি। কেউ গল্প পড়ে, কেউ শুধু ছবি দেখে; কেউবা শুধুই ঘুরে যায় ছবি কিংবা গল্পের পাতায়। এদের না গল্প টানে না ছবি। এরা না পাঠক না  দর্শক। কেন এরা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টায় কিংবা ফেসবুক স্ক্রলিং করে তা এরা নিজেরাও জানে না। 


প্রতিটি ছবির ভেতরে একটা গল্প থাকে, কিছু কিছু ছবি তো নিজেই গল্প। কিছু ছবি আবার কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয়, কিছু কিছু ছবি নিজেরাই কবিতা। ছবির ভেতরের গল্প গুলো একেকজনের কাছে একেক রকম। ওটা অনুভবের ব্যাপার, অনুভূতির ব্যাপার। যার মন যেভাবে চায় ছবিতে সে সেভাবেই গল্প তৈরি করে কিংবা কবিতা। ওগুলোতে আমার বিশেষ কিছু লিখার দরকার হয় না। তবুও মাঝে মাঝে হয়তো কিছু লিখি কিংবা হয়তো ফাঁকাই রেখে দেই ছবির পাতা। তোমরা নিজেদের মত করে গল্প কিংবা কবিতা বানিয়ে নাও।


প্রতিটি ছবির পরেও একটা গল্প থাকে। পরের গল্প গুলো আমরা কেউ জানি না। আমি হয়তো দেখি একটি পাখি বসে ছিল, ছবি তুলেছিলাম, তারপর উড়ে গেল। পাখিটি কি উড়ে গিয়ে শিকার ধরছিল না কারো শিকার হয়েছিল তা আর আমার জানা হয় না। আমি শুধু দেখি একটি হরিণী অবাক হয়ে তার মায়াবী চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, তারপর কি মনে হতেই দৌড়ে বনের ভেতর পালিয়ে গেল। সে কি বনের ভেতরে অন্যান্য হরিণের পালের সাথে মিশে গিয়েছিল নাকি বাঘের পেটে গিয়েছিল তা আর আমার জানা হয় না। আসলে ছবির পরের গল্প গুলো নিয়ে কারোরই কখনো চিন্তা করা হয় না। তাই সে গল্পগুলোর কথা সাধারণত লিখাই হয় না।


আচ্ছা এই যে হাবিজাবি লিখে  রাখলাম! এগুলা গল্প হলো না কবিতা? আমি নিজেও জানিনা। ছোট গল্পকে কেউ কবিতা ভেবে পড়ে, আবার কবিতাগুলো না বুঝেই গল্পের মত পড়ে যায়। তাতে গল্প কিংবা কবিতার কিছু কি আসে যায়?

আমি গল্প কিংবা কবিতা কিছুই লিখি না। 


শুধু অনুভূতির কিছু দাগ ফেলে যাই কাগজে কলমে।


০৪ এপ্রিল, ২০২৩


গল্প না কবিতা? 

 - মোঃ আহসানুল হক 


বোধের আলো

 বোধের আলো 

 - মোঃ আহসানুল হক 


কি চেয়েছিলাম আর কিই বা পেলাম!

হিসেব কষেছে কে?    

ইচ্ছেগুলো, ইচ্ছের ভেতর যায় লুকিয়ে, 

 

কাঠফাটা রৌদ্দুরে পুড়ছে প্রেমিকের স্বপ্ন 

লু হাওয়ায় ওড়ে না প্রেমিকার দীঘল চুল 

আকাশে নীলের মাঝে জ্বলছে রুপালী সূর্য 

জ্বলছে শরীর, পুড়ছে মন, ভাংছে সব ভুল; 


কিছু কিছু ভুল অন্ধকার আর বোধগুলোতে জ্বলছে আলো   

কাকের ডানায় রোদের ঝিকিমিকি রঙ

দূর থেকে কোকিলের গান, কি ভীষণ লাগে যে ভালো। 


#কবিতা 


বোধের আলো 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৫ই এপ্রিল, ২০২৩ 


ব্যবহারে ব্যবহৃত

ব্যবহারে ব্যবহৃত 

 - মোঃ আহসানুল হক 


কিছু কিছু মানুষ ব্যবহার করে 

কিছু কিছু মানুষ হয় ব্যবহৃত, 

যারা ব্যবহার করে, অনেক বেশি কিছু কি জিতে যায়?  

যারা ব্যবহৃত হয়, তারাও কি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়? 


ব্যবহার করতে করতে কোন একটা সময় 

ব্যবহারকারীর মুখোশ উন্মোচিত হয়

অথচ তারা ভাবে, তাদের হয়েছে জয়

আমি দেখি জয়ী মানুষগুলোর মিথ্যে অহংকার আর পরাজিত মুখ; 


ব্যবহৃত হতে হতে মানুষ একটা সময় 

তারাও ব্যবহারকারীকে চিনেই যায় 

অথচ তারা কিছুই হয় নি, এমনটাই ভাব দেখায় 

আমি দেখি পরাজিত মানুষগুলোর বিজেতার হাসিমুখ; 


যারা বিশ্বাস করে আপাতদৃষ্টিতে ঠকলেও তারা আদতে ঠকে না

ওরা আসলে খুব একটা পরাজিত নয়

ঠকার আনন্দে হাসতে পারার মতো সাহস যাদের আছে 

তারা কিভাবে পরাজিত হয়? 


যারা বিশ্বাস ভঙ্গ করে, আপাত দৃষ্টিতে হয়তো তাদের জয়ী মনে হয় 

তারা আসলে খুব একটা জেতে না

জয় কিংবা পরাজয়, কোনটাই চিরস্থায়ী নয়

সত্যের চিরকাল হতেই হয় জয়। 


#কবিতা 


ব্যবহারে ব্যবহৃত 

 - মোঃ আহসানুল হক 



২৭ এপ্রিল, ২০২৩ 



মাহবুব ভাই এর চুলকানি - #রম্য

 মাহবুব ভাই এর চুলকানি 

 - আহসানুল হক 


Mahboobul এর সাথে আমার যখন প্রথম পরিচয় হয় তখন সে.......................


আচ্ছা সে কথা এখন বলবো না এটা পরে বলব............


ক্লাব 85 তে এসে আমার হতভম্ব অবস্থা। সবাই দেখি আমার উপর তেড়ে আসে, বিশেষ করে ক্লাবের মেয়েগুলি। এর মধ্যে Shirin Akhter, Sania Moon, Humaira Naz, Syeda Rozy, Rojy Rahman অন্যতম। এরা প্রতিটা লেখায় ঝাড়ুপেটা করতে এলেই এদের সাথে গলা মেলায় ক্লাবের বাকি সব মেয়েরা। আর এদের সাথে প্রত্যেক দিন গলা ফাটিয়ে থুক্কু ক্লাব ফাটিয়ে আমার ঝগড়া ছিলো নিত্যদিনের কাজ।


এদের সাথে ঝগড়া হতো কি নিয়ে জানো?


আমি ছোটখাটো কিছু জোকস লিখতাম, কিছু রম্য লিখতাম, আর রম্য কিংবা জোকসে নারীঘটিত কিছু বিষয় তো এসে যায়ই! তাই না? পাঠক কিংবা বোদ্ধারা এগুলো ঠিক বুঝে, কিন্তু আমার ক্লাবের বালিকাগুলো এগুলো নিতে পারত না। ক্লাব ফাটিয়ে ঝগড়ায় সুবিধে করতে না পেরে বিচার দিতে ক্লাবের এডমিন মডারেটর মহোদয়গণকে।


বালিকাগণের কাছ থেকে বিচার? শালা একটা অসভ্য ওরে নেই কোন আচার - এই ছিলো আমাদের মডারেটার।


মাহবুব ভাই আমাকে মাঝে মধ্যেই ফোন করে ওদের সাথে যাতে ঝগড়ায় লিপ্ত না হই তা বোঝাতো। আর ওদিকে আমাদের রাগী মডারেটরদ্বয় Borhan Mahmud আর Tanveer Rahman সাহেব প্রতি দুই দিন অন্তর অন্তর ক্লাবে আমাকে ব্লক করত। প্রথম প্রথম ২ মাসে ক্লাবের পেইজ থেকে অন্তত সাত থেকে দশ বার ব্লক খেয়েছি এই মহান মডারেটরদ্বয়ের সদয় বিবেচনায়। তারপর মাহবুব ভাইকে ফোন করে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নাকাটি করে ব্লক ছোটানো।

তাতে লাভ কি? আবার কোন এক বালিকা রাগী মডারেটরদ্বয়ের কাছে নালিশ করেন, ওনারা আমাকে ব্লক করেন; আর আমার মাহবুব ভাইকে ফোন করে কান্নাকাটি করা। এভাবেই চলছিলো।


কোন একদিন আমার নাগ'লি(ফণা তোলা) আপা থুক্কু নাজলি আপার সাথে ধুন্ধুমার লেগে গেলো, কেন? - ওনাকে আমি বাঁশকন্যা উপাধি দিয়েছিলাম তাই।

ব্যাস! আর যায় কই? উনি যে আমাদের অ্যাডমিন মাহবুব সাহেবের বাল্য সখি তা কি আর আমি জানতাম? এবার মাহবুব ভাই নিজেই খেপলেন আমার ওপর। বুঝলেন এভাবে ক্লাব থেকে ব্লক করে আর হবে না। ওনারা এডমিন আর মডারেটর প্যানেল মিলে বিশাল মিটিং বসালেন, ঐদিকে নাগলি আপা গং এ ক্লাবময় মিছিল চলছিলো - জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো; গামছার গদিতে আগুন দেও একসাথে।


তা মাহবুব সাহেব শেষ পর্যন্ত তার মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্লাব থেকে বহিষ্কার করলেই চলবে না, সমবেত গণপিটুনিও দিতে হবে। এই উপলক্ষে তারা বিশাল আয়োজন করলেন। ক্লাবের ষণ্ডামার্কা মডারেটর তানভীরকে দায়িত্ব দিলেন ক্লাবের ক্যাডার মডারেটর Anselm L Martin সাহেবকে তার বস্রশস্র সহ হাজির করতে, বোরহান সাহেব ক্লাব অঙ্গনে তার মিলিটারি টাইফেল সহ উপস্থিত হয়ে বসে আছেন। আর ওদিক থেকে বিশাল বপু থুক্কু পেটু থুক্কু কি জানি নাম? ও Ruma Bosu আপা। উনি ক্লাবের খরচায় প্লেন চার্টার করে ঢাকা চলে আসলেন সাথে করে নাগের জন্য ইয়া বড় এক আজদাহা ঝাড়ু নিয়ে। ওনার বিশাল দেহ নিয়ে আমাকে মাটিত ফেলে চেপে ধরবেন আর নাগ বিবি নাকি আমাকে ঝাড়ুপেটা করবে। বাকিরা যে যার অস্র হাতে আমার বাসায় হামলা দিবেন।

লোকমুখে (কতিপয় সুবোধ বালিকাদের কাছ থেকে) এই হামলার কথা শুনে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিছুটা ভয় যে কাজ করছিলো না তা না কিন্তু! আচ্ছা তোমরাই বলো যদি রুমা আপা তার এত বড় (হস্তিনী বললে মনে হয় আবার আমার ওপর চড়াও হতে পারে তাই উহ্য রাখলাম) দেহ নিয়ে আমার ওপর পড়ে তাইলে কি আর আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে? আরে যাবে তবে মাটি খুড়ে আমার অর্ধেক শরীর বের করতে হবে। তারপর নাগবিবি যদি একহাতে আজদাহা ঝাড়ু আরেক হাতে মহেশখালীর বাঁশ নিয়ে আমার কানের ওপর ঠাস ঠাস করে বাড়ি দেয়! তাইলে আমার কি হবে? নাহ! ওগুলো ভাবতেই আমি দৌড়ে গিয়ে কমোডে বসলাম। এই একটা জায়গায় বসে আমি চিন্তা করে আরাম পাই (অন্য সময় বৌ ঝাড়ুপেটা করে)।


অনেকক্ষণ কমোডে বসে চিন্তা করে আমি চিৎকার করে বললাম - আমি কি ডরাই সখি মাহবুব বাহিনীকে?


বলে মনে মনে একটা প্ল্যান করলাম।


যেদিন শুনলাম তারা বাসায় আসবে সেদিন ছলচাতুরী করে বৌকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম (এ মহিলা বাসায় থাকলেই ঝামেলা শুরু করে দিবে) আর তাদের আপ্যায়নের জন্য বিশাল খাওয়ার আয়োজন করলাম। শুনেছি মাহবুব কালাভুনা পছন্দ তাই চিটাগাং বুল থেকে তাদের কালাভুনার পাতিল তুলে নিয়ে আসলাম। রুমা আপার জন্য আস্ত খাসির বার বি কিউ, বোরহান তানভীর আর মারটিন ভাইয়ার জন্য কোরাল বার বি কিউ এর সাথে রুহ আফজার ও কোকের মিশ্রণ (শুনেছি এটা নাকি তাদের অনেক প্রিয় ড্রিংকস) আর নাগ আপুর জন্য বাঁশের কোড়লের সুপ আর বাঁশ পুড়িয়ে বাঁশের ভেতর রান্না করা কাচ্চি। তা ওনারা বাসায় আগমন করতেই ওনাদের সবাইকে বেশী করে পুদিনা আর লেবু দিয়ে মোহিতোর গ্লাসে আপ্যায়ন করলাম, করে মাত্র কাউকে কোনও কথা বলতে না দিয়ে সরাসরি ডাইনিং টেবিলে নিয়ে চলে আসলাম। ডাইনিং টেবিলে খাবারের সমারোহ দেখে প্রথমেই রুমা আপা ঝাঁপিয়ে পড়লো তার আস্ত খাসির রোস্টের ওপর। মাহবুব যদিও করুণ চোখে চেয়ে ছিলো খাসির দিকে তবুও রুমা আপার এতটুকু দয়া হয় নি, পুরো রোস্ট সাবাড় করে উনি আমার দিকে প্রেম প্রেম দৃষ্টিতে তাকালেন; আমি ভালো করে দেখলাম ঐ চোখে কোথাও ক্রোধের লেশমাত্র নেই। এদিকে মাহবুব ভাই তার কালাভুনার বড় ডেকচি দেখে চেয়ার টেনে নিয়ে ডেকচিতেই বসে গেলো, কনুই পর্যন্ত সাদা পাঞ্জাবীর ঝোলে তার হাত মাখামাখি হয়ে গেলো আর তার বিশাল বিশাল দুই চোখ-দ্বয় কি এক অজানা অনুভবের ঢুলু আবেগে ছলোছলো হয়ে উঠলো - ভালো করে ঐ চোখে তাকিয়ে দেখলাম ওখানেও কোন রাগ গোস্যা নেই। বাকি মডারেটর ট্রয় গোলাপির রঙের রুহআফজার সাথে কোক মিশিয়ে রুহ ঠাণ্ডা করতে করতে মনোযোগ দিলেন দশ কেজি কোরালের ওপর। আবেশে ওদের চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে উঠলো আর অতি অনুভূতিপ্রবণ হয়ে মারটিন সাহেব বলতে লাগলেন - লাভ ইয়ু, লাভ ইয়ু বতস! ততক্ষণে পুরো চার বোতল রুহ আফজার শরবত খেয়ে বাকি দুইজনও ঢুলতে ঢুলতে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো আর বলতে লাগলো - লাভু গামছা, লাভু। ওদের চোখ দেখার উপায় নেই; ওরা ততক্ষণে অতিরিক্ত আবেগে ঘুমিয়ে পড়েছে। ওদিকে তাকিয়ে দেখি আমাদের নাগ আপা আমার পোড়ানো বাঁশের কাচ্চির বাঁশ আমাকে পেটানোর জন্য তার নিয়ে আসা বাঁশ দিয়ে ঠাস ঠাস করে ফাটিয়ে দুই হাত দিয়ে কাচ্চি মুখে ঠাসছে, ততক্ষণে তার রাগ বাঁশের কাচ্চির আবেশে পানি হয়ে চোখ বেয়ে বেয়ে পড়ছে - নাহ! ওখানেও রাগ দুঃখ অভিমানের চিহ্নও দেখলাম না। নিশ্চিন্ত হলাম, যাক বাবা এ যাত্রা বেশ বেঁচে গেছি।


তারপর সবাই মিলে (রুহ আফজা গ্রুপ বাদে) ডেজারটের প্লেট হাতে গল্পের আসরে মেতে গেলাম।


মাহবুবের সাথে অনেকবার ফোনে কথা হলেও এটা মাহবুবের সাথে সামনাসামনি আমার দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার; তাই ওকে দেখে আমি খুব আশ্চর্য হচ্ছিলাম। গল্পের ছলে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলাম সে একটু পর পর একবার ডান হাত নিয়ে পেটের খানিকটা সামনে বাতাসের মধ্যে কেমন জানি তবলা বাজানোর ভান করছে, আবার কখনো চুলকানোর ভান করছে। দু মিনিট যেতে না যেতেই আবার দেখলাম ডান হাতে চা নিয়ে বা হাত দিয়ে সে পেটের খানিকটা সামনে বাতাসে ক্রমাহ্নয়ে তবলা বাজানোর ও চুলকানোর কাজ করছে।


আমি একবার ভাবলাম এটা মাহবুবের মুদ্রা দোষ, রুমা আর নাগ কিছু বলছে না দেখে ভাবলাম ওরা হয়তো অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। যেহেতু আমার চোখে খুব কটু লাগছিল ব্যাপারটা, তাই মাহবুবকে সিগারেট খাওয়ানোর অজুহাতে বারান্দায় নিয়ে এসে একাকি জিজ্ঞেস করলাম - দোস্ত এর ঘটনাটা কি বলতো?

মাহবুব আশ্চর্য হয়ে বলল কোন ঘটনা?


আমি বললাম এই যে তুই একটু পরপর পেটের খানিকটা সামনে বাতাসে ডান হাত নিয়ে একবার তবলা বাজাচ্ছিস আবার চুলকাচ্ছিস আবার খানিকটা পরে বাম হাতে বাতাসে তবলা বাজাচ্ছিস আর পেট চুলকানোর ভাব করছিস, এর মরতবা'টা কি দোস্ত? এটা কি তোর মুদ্রাদোষ? অচেনা মানুষের সামনে এমন করলে ওরা কিন্তু তোকে নিয়ে হাসবে।


মাহবুব কথা বলতে বলতেই তার পেটের সামনের বাতাস থেকে ডান হাত নিয়ে মাথার টাকটা চুলকাতে চুলকাতে বলল, দোস্ত আর বলিস না! তোর সাথে পাঁচ বছর আগে যখন প্রথম দেখা হয় তখন আমার সাইজ কি ছিল তোর মনে আছে?


আমি বললাম হ্যাঁ মনে থাকবে না কেন? পেট মোটা মহিষের কথা কার না মনে থাকে? তোর পেট তো তখন ছেলে মহিষ বাদ দিয়ে নয় মাসের পোয়াতি জমজ বাচ্চা ওয়ালা মহিষীর পেটের সাইজ ছিল।

বলে হাসতে লাগলাম।


দেখলাম মাহবুবের মুখটা কালো হয়ে গেল।


আমি থতমত খেয়ে বললাম, আরে দোস্ত পুরান কথা মনে করে মনখারাপ করিস কেন? তুই তো এখন অনেক যুবক হয়ে উঠেছিস; তোকে দেখলে অনেক হ্যান্ডসাম লাগে, মেয়েদের তো লাইন লেগে যাবে এবার। আমি জিজ্ঞেস করলাম - তুই এত বড় পেটটা কমালি কিভাবে?


মাহবুব বললো সেই দুঃখের কথা আর বলিস না রে দোস্ত! এই যে তোর বাসায় আজকে গাপুসগুপুস হালুমহুলুম করে কবজি ডুবিয়ে এক হাড়ি গরুর মাংস খেলাম! কতদিন পরে খেয়েছি তোর কোন ধারনা আছে?


আমি বললাম কেন বাসায় খেতে পাস না?


সে কাঁদো কাঁদো চোখে ছল ছল পানি নিয়ে বলল - তোর ভাবী রেশন করে দিয়েছে রে! সারাদিনে এক বেলা খেতে দেয় তাও শুধুমাত্র লবণ ছাড়া সিদ্ধ সবজি। সপ্তাহে একদিন দুটো আটার রুটি। এভাবেই গত দুই বছরে আমার পোয়াতি মেয়ে মানুষের পেট কমে এখন পোয়াতি পুরুষের সাইজ হয়েছে। আর দেখ! আগে আঙ্গুল দিয়ে কি সুন্দর বড় পেটটার মধ্যে তবলা বাজাতাম আর একটু পর পর শার্ট তুলে তুলে পেট চুল কাতাম। এখন পেট কমে গেলো সেই অভ্যাসটা আজও ঠিক রয়ে গেছে।

তুইই বল, অভ্যাস কি যায় সহজে?


আমি বললাম, না রে কয়লার ময়লা ধুলেও যায় না। তবে ভাবিস না, তোর পেট চলে গেছে টাকে। আগে পেট বড় ছিল মাথায় ছিল চুল, তাই পেটে তবলা বাজাতি কিংবা পেট চুলকাতি। এখন পেট কমে যাওয়ার সাথে সাথে তোর চুলও কমে গিয়ে মাথা ভরা আমার মত বিশাল টাক। তুই কি জানিস? আমিও তোর মত এখন একটু পর পর মাথায় তবলা বাজাই টাক চুলকাই?


সে মহিষের মত ইয়া বড় বড় চোখ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, আরে তাইতো?

তারপরই ডান হাতটা মাথার ওপর নিয়ে টাকের ওপর তবলা বাজানো শুরু করল আর বা হাত নিয়ে টাক চুলকাতে শুরু করলো।


কিছুক্ষণ তবলা বাজিয়ে কিছুক্ষণ চুল্কিয়ে আরামে তার চোখ ট্যাঁরা হয়ে আসলো (তোরা কি জানিস! বেশি আরামে কিছু মানুষের চোখ ট্যাঁরা হয়ে যায়?) আর মুখ হাঁ হয়ে জিহ্ব আধাহাত বের হয়ে গেলো (আমি সেই ফাঁকে টুক করে তার একটা ছবি তুলে নিলাম (আমি যে সত্যি কথা বলছি তার প্রমাণ স্বরূপ))।


তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল আহা! এই বুদ্ধিটা আমাকে যদি আগে কেউ দিত! লাভু দোস্ত, লাভু, লাভু, তোরে অনেক অনেক লাভু।


আমি চান্স বুইজ্ঝা মাহবুবরে কইলাম, তোরে যে এই এত সুন্দর একটা বুদ্ধি দিলাম! এর প্রতিদান কি দিবি?


সে ঘরে আইসা বিছানায় ঘুমন্ত ত্রিশঙ্কুর পাশ থাইক্কা আমার বউয়ের শলার ঝাড়ু'টা তুইল্লা আমার হাতে দিয়া কইলো - আজ থাইক্কা দোস্ত তুই ক্লাবের ঝাড়ুদার।

(বিঃদ্রঃ তরেও লাভু মাহবুব, তরে বালুবাসি বইল্লাই তরে বালুঘষি)


এরা বেবাক্তে মিল্লা আইছিলো আমার পিঠে ঝাড়ু ভাংতে আর দিলো আমার হাতে ঝাড়ু ধরাইয়া ক্লাবের ঝাড়ুদার বানাইয়া।

তারপর থাইক্কা আমি রেগুলার বেসিসে কিলাব ঝাড়ু দেই। ।


বিঃ দ্রঃ এই লেখাটা অনেকক্ষণ কমোডে বইসা থাকার চিন্তাহ্নিত ফসল, আপনাদের পড়া হইয়া গেলে এইটারে কমোডে ফালাইয়া ফ্লাস কইরা দিয়েন।


#রম্য


মাহবুব ভাই এর চুলকানি

- আহসানুল হক


২২ এপ্রিল, ২০২২




কে, কে, কে? - #সত্য_ঘটনার গল্পরূপ

 কে, কে, কে? 

 - মোঃ আহসানুল হক 


খুঁজছি, আতিপাতি করে খুঁজছি, গত সাত দিন ধরে ড্রয়ার উল্টেপাল্টে সবকিছু নামিয়ে নামিয়ে খুঁজছি। 


প্রত্যেকের জীবনেই এমনটা নিশ্চয়ই অনেক বার করে হয়। কোন একটা বস্তু কোথাও রাখলেন পরে আর তা খুঁজে পাওয়া যায় না। পরে কোন না কোন সময় সে বস্তুটা বাসার কোথাও না কোথাও ঠিক খুঁজে পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় যায়ও না। 


এইতো গত সপ্তাহের কথা, মায়ের ডায়াবেটিসের ওষুধ কিনে এনেছিলাম। দশ পাতার বক্সে চার পাতা কম থাকায় দোকান থেকে পুরো বক্সটাই নিয়ে নিয়েছিলাম। আর সে ঔষধের বাক্সে আমার জন্য চার পাতা আর্থ্রাইটিসের ওষুধ ঢুকিয়ে রেখেছিলাম।  


যেহেতু দিল্লির ডাক্তার তাই ইন্ডিয়ান ঔষধ দিয়েছে আর স্পেশালি এই ঔষধটা বাংলাদেশে হয় না। এটা ইন্ডিয়া থেকে আসে তাই চাইলেই চট করে যে কোন দোকানে এটা পাওয়া যায় না। গুলশানে একটা দুইটা ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। আমার মত আরও কিছু রোগীর জন্য ওরা এনে রাখে। ওষুধটা কিনে আনার পর আমার খুব মনে আছে বাক্সটা আমি ওপরের অর্থাৎ আমার ঔষধের ড্রয়ারে রেখেছিলাম। আগের ঔষধের পাতায় তখনও দুটা ট্যাবলেট ছিল বলে নতুন পাতা আর দুদিন বের করা হয়নি।  ঐ দুটি ট্যাবলেট ফুঁড়োতেই আমার নতুন কে না স্টক থেকে ওষুধ আনতে গেলাম। কিন্তু সেদিন আর ওষুধের বাক্সটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটা দুটো করে সবগুলো ড্রয়ার উল্টাপাল্টা করে ফেলে কোনা-কাঞ্চি আঁতিপাঁতি খুঁজেও ঔষধের বাক্স পেলাম না। ঔষধের পুরো বক্সটাই হওয়া। মহল্লার দোকান থেকে আম্মার ডায়াবেটিসের ঔষধ তো কিনে আনা গেল, তবে আমার ঔষধটার জন্য আর গুলশান যাওয়া হয়নি। যাব, যাচ্ছি করে দিনের বেলায় অলসতাতে যাওয়া হয়নি, রাতের বেলা তারাবীহ পড়ে ফিরতে ফিরতে সাড়ে দশটা। এত রাতে আর গুলশান যেতে ইচ্ছে করে না। ফলে এক সপ্তাহ ধরে ঔষধটা না খাওয়াতে পায়ের ব্যথা প্রচণ্ড বেড়ে গেল। ওদিকে বউ ক্রমান্বয়ে ঘ্যানঘ্যান করছে - আমি অলস, কুড়ের বাদশা ইত্যাদি, ইত্যাদি বলে। সেও কয়েকবার যত সম্ভাব্য জায়গায় ঔষধ থাকতে পারে তা আতিপাতি করে খুঁজল, কোথাও ঔষধ না পেয়ে বলল - তোমার যা ভোলা মন! কনফার্ম তুমি ঔষধগুলো কিনে দোকানেই রেখে এসেছ। যাই হোক বকাঝকা করলেও মহিলার মন ভালো, মনে হয় আমার প্রতি একটু আধটু মায়াদয়া এখনো অবশিষ্ট আছে, পরদিন নিজেই অফিস থেকে ফেরার পথে গুলশান থেকে আমার ঔষধ কিনে আনল। 


আজকাল কিছু কিছু ঘটনা বড্ড এলোমেলো। ঘটনার ঘনঘটায় মাঝেমধ্যে এলোমেলো হয়ে যাই আমি নিজেই। একটি ঘটনা সামলে উঠতে না উঠতেই আরেকটির জন্ম, আমি হত বিহ্বল হয়ে যাই প্রায়শই। আজ রাতে ডিনারের পর প্রেশারের ঔষধ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে নতুন পাতার জন্য ঔষধের ড্রয়ার খুলেই আমি হতবাক, আম্মার ডায়াবেটিসের ওষুধের বাক্সটা ড্রয়ারের একদম উপরে। প্রথমে আমি ভাবলাম বউ বোধহয় আমার ঔষধের সাথে আম্মার জন্যও নতুন বক্স কিনে এনেছে। আমি এ ঘর থেকেই চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম - মায়ের জন্য কি ডায়াবেটিসের নতুন বক্স কিনেছ? সে ডাইনিং থেকেই উত্তর দিলো, হ্যাঁ - দেখো আমার ঔষধের ড্রয়ার খুললে ওপরেই পাবে। দ্বিতীয় ড্রয়ারটা বৌ এর ঔষধের ড্রয়ার। ড্রয়ার খুলেই দেখি ওপরে আরেকটি বক্স। দ্বিতীয় ড্রয়ার বন্ধ করে প্রথম ড্রয়ার খুললাম - ওখানেও একই ঔষধের আরেকটি বক্স। আমি কনফিউজড হয়ে ওপরের ড্রয়ারের বাক্স খুলেই চমকে উঠলাম। এ তো আমার কেনা সেই বক্স, দুপাতা আম্মার ওষুধ বাকি চারপাতা আমার। আমি বাক্সটা  বের করে খাবার টেবিলে এনে সবার সামনে বসলাম। বউ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিহীনতেই আমি বাক্সটা তাকে দেখালাম। সে বললো - পুরো বক্স এনেছ কেন? মা'কে এক পাতা করে ঔষধ দেই নাইলে উনি ডাবল, ট্রিপল করে ঔষধ খেয়ে ফেলে। 

আমি বললাম সেটা তো জানি!  

বৌ জিজ্ঞেস করলো - তবে? 

আমি বাক্সটা খুলে তাকে  দেখালাম।

 

সে জিজ্ঞেস করল কোথায় পেয়েছ?

আমি বললাম আমার ঔষধের ড্রয়ারে। ড্রয়ার খুলতেই একদম সমস্ত ওষুধের উপরে। 

সে একটু বিস্মিত হয়ে বলল ওখানে তো তুমিও খুঁজেছ আমিও খুঁজেছি; এটা ওখানে আসলো কিভাবে?

 


এটা যে ওখানে কিভাবে আসলো তা আমি জানিনা। 

তবে কি, - সে?

 

কথাটা বলতেই আমার ছেলে মেয়ে একযোগে আমার দিকে তাকাল। 

এখন তারাও জানে আমার সাথে প্রায়শই এগুলো হয়। 

কোন একটা জিনিস আঁতিপাঁতি করে খুঁজে পাচ্ছিনা, হঠাৎ করে সাত দিন, পনর দিন বা এক মাস পরে খুব হুট-হাট করেই যেখানে রেখেছিলাম সেখানে কিংবা তার আশেপাশেই পাওয়া যায়। 



এইতো এই শুক্রবারের কথা। 

জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েছি। বাড়ির একদম পাশেই মসজিদ। 

ওই যে কথায় বলে না মক্কার লোক হজ্জ পায় না! আমার হয়েছে সেই দশা। কোন না কোন কারণে দৌড়াতে দৌড়াতে একবারে নামাজ দাঁড়িয়ে গেলে শেষ মুহূর্তে গিয়ে হাজির হই। 

এই জুম্মার দিনও একই অবস্থা। আমি মসজিদের গেটে ঢুকতে ঢুকতে শুনি মোয়াজ্জেম সাহেব একামত দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। 

কোনমতে স্যান্ডেলটা গেট থেকে উঠিয়ে গেটের একদম পাশে এক জায়গায় রেখে আমি দৌড়ে গিয়ে নামাজে দাঁড়ালাম। জুম্মার পরে সুন্নত পড়ে বের হওয়ার সময়ই বিপত্তি। 

আমার সুন্নত পড়তে সাধারণত একটু দেরি হয়, ততক্ষণে মসজিদের প্রায় বেশিরভাগ লোক বের হয়ে গিয়েছে। আমি সুন্নত পড়ে ধীরেসুস্থে বের হতে গিয়ে দেখি আমার স্যান্ডেল নেই। মাত্র ১২০ টাকা দামের প্লাস্টিকের স্যান্ডেল। প্রথমেই মাথায় আসলো কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। আবার ভাবলাম এই প্লাস্টিকের স্যান্ডেলও কেউ কেউ চুরি করে?  

১২০ টাকার প্লাস্টিকের স্যান্ডেল হলেও এটি আমাকে খুঁজে খুঁজে কিনতে হয়। পায়ের ব্যথার জন্য গত প্রায় আট বছর যাবত আমি এই একই স্যান্ডেল পড়ে আসছি। চামড়ার স্যান্ডেল বা অন্য কোন স্যান্ডেল পায়ে দিলেই পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা করে, তাই অন্য স্যান্ডেল আমার সয় না। যেখানে স্যান্ডেল রেখেছিলাম সেখানে খুঁজলাম, গেটের বাইরেও ভালো করে খুঁজে আসলাম; কোথাও স্যান্ডেল নেই। 

এবার মন খারাপ করে মসজিদের দিকে তাকালাম, অল্প কজন মুসল্লি রয়েছে। আমি খালি পায়েই বের হয়ে যাব নিয়ত করে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি যেখানে স্যান্ডেলটি রেখেছিলাম সেখানেই স্যান্ডেলটি পড়ে আছে।


  


এটা কোন ভৌতিক ঘটনা না, আমার সাথে যেন এরকম কিছু না কিছু ঘটবেই এটা মনে হয় তৈরি করাই আছে। 

আজকাল সে বড্ড জ্বালাতন করছে। 

যতই নতুন বাড়ির কাজ এগুচ্ছে ততই তার জ্বালাতন বাড়ছে, এটা আমার থেকে ভালো কে আর বুঝবে? 

আমি বিরক্ত হয়ে মৃদু ধমকের সুরে বলি, মসজিদেও এগুলা করতে আছে? 

 

কেউ শুনল কি?

 - ওপাশ থেকে উত্তর দিল না কেউ 

আমার মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে কে সে? 

আবার ভাবি আমি কি জানি? আমিই বা কে!  

 

দুপুরের কাঠফাটা রৌদ্দুরে চিড়বিড় করছে চারিদিক, রাস্তার পিচ প্রায় গলে গলে উঠছে। নীলাকাশে উড়ে উড়ে ঐ দূরে একটি দুটি কাক ডাকছে। 

আমার কেন জানি হঠাৎই মন খারাপ হয়ে গেলো। 


মনে মনে এক পাগলের কবিতা আউরোতে আউরোতে বাড়ির পথ ধরলাম -  



কি চেয়েছিলাম আর কিই বা পেলাম!

হিসেব কষেছে কে?    

ইচ্ছেগুলো, ইচ্ছের ভেতর যায় লুকিয়ে, 

 

কাঠফাটা রৌদ্দুরে পুড়ছে প্রেমিকের স্বপ্ন 

লু হাওয়ায় ওড়ে না প্রেমিকার দীঘল চুল 

আকাশে নীলের মাঝে জ্বলছে রুপালী সূর্য 

জ্বলছে শরীর, পুড়ছে মন, ভাংছে সব ভুল; 


কিছু কিছু ভুল অন্ধকার আর বোধগুলোতে জ্বলছে আলো   

কাকের ডানায় রোদের ঝিকিমিকি রঙ 


দূর থেকে কোকিলের গান, কি ভীষণ লাগে যে ভালো। 



#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে (গল্পরূপ)  


কে, কে, কে? 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৬ এপ্রিল, ২০২৩


নতুন বাড়িতে কে? - #সত্য ঘটনার গল্পরূপ

নতুন বাড়িতে কে? 

  - মোঃ আহসানুল হক 


সাগরকে ধরে না শুলে ঘুম আসে না আনিশার। ওরা তৈরিই হয়েছে যেন দুজন দুজনার করে। অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা পার হতে হয়েছে দুজনকেই ১৫ বছরের  ভালোবাসার সম্পর্কটাকে বিয়েতে রূপ দিতে গিয়ে। বিয়ের পরেও ঝামেলা কম হয়নি দু পরিবারেরই পক্ষ থেকে। আনিশা আর সাগর বিয়ের কিছুদিন পরেই দুজনে মিলে আলাদা হয়ে গিয়েছিল পরিবার থেকে। এখন একটা বাসায় শুধু আনিশা ও সাগর আর তাদের ভালোবাসার সময়। বছর ঘোরার আগেই আনিশা মা হতে চলল। যেদিন প্রথম সাগর কে বলল, সাগর খুশিতে কেঁদে দিয়েছিল। অতি অনুভূতিপ্রবণরা খুশিতে কেঁদে দেয়। এ সংবাদ শোনার পর সাগর অফিস সময়টা বাদ দিয়ে বাকি সময়টা আনিশাকে আগলে রাখছে।


পেটের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন আর খাদ্যের জন্য টাকার। আগে সংসারে তারা দুজন ছিলো এখন সংসারে আরেকটি নতুন সদস্য আসছে যাচ্ছে। তাই সাগর ছুটাছুটি করছে কি করে দুটো অতিরিক্ত টাকা আয় করা যায় তার অহ্নেষণে। তাই আজ সাগরে আসতে একটু রাত হয়েছে। আনিশার শরীরটা বেশি ভালো না থাকায়  সে খেয়ে আগেই বিছানায় শুয়ে পড়েছে। সাগরকে ছাড়া ঘুম আসছিল না তাই মোবাইল নিয়ে এপাশ ওপাশ করছে। সাগর একা একাই ডিনার করে প্লেট গ্লাস সব গুছিয়ে তারপরে শুতে আসলো। এসেই আনিশাকে জড়িয়ে ধরল। ভালোবাসাবাসীর কিছু সময় পার করে সাগরের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল আনিশা। সারাদিন কাজের পরে ক্লান্ত সাগরেরও দুচোখ ভেঙ্গে ঘুম জড়িয়ে আসলো।


হঠাৎ করেই আনিশার ঘুম ভেঙে গেল। ডাইনিং রুমে কার জানি হালকা পায়ের শব্দ। কেউ যেন খুব আস্তে আস্তে বা টিপে টিপে হাঁটছে। আনিশা প্রথমে অবাক হয়ে গেলেও পরক্ষণেই  একটু ভয় পেয়ে গেল। আস্তে আস্তে সাগরকে ধাক্কা দিতে লাগলো। আনিশার ধাক্কায় সাগরের ঘুম ভেঙে গেল। সাগর কি হয়েছে জানতে চাইতেই আনিশা সাগরের মুখ চেপে ধরল। ফিসফিস করে বলল ও ঘরে কে যেন হাঁটছে। মোবাইল ঘড়িটায় সাগর দেখল রাত তিনটা বাজে। সাগর বললো, চোর না তো? সে বিছানা থেকে উঠতে যেতেই আনিশা তার হাত চেপে ধরল। বলল, যেও না ও ঘরে। 


আনিশার গলায় কিছু একটা ছিল। হঠাৎ করেই সাগরের মেরুদণ্ড বেয়ে অন্যরকম একটা ভয়ের স্রোত নেমে গেল। ভয় পেয়েছে আনিশাও। ও ঘরের ডাইনিং টেবিল চেয়ার টানার শব্দ। কে যেন বসল চেয়ারে। ঠক ঠক করে পানি খাওয়ার শব্দ। নিস্তব্ধ রাতে প্রত্যেকটা শব্দই কানে বাজছে। আনিশা আর সাগর দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আছে। সাগর ও ঘরে যেতে চাইছে তবুও কি এক অজানা ভয়ে বিছানা ছাড়তে পারছে না। আনিশা অনেক বাস্তববাদী মেয়ে হলেও হঠাত করেই কেমন এক অজানা ভয়ে শিটিয়ে আছে, দুজনই একদম স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে রইলো।


চেয়ার থেকে কেউ যেন উঠে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ মৃদু পায়ে  পায়চারি করার শব্দ। তারপর হেঁটে হেঁটে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল শব্দটা। রান্নাঘর থেকে ঝনঝন শব্দে কি যেন একটা পড়লো। নিস্তব্ধ রাতে মেঝেতে সেই পতনের শব্দ যেন কানে তালা লাগিয়ে দিল।


হঠাৎ করেই আনিশার মনে পড়লো তার বিড়াল তিনটার কথা। ওদের কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না কেন? বাইরের কেউ ঢুকলে তো ওদের মিউ মিউতে বাড়ি মাথায় করে ফেলার কথা এতক্ষণে। এরা তিনজন এত চুপ হয়ে গেল কিভাবে? আনিশাকে ও ঘরে যেতে হবে। সে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে আবার কেমন জানি তীব্র একটা অজানা ভয় তাকে গ্রাস করল। সাগরের মুঠোর ভেতর তার হাত একদম বরফ হয়ে যেতে লাগলো। একটা ভয় আচ্ছন্ন করে রেখেছে সাগরকেও। সেও কয়েকবার উঠি উঠি করেও বিছানা থেকে কোনভাবেই যেন উঠতে পারছে না।


এবার রান্নাঘরে ঝনঝন করে একটা কাচের বাসন পড়ার শব্দে রাতের নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে গেল। আর তারপর পরই পাশের ঘর থেকে তিনটা বিড়াল একসাথে কেঁদে উঠলো। এ তো শুধু কান্না নয়, তারা প্রচণ্ড ভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো আর আনিশার শোবার ঘরের দরজায় এসে নখ দিয়ে দরজা আঁচড়াতে লাগলো। একই সময়ে  বিল্ডিং এর নিচে মহল্লার ৫-৬ টি কুকুর তারস্বরে  চিৎকার জুড়ে দিল। হঠাৎ করেই যেন রাতের নিস্তব্ধতা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। একদিকে দরজায় বিড়ালের খামচা খামচি আর একদিকে রাস্তায় কুকুরের  চিৎকার। পাশাপাশি হঠাৎ করেই আনিশার ভয় কেমন জানি কমে যেতে লাগলো। ধাতস্থ হয়ে এসেছে সাগরও ততক্ষণে। হঠাৎ করেই যেন ভয়টা উধাও হয়ে গেছে। আবার যেন চারিদিকে স্বাভাবিক। আনিশা দরজা খুলে বের হতেই তিনটা বিড়াল একযোগে তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ওদের জড়িয়ে ধরতে আনিশা বেশ বুঝলো তারা ভয়ে কাঁপছে। সাগর ঘর থেকে বের হয়ে সমস্ত বাড়ির বাতি জ্বালালো। খাবার পর ডাইনিং টেবিলের চেয়ারটা টেবিলের সাথে লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। বের হয়ে দেখতে পেল চেয়ারটা টেবিল থেকে অনেক দূরে টানা। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল একটা হাড়ি উল্টে পড়ে আছে, দুইটা প্লেট ভেঙে চুরমার হয়ে সাড়া মেঝে ছড়িয়ে আছে। খাবার পর সাগর  রান্নাঘরটা পুরো গুছিয়ে গিয়েছিল। রান্নাঘরের এই অবস্থা দেখে সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল।


আনিশা চেক করে দেখলো মেইন দরজায় ছিটকিনি দেয়া। তাছাড়াও এটি অটো লক। ভেতর থেকে না খুললে বাইরে থেকে চাবি ছাড়া খোলার কোন উপায় নেই। তারা দুজনেই হতবুদ্ধি হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল। দুজন দুজনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। দুজনার চোখেই জিজ্ঞাসা। উত্তর দেবে কে?


দুদিন পরে আমি আনিশাদের বাসায় গেলাম। আনিশাদের উপর তলায় আমার বাসার কাজ চলছে। আমরা আমাদের পুরনো বাড়ি ছেড়ে খুব শিগগিরই এবার এ বিল্ডিংয়ে উঠে আসবো। এই বিল্ডিং এ কাজ দেখতে আসলে আমি মাঝে মাঝেই ওদের দুজনকে দেখে যাই। আনিশার শরীরটা বেশ খারাপ দেখলাম। চোখ মুখ কেমন জানি শুকিয়ে গিয়েছে। আমি সাগরকে ধমক দিয়ে বললাম কিরে বৌ এর দেখাশোনা করছিস না? সাগর হেসে দিয়ে বলল দেখাশোনা করছি তো। আমি বললাম তাহলে এরকম অসুস্থ লাগছে কেন? তখন তারা দুজন মিলে আমাকে দু রাত আগের ঘটনা বলল।


ঘটনাটি শুনেই আমার শরীরে কেন জানি কাঁটা দিয়ে উঠলো। ওদের কিছু বুঝতে দিলাম না। শুধু একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলাম বাইরের অন্ধকারের দিকে। হঠাত করেই আমার মনে হলো -  তবে কি সে? সেই সে, যুগ যুগ ধরে যে আমার সাথে লেগে আছে ছায়ার মত, আমার স্বত্বায় ভয় হয়ে। আমরা এ বাড়িতে চলেই আসব দেখে কি আমার সাথে সাথে এখানে যাতায়াত শুরু করে দিয়েছে? এ বাসায় আমি আছি বলে আমাকে জানান দেওয়ার জন্যই কি কিছু অশরীরী কাণ্ড? চুপ করে থাকে বাইরের  অন্ধকার। যতই আমি আলো জ্বেলে যাই এই অন্ধকার আমাকে ছাড়বে না, ছাড়বে না আমাকে সে ও। আমি শুধু ফিসফিস করে বলি – ওরা কোন দোষ করে নি; তোর সকল হিসেব শুধুমাত্র আমার সাথে। কেউ শুনলো কি? 



#সত্য ঘটনার গল্পরূপ 


নতুন বাড়িতে কে? 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৫ই এপ্রিল, ২০২৩ 



মানুষের মাঝেই অমানুষ

 মানুষের মাঝেই অমানুষ 

 - মোঃ আহসানুল হক 


মানুষের অবয়ব তাদের

 

দুহাতে খায়, কাজও করে দুহাতে 

কেউ কাজ করে উপার্জন করে ভাতের অহ্নেষণে 

কেউ একহাতে আঙ্গুলি করে সামনের জনের পেছনে 

আরেক হাত নিজের পেছনে সামনে কাউকে না পেলে 

এদের মধ্যেই আবার কেউ কেউ সাপের মতোই ছোবল দেয় 

স্বার্থে এতটুকু আঘাত হলে

 

তবে তো এ নিশ্চিত মানুষ, অমানুষের খোলসে;


মানুষের মত অবয়ব 


দু পায়ে হাটে, দৌড়োয় 

কেউ ছোটে টাকার পেছনে, পেটের অহ্নেষণে  

আর কেউ দু পায়ে চলে চার পেয়ে হিংস্র পশুর মত কামড়ায় 

কেউ বা 

সাপের ছোবল দেয় রেগে গেলে দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে

 

ঠিক তখনই, মানুষের অবয়বে চেনা যায় অমানুষ;


এহেন মানুষ কিংবা অমানুষের বুক চিরে দেখো!


রক্তের রং লাল পাবে, পাবে 

বুকের ভেতর হৃদপিণ্ড ধুকপুক ধুকপুক করছে

 

হৃদপিণ্ড চিরে দেখো সেখানে লাল হৃদয়ে ভালোবাসা পাবে 

পাবে স্নেহ মায়া মমতা সবই, 

লালের ঠিক পাশেই হৃদয়ের একটা দলা কালো 

ওখানে লোভ-লালসা হিংসা, আর কালো ঘিনঘিনে রিপুতে ভরা  


প্রতিটা মানুষকেই চিড়লে পাবে মানুষ, পাবে অমানুষ 


মানুষের অবয়বে মানুষেরই খোলসে;




আমরা সব সময় মানুষ খুঁজি, নিজে অমানুষ হয়ে

শুদ্ধ মানুষ কোথায় আছে? 

বলতে পারো? 


#কবিতা 


মানুষের মাঝেই অমানুষ 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৮ এপ্রিল, ২০২৩




স্ত্রী বনাম ইস্ত্রি - রম্য

 স্ত্রী বনাম ইস্ত্রি 

 - মোঃ আহসানুল হক 


ঐদিন আমার দোস্ত Arup Kumar Das আমারে একটা ছবি পাঠাইছে। তাতে লেখা আছে ইফতারের পর ইস্ত্রিকে বুকে নিয়া শুয়ে থাকার জন্য, তাতে নাকি সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়।  আজকে বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড এর সাইট থেকে আবার একই রকম একটা শিক্ষামূলক বক্তব্য দিছে ইফতারের পর স্ত্রীকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকার জন্য, তাতে নাকি সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়। একটা বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড আরেকটা আমার দোস্ত মহা পণ্ডিত অরূপ, একই বক্তব্য দিল। শুধু পার্থক্য হলো গিয়ে একজন বলছে স্ত্রী আরেকজন বলছে ইস্ত্রি।


আমি অনেকক্ষণ চিন্তায় দেখলাম দোস্ত অরূপের বক্তব্য বেশি যুক্তিযুক্ত। ইস্ত্রি বুকে নিয়ে শুইয়া থাকলে শরীরে কারেন্টের প্রবাহ হইলেও হইতে পারে, তাতে ক্লান্তি দূর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর শিক্ষা বোর্ডের কথা শুইনা যদি স্ত্রীরে ইফতারের পরে জরায় ধরতে যাই তাইলে তার কাছ থেকে মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইফতারের পরে বাচ্চাকাচ্চা সব বাসায়, বাসায় তো সব এমনেই সময়ই থাকে তবে ওই সময়টা আমার ঘরে বসেই আড্ডা মারে; বাচ্চাকাচ্চার সামনে কি এগুলা করা যায়? ছি:! আমার লইজ্জা লাগে না?


অনেক চিন্তা ভাবনা কইরা শেষ পর্যন্ত কেউ যাতে না দেখে এই জন্য আমি গেস্ট রুমের বাত্তি নিভাইয়া ক্লান্তি দূর করার লাইজ্ঞা ইফতারের পর  ইস্ত্রিটারে বুকে চাইপা শুয়ে রইলাম। পুরা রোজার মাসে ইফতারের পর কি করতাছি না করতেছি বউ একদিনও খবর নেয় না, সে থাকে তার রান্নাবান্নার কাজ নিয়া আর নয়তো বাচ্চাকাচ্চার সাথে। আজ কি হইল জানিনা, চা হাতে আমারে খুঁজতে খুঁজতে গেস্ট রুমের বাত্তি জ্বালাইয়া বুকের মধ্যে  ইস্ত্রিরে জড়ানো অবস্থায় আমারে পাইল। আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞেস করল - তুমি  ইস্ত্রি বুকে জড়াইয়া বিছানায় শুয়ে রইছো কেরে?

আমি মজা কইরা কইলাম তোমারে তো পাইনা তাই  ইস্ত্রিই ভরসা।

সে কি বুঝল সেইই জানে, মুখ ঝামটাই কইলো বুইড়া হইতাছস আর খাটাশ হইতাছোস। থাক তুই  ইস্ত্রি বুকে চাইপা। দেখমুনে  ইস্ত্রি তোরে কেমনে গরম করে। কইয়াই সে বাত্তি বুজায় দিয়া আমারে চা না দিয়াই ঘর থাইক্কা বাইর হইয়া গেল। আমিও স্ত্রী চিন্তা কইরা  ইস্ত্রিরে আরো জোরে বুকে জড়াইয়া শুয়ে রইলাম। 


ওমা একটু পরে দেখি বুকে কেমন গরম গরম লাগে। ঘটনা কি? বউয়ের কথা কি সত্য হইল?  ইস্ত্রি আমারে গরম করতাছে? আচ্ছা আমি কি ঘুমায় গেছিলাম নাকি স্বপ্ন দেখছিলাম? ওইটা মনে হয় বউ ছিল না কোন জিন পরী ছিল। নাইলে আমার স্ত্রী কেন কইব  ইস্ত্রির আমারে গরম করার কথা? আর কইলো তো কইলোই, এরা লাইজ্ঞা  ইস্ত্রিও আমারে গরম করা শুরু কইরা দিল? বউয়ের তো এই সময় আমার কাছে আসার কোন কথাই নাই, ওইটা কনফার্ম কোন জ্বিন পরি হইব। ভাইব্বা হালকা ইস্ত্রির গরমের আরামে আমার চোখ বুইজ্জা আইতেছিল। 


এক মিনিট পড়ই ধাক্কা দিয়ে ইস্ত্রি ফালাইয়া ফাল দিয়া বিছানায় উইঠা বইলাম। ইস্ত্রি তো আগুনের লাহান গরম হয়ে গেছে। ঘটনা কি?

বাতি জ্বালায় দেহি আমার স্ত্রী ইস্ত্রির প্লাগ সকেট এর মধ্যে লাগাইয়া রাইখা গেছেন।

আমি মনে মনে অরূপ রে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলাম। আচ্ছা আপনারাই কন তো এত নিষ্ঠুস হয় কেন?



#রম্য 


স্ত্রী বনাম ইস্ত্রি 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৬ এপ্রিল, ২০২৩



ফেসবুকিয় কাণ্ড কারখানা - হিবিজিবি

ফেসবুকিয় কাণ্ড কারখানা 

 - আহসানুল হক 


ফেসবুকে বেশ একটা অদ্ভুত জায়গা। একটু খেয়াল করলেই কত মজার মজার কাণ্ড যে দেখা যায়! খুব বেশিদূর যেতে হবে না, তোমরা তোমাদের যাবতীয় মজা তোমাদের ফ্রেন্ড লিস্টের ফ্রেন্ডদের কাছ থেকেই পেয়ে যাবে। 


আমার লিস্টে বেশ কিছু লেখক আছেন, আছে অনেকগুলো ফটোগ্রাফার আর আছে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে এক ঝাঁক ট্যুর অপারেটর। ট্যুর অপারেটররা আছে আমার প্রফেশনাল কারণে, ফটোগ্রাফাররাও অনেকটা তাইই। লেখকরা কেউ আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে আমার ফ্রেন্ড হন নি বরং আমিই বিভিন্ন গ্রুপে বিভিন্ন জনের লেখা পড়ে যাদের যাদের লেখা ভালো লেগেছে তাদেরকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। সম্ভবত কবি লেখকদের ডিমান্ড ফেবু ওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি। উনারা বেশিরভাগ আমাকে পাত্তাই দেননি, মানে রিকোয়েস্ট রিজেক্ট করেছেন। কিভাবে বুঝলাম? বিভিন্ন গ্রুপে ওনাদের অন্যান্য লেখা পড়তে গিয়ে মনে হল আরে এনাকে, এনাকে, এনাকে তো আমি রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম! আমাকে এখনো ঝুলিয়ে রেখেছেন? উনাদের প্রোফাইলে গিয়ে দেখি ফেবু আবার এড রিকোয়েস্ট করতে বলেছে। তার মানে ওনারা আমার রিকোয়েস্ট ডিক্লাইন করেছেন; বেশিরভাগই এমনই হয়। আমার কপালে রিজেকশনের ভার অনেক বেশি, সে ফেবু দুনিয়াতেই হোক কিংবা সত্যিকারের জীবনে। মনে হয় আমার চেহারাটা অতিরিক্ত খারাপ কিংবা ওনাদের মত এত বড় মাপের লেখক লেখিকাদের বন্ধু হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। আমার আসলে কোন যোগ্যতাই নেই। তারপরও মাঝে মধ্যে ওনাদের কেউ কেউ আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন। একটা লেখক কিংবা কবি বন্ধু যদি আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন তাহলে আমি ইয়াহুউউউউ চিৎকারে খুশিতে তিনটা লাফ দেই। উঁহু, উঁহু,ছ্যাবলা ভাববেন না আবার; ইনবক্স আমার সয় না। বন্ধুত্ব গ্রহণ করলেন বলেই যে ইনিয়ে বিনিয়ে  তাকে ইনবক্স করবো ওটা আমার ধাত না। কেউ একজন বন্ধুত্ব গ্রহণ করেছেন এতেই আমি যথেষ্ট খুশি। আরে একটু অপেক্ষা করো বাবা আহসান! এখনই এত খুশি হইছ না। 


ভাইজান কিংবা আপাজান শেষ পর্যন্ত ফেসবুকের বন্ধু হইলেন। আমি খুশির জোটে ওনার প্রোফাইলের ভিতর গিয়া সমস্ত গল্প কবিতা পইড়া আসলাম। পইড়া পেত্তেকটা গল্প কিংবা কোবতায় আমার চিহ্ন ছাইড়া আসলাম। আরে চিহ্ন বলতে কহনো লাইক, কহনো ভালোবাসার ইমোজি কহনো বা কমেন্টের ছড়াছড়ি।  আমি অবিশ্যি এমনিতেই একটু পড়ি বেশি। নিজের কোন কিছু লেখার যোগ্যতা নাই তো তাই অন্য একটা পইড়া পইড়া একটু শিখার চেষ্টা করি। পড়তে পড়তেই তো পাঠক হয় তাই না? আইচ্ছা! পড়তে পড়তে যদি পাঠক হয় তাইলে ঐ পাঠকের মাথা দিয়া দুইটা লাইন বাইর হইতে পারে না? 

হায় আফসোস! ৫৫ বছর ধইরা শুধু পইড়াই গেলাম, গু গোবর কিছু লেখার যোগ্যতা হইল না। পাঁচে হয় নাই ৫৫ তে হইব?


 যাউজ্ঞা যা কইতাছিলাম। এই যে নতুন নতুন ফেবু আপা আর ভাইগো প্রত্যেকটা লেখা পইড়া পইড়া উনাদের ফেসবুক জুইড়া কমেন্ট কইরা আসলাম! বিনিময়ে আমিও তো চাইতে পারি আপা কিংবা ভাইয়েরা আমার প্রোফাইলে ঢুইকা আমার একটা পক্ষীর গায়ে লাইকের একটা টোকা দিয়া যাক! আফনেরাই কইন, আমার মন ঐডা চাইতে পারে না? আরে ভাই মানুষ তো! আমারও তো কিচু চাহিদা থাকবার পারে! 

 কোন মহা মনীষী জানি কইছিল,  

"বড় আশা ব্যাঙের বাসা

গু খা ঠাসা ঠাসা "

 আমিও আশার গু খাইয়াই যাইতাছি, ভুলেও ওনারা আমার প্রোফাইলে উঁকিও  দিয়া দেখে না। দিনের পর দিন একই অবস্থা দেইখা, একদিন আমি অনেক চিন্তাইয়া ভালো কইরা ওনাদের ফেসবুকের দিকে খেয়াল করলাম। 


ও মারে! মা!!!!

একেকজনের ফলোয়ারের সংখ্যা দেইখ্যা আমার তো ভীমরি খাওয়ার দশা। ৫ হাজার দশ হাজার তো কোন ছাড়! কারও তিরিশ কারও চল্লিশ, কারও কারও দেখলাম  ৮০-৯০ হাজার  আর কিচু কিচু লেখকের তো লাখ ফলোয়ার ছাড়ায় গেছে। তবে আশ্চর্য কথা হইলো গিয়া  কয়েকজনের প্রোফাইল দেখলাম, উনারা একজনরেও ফলো করে না। 

মানেটা কি? উনারা ফলো করার মত কোন বান্দা কি ফেসবুকে পয়দা হয় নাই? 

না কি কবি, সাহিত্যিক, লেখকদের অন্য কাউরে ফলো করতে নাই? 

আমার অল্প বুদ্ধিতে চিন্তাইয়া কিছু পাইলাম না ; আপনারা যদি এই বিষয়ে বিশেষ অজ্ঞ হন তাইলে আমারে একটু জানাইয়েন। 

 

আজকাল আর লেখক কবিদের আমি কোন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই না। যা পড়ার পেন্সিল টেন্সিল আর অন্যান্য সাহিত্যের যত গ্রুপ আছে ঐগুলা থাইক্কা পইড়া নেই। আরে না লেখা পছন্দ হইলে এখনও লাইক দিয়া আসি, মাঝে মইধ্যে লাভও দেই আর কমেন্ট করতেও কার্পণ্য করি না। 


আরেক শ্রেণীর ফেবু বন্ধুবান্ধব, যিনারা আমার বাল্যবন্ধু, ক্লাবের বন্ধু, পাড়া মহল্লার বন্ধু, পরিচিত মুখ চেনা - মানে যারা শুধু ভার্চুয়াল না - রিয়েল লাইফের বন্ধু তারা আইসা প্রায়ই ছবির মধ্যে কিছু একটা রিয়াকশন দিয়া যায়। খুব বেশি পছন্দ হইলে একটা দুইটা কমেন্টও কইরা যায়। এরা আসলে বন্ধু না, অনেকটা আটপৌরে কাপড়ের মত ; আরে নাহ! আমি শাড়ির কথা কই নাই, যেইটা পরি না হুদাই হেইডার কথা কইয়া লাভ আছে? মানে কইতে চাইতাছি এদের আমি বড্ড ভালো পাই (এদের মধ্যে যেহেতু অনেকগুলা বালিকাও আছে তাই ভালোবাসি কইলে বউ আবার মাইন্ড খাইতে পারে )। আমার সাদামাটা আটপৌরে জীবনে এদের স্থান অনেক উপরে।


এরাও মনে হয় আমাকে অনেকটাই ভালোবাসে। বেশিরভাগই আমায় পাগল ডাকে, গামছা পড়ি বইলা অনেকে গামছা নামেই ডাকে;  আরও কি কি সব হাবিজাবি খারাপ খারাপ নামে ডাকে ( সব নাম এখানে বলা যাবে না, আমার লইজ্জা লাগে )। 

তা এরা আমারে ভালোবাসার চোটে কি করে জানো? লেখায় তো আইসা লাইক দিয়াই যায়, কমেন্ট কিছু একটা কইরাই যায় ; কিন্তু আচানক ব্যাপার হইলো গিয়া বেশিরভাগ না পইড়াই কমেন্ট করে।

কেমনে বুঝি?

মাঝে মাঝে আমি এখান ওখান থেকে যা ভালো লাগে তা সংগৃহীত ফুটনোট দিয়ে আমার প্রোফাইলে পেস্ট করি। এরকম অনেকগুলাই আছে। 

তা এনারা ওয়াও, আহ!  কি দারুণ!  চমৎকার,  হায় দোস্ত কি লিখলি, আমি তো ফিদা হইয়া গেছি;  

কবিতাটা যা দারুণ হইছে না! ( আসলে ওইটা গল্প ) 

তুই এত হাসির একটা গল্প লিখলি! (আসলে ওইটা পাখি সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে কপি করা একটা আর্টিকেল ) 

এদের কমেন্টের মধ্যে অনেকসময়ই এইতান ভালোবাসা খুইজ্জা পাই। 

 তা আপনারাই কন দেহি, এমন হইলে মনটা কেমনটা লাগে ? আমি হাসমু কানমু রাগমু না বকা দিমু? কিছু বুইঝা পাই না।

বুঝি এরা ভালোবাসার চোটেই কমেন্ট করতে চায়। বন্ধু কিছু লিখছে! তা ভালই লেখছে হয়তো, কিংবা ভালো না লেখুক দোস্ত তো! এত বড় একটা জিনিস যখন লেখছে আর আমার চোখেও পড়ছে যখন! একটা কমেন্ট করলে দোস্ত আমার খুশি হইবো। এরকম কিছু একটা চিন্তাইয়া তারা না পইড়াই কোন একটা লেখার মইধ্যে কমেন্ট কইরা যায়। আমি তাদের ভালোবাসা বুঝি। আর তাছাড়া বড় লেখা পড়ার সময় কোথায় আজকাল? আরে আমি না হয় বেকার মানুষ, আমার অঢেল সময় আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ার ; সবার কি আর এত সময় আছে?


#হিবিজিবি


ফেসবুকিয় কাণ্ড কারখানা 

 - আহসানুল হক 


০৪ এপ্রিল, ২০২৩ 






ছবিতে ছবিতে গল্পের গল্প

ছবিতে ছবিতে গল্পের গল্প 

- মোঃ আহসানুল হক 


প্রতিটি ছবির পেছনে একটা গল্প থাকে। কখনো গল্পগুলো লিখতে ইচ্ছে করে কখনো করে না। কিছু গল্প সুখের কিছু কষ্টের, কিছু হাসি আনন্দের। সবগুলো গল্পেই জড়িত থাকে কিছু অনুভূতি, থাকে কিছু অনুভব। আমি মাঝে মাঝে ছবির পেছনের গল্পটা লিখি। কেউ গল্প পড়ে, কেউ শুধু ছবি দেখে; কেউবা শুধুই ঘুরে যায় ছবি কিংবা গল্পের পাতায়। এদের না গল্প টানে না ছবি। এরা না পাঠক না  দর্শক। কেন এরা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টায় কিংবা ফেসবুক স্ক্রলিং করে তা এরা নিজেরাও জানে না। 


প্রতিটি ছবির ভেতরে একটা গল্প থাকে, কিছু কিছু ছবি তো নিজেই গল্প। কিছু ছবি আবার কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয়, কিছু কিছু ছবি নিজেরাই কবিতা। ছবির ভেতরের গল্প গুলো একেকজনের কাছে একেক রকম। ওটা অনুভবের ব্যাপার, অনুভূতির ব্যাপার। যার মন যেভাবে চায় ছবিতে সে সেভাবেই গল্প তৈরি করে কিংবা কবিতা। ওগুলোতে আমার বিশেষ কিছু লিখার দরকার হয় না। তবুও মাঝে মাঝে হয়তো কিছু লিখি কিংবা হয়তো ফাঁকাই রেখে দেই ছবির পাতা। তোমরা নিজেদের মত করে গল্প কিংবা কবিতা বানিয়ে নাও।


প্রতিটি ছবির পরেও একটা গল্প থাকে। পরের গল্প গুলো আমরা কেউ জানি না। আমি হয়তো দেখি একটি পাখি বসে ছিল, ছবি তুলেছিলাম, তারপর উড়ে গেল। পাখিটি কি উড়ে গিয়ে শিকার ধরছিল না কারো শিকার হয়েছিল তা আর আমার জানা হয় না। আমি শুধু দেখি একটি হরিণী অবাক হয়ে তার মায়াবী চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, তারপর কি মনে হতেই দৌড়ে বনের ভেতর পালিয়ে গেল। সে কি বনের ভেতরে অন্যান্য হরিণের পালের সাথে মিশে গিয়েছিল নাকি বাঘের পেটে গিয়েছিল তা আর আমার জানা হয় না। আসলে ছবির পরের গল্প গুলো নিয়ে কারোরই কখনো চিন্তা করা হয় না। তাই সে গল্পগুলোর কথা সাধারণত লিখাই হয় না।


আচ্ছা এই যে হাবিজাবি লিখে  রাখলাম! এগুলা গল্প হলো না কবিতা? আমি নিজেও জানিনা। ছোট গল্পকে কেউ কবিতা ভেবে পড়ে, আবার কবিতাগুলো না বুঝেই গল্পের মত পড়ে যায়। তাতে গল্প কিংবা কবিতার কিছু কি আসে যায়?


আমি গল্প কিংবা কবিতা কিছুই লিখি না। 


শুধু অনুভূতির কিছু দাগ ফেলে যাই কাগজে কলমে।


#কবিতা 


ছবিতে ছবিতে গল্পের গল্প 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৪ এপ্রিল, ২০২৩








একা একার কান্না

 একা একার কান্না

 

 - মোঃ আহসানুল হক



কষ্টগুলো বুকের ভেতর নীল নীল নীল কালো

তোর আমার পুরনো সব দিনগুলো ছিল ভালো 

নীল নীলাকাশ আর হরিৎ বনে মন ছিল সবুজ

ভালোবাসার কম হলেই তুই হতি বড় অবুঝ; 

 

হুট করে তুই বহুদূরে আমায় ফেলে পরপারে  

একলা আমায় একা ফেলে দুজনের একলা ঘরে

গেলিই যদি নিয়ে যেতি একটু আমার সঙ্গে করে

এপারেতে জানা হয় না কি আছে তোর ওই পারে;  


একলা তুই ওই পারে কেমন আছিস কি করে? 

একলা আমি এই পারে একলা কাটে একলা ঘরে

জানি আমি যেতেই হয় মরণ এসে ডাক দিলে

যে রয়ে যায় সেও মরে রয় একা ঘরে তিলে তিলে; 


মৃত্যু গুলো বড়ই কষ্টের মনে হলে বড্ড কাঁদায়

এপারের রঙিন জীবন পরিণত কালোয় সাদায়

কেউ বোঝে না মনের ভেতর তুই ছাড়া চলছে কি

সবাই দেখে হাসি খুশি মনে করে ভালই আছি; 


বুকের ভেতর দুমরে উঠে রাতের একা বিছানায়

বহু বছরের অভ্যাস ঘুমে তোকে জড়িয়ে ধরায়

ঘুমের ভেতর আজো আমি পাশ ফিরেই জড়িয়ে ধরি

তোর জায়গায় কোলবালিশ চমকে উঠে বসে পড়ি; 

 

কেউ জানে না এই কান্না শুধু আমার মন জানে

সারারাত্রি জেগে কাটাই চেয়ে থেকে আকাশ পানে

কেউ জানে না কি কষ্টের একলা আমার রাত্রিগুলো 

কেউ জানে না তুই ছাড়া ঘুম আমার কান্না হলো। 


#কবিতা 


একা একার কান্না

 - মোঃ আহসানুল হক


০২ এপ্রিল, ২০২৩