ঘর জামাই এর জীবন
- আহসানুল হক
ঘর জামাইয়ের জীবন যে কি ভয়াবহ, যারা ঘর জামাই না থাকে তারা বুঝবে কি করে?
সেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানানো থেকে শুরু। তারপর বাচ্চাদের ঘুম থেকে তোলা, বাচ্চাদের নাস্তা খাইয়ে রেডি করে স্কুলে পাঠানো। তারপর মর্নিং টি হাতে বিবি সাহেবার ঘুম ভাঙ্গানো। উনি ঘুম থেকে ওঠা মাত্র ওনার গোসলের ব্যবস্থা, ওনাকে অফিসের জন্য রেডি করানো। স্পেশাল ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওনার নাস্তা বানানো, সামনে বসে নাস্তা খাওয়ানো (নাইলে আবার মাইন্ড করেন); তারপর ওনার ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে টিফিন রেডি করে ওনাকে অফিসে পাঠানো।
তারপর তো সারাদিনে একটার পর একটা কাজ। বাজার করা, কুটা বাছা, রান্না বান্না, বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনা, তাদের গোসল করানো, তাদের খাওয়া দাওয়া; দুপুরে ঘুম পাড়ানো। বিকালে টিচার আসলে তাকে নাস্তা দেওয়া; কত রকম হ্যাপাই যে ঘর জামাই কে করতে হয় তোমরা তার কি জানো? 😢
সন্ধ্যার সময় বিবি সাহেবার অফিস থেকে ফেরার সময়। সারাদিন অফিস করে ওনার মেজাজ থাকে টং। পান থেকে চুন খসলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করেন। উনি অফিস থেকে আসলে যেমন তটস্থ থাকি আমি তেমনি ছেলেমেয়েরা। হাজার হোক বাড়ির কর্ত্রী, কি আর করা! তিনি বাসায় আসার পর পর উনাকে গোসলের সরঞ্জাম এগিয়ে দিয়ে কাপড় হাতে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা। অনেকক্ষণ ধরে ডলে ডলে গোসল করার পরে ওনার মেজাজ মর্জি মনে হয় একটু ঠাণ্ডা হয়। গোসল করতে করতেই আমার সাথে টুকটাক আলাপ আলোচনা করেন, সারাদিন বাসায় কি হল না হল আমি কি করলাম না করলাম উনাকে ডিটেল রিপোর্ট দেই। তারপর ওনার গোসল হলে হাত বাড়িয়ে কাপড় এগিয়ে দেই। বিয়ের প্রথম প্রথম উনি বলে দিয়েছিলেন বাথরুমে উঁকি ঝুঁকি দেওয়া একদম পছন্দ করেন না, তাই ঐরূপ কোন চেষ্টাও করি না। বিয়ের প্রথম প্রথম একবার দুবার চেষ্টা করতেই পিঠের মধ্যে গোটা দুই শলার ঝাড়ু ভেঙেছিল, তারপর থেকে আমি একদম সোজা, হুহ।
তারপর উনি বাচ্চাদের সাথে কিছু খুনসুটি করেন, বিশাল হাঁক দিয়ে আমাকে ডিনারের টেবিল লাগাতে বলেন। আমি টেবিল রেডি করতে করতে বাচ্চাদের পড়ালেখার একটু খবর নেন। তারপর ছেলেমেয়ে নিয়ে যথারীতি ডিনারের টেবিলে বসেন। যেদিন মুড ভালো থাকে আমাকেও মাঝে মাঝে বসতে বলেন, তবে বেশিরভাগ দিন মেম সাহেবা ছেলেমেয়ে নিয়ে ডিনার করে ওনার মত উঠে যান। আমি খাবার টেবিল গুছিয়ে হাড়ি পাতিল ধুয়ে রান্না ঘরেই ডিনার সেরে নেই। মাঝে মাঝে মেমসাহেবার মুড ভালো থাকলে আমাকে রাতে ওনার হবে শোয়ার ঘরে ডাকেন নয়তো বেশিরভাগ দিন ছেলে মেয়ের ঘরেই মাদুর পেতে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘর জামাই এর জীবন কতটা অসহনীয় আপনারা কি বুঝবেন? 😭
মেম সাহেবা আজ অফিস থেকে ফিরে আমাকে মধুর গলায় বললেন, আজ একটু পায়েস করো তো! ঐ যে ঐদিন যশোর থেকে যে গুড় এনেছিলাম! সেটা দিয়ে খাঁটি গুড়ের পায়েস। তোমার হাতের পায়েস আবার অনেক মজা হয়। আমি বিনয়ে গদগদ হয়ে বললাম, আচ্ছা করছি। বলেই কি একটা মনে হতে বিবি সাহেবাকে বললাম - কিন্তু গুড় তো পায়েস করার মত অতটা হবে না, চিনি দিয়ে করি? আমার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ অগ্নি শর্মা হয়ে উঠল। বললেন - ৫ কেজি গুড় শেষ হয়ে গেছে? ফাজলামি করো? ওগুলা বাপের বাড়ি পাচার করেছো?
আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, না গো! তুমিই না একদিন বলে দিয়েছ বাজার থেকে যাই নিয়ে আসো তা যেন ভালো করে ধুয়ে তারপর ব্যবহার করি! সেদিন যে গুড় এনেছ তাতে অনেক ময়লা ছিল। এত বাজে গুড় যে আমি ময়লা পরিষ্কার করতে অনেকক্ষণ পানি দিয়ে ধুতেই পাঁচ কেজি গুড়ের প্রায় চার কেজিই পানিতে ধুয়ে গেল। এখন মাত্র কেজি খানেক বোধহয় রয়ে গিয়েছে।
আমার বলতে যা দেরি। বেগম সাহেব সাথে সাথে ঝাড়ু তুলে নিলো আর কি মাইরটাই না মারল!😭😭
তারপর সারারাত আমাকে এই হিম ঠাণ্ডার মধ্যে ছাদে আটকিয়ে তালাবন্ধ করে রাখল। আমি মনের দুঃখে সারা রাত ছাদে বসে বসে আপনাদের ঘর জামাই এর জীবনের দুঃখের কাহিনী বলতে লাগলাম।
ঘরজামাই এর জীবন যে কি দুঃসহ! তার আপনারা কি জানেন? 😭😭😭
# রম্য
ঘর জামাই এর জীবন
- আহসানুল হক
০১ মার্চ, ২০২৩
ব্যাঙ্গালোর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন