কি খাব? কিভাবে খাব?
- মোঃ আহসানুল হক
আমরা পুরুষরা যাই করি না কেন কিছুই বউদের মনের মত হয় না। সে খাওয়াতেই হোক কিংবা পরাতে অথবা অন্য কোন কাজে।
আজ না হয় শুধু খাওয়ার গল্পই বলি।
আমার বউ খাওয়ার ব্যাপারে খুবই গোছানো। সে বাইরে গেলে খায় ছুরি আর কাটা চামচ দিয়ে, আমি খাই কবজি ডুবিয়ে। বাইরে কোন দাওয়াতে গেলেই তার ব্যাগের ভেতর সব সময় এক সেট কাটা চামচ ও ছুরি থাকে, আরে বাবা আমার চোখ গেলে দেওয়ার জন্য না; যদি দাওয়াতে যাদের ওখানে গেলো ওরা যদি ছুরি বা কাটা চামচ না দেয়! সে কোন রিস্ক নেয় না, তৎক্ষণাৎ ব্যাগ থেকে ছুড়ি আর কাঁটাচামচ বের করে বসে যায় খেতে। আর আমি? আরে খাওয়া সামনে পেলে আমার হাত ধোয়ার কথা মনেই থাকে না! খাওয়ার পরে তো হাত তো ধোবই তাহলে খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার দরকার'টা কি? হাত ধুতে হয়, হাতে ময়লা থাকে ইতং বিতং যত্তসব আজাইরা যুক্তি, এগুলো আমার মাথায় ধরে না, আর এটা নিয়ে তার যন্ত্রণার শেষ নেই।
তারপর ধরো খাওয়ার সময়টা সে অত্যন্ত পরিপাটি করে খায়, একটা ভাতও তার প্লেটের বাইরে পরতে দেখিনি কখনো। আরে বাবা এভাবে কি গুনে গুনে ভাত খাওয়া যায়? তাও ছুড়ি কাঁটাচামচ দিয়ে? বাঙালি ভাত খাবে আমার মত করে, ভাত মাখতে মাখতে কব্জি পর্যন্ত আইঠা উঠে যাবে, গামলা থেকে ভাত নিতে গেলে চামচ থেকে একগাদা ভাত পড়বে টেবিল জুড়ে, প্লেটের চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওরা জুঁই ফুলের মত শোভা বর্ধন করবে। ডাল কিংবা তরকারি নিতে গেলে টেবিলের উপরে একগাদা ডাল তরকারি ফেলে মাখামাখি করব, আরে বাবা টেবিলেরও তো ভাত তরকারি খেতে ইচ্ছে করে, শুধু বলতে পারে না বলে কি টেবিলকে খাবার দেব না? আমি বাবা অতটা নিষ্ঠুর না। টেবিলে খেতে বসব আর টেবিল জানবেই না ওখানে কি খাওয়া হলো, সেও কি হয়? আমার বউকে কে বোঝাবে? একদিন তো এই নিয়ে চরম লেগেই গেল আমাদের মাঝে আমাদের অবশ্যি সকালে-বিকালে, রাতে-দিনে, শীতে-গরমে, আলো-অন্ধকারে, কারণ আর অকারণে এমনিতেই লাগে। তা একদিন হয়েছিল কি? ভাত নিতে গিয়ে আমি ভাতের পেট টাই উল্টে ফেলে দিলাম, অগত্যা দ্বিতীয় একটা প্লেট নিতে হল। দ্বিতীয় প্লেটে ভাত বাড়তে গিয়ে ভাতের বলটাই উল্টে ফেলে দিলাম, সেটা করলেও হত ; ডাল নিতে গিয়ে ডালের বাটি পুরোটাই উল্টে ফেলে টেবিলটাই মাখামাখি করে ফেললাম। আর যায় কই? একগাদা লেকচার দেওয়ার পরে বউ আমাকে চোখ আগুন করে হাতে কাটা চামচ আর ছুরি দিয়ে বসিয়ে দিল ভাত খাওয়াতে। শাসিয়ে বললো আমায় নাকি এখন থেকে ছুড়ি আর কাঁটাচামচ দিয়েই ভাত খেতে হবে, বউ বলে কথা! আমি বউ এর অবাধ্য হব এত খারাপ আমি নই, অপত্য। আমি খুব সাবধানে আঙুলে করে ভাতের গামলা থেকে একটি একটি ভাত প্লেটের মধ্যে নেই, কাটা চামচ দিয়ে ভাতটাকে ধরার চেষ্টা করি, যথারীতি ব্যর্থ হই; তারপর বউ কে আড়াল করে বাম হাতে একটা ভাত ধরে ডানহাতে ছুরি নিয়ে ভাতটাকে কাটার চেষ্টা করি। প্লেটে ছুরির ঘষায় চ্যাআআআআআআআআ করে শব্দ হয়। বউ ওঘর থেকে দৌড়ে আসে - কি হলো, কি হলো? চ্যা চ্যা করে কে? আমি বলি তোমার কাঁটাচামচ আর ছুড়ি, ওরা তারস্বরে কান্না জুড়ে দিয়েছে আমার হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য। বউ চোখ গরম করে বললো, সেটি হবে না বাছা। পড়েছ আমার হাতে ভাত খেতে হবে কাঁটাচামচে। বউ পেছন ফিরতেই অর্ধ কাটা ভাতটাকে টুপ করে জিভ দিয়ে চেটে খেয়ে ফেলি। তারপর আরেকটি ভাত কাঁটাচামচ দিয়ে ওঠাতে না পেরে আবার বাম হাতে তুলে প্লেটে ফেলি, ছোটবেলার বায়োলজি প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের ব্যাং ডিসেকশনের কথা মনে করে ভাত ডিসেকশন করার চেষ্টা করি - যথারীতি ব্যর্থ হয়ে জিহ্বা দিয়ে চেটে খেয়ে ফেলি। খেলাটা বেশ ভালোই লাগছিলো। বাম হাতে একটি ভাত নেই এবার ডান হাতে ছুরির মাথা দিয়ে এক ফোঁটা ডাল ওঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি, তারপর প্লেট থেকে ভাত চেটে খেয়ে ডালে ভেজানো ছুরির মাথা চাটি। বাহ! ডাল ভাত কাঁটাচামচ আর ছুরি। কিছুক্ষণ মন দিয়ে চেষ্টা করে ডালের বাটি ধরে এক চুমুকে খেতে গিয়ে বিষম খেয়ে খক খক খক খক। আমার খক খক শুনে বউ দৌড়ে এসে দেখে ততক্ষণে ডালের বাটি থেকে পুরো ডাল আমার গামছায় পড়ে মাখামাখি। ব্যাস আর যায় কই! বউয়ের চিল্লাচিল্লিতে দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে সোজা মহল্লার হোটেলে গিয়ে ঢুকি। তারপর ডালে মাংসে ঝোলে ভাতে কবজি পর্যন্ত মাখিয়ে ডাল-ভাত-তরকারি টেবিল ফেলে ছড়িয়ে আয়েশ করে ভাত খেয়ে ঘরে ফিরি। বাঙালি কি কাটা চামচ আর ছুরি দিয়ে ভাত খেতে পারে? তোমরাই বলো! আমার গিন্নিকে কে বোঝাবে?
আজ হঠাৎ করে খাওয়ার কথা মনে এলো কেন?
গতবছর আরাকুলে গিয়েছিলাম ছবি তুলতে। গিয়ে দেখি নীল-লেজের সুঁইচোরা গিন্নি ঠোঁটে করে ফড়িং ধরে ধরে নিয়ে আসছে। তারপর কিছুক্ষণ ঠোঁটের মধ্যে ফড়িং ধরে রেখে তার জামাই'কে না দিয়ে টুপ করে গিলে ফেলছে। গিন্নি সুঁইচোরা'কে দেখে আমার গিন্নির কথা মনে পড়ে গেলো। আরে আমার গিন্নি এতটা নিষ্ঠুর না। সে ভালোমন্দ কিছু খাবার রান্না করলে আমাকেই গিনিপিগ হতে হয়। আমি ভালো সার্টিফিকেট দিলে তবেই সে টেস্ট করে।
এই লেখাটার কি নাম দেওয়া যায়?
কি খাব? কিভাবে খাব?
নাকি বউ এর গিনিপিগ?
তোমরাই বলো।
Bird ID: Blue tailed bee eater (নীল লেজ সুঁইচোরা)
আরাকুল, ঢাকা
June 2022
#রম্য
কি খাব? কিভাবে খাব?
- মোঃ আহসানুল হক
০৩ মে, ২০২৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন