এক অলস মানুষের অলীক স্বপ্ন - রম্য
- মোঃ আহসানুল হক
আজকাল কোন কিছু করতে ইচ্ছা করে না। সারাদিন ভূতের মত ঘুমাই। মনে করছেন সারাদিন ঘুমাই দেইখা রাইতে জাইজ্ঞা থাকি? আরে নাহ! সন্ধ্যা হইলেই চোখ ভাইঙ্গা ঘুম আহে। তাও জোর কইরা জাইজ্ঞা থাকার চেস্টা করি। ভাবতাছেন সারাক্ষণ ঘুমাইলে কখন খাই, কখন বাথরুমে যাই, কখন অন্যান্য কাজকাম করি? আরে, আমি আইলসা মানুষ, চরম কুইরা; কাইজকাম করতে মোটেও ভালা লাগে না। আর ঘরে বউ আছে না! উনি আমার হইয়ে বেবাক কাজকাম কইরা ফালান। এমনকি আমারে ঘুমের মধ্যেই খাওয়ায়ও দেন। আর এহন তো রোজার দিন, দিনের বেলা খাওয়া খাদ্যের ঝামেলার নাই বললেই চলে।
ভোররাতে সেহরি খাওয়ার জন্য আমি উঠতে পারি না। বউ সেহরির জন্য আমারে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি কইরা ঘুমের থাইক্কা উঠাইতে না পাইরা পুলাপাইন লইয়া সেহরি টেহরি সাইরা ফালান। তারপর দুই গালে বিশাল চাপ দিয়া আমারে হা করাইয়া মুখের মধ্যে দুইটা খেজুর গুইজ্জা দেন। আমি যথারীতি খেজুর মুখে নিয়া ঘুমায় থাকি। বউ একটু পর খেয়াল কইরা দেখে যে, আমার মুখ নড়ে না। উনি একহাতে মাথা চাইপ্পা আর এক হাতের নিচের থুতনি টাইন্না ধইরা কিছুক্ষণ দুই চাপা নাড়াচাড়া দেওনের চেস্টা করেন। ওইটা নাড়াচাড়া না বইলা আসলে ঝাকাঝাকি বলা উচিৎ। উনার ঝাঁকাঝাকিতে মুখের ভেতরের খেজুর মনে হয় নরম হইয়া গইলা যায়। আমি ঘুমের মইধ্যেই পুত কইরা বিচি দুইটা বিছানায় ফালাইয়া দেই। আরে খেজুরের বিচি! সব সময় আপনারা খ্রাপ কিচু মনে করেন ক্যারে? তারপর বউ আমার মুখটারে হা করাইয়া গ্লাসথন একটু পানি ঢাইলা দেয়। আমি ক্যুৎ কইরা গিল্লা ফালাই। কয়দিন কইছি, বউ রে! এমনে পানি না খাওয়াইয়া আমারে একটা ফিডার ধরাই দিলেই তো হয়; বউ কয় আমার ফিডার খাওয়ার বয়স পার হইয়া গেসে। ভাগ্যিস আমার মায়ে শোনে নাই! তাইলে এই ভোর রাইতে শাশুড়ি বৌ এ ধুন্ধুমার শুরু হইয়া যাইতো। আমার মায় অহনো পারলে আমারে কোলে কইরা রাহে। যাউজ্ঞা যা কইতাছিলাম,
খেজুর আর পানি গিল্লা আমি আবার ঘুম দেই।
চোখটা লাগতে না লাগতে বউ আবার ঠেইল্লা তুইল্লা দেয়। আরে না অন্য কিছুর লাইগা না। তোমগো যত খাচ্চর খাচ্চর চিন্তা, রোজার দিনে ওগুলা করতে হয় না। উনি আমারে ফজরের নামাজ পড়ার লাইজ্ঞা ডাইকা তোলেন। আমার কি আর সহজে ঘুম ভাঙ্গে? বৌ আদর কইরা আমারে ধইরা ধইরা বাথরুমে নিয়া যায়, ওযু করায় দেন তারপর আইনা জায়নামাজের উপরে খাড়া করায় দেয়। আমি কোন মতে নামাজটা পইড়া জায়নামাজেই আবার ঘুম। দুপুর তিনটার দিকে পোলায় আইসা টাইনা বিছানার থেকে নামায় (যেহেতু বৌ ঐ সময় আপিসে থাকে)। আমি কোনমতে উইঠা জোহর আর আসর একসাথে পড়ি, পড়তে পড়তেই আবার ঘুমায় যাই।
আমার বিবিজান আইসা আমারে ইফতারের আগে দিয়া আদর সোহাগ কইরা ঘুমের থাইক্কা টাইন্না তোলেন। এক ঘুমে সারাদিন পার। সারাদিন না খাইয়া রোজা রাখার কি যে কষ্ট! তা তোমরা বুঝবা কেমনে? আইচ্ছা বাদ দেও, সারাদিন ঘুমাইয়া
সন্ধ্যার সময় সবার লগে বইয়া হইচই কইরা ইফতার করি, তারপর মসজিদে গিয়া তারাবির নামাজ পড়ি; তারপর বাসায় ঢুকতে না ঢুকতে ঘুমে চোখ ভাইঙ্গা আহে। কোনমতে একটু পানি কিংবা শরবত খাইয়া আবার যথারীতি ঘুম।
সেহরির সময় আবার বউ আমারে হা করাই আর ঝাকাঝাকি কইরা ঘুমের মধ্যে খেজুর খাওয়ায় দেয়। এভাবেই ক্রমশ............।
ভালোই কাটতাছে আমার রোজার দিনরাত্রি।
তো আজকে রাত্রে আমার বউ আমার মুখের মধ্যে খেজুর ভইরা দিয়া ঝাঁকা ঝাঁকি শুরু করলো। ঝাঁকা ঝাকির চোটে আমি খাটের থাইক্কা ধপাস কইরা মাটির মইধ্যে পইড়া গেলাম। মাটিতে পইড়া ব্যথা পাওয়াতে নাকি তিনমইনা বস্তা পড়ার ধপাস শব্দে আমার ঘুম ভাইঙ্গা গেল। চোখ খোলার আগেই কান খুইল্লা গেলো আর বউয়ের তারস্বরে চিল্লাচিল্লি কানে ঢুকলো - মিনসে ঘুমাইলে আর হুঁশ থাকে না; তিনারে প্রত্যেকদিন সেহরির সময় ঝাকাইতে ঝাকাইতে না পাইরা পরে ধাক্কাইয়া খাটের থেকে ফালায় দিলে তবে উনার ঘুম ভাঙ্গে। আমি থতমতো খাইয়া মাটির থাইক্কা উইঠা বসলাম।
ওহহ্! এতক্ষণ তাইলে স্বপ্ন দেখতে ছিলাম! আহারে কি সুন্দর স্বপ্ন!!!!! কি যে সুন্দর!!!!!
সুন্দর হলে হবে কি! এ শুধুই "এক অলস মানুষের অলীক স্বপ্ন"
আমি বউয়ের দিকে একবার চাই, মনচক্ষে স্বপ্নের দিকে একবার চাই - দুইটারে মিলনের চেষ্টা করি।
ধ্যুর! স্বপ্ন কি সত্যি হয়? কই চাঁদ আর কই মধ্য আকাশের গনগইন্যা সূর্য!
আমি ফ্রেশ হওয়ার লাইগা বাথরুমের দিকে দৌড় লাগাই। সেহরির জন্য হাতে একদম সময় নাই।
#রম্য
এক অলস মানুষের অলীক স্বপ্ন
- আহসানুল হক
০১ এপ্রিল, ২০২৩
****************************************************************************
এই যে রাইতের বেলা আপনাগোরে আমার স্বপ্নের কথা কইলাম! হুদাহুদি কই নাই। ল্যাপটপে বইসা পুরানো কিছু ছবি দেখতে ছিলাম। তা এক দম্পতির ছবি দেখতে দেখতেই আমার আর আমার বউয়ের প্রেম কাহিনীর কথা মনে পড়ল। উঁহু প্রেম কাহিনি না, আসলে "অলস মানুষের অলীক স্বপ্ন" এর কথা মন পড়লো।
আহহারে! আমার বউ যদি এই ছবির কাকেদের মত কখনো আমার মন ভাঙ্গাইতো! ছবিগুলা দেইখা খালি দীর্ঘশ্বাসই পড়তেছে।
আজকে কিসের ছবি দিব?
আজ দিব কাকেদের ছবি।
অনেক পক্ষীর তো ছবি তুলি, কাকেরা কি দোষ করল? উনারাও তো পক্ষী। খালি পক্ষী না, পক্ষীকুলের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান পক্ষী।
ঐদিন পদ্মার তীরে নানা রকম পক্ষীর ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো ল্যাম্পপোস্টের উপরে এক কাক দম্পতি বসে আছেন। মনে হল একজন আরেকজনের রাগ কিংবা অভিমান ভাঙাচ্ছেন। তারপর অভিমান পর্ব শেষ হলো প্রেম পর্বে। দুজনে মেতে উঠলো চুমু প্রেমে। ধ্যাত! এদের একদম লজ্জা শরম নেই। খোলা আকাশের নীচে দুপুর বেলায় তারে বসে দেখেন তো কি সব শুরু করলো!
যখন ওনারা চুমুতে মত্ত তখনই হঠাৎ করে কোত্থেকে এক শালিক দম্পতি ল্যাম্পপোস্টে এসে কাকেদের ঠিক নিচে বসলো। প্রথমে তারা কাকেদের মান ভাঙ্গানো পর্বে উল্টোদিকে চেয়ে থাকল। তারপর হঠাতই মনে হয় কাকেদের ঠোটে ঠোঁটে চুমুর শব্দে দুজনা একসাথে প্রেমরত কাকেদের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হয়তো তাদের মনেও প্রেমের উদয় হল! হয়তো তাদেরও প্রেম করতে ইচ্ছে হলো! হয়তো কাকেদের মত নির্লজ্জভাবে খোলামেলায় প্রেম করতে হয় ইতস্তত করলো! তাই হয়তো হঠাত দুজনই একসাথে আকাশে পাখা মেলে ওই দূরে কোথায় জানি উড়ে গেল।
আমার ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক করে কাকেদের প্রেম কাহিনী ধরে রাখল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন