ফেসবুকিয় কাণ্ড কারখানা
- আহসানুল হক
ফেসবুকে বেশ একটা অদ্ভুত জায়গা। একটু খেয়াল করলেই কত মজার মজার কাণ্ড যে দেখা যায়! খুব বেশিদূর যেতে হবে না, তোমরা তোমাদের যাবতীয় মজা তোমাদের ফ্রেন্ড লিস্টের ফ্রেন্ডদের কাছ থেকেই পেয়ে যাবে।
আমার লিস্টে বেশ কিছু লেখক আছেন, আছে অনেকগুলো ফটোগ্রাফার আর আছে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে এক ঝাঁক ট্যুর অপারেটর। ট্যুর অপারেটররা আছে আমার প্রফেশনাল কারণে, ফটোগ্রাফাররাও অনেকটা তাইই। লেখকরা কেউ আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে আমার ফ্রেন্ড হন নি বরং আমিই বিভিন্ন গ্রুপে বিভিন্ন জনের লেখা পড়ে যাদের যাদের লেখা ভালো লেগেছে তাদেরকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। সম্ভবত কবি লেখকদের ডিমান্ড ফেবু ওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি। উনারা বেশিরভাগ আমাকে পাত্তাই দেননি, মানে রিকোয়েস্ট রিজেক্ট করেছেন। কিভাবে বুঝলাম? বিভিন্ন গ্রুপে ওনাদের অন্যান্য লেখা পড়তে গিয়ে মনে হল আরে এনাকে, এনাকে, এনাকে তো আমি রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম! আমাকে এখনো ঝুলিয়ে রেখেছেন? উনাদের প্রোফাইলে গিয়ে দেখি ফেবু আবার এড রিকোয়েস্ট করতে বলেছে। তার মানে ওনারা আমার রিকোয়েস্ট ডিক্লাইন করেছেন; বেশিরভাগই এমনই হয়। আমার কপালে রিজেকশনের ভার অনেক বেশি, সে ফেবু দুনিয়াতেই হোক কিংবা সত্যিকারের জীবনে। মনে হয় আমার চেহারাটা অতিরিক্ত খারাপ কিংবা ওনাদের মত এত বড় মাপের লেখক লেখিকাদের বন্ধু হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। আমার আসলে কোন যোগ্যতাই নেই। তারপরও মাঝে মধ্যে ওনাদের কেউ কেউ আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন। একটা লেখক কিংবা কবি বন্ধু যদি আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন তাহলে আমি ইয়াহুউউউউ চিৎকারে খুশিতে তিনটা লাফ দেই। উঁহু, উঁহু,ছ্যাবলা ভাববেন না আবার; ইনবক্স আমার সয় না। বন্ধুত্ব গ্রহণ করলেন বলেই যে ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে ইনবক্স করবো ওটা আমার ধাত না। কেউ একজন বন্ধুত্ব গ্রহণ করেছেন এতেই আমি যথেষ্ট খুশি। আরে একটু অপেক্ষা করো বাবা আহসান! এখনই এত খুশি হইছ না।
ভাইজান কিংবা আপাজান শেষ পর্যন্ত ফেসবুকের বন্ধু হইলেন। আমি খুশির জোটে ওনার প্রোফাইলের ভিতর গিয়া সমস্ত গল্প কবিতা পইড়া আসলাম। পইড়া পেত্তেকটা গল্প কিংবা কোবতায় আমার চিহ্ন ছাইড়া আসলাম। আরে চিহ্ন বলতে কহনো লাইক, কহনো ভালোবাসার ইমোজি কহনো বা কমেন্টের ছড়াছড়ি। আমি অবিশ্যি এমনিতেই একটু পড়ি বেশি। নিজের কোন কিছু লেখার যোগ্যতা নাই তো তাই অন্য একটা পইড়া পইড়া একটু শিখার চেষ্টা করি। পড়তে পড়তেই তো পাঠক হয় তাই না? আইচ্ছা! পড়তে পড়তে যদি পাঠক হয় তাইলে ঐ পাঠকের মাথা দিয়া দুইটা লাইন বাইর হইতে পারে না?
হায় আফসোস! ৫৫ বছর ধইরা শুধু পইড়াই গেলাম, গু গোবর কিছু লেখার যোগ্যতা হইল না। পাঁচে হয় নাই ৫৫ তে হইব?
যাউজ্ঞা যা কইতাছিলাম। এই যে নতুন নতুন ফেবু আপা আর ভাইগো প্রত্যেকটা লেখা পইড়া পইড়া উনাদের ফেসবুক জুইড়া কমেন্ট কইরা আসলাম! বিনিময়ে আমিও তো চাইতে পারি আপা কিংবা ভাইয়েরা আমার প্রোফাইলে ঢুইকা আমার একটা পক্ষীর গায়ে লাইকের একটা টোকা দিয়া যাক! আফনেরাই কইন, আমার মন ঐডা চাইতে পারে না? আরে ভাই মানুষ তো! আমারও তো কিচু চাহিদা থাকবার পারে!
কোন মহা মনীষী জানি কইছিল,
"বড় আশা ব্যাঙের বাসা
গু খা ঠাসা ঠাসা "
আমিও আশার গু খাইয়াই যাইতাছি, ভুলেও ওনারা আমার প্রোফাইলে উঁকিও দিয়া দেখে না। দিনের পর দিন একই অবস্থা দেইখা, একদিন আমি অনেক চিন্তাইয়া ভালো কইরা ওনাদের ফেসবুকের দিকে খেয়াল করলাম।
ও মারে! মা!!!!
একেকজনের ফলোয়ারের সংখ্যা দেইখ্যা আমার তো ভীমরি খাওয়ার দশা। ৫ হাজার দশ হাজার তো কোন ছাড়! কারও তিরিশ কারও চল্লিশ, কারও কারও দেখলাম ৮০-৯০ হাজার আর কিচু কিচু লেখকের তো লাখ ফলোয়ার ছাড়ায় গেছে। তবে আশ্চর্য কথা হইলো গিয়া কয়েকজনের প্রোফাইল দেখলাম, উনারা একজনরেও ফলো করে না।
মানেটা কি? উনারা ফলো করার মত কোন বান্দা কি ফেসবুকে পয়দা হয় নাই?
না কি কবি, সাহিত্যিক, লেখকদের অন্য কাউরে ফলো করতে নাই?
আমার অল্প বুদ্ধিতে চিন্তাইয়া কিছু পাইলাম না ; আপনারা যদি এই বিষয়ে বিশেষ অজ্ঞ হন তাইলে আমারে একটু জানাইয়েন।
আজকাল আর লেখক কবিদের আমি কোন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই না। যা পড়ার পেন্সিল টেন্সিল আর অন্যান্য সাহিত্যের যত গ্রুপ আছে ঐগুলা থাইক্কা পইড়া নেই। আরে না লেখা পছন্দ হইলে এখনও লাইক দিয়া আসি, মাঝে মইধ্যে লাভও দেই আর কমেন্ট করতেও কার্পণ্য করি না।
আরেক শ্রেণীর ফেবু বন্ধুবান্ধব, যিনারা আমার বাল্যবন্ধু, ক্লাবের বন্ধু, পাড়া মহল্লার বন্ধু, পরিচিত মুখ চেনা - মানে যারা শুধু ভার্চুয়াল না - রিয়েল লাইফের বন্ধু তারা আইসা প্রায়ই ছবির মধ্যে কিছু একটা রিয়াকশন দিয়া যায়। খুব বেশি পছন্দ হইলে একটা দুইটা কমেন্টও কইরা যায়। এরা আসলে বন্ধু না, অনেকটা আটপৌরে কাপড়ের মত ; আরে নাহ! আমি শাড়ির কথা কই নাই, যেইটা পরি না হুদাই হেইডার কথা কইয়া লাভ আছে? মানে কইতে চাইতাছি এদের আমি বড্ড ভালো পাই (এদের মধ্যে যেহেতু অনেকগুলা বালিকাও আছে তাই ভালোবাসি কইলে বউ আবার মাইন্ড খাইতে পারে )। আমার সাদামাটা আটপৌরে জীবনে এদের স্থান অনেক উপরে।
এরাও মনে হয় আমাকে অনেকটাই ভালোবাসে। বেশিরভাগই আমায় পাগল ডাকে, গামছা পড়ি বইলা অনেকে গামছা নামেই ডাকে; আরও কি কি সব হাবিজাবি খারাপ খারাপ নামে ডাকে ( সব নাম এখানে বলা যাবে না, আমার লইজ্জা লাগে )।
তা এরা আমারে ভালোবাসার চোটে কি করে জানো? লেখায় তো আইসা লাইক দিয়াই যায়, কমেন্ট কিছু একটা কইরাই যায় ; কিন্তু আচানক ব্যাপার হইলো গিয়া বেশিরভাগ না পইড়াই কমেন্ট করে।
কেমনে বুঝি?
মাঝে মাঝে আমি এখান ওখান থেকে যা ভালো লাগে তা সংগৃহীত ফুটনোট দিয়ে আমার প্রোফাইলে পেস্ট করি। এরকম অনেকগুলাই আছে।
তা এনারা ওয়াও, আহ! কি দারুণ! চমৎকার, হায় দোস্ত কি লিখলি, আমি তো ফিদা হইয়া গেছি;
কবিতাটা যা দারুণ হইছে না! ( আসলে ওইটা গল্প )
তুই এত হাসির একটা গল্প লিখলি! (আসলে ওইটা পাখি সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে কপি করা একটা আর্টিকেল )
এদের কমেন্টের মধ্যে অনেকসময়ই এইতান ভালোবাসা খুইজ্জা পাই।
তা আপনারাই কন দেহি, এমন হইলে মনটা কেমনটা লাগে ? আমি হাসমু কানমু রাগমু না বকা দিমু? কিছু বুইঝা পাই না।
বুঝি এরা ভালোবাসার চোটেই কমেন্ট করতে চায়। বন্ধু কিছু লিখছে! তা ভালই লেখছে হয়তো, কিংবা ভালো না লেখুক দোস্ত তো! এত বড় একটা জিনিস যখন লেখছে আর আমার চোখেও পড়ছে যখন! একটা কমেন্ট করলে দোস্ত আমার খুশি হইবো। এরকম কিছু একটা চিন্তাইয়া তারা না পইড়াই কোন একটা লেখার মইধ্যে কমেন্ট কইরা যায়। আমি তাদের ভালোবাসা বুঝি। আর তাছাড়া বড় লেখা পড়ার সময় কোথায় আজকাল? আরে আমি না হয় বেকার মানুষ, আমার অঢেল সময় আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ার ; সবার কি আর এত সময় আছে?
#হিবিজিবি
ফেসবুকিয় কাণ্ড কারখানা
- আহসানুল হক
০৪ এপ্রিল, ২০২৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন