দাদা বাড়ির গল্প
- মোঃ আহসানুল হক
কিরে নাতিরা ফুস পানি খাবি?
- রিপন বেক্কলডায় জিগাইলো ফুস ফানি কি দাদা?
দাদায় কইলো পানি খাইয়া ফুস কইরা পাদ দিবি, ওইডারে কয় ফুস পানি?
- রিপন কয় যাও দাদা, তুমি খালি খাচ্চর খাচ্চর কথা কও, আমি ফুস পানি খামু না।
আমি রিপইন্নার মুখ চাইপ্পা ধইরা দাদারে কইলাম, দাদা ফুস পানি খামু।
- রিপইন্না ঝামটা দিয়ে মুখ থাইক্কা হাত সরায় দিয়ে কইল, আমি খামু না তোরা খা।
আমি কইলাম খাইস না বেক্কল, চাইয়া চাইয়া দেহিস।
দাদায় হাসতে হাসতে আমারে কইলো, তোর মাথায় বুদ্ধি বেশি।
(আমি দাদারে কইলাম না যে ফুসপানি চিনি কেমনে। বকুল চাচায় কইয়া দিছে তোর দাদায় ফুসপানি খাওয়াইতে চাইলে না করিস না। ওইটা হইল গিয়া সেভেন আপ নাইলে পেপসি।)
আমগো তিনজনকে তিনটা ফুসপানি নি দিতেই আমি রিপনেরটা লইয়া দাদারে কইলাম, দাদা হেয় ফুস পানি খায় না; হেরটা আমি খামু।
কইয়াই বোতল লইয়া ক্ষেতের দিকে দিলাম দৌড়। রিপন বেকুবটা আমার পিছে পিছে দৌড়াইতে লাগলো আর কইতে লাগলো আমারে ফুস পানি দে, আমারে ফুস পানি দে।
আমি হের থন জোড়ে দৌড়াইতে দৌড়াইতে কইতে লাগলাম তুই ফুস কইরা পাদতে থাক, পাদতে থাক।
যেই গল্পডা বলছি ওটা এই ১৯৭৬/৭৭ এর দিকের গল্প। আমার দাদা বড়ি আশুলিয়া। তোমরা আজকের যে আশুলিয়া দেখছ আর তখনকার আশুলিয়ার কোন সামঞ্জস্য নেই। আশুলিয়া তখন মহাখালি থেকে প্রায় পৌনে একদিনের জার্নি। ঢাকা থেকে সেখানে যাওয়ার তখন মাত্র দুটো রাস্তা। সহজ রাস্তাটা হলো মহাখালি থেকে বাসে গাবতলি। তারপর আবার গাবতলি থেকে আরিচার বাসে সাভার ডেয়ারি ফ্যাক্টরি নেমে সেখান থেকে হয় হেঁটে কিংবা যদি বৃষ্টির দিন হতো তবে গরুর গাড়ি। আরেকটা রাস্তা ছিলো মহাখালি থেকে জয়দেবপুরের বাসে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত। টঙ্গী ব্রিজের নিচ থেকে তখন দাঁড় টানা পালের নৌকা চলতো। তোমরা এখন যে উত্তরা থেকে আশুলিয়া সড়ক দেখছ! এগুলো কিছুই ছিলো না। ছিলো থৈ থৈ অথৈ পানি। বর্ষাকালে তুরাগ নদীতে তখন উথাল পাথাল ঢেউ। বর্ষাকালে আমরা নদী পথে যেতে ভয় পেতাম। শীতকালে ঢেউ কিছু কম থাকতো। টঙ্গী রেল ব্রিজের নিচে থেকে নৌকা নিতাম একবারে আশুলিয়া বাজারে নিয়ে নামাতো। তখন এ পথটুকু দাঁড়বাওয়া নৌকায় যেতে প্রায় ঘন্টা চারেক লেগে যেত। আমি সড়ক পথে সাভার ঘুরে যাওয়া থেকে নদী পথে নৌকায় যেতে বেশি পছন্দ করতাম। নদীর মাঝখানে যখন প্রবল ঢেউ হতো সবাই চিল্লাচিল্লি লাগিয়ে দিলেও আমি সেই ঢেউ এর দোলা প্রচণ্ড রকম উপভোগ করতাম। নদীর মাঝামাঝি জায়গায় একটা হিজল গাছ ছিলো, নদীর মাঝে কোত্থেকে হিজল গাছ এলো তা আমার অল্প বুদ্ধিতে ধরতো না। পরে জেনেছিলাম ঐ অংশটুকু একদম শীতের সময় শুকিয়ে চর পড়ে যেতো আর চরের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতো একটি মাত্র হিজল গাছ। নৌকায় যাওয়ার সময় হিজল গাছের মাথায় নানা রকম পাখি বসে থাকতে দেখতাম।
(আশুলিয়ার বাকি গল্প অন্য কোন একটা লেখায় বলব)
- (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন