শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩

টাকায় কেনা জগত

টাকায় কেনা জগত

 - মোঃ আহসানুল হক 


জন্মের পর থেকেই আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়

লেখাপড়া করে যে - গাড়িঘোড়া চড়ে সে

যেন লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো গাড়িঘোড়া চড়া

ভালো উপার্জন করা

আর উপার্জন সকলই টাকার অংকে,

আজকাল কয়টা বাবা-মা শেখায় ধর্ম!

আসলে কয়জন বাবা-মা'ই আজকাল মানে ধর্ম 

ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা-ব্যবস্থা তা যেন মানতেই নারাজ আমরা

ওগুলো শুধু হুজুরদের পাঠ্য, মরার পর দোয়া-খায়েরে কাজে লাগে

হুজুর কাজে লাগে মৃতের গোসলে, কিংবা মৃতদেহ সৎকারে

মানুষ হওয়ার সাথে, উপার্জনের সাথে ধর্মের সম্পর্ক কি?

তাই না? 


তারপর সেই যে ছোটবেলার শেখানো পথে পথচলা

যেন রেসের ঘোড়া

কে কতটা পড়ালেখা করেছে

কে কতটা ভালো উপার্জনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে

তার প্রতিযোগিতা,

মানুষের মত মানুষ হও হয়তো কোন বাবা-মা বলে থাকেন

কিন্তু মানুষ হওয়ার মাপকাঠিটা যেন ঐ অর্থ উপার্জনেই সীমিত

আর মাঝে মধ্যে রাস্তার কুকুর বেড়াল, পশু পাখির প্রতি মমতা

এখানে ওখানে যুদ্ধ হচ্ছে, তাদের দুরবস্থা ভারচুয়ালে শেয়ার করে সহানুভূতি

খুব বেশি হলে কিছু অনলাইনে সাহায্য কালেকশন

একদল তো আছে এটা করেই বিশাল ব্যবসা ফাদে - সহানুভূতির ফাঁদে 

টাকা উপার্জন - মানুষ হওয়ার মূল কথা,

তাই বলে মনুষ্যত্ব বিসর্জন? 

আরে বোকা মনুষ্যত্ব পুরনো ডিকশনারির একটা অচল শব্দ মাত্র 

আর কয়দিন পরে এটি পাবে ভার্চুয়াল জাদুঘরের শব্দকোষে;   



টাকা উপার্জনের রেসে ছুটতে ছুটতে কতজন কতভাবেই না পা পিছলায়!

লোভ রিপুটা এক্ষেত্রে বড্ড বেশি প্রভাবক 

সবাই জানে, কে ধার ধারে? টাকার হাতছানিতে রিপুও পরাজয় মানে

টাকা আসা শুরু করলো তো মুই কি হনু রে!

টাকা উপার্জনে পা পিছলে পড়ে গেলে সৃষ্টিকর্তা'কে দোষে

অথচ মনে মনে মানেই না সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু আছে

আরে নাহ! এখনো মানুষ পুরোপুরি নাস্তিক হতে পারে নি

দোষারোপ করার জন্য একজন সৃষ্টিকর্তা তো লাগবে!

লোভ'কে তো দোষারোপ করলে দোষ এসে পড়ে নিজের ঘাড়ে

আয়নার মানুষটা কি তা মানতে পারে? 

লোভের শিকার আমরা সবাই 

স্বীকার করি না কেউ

 

রিপুর নদীতে জোয়ার ডাকে 


দুকুল ভাসানো ঢেউ;


তারপর একদিন দুদিন করে খুব তাড়াতাড়ি দিন ফুরোয় 

দেখতে না দেখতে সমবয়সীদের মাঝে চারিদিকে দেখে 

মৃত্যু নামক এক অমোঘ বিধান 

কখনো হয়তো আশেপাশের মৃত্যু দেখতে দেখতেই মৃত্যুর কথা মনে হয়

কখনো সখনো কেউ কেউ পুরনো পথ থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করে

বেশীরভাগ অবশ্য তবুও আমলে নেয় না, চলে পুরনো পথ ধরে; 


একদিন অনেক টাকাওয়ালা এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 

 - আচ্ছা! এই যে এত এত টাকা কামিয়েছ! সৎ উপায়ে তোমার উপার্জন কত?

সে তাচ্ছিল্যের স্বরে জবাব দিলো, সৎ উপায়ে কি টাকা কামানো যায়? তোর নিজের দিকে তাকা

আমি আয়নায় নিজের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থেকে তাকে বললাম, তাই তো! আমিই বোকা; 


তারপর বাদ দে বলে তাকে আবার প্রশ্ন করলাম

  - সারাজীবন কামানো টাকার কতটা তুমি উপভোগ করতে পেরেছ?

 - কতটুকু খাদ্যই বা পুরো জীবনে গলর্ধকরণ করেছ?  

 - মৃত্যুর সময় কত কত টাকা রয়ে যাবে তোমার ব্যাঙ্কে? 

 - তাহলে এই পাগলের মত কেন টাকার পেছনে ছুটছ? 

 - আর কত টাকার পাহাড় জমালে তোমার মনে হবে টাকা কামানো হয়েছে? 


সে হেসে বললো, আবারও বোকার মত প্রশ্ন করছিস, 

আরে টাকা কামানো একটা নেশা, তোর মত বোকারা সেটা বোঝে না, 

 - আর মৃত্যু? আরে বাবা টাকায় আজকাল মৃত্যুকে কেনা যায় - সেটাও জানিস না?

 - টাকা না থাকলে কোথায় পাবি চিকিৎসা? - ক্যান্সার চিকিৎসায় কত টাকা লাগে জানিস?  

 - ভেন্টিলেটর বুঝিস? তোর মত মূর্খ কি বুঝবে টাকার মূল্য!

 - আমার টাকা আছে বলেই না আমি থাকতে পারবো মাসের পর মাস - ভেন্টিলেটর সাপোর্টে, 

 - তোর ক্ষমতা হবে?

 - আমি টাকার পাহাড় গড়তে গড়তে যেদিন টাকায় ঐ এভারেস্ট তলিয়ে দেব

 - আমি টাকার সাগর গড়তে গড়তে যেদিন ঐ প্রশান্ত মহাসাগর ভরিয়ে দেব 

 - সেদিনও আমার টাকার কামানোর নেশা শেষ হবে না; 


আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম প্রকৃতই টাকার নেশা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেশা

 - বাকি সব নেশা এর কাছে নিষ্প্রভ, তোমাকে দেখে আমার তাই মনে হয় 

 - আচ্ছা! দোস্ত বলতে পারো ভেন্টিলেটর সাপোর্ট থেকে ফিরে আসে ক'জনা?

সে এবার ধমক দিয়ে বললো - আবার বোকার মত কথা!  

 - টাকা ছাড়া ঐটুকুও তো যায় না কেনা,


দিনের পর দিন গড়ায়, সূর্য ওঠে চাঁদ ডোবে 

আমি আমার ভবঘুরে জীবনে সে তার টাকার মেশিনে,


একদিন হঠাৎই শুনলাম বন্ধু আমার ভেন্টিলেটরে শুয়ে 

ডাক্তার'রা কাওকে কাছে যেতে দেয় না, 

কিন্তু আমার যে তাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে!

জানতে ইচ্ছে করছে তার বর্তমান অবস্থা,

আমি আই সি ইউ'র বাইরে থেকে মনে মনে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,  

 - তারপর? কেমন আছিস দোস্ত? 


ভেন্টিলেটরে শুয়ে থাকা অচেতন দেহ উত্তর দিলো না; 


তারও দিন দুয়েক পরে আবারও বাইরে থেকে দেখে মনে মনে জিজ্ঞেস করলাম, 

 - কি রে বন্ধু! কেমন বোধ করছিস আজ? - ভেন্টিলেটরে তুই কি ঘুমিয়ে না জেগে? 


এবারও উত্তর দিলো না ভেন্টিলেটরে শুয়ে থাকা বন্ধু আমার;


তার পরদিন আবারও গেলাম বন্ধুর খবর নিতে,

খুব ইচ্ছে করছে জানতে কেমন আছে বন্ধু আমার 

খুব জানার ইচ্ছে টাকায় কেনা ভেন্টিলেটর জগতের মানুষরা কি করে! 


গিয়ে দেখলাম ডাক্তার'রা ভেন্টিলেটর খুলছে

 - মৃতদেহ উত্তর দিলো না। 



২৭ অক্টোবর, ২০২৩


#কবিতা 



টাকায় কেনা জগত

 - মোঃ আহসানুল হক 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন